Advertisement

শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

বুধ সৌরজগতের নিকটতম এবং সবচেয়ে ছোট গ্রহ। সূর্যের কাছাকাছি থাকার কারণে একে পৃথিবী থেকে দেখা একটু কঠিন, ব্যতিক্রম শুধু গোধূলির কিছু সময়। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে আসতে এটি নিজের অক্ষের উপর তিনি বার পাক খায়। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মনে করা হত যে বুধের শুধু এক পাশই সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। প্রতি শতাব্দীতে একে পৃথিবীর আকাশে প্রায় ১৩ বার সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনার নাম ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ মে তারিখে এর অতিক্রমণ ঘটে।
পৃথিবীর তুলনায় বুধ
এক নজরেঃ
ভরঃ পৃথিবীর ০.০৬ গুণ
ব্যাসঃ ৪, ৮৭৯ কিমি.
উপগ্রহঃ নেই
কক্ষপথের গড় দূরত্বঃ ০.৩৯ এইউ (১ এইউ = পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব)
এক বছরের দৈর্ঘ্যঃ ৮৮ দিন (পৃথিবীর হিসাবে)
পৃষ্ট তাপমাত্রাঃ -১৭৩ থেকে ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

আরো পড়ুনঃ 
☛ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

বুধ গ্রহের তথ্য ঝুড়িঃ

১. সব গ্রহের মধ্যে বুধের কক্ষপথ সবচেয়ে চাপা। অর্থ্যাৎ, বৃত্তাকার আকৃতি থেকে এর কক্ষপথের বিচ্যুতি সবচেয়ে বেশি। সূর্য থেকে এর দূরত্ব বিভিন্ন সময় ৪৬ থেকে ৭০ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লাখ) কিমি. পর্যন্ত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ 

২. গ্রহদের মধ্যে বুধ সবচেয়ে ছোট। খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচ গ্রহের অন্যতম এই গ্রহটির বিষুব রেখা বরাবর ব্যাস ৪, ৮৭৯ কিমি., যেখানে পৃথিবীর ব্যাস ১২, ৭৪২ কিমি.। 

৩. গ্রহদের মধ্যে ঘনত্বের দিক দিয়ে বুধের অবস্থান দ্বিতীয়। আকারে ছোট্ট হলেও এর ঘনত্ব অনেক বেশি। এর প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ৫.৪ গ্রাম করে পদার্থ আছে। এর চেয়ে বেশি ঘনত্ব রয়েছে শুধু পৃথিবীর। এর এই বড়ো ঘনত্বের কারণ হল, গ্রহটি মূলত ভারী ধাতু ও পাথর দ্বারা গঠিত। 

৪. বুধের পৃষ্ট এবড়োথেবড়ো। কোথাও কোথাও এর পৃষ্ঠের ভাঁজ একশো মাইল পর্যন্ত উঁচু ও কয়েকশো মাইল লম্বা হয়ে থাকে। 

৫. এর কেন্দ্রভাগ গলিত হতে পারে। সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অবস্থা গলিত হতে পারে। সাধারণত ছোট গ্রহদের কেন্দ্র খুব দ্রুত শীতল হয়ে যায়। কিন্তু এর কেন্দ্রে কঠিন বস্তুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। হিসাব করে দেখা গেছে এর মোট আয়তনের ৪২ ভাগই কেন্দ্রভাগ নিয়ে গঠিত, যেখানে পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই মানটি মাত্র ১১ ভাগ। 

৬. তাপমাত্রার দিকে দিয়ে বুধের অবস্থান গ্রহদের মধ্যে দ্বিতীয়। এর চেয়ে দূরে থেকেও শুক্র গ্রহের তাপমাত্রা আরো বেশি। এর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও রাতের বেলায় তা আবার নেমে আসে মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রিতেও। গ্রহটির কোনো বায়ুমণ্ডল নেই বলে এ রকমটি ঘটে। 
আরো পড়ুনঃ

৭. বুধের পৃষ্ঠ প্রচুর খানাখন্দে ভরপুর। গ্রহাণু ও ধূমকেতুর সংঘর্ষে এর পৃষ্ঠে এসব খাদ তৈরি হয়েছে। অন্য গ্রহদের মতো এটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় এসব খাদ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেনি। ২৫০ কিমি. এর চেয়ে বেশি ব্যাসের খাদকে বলা হয় বেসিন। 

৮. এ পর্যন্ত দুটি মহাকাশযান বুধ সফরে গেছে। সূর্যের খুব কাছে হবার কারণে বুধ গ্রহে যাওয়া কঠিন। ১৯৭৪ থেকে '৭৫ এর মধ্যে মেরিনার ১০ এর কাছ দিয়ে তিনবার উড়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে এর পৃষ্ঠের অর্ধেকটার মতো ছবি তোলা গেছে। এরপর ২০০৪ সালে পাঠানো হয় মেসেনজার প্রোব। 

৯. বুধের সঠিক আবিষ্কার কাল জানা যায় না। খৃষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে সুমেরীয়রা একে দেখেছে বলে জানা যায়।   

১০. বুধেরও আছে বায়ুমণ্ডল! বুধের অভিকর্ষ পৃথিবীর ৩৮ শতাংশ মাত্র। সৌরবায়ুর খপ্পরে পড়ে এত অল্প অভিকর্ষ দিয়ে বায়ুমণ্ডল টিকিয়ে রাখা কঠিন। তবে এই সৌরবায়ু ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কারণেই এর বায়ুমণ্ডল কিছুটা অস্তিত্ব ফিরে পায় সময় সময়। 
 
সূত্রঃ
১। http://solarsystem.nasa.gov/planets/mercury
২। http://nineplanets.org/mercury.html
৩। http://space-facts.com/mercury/
Category: articles

শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬

শনি গ্রহের ঘনত্ব এত কম যে একে পানিতে রাখা গেলে ভাসতে থাকবে
১. মহাবিশ্বের মাত্র ৫% বস্তু আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকিটুকু ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি।

২. নিউট্রন স্টাররা প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বার পর্যন্ত ঘুরতে পারে।

৩. সূর্যের কেন্দ্র থেকে প্রতি সেকেন্ডে দশ হাজার নিউক্লিয়ার বোমার সমপরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, যা আলো ও তাপ আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

৪. টেলিস্কোপ গ্যালিলিও আবিষ্কার করেননি, করেছিলেন ডাচ উদ্ভাবক জোহানেস লিপারশে। গ্যালিলিও সম্ভবত সবার আগে একে আকাশ দেখতে কাজে লাগিয়েছিলেন।

৫. ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ এত তীব্র যে এর ভেতর থেকে আলোও বের হতে পারে না, তবে হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে কিছু কণা বের হতে পারে।
আরো দেখুনঃ 
☛ ব্ল্যাক হোলের গভীরে

৬. বিশাল ভারী ব্ল্যাক হোলদের সংঘর্ষে তৈরি হতে পারে মহাকর্ষ তরঙ্গ। ২০১৫ সালে এটি প্রথম সরাসরি শনাক্ত করা সম্ভব হয়

৭. কেউ ব্ল্যাক হোলের খুব কাছাকাছি চলে গেলে এর মহাকর্ষের তীব্রতা মাথা ও পায়ের দিকে এত বেশি আলাদা হবে যে মাথা ও পায়ের মাঝখানের অংশ লম্বা হয়ে সেমাইয়ের মটো হয়ে যাবে।

৮. দূরের নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি থেকে আলো আসতে এত বেশি সময় লাগে আমরা এদের দিকে তাকিয়ে এদের অতীতকে দেখতে পাই। যেমন আমরা সূর্যকে দেখি এর এর ৮.৫ মিনিট আগের অবস্থায়, সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরিকে দেখি ৪.২ বছর আগের অবস্থায় ইত্যাদি।

৯. ১০৫৪ সালে একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে কাঁকড়া নেবুলার (Crab nebula) জন্ম। তৎকালীন চীনা ও আরব জ্যোতির্বিদদের দেওয়া তথ্যমতে এটি সেই সময় এত বেশি উজ্জ্বল ছিল যে একে দিনের বেলায়ও দেখা যেত।

১০. শনি গ্রহের ঘনত্ব এত কম যে একে পানিতে রাখা গেলে ভাসতে থাকবে!

