Advertisement

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

সহজ কথায় বললে, সূর্যের চারদিকে কোন গ্রহের কক্ষপথের নিকটতম বিন্দুকে অনুসূর (Perihelion) এবং দূরতম বিন্দুকে অপসূর (Aphelion) বলে। অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেবার সময় গ্রহরা জোরে এবং উল্টোভাবে অপসূর দিয়ে যাবার সময় ধীরে চলে।

আমাদের সৌরজগতের গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। কিছু গ্রহের কক্ষপথ প্রায় বৃত্তাকার। অধিকাংশেরই কক্ষপথ ছড়ানো, অনেকটা ডিম্বাকৃতির। আরো সঠিক করে বললে উপবৃত্তাকার। আর এই উপবৃত্তাকার হবার কারণেই সূর্য থেকে গ্রহদের দূরত্ব নির্দিষ্ট থাকে না।

উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্য থেকে বুধ গ্রহের দূরত্বের পরিবর্তন

সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আসার সময় পৃথিবী প্রতি বছর এক বার করে অপসূর ও অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেয়। অন্য গ্রহরাও সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে একবার করে বিন্দু দুটিকে অতিক্রম করে। সাধারণত জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে নিকটে ও জুলাই মাসে সবচেয়ে দূরে থাকে। একে সহজাত বুদ্ধির বিপরীত মনে হয়। কারণ আমরা জানি, জানুয়ারি মাসে শীতকাল থাকে (বাংলাদেশসহ অনেকগুলো দেশে)।তাহলে শীতকালে সূর্য আমাদের সবচেয়ে কাছে থাকে- এটাকি বিশ্বাসযোগ্য? বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এটাই বাস্তবতা।

আসলে শীত বা গরম পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের উপর নির্ভর করে না বললেই চলে। এটা নির্ভর করে পৃথিবীর কক্ষীয় নতীর উপর। পৃথিবী এর কক্ষীয় তলের সাথে সাড়ে তেইশ ডিগ্রি পরিমাণ হেলে আছে। ফলে, যে অঞ্চল যখন সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন তাতে গরম অনুভূত হয় এবং উল্টো পাশে বজায় থাকে শীত। এ জন্যেই জানুয়ারি মাসে উত্তর গোলার্ধে শীত থাকলেও দক্ষিণ গোলার্ধে কিন্তু ঠিকই গরম থাকে।

২০১০ সালে পৃথিবীর অপসূর ও অনুসূর 

সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকার সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব থাকে ৯ কোটি ১০ লক্ষ মাইল বা ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি.। অন্য দিকে অপসূর অবস্থানে এই দূরত্ব হচ্ছে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি.। একেই আমরা গড় করে সাধারণত বলি ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি কিমি.। পৃথিবী থেকে সূর্যের এই গড় দূরত্বকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট।

আরো পড়ুনঃ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

অনুসূর ও অপসূর কথাগুলো গ্রহদের পাশাপাশি ধূমকেতু ও গ্রহাণুদের জন্যেও প্রযোজ্য। ইংরেজি perihelion শব্দটি peri এবং helios গ্রিক শব্দদ্বয় থেকে আগত। peri শব্দের অর্থ নিকটে এবং helios অর্থ সূর্য। ফলে perihelion এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে সূর্যের নিকট বিন্দু। একইভাবে গ্রিক apo শব্দের অর্থ দূরে। ফলে aphelion এর দাঁড়াচ্ছে সূর্যের দূরতম বিন্দু। বাংলায় ভেঙ্গে অর্থ করলেও প্রায় একই রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। কারণ সূর কথাটা এসেছে সূর্য থেকেই।

অন্য দিকে, চাঁদও পৃথিবীর চারদিকে উপবৃত্তাকার পথে চলে। ফলে চাঁদের ক্ষেত্রেও পৃথিবীর নিকটতম ও দুরতম দুটি বিন্দু আছে। এদের  জন্যে আছে আলাদা নাম। নিকটতম বিন্দুর নাম অনুভূ এবং দূরতম বিন্দুর নাম অপভূ। বুঝতেই পারছেন, ভূ মানে পৃথিবী। আর অনুভূ মানে পৃথিবীর নিকটে।

সূত্র: উইন্ডোজ টু ইউনিভার্স
Category: articles

সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

আকাশের ১৫তম উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা। এর ইংরেজি নাম স্পাইকা (Spica)। চিত্রাকে দেখতে একটিই তারকা মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি অন্তত দুটি তারকার সমন্বিত চিত্র যার উভয়টি সূর্যের চেয়ে বড় এবং উষ্ণ। এরা এক লক্ষ আশি হাজার কিমি. দূরত্বে থেকে একে অপরকে প্রদক্ষিণ করছে। এই দূরত্ব কিন্তু পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের চেয়ে ঢের ছোট। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিমি.।

কন্যামণ্ডলীতে চিত্রার অবস্থান 

চিত্রা নক্ষত্র খুঁজে পাবার উপায়
চিত্রা কন্যারাশির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। অন্য অনেক নক্ষত্রের মতই চিত্রাকে খুঁজে পেতেও সহায়তা করবে সপ্তর্ষীমণ্ডলী। সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারাভুজ সপ্তর্ষীর চামচের হাতলের শেষ তিনটি নক্ষত্রকে একটি বৃত্তচাপের অংশ মনে করে সামনে বাড়িয়ে দিলে একটি উজ্জ্বল তারা পাওয়া যায়। এটি হচ্ছে রাতের আকাশের ৪র্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতী (Arcturus)। এই বৃত্তচাপকে আরেকটু বাড়িয়ে দিলেই পাওয়া যাবে চিত্রা।

সপ্তর্ষী → স্বাতী → চিত্রা 

এপ্রিল মাসে একে সন্ধ্যার কিছু পরেই পূর্ব দিগন্তে উঁঁকি দিতে দেখা যায়। এ সময় একে রাতের অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়। দুই মাস পরে এটি সন্ধ্যার পরে আকাশের চূড়ায় পৌঁছে যায়। আগস্টের শেষের দিকে একে সন্ধ্যার পরে সামান্য সময়ের জন্যে পশ্চিমাকাশে দেখা যায়। এর পরেই এটি ডুবে যায় পশ্চিমে।

বৈশিষ্ট্য


স্পাইকা ২৬২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি ভার্গো মণ্ডলীর (কন্যারাশি) উজ্জ্বলতম তারকা হিসেবে নাম পেয়েছে আলফা ভার্জিনিস। স্পাইকার বাইনারি জগতের দুটি নক্ষত্রকে টেলিস্কোপেও আলাদা করে চেনা যায় না। একটির বদলে দুটি তারার উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল স্পেক্ট্রোস্কোপ বা বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে। বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র আলোর বিভিন্ন রঙকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। এই বাইনারি সিস্টেমের দুটি তারকাই সূর্যের চেয়ে বড় এবং উষ্ণ। এর মধ্যে বড়টি সম্ভবত নীল দানব বা উপদানব (সাব জায়ান্ট) জাতের নক্ষত্র।

এর মধ্যে বড়টির পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ২২, ৪০০ কেলভিন এবং ছোটটির ১৮, ৫০০ কেলভিন। অথচ সূর্যের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা মাত্র ৫৮০০ কেলভিন। এরা একে অপর থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার কিমি. দূরে অবস্থিত এবং যৌথ অভিকর্ষ কেন্দ্রকে মাত্র চার দিনে এক বার ঘুরে আসে।

