Advertisement

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ৭ অক্টোবর। ১৮৮৫ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ নিলস বোর। ড্যানিশ এই পদার্থবিজ্ঞানীর কল্যাণেই পরমাণুর মৌলিক গঠন উদঘাটিত হয় এবং ভিত্তি স্থাপিত হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের

নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী নিলস বোর

বিশেষ করে তিনি পরমাণুর জন্যে বোর মডেল প্রস্তুত করেন। পরে আবার তৈরি করেন লিকুইড ড্রপ মডেল। কোপেনহেগেন থাকার সময় অসংখ্য পদার্থবিদ তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পেতেন। একত্রে কাজও করেছেন অনেকের সাথে। এখানে থাকা অবস্থায়ই হাইজেনবার্গের সাথে মিলে তিনি কোয়ান্টাম তত্ত্বের কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা (Copenhagen interpretation) তৈরি করেন। বিংশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী এই বিজ্ঞানী ১৯২২ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, পরমাণুর গঠন ও তা থেকে নির্গত বিকিরণ নিয়ে গবেষণার জন্যে।

নিলস বোর ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ১৮৮৫ সালের ৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বোরের বাবা একজন অধ্যাপক ছিলেন এবং কোপেনহেগেনের সম্ভান্ত্র পরিবারগুলোর মাঝে বোরের পরিবার ছিল অন্যতম। বোরের পরিবারের সবাই ছিলেন বিদ্যানুরাগী। তাঁর ছোট ভাই হ্যারাল্ড বোরও পরবর্তীতে একজন দক্ষ গণিতবিদ হয়েছিলেন। বোরের বাবার কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীর করাতে বাল্যকালে বোর কিছুটা সুবিধা পেয়েছিলেন। ১৯০৩ সালে তিনি বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও দর্শনে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯০৫ সালে বোর তরলের পৃষ্ঠটানের উপর একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেন, যা সবার মনোযোগ কাড়ে। তিনি পুরস্কৃতও হন এর জন্যে। এর পরেই বোর গণিত ও দর্শন ছেড়ে ঢুকে পড়েন পদার্থবিদ্যার জগতে। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯১১ সালে বোর তাঁর ডক্টরেট থিসিস সম্পন্ন করেন। পরবর্তী গবেষণার জন্য ডেনমার্ক ছেড়ে বোর ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডে যান এবং সেখান থেকেই তাঁর চমক দেখানোর শুরু।

চাপা স্বভাবের বোর ছোটবেলায় ভাষা শিখতে অনেক দেরী করে ফেলেছিল বলে ড্যানিশ ভাষা পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারেননি। আবার পড়ালেখার জন্য ইংরেজী শিখলেও ইংরেজী ভাষার শব্দ জ্ঞান তাঁর ছিল খুব সীমিত। ইংল্যান্ডে আসার পর ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে স্যার জে.জে. থমসনের অধীনে গবেষণা শুরু করলেও তা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। থমসনের উদাসীনতা বোরকে ভীষণভাবে হতাশ করলেও ম্যানচেস্টারে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের সঙ্গ বোরকে অনেক উৎসাহ- অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। পরবর্তীতে মহান শিক্ষক রাদারফোর্ডের অধীনে ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে বোর গবেষণা শুরু করেন।

ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে থাকাকালীন আইসোটোপ, তেজস্ক্রিয়তার ভাঙন সুত্র এবং পর্যায় সারণী নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেন। ১৯১১ সালে আলফা- কণা বিক্ষেপণের ফলাফলের উপর নির্ভর করে রাদারফোর্ড তার পরমাণু মডেল প্রকাশ করলে এতে অনেক সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। বোর সেগুলোর কয়েকটি সমাধান করতে পেরেছিলেন। কিন্তু, তিনি রাদারফোর্ডকে তা বোঝাতে অক্ষম হন। ১৯১২ সালে বোর কোপেনহেগেনে ফিরে আসেন এবং জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি মার্গ্রেথকে বিয়ে করেন। বোর- মার্গ্রেথ দম্পতির পরবর্তীতে ৬টি সন্তান- সন্তুতি হয়েছিল, যাদের মাঝে ২ জন নাবালক অবস্থায় মারা গেলেও বাকি ৪ জন পিতার মতোই বিভিন্ন শাখায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন। তন্মধ্যে, বোরের সন্তান অউ নিলস বোর ১৯৭৫ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারও লাভ করেন।

১৯১২ সালের গ্রীষ্মকালে ছুটি কাটানোর সময় বোর রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে চিরায়ত বলবিদ্যাকে বিদেয় করে তাতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রয়োগ করেন। তার স্ত্রী মার্গেথ এই সময় বোরকে তার গবেষণাপত্র (scientific paper) তৈরিতে খুব সহায়তা করেন। বোরের গবেষণাপত্রগুলো মূলত তার স্ত্রী মার্গেথেরই লেখা। মার্গেথ তার স্বামীর কথা বোঝার চেষ্টা করতেন এবং তা লিখে রাখতেন। ১৯১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বোর পরমাণু সম্পর্কে এমন ৩টি অনুমান করেন, যা দ্বারা রাদারফোর্ডের অস্থায়ী পরমাণু, পরমাণুর ভৌতিক(?) বর্ণালীসহ নানা সমস্যা সমাধান করা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে বোরের সেই অমর কর্ম- ‘পরমাণুতে ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে যেকোনো ব্যাসার্ধে ঘুরতে পারে না, শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট অনুমোদিত(কোয়ান্টায়িত) কক্ষপথেই ঘুরে’ এই সময়েই প্রকাশ পায়। বোরের দেওয়া পরমাণুর এই চিত্র বোরের কোয়ান্টাম পরমাণু মডেল নামে পরিচিত।

১৯২১ সালে বোর কোপেনহেগেন তত্ত্বীয় পদার্থবিদ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। জীবনের বাকি সময় তিনি এর পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৬- ২৭ সালে এই সমিতিতেই হাইজেনবার্গ বোরের অধীনে কাজ করেন এবং প্রদান করেন তাঁর বিখ্যাত অনিশ্চয়তা নীতি। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সূতিকাগার ছিল মূলত তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই সমিতিটিই। আলোর দ্বৈত ধর্ম, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে বোরের এই সমিতির অবদান অনস্বীকার্য।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মানি ডেনমার্ক আক্রমণ করলে বোর এর প্রতিবাদ করেন এবং নাৎসিবিরোধি মনোভাবের কারণে জার্মানদের রোষানলে পড়েন। ১৯৪৩ সালে বোর দেশত্যাগে বাধ্য হয় এবং সুইডেন হয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। এইসময় বোর নিউক্লিয়ার ফিশান এবং ইউরেনিয়াম- ২৩৫ নিয়ে কাজ করেন। তিনি সারাজীবনই পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ছিলেন। তবে আমেরিকায় ম্যানহাটন প্রজেক্টে ধীরে ধীরে তিনি জড়িয়ে পড়েন এবং আণবিক বোমা তৈরির এই প্রকল্পে একজন সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে পদোন্নতি পান। এইসময় বোর ছদ্মনাম হিসেবে নিকোলাস বেকার নাম গ্রহণ করেন। তবে বোর আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও সোভিয়েতের সাথে প্রকাশ্যে আলাপ চালাতে শুরু করেন পারমাণবিক শক্তির অপব্যবহার রোধের জন্য। এই কারণে বোরকে নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করে আমেরিকা থেকেও বের করে দেয়া হয়।

বোর ১৯৪৭ সালে বীরের বেশে দেশে ফিরে আসেন। তাকে ডেনমার্কের সর্বোচ্চ পদক অর্ডার অব দি এলিফ্যান্ট প্রদান করা হয়। জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি রয়্যাল ড্যানিশ একাডেমির সভাপতি ছিলেন। শেষ বছরগুলোতে বোর তার গবেষণা বন্ধ করে দিলেও নিউক্লিয়ার শক্তির অপব্যবহার রোধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। ১৯৫০ সালে জাতিসংঘে শান্তির পক্ষে তার খোলা চিঠিটি তার শান্তি আন্দোলনে স্মরণীয় একটি পদক্ষেপ।

বোর কোপেনহেগেনেই ১৯৬২ সালের ১৮ নভেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। নিলস বোরের স্ত্রী মার্গ্রেথ আরো প্রায় ২০ বছর জীবিত ছিলেন।

নিলস বোরের পরমাণু ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর কাজ বিজ্ঞানের সকল শাখায় যে কত বড় অবদান রেখেছে তা কল্পনাতীত। আইনস্টাইনের একটা উক্তির অংশবিশেষ দিয়েই শেষ করছি।
'বোর  না থাকলে পরমাণু সম্পর্কে যে আমরা কতটুকু জানতে পারতাম তা কেউই জানে না।' 
তাঁর ছাত্র থাকাকালীন সময়ের একটি মজার কাহিনী পড়ুন এখানে।

সূত্রঃ
১। http://www.famousscientists.org/niels-bohr/
২। http://www.physicsoftheuniverse.com/scientists_bohr.html
Category: articles

বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬

ঢাকার আকাশে শুক্র গ্রহ 

ইদানিং পশ্চিম দিগন্তে সন্ধ্যাতারাকে (শুক্র গ্রহ) খুব সহজেই চোখে পড়ে। 
আজ পাশেই আছে চাঁদও। একটি ভুল ধারণা হল সন্ধ্যাতারা সব সময় চাঁদের সাথে থাকে। 
কোনো কোনো সময় সন্ধ্যাতারা পশ্চিম আকাশে থাকে, আবার কখনো থাকে ভোরের পূবাকাশে, যে সময় এরই নাম হয় শুকতারা। দুই ক্ষেত্রেই এটি দিগন্তের আশেপাশেই থাকে। 
আর চাঁদতো আর তা করে না, ঘুরে বেড়ায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিগন্তের মাঝের পুরো আকাশটাই।

ছবিটি তুলেছেনঃ আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

শুক্র গ্রহ নিয়ে আরো পড়ুনঃ

অদ্ভুত এক গ্রহ 
শুক্র গ্রহের পরিচয় 
শুকতারার পরিচয়
শুক্র গ্রহে বসবাস! 
Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ৪ অক্টোবর
১৯৫৯ সালের এই দিনে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মহাশূন্যে পাঠায় স্পুটনিক ১ নামের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। অনেক মহাকাশ ইতিহাসবিদের মতে প্রকৃতপক্ষে এই দিনেই সূচনা ঘটে মহাশূন্য যুগের।

 
জাদুঘরে রক্ষিত স্পুটনিক ১ এর একটি নকল

এটি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল ঘণ্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার (১৮ হাজার মাইল) বেগে। অর্থ্যাৎ, পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগত প্রায় ৯৬ মিনিট। এটি ২১ দিন পর্যন্ত সঙ্কেত পাঠানো অব্যাহত রাখে। শেষ পর্যন্ত ২৬ অক্টোবর তারিখে এর ব্যাটারির শক্তি ফুরিয়ে গেলে শেষ হয় সঙ্কেত পাঠানোর কাজ। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটি কক্ষপথ থেকে ছিটকে গিয়ে প্রবেশ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। কক্ষপথে তিন মাস থাকার সময় এটি ৭ কোটি কিলোমিটার পথ চলাচল করেছিল।

ধাতুর প্রলেপ দেওয়া গোলকীয় যানটির ব্যাস ছিল ২৩ ইঞ্চি বা ৫৮ সেন্টিমিটার। ভর ছিল ৮৩.৬ কেজি। বেতার সঙ্কেত পাঠানোর জন্যে এতে ছিল চারটি রেডিও অ্যান্টেনা। এই সঙ্কেত পৃথিবী থেকে ধরা যেত। খালি চোখে একে দেখা যেতে পুরো পৃথিবী থেকে। একে প্রেরণের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমেরিকার শুরু হয় স্পেস রেস বা মহাশূ্ন্য প্রতিযোগিতা। দুই দেশের ঠাণ্ডা যুদ্ধের অন্যতম অংশ জুড়ে ছিল এই রেসও।

তবে উপগ্রহটি যে শুধু ইতিহাসই সৃষ্টি করেছে তা কিন্তু নয়, এটি বিজ্ঞানীদেরকে অনেক গুরুত্বপুর্ণ তথ্যও সরবরাহ করে।  কক্ষপথে এর চলাচলের পথের প্রকৃতি থেকে উর্ধ্বস্থ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব জানা সম্ভব হয়। পাওয়া যায় আয়নোস্ফিয়ার সম্পর্কেও তথ্য।

স্পুটনিকের জবাবে মার্কিনিরা পৃথিবীকে কিছু করে দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সাফল্য পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। পরের বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিন তারাও এক্সপ্লোরার ১ নামক তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নিক্ষেপ করে মহাশূন্যে।

তবে রুশরা তার আগেই- স্পুটনিক ১ এর ৩২ দিন পরেই স্পুটনিক ২ কেও পাঠিয়ে দেয় মহাশূন্যে। এবং এতে একটি ছিল প্রাণীও! এটিই ছিল লাইকা নামের সেই কুকুরটি।

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/space/this-date-in-science-launch-of-sputnik-october-4-1957
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_2
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_1
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Explorer_1
৫। http://history.nasa.gov/sputnik/
Category: articles
আচ্ছা বলুনতো, গাড়ি কোন পথে চলতে পারে? নিশ্চয়ই সমতল, ঢালু, আকাবাঁকা সব ধরনের পথেই গাড়ি চলবে। উত্তর সঠিক। এবার তাহলে বলুন, গাড়ির ইন্জিন বন্ধ করে দিলে এটি কোথায় কোথায় চলবে? এবার নিশ্চয়ই বলবেন, শুধু ঢালু পথ ধরে উপর থেকে নিচে সেটা হতে পারে। আমি যদি বলি, ঢালু পথে ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখা গাড়িও নিচ থেকে উপরেও উঠতে পারে- এমনকি তা হতে পারে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে, তবে কি বিশ্বাস করবেন?

