Advertisement

সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

বিটলজুস নিক্ষত্র এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যেকোনো সময় এটি সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। ঠিক কখন সেটা আমরা জানি না। আমরা নক্ষত্রটা থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে আছি৷ তাই বিস্ফোরণে ক্ষতি হবে না। দেখব শুধু সুপারনোভার অসাধারণ রূপ!


বিটলজুস



সম্প্রতি লোহিত অতিদানব নক্ষত্রটার উজ্জ্বলতা ৫০% গুণ বেড়েছে। ফলে আবারও শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা৷

বিটলজুস একইসাথে একটি লোহিত অতিদানব ও অর্ধনিয়মিত বিষম ও স্পন্দনশীল তারা। মানে এর উজ্জ্বলতার পরিবর্তন কিছু নিয়ম মেনে চলে। উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের আছে বেশ কিছু চক্র৷ মূল চক্রটি ৪০০ দিনের। তবে ১২৫ ও ২৩০ দিনের দুটি ছোট চক্রও আছে। আছে আবার ২২০০ দিনের একটি বড় চক্র৷ এসব কারণে বিটলজুসের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন জ্যোতির্বিদদের কাছে এক মহাধাঁধা৷

কয়েক বছর আগে এর উজ্জ্বলতা কমে আসে। সবাই এর কারণ নিয়ে ভাবতে থাকল। পরে দেখা গেল, উজ্জ্বলতা আসলে কমেনি। নক্ষত্রটার পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষিপ্ত পদার্থ ঠাণ্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হয়৷ আর তাতে বাধাগ্রস্ত হয় আলো৷

এখন আবার উজ্জ্বল হচ্ছে বিটলজুস৷ এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা সম্ভবত প্রত্যাশার চেয়ে আগেই সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হবে৷ মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে মিল্কিওয়ের পরবর্তী সুপারনোভা হবে বিটলজুসই৷

বিটলজুস বর্তমানে লোহিত অতিদানব তারা। পেছনে ফেলে এসেছে প্রধান ক্রম দশা। যে সময় এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাত৷ ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বছর ধরে কাজটি করে এসেছে নক্ষত্রটা৷ ভর হারিয়ে তারারা ফিউশন বিক্রিয়ার বহির্মুখী চাপকে আর ধরে রাখতে পারে না। নক্ষত্রের বাইরের দিক ফুলে ফেঁপে ওঠে৷ ভর কমলেও আকার যায় বেড়ে৷

তবে ফিউশন তখনও চলে। শুরু হয় কার্বন পোড়া। তৈরি হয় আরও কিছু ভারী মৌল। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিটলজুস এ ধাপের শেষের দিকে আছে। কার্বন পোড়ার ধাপ আছে কয়েকটি৷ বিটলজুস স্পন্দিত হয়, পদার্থ ছুঁড়ে মারে, আবর্তন করে। আবার ছুটে চলে মহাশূন্য ধরে। কার্বন পোড়ারনোর কোন ধাপে নক্ষত্রটা আছে তা না জানা গেলে সঠিক করে বলা যাবে না কবে নক্ষত্র সুপারনোভা হবে৷ জ্যোতির্বিদরা দেখেন নক্ষত্রের বাইরে অংশ৷ ভেতরের খবর সঠিক করে বলা সম্ভব হয় না।

তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণা বলছে বিস্ফোরণটা হতে পারে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে৷ ২০০ পারসেক দূরের এ বিস্ফোরিত পৃথিবীর আকাশে অন্যতম সুন্দর এক দৃশ্যের অবতারণাই করবে। ছুঁড়ে দেওয়া ক্ষতিকর এক্সরে বা গামা রশ্মি থেকে আমরা নিরাপদ।



বিটলজুস রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা। আদমসুরত বা কালপুরুষ মণ্ডলে এর অবস্থান। শীতের আকাশে সহজেই উজ্জ্বল এ তারার দেখা পাবেন। মে মাসের দিকে পশ্চিম দিগন্তে হারিয়ে যাবে। আগস্টের শেষের দিকে আবার দেখা যায় ভোরের পূবাকাশে। নিচের লিঙ্কে বিটলজুস ও অন্যান্য উজ্জ্বল তারা কীভাবে খুঁজে পাবেন দেখানো আছে। 

আদমসুরত তারামণ্ডল। উপরে বামপাশের তারাটাই বিটলজুস। 

Category: articles

শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩

রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের আকাশে অবশ্য সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এটাই৷ লুব্ধক, সুহাইল ও আলফা সেন্টোরিরা সবাই দক্ষিণ গোলার্ধে। যদিও উত্তরের অনেকাংশ থেকে এদেরকেও দেখা যায়। বলছি স্বাতী নক্ষত্রের কথা৷ ইংরেজি নাম আর্কটিউরাস (arcturus)।



উত্তর গোলার্ধের আকাশে স্বাতীকে সহজেই দেখবেন। মেঘমুক্ত আকাশে সঠিক ঋতুতে তাকালেই দেখতে পাবেন। সেই সঠিক ঋতুর মধ্যে সেরা সময়টা জুন মাস। বিশেষ করে জুনের ১০ তারিখ বাংলাদেশ ও আশেপাশের অক্ষাংশের এলাকায় রাত নয়টায় তারাটা ঠিক মাথার উপর থাকে।

উজ্জ্বল তারাদের গল্প

স্বাতী চেনার উপায়
আকাশের অন্যতম সহজলব্ধ একটি তারানকশা সপ্তর্ষী। এর সাতটি তারায় গঠিত তারানকশা সপ্তর্ষী দেখতে চামচের মত। চামচের হাতলের দিকের তারাগুলোকে বৃত্তচাপের মত করে বাইরের দিকে প্রসারিত করে দিলেই পাওয়া যায় উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতী। চাপকে আরেকটু প্রসারিত করলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা ডিসেম্বর-জানুয়ারির সময় স্বাতীকে দেখা যাবে না।

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারানকশা সপ্তর্ষীর হাতল স্বাতীকে চিনিয়ে দেয়




সূর্য থেকে স্বাতীর দূরত্ব ৩৬.৭ আলোকবর্ষ৷ বয়স প্রায় ৭০১ কোটি বছর৷ সূর্যের চেয়ে ২০০ কোটির বেশি। বর্তমানে তারাটা লোহিত দানব দশায় আছে। মানে এর কোরের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ। ভর সূর্যের প্রায় সমান। তবে আকার বেড়ে সূর্যের ২৫ গুণ হয়েছে। উজ্জ্বল সূর্যের ১৭০ গুণ। স্বাতী সূর্যের ২৫ গুণ চওড়া। শুনে হয়ত বোঝা যাবে না কত বড়। ছবিটা একবার দেখে নিন৷


