২০ জানুয়ারি, ১৯৯৯। একটি খবর সবাইকে চমকে দিল। প্লুটো এখন আর গ্রহ নয়, একটি বিশাল বরফখণ্ড মাত্র। বিবিসিসহ বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয় এই খবর। কিন্তু প্লুটো আসলে তক্ষুনি তার গ্রহত্ব হারায়নি।
প্লুটো গ্রহ কিনা- এই মান নির্ধারণের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতির (IAU বা International Astronomical Union) বিভাগ-৩ এর কাঁধে পড়ে।
১৯৩০ সালে ক্লাইড টমবাউ প্লুটো গ্রহটিকে আবিষ্কারের পর এটি সৌরজগতের নবম গ্রহের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু, বহু দিন ধরেই এটা স্পষ্ট যে প্লুটো অন্যান্য গ্রহের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখতে অক্ষম। এর কক্ষপথ পাশ্ববর্তী গ্রহ নেপচুনকে ছেদ করে গেছে। বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষের দিকে প্লুটোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে বহিঃস্থ সৌরজগতের নতুন আবিষ্কৃত অনেকগুলো বস্তুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মাইনর প্ল্যানেট গবেষকদের কাছে ব্যাপারটি ছিল ব্যাপক আলোচিত।
পরে নেপচুন গ্রহের বাইরের এলাকার কিছু বস্তুর কক্ষপথ বেশ ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারার পর প্লুটো বিতর্ক আরও চাঙ্গা হল। ওই বস্তু গুলোকে নাম দেওয়া হয় ট্রান্স নেপচুনিয়ান অবজেক্টস বা TNO।
IAU এর বিভাগ-৩ TNO এর তালিকায় প্লুটোকে এক নম্বরে রাখার ব্যাপারে চিন্তা করল। তখনও প্লুটোর গ্রহত্ব বজায় থাকল। তবে পরিচয় হল দুটো- গ্রহ এবং টিএনও একইসাথে। তখনও গ্রহের কোন সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা ছিল না। আশা ছিল যদি গ্রহের সংজ্ঞার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছা যায়, তবে সৌরজগতের অনেকগুলো বস্তুকে নতুন করে তালিকাভুক্ত করা যাবে। অন্যথায় বিতর্কিত বা ঐতিহাসিক পদবী রেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
এই অনৈক্যের সুবাদে প্লুটো আরো কয়েক বছর গ্রহত্বের সাধ নিল। কিন্তু ২০০৩ সালে আবিষ্কৃত হল ইরিস। এর আকার প্লুটোর চেয়ে বড়। প্লুটো আবারও বিতর্কে পড়ে গেল। কফিনে শেষ পেরেকগুলো ঠুকে দিতে ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হল হোমিয়া (Haumea), ২০০৫ সালে মাকিমাকি(Makemake) যারা ভর ও আয়তনে প্লুটোর কাছকাছি । অন্য দিকে ১৮০১ সালে তথা নেপচুন আবিষ্কারের ৪৫ বছর আগে আবিষ্কৃত হয় সেরেস (Ceres)। একে অর্ধ-শতক ধরে গ্রহ বলে মনে করা হত। পরে ফেলা হয় গ্রহাণুদের তালিকায়। এরও ভর ও আয়তন প্লুটোর কাছাকাছি। তাছাড়া, প্লুটোর ভর চাঁদের মাত্র ১৮ শতাংশ!
এখন তাহলে, প্লুটো যদি গ্রহ হয়, তাহলে এই ইরিস (যে প্লুটোর চেয়েও বড়), হোমিয়া, মাকিমাকি, সেরেস বেচারারা কী দোষ করল? অন্য দিকে, শুধু এরাই নয়, ২০০২ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে অরকাস, স্যালাসিয়া, কৌয়ার, সেডনা ইত্যাদি ৬-৭ টি উল্লেখ্যযোগ্য বস্তু আবিষ্কৃত হল।
আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতি এবার গ্রহের সংজ্ঞা নির্ধারণ করল। আরেকটি তালিকা তৈরি করল বামন গ্রহদের নিয়ে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ইরিস, হোমিয়া, মাকিমাকি ও সেরেসের সাথে প্লুটোর নাম লেখা হল বামন গ্রহদের (Dwarf Planet) খাতায়।
সংজ্ঞায় বলা হল, গ্রহ হচ্ছে সেই সব বস্তু যারা
ক. যথেষ্ট ভারী হওয়ায় নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে গোলাকৃতি পেয়েছে।
খ. তাপ নিউক্লিয়ার ফিউসন বিক্রিয়া ঘটানোর মত বেশি ভরবিশিষ্ট নয়।
গ. আশেপাশের অঞ্চল থেকে প্ল্যানেটেসিমালদের সরাতে পেরেছে। ফলে কক্ষপথের সীমানায় আর কেউ নেউ।
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
আর বামন গ্রহের সংজ্ঞা হলঃ
প্লুটো যে বামন গ্রহই থাকবে- এই সিধান্ত চূড়ান্ত হলেও কতটা স্থায়ী হতে পারে তা সময়ই বলে দেবে, কারণ এই সিধান্তে সবাই খুশি নয়। কারণটা মূলত ঐতিহাসিক।
সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়াঃ Planet; Dwarf_planet;
২. নাসা
প্লুটো গ্রহ কিনা- এই মান নির্ধারণের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতির (IAU বা International Astronomical Union) বিভাগ-৩ এর কাঁধে পড়ে।
১৯৩০ সালে ক্লাইড টমবাউ প্লুটো গ্রহটিকে আবিষ্কারের পর এটি সৌরজগতের নবম গ্রহের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু, বহু দিন ধরেই এটা স্পষ্ট যে প্লুটো অন্যান্য গ্রহের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখতে অক্ষম। এর কক্ষপথ পাশ্ববর্তী গ্রহ নেপচুনকে ছেদ করে গেছে। বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষের দিকে প্লুটোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে বহিঃস্থ সৌরজগতের নতুন আবিষ্কৃত অনেকগুলো বস্তুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মাইনর প্ল্যানেট গবেষকদের কাছে ব্যাপারটি ছিল ব্যাপক আলোচিত।
পরে নেপচুন গ্রহের বাইরের এলাকার কিছু বস্তুর কক্ষপথ বেশ ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারার পর প্লুটো বিতর্ক আরও চাঙ্গা হল। ওই বস্তু গুলোকে নাম দেওয়া হয় ট্রান্স নেপচুনিয়ান অবজেক্টস বা TNO।
IAU এর বিভাগ-৩ TNO এর তালিকায় প্লুটোকে এক নম্বরে রাখার ব্যাপারে চিন্তা করল। তখনও প্লুটোর গ্রহত্ব বজায় থাকল। তবে পরিচয় হল দুটো- গ্রহ এবং টিএনও একইসাথে। তখনও গ্রহের কোন সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা ছিল না। আশা ছিল যদি গ্রহের সংজ্ঞার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছা যায়, তবে সৌরজগতের অনেকগুলো বস্তুকে নতুন করে তালিকাভুক্ত করা যাবে। অন্যথায় বিতর্কিত বা ঐতিহাসিক পদবী রেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
এই অনৈক্যের সুবাদে প্লুটো আরো কয়েক বছর গ্রহত্বের সাধ নিল। কিন্তু ২০০৩ সালে আবিষ্কৃত হল ইরিস। এর আকার প্লুটোর চেয়ে বড়। প্লুটো আবারও বিতর্কে পড়ে গেল। কফিনে শেষ পেরেকগুলো ঠুকে দিতে ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হল হোমিয়া (Haumea), ২০০৫ সালে মাকিমাকি(Makemake) যারা ভর ও আয়তনে প্লুটোর কাছকাছি । অন্য দিকে ১৮০১ সালে তথা নেপচুন আবিষ্কারের ৪৫ বছর আগে আবিষ্কৃত হয় সেরেস (Ceres)। একে অর্ধ-শতক ধরে গ্রহ বলে মনে করা হত। পরে ফেলা হয় গ্রহাণুদের তালিকায়। এরও ভর ও আয়তন প্লুটোর কাছাকাছি। তাছাড়া, প্লুটোর ভর চাঁদের মাত্র ১৮ শতাংশ!
এখন তাহলে, প্লুটো যদি গ্রহ হয়, তাহলে এই ইরিস (যে প্লুটোর চেয়েও বড়), হোমিয়া, মাকিমাকি, সেরেস বেচারারা কী দোষ করল? অন্য দিকে, শুধু এরাই নয়, ২০০২ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে অরকাস, স্যালাসিয়া, কৌয়ার, সেডনা ইত্যাদি ৬-৭ টি উল্লেখ্যযোগ্য বস্তু আবিষ্কৃত হল।
প্লুটোর সাথে অন্যান্য বামন গ্রহ ও চাঁদের তুলনা |
সংজ্ঞায় বলা হল, গ্রহ হচ্ছে সেই সব বস্তু যারা
ক. যথেষ্ট ভারী হওয়ায় নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে গোলাকৃতি পেয়েছে।
খ. তাপ নিউক্লিয়ার ফিউসন বিক্রিয়া ঘটানোর মত বেশি ভরবিশিষ্ট নয়।
গ. আশেপাশের অঞ্চল থেকে প্ল্যানেটেসিমালদের সরাতে পেরেছে। ফলে কক্ষপথের সীমানায় আর কেউ নেউ।
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
আর বামন গ্রহের সংজ্ঞা হলঃ
সেই সব বস্তু যাদের ভর গ্রহের সমান কিন্তু গ্রহও নয়, উপগ্রহও নয়; সূর্যকে সরাসরি প্রদক্ষিণ করে; নিজস্ব আকৃতি পাবার মত অভিকর্ষের মালিক কিন্তু কক্ষপথকে অন্যান্য বস্তু থেকে আলাদা বা স্বতন্ত্র করতে পারেনি।
প্লুটো যে বামন গ্রহই থাকবে- এই সিধান্ত চূড়ান্ত হলেও কতটা স্থায়ী হতে পারে তা সময়ই বলে দেবে, কারণ এই সিধান্তে সবাই খুশি নয়। কারণটা মূলত ঐতিহাসিক।
সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়াঃ Planet; Dwarf_planet;
২. নাসা