আজ ১৫ আগস্ট।
১৮৯২ সালের এই তারিখে জন্মগ্রহণ করেন ফরাসী পদার্থবিদ লুই ডি ব্রগলি।
কোয়ান্টামতত্ত্ব নিয়ে তার যুগান্তকারী কাজই সারা বিশ্বের নিকট তাকে পরিচিত করে তুলেছে। ১৯২৪ সালে তিনি তাঁর এক গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেন যে, তিনি ইলেকট্রনের তরঙ্গ ধর্মের আবিস্কার করেছেন এবং প্রস্তাব করেন যে সকল পদার্থেরই তরঙ্গ ধর্ম রয়েছে। এই কাজের জন্য ১৯২৯ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
ব্রগলির বাবা-মায়ের বেঁচে যাওয়া ৪ সন্তানের মাঝে তিনি ছিলেন ৪র্থ। ১৮৯২ সালের ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের দিপ্পে (Dieppe) শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার সামাজিক দিক থেকে অনেক উচ্চবংশীয় ছিল। তার বাল্যকালের পড়াশোনা বাড়িতেই গৃহশিক্ষকের নিকট শুরু হয়। ১৯০৬ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই মরিস ডি ব্রগলির পরামর্শে ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রথম স্কুলে যান। স্কুল পাশ করার পর ইতিহাস নিয়ে লুই ডি ব্রগলির পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল। স্কুলে পদার্থবিজ্ঞান, ফ্রেঞ্চ, দর্শন, ইতিহাস, রসায়ন ও গণিতে তার মত ভাল ছাত্র আর কেউ ছিল না। ১৯০৯ সালে ব্রগলি মাত্র ১৭ বছর বয়সেই দর্শন ও গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বড় ভাই মরিসের উৎসাহেই বিজ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করেন লুই ডি ব্রগলি। ১৯১৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানের উপর একটি ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) তিনি ফরাসী সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তাকে আইফেল টাওয়ারে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন তিনি এই স্থান হতেই বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং তরঙ্গ নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর বড় ভাই মরিসের ল্যাবে তার সাথেই কাজ শুরু করেন ডি ব্রগলি।
মরিসের ল্যাবে ডি ব্রগলি যতগুলি কাজ করেছেন তার বেশিরভাগই ছিল এক্স-রশ্মি ও আলোর তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কিত। এইসব পরীক্ষণ হতেই ডি ব্রগলি আলোর কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা (Wave-partiucle dulaity) নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেন। আরো ভালোভাবে বললে, 'যে কোনো কিছুর' কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। শীঘ্রই ১৯২৪ সালে ডি ব্রগলি পদার্থের কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা নিয়ে তত্ত্বটিকে তার পিএইচডি থিসিস পেপারে প্রস্তাব করলেন। সৌভাগ্যক্রমে এই থিসিস পেপার বিজ্ঞানী ল্যাংজেভিনের হাত হয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের হাতে এসে পড়ে। তিনি ডি ব্রগলির এই ধারণার অনেক বেশি প্রশংসা করেন। তরঙ্গ-বলবিদ্যার উত্থানে আইনস্টাইন এর এই প্রশংসা অনুপ্রেরণা রূপে কাজ করেছিল।
লুই ডি ব্রগলির এই তত্ত্ব পরমাণুর অভ্যন্তরে ইলেকট্রনের গতির হিসাব-নিকাশ সম্পর্কিত জিজ্ঞাসার সমাধান এবং সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানে সক্ষম হয়। কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা পরবর্তীতে ১৯২৭ সালে পৃথকভাবে জিপি থমসন, ক্লিনটন ডেভিসন এবং লেস্টার জারমারের পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয়। এ থেকে সুস্পষ্ট রূপে প্রমাণিত হয় যে পদার্থও তরঙ্গ ধর্ম প্রদর্শন করতে পারে। এই অসাধারণ কাজের জন্য ১৯২৯ সালে লুই ডি ব্রগলি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
লুই ডি ব্রগলি তার ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর সরবোনেই অবস্থান করছিলেন। তিনি সেখানে নব্য প্রতিষ্ঠিত হেনরি পয়েনকেয়ার ইন্সটিটিউশনে ১৯২৮ সালে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি অবসরের যাবার পূর্ব পর্যন্ত ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৫ সালে ডি ব্রগলি ফ্রান্সের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ইউনেস্কো প্রদত্ত কলিঙ্গ পুরস্কার লাভ করেন এবং ব্রিটিশ রয়্যাল সোসাইটির বৈদেশিক সদস্যপদ সাথে সাথে ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমীর সদস্যপদ লাভ করেন। উনবিংশ শতকের শুরুতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশে কণা-তরঙ্গের মিল প্ল্যাংক এবং আইনস্টাইনের হাত ধরে পরর বোর হয়ে লুই ডি ব্রগলির হাতে এসে পূর্ণতা পায়।
এই পূর্ণতাদানকারী বিজ্ঞানী ১৯৮৭ সালের ১৯ মার্চ ফ্রান্সের ল্যুভেসিয়েনেসে (Louveciennes) মৃত্যুবরণ করেন। ৯৪ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকাটাও লুই ডি ব্রগলির মত বিজ্ঞানীর জন্য খুব অল্প সময় হয়ত।
