Advertisement

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সূর্যের চেয়ে বহু গুণ ভারী একটি বিশাল নক্ষত্র বা তারকা যখন নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে গুটিয়ে গিয়ে সিঙ্গুলারিটি গঠন করে, ফলে আলোও ঐ বস্তু থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না, তখন তাকে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহবর বলে।
অন্তত, এটা আমরা এত দিন তাই মনে করতাম।
এখন, একজন বিজ্ঞানী দাবী করলেন, গণিতের হিসাব অনুযায়ী ব্ল্যক হোলদের বাস্তবে অস্তিত্ত্ব থাকা অসম্ভব। তাঁর মতে, তারকাদের পক্ষে গুটিয়ে গিয়ে সিঙ্গুলারিটি গঠন করা সম্ভব নয়। এই মত, অধ্যাপিকা লরা মারসিনি হাউটনের।
এই মত সত্যি হলে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগের তত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
চ্যাপেল হিলের আর্টস অ্যান্ড সায়েন্টিস্টস কলেজে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার এই অধ্যাপক গবেষণাটি পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, একটি তারকা মারা যাবার সময় (জীবনের সমাপ্তিতে পৌঁছায়) হকিং বিকিরণ নিঃসরণ করে যার পূর্বানুমান করেন ড. স্টিফেন হকিং। ড. মারসিনির মতে, এই সময় তারকাটি বিশাল পরিমাণ ভরও হারায়, আর তার পরিমাণ এতই বেশি যে এর পক্ষে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়া অসম্ভব। জীবনের শেষের দিকে তারকাটি ফুলে উঠে ও বিস্ফোরিত হয়।ফলে, কখোনই সিঙ্গুলারিটি তৈরি হওয়া সম্ভব নয়, আর না ঘটনা দিগন্ত (Event Horizon) যেখান থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বাইরে আসতে পারে না বলে মনে করা হয়।
তিনি বলেন, "আমি এখনও হতভম্ব হয়ে আছি। গত ৫০ বছর ধরে আমরা সমস্যাটি পর্যালোচনা করছি। আমার মনে হয় এই সমাধান আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করার খোরাক যোগাবে।"
ব্ল্যাক হোল আছে কি নেই- এ ব্যাপারে পরীক্ষামূলক প্রমাণ হয়তো এক সময় বাস্তব প্রমাণ পেশ করবে। কিন্তু আপাতত গণিতে কোন ভুল নেই, মত এই অধ্যাপিকার।
আরও বড় ব্যাপার হল, এই গবেষণা বিগ ব্যাং তত্ত্বকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা, প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে একটি অতি নিবিড়, অতি উষ্ণ ক্ষুদ্র কণিকা থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি যা উৎপত্তির পর থেকে সম্প্রসারিত হয়ে আসছে।
মহাবিশ্বের দুটি অন্যতম মৌলিক নীতিকে একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় ব্ল্যাক হোলদেরকে খুবই অদ্ভুত মনে করা হয়।
হকিং বিকিরণ

উদাহরণস্বরূপ, আইন্সটাইনের অভিকর্ষ তত্ত্ব ব্ল্যাক হোলের ভবিষ্যদ্বাণী করে, অন্য দিকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের কথা হচ্ছে কখোনই মহাবিশ্ব থেকে তথ্য হারিয়ে যেতে পারে না। অথচ ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত সে কাজটিই করে।
এই দুই তত্ত্বের মীমাংসা এখনও হয়নি। ফলে এটা একটি প্যারাডক্সে রূপ নিয়েছে যাকে নাম দেওয়া হয়েছে ব্ল্যাক হোল ইনফরমেশন প্যারাডক্স অর্থাৎ কিভাবে কোন তথ্য বা বস্তু ব্ল্যাক হোলে হারিয়ে যেতে পারে?
অধ্যাপক মারসিনির এই সমাধান হয়তো দুই মৌলিক তত্ত্বকে সন্ধি করিয়ে দেবে।
বছরের শুরুর দিকে প্রফেসর স্টিফেন হকিংও বলেছিলেন, "ব্ল্যাক হোল বলতে কিছু নেই, আছে গ্রে হোল বা ধূসর গহবর"।
সূত্রঃ ডেইলিমেইল
Category: articles

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীতে বসে থেকে আমরা সৌরজগতের কিয়দাংশই দেখতে পাই। আমরা কী কীইবা আর দেখি? দিনে সূর্যের প্রখর তেজ, রাতের আকাশের কোমল চাঁদ ও আরো কিছু গ্রহ। কিন্তু আমাদের সৌরজগতের চৌহদ্দি অত অল্প নয়। তাহলে, প্রশ্ন দাঁড়ায়, আমাদের সৌরজগত ঠিক কত বড়?

হিসাব দেবার আগে হিসাবের এককটা দেখে নেই। মহাকাশের দূরত্বগুলো এত বিশাল যে আমাদের এসআই একক (SI Unit) মিটার তো দূরের কথা, কিলোমিটারও পাত্তা পায় না। মহাকাশবিদগণ তাই অ্যাস্ট্রোনোমিকেল ইউনিট (astronomical unit বা AU) নামে একটি একক ব্যবহার করেন। এই এককটার মান হচ্ছে পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব বা ১৫ কোটি কিলোমিটারের সমান।

বুধ গ্রহ (Mercury ) সূর্য থেকে মাত্র .৩৯ এইউ (AU) দূরে। আর জুপিটার সূর্যের ৫.৫ এইউ দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। দূরতম গ্রহ নেপচুনের দূরত্ব সূর্য থেকে ৩০.২ এইউ, যা ৪৫০৩ মিলিয়ন কিলোমিটারের সমান। প্লুটোর দূরত্ব ৩৯.২ এইউ। প্লুটো এখন বামন গ্রহ হলেও সৌর পরিবার থেকে তো আর নির্মূল হয়নি!

