Advertisement

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

কয়েক দিন ধরে এমনিতেই এ বিষয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল। ইচ্ছেটা ত্বরান্বিত হল একজন পাঠকের কমেন্ট পেয়ে। তিনি উজ্জ্বল তারাদের গল্প পড়ে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
প্রশ্নঃ
এখানে তারাদের বিষুবলম্ব দেওয়া আছে। আমাদের মাথার উপরকার বিষুবলম্ব +২৩ ডিগ্রি ।।এটা হতে কীভাবে তারাদের নির্ণয় করব? ১ ডিগ্রি পার্থক্যের জন্য কতটুকু উত্তর বা দক্ষিণে যাব?
(Avi Dewan)

উত্তরঃ
প্রথমে দেখি বিষুব লম্ব কাকে বলে? পৃথিবীর বিষুব রেখা থেকে ঠিক উপরে আকাশের কল্পিত রেখার নাম খ-বিষুব। খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণের অবস্থানকে বিষুব লম্ব দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উত্তরে গেলে '+' চিহ্ন ও দক্ষিণে গেলে মাইনাস (-) চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীর বিষুব লম্ব (+১৯) ডিগ্রি। তাই আমাদের অক্ষাংশ ২৩ ডিগ্রি উত্তর বলে এটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়।
আরো পড়ুনঃ 
☛  বিষুব লম্ব কাকে বলে?

খালি চোখে আমরা একসাথে যতগুলো তারা দেখি তার সংখ্যা কয়েক হাজার। এখন ধরুন দুটি উজ্জ্বল তারকা কিছুটা দূরে অবস্থান করছে। আমরা এ দুটির নাম জানলাম। এদের বিষুব লম্বও জানলাম। ধরলাম, জানা আছে যে একটি তারা অপরটি থেকে ৫ ডিগ্রি দূরে আছে। এই বিষুব লম্ব কাজে লাগিয়ে বাস্তব রাতের আকাশে এদেরকে খুঁজে পাব কীভাবে? উল্লেখ্য যে বিষুব রেখাকে উদ্দেশ্য করে নিবন্ধটি লিখলেও আকাশের এই পরিমাপ অন্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। যেমন, বিষুব লম্বতো শুধু উত্তর- দক্ষিণে কাজ করে। আমাদের এই পরিমাপ কাজ করবে পূর্ব- পশ্চিম ও কোনাকুনি যে কোনো দিকেই।
আরো পড়ুনঃ
আমরা খালি চোখে কত তারা দেখি?

প্রথমে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে পুরো আকাশ সব মিলিয়ে একটি গোলকের মতো ৩৬০ ডিগ্রি। এর মধ্যে আমরা একসাথে এর অর্ধেক মানে ১৮০ ডিগ্রি দেখতে পাই, কারণ বাকিটা থাকে আমাদের উল্টো পাশে। পূর্ব থেকে পশ্চিম বা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিগন্ত পর্যন্ত কৌণিক দূরত্ব ১৮০ ডিগ্রি। কোনাকুনিভাবে দুটি বিপরীত বিন্দু যোগ করলেও ১৮০ ডিগ্রিই পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে যে কোনো সরল রেখা মানেই কিন্তু ১৮০ ডিগ্রি। আর, দিগন্ত থেকে মাথার উপর পর্যন্ত কৌণিক দূরত্ব হচ্ছে ৯০ ডিগ্রি।
বিভিন্ন ডিগ্রির পরিমাপ 
এবার মূল কাজ শুরু করি। আমরা খালি হাতেই আকাশ মাপবো। এ জন্যে আপনাকে ডান বা বাম হাতটি লম্বা করে প্রসারিত করে সামনে মেলে ধরতে হবে। এবার আকাশের যে দিকের পরিমাপ নিতে চান হাতটি সেদিকে ধরুন। হাতকে টান টান করে রাখতে হবে, বাঁকিয়ে রাখা যাবে না। এবার বিভিন্ন ডিগ্রির জন্যে বিভিন্ন কৌশল খাটাতে হবে। কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ বা মোটা, চিকন- সবার ক্ষেত্রেই এই কৌশল কাজ করবে। তাই উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন নেই।
☛ আপনার হাতের তর্জনিটির প্রস্থ হবে আকাশের ১ ডিগ্রির সমান। তাহলে দুই ডিগ্রি মাপতে হলে দুই হাতের দুটি তর্জনি ধরুন।
☛ ৩, ৪ বা ৬ ডিগ্রি মাপার নিয়ম ছবি থেকে দেখে নিন। বুঝতেই পারছেন, একটু বুদ্ধি খাটিয়েই এখান থেকে ৫ ডিগ্রিও মাপা যাবে। অবশ্য পাঁচ ডিগ্রি মাপার আরেকটি উপায় আছে, যা একটু পরেই বলছি।
☛ ১০ ডিগ্রি মাপতে হলে হাতকে মুঠো বানিয়ে মুঠোর ব্যাস (এক পাশ থেকে অপর পাশ) দেখতে হবে।
☛ ২৫ ডিগ্রি মাপতে হলে মুঠো থেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাকে যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দিতে হবে।
আকাশের ডিগ্রি পরিমাপে আঙ্গুল ও মুষ্ঠি
সপ্তর্ষীমণ্ডলী থেকে ধ্রুব তারার কৌণিক দূরত্ব প্রায় ২৫ ডিগ্রি

☛ ৫ ডিগ্রি মাপার আরেকটি কৌশল হল হাতের মাঝের তিনটি আঙ্গুলকে মেলে ধরা।
৫ ডিগ্রি মাপার উপায় 

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর দুটি নক্ষত্র দুবে ও মেরাক ৫ ডিগ্রি দূরে। এই দুটিকে যোগ করে ছয় গুণ সামনে গেলেই পাওয়া যায় ধ্রুবতারা। 
☛  ১৫ ডিগ্রি মাপতে হলে তর্জনি ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলির একটিক অন্যটির উল্টো দিকে টান টান করে ছড়িয়ে রাখতে হবে।
১৫ ডিগ্রি মাপার উপায় 

ধ্রুবতারা থেকে কোচাবের কৌণিক দূরত্ব ১৫ ডিগ্রি
☛ ৫০ ডিগ্রি মাপার জন্যে কী করা যায়? দুই হাতকে মিলিয়ে একত্রে ২৫ ডিগ্রি করে মাপলেইতো হয়ে গেল। এইভাবে-
সপ্তর্ষীমণ্ডলী থেকে সিংহমণ্ডলীর উজ্জ্বলতম ও আকাশের ২১ তম উজ্জ্বল নক্ষত্র রেগুলাসের কৌণিক দূরত্ব ৫০ ডিগ্রি 

চাইলে ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন। এতে বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 

আরো পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
তারামণ্ডলীর পরিচয়
Category: articles

বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয় দুটি তারা জড়িত আছে ব্যাপারটায়। আসলেই তাই। তবে একটু সতর্ক হতে হবে। দুটি তারকা নিয়ে আরেক ধরনের সিস্টেম গঠিত হতে পারে, যার নাম বাইনারি স্টার।
সাধারণত পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা দুটি তারকাকে ডাবল স্টার বলে। বাংলায় একে অনেক সময় যুগলতারা বলা হয়।
অন্তত দুটি কারণে একাধিক তারকা ডাবল স্টার নাম পেতে পারে। এক, হতে পারে এরা বাইনারি স্টার। বাইনারি স্টার হচ্ছে দুটি তারকার এমন একটি ব্যবস্থা যাতে এরা একে অপরকে উভয়ের যৌথ মহাকর্ষ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এদেরকে বাংলায় সাধারণত জোড়াতারা নামে ডাকা হয়।
বাস্তবে অনেক দূরে অবস্থিত দুটি তারা আকাশের একই দিকে অবস্থিত হলেও ডাবল স্টার দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এদের মধ্যে কোনো মহাকর্ষীয় আকর্ষণ থাকে না। নিছক ঘটনাক্রমে এদেরকে কাছাকাছি দেখা যায়।
বকমণ্ডলীর ডাবল স্টার আলবিয়েরো
১৭৮০ সালের দিক থেকে জ্যোতির্বিদরা ডাবল স্টারদের দূরত্ব ও এদের নিজেদের কৌণিক দূরত্ব বের করা শুরু করেন। যদি এদের আপেক্ষিক গতি কক্ষপথের চাপের মতো দেখা যায়, অথবা এদের প্রকৃত গতির তুলনায় আপেক্ষিক গতি যদি ক্ষুদ্র হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয় এরা বাইনারি স্টার। অন্য ক্ষেত্রে এরা দেখতেই ডাবল, বাস্তবে একে অপরের সাথে সম্পর্কহীন।
সপ্তর্ষীমণ্ডলীর নক্ষত্র মিজার একটি যুগলতারা। ১৬৮৫ সালে দেখা যায় রাতের আকাশের ১৩তম উজ্জ্বল নক্ষত্র অ্যাক্রাক্সও একটি যুগলতারা। এরপর থেকেই ডাবল স্টারের খোঁজার হিড়িক পড়ে যায়।
দেখা যায় যে উত্তর গোলার্ধের আকাশে আপাত উজ্জ্বলতা +৯ এর বেশি এমন প্রায় ১৮টি তারকার মধ্যে ১ টি করে তারকা যুগলতারা গঠন করে, যদি ৩৬ ইঞ্চি টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলে।
বকমণ্ডলীর নক্ষত্র আলবিয়েরো একটি ডাবল স্টার।
আরো পড়ুনঃ 
এ সপ্তাহের তারাঃ মিজার ও অ্যালকর 
সপ্তর্ষীমণ্ডলীর ডাবল স্টার মিজার ও অ্যালকর 
সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Mizar_and_Alcor
২। http://astrobob.areavoices.com/2013/07/26/check-out-albireo-summers-most-spectacular-double-star/
Category: articles

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ
আজকে রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে এর চারপাশে বলয়ের মতো দেখা গেল। এটা কেন ও কীভাবে হয়েছে? দৃশ্যটা ছিল এ রকমঃ
চাঁদের চারদিকে বলয়
(প্রশ্ন করেছেন, ইমরান হোসাইন) 

উত্তরঃ
ঐ রাতে চাঁদের চারপাশে যে দৃশ্য দেখা গেছে একে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন হ্যালো। এটা চাঁদ ও সূর্য দুটোর ক্ষেত্রেই ঘটে। বাংলায় একে কিরীট বা জ্যোতির্বলয় বলা হয়।
কিন্তু, এই হ্যালো কীভাবে তৈরি হয়?
একটি আদর্শ মুন হ্যালো

এই বলয় তৈরির মূল কারণ উঁচু আকাশের পালকের মতো হালকা নরম মেঘ। এর নাম অলক মেঘ (cirrus cloud)। অনেক সময় আকাশে মেঘের অস্তিত্ব দেখা না গেলেও হ্যালো চোখে পড়ে। এর কারণ, এই মেঘ খুব সহজে চোখে পড়ে না, যদিও উপরের প্রথম ছবিটিতে মেঘের ঘনত্ব বেশি বলে এদেরকে দেখা যাচ্ছে। এই মেঘগুলো আমাদের মাথার প্রায় বিশ হাজার ফুট বা তারও ওপরে চলাচল করে। একটি হিসাব মতে এদের উচ্চতা ভূমি থেকে ৬ থেকে ৯ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত। অথচ ভূমি থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেও অনেক সময় বিভিন্ন মেঘ থাকে।