সূর্য ও বিভিন্ন নক্ষত্রের তুলনামূলক আকার

বেশ কয়েকটি তারানকশার অংশ স্বাতী। চিত্রা ও ডেনেবোলার (বা রেগুলাস) সাথে মিলে তৈরি করেছে বসন্ত ত্রিভুজ। আবার কর ক্যারোলিসহ চারটি তারা মিলে চার কোণাকার দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড৷ স্বাতী ভূতেশমণ্ডলের তারা। এই পুরো মণ্ডলটা আবার দেখতে কোন আইসক্রিমের মতো। যার একদম নিচে আছে স্বাতী।

তারামণ্ডলী বনাম তারানকশা


বসন্ত ত্রিভুজ তারানকশা

দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড তারানকশা
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

রাশি শব্দটা দেখে জ্যোতিষশাস্রের কথা ভাববেন না। রাশি মানে আসলে তারামণ্ডল। তুলারাশি মানে আসলে আকাশের তুলামণ্ডল। ইংরেজিতে লিব্রা (Libra)। পৃথিবীর আকাশে ৮৮টি তারামণ্ডল আছে। বছরের একেক মাসে একেকটাকে ভাল দেখা যায়। এর মধ্যে জুন মাসের অন্যতম তারামণ্ডল তুলারাশি।



তারামণ্ডলের পরিচয়


জুনের রাত নয়টার দিকে দেখা যায় এ মণ্ডলটাকে। খুব বেশি উজ্জ্বল নয়। তবে অন্ধকার মেঘমুক্ত আকাশে খালি চোখে সহজেই দেখা যায়। জুবেনেলজিনুবি ও জুবেনেশামেলি এ মণ্ডলের উজ্জ্বল দুই তারা। জুবেনেলজিনুবির বাংলা নাম বিশাখা। জুবেনেশামেলির নাম সৌম্যকীলক। খুঁজে পেতে কাজে আসবে পাশের তারামণ্ডল বৃশ্চিক।




বৃশ্চিকের হৃদয়ের তারাটির নাম অ্যান্টারেস। বাংলায় জ্যেষ্ঠা। মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাও এটাই। আর রাতের আকাশের ১৬তম উজ্জ্বল তারা। পরিষ্কার আকাশে অ্যান্টারেস ও কাঁকড়াবিছা আকৃতির পুরো বৃশ্চিক সহজেই দেখা যায়। এই মণ্ডলের উপর দিয়েই আবার চলে গেছে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের সুন্দর দৃশ্যমান বাহুটা।

উজ্জ্বল তারাদের গল্প

অ্যান্টারেসের সামনেই আছে তুলামণ্ডল। অ্যান্টারেসের সামনে বৃশ্চিকেরই আরও তিনটি মোটামুটি উজ্জ্বল তারা আছে। অ্যান্টারেস থেকে এ তিনটির মাঝের তারাটির সাথে রেখা টেনে প্রায় তিনগুণ গেলেই পাওয়া যাবে তুলার দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারা জুবেনেলজিনুবি। এটাই এ মণ্ডলের আলফা তারা। তারাটির অবস্থান প্রায় বরাবর সূর্যপথের ওপর। এ কারণেই সম্ভবত একে আলফা তারা নাম দেওয়া হয়েছে।


তুলামণ্ডল খুঁজে পেতে কাজে আসবে বৃশ্চিক



মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটি হলো জুবেনেশামেলি। আনুষ্ঠানিক নাম বেটা লিব্রি। যাকে পাওয়া যাবে জুবেনেলজেনুবির বাঁয়ে। অ্যান্টারেসের প্রায় অর্ধেক দূরত্বে। জুবেনেলজিনুবির চেয়ে একটু বেশিই উজ্জ্বল।

বাংলায় মণ্ডলটাকে আমরা তুলা বা দাঁড়িপাল্লা বলি। ব্যাবিলনীয়রাও একে স্কেল বা পাল্লা বলত। গ্রিকরাসহ কেউ আবার কাঁকড়াবিছার দাঁড়াও বলত। এটি রাশিচক্রের ১৩ মণ্ডলের অন্যতম রাশি। মানে পৃথিবী থেকে সূর্যের আপাত অবস্থান আকাশে যে যে অঞ্চলে মনে হয়, তুলাও সেরকম একটি অঞ্চলে আছে।

রাশিচক্রের পরিচয়

প্রাচীন মিশরে লিব্রার তিন উজ্জ্বল তারাকে একত্রে নৌকা বলা হত। আলফা, বেটা ও সিগমা তারার এই নৌকার পেটের দিকটা আছে বৃশ্চিকের দিকে। টলেমির ৪৮টি তারানকশার মধ্যে তুলাও ছিল। প্রাচীন রোমে প্রথম একে তারামণ্ডল নাম দেওয়া হয়।

স্বাভাবিকভাবেই তুলার আশেপাশে রাশিচক্রের আরও মণ্ডল আছে। সামনে আছে ভার্গো বা কন্যারাশি। বৃশ্চিকের কথা আগেই বলেছি। যা আছে পেছনে। এছাড়াও আছে সর্পধারীমণ্ডলজুবেনেশামেলির পাশে। আরেকটি মণ্ডল হাইড্রা আছে সিগমা তারার পাশে। হাইড্রা রাশিচক্রের বাইরের মণ্ডল।

অক্টোবরের ৩১ থেকে নভেম্বরের ২২ পর্যন্ত সূর্য এ মণ্ডলে থাকে। ফলে এ সময় একে দেখা যাবে না। কারণ উদয়-অস্ত হবে সূর্যের সাথে।

সূত্র: আর্থস্কাই, ইংরেজি উইকিপিডিয়া 
Category: articles

ড্যানিয়েল কে ইনুয়েই সোলার টেলিস্কোপ। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সৌর টেলিস্কোপ। যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াই অঙ্গরাজ্যের হালিয়াকালা মানমন্দিরে রাখা। টেলিস্কোপটির কাজ এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি। এরই মাঝে জ্যোতির্বিদরা এর তোলা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো কিছু ছবি প্রকাশ করেছেন। এর মাধ্যমে নিজের সক্ষমতা জানান দিয়েছে টেলিস্কোপটি৷




