Advertisement

শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬

লিখেছেনঃ বাংলাদেশ সায়েন্স ক্লাব 

এতদিন যা জেনেছেন মাথা থেকে এক্ষুণি ঝেড়ে ফেলুন। বৃহস্পতি গ্রহ যেই বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে সেটা মহাকাশের একটা শুন্যস্থান! শুনে হয়ত অবিশ্বাসে চোখ কপালে ওঠে গেছে। তবে এটাই সত্য।
NASA থেকে পাওয়া সাম্প্রতিক তথ্য এটাই বলছে ।


আমি আজ এর বিস্তারিত আলোচনা করব।

শুরুতেই আমাদের যেটা জেনে নিতে হবে সেটা হচ্ছে  বেরিকেন্দ্র (The barycenter)।
বলবিদ্যায় " Two body problem " এ আমরা এই Barycenter এর ধারণা পেয়ে থাকি। বলবিদ্যা বলছে,
যখন দুইটা বস্তু একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরতে চায় বা ঘুরে থাকে, তখন কম ভরের বস্তুটি বেশি ভরের বস্তুর চারপাশে ঘুরে না বরং দুটি বস্তুই একটা নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরে। 

যে বস্তুর ভর তুলনামূলক ভাবে বেশি হবে, বেরিকেন্দ্র ঠিক তার কেন্দ্রের কাছাকাছি অবস্থান করবে।
একটু পরিষ্কার করে বললে, পৃথিবীর চারপাশে চাঁদ ঘুরছে, তার মানে এই নয় যে চাঁদ পৃথিবীর কেন্দ্র বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। বরং চাঁদ এবং পৃথিবী উভয়েই একটা নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। চাঁদের ভর যদি পৃথিবীর তুলনায় অত্যন্ত নগন্য বা নেগলিজিবল হতো তাহলে এই বেরিসেন্টার এর অবস্থান হতো পৃথিবীর কেন্দ্রে বা কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি ।

কিন্তু চাঁদ খানিকটা ভারি হবার দরুন এই বেরিকেন্দ্র পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে খানিকটা উপরে ( কেন্দ্র থেকে ৪৬৭১ কিমি উপরে ) । তবুও পৃথিবীর ব্যাসার্ধ যেহেতু ৬৩৭৮ কিমি, সেহেতু এই বেরিকেন্দ্র পৃথিবীর ভেতরেই অবস্থান করছে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, এই বেরিসেন্টারকে কেন্দ্রকরে পৃথিবীও তার নিজের কক্ষ পথে ঘুরছে ।

এবার ভেবে দেখুন...
যদি চাঁদের ভর দ্বিগুণ হতো তাহলে এই বেরিসেন্টার পৃথিবীর বুকে অবস্থান করতো ?
মোটেও না !

তখন এই বেরিসেন্টার থাকতো পৃথিবীর বাইরে খোলা আকাশের কোনো একটা স্থানে।
ঠিক অনুরূপ ঘটনাই ঘটছে সূর্য এবং বৃহস্পতির ক্ষেত্রে।

এদের বেরিসেন্টার এর অবস্থান সূর্যের পরিধির বাইরে খোলা আকাশের কোনো একটা বিন্দুতে !

বৃহস্পতি ও সূর্য

এটা আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলির মাঝে ব্যতিক্রম এক ঘটনা। অন্যান্য গ্রহদের জন্য আলাদা আলাদা বেরিসেন্টার গুলির অবস্থান সূর্য্যের কেন্দ্রের খানিকটা কাছাকাছি থাকলেও গ্রহরাজা বৃহস্পতির বেলায় সেটা খাটে না, অর্থাৎ এই বেরিকেন্দ্র অনেক দূরে চলে যায় এমনকি সূর্য্যের পরিধিরও বাইরে মহাশুন্যের কোনো একটা স্থানে গিয়ে অবস্থান করে।

তাই এখন থেকে মনে রাখতে হবে বৃহস্পতি গ্রহটি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না, বরং একটা খোলা বা শুন্য স্থানকে কেন্দ্র করে ঘুরছে মহাকাশে!
ব্যপারটা সত্যিই বড় অবাক করার মতোন।

আরও পড়ুনঃ
বৃহস্পতি কী দিয়ে তৈরি 
এক নজরে বৃহস্পতি 
দেখা হইল চক্ষু মেলিয়া 

লেখাটি বাংলাদেশ সায়েন্স ক্লাব এর ফেসবুক পেইজে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। অনুমতি নিয়ে এখানে পুনঃপ্রকাশিত হল। 

সূত্রঃ
১। বিজনেস ইনসাইডার
Category: articles

শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৬

মহাকর্ষ তরঙ্গ বইয়ের প্রচ্ছদ

অনলাইনে উইকিপিডিয়া জাতীয় সাইটগুলোর কল্যাণে বই পড়ার অভ্যাস কম। বাংলা বই তো আরও কম পড়া হয়। কিন্তু আব্দুল গাফফার রনি ভাইয়ের লেখা মহাকর্ষ তরঙ্গ বইটি দুই নিঃশ্বাসে (মানে এক বিরতিতে) শেষ করে বুঝলাম, না পড়লে বিশাল মিস হয়ে যেত।

শুরুর দিকে আলোচনা করেছেন, কীভাবে গ্যালিলিও এবং নিউটনদের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হল প্রাথমিক মহাকর্ষ তত্ত্ব। এরপর বললেন, ম্যাক্সওয়েল সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানীর পরিশ্রমের ফসল তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্বের আবির্ভাবের ব্যাপারে। অতঃপর কীভাবে আইনস্টাইন আগের তত্ত্বগুলো ও নতুন পর্যবেক্ষণের মিশেলে তৈরি করে ফেললেন আপেক্ষিক তত্ত্ব। 

সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে এল মহাকর্ষ তরঙ্গের ইঙ্গিত। 

কিন্তু আইনস্টাইনই সেটা বাতিল করতে চাচ্ছিলেন। পরে বুঝতে পারেন নিজের ভুল।  ১৯৭৪ সালে এই তরঙ্গের পরোক্ষ প্রমাণ হাতে এল। এ জন্যে হালস ও টেলর নোবেল পেলেন ১৯৯৩ সালে। 
কিন্তু প্রত্যক্ষ্য প্রমাণ? তাতে সফল হবার জন্যে অসদুপায় অবলম্বন করলেন জোসেফ ওয়েবার। কিন্তু কিপ থর্ন, ওয়েইস ও ড্রেভার এর প্রতিষ্ঠিত লাইগো ঠিকই ধরে ফেলল এই রহস্যময় তরঙ্গ। 

কিন্তু এত সূক্ষ্ম এই তরঙ্গ কীভাবে ধরা গেল? এটি পেয়েই বা লাভ কী? এ তরঙ্গের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আবার বিগ ব্যাঙ ও মহাবিশ্বের গান শুনতে চাচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে? 
এই যুগান্তকারী আবিষ্কারে অবদান আছে সাত বাঙালি বিজ্ঞানীরও। এঁদের দুজন আবার বাংলাদেশি। কারা সেই মহান ব্যক্তি? জানতে হলে পড়ে ফেলুন মহাকর্ষ তরঙ্গ বইটি। 

