Advertisement

সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াই অঙ্গরাজ্যে আছে মাউনা কেয়া মানমন্দির। এ পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে দারুণ এক সুপারনোভা বা অতিনবতারা৷ 


সুপারনোভাটা প্রথম দেখেন জাপানি জ্যোতির্বিদ কইচি ইতাগাকি৷ তিনি এক জাঁদরেল সুপারনোভা শিকারী। ইয়ামাগাতা শহরের বাইরের নিজস্ব মানমন্দির থেকে এ পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছেন ৮০টির বেশি বিস্ফোরণ। নতুন সুপারনোভাটা তিনি প্রথম দেখেন গত মে মাসের ১৯ তারিখে। 


সুপারনোভা এসএন ২০২৩আইএক্সএফ


মানমন্দিরের কাজ কী? 


নতুন আবিষ্কৃত সুপারনোভাটা আছে পিনহুইল গ্যালাক্সির এক সর্পিল বাহুতে৷ নাম এসএন ২০২৩আইএক্সএফ। গত পাঁচ বছরে দেখা সবচেয়ে কাছের সুপারনোভা এটা। পিনহুইল ছায়াপথটার অবস্থান সপ্তর্ষীমণ্ডলের দিকে। পৃথিবী থেকে প্রায় ২.১ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। ছায়াপথটার বাহুতে আছে প্রচুর পরিমাণ নীহারিকা। যেখানে তৈরি হয় নতুন নক্ষত্র। 


সুপারনোভা কীভাবে হয়? 


সূত্র: সিএনএন

Category: articles

সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

বিটলজুস নিক্ষত্র এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যেকোনো সময় এটি সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। ঠিক কখন সেটা আমরা জানি না। আমরা নক্ষত্রটা থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে আছি৷ তাই বিস্ফোরণে ক্ষতি হবে না। দেখব শুধু সুপারনোভার অসাধারণ রূপ!


বিটলজুস



সম্প্রতি লোহিত অতিদানব নক্ষত্রটার উজ্জ্বলতা ৫০% গুণ বেড়েছে। ফলে আবারও শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা৷

বিটলজুস একইসাথে একটি লোহিত অতিদানব ও অর্ধনিয়মিত বিষম ও স্পন্দনশীল তারা। মানে এর উজ্জ্বলতার পরিবর্তন কিছু নিয়ম মেনে চলে। উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের আছে বেশ কিছু চক্র৷ মূল চক্রটি ৪০০ দিনের। তবে ১২৫ ও ২৩০ দিনের দুটি ছোট চক্রও আছে। আছে আবার ২২০০ দিনের একটি বড় চক্র৷ এসব কারণে বিটলজুসের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন জ্যোতির্বিদদের কাছে এক মহাধাঁধা৷

কয়েক বছর আগে এর উজ্জ্বলতা কমে আসে। সবাই এর কারণ নিয়ে ভাবতে থাকল। পরে দেখা গেল, উজ্জ্বলতা আসলে কমেনি। নক্ষত্রটার পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষিপ্ত পদার্থ ঠাণ্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হয়৷ আর তাতে বাধাগ্রস্ত হয় আলো৷

এখন আবার উজ্জ্বল হচ্ছে বিটলজুস৷ এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা সম্ভবত প্রত্যাশার চেয়ে আগেই সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হবে৷ মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে মিল্কিওয়ের পরবর্তী সুপারনোভা হবে বিটলজুসই৷

বিটলজুস বর্তমানে লোহিত অতিদানব তারা। পেছনে ফেলে এসেছে প্রধান ক্রম দশা। যে সময় এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাত৷ ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বছর ধরে কাজটি করে এসেছে নক্ষত্রটা৷ ভর হারিয়ে তারারা ফিউশন বিক্রিয়ার বহির্মুখী চাপকে আর ধরে রাখতে পারে না। নক্ষত্রের বাইরের দিক ফুলে ফেঁপে ওঠে৷ ভর কমলেও আকার যায় বেড়ে৷

তবে ফিউশন তখনও চলে। শুরু হয় কার্বন পোড়া। তৈরি হয় আরও কিছু ভারী মৌল। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিটলজুস এ ধাপের শেষের দিকে আছে। কার্বন পোড়ার ধাপ আছে কয়েকটি৷ বিটলজুস স্পন্দিত হয়, পদার্থ ছুঁড়ে মারে, আবর্তন করে। আবার ছুটে চলে মহাশূন্য ধরে। কার্বন পোড়ারনোর কোন ধাপে নক্ষত্রটা আছে তা না জানা গেলে সঠিক করে বলা যাবে না কবে নক্ষত্র সুপারনোভা হবে৷ জ্যোতির্বিদরা দেখেন নক্ষত্রের বাইরে অংশ৷ ভেতরের খবর সঠিক করে বলা সম্ভব হয় না।

তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণা বলছে বিস্ফোরণটা হতে পারে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে৷ ২০০ পারসেক দূরের এ বিস্ফোরিত পৃথিবীর আকাশে অন্যতম সুন্দর এক দৃশ্যের অবতারণাই করবে। ছুঁড়ে দেওয়া ক্ষতিকর এক্সরে বা গামা রশ্মি থেকে আমরা নিরাপদ।



বিটলজুস রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা। আদমসুরত বা কালপুরুষ মণ্ডলে এর অবস্থান। শীতের আকাশে সহজেই উজ্জ্বল এ তারার দেখা পাবেন। মে মাসের দিকে পশ্চিম দিগন্তে হারিয়ে যাবে। আগস্টের শেষের দিকে আবার দেখা যায় ভোরের পূবাকাশে। নিচের লিঙ্কে বিটলজুস ও অন্যান্য উজ্জ্বল তারা কীভাবে খুঁজে পাবেন দেখানো আছে। 

আদমসুরত তারামণ্ডল। উপরে বামপাশের তারাটাই বিটলজুস। 

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

ড্যানিয়েল কে ইনুয়েই সোলার টেলিস্কোপ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সৌর টেলিস্কোপ। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াই অঙ্গরাজ্যের হালিয়াকালা মানমন্দিরে রাখা। টেলিস্কোপটির কাজ এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি। এরই মাঝে জ্যোতির্বিদরা এর তোলা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে নিজের সক্ষমতা জানান দিয়েছে টেলিস্কোপটি৷




অনেকগুলো ছবিতে আছে সৌরকলঙ্ক। সূর্যের মধ্যে কালো কালো দাগ। এ দাগগুলো আর কিছুই নয়, সৌরপৃষ্ঠের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা ও শক্তিশালী চৌম্বক অঞ্চল। এরা আছে সূর্যের পৃষ্ঠে। যার কেতাবি নাম ফটোস্ফিয়ার বা আলোকমণ্ডল৷ সৌরকলঙ্ক বিভিন্ন আকারের হয়। অন্তত পৃথিবীর সমান তো হয়ই। জটিল কলঙ্ক বা কলঙ্কগুচ্ছ সৌরশিখা ও সৌরঝড়ের উৎস৷

ছবিতে দেখা যায়, সূর্যের এ অঞ্চলে বিকিরণ কোষের উজ্জ্বল নকশা আছে। উষ্ণ ও উর্ধগামী প্লাজমাকে ঘিরে আছে অন্ধকার, ঠাণ্ডা ও নিম্নগামী প্লাজমা রেখা।






সূত্র: kottke.org
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি জিরো টু ইনফিনিটি ম্যাগাজিনের অক্টোবর সংখ্যায় প্রচ্ছদ হয়েছিল।] 


