Advertisement

শনিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৫

তারকাদের শ্রেণীবিভাগ জানার আগে জেনে নিই, তারকা কারা? 
সহজ ভাষায় যেসব মহাজাগতিক বস্তুপিণ্ড এর কেন্দ্রস্থলে (সাধারণত) তাপ নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিপুল পরিমাণ আলো, তাপ ও বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে তাকে মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় তারকা বা নক্ষত্র (Star) বলে। গ্রহদের (Planet) এর পার্থক্য হল, গ্রহদের নিজস্ব আলো থাকে না। বড় বড় গ্রহদের আকার তো প্রায় বামন তারকাদের কাছাকাছি। সেক্ষেত্রে বাউন্ডারিটা এখানেই। নচেৎ, গ্রহদের উপগ্রহদেরকে গ্রহ বানিয়ে গ্রহকে কেন্দ্র করে একটি গ্রহমণ্ডল বা আরেকটি সৌরজগত গড়ে উঠত।
কিন্তু নিজস্ব আলো না থাকায় গ্রহরা সেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিতে ব্যর্থ হয়। যেমন আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির কথাই ধরা যাক। অল্পের জন্যে বেচারা তারকা হতে পারেনি। কাছাকাছি কিন্তু গিয়েছে। সে কিন্তু এখনও একটি গ্যাস দানব। আর সব তারকাই কিন্তু গ্যাসীয় প্লাজমায় গঠিত। অন্তত জীবনের প্রথম দিকে একটি উল্লেখযোগ্য সময় জুড়ে তাই থাকে।
কি বলতে বলতে কোথায় চলে এলাম!
এখানে আমরা ভর বিবেচনায় রেখে উল্লেখযোগ্য কিছু তারকার পরিচয় জানবো।
তারকাদের শ্রেণির কথা আসলে প্রথমেই আসবে প্রধান ক্রম বা মেইন সিকুয়েন্স (Main Sequence Star) দের কথা।
এরা হল, একেবারে যুবক তারকা। আমরা সাধারণত জানি যে, তারকারা অবিরাম হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি করে আলো, তাপ ও অন্যান্য বিকিরণ নির্গত করে। আসলে কথাটি প্রযোজ্য এই মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রদের জন্য। বর্তমানে মহাবিশ্বে এই যুবকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারকাদের ৯০ ভাগ। এদেরকে যুবক বললাম কারণ, এটাই তারকাদের বয়সের যুবক কাল। এর পর আস্তে আস্তে এরা জীবনের সম্পাতির দিকে পৌঁছে যাবে। অর্থ্যাৎ, মারা যাবে। মারা গেলে কী হবে? এই প্রশ্ন থাকুক আপাতত হিমাগারে।
সূর্য হলো একটি প্রধান ক্রমের নক্ষত্র

