Advertisement

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। আমরা এমনটাই বলি। বলি বৃহস্পতি, শনিদের ক্ষেত্রেও। তবে আসলে কথাটায় খানিক ঘাপলা আছে। কী সেই ঘাপলা? চলুন, জেনে নেই। 


কাছাকাছির ভরের দুই বস্তুর প্রদক্ষিণ। দুটি বস্তুই + চিহ্নিত জায়গাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।


পৃথিবী হলো গ্রহ। আর সূর্য নক্ষত্র। গ্রহ ঘোরে নক্ষত্রের চারপাশে। সেজন্যেই তো আমরা বলি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। আসলে দুজনেই প্রদক্ষিণ করে তাদের যৌথ ভরকেন্দ্রকে। জায়গাটার গালভরা নাম ব্যারিসেন্টার। মজার ব্যাপার হলো, ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের বাইরের গ্রহ খোঁজার ব্যাপারেও দারুণ কাজে লাগে! 


তো, এই ব্যারিকেন্দ্র বা ভরকেন্দ্র আসলে কী? প্রত্যেক বস্তুর ভরের একটা কেন্দ্র আছে। এটা হলো বস্তুটার উপাদান পদার্থের একদম নিখুঁত কেন্দ্র। ভরকেন্দ্র বিন্দুতে বস্তুটাকে সঠিকভাবে ব্যালেন্স করে (ভারসাম্যে) রাখা যায়। অনেকসময় ভরকেন্দ্র থাকে বস্তুর ঠিক কেন্দ্রে। যেমন ধরুন একটা রুলার। এর মাঝ বরাবর এখানে-ওখানে কয়েকবার আঙ্গুল রেখে ধরে রাখার চেষ্টা করুন। পেয়ে যাবেন সে জায়গা, যেখানে আঙ্গুল রাখলে রুলার পড়ে যাবে না। এটাই রুলারের ভরকেন্দ্র। অপর নাম অভিকর্ষ কেন্দ্র। 


অনেকসময় ভরকেন্দ্র আর বস্তুর কেন্দ্র একই জায়গায় হয় না। কেন? ধরুন ২ ও ৪ দুটি সংখ্যা। এদের গড় ৩। যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে বা কেন্দ্রে আছে। কিন্তু ২, ৪, ৪ সংখ্যা তিনটির গড়? ৩.৩৩, যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে নয়। সংখ্যার অসম বিন্যাসে পাল্টে গেছে কেন্দ্র। ৪ এর সংখ্যা ২ এর চেয়ে বেশি হওয়ায় গড় ৪ এর দিকে সরে এসেছে। ভরের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে। ভর একেকদিকে একেক রকম হলে সরে যায় কেন্দ্র। যেমন ধরুন হাতুড়ি। এর প্রায় সবটুকু ভর এক প্রান্তে আছে। ফলে ভরকেন্দ্রও ভারী প্রান্তটির কাছাকাছি। বস্তুর সবচেয়ে বেশি ভর যেদিকটায় থাকে, ভরকেন্দ্রও তার কাছাকাছি থাকে। 


এক নজরে সূর্য


সূর্য ও পৃথিবীরও একটি ভরকেন্দ্র বা ব্যারিসেন্টার আছে। তবে সূর্যের ভর পৃথিবীর তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সৌরজগতের ৯৯.৮৬ ভাগ। সূর্য তাই হাতুড়ির ভারী মাথার মতো বা তার চেয়ে প্রভাবশালী। এর ফলে সূর্য ও পৃথিবীর ব্যারিসেন্টার সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি। তাও ভেতরেই। বৃহস্পতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড়। ভর ৩১৮ গুন। ফলে সূর্য ও বৃহস্পতির ব্যারিকেন্দ্র সূর্যের ভেতরে নয়। কিছুটা বাইরে। ফলে শুধু এই দুটি বস্তুকে আলাদা করে দেখলে ব্যাপারটাকে বাইনারি স্টার বা জোড়াতারার মতো মনে হবে। মানে বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না। দুজনেই দুজনকে কেন্দ্র করে ঘুরছে! 


বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে না!


পুরো সৌরজগতেরও একটি ব্যারিকেন্দ্র আছে। সূর্য, পৃথিবী ও সৌরজগতের গ্রহ ও অন্যসব বস্তু সেই ব্যারিকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। এই ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের সবগুলো বস্তুর সমন্বিত ভর ধারণ করে আছে৷ তবে এই ভরকেন্দ্র হাতুড়ির মতো নয়। নয় স্থির কোনো জায়গায়। ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ সব বস্তু এখানে গতিশীল। ব্যারিকেন্দ্র হতে পারে সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছে। আবার হতে পারে সৌরপৃষ্ঠেরও বাইরে৷ 


ব্যারিকেন্দ্র কীভাবে গ্রহ খুঁজে পেতে কাজে আসে তা এখন বোঝা যাচ্ছে। নক্ষত্রের কোনো গ্রহ থাকলে এর ব্যারিকেন্দ্র দোল খেতে থাকে এদিক-সেদিক। মাতাল মানুষ যেমন এদিক-সেদিক ঢুলতে থাকে। সৌরজগতের বাইরের গ্রহদেরকে দেখে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। নক্ষত্রের আলোর ঝলকে এদের মৃদু প্রতিফলিত আলো হারিয়ে যায়। তবে নক্ষত্রের দোল খাওয়া দেখে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আর এভাবে প্রচুর বহির্গ্রহ আবিষ্কার করাও হয়েছে। সংখ্যাটাও কম নয়, সব মিলিয়ে ১০৩৬। আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সফল কৌশল এটি। সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরা গ্রহের ট্রানজিট বা অতিক্রমন।

অতিক্রমন দেখে পাওয়া গেছে প্রায় চার হাজার গ্রহ। সে গল্প বিস্তারিত আরেকদিন শোনাব ইনশাআল্লাহ। 


সূত্র: নাসা স্পেসপ্লেস 


* লেখাটি ইতোপূর্বে কিশোরআলো ম্যাগাজিনে প্রকাশিত। 


Category: articles

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

আমরা জানি, শনি গ্রহের বলয় আছে। তা ঠিক আছে। তবে বলয় আছে অন্য গ্রহেরও। সব মিলিয়ে সৌরজগতের চারটি গ্রহের বলয় আছে। এরা হলো চার বিশাল গ্রহ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। বলয় শুধু একটাই নয়। আছে অনেকগুলো৷

শনির বলয় থাকার কথা বহু আগে থেকেই জানা। বলয় সবচেয়ে বিশালও এই গ্রহটির। তবে অন্য গ্রহদের বলয় খুঁজে পাওয়া যেতে থাকে ১৯৭০ এর দশক থেকে। বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের বলয় অনেক হালকা, অন্ধকার ও ছোট।


বৃহস্পতি গ্রহের বলয়। ছবিসূত্র: স্পেস ডট কম 

বৃহস্পতির বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৯ সালে। ভয়েজার ১ মহাকাশযান এর কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ব্যাপারটা জানা যায়। নব্বইয়ের দশকে গ্যালিলিও অরবিটার আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালায়। বলয়ের প্রধান উপাদান ধূলিকণা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও পৃথিবীর শক্তিশালী টেলিস্কোপে এ বলয় দেখা যায়।

শনির বলয় ১৬১০ সালেই গ্যালিলিও দেখতে পান। তবে শক্তিশালী টেলিস্কোপের অভাবে বলয় সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেননি। ১৬৬৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স প্রথম জানান, জিনিসটা আসলে চাকতির মতো বলয়। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে জানা যায়, বলয় আসলে ছোট ছোট অনেক অংশ নিয়ে গঠিত। সব মিলিয়ে বলয় আছে ১২টি।

ইউরেনাসের বলয় একটু নতুন। গ্রহটির আগের চাঁদদের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে বলয়গুলো। ১৯৭৭ সালে আবিষ্কৃত নয়টি বলয়। পরবর্তীতে ভয়েজার ২ মহাকাশযান ২টি বলয় আবিষ্কার করে। আরও ২টি খুঁজে পায় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে সব মিলিয়ে বলয় আছে অন্তত ১৩টি। উইলিয়াম হার্শেল ১৭৮৯ সালে এ বলয় দেখার কথা বলেছিলেন। তবে আসলেই দেখতে পেরেছিলেন সেটা নিয়ে মতভেদ আছে। কারণ বলয়গুলো খুব হালকা।


নেপচুনের বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৯ সালে। ভয়েজার ২ যান কাছ দিয়ে উড়ে যাবার সময়। বলয় পাওয়া গেছে ৬টি। সবগুলোই হালকা। নেপচুনের চারটি চাঁদই বলয়ের ভেতর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।

☛ ভয়েজার মহাকাশযানের দুর্দান্ত অভিযাত্রা (লেখা আসছে...)
☛ সব্বচেয়ে দূরের মহাকাশযান (লেখা আসছে...)

শুধু গ্রহের নয়, বলয় আছে উপগ্রহেরও। ২০০৮ সালের এক রিপোর্টে শনির চাঁদ রিয়ায় বলয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। আর কোনো উপগ্রহের বলয় থাকার কথা জানা যায়নি। বামন গ্রহ প্লুটোর বলয়ের কথা একবার প্রস্তাব করা হলেও নিউ হরাইজনস অভিযানের চিত্র সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৭ সালে দেখা যায়, বামন গ্রহ হাউমেয়াও বলয়ের মালিক৷

বহির্গ্রহেদের অনেকের ক্ষেত্রেই বলয় থাকার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই সে প্রস্তাব বাতিল হয়েছে বিভিন্ন কারণে। তবে একটি বহির্গ্রহ এ রেকর্ড ধরে রেখেছে। নাম এইচআইপি ৭১৩৭৮ এফ।


সূত্র: ক্যালটেক, ইউনিভার্স টুডে

Category: articles

শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮

রাতের আকাশে খালি চোখে পাঁচটি গ্রহ দেখা যায়। বুধ, শুক্র (শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা হিসেবে), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। তবে একই সাথে সবগুলো গ্রহকে সাধারণত দেখা যায় না। চারটি দেখাও বেশ ভাগ্যের ব্যাপার বটে!


এমন ব্যাপারই ঘটছে এ মাসেও। গত মাসটাও প্রায় এমন ছিল। এক সাথে চারটি উজ্জ্বল গ্রহ। শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সন্ধ্যার পরই আকাশের পশ্চিম, ও দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশকে রাঙিয়ে রাখে চারটি গ্রহের মিলনরেখা।

শুক্র
চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। এছাড়া এ মাসে গ্রহটি একটু বেশিই উজ্জ্বল। মাসের শুরুতে সন্ধ্যার দেড় ঘণ্টা পরেও থাকছে দিগন্তের উপরে। তবে মাসের শেষের দিকে থাকবে মাত্র এক ঘণ্টা। মাসের ২১ তারিখে শুক্র সবচেয়ে উজ্জ্বল হবে।

আরও পড়ুন
☛ শুকতারার পরিচয়

আগস্ট মাসের ২৮ তারিখের সন্ধ্যার আকাশ।
সূত্র: Stellarium
বৃহস্পতি
গ্রহরাজও এ মাসে দারুণ উজ্জ্বল। এমনিতেই এটি যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও উজ্জ্বল। শুধু শুক্রর কাছেই এর হার। তবে এ বছর মঙ্গলে কারণে এটি একটি পিছিয়ে পড়ল। পৃথিবীর খুব কাছে এসে পড়ায় এ মাসের ৭ জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর— এই দুই মাস মঙ্গল উজ্জ্বলতায় বৃহস্পতির চেয়ে এগিয়ে ছিল।

আরও পড়ুন
☛ গ্রহ-নক্ষত্রদের কে কত উজ্জ্বল কীভাবে বুঝবেন?
এক নজরে বৃহস্পতি

মাসের শুরুতে সন্ধ্যার প্রায় তিন ঘণ্টা আর মাসের শেষের দিকে প্রায় দুই ঘণ্টা পরে অস্ত যাবে বৃহস্পতি।

মঙ্গল
বর্তমান সময়ে লাল গ্রহটিকে সন্ধ্যার আকাশে খুব সহজে দেখা যায়। এক দিকে লাল বলে এমনিতেই নজরে পড়ে সহজে। তাও আবার এখন উজ্জ্বলতায় বৃহস্পতির সাথে দিচ্ছে টেক্কা। তবে দ্রুতই অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ছে বেচারা। মাসের শুরুতে এটি শনির দশগুণ উজ্জ্বল হলেও মাসের শেষে থাকছে মাত্র ৫ গুণ উজ্জ্বল।

আরও পড়ুন
মঙ্গল গ্রহ লাল কেন?