নাম ট্যাবির নক্ষত্র। এ রকম রহস্যময় কোনো নক্ষত্রের সাথে জ্যোতির্বিদদের আগে কোনো রকম পরিচয় ছিল না। নক্ষত্রটি সময় সময় অস্বাভাবিক হারে উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে। এর পেছনে কেউ দায়ী করছেন বড়ো কোন গ্রহকে, কেউ বলছেন এক ঝাঁক ধূমকেতুর কথা। কেউ আবার এক ধাপ সামনে গিয়ে দোষ চাপাচ্ছেন এলিয়েনদের হাতে। সত্যিকারের ঘটনা এখনো এক রহস্য। ইদানিং নিয়মিত খবর হচ্ছে নক্ষত্রটি। 

এর পেছনে আঠার মতো লেগে থাকা এবং বহুলভাবে প্রচার ও পর্যবেক্ষণ শুরু করতে ভূমিকায় রাখায় জ্যোতির্বিদি তাবেথা বয়াজিয়ানের নাম অনুসারে একে ট্যাবির নক্ষত্র (Tabby’s Star) বলে ডাকা হচ্ছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নক্ষত্রটির অদ্ভুত আচরণ নিয়ে কথা বলেন টেড টক- এ। অপূর্ব সেই লেকচারে তিনি কী বলেছিলেন তার সারসংক্ষেপ জেনে নিলেই অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে। চলুন, শুনে আসি। 

“অসাধারণ দাবীর পক্ষে অসাধারণ প্রমাণ থাকতে হয়। একজন জ্যোতির্বিদ হিসেবে সর্বশেষ উপায় হিসেবে এলিয়েন তত্ত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়া আমার কাজ ও দায়িত্ব। এখন আমি এ সম্পর্কে একটি ঘটনা বলতে চাই। গল্পটির বিষবস্তুর হল নাসার অভিযান, কিছু সাধারণ মানুষ এবং আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে রহস্যময় নক্ষত্র। 

আরো দেখুনঃ
নক্ষত্রের পরিচয়

২০০৯ সালে নাসার কেপলার মিশনের মাধ্যমে ঘটনার শুরু। কেপলারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আমাদের সৌরজগতের বাইরে গ্রহের খোঁজ করা। মহাকাশের একটি বিশেষ দিকে১ নজর রেখে এটি তা করতে থাকে। এবং এই বিশেষ দিকটিতে এটি এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার নক্ষত্রের উপর অবিরত নজর রাখে। প্রতি ৩০ মিনিটে সংগ্রহ করতে থাকে তথ্য। এটি খোঁজ করছিল অতিক্রমণ (transit)নামক ঘটনাটির। আমাদের চোখের সামনে একটি গ্রহ যখন একটি নক্ষত্রের উপর দিয়ে অতিক্রম করে চলে যায়, তখন তাকে আমরা বলি গ্রহটির অতিক্রমণ। এটি ঘটার সময় নক্ষত্রের সামান্য পরিমাণ আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। 
চিত্রঃ গ্রহদের অতিক্রমণের সময়ের প্রতিক্রিয়া

অতএব, নাসা কেপলারের সবগুলো উপাত্ত থেকে অতিক্রমণ খুঁজে বের করার জন্যে আধুনিক কম্পিউটার তৈরি করে। প্রথমবার উপাত্ত প্রকাশ করা হলে ইয়েল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদদের মাথায় একটি মজার চিন্তা ঘুরপাক খায়। কেমন হবে যদি কম্পিউটার কিছু জিনিস মিস করে ফেলে?   
ফলে আমরা একটি দলগত প্রকল্প হাতে নিলাম। ‘প্ল্যানেট হান্টারস’ বা ‘গ্রহ শিকারি’ নামের এই প্রোজেক্টের সবাই মেতে উঠলেন উপাত্ত নিয়ে। নকশা খুঁজে বের করার ব্যাপারে মানব মস্তিষ্কের ক্ষমতা অসাধারণ। অনেক সময় এই ক্ষমতার কাছে হার মানে কম্পিউটারও । কিন্তু এই প্রকল্পটি চারদিক থেকে সন্দেহের শিকার হয়। আমার সহকর্মী ও প্ল্যানেট হান্টারস প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা ডেবরা ফিশার বলেন, ঐ সময় লোকেরা বলছিল, ‘আপনারা উন্মাদ। কম্পিউটার কোনো সঙ্কেত মিস করবে- এটা একেবারে অসম্ভব।‘ ফলে মানুষের সাথে যন্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। একটি গ্রহ পেয়ে গেলেও তা হবে দারুণ ব্যাপার। চার বছর আগে আমি যখন এই দলে যোগ দেই, তত দিনে একের বেশি পাওয়া হয়ে গেছে। আর আজকে তিন লাখ বিজ্ঞানপ্রেমীর সহায়তায় আমরা ডজন ডজন গ্রহ খুঁজে পেয়েছি। এরই একটি হল আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে রহস্যময় নক্ষত্র।

একটি গ্রহ যখন কোনো নক্ষত্রকে অতিক্রমণ করে, তখন নক্ষত্রের কিছু আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই অতিক্রমণের দৈর্ঘ্য থেকে বস্তুটির সাইজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বৃহস্পতির কথাই ধরুন। গ্রহরা বৃহস্পতির চেয়ে খুব একটা বড়ো হয় না। বৃহস্পতি কোনো নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা এক শতাংশ কমাতে পারবে। অন্য দিকে, পৃথিবী বৃহস্পতির চেয়ে এগারো গুণ ছোট। এত ছোট সঙ্কেত উপাত্তের মধ্যে চোখে পড়ে না বললেই চলে।

আমাদের রহস্যের কাছে ফিরে আসি। কয়েক বছর ধরে উপাত্তের ভেতর গ্রহ শিকারীরা অতিক্রমণের খোঁজ করছিলেন। তারা একটি নক্ষত্র থেকে রহস্যময় সঙ্কেত দেখতে পেলেন। নক্ষত্রটির নাম কেআইসি ৮৪৬২৮৫২। ২০০৯ সালের মে মাসে তারা একে প্রথম দেখেন। বিভিন্ন ফোরামে শুরু হয় আলাপ- আলোচনা।

তারা বললেন, বৃহস্পতির মতো কোনো বস্তু নক্ষত্রের আলোতে এমন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তারা আরো বললেন, বস্তুটি অবশ্যই বিশাল হবে। সাধারণত একটি অতিক্রমণ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়, কিন্তু এটি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকল।

তারা আরো বললেন, গ্রহদের অতিক্রমণের সময় যেমন দেখা যায় তার সাথে এর মিল নেই। এটা দেখে মনে হল যে নক্ষত্রের আলো যে জিনিসে বাধা পাচ্ছে সেটা গ্রহদের মতো গোল নয়। এরপর আরো ক’বার এটা ঘটল। এরপর চুপচাপ থাকল কয়েক বছর।

