Advertisement

শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজকের নভোচারীঃ চাঁদে হাঁটা নবম মানুষ জন ইয়ং

আজ ২৪ সেপ্টেম্বর। ১৯৩০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন চাঁদের বুকে অবতরণ করা অন্যতম মার্কিন নভোচারী জন ইয়ং। আজ তাঁর ৮৫ তম জন্মবার্ষিকী।

অ্যাপোলো- ১০ অভিযানের সময় ইয়ং 

১৯৬৯ সালের অ্যাপোলো- ১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিনের চাঁদে অবতরণ নিয়ে নানান মুখরোচক গল্প ও বিতর্ক আমাদের মাঝে প্রচলিত আছে। এই বিতার্কিকদের খুব বড়সড় একটা অংশ এটা মনেই রাখেন না যে এই দু'জন ছাড়াও '৬৯ পরবর্তী ৩ বছরে আরও পাঁচটি অ্যাপোলো মিশনে উপরের দুইজন ছাড়াও আরও ১০জন ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি চাঁদের বুকে পা রেখেছেন এবং লুনার রোভারও চালিয়েছেন।

ঠিক তেমন একজন ব্যক্তি হলেন অবসরপ্রাপ্ত আমেরিকান নভোচারী ক্যাপ্টেন জন ইয়ং। তিনি নবম ব্যক্তি হিসেবে ১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল চাঁদে অবতরণ করেন। তিনদিন চাঁদের বুক চষে তিনি এবং তাঁর টিম ৯৫.৭১ কে.জি. নমুনা সংগ্রহ করে ২৪ এপ্রিল তারিখে চাঁদের বুক ত্যাগ করে চাঁদের কক্ষপথে ফিরে আসেন। অ্যাপোলো- ১৬ এর এই অভিযানে তিনি ছিলেন মিশন কমান্ডার। এই মহান ব্যক্তি তাঁর দীর্ঘ বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ছিলেন একাধারে নৌ-অফিসার, নভোচারী, বিমান প্রশিক্ষক ও অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।

তাঁর নামের আগে ঘটা করে "মহান" বলার কিঞ্চিৎ রহস্য আছে। কারণ তিনি অনেক দিক থেকেই পৃথিবীর মানুষদের মাঝে প্রথম এবং একমাত্র! চলুন সংক্ষেপে তার ছোট্ট (!) ক্যারিয়ার থেকে একটু ঢুঁ মেরে আসি।

নৌবাহিনীতে চাকরীর শেষভাগে এসে ক্যাপ্টেন জন ইয়ং ১৯৬২ সালে নাসায় যোগ দেন। এ সময় তিনি "অ্যাস্ট্রোনাট গ্রুপ-২" এ ছিলেন, যেখানে নিল আর্মস্ট্রংও একই গ্রুপের অধীন ছিলেন। পরবর্তীতে ইয়ং ১৯৬৫ সালে "প্রথম" মনুষ্যবাহী অভিযান জেমিনাই মিশনে অংশ নেন এবং তার পরের বছরের "জেমিনাই মিশনের" কমান্ডার হন। এবারও আরেকদিক থেকে তিনি "প্রথম" হলেন। এবার তিনি অভিযুক্ত হলেন "প্রথম স্পেস স্মাগলার" হিসেবে!! মজার ঘটনা হল, সেবার তিনি ভুট্টা আর মাংসের তৈরী একটা স্যান্ডুইচ স্মাগলিং করেছিলেন। এজন্য অবশ্য তাকে কম মূল্য দিতে হয়নি। ফলস্বরূপ পরবর্তী কয়েকটি ফ্লাইটে তিনি আর অংশ নিতে পারেননি।

নাসা অবশ্য চতুর এই পাইলটকে নিয়ে কী করা যায় যে ব্যাপারে খুবই চিন্তিত ছিল। কারণ তিনি অন্যদের তুলনায় ছিলেন অনেক মেধাবী এবং সাহসী। তাই তাঁকে আবারও স্পেস প্রোগ্রামের আওতায় আনা হল, তবে কিছুদিন পর।

