Advertisement

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

পালসার হল এক ধরনের নিউট্রন নক্ষত্র। পালসার শব্দটি আসলে পালসেটিং স্টার (pulsating star) কথার সংক্ষেপ। Pulsate শব্দের অর্থ হল স্পন্দিত হওয়া। এরা নিয়মিত বিরতিতে স্পন্দিত হয় বলেই এই নাম। এরা আবার খুব দ্রুত আবর্তিত হয়। নির্গত করে তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ। নির্গত বেতার সঙ্কেত কাজে লাগিয়েই খুঁজে বের করা হয় এদেরকে।পালসারকে মহাবিশ্বের লাইটহাউজ বা আলোকবর্তিকাও বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ
নিউট্রন নক্ষত্র কাকে বলে?

সৃষ্টিঃ
এরা যেহেতু এক ধরনের নিউট্রন স্টার, তাই সৃষ্টিও ওদের মতোই। ধরুন, একটি নক্ষত্রের ভর সূর্যের ৪ থেকে ৮ গুণ। জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি মৃত্যুমুখে পতিত হবার সময় পরিণত হয় নিউট্রন নক্ষত্রে। ঘটে একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ। নক্ষত্রের বাইরের অংশ ছিটকে যায় মহাশূন্যে। ভেতরের অংশ গুটিয়ে ছোট্ট হয়ে যায়। এ সময় এর মহাকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে এর মধ্যে থাকা প্রোটন ও ইলেকট্রন মিলিত হয়ে নিউট্রন হয়ে যায়। এদের ভর আরো বেশি হলে হয় ব্ল্যাক হোল। আর কম হলে শ্বেত বামন (white dwarf)।

পালসার ও একটি সঙ্গী তারা 

নক্ষত্রের ভর ১ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ২ এর মধ্যে থাকলেও এরা সুপারনোভার মতো বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তবে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবার জন্যে এ পরিমাণ ভর যথেষ্ট নয়। এরা বরং নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়। এদেরই কেউ কেউ পরিণত হয় পালসারে। কেউ বা আবার হয় ম্যাগনেটার

সাইজে ছোট্ট হয়ে গেলেও এরা  কৌণিক ভরবেগ অক্ষুণ্ণ রাখে। কিন্তু সাইজ ছোট্ট হয়ে যাবার কারণে এ সময় আবর্তন বেগ প্রচণ্ড বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এরা প্রতি সেকেন্ডে বহুবার ঘুরে। এই ক্ষুদ্র ও খুব ঘন এই বস্তুরা এদের চৌম্বক ক্ষেত্র রেখা বরাবর নির্গত করে খুব শক্তিশালী বিকিরণ। বিকিরণ যে সব সময় ঘূর্ণন অক্ষের বরাবরেই থাকবে, এমন কোনো কথা নেই।


ইতিহাসঃ
১৯৬৭ সালে জোকেলিন বেল বার্নেল ও অ্যান্টনি হিউইশ প্রথম পালসার আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী মহল বিস্ময়ে হতবাক। কারণ, একেবারে নিয়মিত বিরতিতে পাওয়া যাচ্ছে বেতার সঙ্কেত। আকাশের একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে পাওয়া যাচ্ছিল সঙ্কেত। ঠিক ১ দশমিক ৩৩ সেকেন্ড পর পর সঙ্কেত খুব তীব্র হচ্ছিল। এত নিয়মিত বিরতিতে সঙ্কেত আসছে দেখে কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ তো ভেবেই বসেন, এটা হয়ত অন্য কোনো মহাজাগতিক সভ্যতার কাজ!

বার্নেল ও হিউইশ নিশ্চিত ছিলেন, এটা নিতান্তই প্রাকৃতিক ঘটনা। কোনো সভ্যতার কাজ নয়। তবু তাঁরা এর নাম দিলেন এলজিএম-১ (LGM-1)। এলজিএম মানে হল লিটল গ্রিন ম্যান বা ক্ষুদ্র সবুজ মানব। প্রথম আবিষ্কৃত পালসারটির নাম ছিল পিএসআর বি১৯১৯+২১ ( PSR B1919+21)। এর পরে আরও পালসার আবিষ্কৃত হতে থাকলে এদের প্রকৃত রহস্য আস্তে আস্তে উন্মোচিত হতে থাকে।

কিছু দিন পর কাঁকড়া নেবুলায় আরেকটি পালসার পাওয়া যায়। এর পর্যায়কাল মাত্র ৩৩ মিলিসেকেন্ড। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬০০ পালসার পাওয়া গেছে। এদের একটি তো মাত্র এক সেকেন্ডে ৭১৬ টি সঙ্কেত প্রেরণ করে। পরে পালসারদেরকে পাওয়া গেল বাইনারি জগতেও। এর ফলে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের আরেকটি স্বীকৃতি অর্জন হয়েছিল। ১৯৮২ সালে পাওয়া গেল আরেকটি বিস্ময়কর পালসার। এর আবর্তনকাল মাত্র ১ দশমিক ৬ মাইক্রো সেকেন্ড।
সৌরজগতের বাইরে প্রথম কোনো গ্রহের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছিল একটি পালসারের পাশে।

মজার তথ্যঃ
প্রথমে যখন  একটি পালসারের জন্ম হয়, তখন এর শক্তি ও আবর্তনের গতি থাকে খুব উচ্চ। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত করতে করতে এটি শক্তি হারিয়ে ফেলে। কমে যায় ঘুর্ণনের গতিও। ১ থেকে ১০ কোটি বছরের মধ্যে এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সক্রিয় থাকার সময় এরা দারুণভাবে সময় মেনে চলে। এমনকি সময়ের হিসাব রাখতে জ্যোতির্বিদরাও এদের ওপর ভরসা রাখেন। কিছু কিছু পালসারের সূক্ষ্মতা  হার মানায় আণবিক ঘড়িকেও

সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/25376/pulsars/
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Pulsar
Category: articles

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটা এক ধরনের নক্ষত্র। তবে সাধারণ নক্ষত্রদের চেয়ে আলাদা। এদের ব্যাস মাত্র ২০ কিলোমিটারের মতো। আর ভর সূর্যের প্রায় ১ দশমিক ৪ গুণ। তার মানে অতি সামান্য জায়গায় অনেক বেশি ভর। আপনি যদি নিউট্রন নক্ষত্রের মাত্র এক চা-চামচ পরিমাণ নিয়ে পৃথিবীতে ওজোন করেন, দেখা যাবে ওটাই হয়ে যাচ্ছে একশ কোটি টন!

নিউট্রন স্টার 

বেশি ঘনত্ব ও ছোট্ট সাইজের কারণে এদের মহাকর্ষ হয় অত্যন্ত শক্তিশালী। পৃষ্ঠে মহাকর্ষের তীব্রতা থাকে পৃথিবীর 2 x 1011  গুণ (২ এর পরে ১১টি শূন্য দিলে যে সংখ্যা হবে)। এদের থাকে অতি শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রও। তাও পৃথিবীর চেয়েও ১০ লক্ষ গুণ!