এরপর ২০১১ সালের মার্চে আবার আমরা এটা দেখলাম। এবার নক্ষত্রের আলো একেবারে ১৫ শতাংশ ঢাকা পড়ে গেল। গ্রহদের তুলনায় এই পরিমাণ কিন্তু অনেক বেশি, গ্রহরাতো মাত্র এক শতাংশ ঢেকে রাখতে পারে। এছাড়াও ঘটানাটি অপ্রতিসম। এক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত আলো- আঁধারির খেলা দেখিয়ে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এরপর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটল না। এরপর আবার ঘটতে থাকলে অদ্ভুত সব কাণ্ড। নক্ষত্রের আলো বাধা পড়তে লাগল। এটা এবার স্থায়ী হল প্রায় একশো দিন। তত দিনে কেপলার মিশনের সমাপ্তির দিন এসে গেছে। এবারের আলোর বাধাগুলো বিভিন্ন রূপ নিল। কোনোটা খুব তীক্ষ্ণ, কোনোটা আবার বেশ চওড়া। এদের স্থায়িত্বও আলাদা আলাদা। কোনোটি এক বা দুই দিন টিকে থাকল, কোনোটা টিকে থাকল এক সপ্তাহেরও বেশি। সব মিলিয়ে এবারে নক্ষত্রের আলোর বাধার পরিমাণ দাঁড়াল ২০ শতাংশের বেশি। এর অর্থ হল, নক্ষত্রটির আলোকে যেই ঢেকে রাখছে তার ক্ষেত্রফল আমাদের পৃথিবীর চেয়ে ১০০০ গুণ বড়ো হবে।

এটা বড়ো একটি ঘটনা। অনুসন্ধানী দল এটা দেখার পর বিজ্ঞানীদের দেখালে তারা এতে উৎসাহী না হয়ে পারলেন না। বিজ্ঞানীরা প্রথমে এটা দেখে ভাবলেন, ‘এ আর এমন কী, নিশ্চয় উপাত্তে কোনো গণ্ডগোল আছে’। কিন্তু তীক্ষ্ণ চোখে দেখার পরেও উপাত্তে ভুল পাওয়া গেল না। ফলে মেনে নিতে হল, সত্যিই মহাকাশের কোনো কিছু নক্ষত্রের আলোকে ছড়াতে দিচ্ছে না। ফলে এ অবস্থায় নক্ষত্রটি সম্পর্কে আমরা সাধ্যমতো জানার চেষ্টা করলাম, যাতে কোনো সমাধান পাওয়া যায় কি না তা দেখা যায়। অনুসন্ধানী দলও লেগে রইল একই কাজে।

কেউ বললেন, এমনতো হতে পারে যে নক্ষত্রটি খুব নতুন এবং এটি যে ঘূর্ণায়মান মেঘ থেকে সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো এর চারপাশে বিদ্যমান আছে। অন্য কেউ বলল, নক্ষত্রটি থেকে ইতোমধ্যেই গ্রহের জন্ম হয়েছে এবং এরকম দুটি গ্রহের সংঘর্ষ হয়েছে, যেমনিভাবে পৃথিবী ও চাঁদ সৃষ্টির সময় সংঘর্ষ হয়েছিল। এই দুটি তত্ত্বই উপাত্তের কিছু অংশের ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু সমস্যা হল, নক্ষত্রটি যে নতুন- এমন কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না। নক্ষত্রটি নতুন হলে এর আলোর উত্তাপ পাওয়া যেকোনো বস্তু জ্বলে উঠত, আর যদি গ্রহদের সংঘর্ষ হত, তবে অনেক ধূলিকণা দেখা যেত।

এর ফলে আরেকজন বললেন, হতে পারে যে অনেকগুলো ধূমকেতুর সমাবেশ খুব বেশি বাঁকা কক্ষপথে নক্ষত্রটির পাশ দিয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, এটা আমাদের পর্যবেক্ষণের সাথে মিলে যায়। এই তত্ত্বটি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। এক্ষেত্রে আমাদের চোখের সামনে শত শত ধূমকেতু থাকতে হবে। এবং এরা হল শুধু তারাই যারা আমাদের ও নক্ষত্রটির মাঝে এসে পড়বে। ফলে প্রকৃত সংখ্যা হবে অযুত অযুত ধূমকেতু। তবে সবগুলো ধারণার মধ্যেই এটিই সেরা। ফলে আমরা এটা মেনে নিয়ে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করলাম।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আমি যখন গবেষণাপত্রটি লিখছিলাম সেই সময়েই আমার দেখা হল সহকর্মী জেসন রাইটের সাথে। সেও কেপলারের উপাত্ত নিয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখছিল। ওর বক্তব্য হল, কেপলারের সূক্ষ্ম নজরের মাধ্যমে নক্ষত্রটির চারপাশে এলিয়েনদের স্থাপনা পাওয়া যাবে। কিন্তু পাওয়া গেল না। আমি তাকে আমাদের অনুসন্ধানী দলের পাওয়া অদ্ভুত তথ্যগুলো দেখালে ও বলল, ‘উফ, ট্যাবি। আমাকে আবার নতুন করে লিখতে হবে’।

তবে প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দুর্বল হয়ে পড়লে আমরা উৎসাহী হয়ে পড়লাম। আমরা পথ খুঁজতে লাগলাম কীভাবে এলিয়েন ব্যাখ্যা বাদ দেওয়া যায়। ফলে আমরা এসইটিআই( Search for Extraterrestrial Intelligence) এর আমাদের একজন সহকর্মীকে এর দিকে মনোযোগ দিতে রাজি করালাম। গ্রিন ব্যাংক পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নক্ষত্রটিকে দেখার প্রস্তাব পেশ করলাম আমরা।

কয়েক মাস পর এই কথা চলে গেল প্রেসের কানে। শুধু এই একটি নক্ষত্র নিয়ে দশ হাজার নিবন্ধ লেখা হয়ে গেল।

এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন, ট্যাবি, তাহলে কি এর পেছনে সত্যিই এলিয়েন দায়ী? আচ্ছা, এমন একটি সভ্যতার কথা কল্পনা করুন যারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। এই ক্ষেত্রে এরা নিজেদের গ্রহের সব শক্তি ব্যবহার করে শেষ করে ফেলবে। তাহলে এখন এরা শক্তি পাবে কোথায়? আমাদের সূর্যের মতো তাদের গ্রহও কিন্তু একটি নক্ষত্রকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। এখন তারা যদি এই নক্ষত্র থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে তবে শক্তির চাহিদা মিটে যায়। অতএব তারা বিশাল স্থাপনা তৈরি করবে। দৈত্যাকার সোলার প্যানেলের সাইজের এই বিশাল কাঠামোগুলোকে বলা হয় ডাইসন বলয় (Dyson Sphere)।

চিত্রঃ  শিল্পীদের উর্বর কল্পনায় ডাইসন বলয়ের নানান রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে।


ব্যাপারটাকে এভাবে দেখা যায়। চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান হল ১ মিলিয়নের (১০ লাখ) চার ভাগের এক ভাগ। আর সবচেয়ে সহজ হিসাব অনুসারে এই ডাইসন বলয়দের সাইজ এর ১০০ গুণ। এটা বেশ বড়ো বটে। এখন মনে করুন এমন কিছু একটা একটি নক্ষত্রকে ঘিরে আছে। এমন জিনিসের পক্ষে উপাত্তের মধ্যে ব্যতিক্রম ও অস্বাভাবিক কিছু নিয়ে আসা খুবই সম্ভব।

কিন্তু আবার মাথায় রাখতে হবে যে এলিয়েনদের এই বিশাল স্থাপনাকেও কিন্তু পদার্থবিদ্যার সূত্র মানতে হবে। যে কোনো কিছুই অনেক বেশি শক্তি ব্যবহার করতে চাইবে তাকে ফলশ্রুতিতে অনেক বেশি তাপ সৃষ্টি মেনে নিতেই হবে। কিন্তু এমন কিছু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তবে আবার হতেই পারে যে বিকিরণ পৃথিবীর দিকে ঘটছে না।

আরেকটি ধারণাও আছে, আর এটি খুব প্রিয়ও বটে! আমরা হয়ত মহাকাশের একটি মহাযুদ্ধের সাক্ষী হয়েছি, যেখানে একটি গ্রহকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও অনেক ধূলিকণার সৃষ্টি হবার কথা। তবে আমরা যদি এলিয়েনদের অস্তিত্ব স্বীকার করেই নেই, তাহলে এটাই বা মেনে নিতে বাধা কোথায় যে তারা সব ধূলিকণা সাফ করে ফেলেছে!