এই তারকারা যত বেশি উষ্ণ হয়, তত বেশি উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এই লেখা পড়তে পড়তে মনে হতেই পারে, আমাদের সূর্য মামা কোন ধরণের তারকা। হ্যাঁ, সেই এই দলে। তার মানে আমরা মহাবিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের সদস্য। অবশ্য আকারের দিক থেকে সূর্য মাঝারি মানের তারকা।
মেইন সিকুয়েন্স তারকারা সাধারণত বামনাকৃতির হয়।[১] এদের ভর সূর্যের ২০ গুণ পর্যন্ত হতে পারে এবং উজ্জ্বলতা হতে পারে ২০ হাজার গুণ পর্যন্ত।
এই বামনেরা আবার কয়েক প্রকার হতে পারে।
প্রথম বলা যাক হলুদ বামনদের (Yellow Dwarf) কথা। এরা আকারে ছোট। আমাদের সূর্য পড়ে এই দলেই। এদের ভর সূর্যের খুবই কাছাকাছি (০.৮ গুণ থেকে ১.২ গুণ এর মধ্যে) থাকে। আর তাপমাত্রা থাকে ৫৩০০ থেকে ৬ হাজার কেলভিন এর মধ্যে। এদের অপর নাম জি-টাইপ মেইন সিকুয়েন্স স্টার বা সংক্ষেপে G dwarf star। এই নামের উৎস এদের বর্ণালী।
আরেক ধরণের প্রধান ক্রমের তারকারা হল লোহিত বামন (Red Dwarf)। এরা আরো ক্ষুদ্র, সত্যি বলতে ক্ষুদ্রতম। এদের ভর টেনেটুনে সূর্যের প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত হতে পারে। পাশাপাশি এরা আবার দুর্বল ও ঠাণ্ডা নক্ষত্রও বটে, এদের পৃষ্ঠতাপমাত্রা থাকে ৪ হাজার কেলভিন এর নিচে। অন্য দিকে সূর্যের পৃষ্ঠতাপমাত্রা কিন্তু ৬ হাজার কেলভিনের কাছাকাছি, ৫৭৭৮ কেলভিন। তবে, এই তারকাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয়। প্রায় ৭৭ ভাগ তারকার পরিচয়পত্রেই লোহিত দানব লেখা।  এমনকি, সূর্যের নিকটতম তারকা প্রক্সিমা সেন্টৌরিও একটি লোহিত বামন।
প্রধান ক্রমের তারকাদের মধ্যে এছাড়াও কমলা, সাদা ও নীল তারকাদের দেখা মেলে। এদের মধ্যে কমলাদের সংখ্যা মোটামুটি ভালো থাকলেও সাদা ও নীলের সংখ্যা যথাক্রমে স্বল্পতর।
তারকাদের ৯০ ভাগ সম্পর্কে এখন আমরা জানি। বাহ!
এরা তো সবাই ছিল বামন তারকা। এবার আসা যাক দানবদের (Giant Star) জগতে। এদের ব্যাসার্ধ সূর্যের কয়েকশো গুণ পর্যন্ত হতে পারে।  মূলত, মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রদের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে তখন এদের মূলবস্তু সংকুচিত হতে থাকে, কিন্তু বহিঃস্থ অংশ তখনও প্রসারিত হতে থাকে। এতে করেই এর ব্যাসার্ধ বেড়ে যায়। জীবনের এই সময়েই এদের নাম হয় দানব তারা। এখন থেকে ৫ বিলিয়ন বছর পরে সূর্য এই রকম দানব হয়ে যাবে। তখন, সূর্য বুধ, শুক্র এবং (সম্ভবত) পৃথিবীর কক্ষপথকেও গিলে খাবে। আমার মনে হয়, বলাটা অপ্রাসংগিক হবে না, যে সম্ভবত তখনই কিয়ামত হবে। কারণ, কুর;আন বলছে, এক সময় চন্দ্র ও সূর্য মিশে যাবে। এছাড়াও, হাশরের দিন সূর্য মাথার খুবই নিকটে থাকবে। যাই হোক, আমি ধর্মে অতটা বিশেষজ্ঞ নই।
দানব (Giant Star) নক্ষত্রদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচত হল লোহিত বামন তারকা (Red Giant)। এরা হয় অপেক্ষাকৃত শীতল। ভর হতে পারে সূর্যের আট গুণ পর্যন্ত।। এদের বয়সও কিছুটা বেশি।  পৃথিবী থেকে ৮৮ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গামা ক্রুসিস (Gamma Crucis) হচ্ছে আমাদের নিকটতম লোহিত দানব।