কিন্তু এই মেঘের সাথে হ্যালোর সম্পর্ক কী? এই অলক মেঘদের মধ্যে থাকে বরফের লক্ষ লক্ষ স্ফটিক। বরফের এই স্ফটিকেরা চাঁদের আলোকে (আলোর মূল উৎস অবশ্যই সূর্য) একই সাথে প্রতিসরিত ও প্রতিফলিত করে। ফলে হ্যালোও অনেকটা রংধনুর গোল হয়। অবশ্য রংধনুর সম্পূর্ণ বলয় আমরা সাধারণত দেখি না, কারণ অধকাংশ ক্ষেত্রেই নিচের অংশ থাকে পৃথিবীর আড়ালে (উল্টো পাশে)। রংধনুর মতোই চাঁদ বা সূর্যের হ্যালোও একেক জায়গা থেকে একেক রকম দেখায়।
বরফের স্ফটিকে আলোর প্রতিসরণ 
বরফের স্ফটিকদের আকার নির্দিষ্ট বলে হ্যালোও সব সময় প্রায় একই সাইজের হয়। এই বলয়ের ব্যাস প্রায় সব সময় ২২ ডিগ্রি হয়। ভাগ্য ভালো হলে অনেক সময় মূল বলয়ের বাইরে ৪৪ ডিগ্রি ব্যাসের আরেকটি বলয় দেখা যায়। আকাশের ডিগ্রির হিসাব সাধারণ কোণের হিসাবের মত নয়। পুরো আকাশ যেহেতু মোট ৩৬০ ডিগ্রি, তাই যে কোনো সময় আমাদের মাথার উপর শুধু ১৮০ ডিগ্রি থাকে, বাকিটা থাকে পৃথিবীর উল্টো পাশে। আর এখানে ডিগ্রির হিসাব হল এই ১৮০ ডিগ্রির মধ্যে কোন বস্তু কতটুকু জায়গা দখল করেছে তা। এটা পূর্ব-পশ্চিমেও হিসাব করা যায়, আবার উত্তর- দক্ষিণ বা অন্য কোনো দিকের ভিত্তিতেও হিসাব করা যায়। আমাদের হাতকে লম্বা করে সামনে বাড়িয়ে দিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করে আকাশের দিকে ধরলে এক মুষ্ঠির পরিমাণ হয় ১০ ডিগ্রি।
হাত দিয়ে আকাশ মাপার কৌশল 

চাঁদ ও সূর্যের আলোর বিভিন্ন কারসাজিতে আরো নানা ধরনের আলোকীয় দৃশ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সান করোনা, মুন করোনা, সান বা মুন ডগ ইত্যাদি।


আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?

সূত্রঃ
১। http://nenes.eas.gatech.edu/Cloud/Clouds.pdf
২। http://home.hiwaay.net/~krcool/Astro/moon/moonring/
৩। http://earthsky.org/space/what-makes-a-halo-around-the-moon
Category: articles

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬

ফরাসী জ্যোতির্বিদ চার্লে মেসিয়ে ছিলেন মূলত ধূমকেতু শিকারী। অনেকগুলো বস্তুকে তিনি এক সময় ধূমকেতু মনে করে তালিকাভূক্ত করলেও পরে জানা যায় এরা ধূমকেতু নয়। তিনি হতাশ হলেন। পরে এদের পেছনে সময় নষ্ট করা থেকে বাঁচতে এদের একটি তালিকা করলেন। তাঁর হতাশা থেকে উৎপন্ন সেই তালিকার জন্যেই বর্তমানে তিনি বিখ্যাত। বর্তমানে এই তালিকায় ১১০ টি বস্তু আছে। তাঁর নামানুসারেই বস্তুগুলোকে বলা হয় মেসিয়ার অবজেক্ট। যেমন অ্যান্ড্রোমিডা গ্যলাক্সিকে বলা হয় মেসিয়ার ৩১ বা সংক্ষেপে এম ৩১।
চার্লে মেসিয়ে 
১৭৩০ সালের এই দিনে (২৬ জুন) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের ১২ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দশম। অল্প বয়সেই তাঁর ৬ জন ভাই-বোন মারা যায়। ১৭৪১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে হারান বাবাকে। অর্থনৈতিক কারণে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও বাসায় বড় ভাই নিজেই তাকে পড়াতে থাকেন। ১৭৪৪ সালের ছয় লেজ বিশিষ্ট ধূমকেতু এবং ১৭৪৮ সালে তাঁর নিজ শহরে দৃশ্যমান সূর্যগ্রহণ তাঁকে জ্যোতির্বিদ্যার দিকে আগ্রহী করে তোলে। শুরু করে আকাশ দেখা। ২১ বছর বয়সে তিনি ফরাসী নৌবাহিনীর মহাকাশ বিভাগে যুক্ত হন।  ১৭৫১ সালে ফরাসী নৌবাহিনীর জ্যোতির্বিদ নিকোলা দেলিসলে তাঁকে তাঁর পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখার পরামর্শ দেন। তাঁর কথা মত, মেসিয়ে সর্বপ্রথম ১৭৫৩ সালে সূর্যের সামনে বুধ গ্রহের উপস্থিতির রেকর্ড রাখেন।
১৭৫৯ সালে তিনি মেরিন অবজারভেটরির প্রধান জ্যোতির্বিদ হন এবং ১৭৭১ সালে নিজেই নৌবাহিনীর অ্যাস্ট্রোনোমার নিযুক্ত হন।

১৭৬৪ সালে তিনি রয়েল সোয়াইটির ফেলো মনোনীত হন, ১৯৬৯ সালে হন রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স এর বিদেশি সদস্য। ১৭৭০ সালে যুক্ত হন ফ্রেঞ্চ একাডেমি অব সায়েন্স এর সাথে।
খুঁজতে গিয়েছিলেন ধূমকেতু, পেয়ে গেলেন আরো বহু কিছু। সময় বাঁচাতে গিয়ে তাঁর বন্ধু ও সহকারী পিয়েরে মেকেইকে সাথে নিয়ে এগুলোর তালিকা করে ফেললেন। বর্তমানে এই তালিকায় ৩৯টি গ্যালাক্সি, ৭ টি নেবুলা বা নীহারিকা, ৫টি গ্রহ নীহারিকা এবং ৫৫টি তারা স্তবক (Star Cluster) আছে।
১৭৭৪ সালে  প্রথম প্রকাশিত এই তালিকায় ৪৫ টি বস্তুর নাম ছিল। এতে যে শুধু তাঁর আবিষ্কৃত বস্তুই ছিল তা নয়, তার আগের জ্যোতির্বিদদের পর্যবেক্ষণকৃত বস্তুও এতে ছিল। প্রকৃতপক্ষে প্রথম প্রকাশিত ৪৫ টি বস্তুর মধ্যে তাঁর নিজের আবিষ্কৃত ছিল মাত্র ১৭টি। ১৭৮০ সাল নাগাদ তালিকাতে বস্তুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০। তালিকার চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৭৮১ সালে। এতে ১০৩ টি বস্তুর তালিকা ছিল। ১৯২১ থেকে ১৯৬৬ সালে এই তালিকায় আরো ৭টি বস্তুকে যুক্ত করলেন। এই বস্তুগুলো মেসিয়ে বা মেকেই চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশ করার পরে পর্যবেক্ষণ করেন বলে নিজেরা যুক্ত করে যেতে পারেননি।
বর্তমানে পেশাদার ও শখের জ্যোতির্বিদরা সমানে এই বস্তুগুলোর নাম ব্যবহার করেন। এই বস্তুগুলোর তুলনামূলক উজ্জ্বলতার কারণে এরা শখের জ্যোতির্বিদদের কাছেও খুব জনপ্রিয় বস্তু।
সবগুলো মেসিয়ার বস্তুর ছবি 

অন্য দিকে ধূমকেতুকেও তিনি ভোলেননি। তিনি ৪০টি নেবুলা ছাড়াও ১৩টি ধূমকেতুও আবিষ্কার করেন।
১৮১৭ সালে, ৮৬ বছর বয়সে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর সম্মানে চাঁদের একটি গর্তের নাম মেসিয়ার এবং একটি গ্রহাণুর নাম ৭৩৫৯ মেসিয়ার রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তাঁর নামের সঠিক উচ্চারণ চার্লে মেসিয়ে যদিও চার্লস মেসিয়ার (ফরাসীঃ Charles Messier) বানানটি অধিক প্রচলিত।

[১] স্পেইস ডট কম
[২] উইকিপিডিয়া
Category: articles

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ ঢাকার আকাশে এত কম তারা দেখা যায় কেন? গ্রামেতো অনেক অনেক তারা দেখা যায়।
[উত্তম কুমার]

উত্তরঃ
রাতের আকাশে খালি চোখে আমরা একবারে দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই। খালি চোখে দৃশ্যমান সব তারার সংখ্যা যোগ করলে হয় ৯০৯৬ টি তারা। হিসাব দুটো কেন? কারণ হচ্ছে রাতের আকাশের অর্ধেক অংশ সব সময় পৃথিবীর উল্টো পাশে থাকে যা আমরা দেখতে পাই না। সময় যেতে যেতে তা পূব আকাশে দৃশ্যমান হতে থাকে। আবার একই সাথে দক্ষিণ ও উত্তর গোলার্ধের সব তারা দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
☛ খালি চোখে আমরা কত তারা দেখি?