আরো দেখুনঃ
আপনি জানেন কি? (পর্ব-১)
Category: articles

বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬

আজ ২০ জুলাই। শিরোনামে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করলেও আসলে এই দিনে মহাকাশের ইতিহাসে দুটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটেছিল। একটিতো সবার জানা। এই দিনেই নিল আর্মস্ট্রং সবার আগে চাঁদের বুকে পা ফেলেন। সালটি ছিল ১৯৬৯। এ সময় তিনি আবেগে বলেছিলেন,
একজন মানুষ হিসেবে চিন্তা করলে আমিতো মাত্র এক কদম এগিয়েছি, কিন্তু পুরো মানব্জাতির কথা চিন্তা করলে এই এক কদম এক বিশাল লাফের সমান।  
মানবজাতির এই বিশাল লাফের আজকে ৪৭তম বার্ষিকী।
আর্মস্ট্রং এর পরেই চাঁদে নামেন বাজ অলড্রিন। দুজনে মিলে ২১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় চাঁদে কাটান। পৃথিবীতে নিয়ে আসেন চাঁদের সাড়ে ২১ কেজি পাথর।
অ্যাপোলো-১১ যানে করে আর্মস্ট্রং, অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স ১৬ জুলাই তারিখে চাঁদের দিকে যাত্রা করেন। 
অ্যাপোলো-১১ এর যাত্রা শুরু হয় স্যাটার্ন ভি রকেটের মাধ্যমে। এই রকেটের দৈর্ঘ্য ছিল ৩৬ তলা বিল্ডিং এর সমান। 
চাঁদের দিকে যাবার পথে অ্যাপোলো-১১ থেকে তোলা পৃথিবীর ছবি
এই হচ্ছে অ্যাপোলো-১১ লুনার মডিউলের ছবি। ঈগল নামের এই যানটিই অলড্রিন ও আর্মস্ট্রংকে চাঁদের বুকে নামিয়ে দেয়। কলিন্স পেছনে থেকে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে থাকেন। 
চাঁদের বুকে প্রথম হাঁটার পরে নিল আর্মস্ট্রং। 


আরেকটি ঘটনাঃ মঙ্গলে প্রথম কোনো মহাকাশযানের অবতরণ।
এই অর্জনটি হয় ১৯৭৬ সালে। কাজটি সম্পন্ন করে ভাইকিং ওয়ান ল্যান্ডার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমরা পেয়ে যাই মঙ্গলের প্রথম রঙিন ছবি। 
লাল গ্রহ মঙ্গলের প্রথম রঙিন ছবি
একে পাঠানো হয়েছিল ১৯৭৫ সালের আগস্টের ২০ তারিখে। প্রায় এক বছর পর এটি মঙ্গলে পৌঁছে। এর এক মাস পরেই পৌঁছে যায় আরেকটি যান ভাইকিং টু। 
Category: articles

শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬

শুক্র গ্রহের সাথে আমাদের পৃথিবীর অনেক মিল রয়েছে সত্য। এর ভর, অভিকর্ষ, সাইজ- সবই পৃথিবীর কাছাকাছি। কিন্তু এতে বাস করার চিন্তা করা আদৌ ঠিক হবে না।
ছবিতে শুক্র গ্রহ 

এর প্রধান কারণ ৩টিঃ
১। এর পৃষ্ঠে তাপমাত্রা প্রায় ৪৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৮৫৪ ফারেনহাইট। এ তাপমাত্রায় টিন ও সিসার মতো বস্তুও গলে যায়।
২। এর পৃষ্ঠচাপ পৃথিবীর সমুদ্র লেভেলের চাপের ৯০ গুণ।
এই তীব্র তাপমাত্রায় একদিকে গলে যেতে হবে, আবার অন্য দিকে চাপের প্রভাবে হতে হবে ভর্তা। মহাকাশযান থেকে একবার নামলেই হল, আবার যানে ফিরতে ফিরতে চ্যাপ্টা না হয়ে উপায় নেই।
৩। এর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড আছে ৯৬ পারসেন্ট।
শুক্রের বায়ুমণ্ডল 

সায়েন্স ফিকশনপ্রেমীসহ কেউ কেউ কল্পনা করেন চেষ্টা করলে শুক্রকে বাসযোগ্য গ্রহে রূপান্তর করা সম্ভব। ধাপে ধাপে অনেকগুলো কৌশল অবলম্বন করে বসবাসের জন্য অযোগ্য কোন গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলার পদ্ধতিকে ইদানিং টেরাফর্মিং বলা হয়। কারো কারো মতে, শুক্র গহের বায়ুমণ্ডলে ব্যাকটেরিয়া ফেলে এর কার্বন ডাই অক্সাইড ও সালফিউরিক এসিডকে অক্সিজেন ও অন্যান্য উপকারী উপজাতে পরিণত করা যেতে পারে। কিন্তু এই চিন্তাটা খুব বেশি যৌক্তিক নয়।
তবে শুক্র গ্রহে বসবাস করতে না পারলেও পৃথিবীতে বসে রাতের আকাশে শুক্র গ্রহের সৌন্দর্য উপভোগ করতে কোনো মানা নেই। চাঁদের পরে রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু কিন্তু শুক্রই।

আরো পড়ুনঃ
শুকতারার পরিচয়
দিক নির্ণয়ে শুক্র গ্রহ
অদ্ভুত এক গ্রহ 

সূত্রঃ
১। http://www.astronomycafe.net/qadir/q1002.html
২। http://www.space.com/28357-how-to-live-on-venus.html
Category: articles

সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬

মহাজাগতিক সভ্যতার প্রকারভেদ 

আমরাতো বর্তমানে যুগে নিজেদেরকে অনেক উন্নত মনে করি। কিন্তু মহাজাগতিক স্কেলে আসলে আমরা কতটুকু উন্নত? মহাজাগতিক স্কেলে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর সম্প্রদায়ের সভ্যতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এটা হল টাইপ ১, টাইপ ২ এবং টাইপ ৩ সভ্যতা।
টাইপ ১ সভ্যতাকে গ্রহ সভ্যতাও (Planetary civilization) বলা হয়। এই সভ্যতায় প্রাণীরা তাদের নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে গ্রহে আসা সম্পূর্ণ শক্তি ধরে রাখতে ও ব্যবহার করতে পারে।
টাইপ ২ সভ্যতার প্রাণী সম্পূর্ণ নক্ষত্রের শক্তি ব্যবহারে সক্ষম। কল্পনা করা হয় যে এরা নক্ষত্রের চারপাশে একটি ডাইসন স্ফিয়ার তৈরি করে। পুরো নক্ষত্রকে বেষ্টনকারী এই গোলক নক্ষত্রের সব শক্তি শোষণ করে, যা প্রাণীরা কাজে লাগায়।
অন্য দিকে টাইপ ৩ সভ্যতার প্রাণীরা পুরো গ্যালাক্সিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম।
এই তিনটিই হল মূল শ্রেণিবিভাগ। আরো কিছু বাড়তি প্রকারভেদও আছে। তবে সেটা 'আজকের ছবি' বিভাগে প্রকাশের যোগ্য নয়।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Kardashev_scale
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, নিউটন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী। মাধ্যমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা- সব ক্ষেত্রেই শুধু নিউটনের এই ফর্মুলা, সেই ফর্মুলা। ফিজিক্সে ও ম্যাথে সমানে গবেষণা চালিয়ে গিয়েছেন। দেখিয়েছেন পায়ের নিচে যে সূত্র (অভিকর্ষ) কাজ করে, আকাশেও তা (মহাকর্ষ) একইভাবে কাজ করে। আবিষ্কার করেছেন ক্যালকুলাস, যা ছাড়া আধুনিক পদার্থবিদ্যা পুরোপুরি অচল। আর কিছু আপাতত নাই বা বললাম।
কিন্তু মানুষটার ব্যক্তি জীবন ছিল আলাদা। নিউটন সাহবে খুব একটা সুবিধার মানুষ ছিলেন না। অন্যান্য পণ্ডিত ব্যক্তিদের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল খুব খারাপ। জীবনের শেষের দিকে তার বেশির ভাগ সময় কেটেছে উত্তপ্ত বিতর্কের মধ্য দিয়ে। নিঃসন্দেহে তাঁর প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা ফিজিক্সের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রভাবশালী বই। এটি প্রকাশের পরপরই তিনি পরিচিতি লাভ করেন। তাঁকে রয়েল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট বানানো হয়। তিনিই বিজ্ঞানী হিসেবে প্রথম নাইট হবার সুযোগ পান।

অল্প দিনের মধ্যেই তিনি রাজকীয় জ্যোতির্বিদ (প্রচলিত নাম অ্যাস্ট্রোনোমার রয়েল) জন ফ্ল্যামস্টিডের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। অথচ ইনিই নিউটনকে প্রিন্সিপিয়া প্রকাশের জন্যে প্রয়োজনীয় তথ্য- উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন। তবে এবার নিউটনের সহযোগিতার রাস্তা বন্ধ হল। নিউটনও ছেড়ে কথা বললেন না। তিনি রয়েল অবজারভেটরির পরিচালনা পর্ষদে স্থান করে নিতে সক্ষম হলেন। এবার দ্রুত উপাত্তগুলো প্রকাশনার চেষ্টা করলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ফ্ল্যামস্টিডের গবেষণাকর্ম জব্দ করে ফেললেন। উপরন্তু এগুলো ফ্ল্যামস্টিডের জানের শত্রু এডমন্ড হ্যালিকে দিয়ে প্রকাশ করার জন্য সব রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেন। কিন্তু ফ্ল্যামস্টিড চলে গেলেন আদালত পর্যন্ত। ঠিক সময় মতোই তাঁর চুরি হওয়া গবেষণার প্রকাশনা বন্ধ করতে আদালতের আদেশ অর্জন করে নিতে পারলেন। নিউটনের মেজাজ সপ্তমে উঠে গেল। প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যে তাঁর প্রিন্সিপিয়ার পরবর্তী সংস্করণগুলো থেকে ফ্ল্যামস্টিডের সব রেফারেন্স ধীরে ধীরে উঠিয়ে নিলেন।
আরো ভয়াবহ বিবাদে লিপ্ত হন জার্মান দার্শনিক গটফ্রিড লিবনিজের সাথে। নিউটন ও লিবনিজ দুজনেই গণিতের ক্যালকুলাস নামে একটি শাখা তৈরি করেন। আধুনিক পদার্থবিদ্যার অন্যতম ভিত্তি এই ক্যালকুলাস। এখন আমরা জানি যে নিউটন লিবনিজের অনেক বছর আগেই ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন। তবে তিনি তা প্রকাশ করেন অনেক দেরি করে। কে আগে আবিষ্কার করেছেন তা নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠল। দুই পক্ষেই কিছু বিজ্ঞানী শক্ত অবস্থান নিলেন। তবে মজার ব্যাপার হল, নিউটনের পক্ষে লেখা বেশির ভাগ রচনাই নিউটন নিজে লিখে বন্ধুদের নাম দিয়ে প্রকাশ করেন।