সাধারণত একটি বস্তু নিজে নিজেই ঢালু পথে উপর হতে নিচে নামে। কারণ পৃথিবী অভিকর্ষ বল দ্বারা প্রতিটি বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে টানে। কিন্তু এমনটা অস্বাভাবিক মনে হয় যখন কোনো বস্তু পাহাড়ের ঢালু পথে নিচ থেকে উপরে ওঠে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়াই। আশ্চর্যজনক হলেও আপাত দৃষ্টিতে এমনটি সত্য। এই বিশেষ ধরনের পাহাড়ের নাম গ্র্যাভিটি হিল। এর আরেক নাম ম্যাগনেটিক হিল।



আপাত দৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছে কোনো শক্তি খরচ না করেই নিচ থেকে উপরে উঠা যাচ্ছে। আসলে কিন্তু এ সাইকেলের আরোহী উপর থেকেই নিচে নামছেন। কিন্তু দৃশ্যপট এমন হয়ে আছে যে উল্টোটাই মনে হচ্ছে। 

অনেকেই একে  রহস্যময় পর্বত বা রহস্যময় স্থান হিসেবে অভিহিত করে থাকেন, এমন কিছু স্থান যেখানে পরিপার্শ্বিক দৃশ্যপট এমন একটি দৃষ্টি বিভ্রম সৃষ্টি করে, যাতে একজন দর্শকের কাছে ঐ স্থানের একটি নিম্মমুখী ঢাল বিশিষ্ট রাস্তাকে উর্ধ্বমুখী ঢালু মনে হতে থাকে। এ সকল স্থানে কোনো গাড়ির গিয়ার বন্ধ করে রাখলেও তা আপনা আপনি চলতে থাকে। এতে করে চালক বা দর্শকের কাছে গাড়িটি উঁচু রাস্তা বেয়ে উঠে যাচ্ছে বলে মনে হয়। অথবা রাস্তায় পানি ঢালা হলে তা গড়িয়ে উঁচু রাস্তায় উঠছে বলে মনে হয়। এই পৃথিবীতে এরকম প্রায় একশ পাহাড় আছে । যেমন কানাডার কুইবেকের চারটিয়ারভিল, সৌদি আরবের মদিনার ওয়াদি ই জ্বিন, অস্ট্রেলিয়ার ওরোরা, ভারতের লাদাখে ইত্যাদি।

এসব পাহাড় পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অনেকে মনে করেন, অতপ্রাকৃতিক শক্তি (supernatural force) বা চুম্বকীয় বলের এর কারণে এমনটি হয়ে থাকে, যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিপরীত। তবে বিজ্ঞানীরা গ্রাভিটি হিলের রহস্য বের করেছেন।

সৌদিআরবের মদিনার ওয়াদি ই জ্বিন

বিজ্ঞানীরা জিপিএস ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, এটা মরীচিকার মতই একটি দৃষ্টি ভ্রম, যা আলোক বিভ্রমের (optical illusion)  জন্য হয়ে থাকে। আশেপাশের গাছপালা, ঢালু এলাকা, আকাবাঁকা দিগন্তরেখা বা বাধাগ্রস্থ দৃষ্টিসীমার কারণে মানব চোখ ঐ এলাকার ঢাল নির্ণয়ের জন্য কোনো প্রসঙ্গ কাঠামো খুঁজে পায় না বলে মস্তিষ্কে এমন অনুভূতি সৃষ্টি হয় যাতে ঐ এলাকাটিকে
ঊর্ধমুখী ঢাল বলে মনে হয়।

গ্র্যাভিটি হিলের আরেকটি উদাহরণ 
Category: articles

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

স্ট্যান্ডার্ড মডেল হল বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল তত্ত্বগুলোর মাঝে একটি। অনেকে স্ট্যান্ডার্ড মডেলকে মৌলিক কণাদের বা বলবাহক কণাদের তালিকা মনে করলেও এটি আসলে এটি নিছকই তালিকা নয়, বরং একটি গাণিতিক সূত্র বা তত্ত্ব। চলুন জেনে নিই, অতি-পারমাণবিক কণাদের আচরণ ও মৌলিক বলগুলোর একীভূত কোয়ান্টাম তত্ত্ব গঠনে সফল এই তত্ত্বের জন্ম কীভাবে হল।

বর্তমান বিজ্ঞানীদের নিকট অন্যতম বড় একটা চ্যালেঞ্জ হল প্রকৃতির মৌলিক ৪ টি বলকে একীভূত করা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই মৌলিক বলগুলোকে একীভূত করা গেলে কসমোলজি বা সৃষ্টিতত্ত্ব, কণা-পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদির হাজারো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেই আদিকাল থেকেই সকল বলকে একই বলের বিভিন্ন রূপ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু, তখনও সকল মৌলিক বল আবিষ্কৃত না হওয়ায় বিজ্ঞানীরা মৌলিক বলগুলোকে একীভূত করতে পারেননি। পরবর্তীতে যখন সবল ও দুর্বল নিউক্লীয় বল আবিস্কৃত হয় তখন মৌলিক বলগুলোর একীভবনের জন্য অনেকগুলো তত্ত্ব গঠিত হয়। সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব, লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি, ইয়াং-মিলস ফিল্ড এই তত্ত্বগুলোর মাঝে অন্যতম।

কোনো একটি বলকে ব্যাখ্যা করতে গেলে দরকার হয় ফিল্ড থিওরি বা ক্ষেত্র তত্ত্বের। যেমন মহাকর্ষ বলের জন্য যেমন মহাকর্ষ ক্ষেত্র রয়েছে। আইনস্টাইনের সফলতা ও নিউটনের ব্যর্থতার মূল কারণ হল আইনস্টাইন একটি মহাকর্ষ ক্ষেত্র তত্ত্ব গঠন করতে পেরেছিলেন, যা নিউটন পারেননি। দুর্বল ও সবল নিউক্লীয় বলের জন্য কোনো ক্ষেত্র তত্ত্ব যখন আবিষ্কৃত হয়নি, তখন ১৯৫৪ সালে এন. সি. ইয়াং ও তার ছাত্র আর. এল. মিলস একটি নতুন ক্ষেত্র তত্ত্ব দেন। এটি দুর্বল ও সবল নিউক্লীয় বলকে কোয়ান্টা বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়। ইয়াং-মিলস ক্ষেত্রতত্ত্বের আলোকে সবল ও দুর্বল নিউক্লিয় বল এবং তাড়িচ্চুম্বকীয় বলকে একীভূত করার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়, তাই অবশেষে স্ট্যান্ডার্ড মডেল অব পার্টিকেল রূপে পরিচিতি পায়। স্ট্যান্ডার্ড মডেল ব্যাখ্যা করে যে পদার্থের মৌলিকতম কণাগুলো কীভাবে নিজেদের মাঝে মিথষ্ক্রিয়া বা পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া করছে এবং বলবাহক কণাগুলোর সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে মৌলিক ৩টি বলের ক্ষেত্র কীভাবে সৃষ্টি করছে।

এই মডেল অনুসারে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সকল বলের জন্যই এক বা একাধিক কোয়ান্টা রয়েছে। বল তৈরি হয় এই কোয়ান্টাদের পারস্পারিক আদান- প্রদানের মাধ্যমে। দৃশ্যমান সকল পদার্থের গঠনগত মৌলিক কণাদের আচরণ এই তত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা করা যায়। আমি এখানে দৃশ্যমান বলেছি, কেননা ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি এবং অ্যান্টিম্যাটারের সৃষ্টিকে এই তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। বেরিয়নসূচক পদ্ধতি, হায়ারার্কি সমস্যা, নিউট্রিনো স্পন্দন, সবল সিপি প্রতিসাম্য সমস্যাসহ আরো অনেক কিছুই আছে, যেখানে স্ট্যান্ডার্ড মডেল ব্যর্থ হয়ে পড়ে।


তত্ত্বের সীমাবদ্ধতার কথা পরে বলব, আগে তত্ত্বটির ভালো দিকগুলির কথায় জানা যাক! প্রকৃতিতে প্রাপ্ত মৌলিক বল ৪টি। বিজ্ঞানীরা নতুন আরেকটি মৌলিক বলের দাবি করলেও সেটা এখনও চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়নি। ৪টি মৌলিক বলের মাঝে ৩টি মৌলিক বলেরই কোয়ান্টাম তত্ত্ব গঠন করতে পারে এই স্ট্যান্ডার্ড মডেল। মহাকর্ষ বল বাদে অন্য সব বলগুলোকে একীভূত করার কৃতিত্বও তাই এই মডেলের।

কণিকার স্ট্যান্ডার্ড মডেল 


সবল নিউক্লীয় বলঃ

আমরা জানি সবল নিউক্লীয় বলের কারণেই নিউক্লিয়াসের স্থায়ীত্ব রয়েছে। নিউক্লিয়াসের মাঝে প্রোটন ও নিউট্রনের একত্রে থাকার মূল রহস্য সবল নিউক্লীয় আকর্ষণ বল। স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে সবল নিউক্লীয় বলের জন্য দায়ী কণা হল গ্লুওন নামক একটি বলবাহক কণা। এই গ্লুওন মূলত গ্লুওন ক্ষেত্র নামক একটি ক্ষেত্র তৈরি করে, যে ক্ষেত্রে কোয়ার্ক নামক একপ্রকার কণা গ্লুওন কণাকে বিনিময়ের মাধ্যমে একত্রে থেকে প্রোটন ও নিউট্রনের সৃষ্টি করে। এই প্রোটন ও নিউট্রন আবার বিভিন্ন মেসন কণা দ্বারা আবদ্ধ থাকে। গ্লুওনের কাজ হল মেসনসহ সকল নিউক্লিওনকে বেঁধে রাখা। স্ট্যান্ডার্ড মডেলে মোট ১৮ রকমের কোয়ার্ক ও ৮ রকমের গ্লুওন কণা আছে, যাদের কালার নামক একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের যে অংশে সবল নিউক্লীয় বলকে ব্যাখ্যা করা হয় তাকে কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইন্যামিক্স বলে। এই "ক্রোমো" শব্দটি "Color" শব্দ থেকে এসেছে। এটি সংক্ষেপে QCD (Quantum ChromoDynamics) নামেও পরিচিত।


দুর্বল নিউক্লীয় বলঃ

স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে লেপটন নামক বিশেষ এক শ্রেণির কণা রয়েছে। এই লেপটনদের স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা সবসময় ভগ্নাংশ হয়, আর এরা পাউলির বর্জন নীতি মেনে চলে। দুর্বল নিউক্লীয় বল এই লেপটন কণাদের আচরণ থেকেই বের হয়ে আসে। তবে দুর্বল নিউক্লীয় বলের জন্য দায়ী কণা বা বলবাহক কণা হল W এবং Z কণা। ২ প্রকারের W কণা (W+ ও W-) ও ১ প্রকারের Z কণা রয়েছে। গ্লুওনের মত এরাও বোসন শ্রেণির কণা। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের এই অংশকে বলা হয় কোয়ান্টাম ফ্লেভারোডাইন্যামিক্স, যা সংক্ষেপে QFD (Quantum FlavourDynamics) নামেও পরিচিত।


তড়িচ্চুম্বকীয় বলঃ 

ম্যাক্সওয়েল সাহেবের তড়িচ্চুম্বকীয় বলকেও এই স্ট্যান্ডার্ড মডেল অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই বলের জন্য দায়ী কোয়ান্টা হল ফোটন নামক এক প্রকার কণা। এটিও বলবাহক কণা। এই তত্ত্ব সবচেয়ে বেশিবার পরীক্ষিত তত্ত্ব ও সবচেয়ে সফল তত্ত্ব। চিরায়ত বলবিদ্যার (classical mechanics) এই তত্ত্বকে কোয়ান্টায়িত করার কৃতিত্ত্ব স্ট্যান্ডার্ড মডেলরই। এই অংশকে বলা হয় কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইন্যামিক্স বা QED (Quantum ElectroDynamics)

এভাবেই তিনটি বলকে একীভূত করেছে স্ট্যান্ডার্ড মডেল। এই মডেল যদিও মহাকর্ষ বলকে একীভূত করতে পারেনি, তবুও গ্র্যাভিটন নামক একটি কল্পিত কণা ধরে নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মাধ্যমেই মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চলছে। গ্র্যাভিটন কণাকে এই মডেলের আওতায় নিয়ে আসা যায়, যা এখনও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যান্য প্রায় সকল কণা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে গ্র্যাভিটনের মতো স্ট্যান্ডার্ড মডেল কর্তৃক কল্পিত কণার সংখ্যাও কম নয়। তারপরেও এই মডেলকে এতটা সফল বলা যায় কারণ,  ১৯৬০ থেকে '৭০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা এই মডেল নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করতেন তাই মিলে যেত। শক্তিশালী কোলাইডার বা এ্যাটম স্ম্যাশারগুলো এবং ক্লাউড চেম্বারে কণার গতিপথ থেকে এই মডেলের সত্যতা প্রমাণ করা যায়।

