Advertisement

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

টেলিস্কোপের মাধ্যমে রাতের আকাশের সৌন্দর্য চলে আসে হাতের নাগালে। কিন্তু টেলিস্কোপ কেনার আগে একটু বুদ্ধি খাটানো দরকার। না হলে দেখা যাবে, টেলিস্কোপ রাতের আকাশের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেকেই আবার এত উচ্চ কনফিগারেশনের টেলিস্কোপ কিনে ফেলেন যার কোন প্রয়োজনই নেই, অথবা যা বিগিনারদের জন্যে উপযুক্ত নয়। তাহলে কী করলে ভালো হয়? চলুন দেখা যাক।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য 

আমরা জ্যোতির্বিদ্যার বইয়ে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রাতের আকাশের দারুণ দারুণ ছবি দেখি। মনে রাখতে হবে এই ছবিগুলো সাধারণ টেলিস্কোপে তোলা নয়। এসব ছবি তোলা হয় উচ্চ ক্ষমতার টেলিস্কোপ, ক্যামেরার দীর্ঘ সময়ের এক্সপোজার বা স্পেইস টেলিস্কোপ দিয়ে। এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে আকাশের বস্তুদের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য চলে আসে চোখের খুব কাছে। অনেক সময় কোনো কোনো ছবি একাধিক ডিভাইসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।
তাই বলে হতাশ হবার কোনো প্রয়োজন নেই। ছোট্ট একখান টেলিস্কোপ আপনার চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করতে সক্ষম। আপনার টেলিস্কোপের প্রথম লক্ষ্যই হবে চাঁদ। এটিতো রাতের আকাশের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল বস্তু। এমনকি ৩০ পাওয়ারের (৩০ পাওয়ারের অর্থ বস্তুটাকে ৩০ গুণ কাছে থেকে দেখলে যেমন দেখা যেত তেমন দেখা) একটি টেলিস্কোপ আপনাকে চাঁদের কালো অঞ্চল, উঁচু- নিচু অঞ্চল এবং এর শত শত খাদও দেখিয়ে দেবে। আরও বেশি শক্তির টেলিস্কোপ হলে চাঁদের পুরোটাই টেলিস্কোপের আইপিসে (যেখানে চোখ রাখা হয়) এঁটে যাবে। দেখা যাবে এটি ক্রমশ দৃষ্টি থেকে সরে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে পৃথিবীর আবর্তনের কারণে এটি পশ্চিমে সরে যাচ্ছে বলে। এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনার মনে হবে, আপনি আর এ জগতে নেই। মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন একজন নভোচারী  হিসেবে!
২০ থেকে ৩০ পাওয়ারের টেলিস্কোপ আপনার সামনে গ্রহদেরকেও দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলবে। কিন্তু পাওয়ার যদি হয় ৪০, আপনি চাঁদের মতো বুধশুক্র গ্রহেরও দশা (বড়ো- ছোট হওয়া) দেখতে পাবেন। দেখবেন মঙ্গলের লাল রঙের ছড়াছড়ি, বৃহস্পতির প্রধান চারটি উপগ্রহ যা গ্যালিলিও সবার আগে দেখেছিলেন, শনির বলয় ও উপগ্রহ টাইটান, তারার মতো দেখতে ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ। আরও দেখবেন (অন্ধকার আকাশ হলে ভালো হয়) ডাবল স্টার, নক্ষত্র গুচ্ছ, নেবুলা, প্রায় আড়াই লাখ দূরের অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি ইত্যাদি।
