Advertisement

শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

সৌরজগতে সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুন। ভরের দিক দিয়ে অবস্থান তিন-এ। আকার বড় হলেও দূরত্ব বেশি হবার কারণেই একে খুঁজে পেতে দেরি হয়েছিল। খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। সেজন্যেই এটিই সবার শেষে আবিষ্কৃত গ্রহ। ১৮৪৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একে খুঁজে পাওয়া যায়। আবিষ্কার নিয়ে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে ঘটে যায় কিছু বিতর্ক। সে আরেক কাহিনি।

আরও পড়ুনঃ 
☛ নেপচুন আবিষ্কারের গল্প 

যাই হোক, গ্রহ নক্ষত্ররা কত বড়- তার হিসাব হয় অন্তত দুইভাবে। এক, এরা আয়তনে কত বড়। ব্যাস বা ব্যাসার্ধ বলা আর আয়তন বলার মধ্যে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। যার ব্যাস বা ব্যাসার্ধ বেশি হবে, আয়তন তো তারই বেশি হবে। আরেকটি তুলনীয় বিষয় হলো কার ভর কতটা বেশি।

ব্যাসের দিক দিয়ে নেপচুনের অবস্থান গ্রহদের মধ্যে চার নম্বরে। অর্থ্যাৎ, সৌর জগতের চারটি গ্যাস জায়ান্টের মধ্যে এটি সবচেয়ে ছোট। অপর তিনটি গ্যাস জায়ান্ট হলো বৃহস্পতি, শনি ও ইউরেনাস। তবে ইউরেনাস সামান্যই বড়। গ্যাস দানবদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও অন্য চার গ্রহের তুলনায় একে দানব বলাই ভাল। আয়তন পৃথিবীর প্রায় ৫৮ গুণ। তার মানে, নেপচুনের ভেতরটা ফাঁপা করা হলে এর ভেতরে ৫৮টা পৃথিবী রেখে দেওয়া যাবে।

নেপচুন ও পৃথিবীর তুলনামূলক আকার 

গড় ব্যাসার্ধ হলো ১৫, ২৯৯ মাইল (২৪, ৬২২ কিমি.)। পৃথিবীর প্রায় চার গুণ। মানে চারটি পৃথিবীকে পাশাপাশি রাখলে নেপচুনের এক পাশ থেকে অপর পাশের প্রায় সমান হবে।

অন্যান্য বস্তুর মতোই আবর্তনের কারণে বিষুব অঞ্চলে এটি কিছুটা স্ফীত হয়ে আছে। এ আকৃতিকে বলা হয় অবলেট স্ফেরয়েড বা চাপা উপগোলক।

বিভিন্ন গ্রহের তুলনামূলক সাইজ
 বিষুব রেখা বরাবর পুরোটা ঘুরে আসতে হলে পাড়ি দিতে হবে ৯৬ হাজার ১২৯ মাইল পথ। তবে পায়ে হেঁটে কাজটি করা সম্ভব নয়। অন্য গ্যাস দানবদের মতোই এর কোনো কঠিন পৃষ্ঠদেশ নেই। ঢাকা বরফ দিয়ে।

আকারে পিছিয়ে থাকলে নেপচুন ইউরেনাসকে ভরের দিক দিয়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ভরের দিক থেকে তাই নেপচুনের অবস্থান তিন নম্বরে। পৃথিবীর ১৭ গুণেরও বেশি ভর এর।  ওপরে আছে শুধু বৃহস্পতিশনি

পৃথিবীর তুলনায় বিভিন্ন গ্রহের ভর 

ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ১.৬৩৬ গ্রাম। ইউরেনাসের মতোই এতেও শনি ও বৃহস্পতির চেয়ে বেশি পরিমাণ বরফ আছে। এ কারণেই এ দুটো গ্রহকে আইসি জায়ান্ট বা বরফ দানবও বলা হয়।

আরও পড়ুন
☛ কোন গ্রহের ভর কত
☛ অদ্ভুদ এক গ্রহ

সূত্রঃ 
১। স্পেস ডট কমঃ হাউ বিগ ইজ নেপটুন
২। ইউনিভার্স টুডেঃ সাইজ অব নেপটুন
Category: articles

শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৬

পালসার হল এক ধরনের নিউট্রন নক্ষত্র। পালসার শব্দটি আসলে পালসেটিং স্টার (pulsating star) কথার সংক্ষেপ। Pulsate শব্দের অর্থ হল স্পন্দিত হওয়া। এরা নিয়মিত বিরতিতে স্পন্দিত হয় বলেই এই নাম। এরা আবার খুব দ্রুত আবর্তিত হয়। নির্গত করে তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ। নির্গত বেতার সঙ্কেত কাজে লাগিয়েই খুঁজে বের করা হয় এদেরকে।পালসারকে মহাবিশ্বের লাইটহাউজ বা আলোকবর্তিকাও বলা হয়।

আরো পড়ুনঃ
নিউট্রন নক্ষত্র কাকে বলে?