কিন্তু উপরে বলা এত এত তারা দেখা যাবে চাঁদহীন, অন্ধকার এবং নির্বিঘ্ন আকাশে। এ জন্যে গ্রামে গেলে দেখা যায় রাতের আকাশ তারায় তারায় ভরপুর। কিন্তু শহরে এলেই তারারা উধাও, হাতে গোণা অল্প কিছু তারা দেখা যায়। এই সংখ্যা এক হাজারেও পৌঁছায় না। অধিকাংশ সময়ই থাকে কয়েকশোর কাছাকাছি। কিন্তু কেন? ঢাকা বা অন্যান্য শহরের আকাশে এত কম তারা কেন?
এর প্রধান কারণ হল শহরের আলোক দূষণ। কৃত্রিম আলোর কারণে প্রাকৃতিক আলো বা দৃশ্য ঝাপসা হয়ে পড়াকে বলা হয় আলোক দূষণ বা লাইট পোলিউশান (light pollution)।
তারার আলোরা শহরের কৃত্রিম আলোর কাছে হেরে যায়

ঢাকার আকাশে কম তারা থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে এর বায়ু দুষণ। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার আকাশে প্রতি দিন ৫০ টন সিসা নির্গত হয়।
আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা শহরের বায়ুতে প্রতি বছর ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম১০) মিশছে ৫৮ হাজার ৫২৪ টন। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তার ধুলো-ময়লা, কারখানার নির্গত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর পদার্থ। পাশাপাশি ২০ হাজার ৮১৯ টন অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) তথা লোহা, সিসা, জিংক ইত্যাদির বিষাক্ত জৈব মিশছে বাতাসে। এছাড়া প্রতি বছর ৬০ হাজার ২১৬ টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ১৪ হাজার ৮৬২ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও ৫৩ হাজার ৪৫ টন কার্বন মিশছে ঢাকার বায়ুতে।
বিস্তারিত দেখুন তিন নং সূত্রে।

রাতের আকাশের তারার সংখ্যা কেমন হবে তা দিনের আকাশের রং দেখেও আন্দাজ করা যায়। যদি আকাশ খুব নীল হয়, তাহলে অনেক অনেক তারা দেখা যাবে। কিন্তু দিনের আকাশ যদি হয় হালকা নীল, ধূসর, সাদা, বাদামী বা কমলা রঙের, তাহলেই সমস্যা। এ কথা প্রযোজ্য বায়ু দুষণের ক্ষেত্রে। বায়ু দুষণ না থাকলেও আলোক দুষণ রাতের আকাশে বারোটা বাজিয়ে দিতে পারেই। তবে বৃষ্টি হলে তার পরপর যখন আকাশ মেঘমুক্ত হয়, সেই সময় আকাশ শহরেও অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন রকম কারণে ঢাকায় রাতের আকাশের দিকে তাকালে কোণায় কোণায় কিছু উজ্জ্বল তারা, তারামণ্ডলী যেমন আদম সুরত, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, কিছু তারাভুজ যেমন সামার ট্রায়াঙ্গেল ইত্যাদি দেখা যায়। আরো অনুজ্জ্বল বস্তুরা থাকে চোখের আড়ালে।
আরো পড়ুনঃ 
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প

সূত্রঃ
১। http://www.bangladeshenvironment.com/index.php/polution-s/air-polution/291-air-pollution-in-dhaka-city
২। https://www.quora.com/Why-do-we-see-less-stars-in-the-skies-these-days
৩। বণিক বার্তা
Category: articles

বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ছোট বেলায় বইয়ে পড়তাম, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়। শুনে ভাবতাম চাঁদের মধ্যে একটি স্টোর রুম আছে যেখানে চাঁদ দিনের বেলায় সূর্যের আলো জমা করে রাখে। আর রাতে সেই আলো দিয়ে চাঁদ পৃথিবীকে আলোকিত করে।
ছোট্ট বেলার সেই অবুঝ জ্ঞানের প্রথম অংশ ঠিক ছিল, কিন্তু নিজের ভাবনা ছিল ভুল। তবে বইয়ের ভাষাকেও একটু দোষারোপ করতেই হয়। চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়- এভাবে বলার দরকার কী? এটা শুনলেই একটু একটু মনে হয়, হ্যাঁ, আলো জমা করে রাখা হয়।
সূর্যের আলোর মাধ্যমে পৃথিবী ও চাঁদ দুজনেই একে অপরকে আলোকিত করে

মূল কথায় আসি। বইয়ে আসলে বলা উচিৎ ছিল, চাঁদের নিজের কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফিলত করে পৃথিবীকে আলোকিত করে।  অর্থ্যাৎ, চাঁদ আসলে বিশাল বড় এক দর্পণ। অবশ্যই সাইজেই বড়ো, দর্পণ হিসেবে চাঁদের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এর পৃষ্ঠ খুব এবড়োথেবড়ো এবং ধূসর কালো।
চাঁদের পৃষ্ঠের এবড়োথেবড়ো ছবি

চাঁদ সূর্যের মাত্র ১২ ভাগ আলো প্রতিফলিত করতে পারে। তাছাড়া চাঁদ যেটুকু আলো প্রতিফলিত করে তার সবটুকু আমরা পাই না। এটা নির্ভর করে চাঁদ এর কক্ষপথের কোন জায়গায় আছে তার উপর।
পৃথিবী ঘুরছে সুর্যের চারদিকে, আর চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে
চাঁদের প্রথম ও শেষ চতুর্থকের সময় এর অর্ধেক অংশ আলোকিত হয়, কিন্তু এ সময়ের চাঁদ উজ্জ্বলতায় পূর্ণিমার চাঁদের মাত্র ৮ ভাগ। দুই চতুর্থকের সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দৃশ্যমান অংশের অর্ধেক দেখা যায়। এ সময় চাঁদ যথাক্রমে মধ্য রাতে উদিত হয় বা অস্ত যায়।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য
প্রতি মাসের বিভিন্ন সময় চাঁদকে বিভিন্ন নক্ষত্রের আশেপাশে দেখা যায়। যেমন চিত্রা, আলডেবারান ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
চাঁদ নিয়ে লেখা সব নিবন্ধঃ এখানে
সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/75891/why-does-the-moon-shine/
Category: articles

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

জ্বলন্ত গ্যাসের বিশাল এক অগ্নিগোলক আমাদের সূর্য। এর আলো এবং তাপ পেয়েই পৃথিবী হয়েছে সবুজ শ্যামল। তবে সূর্যের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট নয়। এর কোর, মানে কেন্দ্রভাগে তীব্র মহাকর্ষের কারণে অত্যাধিক চাপ ও তাপমাত্রা তৈরি হয়। এই তাপমাত্রা হয় ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৭ মিলিয়ন ফারেনহাইট) পর্যন্ত।
২০০৭ সালে মহাকাশযান হিনোদে এই ছবি তোলে

কেন্দ্রে নিউক্লকিয়ার ফিউসান বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচুর শক্তি (তাপ, আলো ইত্যাদি) উৎপন্ন হয়। এই শক্তি ছড়িয়ে পড়ে আরও বাইরের দিকে, পৃষ্ঠে এবং বায়ুমণ্ডলে। শুরুতে শক্তি পৌঁছে বিকিরণ অঞ্চলে (radiative zone)। এখানে এই শক্তি সর্বোচ্চ ১০ লাখ বছর পর্যন্ত এদিক- ওদিক ছোটাছুটি করে। এর পর এটি চলে আসে পরিচলন অঞ্চলে (convective zone)। এখানে তাপমাত্রা ২০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩৫ লাখ ফারেনহাইট) নিচে নেমে আসে। এখানে তৈরি হয় উত্তপ্ত আয়নিত গ্যাসের (প্লাজমা) বড়ো বড়ো বুদ্বুদ। এরা এখান থেকে পরবর্তী স্তর ফোটোস্ফিয়ার বা আলোকমণ্ডলের দিকে উঠতে থাকে।
আরো দেখুনঃ
☛  এক নজরে সূর্য

আলোকমণ্ডলের তাপমাত্রা ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা দশ হাজার ফারেনহাইট। সূর্যের এখানকার
বিকিরণই আলো হিসেবে ধরা পড়ে। এই আলোকমণ্ডলে অবস্থিত সৌর দাগ বা সৌরকলঙ্ক (sunspot) আশেপাশের দাগের চেয়ে কম উত্তপ্ত এবং কালো। বড়ো দাগগুলোর কেন্দ্রে তাপমাত্রা চার হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামতে পারে।
বায়ুমণ্ডলে পরের স্তরটি হল বর্ণমণ্ডল বা ক্রোমোস্ফিয়ার (Chromosphere)। এর তাপমাত্রা আলোকমণ্ডলের চেয়ে কম। মাত্র ৪৩২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উজ্জ্বল আলোকমণ্ডলের তীব্রতার কারণে এই স্তরের আলো দৃশ্যমান হয় না। কিন্তু চন্দ্রগ্রহণের সময় আলোকমণ্ডল চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়লে একে বলয়ের মতো দেখা যায়।
তাপমাত্রা হঠাৎ করে আবার বেড়ে যায় এর করোনা বা বহিস্থ বায়ুমণ্ডলে। এই অঞ্চলের অপর নাম কিরীট বা ছটামণ্ডল। এটা শুধু সূর্যগ্রহণের সময়ই দেখা যায়। এই সময় এর প্লাজমা মুকুটের বিন্দুর মতো বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২০ লাখ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
সূর্য সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো ও বেশি ভরের বস্তু। এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে গড়ে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার বা নয় কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। এখান থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে ৮ মিনিট ১৯ বা ২০ সেকেন্ড সময় লাগে। এটাকেও দূরত্বের একটি একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অর্থ্যাৎ, সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ৮ আলোকমিনিট দূরে অবস্থিত।
আরও পড়ুনঃ
পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?
আলোকবর্ষ কাকে বলে?
জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

সূত্রঃ
১। http://solarscience.msfc.nasa.gov/corona.shtml
২। http://www.space.com/17137-how-hot-is-the-sun.html
Category: articles
প্রশ্নঃ পৃথিবী যদি সেকেণ্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে নিজ অক্ষের উপর ঘুরতে থাকে তাহলে মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে স্থির দেখায় কেন?
অত জোরে নিজ অক্ষের উপর ঘুরলে তো মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় বাংলাদেশে অবতরণ করতে গেলে তো আমেরিকায় চলে যাওয়ার কথা! আর মহাকাশ থেকে তো পৃথিবীকে পাগলের মত ঘুরতে দেখা যায় না, তাহলে এর ব্যাখ্যা কি?
[রাকিব হাসান]

উত্তরঃ
প্রথমত, পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর সেকেন্ডে ৩০ কিমি. বেগে ঘুরছে না। বিষুব অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ হল ঘণ্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। আপনি যেটি উল্লেখ করেছেন সেটি হল সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ বেগ। কিন্তু তাতে আপনার প্রশ্ন বাতিল হচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ 
 ☛ পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত?
 ☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য কী?

পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরছে। দুই মেরুর ঠিক মাঝখানে বিষুব অঞ্চল অবস্থিত।
তাছাড়া আবর্তন বেগ পৃথিবীর সব জায়গায় সমান নয়। বিষুব রেখা থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে আবর্তন বেগ কমে যায়। আমাদের বাংলাদেশে পৃথিবীর আবর্তন হচ্ছে সেকেন্ডে ৪২৪ মিটার করে।
কিন্তু তবু প্রতি সেকেন্ডে ৪৬৪ বা ৪২৪ মিটার বেগও খুব একটা ছোট নয়। এই গতিতে যেতে থাকলে কোনো বাস তিনি সেকেন্ড পার হবার আগেই এক কিমি. পথ পার হয়ে যাবে। তাহলে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন মহাকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে না কেন?