নক্ষত্রদের জীবনের একটি অন্তিম পরিণতি হল এই নিউট্রন স্টার। যেসব ভারী নক্ষত্রের ভর শুরুতে সূর্যের ৪ থেকে ৮ গুণ থাকে, তারাই পরবর্তীতে পরিণত হয় নিউট্রন স্টার-এ। নিউক্লিয়ার জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এদের মধ্যে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণের সময় এদের বাইরের স্তর আলাদা হয়ে যায়। নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চল মহাকর্ষের প্রভাবে গুটিয়ে যায়। এটা এত বেশি সঙ্কুচিত হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন মিলিত হয়ে নিউট্রনে পরিণত হয়। ফলে এরা গঠিত হয় শুধুই নিউট্রন দিয়ে! আর নামটি নিউট্রন স্টার হয়েছে সে জন্যেই।

আরো পড়ুনঃ 
 নক্ষত্রের জীবন চক্র 

সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে এরা একাকীও থাকতে পারে, আবার অন্য কোনো তারকার সাথে মিলে বাইনারি স্টার হিসেবে আচরণ করতে পারে (বাইনারি স্টাররা (দুটি নক্ষত্র) একটি নির্দিষ্ট যৌথ ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে)। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, এমন চারটি নিউট্রন নক্ষত্র পাওয়া গেছে যাদের চারপাশে গ্রহ আছে।


পৃথিবীর তুলনায় নিউট্রন নক্ষত্রের সাইজ

নিউট্রন নক্ষত্ররা বাইনারি জগতের সদস্য হলে ভর মাপা সহজ হয়ে যায়। রেডিও ও এক্স-রে  টেলিস্কোপের সাহায্যে অনেকগুলো নিউট্রন স্টারকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এ পর্যবেক্ষণ  থেকেই জানা গেছে, এদের ভর সূর্যের প্রায় ১ দশমিক ৪ গুণ হয়। বাইনারি জগতের দুটো সদ্যসের একটি সম্পর্কে কিছু জানা না থাকলেও অপরটির তথ্য কাজে লাগিয়ে বের করে ফেলা যায়, সেটি আসলে আরেকটি নিউট্রন নক্ষত্র, নাকি ব্ল্যাক হোল

আবর্তনশীল নিউট্রন স্টারদেরকে বলা হয় পালসার

আরো পড়ুন নিয়মিত ধারাবাহিকঃ
 ব্ল্যাক হোলের গভীরে
↠ পালসার কাকে বলে?

সূত্রঃ
১। http://imagine.gsfc.nasa.gov/science/objects/pulsars1.html
Category: articles

সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬

ঢাকার কৃত্রিম আলোয় ঢাকা পড়ে যায় অসংখ্য তারা। তবে শুক্র গ্রহ কিন্তু যে কোনো তারার চেয়েও বেশি উজ্জ্বল। ইদানিং শুক্র আবার খুব বেশি উজ্জ্বল। সন্ধ্যায় দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে তাকালে শুরুতে চমকেই যেতে হয়। মনে হয় দূরের কোনো টাওয়ারের আলো জ্বলছে বুঝি! ওটা আসলে শুক্র- সন্ধ্যাতারা।

খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে তোলা শুক্র গ্রহের ছবি।
তুলেছেনঃ হাওলাদার আব্দুল কাইয়ুম
আলোক দুষণের জন্যে বিখ্যাত গুলিস্তানেও দেখা যাচ্ছে শুক্র।
আরো পড়ুনঃ
Category: articles

শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬


একটা সময় পৃথিবীর অবস্থা এমন ছিল যে, সবাই মনে করত কোনো পদার্থকে চিরকাল ধরে টুকরা করা যাবে। টুকরা করতে করতে এমন কোনো ক্ষুদ্রতম টুকরা পাওয়া যাবে না, যাকে আরও বেশি ভাঙা অসম্ভব হবে। কিন্তু, ডেমোক্রিটাস বললেন বিপরীত কথা। পরমাণু বলে এমন কিছু আছে যা অবিভাজ্য। তারপর ডালটন সাহেবও তার সাথে সুর মেলালেন। কিন্তু বিজ্ঞানী থমসন, বোর, রাদারফোর্ড প্রমুখরা দেখালেন যে, পরমাণু মাঝে নিউক্লিয়াস আছে। তাতে আবার প্রোটন, নিউট্রন আছে। নিউক্লিয়াসের চারপাশে সদা সর্বদা ইলেকট্রনও ঘুর্ণায়মান আছে। এই প্রোটন, নিউট্রনের ভর নির্ণয় করতেও বিজ্ঞানীরা সফল হয়েছিলেন। কিন্তু, অনেকে প্রশ্ন করল যে, প্রোটন আর নিউট্রন ভরই বা পেল কোথায়? চার্জই বা কীভাবে পেল?

এই রকম আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করলেন বিজ্ঞানী মারি গেল ম্যান। তিনি বললেন, প্রোটন আর নিউট্রনের মাঝে আছে কোয়ার্ক, যা ফার্মিয়ন শ্রেণির কণা। হরেক রকমের কোয়ার্ক কণা দ্বারা এই সকল পারমাণবিক কণারা গঠিত। তার মানে কোয়ার্করা হল অতি-পারমাণবিক (subatomic particle) কণা। তিনি বললেন, কোয়ার্করা প্রচন্ড বেগে প্রোটনের মাঝে চলাচল করছে। তাদের গতির কারণে আপেক্ষিক ভরের সৃষ্টি হয়। এভাবে প্রোটন, নিউট্রনের ভরের সৃষ্টি হয়। তিনি দেখালেন, একটা প্রোটন দুইটা আপ ও একটা ডাউন কোয়ার্ক- মোট ৩টা কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি। তেমনি একটা নিউট্রন দুইটা ডাউন ও একটা আপ কোয়ার্ক দিয়ে তৈরি।

প্রোটন ও নিউট্রন তৈরি আপ ও ডাউন কোয়ার্কের মিশ্রণে।

তাহলে মনে আবার প্রশ্ন জাগতে পারে, কোয়ার্ক কি তাহলে দুই প্রকার? আপ এবং ডাউন? না, কোয়ার্ক হল ৬ প্রকার। আপ ও ডাউন কোয়ার্ক ছাড়াও আছে চার্ম, স্ট্রেঞ্জ, টপ ও বটম কোয়ার্ক। তবে প্রোটন ও নিউট্রনে শুধু আপ ও ডাউন কোয়ার্কই থাকে। এই আপ কোয়ার্কের চার্জ হল +$\frac{২}{৩}$ এবং ডাউন কোয়ার্কের চার্জ হল -$\frac{১}{৩}$. একটু হিসাব নিকাশ করলে দেখা যায় প্রোটনে যেহেতু ২টা আপ ও ১টা ডাউন কোয়ার্ক আছে, তাই এর চার্জ +১ আবার নিউট্রনে যেহেতু ২টা ডাউন ও ১টা আপ কোয়ার্ক আছে, তাই এর চার্জ শূন্য। কত সুন্দর করে চার্জের হিসাব মিলে গেল। তাই না!! তবে চার্জের হিসাব মিললেও ভরজনিত কিছু সমস্যা থেকেই গেল।