মূল কথা হল, এই মডেল প্রায় সকল প্রকার পদার্থেরই গঠন ও বলগত মিথষ্ক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। ম্যাক্সওয়েল ও ইয়াং মিলস ফিল্ডের সাহায্যে এই মডেল কাজ করে থাকে। তবে বিজ্ঞানী ক্লেইন ও কালুজা তাদের তত্ত্বে উচ্চ মাত্রা ব্যবহার করে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব ও মহাকর্ষকে একীভূত করার একটি উপায় দিয়েছিলেন। যেহেতু স্ট্যান্ডার্ড মডেল ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে পারে, তাই আমরা আশা রাখতেই পারি যে স্ট্যান্ডার্ড মডেল অদূর ভবিষ্যতে মহাকর্ষ বলকেও ব্যাখ্যা করতে পারবে।

শুধু এটুকু পড়ে তৃপ্তি না পেলে ঢুঁ মেরে আসুনঃ
☛ স্ট্যান্ডার্ড মডেলের একটু গভীরে

সূত্র:
১. সার্ন
২। উইকিপিডিয়া 
Category: articles

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বৃহস্পতিকে আরেকটু হলেই গ্রহ না বলে নক্ষত্র বলা যেত। কেননা একটি নক্ষত্রের জীবন চক্রের অধিকাংশ সময় ধরেই মূল উপাদান হিসেবে থাকে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। আমাদের সূর্যের  কথাই ধরুন। এতে হাইড্রোজেনের পরিমাণ ৭৫ ভাগ এবং হিলিয়াম আছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর এদিকে সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো গ্রহ, গ্রহ রাজ বৃহস্পতিরও প্রধান উপাদান কিন্তু এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামই।

এর ফলে একে কেউ ছোটখাটো নক্ষত্র বলে ভেবে ভুল করে বসলে মাফ করে দেওয়াই উচিত। তবে গ্রহদের মধ্যে এর ভর সবচেয়ে বেশি হলেও সেটা নক্ষত্রের মতো আচরণ করার মতো যথেষ্ট নয়। ফলে, এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানিয়ে নিজস্ব আলো তৈরি করতে পারছে না।

আর পড়ুনঃ 
☛ নক্ষত্রের পরিচয়
☛ গ্রহ কাকে বলে? 


বৃহস্পতির পৃষ্ঠঃ
বৃহস্পতি (Jupiter) হল সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে অন্যতম গ্যাস জায়ান্ট। এটা বলে এতটুকু ভুলও করা হয় না আসলে। আপনি যদি প্যারাশ্যুটে ভর করে বৃহস্পতির পৃষ্ঠে অবতরণ করার ধান্দায় থাকেন, তবে সে আশা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। গ্রহটিতে কোনো শক্ত পৃষ্ট নেই। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ৯০ ভাগ হল হাইড্রোজেন। বাকি দশ ভাগের প্রায় পুরোটাই হিলিয়াম দিয়ে ভর্তি। পাশাপাশি অন্য কিছু গ্যাসও আছে এতে।

এই গ্যাসগুলো ক্রমানুসারে একটির উপর একটি স্তর স্তরে সজ্জিত আছে। গ্রহটিতে শক্ত পৃষ্ঠ নেই বলে এর যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর চাপের সমান সেই অঞ্চলকে পৃষ্ঠ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই বিন্দুতে গ্রহটির অভিকর্ষ পৃথিবীর প্রায় আড়াই গুণ।

এই পৃষ্ঠে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করা একেবারেই অবাস্তব। কেননা এই অঞ্চলও আসলে গ্যাসেরই আরেকটি স্তর। কোনো যান বা নভোচারী এতে অবতরণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে গ্যাসের মেঘ পাড়ি দিয়ে শেষ পরিণতি হবে গ্রহটির একেবারে কেন্দ্রমণ্ডলে।

বৃহস্পতির কেন্দ্রেঃ
বৃহস্পতির কেন্দ্র সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। বিজ্ঞানীদের ধারণা ঘন কেন্দ্রমণ্ডলের চারপাশে হয়তবা ধাতব হাইড্রোজেন থাকতে পারে। এর উপরের থাকতে পারে আণবিক হাইড্রোজেনের আরেকটি স্তর। গ্রহটির কেন্দ্রমণ্ডল কতটা শক্ত সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। কেন্দ্রভাগের আনুমানিক তাপমাত্রা ৩৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

১৯৯০ এর দশকের আগে বৃহস্পতির কেন্দ্রমণ্ডল নিয়ে আলোচনাই শুরু হয়নি। সেই সময় মহাকর্ষীয় চলাচল থেকে দেখা যায় গ্রহটির কেন্দ্রের ভর পৃথিবীর ভরের ১২ থেকে ৪৫ গুণ হতে পারে। তবে আবার অতীতে এর শক্ত কেন্দ্রমণ্ডল ছিল- এ কথা থেকে কিন্তু প্রমাণ হয় না যে এখনো তা টিকে আছে। সম্প্রতি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এর কেন্দ্রমণ্ডল খুব সম্ভব গলে যাচ্ছে।

বৃহস্পতির উপাদান 

নক্ষত্রের মতো হলেও ঠিক নক্ষত্র নয়ঃ
সূর্যের মতোই বৃহস্পতিরও প্রধান উপাদান হল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। কিন্তু এতে এই উপাদানগুলোর ঘাটতি থাকায় সূর্যের মতো ফিউশান বিক্রিয়া শুরু হতে পারেনি। তা হতে হলে একে বর্তমানের তুলনায় আরো ৭৫ থেকে ৮০ গুণ বেশি ভারী হতে হত। সৌরজগতের বাকি সবগুলোর ভরও যদি একে দিয়ে দেওয়া হয়, তবু এর ঘাটতি পূরণ হবে না। কিন্তু তবু বাকি সবগুলো গ্রহের ভর যোগ করলেও বৃহস্পতির একার ভর হবে তার আড়াই গুণ।

আরো পড়ুনঃ
এক নজরে সূর্য 
এক নজরে বৃহস্পতি

সূত্রঃ
১। http://www.space.com/18388-what-is-jupiter-made-of.html
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sun#Composition
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর। ১৯০১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইতালীয় পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি।

তিনি তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণভিত্তিক পদার্থবিদ্যা- এই দুটোতেই সমানে অবদান রেখে গেছেন। বর্তমান যুগে যেখানে একের অধিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা কঠিন, তাতে তাঁর এই অবদান তাঁকে একটু বিশেষভাবে নজরে আনার জন্যে যথেষ্ট। নিউক্লীয় চুল্লির (nuclear reactor) উন্নতি সাধনের জন্যে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এছাড়াও তিনি মাথা কাজে খাটিয়েছেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব, কণা পদার্থবিদ্যা ও পরিসংখ্যান বলবিদ্যায়ও। ১৯৩৮ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি 

১৯০১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি ইতালির রোম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আলবার্তো ফার্মি ছিলেন দেশের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিদর্শক। ছোট বেলায় যোগ দেন স্থানীয় গ্রামার স্কুলে। অল্প বয়স থেকেই গণিতের প্রতি অনুভব করতেন তীব্র ভালোবাসা। এতে ঘি ঢেলে দেন তাঁর পিতার এক সহকর্মী। ১৯১৮ সালেই ইতালির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এসএনএস থেকে ফেলোশিপ লাভ করেন। এটি বর্তমানেও ইতালির এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২২ সালে এখান থেকে পদার্থবিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে বের হন।

এর অল্প কয় দিন পরেই, ১৯২৩ সালে ইতালীয় সরকারের পক্ষ থেকে বৃত্তি অর্জন করেন। কয়েক মাস সময় কাটান আরেক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ম্যাক্স বর্ন এর সাথে। ১৯২৪ সালে রকফেলার ফেলোশিপ নিয়ে চলে আসে লেইডেন (হল্যান্ড)। কাজ করেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ পল এহরেনফেস্ট এর সঙ্গে। সে বছরই আবার ফিরে আসেন ইতালিতে, যোগ দেন ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক পদার্থবিদ্যা ও বলবিদ্যার প্রভাষক হিসেবে।

১৯২৬ সালে তিনি পরিসংখ্যানের একটি সূত্র আবিষ্কার করেন, যা বর্তমানে 'ফার্মি পরিসংখ্যান' নামে পরিচিত। যেসব কণিকা পাউলির বর্জন নীতি (Pauli's exclusion principle) মেনে চলে তাদের জন্যে প্রযোজ্য তাঁর এই সূত্র। তাঁর নাম থেকেই বর্তমানে এই কণিকাদের নাম হয়েছে ফার্মিয়ন। এরা হল বোসন কণিকাদের বিপরীত, যারা মেনে চলে বোস- আইনস্টাইন পরিসংখ্যান।

পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯২৭ সালে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক মনোনীত হন। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এই পদটি ধরে রাখেন তিনি। সে বছরই নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন, আর ইতালির একনায়ক মুসোলিনির হাত থেকে বাঁচতে রোম ছেড়ে চলে আসেন আমেরিকা।

রোমে থাকার সময় তড়িৎগতিবিদ্যার বিভিন্ন সমস্যা ও বর্ণালী বিষয়ক তাত্ত্বিক গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বহিঃস্থ ইলেকট্রনদের ছেড়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নজর দিয়েই পেয়ে গেলেন বিশেষ কিছু। ১৯৩৪ সালে বিটা ক্ষয় তত্ত্বের উন্নতি সাধন করলেন। এর মাধ্যমে পূর্বের বিকিরণ তত্ত্বের সাথে পাউলির নিউট্রিনোর ধারণার সেতুবন্ধন ঘটল। ১৯৩৪ সালে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের পর তিনি দেখান যে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করে যে কোনো নিউক্লিয়াসকে অন্য নিউক্লিয়াসে রূপান্তরিত করা যায়। এই ধারণার উপর ভর করেই একই বছর আবিষ্কৃত হয় ধীর নিউট্রন, যার ফলে পরে আবিষ্কৃত হয় নিউক্লিয়ার ফিসান বা ভাঙন (যেখানে একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে দুই বা তার অধিক নিউক্লিয়াস তৈরি হয়)। সে সময় পর্যন্ত পর্যায় সারণিতে যে মৌলগুলো ছিল তার বাইরেও মৌল তৈরি সম্ভব হয় এর ফলেই।

১৯৩৮ সালের দিকে তিনিই ছিলেন নিউট্রন সম্পর্কে সবচেয়ে বড় বিশেষজ্ঞ। আমেরিকা ফিরে এসেও তিনি এই বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখেন। এখানে এসে যোগ দেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে।

১৯৩৯ সালে হান ও স্ট্রাসম্যান ফিসান প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। এটা থেকে তাঁর মাথায় আসে কীভাবে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে চেইন বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া পরিচালনা করা যায়। পরমাণু বোমা তৈরির সময় বিভিন্ন সমস্যা সমধানেও তিনি কাজ করেন। তিনি ছিলেন ম্যানহাটন প্রোজেক্টের এক দল পদার্থবিদের অন্যতম নেতা, যেখানে নিউক্লীয় শক্তি ও পরমাণু বোমা নিয়ে কাজ হচ্ছিল। এসব অবদানের জন্যে তাঁকে নিউক্লীয় যুগ ও পরমাণু বোমার স্থপতি বলা হয়।

১৯৪৪ সালে তিনি আমেরিকার নাগরকিত্ব লাভ করেন। যুদ্ধের পর (১৯৪৬ সালে) শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। ১৯৫৪ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এখানেই থাকেন। এখানে তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল উচ্চ- শক্তির পদার্থবিদ্যা। এছাড়াও তিনি পাইওন- নিউক্লিয়ন গবেষণায়ও নেতৃত্ব প্রদান করেন।

জীবনের শেষের দিনগুলো ব্যয় করেন মহাজাগতিক রশ্মির রহস্যময় উৎস নিয়ে। প্রস্তুত করেন একটি তত্ত্ব।

সব মিলিয়ে তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণভিত্তিক পদার্থবিদ্যার উপর অনেকগুলো গবেষণাপত্র লেখেন তিনি। প্রভাষক হিসেবে তাঁর চাহিদা সব সময়ই ছিল বেশি। মিশিগান, স্ট্যানফোর্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি বিভিন্ন কোর্স নিতেন।

১৯২৮ সালে তিনি লরাকে বিয়ে করেন। তাঁদের গিওলিও নামে একটি ছেলে ও নেলা নাম্নী একটি মেয়ে ছিল। হাঁটাহাঁটি, পাহাড়ে চড়া ও শীতকালের বিভিন খেলাধুলা ছিল তাঁর অবসরের প্রিয় কাজের মধ্যে অন্যতম।
১৯৫৪ সালের ২৮ নভেম্বর তারিখে তিনি এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান পরপারের উদ্দেশ্যে।

তথ্য সূত্রঃ
১। http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/1938/fermi-bio.html
২। http://www.famousscientists.org/enrico-fermi/