অনেকগুলো ছবিতে আছে সৌরকলঙ্ক। সূর্যের মধ্যে কালো কালো দাগ। এ দাগগুলো আর কিছুই নয়, সৌরপৃষ্ঠের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা ও শক্তিশালী চৌম্বক অঞ্চল। এরা আছে সূর্যের পৃষ্ঠে। যার কেতাবি নাম ফটোস্ফিয়ার বা আলোকমণ্ডল৷ সৌরকলঙ্ক বিভিন্ন আকারের হয়। অন্তত পৃথিবীর সমান তো হয়ই। জটিল কলঙ্ক বা কলঙ্কগুচ্ছ সৌরশিখা ও সৌরঝড়ের উৎস৷

ছবিতে দেখা যায়, সূর্যের এ অঞ্চলে বিকিরণ কোষের উজ্জ্বল নকশা আছে। উষ্ণ ও উর্ধগামী প্লাজমাকে ঘিরে আছে অন্ধকার, ঠাণ্ডা ও নিম্নগামী প্লাজমা রেখা।






সূত্র: kottke.org
Category: articles

আজ জুন মাসের ১ তারিখ। ১৬৩৩ সালের এই দিনে জন্ম নেন ইতালীয় জ্যোতির্বিদ জেমিনিয়ানো মনতানারি৷


জেমিনিয়ানো মনতানারি

তিনি বিজ্ঞানের পরীক্ষামূলক পদ্ধতির অন্যতম প্রস্তাবক। তিনি সবচেয়ে পরিচিত অ্যালগল নক্ষত্রের পর্যবেক্ষণের জন্য। তিনি দেখেন নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা পরিবর্তন ঘটছে। পারসিয়াস বা পরশু মণ্ডলের দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারা অ্যালগল৷ অন্যরাও ব্যাপারটা খেয়াল করে থাকতে পারেন। তবে মনতানারিই সর্বপ্রথম এ তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। নক্ষত্রটি নামের অর্থ পিশাচ, যা থেকে বোঝা যায় এর উজ্জ্বলতার অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধি আগে থেকেই মানুষ জানত।


উজ্জ্বল তারাদের গল্প

মনতানারির জন্ম ইতালির মাদিনা শহরে। দশ বছর বয়সে বাবাকে হারান। বিশ বছর বয়সে মধ্য-ইতালির শহর ফ্লোরেন্সে যান আইন পড়তে। এ শহরে ছিলেন বছর তিনেক। যার মন পড়ে আছে জ্যোতির্বিদ্যায়, আইন কি তাকে ফিরিয়ে রাখতে পারে! শুরু করেন শনি গ্রহের পর্যবেক্ষণ। শনির বিভিন্ন দশা পর্যবেক্ষণে অংশ নেন।

১৬৫৬ সালে ফ্লোরেন্স ছেড়ে অস্ট্রিয়ার সালজবুর্গ আসেন। আইন ডিগ্রিটা এখানে এসেই সম্পন্ন করেন। তবে সবচেয়ে সুবিধাটা হয় পাওলো দেল বুয়োনোর সাথে দেখা হয়ে। এই লোক ছিলেন গ্যালিলিওর সর্বশেষ প্রত্যক্ষ শিষ্য। তাঁর অধীনে নতুন করে শুরু করেন গণিতের পাঠ।

১৬৬১ সালে ফিরে আসেন মাদিনায়। হন দরবারি দার্শনিক ও গণিতবিদ। ইতোমধ্যে পরিচয় হয় কর্নেলিয়ো মালভাসিয়ার সাথে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের বড় ও প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষক। মাদিনার কাছেই নিজের গাঁয়ের বাড়িতে ভদ্রলোক বানিয়েছিলেন মানমন্দির। দুজনে একসঙ্গে কিছু কাজ করেছিলেন।

১৬৬৪ সালে যোগ দেন বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। এ শহরে থাকতেই চাঁদের একটি প্রায় নিঁখুত মানচিত্র আঁকেন। এতে ব্যবহার করেন নিজের বানানো আইপিস মাইক্রোমিটার। পদার্থবিদ্যায় সান্দ্রতা নিয়েও কিছু কাজ করেন৷

আকাশ দেখতেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ১৬৭৬ সালের ২১ মার্চ একটি উল্কা মধ্য-ইতালির আকাশ অতিক্রম করে। পর্যবেক্ষণ করেন ১৬৮২ সালের ধূমকেতুও। যা এডমন্ড হ্যালিও দেখেন। নিউটনের প্রিন্সিপিয়ার তৃতীয় খণ্ডে তাঁর ১৬৮০ সালের ধূমকেতুর পর্যবেক্ষণের কথা দুইবার উল্লেখ আছে।

তারা দেখে ভবিষ্যৎ বলার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে সংগ্রাম করেন। তিনি প্রমাণ করেন, তারা দেখে ভবিষ্যদ্বাণী আর মনগড়া ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা সমান। চাঁদের বুকের একটি গর্ত তাঁর নাম ধারণ করে আছে। ১৬৮৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র: ব্রিটানিকা ডট কম
Category: articles

বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩

জ্যোতির্বিদ্যায় মিটার-কিলোমিটার দিয়ে কাজ চলে না। দরকার হয় অনেক বড় বড় একক। এই যেমন এক এইউ হলো পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব। ১৫ কোটি কিলোমিটার। আরও বড় দূরত্বে ব্যবহার করা হয় আলোকবর্ষ। যা আলোর এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব।



জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

এক আলোকবর্ষ কত বড়?

আরেকটু বড় একটি একক হলো পারসেক। এর মান আলোকবর্ষের প্রায় তিনগুণ। সঠিক করে বললে ৩.২৬ গুণ। মানে, এক পারসেক = ৩.২৬ আলোকবর্ষ৷

পারসেক কথাটা এসেছে প্যারালাক্স অব ওয়ান সেকেন্ড বা এক সেকেন্ডের প্যারালাক্স থেকে। তাহলে প্যারালাক্স কী জিনিস বুঝে নেই চলুন।

হাতটা লম্বা করে চোখের সামনে এনে একটি আঙুল খাড়া করুন। এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখে আঙ্গুলটি দেখুন। এবার খোলা চোখ বন্ধ করে অন্য চোখে দেখুন। দেখবেন আঙ্গুলের অবস্থান দুই চোখ দুই জায়গায় দেখছে। দুই অবস্থানের এ কৌণিক পরিবর্তনের নামই প্যারালাক্স।

প্যারালাক্সের পরিবর্তন


চোখ থেকে বস্তু যত দূরে হবে, এ কোণ তত ছোট হবে। যতটা দূরে গেলে কোণের পরিমাণ এক আর্কসেকেন্ড হবে তারই নাম এক পারসেক। এখন এক আর্কসেকেন্ড জিনিসটা বুঝলেই কেল্লাফতে!