এখন বাস্তবতা হল, এই জিনিসগুলো দেখার জন্যে আপনি যদি মুখিয়ে থাকেন, তাহলে টেলিস্কোপ কেনার আগে অন্তত একটিবার একটি বাইনোকুলার বা দুরবিন কেনার কথা ভাবুন। শুনতে হাস্যকর লাগলেও পেশাদার ও অপেশাদার দুই ধরনের জ্যোতির্বিদদেরই পরামর্শ এটাই। আপনি যদি একজন পোড়-খাওয়া আকাশ পর্যবেক্ষককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে উত্তর পাবেন এ রকম,
প্রথমে কিছু দিন খালি চোখে আকাশ দেখুন, এরপর একটি বাইনোকুলার কিনুন।
বাইনোকুলার কিনতেঃ
অনেকেই বাইনোকুলারকে একেবারেই অবহেলা করেন। কিন্তু সত্যি বলতে, অনেকগুলো কাজের জন্যে বাইনোকুলারই হচ্ছে সেরা ডিভাইস। একটি ৭ পাওয়ারের বাইনোকুলার দামেও স্বস্তা, বহন করতেও ঝামেলা কম। আরেকটু পাওয়ার বাড়িয়ে নিলেই এটি আপনাকে সাধারণ টেলিস্কোপের চেয়ে ভালো সেবা দিবে। আমার নিজের ২০ পাওয়ারের দুরবিন দিয়ে চাঁদের স্পষ্ট দৃশ্যসহ খালি চোখের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি তারা দেখি। অন্যদের মতোই বাইনোকুলারে চোখ রেখে রাতের আকাশ দেখে আমি অবাক ও মুগ্ধ না হয়ে পারিনি।
অনেকেই ৭ x ৫০ দুরবিন বেশি ব্যবহার করেন। এখানে ৭ হচ্ছে এর পাওয়ার। বস্তুটিকে ৭ গুণ কাছ থেকে দেখলে যেমন দেখা যেতে এটা দিয়ে তাই বোঝায়। আর ৫০ হচ্ছে এর অভিলক্ষ্যের ব্যাস।
ছবিতে দেখুনঃ-
দুরবিনের হিসাব বুঝতে হলে এর আইপিস ও অভিলক্ষ্য চিনতে হবে
টেলিস্কোপে ও বাইনোকুলার নিয়ে আরও নিবন্ধ পড়তে চোখ রাখুন এইএই লিঙ্কে। 
Category: articles

রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

আপনি যদি নতুন তারা দেখা শুরু করেন অথবা তারা দেখতে দেখতে বুড়োও হয়ে যান (অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে!)- দুই ক্ষেত্রেই আপনার সেরা বন্ধু হবে একখান দুরবিন বা বাইনোকুলার। আসুন, জেনে নিই দুরবিন সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় এবং রাতের আকাশে আপনি এটা দিয়ে কী কী দেখতে পাবেন।

১. তারা দেখা শুরু করতে টেলিস্কোপের চেয়ে বেশি ভালো কাজে আসে এই দুরবিন
প্রকৃতপক্ষে টেলিস্কোপ কিনতে আগ্রহী অধিকাংশ তারাপ্রেমীরই উচিত টেলিস্কোপ কেনার আগে প্রায় ১ বছর ধরে দুরবিন দিয়ে কাজ চালানো। কারণ, প্রথম বার টেলিস্কোপ ব্যবহার করতে গিয়ে পড়তে হয় বিপত্তিতে। কারণ, একই সাথে জটিল একটি যন্ত্রের পরিচালনা এবং রাতের আকাশের সাথে প্রাথমিক পরিচয়-কাজ দুটো একসাথে করতে মানিয়ে নেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
বাজারে প্রাপ্ত একটি মোটামুটি মানের দুরবিনই রাতের আকাশের প্রত্যাশিত দৃশ্য তুলে ধরতে সক্ষম হবে। যন্ত্রের বিবর্ধন (Magnification) ও আলোক সমাবেশ ক্ষমতার (Light-gathering power) সমন্বয়ে আকাশ হয়ে ওঠে কয়েকগুণ বেশি জ্বলমলে। একটি ৭ × ৫০ বাইনোকুলারও খালি চোখের চেয়ে ৭ গুণ বেশি বস্তু চোখের সামনে সামনে হাজির করতে পারবে। মাসের বা বছরের কোন সময় কী দেখবেন তার খোঁজখবর রাখতে নিয়মিত পড়ুন আমাদের রাতের আকাশ সেকশন। এ কাজে প্লেনিস্ফিয়ারও ভালো কাজে আসতে পারে।
