বছরে দুই বার অয়ন ঘটে। নিরক্ষরেখার উত্তরে বা দক্ষিণে সূর্যের দূরতম অবস্থানকে অয়ন (Solstice) বলা হয়। বছরের অয়ন দুটি ঘটে জুন (সাধারণত ২১ তারিখ) ও ডিসেম্বর মাসে (সাধারণত ২২ তারিখ)। আমাদের উত্তর গোলার্ধে জুনের অয়নকে উত্তরায়ণ (Summer Solstice) এবং ডিসেম্বরের অয়নকে দক্ষিণায়ন (Winter Solstice) বলা হয়। উত্তর গোলার্ধে জুনের অয়নকে কেন্দ্র করে গ্রীষ্মকাল এবং ডিসেম্বরের অয়নকে কেন্দ্র করে শীতকাল আবর্তিত হয়। আসলে, এ কারণেই Summer Solstice কথাটিকে আমাদের বাংলায় উত্তরায়ণ বলা হচ্ছে। অন্য দিকে, দক্ষিণ গোলার্ধে এর উল্টো ঘটনা ঘটে। অর্থ্যাৎ, জুনের দিকে শীত এবং ডিসেম্বরের দিকে থাকে গরম আবহাওয়া।
দক্ষিণায়নের সময়
সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে থাকে। এই দিনটিই উত্তর গোলার্ধের ক্ষুদ্রতম দিন।
চলুন, দক্ষিণায়ন সম্পর্কে ১০টি কথা জেনে নিই।
১।
একই সাথে শীত ও গ্রীষ্মের কেন্দ্রবিন্দুঃ
এই সময় আমাদের উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকলেও দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে উষ্ণ আবহাওয়া। ইংরেজরা উত্তর গোলার্ধের মানুষ হওয়ায় এবং ডিসেম্বরের অয়নের সময় এই অঞ্চলে শীত থাকায় তারা এই অয়নকে নাম দিয়েছে শীতের অয়ন (Winter Solstice)। অথচ, দক্ষিণ গোলার্ধের শীতের অয়ন কিন্তু জুন মাসে ঘটে। ফলে, ডিসেম্বরের অয়নকে দক্ষিণ গোলার্ধে ডাকা হয় গ্রীষ্মের অয়ন (Summer Solstice) নামে। এই দিক থেকে বাংলায় নামগুলো বেশ উৎকৃষ্ট। এগুলো পৃথিবীতে অবস্থানের ভিত্তিতে না করে সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে করা হয়েছে। ফলে, একই শব্দ
দক্ষিণায়ন দুই গোলার্ধেই প্রযোজ্য। শুধু জানতে হবে, বিপরীত গোলার্ধে একই অয়নের সময় বিপরীত ঋতু থাকে।
দক্ষিণ গোলার্ধে এই অয়নের সময় দীর্ঘতম এবং উত্তর গোলার্ধে ক্ষুদ্রতম দিন পাওয়া যায়।
২।
সূর্যের অবস্থানঃ
দক্ষিণায়নের সময় সূর্য মকরক্রান্তি রেখার উপর খাড়াভাবে আলো ফেলে। অন্য দিকে, উত্তরায়নে সূর্য একই কাজ করে কর্কটক্রান্তি রেখার উপর। উল্লেখ্য, দক্ষিণায়নের সময় বর্তমানে সূর্য খ-গোলকের মকরমণ্ডলী অঞ্চলে অবস্থান করে না, করে ধনুমণ্ডলীতে।
আরো পড়ুনঃ সূর্য কখন কোথায় থাকে
৩।
নির্দিষ্ট সময়ঃ
আমরা দক্ষিণায়নের জন্যে পুরো একটি ধার্য করলেও আসলে এটি ঘটে একটি নির্দিষ্ট সময়ে- যখন মকরক্রান্তির রেখায় সূর্য বরাবর মাথার উপরে থাকে। ২০১৫ সালে এটি ঘটবে ডিসেম্বরের ২২ তারিখে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০ টা ৪৯ মিনিটে।
৪।
অয়নের তারিখ পরিবর্তনশীলঃ
উত্তরায়ণের মতই দক্ষিণায়নও তারিখ বদলাতে পারে। এটি হতে পারে ডিসেম্বরের ২০, ২১, ২২ বা ২৩ তারিখে। অবশ্য ২০ এবং ২৩ তারিখে এটি কমই হয়ে থাকে। ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে অয়ন হবার সর্বশেষ সালটি ১৯০৩ এবং পরবর্তী সাল ২৩০৩!