দ্রুতবেগে ছোটা হাইওয়েগামী গাড়ি (ধরলাম বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১১৫ কিলোমিটার) নিয়ে সূর্য থেকে নেপচুনে যেতে প্রায় ৪৬ হাজার বছর লেগে যাবে।
কিন্তু আমাদের সৌরজগতের দৌড় এখানেই শেষ নয়। গ্রহদের চৌহদ্দি যেখানে শেষ, সৌরজগতের পরিধি তার চেয়েও বহু দূর অবধি বিস্তৃত।

সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী বামন গ্রহ ( dwarf planet) হল এরিস (Eris)। এও কিন্তু সৌরজগতের একটি ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যেই পড়ে আছে। আবার, সৌরজগতের ৩০ এইউ থেকে ৫০ এইউ পর্যন্ত অর্থ্যাৎ সাড়ে ৭ বিলিয়ন অঞ্চল জুড়ে কুইপার বেল্ট (Kuiper belt) বিস্তৃত। এই বেল্টের মধ্যে আছে প্লুটো, ইরিস, মাকিমাকি ও হাউমেয়া বামন গ্রহরা। 
কাইপার বেল্ট

সবে তো শুরু!

আরও দূরে, প্রায় ৫০-২০০ এইউ দূরত্বে দেখা মিলবে প্রান্ত সীমার। এটা হচ্ছে সেই সীমানা, যেখান পর্যন্ত সেকেন্ডে ৪০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে যায় সৌর বায়ু (Solar Wind) এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আন্তঃতারকা পদার্থের সাথে। এই পদার্থগুলো আবার একীভূত হয়ে ধূমকেতুর মত লেজ তৈরি করে যার বিস্তৃতি হয় সূর্য থেকে ২৩০ এইউ পর্যন্ত।

কিন্তু, সৌরজগতের সত্যিকার বিশালতা বোঝা যাবে এর অভিকর্ষের পাল্লা থেকে অর্থাৎ যে দূরত্ব পর্যন্ত কোন বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে।

সৌর পরিবার ও উর্ট ক্লাউড 
সৌরজগতের দূরবর্তী পরিসর হচ্ছে ওর্ট ক্লাউড পর্যন্ত। ওর্ট ক্লাউড হচ্ছে এক গুচ্ছ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হিমেল (Icy) গ্রহের সমষ্টি। এরা ১ লক্ষ এইউ দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এই দূরত্ব ১.৮৭ আলোক বর্ষের সমান। যদিও আমরা ওর্ট ক্লাউডকে সরাসরি দেখি না, মনে করা হয় যেসব লং পিরিয়ড ধূমকেতু (Comet) সৌরজগতের নিকটবর্তী অংশে চলে আসে, তাদের উৎপত্তি এখানে।

সূর্যের অভিকর্ষ নিজের বাড়ি পেরিয়ে ২ আলোক বর্ষব্যাপী বিস্তৃত। এই পাল্লা সূর্য থেকে এর নিকটতম তারকা প্রক্সিমা সেন্টোরির দূরত্বের প্রায় অর্ধেক। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এই অঞ্চলের মধ্যবর্তী যে কোন বস্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ (Revolution) করবে।

আগের সেই গাড়িটার কথা মনে আছে? ঐ গাড়িটার এই দূরত্ব পাড়ি দিতে প্রায় ২ কোটি বছর লাগবে! পৃথিবী থেকে  নিক্ষিপ্ত সর্বাধিক বেগের নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন ( New Horizons)  একই কাজ করতে ৩৭ হাজার বছর সময় নেবে। এর গতি সেকেন্ডে ১৬.২৬ কি.মি বা ঘণ্টায় ৫৮৫৩৬ কি.মি। 

সূত্রঃ
১. www.universetoday.com/104486/how-big-is-our-solar-system/
২. উইকিপিডিয়াঃ Neptune, Eris, Kuiper belt; Oort cloud; New Horizons
Category: articles
পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্য। পৃথিবীর তুলনায় সূর্য অনেক বিশাল। ১০৯টা পৃথিবীকে পাশাপাশি রেখে দিলে সূর্যের ব্যাসের সমান হবে। আর সূর্যের আয়তনের সমান স্থান পূরণ করতে হলে পৃথিবীর মত প্রায় ৯ লাখ গ্রহ লাগবে! সূর্যের একার ভর সৌরজগতের ৯৯.৮৬ শতাংশ ভরের জন্য দায়ী! 


 
কিন্তু নক্ষত্রের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিলে আমাদের সূর্য হয়ে যায় সাদামাটা এক তারা। হ্যাঁ, অনেক তারকার চেয়ে সূর্য বড়, কিন্তু বহু তারকার চেয়েই আবার ছোট।

সূর্যের তুলনায় বিটলজুস কত বিশাল দেখুন। এ তো সবে শুরু। আছে আরও বিশাল বিশাল তারাও।

হাইপারজায়ান্ট তারাদের অনেকেই এত বিশাল যে এরা আমাদের সমগ্র সৌরজগতকে গিলে ফেলতে পারে। যেমন ধরা যাক ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের (VY Canis Majoris) কথা। একে সূর্যের স্থানে বসিয়ে দিলে পরিধি শনি গ্রহকেও ছাড়িয়ে যেত। 

ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিস সূর্যের স্থানে থাকলে পৃথিবী ও মঙ্গল দুটোই এর উত্তপ্ত প্লাজমায় ঝলসে যেত। গ্রহদ্বয়ের অবস্থান তো থাকতো সৌর পৃষ্ঠের অনেক ভেতরে। বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, শনি গ্রহ ও তাদের উপগ্রহদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হত। তাই এই দুষ্ট দূরে আছে বলে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারি! ও হ্যাঁ,  দূরত্ব আমাদের থেকে ৩ হাজার ৮৪০ আলোকবর্ষ দূরে। 

সূর্যের চেয়ে বড় বড় তারকারা

আমাদের সূর্যের পরিধি ২৭ লাখ মাইল বা ৪৩ লাখ কি. মি। মানে, সূর্যের চারপাশে চক্রাকারে ঘুরে আসতে এতটুকু পথ পাড়ি দিতে হবে। আর এই দানব ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের পরিধি ১৯০ কোটি মাইল বা ৩০০ কোটি কিলোমিটার। ব্যাসার্ধ গড়ে সূর্যের প্রায় ১,৪২০ গুণ। 