Category: articles

বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সূর্যোদয়  

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন প্রতি ৯২ মিনিটে পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে। এর ফলে এটি দিনে ১৬ বার করে 'সূর্যোদয়' ও 'সূর্যাস্ত' দেখে। নিচের পৃথিবীকে অন্ধকার দেখা যাচ্ছে, কারণ মহাকাশ স্টেশন উপরে থাকায় আগেই সূর্যোদয় দেখে ফেলেছে। 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন হল পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা সবচেয়ে বড় কৃত্রিম উপগ্রহ। পৃথিবী থেকে এর উচ্চতা ৩৩০ থেকে ৪৩৫ কিলোমিটারের (২০৫ থেকে ২৭০ মাইল) মধ্যে থাকে। একে কক্ষপথে পাঠানো হয় ১৯৯৮ সালে। 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন
Category: articles

শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২৪ সেপ্টেম্বর। ১৯৩০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদের বুকে অবতরণ করা অন্যতম মার্কিন নভোচারী জন ইয়ং। আজ তাঁর ৮৫ তম জন্মবার্ষিকী।

অ্যাপোলো- ১০ অভিযানের সময় ইয়ং 

১৯৬৯ সালের অ্যাপোলো- ১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনের চাঁদে অবতরণ নিয়ে নানান মুখরোচক গল্প ও বিতর্ক আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে। এই বিতার্কিকদের খুব বড়সড় একটা অংশ এটা মনেই রাখেন না যে এই দু'জন ছাড়াও '৬৯ পরবর্তী ৩ বছরে আরও পাঁচটি অ্যাপোলো মিশনে উপরের দুইজন ছাড়াও আরও ১০জন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি চাঁদের বুকে পা রেখেছেন এবং লুনার রোভারও চালিয়েছেন।

ঠিক তেমন একজন ব্যক্তি হলেন অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান নভোচারী ক্যাপ্টেন জন ইয়ং। তিনি নবম ব্যক্তি হিসেবে ১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল চাঁদে অবতরণ করেন। তিনদিন চাঁদের বুক চষে তিনি এবং তাঁর টিম ৯৫.৭১ কে.জি. নমুনা সংগ্রহ করে ২৪ এপ্রিল তারিখে চাঁদের বুক ত্যাগ করে চাঁদের কক্ষপথে ফিরে আসেন। অ্যাপোলো- ১৬ এর এই অভিযানে তিনি ছিলেন মিশন কমান্ডার। এই মহান ব্যক্তি তাঁর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ছিলেন একাধারে নৌ-অফিসার, নভোচারী, বিমান প্রশিক্ষক ও অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

তাঁর নামের আগে ঘটা করে "মহান" বলার কিঞ্চিৎ রহস্য আছে। কারণ তিনি অনেক দিক থেকেই পৃথিবীর মানুষদের মাঝে প্রথম এবং একমাত্র! চলুন সংক্ষেপে তার ছোট্ট (!) ক্যারিয়ার থেকে একটু ঢুঁ মেরে আসি।

নৌবাহিনীতে চাকরীর শেষভাগে এসে ক্যাপ্টেন জন ইয়ং ১৯৬২ সালে নাসায় যোগ দেন। এ সময় তিনি "অ্যাস্ট্রোনাট গ্রুপ-২" এ ছিলেন, যেখানে নিল আর্মস্ট্রংও একই গ্রুপের অধীন ছিলেন। পরবর্তীতে ইয়ং ১৯৬৫ সালে "প্রথম" মনুষ্যবাহী অভিযান জেমিনাই মিশনে অংশ নেন এবং তার পরের বছরের "জেমিনাই মিশনের" কমান্ডার হন। এবারও আরেকদিক থেকে তিনি "প্রথম" হলেন। এবার তিনি অভিযুক্ত হলেন "প্রথম স্পেস স্মাগলার" হিসেবে!! মজার ঘটনা হল, সেবার তিনি ভুট্টা আর মাংসের তৈরী একটা স্যান্ডুইচ স্মাগলিং করেছিলেন। এজন্য অবশ্য তাকে কম মূল্য দিতে হয়নি। ফলস্বরূপ পরবর্তী কয়েকটি ফ্লাইটে তিনি আর অংশ নিতে পারেননি।

নাসা অবশ্য চতুর এই পাইলটকে নিয়ে কী করা যায় যে ব্যাপারে খুবই চিন্তিত ছিল। কারণ তিনি অন্যদের তুলনায় ছিলেন অনেক মেধাবী এবং সাহসী। তাই তাঁকে আবারও স্পেস প্রোগ্রামের আওতায় আনা হল, তবে কিছুদিন পর।

এবার ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো- ১০ মিশনে তিনি অংশ নেন এবং "প্রথম" ব্যক্তি হিসেবে একা চাঁদের কক্ষপথ আবর্তন করেন। ১৯৬৯ সালের ২৬ মে তারিখে পৃথিবীতে ফেরার সময় ইয়ং এর অ্যাপোলো- ১০ অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে (ঘন্টায় প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার বেগে) ছুটে চলে আরও একটি রেকর্ড করে। এবং এটাই ছিল মনুষ্যবাহী যে- কোনো যানের পক্ষে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলা।

পরবর্তীতে ইয়ং ১৯৭২ সালের অ্যাপোলো- ১৬ মিশনে অংশ নেন। এ সময় তিনি মিশন কমান্ডার ছিলেন। তিনি এবং তাঁর দল ১৯ এপ্রিল চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেন এবং ২১ এপ্রিল তিনি নবম ব্যক্তি হিসেবে চাঁদে অবতরণ করেন। এরই সাথে এবারই প্রথমবারের মত তিনি চাঁদের বুকে পা রাখেন। ২১ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এবং ডিউক  চাঁদের বুকে ৭১ ঘন্টা থাকেন।

এর মাঝে প্রথম দিন ৭ঘন্টা ১১মিনিট ২ সেকেন্ড , দ্বিতীয় দিন ৭ঘন্টা ২৩ মিনিট ৯ সেকেন্ড এবং তৃতীয় দিন ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৩ সেকেন্ড সহ তিন দিনে মোট ২০ ঘন্টা ১৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ড তাঁরা চাঁদের বুকে হেঁটে বেড়ান। এসময় ইয়াং চাঁদের বুকে "লুনার রোভিং ভেহিকল" নামক চন্দ্রযানও চালান। এই চন্দ্রযান দিয়ে তিনি চাঁদের বুকে ২৬.৭ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘুরেও বেড়ান। চাঁদ থেকে ফেরার সময় তিনি এবং তার সহযোগী ডিউক মিলে পৃথিবীর জন্য ৯৫.৮ কে.জি. চাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।

ক্যাপ্টেন জন ইয়ং সেই তিনজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তির মাঝে একজন , যাঁরা দুবারের মত চাঁদ-ভ্রমণ করেন। পরবর্তীতে ইয়ং ১৯৮১ সালে "স্পেস শাটল"এর প্রথম যাত্রাসহ দুইবার "স্পেস শাটল ফ্লাইট" এর কমান্ডার ছিলেন।

১৯৭৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন "অ্যাস্ট্রোনাট অফিস" এর প্রধান। তিনি ২০০৪ সালে নাসা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৪২ বছর নাসাতে কর্মরত অবস্থায় তিনি ছয়টি স্পেস ফ্লাইটে অংশ নেন এবং তিনিই "একমাত্র" নভোচারী যিনি এত্তবছর যাবত নাসায় সক্রিয় ভাবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি আরও অনেকদিক থেকেই একমাত্র! যেমন, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যার নভোচারী এবং কমান্ডার হিসেবে চারটি ভিন্ন ধরণের মহাকাশযান (১. জেমিনাই, ২. অ্যাপোলো কমান্ড/ সার্ভিস মডিউল, ৩. এপোলো লুনার মডিউল এবং ৪. স্পেস শাটল) চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।

দীর্ঘ ৪২ বছর নাসায় কাজ করে ২০০৪ এর ডিসেম্বরের শেষ দিন তিনি অবসর নেন। ২০১২ সালে তিনি তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ফরএভার ইয়ং প্রকাশ করেন।

তথ্যসূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/John_Young_(astronaut)
২। http://www.space.com/20690-john-young-astronaut-biography.html
Category: articles

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

রাতের আকাশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তারাহল ধ্রুবতারা। এটি সব সময় উত্তর দিক বরাবর অবস্থান করে। যে অঞ্চলের অক্ষাংশ যত ডিগ্রি, এটি উত্তর দিগন্ত থেকে ঠিক ততটা উপরে অবস্থান করে। অন্য তারাদের মতো পশ্চিম দিকে যেতে থাকে না। বরং, অন্য তারাদের দেখে মনে হয়, ওরা সবাই একে কেন্দ্র করে ঘুরছে। 

ধ্রুবতারা খুঁজে পাবার উপায়ঃ
উত্তর আকাশের খুবই পরিচত তারামণ্ডলী হল সপ্তর্ষীমণ্ডলী। এর প্রধান উজ্জ্বল সাতটি তারার বাইরের দিকের দুটি নির্দেশক তারাকে যুক্ত করে প্রাপ্ত রেখাকে সামনের দিকে ছয়গুণ বাড়িয়ে দিলেই পাওয়া যাবে ধ্রুবতারা। 
এর বিষুব লম্ব +৮৯ ডিগ্র ১৬ সেকেন্ড, যার অর্থ এটি প্রায় উত্তর মেরুর বরাবর উপরে অবস্থান করছে। 
আরো পড়ুনঃ 



যেহেতু এটি সব সময় উত্তর দিকেই থাকে, তাই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ন্যাভিগেশনাল তারা। 
আরো পড়ুনঃ


এটি স্থির থাকে কেন? এটা বিস্তারিত বুঝতে হলে পড়ুনঃ

অনেকে একে শুকতারার সাথে গুলিয়ে ফেলেন। শুকতারা কিন্তু বাস্তবে কোনো তারা নয়। এটি হল শুক্র গ্রহ।ঋতুভেদে এটি থাকে পূর্ব বা পশ্চিমের যথাক্রমে ভোরের বা সন্ধ্যার আকাশে। 
আরো পড়ুনঃ 

Category: articles
আজ ২৩ সেপ্টেম্বর। ১৮৪৬ সালের এই দিনে আবিষ্কৃত হয় সৌরজগতের অষ্টম ও সর্বশেষ গ্রহ নেপচুন। এই গ্রহটিকে আবিষ্কার করা হয় গাণিতিক হিসাবের ভিত্তিতে। অন্য গ্রহদের তুলনায় এর আবিষ্কার হয়েছে দেরিতে। এর কারণ কী জানেন?

রাতের আকাশের ৫টি গ্রহ সহজেই খালি চোখে ধরা দেয়। এগুলোর সাথে মানুষের প্রাচীন কাল থেকেই পরিচয় ছিল। সপ্তম গ্রহ ইউরেনাসও খালি চোখে দেখা সম্ভব যদি আপনি জানেন আকাশের কোন অংশে তাকাতে হবে, আর আকাশ যদি হয় পরিষ্কার এবং জায়গাটা (যেখানে দাঁড়িয়ে দেখবেন) হয় আলোক দূষণ থেকে মুক্ত এবং বেশ অন্ধকার। কিন্তু নেপচুনকে শুধু টেলিস্কোপ দিয়েই দেখা সম্ভব। আর টেলিস্কোপ যেহেতু মাত্র কয়েকশো বছর আগে জন্ম নিয়েছে তাই নেপচুনের আবিষ্কারও হয়েছে তুলনামূলক দেরিতে। 
নেপচুন গ্রহের ছবি
ফরাসী গণিতবিদ অ্যালেক্সি বুভার (Alexis Bouvard) ইউরেনাসের কক্ষপথ সম্পর্কে অনেকগুলো বিস্তারিত নথি প্রকাশ করেন। এক সময় সবাই বুঝতে পারল, আমাদের সৌরজগতের আরো গভীরে কোনো একটি গ্রহ থাকা উচিত যা ইউরেনাসের কক্ষপথে নাক গলাচ্ছে। শুরু হলো হিসাব নিকাশ। কোথায় থাকতে পারে গ্রহটি?