এক ডিগ্রি কতটুকু তা আমরা সহজেই বুঝি। চোখ মেললেই সর্বত্র ৯০ ডিগ্রি বা সমকোণ দেখা যায়। চৌরাস্তায় আছে চারটা সমকোণ। বিল্ডিংয়ের দেয়াল ও ছাদের মিলনস্থলে আছে সমকোণ। আর এর ৯০ ভাগের এক ভাগই এক ডিগ্রি। এক ডিগ্রির ৬০ ভাগের এক ভাগকে বলে আর্কমিনিট। তাকে আবার ৬০ ভাগ করলেই হয় আর্কসেকেন্ড।




মানে এক আর্কসেকেন্ড হলো আর্কমিনিটের ৬০ ভাগের এক ভাগ। আর আর্কমিনিট হলো ডিগ্রির ৬০ ভাগের এক ভাগ। তাহলে এক আর্কসেকেন্ড হল এক ডিগ্রির ৩৬০০ ভাগের এক ভাগ।

রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল তারা স্বাতী। এটি পৃথিবী থেকে ১১.২৬ পারসেক দূরে আছে। দূরত্বটা পাওয়া গেছে এর প্যারালাক্স মেপেই। তারাটির প্যারালাক্স হলো ৮৮.৮৩ মিলিআর্কসেকেন্ড।

Category: articles

সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩

 আজ ২৯ মে। ১৯১৯ সালের এই দিনে প্রমাণিত হয় মহাকর্ষ বক্রতা। যা আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে বলে গিয়েছিলেন।





১৯১১ সালেই আইনস্টাইন বলেছিলেন মহাকর্ষ বক্রতার কথা। তবে সে সময় তত্ত্বে খানিক ভুল ছিল। ১৯১৫ সালে সংশোধন করেন। কাজে লাগান জার্মান বিজ্ঞানী সোয়ার্জশল্ডের সমীকরণ।

লেন্স যেভাবে এর ভেতর দিয়ে যাওয়া আলোকে বাঁকিয়ে দেয়, তেমনি ভারী কোনো বস্তু এর কাছ দিয়ে যাওয়া আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। এরই নাম মহাকর্ষ বক্রতা। নিচের চিত্রে দেখুন: ভারী বস্তুটির কারণে দূরের আলোক উৎস থেকে আসা আলো বেঁকে যাবে। পৌঁছবে পর্যবেক্ষকের চোখে। ভারী বস্তুটি না থাকলে আলো চোখে আসতে সোজা পথে। বেঁকে যাওয়ায় ঘটবে মজার ঘটনা। পর্যবেক্ষক আলোর মূল উৎসটি বুঝতে পারবেন না। তাছাড়া আলো ভরের কারণে দুই দিয়েই বেঁকে চোখে পৌঁছবে। পর্যবেক্ষক ভাববেন, তিনি দুটো আলাদা বস্তু দেখছেন!


মহাকর্ষ বক্রতা ও এর ফলাফল

ব্যাপারটা বাস্তব পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম ক্যাম্পবেল। নানা কারণে ব্যর্থ হন। ১৯১৮ সালের একটি প্রচেষ্টাও মেঘের কারণে ব্যর্থ হয়। ১৯১৯ সালে আবার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য তাঁরা বেছে নেন ২৯ মে তারিখের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণকে। সূর্যের পেছন থাকা তারার আলো সূর্যের আলোর আভায় হারিয়ে যায়। ফলে বক্রতা হয় কি না তা দেখা যায় না। তবে গ্রহণের সময় আভা না থাকায় বক্রতা হয়ে থাকলে তার প্রভাব ভেসে ওঠার কথা চোখে।
 
এ সূর্যগ্রহণটির সময় সূর্যের পেছনে ছিল হায়াডিজ নক্ষত্রপুঞ্জ। সূর্যের উজ্জ্বলতার কারণে দিনের বেলায় এদেরকে দেখা যায় না। কিন্তু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়। ফলে তখন ভালভাবে দেখা যায়। রাতে তো আর সূর্য না। কয়েক মাসে আগের আকাশে এরা সূর্যের পেছনে ছিল না। রাতের আকাশেই দৃশ্যমান ছিল।

এখানে বলে রাখি, রাতের আকাশে প্রতিদিন তারারা একটু একটু করে পশ্চিমে সরে। এটা একই রাতের কথা বলছি না। এক রাতে যে তারাকে আমরা যেখানেই দেখি, পরের রাতে চার মিনিট আগেই সেখানে দেখি। পশ্চিমে সরতে সরতে এভাবে এক বছর পরে একই সময়ে একই জায়গায় দেখব আবার।

☛ সূর্যগ্রহণ কীভাবে হয়? (লেখা আসছে...)

তো হায়াডিজ পুঞ্জের তারাদের দুইরকম অবস্থান পাওয়া গেলে। একটি হলো সাধারণ রাতের আকাশে। যখন সামনে সূর্য ছিল না। ছিল না সম্ভাব্য মহাকর্ষ বক্রতা। অন্তত সূর্যের কারণে নয়। আবার নির্বিঘ্নে দেখাও গেল। আরেকটি পরিমাপ পাওয়া গেল সূর্যগ্রহণের সময়। দুই পরিমাপ মিলে গেলে মহাকর্ষ বক্রতা বলতে কিছু থাকবে না। পরিবর্তন পাওয়া গেলেই প্রমাণ হবে এ ব্যাপারটা।

দুটি দল গ্রহণের ছবি তুলতে ছুটে যান দুই আলাদা জায়গায়। এক দল যান পশ্চিম আফ্রিকার দ্বীপ প্রিন্সিপায়। এ দলে ছিলেন এডিংটন ও এডউইন টার্নার কোটিংহাম। আরেক দল যান ব্রাজিলের সব্রাল শহরে। এ দলে গ্রিনিচ মানমন্দিরের অ্যান্ড্রু ক্রোমলিন ও চার্লস ডেভিডসন। মূল পরীক্ষাটি পরিচালিত হয় রয়েল সোসাইটি ও রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে। সেসময় ফ্র‍্যাংক ডাইসন ছিলেন অ্যাস্ট্রোনমার রয়েল। মূলত এডিংটনের পরামর্শে তিনি কাজটা নিয়ে পরিকল্পনা এগিয়ে নেন।