মনে করুন কোনো ভাবে এতে এই দানবের পরিধি বরাবর আমরা ঘুরে আসব। এ পর্যন্ত মানুষের বানানো সবচেয়ে দ্রুতগামী যান পার্কার সোলার প্রোব। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫,৮৬,৮০০ কিলোমিটার। এমন যানে চড়ে ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে ২১১ দিন লাগবে। যেখানে সূর্যকে ঘুরে আসতে লাগবে মাত্র ৭ ঘণ্টা। 
 
তবু ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসও তারকাদের রাজা নয়। এনএমএল সিগনি (NML Cygni) তার চেয়ে বড় দানব। এর ব্যাসার্ধ সূর্যের ১,৬৪০ গুণ, আর ভর ২৫-৪০ সৌর ভরের সমান। তবু এখানেই শেষ নয়। আরেকটি বড় তারার নাম ইউওয়াই স্কুটি ( UY Scuti)। এর ব্যাসার্ধ ১,৭০৮ সৌর ব্যাসার্ধের সমান। এটাকে সূর্যের স্থানে বসিয়ে দিলে বৃহস্পতির গ্রহ পর্যন্ত এর আলোকমণ্ডলের (Photosphere) পেটে চলে যাবে। এটা আছে আমাদের থেকে ৭,৮০০ আলোক বর্ষ দূরে।

সবচেয়ে বড় দুই তারার তুলনামূলক আকার 

এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় আকারের তারার নাম স্টিফেনসন ২-১৮। অন্য নাম  স্টিফেনসন ২ ডিএফকে ১। সূর্যের তুলনায় ২১৫০ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৯ হাজার আলোকবর্ষ। 

এ তো গেল সাইজ বা আকারের হিসাবে বড় তারার গল্প। সূর্যের চেয়ে বহুগুণ ভারী নক্ষত্রের কথাও জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। এই যেমন আর১৩৯ এ তারাটা। ভর সূর্যের ৯৫ গুণ বেশি। দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১,৬৩,০০০ আলোকবর্ষ। তবে এর চেয়ে ভারী তারা আছে ভূরুভূরি। এইচডি ১৫৫৫৮ তারা তো সূর্যের ১৫২ গুণ ভারী। আর এখন পর্যন্ত জানা মতে সবচেয়ে ভারী নক্ষত্রের নাম বিএটি ৯৯-৯৮। ভর সূর্যের ২২৬ গুণ। দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১,৬৫,০০০ আলোকবর্ষ। 

সূর্যের চেয়ে বেশি ভারী তারা আবার জীবনের শেষ ভাগে অনেক ছোট হয়ে যায়। এই যেমন ব্ল্যাকহোল ও নিউট্রন তারা। জীবনের শেষভাগে ব্ল্যাকহোল তো বিন্দু বা রেখার মতো হয়ে যায়। আর নিউট্রন তারা হয় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। জ্বালানি ফুরিয়ে গুটিয়ে যাবার সময় তৈরি নিউট্রন আরও ছোট হতে বাধা দেয়। ফলে তারাটা ব্ল্যাকহোল হতে পারে না। চওড়ায় হয় মাত্র ১২ মাইলের মতো। ঘন এ তারা থেকে একটি চিনির দানার সমান পদার্থ নিলে তার ভরই হবে একশো কোটি টন। 

 
সূত্র
১. http://en.wikipedia.org/wiki/VY_Canis_Majoris
২. http://en.wikipedia.org/wiki/NML_Cygni
৩. http://en.wikipedia.org/wiki/Quadrillion
৪. http://www.fromquarkstoquasars.com
৫. http://en.wikipedia.org/wiki/UY_Scuti
Category: articles

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মহাবিশ্বের কোন কেন্দ্র নেই!
কসমোলজির আদর্শ থিওরি অনুযায়ী  ১৪ শত কোটি বছর আগে একটি বৃহৎ বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু। তার পর থেকেই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু তবু প্রসারণের নেই কোন কেন্দ্র। সব দিকে একই রকম দেখতে। বিগ ব্যাঙকে সাধারণ কোন বিস্ফোরণ মনে করা ঠিক হবে না। মহাবিশ্ব কোন কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়ছে না। বরং, সমগ্র মহাবিশ্বই প্রসারিত হচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি, মহাবিশ্ব সব দিকেই সমানভাবে প্রসারিত হচ্ছে।


১৯২৯ সালে এডুইন হাবল বলেন, তিনি আমাদের থেকে বিভিন্ন দূরত্বের গ্যালাক্সিদের বেগ মেপেছেন, আর তারা যতই দূরে যাছে ততই তাদের বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে মনে হতে পারে, আমরা তাহলে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্ব যদি হাবলের সূত্রানুযায়ী সুষমভাবে সম্প্রসারিত হয়, তাহলে যে কোন জায়গাকেই এই রকম কেন্দ্র মনে হবে।
আমরা যদি একটি গ্যালাক্সিকে (নাম দিলাম খ) প্রতি সেকেন্ডে ১০, ০০০ কি.মি. বেগে দূরে সরে যেতে দেখি তাহলে গ্যালাক্সি খ এর একজন এলিয়েন আমাদের গ্যালাক্সি 'ক' কে একই বেগে বিপরীত দিকে যেতে দেখবে। যদি 'খ' গ্যালাক্সির দিকেই আরেকটি গ্যালাক্সি 'গ' থাকে, তাকে আমরা সেকেন্ডে ২০, ০০০ কি.মি. বেগে সরে যেতে দেখবো। 'খ' গ্যালাক্সির এলিয়েন 'গ' কে ১০, ০০০ কি.মি/সে. বেগে সরতে দেখবে।
কোন গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সির বেগ কেমন দেখাবে তার সারণী দেখুন। 
              ক           খ           গ
ক থেকে         0 km/s    10,000 km/s   20,000 km/s
খ থেকে   -10,000 km/s         0 km/s   10,000 km/s
 