দুজন জ্যোতির্বিদ স্বতন্ত্রভাবে প্রস্তাবিত ৮ম গ্রহটির গাণিতিক অবস্থান নির্ণয় করলেন। একজন ব্রিটেনের জন কাউচ অ্যাডামস। অপরজন ফরাসী জ্যোতির্বিদ উরবেই লা ভেরিয়ে। দুজনকেই সহকর্মীরা হতাশ করলেন। তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হল যে গাণিতিক হিসাব থেকে সত্যিই গ্রহ খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।

নেপচুন আবিষ্কারে ভূমিকা রাখা বিজ্ঞানীরা 

জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান গ্যালের কাছে লা ভেরিয়ের হিসাব খুব মনঃপুত হল। তিনি খুঁজে বের করে ফেললেন সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ। নেপচুনকে পাওয়া গেল লা ভেরিয়ের প্রস্তাবিত অবস্থানের ১ ডিগ্রির মধ্যে। জন অ্যাডামসের প্রস্তাবিত অবস্থান থেকে গ্রহটির বিচ্যুতি ছিল ১২ ডিগ্রি। এবার দুজনেই দাবী করলেন, তিনিই প্রথম একে আবিষ্কার করেছেন। এটা নিয়ে সমগ্র বিজ্ঞান বিশ্বে তুমুল বিতর্ক হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কের প্রধান দুই পক্ষ ছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। কাকে দেওয়া উচিত নেপচুন আবিষ্কারকের খেতাব- অ্যাডামস নাকি ভেরিয়ে? আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান মহল দুজনকেই খেতাব দেয়ার পক্ষ দিলেন। ফলে, এখন তাই করা হয়। নেপচুনের আবিষ্কারক তাই দুজন- জন অ্যাডামস ও লা ভেরিয়ে। আবিষ্কারের সাল ১৮৪৬।

এখন পর্যন্ত নেপচুন গ্রহের কাছে পৌঁছতে পারা একমাত্র মহাকাশযান ভয়েজার ২, যা ১৯৮৯ সালে এর পাশ দিয়ে চলে যায়।  
বিভিন্ন গ্রহের তুলনামূলক সাইজ

সূত্রঃ
২। ইংরেজি উইকিপিডিয়াঃ ফরাসী উচ্চারণ
৩। http://earthsky.org/human-world/today-in-science-discovery-of-neptune
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২২ সেপ্টেম্বর। ১৭৯১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইংরেজ পদার্থবিদ মাইকেল ফ্যারাডে।

বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটা সময় ছিল যখন বিজ্ঞান শিক্ষা বা বিজ্ঞান চর্চা শুধু অভিজাত পরিবারের সন্তানদের জন্যই বরাদ্দ থাকত। নিম্নবিত্ত- দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা বিজ্ঞানচর্চায় অংশ নিতে পারত না। মাইকেল ফ্যারাডে সেই সময়ের একজন বিজ্ঞানী। তিনিও উঠে এসেছিলেন খুব দরিদ্র একটি পরিবার থেকে। তবুও তিনি সকল প্রতিকূলতা জয় করে হয়েছিলেন একাধারে জগদ্বিখ্যাত ব্যবহারিক পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং প্রকৃতি বিষয়ক দার্শনিক। তাঁর নামানুসারেই বৈদ্যুতিক ধারকত্বের এককের নাম রাখা হয়েছে ফ্যারাডে, যা F প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।


১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মাইকেল ফ্যারাডে বর্তমান যুক্তরাজ্যর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জেমস- মার্গারেট দম্পতির তৃতীয় সন্তান ছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কামার এবং মা ছিলেন গৃহকর্মী। মোটকথা, মাইকেল ফ্যারাডের পরিবার নিম্নবিত্ত দরিদ্র জীবন-যাপন করত।

মাইকেল ফ্যারাডে তার গ্রামেরই একটি স্কুলে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এই স্কুল থেকেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্যের কারণে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে একটি বইয়ের দোকানে বই পৌঁছে দেবার কাজ শুরু করেন। এই কাজে ফ্যারাডের কঠোর পরিশ্রম আর মনোযোগ দেখে বই এর দোকানের মালিক ফ্যারাডের উপর অনেক খুশি হন। এর ফলে তিনি ডেলিভারি বয় এর কাজ থেকে বাদ দিয়ে ফ্যারাডেকে বই বাঁধাই এর কাজ শেখার সুযোগ দেন। ফ্যারাডের বাল্যকাল শিক্ষানবীশ বই বাঁধাইকারী হিসেবেই শেষ হয়।


বিজ্ঞানের ছোঁয়াঃ

মাইকেল ফ্যারাডে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দিলেও পৃথিবী ও প্রকৃতি সম্পর্কে কৌতুহল ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। দিনের পুরোটা সময় শুধু বই বাঁধাই করেই কাটাতেন না তিনি, সাথে সাথে যে বইগুলো বাঁধাই করতেন তা পড়েও ফেলতেন। ফ্যারাডে ধীরে ধীরে বুঝতে পারলেন যে, অন্য বইগুলোর চাইতে বিজ্ঞান সম্পর্কিত বইগুলো পড়তে বেশি ভালো লাগছে। কথিত আছে, ফ্যারাডের বই এর দোকানে এমন দু'টি বই আসে যা ফ্যারাডের অনেক ভালো লেগেছিল। বই দু'টি হল-

১। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বিশ্বকোষ (The Encyclopedia Britannica)- ফ্যারাডের তড়িৎ সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান এই বই থেকেই আসে।
২। Conversations on Chemistry (রসায়নের সহজ পাঠ)- সবার বোধগম্য করে জেন মাসেঁ কর্তৃক লিখিত রসায়নের একটি বই।

মাইকেল ফ্যারাডে এসব বই পড়ে দারুণ মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে বই এর দোকানে কাজ করে যা সামান্য মাইনে পেতেন, তার অধিকাংশই তিনি বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও যন্ত্রপাতির পেছনে খরচ করে ফেলতেন। এসব দ্রব্য ও যন্ত্রপাতি কিনে মাইকেল ফ্যারাডে তার অবসর সময়ে পরীক্ষা করে দেখতেন যে, তিনি বই পড়ে যা শিখছেন তা কি আসলেই কাজ করে না কি না। এইজন্য মুখস্থ শিক্ষার বিরুদ্ধে প্রায়োগিক শিক্ষার আন্দোলনে মাইকেল ফ্যারাডে একটা ভাল উদাহরণের নাম হতে পারে।

তিনি একদিন জানতে পারলেন যে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী জন ট্যাটাম প্রাকৃতিক দর্শনের (মূলত পদার্থবিজ্ঞানের) উপর জনসম্মুখে কয়েকটি ধারাবাহিক বক্তব্য প্রদান করবেন। এই বক্তব্য শুনতে হলে প্রবেশ ফি দিতে হবে ১ শিলিং, যা দরিদ্র ফ্যারাডের জন্য অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফ্যারাডের বড় ভাই, যিনিও বাবার মত একজন কামার ছিলেন, তিনি ফ্যারাডের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে ঐ ১ শিলিং মুদ্রা দিয়েছিলেন। এর ফলে ফ্যারাডে ট্যাটামের সেই বক্তব্য শোনার সুযোগ পেয়েছিলেন। মাইকেল ফ্যারাডে এভাবেই ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ করে ফেললেন।

স্যার হামফ্রে ডেভির সাথে পরিচয়: ফ্যারাডের নতুন জীবনঃ

উইলিয়াম ড্যান্স নামে ফ্যারাডের দোকানের এক খদ্দের ফ্যারাডের বিজ্ঞানভক্তির কথা জানতেন। তিনি একদিন ফ্যারাডেকে রয়েল ইন্সটিটিউশানে অনুষ্ঠিতব্য স্যার হামফ্রে ডেভির বক্তব্যর একটা টিকেট অফার করেন। স্যার হামফ্রে ডেভি ছিলেন তৎকালীন সময়ের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের একজন। ফ্যারাডে তাই এই অফার লুফে নিয়েছিলেন। স্যার হামফ্রে ডেভির সাথে পরিচয়ের পর ফ্যারাডের বিজ্ঞানচর্চা আরো একধাপ উপরে উঠেছিল।

ফ্যারাডে এই সুযোগে হামফ্রে ডেভির ৪ টি সেমিনারে অংশ নেন। এগুলোর বিষয় ছিল রসায়নবিদ্যার একটা নতুন সমস্যা। সমস্যাটি হল এসিডের সংজ্ঞায়ন নিয়ে। ফ্যারাডে পরীক্ষণ ভিত্তিক বিজ্ঞানের উপর প্রচন্ড দূর্বল ছিলেন। এ কারণেই পরবর্তীতে তাঁর নাম অন্যতম একজন সফল ব্যবহারিক বিজ্ঞানীদের নামের তালিকায় উঠে এসেছিল। মাইকেল ফ্যারাডে সেমিনারে যে নোটটি করেছিলেন তার সাথে অনেক তথ্য যোগ করে তিনি তার হাতে লেখা নোটটি বাঁধাই করেন। তিনি দেখেছিলেন যে ডেভি সেমিনারের মাঝে বিভিন্ন পরীক্ষণ সম্পন্ন করছিলেন। এই জন্য তিনি সেমিনারের শেষে উৎসাহিত হয়ে প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার বাঁধাই করা নোটটি বই এর মতো করে হামফ্রে ডেভিকে উপহারস্বরুপ পাঠিয়ে দেন।

ফ্যারাডে এই সময়ে পেশাদার পরীক্ষণগুলোও সম্পন্ন করতে শুরু করে দেন। তার দোকানের পেছনেই একটি স্থানে তিনি একটি ব্যাটারি তৈরি করেছিলেন, যাতে দস্তার পাত ও তামার মুদ্রা পরস্পর হতে আদ্র লবণাক্ত কাগজ দ্বারা পৃথক করা ছিল। ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের তড়িৎ বিশ্লেষণে তিনি তার এই ব্যাটারি ব্যবহার করতেন। ১৮১২ সাল পর্যন্ত ফ্যারাডে শিক্ষানবীশ হিসেবে সেই দোকানে কাজ করেন। তারপরেই ফ্যারাডের জীবনে আকস্মিক কিছু ঘটনা ও দুর্ঘটনা তাকে তাঁর নতুন জীবনে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।

স্যার হামফ্রে ডেভি ফ্যারাডের পাঠানো সেই বাঁধাই করা বইটা দেখে খুশি হয়েছিলেন। তিনি তখন থেকেই ফ্যারাডেকে চিনতেন। একদিন ডেভির ল্যাবরেটরিতে একটি পরীক্ষণ চলার সময় দুর্ভাগ্যবশত (ফ্যারাডের জন্য সৌভাগ্যবশত) একটি বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে ডেভি গুরুতর আঘাত পান। এর ফলে তিনি সাময়িকভাবে লেখালেখি করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। তাই তিনি ফ্যারাডেকে তার নোট করার জন্য কিছুদিনের জন্য ল্যাবরেটরিতে কাজ দেন। এই কাজের ফলে ডেভি ফ্যারাডের মেধা সম্পর্কে আরো ঘনিষ্টভাবে জানার সুযোগ পান। কিন্তু ডেভি সুস্থ হয়ে উঠলে ফ্যারাডেকে এই কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে দেয়া হয়।

কাজ শেষ করে ফ্যারাডে ডেভির ল্যাবরেটরিতে সহযোগী হিসেবে কাজ করার আবেদন করেছি্লেন। এই ঘটনার কিছু আগে বা পরে ডেভির ল্যাবরেটরির একজন সহযোগীকে অসদাচারণের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তাই ডেভি ফ্যারাডেকে জানিয়েছিল যে ফ্যারাডে চাইলে তিনি ডেভির ল্যাবরেটরিতে কেমিক্যাল সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারেন।

ফ্যারাডেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তিনি কাজটা নিতে চান কি না। রয়েল ইন্সটিটিউশানে পৃথিবীবিখ্যাত একজন বিজ্ঞানীর সাথে কি তিনি কাজ করতে চান? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর 'হ্যাঁ' ছাড়া আর কিইবা হতে পারে! এই 'হ্যাঁ' এর মাধ্যমেই শুরু হল মাইকেল ফ্যারাডের নতুন জীবন।


রয়েল ইন্সটিটিউশানে ক্যারিয়ারঃ 

মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৮১৩ সালের ১ মার্চ ফ্যারাডে রয়্যাল ইন্সটিটিউশানে কাজ শুরু করেন। এখানে ফ্যরাডে পূর্বাপেক্ষা ভালোই বেতন পেতেন। রয়েল ইন্সটিটিউশান সংলগ্ন একটা চিলেকোঠায় তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফ্যারাডেকে নেয়া হয়েছিল ৫৪ বছরের চুক্তিতে। চুক্তি অনুসারে মেয়াদ শেষে ফ্যারাডে রসায়নের একজন অধ্যাপক হিসেবে বের হবার কথা।

যাই হোক, কেমিক্যাল সহযোগী হিসেবে ফ্যারাডে সেখানে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি তৈরি করতেন, যা রয়েল ইন্সটিটিউশানের বিভিন্ন প্রকার সেমিনার এবং পরীক্ষণে কাজে লাগত। সেখানে কাজ করার মাত্র ৭ মাসের মাথায় ডেভি ফ্যারাডেকে তার সেক্রেটারি হিসেবে দেড় বছরের লম্বা ভ্রমণে ইউরোপ নিয়ে যান। এই ভ্রমণে ফ্যারাডের সাথে পরিচয় ঘটে আন্দ্রে ম্যারি অ্যাম্পিয়ার এবং আলসান্দ্রো ভোল্টার সাথে। এদের নিকট হতে ফ্যারাডে তড়িৎ বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছিলেন।

এত কিছুর পরেও মাইকেল ফ্যারাডে ব্যক্তিগতভাবে সুখী ছিলেন না। স্যার হামফ্রে ডেভির স্ত্রী তাঁর সাথে ব্যক্তিগত চাকরের মত ব্যবহার করতেন এবং ফ্যারাডেকে ডেভির সমতুল্য ভাবতে অস্বীকার করতেন। এর কারণ হল, ফ্যারাডের নিম্নবর্গের এবং নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন। ইউরোপের ভ্রমণ শেষে লন্ডনে ফিরে এলে রয়েল ইন্সটিটিউশান কর্তৃপক্ষ মাইকেল ফ্যারাডের বেতন বৃদ্ধি করে দেয় এবং চুক্তি নবায়ন করে। স্যার হামফ্রে ডেভিও ফ্যারাডের মেধা ও যোগ্যতার সম্মান করতেন এবং তার অনেক রিসার্চ পেপারেই তিনি মাইকেল ফ্যারাডের ঋণ ও কৃতজ্ঞতা অকপটে স্বীকার গেছেন।


উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহঃ 

১৮১৬ সালে ২৪ বছর বয়সে মাইকেল ফ্যারাডে তাঁর প্রথম বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যর বিষয় ছিল পদার্থের বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্ম। এই বছরেই তিনি ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড নিয়ে তার একটি গবেষণাপত্র বের করেন, যা সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।

