সূর্য পৃথিবীর নকটতম নক্ষত্র। পৃথিবী থেকে এর গড় দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার বা ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল১। এই দূরত্বকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল একক যা সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর দূরত্বের একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সূর্যের প্রধান উপাদান আয়নিত গ্যাস। এর মধ্যে তিন চতুর্থাংশ হাইড্রোজেন। বাকি অংশে প্রধানত হিলিয়াম ছাড়াও সামান্য পরিমাণ ভারী মৌল যেমন অক্সিজেন, কার্বন, নিয়ন এবং আয়রন রয়েছে।
এই সূর্যের মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশকে সম্ভব হয়েছে। সূর্যের কারণেই পৃথিবীতে ঋতু, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং সামুদ্রিক স্রোতের পরিবর্তন ঘটে। নিউক্লিও বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন ক্রমাগত হিলিয়ামে পরিণত হয়ে সূর্যে আলো ও তাপ আকারে শক্তি উৎপন্ন করে।
প্রায় ১০ লাখ পৃথিবীকে সূর্যের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া যাবে। অন্য দিকে ব্যাস বরাবর বসালে জায়গা হবে ১০৯টি পৃথিবীর। সৌরজগতের ৯৯.৮৬ ভাগ ভর সূর্য একাই ধারণ করে। সূর্যের মধ্যে ছয়টি অঞ্চল আছে- কেন্দ্রীয় অন্তর্বস্তু, বিকিরণ অঞ্চল, পরিচলন অঞ্চল, দৃশ্যমান পৃষ্ঠ বা ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং সর্ববহিস্থ স্তর করোনা (মুকুট)। পৃথিবীর মত সূর্যে কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই, নক্ষত্রদের কারোই থাকে না।
কেন্দ্রে এর তাপমাত্রা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। কেন্দ্রে উৎপন্ন শক্তিই সূর্যের চালিকাশক্তি যা থেকে সূর্য পৃথিবীতেও তাপ ও আলো বিতরণ করে। পরিচলন অঞ্চলে তাপমাত্রা নেমে যায় ২০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
সূর্যের পৃষ্ঠ তথা ফটোস্ফিয়ারের পুরুত্ব ৫০০ কিলোমিটার (৩০০ মাইল)। এখান থেকেই সৌর বিকিরণ মুক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ে এবং ৮ মিনিট পর চলে আসে পৃথিবীতে। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা সাড়ে পাঁচ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বাইরের অনুজ্জ্বল করোনা চোখে পড়ে শুধু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময়, যখন চাঁদের আড়ালে ফটোস্ফিয়ার ঢাকা পড়ে যায়। ফটোস্ফিয়ারের পরে তাপমাত্রা আবার বেড়ে গিয়ে ২০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়। এর সঠিক ও পূর্ণাংগ কারণ এখনও অজানা।
প্রায় সাড়ে ৪ শো কোটি বছর আগে সূর্যের জন্ম। বেঁচে থাকবে আরো প্রায় সমপরিমাণ সময়। কেন্দ্রে হাইড্রোজেন ফিউশান বন্ধ হলে আরো বেশ কিছু পরিবর্তনের পরে এটি লোহিত দানবে (Red Giant) পরিণত হবে। তখন এর ব্যাসার্ধ বেড়ে গিয়ে শুক্র গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছবে, এবং সম্ভবত পৃথিবীকেও স্পর্শ করবে।
নোট-১ঃ প্রকৃত গড় দূরত্ব ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার বা ৯.২৯৬ কোটি মাইল।
সূর্য সম্পর্কিত সকল নিবন্ধ পাবেন এখানে। অন্যান্য সকল পরিভাষার তালিকা এখানে।
সূত্র
১। নাসাঃ সৌরজগৎ
২। উইকিপিডিয়াঃ সূর্য