এদের সমন্বিতভাবে নিঃসৃত আলো সূর্যের আলোর চেয়ে ২২০০ গুণ উজ্জ্বল। অন্য দিকে ব্যাস যথাক্রমে সূর্যের ৭.৮ ও ৪ গুণ। অন্যতম উজ্জ্বল এই নক্ষত্রটি সময় সময় চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়ে। জ্যোতির্বিদরা সন্দেহ করছেন, এটি শুধুই বাইনারি স্টার নয়, সম্ভবত আরো তিনটি তারা নিয়ে আসলে এখানে একটি কুইন্টিপল জগত (পাঁচ তারার সমন্বয়) গড়ে উঠেছে।
দেখা যাক, এই অনুমান সত্য হয় কিনা! 
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৬

এক বছর কাকে বলে? অনেক সহজ প্রশ্ন। এ কারণেই প্রশ্নের পেছনে আরেকটি উদ্দেশ্য আছে। উত্তর হিসেবে সাধারণত সবাই বলবে ৩৬৫ দিনকে এক বছর বলা হয়। এটাকে সংজ্ঞা হিসেবে মেনে নিলে অসুবিধায় পড়তে হবে। কারণ, তাহলে সেই হিসেবে দিন হচ্ছে বছরের উপাদান। অন্য কথায়, বছর হচ্ছে দিনের সমষ্টি। তাহলে দিন কখনোই বছরের চেয়ে বড় হতে পারে না, তাই না? কিন্তু না। হতে পারে। তবে সেটা আমাদের পৃথিবীতে নয়। তবে, খুব বেশি দূরেও না। আমরা যাকে শুকতারা বলি, সেই শুক্র গ্রহেই (Venus) ঘটে এর ব্যতিক্রম। এখানে বছরের চেয়ে দিনের দৈর্ঘ্য বড়। অর্থ্যাৎ, এক দিন হতে যে সময়ের প্রয়োজন হয়, ততোক্ষণে এক বছর পেরিয়ে যায়।


কীভাবে? 
যদিও আমরা জানি, তবু আবার একটু জাবর কেটে জেনে নেই দিন এবং বছর আসলে কাকে বলে? কোন একটি গ্রহ নিজের অক্ষের সাপেক্ষে এক বার পূর্ণ ঘূর্ণন (আবর্তন বা Rotation) সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে দিন বলে। একে আবার আবর্তন কালও (rotational period) বলা হয় আমাদের পৃথিবীর এই কাজটি করতে লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। অন্য গ্রহে কিন্তু এই সময় ভিন্ন। তবে সেটা মাপা হয় পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্যকে আদর্শ (Standard) ধরে।
 
অন্য দিকে কোন গ্রহ তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ (Revolution) করে আসতে যে সময় লাগে তাকে তার এক বছর বলে। এক্ষেত্রে পৃথিবী সূর্যকে এক বার ঘুরে আসতে ৩৬৫.২৫ দিন সময় লাগে বলে এই সময়টাকে আমরা এক বছর বলি। আবার, বুধে এক বছর মানে ৮৮ দিন ইত্যাদি। এই ৮৮ দিন কিন্তু বুধের ৮৮ দিন নয়, আমাদের পৃথিবীর হিসাবে ৮৮ দিন। অর্থ্যাৎ ৮৮ × ২৪ ঘণ্টা (প্রায়)। গ্রহদের ক্ষেত্রে এই সময়টাকে আবার পর্যায়কালও বলা হয়।

এবার নিশ্চয় ব্যাপারটা খুব সহজ মনে হচ্ছে। কারণ,কোন গ্রহের আবর্তনকাল যদি এর পর্যায়কালের চেয়ে বড় হয়, তাহলেইতো এর দিন এর বছরের চেয়েও দীর্ঘ হবে। আর, ঠিক এ ঘটনাই ঘটে শুক্র গ্রহে।
সূর্যের ২য় গ্রহ শুক্রের (Venus) আবর্তন কাল ২৪৩ দিন। অন্য দিকে এই গ্রহটি সূর্যকে এক বার ঘুরে আসতে সময় নেয় প্রায় ২২৫ দিন! কী দাঁড়াল? বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু দিন শেষ হবার নামটি নেই। বছরের চেয়ে দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ দিন বেশি। উল্লেখ্য, এখানে দিন বলতে পৃথিবীর দিন তথা প্রায় ২৪ ঘণ্টা বোঝানো হচ্ছে। ]
তুলনার সুবিধার্থে সবগুলো গ্রহের দিনের দৈর্ঘ্য দেখে নেই।

বুধঃ ৫৮ দিন ১৫ ঘন্টা
শুক্রঃ ২৪৩ দিন
মঙ্গলঃ ২৪ ঘণ্টা, ৩৯ মিনিট, ৩৫ সেকেন্ড
বৃহস্পতিঃ ৯.৯ ঘণ্টা
শনিঃ ১০ ঘণ্টা, ৪৫ মিনিট, ৪৫ সেকেন্ড
ইউরেনাসঃ ১৭ ঘণ্টা, ১৪ মিনিট, ২৪ সেকেন্ড
নেপচুনঃ ১৬ ঘণ্টা, ৬ মিনিট, ৩৬ সেকেন্ড
বিভিন্ন গ্রহে এক বছর 

অন্য গ্রহের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর কাছাকাছি। শুক্র কেন আলাদা? কেন একটা দিন এত দীর্ঘ?  শুক্রের অবস্থান সূর্যের খুবই নিকটে। ফলে সূর্যকে এক বার প্রদক্ষিণ করতে এর সময় খুবই কম লাগে, মাত্র ২২৫ দিনের মত। তাহলে প্রশ্ন আসা উচিত, বুধতো সূর্যের আরো কাছে। তার তো এমন উদ্ভট অভ্যাস নেই। আসলে সমস্যা বাঁধিয়েছে শুক্রের ধীর আবর্তন গতি। এর কারণেই দিন পেরোতে বছর গড়িয়ে যায়। বুধের আবর্তন গতি স্বাভাবিক থাকায় ওর ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় না।

সূর্য ওঠে পশ্চিমে!

এখন আমি যদি জিজ্ঞেস করি সূর্য কোন দিকে উদিত হয়, হয়তো সন্দেহ তৈরি হবে- আমার মাথা ঠিক আছে কিনা। আমি ঠিকই আছে। এই অদ্ভুত কাণ্ডেরও মালিকানা সেই শুক্র গ্রহেরই। আমরা জানি পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করে। আর তাই সকাল বেলায় আমরা সূর্য মামাকে পূর্ব দিগন্তে উঁকি মারতে দেখি। সৌরজগতের দুটি গ্রহের ক্ষেত্রে এটা উল্টো। একটি হল এই শুক্র, আরেকটি হল ইউরেনাস ( Uranus)। এরা দু'জনেই ঘোরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। তাই এদের সূর্যোদয় ঘটে পশ্চিমে আর সূর্যাস্ত পূবে।

শুক্র গ্রহ ঘোরে পৃথিবীর উলটো দিকে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে 

অন্য গ্রহের সাথে এই বড় অমিল থাকলেও পৃথিবীর সাথে কিন্তু শুক্রের ভালো মিল রয়েছে। এজন্য অনেকে একে পৃথিবীর যমজও বলে থাকেন। এর আকার পৃথিবীর চেয়ে অল্প কিছু ছোট, মাত্র ৬৫০ কিলোমিটার কম। কক্ষপথের গঠনেও রয়েছে সাদৃশ্য।  ভরও কাছাকাছি, পৃথিবীর ৮১.৫ শতাংশ। কিন্তু যমজ বলতে হলে একে দুষ্ট যমজ বলতে হবে।