বিতর্ক চরমে উঠলে লিবনিজ একটি ভুল করে বসলেন। তিনি রয়েল সোসাইটিকে এই বিতর্ক সমাধান করে দিতে প্রস্তাব দিলেন। এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিউটন অনুসন্ধান চালানোর জন্যে একটি 'নিরপেক্ষ' কমিটি করে দিলেন। মজার ব্যাপার হল, এই কমিটির সদস্যরা সবাই ছিল নিউটনেরই বন্ধু। কিন্তু এটাই শেষ নয়। নিউটন পরে নিজেই কমিটির রিপোর্ট লিখেন। রয়েল সোসাইটি রিপোর্ট প্রকাশও করল। এতে বলা হল, লিবনিজ গবেষণাকর্ম চুরি করেছেন। এতেও নিউটন শান্তি পাননি। তিনি রয়েল সোসালিটির নিজস্ব সাময়িকীতে রিপোর্টটি সম্পর্কে বেনামে একটি রিভিউ লিখেন। জানা যায়, লিবনিজের মৃত্যুর পরে নিউটন বলেন যে তিনি 'লিবনিজের বুক ভাঙতে পেরে' চরম তৃপ্তি পেয়েছেন।

এই দুই বিতর্কের সময়কালের মধ্যেই নিউটন ক্যামব্রিজ ও একাডেমিক জগত ছেড়ে চলে আসেন। তিনি ক্যামব্রিজে ক্যাথলিক বিরোধীতায় এবং পরবর্তীতে পার্লামেন্টের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। শেষ পর্যন্ত রয়েল মিন্ট এর ওয়ার্ডেনের মতো লোভনীয় পদ অর্জন করেন। এখানে এসে তিনি এবার সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে তাঁর বুদ্ধি খরচ করতে থাকেন উগ্র অপকৌশলের পেছনে। অবশ্য এখানে তিনি নকলবাজির বিরুদ্ধেও তীব্র আন্দোলন শুরু করেন। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু ব্যক্তিকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যদণ্ডও দেন।

সূত্রঃ
[স্টিফেন হকিং এর বই 'A Briefer History of Time' থেকে অনূদিত। বইটির অনুবাদ সম্পন্ন করেছি।
সব কিছু ঠিক থাকলে বইটি আগামী বই মেলায় আলোর মুখ দেখবে। এটা Brief নয়, Briefer History of Time, বইটি আগের বইটির আপডেট ভার্সন] 
Category: articles
কয়েক দিন ধরে এমনিতেই এ বিষয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল। ইচ্ছেটা ত্বরান্বিত হল একজন পাঠকের কমেন্ট পেয়ে। তিনি উজ্জ্বল তারাদের গল্প পড়ে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
প্রশ্নঃ
এখানে তারাদের বিষুবলম্ব দেওয়া আছে। আমাদের মাথার উপরকার বিষুবলম্ব +২৩ ডিগ্রি ।।এটা হতে কীভাবে তারাদের নির্ণয় করব? ১ ডিগ্রি পার্থক্যের জন্য কতটুকু উত্তর বা দক্ষিণে যাব?
(Avi Dewan)

উত্তরঃ
প্রথমে দেখি বিষুব লম্ব কাকে বলে? পৃথিবীর বিষুব রেখা থেকে ঠিক উপরে আকাশের কল্পিত রেখার নাম খ-বিষুব। খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণের অবস্থানকে বিষুব লম্ব দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উত্তরে গেলে '+' চিহ্ন ও দক্ষিণে গেলে মাইনাস (-) চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীর বিষুব লম্ব (+১৯) ডিগ্রি। তাই আমাদের অক্ষাংশ ২৩ ডিগ্রি উত্তর বলে এটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়।
আরো পড়ুনঃ 
☛  বিষুব লম্ব কাকে বলে?

খালি চোখে আমরা একসাথে যতগুলো তারা দেখি তার সংখ্যা কয়েক হাজার। এখন ধরুন দুটি উজ্জ্বল তারকা কিছুটা দূরে অবস্থান করছে। আমরা এ দুটির নাম জানলাম। এদের বিষুব লম্বও জানলাম। ধরলাম, জানা আছে যে একটি তারা অপরটি থেকে ৫ ডিগ্রি দূরে আছে। এই বিষুব লম্ব কাজে লাগিয়ে বাস্তব রাতের আকাশে এদেরকে খুঁজে পাব কীভাবে? উল্লেখ্য যে বিষুব রেখাকে উদ্দেশ্য করে নিবন্ধটি লিখলেও আকাশের এই পরিমাপ অন্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। যেমন, বিষুব লম্বতো শুধু উত্তর- দক্ষিণে কাজ করে। আমাদের এই পরিমাপ কাজ করবে পূর্ব- পশ্চিম ও কোনাকুনি যে কোনো দিকেই।
আরো পড়ুনঃ
আমরা খালি চোখে কত তারা দেখি?

প্রথমে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে পুরো আকাশ সব মিলিয়ে একটি গোলকের মতো ৩৬০ ডিগ্রি। এর মধ্যে আমরা একসাথে এর অর্ধেক মানে ১৮০ ডিগ্রি দেখতে পাই, কারণ বাকিটা থাকে আমাদের উল্টো পাশে। পূর্ব থেকে পশ্চিম বা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিগন্ত পর্যন্ত কৌণিক দূরত্ব ১৮০ ডিগ্রি। কোনাকুনিভাবে দুটি বিপরীত বিন্দু যোগ করলেও ১৮০ ডিগ্রিই পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে যে কোনো সরল রেখা মানেই কিন্তু ১৮০ ডিগ্রি। আর, দিগন্ত থেকে মাথার উপর পর্যন্ত কৌণিক দূরত্ব হচ্ছে ৯০ ডিগ্রি।
বিভিন্ন ডিগ্রির পরিমাপ 
এবার মূল কাজ শুরু করি। আমরা খালি হাতেই আকাশ মাপবো। এ জন্যে আপনাকে ডান বা বাম হাতটি লম্বা করে প্রসারিত করে সামনে মেলে ধরতে হবে। এবার আকাশের যে দিকের পরিমাপ নিতে চান হাতটি সেদিকে ধরুন। হাতকে টান টান করে রাখতে হবে, বাঁকিয়ে রাখা যাবে না। এবার বিভিন্ন ডিগ্রির জন্যে বিভিন্ন কৌশল খাটাতে হবে। কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ বা মোটা, চিকন- সবার ক্ষেত্রেই এই কৌশল কাজ করবে। তাই উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন নেই।
☛ আপনার হাতের তর্জনিটির প্রস্থ হবে আকাশের ১ ডিগ্রির সমান। তাহলে দুই ডিগ্রি মাপতে হলে দুই হাতের দুটি তর্জনি ধরুন।
☛ ৩, ৪ বা ৬ ডিগ্রি মাপার নিয়ম ছবি থেকে দেখে নিন। বুঝতেই পারছেন, একটু বুদ্ধি খাটিয়েই এখান থেকে ৫ ডিগ্রিও মাপা যাবে। অবশ্য পাঁচ ডিগ্রি মাপার আরেকটি উপায় আছে, যা একটু পরেই বলছি।
☛ ১০ ডিগ্রি মাপতে হলে হাতকে মুঠো বানিয়ে মুঠোর ব্যাস (এক পাশ থেকে অপর পাশ) দেখতে হবে।
☛ ২৫ ডিগ্রি মাপতে হলে মুঠো থেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাকে যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দিতে হবে।
আকাশের ডিগ্রি পরিমাপে আঙ্গুল ও মুষ্ঠি
সপ্তর্ষীমণ্ডলী থেকে ধ্রুব তারার কৌণিক দূরত্ব প্রায় ২৫ ডিগ্রি

☛ ৫ ডিগ্রি মাপার আরেকটি কৌশল হল হাতের মাঝের তিনটি আঙ্গুলকে মেলে ধরা।
৫ ডিগ্রি মাপার উপায় 

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর দুটি নক্ষত্র দুবে ও মেরাক ৫ ডিগ্রি দূরে। এই দুটিকে যোগ করে ছয় গুণ সামনে গেলেই পাওয়া যায় ধ্রুবতারা। 
☛  ১৫ ডিগ্রি মাপতে হলে তর্জনি ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলির একটিক অন্যটির উল্টো দিকে টান টান করে ছড়িয়ে রাখতে হবে।
১৫ ডিগ্রি মাপার উপায় 