চিত্রঃ নক্ষত্রের এলাকায় কোন মহাযুদ্ধ চলছে নাতো!

হুম! কল্পনার ঘোড়া বেশ দ্রুতবেগেই চলছে!

আসলে আমরা এমন এক অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, যাতে আমাদের অজানা কোন প্রাকৃতিক ব্যাখ্যাও থাকতে পারে, আবার থাকতে পারে অজানা কোনো প্রক্রিয়ায় এলিয়েনের হাতও। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে অবশ্য আমি প্রাকৃতিকই ব্যাখ্যার পক্ষেই থাকব। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝবেন না। এলিয়েন পেলে আমিও কারো চেয়ে কোন অংশে কম খুশি হব না। বাস্তবতা এ দুটোর যেটাই হোক, তা যে মজার হবে তাতে একদম সন্দেহ নেই।

এখন সামনে কী হবে? আমাদেরকে এর প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। তবে আমাদের মতো পেশাদার জ্যোতির্বিদদের হাতে হাতিয়ার কমই আছে। অন্য দিকে, কেপলার আছে অন্য একটি মিশনে। 
তবে খুশির খবর হল, স্বেচ্ছাসেবীদের দলগত অনুসন্ধান থেমে নেই। নিজস্ব ব্যাকইয়ার্ড টেলিস্কোপ দিয়ে শখের জ্যোতির্বিদরা একে পর্যবেক্ষণ করছেন। কী ঘটবে তা চিন্তা করে আমি খুব পুলকিত বোধ করছি।

সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল, কম্পিউটার কখনোই এই নক্ষত্রটিকে খুঁজে পেত না। এটিতো এমন কিছু খুঁজছিলই না। আমরা যদি এমন আরেকটি নক্ষত্র খুঁজে পাই তবে কেমন হবে? আর না পেলেই বা কেমন হবে?  
[দর্শকের হাত তালির মাধ্যমে শেষ হয় টেড টকের আলোচনা]

সামনে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে জ্যোতির্বিদ তাবেথা বয়াজিয়ান খুব উৎসুক ছিলেন। আলোচনাটি ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। এত দিনে সত্যিই দারুণ আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে।

আগস্টের ৩ তারিখে দুজন জ্যোতির্বিদ আরো কিছু প্রমাণ যোগ করে দেখিয়েছেন যে নক্ষত্রটি আসলেই বড়ো অদ্ভুত। নাসার কেপলার স্পেইস টেলিস্কোপ থেকে সংগৃহীত উপাত্ত নিয়ে বেনজামিন মনটেট ও জোশুয়া সাইমন তাদের গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা যাচ্ছে যে নক্ষত্রটি অস্বাভাবিক হারে উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে।

এ বছরের শুরুতে লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ ব্রেডলি শেফারও একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। এখানে তিনি অতীতের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখান যে গত এক শতাব্দী ধরেই নক্ষত্রটিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদী অনুজ্জ্বলতা প্রদর্শন করেছে। তাঁর মতে এর অর্থ হল, এলিয়েনরা বিশাল কোনো স্থাপনা গড়ে তুলছে।

তখন তাঁর কথাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া হলেও এখন সেটার পক্ষেই প্রমাণ শক্ত হল। এখন দেখা যাচ্ছে যে ২০০৯ সালের পর থেকে নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা ১০০০ দিনের জন্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে গেছে। এই হার শেফারের সময়ের হারের প্রায় দ্বিগুণ।

ফলে রহস্য ঘনীভূতই হচ্ছে। দেখা যাক, সামনে কী ঘটে? 

নোট-১:
নক্ষত্রটি কোথায় আছে? 

রাতের আকাশের সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা বুঝতে পারবেন এটি আকাশের কোন দিকে আছে। এর অবস্থান হল আকাশের সিগনাস বা বকমণ্ডলীতে। পুরো আকাশের সার্বিক অঞ্চলকে যে ৮৮টি তারামণ্ডলীতে ভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হল সিগনাস। বর্তমান সময়ে এই মণ্ডলীটি খুব সহজেই দেখা যায়। সন্ধ্যা নামলেই চলে আসে প্রায় মাথার উপরে। সেপ্টেম্বর মাসে রাত নয়টার দিকে তারামণ্ডলী মাথার উপর থাকে। অক্টোবর, নভেম্বর মাসের দিকে থাকে পশ্চিম আকাশে।

আরো পড়ুনঃ
তারামণ্ডলী কাকে বলে?

এর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ডেনেব বা পুচ্ছ কাছাকাছি অবস্থিত অপর দুটি নক্ষত্র- শ্রবণা ও অভিজিতের সাথে মিলে একটি ত্রিভুজ গঠন করেছে, যার নাম সামার ট্রায়াঙ্গেল। মণ্ডলীর চারটি প্রধান উজ্জ্বল তারাকে নর্দার্ন ক্রস বলেও ডাকা হয়।

ট্যাবির নক্ষত্র 

মণ্ডলীর দুটো উজ্জ্বল তারা- ডেনেব ও ডেল্টা সিগনির প্রায় মাঝে আমাদের রহস্যময় তারাটি অবস্থিত। তবে একে খালি চোখে দেখা যাবে না। সর্বোচ্চ +৬ আপাত উজ্জ্বলতার নক্ষত্রকে খালি চোখে দেখা যায়। এর আপাত উজ্জ্বলতা হল +১১.৭। উল্লেখ্য, আপাত উজ্জ্বলতার মান বেশি হলে বুঝতে হবে নক্ষত্রটি তত কম উজ্জ্বল। সূর্যের আপাত উজ্জ্বলতা হল নেগেটিভ ২৭, চাঁদের নেগেটিভ ১২, শুক্র গ্রহের নেগেটিভ ৪ ইত্যাদি। ফলে একখান ভালো মানের টেলিস্কোপ যোগাড় করতে পারলে নক্ষত্রটির পেছনে আপনিও নজরদারী চালাতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ 
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/?s=tabby
২। http://earthsky.org/space/tabbys-star-more-weirdness
৩। http://www.ted.com/talks/tabetha_boyajian_the_most_mysterious_star_in_the_universe/transcript?language=en#t-364057
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/KIC_8462852
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৬

আমরা এতদিন জানতাম, মহাবিশ্বের নিপুণ কাঠামো টিকে আছে চারটি মৌলিক বলের কল্যাণে। এরা হল মহাকর্ষ, তড়িচ্চুম্বকীয় এবং সবল ও দুর্বল নিউক্লিয় বল। 


কিন্তু গত এপ্রিলে হাঙ্গেরির এক দল পদার্থবিদ সর্বপ্রথম সম্ভাব্য নতুন আরেকটি (পঞ্চম) মৌলিক বলের প্রমাণ পান। এই বলটির মাধ্যমে দীর্ঘ দিন ধরে জমে থাকা মহাবিশ্বের অনেকগুলো রহস্যের সমাধান হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ডার্ক ম্যাটার রহস্যের সমাধানেরও ইঙ্গিত। ব্যপারটি ইদানিং আবারও আলোচনায় এল।  