কারণ, এর বায়ুমণ্ডল ৯৬.৫ % কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরা! পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে ৯৩ গুণ ভারী। ফলে, এর বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর ৯২ গুণ। ছলে বলে কৌশলে ওখানে গিয়ে যদি কার্বন ডাই অক্সাইড ও তীব্র তাপমাত্রা সহ্য করতেও পারেন, তবু এর তীব্র বায়ুমণ্ডলীয় চাপ আপনাকে এখানে টিকতে দিবে না। কারণ এই পরিমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কয়েক কিলোমিটার সাগরের নিচের চাপের সমান, যা ভর্তা হয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট।

উপগ্রহবিহীন এই গ্রহটিতে অনুসন্ধান চালানোর জন্য ৪০টির বেশি যান পাঠানো হয়। ৯০ এর দশকে নাসার পাঠানো ম্যাজেলান মিশন এর ৯৮ শতাংশ মানচিত্র তুলে আনে। এর ময়না তদন্ত করার জন্য ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ২০০৫ সালে ভেনাস এক্সপ্রেস নামক যান প্রেরণ করে। ঝুলিতে বেশ কিছু সাফল্য পুরে ২০১৪ সালে এটি কার্যক্রম শেষ করে।

[লেখাটি এর আগে ব্যাপন ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি মার্চ- ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত]
Category: articles

সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৬

গত দুই পর্বে আমরা ব্ল্যাকহোলের পরিচয় ও জন্ম-প্রক্রিয়া নিয়ে জেনেছিলাম। আমরা এবারে জানবো এদের আকার ও আয়তন নিয়ে। আলোর বেগকে আটকে ফেলে যে ব্ল্যাকহোল তার অবয়বও নিশ্চয় অনেক বড়। দেখা যাক, এই ধারণা কতটুকু সঠিক। সাধারণত কোন বস্তু কত বড় তা বিবেচনা করতে গেলে আমরা শুধু তার দৈর্ঘ্য বা দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক বস্তুর ক্ষেত্রে যথাক্রমে ক্ষেত্রফল ও আয়তন দিয়ে হিসেব করি। বাস্তবে অবশ্য দ্বিমাত্রিক বস্তুর গুরুত্ব না থাকায় আমরা আয়তনকেই এ ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড ধরি। সেই হিসেবে ব্ল্যাকহোলদের নিয়েও এভাবেই চিন্তা করা উচিত।

কিন্তু সমস্যা আছে দুটো। আমরা ইতোমধ্যেই জানি, মহাকর্ষের নিউটনীয় ধারণা ব্ল্যাকহোলের চিন্তা মিচেল-ল্যাপ্লাস সাহহেবদের মাথায় আনলেও আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাই(General Relativity) ব্ল্যাকহোল তত্ত্বকে মজবুত ভিতের উপর দাঁড় করিয়েছে। এ সত্ত্বেও আইনস্টাইন নিজেও বাস্তবে ব্ল্যাকহোল আছে বলে বিশ্বাস করতেন না (অবশ্য তাঁর সেই বিশ্বাসের কারণ এই যুগে এসে নড়বড়ে হয়ে গেছে)। 

সত্যি বলতে ব্ল্যাকহোলের ঘটনা দিগন্তের ভেতরে ঠিক কী ঘটে তা কেউ জানে না! আবার এর কেন্দ্রে (সিঙ্গুলারিটি, যেখানে সমগ্র ভর একটি বিন্দুতে সীমাবদ্ধ) ভেঙ্গে পড়ে পদার্থবিদ্যার সব সূত্র। এমনকি বিভিন্ন সূত্র যেমন কোয়ান্টাম ফিজিক্স ও আপেক্ষিকতার মধ্যে চলে পারস্পরিক বৈরিতা। একটু আগে আমরা ব্ল্যাকহোলকে ত্রিমাত্রিক হিসেবে ধরে আকার বা আয়তন হিসেব করবো ভেবেছি। কিন্তু ব্ল্যাকহোল যে আসলে কত মাত্রার বস্তু তাও কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না। এটা হতে পারে চার, পাঁচ, দশ বা অন্য যে কোন মাত্রার!

আরেকটি সমস্যা বলি। এটা ঠিক সমস্যা নয়, বলা যায় বিকল্প চিন্তা। মহাজাগতিক বস্তুগুলো কত বড় এটা বোঝার জন্যে দুটি প্যারামিটার ব্যাবহার করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে, বস্তুটির আসলেই আয়তন কত। অপরটি হচ্ছে তার ভর। মনে করা ঠিক হবে না, ভর ও আয়তন সব সময় একে অপরের সমানুপাতিক। অর্থ্যাত একটি বাড়লেই আরেকটিও বাড়বে- এমনটি নাও হতে পারে। প্রথম পর্বেই আমরা এটা জেনেছিলাম। তবে, এখানে আরেকটু বিস্তারিত দেখি।

আমরা ভর ও আয়তনের সম্পর্কটি জানি,
M = ρV
যেখানে,M = বস্তুর ভর, ρ = ঘনত্ব এবং V = আয়তন।

সাধারণ হিসাবে এ সূত্র অনুসারে, ভর আয়তনের সমানুপাতিক। অর্থ্যাৎ, আয়তন বাড়লে ভরও বাড়বে। তার মানে, ভর বাড়লে আয়তনও বাড়বে, তাই না? আসলে কিন্তু সব সময় তা হবে না। কেন? একটু ভাবুন, তারপরে আবার সামনে পড়ুন। প্রথমত, এখানে আমরা আলোচনা করছি বিশাল বিশাল মহাজাগতিক বস্তুদের নিয়ে। এদের ক্ষেত্রে ভর বাড়ার অর্থ হচ্ছে বস্তুর অভিকর্ষ লক্ষ্যনীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া, যার পরিণতি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী অভিকর্ষ যা বস্তুটির নিজের উপরেই কার্যকর হয়ে একে গুটিয়ে ছোট্টতর করে ফেলবে। এমন ঘটনা নিউট্রন স্টার বা হোয়াইট ডোয়ার্ফ বা শ্বেত বামন নক্ষত্রদের বেলায়ও ঘটে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে বস্তুটির ঘনত্ব। উপরের সূত্রে আয়তন বাড়লে ভরকেও যদি বাড়তে হয় তবে সেক্ষেত্রে বস্তুর ঘনত্ব স্থির থাকতে হবে। অন্যথায় আয়তন বেশি থাকা বস্তুও যদি তারচেয়ে কম আয়তনের বস্তুর চেয়ে কম ঘনত্বের অধিকারী হয়, তবে প্রথম বস্তুর ভর কম হয়ে যেতে পারে।

এই দুই বিষয়ের যৌথ খপ্পরে পড়ে ভর বাড়ার সাথে সাথে আয়তনের বৃদ্ধি ও হ্রাস-দুটোই ঘটতে পারে। যেমন ধরুন আমাদের গত সংখ্যায় আলোচিত নিউট্রন স্টারদের কথা।

এদের ভর সূর্যের কয়েকগুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও ব্যাসার্ধ হয় মাত্র ৭ মাইলের মতো! কল্পনা করা যায়! ফলে দেখা যায় এদের প্রতি ঘন মিটারে 3.7×1017 থেকে 5.9×1017 কেজি পর্যন্ত ভর জড় হয়ে থাকে। অথচ আমাদের সূর্যের প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে মাত্র ১ দশমিক ৪ গ্রামের কাছাকাছি ভর থাকে! ঘনত্বের কি বিশাল ফারাক!

