এক বছর কাকে বলে? অনেক সহজ প্রশ্ন। এ কারণেই প্রশ্নের পেছনে আরেকটি উদ্দেশ্য আছে। উত্তর হিসেবে সাধারণত সবাই বলবে ৩৬৫ দিনকে এক বছর বলা হয়। এটাকে সংজ্ঞা হিসেবে মেনে নিলে অসুবিধায় পড়তে হবে। কারণ, তাহলে সেই হিসেবে দিন হচ্ছে বছরের উপাদান। অন্য কথায়, বছর হচ্ছে দিনের সমষ্টি। তাহলে দিন কখনোই বছরের চেয়ে বড় হতে পারে না, তাই না? কিন্তু না। হতে পারে। তবে সেটা আমাদের পৃথিবীতে নয়। তবে, খুব বেশি দূরেও না। আমরা যাকে শুকতারা বলি, সেই শুক্র গ্রহেই (Venus) ঘটে এর ব্যতিক্রম। এখানে বছরের চেয়ে দিনের দৈর্ঘ্য বড়। অর্থ্যাৎ, এক দিন হতে যে সময়ের প্রয়োজন হয়, ততোক্ষণে এক বছর পেরিয়ে যায়।
কীভাবে?
যদিও আমরা জানি, তবু আবার একটু জাবর কেটে জেনে নেই দিন এবং বছর আসলে কাকে বলে? কোন একটি গ্রহ নিজের অক্ষের সাপেক্ষে এক বার পূর্ণ ঘূর্ণন (আবর্তন বা Rotation) সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে দিন বলে। একে আবার আবর্তন কালও (rotational period) বলা হয় আমাদের পৃথিবীর এই কাজটি করতে লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। অন্য গ্রহে কিন্তু এই সময় ভিন্ন। তবে সেটা মাপা হয় পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্যকে আদর্শ (Standard) ধরে।
অন্য দিকে কোন গ্রহ তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ (Revolution) করে আসতে যে সময় লাগে তাকে তার এক বছর বলে। এক্ষেত্রে পৃথিবী সূর্যকে এক বার ঘুরে আসতে ৩৬৫.২৫ দিন সময় লাগে বলে এই সময়টাকে আমরা এক বছর বলি। আবার, বুধে এক বছর মানে ৮৮ দিন ইত্যাদি। এই ৮৮ দিন কিন্তু বুধের ৮৮ দিন নয়, আমাদের পৃথিবীর হিসাবে ৮৮ দিন। অর্থ্যাৎ ৮৮ × ২৪ ঘণ্টা (প্রায়)। গ্রহদের ক্ষেত্রে এই সময়টাকে আবার পর্যায়কালও বলা হয়।
এবার নিশ্চয় ব্যাপারটা খুব সহজ মনে হচ্ছে। কারণ,কোন গ্রহের আবর্তনকাল যদি এর পর্যায়কালের চেয়ে বড় হয়, তাহলেইতো এর দিন এর বছরের চেয়েও দীর্ঘ হবে। আর, ঠিক এ ঘটনাই ঘটে শুক্র গ্রহে।
সূর্যের ২য় গ্রহ শুক্রের (Venus) আবর্তন কাল ২৪৩ দিন। অন্য দিকে এই গ্রহটি সূর্যকে এক বার ঘুরে আসতে সময় নেয় প্রায় ২২৫ দিন! কী দাঁড়াল? বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু দিন শেষ হবার নামটি নেই। বছরের চেয়ে দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ দিন বেশি। উল্লেখ্য, এখানে দিন বলতে পৃথিবীর দিন তথা প্রায় ২৪ ঘণ্টা বোঝানো হচ্ছে। ]
তুলনার সুবিধার্থে সবগুলো গ্রহের দিনের দৈর্ঘ্য দেখে নেই।
বুধঃ ৫৮ দিন ১৫ ঘন্টা
শুক্রঃ ২৪৩ দিন
মঙ্গলঃ ২৪ ঘণ্টা, ৩৯ মিনিট, ৩৫ সেকেন্ড
বৃহস্পতিঃ ৯.৯ ঘণ্টা
শনিঃ ১০ ঘণ্টা, ৪৫ মিনিট, ৪৫ সেকেন্ড
ইউরেনাসঃ ১৭ ঘণ্টা, ১৪ মিনিট, ২৪ সেকেন্ড
নেপচুনঃ ১৬ ঘণ্টা, ৬ মিনিট, ৩৬ সেকেন্ড
এখন আমি যদি জিজ্ঞেস করি সূর্য কোন দিকে উদিত হয়, হয়তো সন্দেহ তৈরি হবে- আমার মাথা ঠিক আছে কিনা। আমি ঠিকই আছে। এই অদ্ভুত কাণ্ডেরও মালিকানা সেই শুক্র গ্রহেরই। আমরা জানি পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করে। আর তাই সকাল বেলায় আমরা সূর্য মামাকে পূর্ব দিগন্তে উঁকি মারতে দেখি। সৌরজগতের দুটি গ্রহের ক্ষেত্রে এটা উল্টো। একটি হল এই শুক্র, আরেকটি হল ইউরেনাস ( Uranus)। এরা দু'জনেই ঘোরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। তাই এদের সূর্যোদয় ঘটে পশ্চিমে আর সূর্যাস্ত পূবে।
