Advertisement

মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

আজ ৩০ আগস্ট।
১৮৭১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন কিউই পদার্থবিদ আর্নেস্ট রাদারফোর্ড।

রসায়ন থেকে পদার্থবিদ বনে যাওয়া বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড

নিউজিল্যান্ডের এই বিজ্ঞানী মূলত ছিলেন রসায়নবিদ। কিন্তু পরবর্তীতে পরিচিতি লাভ করেন 'নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানের জনক' হিসেবে । তিনিই সবার আগে ১৯১১ সালে আবিষ্কার করেন যে প্রতিটি পরমাণুর একটি চার্জিত ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস থাকে, যার চারপাশে থাকে বিশাল শূন্যস্থান। আর এই নিক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রনরা সর্বদা বৃত্তাকার পথে ঘুরছে। তাঁর এই মতবাদ পরে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল (বা সৌর-মডেল) বলে পরিচিত হয়েছিল। ১৯১৯ সালে প্রোটন আবিষ্কার করার কৃতিত্বও তার। নিউক্লিয়াসে নিউট্রনের অস্তিত্বের কথাও তিনিই প্রথম কল্পনা করেন। মৌলের ভাঙন ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের রসায়ন নিয়ে তার সফল গবেষণার জন্য তিনি ১৯০৮ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

নিউজিল্যান্ডের নেলসন শহরের কাছে তৎকালীন স্প্রিং গ্রুভ (বর্তমান ব্রাইটওয়াটার) নামক স্থানে ক্ষুদ্র একটি কাঠের তৈরি বাড়িতে ১৮৭১ সালের ৩০ আগস্ট তারিখে রাদারফোর্ডের জন্ম। বাবা-মায়ের বারো সন্তানের মাঝে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তার মা মার্থা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং বাবা জেমস ছিলেন কৃষক। রাদারফোর্ড পরিবার প্রবল আর্থিক সংকটের মাঝেও সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে কখনো দমে যাননি। বাল্যকালে হেভলক বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন। এরপর ১৬ বছর বয়সে নেলসন কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৮৯ সালে বৃত্তিলাভ করে ওয়েলিংটনে ইউনিভার্সিটি অব নিউজিল্যান্ড এর ক্যান্টারবারি কলেজে ভর্তি হন। তিনি ১৮৯৩ সালে গণিত এবং ভৌতবিজ্ঞানে দুইটি প্রথম শ্রেণিসহ এমএ পাশ করেন।

তিনি ক্যান্টারবারি কলেজে খুব অল্পকিছুদিনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ১৮৯৪ সালে লাভ করেন স্নাতক ডিগ্রি। প্রতিটি পরীক্ষাতেই বৃত্তি নিয়ে ১৮৯৫ সালে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ড চলে আসেন। এখানে এসে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিতে যোগদান করেন। কাজ শুরু করেন জে জে থমসনের অধীনে, যিনি তার কিছুদিনের মাথায়ই ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন।

ক্যামব্রিজে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে রাদারফোর্ডের গবেষণা চালানোর সময় রাদারফোর্ড অনেক উন্নতমানের রেডিও ওয়েভ ডিটেক্টর তৈরি করে বাজারে ছাড়লেন। অবশ্য পরবর্তীতে গবেষণা ছেড়ে অর্থ উপার্জনের এই পথে যেতে তাঁর মন সায় না দেওয়ায় তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। রাদারফোর্ড থোরিয়াম এবং ইউরেনিয়াম এর তেজস্ক্রিয়তা থেকে দুটি ভিন্ন তেজস্ক্রিয়তার বর্ণনা দেন এবং তাদের যথাক্রমে আলফা ও বিটা নাম দেন। ১৮৯৭ সালে তাঁকে বিএ রিসার্চ ডিগ্রি এবং ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের কৌট-ট্রটার স্টুডেন্টশিপ প্রদান করা হয়।

১৮৯৮ সালের এপ্রিলে রাদারফোর্ড জানতে পারলেন যে কানাডার মনট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকের চেয়ারটি খালি আছে। তিনি সেখানে আবেদন করে নিয়োগ পেয়ে গেলেন। মাত্র সাতাশ বছর বয়সে সেপ্টেম্বরে শেষদিকে তিনি মনট্রিলে এলেন এবং পরবর্তী ৯ বছর এখানেই থেকে গেলেন। ১৯০০ সালে তিনি ম্যারি জর্জিয়ানা নিউটনকে বিয়ে করেন। পরবর্তী বছর রাদারফোর্ড-ম্যারি দম্পতির ইলিন ম্যারি নামে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।

১৯০১ সালের অক্টোবর মাসে রাদারফোর্ড মনট্রিলে তরুণ রসায়নবিদ ফ্রেডারিখ সোদির (যিনি ১৯২১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন) সাথে একত্রে থোরিয়াম বিকিরণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন এবং প্রথাবিরোধী সিদ্ধান্ত নেন যে বিকিরণের মাধ্যমে এক পদার্থ অন্য পদার্থে পরিণত হয়। তার তেজস্ক্রিয়তার বিভেদ তত্ত্ব থেকে তিনি দেখান যে, তেজস্ক্রিয়তা কোনো আণবিক ঘটনা নয়, এটি একটি পারমাণবিক নিউক্লিয়ার ঘটনা। তিনি আরো বললেন যে, তেজস্ক্রিয় মৌলের হ্রাসের হার সূচকীয় এবং যে সময় পরপর তেজস্ক্রিয় তীব্রতা আদি তীব্রতার অর্ধেক হয় তাকে অর্ধায়ু বলে।

এই তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়ে তিনি পৃথিবীর বয়স নির্নয় করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত পৃথিবীর বয়স ছিল সেই সময়ের বিজ্ঞানীদের অনুমিত বয়সের চেয়ে অনেক বেশি। তেজস্ক্রিয়তার উপর তাঁর এই অসাধারণ কাজ তাকে নোবেল পুরস্কার (১৯০৮ সালে রসায়নে) এবং ম্যানচেস্টারে অধ্যাপক পদ দুটোই এনে দেয়। পারমাণবিক বোমার জনক বলে পরিচিত অটো হান রাদারফোর্ডের অধীনেই মনট্রিলের ল্যাবে ১৯০৫-০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন, যিনি পরবর্তীতে নিউক্লিয়ার ফিশান আবিস্কার করেন।

১৯০৭ সালে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাদারফোর্ড পদার্থবিদ্যার প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। ১৯০৮ সালের গ্রীষ্মে রাদারফোর্ড জার্মান বিজ্ঞানী গাইগারকে সাথে নিয়ে নিশ্চিত করলেন যে আলফা কণা হল দুটি ইলেকট্রন হারানো হিলিয়াম পরমাণু বা হিলিয়াম আয়ন। ১৯০৯ সালে তার অধীনেই হ্যানস গাইগার ও আর্নেস্ট মার্সডেন বিখ্যাত আলফা কণা বিক্ষেপণ (যা স্বর্ণপাত পরীক্ষণ নামেও পরিচিত) পরীক্ষণটি সম্পন্ন করেন। এই পরীক্ষা হতেই সর্বপ্রথম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ত্ব সম্বন্ধে অনুমান করা যায়।

আলফা কণা বিক্ষেপণ পরীক্ষা

এই পরীক্ষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে বিশ্লেষণ করে রাদারফোর্ড ১৯১১ সালে পরমাণুর নতুন একটি মডেলের প্রস্তাব করেন। মডেলের বর্ণনামতে পরমাণুর কেন্দ্রে খুবই ক্ষুদ্র ধনাত্বক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস রয়েছে যাকে সার্বক্ষণিক প্রদক্ষিণ করছে ক্ষুদ্রতর ঋনাত্বক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন। জে জে থমসনের দেয়া পরমাণুর কল্পিত চিত্রকে এই মডেল বাতিল করে দেয়। রাদারফোর্ফ তার মডেল নিয়ে এতটাই উচ্ছাসিত ছিলেন যে তিনি বলেছিলেন,
Now I know what the atoms look like! It was nothing like Thomson.

১৯১২ সালে নিলস বোর রাদারফোর্ডের সাথে ম্যানচেস্টারে যোগ দেন। গুরু রাদারফোর্ডের দেয়া নিউক্লিয়াসের গঠনকে কোয়ান্টানাইজড করে বোর পরমাণুর কোয়ান্টাম জগৎ উন্মোচন করেন যা আজ পর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত একটি তত্ত্ব। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বোর পরমাণুর কোয়ান্টায়ন করে সমাধান করেছিলেন। ১৯১৩ সালে রাদারফোর্ড এবং মোসলে ক্যাথোড রশ্মি দ্বারা বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর মাঝে সংঘর্ষ ঘটান এবং বৈশিষ্ট্যযুক্ত বর্ণালী রেখা পান। এই পরীক্ষার পর থেকে মৌলিক পদার্থের পারমাণবিক সংখ্যার ধারণা আসে যা দ্বারা প্রতিটি মৌলকে আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

১৯১৯ সালে রাদারফোর্ডকে ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির পরিচালক পদের অফার দেওয়া হলে তিনি ম্যানচেস্টার থেকে ক্যামব্রিজে ফিরে আসেন এবং পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এই পদেই ছিলেন। তাঁকে ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির সর্বকালের সেরা যোগ্য পরিচালক বিবেচনা করা হয়। একটা ছোট পরিসংখ্যান থেকে পরিচালক হিসেবে রাদারফোর্ডের দক্ষতা সম্বন্ধে অনুমান করা যায়। তাঁর ল্যাবরেটরির ছাত্রদের মাঝে পরবর্তীতে ১১ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। নিলস বোর, জর্জ হ্যাভেস, চ্যাডউইক, পাওয়েল, ব্ল্যাকেট, সিজে ডারউইন সহ অনেক জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী তাঁর ছাত্র এবং সহকর্মী ছিলেন।

১৯১৯ সালে তিনি তেজস্ক্রিয়তা ছাড়াই কৃত্রিমভাবে এক মৌলকে অন্য মৌলতে পরিণত করে দেখাতে সক্ষম হন। তিনি নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাসের মাঝে আলফা কণা চালনা করে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি করেন। গোল্ডস্টাইন ১৮৮৬ সালে একক ধনাত্বক আধান বিশিষ্ট কণার স্রোত খুঁজে পেলেও পারমানবিক কণা হিসেবে রাদারফোর্ডই হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রোটন আবিস্কার করেন। ১৯২১ সালে বোরের সাথে কাজ করার সময় রাদারফোর্ড নিউক্লিয়াসের স্থায়ীত্ব ও ভর ঘাটতির ব্যাখ্যা দেবার সময় আধানহীন, একক ভরবিশিষ্ট একটি নিউক্লিয়নের কথা কল্পনা করেন, যা পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে বিজ্ঞানী বুথ ও বেকার খুঁজে পান এবং চ্যাডউইক ১৯৩২ সালে একে নিউট্রন হিসেবে শনাক্ত করেন।

১৯১৪ সালে রাদারফোর্ডকে 'নাইট' উপাধি দেয়া হয়। ১৯২৫ সালে তিনি 'অর্ডার অব মেরিট' খেতাবও লাভ করেন। ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির পরিচালক পদ ছাড়াও তিনি আরো কয়েকটি পদ লাভ করেন। এগুলোর মাঝে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য গবেষণা বিভাগের উপদেষ্টা মন্ডলীর চেয়ারম্যান, লন্ডনের রয়্যাল ইন্সটিটিউশানের প্রকৃতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ক্যামব্রিজের রয়্যাল সোসাইটি মন্ড ল্যাবরেটরির পরিচালক পদ অন্যতম। ১৯০৩ সালেই তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিনি এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তাঁর বর্ণিল জীবনে অজস্র সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে রামফোর্ড মেডেল, ফ্যারাডে মেডেল, কপলি মেডেল, ব্রেসা পুরস্কার, আলবার্ট মেডেলসহ অসংখ্য সম্মানসূচক ডিগ্রি এবং ডক্টরেট ডিগ্রি উল্লেখযোগ্য।

আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ১৯৩৭ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে ক্যামব্রিজে নাড়ির অন্ত্রের অপারেশনের পরে খুব আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এর মাধ্যমে জীবনাবসান হয় একজন মহান ভৌত ও ব্যবহারিক বিজ্ঞানীর। যুক্তরাজ্যর লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে বিখ্যাত বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিনের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর অদূরেই সমাহিত আছেন মহাবিজ্ঞানী সার আইজাক নিউটন।

তথ্যসুত্রঃ
১। http://www.physicsoftheuniverse.com/scientists_rutherford.html
২। http://www.famousscientists.org/ernest-rutherford/
Category: articles

রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬

জুনো মহাকাশযান বৃহস্পতির ঘূর্ণায়মান মেঘের মাত্র ২৫০০ মাইলের এর মধ্যে পৌঁছে গেল। এর আগে অন্য কোনো মহাকাশযানই গ্রহটির এত কাছে যেতে পারেনি।
বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মহকাশযান 'জুনো'। 

নাসার বক্তব্য অনুসারে,
সবচেয়ে কাছে অবস্থানের সময় জুনো বৃহস্পতির ঘূর্ণায়মান মেঘের ২৫০০ মাইল (বা ৪২০০ কিমি.) উপরে ছিল। এ অবস্থায় এর বেগ ছিল গ্রহটির সাপেক্ষে ঘন্টায় ১৩০ হাজার মাইল। 

জুনোর সবগুলো যন্ত্রপাতি কার্যকর হবার পর গ্রহটির কাছ ঘেঁষে এটাই প্রথম ফ্লাইবাই। এই ফ্লাইবাইটি ছিল বৃহস্পতির উত্তর গোলার্ধের পাশ দিয়ে। যানটির গ্রহটিকে মোট ৩৬ বার ফ্লাইবাই করার কথা রয়েছে।বৃহস্পতির সম্পূর্ণ একটা ইমেজের জন্য প্রতিবার ফ্লাইবাই এর সময় এটি বৃহস্পতির আলাদা আলাদা এক একটি অঞ্চলের কাছ দিয়ে যাবে, যাত ওই সময় জুনো ওই এলাকার একটা পরিষ্কার ইমেজ তৈরি করতে পারে।

যানটির প্রথম ফ্লাইবাই এর সময় তোলা। এটি এখন পর্যন্ত বৃহস্পতির সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা ছবি
যানটি জুলাই মাসের ৪ তারিখে বৃহস্পতির কক্ষপথে প্রবেশ করে।

আরো পড়ুনঃ 
☛ এক নজরে বৃহস্পতি

ভিডিওতে জুনো মহাকাশযানঃ

Category: articles

শুক্রবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৬

শনির উপগ্রহ মাইমাস 

মাইমাস হল শনির একটি উপগ্রহ। ১৭৮৯ সালে উইলিয়াম হার্শেল এটি আবিষ্কার করেন। ছবিতে যে বিশাল খাদটি দেখা যাচ্ছে সেটার নামও রাখা হয়েছে তাঁর নামানুসারেই। এটি সৌরজগতের ২০তম বৃহত্তম উপগ্রহ। নিজস্ব মহাকর্ষের কারণে যেসব বস্তুরা গোলাকার আকৃতি পেয়েছে তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত জানা মতে এটিই সবচেয়ে ছোট বস্তু।
এই ছবিটি তুলেছে মহাকাশযান ক্যাসিনি, ২০১০ সালে।

আরো পড়ুনঃ
এক নজরে শনি গ্রহ
Category: articles

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

আজকের তারিখ ২৪ আগস্ট। ১০ বছর আগের এই দিনে গ্রহের খাতা থেকে বাদ পড়ে যায় তৎকালীন নবম গ্রহ প্লুটো। তোলপাড় ওঠে পুরো পৃথিবীতে। অনেকেই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি, এমনকি অনেক জ্যোতির্বিদও।

গ্রহের খাতা থেকে বাদ দেবার সময় বোঝা যায়, মানুষের কাছে প্লুটো বেশ জনপ্রিয় বস্তু। প্রথমবারের মতো নিউ হরাইজনস যান যখন তাই প্লুটো অভিযানে গিয়ে এতে হার্টের আকৃতি আবিষ্কার করে, ব্যাপারটি তখন পরিহাস হয়ে দাঁড়ায়। ছবিটি গ্রহের ৪৫০,০০ ০০০ কিমি. দূর থেকে তোলা।   

২০০৬ সালের এই দিনে নেপচুন হয়ে গেল সৌরজগতের সর্বেশেষ গ্রহ। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির (IAU) দেওয়া গ্রহের নতুন সংজ্ঞা অনুসারে এল এ সিদ্ধান্ত। ২০০৬ সালের আগে কোনো বস্তুকে ভর বা আকারের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করবার কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়নি। কিন্তু সৌরজগতের বাইরের অঞ্চলের দিকে হাউমেয়া ও মাকিমাকির মতো বস্তুরা আবিষ্কৃত হতে শুরু করলে এর প্রয়োজন অনুভব হওয়া শুরু হয়। ২০০৫ সালে আবিষ্কৃত এরিসের ভর আবার প্লুটোর চেয়ে বেশি। অতএব, প্লুটো গ্রহ হলে এরিস কেন হবে না?

এই প্রশ্নটিই আইএইউর মাথায় এল। এই প্রশ্নের সমধান করতে গিয়েই প্ল্যানেট ডেফিনিশান কমিটি বানানো হয়, যার ফলাফল- প্লুটোর অবনতি।

এই কমিটির সিদ্ধান্তেই বাদ পড়ে প্লুটো। সিদ্ধান্তটা অবশ্যই পরিস্থিতির দাবিই ছিল। 

কমিটির সামনে কয়েকটি রাস্তা ছিল। একটি রাস্তা ছিল ভর বা সাইজের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এক্ষেত্রে প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে মেনে নিলে এরিস এবং সেরেসও (গ্রহাণু বেষ্টনির সবচেয়ে বড়ো বস্তু) তাহলে গ্রহ হয়। কিছু সময়ের জন্যে মনে হয়েছিল যে এই সিদ্ধান্তই হয়ত হবে।

আরেকটি উপায় ছিল যে নির্দিষ্ট কোন যুক্তি দিয়ে গ্রহের সংজ্ঞা দেওয়া হবে না। পৃথিবী একটি গ্রহ, প্লুটোও আরেকটি গ্রহ। এরিস গ্রহ নয়, কারণ আমাদের ইচ্ছা হয়নি তাই।

২০০৬ এর ২৪ আগস্ট তারিখে আইএইউ ফলাফল জানিয়ে দিল। ঠিক হল, গ্রহের জন্যে নতুন একটি সংজ্ঞা থাকবে। তিনটি শর্ত নিয়ে এই সংজ্ঞা তৈরি:
১। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে হবে
২। অভিকর্ষীয় বলের মাধ্যমে গোলাকার আকৃতি পাবার জন্যে যথেষ্ট ভর থাকবে
৩। কক্ষপথ থেকে অন্য বস্তুদের সরিয়ে দেবে।

আরো দেখুনঃ
গ্রহের পরিচয়
প্রদক্ষিণ বনাম আবর্তন

তিন নম্বর শর্তটিই প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে উৎখাত করেছে। কোনো বস্তুকে গ্রহ হতে হলে একে এর নিজস্ব কক্ষপথের আধিপত্য ধরে রাখতে হবে। অন্য বস্তুদেরকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে, নয়ত নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলতে হবে।

প্লুটো এর কক্ষপথ অঞ্চলের মোট ভরের মাত্র ০.০৭ ভাগ নিজের করে রাখতে পেরেছে। অথচ পৃথিবীর কাছে রয়েছে নিজের কক্ষপথ অঞ্চলের অন্যান্য বস্তুর ভরের ১৭ লক্ষ গুণ ভর।

২০১৫ সালের ১৪ জুলাইয়ে প্লুটোর নিকটতম অবস্থানে পৌঁছার মাত্র ১৫ মিনিট পরে ছবিটি তোলে নিউ হরাইজনস। ১৮, ০০০ কিমি. দূর থেকে তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে ১২৫০ কিমি. এলাকা। 

ঐ একই দিনে প্লুটোকে বামন গ্রহ পদবীতে ভূষিত করা হল। বামন গ্রহের জন্যেও একটি সংজ্ঞা ঠিক করা হল:
১। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরবে
২। অভিকর্ষীয় বলের মাধ্যমে গোলাকার আকৃতি পাবার জন্যে যথেষ্ট ভর থাকবে
৩। কক্ষপথের একচ্ছত্র মালিক হবে না
৪। কোনো উপগ্রহ হবে না

আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমতির মতে এখন পর্যন্ত বামন গ্রহ আছে পাঁচটি। এরা হল, প্লুটো, সেরেস, এরিস, হোমিয়া ও মাকিমাকি। তবে ষষ্ঠ বামন গ্রহ হিসেবে 2007 OR10 ছাড়াও আরো অনেক অনেক দাবিদার রয়েছে।

বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, বহিঃস্থ সৌরজগতের কাইপার বেল্ট অঞ্চলে শত শত অনাবিষ্কৃত বামন গ্রহ রয়েছে।

প্লুটোকে খোঁজা শুরু হয়েছিল কেন সেও এক মজার কাহিনী। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখছিলেন, কিছু একটা নেপচুনের কক্ষপথে বিকৃতি ঘটাচ্ছে। ১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত না হয়ে যদি আরো এক দশক পরে এটি আবিষ্কৃত হত তাহলে কাইপার বেল্ট থাকার কারণে প্লুটো আর গ্রহ খ্যাতিই পেত না।

প্লুটোপ্রেমীরা হতাশ হলেও তাদের জন্যেও একটি সান্ত্বনা পুরস্কার রয়েছে। প্লুটো এ জন্যে বিখ্যাত যে একে কেন্দ্র করেই সৌরজগতের বস্তুরা একটি সংজ্ঞা পেয়েছে।

আরো পড়ুনঃ
প্লুটোর গ্রহত্ব হারানোর কাহিনী
Category: articles
এনজিসি ৫২৬৪ গ্যালাক্সি। ছবিঃ হাবল স্পেস টেলিস্কোপ 

এটি একটি বামন গ্যালাক্সি। পৃথিবী থেকে ১৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আকাশের হাইড্রা তারামণ্ডলীতে এর অবস্থান। এতে তারার সংখ্যা ১০০ কোটি। বলতে হবে যে ছায়াপথটি খুব গরীব, কারণ আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এর একশ গুণ তারা আছে। অধিকাংশ ছায়াপথের আকার সর্পিল বা উপবৃত্তাকার হলেও এর আকার হচ্ছে অনিয়মিত (irregular)। জ্যোতির্বিদদের বিশ্বাস, এর আশেপাশে অন্যনায় গ্যালাক্সির উপস্থিতির কারণে এর আকৃতি এমন হয় গেছে।

আরো পড়ুনঃ
☛ আজকের ছবিঃ আর্কাইভ

সূত্রঃ
১। https://www.spacetelescope.org/images/potw1634a/
Category: articles

শনিবার, ২০ আগস্ট, ২০১৬

আজকে আমরা দেখবো ব্ল্যাকহোল ভ্রমণ করতে গেলে আমাদের ভাগ্যে কী হবে? আমরা চাঁদে যেতে পারি, মঙ্গলে যেতে পারি। হয়ত কোন দিন সৌরজগৎ পেরিয়ে কোন ভিনগ্রহেও পাড়ি জমাতে পারি। আমরা না গেলেও নাসার মহাকাশযান ভয়েজার ১ এবং ২ তো ইতোমধ্যেই সৌরজগৎ পেরিয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতে বিচরণ করছে। এটা হতে পারে আমাদের দূর মহাকাশে যাবার একটি নিশানা।

আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, সূর্যের চেয়ে অনেক বিশাল- সাধারণত সুপারজায়ান্ট জাতীয় নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের মাধ্যমে বহিরাবরণ ছুঁড়ে ফেলার পর বাকী অংশ গুটিয়ে গিয়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। আর ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে তৈরি হয় সিঙ্গুলারিটি। এটি হচ্ছে ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রে অবস্থিত অতিশয় ক্ষুদ্র একটি বিন্দু।  এর দিকে আমরা যতই এগোবো, ততই মহাকর্ষের শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে অসীমের দিকে যেতে থাকবে এবং স্থান-কালের (Space-time) বক্রতাও ক্রমশ অসীমের দিকে ছুটবে। আর, ঠিক সিঙ্গুলারিটিতে স্থান-কাল আমাদের পরিচিত উপায়ে আর কাজ করবে না। তাহলে আমরা এতে গেলে কী ঘটবে?

একটি সরল ব্ল্যাক হোল নিয়ে চিন্তা করা যাক। ধরলাম, বিপুল পরিমাণ ভর থাকলেও এর কোন বৈদ্যুতিক আধান (Electric charge) বা ঘূর্ণন প্রবণতা নেই।

ব্ল্যাক হোলের বিভিন্ন অঞ্চল

ছবিতে ব্ল্যাক হোলের বিভিন্ন স্তর দেখা যাচ্ছে। সবুজ রঙ চিহ্নিত অঞ্চলটি হচ্ছে নিরাপদ অঞ্চল। এখানে আমাদের মহাকাশযান নিরাপদে এবং ভারসাম্য বজায় রেখে কক্ষপথে অবস্থান করতে পারবো। চাইলে আমরা ফিরেও আসতে পারবো।  হলুদ অঞ্চলটি ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে একটু গড়বড় হয়ে গেলেই আমরা ব্ল্যাক হোলের শিকার হয়ে যেতে পারি। তাই, এখানে মহাকাশযানে পাইলটকে অতিমাত্রায় দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। সেক্ষেত্রে, এখানেও মহাকাশযানের জন্যে একটি কক্ষপথের ব্যাবস্থা করা সম্ভব যদিও সেটা হবে অস্থিতিশীল (Unstable)।

কমলা রঙের অঞ্চল বিপদ সঙ্কেত প্রদান করছে। এখানে স্থিতিশীল বা অস্থিতিশীল- কোন রকম কক্ষপথই পাওয়া যাবে না। এখানে অবস্থান ধরে রাখতে হলে আমাদেরকে অবিরত জ্বালানী খরচ করে ব্ল্যাক হোলের বাইরের দিকে যানের ধাক্কা বজায় রাখতে হবে। এ অঞ্চলে আমরা যতই ভেতরের দিকে যাবো, ততোই রকেটের পরিশ্রম বাড়াতে হবে। লাল অঞ্চল ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত (Event horizon)। এখান থেকে ফিরে আসার কোন উপায় নেই।

ব্ল্যাক হোলের দিকে যাত্রা

উপরের ছবিতে একটি ঘড়ি দেখা যাচ্ছে। আমাদের সিঙ্গুলারিটিতে পৌঁছার সময় মাপছে ঘড়িখানা- আমাদের প্রচলিত সময়ের হিসাব অনুযায়ী। কিন্তু আমরা যতই ভেতরে যাবো, সময় ধীরে চলার কারণে ঘড়ির কাঁটার গতি কমে যাবে।

এখন ধরা যাক এবার আমরা সবুজ অঞ্চল থেকে ভেতরে পা বাড়ালাম। সাথে সাথে আমাদের চোখে পড়বে ব্ল্যাক হোল বাইরের নক্ষত্রের আলোকে এর সীমানায় এনে বৃত্তাকার কক্ষপথে স্থান দিয়েছে। এটা আসলে গ্র্যাভেটেশনাল লেন্সিং এর প্রতিক্রিয়া।  ব্ল্যাক হোল স্থান-কালকে বাঁকিয়ে ফেলায় আমরা একই সাথে এর সম্মুখ ও পশ্চাৎ দিক দেখতে পাবো। যেমন, ছবিতে ব্ল্যাক হোলের উত্তর ও দক্ষিণ মেরু একই সাথে দেখা যাচ্ছে। লাল ফেব্রিক চিহ্নিত এই অঞ্চলই ব্ল্যাক হোলের সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ।
সোয়ার্জাসাইল্ড ব্যাসার্ধই হল ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্তের সীমানা, যার ভেতর থেকে কোনো কিছু বের হতে পারে না, কোন কিছু দেখা যায় না।

আরো পড়ুন
গ্র্যাভেটেশনাল লেন্সিং কীভাবে ঘটে?
ব্ল্যাক হোল কত বড়ো হয়? (এখানে সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে)

৩ সোয়ার্জসাইল্ড দূরত্বে আমাদের কক্ষপথ সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখানে যতক্ষণ আছি- আমরা নিরাপদ। চাইলে আবার ফিরে আসতে পারবো। যখন এটা পাড়ি দিয়ে ২ সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধে পৌঁছবো, এবার অবস্থান হয়ে যাবে ভারসাম্যহীন। এখানে যানের জ্বালানি খরচে একটু এদিক-ওদিক হয়ে গেলেই আমার হয় সোজা ব্ল্যাক হোলের দিকে চলে যাবো অথবা উল্টোদিকে- বাইরের দুনিয়ায় ধেয়ে আসবো।


এই অঞ্চলেই ফোটন স্ফিয়ার তথা আলোকমণ্ডলের (Photon sphere) অবস্থান। এখানে স্বয়ং আলো অবিরত কক্ষপথে ঘুরপাক খেতে থাকে। এটাই ছিল আমাদের প্রথম পর্বের প্রশ্ন। আশা করি, উত্তর পেয়ে গেছেন। এটাই ব্ল্যাক হোলের নিকটতম দূরত্ব যেখানে কোনো কিছু কক্ষপথ পেতে পারে। আমরা যদি এখানে (ফোটন স্ফিয়ারে) আমাদের যানকে ধরে রাখতে চাই তাহলে অসীম জ্বালানি খরচ করতে হবে।
এবার আমরা প্রবেশ করবো ১ সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ পাড়ি দিয়ে দিগন্তের দিকে।



এখানেই ঘটবে অপ্রত্যাশিত ঘটনা। লাল ঘটনা দিগন্ত দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যাবে- দিগন্ত এবং প্রতি দিগন্ত (Horizon, anti-horizon)। আমরা দিগন্ত ভেদ করলে আসল দিগন্ত আমাদের চোখে দৃশ্যমান হবে। অন্য দিকে, প্রতি-দিগন্ত আমাদের সামনেই থেকে যাবে। একে আমরা কখোনই অতিক্রম করে যেতে পারবো না। আচ্ছা, ব্ল্যাক হোলের ভেতরে চলে গেলে কি আমরা অন্ধকারের মধ্যে ডুবে যাবো? এটা ভুল ধারণা। আমরা যতই ভেতরে যাবো, বাইরের বিশ্ব ততোই উজ্জ্বল মনে হবে।

ব্ল্যাক হোলের ভেতরে অন্ধকার নয়, বরং অনেক অনেক আলোকিত দেখাবে

এরপর আমরা আরো ভেতরে গেলাম। কী হবে- একটু পর বলছি। কিন্তু আমরা কখোনই সিঙ্গুলারিটিত দেখতে পারবো না। কেননা, কোন আলোই এর থেকে বাইরের দিকে আসতে পারে না। সব চলে যায় এর পেটের ভেতর।

আমরা কখোনই আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য তথা সিঙ্গুলারিটিতে পৌঁছবো না। কেন? আচ্ছা, বিস্তারিত বলছি।
মনে করুন আপনি নভোযানে চড়ে একে আমাদের মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাক হোলটির দিকে চালিয়ে দিলেন। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলেন ব্ল্যাক হোলের তীরে । এবার যান বন্ধ করে দিলেন। কী ঘটবে?
প্রথমে এর মহাকর্ষ একেবারেই অনুভব করবেন না। যেহেতু আপনি মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তুর মত করে বিনা বাধায় পড়ছেন, আপনার দেহের প্রত্যেকটি অংশ এবং তোমার নভোযান- সব কিছুই একইভাবে ব্ল্যাক হোলের দিকে ধাবিত হবে। অনুভব হবে ওজোনহীনতা। পৃথিবীর চারদিকে কৃত্রিম উপগ্রহে বসবাসরত নভোচারীদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। যদিও পৃথিবীর অভিকর্ষ নভোচারী এবং স্পেইস শাটল- দুটোকেই টানছে, তবু এরা কোন অভিকর্ষ বল অনুভব করে না, কারণ সব কিছু ঠিক একইভাবে টান অনুভব করছে।

ব্ল্যাক হোলের যতই কাছাকাছি হবেন, আস্তে আস্তে এর মহাকর্ষজনিত শক্তিমত্তা অনুভূত হতে থাকবে। মনে করুন, আপনার পা আপনার মাথার চেয়ে ব্ল্যাকহোলের নিকটবর্তী। ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্র থেকে কোন বস্তু যত বেশি কাছে থাকবে, তার উপর এর আকর্ষণও তত প্রকট হবে। এবার ভাবুন, আপনার পা কিন্তু মাথার চেয়ে দানবের মুখের বেশি কাছে। ফলে, ব্ল্যাক হোল আপনাকে টেনে লম্বা বানিয়ে দেবে।

ব্ল্যাক হোলের কাছে গেলে মাথা ও পায়ের প্রতি মহাকর্ষীয় আকর্ষের তারতম্যের কারণে এক অংশ লমাব হয়ে এমন সেমাইয়ের মতো হয়ে যাবে। 

যতই কাছে যাবেন, পা ও মাথার প্রতি ব্ল্যাক হোলের অসম আকর্ষণের মাত্রা বাড়তেই থাকবে।
কেমন হবে, যদি আপনার পায়ের দৈর্ঘ্য হয়ে যায় ১০ ফুট বা ১০০ ফুট। আরো মারাত্মক কথা হলো, পাতো শুধু লম্বাই হবে না, এক সময় দেহ থেকে আলাদাই হয়ে যাবে। ভয় লাগছে?

তবে, উপরোক্ত বিপদ কাটানোর একটি উপায় আছে বটে! বলছি পরে। আপনার ব্ল্যাক হোল অভিযানের স্বপ্নের কিন্তু সমাপ্তি ঘটে যায়নি। হতাশ হবেন না!

আপনি যদি অভিযানের জন্যে একটি বড় ব্ল্যাক হোল বেছে নেন, তাহলে এর কেন্দ্র থেকে ৬ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্বের না যাওয়া পর্যন্ত লক্ষ্যণীয় প্রভাব অনুভূত হবে না। এটা হলো এর ঘটনা দিগন্তের সীমানা। কিন্তু আপনি যদি একটি ছোট, মনে করুন সূর্যের কাছাকাছি ভরের, একটি ব্ল্যাক হোল বাছাই করেন, তাহলে আপনি এর কেন্দ্রের ৬ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে পৌঁছতেই কাছে অসহনীয় অবস্থা অনুভূত হবে। এই ক্ষেত্রে, ঘটনা দিগন্তে পৌঁছার আগেই আপনি টুকরো টুকরো হয়ে যাবেন। এই জন্যেই ব্ল্যাক হোল অভিযানে যেতে চাইলে বড়োসড়ো কোন ব্ল্যাক হোল বাছাই করাই নিরাপদ। ভেতরে গিয়ে অন্তত পৌঁছতে না পারলেতো অভিযান শুরুই হলো না!

ব্ল্যাক হোলে পতনের সময় আপনি কী দেখবেন?