দানব নক্ষরদের মধ্যে এছাড়াও সাবজায়ান্ট, হলুদ দানব ও নীল দানব নক্ষত্রদের দেখা মেলে। নীল দানবেরা প্রধান ক্রম শেষ করে হিলিয়াম পোড়াতে থাকে।  দানব নক্ষত্ররা খুব দ্রুত এই ধাপ পেরিয়ে যায়।
এবার আসি আরো ভারী তারকা সুপারজায়ান্টদের (Supergiant) জগতে। এদের ভর হতে পারে সূর্যের ৮ থেকে ১২ গুণ। আর, ব্যাসার্ধ হয় সূর্যের ৩০ থেকে ১০০০ গুণ অবধি। এরাই তারকাদের জগতে সবচেয়ে ভারী ও বড়। বড় ভাই আর কি। এদের কেউ কেউ এত বড় যে সে একাই আমাদের সমগ্র সৌর জগতের সমান। পৃথিবী থেকে ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বিটলজুস (Betelgeuse) নক্ষত্রটি একটি সুপারজায়ান্ট। এর নামটি এসেছে يد الجوزاء আরবী কথা থেকে যার অর্থ কালপুরুষের হাত (The hand of Orion)। ভুলক্রমে, আরবি অক্ষর ইয়াকে ইংরেজি B এর প্রতিনিধি মনে করায় এর নাম এমন হয়ে গেছে। 
বিটলজুস নক্ষত্রের অবলোহিত ছবি
 এছাড়াও অ্যান্টারিস, রিজেল নক্ষত্ররা হল সুপারজায়ান্ট তারকার উদাহরণ। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল, এই তারকাদেরই পরবর্তী দশা হল, আমাদের সকলের প্রিয় টপিক ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। কেউ কেউ অবশ্য সুপারনোভা দশায়ও থেকে যেতে পারে। সুপারজায়ান্টরা লাল, নীল বা হলুদ হতে পারে।  যেসব সুপারজায়ান্টরা অত্যাধিক হারে ভর হারাতে থাকে, তাদেরকে আবার ডাকা হয় হাইপারজায়ান্ট বলে।

এবার আবার একটু বামনদের জগতে ফিরে যাই। প্রথমে আসি শ্বেত বামনদের (White Dwarf) কথায়। এদের আকার অনেক ক্ষুদ্র, এমনকি প্রায় পৃথিবীর সমান! ভাবা যায়! একটি তারকা একটি গ্রহের সমান। তবে না, ওকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ ওর ঘনত্ব অত্যাধিক বলে ভর কিন্তু অনেক বেশি। প্রধানত কার্বন দ্বারা গঠিত এই তারকাদের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। 

যেসব দানব নক্ষত্রের ভর দুই সৌর ভরের কম থাকে তারা  ধাপের শেষের দিকে যখন বহিঃস্থ আবরণ ছুড়ে দেয় তখনই পরিণত হয় শ্বেত বামনে। ভর আরো বেশি হলে এরা সুপারনোভা বা নিউট্রন স্টার হতে পারতো। ধীরে ধীরে এরা তাপমাত্রা হারিয়ে কালো বামনে পরিণত হয়। আমাদের সূর্যের এক দিন এই দশা হবে। রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম তারকা লুব্ধক ( Sirius ) ইতোমধ্যেই শ্বেত বামন হয়ে বসে আছে। 

এবার বলবো এক ব্যর্থ তারকার কথা। ব্যর্থ হলে তাকে আবার তারকা বলা হয় কেন? 
ব্যর্থ বলার কারণ হচ্ছে, বেচারাদের ভর এত কম যে নিজস্ব অভিকর্ষের প্রভাবে ধসে গিয়ে যে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া শুরু করবে, সেই ক্ষমতা পায়নি। এদের ভর হয় বৃহত্তম গ্রহদের ভর থেকে সবচেয়ে কম ভরের প্রধান ক্রমের তারকাদের মধ্যে। তবে, নিজস্ব উজ্জ্বলতা কিছুটা আছে বৈকি। তাই, আবার গ্রহের খাতায়ও নাম লেখাতে পারেনি। এদের নাম হচ্ছে বাদামী বামন (Brown Dwarf)। সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির ১৩ গুণ ভরযুক্ত বাদামী বামনরা ডিউটেরিয়াম জ্বালিয়ে এবং ৬৫ গুণ ভরবিশিষ্ট বাদামী বামনরা লিথিয়াম জ্বালিয়ে কিছু আলো উৎপাদন করে। এ কারণেই গ্রহদের শ্রেণিশিক্ষক খাতায় এদের নাম তোলেনি। 
বাদামী বামনের তুলনা