ধ্রুবতারা থেকে কোচাবের কৌণিক দূরত্ব ১৫ ডিগ্রি
☛ ৫০ ডিগ্রি মাপার জন্যে কী করা যায়? দুই হাতকে মিলিয়ে একত্রে ২৫ ডিগ্রি করে মাপলেইতো হয়ে গেল। এইভাবে-
সপ্তর্ষীমণ্ডলী থেকে সিংহমণ্ডলীর উজ্জ্বলতম ও আকাশের ২১ তম উজ্জ্বল নক্ষত্র রেগুলাসের কৌণিক দূরত্ব ৫০ ডিগ্রি 

চাইলে ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন। এতে বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 

আরো পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
তারামণ্ডলীর পরিচয়
Category: articles

বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয় দুটি তারা জড়িত আছে ব্যাপারটায়। আসলেই তাই। তবে একটু সতর্ক হতে হবে। দুটি তারকা নিয়ে আরেক ধরনের সিস্টেম গঠিত হতে পারে, যার নাম বাইনারি স্টার।
সাধারণত পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা দুটি তারকাকে ডাবল স্টার বলে। বাংলায় একে অনেক সময় যুগলতারা বলা হয়।
অন্তত দুটি কারণে একাধিক তারকা ডাবল স্টার নাম পেতে পারে। এক, হতে পারে এরা বাইনারি স্টার। বাইনারি স্টার হচ্ছে দুটি তারকার এমন একটি ব্যবস্থা যাতে এরা একে অপরকে উভয়ের যৌথ মহাকর্ষ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এদেরকে বাংলায় সাধারণত জোড়াতারা নামে ডাকা হয়।
বাস্তবে অনেক দূরে অবস্থিত দুটি তারা আকাশের একই দিকে অবস্থিত হলেও ডাবল স্টার দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এদের মধ্যে কোনো মহাকর্ষীয় আকর্ষণ থাকে না। নিছক ঘটনাক্রমে এদেরকে কাছাকাছি দেখা যায়।
বকমণ্ডলীর ডাবল স্টার আলবিয়েরো
১৭৮০ সালের দিক থেকে জ্যোতির্বিদরা ডাবল স্টারদের দূরত্ব ও এদের নিজেদের কৌণিক দূরত্ব বের করা শুরু করেন। যদি এদের আপেক্ষিক গতি কক্ষপথের চাপের মতো দেখা যায়, অথবা এদের প্রকৃত গতির তুলনায় আপেক্ষিক গতি যদি ক্ষুদ্র হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয় এরা বাইনারি স্টার। অন্য ক্ষেত্রে এরা দেখতেই ডাবল, বাস্তবে একে অপরের সাথে সম্পর্কহীন।
সপ্তর্ষীমণ্ডলীর নক্ষত্র মিজার একটি যুগলতারা। ১৬৮৫ সালে দেখা যায় রাতের আকাশের ১৩তম উজ্জ্বল নক্ষত্র অ্যাক্রাক্সও একটি যুগলতারা। এরপর থেকেই ডাবল স্টারের খোঁজার হিড়িক পড়ে যায়।
দেখা যায় যে উত্তর গোলার্ধের আকাশে আপাত উজ্জ্বলতা +৯ এর বেশি এমন প্রায় ১৮টি তারকার মধ্যে ১ টি করে তারকা যুগলতারা গঠন করে, যদি ৩৬ ইঞ্চি টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলে।
বকমণ্ডলীর নক্ষত্র আলবিয়েরো একটি ডাবল স্টার।
আরো পড়ুনঃ 
এ সপ্তাহের তারাঃ মিজার ও অ্যালকর 
সপ্তর্ষীমণ্ডলীর ডাবল স্টার মিজার ও অ্যালকর 
সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Mizar_and_Alcor
২। http://astrobob.areavoices.com/2013/07/26/check-out-albireo-summers-most-spectacular-double-star/
Category: articles

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ
আজকে রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে এর চারপাশে বলয়ের মতো দেখা গেল। এটা কেন ও কীভাবে হয়েছে? দৃশ্যটা ছিল এ রকমঃ
চাঁদের চারদিকে বলয়
(প্রশ্ন করেছেন, ইমরান হোসাইন) 

উত্তরঃ
ঐ রাতে চাঁদের চারপাশে যে দৃশ্য দেখা গেছে একে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন হ্যালো। এটা চাঁদ ও সূর্য দুটোর ক্ষেত্রেই ঘটে। বাংলায় একে কিরীট বা জ্যোতির্বলয় বলা হয়।
কিন্তু, এই হ্যালো কীভাবে তৈরি হয়?
একটি আদর্শ মুন হ্যালো

এই বলয় তৈরির মূল কারণ উঁচু আকাশের পালকের মতো হালকা নরম মেঘ। এর নাম অলক মেঘ (cirrus cloud)। অনেক সময় আকাশে মেঘের অস্তিত্ব দেখা না গেলেও হ্যালো চোখে পড়ে। এর কারণ, এই মেঘ খুব সহজে চোখে পড়ে না, যদিও উপরের প্রথম ছবিটিতে মেঘের ঘনত্ব বেশি বলে এদেরকে দেখা যাচ্ছে। এই মেঘগুলো আমাদের মাথার প্রায় বিশ হাজার ফুট বা তারও ওপরে চলাচল করে। একটি হিসাব মতে এদের উচ্চতা ভূমি থেকে ৬ থেকে ৯ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত। অথচ ভূমি থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেও অনেক সময় বিভিন্ন মেঘ থাকে।

কিন্তু এই মেঘের সাথে হ্যালোর সম্পর্ক কী? এই অলক মেঘদের মধ্যে থাকে বরফের লক্ষ লক্ষ স্ফটিক। বরফের এই স্ফটিকেরা চাঁদের আলোকে (আলোর মূল উৎস অবশ্যই সূর্য) একই সাথে প্রতিসরিত ও প্রতিফলিত করে। ফলে হ্যালোও অনেকটা রংধনুর গোল হয়। অবশ্য রংধনুর সম্পূর্ণ বলয় আমরা সাধারণত দেখি না, কারণ অধকাংশ ক্ষেত্রেই নিচের অংশ থাকে পৃথিবীর আড়ালে (উল্টো পাশে)। রংধনুর মতোই চাঁদ বা সূর্যের হ্যালোও একেক জায়গা থেকে একেক রকম দেখায়।
বরফের স্ফটিকে আলোর প্রতিসরণ 
বরফের স্ফটিকদের আকার নির্দিষ্ট বলে হ্যালোও সব সময় প্রায় একই সাইজের হয়। এই বলয়ের ব্যাস প্রায় সব সময় ২২ ডিগ্রি হয়। ভাগ্য ভালো হলে অনেক সময় মূল বলয়ের বাইরে ৪৪ ডিগ্রি ব্যাসের আরেকটি বলয় দেখা যায়। আকাশের ডিগ্রির হিসাব সাধারণ কোণের হিসাবের মত নয়। পুরো আকাশ যেহেতু মোট ৩৬০ ডিগ্রি, তাই যে কোনো সময় আমাদের মাথার উপর শুধু ১৮০ ডিগ্রি থাকে, বাকিটা থাকে পৃথিবীর উল্টো পাশে। আর এখানে ডিগ্রির হিসাব হল এই ১৮০ ডিগ্রির মধ্যে কোন বস্তু কতটুকু জায়গা দখল করেছে তা। এটা পূর্ব-পশ্চিমেও হিসাব করা যায়, আবার উত্তর- দক্ষিণ বা অন্য কোনো দিকের ভিত্তিতেও হিসাব করা যায়। আমাদের হাতকে লম্বা করে সামনে বাড়িয়ে দিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করে আকাশের দিকে ধরলে এক মুষ্ঠির পরিমাণ হয় ১০ ডিগ্রি।
হাত দিয়ে আকাশ মাপার কৌশল 

চাঁদ ও সূর্যের আলোর বিভিন্ন কারসাজিতে আরো নানা ধরনের আলোকীয় দৃশ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সান করোনা, মুন করোনা, সান বা মুন ডগ ইত্যাদি।


আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?