গত ১৪ আগস্ট ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইরভাইন) একটি দল একই মতের পক্ষ নিয়ে একটি গবেষণা- পত্র প্রকাশ করেন। তাঁরা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে সেই ফলাফলগুলো বিচার করে দেখলেন যে সত্যিই নতুন একটি বলের সম্ভাবনা উন্মুক্ত হয়েছে। প্রধান গবেষক জোনাথন ফেং বলেন,
সত্য হয়ে থাকলে এটা হবে একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার। আরো পরীক্ষার মাধ্যমে যদি এর সত্যতা পাওয়া যায় তবে পঞ্চম বলের এই আবিষ্কার মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা আমূল পাল্টে দেবে। মৌলিক বলদের একীভবন ও ডার্ক ম্যাটার গবেষণার ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা থাকবে। 
বিষয়টি প্রথম হাঙ্গেরিয়ান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এর এক দল গবেষকের নজরে আসে। তাঁরা উচ্চ-শক্তির প্রোটন রশ্মিকে লিথিয়াম- ৭ এর দিকে নিক্ষেপ করে ধ্বংসাবশেষের সাথে খুবই হালকা একটি অতিপারমাণবিক কণিকার দেখতে পান।  তাঁরা এটাকে তখন একটি নতুন ধরনের বোসন কণিকা মনে করেছিলেন। এটা ছিল ইলেকট্রনের চেয়ে মাত্র ৩০ গুণ ভারী। কণাপদার্থবিদ্যার স্ট্যান্ডার্ড মডেলে এর কোনো পূর্বাভাস ছিল না। মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে এখন পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড মডেলের এক গুচ্ছ সমীকরণই সবচেয়ে মোক্ষম ভূমিকা পালন করছে।

আরো পড়ুনঃ
স্ট্যান্ডার্ড মডেলের পরিচয়

স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে, প্রত্যেকটি মৌলিক বলেরই নিজ নিজ বোসন কণিকা রয়েছে। সবল বলের বাহক হচ্ছে গ্লুওন, তড়িচ্চুম্বকীয় বলকে বহন করে আলোক কণা বা ফোটন এবং W ও Z বোসন করে দুর্বল নিউক্লিয় বল বহনের কাজ। কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড মডেলের দুর্বলতা হল, আমরা এখনো মহাকর্ষের জন্যে কোনো বোসন কণিকা খুঁজে পাইনি। তবে অনুমান করা হচ্ছে মহাকর্ষের ক্ষেত্রে বল বহনের কাজটি করবে গ্র্যাভিটন নামক কণাটি। একে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ডার্ক ম্যাটারের ব্যাখ্যা দিতেও ব্যর্থ স্ট্যান্ডার্ড মডেল।

হাঙ্গেরির দলটি প্রথমে মনে করেছিলেন, এই কণিকাটি হয়ত কোনো ধরনের ডার্ক ফোটন হবে। ডার্ক ম্যাটারের ক্রিয়া বহনকারী কল্পিত কণিকাকে বলা হয় ডার্ক ফোটন। তাঁদের গবেষণা প্রকাশের পর থেকেই বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ফেং বলেন,
উনারা দাবি করতে পারেননি যে এটা নতুন একটি মৌলিক বলের ফলে হয়েছে। তাঁদের মতে এই বাড়তি জিনিসটি ছিল একটি নতুন কণিকার প্রতিক্রিয়া, কিন্তু তাঁরা নিশ্চিত ছিলেন না যে এটা কি বস্তুকণা (matter particle) ছিল নাকি বলবাহী (force-carrying) কণা ছিল।

বিষয়টি আরো বিস্তারিত জানতে ফেং তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে প্রাথমিক উপাত্তগুলো বিশ্লেষণ করেন। পরীক্ষা করে দেখেন এই সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পরীক্ষাগুলোও। এরপরই শক্তিশালী তাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গেল যে এই নতুন প্রতিক্রিয়ার পেছনে বস্তুকণা বা ডার্ক ফোটন- কারোরই হাত নেই। বরং তাঁদের হিসাব- নিকাশ থেকে দেখা গেল যে এটা প্রকৃতির পঞ্চম বলের নিজস্ব বোসন হতে পারে। ডার্ক ম্যাটারসহ মহাবিশ্বের রহস্যময় নানান কিছুর ব্যাখ্যা এর মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে।

কাল্পনিক নতুন এই বোসনকে আপাতত বলা হচ্ছে প্রোটোফোবিক এক্স। এর বিস্ময়কর দিক হল, এটি শুধু ইলেকট্রন এবং নিউট্রনের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, তাও খুবই স্বল্প পাল্লায়, যার ফলে একে শনাক্ত করা খুবই কঠিন ছিল।

আরেক গবেষক টিমোথি টেইট বলেন,
এর আগে এই একই বৈশিষ্ট্যধারী কোনো বোসন কণিকা পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েনি। একে আমরা কখনো কখনো এক্স বোসন বলে থাকি, যেখানে এক্স অর্থ হল ‘অজানা’।‘

এই গবেষণাটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল মে মাসে। তখন এটি প্রকাশিত হয় প্রি-প্রিন্ট সাইট arXiv.org এ। কিন্তু এখন এর পিয়ার রিভিউ সম্পন্ন হবার পর এটি ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস এর মতো জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

তাহলে এখন পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত তা হল, আমরা একটি বিস্ময়কর কণা পেলাম, যাকে স্ট্যান্ডার্ড মডেল দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। তাত্ত্বিক হিসবা- নিকাশ বলছে এটি প্রকৃতির পঞ্চম মৌলিক বলের বাহক হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু এ বিষয়ে পরীক্ষামূলক প্রমাণ এখনো যথেষ্ট হয়নি। তবে সারা বিশ্বের গবেষকরা এর পেছনে লেগেছেন, যার ফলে আশা করা হচ্ছে এক বছরের মধ্যেই রেজাল্ট পাওয়া যাবে।

ফেং বলেন,
কণিকাটি খুব হালকা হবার কারণে এর প্রতিক্রিয়াও খুব দুর্বল। তবে সারা বিশ্বে গবেষকদের অনেকগুলো দল ছোট ছোট পরীক্ষাগারে কাজ করছেন। প্রাথমিক সেই ইঙ্গিতের কারণে সবাই এখন অন্তত এটুকু জানেন যে কোথায় খুঁজতে হবে।

কণিকাটি ভারী না হলেও প্রায় অর্ধ শতাব্দী যাবত এমন হালকা কণিকা তৈরি করার মতো প্রযুক্তি বিজ্ঞানীদের হাতে আছে।

কী হবে যদি সত্যিই পাওয়া যায় এই পঞ্চম বল?  আমরা এখনো সেটা থেকে বেশ দূরে আছি। তবে ফেং বলছেন যে বলটি তড়িচ্চুম্বকীয় এবং দুর্বল ও সবল নিউক্লিয় বলের সাথে যুক্ত হয়ে একটি সুপার ফান্ডামেন্টাল বল গঠন করতে পারে- যে বলটি এর নিজস্ব কণা ও বলের মাধ্যমে ডার্ক সেক্টরে প্রতিক্রিয়া করতে পারে।