এবার ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো- ১০ মিশনে তিনি অংশ নেন এবং "প্রথম" ব্যক্তি হিসেবে একা চাঁদের কক্ষপথ আবর্তন করেন। ১৯৬৯ সালের ২৬ মে তারিখে পৃথিবীতে ফেরার সময় ইয়ং এর অ্যাপোলো- ১০ অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে (ঘন্টায় প্রায় ৪০ হাজার কিলোমিটার বেগে) ছুটে চলে আরও একটি রেকর্ড করে। এবং এটাই ছিল মনুষ্যবাহী যে- কোনো যানের পক্ষে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে চলা।

পরবর্তীতে ইয়ং ১৯৭২ সালের অ্যাপোলো- ১৬ মিশনে অংশ নেন। এ সময় তিনি মিশন কমান্ডার ছিলেন। তিনি এবং তাঁর দল ১৯ এপ্রিল চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেন এবং ২১ এপ্রিল তিনি নবম ব্যক্তি হিসেবে চাঁদে অবতরণ করেন। এরই সাথে এবারই প্রথমবারের মত তিনি চাঁদের বুকে পা রাখেন। ২১ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি এবং ডিউক  চাঁদের বুকে ৭১ ঘন্টা থাকেন।

এর মাঝে প্রথম দিন ৭ঘন্টা ১১মিনিট ২ সেকেন্ড , দ্বিতীয় দিন ৭ঘন্টা ২৩ মিনিট ৯ সেকেন্ড এবং তৃতীয় দিন ৫ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ৩ সেকেন্ড সহ তিন দিনে মোট ২০ ঘন্টা ১৪ মিনিট ১৪ সেকেন্ড তাঁরা চাঁদের বুকে হেঁটে বেড়ান। এসময় ইয়াং চাঁদের বুকে "লুনার রোভিং ভেহিকল" নামক চন্দ্রযানও চালান। এই চন্দ্রযান দিয়ে তিনি চাঁদের বুকে ২৬.৭ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘুরেও বেড়ান। চাঁদ থেকে ফেরার সময় তিনি এবং তার সহযোগী ডিউক মিলে পৃথিবীর জন্য ৯৫.৮ কে.জি. চাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন।

ক্যাপ্টেন জন ইয়ং সেই তিনজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তির মাঝে একজন , যাঁরা দুবারের মত চাঁদ-ভ্রমণ করেন। পরবর্তীতে ইয়ং ১৯৮১ সালে "স্পেস শাটল"এর প্রথম যাত্রাসহ দুইবার "স্পেস শাটল ফ্লাইট" এর কমান্ডার ছিলেন।

১৯৭৪ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন "অ্যাস্ট্রোনাট অফিস" এর প্রধান। তিনি ২০০৪ সালে নাসা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৪২ বছর নাসাতে কর্মরত অবস্থায় তিনি ছয়টি স্পেস ফ্লাইটে অংশ নেন এবং তিনিই "একমাত্র" নভোচারী যিনি এত্তবছর যাবত নাসায় সক্রিয় ভাবে কর্মরত ছিলেন।

তিনি আরও অনেকদিক থেকেই একমাত্র! যেমন, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যার নভোচারী এবং কমান্ডার হিসেবে চারটি ভিন্ন ধরণের মহাকাশযান (১. জেমিনাই, ২. অ্যাপোলো কমান্ড/ সার্ভিস মডিউল, ৩. এপোলো লুনার মডিউল এবং ৪. স্পেস শাটল) চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে।

দীর্ঘ ৪২ বছর নাসায় কাজ করে ২০০৪ এর ডিসেম্বরের শেষ দিন তিনি অবসর নেন। ২০১২ সালে তিনি তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ফরএভার ইয়ং প্রকাশ করেন।

তথ্যসূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/John_Young_(astronaut)
২। http://www.space.com/20690-john-young-astronaut-biography.html


Advertisement 02

Unknown

লেখকের পরিচয়

মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগে অধ্যয়নরত। অ্যাস্ট্রোনমি, বিশেষ করে, মহাকাশ অভিযান সম্পর্কে বিষয়ে ব্যাপক খোঁজখবর রাখেন।
লেখকের সব লেখা এখানে। ফেসবুকে লেখকঃ Bangladeshi Moinul

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...