সূত্রঃ
১। http://nenes.eas.gatech.edu/Cloud/Clouds.pdf
২। http://home.hiwaay.net/~krcool/Astro/moon/moonring/
৩। http://earthsky.org/space/what-makes-a-halo-around-the-moon
Category: articles

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬

ফরাসী জ্যোতির্বিদ চার্লে মেসিয়ে ছিলেন মূলত ধূমকেতু শিকারী। অনেকগুলো বস্তুকে তিনি এক সময় ধূমকেতু মনে করে তালিকাভূক্ত করলেও পরে জানা যায় এরা ধূমকেতু নয়। তিনি হতাশ হলেন। পরে এদের পেছনে সময় নষ্ট করা থেকে বাঁচতে এদের একটি তালিকা করলেন। তাঁর হতাশা থেকে উৎপন্ন সেই তালিকার জন্যেই বর্তমানে তিনি বিখ্যাত। বর্তমানে এই তালিকায় ১১০ টি বস্তু আছে। তাঁর নামানুসারেই বস্তুগুলোকে বলা হয় মেসিয়ার অবজেক্ট। যেমন অ্যান্ড্রোমিডা গ্যলাক্সিকে বলা হয় মেসিয়ার ৩১ বা সংক্ষেপে এম ৩১।
চার্লে মেসিয়ে 
১৭৩০ সালের এই দিনে (২৬ জুন) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের ১২ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দশম। অল্প বয়সেই তাঁর ৬ জন ভাই-বোন মারা যায়। ১৭৪১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে হারান বাবাকে। অর্থনৈতিক কারণে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও বাসায় বড় ভাই নিজেই তাকে পড়াতে থাকেন। ১৭৪৪ সালের ছয় লেজ বিশিষ্ট ধূমকেতু এবং ১৭৪৮ সালে তাঁর নিজ শহরে দৃশ্যমান সূর্যগ্রহণ তাঁকে জ্যোতির্বিদ্যার দিকে আগ্রহী করে তোলে। শুরু করে আকাশ দেখা। ২১ বছর বয়সে তিনি ফরাসী নৌবাহিনীর মহাকাশ বিভাগে যুক্ত হন।  ১৭৫১ সালে ফরাসী নৌবাহিনীর জ্যোতির্বিদ নিকোলা দেলিসলে তাঁকে তাঁর পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখার পরামর্শ দেন। তাঁর কথা মত, মেসিয়ে সর্বপ্রথম ১৭৫৩ সালে সূর্যের সামনে বুধ গ্রহের উপস্থিতির রেকর্ড রাখেন।
১৭৫৯ সালে তিনি মেরিন অবজারভেটরির প্রধান জ্যোতির্বিদ হন এবং ১৭৭১ সালে নিজেই নৌবাহিনীর অ্যাস্ট্রোনোমার নিযুক্ত হন।

১৭৬৪ সালে তিনি রয়েল সোয়াইটির ফেলো মনোনীত হন, ১৯৬৯ সালে হন রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স এর বিদেশি সদস্য। ১৭৭০ সালে যুক্ত হন ফ্রেঞ্চ একাডেমি অব সায়েন্স এর সাথে।
খুঁজতে গিয়েছিলেন ধূমকেতু, পেয়ে গেলেন আরো বহু কিছু। সময় বাঁচাতে গিয়ে তাঁর বন্ধু ও সহকারী পিয়েরে মেকেইকে সাথে নিয়ে এগুলোর তালিকা করে ফেললেন। বর্তমানে এই তালিকায় ৩৯টি গ্যালাক্সি, ৭ টি নেবুলা বা নীহারিকা, ৫টি গ্রহ নীহারিকা এবং ৫৫টি তারা স্তবক (Star Cluster) আছে।
১৭৭৪ সালে  প্রথম প্রকাশিত এই তালিকায় ৪৫ টি বস্তুর নাম ছিল। এতে যে শুধু তাঁর আবিষ্কৃত বস্তুই ছিল তা নয়, তার আগের জ্যোতির্বিদদের পর্যবেক্ষণকৃত বস্তুও এতে ছিল। প্রকৃতপক্ষে প্রথম প্রকাশিত ৪৫ টি বস্তুর মধ্যে তাঁর নিজের আবিষ্কৃত ছিল মাত্র ১৭টি। ১৭৮০ সাল নাগাদ তালিকাতে বস্তুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০। তালিকার চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৭৮১ সালে। এতে ১০৩ টি বস্তুর তালিকা ছিল। ১৯২১ থেকে ১৯৬৬ সালে এই তালিকায় আরো ৭টি বস্তুকে যুক্ত করলেন। এই বস্তুগুলো মেসিয়ে বা মেকেই চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশ করার পরে পর্যবেক্ষণ করেন বলে নিজেরা যুক্ত করে যেতে পারেননি।
বর্তমানে পেশাদার ও শখের জ্যোতির্বিদরা সমানে এই বস্তুগুলোর নাম ব্যবহার করেন। এই বস্তুগুলোর তুলনামূলক উজ্জ্বলতার কারণে এরা শখের জ্যোতির্বিদদের কাছেও খুব জনপ্রিয় বস্তু।
সবগুলো মেসিয়ার বস্তুর ছবি 

অন্য দিকে ধূমকেতুকেও তিনি ভোলেননি। তিনি ৪০টি নেবুলা ছাড়াও ১৩টি ধূমকেতুও আবিষ্কার করেন।
১৮১৭ সালে, ৮৬ বছর বয়সে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর সম্মানে চাঁদের একটি গর্তের নাম মেসিয়ার এবং একটি গ্রহাণুর নাম ৭৩৫৯ মেসিয়ার রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তাঁর নামের সঠিক উচ্চারণ চার্লে মেসিয়ে যদিও চার্লস মেসিয়ার (ফরাসীঃ Charles Messier) বানানটি অধিক প্রচলিত।

[১] স্পেইস ডট কম
[২] উইকিপিডিয়া
Category: articles

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ ঢাকার আকাশে এত কম তারা দেখা যায় কেন? গ্রামেতো অনেক অনেক তারা দেখা যায়।
[উত্তম কুমার]

উত্তরঃ
রাতের আকাশে খালি চোখে আমরা একবারে দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই। খালি চোখে দৃশ্যমান সব তারার সংখ্যা যোগ করলে হয় ৯০৯৬ টি তারা। হিসাব দুটো কেন? কারণ হচ্ছে রাতের আকাশের অর্ধেক অংশ সব সময় পৃথিবীর উল্টো পাশে থাকে যা আমরা দেখতে পাই না। সময় যেতে যেতে তা পূব আকাশে দৃশ্যমান হতে থাকে। আবার একই সাথে দক্ষিণ ও উত্তর গোলার্ধের সব তারা দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
☛ খালি চোখে আমরা কত তারা দেখি?

কিন্তু উপরে বলা এত এত তারা দেখা যাবে চাঁদহীন, অন্ধকার এবং নির্বিঘ্ন আকাশে। এ জন্যে গ্রামে গেলে দেখা যায় রাতের আকাশ তারায় তারায় ভরপুর। কিন্তু শহরে এলেই তারারা উধাও, হাতে গোণা অল্প কিছু তারা দেখা যায়। এই সংখ্যা এক হাজারেও পৌঁছায় না। অধিকাংশ সময়ই থাকে কয়েকশোর কাছাকাছি। কিন্তু কেন? ঢাকা বা অন্যান্য শহরের আকাশে এত কম তারা কেন?
এর প্রধান কারণ হল শহরের আলোক দূষণ। কৃত্রিম আলোর কারণে প্রাকৃতিক আলো বা দৃশ্য ঝাপসা হয়ে পড়াকে বলা হয় আলোক দূষণ বা লাইট পোলিউশান (light pollution)।
তারার আলোরা শহরের কৃত্রিম আলোর কাছে হেরে যায়

ঢাকার আকাশে কম তারা থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে এর বায়ু দুষণ। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার আকাশে প্রতি দিন ৫০ টন সিসা নির্গত হয়।
আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা শহরের বায়ুতে প্রতি বছর ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম১০) মিশছে ৫৮ হাজার ৫২৪ টন। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তার ধুলো-ময়লা, কারখানার নির্গত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর পদার্থ। পাশাপাশি ২০ হাজার ৮১৯ টন অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) তথা লোহা, সিসা, জিংক ইত্যাদির বিষাক্ত জৈব মিশছে বাতাসে। এছাড়া প্রতি বছর ৬০ হাজার ২১৬ টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ১৪ হাজার ৮৬২ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও ৫৩ হাজার ৪৫ টন কার্বন মিশছে ঢাকার বায়ুতে।
বিস্তারিত দেখুন তিন নং সূত্রে।

রাতের আকাশের তারার সংখ্যা কেমন হবে তা দিনের আকাশের রং দেখেও আন্দাজ করা যায়। যদি আকাশ খুব নীল হয়, তাহলে অনেক অনেক তারা দেখা যাবে। কিন্তু দিনের আকাশ যদি হয় হালকা নীল, ধূসর, সাদা, বাদামী বা কমলা রঙের, তাহলেই সমস্যা। এ কথা প্রযোজ্য বায়ু দুষণের ক্ষেত্রে। বায়ু দুষণ না থাকলেও আলোক দুষণ রাতের আকাশে বারোটা বাজিয়ে দিতে পারেই। তবে বৃষ্টি হলে তার পরপর যখন আকাশ মেঘমুক্ত হয়, সেই সময় আকাশ শহরেও অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন রকম কারণে ঢাকায় রাতের আকাশের দিকে তাকালে কোণায় কোণায় কিছু উজ্জ্বল তারা, তারামণ্ডলী যেমন আদম সুরত, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, কিছু তারাভুজ যেমন সামার ট্রায়াঙ্গেল ইত্যাদি দেখা যায়। আরো অনুজ্জ্বল বস্তুরা থাকে চোখের আড়ালে।
আরো পড়ুনঃ 
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প

সূত্রঃ
১। http://www.bangladeshenvironment.com/index.php/polution-s/air-polution/291-air-pollution-in-dhaka-city
২। https://www.quora.com/Why-do-we-see-less-stars-in-the-skies-these-days
৩। বণিক বার্তা
Category: articles

বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ছোট বেলায় বইয়ে পড়তাম, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়। শুনে ভাবতাম চাঁদের মধ্যে একটি স্টোর রুম আছে যেখানে চাঁদ দিনের বেলায় সূর্যের আলো জমা করে রাখে। আর রাতে সেই আলো দিয়ে চাঁদ পৃথিবীকে আলোকিত করে।
ছোট্ট বেলার সেই অবুঝ জ্ঞানের প্রথম অংশ ঠিক ছিল, কিন্তু নিজের ভাবনা ছিল ভুল। তবে বইয়ের ভাষাকেও একটু দোষারোপ করতেই হয়। চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়- এভাবে বলার দরকার কী? এটা শুনলেই একটু একটু মনে হয়, হ্যাঁ, আলো জমা করে রাখা হয়।
সূর্যের আলোর মাধ্যমে পৃথিবী ও চাঁদ দুজনেই একে অপরকে আলোকিত করে

মূল কথায় আসি। বইয়ে আসলে বলা উচিৎ ছিল, চাঁদের নিজের কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফিলত করে পৃথিবীকে আলোকিত করে।  অর্থ্যাৎ, চাঁদ আসলে বিশাল বড় এক দর্পণ। অবশ্যই সাইজেই বড়ো, দর্পণ হিসেবে চাঁদের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এর পৃষ্ঠ খুব এবড়োথেবড়ো এবং ধূসর কালো।
চাঁদের পৃষ্ঠের এবড়োথেবড়ো ছবি

চাঁদ সূর্যের মাত্র ১২ ভাগ আলো প্রতিফলিত করতে পারে। তাছাড়া চাঁদ যেটুকু আলো প্রতিফলিত করে তার সবটুকু আমরা পাই না। এটা নির্ভর করে চাঁদ এর কক্ষপথের কোন জায়গায় আছে তার উপর।
পৃথিবী ঘুরছে সুর্যের চারদিকে, আর চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে
চাঁদের প্রথম ও শেষ চতুর্থকের সময় এর অর্ধেক অংশ আলোকিত হয়, কিন্তু এ সময়ের চাঁদ উজ্জ্বলতায় পূর্ণিমার চাঁদের মাত্র ৮ ভাগ। দুই চতুর্থকের সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দৃশ্যমান অংশের অর্ধেক দেখা যায়। এ সময় চাঁদ যথাক্রমে মধ্য রাতে উদিত হয় বা অস্ত যায়।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য
প্রতি মাসের বিভিন্ন সময় চাঁদকে বিভিন্ন নক্ষত্রের আশেপাশে দেখা যায়। যেমন চিত্রা, আলডেবারান ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
চাঁদ নিয়ে লেখা সব নিবন্ধঃ এখানে
সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/75891/why-does-the-moon-shine/
Category: articles

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

জ্বলন্ত গ্যাসের বিশাল এক অগ্নিগোলক আমাদের সূর্য। এর আলো এবং তাপ পেয়েই পৃথিবী হয়েছে সবুজ শ্যামল। তবে সূর্যের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট নয়। এর কোর, মানে কেন্দ্রভাগে তীব্র মহাকর্ষের কারণে অত্যাধিক চাপ ও তাপমাত্রা তৈরি হয়। এই তাপমাত্রা হয় ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৭ মিলিয়ন ফারেনহাইট) পর্যন্ত।
২০০৭ সালে মহাকাশযান হিনোদে এই ছবি তোলে

কেন্দ্রে নিউক্লকিয়ার ফিউসান বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচুর শক্তি (তাপ, আলো ইত্যাদি) উৎপন্ন হয়। এই শক্তি ছড়িয়ে পড়ে আরও বাইরের দিকে, পৃষ্ঠে এবং বায়ুমণ্ডলে। শুরুতে শক্তি পৌঁছে বিকিরণ অঞ্চলে (radiative zone)। এখানে এই শক্তি সর্বোচ্চ ১০ লাখ বছর পর্যন্ত এদিক- ওদিক ছোটাছুটি করে। এর পর এটি চলে আসে পরিচলন অঞ্চলে (convective zone)। এখানে তাপমাত্রা ২০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩৫ লাখ ফারেনহাইট) নিচে নেমে আসে। এখানে তৈরি হয় উত্তপ্ত আয়নিত গ্যাসের (প্লাজমা) বড়ো বড়ো বুদ্বুদ। এরা এখান থেকে পরবর্তী স্তর ফোটোস্ফিয়ার বা আলোকমণ্ডলের দিকে উঠতে থাকে।
আরো দেখুনঃ
☛  এক নজরে সূর্য

আলোকমণ্ডলের তাপমাত্রা ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা দশ হাজার ফারেনহাইট। সূর্যের এখানকার
বিকিরণই আলো হিসেবে ধরা পড়ে। এই আলোকমণ্ডলে অবস্থিত সৌর দাগ বা সৌরকলঙ্ক (sunspot) আশেপাশের দাগের চেয়ে কম উত্তপ্ত এবং কালো। বড়ো দাগগুলোর কেন্দ্রে তাপমাত্রা চার হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামতে পারে।
বায়ুমণ্ডলে পরের স্তরটি হল বর্ণমণ্ডল বা ক্রোমোস্ফিয়ার (Chromosphere)। এর তাপমাত্রা আলোকমণ্ডলের চেয়ে কম। মাত্র ৪৩২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উজ্জ্বল আলোকমণ্ডলের তীব্রতার কারণে এই স্তরের আলো দৃশ্যমান হয় না। কিন্তু চন্দ্রগ্রহণের সময় আলোকমণ্ডল চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়লে একে বলয়ের মতো দেখা যায়।
তাপমাত্রা হঠাৎ করে আবার বেড়ে যায় এর করোনা বা বহিস্থ বায়ুমণ্ডলে। এই অঞ্চলের অপর নাম কিরীট বা ছটামণ্ডল। এটা শুধু সূর্যগ্রহণের সময়ই দেখা যায়। এই সময় এর প্লাজমা মুকুটের বিন্দুর মতো বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২০ লাখ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
সূর্য সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো ও বেশি ভরের বস্তু। এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে গড়ে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার বা নয় কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। এখান থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে ৮ মিনিট ১৯ বা ২০ সেকেন্ড সময় লাগে। এটাকেও দূরত্বের একটি একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অর্থ্যাৎ, সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ৮ আলোকমিনিট দূরে অবস্থিত।
আরও পড়ুনঃ
পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?
আলোকবর্ষ কাকে বলে?
জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

সূত্রঃ
১। http://solarscience.msfc.nasa.gov/corona.shtml
২। http://www.space.com/17137-how-hot-is-the-sun.html
Category: articles
প্রশ্নঃ পৃথিবী যদি সেকেণ্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে নিজ অক্ষের উপর ঘুরতে থাকে তাহলে মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে স্থির দেখায় কেন?
অত জোরে নিজ অক্ষের উপর ঘুরলে তো মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় বাংলাদেশে অবতরণ করতে গেলে তো আমেরিকায় চলে যাওয়ার কথা! আর মহাকাশ থেকে তো পৃথিবীকে পাগলের মত ঘুরতে দেখা যায় না, তাহলে এর ব্যাখ্যা কি?
[রাকিব হাসান]

উত্তরঃ
প্রথমত, পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর সেকেন্ডে ৩০ কিমি. বেগে ঘুরছে না। বিষুব অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ হল ঘণ্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। আপনি যেটি উল্লেখ করেছেন সেটি হল সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ বেগ। কিন্তু তাতে আপনার প্রশ্ন বাতিল হচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ 
 ☛ পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত?
 ☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য কী?

পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরছে। দুই মেরুর ঠিক মাঝখানে বিষুব অঞ্চল অবস্থিত।
তাছাড়া আবর্তন বেগ পৃথিবীর সব জায়গায় সমান নয়। বিষুব রেখা থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে আবর্তন বেগ কমে যায়। আমাদের বাংলাদেশে পৃথিবীর আবর্তন হচ্ছে সেকেন্ডে ৪২৪ মিটার করে।
কিন্তু তবু প্রতি সেকেন্ডে ৪৬৪ বা ৪২৪ মিটার বেগও খুব একটা ছোট নয়। এই গতিতে যেতে থাকলে কোনো বাস তিনি সেকেন্ড পার হবার আগেই এক কিমি. পথ পার হয়ে যাবে। তাহলে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন মহাকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে না কেন?