তাহলে, 'খ' গ্যালাক্সিতে থাকা এলিয়েনও নিজেকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র মনে করবে।
বেলুনের উদাহরণঃ
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ বোঝার জন্য স্থানকে একটি সম্প্রসারণশীল বেলুনের সাথে তুলনা করা হয়। আর্থার এডিংটন ১৯৩৩ সালে তাঁর বই দি এক্সপানডিং ইউনিভার্স (The Expanding Universe) বইয়ে এই উপমা দেন। ফ্রেড হয়েল তাঁর জনপ্রিয় বই দি নেচার অব দি ইউনিভার্স (The Nature of the Universe) বইয়ের ১৯৬০ এর সংস্করণেও একই উপমা প্রয়োগ করেন। হয়েল লেখেন, "আমার গণিতশাস্রের বাইরের বন্ধুরা আমাকে প্রায়ই বলে, মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ তারা বুঝতে পারছে না। গণিতের অত শত হিসেব বাদ দিয়ে আমি বেলুনের উপমা দেই যার পৃষ্ঠে আছে অনেকগুলো বিন্দু। বেলুনটা যদি ফেটে যায়, তবে এই বিন্দুগুলো  পরস্পর থেকে দূরে সরতে থাকবে। ঠিক এভাবেই গ্যালাক্সিরাও দূরে সরে।
বেলুনের উপমাটা আসলেই দারুণ, কিন্তু একে সঠিকভাবে বুঝতে হবে। নইলে এটা আরো বিভ্রান্তির জন্ম দেবে। হয়েল বলেন, "অনেকভাবে এই উপমা ভুল দিকে নিয়ে যেতে পারে"। মনে রাখতে হবে, ত্রিমাত্রিক (Three Dimensional) স্থানকে (Space) বেলুনের দ্বি-মাত্রিক পৃষ্ঠের সাথে তুলনা করতে হবে। এখানে পৃষ্ট সুষম (Homogenous)  এবং কোন বিন্দুকে কেন্দ্র বিবেচনা করা যাবে না। বেলুনের নিজের কেন্দ্রের অবস্থান পৃষ্ঠে নয়, তাই একে মহাবিশ্বের কেন্দ্রও মনে করা যাবে না। এবার আপনি বেলুনের রেডিয়াল ডিরেকশনকে সময় মনে করতে পারেন।
হয়েলের প্রস্তাবনা ছিল এ রকম। কিন্তু এটাও কিছুটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
পৃষ্ঠের বিন্দুগুলোকে মহাবিশ্বের অংশ মনে না করলেই আরো ভালো হয়। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে গাউস আবিষ্কার করেন, স্থানের বৈশিষ্ট্য যেমন বক্রতাকে স্বকীয় রাশিমালা দ্বারাই প্রকাশ করা যায় যে রাশিগুলো কোথায় বক্রতা ঘটছে তা বিবেচনা ছাড়াই পরিমাপ করা যায়। তাহলে, 'স্থান' এর বাইরে অন্য কোন মাত্রার (Dimension) উপস্থিতি না থাকলেও স্থান বাঁকতে পারে। তিনটা পাহাড়ের মাথার মধ্যবর্তী বিশাল ত্রিভুজের কোণ (Angle) মাপার মাধ্যমে গাউস 'স্থান' (Space) এর বক্রতাও মাপার চেষ্টা করেছিলেন।
বেলুনের উপমা ভাববার সময় মাথায় রাখতে হবে-
* বেলুনের দ্বি-মাত্রিক পৃষ্ঠ ত্রিমাত্রিক স্থানের অনুরূপ।
* যে ত্রিমাত্রিক স্থানে বেলুন আবদ্ধ আছে তা অন্য কোন উচ্চ-মাত্রিক ফিজিকেল (Physical) স্থানের অনুরূপ নয়।
* 'বেলুনের কেন্দ্র' ফিজিকেল কোন অর্থ বহন করবে না।
* মহাবিশ্বের আকার সসীম হতে পারে যা বেলুনের পৃষ্ঠের মতই প্রসারিত হচ্ছে, আবার অসীমও হতে পারে।
* প্রসারণশীল বেলুনের মতই গ্যালাক্সিরা প্রসারিত হচ্ছে, কিন্তু গ্যালাক্সি নিজে প্রসারিত হচ্ছে না। কারণ তার নিজস্ব অভিকর্ষ।
(চলবে)
আরও পড়ুনঃ গ্যালাক্সিরা প্রসারণের সময় কিভাবে আলোর বেগকে পরাজিত করে? 
সূত্রঃ
http://math.ucr.edu/home