মজার ব্যাপার হলো, আপনি যে বিশেষ মজার কিছু দেখে ফেলবেন- এমন কিন্তু না। আপনি যদি দূরের কোন দৃশ্য দেখতে যান, তবেই লাগবে বেখাপ্পা। বস্তুর চেহারা বিকৃত দেখাবে, কারণ ব্ল্যাক হোল এর অভিকর্ষের প্রভাবে আলোকে বাঁকিয়ে এনে আপনার চোখে ফেলবে। কাঁচের পানির গ্লাসের ভেতর দিয়ে কখনো বিপরীত দিকে তাকিয়েছেন নিশ্চয়ই? কেমন দেখায়? এবড়োথেবড়ো বিম্ব, তাই না? একই প্রভাব পরিলক্ষিত হবে এখানেও। কিন্তু ঐটুকুই। ঘটনা দিগন্ত অতিক্রম করার সময় আর বিশেষ কিছু ঘটবে না।

ঘটনা দিগন্ত ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করার পরেও আপনি বাইরের দৃশ্য দেখতে পাবেন। কারণ, তখনো বাইরের আলো আপনার কাছে পৌঁছতে পারবে। তবে, এখন বাইরের কেউ আপনাকে দেখতে পাবে না। কারণ, আপনার দেহ থেকে আসা আলো ঘটনা দিগন্তকে ভেদ করতে পারছে না।

এই সব কিছু ঘটতে কতক্ষণ লাগবে? ব্যাপারটা নির্ভর করে আপনার যাত্রা শুরুর অবস্থানের ওপর। মনে করুন, আপনি এমন জায়গা থেকে যাত্রা শুরু করলেন, যা ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্রবিন্দু থেকে এর সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের ১০ গুণ দূরে অবস্থিত। তাহলে, প্রায় ১০ লাখ সৌর ভরের সমান ভরযুক্ত ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত অতিক্রম করতে আপনার সময় লাগবে প্রায় ৮ মিনিট। এই সীমানা পার হবার পরে, কেন্দ্রে পৌঁছতে আপনার আর মাত্র ৭ সেকেন্ড সময় লাগবে। ব্ল্যাক হোলের আকার বড়ো- ছোট হবার সাথে সাথে এই সময়ও কম বেশি হবে।

ঘটনা দিগন্ত পার হবার পরবর্তী ৭ সেকেন্ডে আপনার ভয় লাগা শুরু হতে পারে। আপনি হয়তো ভয় পেয়ে আপনার নভোযানকে পেছনে ঘুরিয়ে দিতে চেষ্টা চালাবে, যাতে কেন্দ্রে যেতে না হয়। কিন্তু হায়! বৃথা চেষ্টা। কেন্দ্রে পৌঁছা ছাড়া যে উপায় নেই। কী আর করা, এই শেষ সময়টুকু উপভোগ করে নেওয়াই ভালো।
এতো গেল আপনার কথা। মনে করুন, আপনার এক প্রিয় বন্ধু (নাম দিলাম জায়েদ) আপানকে বিদায় জানাবার জন্যে ঘটনা দিগন্তের ওপারে অপেক্ষা করছিল। ও কী দেখবে? আসলে, ও আপনার চেয়ে সম্পুর্ণ ভিন্ন দৃশ্য দেখবে। আপনি দিগন্তের যত কাছাকাছি হবেন, ততই ওর কাছে মনে হবে, আপনার গতিবেগ কমে যাচ্ছে। ও যদি কেয়ামত পর্যন্তও অপেক্ষা করতে থাকে, তবু আপনাকে কোনো দিনই ঘটনা দিগন্ত পাড়ি দিতে দেখবে না ।

সত্যি বলতে, প্রথমে ব্ল্যাক হোল যে পদার্থ দিয়ে গঠিত হয়েছিল তার সম্পর্কে কম বেশি- একই কথা বলা চলে। একটি সংকোচনশীল (Collapsing) নক্ষত্র থেকে সৃষ্ট ব্ল্যাক হোলের কথা ধরা যাক। ব্ল্যাক হোল গঠিত হবার জন্যে যখন এর উপাদানগুলো সঙ্কুচিত হতে থাকবে, জায়েদ একে ক্রমেই ছোট হয়ে যেতে দেখবে। ওর চোখে এর ব্যাসার্ধ আস্তে আস্তে স্কোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের নিকটবর্তী হতে থাকবে, কিন্তু কখনো এর সমান হবে না। এই কারণেই আগে ব্ল্যাক হোলকে হিমায়িত নক্ষত্র (Frozen star) বলা হতো। কারণ, এরা স্কোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধের কিছুটা বড়ো ব্যাসার্ধ্যে এসে জমে যায়।

ও এমন দেখবে কেন? আসলে এটা একটি আলোকীয় দৃষ্টিভ্রম (Optical illusion)। ব্ল্যাক হোল গঠিত হবার জন্যে যেমন অসীম সময়ের দরকার হয় না, তেমনি ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্ত ভেদ করতেও এত সময় লাগে না। আপনি দিগন্তের যত কাছাকাছি হবেন, আপনার কাছ থেকে আসা আলো জায়েদের কাছে পৌঁছতে ক্রমেই বেশি সময় লাগতে থাকবে। অন্য দিকে, আপনি দিগন্ত পাড়ি দিয়ে ভেতরে যাবার সময়ে নিঃসৃত আলোটুকু কখনোই ওর কাছে যাবে না, এটা চিরকাল ভেসে থাকবে দিগন্তেই। এর ফলে, আপনি চির দিনের জন্যে ব্ল্যাক হোলে হারিয়ে গেছেন, আর কোন দিন ফিরেও আসবেন না- এই খবরটুকুও জায়েদ জানতে পারবে না। ওর কাছে মনে হবে, কোন কারণে আপনার ব্ল্যাক হোলে প্রবেশ করতে দেরি হচ্ছে।

পুরো প্রক্রিয়াটি আরেকভাবে চিন্তা করা যায়। দূরবর্তী অঞ্চলের চেয়ে ঘটনা দিগন্তের কাছে সময় অনেকটা ধীরে প্রবাহিত হয়। ধরুন, আপনি নভোযানে চড়ে ঘটনা দিগন্তের বাইরের একটি জায়গায় ভেসে থাকলেন (পতন থেকে রক্ষা পেতে বিপুল জ্বালানি পুড়িয়ে)। এবার আপনি যদি জায়েদের সাথে গিয়ে দেখা করুন, দেখা যাবে ওর বয়স আপনার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। কারণ, ব্ল্যাক হোলের কারণে ওর তুলনায় আপনার সময়ের গতি ছিল ধীর।

আচ্ছা, দুইটির ব্যাখ্যার কোনটি আসলে সঠিক? ব্যাপারটা নির্ভর করে ব্ল্যাক হোল সম্পর্কিত আপনার স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার ওপর। সোয়ার্জসাইল্ড স্থানাঙ্ক নামে পরিচিত প্রচলিত স্থানাঙ্ক বিবেচনা করলে, আপনি দিগন্তে পাড়ি দিবেন স্থানাঙ্কের মানে সময় (t) যখন অসীম হবে। ফলে, স্থানাঙ্কের এই হিসেব অনুসারে, দিগন্ত পার হতে আপনার অসীম সময়ই লাগবে। এর কারণ হচ্ছে, সোয়ার্জসাইল্ড স্থানাঙ্ক ঘটনা দিগন্তের নিকটবর্তী অঞ্চলের বিকৃত দৃশ্য প্রদান করে। আর ঠিক দিগন্তের ওপরে স্থানাঙ্ক নিরতিশয় (Infinitely) বিকৃত হবে।

আপনি যদি স্থানাঙ্ককে এরূপ বিকৃতির হাত থেকে বাঁচাতে চান, তবে বিকল্প উপায়ে হিসাব করলে ,আপনার দিগন্ত ভেদ করতে প্রয়োজনীয় সময়ের (t) সসীম একটি মান পাবেন। কিন্তু, জায়েদ যে সময় আপনাকে তা করতে দেখবে সেই সময়টি আবার অসীম। ওর কাছে আসলে আপনার খবর পৌঁছতে অসীম সময় লাগবে। আপনি যে কোনো স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারেন বটে, ফলাফল একই পাবেন। এ জন্যে আসলে দুটো ব্যাখ্যাই সঠিক এবং একই কথার দ্বিরূপ মাত্র।

বাস্তবে আসলে খুব বেশি সময় গড়াবার আগেই আপনি জায়েদের নজর থেকে উধাও হয়ে যাবেন। ব্ল্যাক হোল থেকে দূরে ধাবিত আলো লাল সরণ (Red shift) প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হবে। আপনি নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কোন দৃশ্যমান আলো নির্গত করলে জায়েদের কাছে যেতে যেতে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য দীর্ঘতর হয়ে পড়বে। আপনি দিগন্তের কাছাকছি হতে থাকলে, তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়েই চলবে। একটা সময় তরঙ্গদৈর্ঘ্য দৃশ্যমান পাল্লাকে ছাড়িয়ে যাবে। এটা হয়ে যাবে অবলোহিত বিকিরণ এবং পরে বেতার বেতার তরঙ্গে পরিণত হবে। এক সময় তরঙ্গদৈর্ঘ্যে এত দীর্ঘ হবে যে জায়েদের চোখে এটি আর ধরা পড়বে না।

অন্য দিকে, আলো নির্গত হয় ফোটন নামক স্বতন্ত্র গুচ্ছ আকারে। ধরুন, আপনি দিগন্ত ত্যাগ করার সময় শেষ আলোকবিন্দু নির্গত করলেন। এই আলো জায়েদের কাছে কোন সসীম সময়েই পৌঁছবে। উপরোক্ত লক্ষ সূর্যের সমান ভরের ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে এতে সময় লাগবে ঘণ্টাখানেকেরও কম। এর পর? ও আর কিছুই দেখবে না। আপনি ভেতরে ডুব দিয়ে আর যে আলোই নিক্ষেপ করবেন, তা আপনার প্রিয় বন্ধুর সান্নিধ্যে আর কখনো পৌঁছাবে না। আপনি চিরতরে হারিয়ে গেলেন ব্ল্যাক হোলের গভীরে। এর পর তোমার কী হবে? এটা পরের কোনো পর্বে দেখবো। ব্ল্যাক হোলে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে পড়ে নিয়েন। আর আসলে সেটাতো আপনিই আমাদের চেয়ে ভালো জানবেন, তাই না?

তবে, ব্ল্যাক হোলে গেলেই সব শেষ- ব্যাপারটি পুরোপুরি এমনও নয় কিন্তু। আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বেরই একটি সমাধান অনুসারে ব্ল্যাক হোলের অভ্যন্তরে তৈরি হয় ওয়ার্মহোল। ওয়ার্মহোল হচ্ছে স্থান-কালের এক পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্টে পৌঁছে যাবার শর্টকাট পথ। এটা হতে পারে কোন স্থান বা সময় থেকে অন্য কোন সময় –অতীত বা বর্তমানে বা অন্য কোন সময়েরই মহাবিশ্বের অন্য কোন স্থান (যেমন অন্য কোন গ্যালাক্সি) এমনকি হতে পারে অন্য কোন মহাবিশ্বেও! আগামী কোনো পর্বে আমরা ওয়ার্মহোল ও টাইম ট্র্যাভেল নিয়ে বিস্তারিত জানবো।

গত পর্বে প্রশ্ন ছিল, স্টেলার ব্ল্যাক হোলরা কেন জীবনের অন্তিম সময়েই ব্ল্যাক হোল হয়? এ সময়তো তাদের ভর অনেক কমে যায়। জীবনের শুরুতেই কেন হয় না, যখন ওদের ভর থাকে তুলনামূলক বেশি?