আস্থা রাখুন, টাকা ও সময় কোনোটিই নষ্ট হবে না। 

লেখক 

বইটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে সতেরোর বই মেলায়। তবে ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে বাজারে।
রকমারি ডট কম থেকেও কিনতে পারেন। 
Category: articles

বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

আমরা পৃথিবীতে বসে সূর্যের যে আলো ও উত্তাপ পাই, তা সূর্যের কেন্দ্রে পরিচালিত ফিউশন বিক্রিয়ার ফলাফল। চলুন, জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে ঘটে এই নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া।

সূর্য প্রচন্ড গরম। সত্যি অনেক অনেক গরম। এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সে তুলনায় কম। ৫৫০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের কোরের গভীর অভ্যন্তরে ফিউশন প্রক্রিয়ার ফলশ্রুতিতেই এই প্রচণ্ড তাপ ও আলো উৎপন্ন হয়। সূর্যের কোর এর কেন্দ্র থেকে ২০-২৫ শতাংশ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। কোরের ভেতরের চাপ পৃথিবী পৃষ্টের চাপের প্রায় ১০ লক্ষ গুণেরও বেশি। অন্য দিকে তাপমাত্রা প্রায় দেড় কোটি কেলভিনের ওপরে। এরকম একটি পরিবেশেই ফিউশন বিক্রিয়াটি ঘটে।

আরো পড়ুনঃ
সূর্যের তাপমাত্রা কত?

এখানে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৬০ কোটি টন হাইড্রোজেন রূপান্তরিত হয়ে হিলিয়ামে পরিণত হচ্ছে। সেই সাথে তৈরী হচ্ছে বিপুল পরিমাণ তাপ ও শক্তি। সূর্যের ফিউশন বিক্রিয়া প্রোটন-প্রোটন (P-P) চেইন নামে পরিচিত। এই বিক্রিয়া প্রোটনের ($H^+$) মাধ্যেমে শুরু হয় এবং পর্যায়ক্রমিক বিক্রিয়ার মাধ্যেমে হিলিয়ামে পরিণত হয়।

ফিউশন বিক্রিয়ার পর্যায় তিনটি ::১. দুই জোড়া প্রোটন একীভূত হয়ে একজোড়া ডিউটেরন তৈরী করে।
২. প্রত্যেক ডিউটেরন অপর একটি প্রোটনের সাথে একীভূত হয়ে হিলিয়াম-৩ তৈরী করে।
৩. দুটি হিলিয়াম-৩ এর নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে অস্থায়ী মৌল বেরিলিয়াম-৬ তৈরী করে, যা পরবর্তিতে ভেঙে গিয়ে দুটি প্রোটন ও একটি হিলিয়াম-৪ তৈরী করে।
৪. এই বিক্রিয়ায় একই সাথে দুটি নিউট্রিনো, দুটি পজিট্রন এবং গামা রশ্মি নির্গত হয়।

সূর্যের কেন্দ্রে ফিউশন প্রক্রিয়া 
উপরিউক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যেমে ফিউশন বিক্রিয়ায় প্রচুর তাপ ও আলোর প্রবাহ উৎপন্ন হয়।

আরও পড়ুনঃ
ল্যাপটপ চলে সূর্যের আলোয়!

সূত্রঃ
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

আপনারা আকাশে কখনও কি আলোর নৃত্য দেখেছেন? অনেকেই হয়তো ভাবছেন আতোশবাজি বা অন্যান্য জিনিসের কথা। কিন্তু প্রকৃতি যে নিজেই আলোর নৃত্য দেখায়। এরই নাম অরোরা (Aurora)। আলোর এই নাচন চোখে পড়ে সাধারণত পৃথিবীর দুটি মেরু অঞ্চলে। সুমেরু (Arctic) ও কুমেরুর (Antarctic) আকাশে। 

মেরু অঞ্চলে সৃষ্ট অরোরা 

অরোরা শব্দতি এসেছে ল্যাটিন থেকে। অর্থ Sunrise বা সূর্যোদয়। এই মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা (Polar aurora) পৃথিবীর দুই মেরুর  আকাশে ঘটে যাওয়া এক নৈসাদৃশ্য ঘটনা। উত্তরে মেরুতে ঘটলে নাম হয় সুমেরু প্রভা (Northern Lights বা Auorora Borealis),আর দক্ষিণ মেরুতে এরই নাম কুমেরু প্রভা (Southern Lights বা Aurora Australis)। 

এই অরোরা দেখতে আপ্রাকিতিক দৃশ্য বলে একে এক রহস্যময় শক্তি বলে বিবেচনা করা হত। অধিকাংশ মানুষই একে স্বর্গীয় আলো মনে করত। অনেকে আবার একে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা মনে করত। সবুজ রঙের প্রভাকে তারা ভাবতো তাদের ভবিষ্যতের সুখের আভাস। আর এর রঙ লাল হলেই তাদের মনে হত ভবিষ্যৎ হবে দুর্যোগময়। লোহিত মেরুপ্রভাকে যুদ্ধের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখা হত।

অরোরা দেখতে অনেকটা অনেকগুলো সমান্তরাল আলোক রশ্মির মতো, যা একটির পর একটি করে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে তৈরি করে আলোক পর্দার মতো। প্রতি মুহূর্তে হতে থাকে স্থানান্তরিত। রাতের বেলা মনে হয় অনেকগুলো সমান্তরাল আলোক রশ্মি পৃথিবীর বুকে নেমে আসছে। মূলত এই আলোক পর্দাই প্রতিনিয়ত স্তানন্তরিত হতে থাকে। আর এটা মনে হয় যেন পৃথিবীর বুকে সমুদ্রের ঢেউ খেলছে। এই অরোরা বিভিন্ন রঙের হতে পারে।


অরোরা তৈরির কারণঃ

সূর্য প্রতিনিয়তই পৃথিবীর চারদিকে বিভিন্ন চার্জিত কণা নিক্ষেপ করছে, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। সূর্যের এই চার্জিত কণার প্রবাহকেই বলে সৌরবায়ু (solar wind)। কিন্তু সৌভাগ্যের ব্যাপার হল, আমাদের পৃথিবীতে রয়েছে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র (Magnetic field) । এটি দক্ষিণ মেরু থেকে উত্তর মেরুতে প্রবেশ করছে। সূর্য থেকে যখন এসব আয়নিত কণা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তখন এরা পৃথিবীর আয়োনিত চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই তা ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু মেরু অঞ্চল যেখানে চৌম্বক ক্ষেত্র একদম কম সেখানে এই আয়নিত কণাগুল প্রবেশের সুযোগ পায় এবং এ অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনকে আঘাত করে। তখন এদের পরমাণু উত্তেজিত হয় এবং কিছুক্ষণ পরেই শক্তি বিকিরন করে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। আর এই বিকিরণই আমরা দৃশ্যমান আলোতে দেখতে পাই। আর এটাই হল অরোরা। 