Category: articles

রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

এলিয়েনের হাতে অপহরণের কিসসাঃ ১ম পর্ব 

মনুষ্যসদৃশ (humanoid ) প্রাণিটির পরনে ছিল দামী ইউনিফর্ম ও কালো টুপি। যানটির নিচ থেকে বেরিয়ে এল বিশাল এক আকৃতি। যানটি আরো কাছে এগিয়ে এল, প্রায় ৫০-৮০ ফুট ওপরে ও ৩০০ ফুট সামনে। পরবর্তীতে ১৯৬১ সালের অক্টোবরের ২১ তারিখে (ঘটনার এক মাস পর) বার্নে নিকাপের (NICAP=National Investigations Committee On Aerial Phenomena*) গোয়েন্দা ওয়াল্টন ওয়েবকে বলেন, "যেভাবেই হোক, প্রাণিগুলো মানুষ ছিল না।"
চোখ থেকে বাইনোকুলার সরিয়ে বার্নে গাড়ির দিকে ছুটে গেলেন।  উত্তেজিত হয়ে বেটিকে বললেন, "ওরা আমাদের ধরতে আসছে!"
বস্তুটা আবারও অবস্থান পাল্টিয়ে সরাসরি  গাড়ির ওপরে চলে এল। বস্তুটার দিকে বেটিকে চোখ রাখতে বলে বার্নে দ্রুত গতিতে গাড়ি ছুটিয়ে দিলেন। উজ্জ্বল, তারকাখচিত রাত হলেও বেটি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ইন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখলেন না।
একটু পরই হিল দম্পতি ছন্দোময় বিপ বিপ বা গুঞ্জনধ্বনি শুনলেন।মনে হচ্ছিল শব্দটা গাড়ির ট্রাঙ্কে বাড়ি খেয়ে ফিরে যাচ্ছিল। গাড়ি একটু কেঁপে উঠল আর তাদের গা বেয়ে শির শির অনুভূতি বয়ে গেল। তারা বলেন, ঐ সময় তাদের চেতনা পরিবর্তিত রূপ ধারণ করল আর তাদের চিন্তাশক্তি নিষ্প্রভ হয়ে গেল। একটু পর আবার কোডের মত বিপ বিপ বা গুঞ্জনধ্বনি তাদের চিন্তাশক্তি সম্পুর্ণরূপে ফিরিয়ে দিল। তারা দেখলেন, ততক্ষণে ৩৫ মাইল (৫৬কি.মি) দক্ষিণে চলে এসেছেন। কিন্তু এই পথটুকু পাড়ি দেবার স্পষ্ট বা পূর্ণাংগ কোন স্মৃতি তাদের মনে নেই।  তাদের হঠাৎ করে অপরিকল্পিতভাবে সামনে রাস্তা বন্ধ ও একটি আগুণের গোলক দেখে বাঁক নেবার কথা মনে আছে।
প্রতিক্রিয়াঃ
ভোরের দিকে বাড়িতে ফিরে তাদের অদ্ভূত চাঞ্চল্যকর অনুভূতি হল যা তাদের ভাষায় বোঝানো যাচ্ছিল না। বার্নে বাইনোকুলারের চামড়ার ফিতা ছেঁড়া দেখতে পেলেন, কিন্তু মনে করতে পারলেন না এটা কখন ও রকম হল। আরো দেখলেন, তার প্রিয় পোশাকের কিনার ব্যাখ্যাতীতভাবে চাঁছা।
গোসল সেরে সতেজ হয়ে দু'জনেই যা দেখলেন তা আঁকার চেষ্টা করলেন। দেখা গেল, দু' জনের আকাঁয় দারুণ মিল। অবাক হয়ে তারা ইউএফও দেখা ও গাড়িতে করে বাড়ি ফিরে আসার মধ্যবর্তী সব ঘটনা মনে করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু গুঞ্জনধ্বনিটা শোনার পর থেকে তাদের স্মৃতি অসম্পূর্ণ ও খণ্ডিত হয়ে গেল। তাদের অস্পষ্ট স্মৃতিত চাঁদের মত উজ্জ্বল একটি বস্তুকে রাস্তার উপর বসে থাকতে দেখল। বেটির মতে ঐ মুহূর্তে তার স্বামী আচমকা মোড় নিয়েছিলেন।

কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে বেটি ঘটনার সময়ের জুতা ও জামা ক্লজিটে রাখলেন। দেখা গেল কাপড়ের আঁচল ও জিপার ছেঁড়া। ক্লজিট থেকে পরে বের করে দেখলেন যে কাপড়ের ওপর গোলাপি পাউডার লেগে আছে। দড়িতে ঝোলানো হলে গোলাপী পাউডার মিলিয়ে গেল। কিন্তু কাপড়টা চিরতরে নষ্ট হয়ে গেল। পরবর্তীতে পাঁচটি ল্যাবে ঐ কাপড়ের ফরেনসিক টেস্ট চালানো হয়।
গাড়ির পেছনের তোড়ং-এ চকচকে, এককেন্দ্রিক কিছু বৃত্ত দেখা গেল যা আগে ছিল না। বৃত্তগুলোর কাছে কম্পাস নিলে এর কাঁটা জোরে ঘুরতে লাগল, আবার কয়েক ইঞ্চি দূরে সরাতেই কাঁটা স্বাভাবিক হয়ে গেল।
সময়টা কোথায় গেলঃ
১৯৬১ সালের নভেম্বরে আবার নিকাপ তাদের ইন্টারভিউ নিল। একটা প্রশ্ন ছিল তাদের ভ্রমণের সময় নিয়ে। যদিও তাদের বাড়ি ফেরার কথা ৪ ঘণ্টায় সেখানে সময় লেগেছিল ৭ ঘণ্টা। অন্যান্য ইউএফও কেসেও এমন সময় হারানোর ঘটনা ঘটে। একে নাম দেওয়া হয়েছে মিসিং টাইম।
১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা কয়েকবার ঐ রাস্তায় ঘুরতে গেলেন। যেখানে রাস্তার উপর উজ্জ্বল গোলকটি দেখেছিলেন সেটা চিহ্নিত করা গেল না।
নিউ হ্যাম্পাশায়ারে সরকারী ফলক
মিসিং সময়ের ঘটনা জানার জন্যে তাদেরকে সম্মোহিত করার চেষ্টা করা হল। ১৯৬৪ সালে ডক্টর সাইমন আবারো এ রকম একটি চেষ্টা চালালেন। সম্মোহন থেকে কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও এর পর বেটি ও বার্নে কিছুটা চিন্তামুক্ত হন।
নোটঃ
*নিকাপের কাজ হচ্ছে ইউএফও বিষয়ক ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান চালানো।
সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়া
২. অ্যাবাউট ডট কম 
Category: articles

সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

এনজিসি ৬৮৭২ (NGC 6872) গ্যালাক্সি পৃথিবী থেকে ২১২ মিলিয়ন (বা ২১.২ কোটি) আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। একে IC 4970 গ্যালাক্সির সাথে প্যাভো (Pavo) নক্ষত্রপুঞ্জে দেখা যায়। এর আকৃতি অনেকটা সেকশন চিহ্নের (§) মত।
১৯৯৯ সালে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন মানমন্দির (ESO) একে খুঁজে পায়। এর অপর নাম কনডর ছায়াপথ (Condor Galaxy)।