তিনি আরো বলেন,
হতে পারে এই দুটি সেকটর অজানা কোনো উপায়ে একে অপরের সাথে সম্পর্ক রেখে চলছে।

হাঙ্গেরির এই পরীক্ষার ফলে হয়ত আমরা এই ডার্ক সেক্টরের বলকেই প্রোটোফোবিক বল হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। অন্য দিকে আবার ডার্ক ম্যাটারের প্রকৃতি বোঝার জন্যে পরিচালিত গবেষণার সাথেও এই ফলাফলের মিল রয়েছে। স্টার ওয়ারস মুভি সিরিজের দি ফোর্স এর অন্ধকার (ডার্ক) ও আলোকীয় অংশের সাথেও মিল আছে এর।

পুনশ্চ-১: এখন পর্যন্ত জানা মৌলিক বলসমূহ

চারটি মৌলিক বল ও তাদের কাজের ক্ষেত্র

প্রথম হল মহাকর্ষ। নিউটনের পর আইনস্টাইন তাঁর সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের মাধ্যমে মহাকর্ষের উন্নত রুপ প্রদান করেন ১৯১৫ সালে। তত্ত্বটি প্রযোজ্য মহাবিশ্বের বড়ো স্কেলের কাঠামোর ক্ষেত্রে। এখানে মহাকর্ষকে তুলে ধরা হয়েছে স্থান- কালের বক্রতা হিসেবে।

দ্বিতীয় প্রকার মৌলিক বল হল তড়িচ্চুম্বকীয় বল। বৈদ্যুতিক চার্জধারী কণারা এই বলের মাধ্যমে কাজ করে। অণু ও পরমাণুর জগৎ নিয়ন্ত্রণ করে এই বল।

তৃতীয় মৌলিক বল সবল নিউক্লিয় বলের (সংক্ষেপে শুধু সবল বল) কাজ হল পরমাণুর নিউক্লিয়াস গঠনকারী কণাগুলোকে একত্রে ধরে রাখা। আর তেজস্ক্রিয় বিকিরণের জন্যে দায়ী হল চতুর্থ মৌলিক বল দুর্বল নিউক্লিয় বল।

ম্যাক্সওয়েল, ফ্যারাডে ও ওয়েরেস্টেডদের হাত ধরে ১৮৩০ এর দশকে তড়িৎ ও চুম্বক বলকে একীভূত করা সম্ভব হয়। ১৮৬৪ সালে ম্যাক্সওয়েল বল দুটির সমন্বিত ক্ষেত্র তত্ত্ব (ফিল্ড থিওরি) প্রকাশ করেন। ম্যাক্সওয়েল দেখেছিলেন তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ সব সময় একটি নির্দিষ্ট বেগে চলে। সেই বেগটি হয়ে দাঁড়াল আলোর বেগে সমান। আলোর বেগ ধ্রুব কেন তা তখন মাথায় না ঢুকলেও সেই ধ্রুবতা কাজে লাগিয়েই ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন স্থান- কালকে একত্র করে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব তৈরি করেন। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব সন্ধি করলেও সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব এখনো অন্য বলদের সাথে একমত হয়নি। ভাইল, কালুজা এবং স্বয়ং আইনস্টাইন নিজেও এর পেছনে সময় দিয়ে গেছেন, কিন্তু সফলতার মুখ মেলেনি এখনো।

অন্য দিকে ১৯৬০ এর দশকে শেলডন গ্যাশো, আব্দুস সালাম ও স্টিভেন উইনবার্গের হাত ধরে তড়িচ্চুম্বকীয় এবং দুর্বল নিউক্লিয় বলকে একত্র করার থিওরি পাওয়া যায়। ১৯৭৩ সালে আসে তাঁদের মতের পক্ষে পরীক্ষামূলক প্রমাণ। সমন্বিত তত্ত্বটিকে এখন ইলেকট্রৈউইক থিওরি বলা হচ্ছে।  ১৯৭৯ সালে তাঁরা এ জন্যে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম সার্নের গবেষণাগারে ডাব্লিও এবং জেড বোসন তৈরি করা সম্ভব হয়।

ইলেকট্রোউইক থিওরিকে সবল বলের সাথে একই সাথে ব্যাখ্যা করার জন্যে গ্ল্যাশো ও জর্জি প্রথম একটি গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরি দেন। পরে সালাম ও জোগেশ পাটিও একই রকম মডেল দাঁড় করান। তৈরি হয় এরকম আরও নানান মডেল। তবে এসব মডেলের পরীক্ষামূলক প্রমাণ পেতে খুব উচ্চ শক্তির পরীক্ষার প্রয়োজন বলে তা এখনো সম্ভব হয়নি।

কিন্তু মহাকর্ষ এখনো অন্যদের সাথে সন্ধি করার কোনো রকম মানসিকতা দেখাচ্ছে না। এ অবস্থায় আরেকটি বল পাওয়া গেলে থিওরি অব এবরিথিং প্রস্তুত করতে খাটুনি একটু বাড়বে বৈকি। অবশ্য আগেই আমরা ইঙ্গিত পেয়েছি যে একে অন্যদের সাথে মিলিয়ে নেওয়া মহাকর্ষের মতো কঠিন হবে না। 

পুনশ্চ-২: নতুন মৌলিক বলটি সম্পর্কে এখনই শতভাগ নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। অনেক সময়ই এমন হয় যে তথ্য-উপাত্তকে ঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে না পারার অভাবে ভুল জিনিসকে প্রমাণিত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। যেমন কিছু দিন আগেই গুঞ্জন উঠেছিল যে নতুন একটি মৌলিক কণিকা খুঁজে পাওয়া গেছে। আগস্টের শুরুতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সার্ন অফিসিয়ালি জানিয়ে দিয়েছে, তথ্যটা সঠিক নয়। আপাতত কোনো মৌলিক বল পাওয়া যায়নি।

২০১১ সালে সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসে সার্নের গবেষণাগারে দুই দুইবার পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা হয়, আলোর চেয়ে বেশি বেগ পাওয়া গেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীদের সন্দেহ যায়নি। পরে ২০১২ সালের মার্চে এসে দেখা যায়, পরীক্ষায় ভুল ছিল।

তবে মৌলিক বল খুঁজে পাবার এ ব্যাপারটি সেরকম নয় বলেই মনে হয়। অন্তত এর ভাবসাব দেখে তাই মনে হচ্ছে। কারণ এটি প্রতিষ্ঠিত কোনো কিছুর সরাসরি বিরুদ্ধে যাচ্ছে না। তাই আমরা চেয়ে থাকি নতুন কিছুর আশায়। 

লেখাটি ইতোপূর্বে জিরো টু ইনফিনিটি ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সংখ্যায় প্রচ্ছদ নিবন্ধ হিসেবে ছাপা হয়েছিল। 

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/space/physicists-confirm-a-possible-5th-force
২। http://www.sciencealert.com/new-study-confirms-physicists-might-have-spotted-a-fifth-force-of-nature
৩। http://www.sciencealert.com/physicists-think-they-might-have-just-detected-a-fifth-force-of-nature
৪। http://arxiv.org/abs/1608.03591 
৫। https://en.wikipedia.org/wiki/Unified_field_theory#History

Category: articles

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬


জুনো মহাকাশযানের ক্যামেরায় ধরা পড়া বৃহস্পতি গ্রহের দক্ষিণ মেরুর ছবি 

২০০০ সালের দিকে ক্যাসিনি মিশনের সময় মহাকাশযান ক্যাসিনিও যেটা পারেনি, ২০১৬ সালের ২৭ শে আগস্টে এসে মহাকাশযান জুনো সেটাই করে দেখাল!