অন্য দিকে উল্টো ঘটনাও ঘটে। যেমন সুপারম্যাসিভ (Supermassive) তথা অতি উচ্চ ভরবিশিষ্ট ব্ল্যাকহোলদের আয়তনও হতে পারে সূর্যের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। যেমন এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া প্রস্তাবিত ব্ল্যাকহোলদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভরযুক্ত দানবের ভর সূর্যের ৪০ বিলিয়ন গুণ। তাই বলে আয়তন কিন্তু ছোট হয়ে যায়নি। এর ব্যাসও বিশাল- প্রায় ২৩৭ বিলিয়ন কিলোমিটার।

তবে এখানে একটু সাবধান হতে হবে। অন্যান্য বস্তুদের মত করে ব্ল্যাক হোলের আকার চিন্তা করলে ভুল হয়ে যেতে পারে। ব্ল্যাক হলের সমগ্র ভর একটি ক্ষুদ্র বিন্দুতে আবদ্ধ থাকে যার আয়তন প্রায় শুন্য। তাই আমরা যখন ব্ল্যাক হোলের আয়তন বা ব্যাসার্ধ বলব, বুঝতে হবে এটা আসলে ব্ল্যাক হলের ঘটনা দিগন্তের (যে দূরত্ব থেকে কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না) পরিমাপ। তাই উপরের ভর-আয়তনের সূত্রের আলোচনা ঠিক সাধারণ অর্থে ব্ল্যাক হোলের জন্যে কাজ করবে না। অন্য অর্থে বলা যায় সবচেয়ে সুন্দরভাবে কাজ করবে। কারণ আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম ভর বাড়লে আয়তন কমতেও পারে। সেটার সবচেয়ে ভালো উদাহরণতো ব্ল্যাক হোলই।

ফলে, এ পর্যন্ত আমরা যা বুঝলাম, মহাজাগতিক বস্তুদের ক্ষেত্রে বড়ত্বের হিসাবে নিছক আয়তনকে নয়, ভরকেও বিবেচনা করতে হবে। তাহলে আমরা এবার দেখার চেষ্টা করি এই দুই দিক দিয়ে ব্ল্যাকহোলরা কত বড় হতে পারে।

প্রথমে ভরের কথা বলা যাক। সত্যি বলতে একটি ব্ল্যাকহোলে সর্বোচ্চ ঠিক কত ভর থাকতে পারে, তার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। বেশি ভরের পাশাপাশি অল্প পরিমাণ ভর যুক্ত হয়েও ব্ল্যাকহোলের অন্ধকার রাজ্য গড়ে উঠতে পারে যদি এর ঘনত্ব হয় অতি উচ্চ। তবে, এখন পর্যন্ত জানা তথ্য মতে যেহেতু অধিকাংশ ব্ল্যাকহোলদেরই জন্ম বেশি ভরযুক্ত (Massive)  নক্ষত্রদের জীবনের ক্রান্তিলগ্নে, তাই আমরা বলতে পারি, একটি ব্ল্যাকহোলের ভর একটি ভারী নক্ষত্রের ভরের কাছাকাছি।

আমরা গত পর্বেই দেখেছি, এই স্টেলার ব্ল্যাকহোলরা সূর্যের ১৫ থেকে ২০ গুণ পর্যন্ত বেশি ভর ধারণ করতে পারে। তাহলে তাদের ভর কত হবে? এটা বোঝার জন্যে আমাদেরকে নিছক সূর্যের ভর জানতে হবে যা আমরা জানি যে, ১০৩০ কেজি। তাহলে একটি সাধারণ ব্ল্যাকহোলের ভর হবে (যদি এর ২০ গুণ ধরি) ২৩৩ কেজি। চাইলে এবার তুমি নিজেই ২ এর পরে ৩২ খানা শুন্য বসালে যা হবে সেতাই এই ভর। উল্লেখ্য, এটা কিন্তু ব্ল্যাকহোলের ভরের নিম্ন সীমা। আগেই বলেছি, এর ভর সর্বোচ্চ কত হতে পারে তা বলার কোন উপায় নেই। তবে স্টেলার ব্ল্যাকহোলদের ক্ষেত্রে ভর খুব বেশি হওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এখন পর্যন্ত জানা তথ্য অনুসারে, সবচেয়ে বেশি ভরের তারকার ভর ২৬৫ সৌর ভরের সমান। এর নাম R136a1।

একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল

এতো গেল শুধু স্টেলার ব্ল্যাকহোলের কথা। কিন্তু সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলরা এতটা পিছিয়ে নেই। এদের ভর হতে পারে সূর্যের কয়েক লক্ষ গুণ থেকে শুরু করে কয়েকশো কোটি গুণ পর্যন্ত! ভাবা যায়! আমাদের মিল্কিওয়েসহ অধিকাংশ গ্যলাক্সির কেন্দ্রে এদের বসবাস। অন্য দিকে আরেক জাতের ব্ল্যাকহোল হচ্ছে মিনি বা মাইক্রো ব্ল্যাকহোল। আমরা জানি, কোন বস্তুকে ব্ল্যাক হোল হতে হলে এর মুক্তিবেগ হতে হবে আলোর বেগের চেয়ে বেশি। অর্থ্যাৎ, কাউকে একটি ব্ল্যাক হোল উৎপাদন করতে হলে বস্তুর ভর বা শক্তিকে এত বেশি সঙ্কুচিত করতে হবে যে এর পৃষ্ঠ থেকে কোন বস্তুকে বের করতে হলে আলোর চেয়ে বেশি বেগ দিতে হবে।

তাহলেতো যে কোন ভরকেই যথেষ্ট পরিমাণ চেপে গুটিয়ে ফেলে ব্ল্যাকহোল বানিয়ে ফেলা সম্ভব, তাই না? তাত্ত্বিকভাবে অবশ্য তাই। কিন্তু আরো জটিল কিছু কারণে একটি ব্ল্যাকহোলের সর্বনিম্ন ভর হতে পারে প্ল্যাঙ্ক ভরের সমান তথা মাত্র ২২ মাইক্রোগ্রামের সমান। উল্লেখ্য, একটিমাত্র মৌলিক আধান (Charge) ধারণে সক্ষম ভরকে প্ল্যাংক ভর (Planck Mass) বলা হয়।

এবার চলুন দেখি ব্ল্যাকহোলদের আকার কেমন হতে পারে। আমরা যেহেতু জানি, ব্ল্যাকহোলের মুক্তিবেগ অন্তত আলোর বেগের সমান হতে হবে, এই তথ্য কাজে লাগিয়ে আমরা এদের ন্যূনতম ব্যাসার্ধ বের করতে পারি।
এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে। ব্ল্যাকহোল নামক বস্তুটির ব্ল্যাকহোলসুলভ আচরণ শুধু তার ঘটনা দিগন্ত বা তার ভেতরের অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। কারণ, এই সীমার ভেতরের কোন ঘটনা আমরা দেখতে না পেলেও বাইরের ঘটনা দেখতে পাবো। আরেকভাবে বললে, আপনি যদি কখনো ব্ল্যাকহোল অভিযানে যান, তবে ঘটনা দিগন্ত পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে। কিন্তু যেই আপনি এই সীমা ভেদ করে আরো ভেতরে যাবেন, তখনই আপনার ফিরে আসার সম্ভাবনা বাতিল হয়ে যাবে। 