এবার বলবো নিউট্রন স্টারদের কথা। এদেরকে এই নামে ডাকার কারণ, সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর এদের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত অত্যাধিক হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে। যেসব দানব নক্ষত্রের ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকে, তারাই এই পরিণতি লাভ করে। এদের ঘনত্ব হয় অনেক বেশি।  মজার কথা হলো, এদের ব্যাস হয় মাত্র ৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার, কিন্তু ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টি মিটারে প্রায় ১ টেরা কেজি (১ টেরা কেজি = ১০০০,০০০,০০০,০০০ কেজি)। চমকে গেলেন? স্বাভাবিক। আমিও নিজেও তাই।  এদের হাইড্রোজেন নির্মিত একটি হালকা বায়ুমণ্ডলও থাকে।

এবার যাই পালসারের কাছে। না, আর বলতে না পেরে মোটর সাইকেলে চেপে রণে ভঙ্গ দিচ্ছি না। নিউট্রন নক্ষত্রের সাথে জড়িত থাকে অতি উচ্চ চৌম্বকক্ষেত্র। তাই, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এটি বেতার স্পন্দন (Radio Pulse) নির্গমণ করে। আর, তখন একে বলে পালসার। 

যাবার আগে আরেক ধরণের তারার কথা বলে যাই। এরা হল, ডাবল স্টার। অনেক সময় দুটো তারকা পৃথিবী থেকে প্রায় একই রেখা বরাবর অবস্থিত হলে এ রকম মনে হয়। আবার অনেক সময় এরা প্রকৃতই একে অপরের সাথে আবদ্ধ। এদেরকে বলা হয় দ্বিমিক তারকা (Binary Star)। এরা উভয়ের ভরকন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। মনে করা হয়, মহাবিশ্বের অর্ধেক তারকাই এমন আচরণ করে থাকে। বর্তমানে ধ্রুব তারা (North Star) একটি বাইনারি স্টার জগতের অংশ। 
বাইনারি স্টার জগত

অনুমতি নিয়ে আরেক ধরণের তারকার কথা বললে, তালিকাটা কিছুটা পূর্ণতা লাভ করতো। তাই জোর করে অনুমতি নিলাম। বলবো, চলক তারকার (Variable Star) কথা। এরা দুই ধরণের। Cepheid variable হচ্ছে সেই সব অস্থিতিশীল তারকা যারা ঘন ঘন নিয়মত ভিত্তিতে আকার ও উজ্জ্বলতা পরিবর্তন করে। আকার বাড়লে উজ্জ্বলতা কমে।
অন্য দিকে, Mira variable হলো, সেই সব তারকা যাদের আকার ও দীপ্তী পাল্টাতে অনেক মাস লেগে যায়। ১৫৯৬ সালে প্রথম আবিষ্কৃত এই ধরণের নক্ষত্র মিরার নামে এদের নামকরণ। 
 

