Advertisement

সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১৬

[মার্চের শেষ সপ্তাহ] 

কিছু দিন সূর্যের আড়ালে থেকে আবার আবির্ভূত হতে শুরু করেছে সামার ট্রায়াঙ্গেল। একে এখন ভোরের পূবাকাশে দেখা যায়। 


ছবিতে সামার ট্র্যায়াঙ্গেল বা গ্রীষ্মের ত্রিভুজ দেখা যাচ্ছে। এখানে আছে আকাশে অন্যতম উজ্জ্বল তিনটি নক্ষত্র। এরা হল যথাক্রমে বীণামণ্ডলীর নক্ষত্র অভিজিৎ (Vega), ঈগলমণ্ডলীর শ্রবণা (Altair) এবং বকমণ্ডলীর নক্ষত্র পুচ্ছ (Deneb)।


সামার ত্রিভুজ আকাশের তারাদের একটি নকশা হলেও এটি তারামণ্ডলী নয়, বরং  তারানকশা
গরমের দিনগুলোতে (মে-জুন মাসের দিকে) এটি মধ্য রাতে মোটামুটি মাথার উপর থাকে। বসন্ত কালে (যেমন এখন) এটি থাকে ভোরের আকাশে। আস্তে আস্তে পশ্চিমে হেলতে হেলতে নভেম্বর মাসের দিকে এটি থাকে সন্ধ্যার পশ্চিমাকাশে। আগস্টের শুরুতে রাত নয়টার দিকে থাকে প্রায় মাথার সোজা উপরে। 

Category: articles

রবিবার, ২৭ মার্চ, ২০১৬

গত পর্বে আমরা ব্ল্যাক হোলের সাথে প্রথমিক পরিচিতি সেরেছিলাম। এবার আমরা দেখবো, কিভাবে জন্ম নেয় এই দানবেরা। ব্ল্যাক হোল আবার আছে তিন রকমের- স্টেলার বা নাক্ষত্রিক (Steller), Supermassive বা অতি ভারী ও খুবই ছোট্ট আকারের মাইক্রো বা মিনিয়েচার ব্ল্যাক হোল (Miniature Black Hole)। আজকে আমরা মূলত প্রথম ধরনের তথা স্টেলার ব্ল্যাক হোল নিয়েই জানবো। এদের জন্ম হয় একটি নক্ষত্রের জীবনের শেষের দিকে, যখন এর সবটুকু জ্বালানী নিঃশেষ হয়ে যায়।

এই ধরনের ব্ল্যাক হোল যেহেতু একটি নক্ষত্রের জীবনের অন্তিম দশা, তাই এর জন্মলাভের উপায় জানতে হলে নক্ষত্রের জীবনচক্র বুঝতে হবে। আমাদের তাহলে বুঝতে একটি নক্ষত্রের জন্ম হয় কিভাবে। জন্মের পরে এর মধ্যে কী ঘটতে থাকে? কিভাবে এটি আলো, তাপ ও বিকিরণের মাধ্যমে এর শক্তির বহিঃপ্রকাশ করে হুঙ্কার ছাড়ে, কিভাবে এটি আস্তে আস্তে বার্ধক্যে উপনীত হয় এবং মারা যায়।

আচ্ছা, তারও আগে জেনে নিই, নক্ষত্র বা তারকা (Star) কাকে বলে? সাধারণত তারকা হচ্ছে সেইসব মহাজগতিক বস্তু যারা এদের অভ্যন্তরে ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ আলো, তাপ ও বিকিরণ উৎপন্ন করে। মহাবিশ্বের ৫০ ভাগ তারকারই বাইনারি স্টার বা জোড়া তারা (Binary Star)। এরা অন্য আরেকটি তারকার সাথে চুক্তি করে একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে। আর, প্রদক্ষিণকেন্দ্র হয় দু'জনের অভিকর্ষ কেন্দ্র (Center of Gravity) যেখানে থাকে সেখানে।