প্রথম দর্শনে, একে অন্য সর্পিল ছায়াপথের মতই মনে হবে। আসলেও তাই-কিন্তু আকার বাদ দিয়ে। এনজিসি ৬৮৭২ এর আকার বিস্ময়কর রকম বিশাল। এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত এই গ্যালাক্সিটিই বৃহত্তম সর্পিল গ্যালাক্সি। সার্বিকভাবে সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সি অবশ্য আইসি ১১০১।
এই মহাজাগতিক দৈত্যের প্রশস্ততা ৫ লাখ ২২ হাজার আলোক বর্ষ যা আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপাথের পাঁচ গুণ। এটি মিল্কিওয়ে অ্যান্ড্রোমিডা (আমাদের নিকটত গ্যালাক্সি) কে হজম করার পরও পেট ভরবে না।
এটা এত বিশাল হল কেন? সায়েন্স ফিকশনে যেমন দেখা যায় বাতিকগ্রস্থ বিজ্ঞানীর আকার বড় করার ওষুধ খেয়ে  মাকড়সা, মাছ ইত্যাদি মানুষের চেয়ে বিশাল হয়ে যায়- তেমন কোন ঘটনা নাকি!
হিসেব করে দেখা গেছে, কোটি কোটি বছর আগে নিকটবর্তী গ্যালাক্সি আইসি ৪৯৭০ (IC_4970) এই এনজিসি ৬৮৭২ এর কাছাকাছি আসে। ঐ সময় এরা সংঘর্ষ এড়াবার মত যথেষ্ট দূরত্বে ছিল, কিন্তু দু'জন দু'জনার অভিকর্ষীয় টানে আটকা পড়ে। ফলে, দু'জন সন্ধি করে বিশাল এই দানবীয় রূপ পরিগ্রহ করে। উইকিপিডিয়ার আর্টিকেলে তাই গ্যালাক্সিদ্বয় একই পৃষ্ঠায় ঠাঁই পেয়েছে।
কিন্তু যেই অভিকর্ষীয় বল ছায়াপথ দুটোকে একত্র করেছে, তাই হবে এদের মৃত্যুর কারণ। হ্যাঁ, গ্যালাক্সিদের প্রাণ নেই, মরতে পারে না, কিন্তু এপোড় - ওপোড় তো হয়ে যেতে পারে।  এনজিসি ৬৮৭২ এর ভাগ্যে তাই ঘটতে যাচ্ছে। আইসি ৪৯৭০ এর টানে এর অন্যতম ভারী একটি বাহু আলাদা হয়ে গিয়ে একে বামন ছায়াপথে রূপ দিতে যাচ্ছে।
অতএব, বেশি দিন সম্ভবত এনজিসি ৬৮৭২ এর পক্ষে বৃহত্তম সর্পিল গ্যালাক্সি (Spiral Galaxy) হবার রেকর্ড ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর পরে একই রকম কিছু একটা আমাদের গ্যালাক্সিতেও ঘটে যাচ্ছে। হাবল পরিমাপের একটি বিশ্লেষণীতে দেখা গেছে মিল্কিওয়ে অ্যান্ড্রোমিডার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। তাহলে, ভবিষ্যতে এমনও হতে পারে আমরাই হয়ে যেতে পারি বৃহত্তম স্পাইরাল গ্যালাক্সির অংশ।
কিন্তু হায়, যদি কিয়ামত হবার আগে তা ঘটার সুযোগ হয়ও, আমরা সেই আনন্দ উদযাপন করার সুযোগ পাব না! (আপনি কি ৪ শ' কোটি বছর বেঁচে থাকবেন?)
সূত্রঃ
১. http://www.jpl.nasa.gov/news/news.php?release=2013-016
২. http://en.wikipedia.org/wiki/NGC_6872_and_IC_4970
Category: articles

রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

২০১৩ সালের শুরুর দিকে মহাকশবিজ্ঞানীরা এক গুচ্ছ সক্রিয় ছায়াপথীয় অন্তর্বস্তু আবিষ্কার করেন যার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ৪ শ' কোটি আলোক বর্ষব্যাপী বিস্তৃত। এখানে, সক্রিয় বলতে সেই সব কৃষ্ণগহবরদের বোঝানো হচ্ছে যারা তাদের সীমানায় অবস্থিত অঞ্চলকে গ্রাস করে চলেছে।
ছবিঃ নাসা

এই কাঠামোটি হচ্ছে বিশাল কোয়াসার গুচ্ছ বা এলকিউজি ( large quasar group ) বা LQG। এর আকৃতি নিতান্তই বিশাল। আমাদের আবাস গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের আড়াআড়ি দূরত্ব ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। আমাদের পাশ্ববর্তী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা (Andromeda)  আমাদের থেকে ২৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে আর ওর আকার মিল্কিওয়ের প্রায় আড়াই গুণ (২ লাখ ৬০ হাজার আলোকবর্ষ তার ব্যাস)। তার অর্থ এই এলকিউজি খুব সহজেই অ্যান্ড্রোমিডা, মিল্কিওয়ে ও এদের মাঝখানে যা আছে সবকিছুকে হজম করে ফেলতে পারে।
আরেকভাবে তুলনা করা যাক! পৃথিবীর বয়স ৪ শ" কোটি বছরের কিছুটা বেশি। তাহলে এলকিউজিটির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আলো যতক্ষণে পৌঁছবে, ততক্ষণে পৃথিবী তৈরি হয়েছে, শীতল হয়েছে, এতে জীবনের উদ্ভব ঘটেছে, ডাইনোসররা আবির্ভূত হয়ে বিলুপ্তও হয়ে গেছে, মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, সভ্যতা গড়ে তুলেছে, আমি এই লেখাটি লিখেছি, আপনি পড়েছেন। সোজা কথায়, পৃথিবীর সমগ্র ইতিহাসের সমান সময়ে কিছু আলোক কণা এই দানবীয় কাঠামোর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে পৌঁছায়।
বেতার তরঙ্গের উৎস ও অতি উজ্জ্বল বস্তু কোয়াসারদের সর্বোচ্চ গুচ্ছ ৬০ কোটি আলোক বর্ষ বিস্তৃত। নতুন আবিষ্কৃত LQG ৭৩ টি কোয়াসার নিয়ে গঠিত। ৪০০ কোটি আলোক বর্ষের সমান প্রশস্ততা নিয়ে এটি অন্য কোয়াসার গুচ্ছদের লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।
এই LQG টি এত বিশাল যে এ আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বকে ইউটার্ন করিয়ে দিতে পারে। সাধারণ আপেক্ষিকতাকে বড় মাপের বস্তুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে অনেকগুলো সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক (Cosmological) তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ও মৌলিক হচ্ছে কসমোলোজিক্যাল নীতি। এই নীতির অবিচ্ছেদ্য বক্তব্য হচ্ছে, যথেষ্ট বড় দূরত্বের বস্তু পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে মহাবিশ্বে পছন্দনীয় কোন দিক বা অবস্থান নেই।
সোজা কথায়, মহাবিশ্বকে যে দিক থেকেই পর্যবেক্ষণ করা হোক না কেন, দেখতে একই রকম লাগবে। অর্থাৎ এটা একটা মৌলিক সমজাতীয়তা (Homogeneity)।
 সূত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Large_quasar_group
২.  http://www.fromquarkstoquasars.com
Category: articles

শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমরা সবাই জানি, ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহবর মহিবিশ্বের সবচেয়ে ভারী বস্তু।  (না জানলে এখন তো জানেন!) তারা পুরো নক্ষত্রমণ্ডলকে গিলে ফেলতে পারে। এখন, মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলই শুধু নেই, আছে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যকহোলও (Super-massive Black holes)। বাংলায় একে বলা যাক মহা ভারী কৃষ্ণগহবর

ব্ল্যাকহোল ও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের পার্থক্য হল একজন সাধারণ মানুষের সাথে অতিমানবের (Superman) পার্থক্যের মত। সাধারণ মানুষও অনেক সময় অসাধারণ কাজ করে ফেলে, আর সুপারম্যান! সব সময় সুপার!
মহা ভারী ব্ল্যাকহোলরাই মহাবিশ্বের বৃহত্তম কৃষ্ণগহবর। সাধারণ কৃষগহবর যেখানে শত শত বা হাজার হাজার নক্ষত্রকে, এমনকি পুরো তারকামণ্ডলকে হুমকিতে ফেলতে পারে, সেখানে মহা ভারী ব্ল্যাকহোলর সমগ্র ছায়াপথকে (Galaxy) কে গ্রাস করে ফেলতে পারে। এদেরকেই সাধারণত ছায়াপথের কেন্দ্রে দেখা যায়। এদের ভর বিলিয়ন বিলিয়ন সৌর ভরের সমপরিমাণ হতে পারে।
এদের ভর এত বেশি যা চিন্তা করতে গেলে মাথা কেমন কেমন করে ওঠবে! বৃহত্তমদের মধ্যে বৃহত্তম ব্ল্যাকহোল হবার রেকর্ড এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে এনজিসি ১২৭৭ ( NGC 1277) নামক ছায়াপথের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ব্ল্যাকহোল । এনজিসি ১২৭৭ হচ্ছে একটি লেন্টিকুলার গ্যালাক্সি। লেন্টিকুলার গ্যালাক্সিদের আকৃতি হচ্ছে উপবৃত্তাকার ও স্পাইরাল এই দুই আকৃতির মাঝামাঝি প্রকৃতির। পারসিউস( Perseus) নক্ষত্রপুঞ্জে (Constellation) এনজিসি ১২৭৭ এর অবস্থান। এর দূরত্ব আমাদের বাড়ি মানে মিল্কিওয়ে ছায়াপথ থেকে ২২ কোটি আলোকবর্ষ।
এই এনজিসি ১২৭৭ গ্যলাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত বৃহত্তম ভারী ব্ল্যাকহোলটি তার গ্যালাক্সির স্ফীত অংশের ৫৯ ভাগ ভরের জন্য দায়ী। হিসেব করে এই কৃষ্ণদানবের ভর পাওয়া গেছে গেছে ১৭ বিলিয়ন সৌর ভরের সমান। [সূত্র- ২] জেনে রাখুন এক সৌর ভর মানে আমাদের সূর্যের ভরই হচ্ছে 2×1030  কেজি। [ ১ বিলিয়ন মানে ১০০ কোটি] তাহলে ভাবুন ব্যাটা কত বিশাল ভারী!
এখন পর্যন্ত এর চেয়ে ভারী ব্ল্যাকহোলের সন্ধান মেলেনি। আক্ষরিক অর্থেই এই দানব নিজের আবাসকে (মানে ছা্যাপথকে) গিলে ফেলছে। এনজিসি ১২৭৭ ছায়াপথে কোটি কোটি তারকা ও তার দশগুণ গ্রহ ও অন্যান্য পাথুরে বস্তু আছে। এতকিছু থাকতে একটা মাত্র বস্তু ১৪% ভর ধরে রেখেছে। কি মহা দানবরে বাবা! অথচ অন্যান্য নিরীহ (!) ব্ল্যাকহোলরা তার ছায়াপথের মাত্র ০.১ ভাগ ভর ধারণ করে।
এর এই বিশালতার কারণে অন্যান্য ব্ল্যাকহোলও এর কাছে নিতান্তই তুচ্ছ। এই দানবকে সৌরজগতে নিয়ে আসা হলে সব গ্রহ সে তার পেটে চালান করে দিত। আমাদের সৌরজগতের নেপচুন গ্রহের কক্ষপথের চেয়ে কৃষ্ণগহবরটি ১১ গুণ প্রশস্ত, তার ঘটনা দিগন্তকে বিবেচনাই না রেখে হিসেব করেই। (ঘটনা দিগন্ত বা Event Horizon হচ্ছে ব্ল্যাকহোলের যেই সীমা যেখান থেকে আলোও আসতে পারে না)

সূত্রঃ
১.  http://www.fromquarkstoquasars.com/the-4-largest-objects-in-the-known-universe/
২. http://www.nature.com/nature/journal/v491/n7426/full/nature11592.html
৩. http://en.wikipedia.org/wiki/NGC_1277
Category: articles

মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমেরিকার নিউ হ্যাম্পাশায়ার অঙ্গরাজ্যের একটি গ্রাম্য এলাকা। এখানেই বেটি ও বার্নে হিল দম্পতি ১৯৬১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুখোমুখি হন ভিনগ্রহবাসী এলিয়েনের।  হিল দম্পতি বাস করতেন নিউ হ্যাম্পাশায়ারের পোস্টমাউথে। বার্নে ( ১৯২২-১৯৬৯) চাকুরী করতেন আমেরিকান ডাক বিভাগে আর বেটি ছিলেন সমাজকর্মী। বার্নে ছিলেন আফ্রিকান বংশোদ্ভূত কৃষ্ণাঙ্গ, অন্য দিকে বেটি ছিলেন ইউরোপিয়ান শ্বেতাঙ্গ।
ঘটনাটিকে নাম দেওয়া হয়েছে হিল অপহরণ ( Hill Abduction)। আসুন দেখি কী ঘটেছিল সে দিন আসলে।
মূল ঘটনাঃ


হিলদের বর্নণা মতে, ঘটনাটি ঘটে ১৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে দশটায়। কানাডায় ছুটি কাটিয়ে তারা পোর্টসমাউথে ফিরে যাচ্ছিলেন। নিউ হ্যাপমাশায়ারের সাগরতীর দিয়ে যাবার সময় রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অল্পই ছিল। ল্যাংকাস্টারের ঠিক দক্ষিণে থাকতে বেটি আকাশে একটি উজ্জ্বল বিন্দু দেখতে পেলেন। এটা চাঁদ এবং বৃহস্পতি গ্রহের নিচ থেকে চাঁদের পশ্চিম দিক দিয়ে উপরের দিকে উঠছিলো। বার্নে রুট-৩ এ গাড়ি চালানোর সময় বেটি বললেন যে তিনি একটা উল্কা দেখতে পেয়েছেন। তবে, এটি বিমান বা কৃত্রিম উপগ্রহের মত উপরের দিকে যাচ্ছিল।
এর ক্রমেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে ওঠা ও অস্বাভাবিক চলাচলের কারণে কৌতুহলী হয়ে ওটাকে আরো কাছ থেকে দেখার জন্য বেটি বার্নেকে থামতে বলেন। টুইন মাউন্টেইনের দক্ষিণে গাড়ি থামানো হল। ভালুক থাকতে পারে ভেবে বার্নে গাড়ির ভেতর থেকে তার পিস্তলটি নিয়ে বের হলেন।
বেটি তার বাইনোকুলার দিয়ে অস্বাভাবিক আকৃতির একটি যান দেখলেন। ওটা থেকে একাধিক রঙের আলোর ঝলক চাঁদের গায়ে ঝিলিক দিচ্ছিল। কয়েক বছর আগে বেটির বোন তাকে ফ্লাইং সসার দেখার কথা বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছিলে। বেটি ভাবলেন, এটাই তাহলে সেটা। কিন্তু  বাইনোকুলারে দেখে বার্নে বললেন এটা মন্ট্রিল থেকে ভার্মন্টগামী বাণিজ্যিক এয়ারলাইনার। মত পাল্টালেন একটু পরই। কারণ, মুহূর্তের মধ্যে ওটা তার দিকে ঘুরে গেল। তিনি বুঝলেন, তিনি যাকে প্লেন ভেবেছেন, তা প্লেন নয়। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে তিনি ফ্র্যাংকোনিয়া গিরিপথের সড়কে পড়লেন।
হিউম্যানয়েড

হিল দম্পতি বলেন, তারা গিরিপথের সড়ক ধরে ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন যাতে বস্তুটাকে ভালোমত দেখা যায় যা আরো কাছ ঘনিয়ে আসছিল। এক সময় বস্তুটা একটা রেস্টুরেন্ট ও ক্যানন মাউনটেইনের সিগনাল টাওয়ার পেরিয়ে গেল। পাহাড় পেরিয়ে এটি 'ওল্ড ম্যান অব দি মাউনটেইন' এর কাছে বের হয়ে এল। উল্লেখ্য 'ওল্ড ম্যান অব দি মাউনটেইন' হল পাহাড়ের কিনারে একটি নকশা যাকে দেখতে মানবমুখের মত লাগে।
বেটির মতে বস্তুটি পাহাড়ের মানবমুখের চেয়ে দেড়গুণ বড় ছিল। মানবমুখটির দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট বা ১২ মিটার। বস্তুটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। নিরব ও জ্বলজ্বলে যানটি রাতের আকাশে অস্বাভাবিকভাবে উপর-নিচ করছিল। গিরিপথের ৩ নং রুট দিয়ে যাবার সময় ওটা যেন তাদের সাথে ইঁদুর-বিড়াল খেলছিল।
গিরিপথের প্রায় ১ মাইল দক্ষিণে ওটা তাদের দিকে নেমে আসল। বার্নেকে রাস্তার মাঝখানে গাড়ি থামাতে হল।গাড়ির পুরো উইন্ডশিল্ড ঢেকে দিয়ে যানটা তাদের মাথার ৮০ থেকে ১০০ ফুট ওপরে ভেসে থাকল। ওটাকে দেখতে তখন প্যানকেকের মত লাগছিল।
পিস্তল পকেটে নিয়ে বার্নে গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওটার আরো কাছে গেলেন। বাইনোকুলার দিয়ে বার্নে আট দশজন মনুষ্য-সদৃশ আকৃতিকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখলেন। একজন ছাড়া সবাই যানটির সামনের অংশকে বেষ্টনকারী হলওয়ের পেছনের দেয়ালের প্যানেলের দিকে সরে গেল। বাকি আকৃতিটি তাকে স্বস্থানে দাঁড়িয়ে থেকে তাকিয়ে থাকার জন্য একটি বার্তা চালান করল।
পরবর্তী অংশ পড়ুন এখানে......
সূত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Betty_and_Barney_Hill_abduction
২. http://www.ufocasebook.com/Hill.html
৩. http://ufos.about.com/od/aliensalienabduction/p/hill.htm
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...