[১] উইকিপিডিয়া 
[২]  EnchantedLearning
Category: articles

শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রশ্নঃ গ্রহ, উপগ্রহের তো লেজ থাকে না। তাহলে,  ধূমকেতু লেজ পায় কোথায়?
উত্তরঃ  ধূমকেতুর লেজের উৎপত্তি এর গাঠনিক কারণে। ধূমকেতু হচ্ছে হিমায়িত বরফ, গ্যাস ও ধূলিকণা নিয়ে গঠিত। একটি ধূমকেতু যখন সূর্যের কাছাকাছি আসে, তখন এটি উত্তপ্ত হতে থাকে। এতে অবস্থিত বরফ তখন বাষ্পে পরিণত হয়ে যায়। ফলে, আগে বরফের ফাঁকে ফাঁকে যে ধূলিকণা আটকে ছিল, সেগুলোও মুক্তহয়ে যায়।
বাষ্পীভূত এই পদার্থসমূহকে সূর্যালোক ও সৌর ঝড়ের চার্জিত কণিকার ধারা ধূমকেতুর পেছন দিকে ঠেলে দেয়। এতেই তৈরি হয় এর লেজ। ধূমকেতু কী কী পদার্থে গঠিত তার উপর নির্ভর করে তার লেজের আকৃতি।
ধূমকেতুর লেজ হয় দুই ধরণের- ধূলিকণা ও গ্যাস আয়ন। ধূলিকণার লেজে থাকে সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রাপ্ত আকারের সমান ছোট্ট ও কঠিন কণিকা।
ধূমকেতুর লেজ

অন্য দিকে, গ্যাস পরমাণু থেকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ইলেক্ট্রনকে আলাদা করে দিয়ে আয়নিত করে ফেললে গ্যাস আয়ন লেজ গঠিত হয়। সৌর বায়ুর কারণেই এই লেজের অবস্থান হয় সূর্যের উলটো দিকে। দুই ধরণের লেজই দৈর্ঘ্যে লক্ষাধিক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ধূমকেতু (Comet) সূর্য থেকে দূরে চলে গেলে এর লেজ ও কোমা (বায়ুমন্ডল) বিলুপ্ত হয়। তখন, এর কেন্দ্রে অবস্থিত পদার্থসমূহ ঘনীভূত হয়ে শক্ত পাথুরে পদার্থে পরিণত হয়।
সূত্রঃ হাবলসাইট
Category: articles

শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৫

মহাবিশ্বের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স দুইটি আলাদা ধারণা তুলে ধরে। অনেক পদার্থবিদেরই বিশ্বাস, এমন কোন তত্ত্ব নিশ্চয়ই আছে যা এই দুই মতবাদকে একই সুতোয় গাঁথবে। এমন মতবাদেরই একজন দাবিদার হল সুপারস্ট্রিং থিওরি বা সংক্ষেপে স্ট্রিং থিওরি (String Theory)। স্ট্রিং শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল দড়ি, সুতা, আঁশ, তন্তু বা মালা।
স্ট্রিং থিওরি অনুসারে কণিকারা আসলে স্ট্রিং এর স্পন্দন



কোন কণা নয়, একটি সুতা মাত্রঃ মাধ্যমিক স্তরের  শিক্ষার্থীরা ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রনসহ মৌলিক কিছু অতিপারমাণবিক কণিকা (Subatomic Particles) সম্পর্কে জানতে পারে। আমাদের জানা মতে, বস্তুর গঠনের পেছনে দায়ী এরাই। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কীভাবে এই কণিকাগুলো চলাচল করে ও একে অপরের সাথে আচরণ করে। কিন্তু এই আচরণ বের করতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে একাধিক প্রশ্নের।
স্ট্রিং এর অবস্থান 