২. ছোট এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য দুরবিন দিয়ে শুরু করুন
শুরুতেই বিশাল সাইজের দুরবিন কিনলে বিপত্তিতে পড়তে হবে যদি না আপনি ট্রাইপডও কেনার ইচ্ছা করেন। অন্যথায় দুরবিনখানি আপনার হাতে থেকে আপনার কথা শোনার চেয়ে অভিকর্ষের কথা শোনার দিকে বেশি মনযোগ দেবে যার পরিণাম, কাঁপাকাঁপি আর অস্থির আকাশ। নতুনদের জন্য ৭ × ৫০ আকারের দুরবিনই যথেষ্ট যা দেখাবেও অনেক কিছু, হাতেও বসে থাকবে ভদ্রভাবে। চাইলে পাখি দেখাসহ অন্য কাজেও সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন আলোকযন্ত্রটি।
৩. দুরবিন দিয়ে চাঁদ দেখুন
দুরবিন কেনার শুরুর দিনগুলোতে আপনি চাঁদের বিভিন্ন দশা (Phase) যেমন পূর্ণচাঁদ তথা পূর্ণিমা, ক্রিসেন্ট বা অর্ধচন্দ্র (Crescent) ইত্যাদি দেখা শুরু করে দিতে পারেন। অবশ্য আপনি আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যলাক্সি বা তারও বাইরে অন্য কোন গ্যালাক্সির দূর আকাশের বস্তুগুলো (deep-sky objects) দেখতে চাইলে স্বভাবতই চাঁদকে এড়িয়ে যেতে চাইবেন। কিন্তু চাঁদ নিজেই একটি দর্শনীয় বস্তু। মনে রাখতে হবে, দুরবিন দিয়ে চাঁদ দেখার সেরা সময় হচ্ছে গোধূলীর (Twilight)। এই সময় এর আলোর তীব্রতা থাকবে কম এবং দেখা যাবে অনেকটা বিস্তারিত। দেখতে পারেন চন্দ্রসাগর (Maria) নামে পরিচিত অগ্ন্যুৎপাতের ফলে চাঁদে সৃষ্ট কালো সমতল অঞ্চলও।
৪. চলুন, এবার গ্রহ দেখি
আমাদের রাতের আকাশ সেকশনে আপনি নিয়মিত গ্রহদেরও খোঁজখবর পাবেন। আমরা জানি, সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে খালি চোখে দেখা যায় শুধু ৫টি- বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। ইউরেনাস ও নেপচুন খালি চোখে ধরা দেয় না। অবশ্য ভুল বলা হলো, আরেকটিও খালি চোখে দেখা যায়- আমাদের প্রিয় নীল গ্রহটি যাতে আমরা বাস করি!
চলুন দেখে নিই উপরোক্ত ৫টি গ্রহ দুরবিনে কেমন দেখাবে।
বুধ ও শুক্রঃ
এরা দুজনেই অভ্যন্তরীণ তথা ভেতরের দিকের (Inner) গ্রহ। এদের ক্ষেত্রে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার কক্ষপথ পৃথিবীর চেয়ে ক্ষুদ্র। এ কারণেই অনেক সময় গ্রহ দুটি চাঁদের মত বিভিন্ন দশা প্রদর্শন করে থাকে। ঘটনাটি ঘটে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝপথ পাড়ি দেবার সময়। দুরবিন আপনাকে এদের দশা ফাঁস করে দিতে সহায়তা করবে।
মঙ্গলঃ
লাল এই গ্রহটি আসলেই দেখতে লাল। আর দুরবিন এর তীব্রতা আরো বাড়িয়ে তুলবে। আকাশের তারাদের তুলনায় (যারা সত্যিই তারা, গ্রহ নয়) মঙ্গলের গতি অনেকটা বেশি। এ সময় আপনি দুরবিনের সাথে আপনার বন্ধুত্বকে রাঙিয়ে নিতে পারেন।
বৃহস্পতিঃ