উত্তরঃ জীবনের শুরুতে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একটি নক্ষত্রে দুইটি বল কাজ করে। একটি এর নিজস্ব অভিকর্ষজনিত অন্তর্মুখী চাপ এবং অপরটি ফিউশন বিক্রিয়াজনিত বহির্মুখী চাপ। এই দুটি বলে একে অপরকে নাকচ করে দিয়ে নক্ষত্রকে স্থিতিশীল রাখে। কিন্তু জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি যখন মৃত্যুমুখে পতিত হয় তখন অভিকর্ষকে ঠেকানোর মত আর কোন কার্যকরী বল থাকে না। এই কথা অবশ্য যথেষ্ট ভরযুক্ত নক্ষত্রের জন্যে প্রযোজ্য। কম ভরের ক্ষেত্রে আবার সংকোচনশীল বস্তুর নিজদের সাথে সংঘর্ষজনিত ডিজেনারেসি প্রেসার অভিকর্ষকে কিছুটা প্রতিহত করে।

[লেখাটি ইতোপূর্বে কিশোরদের উপযোগী করে ব্যাপন ম্যগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল।]

অন্যান্য পর্ব



Category: articles

সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬

আজ ১৫ আগস্ট।
১৮৯২ সালের এই তারিখে জন্মগ্রহণ করেন ফরাসী পদার্থবিদ লুই ডি ব্রগলি।

কোয়ান্টামতত্ত্ব নিয়ে তার যুগান্তকারী কাজই সারা বিশ্বের নিকট তাকে পরিচিত করে তুলেছে। ১৯২৪ সালে তিনি তাঁর এক গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেন যে, তিনি ইলেকট্রনের তরঙ্গ ধর্মের আবিস্কার করেছেন এবং প্রস্তাব করেন যে সকল পদার্থেরই তরঙ্গ ধর্ম রয়েছে। এই কাজের জন্য ১৯২৯ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

পদার্থবিজ্ঞানী লুই ডি ব্রগলি

ব্রগলির বাবা-মায়ের বেঁচে যাওয়া ৪ সন্তানের মাঝে তিনি ছিলেন ৪র্থ। ১৮৯২ সালের ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের দিপ্পে (Dieppe) শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার সামাজিক দিক থেকে অনেক উচ্চবংশীয় ছিল। তার বাল্যকালের পড়াশোনা বাড়িতেই গৃহশিক্ষকের নিকট শুরু হয়। ১৯০৬ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই মরিস ডি ব্রগলির পরামর্শে ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রথম স্কুলে যান। স্কুল পাশ করার পর ইতিহাস নিয়ে লুই ডি ব্রগলির পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল। স্কুলে পদার্থবিজ্ঞান, ফ্রেঞ্চ, দর্শন, ইতিহাস, রসায়ন ও গণিতে তার মত ভাল ছাত্র আর কেউ ছিল না। ১৯০৯ সালে ব্রগলি মাত্র ১৭ বছর বয়সেই দর্শন ও গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বড় ভাই মরিসের উৎসাহেই বিজ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করেন লুই ডি ব্রগলি। ১৯১৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানের উপর একটি ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) তিনি ফরাসী সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তাকে আইফেল টাওয়ারে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন তিনি এই স্থান হতেই বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং তরঙ্গ নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর বড় ভাই মরিসের ল্যাবে তার সাথেই কাজ শুরু করেন ডি ব্রগলি।

মরিসের ল্যাবে ডি ব্রগলি যতগুলি কাজ করেছেন তার বেশিরভাগই ছিল এক্স-রশ্মি ও আলোর তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কিত। এইসব পরীক্ষণ হতেই ডি ব্রগলি আলোর কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা (Wave-partiucle dulaity) নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেন। আরো ভালোভাবে বললে, 'যে কোনো কিছুর' কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। শীঘ্রই ১৯২৪ সালে ডি ব্রগলি পদার্থের কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা নিয়ে তত্ত্বটিকে তার পিএইচডি থিসিস পেপারে প্রস্তাব করলেন। সৌভাগ্যক্রমে এই থিসিস পেপার বিজ্ঞানী ল্যাংজেভিনের হাত হয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের হাতে এসে পড়ে। তিনি ডি ব্রগলির এই ধারণার অনেক বেশি প্রশংসা করেন। তরঙ্গ-বলবিদ্যার উত্থানে আইনস্টাইন এর এই প্রশংসা অনুপ্রেরণা রূপে কাজ করেছিল।

কণা- তরঙ্গ দ্বৈততা

লুই ডি ব্রগলির এই তত্ত্ব পরমাণুর অভ্যন্তরে ইলেকট্রনের গতির হিসাব-নিকাশ সম্পর্কিত জিজ্ঞাসার সমাধান এবং সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানে সক্ষম হয়। কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা পরবর্তীতে ১৯২৭ সালে পৃথকভাবে জিপি থমসন, ক্লিনটন ডেভিসন এবং লেস্টার জারমারের পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয়। এ থেকে সুস্পষ্ট রূপে প্রমাণিত হয় যে পদার্থও তরঙ্গ ধর্ম প্রদর্শন করতে পারে। এই অসাধারণ কাজের জন্য ১৯২৯ সালে লুই ডি ব্রগলি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

লুই ডি ব্রগলি তার ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর সরবোনেই অবস্থান করছিলেন। তিনি সেখানে নব্য প্রতিষ্ঠিত হেনরি পয়েনকেয়ার ইন্সটিটিউশনে ১৯২৮ সালে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি অবসরের যাবার পূর্ব পর্যন্ত ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৪৫ সালে ডি ব্রগলি ফ্রান্সের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ইউনেস্কো প্রদত্ত কলিঙ্গ পুরস্কার লাভ করেন এবং ব্রিটিশ রয়্যাল সোসাইটির বৈদেশিক সদস্যপদ সাথে সাথে ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমীর সদস্যপদ লাভ করেন। উনবিংশ শতকের শুরুতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশে কণা-তরঙ্গের মিল প্ল্যাংক এবং আইনস্টাইনের হাত ধরে পরর বোর হয়ে লুই ডি ব্রগলির হাতে এসে পূর্ণতা পায়।

এই পূর্ণতাদানকারী বিজ্ঞানী ১৯৮৭ সালের ১৯ মার্চ ফ্রান্সের ল্যুভেসিয়েনেসে (Louveciennes) মৃত্যুবরণ করেন। ৯৪ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকাটাও  লুই ডি ব্রগলির মত বিজ্ঞানীর জন্য খুব অল্প সময় হয়ত।

নোটঃ লুই ডি ব্রগলির নামের ফরাসি উচ্চারণ হল লুই দ্য ব্রোয়ি

তথ্যসূত্র:
১। http://www.famousscientists.org/louis-de-broglie/
২। http://en.wikipedia.org/wiki/Louis_de_Broglie
৩। কণা তরঙ্গ, রেজা এলিয়েন, বর্ণায়ন, ঢাকা, ২০০৯
Category: articles
শনি সৌরজগতের ৬ষ্ঠ গ্রহ। এটিই পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ যেটি খালি চোখে দেখা যায়। তবে শনি গ্রহ সবচেয়ে বিখ্যাত এর আকর্ষণীয় বলয়ের জন্য। এই বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৬১০ সালে, গ্যালিলিওর হাত ধরে। বৃহস্পতির মতোই শনিও একটি গ্যাস জায়ান্ট। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন প্রভৃতি গ্যাস এর প্রধান উপাদান।
বলয়ধারী শনি গ্রহ

এক নজরেঃ
গড় ব্যাসার্ধঃ ৫৮, ২৩২কিমি.
ভরঃ পৃথিবীর ৯৫ গুণ।
উপগ্রহের সংখ্যাঃ ৬২
উল্লেখযোগ্য উপগ্রহঃ টাইটান, এনসেলাডাস, রিয়া ইত্যাদি
বলয়ের সংখ্যাঃ ৩০ এর বেশি (৭টি গ্রুপ নিয়ে গঠিত)
কক্ষপথের দূরত্বঃ ১,৪২৬, ৬৬৬,৪২২ কিমি. (৯.৫৪ এইউ)
পর্যায়কালঃ ১০, ৭৫৬ দিন (২৯.৫ বছর)
কার্যকর তাপমাত্রাঃ মাইনাস ১৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
অপসূরঃ ১০.১ এইউ
অনুসূরঃ ৯.০২৪ এইউ
আপাত উজ্জ্বলতাঃ (+১.৪৭) থেকে (-.২৪)
প্রথম দর্শনঃ খৃষ্টপূর্ব ৮ম শতক

পৃথিবীর তুলনায় শনি গ্রহের আকার
শনি গ্রহের তথ্য জানালাঃ
১। শনিকে খালি চোখে দেখা যায়। এটি সৌরজগতের পঞ্চম উজ্জ্বল বস্তু (পৃথিবীর আকাশে)। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-০.২৪) থেকে (+১.৪৭) এর মধ্যে উঠা-নামা করে। রাতের আকাশে একটানা বহু দিন ধরেই একে দেখা যায়। এটি যখন সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের খুব কাছাকাছি সময়ে উদয় বা অস্ত যায়, শুধু তখনই দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
গ্রহদের খোঁজখবর
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে? 

২। অতীতকালেও শনির সাথে মানুষের পরিচয় ছিল। ব্যাবিলনীয় এবং দূর প্রাচ্যের মানুষও একে চিনত। রোমান দেবতা স্যাটারনাস থেকে এর (ইংরেজি Saturn) নাম এসেছে। গ্রিকরা একে চিনত ক্রোনাস নামে।

৩। শনি সবচেয়ে চ্যাপ্টা গ্রহ। বিষুব অঞ্চলের তুলনায় এর মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ১০ ভাগের এক ভাগ কম। এর অর্থ হল, মের অঞ্চলের দিকে গ্রহটি বেশ চাপা। এর কারণ হচ্ছে, এর ঘনত্ব খুব কম, কিন্তু আবর্তন বেগ খুব তীব্র। প্রতি দশ ঘণ্টা ৩৪ মিনিটে এটি একবার এর অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরে আসে। ফলে সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে দিনের দৈর্ঘ্যের স্বল্পতার দিক দিয়ে এর অবস্থান দুই-এ।
আরো পড়ুনঃ 
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

৪। শনি সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে ২৯ বছরের বেশি সময় লাগে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্টারদের তুলনায় এর গতি খুব ধীর হবার কারণে একে প্রাচীন আসিরীয়রা Lubadsagush নামে ডাকত। এর অর্থ হচ্ছে পুরাতনদের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন।

৫। শনির বায়ুমণ্ডল অনেকগুলো মেঘপুঞ্জে বিভক্ত। সবচেয়ে উপরের স্তর মূলত অ্যামোনিয়ার বরফ দিয়ে গঠিত। এর নিচে রয়েছে তুষার। এর নিচে হাইড্রোজেন ও সালফারের বরফের উপস্থিতি লক্ষণীয়।


৬। শনির মূল উপাদান হাইড্রোজেন। ভেতরের দিকে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ক্রমশ বেশি। আরো ভেতরের দিকে হাইড্রোজেন হয়ে পড়ে ধাতব। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রমণ্ডল খুব উষ্ণ।

৭। সব গ্রহের মধ্যে শনির বলয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরা মূলত বরফ ও কার্বোনেসাস ধূলি দিয়ে তৈরি। গ্রহটিতে বলয়গুলো ১২০, ৭২০ কিমি. পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু সে তুলনায় এরা খুব সরু, পুরুত্ব মাত্র ২০ মিটারের মতো।

৮। ছোট-বড়ো মিলিয়ে শনির উপগ্রহের সংখ্যা দেড়শোর বেশি। উপগ্রহের সংখ্যা ৬২। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপগ্রহের সংখ্যা আসলে কয়েকশো। এদের সবাই হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে। টাইটান ও রিয়া এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো। এনসেলাডাসের হিমায়িত পৃষ্ঠের নিচে সাগর আছে বলে মনে হয়।

৯। শনির উপগ্রহ টাইটানের বায়ুমণ্ডল নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ (অনেকটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মতোই)। উপগ্রহটি মূলত বরফ ও পাথর দিয়ে গঠিত। এর পৃষ্ঠে রয়েছে তরল মিথেনের লেক। পৃথিবীর সাথে এর উল্লেখযোগ্য মিল থাকার কারণে এতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হয়।
আরো পড়ুনঃ 
শনির উপগ্রহে মিথেন সাগর

১০। এ পর্যন্ত ৪টি মহাকাশযান শনি গ্রহ সফর করেছে। এরা হল পাইওনিয়ার ১১, ভয়েজার ১ ও ২ এবং ক্যাসিনি- হাইগেনস মিশন। এরা সবাই শনিকে নিয়ে গবেষণা করেছে। এর মধ্যে ক্যাসিনি এখনো শনির কক্ষপথে আছে। এটি এখনো গ্রহটি ও এর বলয় এবং উপগ্রহসমূহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠাচ্ছে।