অবশিষ্ট  তারকারা আমাদের সূর্যের মত গড়ে তুলেছে গ্রহব্যবস্থা (Planetary System)। আমরা রাতের আকাশে যেসব উজ্জ্বল তারা দেখি, তার মধ্যে চাঁদের পরে যথাক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় উজ্জ্বল বস্তু শুক্র, বৃহস্পতি ও শনি- সবাই কিন্তু গ্রহ, তারকা নয়, তাই এদের নিজস্ব আলোও নেই। এরাও চাঁদের মতই সূর্যের আলোর প্রতিফলন ঘটায়।

এবার দেখা যাক, কীভাবে জন্ম নেয় নক্ষত্র। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিসহ সব গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গ্যাসীয় মেঘ ও ধূলিকণা। প্রাথমিক অবস্থায় এদেরকে বলা হয় নীহারিকা বা নেবুলা (Nebula)। সাধারণত এক একটি নেবুলা আড়াআড়িভাবে বহু আলোকবর্ষ পরিমাণ জুড়ে বিস্তৃত থাকে। একটি নেবুলাতে যে পরিমাণ গ্যাস থাকে তা দিয়েই আমাদের সূর্যের মতো কয়েক হাজার নক্ষত্রের জন্ম হতে পারে।  নেবুলার অধিকাংশ উপাদানই হচ্ছে বিভিন্ন হালকা গ্যাস- বিশেষ করে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের অণু। এই সমস্ত গ্যাস ও ধূলিকণা যখন ঘনীভূত হয়ে যথেষ্ট পরিমাণ অভিকর্ষ উৎপন্ন করে, তখন নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে সঙ্কুচিত হতে থাকে। কোন কোন জ্যোতির্বিদ আবার মনে করেন, এই অন্তর্মুখী সঙ্কোচনের জন্য শুধু অভিকর্ষই নয়, গ্যাস ও ধূলিকণায় সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রও দায়ী।

নক্ষত্র তৈরির কাঁচামাল নীহারিকা 

গ্যাসগুলো জড় হতে হতে বিভব শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং বাড়িয়ে ফেলে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে সঙ্কোচনশীল গ্যাস বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে এক একটি আলাদা নক্ষত্র তৈরি হয়।  এই তারকার অন্তর্বস্তুর সঙ্কোচনের হার হয় অনেক বেশি। এর গ্যাসীয় মেঘ অনেক দ্রুত আবর্তন করে করে এর কৌণিক ভরবেগ বজায় রাখে। এক সময় এই নক্ষত্রের তাপমাত্রা প্রায় ২ হাজার কেলভিনে পৌঁছায়। এই অবস্থায় হাইড্রোজেন অণু ভেঙ্গে গিয়ে মৌলটির পরমাণুতে পরিণত হয়। এর তাপমাত্রা এক সময় উঠে যায় ১০ হাজার কেলভিনে। সঙ্কুচিত হয়ে সূর্যের প্রায় ৩০ গুণ আয়তন লাভ করলে এই নব-সৃষ্ট তারকাকে বলে প্রোটো স্টার বা ভ্রুণ তারা (Protostar)। এবার এতে হাইড্রোজেন পরমাণু জোড়া লেগে লেগে হিলিয়ামে পরিণত হতে থাকে। এই নিউক্লিয় বিক্রিয়াটিকে বলে ফিউশন বা সংযোজন (Fusion) বিক্রিয়া।

ফিউশন বিক্রিয়া শুরু হয়ে গেলেই তারকার অভ্যন্তরে শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। কাদের মাঝে হয় এই ধাক্কাধাক্কি? একটি পক্ষ হচ্ছে তারকার ভেতরের দিকের নিজস্ব অভিকর্ষজ টান। এতক্ষণ সে একাই ছিল। কিন্তু ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সে পেল একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। এটি হচ্ছে উপরোক্ত নিউক্লিয় বিক্রিয়াজনিত বহির্মুখী চাপ। এই দুই চাপের চাপাচাপিতে পড়ে নক্ষত্রটি স্থিতিশীল অবস্থায় জীবন পার করতে থাকে। সরবরাহ করে যেতে থাকে আলো, তাপ ও বিভিন্ন উপকারী ও অপকারী রশ্মি ও বিকিরণ।