সৃষ্টিঃ
এরা যেহেতু এক ধরনের নিউট্রন স্টার, তাই সৃষ্টিও ওদের মতোই। ধরুন, একটি নক্ষত্রের ভর সূর্যের ৪ থেকে ৮ গুণ। জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি মৃত্যুমুখে পতিত হবার সময় পরিণত হয় নিউট্রন নক্ষত্রে। ঘটে একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ। নক্ষত্রের বাইরের অংশ ছিটকে যায় মহাশূন্যে। ভেতরের অংশ গুটিয়ে ছোট্ট হয়ে যায়। এ সময় এর মহাকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে এর মধ্যে থাকা প্রোটন ও ইলেকট্রন মিলিত হয়ে নিউট্রন হয়ে যায়। এদের ভর আরো বেশি হলে হয় ব্ল্যাক হোল। আর কম হলে শ্বেত বামন (white dwarf)।

পালসার ও একটি সঙ্গী তারা 

নক্ষত্রের ভর ১ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ২ এর মধ্যে থাকলেও এরা সুপারনোভার মতো বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তবে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবার জন্যে এ পরিমাণ ভর যথেষ্ট নয়। এরা বরং নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়। এদেরই কেউ কেউ পরিণত হয় পালসারে। কেউ বা আবার হয় ম্যাগনেটার

সাইজে ছোট্ট হয়ে গেলেও এরা  কৌণিক ভরবেগ অক্ষুণ্ণ রাখে। কিন্তু সাইজ ছোট্ট হয়ে যাবার কারণে এ সময় আবর্তন বেগ প্রচণ্ড বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এরা প্রতি সেকেন্ডে বহুবার ঘুরে। এই ক্ষুদ্র ও খুব ঘন এই বস্তুরা এদের চৌম্বক ক্ষেত্র রেখা বরাবর নির্গত করে খুব শক্তিশালী বিকিরণ। বিকিরণ যে সব সময় ঘূর্ণন অক্ষের বরাবরেই থাকবে, এমন কোনো কথা নেই।


ইতিহাসঃ
১৯৬৭ সালে জোকেলিন বেল বার্নেল ও অ্যান্টনি হিউইশ প্রথম পালসার আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী মহল বিস্ময়ে হতবাক। কারণ, একেবারে নিয়মিত বিরতিতে পাওয়া যাচ্ছে বেতার সঙ্কেত। আকাশের একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে পাওয়া যাচ্ছিল সঙ্কেত। ঠিক ১ দশমিক ৩৩ সেকেন্ড পর পর সঙ্কেত খুব তীব্র হচ্ছিল। এত নিয়মিত বিরতিতে সঙ্কেত আসছে দেখে কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ তো ভেবেই বসেন, এটা হয়ত অন্য কোনো মহাজাগতিক সভ্যতার কাজ!

বার্নেল ও হিউইশ নিশ্চিত ছিলেন, এটা নিতান্তই প্রাকৃতিক ঘটনা। কোনো সভ্যতার কাজ নয়। তবু তাঁরা এর নাম দিলেন এলজিএম-১ (LGM-1)। এলজিএম মানে হল লিটল গ্রিন ম্যান বা ক্ষুদ্র সবুজ মানব। প্রথম আবিষ্কৃত পালসারটির নাম ছিল পিএসআর বি১৯১৯+২১ ( PSR B1919+21)। এর পরে আরও পালসার আবিষ্কৃত হতে থাকলে এদের প্রকৃত রহস্য আস্তে আস্তে উন্মোচিত হতে থাকে।

কিছু দিন পর কাঁকড়া নেবুলায় আরেকটি পালসার পাওয়া যায়। এর পর্যায়কাল মাত্র ৩৩ মিলিসেকেন্ড। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬০০ পালসার পাওয়া গেছে। এদের একটি তো মাত্র এক সেকেন্ডে ৭১৬ টি সঙ্কেত প্রেরণ করে। পরে পালসারদেরকে পাওয়া গেল বাইনারি জগতেও। এর ফলে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের আরেকটি স্বীকৃতি অর্জন হয়েছিল। ১৯৮২ সালে পাওয়া গেল আরেকটি বিস্ময়কর পালসার। এর আবর্তনকাল মাত্র ১ দশমিক ৬ মাইক্রো সেকেন্ড।
সৌরজগতের বাইরে প্রথম কোনো গ্রহের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছিল একটি পালসারের পাশে।