সূত্রঃ
[১] http://space-facts.com/saturn/
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Saturn
Category: articles

শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১৬

আজকের আকাশে চাঁদের সাথে শনি ও মঙ্গলের দারুণ একটি চিত্র তৈরি হয়েছে। শনি ও মঙ্গল এমনিতেই জ্যেষ্ঠা (Antares) নক্ষত্রের সাথে ত্রিভুজ তৈরি করে রেখেছে। চাঁদ অবস্থান নিয়েছে ত্রিভুজের মাথায়। সব মিলিয়ে দেখার মতো দৃশ্যই বটে। 

চাঁদ, মঙ্গল ও শনি। সাথে জ্যেষ্ঠ্য নক্ষত্র। 

Category: articles

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬

রাতের আকাশ পর্বের আগের অংশে আমরা আলোচনা করেছিলাম পৃথিবীর আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের নিয়ে। এবারে উঁকি দিচ্ছি পৃথিবীর বাইরে। পৃথিবীর আকাশ কেমন হবে তার উপর এর বায়ুমণ্ডলের প্রভাব আছে। অন্য গ্রহ-উপগ্রহদের ক্ষেত্রে তাই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য চোখে পড়ে।

- আচ্ছা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ কেমন হত?
- পৃথিবীতে আসা সূর্যের আলো আসলে ৭টি রঙে গঠিত। এই আলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে বায়ুকণার সাথে ধাক্কা লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে নীল রঙ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে  আমাদের পৃথিবীর আকাশ নীল দেখায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ হত কালো। একদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে থাকত। এর আলো পুরো আকাশ দখলে রাখত না। দিনেও তারা দেখা যেত।
- তাহলে কি চাঁদের আকাশ দেখতে কালো? ওখানেতো বায়ুমন্ডল নেই। অন্য গ্রহ বা উপগ্রহের আকাশ দেখতে কেমন? চাঁদ বা অন্য গ্রহের রাতের আকাশ কি পৃথিবীর আকাশের মত এত সুন্দর? অন্যান্য গ্রহকে যেমন পৃথিবী থেকে দেখা যায়, তেমনি পৃথিবীকে কি সেই গ্রহগুলো থেকে দেখা যায়?
এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে আজকের আয়োজন।

আগে সংক্ষেপে পৃথিবীর আকাশ সম্পর্কে একটু বলে নিই। পৃথিবীর রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু  চাঁদ। তবে এরপরের অবস্থানে কিন্তু লুব্ধক নয়। লুব্ধক সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিন্তু গ্রহদের চেয়ে পিছিয়ে। খালি চোখে সৌরজগতের মোট পাঁচটি গ্রহ আমরা দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি সবাই লুব্ধকের চেয়েও উজ্জ্বল। তবে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিকভাবে দেখা যায় শনি ও বৃহস্পতিকে। বুধ ও শুক্র সব ঋতুতে থাকে না, থাকলেও কয়েক ঘণ্টার বেশির জন্যে নয়।
আচ্ছা, এবার তাহলে পৃথিবির বাইরে উঁকি দেই।
পৃথিবীর বাইরে একমাত্র চাঁদের আকাশকেই সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা ও ছবি তোলা গেছে। অন্য কোথাও মানুষের পা পড়েনি বলে আকাশ দেখতে কেমন হবে তা জানার জন্যে নির্ভর করতে হয় পরোক্ষ উপায়ের উপর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপায় হচ্ছে বিভিন্ন মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য। যেমন মঙ্গল গ্রহ, শুক্র এবং শনির উপগ্রহ টাইটানের আকাশের তথ্য এভাবে পাওয়া গেছে। আকাশের চিত্র কেমন হবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বায়ুমণ্ডল আছে কি নেই, থাকলে তার উপাদান কী, মেঘ আছে কি না ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যে আকাশগুলো সরাসরি দেখা যায়নি এসব তথ্যের মাধ্যমে তাদের আকাশ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।

বুধ গ্রহের আকাশঃ
বুধ গ্রহের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে সূর্যের আলোকে বিক্ষিপ্ত করার মতও কেউ নেই। দিনের বেলায়ও তাই কালো মহাকাশ চোখে পড়বে। সাথে থাকবে কিছু বিন্দু বিন্দু তারার আলো। তবে সূর্যের উপস্থিতির কারণে একটি বিন্দু হবে বেশ বড়। পৃথিবী থেকে দেখার তুলনায় সূর্যের আকার হয় গড়ে আড়াই গুণ এবং উজ্জ্বলতা হয় ৬ গুণ পর্যন্ত।
পৃথিবীর রাতের আকাশের মত বুধের রাতের আকাশকে কোন চাঁদ জ্যোৎস্নাপ্লাবিত করতে পারে না। কারণ বুধের কোন উপগ্রহই নেই। এখানে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু শুক্র। পৃথিবীর চেয়ে বুধের আকাশে শুক্রকে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। বুধ গ্রহে এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭.৭ বা মাইনাস ৭.৭) যেখানে পৃথিবীতে এই মান (-৪.৬)। আমরা জানি, আপাত উজ্জ্বলতার মান যত কম হয়, বস্তু তত উজ্জ্বল হয়। যেমন চাঁদের আপাত উজ্জ্বলতা (-১২.৭) এবং সূর্যের (-২৭)।
বুধ থেকে আমাদের পৃথিবী এবং চাঁদও ভালো মত চোখে পড়ে। আপাত উজ্জ্বলতা যথাক্রমে (-৫) ও (-১.২)। পৃথিবীতে যেমন দেখা যায়, তেমনি বুধ থেকে বাকি গ্রহদেরও দেখায় যায়, তবে অনেকটা অনুজ্জ্বল।

আরো পড়ুনঃ
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

পৃথিবীর উত্তর মেরু বরাবর যেমন ধ্রুবতারার অবস্থান তেমনি বুধ গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে একটি ধ্রুব তারা আছে। এর নাম আলফা পিকটোরিস। কখনও কখনও বুধ গ্রহে একই দিনে দুইবার সূর্যোদয় দেখা যায়। কেন তা আমরা অন্য কোন সময় ব্যাখ্যা করব।

শুক্র গ্রহের আকাশঃ 
পৃথিবীর আকাশে শুক্র (শুকতারা) খুবই জনপ্রিয় বস্তু। কিন্তু এর নিজের আকাশ খুবই নিষ্প্রভ। দিনের বেলায়ও সূর্য দেখা যায় না। রাতেও তারারা মিটিমিটি করে না। এর কারণ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে অস্বচ্ছ সালফিউরিক এসিডের উপস্থিতি। সোভিয়েত মহাকাশযান ভেনেরার মতে শুক্র গ্রহের আকাশ দেখতে কমলা রঙের। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে আবর্তন করে বলে এতে সূর্য ওঠে পশ্চিমে, অস্ত যায় পূবে। এটিই আবার সেই অদ্ভুত গ্রহ যাতে বছরের চেয়ে দিন বড়।
আরো পড়ুনঃ 
অদ্ভুত এক গ্রহ

গ্রহটির বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে উপরে উঠলে চাঁদ, পৃথিবী এবং বুধ গ্রহকে বেশ ভালো উজ্জ্বল দেখা যায়।

চাঁদের আকাশঃ
চিত্রঃ ১৯৬৮ সালে চাঁদের কক্ষপথ থেকে তোলা পৃথিবীর ঐতিহাসিক ছবি

চাঁদেরও কোন বায়ুমণ্ডল নেই। তাই এর আকাশ দেখতে কালো। তবে দিনের বেলায় সূর্য খুব উজ্জ্বল থাকার কারণে তারাদেরকে দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে সূর্যের আলোর দিককে কোনভাবে ঢেকে রাখলে তারা দেখা সম্ভব। এর কারণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। আমরা জানি, আলোর উৎসের আশাপাশের বস্তু আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। তবে আলোকে হাত দিয়ে আড়াল করে রাখলে আলোক উৎসের পাশের বস্তু সহজেই দেখা যায়। কিন্তু পৃথিবীতে সূর্যের দিককে হাত দিয়ে ঢেকে রাখলেও তারা দেখা যাবে না। কারণ বায়ুমণ্ডলের কারসাজিতে আলো সব দিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সূর্যকে দেখতে যেমন লাগে, চাঁদ থেকেও তেমনই লাগে। কিছুটা বেশি উজ্জ্বল এবং সাদা রঙের- যেহেতু বায়ুমণ্ডল অনুপস্থিত।

চাঁদ থেকে পৃথিবীকে দেখতে কেমন লাগে? খুশির খবর হচ্ছে, চাঁদের আকাশের সবচেয়ে দর্শনীয় বস্তু কিন্তু পৃথিবীই। পৃথিবী থেকে চাঁদকে যত বড় লাগে, চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তার চার গুণ মনে হয়। পৃথিবীর আকাশে যেমন চাঁদ বড় ছোট হয়, তেমনি চাঁদ থেকে দেখতে পৃথিবীও বড় ছোট হয়। কারণ দুজনেই সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে। তবে পৃথিবীতে যখন চাঁদের পূর্ণিমা, চাঁদে তখন পৃথিবীর অমাবশ্যা। একইভাবে চাঁদের অমাবশ্যার সময় পৃথিবী চাঁদকে দেয় জ্যোৎস্না শোভিত রাত। তার মানে জ্যোৎস্না চাঁদের একক সম্পত্তি নয়। সুযোগ দিলেও পৃথিবীও তার দান ফিরিয়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 
পূর্ণিমা হয় কখন, কীভাবে?
চিত্রঃ চাঁদে পৃথিবির উদয় ঘটছে। একে আমরা নাম দিতে পারি ‘ভূদোয়’। ইংরেজিতে বলে আর্থরাইজ

আমরা জানি, চাঁদ নিজের অক্ষের চারদিকে এক বার ঘুরতে যে সময় নেয় তাতে পৃথিবীকে এক বার ঘুরে আসে। ফলে আমরা পৃথিবী থেকে সব সময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই দেখতে পাই। সর্বোচ্চ অবশ্য ৫৮% পর্যন্ত দেখা যায়। এর অনিবার্য কারণ হিসেবে চাঁদেরও শুধু পৃথিবীর নিকট পৃষ্ঠ থেকেই পৃথিবীকে দেখা যায়। অন্য পাশ থেকে দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদকি আবর্তন করে?