শনি
শনিকে দেখা যাচ্ছে মঙ্গল ও বৃহস্পতির প্রায় মাঝে। ডুববে প্রায় মধ্য রাতে।

গত মাসের ছবি
শুক্র, চাঁদ ও চাঁদের প্রতিফলনের ছবি। ছবিটা তোলা পর্তুগালে। তুলেছিলেন হেনরিক ফেলিচিয়ানো সিলভা। সূত্র: Earthsky.org। 
আরও পড়ুন
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প

সুত্র:
১। Earthsky.org
২। Stellarium
Category: articles

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

মহাকাশ নিয়ে আমাদের আকর্ষনের কোন কমতি নেই সেই প্রাচীনকাল থেকেই। কখনো খালি চোখে, কখনো দুরবিন, কখনও বা টেলিস্কোপ দিয়ে নানান তথ্য উদঘাটনে মহাকাশকে তন্নতন্ন খুঁজে ফিরেছে নামজাদা বিজ্ঞানীসহ অনেক সাধারণ মানুষও। এখন এতো এতো গবেষণার তথ্য উপাত্তের ভীড়ে আমাদের মনে হুট করে প্রশ্ন জাগতে পারে, পৃথিবী তো ৭১ শতাংশ পানিতে নিমজ্জিত, তাহলে কি মহাকাশে কোন পানি নেই? থাকলেই বা তা কতটুকু? কোথায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি পানি? এই প্রশ্নগুলো গুছিয়ে দিতে এসো আজ দেখে নেয়া যাক- মহাকাশে পানির পরিমাণ কতটুকু এবং কোথায় বা সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে?


আমরা সকলেই জানি যে, প্রাচুর্যতায় ভরপুর আমাদের এই পৃথিবী ছাড়া বিশ্বজগতের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব এখন অবধি প্রমাণিত হয়নি। কোথায় প্রাণের বিকাশের পূর্বশর্ত হিসেবে সেখানে পানির উপস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয়। যার স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমাদের এই পৃথিবীতে রয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন,পৃথিবীর চেয়েও বহুগুণ পানি রয়েছে আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ এবং উপগ্রহে! এখন মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উদয় হতে পারে, পানি যেহেতু আছে, প্রাণ থাকবে না কেন? কিম্ভুতকিমাকার চেহারার সায়েন্স ফিকশনের সবুজ ঘড়িওয়ালা এলিয়েন থাকবে না কেন?

পানি মানেই কিন্তু যে স্বচ্ছ শীতল নির্মল পানি হতে হবে এমন নয়। অন্যান্য গ্রহের নানান প্রকার গ্যাস, গলিত পদার্থ, চাক চাক বরফকে আমরা সাধারণভাবে পানি বললেও- তা আসলে বহু যৌগ পদার্থের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হওয়া রাসায়নিক তরল। যেমন, বিজ্ঞানীদের ধারণা ইউরেনাসের হাইড্রোজেন-মিথেন এর পিছনে রয়েছে উত্তপ্ত এক সমুদ্র। এই সমুদ্রে পানির সাথে দ্রবীভূত আছে অ্যামোনিয়া।

মূল কথায় আসা যাক। এখন প্রথমত প্রশ্ন আসতে পারে- সৌরজগতের কোথায় সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে এবং তার পরিমাণ কতটুকু? মহাকাশ সংস্থা নাসার দেয়া পরিসংখ্যান দেখে নেয়ে যাক। নড়েচড়ে বসুন কিন্তু। কারণ বিজ্ঞানের তথ্যগুলো সাদা দৃষ্টিতে নয়, অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হয় ধীরেসুস্থে।

পৃথিবীতে তরল পানির পরিমাণ হলো ১.৩৩৫ জেটালিটার (Zettalitres ZL)। এক জেটালিটার মানে, একশ কোটি ঘন কিলোলিটার! সংখ্যায় লিখলে যা হবে, 1000000000000000000000 ঘন কিলোলিটার! কি, মাথায় চক্কর কাটছে?

আমাদের প্রিয়তম পৃথিবীর আয়তন হলো ১০৮৩.২১ জেটালিটার (পৃথিবী কঠিন পদার্থ হলেও তুলনার সুবিধার্থে আয়তনকে লিটারে প্রকাশ করা হয়েছে)। অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় পৃথিবীতে পানির পরিমাণ হলো মাত্র 0.12 শতাংশ! যা মূলত পৃথিবীর উপরিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সমুদ্রতলের সবচেয়ে গভীরতম খাদ ম্যারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা প্রায় ১১ কিলোমিটার। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠস্থ সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্টের চেয়েও ৩ কিলোমিটারের মতো গভীর! স্বাভাবিকভাবে মাটি খুঁড়তে থাকলে তিন কিলোমিটারের পরে আর পানি পাওয়া যাবে না। তারপর থেকে পৃথিবী আস্ত এক গমগমে আগুনের গোল্লা। যাকে ভিতরে রেখে আমাদের বসবাসের জন্যে পৃথিবীপৃষ্ঠ অনেকটা শীতলপাটির মতো বিছিয়ে আছে।

পৃথিবীর গঠন। প্রায় তিন কিলোমিটার গভীরে গেলেই কিন্তু পানির দেখা পাওয়া যাবে না। 

অন্যদিকে সৌরজগতের অন্যতম অধিবাসী ট্রিটনে তরল পানির আয়তন হলো, 0.03 জেটালিটার। আর তার আয়তন হলো 10.35 জেটালিটার। ট্রিটনের আয়তন অনুযায়ী তার মধ্যে পানি আছে ৬৫ শতাংশ! যেখানে পৃথিবীর আয়তন অনুযায়ী তাতে পানির পরিমাণ মাত্র ০.১২ শতাংশ।

সুতরাং, সহজেই বুঝে নেয়া যায় যে, আয়তনের পাল্লায় ট্রিটনের পানির পরিমাণ বহুগুণ বেশি! এটাই শেষ নয়, উদাহরণ এখনো বাকি আছে যে। বরং একগ্লাস পানি খেয়ে নিন। আর ভাবতে থাকুন, এই একগ্লাস পানি, ভূপৃষ্ঠের ০.১২ শতাংশ পানির কত শত জেটালিটার ক্ষুদ্র অংশ?

তারপর, চমৎকার সুন্দর গ্যাসীয় বলয় থাকা বামন গ্রহ প্লুটোর আয়তন হলো ৭.০১ জেটালিটার। আর প্লুটোতে পানির পরিমাণ হলো ১ জেটালিটার। যা তার আয়তনের ৬২ শতাংশ। বৃহস্পতিগ্রহের অন্যতম উপগ্রহ ইউরোপার আয়তন ১৬.০৬ জেটালিটার। আর তার অভ্যন্তরস্থ পানির পরিমাণ, ২.৬ জেটালিটার। যা আয়তনের ১৮ শতাংশ। শনির উপগ্রহ এনসেলেডাসের ৬৮% ই পানি দিয়ে পরিপূর্ণ।

শনির উপগ্রহ এনসেলেডাস

১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর আবিষ্কার করা বৃহস্পতিগ্রহের ৬৭টি উপগ্রহের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সৌরজগত পরিবারের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ ক্যালিস্টর আয়তন হলো ৫৮.৬৩ জেটালিটার। যার অভ্যন্তরে তরল পানির পরিমাণ, ৫.৩ জেটালিটার। অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি।

১৬৫৫ সালের ২৫ মার্চ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস- এর আবিষ্কার করা শনিগ্রহের বৃহত্তম এবং ঘন বায়ুমণ্ডল বিশিষ্ট একমাত্র উপগ্রহ টাইটানের আয়তন ৭১.৬০ জেটালিটার। আর তার মধ্যে তরল পানির অস্ত্বিত্ব রয়েছে ১৮.৬ জেটালিটার। টাইটানের মোট আয়তনের ৪৪ শতাংশ।

বৃহস্পতির সর্ববৃহৎ উপগ্রহ গ্যানিমিড সৌরজগতেরও সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। আকারে যা বুধগ্রহের চেয়েও বড়। গ্যানিমিড ৬ লাখ ২১ হাজার মাইল দূর দিয়ে বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করে। আয়তন হলো, ৭৬.২৯ জেটালিটার। আর তরল পানির আয়তন ৩৫.৪ জেটালিটার। যার প্রেক্ষিতে আয়তনের তুলনায় পানি হলো, ৬৯ শতাংশ।

বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে পানির পরিসংখ্যান।
বড় করে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।  

সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে বৃহত্তম উপগ্রহ গ্যানিমিডে। যাতে তরল পানির উপস্থিতি রয়েছে ৩৫.৪ জেটালিটার। যা তার আয়তনের ৬৯ শতাংশ। খেয়াল করেছেন কি পানির উপস্থিতিতে শীর্ষের দিকে থাকা ইউরোপা, ক্যালিস্টো, গ্যানিমিডের অবস্থান পৃথিবীর তুলনায় দশগুণ বিশাল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিতে। এখন তাহলে কি আমরা বলতে পারি না গ্রহের অন্তর্ভূক্ত পরিবার হিসেবে বৃহস্পতিগ্রহে সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে। বোধহয় পারি!

