Advertisement

শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৫

ছোট ম্যাজেলানিক ক্লাউড

ছোট ম্যাজেলানিক ক্লাউড (SMC) গ্যালাক্সিটিকে সবচেয়ে সহজে চোখে পড়ে দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশ থেকে। এটি এর বড় ভাই লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড থেকেও দক্ষিণে অবস্থিত। তবে এরা দুজনেই আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে অবস্থিত হলেও দুজনেই মিল্কিওয়ের স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি অর্থ্যাৎ এরা মিল্কিওয়েকে প্রদক্ষিণ করছে।
১৭ ডিগ্রি উত্তর গোলার্ধ থেকে এদের কোনটাকেই চোখে পড়ে না। অর্থ্যাৎ উত্তর আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, সমগ্র ইউরোপ এবং এশিয়ার উল্লেখযোগ্য অংশ থেকে (ভারতের দক্ষিণ অংশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ছাড়া) এদেরকে দেখা যাবে না। শরতের শেষ এবং শীতের শুরুতে (অক্টোবরে শেষ রাতে, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে রাতের প্রথম প্রহরে এবং জানুয়ারিতে সন্ধ্যার পরপরই) ছোট ম্যাজেলানিক ক্লাউডকে সবচেয়ে ভালোভাবে দেখা যায়। যখন ইংরেজি W বা M (অবস্থানভেদে) অক্ষরের মত আকৃতির ক্যাসিওপাইয়া তারামণ্ডলী রাতের উত্তর আকাশের চূড়ায় উঠবে তখনই দক্ষিণ আকাশের চূড়ায় দেখা যাবে এসএমসিকে (SMC- Small Magellanic Cloud)।
বড় ও ছোট ম্যাজেলানিক ক্লাউড
দক্ষিণ খ-মেরু (Celestial pole) থেকে এটি ২০ ডিগ্রি কৌণিক দূরত্বে এবং টিউক্যানা তারামণ্ডলীতে এর অবস্থান। একে খুঁজে পেতে আপনাকে সহায়তা করবে রাতের আকাশের দশম উজ্জ্বল তারকা নদীমুখ (Acherner)। আকাশ নদীর সমার্থক তারামণ্ডলী ইরিডেনাসে অবস্থিত এই তারকাটি থেকে ১৫ ডিগ্রি নিচে এসএমসি এর অবস্থান। এঁকেবেঁকে চলা আকাশনদী তারামণ্ডলীটি আদম সুরতের পায়ের নক্ষত্র রিজেলের নিকট থেকে শুরু হয়ে আখেরনার (নদীমুখ) তারকায় গিয়ে শেষ হয়েছে।
উজ্জ্বলতা এবং আকার- দুই ক্ষেত্রেই এসএমসি বড়ভাই এলএমসি (লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড) এর চেয়ে অনেক পিছিয়ে। প্রায় আড়াই বাই ৫ ডিগ্রি অঞ্চল জুড়ে এর বিস্তার। ওভারঅল উজ্জ্বলতা +২। প্রায় ১৩ বর্গ ডিগ্রি অঞ্চল জুড়ে এর দীপ্তি ছড়িয়ে থাকায় এলএমসির চেয়ে একে খুঁজে পাওয়া কঠিন, আর প্রয়োজন হয় খুব অন্ধকার আকাশের।
ইতিহাস ও রূপকথাঃ
এটি অনুজ্জ্বল এবং দক্ষিন গোলার্ধে অবস্থিত হবার সুবাদে প্রাচীন ইউরোপের রূপকথার বেড়াজাল থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ায়র রূপকথায় এর স্থান আছে। পলিনেশীয়দের কাছে দুই ম্যাজেলানিক ক্লাউডই চলাচলের ভালো সহায়ক ছিল। নিউজিল্যান্ডে এদেরকে ঝড়ের পূর্বাভাস মনে করা হত। ৬ষ্ঠ শতকের শুরুর দিকে ফার্ডিন্যান্ড ম্যাজেলানের গবেষণার সূত্র ধরে এদের সাথে ম্যাজেলান নামের সংযোগ ঘটে। বেয়ারের ইউর‍্যানোমেট্রিয়াতে এদেরকে যথাক্রমে ubecula major ও nubecula minor বলা হয়েছিল। ১৭৫৬ সালে ফরাসী জ্যোতির্বিদ লেকেইলি তাঁর তারা মানচিত্রে এদেরকে বর্তমান নাম দেন।
বৈশিষ্ট্যঃ
এলএমসির পরে এটি মিল্কিওয়ের চতুর্থ নিকটবর্তী গ্যালাক্সি। সবচেয়ে ভালো হিসাব অনুযায়ী এটি ২ লাখ ১০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে তথা এলএমসির চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি দূরে অবস্থিত। অনিয়তাকার গ্যালাক্সিটি মিল্কিওয়ের টানের কারণের দণ্ডযুক্ত সর্পিল কাঠামো প্রদর্শন করে। সবচেয়ে প্রসারিত অঞ্চলে এর ব্যাস ১৫ থেকে ১৭ হাজার আলোকবর্ষ। এতে তারকার সংখ্যা মাত্র কয়েক কোটি, যা এলএমসি বা মিল্কিওয়ের চেয়ে অনেক কম।
আকাশে ঠিকানাঃ
খ-গোলকে এর অবস্থান নিম্নরূপঃ
বিষবাংশঃ ৫২ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড
বিষুব লম্বঃ প্রায় (-) ৭২ ডিগ্রি।

সূত্রঃ
১। আর্থ স্কাই
২। উইকিপিডিয়াঃ ইরিডেনাস


Advertisement 02

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, সিলেট ক্যাডেট কলেজ। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত বই পাঁচটি | সব লেখা | ফেসবুক | পারসোনাল ওয়েবসাইট

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...