পৃথিবীতে বসে আমরা চন্দ্রগ্রহণ দেখি, যখন সূর্যের আলোতে তৈরি পৃথিবীর ছায়া চাঁদের গায়ে গিয়ে পড়ে। এই সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে। এই সময় চাঁদে ঠিক কী ঘটে? একটু ভাবলেই বোঝা যায়, এই সময় চাঁদ থেকে কেউ পৃথিবীর কারণে সূর্যকে দেখতে পাবে না। তার মানে চাঁদে তখন হবে সূর্যগ্রহণ। মজার ব্যাপার, তাই না! চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তুলনামূলক অনেক বড় দেখায় বলে সূর্যগ্রহণের সময়ের দৈর্ঘ্যও হবে লম্বা।

চিত্রঃ পৃথিবীতে চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝে।

পৃথিবীতে যখন সূর্যগ্রহণ হবে তখন তাহলে চাঁদে কেমন দেখাবে? এটা তেমন দারুণ কিছু হবে না। কারণ পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ থাকে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে। ফলে এ সময় চাঁদ সূর্যের আলোকে বাধা দিয়ে পৃথিবীর উপর ছায়া ফেলতে চেষ্টা করবে। এ কারণে পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণ হবে ঠিকই। কিন্তু চাঁদের আকাশ থেকে দেখলে পৃথিবী যেহেতু চার গুণ বড় তাই চাঁদের আকাশের পৃথিবী খুব একটা ঢাকা পড়বে না। একটি গলফ বল ১৫ ফুট দূরে সূর্যের আলোর যেমন ছায়া ফেলবে, তেমন প্রতিক্রিয়াই শুধু চাঁদ তৈরি করতে পারবে। তবু এক কথায় বলা চলে, যখনি পৃথিবীতে কোন ধরনের গ্রহণ (Eclipse) ঘটে, তখন চাঁদেও একটি গ্রহণ হয়ে থাকে।
চিত্রঃ নাসার অ্যাপলো ১৭ মিশন কমান্ডার ইউজিন সারনান চাঁদকে পেছনে রেখে পোজ দিচ্ছেন। চাঁদে যাওয়া মোট ১২ ব্যক্তির মধ্যে তিনি সবার শেষে ফিরেছেন। 


মঙ্গল গ্রহের আকাশঃ
মঙ্গল গ্রহের একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল আছে, তবে তা প্রচুর ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। এতে করে আলো অনেক বেশি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। দিনের বেলায় আকাশ খুব উজ্জ্বল থাকে। কোন তারা দেখায় যায় না। মঙ্গলের আকাশের সঠিক রঙ জানা একটু কষ্টকর। তবে আগে যতটা মনে হত, মঙ্গলের আকাশ ততটা গোলাপী নয়। এর রঙ কমলা থেকে লালের কাছাকাছি। মঙ্গলের আকাশে সূর্যকে পৃথিবীর আকাশের তুলনায় ছোট দেখা যায়। এটাইতো হওয়া উচিত, তাই না? কারণ মঙ্গলতো পৃথিবী থেকেও সূর্যের দূরে।
মঙ্গলের দুটো ছোট্ট চাঁদ (উপগ্রহ) আছে- ফোবোস ও ডিমোস। ফোবোসকে সূর্যের অর্ধেকের চেয়ে ছোট দেখায়। আর ডিমোসকে লাগে একেবারে প্রায় বিন্দুর মত। সত্যিকারের সূর্যগ্রহণ বলতে যা বোঝায় তা এই চাঁদরা মঙ্গলের আকাশে তৈরি করতে পারে না। বরং সূর্য ও মঙ্গলের সাথে একই রেখায় এলে এদেরকে সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে গ্রহণ না বলে বলা হয় ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)।
মঙ্গল থেকে পৃথিবীকে দেখতে ডাবল স্টারের মত লাগে। এর কারণ পৃথিবীর সাথে চাঁদের উপস্থিতি। পৃথিবী ও চাঁদের সর্বোচ্চ আপাত উজ্জ্বলতা হয় যথাক্রমে (-২.৫) ও (+০.৯)। তবে শুক্র গ্রহকে আরেকটু উজ্জ্বল দেখায়। এর আপাত উজ্জ্বলতা হয় (-৩.২) পর্যন্ত। মনে আছে নিশ্চয়ই, আপাত উজ্জ্বলতার মান কম হলে বস্তু হয় অপেক্ষাকৃত বেশি উজ্জ্বল। আর আগে মাইনাস চিহ্ন দিয়ে দিলে বড় সংখ্যার মান হয়ে যায় ছোট। তবে মঙ্গলের চাঁদগুলো থেকে মঙ্গলকে বিশাল বড় দেখায়। পূর্ণিমার চাঁদের সময় চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি ফোবোস ও ডিমোস থেকে মঙ্গলকে যথাক্রমে তার ৬৪০০ ও ১০০০ গুণ বড় দেখায়!

মঙ্গলের পরে সৌরজগতে আছে গ্রহাণুপুঞ্জ। আপাতত এদের নিয়ে বলার মত বিশেষ কিছু নেই। তাই আমরা চলে যাচ্ছি বৃহস্পতি গ্রহে। তবে এতক্ষণ যাদের কথা বললাম- চাঁদ অথবা মঙ্গল বা অন্য গ্রহরা; এদের উপর আমরা অবতরণ করতে পারব (শুক্রের ভয়াবহ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে মারা পড়ব যদিও)। কিন্তু বাকি গ্রহরা হল গ্যাস দানব (Gas giant) অথবা তুষার দানব (ice giant)। সাধারণত এদের কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না যেখানে আমরা কখনও অবতরণের চিন্তা করতে পারি।

বৃহস্পতির আকাশঃ
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের ভেতর থেকে কখনও কোনভাবে ছবি তোলা হয়নি। তবে মনে করা হয় এর আকাশও পৃথিবীর আকাশের মতই নীল, তবে বেশ অনুজ্জ্বল। এতে সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা ২৭ গুণ কম। আমরা এখন জানি, শনি ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গ্রহের বলয় আছে, তা খুবই সরু অবশ্য। বৃহস্পতির এই বলয় এর বিষুব অঞ্চল থেকে দেখা সম্ভব। বায়ুমণ্ডলের আরও নিচের দিকের এলাকা বিভিন্ন মেঘ ও রঙের কুয়াশায় পরিপূর্ণ। ফলে এদিকে সূর্যের আলো আসতে বাধা পায়। পৃথিবীর তুলনায় এখানে সূর্যকে চারভাগের এক ভাগের চেয়েও ছোট দেখায়।
সূর্যের পরে বৃহস্পতির আকাশে উজ্জ্বল বস্তুরা হল এর প্রধান চারটি চাঁদ। এরা হল আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো। গ্যালিলিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে এদের নাম গ্যালিলীয় চাঁদ। এর মধ্যে আয়ো আমাদের চাঁদের চেয়ে বড় দেখায়। তবে কিছুটা কম উজ্জ্বল। কিন্তু আবার কোন মাতৃ গ্রহ থেকে দেখা এর চাঁদদের মধ্যে আয়োকেই সবচেয়ে বড় দেখায়। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল গ্যানিমিড। এটি আয়ো ও ইউরোপার কাছাকাছি মানের উজ্জ্বল। তবে দেখতে আয়োর চেয়ে ছোট- অর্ধেক। তবে ইউরোপার চেয়ে অবশ্য দ্বিগুণ দেখায়। ক্যালিস্টো এদের মধ্যে সবচেয়ে দূরে। ফলে এটি দেখতে আয়োর চারভাগের এক ভাগের মত। আমাদের চাঁদের মত এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বৈশিষ্ট্য (যেমন এবড়োথেবড়ো পৃষ্ঠ) চোখে পড়ে না।
চিত্রঃ বৃহস্পতির আকাশে আয়ো এবং ইউরোপা

এরা আমাদের চাঁদের মতই সূর্যগ্রহণ ঘটাতে সক্ষম। বরং আমাদের চাঁদের চেয়ে এরা এই কাজটি বেশিই করে। এর কারণ হচ্ছে বৃহস্পতির কক্ষীয় নতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক অল্প।
অ্যামালথিয়া ছাড়া এর ভেতরের দিকের বাকি উপগ্রহদেরকে দেখতে তারার মত দেখায়। অ্যামালথিয়া মাঝে মাঝে বড় হয়ে প্রায় ক্যালিস্টোর সমান হয়ে যায়। তবে বৃহস্পতির আকাশে এরা সবাই যে কোনো তারার চেয়েও উজ্জ্বল থাকে। আরও দূরের উপগ্রহদের মধ্যে হিমালিয়া ছাড়া কাউকে দেখা যায় না।
এবার আসি বৃহস্পতির উপগ্রহদের আকাশে। এদের সংখ্যা আপাতত ৬৭। কারোই বলার মত বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে আকাশ হয় কালো। এদের আকাশে বৃহস্পতিকে অসাধারণ দেখায়। অভ্যন্তরীণ উপগ্রহদের এর সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ আয়োতে বৃহস্পতিকে আমরা চাঁদকে যেমন দেখি তার ৩৮ গুণ বড় দেখায়!  সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ মেটিস। এখানে বৃহস্পতিকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের ১৩০ গুণ! মেটিসে বৃহস্পতি সূর্যের আলোর ৪% পর্যন্ত উজ্জ্বলতা প্রতিফলিত করতে পারে। বলে রাখা ভাল, আমাদের চাঁদ পৃথিবীর আকাশে সূর্যের চেয়ে ৪০০ গুণ অনুজ্জ্বল।

শনি গ্রহের আকাশঃ 
আগেই বলেছি শনি গ্রহেরও কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই। এর বায়ুমণ্ডলের উপুরের দিকে থেকে আকাশ সম্ভবত নীল দেখাবে। তবে আরও নিচের দিকে আকাশের রঙ দেখাবে হলুদাভ। শুধুমাত্র অনুসূর (সূর্যের নিকটতম) অবস্থানে থাকার সময় এর উত্তর গোলার্ধ সূর্যকে দেখার সুযোগ পায়। এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ থেকে এর বলয় দেখা যায় ভালোভাবেই।
অনুসূর বনাম অপসূর

শনির উপগ্রহরা রাতের আকাশকে খুব বেশি সুন্দর করে তুলতে পারে না, যদিও এখন পর্যন্ত এর ৬২ টি উপগ্রহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটান। এটি শনির আকাশে আমাদের চাঁদের অর্ধেকের মত লাগে। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭)। তবে দূরত্ব বেশি হবার কারণে টাইটান শনির সবচেয়ে অনুজ্জ্বল চাঁদ। এর চেয়েও উজ্জ্বল দেখায় মাইমাস, এনচেলাডাস, টেথিস, ডায়োনে ও রিয়া। বাইরের দিকের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র ফোবেকে দেখা যায়।
আমাদের চাঁদের মতই শনির ভেতরের দিকের চাঁদেরাও শনিকে একবার ঘুরে আসতে যে সময় নেয় ততক্ষণে শনি নিজের অক্ষের উপর আবর্তন শেষ করে। ফলে এদের এক পৃষ্ঠ থেকেই শুধু শনিকে দেখা সম্ভব। তবে ভেতরের দিকের চাঁদ্গুলোতে শনি একটি দেখার মত জিনিস বটে! শনির উপগ্রহ প্যানে শনিকে আমাদের চাঁদে চেয়ে ১০৪ গুণ বড় দেখায়। তবে শনির উপগ্রহগুলো থেকে এর বলয় খুব ভালোভাবে দেখা যায় না। এর কারণ এরা শনির বলয়ের সাথে একই সমতলে অবস্থান করছে। অন্য দিকে বলয়ের পুরুত্বও কিন্তু খুব বেশি না।
সৌরজগতের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র শনির উপগ্রহ টাইটানেরই পুরু বায়ুমণ্ডল আছে। এর পৃষ্ঠ থেকে আকাশকে দেখতে বাদামী বা গাঢ় কমলা রঙের দেখায়। টাইটান সূর্যের আলো পায় পৃথিবীর ৩০০০ ভাগের এক অংশ। ফলে দিনের বেলায় এর আকাশ দেখায় পৃথিবীর গোধূলির মত। পৃথিবী ছাড়া পুরো মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত জানা মতে শুধু টাইটানেই রংধনু তৈরি হতে পারে। শনিকে দেখা যায় শুধু বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের দিকেই।
অন্য দিকে এনসেলাডাস উপগ্রহে শনিকে তুলনামূলক অনেক অনেক ভালো দেখা যায়। আমাদের চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি তার তুলনায় এখান থেকে শনিকে ৬০ গুণ বড় দেখা যায়। তবে আমাদের চাঁদের মতই এর মাত্র এক পৃষ্ঠ থেকেই শনিকে দেখা সম্ভব। এর আকাশে শনিকে বড়- ছোট হতেও দেখা যায়। এখান থেকে শনির আরও কিছু উপগ্রহকেও দেখা যায়। এর মধ্যে মাইমাসকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের সমান।
চিত্রঃ শিল্পির হাতের তুলিতে শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের আকাশ

শনির দক্ষিণ মেরু বরাবর আকাশে আমাদের ধ্রুবতারার মত একটি তারা আছে। এর নাম ডেল্টা অক্টানটিস।