প্রাপ্ত ফলাফলে প্রমাণ জয় আইনস্টাইনের অনুমান। বাস্তবে দেখা গেল মহাকর্ষী বক্রতা। পরীক্ষার পরিকল্পনার পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণেও ফ্র‍্যাংক ডাইসন কাজ করেন। এ পরীক্ষার ফল সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। আইনস্টাইন ও তাঁর তত্ত্ব রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়।

আইনস্টাইন ক্রস 

মহাকর্ষ বক্রতার একটি দারুণ ফল হলো আইনস্টাইন ক্রস ও বলয়। 

Category: articles

রবিবার, ২১ মে, ২০২৩

 


ওমুয়ামুয়া। সৌরজগতে প্রবেশ করা প্রথম আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু৷ ২০১৭ দালের ১৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইর হালিয়াকালা মানমন্দির থেকে বস্তুটা আবিষ্কার করেন কানাডিয়ান জ্যোতির্বিদ ডেভিড ওয়ার্ক৷ সেসময় সূর্য থেকে দূরে সরতে শুরু করে দিয়েছিল বস্তুটা।
দেখতে ধূমকেতুর মতো হলেও আসলে এটা তা নয়। গ্রহাণুর সাথে মিল আছে। তবে ঠিক তাও নয়। কেউ কেউ তো আবার একে এলিয়েনদের সৃষ্টি বলেও মনে করেছিলেন। যদিও তার সপক্ষে প্রমাণ নেই।
Category: articles

শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

 আজ ২০ মে। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহাশূন্যে পাঠানো হয় পাইওনিয়ার ভিনাস প্রোগ্রামের মহাকাশযান। ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল থেকে শুক্র গ্রহের কক্ষপথের দিকে ছুটে যায় এ প্রকল্পের দুটি মহাশূন্যযান।


পাওনিয়ার ভিনাস অরবিটার

পাওনিয়ার ভিনাস প্রোগ্রামের যান দুটির একটি হলো পাওনিয়ার ভিনাস অরবিটার। শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর কাজ ছিল শুক্রের অরবিট মানে কক্ষপথে। অ্যাটলাস-সেন্টোর রকেটে করে একে পাঠানো হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ঐ বছরই ডিসেম্বরের ৪ তারিখে যানটি শুক্রের কক্ষপথে স্থান করে নেয়। কক্ষপথটি হয় উপবৃত্তাকার। ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত যানটি শুক্র গ্রহ থেকে উপাত্ত পাঠাতে থাকে। সক্রিয় থাকে ১৪ বছর ৪ মাস।


১৯৮৬ সালে অরবিটারটি হ্যালির ধূমকেতকে পর্যবেক্ষণ করে। যানের বিভিন্ন যন্ত্র শুক্রের বায়ুমণ্ডল ও পৃষ্ঠ নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। ১৯৯১ সালে ম্যাজেলান যানের সাথে যৌথভাবে গ্রহটির দক্ষিণ ভাগে অনুসন্ধান চালায়। ১৯৯২ সালের অক্টোবরে এটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। আলাদা হয়ে যায় এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। শুক্রকে কেন্দ্র করে ঘোরার সময় এর দূরত্ব শুক্র থেকে ১৮২ কিলোমিটার থেকে ৬৬ হাজার কিলোমিটারের বেশিও ছিল।

অপভূ বনাম অনুভূ
হ্যালির ধূমকেতু এখন কোথায় ? 

পাইওনিয়ার প্রোগ্রামের অপর অংশে ছিল ভিনাস মাল্টিপ্রোব। এতে আবার ছিল একটি ছোট ও তিনটি ছোট অনুসন্ধানী যান। ডিসেম্বর মাসে এরা গ্রহটির ঘন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। কাজ করে ৪ মাস ১ দিন। শুক্রের বায়ুমণ্ডলের জন্ম, বিকাশ ও চলমান কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করে একটি যন্ত্র। বাগুমণ্ডলের উপরিভাগের স্তরগুলো জানার চেষ্টা করে। স্তরগুলো ওপর সৌর বিকিরণ ও আন্তঃগ্রহ স্থানের প্রভাব বের করার চেষ্টা করে।


ভিনাস মাল্টিপ্রোব


আরেকটি যন্ত্র শুক্রের সাথে সৌর বায়ুর মিথষ্ক্রিয়া জানার চেষ্টা করে। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে শুক্রের বায়ুমণ্ডলের তাপ বিন্যাস নিয়ে জানার চেষ্টা করে। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রোবের সাথে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। যন্ত্রাংশগুলো আলাদা হওয়ার আগে ১১০ কিলোমিটার উপরে থেকে কাজ করছিল।
Category: articles

রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩

আজ ১৪ মে। ১৯৭৩ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে প্রথম কোনো স্টেশন প্রেরণ করে। নাম স্কাইল্যাব। এর আগে ১৯৭১ সালে রাশিয়া পাঠিয়েছিল মহাকাশে প্রথম স্টেশন সালিউট ১। স্কাইল্যাব কক্ষপথে সময় কাটায় ২৪ সপ্তাহ। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।


স্কাইল্যাব স্টেশন 
স্টেশনটিকে অনেকগুলো কাজ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে আছে সৌর মানমন্দির, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও বহু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।

প্রথম মহাশূন্য স্টেশন

২০২৩ সালে এসেও স্কাইল্যাবই যুক্তরাষ্ট্রের এককভাবে পরিচালিত একমাত্র স্টেশন। যদিও ১৯৮৮ সালে আরেকটি স্থায়ী স্টেশনের পরিকল্পনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরিকল্পনা হচ্ছিল বলে মনোযোগ সেদিকে সরে যায়।

কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটার্ন ভি রকেটে চেপে এটি ছুটে যায় মহাশূন্যে। ভর ছিল ৭৬.৫ কেজি। দৈর্ঘ্য ৮২ ফুট। কক্ষপথের দূরত্ব ছিল পৃথিবী থেকে ৪৩৪ ও ৪৪২ কিলোমিটার (অনুভূ ও অপভূ)। দিনে প্রায় ১৫ বার চক্কর খেত পৃথিবীকে। ৩টি অভিযানে মোট ৯ জন মানুষ স্টেশনটিতে সময় কাটিয়েছিলেন।

১৭১ দিনে স্টেশনটি মোট ২৪৭৬ বার পৃথিবীকে পাক খায়। নভোচারীরা এটি থেকে দশবার স্পেসওয়াক করেছিলেন। এতে ২০০০ ঘণ্টা ব্যাপী বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও মেডিকেল পরীক্ষা চালানো হয়। ৮টি সৌর শিখার ছবি ধারণ করা হয়, যা মনুষ্যবিহীন যানের মাধ্যমে সম্ভব হত না। এরই মাধ্যমে সৌর মুকুটের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। অনেকগুলো পরীক্ষায় দেখা হয় মাইক্রোগ্র‍্যাভিটিতে দীর্ঘ সময় থাকলে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
Category: articles