প্রোটন ও  নিউট্রনের চার্জের হিসাব 

সেই সমস্যায় একটু পরে আসছি। আপাতত পারমাণবিক কণারা যে কোয়ার্ক থেকে ভর পেয়ে আসছে সেটা জানা গেল। সাধারণত, এই তথ্য পেয়ে অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। মনে করে নেয় যে, ভরের সবটুকুই কোয়ার্ক থেকে আসছে। আসলে কিন্তু তা নয়। কোয়ার্ক শুধুমাত্র স্থিতিভর(নিশ্চল ভর) প্রদান করে। কণা-পদার্থবিদ্যায় ভর বলতে স্থিতিভরকেই বুঝানো হয়। যেমন: মানবদেহের স্থিতিভর প্রায় এক কেজির মত। অবশিষ্ট যে ভর পাওয়া যায় তা হল কোয়ার্কের গতিজনিত ভর বা আপেক্ষিক ভর। কোয়ার্কসহ সকল ফার্মিয়নরা কোয়ান্টাম জগতে আলোর কাছাকাছি বেগে মিথস্ক্রিয়া দেখায়। তাই এক্ষেত্রে ভরবৃদ্ধি ঘটে। সুতরাং, ভরের ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখা প্রয়োজন, তা নাহলে কণা-পদার্থবিদ্যার সমীকরণে গরমিল হয়ে যেতে পারে।

সমস্যাটিতে ফিরে আসি। প্রোটন, নিউট্রন তো ভর পেল। কিন্তু, প্রশ্নকারীরা বলল, কোয়ার্কের ভরই বা কীভাবে এল? এবার বিজ্ঞানীরা খুব ভাল একটা উত্তর দিলেন। তারা বললেন, হিগস নামের একটা ক্ষেত্র আছে, যেই ক্ষেত্রে কোনো কোয়ার্ক কণা প্রবেশ করলেই তার ভর তৈরি হয়ে যায়। বলা যায়, হিগস ক্ষেত্রে চলাচলকারী কণাদের ভর হিগস ক্ষেত্র প্রদান করে। এই হিগস ক্ষেত্র ও কণাদের অস্তিত্বও বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি খুঁজে পেয়েছেন। ২০১২ সালে। সুতরাং ভর নিয়ে আর কোনো সমস্যা রইলনা। অনেকে হয়ত প্রশ্ন করবে, হিগস ক্ষেত্র ভর কীভাবে দেয়? হিগস ক্ষেত্রের ভরই কোথা থেকে এল? এটা অন্য একটা আলোচনার বিষয় হলেও সংক্ষেপে বলছি।

হিগস ক্ষেত্রের একটি কোয়ান্টা আছে। যার নাম হিগস কণা। এই বোসন কণা অন্য কণাদের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে বাঁধা প্রদান করে। হিগস ক্ষেত্রে চলাচলকারী কণাদের এই বাঁধাকেই আমরা ভর হিসেবে দেখি। পুরো মহাবিশ্ব হিগস কণা দিয়ে পূর্ণ। সৃষ্টিলগ্নের পর মহাবিশ্ব যখন স্থিতাবস্থায় আসতে থাকে, তখন হিগস কণা জমতে(condensed) থাকে। এই জমার প্রক্রিয়াতেই হিগস কণা নিজে ভর পায়। মজার বিষয় হল হিগস ক্ষেত্রের উৎপত্তি যে ক্ষেত্র থেকে তা কাল্পনিক ক্ষেত্র। এই কাল্পনিক ক্ষেত্র কীভাবে বাস্তব ভর দেয়, তাও সমাধান করতে বিজ্ঞানীরা সক্ষম হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত লিখব শীঘ্রই। 

উল্লেখ্য যে, ইলেকট্রন কিন্তু কোনো আপ বা ডাউন কোয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত নয়। ইলেকট্রন একেবারেই মৌলিক কণা। একে আর টুকরা করা যায় না। কোয়ার্ক থাকে প্রোটন আর নিউট্রনের মাঝে। এর ভিতর অনেক কথা আছে। যেমন, আপ ও ডাউন কোয়ার্ক কীভাবে প্রোটন অথবা নিউট্রনের ভিতরে একত্রে আছে? এরা মূলত গ্লুয়ন নামক (আঠা বা গ্লু থেকে নাম করা হয়েছে) এক প্রকার কণা দ্বারা একত্রে যুক্ত থাকে। গ্লুয়নের গল্পের রাজ্য কোয়ার্কের চেয়েও বিশাল। সেই গল্প আপাতত তোলা থাক।

এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Murray_Gell-Mann
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Higgs_boson
Category: articles

বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬

দুইটি গ্রহের উজ্জ্বলতা এ মাসে চোখে পড়ার মতো। শুক্র বৃহস্পতি। দুই জন আকাশের দুই প্রান্তে আলো ছড়াচ্ছে। শুক্র পশ্চিম আকাশে, আর বৃহস্পতি পুবাকাশে। শুক্র আছে সন্ধ্যার আকাশে, আর বৃহস্পতি ভোরে। নভেম্বরের শুরুতে আরও দুই গ্রহ- মঙ্গল ও শনি ক্রমেই চলে আসছে শুক্রের দিকে। বিস্তারিত জেনে নিই।

ফটোঃ Predrag Agatonovic

শুক্রঃ 
শুক্রকেই আমরা সন্ধ্যাতার বলি। ভোরের আকাশে থাকার সময় একেই আমরা বলি শুকতারা। তবে আপাতত এটি আছে শুধু সন্ধ্যার আকাশেই। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তু এটি। উজ্জ্বল যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও।

আরও পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প

এ মাসে শুক্র ক্রমেই দিগন্তের উপরে উঠতে থাকবে। অর্থ্যাৎ, সন্ধ্যার একই সময়ে তাকালে একে তুলনামূলকভাবে দিগন্তের উপরে দেখা যাবে। মাসের শুরুতে সন্ধ্যার প্রায় দুই ঘণ্টা পরেই অস্ত গেলেও মাসের শেষে অস্ত যাবে প্রায় তিন ঘণ্টা পর।