সূর্যের কাছাকাছি ভরের একটি তারকা এই দশায় অবস্থান করে প্রায় ১০ বিলিয়ন বা এক শ কোটি বছর। আমাদের সূর্যে ৫ বিলিয়ন বছর আগে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চলতে থাকবে আরো প্রায় একই পরিমাণ সময় ধরে। এই দশায় অবস্থান করার সময় একটি তারকাকে বলা হয় মেইন সিকুয়েন্স বা প্রধান ক্রমের তারকা (Main sequence star)। বর্তমানে মহাবিশ্বের ৯০ ভাগ তারকাই এই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত।

একটা সময় নক্ষত্রের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যায়। এবার তারকার অভ্যন্তরস্থ মূলবস্তু আরো সহজে ভেতরের দিকে চুপসে যায় কেননা চুপসে যাবার পক্ষে কার্যকরী বল অভিকর্ষের শত্রু যে দুর্বল হয়ে পড়েছে! কিন্তু তারকার বাইরের অংশ প্রসারিত হতেই থাকে। ফলে সামগ্রিকভাবে এর ব্যাসার্ধ্য বেড়ে যায়। এই অবস্থায় এদেরকে দানব নক্ষত্র (Giant Star) বা আরো বড় দানবদের সুপারজায়ান্ট বলে ডাকা হয়। এই ধাপেও ফিউশন ঘটে অপেক্ষাকৃত ভারী মৌল যেমন কার্বন, অক্সিজেন প্রভৃতি উৎপন্ন হয়। এখন থেকে আরো পাঁচশ বছর পরে আমাদের সূর্য মামা দানব নক্ষত্র হয়ে যাবে। এর পরিধি এসে পৌঁছাবে প্রায় পৃথিবী পর্যন্ত। তার আগেই কিয়ামত না ঘটে গেলে এটাই হবে পৃথিবী ও তাতে অবস্থিত প্রাণের কফিনে শেষ পেরেক।

নক্ষত্রের জীবনচক্র

বর্তমানেও রাতের আকাশে বেশ কিছু দানব বা মহাদানব নক্ষত্রের দেখা মেলে। যেমন আদমসুরত বা কালপুরুষ (Orion) তারামণ্ডলীর আর্দ্রা (Betelgeuse) একখানা সুপারজায়ান্ট বা মহাদানব নক্ষত্র। এছাড়াও বৃশ্চিক মণ্ডলীর জ্যেষ্ঠা (Antares) ও আদমসুরতের রিজেল ও ভূতেশ তারামণ্ডলীর স্বাতীও (Arcturus) সুপারজায়ান্ট গোত্ররে নক্ষত্র। অধিকাংশ দানব নক্ষত্রই লাল রং-এর অধিকারী হয়। উপরোক্ত তারকাগুলোও তাই। আর, এ জন্যেই রাতের আকাশে এদেরকে দেখতে লাল লাল মনে হয়।

এক সময় নক্ষত্রের অভ্যন্তরে ফিউশন বিক্রিয়া অব্যাহত রাখার মত কোন জ্বালানী অবশিষ্ট থাকে না। এ অবস্থায় নক্ষত্রের ভরের উপর ভিত্তি করে নানান ঘটনা ঘটতে পারে।

যেসব তারকার ভর প্রায় দুই সৌর ভরের কাছাকাছি বা  তার কম তারা জ্বালানী শেষ হয়ে গেলে বাহিরের দিকে প্রসারণশীল আবরণ ছুঁড়ে ফেলে ভেতরের অংশকে আরো বেশি গুটিয়ে ফেলে। এক সময় এর আকার হয়ে যায় প্রায় পৃথিবীর সমান যদিও ঘনত্ব থাকে অনেক বেশি। এদেরকে বলে শ্বেত বামন (White Dwarf)। এক সময় শেষ আলোক বিন্দুটিও হারিয়ে ফেলে এরা কালো বামন নাম ধারণ করে। সাবধান! এরা এক সময় কালো হয়ে গেলেও এদেরকে কিন্তু ব্ল্যাক হোল ভেবে বলা যাবে না! এরা হচ্ছে শুধুই অনুজ্জ্বল নক্ষত্র। আর, ব্ল্যাক হোল হচ্ছে তারা যারা আলোকেও বন্দী করে রাখে। সে নিজেই আলোক উৎস হতে পারে, কিন্তু সেই আলো ঘটনা দিগন্তের সীমা পার হতে দেবে না। অন্য দিকে কালো বামনদের আলো বিতরণ করার সামর্থ্যই কিন্তু লোপ পাবে। এই পার্থক্য না থাকলে তো আমরা কয়লাকেও বা যে কোনো কালো জিনিসকেই ব্ল্যাক হোল বলে বসবো!
তাহলে ব্ল্যাক হোল কারা হবে? আরেকটু কথা বলে নিই।