ইউরেনাস গ্রহের আকাশঃ
এই গ্রহটির আকাশ খুব সম্ভব হালকা নীল। এর হালকা বলয় পৃষ্ঠ থেকে দেখা যাওয়ার কথা নয়। ইউরেনাসের দক্ষিণ ও উত্তর দুই মেরুতেই একটি করে মেরু তারা (Pole star) বা ধ্রুবতারা আছে। এরা হল যথাক্রমে ১৫ ওরাইওনিস ও সাবিক। দুটোই আমাদের উত্তর মেরুর ধ্রুবতারার চেয়ে অনুজ্জ্বল।
এর পৃষ্ঠ থেকে কোন উপগ্রহকেই আমাদের চাঁদের মত বড় দেখা যায় না, যদিও এখন পর্যন্ত এরা সংখ্যায় ২৭। তবে এরা সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় দারুণ একটি দৃশ্য ঠিকই তৈরি হয়।

নেপচুনের আকাশঃ
নেপচুন সৌরজগতের সর্বশেষ গ্রহ। অনেকটা ইউরেনাসের মত এর আকাশ। তবে এটি হালকার বদলে উজ্জ্বল নীল। এরও বলয় আছে। তবে তা খুবই সরু হওয়াতে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে দেখা যায় না। সূর্যের পরে এর আকাশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু উপগ্রহ ট্রাইটন। একে আমাদের চাঁদের চেয়ে সামান্য ছোট দেখায়। আরেকটি চাঁদ প্রোটিয়াস দেখতে আমাদের চাঁদের অর্ধেক। নেপচুনের সবচেয়ে বড় চাঁদ হল ট্রাইটন। এর হালকা বায়ুমণ্ডল আছে। তবু আকাশ কালোই দেখায়। এর আকাশে নেপচুনকে এক জায়গায় স্থির দেখায়। কেন অনুমান করেনতো? এতক্ষণের আলোচনা থেকেই বুঝে ফেলার কথা।

প্লুটোর আকাশঃ
চিত্রঃ প্লুটোর আকাশে সূর্য (উপরে ডানে) ও উপগ্রহ শ্যারন

প্লুটো এখন আর গ্রহ নয় বরং বামন গ্রহ (Dwarf planet)। প্লুটো সূর্য থেকে পৃথিবীর তুলনায় ১৩০ গুণ দূরে। তবু এখানে সূর্য মোটামুটি ভালোই উজ্জ্বল। এখানে আমাদের চাঁদের চেয়ে সূর্যের উজ্জ্বলতা ১৫০ থেকে ৪৫০ গুণ। এর বায়ুমণ্ডলে আছে নাইট্রোজেন, মিথেন ও কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস। প্লুটো এর বৃহত্তম উপগ্রহ শ্যারনের সাথে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আটক। এ কারণে এরা সব সময়ে একে অপরের দিকে মুখ করে থাকে।

সৌরজগতের বাইরের আকাশঃ 
বহির্গ্রহ মানে সৌরজগতের বাইরের গ্রহ। ৬৫ থেকে ৮০ আলোকবর্ষ দূরত্ব পর্যন্ত সূর্যকে খালি চোখে দেখা যাবে। মাত্র ২৭ আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত একটি নক্ষত্রে নাম বিটা কোমি বেরানেসিজ। আমাদের আকাশে এটি খুব অনুজ্জ্বল। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র জগৎ আলফা সেন্টোরি (প্রক্সিমা সেন্টোরি নক্ষত্রও একই বাইনারি জগতের অংশ)। এই অঞ্চল থেকে সূর্যকে দেখা যাবে ক্যাসিওপিয়া তারামণ্ডলীতে। উজ্জ্বলতা হয় আমাদের রাতের আকাশের ৬ষ্ঠ উজ্জ্বল নক্ষত্র ক্যাপেলার মত।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Extraterrestrial_skies#Mercury
২। https://www.quora.com/The-sky-is-blue-on-earth-What-color-is-the-sky-on-other-planets-in-our-solar-system
৩। http://www.answers.com/Q/What_color_is_the_sky_on_the_planet_Mercury
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_nearest_stars_and_brown_dwarfs
Category: articles

শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬

শুক্র সৌরজগতের ২য় গ্রহ। ২২৫ দিনে এটি সূর্যকে একবার ঘুরে আসে। অর্থ্যাৎ, কেউ যদি গ্রহটিতে বাস করতে পারত, তবে তাদের ২২৫ দিনে এক বছর হত। কিন্তু গ্রহটিতে দিনের দৈর্ঘ্য বছরের চেয়ে বেশি। এতে এক দিন হতে হতে পৃথিবীর প্রায় ২৪৫ দিন পেরিয়ে যায়। কেন? এর কারণ হচ্ছে এর আবর্তন গতি খুব ধীর। তাঁর মানে, গ্রহটিতে বছরের চেয়ে দিন বড়!
আরো পড়ুনঃ 
 অদ্ভুত এক গ্রহ

গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন, শুক্র গ্রহও বড় ছোট হয় (রাতের আকাশে পৃথিবী থেকে দেখতে, চাঁদের মত) 

এই গ্রহটি নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে অন্য গ্রহদের উলটো দিকে। ফলে এতে সূর্য ওঠে পশ্চিমে, অস্ত যায় পূর্ব দিকে। রাতের আকাশের বস্তুদের মধ্যে উজ্জ্বলতায় এর অবস্থান দ্বিতীয়, অর্থ্যাৎ চাঁদকে বাদ দিলে এটিই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। এর আপাত উজ্জ্বলতা সর্বোচ্চ হয় -৪.৬ (মাইনাস ৪.৬)। আমরা জানি, আপাত উজ্জ্বলতা যত কম হয়, বস্তুটি হয় তত বেশি উজ্জ্বল। শুক্র (শুকতারা) গ্রহের এত বেশি উজ্জ্বলতার কারণে এটি ছায়া ফেলতেও সক্ষম হয়।
আরো পড়ুনঃ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

এর কক্ষপথ পৃথিবী থেকে ভেতরের দিকে হওয়ায় একে কখোনই সারা রাত ধরে দেখা যায় না। এটি দিগন্তের উপরে সর্বোচ্চ ৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। এটিও পৃথিবীর মতই পাথুরে গ্রহ। এর ভর, আকার ও কক্ষপথ পৃথিবীর কাছাকাছি হওয়ায় অনেক সময় একে পৃথিবীর যমজ বলা হয়। কিন্তু পৃথিবীর সাথে এর অমিলও কম নয়। চারটি পাথুরে গ্রহের (বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল) মধ্যে এর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, যা ৯৬% কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরা। এর পৃষ্ঠে বায়ুর চাপ পৃথিবীর ৯২ গুণ।

বুধ গ্রহ সূর্যের সবচেয়ে নিকটের গ্রহ হলেও তাপমাত্রায় এক নম্বরে শুক্র। এর অন্যতম কারণ, এর বায়ুতে উপস্থিত কার্বন ডাই  অক্সাইড, যা পৃথিবীতেও গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্যে দায়ী। এর পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৭৩৫ কেলভিন বা ৪৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অস্বচ্ছ সালফিউরিক এসিডে ঢাকা থাকায় একে খালি চোখে মহাশুন্য শুন্য থেকে একে দৃশ্যমান আলোতে দেখা যায় না। ধারণা করা হয়, পূর্বে এতে পানির অস্তিত্ব ছিল।
আরো পড়ুনঃ
শুক্র গ্রহে বসবাস!

পৃথিবী ও শুক্রের তুলনামূলক আকার

সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ০.৭২ এইউ। এক এইউ হচ্ছে পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব। বুধ গ্রহের মতই এর কোন উপগ্রহ নেই। এর আয়তন পৃথিবীর চেয়ে একটু কম, পৃথিবীর প্রায় ৮৭ ভাগ। ভর পৃথিবীর প্রায় ৮২ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণ পৃথিবীর চেয়ে ১০% কম। ফলে, এই গ্রহে গেলে কারো ওজোন ১০% কমে যাবে। এর মুক্তিবেগ সেকেন্ডে ১০.৩৬ কিমি.। অর্থ্যাৎ, কোন বস্তুকে এই বেগে শুক্র গ্রহ থেকে নিক্ষেপ করলে এটি শুক্র গ্রহ থেকে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে যাবে।

পৃথিবীর বাইরের গ্রহদের মধ্যে এতেই সর্বপ্রথম কোন মহাকাশযান অভিযানে যায়। ১৯৬২ সালে মেরিনার ২ নামক যানটি এই রেকর্ড করে। ১৯৭০ সালে ভেনেরা ৭ সর্বপ্রথম এতে অবতরণ করে। ১৯৯১ সালে ম্যাজেলান অরবিটার এর বিস্তারিত চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়।
Category: articles

শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১৬

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ১ লক্ষ বার ঘুরে ফেলল। এর যাত্রা শুরু ১৯৯৮ সালের ২০ নভেম্বর। ১ লক্ষ বার প্রদক্ষিণের মাইলফলক অর্জিত হয় এ বছরের মে মাসের ১৬ তারিখে। এর মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব হল ২.৬ বিলিয়ন মাইল বা ৪ বিলিয়ন কিমি.। এই চলাচল যদি সরল রেখায় হত তবে মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব হত পৃথিবী থেকে নেপচুনের দূরত্বের সমান, অথবা পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্বের দশ গুণ।
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলছে আইএসএস
শুরু থেকেই এই স্টেশন পৃথিবীর অনেকগুলো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে মহাকাশ গবেষণায় আমেরিকা ও রাশিয়ার এক হওয়া এর বড়ো অর্জন।
১৯৯৮ সালে রুশ মডিউল জারিয়া ও আমেরিকান মডিউল ইউনিটির সমন্বয়ে তৈরি হয় বর্তমান মহাকাশ স্টেশন
১৮ বছর পরে বর্তমানে এসে আইএসএস অনেকগুলো জাতির অংশগ্রহোণে নির্মিত সবচেয়ে জটিল স্থাপনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের তৈরি সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থাপনাও এটি। আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ, জাপান ও কানাডার সমন্বিত অর্থায়নে তৈরি এই যান নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ। 
মাইক্রোগ্র্যাভিটি অবস্থানে একমাত্র বাসযোগ্য যান এই মহাকাশ স্টেশন। এর অনন্য ল্যাবে কী পরিমাণ গবেষণা চালানোর সুযোগ হচ্ছে তা নিয়ে একটা বই লিখে ফেলা যাবে। স্টেশনটি নিজের বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিজেই করে। উৎস হচ্ছে সূর্য। 

সময় সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে খালি চোখেই মহাকাশ স্টেশনকে দেখা যায়। ঢাকা থেকে কীভাবে দেখা যাবে তা আমাদের সাইটে দেখানো আছে। ডান পাশের সাইডবারে দেখুন (মোবাইল থেকে হলে স্ক্রোল করে নিচে নেমে)
সোর্সঃ Earthsky

Category: articles

মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১৬

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচটি গ্রহই রাতের আকাশে একত্রে দেখা যাচ্ছে।
আগস্ট মাসের আকাশে গ্রহদের অবস্থান 

☛ আগস্টের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে চাঁদ থাকবে মঙ্গল ও শনি গ্রহের খুব কাছে।
☛ বুধ ও শুক্রকে সন্ধ্যা নামার পরপরই পশ্চিম দিগন্তের খুব কাছে দেখা যাবে।
☛ বৃহস্পতিকে এখনো খুব সহজেই পশ্চিম দিগন্ত থেকে কিছু উপরে দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতি হল শুক্রের পরে রাতের আকাশের ২য় উজ্জ্বল গ্রহ।
☛ আগস্টের ২৭ তারিখে বৃহস্পতি ও শুক্র খুব কাছে থাকবে।
☛ মঙ্গল বিগত মাসগুলোর চেয়ে অনুজ্জ্বল হলেও এখনো যথেষ্ট উজ্জ্বল।
☛ শনি ও জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের সাথে মঙ্গল ত্রিভুজ আকৃতি তৈরি করেছে রেখেছে এখনো।
☛ প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত মঙ্গল ও শনিকে দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই এরা এখন মাথার উপর থেকে একটু দক্ষিণে থাকে।  
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...