একটা গল্প শুনি। একবার রাশিয়ায় একজন লোক দাবি করলেন তিনি খুব সহজে ভ্রমণ করার একটি কৌশল বের করেছেন। দরকার হবে শুধু একটি বেলুন। ধরুন কেউ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যেতে চাইছেন। তাহলে বাংলাদেশ থেকে একটি বেলুনে চেপে উপরে উঠে যেতে হবে। ইতোমধ্যে পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে বেলুনের নিচে ইউরোপ এসে যাবে। এখন নেমে পড়লেই হল। খুব সহজ ভ্রমণ। বিমান আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই এভাবে মিটে যেত।
এই কৌশল বাস্তবে কাজ করে না। এর কারণ হল, আমরা যখন বেলুনে চেপে উপরে উঠব, তখনো আমরা পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের মধ্যেই থাকব। ঘুরতে থাকব পৃথিবীর সাথেই। এটা যদি না হত তাহলে আমাদের কষ্ট করে বেলুনে চড়ার দরকার ছিল না। মাটি থেকে এক লাফ দিয়ে উপরে উঠে ৩ সেকেন্ড পরে নামলেই দেখা যেত এক কিলোমিটারের বেশি পশ্চিমে চলে গেছি। বাস্তবে আমরা যখন আকাশ পথে ভ্রমণ করি, তখনো পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরতেই থাকি।
বিমান নিজেও পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরতে থাকে 
এ জন্যেই বিমান থেকে তাকালেও আমরা পৃথিবীকে স্থিরই দেখব।
মূল কারণ পৃথিবীর অভিকর্ষ এতটা শক্তিশালী যে আমরা এর থেকে অনেক উপরে উঠলেও এর অভিকর্ষীয় টানের সীমানার মধ্যেই থেকে যাই। আর এই টানের কারণেই কিন্তু পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল আছে। আমাদের মাথার উপরে যে বায়ুমণ্ডল সেটিও পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরছে। আরেকটি মজার ব্যাপার হল, একটু আগে বলেছি কেউ লাফ দিলে তিন সেকেন্ডে এক কিলোমিটারেরর বেশি পথ যেতে পারবেন। আসলে যাবেন ঠিকই। কিন্তু পৃথিবী যদি তাকে নিজের অভিকর্ষ দ্বারা ধরে না রাখত তবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরার কারণে কিছুক্ষণ পরই তিনি পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। পৃথিবী ছুটে চলে যেত কক্ষপথ ধরে। এছাড়াও পৃথবীর অভিকর্ষ যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হত, তবে আমরা কেন্দ্রবিমুখী বলের কারণে এর পৃষ্ঠ থেকে আলাদা হয়ে যেতাম।
আরও পড়ুনঃ
পৃথিবীর আবর্তনের কারণে আমরা পড়ে যাই না কেন?

আবার বেলুনের ঘটনায় ফিরে আসি। বেলুনকে কি এমন কোনো উচ্চতায় পাঠানো সম্ভব না, যেখানে এটি পৃথিবীর সাথে ঘুরবে না? নিচে এসে আমরা দেখব পায়ের তলার পৃথিবী ঠিকই ঘুরে গেছে?
হ্যাঁ, সম্ভব। সেক্ষেত্রে বেলুনকে অনেক বেশি বেগ দিয়ে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে এটা বেলুন দিয়ে সম্ভব না। এই কাজ করা হয় রকেটের মাধ্যমে। এর জন্যে রকেটের প্রাথমিক বেগ হতে সেকন্ডে অন্তত ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার। এই বেগকে বলা হয় মুক্তি বেগ।
আরও পড়ুনঃ 
মুক্তি বেগের পরিচয়

এখন কথা হল, পৃথিবীর উপরের সব জায়গা থেকেই কি পৃথিবীকে স্থির দেখায়? অবশ্যই না। শুধু পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের অভ্যন্তর থেকেই এমনটা দেখাবে। আমরা টেল্কিস্কোপ দিয়ে সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহদের আবর্তন দেখি, কারণ আমরা এদের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের এতটা ভেতরে নই যে এরা আমাদেরকেসহ ঘুরবে। একইভাবে আমরা যদি যথেষ্ট দূরে গিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকাই তাহলে একেও ঘুরতে দেখব। আবর্তন ও প্রদক্ষিণ দুটোই দেখা যাবে।
দেখুন নিচের ভিডিও অনেক দূর থেকে সৌরজগৎসহ বিভিন্ন নক্ষত্রদের ঘূর্ণন দেখা যাচ্ছে। কারণ এই ছবি তোলা হয়েছে এদের অনেক দূর থেকে, এদের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ভেতর থেকে নয়।

এখন বাকি প্রশ্ন হল, মহকাশযান ফিরে আসার সময় এক জায়গায় অবতরণ করতে গিয়ে আরেক জায়গায় চলে যায় না কেন? এটাও এতক্ষণে মোটামুটি স্পষ্ট হবার কথা। মহাকাশযান ফিরে আসার বিভিন্ন কৌশলে প্রথমে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে স্বাভাবিকভাবে অবতরণ করে।
মহাকাশযানের ভেতরে আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা থাকে এটি কখন, কীভাবে কোথায় অবতরণ করবে। ফলে পৃথিবীর আবর্তনের কারণেতো দূরের কথা, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরলেও কোনো সমস্যা হয় না। 
Category: articles

শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০১৬

ইদানিং রাতের আকাশে গ্রহরা বেশ উজ্জ্বল। খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচটি গ্রহের মধ্যে তিনটিই এখন খুব উজ্জ্বল। এরা হল বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শনি। এদের মধ্যে বৃহস্পতি সবচেয়ে উজ্জ্বল। তবে আজকের রাতের আকাশে চাঁদের সাথে মঙ্গলের অবস্থানই সবচেয়ে দারুণ দৃশ্য।
চাঁদ, মঙ্গল ও শনির ছবি 

আশেপাশেই আছে শনি। এক্টমি নিচে ও উত্তরে। অন্য দিকে বৃহস্পতি আছে মাথার উপর থেকে কিছুটা পশ্চিম দিকে। রাত বাড়ার সাথে সাথে সবাই আস্তে আস্তে চলে যাবে পশ্চিমে। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

টেলিস্কোপের মাধ্যমে রাতের আকাশের সৌন্দর্য চলে আসে হাতের নাগালে। কিন্তু টেলিস্কোপ কেনার আগে একটু বুদ্ধি খাটানো দরকার। না হলে দেখা যাবে, টেলিস্কোপ রাতের আকাশের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেকেই আবার এত উচ্চ কনফিগারেশনের টেলিস্কোপ কিনে ফেলেন যার কোন প্রয়োজনই নেই, অথবা যা বিগিনারদের জন্যে উপযুক্ত নয়। তাহলে কী করলে ভালো হয়? চলুন দেখা যাক।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য 

আমরা জ্যোতির্বিদ্যার বইয়ে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রাতের আকাশের দারুণ দারুণ ছবি দেখি। মনে রাখতে হবে এই ছবিগুলো সাধারণ টেলিস্কোপে তোলা নয়। এসব ছবি তোলা হয় উচ্চ ক্ষমতার টেলিস্কোপ, ক্যামেরার দীর্ঘ সময়ের এক্সপোজার বা স্পেইস টেলিস্কোপ দিয়ে। এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে আকাশের বস্তুদের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য চলে আসে চোখের খুব কাছে। অনেক সময় কোনো কোনো ছবি একাধিক ডিভাইসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।
তাই বলে হতাশ হবার কোনো প্রয়োজন নেই। ছোট্ট একখান টেলিস্কোপ আপনার চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করতে সক্ষম। আপনার টেলিস্কোপের প্রথম লক্ষ্যই হবে চাঁদ। এটিতো রাতের আকাশের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল বস্তু। এমনকি ৩০ পাওয়ারের (৩০ পাওয়ারের অর্থ বস্তুটাকে ৩০ গুণ কাছে থেকে দেখলে যেমন দেখা যেত তেমন দেখা) একটি টেলিস্কোপ আপনাকে চাঁদের কালো অঞ্চল, উঁচু- নিচু অঞ্চল এবং এর শত শত খাদও দেখিয়ে দেবে। আরও বেশি শক্তির টেলিস্কোপ হলে চাঁদের পুরোটাই টেলিস্কোপের আইপিসে (যেখানে চোখ রাখা হয়) এঁটে যাবে। দেখা যাবে এটি ক্রমশ দৃষ্টি থেকে সরে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে পৃথিবীর আবর্তনের কারণে এটি পশ্চিমে সরে যাচ্ছে বলে। এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনার মনে হবে, আপনি আর এ জগতে নেই। মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন একজন নভোচারী  হিসেবে!
২০ থেকে ৩০ পাওয়ারের টেলিস্কোপ আপনার সামনে গ্রহদেরকেও দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলবে। কিন্তু পাওয়ার যদি হয় ৪০, আপনি চাঁদের মতো বুধশুক্র গ্রহেরও দশা (বড়ো- ছোট হওয়া) দেখতে পাবেন। দেখবেন মঙ্গলের লাল রঙের ছড়াছড়ি, বৃহস্পতির প্রধান চারটি উপগ্রহ যা গ্যালিলিও সবার আগে দেখেছিলেন, শনির বলয় ও উপগ্রহ টাইটান, তারার মতো দেখতে ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ। আরও দেখবেন (অন্ধকার আকাশ হলে ভালো হয়) ডাবল স্টার, নক্ষত্র গুচ্ছ, নেবুলা, প্রায় আড়াই লাখ দূরের অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি ইত্যাদি।
এখন বাস্তবতা হল, এই জিনিসগুলো দেখার জন্যে আপনি যদি মুখিয়ে থাকেন, তাহলে টেলিস্কোপ কেনার আগে অন্তত একটিবার একটি বাইনোকুলার বা দুরবিন কেনার কথা ভাবুন। শুনতে হাস্যকর লাগলেও পেশাদার ও অপেশাদার দুই ধরনের জ্যোতির্বিদদেরই পরামর্শ এটাই। আপনি যদি একজন পোড়-খাওয়া আকাশ পর্যবেক্ষককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে উত্তর পাবেন এ রকম,
প্রথমে কিছু দিন খালি চোখে আকাশ দেখুন, এরপর একটি বাইনোকুলার কিনুন।
বাইনোকুলার কিনতেঃ
অনেকেই বাইনোকুলারকে একেবারেই অবহেলা করেন। কিন্তু সত্যি বলতে, অনেকগুলো কাজের জন্যে বাইনোকুলারই হচ্ছে সেরা ডিভাইস। একটি ৭ পাওয়ারের বাইনোকুলার দামেও স্বস্তা, বহন করতেও ঝামেলা কম। আরেকটু পাওয়ার বাড়িয়ে নিলেই এটি আপনাকে সাধারণ টেলিস্কোপের চেয়ে ভালো সেবা দিবে। আমার নিজের ২০ পাওয়ারের দুরবিন দিয়ে চাঁদের স্পষ্ট দৃশ্যসহ খালি চোখের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি তারা দেখি। অন্যদের মতোই বাইনোকুলারে চোখ রেখে রাতের আকাশ দেখে আমি অবাক ও মুগ্ধ না হয়ে পারিনি।
অনেকেই ৭ x ৫০ দুরবিন বেশি ব্যবহার করেন। এখানে ৭ হচ্ছে এর পাওয়ার। বস্তুটিকে ৭ গুণ কাছ থেকে দেখলে যেমন দেখা যেতে এটা দিয়ে তাই বোঝায়। আর ৫০ হচ্ছে এর অভিলক্ষ্যের ব্যাস।
ছবিতে দেখুনঃ-
দুরবিনের হিসাব বুঝতে হলে এর আইপিস ও অভিলক্ষ্য চিনতে হবে
টেলিস্কোপে ও বাইনোকুলার নিয়ে আরও নিবন্ধ পড়তে চোখ রাখুন এইএই লিঙ্কে। 
Category: articles

সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য-পিপাসুরা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। কিন্তু খালি চোখে আমরা ঠিক কতগুলো তারা দেখতে পাই? প্রশ্নটির উত্তর এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব নয়। এটা নির্ভর করে আপনার বয়স, চোখের ক্ষমতা, এলাকা, ঋতু, আবহাওয়া, চাঁদ থাকা না থাকা ইত্যাদিসহ অনেকগুলো বিষয়ের উপর। কিন্তু তবুও একটা উত্তর যদি শুনতেই হই তবে সংখ্যাটা হবে কয়েক হাজার। গল্প- উপন্যাসের বইতে যে লাখ লাখ তারার কথা থাকে তা নিছকই বাড়াবাড়ি।
আমেরিকার টেক্সাসের ম্যাকডোনাল্ড পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের কাছে আকাশের দৃশ্য
আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।
চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি।

মহাবিশ্বে মোট কত তারা আছে জানেন? তা কেউ জানে না। কারণ সত্যিকারের মহাবিশ্ব কত বড়ো তাই আমরা জানি না। তবে আমরা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কথা বলতে পারি, অর্থ্যাৎ মহাবিশ্বের প্রায় চৌদ্দশো কোটি বছরের প্রসারণে এর যত দূর পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা। আধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা অন্তত ১০ হাজার কোটি গ্যালাক্সি দেখতে পাই। প্রতি গ্যালাক্সিতেই গড়ে আবার ১০ হাজার কোটি তারকা থাকে। তাহলে শুধু আমাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যেই কত কত তারা ভাবুনতো একবার! ১ এর পরে অন্তত ২২টা শূন্য দিলে যা হয় ততগুলো!
এর মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই আছে প্রায় চারশো বিলিয়ন বা চল্লিশ হাজার কোটি তারা। আমরা খালি চোখে যাদেরকে দেখি তারা সব এখানকারই তারকা।
যেসব তারার আপাত উজ্জ্বলতা (+৬) অথবা (+৬.৫) এর নিচে আমরা শুধু তাদেরকেই খালি চোখে দেখি। আপাত উজ্জ্বলতার মান বেশি হওয়া তারার কম উজ্জ্বলতা বোঝায়।
সর্বোচ্চ (+৬.৫) মাত্রার তারা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই
আরও পড়ুনঃ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমরা সবাই হয় উত্তর নয়ত দক্ষিণ গোলার্ধে বাস করি। বাংলাদেশে থাকায় আমরা আছি উত্তর গোলার্ধে। এখন উভয় গোলার্ধ থেকে দেখা তারার সংখ্যা কিন্তু সমান হবে না। এমনকি একই গোলার্ধেও অক্ষাংশের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যাবে আকাশের তারার সংখ্যা। অন্য দিকে, আপনি যখন রাতে আকাশের দিকে তাকালেন তখনওতো প্রায় অর্ধেক তারা রয়ে গেছে পৃথিবীর উল্টো পাশের আকাশে। আর সূর্য সব সময় কিছু না কিছু তারাকে ঢেকে রাখে। এরাই হল রাশিচক্রের তারা। এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে এদেরকে দেখা যায় না। তাই তারা গুনতে হলে কয়েক মাস এ জন্যেও অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রাশিচক্র কাকে বলে?

তাহলে আসলে কত তারা দেখা যায়। ঠিক আছে, আপনি যদি মাসের পর মাস সময় নিয়ে দুই গোলার্ধ ঘুরে এসে চাঁদহীন আকাশের তারাগুলো গুনতে পারেন, তবে সব মিলিয়ে প্রায় নয় হাজার তারা খালি চোখে দেখবেন। আগেই বলেছি, আমরা খালি চোখে সর্বোচ্চ ৬.৫ মাত্রার নক্ষত্র দেখতে পাই। ইয়েল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ ডরিট হফলেইট এই সীমা পর্যন্ত তারগুলো গুনে ফেলেছেন। সংখ্যাটি হয়েছে ৯০৯৬।
এটা হচ্ছে সর্বমোট সংখ্যা। এবার দুই গোলার্ধ ভাগ করে দিলে ভাগে পড়বে গড়ে ৪৫৪৮টি তারা। সব সময় আবার আকাশের এক অংশ আমাদের উল্টো পাশে থাকে। তাই আবার দুই দিয়ে ভাগ দিলে পাব ২২৭৪ টি তারা। এ জন্যেই আমরা বলি খালি চোখে আমরা একবারে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই।
আরও পড়ুনঃ উজ্জ্বল তারাদের গল্প
এখানে প্রধান ২০টি তারকা খুঁজে বের করার উপায় ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বলা আছে।

কিন্তু সাথে একখানা দুরবিন রাখুন। এই সংখ্যা লাফ দিয়ে উঠে যাবে ২ লাখে! আপনি দেখবেন ৯ মাত্রার তারাগুলোও। ১৩ মাত্রার তারা দেখাতে সক্ষম এমন টেলিস্কোপ হাতে পেলে আপনি দেড় কোটি পর্যন্ত তারা দেখতে পাবেন। দারুণ, তাই না!

সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/102630/how-many-stars-are-there-in-the-universe/
২। http://www.skyandtelescope.com/astronomy-resources/how-many-stars-night-sky-09172014/
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৯ জুন, ২০১৬

পৃথিবীকে সৌরজগতের কেন্দ্র ধরে নিলে শুক্র গ্রহের গতিপথ দেখতে দারুণ সুন্দর মনে হয়। এক্ষেত্রে শুক্র গ্রহের গতিপথ দেখতে গোলাপ ফুলের পাপড়ির একটি পেন্টাগ্রাম তৈরি করে। আট বছর পরপর এটি একই দিনে আকাশের একই জায়গায় ফিরে আসে। 
শুক্র গ্রহ পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করছে ধরে নিলে এর গতিপথ এমন দেখা যায়। এখানে ২০১৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এর গতিপথ দেখানো আছে। 
 ছবিটাকে অবশ্য একটু সিম্পল করে আঁকা হয়েছে। 

তথ্য সূত্রঃ Earth Sky

Category: articles

শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১৬

তিমি ছায়াপথ আসলেই দেখতে তিমির মত

হ্যাঁ, দেখতে তিমির মত লাগে বলেই গ্যালাক্সিটি এ নাম পেয়েছে। এর প্রকৃত নাম এনজিসি ৪৬৩১। এটি একটি সর্পিল বা কুন্ডলিত (Spiral) ছায়াপথ। এর দূরত্ব ২ কোটি ৫০ লাখ আলোকবর্ষ। প্রান্তিকভাবে দেখলে একে দেখতে অনেকটাই তিমি মাছের (তিমি আসলে মাছ নয়) মত দেখায়। এটি আকারে অনেকটা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মতই। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০১৬

চিত্রা (Spica) রাতের আকাশের ১৫ তম উজ্জ্বল নক্ষত্র। এটি রাশিচক্রের নক্ষত্র। ১৩টি রাশিচক্রের মধ্যে কন্যামণ্ডলীতে এর অবস্থান। কন্যামণ্ডলীতে উজ্জ্বলতায় সেরা।

খুঁজে পাবার উপায়
এর আগে ৪র্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীর কথা জেনেছিলেন। স্বাতী পাওয়া গিয়েছিল সপ্তর্ষীমণ্ডলীর সাহায্যে, সপ্তর্ষী থেকে বৃত্তচাপ এঁকে। বৃত্তচাপটি আরেকটি বাড়িয়ে দিলেও পাবেন চিত্রা। মে, জুন,জুলাই মাসগুলো এদেরকে দেখার অন্যতম সেরা সময়। জুনের প্রথম সপ্তাহে রাত ১০টার দিকে স্বাতী একেবারে মাথার উপর থাকে। চিত্রা তার দক্ষিণে।

সপ্তর্ষী থেকে স্বাতী ও চিত্রা 


Category: articles

সোমবার, ৩০ মে, ২০১৬

রাতের আকাশে চোখ নিক্ষেপ করলেই হাজার হাজার তারার আলো আমাদের চোখে ধরা দেয়। হাজার হাজার বলা অবশ্য ভুল। মেঘহীন পরিষ্কার রাতের আকাশে বড়জোর ২ থেকে আড়াই হাজার তারা দেখা যায়। আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।

চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি। যাই হোক, আমরা দেখতে চাই নক্ষত্রদের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল।


আমরা নিশ্চয়ই জানি, রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হল লুব্ধক। এরপরের অবস্থানে আছে যথাক্রমে সুহাইল, আলফা সেন্টোরি, স্বাতী, ভেগা ইত্যাদি। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে প্রাথমিক কিছু বিষয় জেনে রাখলে সুবিধা হবে।

তারা ও গ্রহের পার্থক্য কী?
সাধারণত রাতের আকাশে আমরা যা দেখি চাঁদ ছাড়া তাদের বাকী সবাইকে আমরা তারা বলি। কিন্তু এসব বস্তুদের মধ্যে ‘তারা’ যেমন আছে, তার পাশাপাশি আছে গ্রহ, বিভিন্ন সময় থাকতে পারে ধূমকেতু বা উল্কা। আবার থাকতে পারে কৃত্রিম জিনিসও। বিমানের কথা না হয় বাদই দিলাম। রাতের আকাশে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকেই কিছু দিন পরপর আন্তার্জাতিক মহাকাশ স্টেশন দেখা যায়।

তাহলে তারা কারা? তারার পরিচয় সঠিকভাবে দিতে হলে বলতে হবে তারকা বা নক্ষত্র। পৃথিবী বা অন্য গ্রহদের মত তারকাদের কিন্তু কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না। এদের জীবনের প্রাথমিক ভাগে অভ্যন্তরভাগে তাপ নিউক্লিয় সংযোজন (ফিউশন) বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিরামভাবে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি হতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে আমাদের সূর্যসহ অন্যান্য তারকারা আলো ও তাপ উৎপন্ন করে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই রয়েছে ১০০ বিলিয়ন থেকে ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। এদের সবার আবার  আমাদের সূর্যের মত গ্রহব্যাবস্থা নেই অবশ্য। মহাবিশ্বের প্রায় ৫০% নক্ষত্রই বাইনারি স্টার সিস্টেমের সদস্য। এক্ষেত্রে দুটি নক্ষত্র একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তাহলে বলা যায় এরা একে অপরের গ্রহ?