যেসব তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ বা কারো মতে ১৫ সৌর ভরের মধ্যে থাকে তারাও বাইরের আবরণ ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এদের ক্ষেত্রে এই ঘটনাকে বলে সুপারনোভা বিস্ফোরণ। এ সময় অনেক বেশি ঔজ্জ্বল্যের সৃষ্টি যায় যার রেশ পৌঁছে যায় অনেক দূর পর্যন্ত। যেমন বিটলজুস যখন বিস্ফোরিত হবে, এর রেশ ৬৪৩ আলোকবর্ষ দূরে, আমাদের পৃথিবীতে বসেই দেখা যাবে। অবশ্য আলোর বেগ সামান্য (!) হবার কারণে পৃথিবীর মানুষ সেই ঘটনা দেখবে ঘটনার ৬৪৩ বছর পরে! সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে নক্ষত্রের ধ্বংসাবশেষকে বলা হয় নিউট্রন স্টার। কারণ, এই সময় এর অভীকর্ষীয় চাপ এত প্রচণ্ড হয় যে এর অভ্যন্তরে ইলেকট্রন ও প্রোটন অভিকর্ষের খপ্পরে পড়ে স্বাধীনতা হারিয়ে মিলিত হয়ে নিউট্রনে পরিণত হয়। এদের সাথে আবার অনেক সময় জড়িত থাকে অতি উচ্চ চৌম্বকক্ষেত্র যা জন্ম দেয় নির্দিষ্ট সময় পর পর বেতার স্পন্দনের। এ সময় এদের বলে পালসার।

সুপারনোভা বিস্ফোরণ 

এই বার আমরা ব্ল্যাক হোলের কাছে যেতে পারি। সূর্যের চেয়ে অন্তত প্রায় ১৫ থেকে ২০ গুণ ভারী তারকারাই জীবনের অন্তিম পর্যায়ে ব্ল্যাক হোল হবার সুযোগ পাবে। এরাও জায়ান্ট বা সুপারজায়ান্ট স্টারদের মতো সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে বাইরের আবরণ ছুঁড়ে ফেলে দেবে। ফলে, এবার বাকি অংশের ঘনত্ব বেশি হয়ে যাওয়ায় এবং ভর আগে থেকেই যথেষ্ট পরিমাণ থাকায় এদের অভিকর্ষ এতটা শক্তিশালী হবে যে আলোও এদের ঘটনা দিগন্ত থেকে বের হতে পারবে না। ঘটনা দিগন্ত কী এবং আলো এত বিপুল বেগ নিয়েও কিভাবে অভিকর্ষের খপ্পরে আটকা পড়ে, তা আমরা গত পর্বেই দেখেছি।

আজ শেষ করছি আরেকটি প্রশ্ন ও আগের পর্বে করা একটি প্রশ্নের জবাব দিয়ে। আমরা এখানে আলোচনা করেছি মূলত প্রধান ধরনের ব্ল্যাক হোলদের সম্পর্কে। বাকি দুই ধরনের ব্ল্যাক হোল কিভাবে জন্ম নেয়? ব্ল্যাক হোল আবার মাইক্রো তথা ক্ষুদ্র হয় কিভাবে? এমনকি একটি ব্ল্যাক হোলের ব্যাসার্ধ হতে পারে মাত্র ১৪৮ ফেমটো মিটার তথা  ১৪৮×১০−১৫ মিটার। কিন্তু কিভাবে? জানবো ভবিষ্যতে, ইনশা-আল্লাহ।