নোটঃ লুই ডি ব্রগলির নামের ফরাসি উচ্চারণ হল লুই দ্য ব্রোয়ি।
তথ্যসূত্র:
১। http://www.famousscientists.org/louis-de-broglie/
২। http://en.wikipedia.org/wiki/Louis_de_Broglie
৩। কণা তরঙ্গ, রেজা এলিয়েন, বর্ণায়ন, ঢাকা, ২০০৯
১৮৯২ সালের এই তারিখে জন্মগ্রহণ করেন ফরাসী পদার্থবিদ লুই ডি ব্রগলি।
কোয়ান্টামতত্ত্ব নিয়ে তার যুগান্তকারী কাজই সারা বিশ্বের নিকট তাকে পরিচিত করে তুলেছে। ১৯২৪ সালে তিনি তাঁর এক গবেষণা পত্রে উল্লেখ করেন যে, তিনি ইলেকট্রনের তরঙ্গ ধর্মের আবিস্কার করেছেন এবং প্রস্তাব করেন যে সকল পদার্থেরই তরঙ্গ ধর্ম রয়েছে। এই কাজের জন্য ১৯২৯ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
পদার্থবিজ্ঞানী লুই ডি ব্রগলি |
ব্রগলির বাবা-মায়ের বেঁচে যাওয়া ৪ সন্তানের মাঝে তিনি ছিলেন ৪র্থ। ১৮৯২ সালের ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের দিপ্পে (Dieppe) শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার সামাজিক দিক থেকে অনেক উচ্চবংশীয় ছিল। তার বাল্যকালের পড়াশোনা বাড়িতেই গৃহশিক্ষকের নিকট শুরু হয়। ১৯০৬ সালে তার বাবা মারা যাওয়ার পর বড় ভাই মরিস ডি ব্রগলির পরামর্শে ১৪ বছর বয়সে তিনি প্রথম স্কুলে যান। স্কুল পাশ করার পর ইতিহাস নিয়ে লুই ডি ব্রগলির পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল। স্কুলে পদার্থবিজ্ঞান, ফ্রেঞ্চ, দর্শন, ইতিহাস, রসায়ন ও গণিতে তার মত ভাল ছাত্র আর কেউ ছিল না। ১৯০৯ সালে ব্রগলি মাত্র ১৭ বছর বয়সেই দর্শন ও গণিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। বড় ভাই মরিসের উৎসাহেই বিজ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করেন লুই ডি ব্রগলি। ১৯১৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানের উপর একটি ডিগ্রিও লাভ করেন তিনি।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯১৪-১৯১৮) তিনি ফরাসী সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তাকে আইফেল টাওয়ারে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ চলাকালীন তিনি এই স্থান হতেই বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং তরঙ্গ নিয়ে কয়েকটি পরীক্ষণ সম্পন্ন করেন। যুদ্ধ শেষ হবার পর বড় ভাই মরিসের ল্যাবে তার সাথেই কাজ শুরু করেন ডি ব্রগলি।
মরিসের ল্যাবে ডি ব্রগলি যতগুলি কাজ করেছেন তার বেশিরভাগই ছিল এক্স-রশ্মি ও আলোর তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কিত। এইসব পরীক্ষণ হতেই ডি ব্রগলি আলোর কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা (Wave-partiucle dulaity) নিয়ে চিন্তা করা শুরু করেন। আরো ভালোভাবে বললে, 'যে কোনো কিছুর' কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা নিয়ে চিন্তা শুরু করেন। শীঘ্রই ১৯২৪ সালে ডি ব্রগলি পদার্থের কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা নিয়ে তত্ত্বটিকে তার পিএইচডি থিসিস পেপারে প্রস্তাব করলেন। সৌভাগ্যক্রমে এই থিসিস পেপার বিজ্ঞানী ল্যাংজেভিনের হাত হয়ে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের হাতে এসে পড়ে। তিনি ডি ব্রগলির এই ধারণার অনেক বেশি প্রশংসা করেন। তরঙ্গ-বলবিদ্যার উত্থানে আইনস্টাইন এর এই প্রশংসা অনুপ্রেরণা রূপে কাজ করেছিল।
কণা- তরঙ্গ দ্বৈততা |
লুই ডি ব্রগলি তার ডক্টরেট ডিগ্রি লাভের পর সরবোনেই অবস্থান করছিলেন। তিনি সেখানে নব্য প্রতিষ্ঠিত হেনরি পয়েনকেয়ার ইন্সটিটিউশনে ১৯২৮ সালে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি অবসরের যাবার পূর্ব পর্যন্ত ১৯৬২ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৪৫ সালে ডি ব্রগলি ফ্রান্সের পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৫২ সালে ইউনেস্কো প্রদত্ত কলিঙ্গ পুরস্কার লাভ করেন এবং ব্রিটিশ রয়্যাল সোসাইটির বৈদেশিক সদস্যপদ সাথে সাথে ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমীর সদস্যপদ লাভ করেন। উনবিংশ শতকের শুরুতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার বিকাশে কণা-তরঙ্গের মিল প্ল্যাংক এবং আইনস্টাইনের হাত ধরে পরর বোর হয়ে লুই ডি ব্রগলির হাতে এসে পূর্ণতা পায়।
এই পূর্ণতাদানকারী বিজ্ঞানী ১৯৮৭ সালের ১৯ মার্চ ফ্রান্সের ল্যুভেসিয়েনেসে (Louveciennes) মৃত্যুবরণ করেন। ৯৪ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকাটাও লুই ডি ব্রগলির মত বিজ্ঞানীর জন্য খুব অল্প সময় হয়ত।
নোটঃ লুই ডি ব্রগলির নামের ফরাসি উচ্চারণ হল লুই দ্য ব্রোয়ি।
তথ্যসূত্র:
১। http://www.famousscientists.org/louis-de-broglie/
২। http://en.wikipedia.org/wiki/Louis_de_Broglie
৩। কণা তরঙ্গ, রেজা এলিয়েন, বর্ণায়ন, ঢাকা, ২০০৯