কারণ, বৃহস্পতি নামক গ্যাস দৈত্যখানার (gas giant) দক্ষিণ মেরু দেখিতে পারে নাই কেহ এযাবতকাল পর্যন্ত এতখানি চক্ষু মেলিয়া! (গুরু-চণ্ডালী দোষ মাফ করবেন, আবেগ ধরে রাখতে পারিনি)

অবশেষে মহাকাশযান জুনো এতদিনের এই অসাধ্য সাধন করে দেখাল এবং বৃহস্পতির দক্ষিণ মেরুর খুব পরিষ্কার একটি ছবি আমাদেরকে উপহার দিল।

এ সময় মহাকাশযান জুনো বৃহস্পতির মেরু অঞ্চল থেকে মাত্র ৫৮ হাজার ৭০০ মাইল উপরে ছিল।

এরই মাধ্যমে এই প্রথম বৃহস্পতির দক্ষিণ মেরু অঞ্চল সম্পর্কে এত স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া গেল! বৃহস্পতির বিষুবীয় অঞ্চলে যেমন পরিচিত "বেল্ট" বা "জোন" এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, মেরু অঞ্চলে ঠিক তেমনটা থাকে না। এখানে বরং বিভিন্ন আকারের ছোটখাটো ঝড়ের দাগ খুঁজে পাওয়া যায়। এই ঝড়গুলোর কোনটা ঘড়ির কাঁটার দিকে আবার কোনটা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে! এগুলো দেখতে অনেকটা পৃথিবীর "হ্যারিকেন" এর মত হয়।

২০০০ সালে মহাকাশযান ক্যাসিনি শনি গ্রহে যাবার পথে বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অংশের ছবি তুলেছিলে। কিন্তু এতটা উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সেটি করা যায়নি।

সূত্রঃ
১। http://www.nasa.gov/image-feature/jpl/pia21032/jupiter-down-under
Category: articles

রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬

জুনো মহাকাশযান বৃহস্পতির ঘূর্ণায়মান মেঘের মাত্র ২৫০০ মাইলের এর মধ্যে পৌঁছে গেল। এর আগে অন্য কোনো মহাকাশযানই গ্রহটির এত কাছে যেতে পারেনি।
বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মহকাশযান 'জুনো'। 

নাসার বক্তব্য অনুসারে,
সবচেয়ে কাছে অবস্থানের সময় জুনো বৃহস্পতির ঘূর্ণায়মান মেঘের ২৫০০ মাইল (বা ৪২০০ কিমি.) উপরে ছিল। এ অবস্থায় এর বেগ ছিল গ্রহটির সাপেক্ষে ঘন্টায় ১৩০ হাজার মাইল। 

জুনোর সবগুলো যন্ত্রপাতি কার্যকর হবার পর গ্রহটির কাছ ঘেঁষে এটাই প্রথম ফ্লাইবাই। এই ফ্লাইবাইটি ছিল বৃহস্পতির উত্তর গোলার্ধের পাশ দিয়ে। যানটির গ্রহটিকে মোট ৩৬ বার ফ্লাইবাই করার কথা রয়েছে।বৃহস্পতির সম্পূর্ণ একটা ইমেজের জন্য প্রতিবার ফ্লাইবাই এর সময় এটি বৃহস্পতির আলাদা আলাদা এক একটি অঞ্চলের কাছ দিয়ে যাবে, যাত ওই সময় জুনো ওই এলাকার একটা পরিষ্কার ইমেজ তৈরি করতে পারে।

যানটির প্রথম ফ্লাইবাই এর সময় তোলা। এটি এখন পর্যন্ত বৃহস্পতির সবচেয়ে কাছ থেকে তোলা ছবি
যানটি জুলাই মাসের ৪ তারিখে বৃহস্পতির কক্ষপথে প্রবেশ করে।

আরো পড়ুনঃ 
☛ এক নজরে বৃহস্পতি

ভিডিওতে জুনো মহাকাশযানঃ

Category: articles

শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১৬

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ১ লক্ষ বার ঘুরে ফেলল। এর যাত্রা শুরু ১৯৯৮ সালের ২০ নভেম্বর। ১ লক্ষ বার প্রদক্ষিণের মাইলফলক অর্জিত হয় এ বছরের মে মাসের ১৬ তারিখে। এর মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব হল ২.৬ বিলিয়ন মাইল বা ৪ বিলিয়ন কিমি.। এই চলাচল যদি সরল রেখায় হত তবে মোট অতিক্রান্ত দূরত্ব হত পৃথিবী থেকে নেপচুনের দূরত্বের সমান, অথবা পৃথিবী থেকে মঙ্গলের দূরত্বের দশ গুণ।
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলছে আইএসএস
শুরু থেকেই এই স্টেশন পৃথিবীর অনেকগুলো দেশকে ঐক্যবদ্ধ করতে ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে মহাকাশ গবেষণায় আমেরিকা ও রাশিয়ার এক হওয়া এর বড়ো অর্জন।
১৯৯৮ সালে রুশ মডিউল জারিয়া ও আমেরিকান মডিউল ইউনিটির সমন্বয়ে তৈরি হয় বর্তমান মহাকাশ স্টেশন
১৮ বছর পরে বর্তমানে এসে আইএসএস অনেকগুলো জাতির অংশগ্রহোণে নির্মিত সবচেয়ে জটিল স্থাপনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষের তৈরি সবচেয়ে ব্যয়বহুল স্থাপনাও এটি। আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ, জাপান ও কানাডার সমন্বিত অর্থায়নে তৈরি এই যান নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ। 
মাইক্রোগ্র্যাভিটি অবস্থানে একমাত্র বাসযোগ্য যান এই মহাকাশ স্টেশন। এর অনন্য ল্যাবে কী পরিমাণ গবেষণা চালানোর সুযোগ হচ্ছে তা নিয়ে একটা বই লিখে ফেলা যাবে। স্টেশনটি নিজের বিদ্যুতের ব্যবস্থা নিজেই করে। উৎস হচ্ছে সূর্য। 

সময় সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে খালি চোখেই মহাকাশ স্টেশনকে দেখা যায়। ঢাকা থেকে কীভাবে দেখা যাবে তা আমাদের সাইটে দেখানো আছে। ডান পাশের সাইডবারে দেখুন (মোবাইল থেকে হলে স্ক্রোল করে নিচে নেমে)
সোর্সঃ Earthsky