গ্যানিমিডসহ বৃহস্পতির প্রধান ৪টি উপগ্রহ।
Category: articles

শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

সৌরজগতে সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুন। ভরের দিক দিয়ে অবস্থান তিন-এ। আকার বড় হলেও দূরত্ব বেশি হবার কারণেই একে খুঁজে পেতে দেরি হয়েছিল। খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। সেজন্যেই এটিই সবার শেষে আবিষ্কৃত গ্রহ। ১৮৪৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একে খুঁজে পাওয়া যায়। আবিষ্কার নিয়ে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে ঘটে যায় কিছু বিতর্ক। সে আরেক কাহিনি।

আরও পড়ুনঃ 
☛ নেপচুন আবিষ্কারের গল্প 

যাই হোক, গ্রহ নক্ষত্ররা কত বড়- তার হিসাব হয় অন্তত দুইভাবে। এক, এরা আয়তনে কত বড়। ব্যাস বা ব্যাসার্ধ বলা আর আয়তন বলার মধ্যে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। যার ব্যাস বা ব্যাসার্ধ বেশি হবে, আয়তন তো তারই বেশি হবে। আরেকটি তুলনীয় বিষয় হলো কার ভর কতটা বেশি।

ব্যাসের দিক দিয়ে নেপচুনের অবস্থান গ্রহদের মধ্যে চার নম্বরে। অর্থ্যাৎ, সৌর জগতের চারটি গ্যাস জায়ান্টের মধ্যে এটি সবচেয়ে ছোট। অপর তিনটি গ্যাস জায়ান্ট হলো বৃহস্পতি, শনি ও ইউরেনাস। তবে ইউরেনাস সামান্যই বড়। গ্যাস দানবদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও অন্য চার গ্রহের তুলনায় একে দানব বলাই ভাল। আয়তন পৃথিবীর প্রায় ৫৮ গুণ। তার মানে, নেপচুনের ভেতরটা ফাঁপা করা হলে এর ভেতরে ৫৮টা পৃথিবী রেখে দেওয়া যাবে।

নেপচুন ও পৃথিবীর তুলনামূলক আকার 

গড় ব্যাসার্ধ হলো ১৫, ২৯৯ মাইল (২৪, ৬২২ কিমি.)। পৃথিবীর প্রায় চার গুণ। মানে চারটি পৃথিবীকে পাশাপাশি রাখলে নেপচুনের এক পাশ থেকে অপর পাশের প্রায় সমান হবে।

অন্যান্য বস্তুর মতোই আবর্তনের কারণে বিষুব অঞ্চলে এটি কিছুটা স্ফীত হয়ে আছে। এ আকৃতিকে বলা হয় অবলেট স্ফেরয়েড বা চাপা উপগোলক।

বিভিন্ন গ্রহের তুলনামূলক সাইজ
 বিষুব রেখা বরাবর পুরোটা ঘুরে আসতে হলে পাড়ি দিতে হবে ৯৬ হাজার ১২৯ মাইল পথ। তবে পায়ে হেঁটে কাজটি করা সম্ভব নয়। অন্য গ্যাস দানবদের মতোই এর কোনো কঠিন পৃষ্ঠদেশ নেই। ঢাকা বরফ দিয়ে।

আকারে পিছিয়ে থাকলে নেপচুন ইউরেনাসকে ভরের দিক দিয়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ভরের দিক থেকে তাই নেপচুনের অবস্থান তিন নম্বরে। পৃথিবীর ১৭ গুণেরও বেশি ভর এর।  ওপরে আছে শুধু বৃহস্পতিশনি

পৃথিবীর তুলনায় বিভিন্ন গ্রহের ভর 

ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ১.৬৩৬ গ্রাম। ইউরেনাসের মতোই এতেও শনি ও বৃহস্পতির চেয়ে বেশি পরিমাণ বরফ আছে। এ কারণেই এ দুটো গ্রহকে আইসি জায়ান্ট বা বরফ দানবও বলা হয়।

আরও পড়ুন
☛ কোন গ্রহের ভর কত
☛ অদ্ভুদ এক গ্রহ

সূত্রঃ 
১। স্পেস ডট কমঃ হাউ বিগ ইজ নেপটুন
২। ইউনিভার্স টুডেঃ সাইজ অব নেপটুন
Category: articles

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

পৃথিবীর মহাকর্ষের কারণে আমরা এর বুক আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারছি। কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যে যাবার পথে এই মহাকর্ষই আবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

মহাকর্ষের আকর্ষণ এড়িয়ে পৃথিবীকে অব্যাহতভাবে  প্রদক্ষিণ করার জন্যে কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর তীব্র বেগের প্রয়োজন হয়। যেমন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ঘণ্টায় ১৭,৫০০ মাইল (২৮,২০০ কিমি.) বেগে ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। কিন্তু পৃথিবী থেকে বাইরে যেতে হলে আরও বেশি বেগ লাগবে। সেই বেগের নাম মুক্তি বেগ (Escape velocity)।

আরও পড়ুনঃ
মুক্তি বেগের পরিচয়

এ বেগ অর্জনের জন্যে বিপুল জ্বালানি প্রয়োজন। এ কারণেই অ্যাপোলোর মতো আগের রকেটগুলো উৎক্ষেপেণে ব্যবহৃত স্যাটার্ন ভি রকেট খুব ভারী হতো। চাঁদে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট জ্বালানি দিতে হত এতে। ইলোন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের আধুনিক রকেট সে তুলনায় ছোট। কিন্তু এদেরকে যেতে হবে আরও অনেক দূর পথ। সুদূর মঙ্গল।

মাস্ক খুশি হতে পারেন যে তাঁকে অন্তত বৃহস্পতি গ্রিহ থেকে রকেট নিক্ষেপ করতে হচ্ছে না। সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহে মুক্তি বেগের মান আলাদা। তবে বৃহস্পতির ক্ষেত্রে সেটা তুলনামূলক অনেক বেশি। রকেট নিক্ষেপ করতে হলে মুক্তি বেগ লাগবে ঘণ্টায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার মাইল (২ লক্ষ ১৭ হাজার কিমি.)। কারণ, গ্রহটির একারই ভর অন্য সব গ্রহের মিলিত ভরের দ্বিগুণ।

নিচের দারূণ অ্যানিমেশনটি থেকে বিভিন্ন গ্রহের মুক্তি বেগের ধারণা পাওয়া যাবে। 

যথাক্রমে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ থেকে রকেট নিক্ষেপে জন্যে প্রয়োজনীয় বেগ। 

খেয়াল করলে দেখবেন, বৃহস্পতির মুক্তিবেগ অন্য গ্রহদের চেয়ে অনেক বেশি। আগেই বলেছি, কেন এটা হচ্ছে। এর ভর বেশি হবার কারণে। 
Category: articles

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

পৃথিবীর বুক থেকে থেকে ওপরের দিকে লাফ দিয়ে আমরা গড়ে দেড় ফুটের কিছু বেশি উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে পারি। বাতাসে ভেসে থাকতে পারি প্রায় এক সেকেন্ড। কিন্তু সৌরজগতের অন্য গ্রহ বা উপগ্রহে গেলে কেমন লাফাতে পারব আমরা?


এ হিসাব মুহূর্তের মধ্যে করে ফেলতে স্টুয়ার্ট লোয়ে ও ক্রসি নর্থ নামের দুজন জ্যোতির্বিদ দারুণ একটি অনলাইন অ্যাপ বানিয়েছেন। এর নাম দিয়েছেন হাই জাম্প। এখান থেকে বের করা যাবে, এক লাফে কত উচ্চতায় ওঠা যাবে, আর কতক্ষণই বা ভেসে থাকা যাবে। চলুন ঘুরে আসি কিছুক্ষণ।

প্রথমেই পৃথিবী। আহেই বলেছি, সোজা ওপরের দিকে লাফ দিয়ে আমরা গড়ে দেড় ফুট উঠতে পারি। আমি অবশ্য দুই ফুটের কাছাকাছি পারি, চিকন হবার সুবাদে।

পৃথিবীর এক লাফ 
চাঁদে যাওয়া যাক। পৃথিবীর বাইরে একমাত্র চাঁদেই এ পর্যন্ত মানুষ লাফানোর সুযোগ পেয়েছে। চাঁদের মহাকর্ষ পৃথিবীর মাত্র প্রায় সতের শতাংশ বা ছয় ভাগের এক ভাগ। ফলে এক লাফে আপনি আরও বেশি উঠতে পারবেন। দশ ফুট! হ্যাঁ, সত্যিই নিজেকে কিছুটা অতিমানব মনে হবে। আর শুন্যে ভেসে থাকতে পারবেন চার সেকেন্ড। বাহ!

মঙ্গলে যাই চলুন। চাঁদের চেয়ে বড় হলেও পৃথিবীর চেয়ে কিন্তু ছোট। মহাকর্ষ পৃথিবীর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। উঠতে পারবেন তিন ফুট, আর ভেসে থাকবেন দুই সেকেন্ড। খুব বেশি না, তাই না? চলুন তাহলে একটু শিহরিত হই।

চলে আসুন বামন গ্রহ প্লুটোয়। এর পৃষ্ঠের অভিকর্ষের মান পৃথিবীর এক শ ভাগের ছয় ভাগ। এক লাফে এক্কেবারে ২৫ ফুট। শুন্যে থাকবেন ঝাড়া ৯ থেকে ১০ সেকেন্ড! চাঁদের চেয়েও বেশি। মনে রাখতে হবে, প্লুটো কিন্তু চাঁদের চেয়েও ছোট। এটাও এর গ্রহ থেকে বামন গ্রহ হয়ে যাবার একটা কারণ।

ভাবছেন হয়ত, বৃহস্পতি বা শনি থেকে লাফালে কেমন হয়? আফসোস! সেটা পারবেনই না। এদের কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই, যেখান থেকে আপনি লাফ দেবেন। আর দিতে পারলেও পৃথিবীর চেয়ে অনেক কম উঠতে পারতেন। তার চেয়ে চলুন, সত্যি সত্যি সুপারম্যান হয়ে যাই।

আসুন শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস-এ। এক লাফে শুন্যে ভেসে থাকবেন ঝাড়া এক মিনিট। পৌঁছবেন ১৪০ ফুট (প্রায় ৪৩ মিটার) ওপরে। বাহ!

এনসেলাডাস উপগ্রহে জাম্প 

একটি ধূমকেতু সফর করে এলে কেমন হয়। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বেছে নিলাম ধূমকেতু ৬৭পি। এর অভিকর্ষ এতই তুচ্ছ যে, নাসার পাঠানো ফিলি ল্যান্ডার এর বুক আঁকড়ে থাকার জন্যে হারপুনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এখান থেকে লাফ দিলে আপনি আর এর বুকে ফিরেই আসবেন না। ছিটকে চলে যাবেন মহাশূন্যে! তার মানে নিছক একটি লাফের বেগ এর বুকের মুক্তিবেগের চেয়েও বেশি।

আরও পড়ুনঃ 
মুক্তি বেগ কাকে বলে? 

আরও জানতে চাইলে নিজেই ঘুরে আসুন এই লিঙ্ক থেকে

সূত্রঃ বিজনেস ইনসাইডার, কসমস বুক 
Category: articles

সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬

শনি সৌরজগতের ৬ষ্ঠ গ্রহ। এটিই পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ যেটি খালি চোখে দেখা যায়। তবে শনি গ্রহ সবচেয়ে বিখ্যাত এর আকর্ষণীয় বলয়ের জন্য। এই বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৬১০ সালে, গ্যালিলিওর হাত ধরে। বৃহস্পতির মতোই শনিও একটি গ্যাস জায়ান্ট। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন প্রভৃতি গ্যাস এর প্রধান উপাদান।
বলয়ধারী শনি গ্রহ

এক নজরেঃ
গড় ব্যাসার্ধঃ ৫৮, ২৩২কিমি.
ভরঃ পৃথিবীর ৯৫ গুণ।
উপগ্রহের সংখ্যাঃ ৬২
উল্লেখযোগ্য উপগ্রহঃ টাইটান, এনসেলাডাস, রিয়া ইত্যাদি
বলয়ের সংখ্যাঃ ৩০ এর বেশি (৭টি গ্রুপ নিয়ে গঠিত)
কক্ষপথের দূরত্বঃ ১,৪২৬, ৬৬৬,৪২২ কিমি. (৯.৫৪ এইউ)
পর্যায়কালঃ ১০, ৭৫৬ দিন (২৯.৫ বছর)
কার্যকর তাপমাত্রাঃ মাইনাস ১৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
অপসূরঃ ১০.১ এইউ
অনুসূরঃ ৯.০২৪ এইউ
আপাত উজ্জ্বলতাঃ (+১.৪৭) থেকে (-.২৪)
প্রথম দর্শনঃ খৃষ্টপূর্ব ৮ম শতক

পৃথিবীর তুলনায় শনি গ্রহের আকার
শনি গ্রহের তথ্য জানালাঃ
১। শনিকে খালি চোখে দেখা যায়। এটি সৌরজগতের পঞ্চম উজ্জ্বল বস্তু (পৃথিবীর আকাশে)। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-০.২৪) থেকে (+১.৪৭) এর মধ্যে উঠা-নামা করে। রাতের আকাশে একটানা বহু দিন ধরেই একে দেখা যায়। এটি যখন সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের খুব কাছাকাছি সময়ে উদয় বা অস্ত যায়, শুধু তখনই দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
গ্রহদের খোঁজখবর
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে? 