অবশ্য আশা যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। কারণ, তাত্ত্বিকভাবে ব্ল্যাকহোল টাইম ট্র্যাভেল ঘটাতে পারে, তৈরি করতে এক ডাইমেনশন থেকে আরেক ডাইমেনশনে যাবার, এমনকি আরেকটি ইউনিভার্সে পাড়ি দেবার জন্যে ওয়ার্মহোল নামক টানেলও তৈরি করতে পারে। ভবিষ্যতের কোন পর্বে আমরা ওয়ার্মহোল ও টাইম ট্র্যাভেল নিয়ে জানবো, ইনশা-আল্লাহ। যাই হোক, এখন তাহলে মূলত, ব্ল্যাকহোলের আকার বা ব্যাসার্ধ বলতে আসলে আমরা ঘটনা দিগন্তের (Event horizon) ব্যাসার্ধ জানতে চাচ্ছি।

এই ঘটনা দিগন্তের ব্যাসার্ধ সর্বপ্রথম বের করেন জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল সোয়ার্জসাইল্ড। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়ে যুদ্ধকালীন সময়েই এই গাণিতিক হিসাবখানি প্রস্তুত করেন। তাঁর নামানুসারে এক বিশেষ ধরনের ঘটনা দিগন্তের ব্যাসার্ধকে সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ (Schwarzschild radius) বলা হয়। এই ব্যাসার্ধ্য ব্ল্যাকহোলের ভরের সাথে সমানুপাতিক। সূত্রটি হচ্ছে,


যেখানে, R = সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ, G = মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, M = ব্ল্যাকহোলের ভর এবং c = আলোর বেগ যা সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার বা ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ৬ মাইল থেকে শুরু করে সৌরজগতের সমানও ঘটনা দিগন্ত খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু এই সূত্র দিয়ে হিসাব করলে আমরা তাত্ত্বিকভাবে আরো ক্ষুদ্র বা বড় ব্ল্যাকহোলও পাব। যেমন, পৃথিবীর সমান ভরের কোন বস্তুকে যদি ব্ল্যাকহোল হতে হয়, তবে এর ভরকে গুটিয়ে এতটা সঙ্কুচিত করতে হবে যে তখন এর আকার দাঁড়াবে একটি ক্ষুদ্র মার্বেলের সমান। বিশ্বাস না হলে উপরের সূত্রে পৃথিবীর ভর (৬×১০২৪ কিলোগ্রাম) বসিয়ে দেখুনই না!

আসলে ব্ল্যাকহোল হবার জন্যে খুব বেশি ভরের দরকার নেই, দরকার শুধু উপস্থিত ভরটুকুর গুটিয়ে যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষুদ্র জায়গায় অবস্থান করার। একইভাবে আমাদের সূর্য যদি ব্ল্যাকহোল হতে চায় তবে এর ব্যাসার্ধ কমিয়ে বানিয়ে দিতে হবে ৩ কিলোমিটারের কাছাকাছি। এমনকি তাত্ত্বিকভাবে মাউন্ট এভারেস্টের সমান পাহাড়ও ব্ল্যাকহোল হতে পারবে যদি এর ভরকে গুটিয়ে এত ছোট বানাতে হবে এর সোয়ার্জসাইল্ড ব্যাসার্ধ দাঁড়াবে এক ন্যানোমিটারের চেয়েও অনেকটা ক্ষুদ্র।  কিন্তু বাস্তবে মাউন্ট এভারেস্ট, পৃথিবী বা সূর্য কারো পক্ষেই ব্ল্যাকহোল হওয়া সম্ভব নয়। একটু ভাবুন কেন সম্ভব নয়। গত সংখ্যার লেখায় কিছু ক্লু পাবে। বিস্তারিত আমরা অন্য পর্বে দেখবো, ইনশাআল্লাহ।

অন্য দিকে, আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি নিজেই যদি একটি ব্ল্যাকহোল হবার আশা পোষণ করে তবে এর ঘটনা দিগন্তের ব্যাসার্ধ হবে প্রায় ২ কোয়াড্রিলিয়ন মিটার। ২ এর ১৫ শুন্য বসিয়ে দেখুন সংখ্যাটি কত বিশাল।  তবে এই দৈর্ঘ্য কিন্তু মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির নিজের ব্যাসার্ধ্যের চেয়ে ৫ লক্ষ গুণ ছোট।

আশা করি, শেষের দিকের এই আলোচনা সংক্ষেপে আমাদের গত পর্বের বিদায়ী প্রশ্নের জবাব সংক্ষেপে হলেও দিয়েছে। প্রশ্নটি ছিল অতি অল্প পরিমাণ ভর নিয়ে কিভাবে ব্ল্যাকহোল, সত্যি বলতে মাইক্রো ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে পারে? এর জবাব আমরা আরো বিস্তারিত জানবো অন্য পর্বে। চলে যাচ্ছি আরেকটি বিদায়ী প্রশ্ন দিয়ে। গত পর্বে আমরা দেখেছিলাম, তারকাদের জীবনের শেষের দিকেই কেবল স্টেলার ব্ল্যাকহোল তৈরি হতে পারে। অথচ জীবনের শুরুতেই এর ভর ছিল আরো বেশি। কারণ, জীবনের শেষের দিকে পৌঁছতে গিয়ে এর জ্বালানি খরচ করে আলো, তাপ ইত্যাদি উৎপন্ন করতে হয়েছে। ফলে, শেষের দিকে এর ভরতো আইনস্টাইনের E=MC2 সূত্র মেনে শক্তি রূপে অনেকটাই কমে গেছে। প্রশ্ন হলো, জীবনের শুরুতেই এর ভর কেন একে ব্ল্যাকহোল বানায়নি? চিন্তা করুন। বুঝতে পারলে আমাকে জানাতে পারেন, এই নাম্বারে- 01722-(3500112)7। নাম্বারটি বুঝতে অসুবিধা হলে আপাতত কিছু করার নেই- এই লিঙ্কটি দেওয়া ছাড়া।

তথসূত্র
১। http://cfpa.berkeley.edu/Education/BHfaq.html#q2
2. https://en.wikipedia.org/wiki/Neutron_star
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_most_massive_stars_known
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Supermassive_black_hole
৫। http://csep10.phys.utk.edu/astr162/lect/active/smblack.html
৬। http://hubblesite.org/explore_astronomy/black_holes/encyc_mod3_q3.html
৭। https://en.wikipedia.org/wiki/Schwarzschild_radius
৮। https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_most_massive_black_holes

অন্যান্য পর্ব



Category: articles

রবিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৬

সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে একমাত্র শুক্র ও বুধের কোনো উপগ্রহ নেই।

সৌরজগতে সব মিলিয়ে ১৮১টি উপগ্রহ রয়েছে। এতে অবশ্য বামন গ্রহদের উপগ্রহদেরকে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি উপগ্রহ দেখতে গোলাকার। এর ফলে এরা যদি অন্য কোন গ্রহ বা বামন গ্রহের উপগ্রহ না হত, তবে সরাসরি গ্রহের খেতাব পেয়ে যেত। কিন্তু সৌরজগতের এত উপগ্রহ থাকতেও বুধ ও শুক্র গ্রহের কোন উপগ্রহ নেই।