Category: articles

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

অধিকাংশ অন্যান্য গ্যালাক্সির মতই এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বাস করছে একটি বিশাল ভরযুক্ত ব্ল্যাক হোল। জ্যোতির্বিদদের ধারনা, এটি নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে এখন বিশ্রাম নিচ্ছে।
শত শত গ্যালাক্সির ভীড়ে এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির ছবি। এরই কেন্দ্রে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে আছে একটি ব্ল্যাক হোল। 
উপরের ছবির সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং বড় গ্যালাক্সিটিই এনজিসি ৪৮৮৯। ৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে কোমা গ্যলাক্সি ক্লাস্টারে এর অবস্থান। এর কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটি আগের অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এর ভর সূর্যের ২১ বিলিয়ন (বা ২ হাজার ১০০ কোটি) গুণ।
অন্য দিকে এর ঘটনা দিগন্তের ব্যাস ১৩ হাজার কোটি কিলোমিটার। এই পাল্লাটি সূর্য থেকে নেপচুনের কক্ষপথের দূরত্বের ১৫ গুণ।  ঘটনা দিগন্ত হচ্ছে একটি ব্ল্যাক হোলের বাইরে সেই অঞ্চল যেখান থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে এর ভেতরের কিছু দেখা সম্ভব হয় না। অন্য দিকে, আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে থাকা সম্ভাব্য ব্ল্যাক হোলখানির ভর সূর্যের ৪০ লাখ গুণ। এর ঘটনা দিগন্তের পাল্লা বুধের কক্ষপথের এক পঞ্চমাংশ মাত্র।
কিন্তু আলোচ্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের রাক্ষুসে আচরণের সমাপ্তি ঘটেছে। এনজিসি ৪৮৮৯ এর খাবার কক্ষে এটি এখন বিশ্রামরত। বর্তমানে এর আশেপাশে নতুন জন্মানো তারকারা শান্তিতে বেড়ে উঠছে এবং একে প্রদক্ষিণও করছে। 
অন্য ব্ল্যাক হোলের মতই এটি বিভিন্ন গ্যালাকটিক বস্তু যেমন গ্যাস, ধূলিকণা ও অন্যান্য ধ্বংশাবশেষ সাবাড় করে করে একটি আক্রেশন ডিস্ক (Accretion disk) গঠন করে। গ্যাস-ধূলিকণার ঘুর্ণায়মান এই চাকতিকে ব্ল্যাক হোলটি তীব্র অভিকর্ষীয় ত্বরণে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। পরিণামে চাকতির তাপমাত্রা উঠে যায় লক্ষ ডিগ্রি পর্যন্ত। এই উত্তপ্ত বস্তু কতৃক নির্গত হয় দানবীয় এবং শক্তিশালী জেট বা ফোয়ারা । 
সক্রিয় থাকায় সময় জ্যোতির্বিদরা ব্ল্যাক হোলটিকে কোয়াসার শ্রেণিতে নাম তালিকাবদ্ধ করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিস্ক মিল্কিওয়ের চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তি নির্গত করত। ডিস্কটি ব্ল্যাক হোলের খাবারের যোগান দিয়ে দিতে দিতে এক পর্যায়ে আশেপাশের সব গ্যালাকটিক বস্তু নিঃশেষ করে ফেলে। ফলে, এটি এখন সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তবু, রহস্যময় কোয়াসাররা মহাবিশ্বের শৈশবকালে কিভাবে গঠিত হয়েছিল তা জানতে ব্ল্যাক হোলটি জ্যোতির্বিদদের গবেষণার কাজে আসবে। 
আলো বেরিয়ে আসতে পারে না বলে ব্ল্যাক হোলকে সরাসরি দেখা না গেলেও পরোক্ষ উপায়ে এর ভর বের করা যায়। এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির চারদিকে প্রদক্ষিণরত নক্ষত্রদের বেগ পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে। এই বেগ থেকেই জানা গেছে ব্ল্যাক হোলটির বিশাল ভরের তথ্য।  


Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

অনুসন্ধান চলছিল ১০০ বছর ধরে। এবারে আন্তর্জাতিক এক দল পদার্থবিদ ঘোষণা দিলেন, পাওয়া গেছে মহাকর্ষ তরঙ্গ (Gravitational wave)। ফলে সত্যি হল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী। এর আগে স্থান-কালের বক্রতার প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করা গেলেও বিশাল ভরের বস্তুরা এই বক্রতা যে তরঙ্গের মাধ্যমে  চারপাশে ছড়িয়ে দেয় তাকে সরাসরি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

লিগো অবজারভেটরির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড রিজ ঘোষণাটি দেন। তিনি একে ৪০০ বছর আগে গ্যালিলিওর টেলিস্কোপ আবিষ্কারের সাথে তুলনা করেন। এর কারণ হতে পারে, তখন টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্যালিলিও মহাকাশের অনেক অজানাকে নিয়ে আসেন চোখের সামনে। একইভাবে বর্তমানে আবিষ্কৃত মহাকর্ষীয় তরঙ্গও মহাবিশ্বের একটি রহস্যময় বস্তুকে নিয়ে এল ধরাছোঁয়ার মধ্যে।

মহাকাশের নতুন এক দিগন্ত খুলে দেওয়া এই আবিষ্কার যে নোবেল পুরস্কার পাবার যোগ্য তা নিয়ে খুব বেশি সন্দেহ নেই।

মহাকর্ষ তরঙ্গ সৃষ্টির জন্যে প্রয়োজন উত্তাল কোন ঘটনা। এটা হতে পারে সুপারনোভা, দুটি নিউট্রন নক্ষত্রের সংঘর্ষ বা ব্ল্যাক হোলের মিশ্রণ। মহাবিশ্বের ফেব্রিকের এই কম্পন বা স্থান-কালের বক্রতা চলে আলোর বেগে। পৃথিবীতে পৌঁছতে পৌঁছতে একটি পরমাণুর ব্যাসের বিলিয়ন ভাগের এক ভাগ হয়ে যায় এটি। এ কারণেই এদেরকে ধরতে বিজ্ঞানীদের খুব বেশি চতুরতার পরিচয় দিতে হয়েছে।
এর পেছনে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে লিগো- Laser Interferometer Gravitational-Wave Observatory। এটি অনলাইনে আসে ২০০২ সালে। কিন্তু সফলতা আসছিল না। পরে লিগো এর যান্ত্রিক সংবেদনশীলতা বাড়ায় ১০ গুণ। ফলে, উন্নততর লিগো আগের চেয়ে ১০ হাজার গুণ বেশি আয়তনের অঞ্চল থেকে মহাকর্ষ তরঙ্গ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এ কারণে নতুন পরিস্থিতিতে সাফল্যের সম্ভাবনা বেড়ে গিয়েছিল।
এই সাফল্য মহাবিশ্বের আরেকটি জানালা খুলে দিল আমাদের সামনে। এটা ঠিক যেন এ রকম যে আগে আমরা অন্ধ ছিলাম, আর এখন দেখতে পাচ্ছি মহাবিশ্বকে। এই তরঙ্গ কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাক হোল, নিউট্রন স্টার এবং শিশু মহাবিশ্ব নিয়ে নতুনভাবে গবেষণা করতে পারবেন যা আগে ছিল অচিন্তনীয়।
এটা আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের সর্বশেষ বড় পূর্বাভাস।

সূত্রঃ Earth sky
Category: articles

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

মঙ্গল গ্রহ এর উপগ্রহ ফোবসকে হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে এতে ওর লাভই হবে।
উপগ্রহটি এর চারদিকে বলয়ের (ring) রূপ নিবে, অনেকটা শনির বলয়ের মত। অবশ্য এটা ঘটতে সময় লাগবে প্রায় কোটি বছর। এ সময় ফোবসের উপাদান মঙ্গলের ছিটকে পড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়ে তৈরি হবে বলয়।
এর ফলে দেরিতে হলেও মঙ্গল যোগ দিবে শনি, বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের দলে। উল্লেখ্য, আমরা সাধারণত জানি, বলয় শুধু শনি গ্রহের আছে। কিন্তু বাস্তবে উপরোক্ত গ্রহদেরও বলয় আছে। সেটা অবশ্যই শনির তুলনায় কম লক্ষ্যণীয়।

সূত্রঃ
১। Earth Sky
২। Universe Today 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...