৫।
অয়নের শাব্দিক অর্থঃ
বাংলায়
অয়ন শব্দের অর্থ
পথ,
ভূমি বা
গৃহ। এর বিশেষ একটি অর্থ
সূর্যের গতি বা
গতিপথ। তাহলে
দক্ষিণায়ন অর্থ দাঁড়ায় দক্ষিণে সূর্যের অবস্থান বা গতি। বাস্তবে অবশ্য এটি বলতে বোঝায় সূর্যের সর্বদক্ষিণে অবস্থানের দিন বা ঘটনা। এর ইংরেজি পরিভাষা
Solstice, যার উদ্ভব ঘটেছে ল্যাটিন শব্দ
solstitium থেকে। এর অর্থ '
সূর্য স্থির হল' (The sun stands still)। ঐ দিন পৃথিবী থেকে দেখতে সূর্যকে মকরক্রান্তি বা কর্কটক্রান্তি রেখার উপর স্থির মনে হয় বলে এই নামের আবির্ভাব ঘটে থাকতে পারে।
৬।
জ্যোতির্বিদ্যার হিসাবে শীতের শুরুঃ
যদিও এই তারিখের আগেই শীত শুরু হয়, এই তারিখটিকে বিজ্ঞানীরা এবং বিশেষ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা শীতের আগমণের তারিখ হিসেবে ব্যবহার করেন। জ্যোতির্বিদ্যার হিসাবে শীত শেষ হয় মার্চ মাসের মহাবিষুবের (Equinox) সময়। অন্য দিকে, আবহাওয়াবিদদের মতে ৩ সপ্তাহ আগে, ডিসেম্বরের ১ তারিখেই শীত শুরু হয়।
৭।
পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বঃ
অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে, শীতকালে পৃথিবী সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরে থাকে। বাস্তবতা এর উল্টো। পৃথিবী বরং শীতকালেই সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকে। এই অবস্থানকে অনুসূর (Perihelion) বলে। ২০১৬ সালে পৃথিবী অনুসূরে থাকবে জানুয়ারির ৩ তারিখে, দক্ষিণায়নের ২ সপ্তাহের মধ্যেই!
শীতের আবির্ভাবের উপর তাই দূরত্বের প্রভাব খুবই সামান্য। তাহলে শীতকাল আসে কিভাবে? পৃথিবী এর কক্ষতলের সাথে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে আছে। দক্ষিণায়নের সময় দক্ষিণ গোলার্ধ ঝুঁকে থাকে সূর্যের দিকে। ফলে, সেখানে গ্রীষ্ম আর আমাদের এখানে শীতকাল থাকে। উত্তরায়ণের সময় ঘটে উল্টো ঘটনা।
৮।
দ্রুততম সূর্যাস্ত এই দিনে নয়ঃ
উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ স্থানেই এই অয়নের আগেই দ্রুততম সূর্যাস্ত হয়ে যায়। আর দীর্ঘায়িত সূর্যোদয় হয় অয়নের কিছু দিন পরে অর্থ্যাৎ, সূর্য কিন্তু অয়নের দিনে অন্য দিনের চেয়ে আগেভাগে অস্ত যায় না।
৯।
উত্তর গোলার্ধের দিনের দৈর্ঘ্যের দ্রুত বৃদ্ধিঃ
উত্তর গোলার্ধে এই সময়ের পরে দ্রুত দিন বড় হতে থাকে। যে স্থান যত বেশি উত্তরে, সেটিতে এই বৃদ্ধির পরিমানও তত বেশি।
১০।
উৎসবঃ
অনেক দেশেই উৎসব করে দিনটি পালন করা হয়। অনেক জায়গায় আবার এই দিনে ছুটিও থাকে।
সূত্রঃ
১।
Time and Date
২। টাইম অ্যান্ড ডেইটঃ
অপসূর, অনুসূর