অরোরায় আলোর নাচন 

বায়ুমণ্ডল আছে এমন কোনো গ্রহে যদি দ্রুতগতির চার্জিত কণা প্রবেশ করে তবেই মেরুপ্রভা সৃষ্টি হবে। সৌরবায়ু যেহেতু সকল গ্রহেই পৌঁছে, তাই সব গ্রহেই অরোরা বা মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয়। তবে গ্রহভেদে এদের রুপ ভিন্ন। শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র বিশিষ্ট শনি ও বৃহস্পতি গ্রহে পৃথিবীর ন্যায়
মেরু অঞ্চলে অরোরা উৎপন্ন হয়। শুক্রের মতো গ্রহের ক্ষেত্রে যেখানে উল্লেখযোগ্য চৌম্বকক্ষেত্র নেই, সেখানে অনিয়মিত প্রভা উৎপন্ন হয়। যে সকল গ্রহের চৌম্বক অক্ষ এবং ঘূর্ণন অক্ষ এক নয়
(যেমন ইউরেনাস ও নেপচুন), সেখানে বিকৃত (Distorted) মেরুপ্রভ অঞ্চল সৃষ্টি হয়। 

আজকের ছবিঃ বৃহস্পতির অরোরা
বৃহস্পতি গ্রহে সৃষ্ট অরোরা 
Category: articles

সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬

বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (Special theory of relativity) থেকে আমরা জানি, শূন্যস্থানে আলোর দ্রুতি (c) হল মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ গতিবেগ। আলোর দ্রুতি (speed) বিভিন্ন মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের হয়। তবে শূন্যস্থানে আলোর সর্বোচ্চ যে দ্রুতি (সেকেন্ডে প্রায় এক লক্ষ ৮ হাজার মাইল), একে কণা-পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় দ্রুতির সার্বজনীন সীমা। আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে, এর চেয়ে বেশি দ্রুতি অর্জন করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। কারণ, তার জন্য প্রয়োজন পড়ে অসীম পরিমাণ শক্তির। 

বিজ্ঞানীরা এই সার্বজনীন দ্রুতি সীমা c এর ভিত্তিতে মহাবিশ্বের সকল কণাকে ৩টি ভাগে ভাগ করেছেন।

১. ব্র‍্যাডিয়ন (Bradyon):

এই ধরণের কণারা বাস্তব ভরযুক্ত ও সর্বদা দ্রুতি সীমার চেয়ে নিম্ন গতিতে চলাচল করে। এদের অপর নাম ট্যারডিয়ন (tardyons) বা ইটিয়ন (ittyons)। ইলেকট্রন, W বোসন, Z বোসন, আপ কোয়ার্ক ইত্যাদি সবই ব্র‍্যাডিয়ন শ্রেণির অন্তর্গত কণা। 

২. লুক্সন (Luxon):

এই ধরণের কণাদের নিশ্চল ভর (rest mass) শূন্য। তবে চলাচলের সময় এদের ভরবেগ সৃষ্টি হয়। এরা সর্বদা দ্রুতি সীমায় চলাচল করে। অর্থাৎ এদের বেগ আলোর বেগের সমান। গ্লুওন, ফোটন ইত্যাদি কণা হল লুক্সন কণা।


৩. ট্যাকিয়ন (tachyon): 

এই কণারা একটু অন্যরকম কণা। এরা শূন্যস্থানে আলোর দ্রুতির চেয়েও বেশি দ্রুতিতে চলাচল করে।  লঙ্ঘন করে আপেক্ষিক তত্ত্ব। এদের ভর হল কাল্পনিক। এখন পর্যন্ত এমন কণাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

ট্যাকিয়ন একক কোনো কণা নয়। এটা আসলে কণাদের একটা শ্রেণি। ১৯৬২ সালে কিছু বিজ্ঞানীরা তাত্ত্বিকভাবে দ্রুতি সীমার চেয়ে বেশি দ্রুতির কণাদের অস্তিত্বের কথা বলেন। এর নাম দেয়া হয় 'মেটা-পার্টিকেল'। তারপর জেরাল্ড ফাইনবার্গ প্রথম দেখান যে, কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব দিয়ে দেখানো যায়, ট্যাকিয়নিক ক্ষেত্রের অস্তিত্ব আছে। এইসব ট্যাকিয়নিক ক্ষেত্রের সকল কণাই c এর চেয়ে বেশি দ্রুতিসম্পন্ন। এরপর থেকে এই জাতীয় কণা নিয়ে গবেষণা শুরু হয় এবং বেরিয়ে পড়তে থাকে এই ধরণের কণার মজার মজার বৈশিষ্ট্যগুলি। 

আলবার্ট আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বানুসারে কোনো কণার দ্রুতি যত বাড়ে তার ভরও তত বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুতি বাড়তে বাড়তে যখন দ্রুতি সীমায় চলে যায় তখন কণার ভর অসীম হয়ে যায়। তাই, দ্রুতি সীমা অতিক্রম করা কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু, ট্যাকিয়ন শ্রেণির কণারা এইসব নিয়মের তোয়াক্কা করেনা। ট্যাকিয়ন কণার দ্রুতি বাড়লে ভর কমে আসে, আবার দ্রুতি কমলে ভর বাড়ে। ট্যাকিয়নের দ্রুতি সর্বদাই দ্রুতি সীমার উপরে থাকবে। ইচ্ছা করলেও ট্যাকিয়ন কণারা c এর চেয়ে কম দ্রুতিতে চলাচল করতে পারে না। কারণ, তাহলে অসীম পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হবে। ট্যাকিয়ন কণাদের আরেকটি মজার বৈশিষ্ট্য হল এদের দেখতে পাওয়া-না পাওয়া। কেননা আমরা যেহেতু আলোর সাহায্যে দেখি, আবার ট্যাকিয়ন কণারা আলোর চেয়েও বেশি দ্রুতিতে চলে, তাই আমরা ট্যাকিয়ন কণা দেখতে পাব না। সর্বদা কণাটি চলে যাবার পর শুধুমাত্র কণাটির পদচিহ্ন হিসেবে দুইটি তরঙ্গ দেখতে পাব। এই তরঙ্গের নাম হল চেরেনকভ তরঙ্গ।

পারমাণবিক চুল্লীতে দ্রুতবেগে গতিশীল নিউট্রনের কারণে সৃষ্ট চেরেনকভ নীল বিকিরণ

ট্যাকিয়ন কণারা কি তাহলে শুধুই কাল্পনিক? না, এরা পুরোপুরি কাল্পনিক নয়। হিগস-বোসন কণা যেমন ২০১২ সাল পর্যন্ত কাল্পনিক ছিল, তারপর পর্যবেক্ষণ করা গেছে। তেমনি  বিজ্ঞানীদের দাবি করেন, এক্সোপ্ল্যানেট তথা বাইরের গ্রহগুলোতে ট্যাকিয়ন পর্যবেক্ষণের সম্ভাবনা অনেক। পৃথিবীতে চেরেনকভ বিকিরণ দেখা গেলেও ট্যাকিয়নিক কোনো কণার সাথে এর সম্পর্ক নেই। এটা তৈরি করা খুবই সহজ। কোনো চার্জিত কণাকে ত্বরক যন্ত্রে নিয়ে আলোর অনেক কাছাকাছি দ্রুতি দেয়া সম্ভব হয়। আবার, মাধ্যম পরিবর্তন করে তথা পানি বা কাঁচ মাধ্যমে আলোর দ্রুতিও কমে যায়। ফলে ওই মাধ্যমে চার্জিত কণা মাধ্যমের আলোর দ্রুতির থেকেও বেশি দ্রুতিতে চলাচল করতে পারে। তখন কণাটির রেখে যাওয়া পদচিহ্ন হিসেবে নীল তরঙ্গ দেখা যায়। এই ঘটনাকে বলে চেরেনকভ বিকিরণ।