স্ট্রিং থিওরির মতে, এইসব অতিপারমাণবিক কণিকার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। এই তত্ত্ব তাদের বদলে হাজির করছে স্পন্দনশীল (Vibrating) সুতা যা অতি ছোট হওয়ায় বর্তমান যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রত্যেকটি স্ট্রিং বা সুতা একটি লুপ বা ফাঁসে আবদ্ধ থাকতে পারে, আবার মুক্তও থাকতে পারে। স্ট্রিং এর কম্পনকেই আমরা বিভিন্ন কণিকা মনে করি এবং এই কম্পন থেকেই আমরা নানা কণিকার আকার ও ভর ধারণা করি।
বিন্দু-সদৃশ কণিকাকে স্ট্রিং কী করে প্রতিস্থাপন করতে পারে? অতিপারমাণবিক জগতে কোন কিছুর স্পন্দনের কম্পাঙ্ক (frequency) ও তার শক্তির (Energy) মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। অন্য দিকে, আবার আইন্সটাইনের বিখ্যাত E=mc2 সূত্র আমাদের বলে যে, ভর (Mass) ও শক্তিও পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তা বজায় রাখে। তাহলে, কোন বস্তুর কম্পনের হার তথা কম্পাঙ্ক ও ভরেরও একটি সম্পর্ক থাকবে। বন্ধুর বন্ধু যেভাবে বন্ধু হয় অনেকটা সেই রকম আর কি!
স্ট্রিং থিওরির মূলে আছে ঠিক এই সম্পর্কটাই।

মহাবিশ্বের মাত্রা কয়টিঃআইন্সটাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মহাবিশ্বের জন্য অনেকগুলো মাত্রার দরজা খুলে দিল। আপেক্ষিকতা চার মাত্রায় যেমন খাটে তেমনি খাটতে পারে চল্লিশ মাত্রায়ও। কিন্তু স্ট্রিং থিওরি কাজ করে শুধু দশ বা এগার মাত্রায় (Dimension)। স্ট্রিং তত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলে, মহাবিশ্বে মাত্রার সংখ্যা সীমিত হয়ে যাবে।
আমরা শুধু চারটি মাত্রার সাথেই পরিচিত। স্ট্রিং থিওরির বাকি মাত্রাগুলো কোথায়? বিজ্ঞানীদের ধারণা, এগুলো একটি সংকীর্ণ স্থানে বেঁকে আছে। স্থান ক্ষুদ্র হলে, স্ট্রিং এর মাপকাঠিতে (10-33 সে.মি.) আমরা তা দেখতে পাব না।  অথবা, অন্য মাত্রাগুলো এত বড়ও হতে পারে যে তা পরিমাপ করা আমদের সাধ্যাতীত।


প্রমাণের সন্ধানেঃ
১৯৯৬ সালে, সান্তা বারবারার তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এন্ড্রু স্ট্রমিঙ্গার এবং হার্ভাডের কামরান ভাফা একটি ব্ল্যাক হোলের সিমুলেশন করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিজর্ডার বা এনট্রপি ছিল মাত্রাতিরিক্ত। বিজ্ঞানী জ্যাকব বেকেন্সটাইন ও স্টিফেন হকিং ও দুই দশক আগে এমন একটি সিমুলেশন করেছিলেন। তখন কেউ বুঝতে পারেনি, একটা ব্ল্যাক হোলে কী করে এত এনট্রপি থাকতে পারে।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রাপ্ত ব্ল্যাক হোলদের মত করে প্রচলিত পদ্ধতিতে স্ট্রমিঙ্গার ও ভাফা ব্ল্যাক হোল তৈরি করেননি। তাঁরা এটা বানান (সিমুলেশন করেন) স্ট্রিং থিওরি দিয়ে।  ফলে অভিকর্ষের মৌলিক বল যা ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির জন্য দায়ী ও জটিল তত্ত্বের মধ্যে লিঙ্ক তৈরি হয়। প্রথাগত কণার ধারণার বদলে স্ট্রিং তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তাঁরা সম্ভাব্য একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের (সব মৌলিক বল একই উৎস থেকে আসা) বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পেরেছেন।
স্ট্রিং থিওরিই 'থিওরি অভ এবরিথিং' কিনা এটা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু, মহাবিশ্বের অভ্যন্তরীণ জগত ব্যখ্যার অন্যতম দাবিদার এই তত্ত্ব।

আরো পড়ুন নিয়মিত বিভাগঃ ব্ল্যাক হোলের গভীরে

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ String theory
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...