Advertisement

সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩

ইতিহাসে এই দিন: মহাকর্ষ বক্রতার প্রমাণ

 আজ ২৯ মে। ১৯১৯ সালের এই দিনে প্রমাণিত হয় মহাকর্ষ বক্রতা। যা আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে বলে গিয়েছিলেন।





১৯১১ সালেই আইনস্টাইন বলেছিলেন মহাকর্ষ বক্রতার কথা। তবে সে সময় তত্ত্বে খানিক ভুল ছিল। ১৯১৫ সালে সংশোধন করেন। কাজে লাগান জার্মান বিজ্ঞানী সোয়ার্জশল্ডের সমীকরণ।

লেন্স যেভাবে এর ভেতর দিয়ে যাওয়া আলোকে বাঁকিয়ে দেয়, তেমনি ভারী কোনো বস্তু এর কাছ দিয়ে যাওয়া আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। এরই নাম মহাকর্ষ বক্রতা। নিচের চিত্রে দেখুন: ভারী বস্তুটির কারণে দূরের আলোক উৎস থেকে আসা আলো বেঁকে যাবে। পৌঁছবে পর্যবেক্ষকের চোখে। ভারী বস্তুটি না থাকলে আলো চোখে আসতে সোজা পথে। বেঁকে যাওয়ায় ঘটবে মজার ঘটনা। পর্যবেক্ষক আলোর মূল উৎসটি বুঝতে পারবেন না। তাছাড়া আলো ভরের কারণে দুই দিয়েই বেঁকে চোখে পৌঁছবে। পর্যবেক্ষক ভাববেন, তিনি দুটো আলাদা বস্তু দেখছেন!


মহাকর্ষ বক্রতা ও এর ফলাফল

ব্যাপারটা বাস্তব পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম ক্যাম্পবেল। নানা কারণে ব্যর্থ হন। ১৯১৮ সালের একটি প্রচেষ্টাও মেঘের কারণে ব্যর্থ হয়। ১৯১৯ সালে আবার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য তাঁরা বেছে নেন ২৯ মে তারিখের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণকে। সূর্যের পেছন থাকা তারার আলো সূর্যের আলোর আভায় হারিয়ে যায়। ফলে বক্রতা হয় কি না তা দেখা যায় না। তবে গ্রহণের সময় আভা না থাকায় বক্রতা হয়ে থাকলে তার প্রভাব ভেসে ওঠার কথা চোখে।
 
এ সূর্যগ্রহণটির সময় সূর্যের পেছনে ছিল হায়াডিজ নক্ষত্রপুঞ্জ। সূর্যের উজ্জ্বলতার কারণে দিনের বেলায় এদেরকে দেখা যায় না। কিন্তু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়। ফলে তখন ভালভাবে দেখা যায়। রাতে তো আর সূর্য না। কয়েক মাসে আগের আকাশে এরা সূর্যের পেছনে ছিল না। রাতের আকাশেই দৃশ্যমান ছিল।

এখানে বলে রাখি, রাতের আকাশে প্রতিদিন তারারা একটু একটু করে পশ্চিমে সরে। এটা একই রাতের কথা বলছি না। এক রাতে যে তারাকে আমরা যেখানেই দেখি, পরের রাতে চার মিনিট আগেই সেখানে দেখি। পশ্চিমে সরতে সরতে এভাবে এক বছর পরে একই সময়ে একই জায়গায় দেখব আবার।

☛ সূর্যগ্রহণ কীভাবে হয়? (লেখা আসছে...)

তো হায়াডিজ পুঞ্জের তারাদের দুইরকম অবস্থান পাওয়া গেলে। একটি হলো সাধারণ রাতের আকাশে। যখন সামনে সূর্য ছিল না। ছিল না সম্ভাব্য মহাকর্ষ বক্রতা। অন্তত সূর্যের কারণে নয়। আবার নির্বিঘ্নে দেখাও গেল। আরেকটি পরিমাপ পাওয়া গেল সূর্যগ্রহণের সময়। দুই পরিমাপ মিলে গেলে মহাকর্ষ বক্রতা বলতে কিছু থাকবে না। পরিবর্তন পাওয়া গেলেই প্রমাণ হবে এ ব্যাপারটা।

দুটি দল গ্রহণের ছবি তুলতে ছুটে যান দুই আলাদা জায়গায়। এক দল যান পশ্চিম আফ্রিকার দ্বীপ প্রিন্সিপায়। এ দলে ছিলেন এডিংটন ও এডউইন টার্নার কোটিংহাম। আরেক দল যান ব্রাজিলের সব্রাল শহরে। এ দলে গ্রিনিচ মানমন্দিরের অ্যান্ড্রু ক্রোমলিন ও চার্লস ডেভিডসন। মূল পরীক্ষাটি পরিচালিত হয় রয়েল সোসাইটি ও রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে। সেসময় ফ্র‍্যাংক ডাইসন ছিলেন অ্যাস্ট্রোনমার রয়েল। মূলত এডিংটনের পরামর্শে তিনি কাজটা নিয়ে পরিকল্পনা এগিয়ে নেন।

প্রাপ্ত ফলাফলে প্রমাণ জয় আইনস্টাইনের অনুমান। বাস্তবে দেখা গেল মহাকর্ষী বক্রতা। পরীক্ষার পরিকল্পনার পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণেও ফ্র‍্যাংক ডাইসন কাজ করেন। এ পরীক্ষার ফল সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। আইনস্টাইন ও তাঁর তত্ত্ব রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়।

আইনস্টাইন ক্রস 

মহাকর্ষ বক্রতার একটি দারুণ ফল হলো আইনস্টাইন ক্রস ও বলয়। 


Advertisement 02

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, সিলেট ক্যাডেট কলেজ। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত বই পাঁচটি | সব লেখা | ফেসবুক | পারসোনাল ওয়েবসাইট

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...