ট্যাকিয়ন কণা চলে যাবার পর গতিপথে দেখতে পাওয়া দুইটি তরঙ্গ

একসময় মনে করা হত নিউট্রিনো ও টাউ কণা বোধহয় ট্যাকিয়ন শ্রেণির কণা। পরে তা ভুল প্রমাণিত হয়। এই ধরণের কণা আবিস্কার করা সম্ভব হলে পৃথিবীর জীবনমানের গতি একদিনেই শতভাগ বেড়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে যেহেতু কণাটি আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বর মত প্রতিষ্ঠিত প্রমাণিত একটি তত্ত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়, তাই অনেক বিজ্ঞানীই এই কণাকে নিছক উর্বর মস্তিস্কের কল্পনা বলে উড়িয়ে দেয়। তবে ট্যাকিয়ন কণিকা নিছকই কল্পনা নাকি অত্যাধিক উন্নতমানের বিজ্ঞান, তা জানার জন্য আমাদের আরো অনেক বছরই অপেক্ষা করা লাগবে।

** তথ্যের অসঙ্গতি দূর করে পোস্টটি সংশোধন করতে সাহায্য করার জন্য Deepayan Turja ভাইয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা। 
Category: articles

শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬

একটি গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। দুই বন্ধু ইকরাম ও রিফাত ভ্রমন করতে খুবই পছন্দ করে। ইকরাম একজন ভালো ফটোগ্রাফার আর রিফাত বেশ সাহসী। তো, একদিন তারা আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে  ঘুরতে গেল। ইকরাম প্রকৃতির ছবি তুলতেছিলো, তখন রিফাত পানির একটি রিজার্ভারের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, 'দোস্ত, আমার একটা ছবি তোল।'

ইকরাম ক্যামেরা ফোকাস করে যখনি ক্যাপচারিং বাটনে ক্লিক করবে তখনি রিফাতের পাশে মাটি থেকে হঠাৎ ধোঁয়া বের হতে দেখল। আর, অমনি চিৎকার করে উঠল। রিফাত তাকে সান্তনা দিয়ে বলল, 'শোন, বাচ্চা ছেলের মত ভয় পাস না, বরং দেখি কী ঘটে?

তারপর মাটি ফেটে তীব্র বেগে উর্ধমূখে পানি বের হতে লাগল। আশ্চর্য হয়ে গেল ওরা। আর একসাথে বলে উঠল "দারুণ তো!"।

গেইসার 

আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এরই নাম আসলে গেইসার।

গেইসার হল ভূ-অভ্যন্তর থেকে উৎক্ষিপ্ত গরম পানি বা বাষ্প। জলভূতাত্ত্বিক (Hydrogeological) কারণে পৃথিবীর পাতলা ভূ-ত্বক ভেদ করে এটি বেরিয়ে আসে। পিচকারি বা ফোয়ারার মতো উর্ধ্বমুখী হয়ে বিস্ফোরণের আকারে নির্দিষ্ট সময় পরপর বেরিয়ে আসে। উচ্চতা হয় সর্বোচ্চ ২০০ ফুট পর্যন্ত। স্থায়িত্ব হয় সর্বোচ্চ ১০ মিনিট।


এটি একটি বিরল ঘটনা। বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১০০০  গেইসার আছে। আমেরিকার Yellowstone National Park এ আছে প্রায়  ৪৬৫ টি সক্রিয় গেইসার। এখানেই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওল্ড ফেইথফুল গেইসার সক্রিয়। এটি থেকে  প্রতি ৩৫-১২০ মিনিট পর পর প্রায়  ১.৫- ৫ মিনিট ধরে প্রস্রবণ ১০৬-১৮৫ ফুট পর্যন্ত  উৎক্ষিপ্ত হয়।


এছাড়া  রাশিয়ার Dolina Geiserov, চিলির El Tatio, নিউজিল্যান্ডের Taupo Volcanic Zone আইসল্যান্ডের পুরো অঞ্চলের গেইসার উল্লেখযোগ্য।
পৃথিবী জুড়ে  গেইসারের বিস্তৃতি 


গেইসার সৃষ্টির প্রক্রিয়া : 
তিনটি ভূতাত্বিক কারণে গেইসার তৈরী হয়ঃ-

১. প্রচন্ড তাপ:
ভূ-অভ্যন্তরে প্রচণ্ড তাপ সৃষ্টিকারী পদার্থ যেমন গরম শিলা, ম্যাগমা ইত্যাদির উপস্থিতি গেইসার সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। এজন্য আগ্নেয়গিরি প্রবণ এলাকায় এটি ঘটে থাকে।

২. পানির উপস্থিতি: 
পৃথিবীর পৃষ্ঠে বড় ধরনের পানির রিজার্ভার এর উপস্থিতিতে অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর ২০০০ মিটার পর্যন্ত পানি নিচে নেমে প্রচণ্ড তাপের সংস্পর্শে আসা অপরিহার্য।

৩. পাতলা ভূত্বক ও জলনির্গমন প্রণালী: 
পানি গরম হয়ে  ঊর্ধমুখী চাপে জলনির্গমন পথে  (conduit) বের হওয়ার জন্য ভূত্বক পাতলা হওয়া প্রয়োজন।

গরম পানি চারটি ধাপে উৎক্ষেপিত হয় : 
১. গরম পানি হতে বাষ্প বের হওয়া
২. টগবগানো পানি ঊর্ধমুখে স্ফীত হওয়া (একটি পানি বুদবুদের মতো অবস্থা, যেটির যেকোনো সময় ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে)
৩. পাতলা  ভূপৃষ্ঠ ভেঙ্গে যাওয়া
৪. পানি তীব্র বেগে উর্ধমুখে স্প্রে হওয়া


সূত্র: উইকিপিডিয়া,  ইউটিউব
[লেখাটি ইতোপূর্বে ব্যাপন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত] 
Category: articles

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি ইতোপূর্বে ব্যাপন ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।]

অ্যানড্রোমিডার বিস্ময়কর কিছু কথা জানব। তবে, আগে সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

আপনারা কি আকাশে কখনো  ছায়াপথ (Galaxy) দেখেছেন? হয়ত বা দেখে থাকলেও থাকতে পারেন! রাতের আকাশে যে শুধু তারকাই দেখা যায় না, তার আরেক উদাহরণ হল অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি। আমাদের মিলিওয়েতে গ্যালাক্সি যেমন সূর্যসহ অসংখ্য নক্ষত্রের বাস, তেমনি বহু নক্ষত্রে গড়া (নেবুলাসহ আরো বিভিন্ন পদার্থের পাশাপাশি) আরেকটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ হল অ্যানড্রোমিডা। 

অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি

অ্যানড্রোমিডা একটি সর্পিলাকার ছায়াপথ (spiral galaxy)। অবস্থান অ্যানড্রোমিডা তারামণ্ডলে। অপর নাম মেসিয়ার ৩১ বা এম৩১ (M31), জ্যোতির্বিদ চার্লে মেসিয়ে এর নাম অনুসারে। একে আবার অনেক সময় গ্রেট নেবুলাও বলা হত। বড় ছায়াপথদের মধ্যে অ্যানড্রোমিডা হল আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে নিকটবর্তী ছায়াপথ। নাম রাখা হয়েছিল পৌরাণিক রাজকুমারী অ্যানড্রোমিডার নাম অনুসারে। লোকাল গ্রুপ নামের প্রায় ৫৪টি গ্যালাক্সির একটি গুচ্ছের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। আমাদের মিল্কিওয়ে হল লোকাল গ্রুপের দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য। 

প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ কোটি) নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি। এই ছায়াপথটি আমাদের থেকে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ব্যাস প্রায় ২২০,০০০আলোকবর্ষ, যেখানে আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ের ব্যাস ১০০,০০০ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ এর সাইজ আমাদের মিল্কিওয়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সেদিক থেকে বিচার করলে আমাদের মিল্কিওয়ের ভর অনেক বেশি।

আরও পড়ুনঃ

সাতটি সর্পিল বাহু বিশিষ্ট এই ছায়াপথটির নিউক্লিয়াসের সাথে সংযুক্ত আছে দুটি বাহু । বাকী পাঁচটি সর্পিল বাহু অধিকার করে আছে অসংখ্য সৌরমন্ডলকে। এর নিউক্লিয়াস তৈরী হয়েছে এক কোটি গোল নক্ষত্রগুচ্ছের (Globular Cluster) সমন্বয়ে। ছায়াপথটির ভেতরের অংশের পূর্ণ ঘূর্ণন সমাপ্ত হতে সময় লাগে ১১ মিলিয়ন বছর আর বাইরের অংশটুকু সমাপ্ত করে ৯০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছরে (১ মিলিয়ন সমান ১০ লাখ)।

কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আমাদের মহাবিশ্বে ছায়াপথের আসল সংখ্যা কত সেটা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না। কারণ, জ্যোতির্বিদরা যতই মহাবিশ্বের দিকে তাকাচ্ছেন, ততই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন ছায়াপথ। মহাবিশ্বের এখনও অনেক জায়গা আছে, যেটা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। কিছু কিছু জায়গা আছে, যা টেলিস্কোপ দিয়েও দেখা যায় না। তবু জ্যোতির্বিদদের হিসাব অনুসারে মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আনুমানিক ১০০ থেকে ২০০ বিলিয়ন (১ বিলিয়নে ১০০ কোটি)। 


অ্যানড্রোমিডা সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কথা জেনে নেওয়া যাকঃ 

১। মিল্কিওয়ে বনাম অ্যানড্রোমিডাঃ

লোকাল গ্রুপের গ্যালাক্সিদের মধ্যে সম্ভবত মিল্কিওয়ের ভর-ই সবচেয়ে বেশি। তবুও আনড্রোমিডা ছায়াপথেই নক্ষত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে, এতে নক্ষত্রের সংখ্যা মিল্কিওয়ের প্রায় দ্বিগুণ। সাইজেও এটিই বড়।


২। এক সময় আনড্রোমিডাকে নীহারিকা ভাবা হতঃ

যখন মহাবিশ্বের প্রকৃত পরিধি কেউ জানত না, তখন ধারণা করা হত, আমাদের মিল্কিওয়ে গালাক্সি-ই মহাবিশ্বের সব কিছু। অ্যানড্রোমিডা গালাক্সিকে এর ভেতরেই অবস্থিত বলে মনে করা হত, যাকে শুধুমাত্র একটা অস্পষ্ট দাগের মতো দেখা যেত। কিন্তু বিংশ শতকে অত্যন্ত শক্তিশালী টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে জানা গেল, এটি নিজেই আরেকটি গ্যালাক্সি। তার আগের টেলিস্কোপগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুসারে এটি ছিল মহাজগতিক ধূলোর মেঘ এবং শুধুমাত্র নক্ষত্র গঠনের উপাদানসমূহ এতে বিদ্যামান। এর মাধ্যমে তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল, বিশাল অ্যানড্রোমিডা একটা নীহারিকা মাত্র। নতুন তারকা তৈরির অঞ্চলকে বলা হয় নীহারিকা। 

৩। অ্যানড্রোমিডায় ব্ল্যাক হোল!

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, অ্যানড্রোমিডার শুধু কেন্দ্রেই ২৬ টির মতো ব্ল্যাক হোল আছে। এছাড়াও চন্দ্র এ-ক্সরে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সাহায্যে আরো অনেকগুলো ব্ল্যাক হোল খুঁজে পাওয়া গেছে। আমাদের ছায়াপথের মতোই অ্যানড্রোমিডার কেন্দ্রে একটি বিশাল ব্লাকহোল আছে। আরও দুটি যুগল ব্ল্যাক হোল একে অপরকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। এদের ভর সূর্যের প্রায় ১৪ কোটি গুণ।

আরো পড়ুনঃ
ব্ল্যাক হোলের পরিচয়

৪। ইতিহাসঃ

এই গ্যালাক্সিটি আবিস্কার করেছিলেন পারস্যের এক মুসলমান জ্যোতির্বিদ আব্দুর রহমান আস-সুফি। ৯৬৪ সালে তিনি গ্যালাক্সিটি পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু সেই সময়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে মানুষের ধারণা না থাকায় তিনি `তার "Book of Fixed Stars" গ্রন্থে এর নাম দেন 'Small Cloud' বা 'ক্ষুদ্র মেঘ'। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে, মিল্কিওয়ে-ই হল মহাবিশ্বের একমাত্র ছায়াপথ। অ্যানড্রোমিডাকে গ্যালাক্সিকে তখন মনে করা হত নীহারিকা। কিন্তু এডউইন হাবলের সম্প্রসারণ তত্ত্ব
পাওয়ার পর জানা গেল, মিল্কিওয়ে আসলে মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র। অ্যানড্রোমিডাকে মেসিয়ার -৩১ নামকরণ করেন বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ে, ১৭৬৪ সালে। তবে তিনি এর আবিস্কারের কৃতিত্ব দিতে চেয়েছিল জার্মান জ্যোতির্বিদ সাইমন মারিয়াসকে। বর্তমানে অবশ্য আব্দুর রহমান আস-সুফিকে এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। 

৫। মিল্কিওয়ের সাথে সংঘর্ষঃ

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, কয়েকশ কোটি বছরের মধ্যেই এটি আমাদের গ্যালাক্সির উপর এসে পড়বে। দুটো মিলে বড় একটি উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সিতে পরিণত হবে। যদিও মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবে প্রসারিত হচ্ছে, তবুও কাছাকাছি অবস্থিত এই দুটি গ্যালাক্সি মহাকর্ষের আকর্ষণ এড়াতে পারছে না। এরা প্রতি সেকেন্ডে ৭৫ মাইল বেগে একে অপরের দিকে ধেয়ে আসছে।
ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।  তত দিন আমরা থাকব না। আর আসলে ঐ সংঘর্ষে নক্ষত্রদের মতো ছোট জায়গায়ও বড় কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।

আনড্রোমিডা সম্পর্কে  একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল, এটি আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি। এটি হল, বামন ক্যানিস ম্যাজর
আরো পড়ুনঃ
☛ আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সি কোনটি? 