সন্ধ্যার আকাশে শুক্র ও অন্যান্য গ্রহ 
মঙ্গলঃ
মে, জুন মাসে মঙ্গল ছিল গ্রহদের মধ্যে সেরা। কিন্তু এখন এক দিকে নিজেই তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে। আবার শুক্রও ফিরে এসেছে সদর্পে। দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে তাকালে শুক্র থেকে কিছুটা ওপরে চোখে পড়বে লাল এই গ্রহটিকে। পুরো মাসই রাতের প্রায় ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এটি থাকবে পশ্চিমের আকাশে। আগামী বছর জুলাই মাসে মঙ্গল সন্ধ্যার আকাশ থেকে চলে আসবে ভোরের পুবাকাশে।

শনিঃ
আমরা খালি চোখে দেখতে পারি এমন বস্তুদের মধ্যে শনি সবচেয়ে দূরের জিনিস। গ্রহটি এ মাসে ক্রমেই দিগন্তের দিকে হারিয়ে যাচ্ছে। মাসের শেষ দিকে এটি সূর্যাস্তের প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই ডুবে যাবে।

বৃহস্পতিঃ
কিছু দিন সূর্যের আভায় চাপা পড়ে গত মাসে বৃহস্পতি ভোরের আকাশে হাজির হয়েছিল। ভোরের দিকে পুবাকাশে তাকালেই দেখা যাবে। ঐ দিকের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তুটিই এটি। ভুল হওয়া তাই এক প্রকার অসম্ভব। মাসের শুরুতে সূর্যোদয়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে উদিত হলেও মাসের শেষ দিকে উদিত হবে চার ঘণ্টা আগে।

বুধকে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। এটি আমাদের সাথে সব সময় লুকোচরি খেলতে থাকে। অক্টোবরের ২৭ তারিখে এটি সন্ধ্যার আকাশে ফিরে এসেছিল। কিন্তু এ মাসের পুরোটাই সূর্যের আলো একে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এটি সব সময় সূর্যের কাছাকাছি সময়ে উদয় অস্ত ঘটায় বলেই এ অবস্থা।


সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/astronomy-essentials/visible-planets-tonight-mars-jupiter-venus-saturn-mercury
Category: articles

রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৬

আগের পর্বের লিঙ্কঃ ১ম পর্ব, ২য় পর্ব

আমাদের মহাবিশ্বে মোট ৪টি মৌলিক বল ক্রিয়াশীল রয়েছে। সবল নিউক্লিয় বল, দুর্বল নিউক্লিয় বল, তড়িচ্চুম্বকীয় বল ও মহাকর্ষীয় বল। এসব বলের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পাল্লা ও ভিন্ন ভিন্ন শক্তি। এই বলগুলোর মাঝে মহাকর্ষীয় বলের পাল্লা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও এটি সবচেয়ে দুর্বল বল। তড়িচ্চুম্বকীয় বলের পাল্লাও অসীমতক, কিন্তু এটি মহাকর্ষের তুলনায় কয়েকগুণ শক্তিশালী বল। সবল এবং দুর্বল নিউক্লিয় বলের পাল্লা অতি ক্ষুদ্র, এরা অতি-পারমাণবিক জগতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। 

নামে উলটা হলেও দুর্বল নিওক্লিয় বল মহাকর্ষের চেয়ে অনেকগুণ শক্তিশালী। অবশ্য বাকী দুই বলের চেয়ে সে ঠিকই দুর্বল। সবল নিউক্লিয় বল ৪টি বলের মাঝে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী বল। সমস্যা হল  এই বল কার্যকর থাকে নিউক্লিয়াসের ভেতরেই। এর চেয়ে বেশি পাল্লায় এই বল কার্যকর থাকে না।

বলবাহক কণিকাঃ

বিভিন্ন ধরনের বোসন কণা

৪টি মৌলিক বলের মাঝে ৩টি মৌলিক বলেরই উৎপত্তি হয় বলবাহক কণিকাদের আদান-প্রদানের মাধ্যমে। স্ট্যান্ডার্ড মডেলে বলবাহক কণিকাদের গ্রুপকে বলা হয় 'বোসন' গ্রুপ। বোসন নামটি উপমহাদেশীয় বিজ্ঞানী সত্যেন বোস এর নামানুসারেই এসেছে। ফার্মিয়ন কণিকাগুলি শক্তির বিচ্ছিন্ন পরিবহন ঘটায় নিজেদের মাঝে বোসন কণিকাদের আদান-প্রদানের মাধ্যমে। 

প্রতিটা মৌলিক বলের সাথেই একটা সম্পর্কযুক্ত বোসন কণিকা রয়েছে। যেমন, সবল নিউক্লিয় বলের বাহক হল গ্লুওন (g) ও মেসন শ্রেণির বোসন কণিকা, তড়িচ্চুম্বকীয় বলের বাহক হল ফোটন এবং দুর্বল নিউক্লিয় বলের জন্য দায়ী হল ডব্লিউ বোসন ((W+, W-) ও জেড বোসন ((Z)। মহাকর্ষীয় বলের জন্য দায়ী কোনো কণিকা তথা মহাকর্ষ বলের বাহক এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে মহাকর্ষ বলের বাহক হল গ্র‍্যাভিটন (G) নামক অনুকল্পিত কণিকা। 
চিত্রঃ মৌলিক বল

স্ট্যান্ডার্ড মডেল তড়িচ্চুম্বকীয় বল, দুর্বল ও সবল নিউক্লিয় বল এবং এই বল তিনটির বাহক কণিকাগুলোকে একই নিয়মের অধীনে আবদ্ধ করেছে। সাথে সাথে এটাও ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছে যে, কেমন করে এই বলগুলি ফার্মিয়নদের উপর প্রতিক্রিয়া করে। যাই হোক, আসল কথা হল আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের সবচেয়ে বেশি পরিচিত বল মহাকর্ষীয় বল, স্ট্যান্ডার্ড মডেলের অন্তর্ভূক্ত নয়। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের দ্বারা মহাকর্ষীয় বল ব্যাখ্যা করা এবং এই মডেলের মাঝে মহাকর্ষীয় বলের বাহকের স্থান করে দেয়াটা বিজ্ঞানীদের নিকট একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আণবিক জগতের পদার্থবিজ্ঞান ব্যাখ্যা করার জন্য  উৎপত্তি হয়েছিল কোয়ান্টাম তত্ত্বের। আবার, বৃহৎ বস্তুর পদার্থবিজ্ঞান ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আপেক্ষিকতার সার্বিক তত্ত্ব ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, এই দুইটি তত্ত্ব একইসাথে ব্যবহারযোগ্য নয়। এখন পর্যন্ত কোনো বিজ্ঞানীই স্ট্যান্ডার্ড মডেলের আলোকে এই দুই তত্ত্বকে গাণিতিকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ দেখাতে পারেননি। কিন্তু কণা পদার্থবিদ্যার জন্য এটা তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়। কেননা, যখন মহাকর্ষকে কণিকাদের ক্ষুদ্র জগতে বিবেচনা করা হয়, তখন মহাকর্ষীয় প্রভাব এত ক্ষুদ্র হয় যে তা বর্জনযোগ্য। অনেক ফার্মিয়ন মিলে যখন চেয়ার- টেবিল বা মানবদেহ কিংবা গ্রহ-নক্ষত্রের মতো বড় বড় বস্তু তৈরি করে তখনই মহাকর্ষ অনুভূত হয়। তাই, মহাকর্ষীয় বলের মতো একটা মৌলিক বলকে হিসেবের বাইরে রেখেও বাকি সব ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড মডেল দারুণভাবে কাজ করে।