অন্য দিকে, পৃথিবীর একটিমাত্র উপগ্রহ আছে- চাঁদ। মঙ্গলের আছে ডেমোস ও ফোবোস নামে দুটি উপগ্রহ। বৃহস্পতির উপগ্রহ সবচেয়ে বেশি-  অন্তত ৬৭টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আয়ো , ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো। শনিও পিছিয়ে নেই। এর দখলে আছে ৬২ খানা চাঁদ (উপগ্রহকে অনেক সময় চাঁদও বলা হয়)। ইউরেনাস ও নেপচুনের যথাক্রমে ২৭ ও ১৪টি করে চাঁদ আছে।
প্লুটো এখন আর গ্রহ নয়, কিন্তু তারও উপগ্রহ আছে। তাও একটি দুটি নয়, পাঁচ-পাঁচটি। বামন গ্রহদের মধ্যে সেরেস ও মাকিমাকির কোন চাঁদ নেই। কিন্তু প্লুটো ছাড়াও অপর দুই বামন গ্রহ হোমিয়া ও ইরিসের যথাক্রমে ২টি ও ১টি করে চাঁদ আছে।
কিন্তু বুধ ও শুক্রের কোন উপগ্রহ বা চাঁদ নেই কেন?
এর প্রধান সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে, এরা সূর্যের খুব নিকটে অবস্থান করছে। গ্রহদ্বয় থেকে বেশ দূরে অবস্থানকারী কোন উপগ্রহ স্থিতিশীল কক্ষপথের মালিক হতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে এটি গ্রহের আকর্ষণে থাকার পরিবর্তে সূর্যের টানে সাড়া দেয়। আর যদি গ্রহের খুব কাছে থাকে, তাহলে আবার গ্রহের শক্তিশালী আকর্ষণে গ্রহের সাথে একীভূত হয়ে যায়। এই গ্রহদের চারপাশের যে অঞ্চলে উপগ্রহদের জন্যে নিরাপদ কক্ষপথ হতে পারত সম্ভবত সে অঞ্চলটি খুব সংকীর্ণ যার ফলে কেউ তা হাসিল করতে পারেনি।
আরেকটি ব্যাখা এ রকম। সৌরজগতের অধিকাংশ উপগ্রহই তৈরি হয়েছে গ্রহদের দ্বারা বিভিন্ন গ্রহাণু ও বড় পাথরখণ্ড দখলের কারণে। কিন্তু বুধ সূর্যের খুব নিকটে থাকার কারণে কোন গ্রহাণু বা ধূমকেতু যখন এর কাছাকাছি আসে তখন এটি সূর্যের কবলে পড়ে যায়। এরা তখন হয় সূর্যে গিয়ে পতিত হয় অথবা ধূমকেতুতে পরিণত হয়। ধূমকেতুর কক্ষপথ ছিনতাই করে উপগ্রহ বানাবার মত শক্তি বুধের নেই বলেই এর কোন উপগ্রহ নেই।

সূত্রঃ
[১] উপগ্রহের তালিকা
[২] অ্যাস্ট্রোনমি ক্যাফে
[৩] টেক্সাস আরলিংটন ইউনিভার্সিটি
Category: articles

শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬

একটি বস্তুতে মোট পদার্থের পরিমাণকে ভর বলে। একে আমরা সাধারণত ওজোন বলি। প্রকৃতপক্ষে ওজোন হচ্ছে বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের পরিমাপ। সৌরজগতে বর্তমানে গ্রহের সংখ্যা ৮টি। আগে ৯টি থাকলেও প্লুটোর পদবী এখন বামন গ্রহ হওয়াও সংখ্যা এক কম।
আমরা গ্রহদের ভরের প্রকৃত মান দেখার পাশাপাশি পৃথিবীর সাথে তুলনা করব। এখানে ভর উল্লেখ করার ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক সংখ্যা উল্লেখ করব। যেমন বুধ গ্রহের ভর 3.30×1023 kg। এর অর্থ হচ্ছে ৩.৩ এর পরে ২৩ টি শুন্য দিলে যা হবে। আগেই জেনে রাখা ভাল, পৃথিবীর ভর হচ্ছে 6×1024 kg। 
সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯.৮৬ ভাগই সূর্যের একার দখলে। আবার বৃহস্পতির একার ভর অন্য ৭ গ্রহের আড়াই গুণ। 
সৌরজগতের গ্রহদের ভর নিয়ে পাই চার্ট

বুধঃ 
উপরে উল্লেখিত বুধের এই ভরটিই সৌরজগতের কোন গ্রহের সবচেয়ে ছোট ভর। বুধ গ্রহের ভর কম হওয়ায় এটি নিজে যেমন খুব হালকা তেমনি এতে গেলে আমাদের ওজোনও প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ হয়ে যাবে। একটু আগেই বলেছি, ওজোন হচ্ছে প্রযুক্ত বলের পরিমাণ। ফলে, ভর কম হওয়ায় অভিকর্ষজ ত্বরণ কমে যাবে, এবং সেই সাথে ওজোনও। কারণ বস্তুর ওজোন নির্ভর করে এর অভিকর্ষজ ত্বরণের উপর। পৃথিবীতে আপনার ওজোন (ভর) ৬৮ কেজি হলে বুধে তা হবে ২৫.৭ কেজি। পৃথিবীর তুলনায় বুধের ভর ০.০৫৫ গুণ। উল্টোভাবে বললে ১৮টি বুধ একত্র করলে পৃথিবীর ভরের সমান হবে। 
শুক্রঃ
একে আমরা শুকতারাও বলি। অধিকাংশ গ্রহের তুলনায় এটিও খুব হালকা। এর ভর ভর ও আয়তনে অবশ্য পৃথিবীর কাছাকাছি, তবে অবস্থান একটু নিচে। ভর 4.87×1024 kg এবং অভিকর্ষজ ত্বরণ পৃথিবীর ৯০ পারসেন্ট। এর মানে হল,  কেউ পৃথিবীতে ১০০ কেজি হলে শুক্র গ্রহে তার ভর হবে ৯০ কেজি। পৃথিবীর ভর ১০০ কেজি ধরে নিলে শুক্রের ভর হবে ৮১.৫ কেজি। শুক্রের অভিকর্ষ আমাদেরকে মেরে ফেলার মত প্রাণঘাতী না হলেও এর বিষাক্ত গ্যাস ও উচ্চ তাপমাত্রা সেই কাজ সম্পন্ন করবে।
মঙ্গলঃ
কম ভরের দিক দিয়ে সৌরজগতে মঙ্গলের অবস্থান ২য়। পৃথিবীর চেয়ে এর ভর ১০ গুণ কম। প্রকৃত ভর  6.42×1023 kg কেজি। এর ভর এত কম যে,এতে কোন বায়ুমণ্ডল তৈরি হতে পারেনি। বায়ুমণ্ডল না থাকার কারণেই আমরা এর লাল পৃষ্ট অবলীলায় দেখতে সক্ষম হই। 
আরো দেখুনঃ মঙ্গল গ্রহ লাল কেন? 
বৃহস্পতিঃ
হ্যাঁ, গ্রহরাজ বৃহস্পতির ভর সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর ভর 1.90×1027 kg। ৩১৮ টি পৃথিবীর ভর একত্র করলে তবেই তা বৃহস্পতির ভরের সমান হবে। বৃহস্পতির কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই বলে এতে দাঁড়ানো যাবে না। কিন্তু যদি যেতও এর শক্তিশালী অভিকর্ষ সাথে সাথে আমাদেরকে পিষে ফেলত। অভিকর্ষ বেশি হবার কারণে যে মানুষটির ভর পৃথিবীতে ৬৮ কেজি, এই গ্রহে তার ভর দেখা যাবে ১৬১ কেজি। প্রকৃতপক্ষে অবশ্য ভর বাড়বে না। পৃথিবীতে আমরা ভর মাপার জন্যে যে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করি, তা ওখানে নিয়ে গেলে অভিকর্ষজ ত্বরণের পার্থক্যের কারণে ভিন্ন ভর দেখাবে। আসলে এটা ভরের পার্থক্য বোঝাচ্ছে না, বোঝাচ্ছে ত্বরণের পার্থক্য। 
শনিঃ
শনির ভর 5.69×1026 kg। ভরের দিক দিয়ে এর অবস্থান ২য়। এর ভর ভর পৃথিবীর ৯৫ গুণ হলেও ঘনত্ব খুব কম হওয়ায় অভিকর্জষজ ত্বরণ পৃথিবীর চেয়েও কম- মাত্র ৯১%। অর্থ্যাৎ, শনিতে গেলে আমাদের ওজোন একটুখানি ক্মে যাবে।  
ইউরেনাসঃ 
সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ ইউরেনাসের ভর 8.68×1025 kg। শনির মতই এর ভর পৃথিবীর চেয়ে বেশি হলেও অভিকর্ষ পৃথিবীর চেয়ে কম। আপনার ভর পৃথিবীতে ৬৮ কেজি হলে, ইউরেনাস গ্রহে গিয়ে মাপলে তা দেখা যাবে ৬০.৫ কেজি। 
নেপচুনঃ
নেপচুন ভরের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে। এর ভর 1.02×1026 kg যা পৃথিবীর ১৭ গুণ। এর অভিকর্ষ ত্বরণও পৃথিবীর চেয়ে বেশি। আপনি পৃথিবীতে ৬৮ কেজি হলে নেপচুনে গিয়ে হবেন ৭৬.৫।  
সূত্রঃ
[১] http://www.universetoday.com/34024/mass-of-the-planets/
[২] http://astronomy.nmsu.edu/tharriso/ast110/planetdensities.gif
Category: articles

শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৬

মাইজার ও অ্যালকর আকাশের অন্যতম বিখ্যাত ডাবল স্টার। দুটোর মধ্যে মাইজারকে খুব সহজেই দেখা যায়, এমনকি শহর থেকেও। এর পাশেই অবস্থান অ্যালকরের। তবে একে খুঁজে পেতে চোখের একটু পরিশ্রম হবে।

মাইজার ও অ্যালকর 

এরা দুজনেই সপ্তর্ষীমণ্ডলীর সদস্য। তবে মাইজার  আবার সাতটি তারায় গঠিত চামচের মত দেখতে সপ্তর্ষী নামক তারাভুজের অংশ। প্রাচীন কাল থেকেই চোখ পরীক্ষার জন্যে অ্যালকর তারাটি ব্যবহৃত হত। অবশ্য স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য খারাপ চোখ দিয়ে অ্যালকরকে দেখা সম্ভব। তবু, আগেকার যুগে সেনাবাহিনীতে সৈন্য নিয়োগের সময় এই তারাটির মাধ্যমে চোখের পরীক্ষা নেওয়া হত। শহরের আলো বা ঝাপসা আকাশের কারণে খালি চোখে অনেক সময় একে দেখা না গেলেও দুরবিনে এটি ঠিকই দর্শনীয় হয়ে ওঠে।


মাইজার সম্ভবত সপ্তর্ষীর সবচেয়ে বিখ্যাত তারা। অ্যালকরকে বাদ দিলেও মাইজার নিজেও একটি ডাবল স্টার। এটা যে আসলে একটি ডাবল স্টার তা ১৬৫০ সালেই জানা গিয়েছিল। উপরন্তু টেলিস্কোপে দেখা ডাবল স্টারদের মধ্যে এটিই প্রথম।


আগে মনে করা হত নিজেরা অনেক দূরে অবস্থিত থেকেও শুধু আকাশের একই দিকে অবস্তিত হওয়াই শুধু ডাবল স্টার হবার কারণ হতে পারে। এদের নিজেদের মধ্যে সম্ভবত কোন আকর্ষণ কাজ করে না। কিন্তু ১৮৮৯ সালে এই ধারণা পাল্টে গেল। স্পেক্ট্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা গেল, মাইজার দুটো নক্ষত্রের মধ্যে টেলিস্কোপে দেখা উজ্জ্বলতর সদস্যটি আসলে নিজেও আবার দুটো নক্ষত্রের সমন্বয়। মাইজার এই বাইনারি সিস্টেমও স্পেক্ট্রোস্কোপির মাধ্যমে আবিষ্কৃত প্রথম বাইনারি স্টার।


পরে দেখা গেল, অপেক্ষাকৃত অনুজ্জ্বল নক্ষত্রটিও আসলে বাইনারি স্টার। ফলে, সব মিলিয়ে শুধু মাইজারই দুইয়ে দুইয়ে চারটি নক্ষত্র হল। এরকম ক্ষেত্রে তারাদের বলা হয় কোয়াড্রুপল স্টার। এর আগে আমরা দেখেছিলাম আলম্যাকও একটি কোয়াড্রুপল স্টার।

মাইজার  ও অ্যালকর

এবার আসি অ্যালকরের কথায়। আগে মনে করা হত সাথে মাইজারের কোন মহাকর্ষীয় টান নেই। আরো মনে করা হত, অ্যালকর কোন বাইনারি জগতের সদস্য নয়। কিন্তু এ ধারণাও পাল্টে গেল ২০০৯ সালে। স্বতন্ত্রভাবে দুই দল জ্যোতির্বিদ দেখালেন যে অ্যালকর আসলে অ্যালকর  এ ও বি দুটো তারায় গঠিত। এখন মনে করা হয় অ্যালকরের এই বাইনারি জগৎ মাইজারের কোয়াড্রুপল জগতের সাথে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আবদ্ধ। ফলে সব মিলিয়ে ছয়টি তারকার সমাবেশ!


মাইজার ও অ্যালকর শুধু আমাদের চোখের পরীক্ষাই নিচ্ছে না, নিচ্ছে আমাদের প্রযুক্তির উন্নতির পরীক্ষাও!

আরবি  المئزر শব্দ থেকে মাইজার নামটি এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ কোমরবন্ধ বা বেল্ট।
Category: articles

মঙ্গলবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৬

হারকিউলিস তারামণ্ডলী, সাথে তারাভুজ কি-স্টোন

এপ্রিল মাসের রাতের আকাশ নিয়ে এলো হারকিউলিস তারামণ্ডলী। রাতের আকাশের যথাক্রমে ৫ম ও ৪র্থ উজ্জ্বল তারকা অভিজিৎ (Vega) ও স্বাতীর (Arcturus) মাঝে এটির অবস্থান। ছবিটি এপ্রিলের
পূর্ব আকাশ দেখাচ্ছে।
হারকিউলিস তারামণ্ডলীতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ তারাভুজ রয়েছে। এর নাম কি-স্টোন। উপরের ছবিতে প্রায় বর্গাকার বা আয়তাকার যে অংশটি দেখা যাচ্ছে এটিই হচ্ছে কি-স্টোন তারাভুজ (Asterism)। এই তারাভুজ এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে এর মাধ্যমেই হারকিউলিসকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
তারাভুজটির মাধ্যমে দারুণ একটি তারকাগুচ্ছও খুঁজে পাওয়া যাবে। এর নাম হারকিলিসের গ্রেট ক্লাস্টার বা সংক্ষেপে এম ১৩ (M13)। গুচ্ছটিকে খালি চোখে ভালোভাবে না দেখা গেলেও দুরবিনের চোখে এটি দর্শনীয় হয়ে ওঠে। প্রায় ১০ লক্ষের মত পুরাতন তারকায় ঠাঁসা গুচ্ছটি।

Category: articles

রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৬

শুধু এই সাতটি তারাকেই আমরা সাধারণত সপ্তর্ষীমণ্ডলী বললেও এরা আসলে পুরো মণ্ডলীর একাংশ মাত্র। এটি প্রকৃতপক্ষে তারানকশা। 