গত পর্বে আমরা বলেছিলাম, ব্ল্যাক হোলের ঘটনা দিগন্তের কাছে একটি অবস্থান আছে যেখানে স্থান কালের বক্রতা ভেতরের দিকে অসীম না হয়ে বৃত্তপথের মতো তৈরি করবে। আসলে এই জায়গায় ব্ল্যাক হোলের বেপরোয়া মনোভাবের ইতি ঘটে। ফলে, এই জায়গার বস্তু আমরা দেখতে পাই। নামও আছে এর জন্যে। একে বলা হয় অ্যাক্রেশন ডিস্ক (Accretion Disk)। আশপাশের অঞ্চল থেকে পদার্থ ছিনতাই করে ব্ল্যাক হোল এর অন্ধকার কলেবরের চারপাশে এই দৃশ্যমান চাকতির প্রদর্শনী দেখায়। যাই হোক, পরের কোনো পর্বে আরো বিস্তারিত আলোচনার আশা রেখে আজকে বিদায়!



অন্যান্য পর্ব



Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬


সৌর ঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতি গ্রহেও সৃষ্টি হয় অরোরা। নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি প্রথম বারের মত গ্রহটির অরোরা প্রত্যক্ষ করেছে।
সূর্য প্রতিনিয়ত এর চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে কণিকাগুচ্ছ। পৃথিবীর মতই বৃহিস্পতিরও ম্যাগনেটোস্ফিয়ার এই কণিকাদের সাথে প্রতিক্রিয়া করে তৈরি করে অরোরা।  
Category: articles

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬


ছবিতে MACS J0717 গ্যালাক্সি ক্লাস্টার দেখা যাচ্ছে। পৃথিবী থেকে ৫.৪ বিলিয়ন (৫৪০ কোটি) আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত স্থানটি চারটি গ্যালাক্সির সংঘর্ষের হোস্ট হয়েছে।
এক একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টারে শত শত বা হাজার হাজার গ্যালাক্সি থাকে। এছাড়াও থাকে ডার্ক ম্যাটারের ঘন মেঘে সন্নিবেশিত অবস্থায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস।
এই ছবিটি নাসার চন্দ্র এক্স-রে অবজারভেটরি (নীল অংশ) ও হাবল স্পেইস টেলিস্কোপের (লাল, সবুজ ও নীল) সমন্বয়ে তৈরি।

সূত্রঃ
[১] Earth Sky
Category: articles

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১৬

রাতের আকাশের অন্যতম তিন উজ্জ্বল বস্তু- চাঁদ, শুক্র ও মঙ্গল গ্রহ 
একটি বস্তুকে পৃথিবী থেকে দেখতে যতটা উজ্জ্বল লাগে সেটাই হচ্ছে তার আপাত উজ্জ্বলতার (Apparent magnitude) পরিমাপ। এটা বস্তুর প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি থেকে আলাদা জিনিস। কারণ, বাস্তবে বেশি দীপ্তিমান হলেও দূরত্বসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবী কোন তারকা বা বা অন্য কোন বস্তুকে অন্য তারকার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল মনে হতেই পারে। 

এই যেমন রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক কিন্তু সবেচেয়ে বেশি দীপ্তিমান ৫০টি তারকার মধ্যেও নেই।আবার উজ্জ্বলতায় স্বাতী চতুর্থ আর বিটলজুস নবম। স্বাতী পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৬ আলোকবর্ষ দূরে৷ অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি সূর্যের ১৭০ গুণ৷ ওদিকে লোহিত অতিদানব তারা বিটলজুসের দীপ্তি সূর্যের প্রায় এক লক্ষ গুণ (বিভিন্ন হিসাবে কম-বেশি আছে)। তবুও পৃথিবীর আকাশে বিটলজুস কম উজ্জ্বল। এর দূরত্ব যে ৫৪৮ আলোকবর্ষ!