বলবাহক কণিকা কীভাবে বল বহন করেঃ

কল্পনা করুন, একটা মাঠে দুই বন্ধু বল ছোড়াছুড়ি খেলছে। তারা খুব একটা জোরে বল ছুড়তে পারে না, আবার বলকে মাটিতে পড়তেও দিতে চায় না। তাহলে নিশ্চয় তাদেরকে অতি কাছাকাছি অবস্থান করতে হবে এবং বল ছোড়াছুড়ি নিরবিচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যেতে হবে। তারা এই শর্ত মেনে ইচ্ছা করলেই দূরে যেতে পারবে না। কারণ, তাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব বেড়ে গেলে তারা বলটা আর ধরতে পারবে না। তাই তাদেরকে কাছাকাছিই থাকতে হবে।

ফার্মিয়ন কণিকারাও এইরকম কিছু বোসন কণিকার বল নিয়ে ছোড়াছুড়ি করে বলে নিজেরা আলাদা হতে পারে না, একত্রে থাকে। আলাদা ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ফার্মিয়নের জন্য আলাদা আলাদা বোসন কণিকা রয়েছে। যেমন, পরমাণুর প্রোটন ও নিউট্রনের কোয়ার্কেরা পরস্পরের মাঝে পাই মেসন বা পাইওন নামের একজাতীয় বোসন কণিকা ছোড়াছুড়ি করে অর্থাৎ এইক্ষেত্রে সবল নিউক্লিউ বলের জন্য এই পাই মেসন দায়ী। এইরকম প্রোটনের মাঝে কোয়ার্কেরা পরস্পর গ্লুওন নামক বোসন কণিকা আদান প্রদান করতেই থাকে বলে তারা একত্রে থাকে।

কোন কণিকার সাথে কোন কণিকা মিথস্ক্রিয়া করে তা জানতে নিচের ছবিটি সহায়ক হবে।
চিত্রঃ বিভিন্ন বল ও কণার সম্পর্ক 


বোসনঃ

স্ট্যান্ডার্ড মডেলের বোসন শ্রেণির কণিকারা পাউলির বর্জন নীতি মেনে চলে না। অর্থাৎ একই কোয়ান্টাম অবস্থায় এদের অসীম সংখ্যক কণিকা অবস্থান করতে পারে, যেখানে ফার্মিয়নরা একই কোয়ান্টাম অবস্থায় মাত্র একটা কণিকাই অবস্থান করতে পারে। বোসন কণিকাদের এই বৈশিষ্ট্য বলা হয় বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন থেকে বেরিয়ে এসেছে। এই কণিকাদের স্পিন সংখ্যা অবশ্যই পূর্ণ সংখ্যা হবে, ফার্মিয়নদের মত অপূর্ণ নয়। তবে দুইটি অর্ধপূর্ণ স্পিনবিশিষ্ট ফার্মিয়ন মিলে একটা পূর্ণ স্পিনবিশিষ্ট বোসন হতে পারে। যেমন: মেসন একপ্রকার বোসন। অতি-পরিবাহীতা, অতি-প্রবাহীতা ইত্যাদি বোসন কণিকার বৈশিষ্ট্য।

বোসন কণিকার গুরত্ব অনেক। কেননা, বোসন কণিকা না থাকলে ফার্মিয়নরা একত্র হতে পারত না। আবার আলোর জন্য দায়ী কণিকা ফোটনও একপ্রকার বোসন। যদি ফোটন না থাকত, তবে প্রাণিজগতকে দৃষ্টিশক্তির জন্য অন্য কোনো বোসন সংবেদী চোখ ব্যবহার করতে হত, যেটা তুলনামূলক জটিল হত। কসমোলজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই কণিকা শ্রেণিরই অন্তর্ভূক্ত কণিকা হল কল্পিত গ্র‍্যাভিটন কণিকা। মহাকর্ষকে অন্য সব বলের সাথে একীভূত করে স্ট্যান্ডার্ড মডেল থিওরি অব এভরিথিং এর দাবিদার হতে চাইলে ২ স্পিন বিশিষ্ট, চার্জহীন এই বোসন খুঁজে পাওয়া এখন সময়ের দাবি। তাই, বোসন কণিকাকে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের অন্যতম একটা সৌন্দর্য বলে আখ্যায়িত করাই যায়।
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি জিরো টু ইনফিনিটি ম্যাগাজিনের অক্টোবর সংখ্যায় প্রচ্ছদ হয়েছিল।] 


নাম ট্যাবির নক্ষত্র। এ রকম রহস্যময় কোনো নক্ষত্রের সাথে জ্যোতির্বিদদের আগে কোনো রকম পরিচয় ছিল না। নক্ষত্রটি সময় সময় অস্বাভাবিক হারে উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে। এর পেছনে কেউ দায়ী করছেন বড়ো কোন গ্রহকে, কেউ বলছেন এক ঝাঁক ধূমকেতুর কথা। কেউ আবার এক ধাপ সামনে গিয়ে দোষ চাপাচ্ছেন এলিয়েনদের হাতে। সত্যিকারের ঘটনা এখনো এক রহস্য। ইদানিং নিয়মিত খবর হচ্ছে নক্ষত্রটি। 

এর পেছনে আঠার মতো লেগে থাকা এবং বহুলভাবে প্রচার ও পর্যবেক্ষণ শুরু করতে ভূমিকায় রাখায় জ্যোতির্বিদি তাবেথা বয়াজিয়ানের নাম অনুসারে একে ট্যাবির নক্ষত্র (Tabby’s Star) বলে ডাকা হচ্ছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি নক্ষত্রটির অদ্ভুত আচরণ নিয়ে কথা বলেন টেড টক- এ। অপূর্ব সেই লেকচারে তিনি কী বলেছিলেন তার সারসংক্ষেপ জেনে নিলেই অনেক কিছু জানা হয়ে যাবে। চলুন, শুনে আসি। 

“অসাধারণ দাবীর পক্ষে অসাধারণ প্রমাণ থাকতে হয়। একজন জ্যোতির্বিদ হিসেবে সর্বশেষ উপায় হিসেবে এলিয়েন তত্ত্বের কথা মনে করিয়ে দেওয়া আমার কাজ ও দায়িত্ব। এখন আমি এ সম্পর্কে একটি ঘটনা বলতে চাই। গল্পটির বিষবস্তুর হল নাসার অভিযান, কিছু সাধারণ মানুষ এবং আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে রহস্যময় নক্ষত্র। 