১৮২১ সালে যখন মাইকেল ফ্যারাডের বয়স মাত্র ২৯ বছর, সেই সময়েই তিনি রয়েল ইন্সটিটিউশানের আবাসিক ও ল্যাবরেটরির তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন। এই সময়ে তিনি সারাহ বার্নাড নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ফ্যারাডে আর রয়্যাল ইন্সটিটিউশানের সেই চিলেকোঠায় ছিলেন না, তিনি পার্শ্বস্থ একটি পাকা দালানবাড়িতে জীবনের বাকি সময়ের অধিকাংশই কাটিয়ে দেন।

১৮২৪ সালে ৩২ বছর বয়সে রয়্যাল সোসাইটির জন্য তিনি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এই সময়ই তিনি বিজ্ঞানীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেন। পরের বছরই তিনি রয়্যাল ইন্সটিটিউশান ল্যাবরেটরির পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ১৮৩৩ সালে তিনি ব্রিটেন রয়্যাল ইন্সটিটিউশানের রসায়ন অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। যদিও '৪৮ ও '৫৮ সালে দুইবার তাঁকে রয়্যাল সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব অফার করা হয়, তিনি সেই দায়িত্ব প্রত্যাখান করে রসায়নের অধ্যাপকের পদেই ফিরে যান। তাই মাইকেল ফ্যারাডে আমৃত্যু রয়েল ইন্সটিটিউশানের রসায়ন অধ্যাপকের পদে আসীন ছিলেন।


আবিস্কার ও উদ্ভাবনসমূহঃ 
১৮২১ সাল- তাড়িতচৌম্বকের যান্ত্রিক ক্রিয়া (মোটর)
১৮২৩ সাল- গ্যাস শীতলীকারক ও তরলীকারকের ধারণা দেন যার মূলনীতি ছিল মূলত ১৭৫৬ সালে উইলিয়াম কুলেনের দেয়া। ১৮৬২ সালে ফার্দিন্যান্ড ক্যাঁ ফ্যরাডের এই শীতলীকারক প্রদর্শন করেন।
১৮২৫ সাল- গ্যাসের তৈলাক্ত অবশেষ থেকে বেনজিন আবিস্কার
১৮৩১ সাল- তাড়িতচৌম্বকীয় আবেশ উদ্ভাবন (জেনারেটর)
১৮৩৪ সাল- তড়িৎ বিশ্লেষণ সম্পর্কিত ফ্যারাডের সুত্র।
১৮৪৫ সাল- ফ্যারাডে ইফেক্ট আবিস্কার (আলোক-চৌম্বক ক্রিয়া)
১৮৪৫ সাল- সকল পদার্থেরই মৌলিক ধর্ম হিসেবে ডায়াচৌম্বকত্ব আবিস্কার।

জীবনাবসানঃ
৭৫ বছর বয়সে ১৮৬৭ সালের ২৫ আগস্ট মাইকেল ফ্যারাডে মৃত্যুবরণ করেন। ফ্যারাডে- সারাহ দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। মাইকেল ফ্যারাডে জীবদ্দশায় একজন ধর্মপ্রাণ স্যান্ডাম্যানিয়ান খ্রিষ্টান ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বেই মাইকেল ফ্যারাডেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে তাকে সমাহিত করার। ব্রিটেনের রাজা- রাণী, আইজ্যাক নিউটন বা রাদারফোর্ডের মতো বিজ্ঞানীদের পাশে সমাহিত হবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফ্যারাডে তার স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত হবাত্র ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইংল্যান্ড গেলে লন্ডনের হাইগেট সিমেট্রির নিকটে মাইকেল ফ্যারাডে ও সারাহ বার্ণাডের কবর দেখতে পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্রঃ
১। শ্রেষ্ঠ আবিস্কার ও আবিস্কারকের গল্প by ইব্রাহীম খলিল।
২। http://famousscientists.org/michael-faraday
৩। http://en.wikipedia.org/wiki/Michael_Faraday
Category: articles

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

এ পর্যন্ত ১২ জন মানুষ চাঁদের বুকে হেঁটেছেন। আপনিও যদি তাদের মতো চাঁদে যেতে চান, তবে শীতের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা রাতে চাঁদের তাপমাত্রা নেমে আসে হিমাংকের ১৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। কিন্তু শুধু শীত থেকে বাঁচলেই চলবে না, গরম থেকে বাঁচারও প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা দিনের বেলায় চাঁদের তাপমাত্রা উঠে যেতে পারে ১০৭ ডিগ্রি (আরেকটি তথ্য মতে ১২৩ ডিগ্রি) পর্যন্ত।

চাঁদের বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা 

চাঁদের তাপমাত্রা এত বেশি উঠা- নামা করে কেন? এর কারণ হল, চাঁদে পৃথিবীর মতো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই। পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল কম্বলের মতো আচরণ করে। ধরে রাখে ভেতরে প্রবেশ করা উত্তাপ। সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভেতরে এসে ভূমিকে উত্তপ্ত করে। পৃথিবী সেই তাপ শক্তিকে অবলোহিত বিকিরণ (infrared radiation) আকারে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু এই বিকিরণ সহজে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে পৃথিবী উত্তপ্ত থাকে।

অবলোহিত বিকিরণ বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যেতে পারে না কেন? এর কারণ হল আমরা খালি চোখে যেসব আলো দেখি তার মধ্যে লাল রঙ এর আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি। আর অবলোহিত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য এর চেয়ে একটু বেশি। তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি হবার কারণে এর পক্ষে বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

চাঁদের সমস্যা আছে আরেকটিও। চাঁদ নিজের অক্ষের সাপেক্ষে একবার ঘুরতে ২৭ দিন সময় নেয়। ফলে চাঁদের কোনো জায়গা ১৩ দিনের কাছাকাছি সময় সূর্যের আলো পায়, বাকি সময়টা থাকে অন্ধকারে। সূর্যের আলো থাকার সময় চাঁদে যে তাপমাত্রা থাকে, তাতে সহজেই পানি বাষ্প হয়ে যাবে। আর সূর্য দিগন্তের নিচে তলিয়ে যাবার পর সাঁই করে তাপমাত্রা কমে যাবে ২৫০ ডিগ্রি।

আরো পড়ুনঃ
আবর্তন বনাম প্রদক্ষিণ
☛ চাঁদ কি আসলে আবর্তন করে?

ফলে চাঁদে যেতে হলে এমন পোশাক দরকার যাতে একই সাথে উত্তাপ তৈরির এবং শীতলীকরণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।

চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর কাছে কিছু খাদ আছে যারা অবিরাম ছায়ার মধ্যে থাকে, কখনো সূর্যের
মুখ দেখে না। এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা সব সময় মাইনাস ১৫৩ ডিগ্রিই থাকে। আবার এর আশেপাশেই এমন কিছু পাহাড় চূড়া আছে যারা অবিরাম সূর্যের আলো পেতেই থাকে।

রাতের আকাশে চাঁদকে কত নিরীহ দেখায়, অথচ এর তাপমাত্রা যে এত ভয়ানক হতে পারে তা কে ভেবছিল। 

আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?
☛ পূর্ণিমা হয় কীভাবে?

সূত্রঃ
1. http://www.space.com/18175-moon-temperature.html
2. http://www.universetoday.com/19623/temperature-of-the-moon/
3. http://www.livescience.com/50260-infrared-radiation.html
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আলডেরামিন নক্ষত্রটি সিফিয়াস তারামণ্ডলীতে অবস্থিত। এই তারামণ্ডলীটি খুব বেশি উজ্জ্বল নয়। তারামণ্ডলীটির অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল একমাত্র নক্ষত্র হল আলডেরামিন। এর অপর নাম হল আলফা সিফিয়াই। নক্ষত্রটি অনেক দ্রুত বেগে আবর্তন করে।

জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদরা অপটিক্যাল ইনটারফেরোমিটার ব্যবহার করে নক্ষত্রটির নতি, মেরু ও বিষুব ব্যাসার্ধ এবং তাপমাত্রা বের করেন। 

সিফিয়াস তারামণ্ডলির দেখতে ঘরের মতো, আমরা ছোটবেলায় দোচালা ঘরের যেরকম চিত্র আঁকতাম ঠিক তেমন।  আকাশের এক কোণে এর অনেকগুলো ম্লান তারকার মধ্যে আলডেরামিন একমাত্র ব্যতিক্রম। ফলে এই তারাটিকে চিনে নেওয়া খুব সহজ কাজ। এর তীব্র আবর্তন বেগের কারণেও এটি খুব পরিচিত।

আরো পড়ুনঃ 
নক্ষত্র কাকে বলে?
তারামণ্ডলীর পরিচয়
আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

আলডেরামিনকে খুঁজে পাবার উপায়ঃ
তারাটির অবস্থান উত্তর আকাশে। একে খুঁজে পেতে কাজে আসবে ইংরেজি W বা M অক্ষরের মতো (অবস্থানের উপর ভিত্তি করে দুই রকমের যে কোনো রকম হতে পারে) দেখতে আরেকটি তারামণ্ডলী ক্যাসিওপিয়া।

ঋতুভেদে ক্যাসিওপিয়াকে কখনো উত্তর-পূর্ব দিকে, কখনো বা উত্তর- পশ্চিম দিকে, আবার কখনো মাথার উপর থেকে একটু উত্তরের অবস্থানে সোজা উত্তর দিকে থাকবে।  নভেম্বর মাসের রাত নয়টার দিকে ক্যাসিওপিয়াকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। এ সময় এটি থাকে উত্তর দিগন্ত থেকে সোজা উপরের দিকে। তারামণ্ডলীটির প্রধান অংশ (ডাব্লিউ বা এম আকৃতি) (+৬৫) থেকে (+৫৫) ডিগ্রি  বিষুব লম্ব জুড়ে অবস্থিত।  সব মিলিয়ে বছরের শেষ অর্ধেকের দিনগুলো একে খুঁজে পেতে বেশি সহায়ক। আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসেও সন্ধ্যা নামার পরেই এটি উত্তর- পূর্ব দিগন্ত দিয়ে উঁকি দিতে শুরু করে। 

ইংরেজি এম বা ডাব্লিউ আকৃতির ক্যাসিওপিয়া ও সিফিয়াস মণ্ডলী ।
সহজে বোঝার জন্যে ছবিটিকে রোটেট করা হয়েছে। 

ক্যাসিওপিয়াকে আমরা সহজেই পেয়ে যাব। এবার কাজ হল একে কাজে লাগিয়ে সিফিয়াস ও আলডেরামিনকে বের করা। দেখুন, ক্যাসিওপিয়ার সবচেয়ে উজ্জ্বল উপরের তিনটি তারাকে দেখতে ইংরেজি ভি (V) অক্ষরের মত মনে হয়। এদের মধ্যে উপরের দুটি কাফ ও শেডার। শেডারকে কাফের সাথে যোগ করে সামনে চলে গেলেই পাওয়া যাবে আলডেরামিন। ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, পুরো সিফিয়াসকেও খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।


আলডেরামিনের বৈশিষ্ট্যঃ 
এটি একটি সাদা নক্ষত্র। একে এ শ্রেণীর (Class A) তারা মনে করা হয়। বর্তমানে এটি প্রধান ধারা থেকে সাবজায়ান্ট ধাপে রূপ নিচ্ছে। প্রধান ধারার (main sequence) নক্ষত্ররা হাইড্রোজেনের ফিউসান ঘটিয়ে হিলিয়াম উৎপন্ন করতে থাকে। আমাদের সূর্য একটি প্রধান ধারার নক্ষত্র। মনে করা হচ্ছে, আলডেরামিনের হাইড্রোজেন জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানবে পরিণত হবে।

নক্ষত্র বিশেষজ্ঞ জিম কেলারের মতে আলডেরামিনের দীপ্তি সূর্যের ১৮ গুণ। অন্য দিকে এটি আবার খুব জোরে ঘুরছে। এটি ১২ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে একবার নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে ফেলে, যেখানে কাজটি করতে আমাদের সূর্যের সময় লাগে প্রায় এক মাস।

আরো পড়ুনঃ 
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

জিম কেলার বলেন,
নক্ষত্রটির কাজের সাথে এই ঘূর্ণনের সম্পর্ক থাকতে পারে। আমাদের সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র খুব সক্রিয়। তবে 'এ শ্রেণী'র নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে চৌম্বকক্ষেত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু আলডেরামিন সূর্যের প্রায় সমপরিমাণ এক্সরে বিকিরণ নির্গত করছে। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থেকেও বোঝা যাচ্ছে এতে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র উপস্থিত। এর কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। 

তবে সিফিয়াসের আরো দুটি দানব নক্ষত্রের তুলনায় আলডেরামিন কিছুই নয়। এরা হল মিউ সিফিয়াই এবং ভিভি সিফিয়াই। এরা দুজনেই সুপারজায়ান্ট- মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বৃহত্তম এবং উজ্জ্বলতম গ্যালাক্সিদের দলের সদস্য। হাজার হাজার সূর্যকে মিলিত করলেও এদের উজ্জ্বলতার কাছে তা ম্লান হয়ে যাবে। অবশ্যই এখানে আমরা নক্ষত্রের প্রকৃত উজ্জ্বলতা দা দীপ্তির কথা বলছি। দূরে অবস্থিত বলেই এরা পৃথিবীর আকাশে সূর্যের কাছে হেরে যাচ্ছে।


এদের কোনো একটিকে যদি সূর্যের জায়গায় বসানো হয়, তবে এরা বৃহস্পতির কক্ষপথ পর্যন্ত জায়গা দখল করে ফেলবে। এরা এত দীপ্তিমান হয়েও রাতের আকাশে তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হবার কারণ হচ্ছে এরা পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে তুলনামূলকভাবে আলডেরামিন খুব কাছে অবস্থিত- মাত্র ৪৯ আলোকবর্ষ।

আরো পড়ুনঃ
☛ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে? 