সূত্রঃ
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Andromeda_Galaxy
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Milky_Way
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি ইতোপূর্বে ব্যাপন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল। ]  
ল্যাপটপ চলছে সূর্যের আলোয়। সত্যি বলছি কিন্তু 

প্রশ্নটার উত্তর সোজাসুজি চিন্তা না করে চলুন, খেলার মাঠ থেকে একটা চার বছরের বাচ্চাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে ধরে নিয়ে আসি। কেন? কারণ, এখন প্রশ্নটার উত্তর দেবার সময় যখনই আমি মনে করব উত্তর যথেষ্ট হয়েছে, তখনই ও আবার প্রশ্ন করবে, 'কেন?' 
চার বছরের বাচ্চারা এমনইতো করবে। এর ফলে আমরা প্রশ্নটার সঠিক উত্তর পাবো আশা করি। ওর নাম দিলাম বল্টু। সবাই ওকে হাই বলুন! 
অতএব, প্রশ্নটার উত্তরে প্রথমেই বললাম, 'কারণ, আমি ল্যাপটপটা চালু করেছি।'

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ ভালো প্রশ্ন করেছো, বল্টু। আমি এটা চালু করেছি যাতে আমি লেখাটা লিখতে পারি। আর আসলে সত্য কথা হল, আমার ল্যাপটপ সব সময় চালুই থাকে। আমি একে কখনো শাট ডাউন দেই না।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ কারণ আধুনিক ল্যাপটপগুলোকে বন্ধ করতে হয় না। আর আমি এমনিতেই বন্ধ করি না, এটা আমার অলসতা আর ল্যাপটপের প্রতি ভালোবাসা।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ আমি আসলে একটু খামখেয়ালী মানুষ, এলোমেলোভাবে চলিতো। কোনো কিছু গোছগাছ করে রাখি না।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ কারণ আমি এখনো বড়োদের মতো দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন হইনি।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ আমার বয়স এখনো খুব বেশি হয়নি, ২৫ ও ক্রস করেনি।

আরে! হচ্ছেটা কী? আমরাতো প্রশ্নটা থেকে সরে যাচ্ছি। এমন তো হবার কথা ছিল না। বল্টু ঠিকভাবে প্রশ্ন করছে না। 
দেখো, বল্টু, তোমাকে শুধু 'কেন?' 'কেন?' করার জন্যে নিয়ে আসিনি। তোমাকে সঠিক প্রশ্ন করে ব্যাপারটার গভীরে যেতে হবে।

বল্টুঃ কেন?

আমিঃ কারণ আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতাগুলো পাঠকদের সামনে ফাঁস করার জন্যে তোমাকে আনিনি। আমাদেরকে সঠিক বিষয়টি পাঠকদেরকে জানাতে হবে।

বল্টুঃ কেন?

না, হচ্ছে না। এই বল্টুকে দিয়ে হবে না। বল্টুকে মায়ের কোলে রেখে এসে আমরা বরং ছয় বছরের আরেকটি বল্টু নিয়ে আসি। চার বছরের বাচ্চারা কেমন হয়, ভুলে বসে আছি। আবার শুরু করি।

আমিঃ ল্যাপটপ চালু আছে কারণ এতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে।

বল্টুঃ বিদ্যুৎ সংযোগ আছে কেন?

আমিঃ কারণ এটা পাওয়ার কর্ডের সাথে যুক্ত আছে, যেটি আবার ওয়াল সকেটের সাথে যুক্ত।

বল্টুঃ ওয়ালের সকেটে বিদ্যুৎ এল কীভাবে?

আমিঃ কারণ এটা ঢাকা শহরের ইলেকট্রিক গ্রিডের সাথে যুক্ত আছে।

বল্টুঃ ঢাকা শহরের গ্রিডে বিদ্যুৎ এল কোথা থেকে?

হুম! ছয় বছরের বল্টুকে দিয়ে কাজ হচ্ছে। এবার তাহলে আমাদেরকে জেনে আসতে হবে মানুষ কীভাবে ইতিহাসের পরিক্রমায় বিদ্যুৎ শক্তিকে হাত করতে পারল। 

এই ইতিহাসকে তিন ভাগে ভাগ করা চলে।
১. অনেক অনেক প্রাচীন যুগে শক্তির ব্যবহার- যখন হাত দিয়ে কষ্ট করে সব কাজ করাব হত।
প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষেরা আসলেই জানত না যে কীভাবে খুব সহজে কোনো কাজ করে ফেলা যায়।



২। কিছুটা প্রাচীন যুগ- যখন মানুষ প্রকৃতির শক্তিকে সরাসরি ব্যবহার করা শিখল।


একটা সময় এসে মানুষ বুঝতে পারল, তারা প্রকৃতির কিছু শক্তি কাজে লাগিয়ে নিজেদের কষ্ট অনেক কমিয়ে আনতে পারে। এর অন্যতম আদিম উদাহরণ হল আগুণের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন। এটা ঘটেছিল ১ লাখ ২৫ হাজার বছর থেকে ৪ লাখ বছর আগে (একেকজন অবশ্য একেক উত্তর দেবে এর)।

ইদানিং প্রমাণ পাওয়া গেছে যে ৫ হাজার বছর আগে থেকেই মানুষ বায়ুকল, বাঁধ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রাকৃতিক শক্তি থেকে যান্ত্রিক সুবিধা আদায় করত। অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে স্টিম ইঞ্জিনের মতো অতি আধুনিক (তুলনামূলক) প্রযুক্তির সাহায্যে নৌযান ও লোকোমোটিভ চালনা শুরু হয়।

এগুলো হল প্রাকৃতিক শক্তির সরাসরি ব্যবহার। এদের অসুবিধা ছিল, এদেরকে ব্যবহার করতে হত এর উৎপাদনের স্থান এবং সময়েই। যেমন আগের দিনের বায়ুকল ঘুরত এবং এই ঘূর্ণন বলকে দিয়ে পানি ওঠানো বা শস্য মাড়াইয়ের কাজে লাগানো হত। এমন জিনিসের ব্যবহার কিন্তু আজো ফুরিয়ে যায়নি। একবার ব্ল্যাকআউটের কথাই চিন্তা করুন। আপনার চুলা ও এর উত্তাপ, টয়লেট (যেখানে ফ্ল্যাশ করার জন্যে কাজে লাগে অভিকর্ষ), কাঠের আগুন বা মোমবাতি বা গাড়ি- সবকিছুই প্রকৃতি থেকে সরাসরি শক্তি নিচ্ছে। মাঝখানে আর কিছু নেই।

৩। আধুনিক যুগে শক্তি উৎপাদন- বড়ো মাপে এবং পরোক্ষভাবে।
১০০ আগে বছর মানুষ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে শিখলে বিশ্বে এল যুগান্তকারী পরিবর্তন। ইলেকট্রিক গ্রিডের মাধ্যমে শক্তির সরবরাহ ছড়িয়ে পড়ল দূর দূরান্তে। মানুষের ইতিহাসে হয়ত এটাই সবচেয়ে বড়ো একক মাইলফলক।