আরো দেখুনঃ
নক্ষত্রের পরিচয়

২০০৯ সালে নাসার কেপলার মিশনের মাধ্যমে ঘটনার শুরু। কেপলারের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আমাদের সৌরজগতের বাইরে গ্রহের খোঁজ করা। মহাকাশের একটি বিশেষ দিকে১ নজর রেখে এটি তা করতে থাকে। এবং এই বিশেষ দিকটিতে এটি এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার নক্ষত্রের উপর অবিরত নজর রাখে। প্রতি ৩০ মিনিটে সংগ্রহ করতে থাকে তথ্য। এটি খোঁজ করছিল অতিক্রমণ (transit)নামক ঘটনাটির। আমাদের চোখের সামনে একটি গ্রহ যখন একটি নক্ষত্রের উপর দিয়ে অতিক্রম করে চলে যায়, তখন তাকে আমরা বলি গ্রহটির অতিক্রমণ। এটি ঘটার সময় নক্ষত্রের সামান্য পরিমাণ আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। 
চিত্রঃ গ্রহদের অতিক্রমণের সময়ের প্রতিক্রিয়া

অতএব, নাসা কেপলারের সবগুলো উপাত্ত থেকে অতিক্রমণ খুঁজে বের করার জন্যে আধুনিক কম্পিউটার তৈরি করে। প্রথমবার উপাত্ত প্রকাশ করা হলে ইয়েল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদদের মাথায় একটি মজার চিন্তা ঘুরপাক খায়। কেমন হবে যদি কম্পিউটার কিছু জিনিস মিস করে ফেলে?   
ফলে আমরা একটি দলগত প্রকল্প হাতে নিলাম। ‘প্ল্যানেট হান্টারস’ বা ‘গ্রহ শিকারি’ নামের এই প্রোজেক্টের সবাই মেতে উঠলেন উপাত্ত নিয়ে। নকশা খুঁজে বের করার ব্যাপারে মানব মস্তিষ্কের ক্ষমতা অসাধারণ। অনেক সময় এই ক্ষমতার কাছে হার মানে কম্পিউটারও । কিন্তু এই প্রকল্পটি চারদিক থেকে সন্দেহের শিকার হয়। আমার সহকর্মী ও প্ল্যানেট হান্টারস প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা ডেবরা ফিশার বলেন, ঐ সময় লোকেরা বলছিল, ‘আপনারা উন্মাদ। কম্পিউটার কোনো সঙ্কেত মিস করবে- এটা একেবারে অসম্ভব।‘ ফলে মানুষের সাথে যন্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। একটি গ্রহ পেয়ে গেলেও তা হবে দারুণ ব্যাপার। চার বছর আগে আমি যখন এই দলে যোগ দেই, তত দিনে একের বেশি পাওয়া হয়ে গেছে। আর আজকে তিন লাখ বিজ্ঞানপ্রেমীর সহায়তায় আমরা ডজন ডজন গ্রহ খুঁজে পেয়েছি। এরই একটি হল আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে রহস্যময় নক্ষত্র।

একটি গ্রহ যখন কোনো নক্ষত্রকে অতিক্রমণ করে, তখন নক্ষত্রের কিছু আলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। এই অতিক্রমণের দৈর্ঘ্য থেকে বস্তুটির সাইজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। বৃহস্পতির কথাই ধরুন। গ্রহরা বৃহস্পতির চেয়ে খুব একটা বড়ো হয় না। বৃহস্পতি কোনো নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা এক শতাংশ কমাতে পারবে। অন্য দিকে, পৃথিবী বৃহস্পতির চেয়ে এগারো গুণ ছোট। এত ছোট সঙ্কেত উপাত্তের মধ্যে চোখে পড়ে না বললেই চলে।

আমাদের রহস্যের কাছে ফিরে আসি। কয়েক বছর ধরে উপাত্তের ভেতর গ্রহ শিকারীরা অতিক্রমণের খোঁজ করছিলেন। তারা একটি নক্ষত্র থেকে রহস্যময় সঙ্কেত দেখতে পেলেন। নক্ষত্রটির নাম কেআইসি ৮৪৬২৮৫২। ২০০৯ সালের মে মাসে তারা একে প্রথম দেখেন। বিভিন্ন ফোরামে শুরু হয় আলাপ- আলোচনা।

তারা বললেন, বৃহস্পতির মতো কোনো বস্তু নক্ষত্রের আলোতে এমন বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তারা আরো বললেন, বস্তুটি অবশ্যই বিশাল হবে। সাধারণত একটি অতিক্রমণ কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়, কিন্তু এটি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকল।

তারা আরো বললেন, গ্রহদের অতিক্রমণের সময় যেমন দেখা যায় তার সাথে এর মিল নেই। এটা দেখে মনে হল যে নক্ষত্রের আলো যে জিনিসে বাধা পাচ্ছে সেটা গ্রহদের মতো গোল নয়। এরপর আরো ক’বার এটা ঘটল। এরপর চুপচাপ থাকল কয়েক বছর।

এরপর ২০১১ সালের মার্চে আবার আমরা এটা দেখলাম। এবার নক্ষত্রের আলো একেবারে ১৫ শতাংশ ঢাকা পড়ে গেল। গ্রহদের তুলনায় এই পরিমাণ কিন্তু অনেক বেশি, গ্রহরাতো মাত্র এক শতাংশ ঢেকে রাখতে পারে। এছাড়াও ঘটানাটি অপ্রতিসম। এক সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত আলো- আঁধারির খেলা দেখিয়ে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এরপর ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটল না। এরপর আবার ঘটতে থাকলে অদ্ভুত সব কাণ্ড। নক্ষত্রের আলো বাধা পড়তে লাগল। এটা এবার স্থায়ী হল প্রায় একশো দিন। তত দিনে কেপলার মিশনের সমাপ্তির দিন এসে গেছে। এবারের আলোর বাধাগুলো বিভিন্ন রূপ নিল। কোনোটা খুব তীক্ষ্ণ, কোনোটা আবার বেশ চওড়া। এদের স্থায়িত্বও আলাদা আলাদা। কোনোটি এক বা দুই দিন টিকে থাকল, কোনোটা টিকে থাকল এক সপ্তাহেরও বেশি। সব মিলিয়ে এবারে নক্ষত্রের আলোর বাধার পরিমাণ দাঁড়াল ২০ শতাংশের বেশি। এর অর্থ হল, নক্ষত্রটির আলোকে যেই ঢেকে রাখছে তার ক্ষেত্রফল আমাদের পৃথিবীর চেয়ে ১০০০ গুণ বড়ো হবে।