তারামণ্ডলী ও তারানকশা দুটোই আকাশের বিভিন্ন তারায় তৈরি নকশা। রাতের তারাখচিত আকাশের দিকে তাকালেই মনে হবে কিছু তারার সমন্বয়ে অর্থবোধক কোন আকৃতি তৈরি হয়েছে। মানুষের মনে চিত্রিত এই আকৃতিগুলো থেকেই রূপ পেয়েছে তারামণ্ডলী ও তারানকশা। ইংরেজিতে এদের নাম যথাক্রমে Constellation ও Asterism। এতে যেমন মানুষের প্রতিকৃতি আছে, তেমনি আছে রূপকথার প্রাণী, বিভিন্ন বস্তু। তবে তারামণ্ডলী বা তারানকশার তারারা একে অপরের সাথে সাধারণত সম্পর্কিত নয়। পৃথিবী থেকে দেখতে এদেরকে পাশাপাশি মনে হলেও বাস্তবে এরা পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত।

উল্লেখযোগ্য কিছু তারামণ্ডলী হল কালপুরুষ বা আদম সুরত, বৃশ্চিক মণ্ডলী, বকমণ্ডলী ইত্যাদি।

আদম সুরত। অনেকের মতেই এটাই সেই মণ্ডলী যা সবচেয়ে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। 


কাঁকড়াবিছার মত দেখতে মণ্ডলীটির নাম বৃশ্চিক মণ্ডলী 

তারামণ্ডলীর সংখ্যা ৮৮ এবং এদের সবাইকে নিয়ে পুরো দৃশ্যমান আকাশ গঠিত। আকাশে কোন তারা বা অন্য কোন বস্তুর (দূরবর্তী গ্যালাক্সি, তারাস্তবক ইত্যাদি) অবস্থান নির্ণয় করতে তারামণ্ডলী কাজে আসে। দৃশ্যমান আকাশের যে কোন বস্তু কোন না কোন তারামণ্ডলীতে অবস্থিত থাকবেই।


তারামণ্ডলীর মতই তারানকশাও তারায় তৈরি নকশা। তবে তারামণ্ডলীর মত এরা জ্যোতির্বিজ্ঞানে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভিন্ন তারামণ্ডলীর তারা নিয়ে এরা গঠিত হতে পারে, আবার একই তারামণ্ডলীর কয়েকটি তারা নিয়েও হতে পারে। বিখ্যাত তারানকশার মধ্যে অন্যতম সপ্তর্ষীমণ্ডলীর সাতটি তারা নিয়ে গঠিত চামচ যা থেকে ধ্রুব তারা চেনা যায়।

সামার ট্রায়াঙ্গেল। এটি তিনটি আলাদা মণ্ডলীর ভিন্ন তিনটি তারার সমাবেশ। 
Category: articles

শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৬

এই এপ্রিলের আকাশের সবেচেয়ে দর্শনীয় বস্তু গ্রহ রাজ বৃহস্পতি। ইদানিং এটি সন্ধ্যার পরপর এটি আকাশে হাজির হয়। অন্য গ্রহদের অবস্থাও এ মাসে বেশ ভালো। কিন্তু উজ্জ্বলতম গ্রহ শুক্রই এ মাসে দেখা যাবে না। তবু সামগ্রিক বিচারে গ্রহ দেখার জন্য এ মাসটি বছরের অন্যতম সেরা মাস। 
বৃহস্পতিঃ
এ মাসে উজ্জ্বলতায় সবার শীর্ষে বৃহস্পতি। সন্ধ্যার পরেই এটি আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধকের সাথে উজ্জ্বলতার টক্কর লাগায়। টক্করে বিজয়ী বৃহস্পতিই। পরাজয় মেনে নিয়ে লুব্ধক অবশ্য কয়েক ঘণ্টা পরেই হারিয়ে যায় পশ্চিম দিগন্তে। কিন্তু বৃহস্পতি প্রায় সারা রাত রাতের আকাশে রাজত্ব করে পশ্চিম দিগন্তে ডুব দেবে ভোরের দিকে। আগামী মাসগুলোতেও এটি নিজের পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখবে।
লুব্ধক ও বৃহস্পতিকে কি করে চেনা যাবে? 
লুব্ধক বছরের এ সময় থাকে দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে। অন্য দিকে বৃহস্পতি সন্ধ্যার পরে পূর্ব দিকে ভেসে ওঠে। আদম সুরতের মাধ্যমে লুব্ধককে চিনে নেওয়া যেতে পারে।
আদম সুরতের মাঝের তিনটি তারা যোগ করে বাম দিকে বাড়িয়ে দিলেও পাওয়া যায় লুব্ধক
বর্তমানে বৃহস্পতির অবস্থান রাশিচক্রের সিংহ মণ্ডলীর কাছে
মঙ্গল গ্রহঃ
এ মাসে মঙ্গল বৃহস্পতির মত এতটা উজ্জ্বল নয়। তবে, আগামী দিনগুলোতে মঙ্গল ক্রমশ উজ্জ্বল হতে থাকবে, আর বৃহস্পতি ধীরে ধীরে অনুজ্জ্বল হবে। এমনকি এ মাসেই মঙ্গল স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ উজ্জ্বল হবে। কেন? কারণ কোন গ্রহ যখন সূর্যাস্তের কাছাকাছি সময় পূর্ব দিকে উদিত হয়, তখন এটি এর সেরা ঔজ্জ্বল্য প্রদর্শন করে। এ কারণেই বৃহস্পতি এখন উজ্জ্বল এবং সেই কারণেই মঙ্গল দ্রুত উজ্জ্বলতা বাড়াচ্ছে। 
মে মাসের শেষের দিকে এটি উজ্জ্বলতায় চারগুণ হয়ে যাবে। ঐ সময় সূর্য পশ্চিমে হারিয়ে গেলে এটি পূর্ব দিগন্তে দেখা দেবে। এ মাসে অবশ্য এটি দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে হাজির হয় ১১টার দিকে। মাসের শেষের দিকে উঠবে ৯ টার দিকে। এর পাশেই আছে আরেকটি গ্রহ শনি। 
দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে মঙ্গল ও শনি গ্রহ
শনি গ্রহঃ
এ মাসের আরেকটি উজ্জ্বল বস্তু। অবশ্য বৃহস্পতি ও মঙ্গলের চেয়ে এটি মৃদু। মঙ্গলের মতই বৃশ্চিক মণ্ডলীর কাছাকাছিতে এর অবস্থান। মাসের শুরুতে রাত ১টা এবং মাসের শেষে ১০ টার দিকে পূর্ব দিগন্তে হাজির হবে। 

বুধ গ্রহঃ
বুধ সব সময় সূর্যের আশেপাশে থাকে। এ মাসে সব তারিখেই এটি সূর্যের পরে অস্ত যাবে। অবশ্য দিগন্তের কাছাকাছি থাকায় বিশেষত শহর অনগচল থেকে একে চিনে নেওয়া একটু কষ্টকর। তবে মাসের ৮ তারিখে চাঁদ একে চিনতে সাহায্য করবে। 

শুক্র (শুকতারা):
আমাদের অনেকেরই আকাশের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু শুকতারা। কিন্তু দূর্ভাগ্যের কথা এটিও বুধের মত সূর্যের খুব কাছাকাছি থাকে। ফলে একে সন্ধ্যায় বা ভোরেই শুধু দেখা যায়। এই মাসে এটি সূর্যের এত কাছে যে একে দেখা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আফসোস! 
ভোরের আকাশ থেকে সন্ধ্যার আকাশে পাড়ি দেবার প্রাক্কালে জুনের ৬ তারিখে এটি একেবারে সূর্যের পেছনে থাকবে। 

সূত্রঃ Earth Sky
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...