বুধবার, ১০ মে, ২০২৩

বিজ্ঞানের কাজ হলো পৃথিবী ও মহাবিশ্বের বিভিন্ন ঘটনার পর্যবেক্ষণ। অতঃপর তার ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্ভাব্য পুর্বাভাস প্রদান। এভাবেই গড়ে ওঠে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে আগমন ঘটে প্রযুক্তির। কোয়ান্টাম মেকানিকস একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এর প্রয়োগ ঘটেছে বর্তমানে ইলেকট্রনিকসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমাদের হাতে থাকা মোবাইলের চিপের প্রযুক্তির গভীরে আছে কোয়ান্টাম মেকানিকসের কারিশমা। স্মার্টফোনে আছে কয়েক শ কোটি ট্রাঞ্জিস্টর। কোয়ান্টাম মেকানিকসের ধারণা কাজে না লাগানো গেলে সিলিকন-ভিত্তিক এই প্রযুক্তি কাজ করত না। ফোনের ক্যামেরার সিসিডি সেন্সর কাজ করত না আলোকবিদ্যুত তত্ত্বের ধারণা প্রয়োগ ঘটানো না গেলে। 




আবার প্রযুক্তিও অকৃতজ্ঞ নয়। বিজ্ঞান তো প্রযুক্তির পথ খুলে দেয়। প্রযুক্তিও আবার বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে সহজ করে দেয়।  ছোট্ট এক প্রযুক্তি লেন্স। লেভেনহুকের হাত ধরে সেটাই সূচনা করে দেয় অণুজীববিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞানের শাখা। সেই ধারা এখনো আছে। বিজ্ঞানের সব শাখা উপকৃত হচ্ছে প্রযুক্তি থেকে। বিজ্ঞান গবেষণার অবিচ্ছেদ্য অংশ পরিসংখ্যানিক উপাত্ত বিশ্লেষণ। কম্পিউটার প্রযুক্তির বদৌলতে সহস্র ঘণ্টার বিশ্লেষণ ও মডেলিং করা যাচ্ছে কয়েক সেকেন্ডে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা, মেশিন লার্নিং ও বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স বিজ্ঞানের তত্ত্ব তৈরি সহজ করে দিচ্ছে। 


জ্যোতির্বিজ্ঞানকে বলা হয় প্রাচীনতম বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের সে শাখায়ও অবদান রাখছে প্রযুক্তি। খালি চোখে আকাশের কতটুকুই দেখা যায়! কত শত দূরের আলোকবর্ষের তারকারাজিকে টেলিস্কোপ হাজির করেছে আমাদের চোখের সামনে। সেসব পর্যবেক্ষণ থেকেই তো আমরা জানলাম, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। হাবল ও জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ আজো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। মহাশূন্যে পাঠানো অনুসন্ধানী যান দূর মহাকাশের খবর পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের কাছে। বিলিয়ন বিলিয়ন বাইটের ডেটা থেকে সুপারকম্পিউটার প্যাটার্ন বের করে দিচ্ছি। সহজেই আমরা খোঁজ পেয়ে যাচ্ছি ট্যাবির নক্ষত্রের মতো ব্যতিক্রমী জিনিসের। 


মুদ্রার উল্টো পিঠের কথাও এবার বলি। না, পারমাণবিক বোমার কথা বলছি না। প্রযুক্তি আরও বহু উপায়েই ক্ষতিকর হতে পারে। আজ শুধু মহাকাশে একটু চোখ বুলাবো। স্পেসএসক্সের মতো কোম্পানিগুলো প্রতিতিয়ত মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাচ্ছে। পাঠাচ্ছে সরকারি বেসরকারি আরও নানান সংস্থাই। কৃত্রিম উপগ্রহের আছে নানান ব্যবহার। এর মধ্যে আছে যোগাযোগ,  আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস, জিপিএস দিকনির্দেশনা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদি। ইউসিএস স্যাটেলাইট ডেটাবেজের হিসাব অনুসারে বর্তমানে ৫৪৬৫টি উপগ্রহ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। 


এতে জ্যোতির্বিদদের আপত্তি থাকার কথা নয়। বরং স্যাটেলাইট তো জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজেও লাগে। স্পেস টেলিস্কোপগুলো আকাশ পর্যবেক্ষণকে অনেকভাবে সুবিধাজনক করে দিচ্ছে। আলোকদূষণ, পর্যবেক্ষণে বিকৃতি নানান সমস্যার সমাধান স্পেস টেলিস্কোপ। কিন্তু সমস্যারও জন্ম দিচ্ছে স্যাটেলাইট। 


পৃথিবীর কক্ষপথের কৃত্রিম উপগ্রহরা বাধাগ্রস্থ করছে পৃথিবীভিত্তিক আকাশ পর্যবেক্ষণকে। সম্প্রতি নিম্ন-ভূ কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা বাড়ছে। এমনিতেও বেশিরভাগ কৃত্রিম উপগ্রহের অবস্থান এ কক্ষপথে। ভূপৃষ্ঠের মোটামুটি ১৬০ কিলোমিটার থেকে ১,০০০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথকে নিম্ন-ভূ কক্ষপথ বলা হয়। এ কক্ষপথের উপগ্রহদের বাধা সবচেয়ে বেশি টের পায় অপটিক্যাল ও নিকট-অবলোহিত (অবলোহিত আলোর কাছাকাছি পাল্লার আলো দেখার মতো) টেলিস্কোপগুলো। 


উপগ্রহের উপস্থিতিতে বড় অঞ্চল জুড়ে বা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও সকাল ও সন্ধ্যার গোধূলির সময়টায় উপগ্রহ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে আরেকটি বিঘ্ন তৈরি করে। ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরি  (ইএসও) ২০২১ সালের এক গবেষণায় এ সমস্যাগুলো তুলে ধরে। দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে তিনভাগ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ নষ্ট হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় আকাশের বড় এলাকার পর্যবেক্ষণ (wide-field surveys)। গোধূলির সময়ের ৩০-৫০ ভাগ পর্যবেক্ষণ এভাবে ক্ষতগ্রস্থ হয়। 