এটা বড়ো একটি ঘটনা। অনুসন্ধানী দল এটা দেখার পর বিজ্ঞানীদের দেখালে তারা এতে উৎসাহী না হয়ে পারলেন না। বিজ্ঞানীরা প্রথমে এটা দেখে ভাবলেন, ‘এ আর এমন কী, নিশ্চয় উপাত্তে কোনো গণ্ডগোল আছে’। কিন্তু তীক্ষ্ণ চোখে দেখার পরেও উপাত্তে ভুল পাওয়া গেল না। ফলে মেনে নিতে হল, সত্যিই মহাকাশের কোনো কিছু নক্ষত্রের আলোকে ছড়াতে দিচ্ছে না। ফলে এ অবস্থায় নক্ষত্রটি সম্পর্কে আমরা সাধ্যমতো জানার চেষ্টা করলাম, যাতে কোনো সমাধান পাওয়া যায় কি না তা দেখা যায়। অনুসন্ধানী দলও লেগে রইল একই কাজে।

কেউ বললেন, এমনতো হতে পারে যে নক্ষত্রটি খুব নতুন এবং এটি যে ঘূর্ণায়মান মেঘ থেকে সৃষ্টি হয়েছে তা এখনো এর চারপাশে বিদ্যমান আছে। অন্য কেউ বলল, নক্ষত্রটি থেকে ইতোমধ্যেই গ্রহের জন্ম হয়েছে এবং এরকম দুটি গ্রহের সংঘর্ষ হয়েছে, যেমনিভাবে পৃথিবী ও চাঁদ সৃষ্টির সময় সংঘর্ষ হয়েছিল। এই দুটি তত্ত্বই উপাত্তের কিছু অংশের ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু সমস্যা হল, নক্ষত্রটি যে নতুন- এমন কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না। নক্ষত্রটি নতুন হলে এর আলোর উত্তাপ পাওয়া যেকোনো বস্তু জ্বলে উঠত, আর যদি গ্রহদের সংঘর্ষ হত, তবে অনেক ধূলিকণা দেখা যেত।

এর ফলে আরেকজন বললেন, হতে পারে যে অনেকগুলো ধূমকেতুর সমাবেশ খুব বেশি বাঁকা কক্ষপথে নক্ষত্রটির পাশ দিয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ, এটা আমাদের পর্যবেক্ষণের সাথে মিলে যায়। এই তত্ত্বটি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। এক্ষেত্রে আমাদের চোখের সামনে শত শত ধূমকেতু থাকতে হবে। এবং এরা হল শুধু তারাই যারা আমাদের ও নক্ষত্রটির মাঝে এসে পড়বে। ফলে প্রকৃত সংখ্যা হবে অযুত অযুত ধূমকেতু। তবে সবগুলো ধারণার মধ্যেই এটিই সেরা। ফলে আমরা এটা মেনে নিয়ে আমাদের প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করলাম।

ঘটনা এখানেই শেষ নয়। আমি যখন গবেষণাপত্রটি লিখছিলাম সেই সময়েই আমার দেখা হল সহকর্মী জেসন রাইটের সাথে। সেও কেপলারের উপাত্ত নিয়ে একটি গবেষণাপত্র লিখছিল। ওর বক্তব্য হল, কেপলারের সূক্ষ্ম নজরের মাধ্যমে নক্ষত্রটির চারপাশে এলিয়েনদের স্থাপনা পাওয়া যাবে। কিন্তু পাওয়া গেল না। আমি তাকে আমাদের অনুসন্ধানী দলের পাওয়া অদ্ভুত তথ্যগুলো দেখালে ও বলল, ‘উফ, ট্যাবি। আমাকে আবার নতুন করে লিখতে হবে’।

তবে প্রাকৃতিক ব্যাখ্যা দুর্বল হয়ে পড়লে আমরা উৎসাহী হয়ে পড়লাম। আমরা পথ খুঁজতে লাগলাম কীভাবে এলিয়েন ব্যাখ্যা বাদ দেওয়া যায়। ফলে আমরা এসইটিআই( Search for Extraterrestrial Intelligence) এর আমাদের একজন সহকর্মীকে এর দিকে মনোযোগ দিতে রাজি করালাম। গ্রিন ব্যাংক পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বেতার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে নক্ষত্রটিকে দেখার প্রস্তাব পেশ করলাম আমরা।

কয়েক মাস পর এই কথা চলে গেল প্রেসের কানে। শুধু এই একটি নক্ষত্র নিয়ে দশ হাজার নিবন্ধ লেখা হয়ে গেল।

এখন নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন, ট্যাবি, তাহলে কি এর পেছনে সত্যিই এলিয়েন দায়ী? আচ্ছা, এমন একটি সভ্যতার কথা কল্পনা করুন যারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। এই ক্ষেত্রে এরা নিজেদের গ্রহের সব শক্তি ব্যবহার করে শেষ করে ফেলবে। তাহলে এখন এরা শক্তি পাবে কোথায়? আমাদের সূর্যের মতো তাদের গ্রহও কিন্তু একটি নক্ষত্রকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। এখন তারা যদি এই নক্ষত্র থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে তবে শক্তির চাহিদা মিটে যায়। অতএব তারা বিশাল স্থাপনা তৈরি করবে। দৈত্যাকার সোলার প্যানেলের সাইজের এই বিশাল কাঠামোগুলোকে বলা হয় ডাইসন বলয় (Dyson Sphere)।

চিত্রঃ  শিল্পীদের উর্বর কল্পনায় ডাইসন বলয়ের নানান রকম চিত্র দেখা যাচ্ছে।


ব্যাপারটাকে এভাবে দেখা যায়। চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে দূরত্বের ব্যবধান হল ১ মিলিয়নের (১০ লাখ) চার ভাগের এক ভাগ। আর সবচেয়ে সহজ হিসাব অনুসারে এই ডাইসন বলয়দের সাইজ এর ১০০ গুণ। এটা বেশ বড়ো বটে। এখন মনে করুন এমন কিছু একটা একটি নক্ষত্রকে ঘিরে আছে। এমন জিনিসের পক্ষে উপাত্তের মধ্যে ব্যতিক্রম ও অস্বাভাবিক কিছু নিয়ে আসা খুবই সম্ভব।

কিন্তু আবার মাথায় রাখতে হবে যে এলিয়েনদের এই বিশাল স্থাপনাকেও কিন্তু পদার্থবিদ্যার সূত্র মানতে হবে। যে কোনো কিছুই অনেক বেশি শক্তি ব্যবহার করতে চাইবে তাকে ফলশ্রুতিতে অনেক বেশি তাপ সৃষ্টি মেনে নিতেই হবে। কিন্তু এমন কিছু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। তবে আবার হতেই পারে যে বিকিরণ পৃথিবীর দিকে ঘটছে না।

আরেকটি ধারণাও আছে, আর এটি খুব প্রিয়ও বটে! আমরা হয়ত মহাকাশের একটি মহাযুদ্ধের সাক্ষী হয়েছি, যেখানে একটি গ্রহকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রেও অনেক ধূলিকণার সৃষ্টি হবার কথা। তবে আমরা যদি এলিয়েনদের অস্তিত্ব স্বীকার করেই নেই, তাহলে এটাই বা মেনে নিতে বাধা কোথায় যে তারা সব ধূলিকণা সাফ করে ফেলেছে!