কারণ, এর বায়ুমণ্ডল ৯৬.৫ % কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরা! পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে ৯৩ গুণ ভারী। ফলে, এর বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর ৯২ গুণ। ছলে বলে কৌশলে ওখানে গিয়ে যদি কার্বন ডাই অক্সাইড ও তীব্র তাপমাত্রা সহ্য করতেও পারেন, তবু এর তীব্র বায়ুমণ্ডলীয় চাপ আপনাকে এখানে টিকতে দিবে না। কারণ এই পরিমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কয়েক কিলোমিটার সাগরের নিচের চাপের সমান, যা ভর্তা হয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট।
উপগ্রহবিহীন এই গ্রহটিতে অনুসন্ধান চালানোর জন্য ৪০টির বেশি যান পাঠানো হয়। ৯০ এর দশকে নাসার পাঠানো ম্যাজেলান মিশন এর ৯৮ শতাংশ মানচিত্র তুলে আনে। এর ময়না তদন্ত করার জন্য ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ২০০৫ সালে ভেনাস এক্সপ্রেস নামক যান প্রেরণ করে। ঝুলিতে বেশ কিছু সাফল্য পুরে ২০১৪ সালে এটি কার্যক্রম শেষ করে।
[লেখাটি এর আগে ব্যাপন ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি মার্চ- ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত]
Category:
articles
কীভাবে?
যদিও আমরা জানি, তবু আবার একটু জাবর কেটে জেনে নেই দিন এবং বছর আসলে কাকে বলে? কোন একটি গ্রহ নিজের অক্ষের সাপেক্ষে এক বার পূর্ণ ঘূর্ণন (আবর্তন বা Rotation) সম্পন্ন করতে যে সময় লাগে তাকে দিন বলে। একে আবার আবর্তন কালও (rotational period) বলা হয় আমাদের পৃথিবীর এই কাজটি করতে লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। অন্য গ্রহে কিন্তু এই সময় ভিন্ন। তবে সেটা মাপা হয় পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্যকে আদর্শ (Standard) ধরে।
অন্য দিকে কোন গ্রহ তার নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ (Revolution) করে আসতে যে সময় লাগে তাকে তার এক বছর বলে। এক্ষেত্রে পৃথিবী সূর্যকে এক বার ঘুরে আসতে ৩৬৫.২৫ দিন সময় লাগে বলে এই সময়টাকে আমরা এক বছর বলি। আবার, বুধে এক বছর মানে ৮৮ দিন ইত্যাদি। এই ৮৮ দিন কিন্তু বুধের ৮৮ দিন নয়, আমাদের পৃথিবীর হিসাবে ৮৮ দিন। অর্থ্যাৎ ৮৮ × ২৪ ঘণ্টা (প্রায়)। গ্রহদের ক্ষেত্রে এই সময়টাকে আবার পর্যায়কালও বলা হয়।
এবার নিশ্চয় ব্যাপারটা খুব সহজ মনে হচ্ছে। কারণ,কোন গ্রহের আবর্তনকাল যদি এর পর্যায়কালের চেয়ে বড় হয়, তাহলেইতো এর দিন এর বছরের চেয়েও দীর্ঘ হবে। আর, ঠিক এ ঘটনাই ঘটে শুক্র গ্রহে।
সূর্যের ২য় গ্রহ শুক্রের (Venus) আবর্তন কাল ২৪৩ দিন। অন্য দিকে এই গ্রহটি সূর্যকে এক বার ঘুরে আসতে সময় নেয় প্রায় ২২৫ দিন! কী দাঁড়াল? বছর পেরিয়ে গেল, কিন্তু দিন শেষ হবার নামটি নেই। বছরের চেয়ে দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ দিন বেশি। উল্লেখ্য, এখানে দিন বলতে পৃথিবীর দিন তথা প্রায় ২৪ ঘণ্টা বোঝানো হচ্ছে। ]