তারকার উজ্জ্বলতা পরিমাপ করা হয় লগারিদম স্কেলে। উজ্জ্বলতার মান যত বেশি হয় তার আপাত উজ্জ্বলতা হয় তত কম। এটা অনেকটা এসিডের PH এর মানের মত। এসিডের পিএইচ যত বেশি হয় সেটি তত কম শক্তিশালী এসিড। পৃথিবীর আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু সূর্যের আপাত উজ্জ্বলতা -২৭ (মাইনাস ২৭)। চাঁদসহ সৌরজগতের খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচটি গ্রহের প্রত্যেকের আপাত উজ্জ্বলতার মান নেগেটিভ (০ এর নিচে) যা এদের উজ্জ্বলতার বড়ত্বের প্রমাণ বহন করে। চাঁদের ক্ষেত্রে এই মান -১২.৭, শুক্রের -৪.৮৯, বৃহস্পতির -২.৯৪, মঙ্গলের -২.৯১, বুধের -২.৪৫ এবং শনির ক্ষেত্রে এই মান -.৪৯। অন্য দিকে শুধু প্রথম চারটি উজ্জ্বল তারকারই আপাত উজ্জ্বলতা শূন্যের নিচে।

আপাত উজ্জ্বলতার বিচারে সবচেয়ে উজ্জ্বল পাঁচটি নক্ষত্র
১। লুব্ধক (-১.৪৪)
২। সুহাইল (০.৬২)
৩। আলফা সেন্টোরি (-.২৮)
৪। স্বাতী (-০.০৫)
৫। অভিজিৎ (+০.০৩)

সর্বচ্চ +৬.৫ উজ্জ্বলতার তারা খালি চোখে দেখা যায়। 

Category: articles

বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১৬

আজ মার্চের ৯ তারিখ। ১৯৩৪ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গ্যাগারিন। এখন বেঁচে থাকলে তাঁর বয়স হত ৮২। অবশ্য তিনি মাত্র ৩৪ বছর বয়সেই ১৯৬৮ সালে পরলোক গমন করেন যান। ১৯৬১ সালের এপ্রিলের ১২ তারিখে তিনি প্রথম নভোচারী হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণের রেকর্ড গড়েন। রাশিয়ার ভোস্টক ১ যানে করে তিনি ৮৯.১ মিনিট ধরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন। তিনি সম্পূর্ণ পৃথিবী একবার ঘুরে আসেন এবং সর্বোচ্চ ২০০ মাইল (৩২৭ কিলোমিটার) পর্যন্ত উপরে উঠেন। ভ্রমণ শুরু থেকে অবতরণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ অভিযান শেষ হতে সময় লাগে ১০৮ মিনিট।
প্রথম নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন

মস্কো শহরের পশ্চিমে একটি খামারে তাঁর জন্ম। বাবা ছিলেন একইসাথে রাজমিস্রি, কাঠমিস্রি ও কৃষক। মা ছিলেন গোয়ালিনী। বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় তাঁর পরিবার নাৎসি বাহিনীর হাতে নিপীড়নের শিকার হয়। তাঁর দুই বোনকে নির্বাসন দিয়ে পোল্যান্ড পাঠানো হয়। যুদ্ধের পরে অবশ্য তারা পরিবারের সাথে মিলিত হন। গ্যাগারিন পড়াশোনা চালিয়ে যান।
কিশোর বয়সেই গ্যাগারিন বৈমানিক হতে উৎসুক ছিলেন। একবার রাশিয়ার একটি ইওক ফাইটার প্লেন বাধ্য হয়ে গ্যাগারিনের বাড়ির কাছে অবতরণ করে। বিমানের বৈমানিকরা মানুষের কাছে যে পরিমাণ শ্রদ্ধা পেয়েছিলেন তা তরুণ গ্যাগারিনের উপর গভীর ছাপ ফেলে। তিনিও তাদের মত হবার স্বপ্ন দেখতে থাকলেন।
১৬ বছর বয়সে তিনি ঢালাইয়ের কাজ শেখা শুরু করেন। পাশাপাশি পড়তে থাকেন সান্ধ্য স্কুলে। ১ বছর পর, ১৯৫১ সালে তিনি ভোকেশনাল ও স্কুলের সেভেন্থ গ্রেড- দুটোই পাস করেন। এরপর ডাক আসে সারাতোভ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল স্কুল থেকে। এখানে থাকা অবস্থায়ই তিনি প্রতি সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতে স্থানীয় ফ্লায়িং ক্লাবে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন। এখানেই তিনি প্রথমে বাইপ্লেন ও পরে ইয়ক-১৮ ট্রেইনার প্লেন চালানো শিখে ফেলেন।
১৯৫৫ সালে তিনি সর্বপ্রথম নিজে নিজে বিমান চালান। একই বছর তিনি স্কুল থেকে পাস করে সোভিয়েট আর্মিতে যোগ দেন। পরে চলে আসেন বিমান বাহিনীতে। ভর্তি হন ওরেনবার্গ স্কুল অব এভিয়েশনে।
১৯৫৭ সালে তিনি এই স্কুল থেকে পাস করে স্কুলের মেডিকেল গ্র্যাজুয়েট ভেলেন্টিনা ইভানোভা গরভাচেভার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তীতে এ দম্পতি ইয়েলিনা ও গ্যালিনা নামে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয়।
১৯৫৯ সালে রাশিয়া লুনা ৩ যানের সাহাযে প্রথমবারের মত চাঁদের উল্টো পাশের ছবি তুলতে সক্ষম হয়। গ্যাগারিন অনুভব করলেন, মানুষের মহাশুন্য ভ্রমণেরও আর বেশি দেরি নেই। ১৯৬০ সালে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর নভোচারী হিসেবে প্রশিক্ষের জন্যে নির্বাচিত অল্প কিছু ব্যক্তির মধ্যে তিনিও স্থান করে নেন। এখানে শারীরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেওয়া হল মন-মানসিকতার প্রশিক্ষণও। গ্যাগারিন তাঁর রসিক মনোভাব, অধ্যবসায় ও নম্রতা দিয়ে বিশেষ নজর কাড়লেন।
১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল। রাশিয়ার বাইকোনুর কসমোড্রোম থেকে মহাশূন্যে যাত্রা করল ভোস্টক ১ মহাকাশযান। যানের একমাত্র যাত্রী আর কেউ নন, ইতিহাসের প্রথম নভোচারী ইউরি গ্যাগারিন।
রুশ ভাষায় ভোস্টক শব্দের অর্থ পূর্ব। পূর্বের তাৎপর্য সূর্যোদয়। অর্থ্যাৎ, মহাকাশ অভিযানের সূর্যোদয় ঘটল।
জাদুঘরে রক্ষিত ভোস্টক ১ মহাকাশযানের ক্যাপসুল

ফিরে এসে তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গেলেন সারা বিশ্বে। তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ খেতাব হিরো অব দা সোভিয়েত ইউনিয়ন পুরস্কারও পেলেন। স্বপ্ন সত্যি হল। বিশ্বজুড়ে সফর করলেন। তবে, তাঁর খ্যাতি যেভাবে নিজের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারতেন তা তিনি করেননি।
১৯৬২ সালে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্যতম ডেপুটি হলেন। ইয়ং কমিউনিস্ট লিগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে পদ দেওয়া হল। কিন্তু এটা তার খুশির কারণ হতে পারল না। তাঁর মনে হলে একবার মাত্র মহাকাশ সফরের জন্যে তিনি ট্রেনিং করেননি। কিন্তু জানা যায় অন্যরা সোভিয়েত হিরো হবার সুযোগ হারাবার ভয়ে তাঁকে থামানোর চেষ্টা করত।
১৯৬৩ সালে মস্কোর বাইরে গড়ে ওঠা কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারের ডেপুটি ট্রেনিং ডিরেকটর মনোনীত হন। পরে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তাঁর নামে নামকরণ করা হয়।
১৯৬৮ সালের ২৭ মার্চ তারিখে একজন সহকর্মীসহ (ভ্লাদিমির সেরিয়োগিন) বিমান দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন।

সূত্রঃ
[১] Earthsky
[২] উইকিপিডিয়াঃ Yuri Gagarin
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...