না। অন্য কারো চারদিকে ঘুরলেই গ্রহ হয়ে যায় না। গ্রহদের নিজস্ব আলো তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এরা কোন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। আমরা রাতের আকাশে খালি চোখে পাঁচটি গ্রহ দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি এরা সবাই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধকের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল।

আমাদেরকে আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে- সেটা হচ্ছে রাতের আকাশের বস্তুদের আপাত উজ্জ্বলতা বা অ্যাপারেন্ট ম্যাগনিটিউড (Apparent magnitude)। একটি বস্তুকে পৃথিবী থেকে দেখতে কতটা উজ্জ্বল লাগে সেটাই হচ্ছে তার আপাত উজ্জ্বলতার পরিমাপ। এটা বস্তুর প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি থেকে আলাদা জিনিস। কারণ, বাস্তবে বেশি দীপ্তিমান হলে দূরত্বসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবী কোন তারকাকে অন্য তারকার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল মনে হতেই পারে। যেমন রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক কিন্তু সবেচেয়ে বেশি দীপ্তিমান ৫০টি তারকার মধ্যেও নেই। তারকার উজ্জ্বলতা পরিমাপ করা হয় লগারিদম স্কেলে। উজ্জ্বলতার মান যত বেশি হয় তার উজ্জ্বলতা হয় তত কম।

আরও পড়ুন
» আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

আরেকটি বিষয় জেনে রাখি। আকাশের বুকে তারকাদের ঠিকানা। আপনারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা সম্পর্কে জানেন। পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে কল্পিত রেখার নাম নিরক্ষ বা বিষুব রেখা (Equator)। এখন আকাশকে মাথার উপরে একটি গম্বুজের মত কল্পনা করুন। যদিও আসলে তারাগুলো পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত তবু রাতের আকাশে এদেরকে এরকম কোন কল্পিত গবম্বুজে ছাঁটানো লাইটের মতই মনে হয়। এটা ধরে নিলে তারাদেরকে অবস্থান নির্ঢারণ করাও সহজ হয়ে যায়। তাহলে আকাশকে গম্বুজ কল্পনা করলেন। আমরা বোঝার জন্যে যাকে গম্বুজ কল্পনা করলাম তার সঠিক নাম খ-গোলক (Celestial Spehere)। এবার বিষুব রেখার উপরে খ-গোলকের মধ্যে একটি রেখা কল্পনা করুন। একে বলা হয় খ-বিষুব।

খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তারাদের অবস্থান অনেকটা পৃথিবীর অক্ষাংশের মতই বের করা হয়। তবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমরা উত্তর ও দক্ষিণের জন্যে মানের আগে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ কথাটা যোগ করি। যেমন বাংলাদেশে অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। কিন্তু খ-গোলকের ক্ষেত্রে উত্তরে হলে এর আগে + চিহ্ন এবং দক্ষিণে মাইনাস চিহ্ন (-) বসানো হয়। আর এর আনুষ্ঠানিক নাম ডেক্লাইনেশন (Declination) বা বাংলায় বিষুব লম্ব।

অন্য দিকে পূর্ব পশ্চিমের অবস্থান নির্ণয়ের জন্যে দ্রাঘিমার মত একটি বিষয় আছে। এর নাম বিষবাংশ (Right ascension)। তবে এতে একটু ঝামেলা আছে এবং বোঝা একটু কষ্টকর। এর কারণ পৃথিবী নিজের অক্ষের সাপেক্ষে আবর্তন করার কারণে আমাদের সাপেক্ষে দ্রাঘিমা অপরিবর্তিত থাকলে খ-গোলক কিন্তু এই আবর্তনের জন্যেই আমাদের সাপেক্ষে ঘুরতে থাকে। তাই এই বিষয়টি আপাতত আলোচনা করলাম না। তাতে আমাদের আপাতত খুব বেশি অসুবিধাও হবে না, যদি আমরা আর একটি কনসেপ্ট বুঝে নেই।

আরো পড়ুন
» বিষুব লম্ব কাকে বলে?

এটি হল তারামণ্ডলী। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ আকাশের কাছাকাছি অবস্থানের কিছু তারকাদের একত্রে কোন প্রাণী বা কাল্পনিক চরিত্রের কথা কল্পনা করত। ১৯৩০ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি এই চিহ্নিত অঞ্চলগুলোকে কিছুটা পরিমার্জন ও পরিববর্ধন করে পুরো খ-গোলককে মোট ৮৮টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেকটি তারাই এই ৮৮টির কোনটিতে পড়েছে। বিখ্যাত কিছু তারামণ্ডলী (Constellation) হল আদম সুরত বা কালপুরুষ, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, বকমণ্ডলী ইত্যাদি।

তারামণ্ডলী অ তারাভুজের মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। তারামণ্ডলী ছারাও অনেক সময় কিছু তারাকে একত্র করে কিছু প্রাণী বা জ্যামিতি চিত্র কল্পনা করা হয়। এরা হল তারাভুজ। যথাস্থানে আমরা এর প্রয়োগ দেখবো।
কোন তারা কোন তারামণ্ডলীতে অবস্থিত এর অবস্থান বের করা আর কঠিন হয় না এবং পাশাপাশি এর বিষুব লম্ব জানলে আরো নিখুঁততভাবে এর অবস্থান জানা যায়। পুরোটা নিখুঁৎ হতে হলে বিষবাংশ না জানলেও হয়। জানলে সুবিধা হয় অবশ্যই।

বিরক্তি এসে যাচ্ছে, না! , তারাদের গল্প শোনানোর লোভ দেখিয়ে এসব কী প্যাঁচাল পাতানো হচ্ছে। ঠিক আছে, এবার আমরা এক এক করে দেখছি-

থুক্কু! আরো দুয়েকটি লাইন না বললেই নয়। বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। ফলে, আমাদের মাথার উপরে খ-গোলকের +২৩ বিষুব লম্ব অবস্থিত। তাহলে আমরা যেসব তারাকে ঠিক মাথার উপরে দেখবো বুঝতে হবে এরা খ-বিষুব থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে অবস্থিত। আর খ-বিষুব পুরো খ-গোলককে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ- এই দুই অংশ বিভক্ত করেছে।

পুরো আকাশ গোলক ৩৬০ ডিগ্রি। আমরা একসাথে আকাশের অর্ধেক তথা ১৮০ ডিগ্রি দেখতে পারি। ফলে দুই খ-মেরুর মাঝখানে কৌণিক দূরত্ব ১৮০ দূরত্ব। আমরা উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত হলেও বিষুব রেখার ২৩ ডিগ্রি উত্তরে থাকায় আমরা উত্তর মেরুর দক্ষিণেও ২৩ ডিগ্রি দক্ষিণের তারাও দেখবো। আর দক্ষিণে দেখবো ৯০-২৩ বা প্রায় ৬৭ ডিগ্রির মত। তবে দিগন্তের কাছাকাছি অবস্থানের তারারা নানা কারণে আমাদের চোখে আসতে বাধা পায়। এর মূল কারণ ঘর-বাড়ি বা দূরবর্তী শহরের আলো। অর্থ্যাৎ বলতে চাইছি, আমরা উত্তর গোলার্ধে আছি বলে আমাদের দেখা সব তারকা উত্তর গোলার্ধেই অবস্থিত- এমনটি ভাবা ঠিক হবে না।
এবার সত্যি বলছি,  উজ্জ্বল তারাদের আলো আর পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখবো না।

১। লুব্ধক (Sirius):
নীল এই নক্ষত্রটিই রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল। এটি মূলত দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে থাকলেও সহজেই বাংলাদেশের দক্ষিণ আকাশে দেখা যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস একে দেখার সেরা সময়। বিখ্যাত তারামণ্ডলী কালপুরুষ বা আদম সুরতের সাথে থাকে বলে একে খুঁজে বের করাও দারুণ সহজ। একে খুঁজে পেতে হলে আদম সুরতের (Orion) কোমরের দিকে অবস্থিত তিনটি তারকায় গঠিত ওরিনয়ন’স বেল্ট থেকে বরাবর পেছেনে যেতে হবে। সামনে পড়া উজ্জ্বল তারাটিই নির্ঘাত লুব্ধক। এর অবস্থান ক্যানিস ম্যাজর (Canis Major) তারামণ্ডলীতে।
আদম সুরত ও লুব্ধক

আপাত উজ্জ্বলতাঃ  -১.৪৬
বিষুব লম্বঃ – ১৭ ডিগ্রি (এই পরিমাপের ক্ষেত্রে ডিগ্রির ভগ্নাংশকে বাদ দিয়েছি)
দূরত্বঃ ৮.৬৯ আলোকবর্ষ (আলোর এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব। নিচের সব ক্ষেত্রেই দূরত্বের এই এককটি ব্যবহার করবো আমরা)

২। সুহাইল (Canopus):
এর অপর নাম অগস্ত্য বা ক্যানোপাস। তারাটির অবস্থান খুব বেশি দক্ষিণে (বিষুব লম্ব মাইনাস ৫২) হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে একে দেখা সহজ। শহর থেকে অবশ্য একটু কঠিন। তবে গ্রামের পরিষ্কার আকাশে একে খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। একে খুঁজে পাবার উপায় হল আদম সুরতে রাইজেল ও লুব্ধক তারা দুটিকে যোগ করে লুব্ধক থেকে নিচের দিকে একটি লম্ব আঁকতে হবে। লুব্ধক থেকে রিগেলের প্রায় দ্বিগুণ দূরত্ব পাওয়া যাবে ক্যানোপাসকে।
২য় উজ্জ্বল নক্ষত্র সুহাইল

আপাত উজ্জ্বলতাঃ -.৬২
বিষুব লম্বঃ -৫২ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩০৯ আলোকবর্ষ

৩। আলফা সেন্টোরিঃ
এটিও দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। আলফা সেন্টোরি সিস্টেমের নক্ষত্রটি এর সঙ্গী প্রক্সিমা সেন্টোরির চেয়ে উজ্জ্বল। অথচ প্রক্সিমা সেন্টোরি সূর্যের (এবং সেই কারণে পৃথিবীরও) নিকটতম নক্ষত্র হওয়া সত্ত্বেও খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। এই নক্ষত্রকে শহর থেকে (বাংলাদেশের) দেখা প্রায় অসম্ভব। গ্রামে গেলে দেখা সম্ভব যদি নির্বিঘ্ন দিগন্ত থাকে, যেহেতু বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ দিকে সর্বোচ্চ মাইনাস ৬৭ বিষুব লম্বের তারা দেখা সম্ভব (থিওরিটিক্যালি) এবং এর বিষুব লম্ব মাইনাস ৬০ ডিগ্রি। কিন্তু দেখা যাবে খুবই সামান্য সময়ের জন্যে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ -.২৮
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪.৩২