২। অতীতকালেও শনির সাথে মানুষের পরিচয় ছিল। ব্যাবিলনীয় এবং দূর প্রাচ্যের মানুষও একে চিনত। রোমান দেবতা স্যাটারনাস থেকে এর (ইংরেজি Saturn) নাম এসেছে। গ্রিকরা একে চিনত ক্রোনাস নামে।

৩। শনি সবচেয়ে চ্যাপ্টা গ্রহ। বিষুব অঞ্চলের তুলনায় এর মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ১০ ভাগের এক ভাগ কম। এর অর্থ হল, মের অঞ্চলের দিকে গ্রহটি বেশ চাপা। এর কারণ হচ্ছে, এর ঘনত্ব খুব কম, কিন্তু আবর্তন বেগ খুব তীব্র। প্রতি দশ ঘণ্টা ৩৪ মিনিটে এটি একবার এর অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরে আসে। ফলে সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে দিনের দৈর্ঘ্যের স্বল্পতার দিক দিয়ে এর অবস্থান দুই-এ।
আরো পড়ুনঃ 
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

৪। শনি সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে ২৯ বছরের বেশি সময় লাগে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্টারদের তুলনায় এর গতি খুব ধীর হবার কারণে একে প্রাচীন আসিরীয়রা Lubadsagush নামে ডাকত। এর অর্থ হচ্ছে পুরাতনদের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন।

৫। শনির বায়ুমণ্ডল অনেকগুলো মেঘপুঞ্জে বিভক্ত। সবচেয়ে উপরের স্তর মূলত অ্যামোনিয়ার বরফ দিয়ে গঠিত। এর নিচে রয়েছে তুষার। এর নিচে হাইড্রোজেন ও সালফারের বরফের উপস্থিতি লক্ষণীয়।


৬। শনির মূল উপাদান হাইড্রোজেন। ভেতরের দিকে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ক্রমশ বেশি। আরো ভেতরের দিকে হাইড্রোজেন হয়ে পড়ে ধাতব। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রমণ্ডল খুব উষ্ণ।

৭। সব গ্রহের মধ্যে শনির বলয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরা মূলত বরফ ও কার্বোনেসাস ধূলি দিয়ে তৈরি। গ্রহটিতে বলয়গুলো ১২০, ৭২০ কিমি. পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু সে তুলনায় এরা খুব সরু, পুরুত্ব মাত্র ২০ মিটারের মতো।

৮। ছোট-বড়ো মিলিয়ে শনির উপগ্রহের সংখ্যা দেড়শোর বেশি। উপগ্রহের সংখ্যা ৬২। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপগ্রহের সংখ্যা আসলে কয়েকশো। এদের সবাই হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে। টাইটান ও রিয়া এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো। এনসেলাডাসের হিমায়িত পৃষ্ঠের নিচে সাগর আছে বলে মনে হয়।

৯। শনির উপগ্রহ টাইটানের বায়ুমণ্ডল নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ (অনেকটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মতোই)। উপগ্রহটি মূলত বরফ ও পাথর দিয়ে গঠিত। এর পৃষ্ঠে রয়েছে তরল মিথেনের লেক। পৃথিবীর সাথে এর উল্লেখযোগ্য মিল থাকার কারণে এতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হয়।
আরো পড়ুনঃ 
শনির উপগ্রহে মিথেন সাগর

১০। এ পর্যন্ত ৪টি মহাকাশযান শনি গ্রহ সফর করেছে। এরা হল পাইওনিয়ার ১১, ভয়েজার ১ ও ২ এবং ক্যাসিনি- হাইগেনস মিশন। এরা সবাই শনিকে নিয়ে গবেষণা করেছে। এর মধ্যে ক্যাসিনি এখনো শনির কক্ষপথে আছে। এটি এখনো গ্রহটি ও এর বলয় এবং উপগ্রহসমূহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠাচ্ছে।

সূত্রঃ
[১] http://space-facts.com/saturn/
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Saturn
Category: articles

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬

রাতের আকাশ পর্বের আগের অংশে আমরা আলোচনা করেছিলাম পৃথিবীর আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের নিয়ে। এবারে উঁকি দিচ্ছি পৃথিবীর বাইরে। পৃথিবীর আকাশ কেমন হবে তার উপর এর বায়ুমণ্ডলের প্রভাব আছে। অন্য গ্রহ-উপগ্রহদের ক্ষেত্রে তাই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য চোখে পড়ে।

- আচ্ছা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ কেমন হত?
- পৃথিবীতে আসা সূর্যের আলো আসলে ৭টি রঙে গঠিত। এই আলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে বায়ুকণার সাথে ধাক্কা লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে নীল রঙ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে  আমাদের পৃথিবীর আকাশ নীল দেখায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ হত কালো। একদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে থাকত। এর আলো পুরো আকাশ দখলে রাখত না। দিনেও তারা দেখা যেত।
- তাহলে কি চাঁদের আকাশ দেখতে কালো? ওখানেতো বায়ুমন্ডল নেই। অন্য গ্রহ বা উপগ্রহের আকাশ দেখতে কেমন? চাঁদ বা অন্য গ্রহের রাতের আকাশ কি পৃথিবীর আকাশের মত এত সুন্দর? অন্যান্য গ্রহকে যেমন পৃথিবী থেকে দেখা যায়, তেমনি পৃথিবীকে কি সেই গ্রহগুলো থেকে দেখা যায়?
এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে আজকের আয়োজন।

আগে সংক্ষেপে পৃথিবীর আকাশ সম্পর্কে একটু বলে নিই। পৃথিবীর রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু  চাঁদ। তবে এরপরের অবস্থানে কিন্তু লুব্ধক নয়। লুব্ধক সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিন্তু গ্রহদের চেয়ে পিছিয়ে। খালি চোখে সৌরজগতের মোট পাঁচটি গ্রহ আমরা দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি সবাই লুব্ধকের চেয়েও উজ্জ্বল। তবে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিকভাবে দেখা যায় শনি ও বৃহস্পতিকে। বুধ ও শুক্র সব ঋতুতে থাকে না, থাকলেও কয়েক ঘণ্টার বেশির জন্যে নয়।
আচ্ছা, এবার তাহলে পৃথিবির বাইরে উঁকি দেই।
পৃথিবীর বাইরে একমাত্র চাঁদের আকাশকেই সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা ও ছবি তোলা গেছে। অন্য কোথাও মানুষের পা পড়েনি বলে আকাশ দেখতে কেমন হবে তা জানার জন্যে নির্ভর করতে হয় পরোক্ষ উপায়ের উপর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপায় হচ্ছে বিভিন্ন মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য। যেমন মঙ্গল গ্রহ, শুক্র এবং শনির উপগ্রহ টাইটানের আকাশের তথ্য এভাবে পাওয়া গেছে। আকাশের চিত্র কেমন হবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বায়ুমণ্ডল আছে কি নেই, থাকলে তার উপাদান কী, মেঘ আছে কি না ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যে আকাশগুলো সরাসরি দেখা যায়নি এসব তথ্যের মাধ্যমে তাদের আকাশ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।

বুধ গ্রহের আকাশঃ
বুধ গ্রহের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে সূর্যের আলোকে বিক্ষিপ্ত করার মতও কেউ নেই। দিনের বেলায়ও তাই কালো মহাকাশ চোখে পড়বে। সাথে থাকবে কিছু বিন্দু বিন্দু তারার আলো। তবে সূর্যের উপস্থিতির কারণে একটি বিন্দু হবে বেশ বড়। পৃথিবী থেকে দেখার তুলনায় সূর্যের আকার হয় গড়ে আড়াই গুণ এবং উজ্জ্বলতা হয় ৬ গুণ পর্যন্ত।
পৃথিবীর রাতের আকাশের মত বুধের রাতের আকাশকে কোন চাঁদ জ্যোৎস্নাপ্লাবিত করতে পারে না। কারণ বুধের কোন উপগ্রহই নেই। এখানে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু শুক্র। পৃথিবীর চেয়ে বুধের আকাশে শুক্রকে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। বুধ গ্রহে এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭.৭ বা মাইনাস ৭.৭) যেখানে পৃথিবীতে এই মান (-৪.৬)। আমরা জানি, আপাত উজ্জ্বলতার মান যত কম হয়, বস্তু তত উজ্জ্বল হয়। যেমন চাঁদের আপাত উজ্জ্বলতা (-১২.৭) এবং সূর্যের (-২৭)।
বুধ থেকে আমাদের পৃথিবী এবং চাঁদও ভালো মত চোখে পড়ে। আপাত উজ্জ্বলতা যথাক্রমে (-৫) ও (-১.২)। পৃথিবীতে যেমন দেখা যায়, তেমনি বুধ থেকে বাকি গ্রহদেরও দেখায় যায়, তবে অনেকটা অনুজ্জ্বল।

আরো পড়ুনঃ
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

পৃথিবীর উত্তর মেরু বরাবর যেমন ধ্রুবতারার অবস্থান তেমনি বুধ গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে একটি ধ্রুব তারা আছে। এর নাম আলফা পিকটোরিস। কখনও কখনও বুধ গ্রহে একই দিনে দুইবার সূর্যোদয় দেখা যায়। কেন তা আমরা অন্য কোন সময় ব্যাখ্যা করব।

শুক্র গ্রহের আকাশঃ 
পৃথিবীর আকাশে শুক্র (শুকতারা) খুবই জনপ্রিয় বস্তু। কিন্তু এর নিজের আকাশ খুবই নিষ্প্রভ। দিনের বেলায়ও সূর্য দেখা যায় না। রাতেও তারারা মিটিমিটি করে না। এর কারণ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে অস্বচ্ছ সালফিউরিক এসিডের উপস্থিতি। সোভিয়েত মহাকাশযান ভেনেরার মতে শুক্র গ্রহের আকাশ দেখতে কমলা রঙের। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে আবর্তন করে বলে এতে সূর্য ওঠে পশ্চিমে, অস্ত যায় পূবে। এটিই আবার সেই অদ্ভুত গ্রহ যাতে বছরের চেয়ে দিন বড়।
আরো পড়ুনঃ 
অদ্ভুত এক গ্রহ

গ্রহটির বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে উপরে উঠলে চাঁদ, পৃথিবী এবং বুধ গ্রহকে বেশ ভালো উজ্জ্বল দেখা যায়।

চাঁদের আকাশঃ
চিত্রঃ ১৯৬৮ সালে চাঁদের কক্ষপথ থেকে তোলা পৃথিবীর ঐতিহাসিক ছবি

চাঁদেরও কোন বায়ুমণ্ডল নেই। তাই এর আকাশ দেখতে কালো। তবে দিনের বেলায় সূর্য খুব উজ্জ্বল থাকার কারণে তারাদেরকে দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে সূর্যের আলোর দিককে কোনভাবে ঢেকে রাখলে তারা দেখা সম্ভব। এর কারণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। আমরা জানি, আলোর উৎসের আশাপাশের বস্তু আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। তবে আলোকে হাত দিয়ে আড়াল করে রাখলে আলোক উৎসের পাশের বস্তু সহজেই দেখা যায়। কিন্তু পৃথিবীতে সূর্যের দিককে হাত দিয়ে ঢেকে রাখলেও তারা দেখা যাবে না। কারণ বায়ুমণ্ডলের কারসাজিতে আলো সব দিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সূর্যকে দেখতে যেমন লাগে, চাঁদ থেকেও তেমনই লাগে। কিছুটা বেশি উজ্জ্বল এবং সাদা রঙের- যেহেতু বায়ুমণ্ডল অনুপস্থিত।