শিল্পের প্রয়োজনে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত করা, একে বিদ্যুতে পরিণত করা, দূরে পাঠিয়ে দেওয়া এবং পরে আবার সুবিধা মতো যে কোনো শক্তিতে রূপান্তর করা সহজ হয়ে গেল। দেশের এক প্রান্তের উত্তপ্ত কয়লা আরেক প্রান্তের হিমাগারকে শীতল রাখছে। আধুনিক উইন্ডমিল শুধু পানি তুলতে বা শস্য ভাঙতেই কাজে লাগছে না, এ থেকে বিদ্যুতও পাওয়া যাচ্ছে, যা দিয়ে করা যাচ্ছে প্রায় সব কিছু।
আমার যে ল্যাপটপ চলছে, হতে পারে এর বিদ্যুৎ শক্তি পাওয়া গেছে কয়লা পুড়িয়ে, পরমাণু ভেঙে অথবা বাতাস বা নদীর পানির প্রবাহ থেকে। আমার তাতে কিছু যায় আসে না। এ শক্তিগুলো সবাই আমার কাছে এসে এক হয়ে যায়- আমি যখনই প্লাগ যুক্ত করি, পাই বিদ্যুৎ।
এই দিক থেকে বলা যায় যে, দামের জগতে টাকার যে ভূমিকা, শক্তির জগতে বিদ্যুতের ভূমিকা তাই।
Source: Wait But Why


অতএব, এ কারণেই ঢাকাসহ বিশ্বের বড়ো বড়ো প্রায় সব শহরেই ইলেকট্রিক গ্রিড আছে।

বল্টুঃ ইলেকট্রিক গ্রিডে বিদ্যুৎ আছে কেন?

আমিঃ কারণ ওটা পাওয়ার প্ল্যান্টের সাথে যুক্ত আছে, যা গ্রিডে  বিদ্যুৎ পাঠাচ্ছে।

বল্টুঃ পাওয়ার প্ল্যান্ট বিদ্যুৎ বানায় কীভাবে?

হুম, এখন শক্তির সংরক্ষণশীলতার নীতি বলতে হয়। শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, বরং এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তন করা যায় মাত্র। এর অর্থ হল, মানুষ শক্তি তৈরি করতে পারে না, তারা শক্তির প্রচলিত রূপকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারে। অতএব, বিদ্যুৎ তৈরির একমাত্র উপায় হল শক্তির প্রচলিত কোনো উৎসকে বিদ্যুতে রূপান্তর করা।
সাধারণত যে কয়ভাবে পাওয়ার প্ল্যান্ট কাজ করে তা হলঃ

১. এক ধরনের নবায়নযোগ্য এনার্জি প্ল্যান্ট (জলবিদ্যুৎ (Hydroelectric), বায়ু বা সৌর)। এ থেকে বিদ্যুতের সামান্য অংশই পাওয়া যায়। আমেরিকায় ১১% বিদ্যুৎ পাওয়া যায় এটি থেকে।

২। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট। এ থেকে পুরো বিশ্বের ২.৮ % বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। অবশ্য আমেরিকায় এর ব্যবহার তুলনামূলক অনেক বেশি ২১%।

৩। বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ শক্তির প্রায় ৮০% ই পাওয়া যায় ফসিল ফিউল বা জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা, গ্যাস, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি থেকে। 

এ কারণে, গাণিতিক সম্ভাবনার কথা বললে আমি বলব যে, আমার ল্যাপটপ চালু আছে হয়ত কোনো জীবাশ জ্বালানির কারণে। আপনার ক্ষেত্রেও একই কথা। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন, হয়ত ফসিল ফিউল প্ল্যান্টের কল্যাণেই চলছে আপনার ল্যাপটপ।

বল্টুঃ জীবাশ্ম জ্বালানি বা ফসিল ফিউল প্ল্যান্ট কীভাবে বিদ্যুৎ তৈরি করে?

এটা করা হয় জীবাশ্ম জ্বালনি পুড়িয়ে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে অবশ্য কয়লা বা প্রাকৃতিক গ্যাসই শুধু কাজে লাগানো হয়। তেল দরকার হয় পরিবহনের কাজে। পাওয়ার প্ল্যান্টে কয়লা বা গ্যাস পুড়িয়ে বিপুল পরিমাণ পানিকে উত্তপ্ত করা হয়। এরপর ফুটন্ত বাষ্পকে পাঠানো হয় টারবাইনে (বড় প্রপেলার), যার ফলে এটি ঘুরতে থাকে। টারবাইনটি তামার তার দ্বারা প্যাঁচানো থাকে এবং একে ঘিরে থাকে চুম্বক। টারবাইন ঘোরার সময় তামার কুণ্ডলীও ঘুরতে থাকে। এর ফলে বিদ্যুতের স্রোত তার বেয়ে প্ল্যান্ট থেকে বেরিয়ে আসে। পোঁছে যায় শহরের ইলেকট্রিক গ্রিডে।

অতএব, কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত আমার ল্যাপটপ চালু করা হয়েছে।

বল্টুঃ তুমি না বললে, শক্তি তৈরি করা যায় না, শুধু রূপান্তর করা যায়- তাহলে কয়লাকে পুড়িয়ে যে শক্তি পাওয়া গেল তা কোথেকে এল?

বাবুটাতো ভালোই ভোগান্তি দিচ্ছে। ফলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil fuel) আসলে কী?

জীবাশ্ম জ্বালানি হল ত্রিশ থেকে ছত্রিশ কোটি বছর আগের কার্বোনিফেরাস যুগের গাছের ধ্বংসাবশেষ, যে সময় ডাইনোসরদেরও অস্তিত্ব ছিল না। অধিকাংশ গাছই মারা যাবার পরপরই পচে ও ক্ষয় হয়ে গিয়ে এদের ভেতরের শক্তি নির্গত করে দেয়। কার্বোনিফেরাস যুগের অধিকাংশ গাছ, শৈবাল এবং ক্ষুদ্র জীব জলাশয়ে বা সমুদ্রে মারা গিয়েছিল। এরপর এরা তলায় পৌঁছে গিয়ে বালু, কাদা ও অন্যান্য জিনিসের নিচে চাপা পড়ে যায়। এ সময়জুড়ে এরা নিজেদের সাথে বহন করতে থাকে শক্তি। বছরের পর বছর ধরে এই মৃত জিনিসের উপর আরো বেশি বেশি কাদা, বালি, পাথর ইত্যাদি জমতে জমতে তীব্র চাপে এরা গ্যাস, কয়লা ও তেলে পরিণত হয়। যেই শক্তি নিয়ে সেই গাছগুলো মারা গিয়েছিল তা আজো বিদ্যমান রয়েছে— শুধু এর রূপ এখন জীবাশ্ম জ্বালানি রূপে রাসায়নিক শক্তি।

অতএব, সবকিছুর মূলে আছে সেই সময়ের সেই গাছগুলো যা থেকে চলছে বর্তমানের পাওয়ার প্ল্যান্ট।

বল্টুঃ কিন্তু শক্তি বা এনার্জি আসল কোথা থেকে? সেই প্রাচীন গাছগুলোই বা শক্তি পেলো কোথায়?