চিত্রঃ নক্ষত্রের এলাকায় কোন মহাযুদ্ধ চলছে নাতো!

হুম! কল্পনার ঘোড়া বেশ দ্রুতবেগেই চলছে!

আসলে আমরা এমন এক অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি, যাতে আমাদের অজানা কোন প্রাকৃতিক ব্যাখ্যাও থাকতে পারে, আবার থাকতে পারে অজানা কোনো প্রক্রিয়ায় এলিয়েনের হাতও। একজন বিজ্ঞানী হিসেবে অবশ্য আমি প্রাকৃতিকই ব্যাখ্যার পক্ষেই থাকব। কিন্তু আমাকে ভুল বুঝবেন না। এলিয়েন পেলে আমিও কারো চেয়ে কোন অংশে কম খুশি হব না। বাস্তবতা এ দুটোর যেটাই হোক, তা যে মজার হবে তাতে একদম সন্দেহ নেই।

এখন সামনে কী হবে? আমাদেরকে এর প্রতি কড়া নজর রাখতে হবে। তবে আমাদের মতো পেশাদার জ্যোতির্বিদদের হাতে হাতিয়ার কমই আছে। অন্য দিকে, কেপলার আছে অন্য একটি মিশনে। 
তবে খুশির খবর হল, স্বেচ্ছাসেবীদের দলগত অনুসন্ধান থেমে নেই। নিজস্ব ব্যাকইয়ার্ড টেলিস্কোপ দিয়ে শখের জ্যোতির্বিদরা একে পর্যবেক্ষণ করছেন। কী ঘটবে তা চিন্তা করে আমি খুব পুলকিত বোধ করছি।

সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হল, কম্পিউটার কখনোই এই নক্ষত্রটিকে খুঁজে পেত না। এটিতো এমন কিছু খুঁজছিলই না। আমরা যদি এমন আরেকটি নক্ষত্র খুঁজে পাই তবে কেমন হবে? আর না পেলেই বা কেমন হবে?  
[দর্শকের হাত তালির মাধ্যমে শেষ হয় টেড টকের আলোচনা]

সামনে কী ঘটতে পারে তা নিয়ে জ্যোতির্বিদ তাবেথা বয়াজিয়ান খুব উৎসুক ছিলেন। আলোচনাটি ছিল ফেব্রুয়ারি মাসে। এত দিনে সত্যিই দারুণ আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে।

আগস্টের ৩ তারিখে দুজন জ্যোতির্বিদ আরো কিছু প্রমাণ যোগ করে দেখিয়েছেন যে নক্ষত্রটি আসলেই বড়ো অদ্ভুত। নাসার কেপলার স্পেইস টেলিস্কোপ থেকে সংগৃহীত উপাত্ত নিয়ে বেনজামিন মনটেট ও জোশুয়া সাইমন তাদের গবেষণাপত্রও প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা যাচ্ছে যে নক্ষত্রটি অস্বাভাবিক হারে উজ্জ্বলতা হারাচ্ছে।

এ বছরের শুরুতে লুইজিয়ানা স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ ব্রেডলি শেফারও একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। এখানে তিনি অতীতের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখান যে গত এক শতাব্দী ধরেই নক্ষত্রটিতে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দীর্ঘ মেয়াদী অনুজ্জ্বলতা প্রদর্শন করেছে। তাঁর মতে এর অর্থ হল, এলিয়েনরা বিশাল কোনো স্থাপনা গড়ে তুলছে।

তখন তাঁর কথাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া হলেও এখন সেটার পক্ষেই প্রমাণ শক্ত হল। এখন দেখা যাচ্ছে যে ২০০৯ সালের পর থেকে নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা ১০০০ দিনের জন্যে প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে গেছে। এই হার শেফারের সময়ের হারের প্রায় দ্বিগুণ।

ফলে রহস্য ঘনীভূতই হচ্ছে। দেখা যাক, সামনে কী ঘটে? 

নোট-১:
নক্ষত্রটি কোথায় আছে? 

রাতের আকাশের সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা বুঝতে পারবেন এটি আকাশের কোন দিকে আছে। এর অবস্থান হল আকাশের সিগনাস বা বকমণ্ডলীতে। পুরো আকাশের সার্বিক অঞ্চলকে যে ৮৮টি তারামণ্ডলীতে ভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হল সিগনাস। বর্তমান সময়ে এই মণ্ডলীটি খুব সহজেই দেখা যায়। সন্ধ্যা নামলেই চলে আসে প্রায় মাথার উপরে। সেপ্টেম্বর মাসে রাত নয়টার দিকে তারামণ্ডলী মাথার উপর থাকে। অক্টোবর, নভেম্বর মাসের দিকে থাকে পশ্চিম আকাশে।

আরো পড়ুনঃ
তারামণ্ডলী কাকে বলে?

এর সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র ডেনেব বা পুচ্ছ কাছাকাছি অবস্থিত অপর দুটি নক্ষত্র- শ্রবণা ও অভিজিতের সাথে মিলে একটি ত্রিভুজ গঠন করেছে, যার নাম সামার ট্রায়াঙ্গেল। মণ্ডলীর চারটি প্রধান উজ্জ্বল তারাকে নর্দার্ন ক্রস বলেও ডাকা হয়।

ট্যাবির নক্ষত্র 

মণ্ডলীর দুটো উজ্জ্বল তারা- ডেনেব ও ডেল্টা সিগনির প্রায় মাঝে আমাদের রহস্যময় তারাটি অবস্থিত। তবে একে খালি চোখে দেখা যাবে না। সর্বোচ্চ +৬ আপাত উজ্জ্বলতার নক্ষত্রকে খালি চোখে দেখা যায়। এর আপাত উজ্জ্বলতা হল +১১.৭। উল্লেখ্য, আপাত উজ্জ্বলতার মান বেশি হলে বুঝতে হবে নক্ষত্রটি তত কম উজ্জ্বল। সূর্যের আপাত উজ্জ্বলতা হল নেগেটিভ ২৭, চাঁদের নেগেটিভ ১২, শুক্র গ্রহের নেগেটিভ ৪ ইত্যাদি। ফলে একখান ভালো মানের টেলিস্কোপ যোগাড় করতে পারলে নক্ষত্রটির পেছনে আপনিও নজরদারী চালাতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ 
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/?s=tabby
২। http://earthsky.org/space/tabbys-star-more-weirdness
৩। http://www.ted.com/talks/tabetha_boyajian_the_most_mysterious_star_in_the_universe/transcript?language=en#t-364057
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/KIC_8462852
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...