চাঁদ থেকে পৃথিবীকে দেখতে কেমন লাগে? খুশির খবর হচ্ছে, চাঁদের আকাশের সবচেয়ে দর্শনীয় বস্তু কিন্তু পৃথিবীই। পৃথিবী থেকে চাঁদকে যত বড় লাগে, চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তার চার গুণ মনে হয়। পৃথিবীর আকাশে যেমন চাঁদ বড় ছোট হয়, তেমনি চাঁদ থেকে দেখতে পৃথিবীও বড় ছোট হয়। কারণ দুজনেই সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে। তবে পৃথিবীতে যখন চাঁদের পূর্ণিমা, চাঁদে তখন পৃথিবীর অমাবশ্যা। একইভাবে চাঁদের অমাবশ্যার সময় পৃথিবী চাঁদকে দেয় জ্যোৎস্না শোভিত রাত। তার মানে জ্যোৎস্না চাঁদের একক সম্পত্তি নয়। সুযোগ দিলেও পৃথিবীও তার দান ফিরিয়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 
পূর্ণিমা হয় কখন, কীভাবে?
চিত্রঃ চাঁদে পৃথিবির উদয় ঘটছে। একে আমরা নাম দিতে পারি ‘ভূদোয়’। ইংরেজিতে বলে আর্থরাইজ

আমরা জানি, চাঁদ নিজের অক্ষের চারদিকে এক বার ঘুরতে যে সময় নেয় তাতে পৃথিবীকে এক বার ঘুরে আসে। ফলে আমরা পৃথিবী থেকে সব সময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই দেখতে পাই। সর্বোচ্চ অবশ্য ৫৮% পর্যন্ত দেখা যায়। এর অনিবার্য কারণ হিসেবে চাঁদেরও শুধু পৃথিবীর নিকট পৃষ্ঠ থেকেই পৃথিবীকে দেখা যায়। অন্য পাশ থেকে দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদকি আবর্তন করে?

পৃথিবীতে বসে আমরা চন্দ্রগ্রহণ দেখি, যখন সূর্যের আলোতে তৈরি পৃথিবীর ছায়া চাঁদের গায়ে গিয়ে পড়ে। এই সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে। এই সময় চাঁদে ঠিক কী ঘটে? একটু ভাবলেই বোঝা যায়, এই সময় চাঁদ থেকে কেউ পৃথিবীর কারণে সূর্যকে দেখতে পাবে না। তার মানে চাঁদে তখন হবে সূর্যগ্রহণ। মজার ব্যাপার, তাই না! চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তুলনামূলক অনেক বড় দেখায় বলে সূর্যগ্রহণের সময়ের দৈর্ঘ্যও হবে লম্বা।

চিত্রঃ পৃথিবীতে চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝে।

পৃথিবীতে যখন সূর্যগ্রহণ হবে তখন তাহলে চাঁদে কেমন দেখাবে? এটা তেমন দারুণ কিছু হবে না। কারণ পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ থাকে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে। ফলে এ সময় চাঁদ সূর্যের আলোকে বাধা দিয়ে পৃথিবীর উপর ছায়া ফেলতে চেষ্টা করবে। এ কারণে পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণ হবে ঠিকই। কিন্তু চাঁদের আকাশ থেকে দেখলে পৃথিবী যেহেতু চার গুণ বড় তাই চাঁদের আকাশের পৃথিবী খুব একটা ঢাকা পড়বে না। একটি গলফ বল ১৫ ফুট দূরে সূর্যের আলোর যেমন ছায়া ফেলবে, তেমন প্রতিক্রিয়াই শুধু চাঁদ তৈরি করতে পারবে। তবু এক কথায় বলা চলে, যখনি পৃথিবীতে কোন ধরনের গ্রহণ (Eclipse) ঘটে, তখন চাঁদেও একটি গ্রহণ হয়ে থাকে।
চিত্রঃ নাসার অ্যাপলো ১৭ মিশন কমান্ডার ইউজিন সারনান চাঁদকে পেছনে রেখে পোজ দিচ্ছেন। চাঁদে যাওয়া মোট ১২ ব্যক্তির মধ্যে তিনি সবার শেষে ফিরেছেন। 


মঙ্গল গ্রহের আকাশঃ
মঙ্গল গ্রহের একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল আছে, তবে তা প্রচুর ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। এতে করে আলো অনেক বেশি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। দিনের বেলায় আকাশ খুব উজ্জ্বল থাকে। কোন তারা দেখায় যায় না। মঙ্গলের আকাশের সঠিক রঙ জানা একটু কষ্টকর। তবে আগে যতটা মনে হত, মঙ্গলের আকাশ ততটা গোলাপী নয়। এর রঙ কমলা থেকে লালের কাছাকাছি। মঙ্গলের আকাশে সূর্যকে পৃথিবীর আকাশের তুলনায় ছোট দেখা যায়। এটাইতো হওয়া উচিত, তাই না? কারণ মঙ্গলতো পৃথিবী থেকেও সূর্যের দূরে।
মঙ্গলের দুটো ছোট্ট চাঁদ (উপগ্রহ) আছে- ফোবোস ও ডিমোস। ফোবোসকে সূর্যের অর্ধেকের চেয়ে ছোট দেখায়। আর ডিমোসকে লাগে একেবারে প্রায় বিন্দুর মত। সত্যিকারের সূর্যগ্রহণ বলতে যা বোঝায় তা এই চাঁদরা মঙ্গলের আকাশে তৈরি করতে পারে না। বরং সূর্য ও মঙ্গলের সাথে একই রেখায় এলে এদেরকে সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে গ্রহণ না বলে বলা হয় ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)।
মঙ্গল থেকে পৃথিবীকে দেখতে ডাবল স্টারের মত লাগে। এর কারণ পৃথিবীর সাথে চাঁদের উপস্থিতি। পৃথিবী ও চাঁদের সর্বোচ্চ আপাত উজ্জ্বলতা হয় যথাক্রমে (-২.৫) ও (+০.৯)। তবে শুক্র গ্রহকে আরেকটু উজ্জ্বল দেখায়। এর আপাত উজ্জ্বলতা হয় (-৩.২) পর্যন্ত। মনে আছে নিশ্চয়ই, আপাত উজ্জ্বলতার মান কম হলে বস্তু হয় অপেক্ষাকৃত বেশি উজ্জ্বল। আর আগে মাইনাস চিহ্ন দিয়ে দিলে বড় সংখ্যার মান হয়ে যায় ছোট। তবে মঙ্গলের চাঁদগুলো থেকে মঙ্গলকে বিশাল বড় দেখায়। পূর্ণিমার চাঁদের সময় চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি ফোবোস ও ডিমোস থেকে মঙ্গলকে যথাক্রমে তার ৬৪০০ ও ১০০০ গুণ বড় দেখায়!

মঙ্গলের পরে সৌরজগতে আছে গ্রহাণুপুঞ্জ। আপাতত এদের নিয়ে বলার মত বিশেষ কিছু নেই। তাই আমরা চলে যাচ্ছি বৃহস্পতি গ্রহে। তবে এতক্ষণ যাদের কথা বললাম- চাঁদ অথবা মঙ্গল বা অন্য গ্রহরা; এদের উপর আমরা অবতরণ করতে পারব (শুক্রের ভয়াবহ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে মারা পড়ব যদিও)। কিন্তু বাকি গ্রহরা হল গ্যাস দানব (Gas giant) অথবা তুষার দানব (ice giant)। সাধারণত এদের কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না যেখানে আমরা কখনও অবতরণের চিন্তা করতে পারি।

বৃহস্পতির আকাশঃ
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের ভেতর থেকে কখনও কোনভাবে ছবি তোলা হয়নি। তবে মনে করা হয় এর আকাশও পৃথিবীর আকাশের মতই নীল, তবে বেশ অনুজ্জ্বল। এতে সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা ২৭ গুণ কম। আমরা এখন জানি, শনি ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গ্রহের বলয় আছে, তা খুবই সরু অবশ্য। বৃহস্পতির এই বলয় এর বিষুব অঞ্চল থেকে দেখা সম্ভব। বায়ুমণ্ডলের আরও নিচের দিকের এলাকা বিভিন্ন মেঘ ও রঙের কুয়াশায় পরিপূর্ণ। ফলে এদিকে সূর্যের আলো আসতে বাধা পায়। পৃথিবীর তুলনায় এখানে সূর্যকে চারভাগের এক ভাগের চেয়েও ছোট দেখায়।
সূর্যের পরে বৃহস্পতির আকাশে উজ্জ্বল বস্তুরা হল এর প্রধান চারটি চাঁদ। এরা হল আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো। গ্যালিলিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে এদের নাম গ্যালিলীয় চাঁদ। এর মধ্যে আয়ো আমাদের চাঁদের চেয়ে বড় দেখায়। তবে কিছুটা কম উজ্জ্বল। কিন্তু আবার কোন মাতৃ গ্রহ থেকে দেখা এর চাঁদদের মধ্যে আয়োকেই সবচেয়ে বড় দেখায়। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল গ্যানিমিড। এটি আয়ো ও ইউরোপার কাছাকাছি মানের উজ্জ্বল। তবে দেখতে আয়োর চেয়ে ছোট- অর্ধেক। তবে ইউরোপার চেয়ে অবশ্য দ্বিগুণ দেখায়। ক্যালিস্টো এদের মধ্যে সবচেয়ে দূরে। ফলে এটি দেখতে আয়োর চারভাগের এক ভাগের মত। আমাদের চাঁদের মত এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বৈশিষ্ট্য (যেমন এবড়োথেবড়ো পৃষ্ঠ) চোখে পড়ে না।
চিত্রঃ বৃহস্পতির আকাশে আয়ো এবং ইউরোপা

এরা আমাদের চাঁদের মতই সূর্যগ্রহণ ঘটাতে সক্ষম। বরং আমাদের চাঁদের চেয়ে এরা এই কাজটি বেশিই করে। এর কারণ হচ্ছে বৃহস্পতির কক্ষীয় নতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক অল্প।
অ্যামালথিয়া ছাড়া এর ভেতরের দিকের বাকি উপগ্রহদেরকে দেখতে তারার মত দেখায়। অ্যামালথিয়া মাঝে মাঝে বড় হয়ে প্রায় ক্যালিস্টোর সমান হয়ে যায়। তবে বৃহস্পতির আকাশে এরা সবাই যে কোনো তারার চেয়েও উজ্জ্বল থাকে। আরও দূরের উপগ্রহদের মধ্যে হিমালিয়া ছাড়া কাউকে দেখা যায় না।
এবার আসি বৃহস্পতির উপগ্রহদের আকাশে। এদের সংখ্যা আপাতত ৬৭। কারোই বলার মত বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে আকাশ হয় কালো। এদের আকাশে বৃহস্পতিকে অসাধারণ দেখায়। অভ্যন্তরীণ উপগ্রহদের এর সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ আয়োতে বৃহস্পতিকে আমরা চাঁদকে যেমন দেখি তার ৩৮ গুণ বড় দেখায়!  সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ মেটিস। এখানে বৃহস্পতিকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের ১৩০ গুণ! মেটিসে বৃহস্পতি সূর্যের আলোর ৪% পর্যন্ত উজ্জ্বলতা প্রতিফলিত করতে পারে। বলে রাখা ভাল, আমাদের চাঁদ পৃথিবীর আকাশে সূর্যের চেয়ে ৪০০ গুণ অনুজ্জ্বল।

শনি গ্রহের আকাশঃ 
আগেই বলেছি শনি গ্রহেরও কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই। এর বায়ুমণ্ডলের উপুরের দিকে থেকে আকাশ সম্ভবত নীল দেখাবে। তবে আরও নিচের দিকে আকাশের রঙ দেখাবে হলুদাভ। শুধুমাত্র অনুসূর (সূর্যের নিকটতম) অবস্থানে থাকার সময় এর উত্তর গোলার্ধ সূর্যকে দেখার সুযোগ পায়। এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ থেকে এর বলয় দেখা যায় ভালোভাবেই।
অনুসূর বনাম অপসূর

শনির উপগ্রহরা রাতের আকাশকে খুব বেশি সুন্দর করে তুলতে পারে না, যদিও এখন পর্যন্ত এর ৬২ টি উপগ্রহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটান। এটি শনির আকাশে আমাদের চাঁদের অর্ধেকের মত লাগে। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭)। তবে দূরত্ব বেশি হবার কারণে টাইটান শনির সবচেয়ে অনুজ্জ্বল চাঁদ। এর চেয়েও উজ্জ্বল দেখায় মাইমাস, এনচেলাডাস, টেথিস, ডায়োনে ও রিয়া। বাইরের দিকের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র ফোবেকে দেখা যায়।
আমাদের চাঁদের মতই শনির ভেতরের দিকের চাঁদেরাও শনিকে একবার ঘুরে আসতে যে সময় নেয় ততক্ষণে শনি নিজের অক্ষের উপর আবর্তন শেষ করে। ফলে এদের এক পৃষ্ঠ থেকেই শুধু শনিকে দেখা সম্ভব। তবে ভেতরের দিকের চাঁদ্গুলোতে শনি একটি দেখার মত জিনিস বটে! শনির উপগ্রহ প্যানে শনিকে আমাদের চাঁদে চেয়ে ১০৪ গুণ বড় দেখায়। তবে শনির উপগ্রহগুলো থেকে এর বলয় খুব ভালোভাবে দেখা যায় না। এর কারণ এরা শনির বলয়ের সাথে একই সমতলে অবস্থান করছে। অন্য দিকে বলয়ের পুরুত্বও কিন্তু খুব বেশি না।
সৌরজগতের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র শনির উপগ্রহ টাইটানেরই পুরু বায়ুমণ্ডল আছে। এর পৃষ্ঠ থেকে আকাশকে দেখতে বাদামী বা গাঢ় কমলা রঙের দেখায়। টাইটান সূর্যের আলো পায় পৃথিবীর ৩০০০ ভাগের এক অংশ। ফলে দিনের বেলায় এর আকাশ দেখায় পৃথিবীর গোধূলির মত। পৃথিবী ছাড়া পুরো মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত জানা মতে শুধু টাইটানেই রংধনু তৈরি হতে পারে। শনিকে দেখা যায় শুধু বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের দিকেই।
অন্য দিকে এনসেলাডাস উপগ্রহে শনিকে তুলনামূলক অনেক অনেক ভালো দেখা যায়। আমাদের চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি তার তুলনায় এখান থেকে শনিকে ৬০ গুণ বড় দেখা যায়। তবে আমাদের চাঁদের মতই এর মাত্র এক পৃষ্ঠ থেকেই শনিকে দেখা সম্ভব। এর আকাশে শনিকে বড়- ছোট হতেও দেখা যায়। এখান থেকে শনির আরও কিছু উপগ্রহকেও দেখা যায়। এর মধ্যে মাইমাসকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের সমান।
চিত্রঃ শিল্পির হাতের তুলিতে শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের আকাশ

শনির দক্ষিণ মেরু বরাবর আকাশে আমাদের ধ্রুবতারার মত একটি তারা আছে। এর নাম ডেল্টা অক্টানটিস।

ইউরেনাস গ্রহের আকাশঃ
এই গ্রহটির আকাশ খুব সম্ভব হালকা নীল। এর হালকা বলয় পৃষ্ঠ থেকে দেখা যাওয়ার কথা নয়। ইউরেনাসের দক্ষিণ ও উত্তর দুই মেরুতেই একটি করে মেরু তারা (Pole star) বা ধ্রুবতারা আছে। এরা হল যথাক্রমে ১৫ ওরাইওনিস ও সাবিক। দুটোই আমাদের উত্তর মেরুর ধ্রুবতারার চেয়ে অনুজ্জ্বল।
এর পৃষ্ঠ থেকে কোন উপগ্রহকেই আমাদের চাঁদের মত বড় দেখা যায় না, যদিও এখন পর্যন্ত এরা সংখ্যায় ২৭। তবে এরা সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় দারুণ একটি দৃশ্য ঠিকই তৈরি হয়।

নেপচুনের আকাশঃ
নেপচুন সৌরজগতের সর্বশেষ গ্রহ। অনেকটা ইউরেনাসের মত এর আকাশ। তবে এটি হালকার বদলে উজ্জ্বল নীল। এরও বলয় আছে। তবে তা খুবই সরু হওয়াতে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে দেখা যায় না। সূর্যের পরে এর আকাশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু উপগ্রহ ট্রাইটন। একে আমাদের চাঁদের চেয়ে সামান্য ছোট দেখায়। আরেকটি চাঁদ প্রোটিয়াস দেখতে আমাদের চাঁদের অর্ধেক। নেপচুনের সবচেয়ে বড় চাঁদ হল ট্রাইটন। এর হালকা বায়ুমণ্ডল আছে। তবু আকাশ কালোই দেখায়। এর আকাশে নেপচুনকে এক জায়গায় স্থির দেখায়। কেন অনুমান করেনতো? এতক্ষণের আলোচনা থেকেই বুঝে ফেলার কথা।

প্লুটোর আকাশঃ
চিত্রঃ প্লুটোর আকাশে সূর্য (উপরে ডানে) ও উপগ্রহ শ্যারন

প্লুটো এখন আর গ্রহ নয় বরং বামন গ্রহ (Dwarf planet)। প্লুটো সূর্য থেকে পৃথিবীর তুলনায় ১৩০ গুণ দূরে। তবু এখানে সূর্য মোটামুটি ভালোই উজ্জ্বল। এখানে আমাদের চাঁদের চেয়ে সূর্যের উজ্জ্বলতা ১৫০ থেকে ৪৫০ গুণ। এর বায়ুমণ্ডলে আছে নাইট্রোজেন, মিথেন ও কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস। প্লুটো এর বৃহত্তম উপগ্রহ শ্যারনের সাথে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আটক। এ কারণে এরা সব সময়ে একে অপরের দিকে মুখ করে থাকে।

সৌরজগতের বাইরের আকাশঃ 
বহির্গ্রহ মানে সৌরজগতের বাইরের গ্রহ। ৬৫ থেকে ৮০ আলোকবর্ষ দূরত্ব পর্যন্ত সূর্যকে খালি চোখে দেখা যাবে। মাত্র ২৭ আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত একটি নক্ষত্রে নাম বিটা কোমি বেরানেসিজ। আমাদের আকাশে এটি খুব অনুজ্জ্বল। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র জগৎ আলফা সেন্টোরি (প্রক্সিমা সেন্টোরি নক্ষত্রও একই বাইনারি জগতের অংশ)। এই অঞ্চল থেকে সূর্যকে দেখা যাবে ক্যাসিওপিয়া তারামণ্ডলীতে। উজ্জ্বলতা হয় আমাদের রাতের আকাশের ৬ষ্ঠ উজ্জ্বল নক্ষত্র ক্যাপেলার মত।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Extraterrestrial_skies#Mercury
২। https://www.quora.com/The-sky-is-blue-on-earth-What-color-is-the-sky-on-other-planets-in-our-solar-system
৩। http://www.answers.com/Q/What_color_is_the_sky_on_the_planet_Mercury
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_nearest_stars_and_brown_dwarfs
Category: articles

শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬

শুক্র সৌরজগতের ২য় গ্রহ। ২২৫ দিনে এটি সূর্যকে একবার ঘুরে আসে। অর্থ্যাৎ, কেউ যদি গ্রহটিতে বাস করতে পারত, তবে তাদের ২২৫ দিনে এক বছর হত। কিন্তু গ্রহটিতে দিনের দৈর্ঘ্য বছরের চেয়ে বেশি। এতে এক দিন হতে হতে পৃথিবীর প্রায় ২৪৫ দিন পেরিয়ে যায়। কেন? এর কারণ হচ্ছে এর আবর্তন গতি খুব ধীর। তাঁর মানে, গ্রহটিতে বছরের চেয়ে দিন বড়!
আরো পড়ুনঃ 
 অদ্ভুত এক গ্রহ

গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন, শুক্র গ্রহও বড় ছোট হয় (রাতের আকাশে পৃথিবী থেকে দেখতে, চাঁদের মত) 

এই গ্রহটি নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে অন্য গ্রহদের উলটো দিকে। ফলে এতে সূর্য ওঠে পশ্চিমে, অস্ত যায় পূর্ব দিকে। রাতের আকাশের বস্তুদের মধ্যে উজ্জ্বলতায় এর অবস্থান দ্বিতীয়, অর্থ্যাৎ চাঁদকে বাদ দিলে এটিই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। এর আপাত উজ্জ্বলতা সর্বোচ্চ হয় -৪.৬ (মাইনাস ৪.৬)। আমরা জানি, আপাত উজ্জ্বলতা যত কম হয়, বস্তুটি হয় তত বেশি উজ্জ্বল। শুক্র (শুকতারা) গ্রহের এত বেশি উজ্জ্বলতার কারণে এটি ছায়া ফেলতেও সক্ষম হয়।
আরো পড়ুনঃ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

এর কক্ষপথ পৃথিবী থেকে ভেতরের দিকে হওয়ায় একে কখোনই সারা রাত ধরে দেখা যায় না। এটি দিগন্তের উপরে সর্বোচ্চ ৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। এটিও পৃথিবীর মতই পাথুরে গ্রহ। এর ভর, আকার ও কক্ষপথ পৃথিবীর কাছাকাছি হওয়ায় অনেক সময় একে পৃথিবীর যমজ বলা হয়। কিন্তু পৃথিবীর সাথে এর অমিলও কম নয়। চারটি পাথুরে গ্রহের (বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল) মধ্যে এর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, যা ৯৬% কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরা। এর পৃষ্ঠে বায়ুর চাপ পৃথিবীর ৯২ গুণ।

বুধ গ্রহ সূর্যের সবচেয়ে নিকটের গ্রহ হলেও তাপমাত্রায় এক নম্বরে শুক্র। এর অন্যতম কারণ, এর বায়ুতে উপস্থিত কার্বন ডাই  অক্সাইড, যা পৃথিবীতেও গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্যে দায়ী। এর পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৭৩৫ কেলভিন বা ৪৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অস্বচ্ছ সালফিউরিক এসিডে ঢাকা থাকায় একে খালি চোখে মহাশুন্য শুন্য থেকে একে দৃশ্যমান আলোতে দেখা যায় না। ধারণা করা হয়, পূর্বে এতে পানির অস্তিত্ব ছিল।
আরো পড়ুনঃ
শুক্র গ্রহে বসবাস!