ঠিক যেভাবে বর্তমানে গাছে শক্তি প্রবেশ করে- সালোকসংশ্লেষণ। ব্যাপারটা খুবই সহজ।

সূর্যের আলো গাছের মধ্যে প্রবেশ করে কার্বন ডাই অক্সাইডকে ভেঙে ফেলে। এর ফলে কার্বন ভেতরে থেকে গিয়ে পদার্থ তৈরি করে এবং অক্সিজেন উপজাত আকারে বেরিয়ে আসে। অণুর এই ভাঙনের সময় গাছ সূর্য থেকে রাসায়নিক শক্তি গ্রহণ করে। এটা গাছের মধ্যেই থেকে যায়। আমরা গাছের গুড়ি পোড়ানোর সময় এই প্রক্রিয়াকেই উল্টো দিকে পরিচালিত করে দেই মাত্র। অক্সিজেন ও কার্বন জায়গা বদল করে। ভেতরের সঞ্চিত সৌরশক্তি আগুনের আকারে বের হয়ে পড়ে। আগুন হল সূর্যের আলো ও উত্তাপ, যা কাঠ থেকে নির্গত হবার আগে বহু দিন যাবত এর মধ্যে সঞ্চিত ছিল।

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর সময় ঠিক এটিই ঘটে। তবে গাছের বদলে জীবাশ্ম জ্বালানিতে সঞ্চিত সৌরশক্তির বয়স ৩০ কোটি বছর হয়ে গেছে। ফলে এ থেকে প্রাপ্ত শক্তিও ত্রিশ কোটি বছরের পুরনো।
অতএব, আমার ল্যাপটপ চলছে ত্রিশ কোটি বছরের পুরনো সৌরশক্তি দিয়ে।

বল্টুঃ আচ্ছা বুঝলাম, প্রাচীন সূর্য থেকে এই শক্তি এসেছে। কিন্তু সেই শক্তিটা আসল কোথা থেকে?

সূর্যের শক্তি আসলে এর কেন্দ্রে চলমান ফিউশন বিক্রিয়ার ফসল। এ পক্রিয়ায় তীব্র চাপের প্রভাবে পরমাণু জোড়া লেগে একটি একক পরমাণু গঠিত হয়। পরিণামে বিমুক্ত হয় প্রচুর পরিমাণ শক্তি। এটা হল নিউক্লিয়ার ফিসান (ভাঙন) বিক্রিয়ার বিপরীত, যেখানে বড় পরিমাণু ভেঙে যায় (নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এভাবে কাজ করে)।
জিনিসটা ঘটে এভাবেঃ

সূর্য যেভাবে কাজ করে

অতএব, নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় সৃষ্ট শক্তির ফলে সূর্যের কেন্দ্রমণ্ডল থেকে ফোটন (আলোক কণা) বেরিয়ে আসে। এই ফোটন সূর্যের পৃষ্ঠে পৌঁছতে এক লক্ষ বছর লাগিয়ে দেয়, কিন্তু তারপর পৃথিবীতে আসতে আর মাত্র আট মিনিট লাগে। এর পরেই গাছ সেটা পায়।

বল্টুঃ আচ্ছা, সেই শক্তি- মানে নিউক্লিয়ার ফিউশন— ওটা এল কোথা থেকে?

সূর্যের কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া শুরু হবার কারণ হচ্ছে এর তীব্র মহাকর্ষ চাপ।

বল্টুঃ মহাকর্ষটা আবার কী?

বল্টু, তুমি এখনো অনেক ছোট। মহাকর্ষ হল বক্র স্থান- কাল। এ বক্রতা তৈরি হয় বস্তুর উপস্থিতিতে। আর সূর্যের মতো বিশাল বস্তুর ক্ষেত্রে এই বক্রতার পরিমাণও বিশাল।

অতএব, ল্যাপটপের পাওয়ার সরবরাহের পেছনে একটি সত্যিকারের উৎস আছে। এটা হল সূর্যের দ্বারা সৃষ্ট স্থান- কালের তীব্র বক্রতা। এর কারণে শুরু হয় নিউক্লিয়ার ফিউশন এবং তার এক লক্ষ বছর পরে গাছ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে সেই শক্তি গ্রহণ করে। সেই শক্তি এরপর মৃত গাছের মধ্যে অবস্থান করে ধীরে ধীরে কয়লার মতো জীবাশ্মে পরিণত হয়। এই কয়লা ৩০ কোটি বছর পরে কোল মাইনাররা বের করে আনে, বয়ে নিয়ে আসা হয় পাওয়ার প্ল্যান্টে। 

একে পুড়িয়ে প্রাচীন সূর্যের মতোই আলো ও উত্তাপ পাওয়া যায়। এই উত্তাপ কাজে লাগিয়ে পানিকে গরম করা হয়, যা তখন স্টিম বা বাষ্পে পরিণত হয়। এটি জেনারেটরের ভেতরে থাকা টারবাইনকে ঘোরায়। এর ফলে শক্তি বের হয়ে বিদ্যুৎ আকারে চলে আসে ইলেকট্রিক গ্রিডে। এটাই পরে লাইন বেয়ে চলে আসে আমার বাসার ওয়ালে। পাওয়ার কর্ড ল্যাপটপে লাগানোর সাথে সাথে এটি চালু হবার শক্তি পায়।

তবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে সূর্যের প্রাচীন মহাকর্ষের এই প্রভাব নন-ইলেকট্রিক এনার্জির ক্ষেত্রেও বলা চলে। গাড়ির হুডের নিচেও অবস্থান করছে একটি মিনি পাওয়ার প্ল্যান্ট। এটি তেল থেকে আসা গ্যাসোলিন পুড়িয়ে প্রাচীন সেই শক্তিতে ফিরিয়ে আনছে। এমনকি একটি মোমবাতি বা শক্তির যে কোনো রূপের ক্ষেত্রেই এটি ঘটছে।

একই ঘটনা চলছে আমাদের দেহেও। আমি এটি লিখতে পারছি কেন? কারণ আমার বডিতে আমার খাওয়া খাবারের শক্তি আছে। এই শক্তি আগে ছিল উদ্ভিদ বা প্রাণীতে, যার ফলে আমরা আবার ফিরে যাচ্ছি সেই সালোকসংশ্লেষণে। তবে এই ক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষণ নতুন। এর অর্থ হল, আমার আঙ্গুলের পাওয়া সূর্যের আলো খুব নতুন, সূর্যের কেন্দ্র থেকে আসতে সময়টুকুর কথা বাদ দিলে। যে মহাকর্ষের ফলে সেই ফিউশন শুরু হয়েছিল, তা কিন্তু এক লক্ষ বছরেরই পুরনো।
তো, বল্টু, বুঝলেতো?

বল্টুঃ বুঝলাম। কিন্তু দাঁড়াও, বস্তুর কারণে স্থান- কাল বেঁকে যায় কেন?

সেরেছে! এই ছোকরার হাত থেকে কীভাবে বাঁচি! ঐ চার বছরের বাচ্চাইতো ভালো ছিল।

সূত্রঃ
ওয়েট বাট হোয়াই অবলম্বনে। 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...