২০২০ ও ২০২১ সালের অন্য গবেষণায় দেখা হয় অপটিক্যাল ও নিকট-অবলোহিত টেলিস্কোপগুলোর ওপর প্রভাব। দেখা যায়, ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (ভিএলটি) মধ্যম মানের ক্ষতির মুখে পড়ছে। একই আকারে ক্ষতির স্বীকার হবে ভবিষ্যতের ইএলটি (এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ)। তবে চিলিতে নির্মাণাধীন রুবিন পর্যবেক্ষণকেন্দ্র আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ টেলিস্কোপগুলো অল্প সময়ে আকাশের বিশাল এলাকা স্ক্যান করে। এ কারণে সুপারনোভা ও ক্ষতিকর গ্রহাণু শনাক্ত করতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 


জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি। মহাকাশ থেকে আসা বেতার তরঙ্গ শনাক্ত ও বড় করে দেখার কাজ হয় এখানে। এ তরঙ্গকে সঙ্কেতে রূপান্তর করার মাধ্যমে মহাবিশ্বের অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে। রেডিও টেলিস্কোপগুলো দৃশ্যমান আলোর খোঁজ করে না। ফলে দেখার সমস্যা এখানে হয় না। সমস্যা হয় উপগ্রহদের পৃথিবীর দিকে পাঠানো সঙ্কেতের কারণে। রেডিও টেলিস্কোপ শুধু রাতের মৃদু আলোরই খোঁজ করে না, কাজ করে ২৪ ঘণ্টা জুড়েই। ফলে শুধু গোধূলির সময় নয়, সারা দিনই এরা উপগ্রহের বাধায় পড়ে।  


এছাড়াও কথা আছে। উপগ্রহের পাঠানো শক্তিশালী সঙ্কেতের তুলনায় দূর মহাকাশ থেকে বেতার তরঙ্গ খুব মৃদু। ক্ষতি করার জন্য উপগ্রহকে দূরের বস্তুর সামনে না থাকলেও হচ্ছে। টেলিস্কোপের দৃষ্টির আওতায় কোনো এক জায়গায় থাকাই যথেষ্ট। সমস্যাটির সমাধান একটি আছে অবশ্য। ব্যাপারটাকে বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন বর্ণালী ব্যবস্থাপনা। এ কাজের অংশ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন কিছু নীতিমালা করেছে। উপগ্রহের জন্যে নির্দিষ্ট ব্যান্ডের কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য সংরক্ষিত রাখা হয়। 


তবে যোগাযোগের নতুন এক ঝাঁক স্যাটেলাইট নতুন সমস্যাও করছে। আগামী বছরগুলোতে নিম্ন-ভূ কক্ষপথে হাজার হাজার উপগ্রহের উপস্থিতিতে অবস্থা বদলে যাবে। আকাশে ঘুরে বেড়াবে বহুসংখ্যক দ্রুত গতির বেতার তরঙ্গের উৎস। ফলে আকাশের স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ ব্যাহত হবে। 


কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্যে উপাত্ত থেকে উপগ্রহের চিহ্ন দ্রুত মুছে ফেলা সম্ভব হলে খুব দারুণ হত। কিন্তু কাজটা মোটেও সহজ নয়। দূর আকাশের ছবির উপরে উপগ্রহের চলাচলের দাগ পড়ে যায়। পরবর্তীতে ছবিকে শতভাগ ঠিক করা সম্ভব হয় না। আবার ছবি ঠিক করতে গিয়ে দূরের মৃদু ছায়াপথের আলো বিকৃত হয়ে যায়। 


এসব সমস্যা সমাধানের জন্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উপগ্রহের চলার পথ এড়িয়ে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেন। বা উপগ্রহ ক্যামেরা সামনে চলে এলে শাটার বন্ধ করে দিতে পারেন। এটা করতে গেলে হাজার হাজার উপগ্রহের সঞ্চার পথের খোঁজ রাখতে হবে। বাস্তবে যা অসম্ভবের নামান্তর। 


তবে চাইলে উপগ্রহের অপারেটররাও সমাধানে কাজে লাগতে পারেন। দৃশ্যমান আলোর টেলিস্কোপের জন্য সমাধান হতে পারে উপগ্রহকে অন্ধকার করে রাখা, চলার পথকে টেলিস্কোপের দৃষ্টির আওতার বাইরে রাখা, নিষ্ক্রিয় উপগ্রহকে কক্ষপথ থেকে বের করে দেওয়া ইত্যাদি। অনেকক্ষেত্রেই বাস্তবে এমন সহায়তা করেছেনও তারা। 


আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতিও ব্যাপারটা সমধানের প্রয়াস চালাচ্ছে। সাথে যুক্ত হয়েছে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন। তৈরি হয়েছে সিপিএস নামে একটি কেন্দ্র। যার সংক্ষিপ্ত নাম সেন্টার ফর প্রোটেকশন অব ডার্ক অ্যান্ড কোয়াইট স্কাই। বর্তমানে সক্রিয় ও আসন্ন উপগ্রহের ক্ষতিগুলো কেন্দ্রটি তুলে ধরছে। দেখা যাচ্ছে, এখনই আকাশে ২,৯৯৪টি উপগ্রহপুঞ্জ* (স্যাটেলাইট কন্সটেলেশন) আছে।  আরও ৪ লক্ষ ৩১ হাজার যুক্ত হবার অপেক্ষায় আছে! চার বছর আগে স্পেসএক্স ৬০টি স্টারলিংক উপগ্রহ নিক্ষেপের পর খুব দ্রুত বাড়ছে উপগ্রহের সংখ্যা।  


 ইএসওর বিজ্ঞানীরাও এয়ার অ্যান্ড স্পেস ল' জার্নালের এক নিবন্ধে তাদের উদ্বেগগুলো তুলে ধরেছেন। ইএসওর হিসাব বলছে, ভবিষ্যতে খালি চোখেই ১০০টি পর্যন্ত উপগ্রহ খালি চোখে দেখা যাবে। ভাবুন তাহলে রাতের আকাশ কতটা বদলে যাবে। আর যাদের পেশাই উপগ্রহের অপর পাশের বস্তু দেখা, তাদের যে কী বেহাল দশা হতে যাচ্ছে!