একটা গল্প শুনি। একবার রাশিয়ায় একজন লোক দাবি করলেন তিনি খুব সহজে ভ্রমণ করার একটি কৌশল বের করেছেন। দরকার হবে শুধু একটি বেলুন। ধরুন কেউ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যেতে চাইছেন। তাহলে বাংলাদেশ থেকে একটি বেলুনে চেপে উপরে উঠে যেতে হবে। ইতোমধ্যে পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে বেলুনের নিচে ইউরোপ এসে যাবে। এখন নেমে পড়লেই হল। খুব সহজ ভ্রমণ। বিমান আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই এভাবে মিটে যেত।
এই কৌশল বাস্তবে কাজ করে না। এর কারণ হল, আমরা যখন বেলুনে চেপে উপরে উঠব, তখনো আমরা পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের মধ্যেই থাকব। ঘুরতে থাকব পৃথিবীর সাথেই। এটা যদি না হত তাহলে আমাদের কষ্ট করে বেলুনে চড়ার দরকার ছিল না। মাটি থেকে এক লাফ দিয়ে উপরে উঠে ৩ সেকেন্ড পরে নামলেই দেখা যেত এক কিলোমিটারের বেশি পশ্চিমে চলে গেছি। বাস্তবে আমরা যখন আকাশ পথে ভ্রমণ করি, তখনো পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরতেই থাকি।
বিমান নিজেও পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরতে থাকে 
এ জন্যেই বিমান থেকে তাকালেও আমরা পৃথিবীকে স্থিরই দেখব।
মূল কারণ পৃথিবীর অভিকর্ষ এতটা শক্তিশালী যে আমরা এর থেকে অনেক উপরে উঠলেও এর অভিকর্ষীয় টানের সীমানার মধ্যেই থেকে যাই। আর এই টানের কারণেই কিন্তু পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল আছে। আমাদের মাথার উপরে যে বায়ুমণ্ডল সেটিও পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরছে। আরেকটি মজার ব্যাপার হল, একটু আগে বলেছি কেউ লাফ দিলে তিন সেকেন্ডে এক কিলোমিটারেরর বেশি পথ যেতে পারবেন। আসলে যাবেন ঠিকই। কিন্তু পৃথিবী যদি তাকে নিজের অভিকর্ষ দ্বারা ধরে না রাখত তবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরার কারণে কিছুক্ষণ পরই তিনি পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। পৃথিবী ছুটে চলে যেত কক্ষপথ ধরে। এছাড়াও পৃথবীর অভিকর্ষ যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হত, তবে আমরা কেন্দ্রবিমুখী বলের কারণে এর পৃষ্ঠ থেকে আলাদা হয়ে যেতাম।
আরও পড়ুনঃ
পৃথিবীর আবর্তনের কারণে আমরা পড়ে যাই না কেন?

আবার বেলুনের ঘটনায় ফিরে আসি। বেলুনকে কি এমন কোনো উচ্চতায় পাঠানো সম্ভব না, যেখানে এটি পৃথিবীর সাথে ঘুরবে না? নিচে এসে আমরা দেখব পায়ের তলার পৃথিবী ঠিকই ঘুরে গেছে?
হ্যাঁ, সম্ভব। সেক্ষেত্রে বেলুনকে অনেক বেশি বেগ দিয়ে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে এটা বেলুন দিয়ে সম্ভব না। এই কাজ করা হয় রকেটের মাধ্যমে। এর জন্যে রকেটের প্রাথমিক বেগ হতে সেকন্ডে অন্তত ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার। এই বেগকে বলা হয় মুক্তি বেগ।
আরও পড়ুনঃ 
মুক্তি বেগের পরিচয়

এখন কথা হল, পৃথিবীর উপরের সব জায়গা থেকেই কি পৃথিবীকে স্থির দেখায়? অবশ্যই না। শুধু পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের অভ্যন্তর থেকেই এমনটা দেখাবে। আমরা টেল্কিস্কোপ দিয়ে সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহদের আবর্তন দেখি, কারণ আমরা এদের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের এতটা ভেতরে নই যে এরা আমাদেরকেসহ ঘুরবে। একইভাবে আমরা যদি যথেষ্ট দূরে গিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকাই তাহলে একেও ঘুরতে দেখব। আবর্তন ও প্রদক্ষিণ দুটোই দেখা যাবে।
দেখুন নিচের ভিডিও অনেক দূর থেকে সৌরজগৎসহ বিভিন্ন নক্ষত্রদের ঘূর্ণন দেখা যাচ্ছে। কারণ এই ছবি তোলা হয়েছে এদের অনেক দূর থেকে, এদের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ভেতর থেকে নয়।

এখন বাকি প্রশ্ন হল, মহকাশযান ফিরে আসার সময় এক জায়গায় অবতরণ করতে গিয়ে আরেক জায়গায় চলে যায় না কেন? এটাও এতক্ষণে মোটামুটি স্পষ্ট হবার কথা। মহাকাশযান ফিরে আসার বিভিন্ন কৌশলে প্রথমে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে স্বাভাবিকভাবে অবতরণ করে।
মহাকাশযানের ভেতরে আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা থাকে এটি কখন, কীভাবে কোথায় অবতরণ করবে। ফলে পৃথিবীর আবর্তনের কারণেতো দূরের কথা, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরলেও কোনো সমস্যা হয় না। 
Category: articles

শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০১৬

ইদানিং রাতের আকাশে গ্রহরা বেশ উজ্জ্বল। খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচটি গ্রহের মধ্যে তিনটিই এখন খুব উজ্জ্বল। এরা হল বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শনি। এদের মধ্যে বৃহস্পতি সবচেয়ে উজ্জ্বল। তবে আজকের রাতের আকাশে চাঁদের সাথে মঙ্গলের অবস্থানই সবচেয়ে দারুণ দৃশ্য।
চাঁদ, মঙ্গল ও শনির ছবি 

আশেপাশেই আছে শনি। এক্টমি নিচে ও উত্তরে। অন্য দিকে বৃহস্পতি আছে মাথার উপর থেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে সবাই আস্তে আস্তে চলে যাবে পশ্চিমে। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

টেলিস্কোপের মাধ্যমে রাতের আকাশের সৌন্দর্য চলে আসে হাতের নাগালে। কিন্তু টেলিস্কোপ কেনার আগে একটু বুদ্ধি খাটানো দরকার। না হলে দেখা যাবে, টেলিস্কোপ রাতের আকাশের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেকেই আবার এত উচ্চ কনফিগারেশনের টেলিস্কোপ কিনে ফেলেন যার কোন প্রয়োজনই নেই, অথবা যা বিগিনারদের জন্যে উপযুক্ত নয়। তাহলে কী করলে ভালো হয়? চলুন দেখা যাক।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য 

আমরা জ্যোতির্বিদ্যার বইয়ে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রাতের আকাশের দারুণ দারুণ ছবি দেখি। মনে রাখতে হবে এই ছবিগুলো সাধারণ টেলিস্কোপে তোলা নয়। এসব ছবি তোলা হয় উচ্চ ক্ষমতার টেলিস্কোপ, ক্যামেরার দীর্ঘ সময়ের এক্সপোজার বা স্পেইস টেলিস্কোপ দিয়ে। এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে আকাশের বস্তুদের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য চলে আসে চোখের খুব কাছে। অনেক সময় কোনো কোনো ছবি একাধিক ডিভাইসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।
তাই বলে হতাশ হবার কোনো প্রয়োজন নেই। ছোট্ট একখান টেলিস্কোপ আপনার চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করতে সক্ষম। আপনার টেলিস্কোপের প্রথম লক্ষ্যই হবে চাঁদ। এটিতো রাতের আকাশের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল বস্তু। এমনকি ৩০ পাওয়ারের (৩০ পাওয়ারের অর্থ বস্তুটাকে ৩০ গুণ কাছে থেকে দেখলে যেমন দেখা যেত তেমন দেখা) একটি টেলিস্কোপ আপনাকে চাঁদের কালো অঞ্চল, উঁচু- নিচু অঞ্চল এবং এর শত শত খাদও দেখিয়ে দেবে। আরও বেশি শক্তির টেলিস্কোপ হলে চাঁদের পুরোটাই টেলিস্কোপের আইপিসে (যেখানে চোখ রাখা হয়) এঁটে যাবে। দেখা যাবে এটি ক্রমশ দৃষ্টি থেকে সরে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে পৃথিবীর আবর্তনের কারণে এটি পশ্চিমে সরে যাচ্ছে বলে। এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনার মনে হবে, আপনি আর এ জগতে নেই। মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন একজন নভোচারী  হিসেবে!
২০ থেকে ৩০ পাওয়ারের টেলিস্কোপ আপনার সামনে গ্রহদেরকেও দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলবে। কিন্তু পাওয়ার যদি হয় ৪০, আপনি চাঁদের মতো বুধশুক্র গ্রহেরও দশা (বড়ো- ছোট হওয়া) দেখতে পাবেন। দেখবেন মঙ্গলের লাল রঙের ছড়াছড়ি, বৃহস্পতির প্রধান চারটি উপগ্রহ যা গ্যালিলিও সবার আগে দেখেছিলেন, শনির বলয় ও উপগ্রহ টাইটান, তারার মতো দেখতে ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ। আরও দেখবেন (অন্ধকার আকাশ হলে ভালো হয়) ডাবল স্টার, নক্ষত্র গুচ্ছ, নেবুলা, প্রায় আড়াই লাখ দূরের অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি ইত্যাদি।
এখন বাস্তবতা হল, এই জিনিসগুলো দেখার জন্যে আপনি যদি মুখিয়ে থাকেন, তাহলে টেলিস্কোপ কেনার আগে অন্তত একটিবার একটি বাইনোকুলার বা দুরবিন কেনার কথা ভাবুন। শুনতে হাস্যকর লাগলেও পেশাদার ও অপেশাদার দুই ধরনের জ্যোতির্বিদদেরই পরামর্শ এটাই। আপনি যদি একজন পোড়-খাওয়া আকাশ পর্যবেক্ষককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে উত্তর পাবেন এ রকম,
প্রথমে কিছু দিন খালি চোখে আকাশ দেখুন, এরপর একটি বাইনোকুলার কিনুন।
বাইনোকুলার কিনতেঃ
অনেকেই বাইনোকুলারকে একেবারেই অবহেলা করেন। কিন্তু সত্যি বলতে, অনেকগুলো কাজের জন্যে বাইনোকুলারই হচ্ছে সেরা ডিভাইস। একটি ৭ পাওয়ারের বাইনোকুলার দামেও স্বস্তা, বহন করতেও ঝামেলা কম। আরেকটু পাওয়ার বাড়িয়ে নিলেই এটি আপনাকে সাধারণ টেলিস্কোপের চেয়ে ভালো সেবা দিবে। আমার নিজের ২০ পাওয়ারের দুরবিন দিয়ে চাঁদের স্পষ্ট দৃশ্যসহ খালি চোখের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি তারা দেখি। অন্যদের মতোই বাইনোকুলারে চোখ রেখে রাতের আকাশ দেখে আমি অবাক ও মুগ্ধ না হয়ে পারিনি।
অনেকেই ৭ x ৫০ দুরবিন বেশি ব্যবহার করেন। এখানে ৭ হচ্ছে এর পাওয়ার। বস্তুটিকে ৭ গুণ কাছ থেকে দেখলে যেমন দেখা যেতে এটা দিয়ে তাই বোঝায়। আর ৫০ হচ্ছে এর অভিলক্ষ্যের ব্যাস।
ছবিতে দেখুনঃ-
দুরবিনের হিসাব বুঝতে হলে এর আইপিস ও অভিলক্ষ্য চিনতে হবে
টেলিস্কোপে ও বাইনোকুলার নিয়ে আরও নিবন্ধ পড়তে চোখ রাখুন এইএই লিঙ্কে। 
Category: articles

সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য-পিপাসুরা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। কিন্তু খালি চোখে আমরা ঠিক কতগুলো তারা দেখতে পাই? প্রশ্নটির উত্তর এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব নয়। এটা নির্ভর করে আপনার বয়স, চোখের ক্ষমতা, এলাকা, ঋতু, আবহাওয়া, চাঁদ থাকা না থাকা ইত্যাদিসহ অনেকগুলো বিষয়ের উপর। কিন্তু তবুও একটা উত্তর যদি শুনতেই হই তবে সংখ্যাটা হবে কয়েক হাজার। গল্প- উপন্যাসের বইতে যে লাখ লাখ তারার কথা থাকে তা নিছকই বাড়াবাড়ি।
আমেরিকার টেক্সাসের ম্যাকডোনাল্ড পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের কাছে আকাশের দৃশ্য
আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।
চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি।

মহাবিশ্বে মোট কত তারা আছে জানেন? তা কেউ জানে না। কারণ সত্যিকারের মহাবিশ্ব কত বড়ো তাই আমরা জানি না। তবে আমরা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কথা বলতে পারি, অর্থ্যাৎ মহাবিশ্বের প্রায় চৌদ্দশো কোটি বছরের প্রসারণে এর যত দূর পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা। আধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা অন্তত ১০ হাজার কোটি গ্যালাক্সি দেখতে পাই। প্রতি গ্যালাক্সিতেই গড়ে আবার ১০ হাজার কোটি তারকা থাকে। তাহলে শুধু আমাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যেই কত কত তারা ভাবুনতো একবার! ১ এর পরে অন্তত ২২টা শূন্য দিলে যা হয় ততগুলো!
এর মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই আছে প্রায় চারশো বিলিয়ন বা চল্লিশ হাজার কোটি তারা। আমরা খালি চোখে যাদেরকে দেখি তারা সব এখানকারই তারকা।
যেসব তারার আপাত উজ্জ্বলতা (+৬) অথবা (+৬.৫) এর নিচে আমরা শুধু তাদেরকেই খালি চোখে দেখি। আপাত উজ্জ্বলতার মান বেশি হওয়া তারার কম উজ্জ্বলতা বোঝায়।
সর্বোচ্চ (+৬.৫) মাত্রার তারা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই
আরও পড়ুনঃ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমরা সবাই হয় উত্তর নয়ত দক্ষিণ গোলার্ধে বাস করি। বাংলাদেশে থাকায় আমরা আছি উত্তর গোলার্ধে। এখন উভয় গোলার্ধ থেকে দেখা তারার সংখ্যা কিন্তু সমান হবে না। এমনকি একই গোলার্ধেও অক্ষাংশের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যাবে আকাশের তারার সংখ্যা। অন্য দিকে, আপনি যখন রাতে আকাশের দিকে তাকালেন তখনওতো প্রায় অর্ধেক তারা রয়ে গেছে পৃথিবীর উল্টো পাশের আকাশে। আর সূর্য সব সময় কিছু না কিছু তারাকে ঢেকে রাখে। এরাই হল রাশিচক্রের তারা। এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে এদেরকে দেখা যায় না। তাই তারা গুনতে হলে কয়েক মাস এ জন্যেও অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রাশিচক্র কাকে বলে?

তাহলে আসলে কত তারা দেখা যায়। ঠিক আছে, আপনি যদি মাসের পর মাস সময় নিয়ে দুই গোলার্ধ ঘুরে এসে চাঁদহীন আকাশের তারাগুলো গুনতে পারেন, তবে সব মিলিয়ে প্রায় নয় হাজার তারা খালি চোখে দেখবেন। আগেই বলেছি, আমরা খালি চোখে সর্বোচ্চ ৬.৫ মাত্রার নক্ষত্র দেখতে পাই। ইয়েল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ ডরিট হফলেইট এই সীমা পর্যন্ত তারগুলো গুনে ফেলেছেন। সংখ্যাটি হয়েছে ৯০৯৬।
এটা হচ্ছে সর্বমোট সংখ্যা। এবার দুই গোলার্ধ ভাগ করে দিলে ভাগে পড়বে গড়ে ৪৫৪৮টি তারা। সব সময় আবার আকাশের এক অংশ আমাদের উল্টো পাশে থাকে। তাই আবার দুই দিয়ে ভাগ দিলে পাব ২২৭৪ টি তারা। এ জন্যেই আমরা বলি খালি চোখে আমরা একবারে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই।
আরও পড়ুনঃ উজ্জ্বল তারাদের গল্প
এখানে প্রধান ২০টি তারকা খুঁজে বের করার উপায় ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বলা আছে।

কিন্তু সাথে একখানা দুরবিন রাখুন। এই সংখ্যা লাফ দিয়ে উঠে যাবে ২ লাখে! আপনি দেখবেন ৯ মাত্রার তারাগুলোও। ১৩ মাত্রার তারা দেখাতে সক্ষম এমন টেলিস্কোপ হাতে পেলে আপনি দেড় কোটি পর্যন্ত তারা দেখতে পাবেন। দারুণ, তাই না!

সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/102630/how-many-stars-are-there-in-the-universe/
২। http://www.skyandtelescope.com/astronomy-resources/how-many-stars-night-sky-09172014/
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

পৃথিবীকে সৌরজগতের কেন্দ্র ধরে নিলে শুক্র গ্রহের গতিপথ দেখতে দারুণ সুন্দর মনে হয়। এক্ষেত্রে শুক্র গ্রহের গতিপথ দেখতে গোলাপ ফুলের পাপড়ির একটি পেন্টাগ্রাম তৈরি করে। আট বছর পরপর এটি একই দিনে আকাশের একই জায়গায় ফিরে আসে। 
শুক্র গ্রহ পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করছে ধরে নিলে এর গতিপথ এমন দেখা যায়। এখানে ২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এর গতিপথ দেখানো আছে। 
 ছবিটাকে অবশ্য একটু সিম্পল করে আঁকা হয়েছে। 

তথ্য সূত্রঃ Earth Sky

Category: articles

শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১৬

তিমি ছায়াপথ আসলেই দেখতে তিমির মত

হ্যাঁ, দেখতে তিমির মত লাগে বলেই গ্যালাক্সিটি এ নাম পেয়েছে। এর প্রকৃত নাম এনজিসি ৪৬৩১। এটি একটি সর্পিল বা কুন্ডলিত (Spiral) ছায়াপথ। এর দূরত্ব ২ কোটি ৫০ লাখ আলোকবর্ষ। প্রান্তিকভাবে দেখলে একে দেখতে অনেকটাই তিমি মাছের (তিমি আসলে মাছ নয়) মত দেখায়। এটি আকারে অনেকটা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মতই। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬

চিত্রা (Spica) রাতের আকাশের ১৫ তম উজ্জ্বল নক্ষত্র। এটি রাশিচক্রের নক্ষত্র। ১৩টি রাশিচক্রের মধ্যে কন্যামণ্ডলীতে এর অবস্থান। কন্যামণ্ডলীতে উজ্জ্বলতায় সেরা।

খুঁজে পাবার উপায়
এর আগে ৪র্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীর কথা জেনেছিলেন। স্বাতী পাওয়া গিয়েছিল সপ্তর্ষীমণ্ডলীর সাহায্যে, সপ্তর্ষী থেকে বৃত্তচাপ এঁকে। বৃত্তচাপটি আরেকটি বাড়িয়ে দিলেও পাবেন চিত্রা। মে, জুন,জুলাই মাসগুলো এদেরকে দেখার অন্যতম সেরা সময়। জুনের প্রথম সপ্তাহে রাত ১০টার দিকে স্বাতী একেবারে মাথার উপর থাকে। চিত্রা তার দক্ষিণে।

সপ্তর্ষী থেকে স্বাতী ও চিত্রা 


Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...