ইতিহাসে আলডেরামিনঃ
অতীতে এক সময় এটি ধ্রুব তারা ছিল। অর্থ্যাৎ, তখন এর অবস্থান ছিল আমাদের বর্তমান ধ্রুবতারা পোলারিসের জায়গায়, প্রায় উত্তর দিক বরাবর। সর্বশেষ এ অবস্থা ছিল ১৮, ০০০ খৃষ্টপূর্ব সালে। আরো ৫,৫০০ বছর পরে এটি আবার ধ্রুবতারার স্থান দখল করবে। ৭৫০০ সালের দিকে এটি প্রকৃত উত্তর দিক থেকে তিন ডিগ্রি দূরে থাকবে। এর অর্থ, আমাদের পোলারিস এর চেয়ে ভালো ধ্রুবতারা।  পোলারিস প্রায় বরাবর উত্তর দিকেই থাকে। এর বিষুব লম্ব (+৮৯) ডিগ্রির বেশি দেখেই সেটা অনুমান করা যায়।  ২১০০ সালে পোলারিস প্রকৃত উত্তর থেকে মাত্র ০.৪৫ ডিগ্রি দূরে থাকবে।

নামকরণঃ
আলডেরামিন শব্দটি এসেছে আরবি আযযিরা আল ইয়ামিন (الذ راع اليمين) থেকে। এর অর্থ হল 'ডান বাহু'। সিফিয়াস মণ্ডলীর নাম রূপকথার একজন রাজার নামে দেওয়া। ডান বাহু বলতে সেই রাজার ডান বাহু বোঝানো হচ্ছে।


সংক্ষিপ্ত প্রোফাইলঃ 
আপাত উজ্জ্বলতাঃ + ২.৫
দূরত্বঃ ৪৯ আলোকবর্ষ
বিষুব লম্বঃ +৬২.৫ ডিগ্রি
নামঃ আলফা সিফিয়াই


সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/brightest-stars/alderamin-the-kings-brightest-star
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Alpha_Cephei
Category: articles

বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

এ মাসে শুক্র, মঙ্গল ও শনি আছে সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে। মাসের শেষের দিকে ভোরের পূর্ব আকাশে বুধ উপস্থিত হবে। একে উত্তর গোলার্ধের আকাশপ্রেমীরা বেশি সহজে দেখবেন।

☛ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে দৃশ্যমান সবগুলো গ্রহই সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে ছিল। এদের মধ্যে দুটোকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এরা হল বুধ ও বৃহস্পতি।

☛ বুধ ও বৃহস্পতি মাসের শেষের দিকে চলে যাবে ভোরের পূর্ব আকাশে। কারণ, এরা দিন দিন সূর্যের আগেই উদিত হচ্ছে এবং অস্ত যাচ্ছে। এ কারণেই সন্ধ্যার আকাশ থেকে ভোরের আকাশে চলে যাচ্ছে।

☛ বাকি তিনটি গ্রহ- মঙ্গল, শুক্র এবং শনি পুরো মাসজুড়েই থাকছে সন্ধ্যার আকাশে।

☛ অনেক দিন পর শুক্র গত মাস থেকে পশ্চিম আকাশে হাজির হয়েছে। তবে এখনো দিগন্তের খুব কাছে। ফলে সন্ধ্যার কিছু পরেই ডুবে যাচ্ছে পশ্চিম দিগন্ত থেকে।

সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে শুক্র 

☛ তবে আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে একে আর বেশ সময় ধরে পশ্চিম আকাশে দেখা যাবে।

☛ বৃহস্পতি মাসের শুরুতে পশ্চিম আকাশ থেকে হারিয়ে যাবার পর ভোরের পূর্ব আকাশে হাজির হবে অক্টোবরের কোনো এক সময়।

☛ মঙ্গল এখনো যথেষ্ট উজ্জ্বল, যদিও মে মাসের তুলনায় উজ্জ্বলতা কমেছে অনেকখানি।

☛ এর কাছাকাছিই আছে আরেক গ্রহ শনি। দুজনেই আছে উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্যেষ্ঠার কাছাকাছি।

বহু মাস ধরে মঙ্গল, শনি ও জ্যেষ্ঠ্যা খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে, অবস্থানের নড়চড় ঘটছে যদিও।  

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/astronomy-essentials/visible-planets-tonight-mars-jupiter-venus-saturn-mercury
Category: articles

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬


জুনো মহাকাশযানের ক্যামেরায় ধরা পড়া বৃহস্পতি গ্রহের দক্ষিণ মেরুর ছবি 

২০০০ সালের দিকে ক্যাসিনি মিশনের সময় মহাকাশযান ক্যাসিনিও যেটা পারেনি, ২০১৬ সালের ২৭ শে আগস্টে এসে মহাকাশযান জুনো সেটাই করে দেখাল!

কারণ, বৃহস্পতি নামক গ্যাস দৈত্যখানার (gas giant) দক্ষিণ মেরু দেখিতে পারে নাই কেহ এযাবতকাল পর্যন্ত এতখানি চক্ষু মেলিয়া! (গুরু-চণ্ডালী দোষ মাফ করবেন, আবেগ ধরে রাখতে পারিনি)

অবশেষে মহাকাশযান জুনো এতদিনের এই অসাধ্য সাধন করে দেখাল এবং বৃহস্পতির দক্ষিণ মেরুর খুব পরিষ্কার একটি ছবি আমাদেরকে উপহার দিল।

এ সময় মহাকাশযান জুনো বৃহস্পতির মেরু অঞ্চল থেকে মাত্র ৫৮ হাজার ৭০০ মাইল উপরে ছিল।

এরই মাধ্যমে এই প্রথম বৃহস্পতির দক্ষিণ মেরু অঞ্চল সম্পর্কে এত স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া গেল! বৃহস্পতির বিষুবীয় অঞ্চলে যেমন পরিচিত "বেল্ট" বা "জোন" এর অস্তিত্ব পাওয়া যায়, মেরু অঞ্চলে ঠিক তেমনটা থাকে না। এখানে বরং বিভিন্ন আকারের ছোটখাটো ঝড়ের দাগ খুঁজে পাওয়া যায়। এই ঝড়গুলোর কোনটা ঘড়ির কাঁটার দিকে আবার কোনটা ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে! এগুলো দেখতে অনেকটা পৃথিবীর "হ্যারিকেন" এর মত হয়।

২০০০ সালে মহাকাশযান ক্যাসিনি শনি গ্রহে যাবার পথে বৃহস্পতির মেরু অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অংশের ছবি তুলেছিলে। কিন্তু এতটা উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সেটি করা যায়নি।

সূত্রঃ
১। http://www.nasa.gov/image-feature/jpl/pia21032/jupiter-down-under
Category: articles
আজ ৫ সেপ্টেম্বর। ১৯৭৭ সালের এই দিনে ভয়েজার ১ মহাকাশ যানকে সৌরজগতের বহিঃস্থ অঞ্চলের খোঁজখবর জানার জন্যে প্রেরণ করা হয়। এর যমজ যান ভয়েজার ২ এর ১৬ দিন পর ছাড়া হয় একে।

শিল্পীর তুলিতে ভয়েজার-১

১৯৬০ এর দশকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ‘মেরিনার প্রকল্প’ হাতে নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বুধ, শুক্র এবং মঙ্গল গ্রহ পর্যবেক্ষণ করা। সেই উদ্দেশ্যে ১৯৬২ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ১০টি অভিযান (মেরিনার ১ থেকে মেরিনার ১০) পরিচালনা করে নাসা। শুরুতে ভয়েজার ১ ছিল 'মেরিনার ১১' নামে মেরিনার প্রকল্পের অধীনে। কিছুদিন পর বাজেট ঘাটতির কারণে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম শুধুমাত্র "বৃহস্পতি-শনির ফ্লাইবাই" এ নামিয়ে আনা হয় এবং নতুন প্রকল্পের নাম দেয়া হয় "মেরিনার জুপিটার-স্যাটার্ন প্রোব"।

এ প্রকল্পের কাজ এগোতে থাকলে ইতোমধ্যে "পাইওনিয়ার ১০" থেকে পাওয়া তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির প্রতিকূল আবহাওয়া সম্পর্কে অবহিত হন এবং এই প্রকল্পের নাম ও কাজের ধারা আবারও পরিবর্তন করেন। এবার প্রকল্পটির নতুন নাম দেয়া হয় "ভয়েজার ১"। এই নতুন ভয়েজার ১ এর প্রকল্পের ডিজাইন ও কলাকৌশল পূর্ববর্তী অন্য যেকোনো মেরিনার প্রক্লপের চেয়ে আরও বেশি উন্নত করে করা হয়।

১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে টাইটান থ্রিই (Titan IIIE) নামক রকেট ইঞ্জিন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে উৎক্ষিপ্ত হয় ভয়েজার-১। ১৯৭৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে এটি মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝে অবস্থিত গ্রহাণু বেষ্টনিতে (asteroid belt) প্রবেশ করে। ১৯৭৭ সালের ১৯ ডিসেম্বরে এটি ওই অঞ্চলে থাকা দুই সপ্তাহ আগে উৎক্ষিপ্ত তার যমজ ভাই ভয়েজার ২ কে অতিক্রম করে।

১৯৭৯ সালের ৫ মার্চ এটি বৃহস্পতির এলাকায় পৌঁছে। এ সময় এটি বৃহস্পতির উপগ্রহ আয়োর বুকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির খোঁজ পায়। এবং এবারই প্রথম পৃথিবীর মানুষ প্রথমবারের মতো পৃথিবী ছাড়াও সৌরজগতের অন্য কোথাও সক্রিয় আগ্নেয়গিরির খোঁজ পেল।

বৃহস্পতির উপগ্রহ আয়োর বুকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির

১৯৭৯ সালের এপ্রিলে ভয়েজার-১ বৃহস্পতির এলাকা ছেড়ে শনির দিকে রওয়ানা দেয় এবং ১৯৮০ সালের ১২ নভেম্বর শনির সবচেয়ে কাছাকাছি যায়। এরপর ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরেই ভয়েজার-১ শনির এলাকা ছেড়ে দূর আকাশের দিকে পা বাড়ায়।

১৯৯৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী ভয়েজার-১ সূর্য থেকে ৬৯ এইউ দূরে থাকা "পাইওনিয়ার-১০" কে অতিক্রম করে মানুষের প্রেরিত সবচেয়ে দূরবর্তী বস্তুতে পরিণত হয়। এ সময় এর বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১৭ কিলোমিটার!!!
* এক এইউ হল পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব।
আরো পড়ুনঃ 
» পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত? 
» জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা 

২০০৪ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী এটি টারমিনেশন শক এলাকা অতিক্রম করে এবং ২০১২ সালের জুনে হেলিওপজ এলাকায় প্রবেশ করে। ২০১২ সালের আগস্টে ভয়েজার-১ হেলিওপজ এলাকা পার হয়ে যায়। এ সময় এটি সূর্য থেকে প্রায় ১২১ এইউ দূরে ছিল এবং তখন এতে সূর্যের আলো পৌঁছতে সময় লাগত ১৬.৮৯ ঘন্টা!!!

২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নাসার বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দেন যে ভয়েজার-১ আমাদের সৌরজগত ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এটি আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানে প্রবেশ করেছে। ধারণা করা হয়, ২০২৫ থেকে '৩০ সালের মধ্যে এটি আমাদের কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

অনন্ত শূন্যতায় হারিয়ে গেলেও যদি কখনও এটি অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীদের হাতে পড়ে সে আশায় এতে উৎক্ষেপণের সময়ই সংযুক্ত করা হয়েছিল "গোল্ডেন রেকর্ড" বা "সোনালী স্মৃতি" নামক একটি গ্রামোফোন রেকর্ড। এতে পৃথিবীর কিছু ছবি, প্রাকৃতিক কিছু শব্দ এবং প্রায় ৫৫ রকম ভাষায় "সম্বোধন" রেকর্ড করা আছে, যার মধ্যে রক্তে অর্জিত আমাদের বাংলা ভাষাও একটি। ভয়েজার-১ এর কল্যাণে আমাদের মাতৃভাষা এখন আমাদের থেকে ২০.৩ বিলিয়ল কিলোমিটার দূরে ছড়িয়ে এবং যাচ্ছে আরও অনন্তের পথে।

গোল্ডেন রেকর্ড নামক গ্রামোফোন রেকর্ড
ভয়েজার ১ এর বর্তমান অবস্থা।
ছবিটি বড়ো করে দেখতে ছবির উপর বা  এখানে ক্লিক করুন। 

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Voyager_1
২। http://voyager.jpl.nasa.gov/
৩। ভয়েজার যান দুটির দূরত্বের আপডেট জানতে এই লিঙ্কে চোখ রাখুন।  
Category: articles

মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৬

আজ ৩০ আগস্ট।
১৮৭১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন কিউই পদার্থবিদ আর্নেস্ট রাদারফোর্ড।

রসায়ন থেকে পদার্থবিদ বনে যাওয়া বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড

নিউজিল্যান্ডের এই বিজ্ঞানী মূলত ছিলেন রসায়নবিদ। কিন্তু পরবর্তীতে পরিচিতি লাভ করেন 'নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানের জনক' হিসেবে । তিনিই সবার আগে ১৯১১ সালে আবিষ্কার করেন যে প্রতিটি পরমাণুর একটি চার্জিত ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াস থাকে, যার চারপাশে থাকে বিশাল শূন্যস্থান। আর এই নিক্লিয়াসের চারপাশে ইলেকট্রনরা সর্বদা বৃত্তাকার পথে ঘুরছে। তাঁর এই মতবাদ পরে রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল (বা সৌর-মডেল) বলে পরিচিত হয়েছিল। ১৯১৯ সালে প্রোটন আবিষ্কার করার কৃতিত্বও তার। নিউক্লিয়াসে নিউট্রনের অস্তিত্বের কথাও তিনিই প্রথম কল্পনা করেন। মৌলের ভাঙন ও তেজস্ক্রিয় পদার্থের রসায়ন নিয়ে তার সফল গবেষণার জন্য তিনি ১৯০৮ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

নিউজিল্যান্ডের নেলসন শহরের কাছে তৎকালীন স্প্রিং গ্রুভ (বর্তমান ব্রাইটওয়াটার) নামক স্থানে ক্ষুদ্র একটি কাঠের তৈরি বাড়িতে ১৮৭১ সালের ৩০ আগস্ট তারিখে রাদারফোর্ডের জন্ম। বাবা-মায়ের বারো সন্তানের মাঝে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তার মা মার্থা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক এবং বাবা জেমস ছিলেন কৃষক। রাদারফোর্ড পরিবার প্রবল আর্থিক সংকটের মাঝেও সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে কখনো দমে যাননি। বাল্যকালে হেভলক বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষাগ্রহণ করেন। এরপর ১৬ বছর বয়সে নেলসন কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন এবং ১৮৮৯ সালে বৃত্তিলাভ করে ওয়েলিংটনে ইউনিভার্সিটি অব নিউজিল্যান্ড এর ক্যান্টারবারি কলেজে ভর্তি হন। তিনি ১৮৯৩ সালে গণিত এবং ভৌতবিজ্ঞানে দুইটি প্রথম শ্রেণিসহ এমএ পাশ করেন।

তিনি ক্যান্টারবারি কলেজে খুব অল্পকিছুদিনের জন্য গবেষণা চালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ১৮৯৪ সালে লাভ করেন স্নাতক ডিগ্রি। প্রতিটি পরীক্ষাতেই বৃত্তি নিয়ে ১৮৯৫ সালে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য ইংল্যান্ড চলে আসেন। এখানে এসে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরিতে যোগদান করেন। কাজ শুরু করেন জে জে থমসনের অধীনে, যিনি তার কিছুদিনের মাথায়ই ইলেকট্রন আবিষ্কার করেন।

ক্যামব্রিজে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে রাদারফোর্ডের গবেষণা চালানোর সময় রাদারফোর্ড অনেক উন্নতমানের রেডিও ওয়েভ ডিটেক্টর তৈরি করে বাজারে ছাড়লেন। অবশ্য পরবর্তীতে গবেষণা ছেড়ে অর্থ উপার্জনের এই পথে যেতে তাঁর মন সায় না দেওয়ায় তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। রাদারফোর্ড থোরিয়াম এবং ইউরেনিয়াম এর তেজস্ক্রিয়তা থেকে দুটি ভিন্ন তেজস্ক্রিয়তার বর্ণনা দেন এবং তাদের যথাক্রমে আলফা ও বিটা নাম দেন। ১৮৯৭ সালে তাঁকে বিএ রিসার্চ ডিগ্রি এবং ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজের কৌট-ট্রটার স্টুডেন্টশিপ প্রদান করা হয়।

১৮৯৮ সালের এপ্রিলে রাদারফোর্ড জানতে পারলেন যে কানাডার মনট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপকের চেয়ারটি খালি আছে। তিনি সেখানে আবেদন করে নিয়োগ পেয়ে গেলেন। মাত্র সাতাশ বছর বয়সে সেপ্টেম্বরে শেষদিকে তিনি মনট্রিলে এলেন এবং পরবর্তী ৯ বছর এখানেই থেকে গেলেন। ১৯০০ সালে তিনি ম্যারি জর্জিয়ানা নিউটনকে বিয়ে করেন। পরবর্তী বছর রাদারফোর্ড-ম্যারি দম্পতির ইলিন ম্যারি নামে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়।

১৯০১ সালের অক্টোবর মাসে রাদারফোর্ড মনট্রিলে তরুণ রসায়নবিদ ফ্রেডারিখ সোদির (যিনি ১৯২১ সালে রসায়নে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন) সাথে একত্রে থোরিয়াম বিকিরণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন এবং প্রথাবিরোধী সিদ্ধান্ত নেন যে বিকিরণের মাধ্যমে এক পদার্থ অন্য পদার্থে পরিণত হয়। তার তেজস্ক্রিয়তার বিভেদ তত্ত্ব থেকে তিনি দেখান যে, তেজস্ক্রিয়তা কোনো আণবিক ঘটনা নয়, এটি একটি পারমাণবিক নিউক্লিয়ার ঘটনা। তিনি আরো বললেন যে, তেজস্ক্রিয় মৌলের হ্রাসের হার সূচকীয় এবং যে সময় পরপর তেজস্ক্রিয় তীব্রতা আদি তীব্রতার অর্ধেক হয় তাকে অর্ধায়ু বলে।

এই তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটিয়ে তিনি পৃথিবীর বয়স নির্নয় করেছিলেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত পৃথিবীর বয়স ছিল সেই সময়ের বিজ্ঞানীদের অনুমিত বয়সের চেয়ে অনেক বেশি। তেজস্ক্রিয়তার উপর তাঁর এই অসাধারণ কাজ তাকে নোবেল পুরস্কার (১৯০৮ সালে রসায়নে) এবং ম্যানচেস্টারে অধ্যাপক পদ দুটোই এনে দেয়। পারমাণবিক বোমার জনক বলে পরিচিত অটো হান রাদারফোর্ডের অধীনেই মনট্রিলের ল্যাবে ১৯০৫-০৬ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন, যিনি পরবর্তীতে নিউক্লিয়ার ফিশান আবিস্কার করেন।

১৯০৭ সালে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাদারফোর্ড পদার্থবিদ্যার প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন। ১৯০৮ সালের গ্রীষ্মে রাদারফোর্ড জার্মান বিজ্ঞানী গাইগারকে সাথে নিয়ে নিশ্চিত করলেন যে আলফা কণা হল দুটি ইলেকট্রন হারানো হিলিয়াম পরমাণু বা হিলিয়াম আয়ন। ১৯০৯ সালে তার অধীনেই হ্যানস গাইগার ও আর্নেস্ট মার্সডেন বিখ্যাত আলফা কণা বিক্ষেপণ (যা স্বর্ণপাত পরীক্ষণ নামেও পরিচিত) পরীক্ষণটি সম্পন্ন করেন। এই পরীক্ষা হতেই সর্বপ্রথম পরমাণুর নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ত্ব সম্বন্ধে অনুমান করা যায়।

আলফা কণা বিক্ষেপণ পরীক্ষা

এই পরীক্ষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে বিশ্লেষণ করে রাদারফোর্ড ১৯১১ সালে পরমাণুর নতুন একটি মডেলের প্রস্তাব করেন। মডেলের বর্ণনামতে পরমাণুর কেন্দ্রে খুবই ক্ষুদ্র ধনাত্বক চার্জযুক্ত নিউক্লিয়াস রয়েছে যাকে সার্বক্ষণিক প্রদক্ষিণ করছে ক্ষুদ্রতর ঋনাত্বক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন। জে জে থমসনের দেয়া পরমাণুর কল্পিত চিত্রকে এই মডেল বাতিল করে দেয়। রাদারফোর্ফ তার মডেল নিয়ে এতটাই উচ্ছাসিত ছিলেন যে তিনি বলেছিলেন,
Now I know what the atoms look like! It was nothing like Thomson.

১৯১২ সালে নিলস বোর রাদারফোর্ডের সাথে ম্যানচেস্টারে যোগ দেন। গুরু রাদারফোর্ডের দেয়া নিউক্লিয়াসের গঠনকে কোয়ান্টানাইজড করে বোর পরমাণুর কোয়ান্টাম জগৎ উন্মোচন করেন যা আজ পর্যন্ত সর্বজনস্বীকৃত একটি তত্ত্ব। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বোর পরমাণুর কোয়ান্টায়ন করে সমাধান করেছিলেন। ১৯১৩ সালে রাদারফোর্ড এবং মোসলে ক্যাথোড রশ্মি দ্বারা বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর মাঝে সংঘর্ষ ঘটান এবং বৈশিষ্ট্যযুক্ত বর্ণালী রেখা পান। এই পরীক্ষার পর থেকে মৌলিক পদার্থের পারমাণবিক সংখ্যার ধারণা আসে যা দ্বারা প্রতিটি মৌলকে আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

১৯১৯ সালে রাদারফোর্ডকে ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির পরিচালক পদের অফার দেওয়া হলে তিনি ম্যানচেস্টার থেকে ক্যামব্রিজে ফিরে আসেন এবং পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত হন। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি এই পদেই ছিলেন। তাঁকে ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির সর্বকালের সেরা যোগ্য পরিচালক বিবেচনা করা হয়। একটা ছোট পরিসংখ্যান থেকে পরিচালক হিসেবে রাদারফোর্ডের দক্ষতা সম্বন্ধে অনুমান করা যায়। তাঁর ল্যাবরেটরির ছাত্রদের মাঝে পরবর্তীতে ১১ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। নিলস বোর, জর্জ হ্যাভেস, চ্যাডউইক, পাওয়েল, ব্ল্যাকেট, সিজে ডারউইন সহ অনেক জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী তাঁর ছাত্র এবং সহকর্মী ছিলেন।

১৯১৯ সালে তিনি তেজস্ক্রিয়তা ছাড়াই কৃত্রিমভাবে এক মৌলকে অন্য মৌলতে পরিণত করে দেখাতে সক্ষম হন। তিনি নিউক্লিয়ার বিক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে নাইট্রোজেন গ্যাসের মাঝে আলফা কণা চালনা করে অক্সিজেন গ্যাস তৈরি করেন। গোল্ডস্টাইন ১৮৮৬ সালে একক ধনাত্বক আধান বিশিষ্ট কণার স্রোত খুঁজে পেলেও পারমানবিক কণা হিসেবে রাদারফোর্ডই হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রোটন আবিস্কার করেন। ১৯২১ সালে বোরের সাথে কাজ করার সময় রাদারফোর্ড নিউক্লিয়াসের স্থায়ীত্ব ও ভর ঘাটতির ব্যাখ্যা দেবার সময় আধানহীন, একক ভরবিশিষ্ট একটি নিউক্লিয়নের কথা কল্পনা করেন, যা পরবর্তীতে ১৯৩০ সালে বিজ্ঞানী বুথ ও বেকার খুঁজে পান এবং চ্যাডউইক ১৯৩২ সালে একে নিউট্রন হিসেবে শনাক্ত করেন।

১৯১৪ সালে রাদারফোর্ডকে 'নাইট' উপাধি দেয়া হয়। ১৯২৫ সালে তিনি 'অর্ডার অব মেরিট' খেতাবও লাভ করেন। ক্যাভেন্ডিশ ল্যাবরেটরির পরিচালক পদ ছাড়াও তিনি আরো কয়েকটি পদ লাভ করেন। এগুলোর মাঝে বিজ্ঞান ও বাণিজ্য গবেষণা বিভাগের উপদেষ্টা মন্ডলীর চেয়ারম্যান, লন্ডনের রয়্যাল ইন্সটিটিউশানের প্রকৃতিবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ক্যামব্রিজের রয়্যাল সোসাইটি মন্ড ল্যাবরেটরির পরিচালক পদ অন্যতম। ১৯০৩ সালেই তিনি রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিনি এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তাঁর বর্ণিল জীবনে অজস্র সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছিলেন। তন্মধ্যে রামফোর্ড মেডেল, ফ্যারাডে মেডেল, কপলি মেডেল, ব্রেসা পুরস্কার, আলবার্ট মেডেলসহ অসংখ্য সম্মানসূচক ডিগ্রি এবং ডক্টরেট ডিগ্রি উল্লেখযোগ্য।

আর্নেস্ট রাদারফোর্ড ১৯৩৭ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে ক্যামব্রিজে নাড়ির অন্ত্রের অপারেশনের পরে খুব আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। এর মাধ্যমে জীবনাবসান হয় একজন মহান ভৌত ও ব্যবহারিক বিজ্ঞানীর। যুক্তরাজ্যর লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে বিখ্যাত বিজ্ঞানী লর্ড কেলভিনের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর অদূরেই সমাহিত আছেন মহাবিজ্ঞানী সার আইজাক নিউটন।

তথ্যসুত্রঃ
১। http://www.physicsoftheuniverse.com/scientists_rutherford.html
২। http://www.famousscientists.org/ernest-rutherford/
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...