পৃথিবী ও শুক্রের তুলনামূলক আকার

সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ০.৭২ এইউ। এক এইউ হচ্ছে পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব। বুধ গ্রহের মতই এর কোন উপগ্রহ নেই। এর আয়তন পৃথিবীর চেয়ে একটু কম, পৃথিবীর প্রায় ৮৭ ভাগ। ভর পৃথিবীর প্রায় ৮২ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণ পৃথিবীর চেয়ে ১০% কম। ফলে, এই গ্রহে গেলে কারো ওজোন ১০% কমে যাবে। এর মুক্তিবেগ সেকেন্ডে ১০.৩৬ কিমি.। অর্থ্যাৎ, কোন বস্তুকে এই বেগে শুক্র গ্রহ থেকে নিক্ষেপ করলে এটি শুক্র গ্রহ থেকে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে যাবে।

পৃথিবীর বাইরের গ্রহদের মধ্যে এতেই সর্বপ্রথম কোন মহাকাশযান অভিযানে যায়। ১৯৬২ সালে মেরিনার ২ নামক যানটি এই রেকর্ড করে। ১৯৭০ সালে ভেনেরা ৭ সর্বপ্রথম এতে অবতরণ করে। ১৯৯১ সালে ম্যাজেলান অরবিটার এর বিস্তারিত চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়।
Category: articles

শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

বুধ সৌরজগতের নিকটতম এবং সবচেয়ে ছোট গ্রহ। সূর্যের কাছাকাছি থাকার কারণে একে পৃথিবী থেকে দেখা একটু কঠিন, ব্যতিক্রম শুধু গোধূলির কিছু সময়। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে আসতে এটি নিজের অক্ষের উপর তিনি বার পাক খায়। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মনে করা হত যে বুধের শুধু এক পাশই সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। প্রতি শতাব্দীতে একে পৃথিবীর আকাশে প্রায় ১৩ বার সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনার নাম ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ মে তারিখে এর অতিক্রমণ ঘটে।
পৃথিবীর তুলনায় বুধ
এক নজরেঃ
ভরঃ পৃথিবীর ০.০৬ গুণ
ব্যাসঃ ৪, ৮৭৯ কিমি.
উপগ্রহঃ নেই
কক্ষপথের গড় দূরত্বঃ ০.৩৯ এইউ (১ এইউ = পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব)
এক বছরের দৈর্ঘ্যঃ ৮৮ দিন (পৃথিবীর হিসাবে)
পৃষ্ট তাপমাত্রাঃ -১৭৩ থেকে ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

আরো পড়ুনঃ 
☛ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

বুধ গ্রহের তথ্য ঝুড়িঃ

১. সব গ্রহের মধ্যে বুধের কক্ষপথ সবচেয়ে চাপা। অর্থ্যাৎ, বৃত্তাকার আকৃতি থেকে এর কক্ষপথের বিচ্যুতি সবচেয়ে বেশি। সূর্য থেকে এর দূরত্ব বিভিন্ন সময় ৪৬ থেকে ৭০ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লাখ) কিমি. পর্যন্ত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ 

২. গ্রহদের মধ্যে বুধ সবচেয়ে ছোট। খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচ গ্রহের অন্যতম এই গ্রহটির বিষুব রেখা বরাবর ব্যাস ৪, ৮৭৯ কিমি., যেখানে পৃথিবীর ব্যাস ১২, ৭৪২ কিমি.। 

৩. গ্রহদের মধ্যে ঘনত্বের দিক দিয়ে বুধের অবস্থান দ্বিতীয়। আকারে ছোট্ট হলেও এর ঘনত্ব অনেক বেশি। এর প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ৫.৪ গ্রাম করে পদার্থ আছে। এর চেয়ে বেশি ঘনত্ব রয়েছে শুধু পৃথিবীর। এর এই বড়ো ঘনত্বের কারণ হল, গ্রহটি মূলত ভারী ধাতু ও পাথর দ্বারা গঠিত। 

৪. বুধের পৃষ্ট এবড়োথেবড়ো। কোথাও কোথাও এর পৃষ্ঠের ভাঁজ একশো মাইল পর্যন্ত উঁচু ও কয়েকশো মাইল লম্বা হয়ে থাকে। 

৫. এর কেন্দ্রভাগ গলিত হতে পারে। সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অবস্থা গলিত হতে পারে। সাধারণত ছোট গ্রহদের কেন্দ্র খুব দ্রুত শীতল হয়ে যায়। কিন্তু এর কেন্দ্রে কঠিন বস্তুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। হিসাব করে দেখা গেছে এর মোট আয়তনের ৪২ ভাগই কেন্দ্রভাগ নিয়ে গঠিত, যেখানে পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই মানটি মাত্র ১১ ভাগ। 

৬. তাপমাত্রার দিকে দিয়ে বুধের অবস্থান গ্রহদের মধ্যে দ্বিতীয়। এর চেয়ে দূরে থেকেও শুক্র গ্রহের তাপমাত্রা আরো বেশি। এর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও রাতের বেলায় তা আবার নেমে আসে মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রিতেও। গ্রহটির কোনো বায়ুমণ্ডল নেই বলে এ রকমটি ঘটে। 
আরো পড়ুনঃ

৭. বুধের পৃষ্ঠ প্রচুর খানাখন্দে ভরপুর। গ্রহাণু ও ধূমকেতুর সংঘর্ষে এর পৃষ্ঠে এসব খাদ তৈরি হয়েছে। অন্য গ্রহদের মতো এটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় এসব খাদ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেনি। ২৫০ কিমি. এর চেয়ে বেশি ব্যাসের খাদকে বলা হয় বেসিন। 

৮. এ পর্যন্ত দুটি মহাকাশযান বুধ সফরে গেছে। সূর্যের খুব কাছে হবার কারণে বুধ গ্রহে যাওয়া কঠিন। ১৯৭৪ থেকে '৭৫ এর মধ্যে মেরিনার ১০ এর কাছ দিয়ে তিনবার উড়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে এর পৃষ্ঠের অর্ধেকটার মতো ছবি তোলা গেছে। এরপর ২০০৪ সালে পাঠানো হয় মেসেনজার প্রোব। 

৯. বুধের সঠিক আবিষ্কার কাল জানা যায় না। খৃষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে সুমেরীয়রা একে দেখেছে বলে জানা যায়।   

১০. বুধেরও আছে বায়ুমণ্ডল! বুধের অভিকর্ষ পৃথিবীর ৩৮ শতাংশ মাত্র। সৌরবায়ুর খপ্পরে পড়ে এত অল্প অভিকর্ষ দিয়ে বায়ুমণ্ডল টিকিয়ে রাখা কঠিন। তবে এই সৌরবায়ু ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কারণেই এর বায়ুমণ্ডল কিছুটা অস্তিত্ব ফিরে পায় সময় সময়। 
 
সূত্রঃ
১। http://solarsystem.nasa.gov/planets/mercury
২। http://nineplanets.org/mercury.html
৩। http://space-facts.com/mercury/
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

পৃথিবীকে সৌরজগতের কেন্দ্র ধরে নিলে শুক্র গ্রহের গতিপথ দেখতে দারুণ সুন্দর মনে হয়। এক্ষেত্রে শুক্র গ্রহের গতিপথ দেখতে গোলাপ ফুলের পাপড়ির একটি পেন্টাগ্রাম তৈরি করে। আট বছর পরপর এটি একই দিনে আকাশের একই জায়গায় ফিরে আসে। 
শুক্র গ্রহ পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করছে ধরে নিলে এর গতিপথ এমন দেখা যায়। এখানে ২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এর গতিপথ দেখানো আছে। 
 ছবিটাকে অবশ্য একটু সিম্পল করে আঁকা হয়েছে। 

তথ্য সূত্রঃ Earth Sky

Category: articles

সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

গত ১০ বছরের মধ্যে মঙ্গল গ্রহ এখন সেরা উজ্জ্বল। এটি এখন সন্ধ্যা নামলেই হাজির হয় পূবাকাশে। বৃহস্পতি তখন থাকে প্রায় মাথার উপরে। দুজনের উজ্জ্বলতায় টক্করও লেগেছে বেশ। অবশ্য বৃহস্পতি একটু এগিয়ে। লুব্ধক এখন সন্ধ্যার পরেই পশ্চিমে ডুবে যায়। তাই বৃহস্পতি সেদিক থেকে একজন প্রতিযোগী হারালেও মঙ্গল ময়দানের লড়াই চালিয়ে রেখেছে।
রাতের আকাশে মঙ্গল গ্রহ

মঙ্গলের সাথেই আছে আরেকটু গ্রহ শনি। শনি অবশ্য উজ্জ্বলতায় বেশ পিছিয়ে। তবে শনি সব সময় প্রায় একই রকম উজ্জ্বল থাকবে। মঙ্গল এখান সেরা উজ্জ্বল হলেও মাস্খানেক পর আবার অনুজ্জ্বল হতে থাকবে। 
Category: articles

বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬

দূরত্বের দিক দিয়ে বৃহস্পতি সূর্যের পঞ্চম গ্রহ। এর ভর সৌরজগতের অন্য সব গ্রহের সম্মিলিত ভরের আড়াই গুণ। এর প্রধান উপাদান গ্যাস। তাই এর নাম গ্যাস জায়ান্ট।
টেলিস্কোপে দেখা বৃহস্পতি গ্রহ 
গ্রহটির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যঃ

⏩ বৃহস্পতি সৌরজগতের চতুর্থ উজ্জ্বল বস্তু
এটি রাতের আকাশের ৩য় উজ্জ্বল বস্তু। কারণ, রাতেতো আর সূর্য থাকে না। শুধু সূর্য, চাঁদ এবং শুক্র গ্রহই এর চেয়ে বেশি উজ্জ্বল। অন্য গ্রহদের চেয়ে একেই সবচেয়ে বেশি ভালোভাবে চোখে পড়ে। গ্রহদের মধ্যে শুক্র সবচেয়ে উজ্জ্বল হলেও একে কোন সময় সন্ধ্যার পরে আবার কখনো ভোরের আকাশে দেখা যায়। বেশ কিছু সময় এটি সূর্যের এত কাছে থাকে যে একে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, বিশেষ করে শহর থেকে।

⏩ প্রাচীন ব্যাবীলনীয়রা প্রথম বৃহস্পতির পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখে
এটা খৃষ্টপূর্ব ৭ম বা ৮ম শতকের কথা। রোমদের দেবতার রাজা ছিল জুপিটার। গ্রিকদের কাছে এটি ছিল বজ্র দেবতা জিউস।

⏩ বৃহস্পতির দিনের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোট
বৃহস্পতি নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খেতে মাত্র ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নেয়। ফলে এতে দিনের দৈর্ঘ্য ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট হয়। এই দৈর্ঘ্য গ্রহদের মধ্যে স্বল্পতম। এর অর্থ হচ্ছে গ্রহটির আবর্তন বেগ খুব তীব্র। সত্যি বলতে এই বেগ হচ্ছে সেকেন্ডে ১২.৬ কিমি.। এই তীব্র বেগের কারণে গ্রহটির মেরু অঞ্চল বেশ অনেকটা চেপে গিয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। পৃথিবীও একই কারণে মেরু অঞ্চলে একটু চ্যাপ্টা, অবশ্য তা পরিমাণে বৃহস্পতির চেয়ে কম।

⏩ বৃহস্পতি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ১১.৮ বছর লাগে
পৃথিবী থেকে দেখতে আকাশে বৃহস্পতির বেগ খুব ধীর। ফলে এটি এক তারামণ্ডলী থেকে আরেকটিতে যেতে অনেক সময় লাগে। এখানে বেগ বলতে আমরা পৃথিবীর আবর্তনের জন্যে আকাশের বস্তুদের পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী বেগকে বোঝাচ্ছি। বলছি রাতের আকাশের তারকাদের তুলনায় আপেক্ষিক বেগের কথা। তারকাদের তুলনায় বেগের গতির তারতম্যের কারণেই গ্রহদেরকে তারকাদের থেকে আলাদা করে চেনা যায়।