তারাও চেষ্টা করছেন যাতে উপগ্রহ ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা একে অপরকে বাধাগ্রস্থ না করেই এগিয়ে যেতে পারে। কারণ দিন শেষে একে অপরকে কাজে লাগবেই। 


* উপগ্রহপুঞ্জ: একই উদ্দেশ্যে কাজ করা প্রায় একই রকম দেখতে এক গুচ্ছ উপগ্রহ 

লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত

তথ্যসূত্র: কিউটি ডট ইউ, হার্ভার্ড ডট এজু, ইউসিএস স্যাটেলাইট ডেটাবেজ, ইএসএ ডট ইন্ট, আর্থস্কাই ডট অর্গ 

  1.     https://qt.eu/discover-quantum/applications-of-qt/how-your-smartphone-uses-quantum-mechanics/
  2.     https://www.hup.harvard.edu/index-maint.html?isbn=9780674975910
  3.     https://www.ucsusa.org/resources/satellite-database
  4.     https://www.esa.int/ESA_Multimedia/Images/2020/03/Low_Earth_orbit
  5.     https://earthsky.org/space/how-satellites-harm-astronomy-whats-being-done

Category: articles

সোমবার, ৮ মে, ২০২৩

পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। এ কারণে দূরত্ব সবসময় এক থাকে না। কমে-বাড়ে। চাঁদের কক্ষপথের নিকটতম অবস্থানকে বলে অনুভূ। পৃথিবীর আকাশে চাঁদ বড়-ছোট হয়। সেটাও নির্ভর করে কক্ষপথের অবস্থানের ওপর। নতুন চাঁদ উদিত হওয়ার প্রায় ১৪ দিন পর চাঁদ পুরো গোল হয়। থালার মতো গোল ও সুন্দর ও চাঁদের এ দশার নাম পূর্ণিমা।


সুপারমুন। ছবি: টাইম অ্যান্ড ডেইট


☞ অনুভূ ও অপভূ (লেখা আসছে...)
পূর্ণিমা কীভাবে হয়?

অনুভূ অবস্থানে থাকার সময় পূর্ণিমা হলে তাকেই বলে সুপারমুন। চাঁদকে এ সময় ১৪% বড় ও ৩০% বেশি উজ্জ্বল দেখায়। গড়ে প্রতি ৪১৪ দিনে একবার সুপারমুন দেখা যায়। কিন্তু প্রত্যেক পূর্ণিমায় সুপারমুন হয় না কেন?

চাঁদ পৃথিবীকে একবার পুরো ঘুরে আসে ২৭ দিনে। আর পূর্ণিমা আসে প্রতি ২৯.৫ দিনে একবার। মনে রাখতে হবে, শুধু চাঁদই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে না। পৃথিবীও করে সূর্যকে। ফলে চাঁদ ২৭ দিনে একবার পৃথিবীকে ঘুরে আসলেও একই দশায় আসতে আরও প্রায় ২ দিন লাগে। এ কারণে সবসময় একই দশা কক্ষপথের একই জায়গায় হয় না।

কখনও তো পূর্ণিমার সময় চাঁদ থাকে অপভূ অবস্থানে। মানে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের একটি অবস্থানে। একে বলে মাইক্রোমুন।

২১০০ সাল পর্যন্ত সুপারমুনের তালিকা দেখুন এখানে। সুপারমুনের নিয়মিত খোঁজখবর এখানেও পাবেন

সূত্র: নাসা
Category: articles

রবিবার, ৭ মে, ২০২৩

রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু চাঁদ। চাঁদের দূরত্বের ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর জোয়ার-ভাটা হাল্কা বা তীব্র হয়। সূর্যগ্রহণের জন্যও দায়ী চাঁদ।





কিন্তু পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত? উত্তর হলো, গড়ে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। মাইলের হিসাবে ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮৫৫। গড় দূরত্ব বলার কারণ সূর্যের মতোই পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বও নির্দিষ্ট নয়। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারদিকে ঘোরে, চাঁদ তেমনি ঘোরে পৃথিবীর চারপাশে। আর চলার কক্ষপথটা বৃত্তাকার নয়। বরং উপবৃত্তাকার। বৃত্তাকার হলে সবসময় দূরত্ব একই থাকত।

☛ কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হয় কেন? (লেখা আসছে...)
সূর্যের দূরত্ব কত?

পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। সবচেয়ে কাছের বিন্দুর নাম অনুভূ। আর দূরের বিন্দুর নাম অপভূ। পৃথিবীর চারপাশে ঘোরা বস্তুর ক্ষেত্রে বিন্দুদুটির নাম অনুসূর ও অপসূর৷

অনুসূর বনাম অপসূর
☛ অনুভূ বনাম অপভূ (লেখা আসছে...)

চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এলে দূরত্ব হয় ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটার বা ২ লক্ষ ২৬ হাজার মাইল। চাঁদ অনুভূ অবস্থানের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় পূর্ণিমা হলে তাকে শখের জ্যোতির্বিদরা বলেন সুপারমুন। সুপারমুন মৃদু উজ্জ্বল চাঁদের চেয়ে প্রায় ১৭% বড় ও ৩০% বেশি উজ্জ্বল হয়। এ সময় অবশ্য জোয়ারের তীব্রতাও বেশি হয়।

সুপারমুন কী?

পৃথিবী থেকে চাঁদ সবচেয়ে দূরে যায় সর্বোচ্চ প্রায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। চাঁদ অপভূ অবস্থানে থাকার সময় সূর্যগ্রহণ হলে দারুণ দৃশ্য দেখা যায়। এমনিতে পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান চাঁদ ও সূর্যের আকার সমান। তবে চাঁদ অপভূতে থাকলে একটু ছোট দেখায়। ফলে সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারে না। চাঁদের চারপাশ দিয়ে দেখা যায় সূর্যের আলো। গোল একটি বলয় দেখা যায় তখন।

ছবি: নাসা 

☛ সূর্য চাঁদ থেকে কত বড়? (লেখা আসছে...)
চাঁদ কত বড়?

সূর্যের ব্যাস চাঁদের প্রায় ৪০০ গুণ। আবার আবার চাঁদ সূর্যের চেয়ে পৃথিবীর ৪০০ গুণ কাছে। এই দুই কারণে পৃথিবীর আকাশে চাঁদ ও সূর্য সমান।

এক সময় চাঁদ পৃথিবীর আরও কাছে ছিল। একটি তত্ত্ব অনুসারে, পৃথিবীর গঠনের প্রাথমিক অবস্থায় মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি বস্তুর সাথে ধাক্কা লাগে। এই ধাক্কার ফলে আলাদা হয়ে যাওয়া অংশই পরে চাঁদ হিসেবে গড়ে ওঠে।

গ্রহ-নক্ষত্র গোল কেন?

ধীরে চাঁদের সাথে দূরত্ব বেড়েছে পৃথিবীর। এখনও বাড়ছে। প্রতি বছর চাঁদ সরে যাচ্ছে দেড় ইঞ্চি দূরে। যে হারে আমাদের নখ বড় হয়!


Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...