এবার শুরু আসল খেলা! নতুনদের জন্যেও বৃহস্পতি একটি দারুণ শিকার। দুরবিন স্থিরভাবে ধরে রাখতে পারলে বৃহস্পতি আপনার সামনে তার চারটি উপগ্রহও প্রকাশ করে দেবে। এগুলো সর্বপ্রথম গ্যালিলিও তাঁর স্ব-আবিষ্কৃত প্রতিসারক টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। এ জন্যে এদেরকে বলা হয় গ্যালিলীয় উপগ্রহ। দুরবিন দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যে বিভিন্ন রাতে গ্রহটির উপগ্রহগুলোর অবস্থান থাকে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়।
শনিঃ
যদিও শনির বলয় (Ring) দেখতে হলে টেলিস্কোপ ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু দুরবিন আপনাকে এর সোনালী রঙ অন্তত দেখাবে। অভিজ্ঞ দর্শকরা অবশ্য শনির বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটানও (Titan) দেখতে পান। একটু শক্তিশালী দুরবিন ব্যবহার করলে আপনি দেখবেন যে শনি আসলে পুরোপুরি গোলাকার (Round) নয়, কিছুটা উপবৃত্তাকার (Elliptical)।
ইউরেনাস ও নেপচুনঃ
খালি চোখে ধরা না পড়লেও দুরবিনের চোখে ধরা পড়ে যায় সৌরজগতের সর্ববহিস্থ গ্রহ দুটি। ইউরেনাসের বায়ুমণ্ডলে মিথেন গ্যাস থাকায় একে দেখাবে সবুজাভ। বছরে একবার ইউরেনাস খালি চোখে ধরা পড়ার মত উজ্জ্বল হয়। আরেকটু দূরবর্তী নেপচুনকে অবশ্য দেখা যাবে তারকার মতো যদিও এরও বায়ুমণ্ডল ইউরেনাসের মতই।
অনান্যঃ
গ্রহদের বাইরেও সৌরজগতের আরো কিছু বস্তু দেখতে আপনাকে সহায়তা করবে দুরবিন। খোঁজ রাখতে পারেন অনিয়মিত ধূমকেতুদের (Comet)। দুরবিনে ১২ টি পর্যন্ত গ্রহাণুও (Asteroid) দেখা যায়। আমরা যথাসম্ভব এদের আপডেট খবর ওয়েবসাইটে জানানোর চেষ্টা করবো।
৫. আমাদের হোম গ্যলাক্সি মিল্কিওয়ে দেখতে দুরবিন
পৃথিবীর নিকটবর্তী স্টার ক্লাস্টার (Star Cluster) তারাস্তবক দেখতে দুরবিন বেশ কাজে আসবে। এখানে মনে রাখার বিষয়, রাতের আকাশে আমরা যত তারা দেখি তার সবই মিল্কিওয়ের গ্যালাক্সির সম্পত্তি। তাই কিছু তারা নিয়ে গঠিত তারাস্তবক সমর্কেও একই কথা বলা চলে। বেশি দূরের ক্লাস্টার দেখতেও অবশ্য চাই টেলিস্কোপ। শীতকালের আকাশে আপনি দেখতে পাবেন কৃত্তিকা মণ্ডল (Pleiades) নামক ৭টি তারার জালি। খালি চোখে অনেকেই এখানে মাত্র ৬টি তারকা দেখলেও বাইনোকুলার আপনাকে আরো অনেকগুলো দেখিয়ে দেবে। এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৪০০ আলোকবর্ষ
আরেকটি দারুণ জিনিস আপনি দেখতে পাবেন আদম সুরত তথা কালপুরুষ (Orion) তারামণ্ডলীতে। এটিও ভালো দেখা যাবে শীতকালে। এর নাম ওরিওন নেবুলা। অন্য দিকে গ্রীষ্মকালে দেখতে পাবেন ধনুমণ্ডলীতে (Sagittarius) অবস্থিত লেগুন নেবুলা। মিল্কিওয়ে নিজেই একটি দর্শনীয় বস্তু। চোখে পড়বে অনেক বেশি তারকা এবং আরো আরো নানান কিছু।
৬. মিল্কিওয়ে ছাড়িয়ে
পৃথিবীর কাছাকাছি গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্যালাক্সি এ্যান্ড্রোমিডা। খালি চোখে এটি দেখা গেলেও বাইনোকুলার এর সৌন্দর্য্য তুলে ধরবে আরো বেশি করে। পাশাপাশি দেখার মতো আরো আছে বড় ও ছোট ম্যাজেলানিক ক্লাউড।
মোটকথা আপনি নতুন তারা দেখা শুরু করলে দুরবিনই আপনার জন্যে টেলিস্কোপের চেয়ে বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...