⏩ বৃহস্পতির ঝড়ের চিহ্ন
টেলিস্কোপে বৃহস্পতির গায়ে একটি বড় লাল দাগ দেখা যায়। এর নাম গ্রেট রেড স্পট। ৩৫০ বছর ধরে এর প্রকোপ খুব তীব্র। এই লাল দাগটি এত বড় যে এর মধ্যে ৩টা পৃথিবীকে বসিয়ে দেওয়া যাবে। 

⏩ বৃহস্পতির অভ্যন্তরভাগে পাথর, ধাতু ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল প্রধানত হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত হলেও বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে ভেতরে গেলে পাওয়া যাবে সঙ্কুচিত হাইড্রোজেন গ্যাস এবং তরল ধাতব হাইড্রোজেন। আর এর কোর বরফ, পাথর ও ধাতুতে তৈরি।

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহের মালিক বৃহস্পতি
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ গ্যানিমিড। এর পরেই অবস্থান ক্যালিস্টোর। এর চারটি উপগ্রহ প্রথম গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন। এই চারটি হল আয়ো, গ্যানিমিড, ইউরোপা ও ক্যালিস্টো।
সূত্রঃ

[১] http://space-facts.com/jupiter/
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Jupiter
Category: articles

সোমবার, ২ মে, ২০১৬

গ্রহ দেখার আরেকটি দারুণ মাস ২০১৬ সালের মে। এ মাসে সবচেয়ে দারুণ দেখাবে বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শনিকে। দেখা যাক, কে কখন, কোথায় থাকবে।
বৃহস্পতিঃ
সন্ধ্যার পরপরই এটি পূর্ব আকাশ থেকে হাজির মাথার উপর। মাসের যে সময়টুকু চাঁদ থাকবে না তাতে বৃহস্পতিই রাতের আকাশের সেরা উজ্জ্বল বস্তু। আগামী মাসগুলোতেও এটি এর পারফরম্যান্স ধরে রাখবে। গত মাসের মতই লুব্ধকের সাথে এর উজ্জ্বলতার প্রতিযোগিতা হবে। অনেকে ভুল করে একে লুব্ধকও মনে করতে পারেন। তবে লুব্ধক এর চেয়েও বেশি পশ্চিমে (এবং মূলত কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিমে) থাকায় বিভ্রান্তি কাটানো সহজ। লুব্ধক আকাশের সেরা উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেও সময় সময় গ্রহদের কাছে একে হার মানতে হয়।
মাস গড়াতে গড়াতে আরেকটি গ্রহ মঙ্গলও বৃহস্পতির সাথে টক্কর লাগাবে। তবে এর লাল রঙ এর কারণে একে চিনতে অসুবিধা হবে না।

মঙ্গলঃ
এ মাসের ২য় সেরা উজ্জ্বল গ্রহ এটি। মাসের শুরুতে উজ্জ্বলতার দৌড়ে বৃহস্পতির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও দিন গড়াবার সাথে সাথে এর উজ্জ্বলতা বেড়ে বৃহস্পতির খুব কাছাকাছি হয়ে যাবে। গত ২ বছরের মধ্যে এটি আমাদের জন্যে মঙ্গল গ্রহ দেখার সেরা সময়। মাসের শেষের দিকে এটি এপ্রিল মাসের তুলনায় ৪ গুণ উজ্জ্বল হবে। বুধ ছাড়া অন্য যে কোন গ্রহের চেয়ে মঙ্গল সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বলতার পরিবর্তন ঘটায়। এটি এর উজ্জ্বলতম অবস্থায় অনুজ্জ্বল অবস্থা থেকে ৮০ গুণ পর্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে!
রাতের আকাশে মঙ্গল গ্রহ 


ইদানিং মঙ্গল উজ্জ্বল হচ্ছে কেন?
মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ পৃথিবীর ঠিক বাইরে। সূর্যের চারদিকে পৃথিবী তাই মঙ্গলের চেয়ে দ্রুত ঘোরে। গত দুই বছর ধরে আমরা মঙ্গলের আগে আগে সূর্যের চারদিকে ছুটছি। এ মাসের শেষ দিকে আমরা চলে যাচ্ছি মঙ্গল ও সূর্যের মাঝে। এই ঘটনাকে বলা হয় প্রতিযোগ (Opposition)। এ সময় সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাবার পরেই পূব আকাশে দেখা মিলবে মঙ্গলের। মাসের শুরুতে অবশ্য মঙ্গল উদিত হবে রাত ৯টার দিকে।

রাতের আকাশে গ্রহদের এলোমেলো ছোটাছুটি এদেরকে নক্ষত্রদের থেকে আলাদা করে চিনতে ভূমিকা রেখেছে। নক্ষত্রদের সাপেক্ষে এরা কখনো পূর্ব দিকে, আবার কখনো পশ্চিমে ছোটে। 


 ভিডিওঃ ২০১৬ সালের বিভিন্ন মাসে মঙ্গলের ছোটাছুটি 

লাল গ্রহটি নিজে একাই রাতের আকাশকে উজ্জ্বল করছে না। এর পাশেই আছে আরেকটি সুন্দর গ্রহ শনি। আপাতত দুজনের দূরত্ব অবশ্য বাড়ছে, কিন্তু আছে বৃশ্চিক মণ্ডলীতেই।

শনিঃ
মঙ্গল ও শনি দুই গ্রহই আরেকটি উজ্জ্বল বস্তুর কাছে আছে। এটি হচ্ছে আকাশের আকাশের ১৬শ উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্যেষ্ঠা (Antares)। এত উজ্জ্বল হয়েও বেচারা দুই গ্রহের কাছে ফেল! আপাতত রাত ৯ থেকে ১০টার মধ্যে এটি শনি উদিত হলেও মঙ্গলের মতই আস্তে আস্তে এই সময় কাছে আসছে। জুনের ৩ তারিখে এটিও প্রতিযোগ অবস্থানে আসবে। এই সময় এও সূর্যাস্তের পরে পূর্ব আকাশে হাজিরা দেবে। আগস্টের ২৪ তারিখে মঙ্গল ও শনি খুবই কাছাকাছি থাকবে।

বুধঃ
মে মাসের ৯ তারিখে বুধ সন্ধ্যার আকাশ থেকে ভোরের আকাশে চলে যাচ্ছে। ফলে, এই সময় এটি সূর্যের খুব নিকটে থাকে বলে একে দেখা প্রায় অসম্ভব। বুধ অন্তঃগ্রহ এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ হওয়ায় খুব দ্রুত ভোরের আকাশ ও সন্ধ্যার আকাশে আসতে যেতে থাকে।

শুক্রঃ
রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম গ্রহটি এ মাসেও নিস্তেজ। ফলে রাতের আকাশের রাজত্ব বৃহস্পতির হাতে। এটি এ মাসে (পৃথিবীর আকাশে) সূর্যের নিকটতর হতে হতে সূর্যের আভায় হারিয়ে যাবে। জুনের ৬ তারিখে এটি সূর্যের ঠিক পেছনে চলে যাবে। কারণ, এ সময় কক্ষপথে এটি অবস্থান নেবে পৃথিবীর উল্টো পাশে। এ সময় এটি ধীরে ধীরে ভোরের পূবাকাশ থেকে সন্ধ্যার পশ্চিমাকাশের দিকে আসবে।
শুক্র গ্রহের সূর্যকে অতিক্রমের মুহূর্ত 

Category: articles

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

সহজ কথায় বললে, সূর্যের চারদিকে কোন গ্রহের কক্ষপথের নিকটতম বিন্দুকে অনুসূর (Perihelion) এবং দূরতম বিন্দুকে অপসূর (Aphelion) বলে। অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেবার সময় গ্রহরা জোরে এবং উল্টোভাবে অপসূর দিয়ে যাবার সময় ধীরে চলে।

আমাদের সৌরজগতের গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। কিছু গ্রহের কক্ষপথ প্রায় বৃত্তাকার। অধিকাংশেরই কক্ষপথ ছড়ানো, অনেকটা ডিম্বাকৃতির। আরো সঠিক করে বললে উপবৃত্তাকার। আর এই উপবৃত্তাকার হবার কারণেই সূর্য থেকে গ্রহদের দূরত্ব নির্দিষ্ট থাকে না।

উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্য থেকে বুধ গ্রহের দূরত্বের পরিবর্তন

সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আসার সময় পৃথিবী প্রতি বছর এক বার করে অপসূর ও অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেয়। অন্য গ্রহরাও সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে একবার করে বিন্দু দুটিকে অতিক্রম করে। সাধারণত জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে নিকটে ও জুলাই মাসে সবচেয়ে দূরে থাকে। একে সহজাত বুদ্ধির বিপরীত মনে হয়। কারণ আমরা জানি, জানুয়ারি মাসে শীতকাল থাকে (বাংলাদেশসহ অনেকগুলো দেশে)।তাহলে শীতকালে সূর্য আমাদের সবচেয়ে কাছে থাকে- এটাকি বিশ্বাসযোগ্য? বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এটাই বাস্তবতা।

আসলে শীত বা গরম পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের উপর নির্ভর করে না বললেই চলে। এটা নির্ভর করে পৃথিবীর কক্ষীয় নতীর উপর। পৃথিবী এর কক্ষীয় তলের সাথে সাড়ে তেইশ ডিগ্রি পরিমাণ হেলে আছে। ফলে, যে অঞ্চল যখন সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন তাতে গরম অনুভূত হয় এবং উল্টো পাশে বজায় থাকে শীত। এ জন্যেই জানুয়ারি মাসে উত্তর গোলার্ধে শীত থাকলেও দক্ষিণ গোলার্ধে কিন্তু ঠিকই গরম থাকে।

২০১০ সালে পৃথিবীর অপসূর ও অনুসূর 

সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকার সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব থাকে ৯ কোটি ১০ লক্ষ মাইল বা ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি.। অন্য দিকে অপসূর অবস্থানে এই দূরত্ব হচ্ছে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি.। একেই আমরা গড় করে সাধারণত বলি ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি কিমি.। পৃথিবী থেকে সূর্যের এই গড় দূরত্বকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট।

আরো পড়ুনঃ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

অনুসূর ও অপসূর কথাগুলো গ্রহদের পাশাপাশি ধূমকেতু ও গ্রহাণুদের জন্যেও প্রযোজ্য। ইংরেজি perihelion শব্দটি peri এবং helios গ্রিক শব্দদ্বয় থেকে আগত। peri শব্দের অর্থ নিকটে এবং helios অর্থ সূর্য। ফলে perihelion এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে সূর্যের নিকট বিন্দু। একইভাবে গ্রিক apo শব্দের অর্থ দূরে। ফলে aphelion এর দাঁড়াচ্ছে সূর্যের দূরতম বিন্দু। বাংলায় ভেঙ্গে অর্থ করলেও প্রায় একই রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। কারণ সূর কথাটা এসেছে সূর্য থেকেই।

অন্য দিকে, চাঁদও পৃথিবীর চারদিকে উপবৃত্তাকার পথে চলে। ফলে চাঁদের ক্ষেত্রেও পৃথিবীর নিকটতম ও দুরতম দুটি বিন্দু আছে। এদের  জন্যে আছে আলাদা নাম। নিকটতম বিন্দুর নাম অনুভূ এবং দূরতম বিন্দুর নাম অপভূ। বুঝতেই পারছেন, ভূ মানে পৃথিবী। আর অনুভূ মানে পৃথিবীর নিকটে।

সূত্র: উইন্ডোজ টু ইউনিভার্স
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...