৪। স্বাতী (Arcturus):
উজ্জ্বল তারাদের মধ্যেই এটিই প্রথম যার অবস্থান আকাশের উত্তর গোলার্ধে। লাল দেখতে তারাটি খালী চোখে দৃশ্যমান লোহিত দানবদের মধ্যে অন্যতম । একে খুব সহজেই পাওয়া যায় সপ্তর্ষীমন্ডলীর সাহায্যে। সপ্তর্ষীর চামচ বা পেয়ালার আকৃতির অংশের লেজকে পেছন দিকে বাড়িয়ে এগোতে থাকলে প্রাপ্ত লাল বস্তুটিই স্বাতী। আরো সামনে গেলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা (Spica) যার রোল নং হচ্ছে ১৫।
সপ্তর্ষীমোণ্ডলীর মাধ্যমে স্বাতী ও চিত্রা নক্ষত্র খুঁজে পাবার উপায়

আপাত উজ্জ্বলতাঃ মাইনাস ০.০৫
বিষুব লম্বঃ +১৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৬.৭২

৫। অভিজিৎ (Vega):
৫ম উজ্জ্বল নক্ষত্রটিরও অবস্থান উত্তর গোলার্ধে। ফলে বাংলাদেশ থেকে একেও দেখা খুবই সহজ। অন্য দিকে এটি আবার বিখ্যাত তারাভুজ (Asterism) সামার ট্রায়াঙ্গেল এরও উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। এই তারাভুজের অপর দুটি নক্ষত্র হচ্ছে শ্রবণা (Altair) ও পুচ্ছ (Deneb)। গ্রীষ্মকাল শুরু হলেই এই তারাগুলো রাতের আকাশে হাজিরা দেওয়া শুরু করে। এমনকি শীতের শুরুতেও এদেরকে দেখা যায়। তবে এ সময় এরা থাকে পশ্চিমাকাশে- ডুবু ডুবু।



এর আপাত উজ্জজ্বলতা ০.৩।
দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫.০৪ আলোকবর্ষ। অবস্থান খ-গোলকের +৩৮ ডিগ্রিতে।

৬। ক্যাপেলা (Capella):
রাতের আকাশের সবচেয়ে বিখ্যাত তারাভুজ উইন্টার সার্কেল বা উইন্টার হেক্সগনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হওয়ায় একে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। উইন্টার সার্কেল হচ্ছে আকাশের ৬টি খুব উজ্জ্বল তারাদের নিয়ে তৈরি একটি তারাভুজ। এর তারাগুলো হল যথাক্রমে লুব্ধক, প্রভাস, ক্যাপেলা, পোলাক্স, আলডেবারান ও রাইজেল। উজ্জ্বলতায় এদের ক্রম যথাক্রমে ১, ৮, ৬, ১৭, ১৪ ও ৭।

উইন্টার সার্কেল বা হেক্সাগনে ক্যাপেলাসহ অন্যান্য নক্ষত্ররা 

আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.০৮
বিষুব লম্বঃ +৪৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪২.৮

৭। রাইজেল (Rigel):
আদম সুরতের বাম পায়ে এর অবস্থান। চিনে নিতে অসুবিধা হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। অন্য দিকে ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি, এটি উইন্টার সার্কেলেরও অন্যতম নক্ষত্র। আদম সুরত বা কালপুরুষের (Orion) উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এটি। উপরের ছবিতে খেয়াল করুন, ওরিয়ন’স বেল্টের এক পাশে রাইজেল এবং আরেক পাশে বিটলজুস অবস্থিত। তবে এটি খ-বিষুবের দক্ষিণে অবস্থিত। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ থেকে দেখতে বিন্দুমাত্রও অসুবিধা নেই।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.১৮
বিষুব লম্বঃ -৮ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৮৬৩

৮। প্রভাস (Procyon)
এর অপর নাম সরমা। এটিও উইন্টার সার্কেলের অন্যতম নক্ষত্র। শখের জ্যোতির্বিদদের আরেকটি সহজ শিকার। লুব্ধক ও রাইজেলকে উইন্টার সার্কেলের বৃত্তচাপের অংশ মনে করে লুব্ধক থেকে রাইজেল যে দিকে তার উল্টো দিকে গেলেই দেখা মিলবে প্রভাসের। [উপরের চিত্র দেখুন]
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪০
বিষুব লম্বঃ +৫ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১১.৪৬

৯। আর্দ্রা (Betelgeuse):
আদম সুরতের মধ্যে থাকা একটি লাল নক্ষত্র।  রাতের আকাশে চোখে পড় অন্যতম লোহিত দানব (Red giant)। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের খুব প্রিয় তারকা। কারণ, এটি যে কোন মুহূর্তে আতশবাজির মত ফেটে উঠবে। কারণ রেড জায়ান্ট দশায় থাকা তারকারা সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে সমগ্র গ্যালাক্সিকে উজ্জ্বল করে তোলে। চিনে নিতে উপরের ছবি দেখুন। আগেই বলেছি ওরিয়নের বেল্ট থেকে রাইজেল যে দিকে তার উল্টো দিকে থাকে বিটলজুস। তবে এটি একটি বিষম তারা। এর মানে হল, এটি সময় সময় উজ্জ্বলতার পরিবর্তন করে। তাই অনেক সময় এর রোল নং ৯ এর বদলে ১০ হয়ে যায়।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪৫
বিষুব লম্বঃ +৭ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪৯৮

১০। আখেরনার (Acherner):
এটি খুব বেশি দক্ষিণে অবস্থিত। তবু বাংলাদেশ থেকে দেখা অসম্ভব নয়। কিন্তু শহর থেকে দেখা একটু কঠিন। আদম সুরতের ডান পাশ থেকে নদীর মত দেখতে ইরিডেনাস বা যামীমন্ডলীর যাত্রা শুরু। এর একেবারে প্রান্তে আখেরনারের অবস্থান।
 



আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪৫
বিষুব লম্বঃ -৫৭ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৩৯

১১। হেডার (Hadar):
আমাদের উত্তর গোলার্ধের জন্যে এটি দেখা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এটি সেন্টোরাস তারামণ্ডলীতে অবস্থিত। আর এই তারামণ্ডলীটি সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। আমরা ২৩ ডিগ্রিতে থাকায় বুঝতেই পারছেন একে দেখার জন্যে কেমন বেকায়দায় আছি আমরা। একে দেখার মত নির্বিঘ্ন দিগন্ত পাওয়া হবে সোনার হরিণ পাবার মত।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৬১
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৯২

১২। শ্রবণা (Altair):
আগেই বলেছি  সামার ট্রায়াঙ্গেলের অন্যতম নক্ষত্র এটি। ফলে শীত কাল আসতে থাকলে এটি আস্তে আস্তে পশ্চিমে যেতে থাকে। এক সময় আর রাতের আকাশে একে দেখা যায় না। আবার দেখায় যায় গ্রীষ্মের শুরুতে। তবে যাদের ভোরে ওঠার অভ্যাস আছে তারা এপ্রিলেই ভোরের পূব আকাশে একে দেখতে পারেন। একে খুঁজে নিন পূর্বের অভিজিতের মত সামার ট্রায়াঙ্গেলে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৭৬
বিষুব লম্বঃ +৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৬.৭৩

১৩। অ্যাক্রাক্স (Acrux):
বাংলাদেশ থেকে একে দেখার আশা করা অনুচিত। এটি ক্রাক্স তারামণ্ডলীতে অবস্থিত যেটি ২০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের উত্তরে দেখা যায় না। তাই একে নিয়ে আপাতর বেশি মাথা ঘামাতে চাই না।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৭৭
বিষুব লম্বঃ -৬৩ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩২২

১৪। আলডেবারান (Aldebaran):
আরেকটি বিখ্যাত লোহিত দানব। আদম সুরতের মাধ্যমে একেও খুব সহজেই খুঁকে নেওয়া যায়। আদমের বেল্ট থেকে প্রায় সোজা ডানে গেলেই একে পাওয়া যাবে। আর বাঁইয়ে গেলে? লুব্ধক। আগেই দেখেছি আমরা। এটিও উইন্টার সার্কেলের সদস্য। এটি বৃষমণ্ডলীর উজ্জ্বলতম তারা।
আদম সুরতের মাধ্যমে আলডেবারান নক্ষত্র খুঁজে পাওয়া যায়
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৮৭
বিষুব লম্বঃ +১৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৬৬.৬৪

১৫। চিত্রা (Spica):
সপ্তর্ষীর চামচ থেকে লেজ বরাবর বৃত্তচাপ এঁকে প্রথমে স্বাতী (রোল নং ৪) এবং আরো সামনে গিয়ে পাওয়া যাবে চিত্রাকে। এটি আবার রাশিচক্রের সদস্য কন্যামণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে কক্ষপথে ঘোরার সময় ১২ মাসের বিভিন্ন সময় আকাশে বিভিন্ন তারা দেখা যায়। আর পৃথিবীর এই গতির কারণে খ-গোলকে সূর্যের একটি কাল্পনিক চলন পথ তৈরি হয় যাকে ইক্লিপ্টিক বা সূর্যপথ বলে। এই অঞ্চলে থাকা তারামণ্ডলীগুলোকে রাশিচক্র বলে। তাই বলে কিন্তু আমরা জ্যোতির্বিদ্যা ছেড়ে জ্যোতিষবিদ্যায় চলে যাইনি। ওদের করা রাশিচক্রে হিসাব সম্পূর্ণ ভুল ও অবৈজ্ঞানিক। তাদের মতে রাশিচক্রের তারামণ্ডলী ১২ টি, কিন্তু এর আসল সংখ্যা হবে ১৩।

আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৯৮
বিষুব লম্বঃ -১১ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৫০

১৬। জ্যোষ্ঠা (Antares):
কাঁকড়াবিছার মত দেখতে তারামণ্ডলী বৃশ্চিকের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এটি। এই তারামণ্ডলীটি সব সময় আদম সুরতের উল্টো দিকে থাকে। আদম সুরত ডুবলে এর উদয় ঘটে। বৃশ্চিকের বুক বরাবর তারাটির অবস্থান। এটি কিছুটা দক্ষিণে হলেও সহজেই বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান।
বৃশ্চিক মণ্ডলী 
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.০৫
বিষুব লম্বঃ -২৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৫৫৪

১৭। পুনর্বসু (Pollux):
মিথুন মণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। উইন্টার সার্কেল বা হেক্সাগনের (শীতের ষড়ভুজ) একটি শীর্ষে এটি বসে আছে বলে একে চেনাও দারুণ সহজ কাজ। তবে এর সাথেই এর জমজ তারা ক্যাস্টরও বসে আছে। আগের উইন্টার সার্কীলের ছবিটি দেখুন। যে তারাটির অবস্থান প্রভাসের দিকে সেটি হচ্ছে পোলাক্স, আর যেটি ক্যাপেলার দিকে আছে  সেটি হচ্ছে ক্যাস্টর। ‘ক্যা-ক্যা’ দিয়ে মনে রাখা যেতে পারে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.১৬
বিষুব লম্বঃ +২৮ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৩.৭৮

১৮। মৎস্যমুখ (Fomalhaut):
একে বলা হয় নিঃসঙ্গ তারা। এর কারণ এর আশেপাশে কোন উজ্জ্বল তারা নেই। বছরের শেষের মাসগুলোতে দক্ষিণ আকাশে একে দেখা যায়।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.১৬
বিষুব লম্বঃ -২৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৫.১৩