তুলনার সুবিধার্থে সবগুলো গ্রহের দিনের দৈর্ঘ্য দেখে নেই।
বুধঃ ৫৮ দিন ১৫ ঘন্টা
শুক্রঃ ২৪৩ দিন
মঙ্গলঃ ২৪ ঘণ্টা, ৩৯ মিনিট, ৩৫ সেকেন্ড
বৃহস্পতিঃ ৯.৯ ঘণ্টা
শনিঃ ১০ ঘণ্টা, ৪৫ মিনিট, ৪৫ সেকেন্ড
ইউরেনাসঃ ১৭ ঘণ্টা, ১৪ মিনিট, ২৪ সেকেন্ড
নেপচুনঃ ১৬ ঘণ্টা, ৬ মিনিট, ৩৬ সেকেন্ড
![]() |
বিভিন্ন গ্রহে এক বছর |
অন্য গ্রহের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দিনের দৈর্ঘ্য পৃথিবীর কাছাকাছি। শুক্র কেন আলাদা? কেন একটা দিন এত দীর্ঘ? শুক্রের অবস্থান সূর্যের খুবই নিকটে। ফলে সূর্যকে এক বার প্রদক্ষিণ করতে এর সময় খুবই কম লাগে, মাত্র ২২৫ দিনের মত। তাহলে প্রশ্ন আসা উচিত, বুধতো সূর্যের আরো কাছে। তার তো এমন উদ্ভট অভ্যাস নেই। আসলে সমস্যা বাঁধিয়েছে শুক্রের ধীর আবর্তন গতি। এর কারণেই দিন পেরোতে বছর গড়িয়ে যায়। বুধের আবর্তন গতি স্বাভাবিক থাকায় ওর ক্ষেত্রে এই সমস্যা হয় না।
সূর্য ওঠে পশ্চিমে!
সূর্য ওঠে পশ্চিমে!
এখন আমি যদি জিজ্ঞেস করি সূর্য কোন দিকে উদিত হয়, হয়তো সন্দেহ তৈরি হবে- আমার মাথা ঠিক আছে কিনা। আমি ঠিকই আছে। এই অদ্ভুত কাণ্ডেরও মালিকানা সেই শুক্র গ্রহেরই। আমরা জানি পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করে। আর তাই সকাল বেলায় আমরা সূর্য মামাকে পূর্ব দিগন্তে উঁকি মারতে দেখি। সৌরজগতের দুটি গ্রহের ক্ষেত্রে এটা উল্টো। একটি হল এই শুক্র, আরেকটি হল ইউরেনাস ( Uranus)। এরা দু'জনেই ঘোরে পূর্ব থেকে পশ্চিমে। তাই এদের সূর্যোদয় ঘটে পশ্চিমে আর সূর্যাস্ত পূবে।
![]() |
শুক্র গ্রহ ঘোরে পৃথিবীর উলটো দিকে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে |
অন্য গ্রহের সাথে এই বড় অমিল থাকলেও পৃথিবীর সাথে কিন্তু শুক্রের ভালো মিল রয়েছে। এজন্য অনেকে একে পৃথিবীর যমজও বলে থাকেন। এর আকার পৃথিবীর চেয়ে অল্প কিছু ছোট, মাত্র ৬৫০ কিলোমিটার কম। কক্ষপথের গঠনেও রয়েছে সাদৃশ্য। ভরও কাছাকাছি, পৃথিবীর ৮১.৫ শতাংশ। কিন্তু যমজ বলতে হলে একে দুষ্ট যমজ বলতে হবে।
কারণ, এর বায়ুমণ্ডল ৯৬.৫ % কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরা! পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শুক্রের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর চেয়ে ৯৩ গুণ ভারী। ফলে, এর বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর ৯২ গুণ। ছলে বলে কৌশলে ওখানে গিয়ে যদি কার্বন ডাই অক্সাইড ও তীব্র তাপমাত্রা সহ্য করতেও পারেন, তবু এর তীব্র বায়ুমণ্ডলীয় চাপ আপনাকে এখানে টিকতে দিবে না। কারণ এই পরিমাণ বায়ুমণ্ডলীয় চাপ কয়েক কিলোমিটার সাগরের নিচের চাপের সমান, যা ভর্তা হয়ে যাবার জন্য যথেষ্ট।
উপগ্রহবিহীন এই গ্রহটিতে অনুসন্ধান চালানোর জন্য ৪০টির বেশি যান পাঠানো হয়। ৯০ এর দশকে নাসার পাঠানো ম্যাজেলান মিশন এর ৯৮ শতাংশ মানচিত্র তুলে আনে। এর ময়না তদন্ত করার জন্য ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি ২০০৫ সালে ভেনাস এক্সপ্রেস নামক যান প্রেরণ করে। ঝুলিতে বেশ কিছু সাফল্য পুরে ২০১৪ সালে এটি কার্যক্রম শেষ করে।
[লেখাটি এর আগে ব্যাপন ম্যাগাজিনের ফেব্রুয়ারি মার্চ- ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত]