Advertisement

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

প্রশ্নোত্তরঃ চাঁদের চারদিকে বলয় দেখা যাচ্ছে কেন?

প্রশ্নঃ
আজকে রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে এর চারপাশে বলয়ের মতো দেখা গেল। এটা কেন ও কীভাবে হয়েছে? দৃশ্যটা ছিল এ রকমঃ
চাঁদের চারদিকে বলয়
(প্রশ্ন করেছেন, ইমরান হোসাইন) 

উত্তরঃ
ঐ রাতে চাঁদের চারপাশে যে দৃশ্য দেখা গেছে একে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন হ্যালো। এটা চাঁদ ও সূর্য দুটোর ক্ষেত্রেই ঘটে। বাংলায় একে কিরীট বা জ্যোতির্বলয় বলা হয়।
কিন্তু, এই হ্যালো কীভাবে তৈরি হয়?
একটি আদর্শ মুন হ্যালো

এই বলয় তৈরির মূল কারণ উঁচু আকাশের পালকের মতো হালকা নরম মেঘ। এর নাম অলক মেঘ (cirrus cloud)। অনেক সময় আকাশে মেঘের অস্তিত্ব দেখা না গেলেও হ্যালো চোখে পড়ে। এর কারণ, এই মেঘ খুব সহজে চোখে পড়ে না, যদিও উপরের প্রথম ছবিটিতে মেঘের ঘনত্ব বেশি বলে এদেরকে দেখা যাচ্ছে। এই মেঘগুলো আমাদের মাথার প্রায় বিশ হাজার ফুট বা তারও ওপরে চলাচল করে। একটি হিসাব মতে এদের উচ্চতা ভূমি থেকে ৬ থেকে ৯ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত। অথচ ভূমি থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেও অনেক সময় বিভিন্ন মেঘ থাকে।

কিন্তু এই মেঘের সাথে হ্যালোর সম্পর্ক কী? এই অলক মেঘদের মধ্যে থাকে বরফের লক্ষ লক্ষ স্ফটিক। বরফের এই স্ফটিকেরা চাঁদের আলোকে (আলোর মূল উৎস অবশ্যই সূর্য) একই সাথে প্রতিসরিত ও প্রতিফলিত করে। ফলে হ্যালোও অনেকটা রংধনুর গোল হয়। অবশ্য রংধনুর সম্পূর্ণ বলয় আমরা সাধারণত দেখি না, কারণ অধকাংশ ক্ষেত্রেই নিচের অংশ থাকে পৃথিবীর আড়ালে (উল্টো পাশে)। রংধনুর মতোই চাঁদ বা সূর্যের হ্যালোও একেক জায়গা থেকে একেক রকম দেখায়।
বরফের স্ফটিকে আলোর প্রতিসরণ 
বরফের স্ফটিকদের আকার নির্দিষ্ট বলে হ্যালোও সব সময় প্রায় একই সাইজের হয়। এই বলয়ের ব্যাস প্রায় সব সময় ২২ ডিগ্রি হয়। ভাগ্য ভালো হলে অনেক সময় মূল বলয়ের বাইরে ৪৪ ডিগ্রি ব্যাসের আরেকটি বলয় দেখা যায়। আকাশের ডিগ্রির হিসাব সাধারণ কোণের হিসাবের মত নয়। পুরো আকাশ যেহেতু মোট ৩৬০ ডিগ্রি, তাই যে কোনো সময় আমাদের মাথার উপর শুধু ১৮০ ডিগ্রি থাকে, বাকিটা থাকে পৃথিবীর উল্টো পাশে। আর এখানে ডিগ্রির হিসাব হল এই ১৮০ ডিগ্রির মধ্যে কোন বস্তু কতটুকু জায়গা দখল করেছে তা। এটা পূর্ব-পশ্চিমেও হিসাব করা যায়, আবার উত্তর- দক্ষিণ বা অন্য কোনো দিকের ভিত্তিতেও হিসাব করা যায়। আমাদের হাতকে লম্বা করে সামনে বাড়িয়ে দিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করে আকাশের দিকে ধরলে এক মুষ্ঠির পরিমাণ হয় ১০ ডিগ্রি।
হাত দিয়ে আকাশ মাপার কৌশল 

চাঁদ ও সূর্যের আলোর বিভিন্ন কারসাজিতে আরো নানা ধরনের আলোকীয় দৃশ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সান করোনা, মুন করোনা, সান বা মুন ডগ ইত্যাদি।


আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?

সূত্রঃ
১। http://nenes.eas.gatech.edu/Cloud/Clouds.pdf
২। http://home.hiwaay.net/~krcool/Astro/moon/moonring/
৩। http://earthsky.org/space/what-makes-a-halo-around-the-moon


Advertisement 02

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, সিলেট ক্যাডেট কলেজ। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত বই পাঁচটি | সব লেখা | ফেসবুক | পারসোনাল ওয়েবসাইট

2 comments

Write comments
Unknown
AUTHOR
৮ নভেম্বর, ২০১৯ এ ৯:০০ PM delete

আজকে সন্ধ্যার আকাশে এমন বলয় দেখতে পেয়ে মনে প্রশ্ন জাগে যে এমনটা কেন হয়। আপনার উত্তর টি আমার উত্তর প্রাপ্তিতে অনেক সাহায্য করেছে। অনেক ধন্যবাদ

Reply
avatar
Unknown
AUTHOR
৯ এপ্রিল, ২০২০ এ ১:৫৮ AM delete

আজকের কিরীট এর ব্যাপারে আপনার লেখা থেকে জেনে উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ

Reply
avatar

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...