১৯। পুচ্ছ (Deneb):
এর আগেও এর কথা বলেছি। অভিজিৎ ও শ্রবণার সাথে মিলে এটি গড়ে তুলেছে সামার ট্রায়াঙ্গেল। এটি আবার বিখ্যাত তারামণ্ডলী বকমণ্ডলীতে অবস্থিত। প্রথম আবিষ্কৃত ব্ল্যাক হোল সিগ্নাস এক্স-১ এই বকমণ্ডলীর দিকে অবস্থিত।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.২৫
বিষুব লম্বঃ +৪৫ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৪১২

২০। মিমোসা (Mimosa):
এটিও দক্ষিণে অবস্থিত। ফলে বাংলাদেশের জন্য এটি সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। এটি আবার বিষম তারা। এর গড় উজ্জ্বলতা ১.২৫ হলেও এটি ১.২৩ থেকে ১.৩১ এর মধ্যে উঠা-নামা করে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.২৫
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৭৯
রাতের আকাশের অসংখ্যা উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে মাত্র ২০টি নিয়ে আমরা আলাপ করলাম। অন্য কোম সময় বাকি তারাদের গল্প করার সুযোগের আশা রেখে আজকে বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ।

সূত্রঃ
[১] https://en.wikipedia.org/wiki/Apparent_magnitude
[২] http://www.ianridpath.com/brightest.htm
[৩] এই লিঙ্কে ৩০০টি সেরা উজ্জ্বল নক্ষত্রের তালিকা পাওয়া যাবে 
Category: articles

সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

গত ১০ বছরের মধ্যে মঙ্গল গ্রহ এখন সেরা উজ্জ্বল। এটি এখন সন্ধ্যা নামলেই হাজির হয় পূবাকাশে। বৃহস্পতি তখন থাকে প্রায় মাথার উপরে। দুজনের উজ্জ্বলতায় টক্করও লেগেছে বেশ। অবশ্য বৃহস্পতি একটু এগিয়ে। লুব্ধক এখন সন্ধ্যার পরেই পশ্চিমে ডুবে যায়। তাই বৃহস্পতি সেদিক থেকে একজন প্রতিযোগী হারালেও মঙ্গল ময়দানের লড়াই চালিয়ে রেখেছে।
রাতের আকাশে মঙ্গল গ্রহ

মঙ্গলের সাথেই আছে আরেকটু গ্রহ শনি। শনি অবশ্য উজ্জ্বলতায় বেশ পিছিয়ে। তবে শনি সব সময় প্রায় একই রকম উজ্জ্বল থাকবে। মঙ্গল এখান সেরা উজ্জ্বল হলেও মাস্খানেক পর আবার অনুজ্জ্বল হতে থাকবে। 
Category: articles

বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬

দূরত্বের দিক দিয়ে বৃহস্পতি সূর্যের পঞ্চম গ্রহ। এর ভর সৌরজগতের অন্য সব গ্রহের সম্মিলিত ভরের আড়াই গুণ। এর প্রধান উপাদান গ্যাস। তাই এর নাম গ্যাস জায়ান্ট।
টেলিস্কোপে দেখা বৃহস্পতি গ্রহ 
গ্রহটির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যঃ

⏩ বৃহস্পতি সৌরজগতের চতুর্থ উজ্জ্বল বস্তু
এটি রাতের আকাশের ৩য় উজ্জ্বল বস্তু। কারণ, রাতেতো আর সূর্য থাকে না। শুধু সূর্য, চাঁদ এবং শুক্র গ্রহই এর চেয়ে বেশি উজ্জ্বল। অন্য গ্রহদের চেয়ে একেই সবচেয়ে বেশি ভালোভাবে চোখে পড়ে। গ্রহদের মধ্যে শুক্র সবচেয়ে উজ্জ্বল হলেও একে কোন সময় সন্ধ্যার পরে আবার কখনো ভোরের আকাশে দেখা যায়। বেশ কিছু সময় এটি সূর্যের এত কাছে থাকে যে একে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, বিশেষ করে শহর থেকে।

⏩ প্রাচীন ব্যাবীলনীয়রা প্রথম বৃহস্পতির পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখে
এটা খৃষ্টপূর্ব ৭ম বা ৮ম শতকের কথা। রোমদের দেবতার রাজা ছিল জুপিটার। গ্রিকদের কাছে এটি ছিল বজ্র দেবতা জিউস।

⏩ বৃহস্পতির দিনের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোট
বৃহস্পতি নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খেতে মাত্র ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নেয়। ফলে এতে দিনের দৈর্ঘ্য ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট হয়। এই দৈর্ঘ্য গ্রহদের মধ্যে স্বল্পতম। এর অর্থ হচ্ছে গ্রহটির আবর্তন বেগ খুব তীব্র। সত্যি বলতে এই বেগ হচ্ছে সেকেন্ডে ১২.৬ কিমি.। এই তীব্র বেগের কারণে গ্রহটির মেরু অঞ্চল বেশ অনেকটা চেপে গিয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। পৃথিবীও একই কারণে মেরু অঞ্চলে একটু চ্যাপ্টা, অবশ্য তা পরিমাণে বৃহস্পতির চেয়ে কম।

⏩ বৃহস্পতি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ১১.৮ বছর লাগে
পৃথিবী থেকে দেখতে আকাশে বৃহস্পতির বেগ খুব ধীর। ফলে এটি এক তারামণ্ডলী থেকে আরেকটিতে যেতে অনেক সময় লাগে। এখানে বেগ বলতে আমরা পৃথিবীর আবর্তনের জন্যে আকাশের বস্তুদের পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী বেগকে বোঝাচ্ছি। বলছি রাতের আকাশের তারকাদের তুলনায় আপেক্ষিক বেগের কথা। তারকাদের তুলনায় বেগের গতির তারতম্যের কারণেই গ্রহদেরকে তারকাদের থেকে আলাদা করে চেনা যায়।

⏩ বৃহস্পতির ঝড়ের চিহ্ন
টেলিস্কোপে বৃহস্পতির গায়ে একটি বড় লাল দাগ দেখা যায়। এর নাম গ্রেট রেড স্পট। ৩৫০ বছর ধরে এর প্রকোপ খুব তীব্র। এই লাল দাগটি এত বড় যে এর মধ্যে ৩টা পৃথিবীকে বসিয়ে দেওয়া যাবে। 

⏩ বৃহস্পতির অভ্যন্তরভাগে পাথর, ধাতু ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল প্রধানত হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত হলেও বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে ভেতরে গেলে পাওয়া যাবে সঙ্কুচিত হাইড্রোজেন গ্যাস এবং তরল ধাতব হাইড্রোজেন। আর এর কোর বরফ, পাথর ও ধাতুতে তৈরি।

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহের মালিক বৃহস্পতি
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ গ্যানিমিড। এর পরেই অবস্থান ক্যালিস্টোর। এর চারটি উপগ্রহ প্রথম গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন। এই চারটি হল আয়ো, গ্যানিমিড, ইউরোপা ও ক্যালিস্টো।
সূত্রঃ

[১] http://space-facts.com/jupiter/
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Jupiter
Category: articles

রবিবার, ১৫ মে, ২০১৬

রাতের আকাশের তারাসহ বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের জন্যে বিষুবলম্বের সাথে পরিচয় থাকা দরকার। আপনারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা সম্পর্কে জানেন। পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে কল্পিত রেখার নাম নিরক্ষ রেখা বা বিষুব রেখা (Equator)। বিষুব রেখার সমান্তরালে উত্তরে বা দক্ষিণে যে রেখাগুলো কল্পনা করা হয় সেগুলোই হল অক্ষাংশ রেখা। এই রেখার উপরের কোনো বিন্দুর নাম অক্ষাংশ (Latitude)। দ্রাঘিমা বলা হয় উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যাওয়া রেখাগুলোর উপরের অবস্থানকে। বিষুবলম্ব বুঝতে হলে অন্তত অক্ষাংশ বোঝা প্রয়োজন।

পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা

বাংলাদেশের অক্ষাংশ
বাংলাদেশ বা এর পাশ্ববর্তী অঞ্চল থেকে তারা চিনতে বিষুবলম্ব সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিষুব রেখা থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে অবস্থিত। ফলে এর অক্ষাংশ হল ২৩ ডিগ্রি উত্তর। ঠিক এই জায়গা দিয়েই দুটি ক্রান্তীয় রেখার একটি কর্কটক্রান্তি (Tropic of cancer) রেখা চলে গেছে পূর্ব- পশ্চিমে।
পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে

এবার মূল আলোচনায় আসি।

আমাদের আকাশকে মাথার উপরে একটি গম্বুজের মত কল্পনা করুন। যদিও আসলে তারাগুলো পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত তবু রাতের আকাশে এদেরকে এরকম কোন কল্পিত গম্বুজে ছাঁটানো লাইটের মতই মনে হয়। এটা ধরে নিলে তারাদেরকে অবস্থান নির্ধারণ করাও সহজ হয়ে যায়। তাহলে আকাশকে গম্বুজ কল্পনা করলেন। আমরা বোঝার জন্যে যাকে গম্বুজ কল্পনা করলাম তার সঠিক নাম খ-গোলক (Celestial Spehere)। এবার বিষুব রেখার ঠিক বরাবর উপরে খ-গোলকের মধ্যে একটি রেখা কল্পনা করুন। একে বলা হয় খ-বিষুব।

আকাশের নামকরণ 

খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তারাদের অবস্থান পৃথিবীর অক্ষাংশের মতোই বের করা হয়। তবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমরা উত্তর ও দক্ষিণের জন্যে মানের আগে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ কথাটা যোগ করি। যেমন বাংলাদেশে অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। কিন্তু খ-গোলকের ক্ষেত্রে উত্তরে হলে এর আগে + চিহ্ন এবং দক্ষিণে মাইনাস চিহ্ন (-) বসানো হয়। এই অবস্থানগুলোর নামই হল বিষুবলম্ব (Declination)।

কোনো তারার বিষুবলম্ব (+২৩) ডিগ্রি হলে এটি বাংলাদেশে আমাদের ঠিক মাথার উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাবে। যেমন, রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীর বিষুবলম্ব (+১৯) ডিগ্রি। তাই এটি পূর্ব দিকে উঠার পরে এক সময় আমাদের মাথার উপরে চলে আসে। পরে আবার চলে যায় পশ্চিম দিকে।

আবার রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র লুব্ধকের বিষুবলম্ব হল (-১৬) ডিগ্রি। ফলে কখনো আমাদের মাথার উপর আসে না, দক্ষিণ দিক দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে চলে যায়। আবার ধ্রুবতারা বিষুবলম্ব প্রায় (+৯০) ডিগ্রি। তাই উত্তর মেরুতে গেলে এটি ঠিক মাথার উপর থাকবে।

আরো পড়ুন
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
তারামণ্ডলীর পরিচয়
☛ তারা পরিচিতিঃ এ সপ্তাহের তারা 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...