মজার তথ্যঃ
প্রথমে যখন  একটি পালসারের জন্ম হয়, তখন এর শক্তি ও আবর্তনের গতি থাকে খুব উচ্চ। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত করতে করতে এটি শক্তি হারিয়ে ফেলে। কমে যায় ঘুর্ণনের গতিও। ১ থেকে ১০ কোটি বছরের মধ্যে এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সক্রিয় থাকার সময় এরা দারুণভাবে সময় মেনে চলে। এমনকি সময়ের হিসাব রাখতে জ্যোতির্বিদরাও এদের ওপর ভরসা রাখেন। কিছু কিছু পালসারের সূক্ষ্মতা  হার মানায় আণবিক ঘড়িকেও

সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/25376/pulsars/
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Pulsar
Category: articles

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২৩ সেপ্টেম্বর। ১৮৪৬ সালের এই দিনে আবিষ্কৃত হয় সৌরজগতের অষ্টম ও সর্বশেষ গ্রহ নেপচুন। এই গ্রহটিকে আবিষ্কার করা হয় গাণিতিক হিসাবের ভিত্তিতে। অন্য গ্রহদের তুলনায় এর আবিষ্কার হয়েছে দেরিতে। এর কারণ কী জানেন?

রাতের আকাশের ৫টি গ্রহ সহজেই খালি চোখে ধরা দেয়। এগুলোর সাথে মানুষের প্রাচীন কাল থেকেই পরিচয় ছিল। সপ্তম গ্রহ ইউরেনাসও খালি চোখে দেখা সম্ভব যদি আপনি জানেন আকাশের কোন অংশে তাকাতে হবে, আর আকাশ যদি হয় পরিষ্কার এবং জায়গাটা (যেখানে দাঁড়িয়ে দেখবেন) হয় আলোক দূষণ থেকে মুক্ত এবং বেশ অন্ধকার। কিন্তু নেপচুনকে শুধু টেলিস্কোপ দিয়েই দেখা সম্ভব। আর টেলিস্কোপ যেহেতু মাত্র কয়েকশো বছর আগে জন্ম নিয়েছে তাই নেপচুনের আবিষ্কারও হয়েছে তুলনামূলক দেরিতে। 
নেপচুন গ্রহের ছবি
ফরাসী গণিতবিদ অ্যালেক্সি বুভার (Alexis Bouvard) ইউরেনাসের কক্ষপথ সম্পর্কে অনেকগুলো বিস্তারিত নথি প্রকাশ করেন। এক সময় সবাই বুঝতে পারল, আমাদের সৌরজগতের আরো গভীরে কোনো একটি গ্রহ থাকা উচিত যা ইউরেনাসের কক্ষপথে নাক গলাচ্ছে। শুরু হলো হিসাব নিকাশ। কোথায় থাকতে পারে গ্রহটি?

দুজন জ্যোতির্বিদ স্বতন্ত্রভাবে প্রস্তাবিত ৮ম গ্রহটির গাণিতিক অবস্থান নির্ণয় করলেন। একজন ব্রিটেনের জন কাউচ অ্যাডামস। অপরজন ফরাসী জ্যোতির্বিদ উরবেই লা ভেরিয়ে। দুজনকেই সহকর্মীরা হতাশ করলেন। তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হল যে গাণিতিক হিসাব থেকে সত্যিই গ্রহ খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।

নেপচুন আবিষ্কারে ভূমিকা রাখা বিজ্ঞানীরা 

জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান গ্যালের কাছে লা ভেরিয়ের হিসাব খুব মনঃপুত হল। তিনি খুঁজে বের করে ফেললেন সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ। নেপচুনকে পাওয়া গেল লা ভেরিয়ের প্রস্তাবিত অবস্থানের ১ ডিগ্রির মধ্যে। জন অ্যাডামসের প্রস্তাবিত অবস্থান থেকে গ্রহটির বিচ্যুতি ছিল ১২ ডিগ্রি। এবার দুজনেই দাবী করলেন, তিনিই প্রথম একে আবিষ্কার করেছেন। এটা নিয়ে সমগ্র বিজ্ঞান বিশ্বে তুমুল বিতর্ক হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কের প্রধান দুই পক্ষ ছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। কাকে দেওয়া উচিত নেপচুন আবিষ্কারকের খেতাব- অ্যাডামস নাকি ভেরিয়ে? আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান মহল দুজনকেই খেতাব দেয়ার পক্ষ দিলেন। ফলে, এখন তাই করা হয়। নেপচুনের আবিষ্কারক তাই দুজন- জন অ্যাডামস ও লা ভেরিয়ে। আবিষ্কারের সাল ১৮৪৬।

এখন পর্যন্ত নেপচুন গ্রহের কাছে পৌঁছতে পারা একমাত্র মহাকাশযান ভয়েজার ২, যা ১৯৮৯ সালে এর পাশ দিয়ে চলে যায়।  
বিভিন্ন গ্রহের তুলনামূলক সাইজ

সূত্রঃ
২। ইংরেজি উইকিপিডিয়াঃ ফরাসী উচ্চারণ
৩। http://earthsky.org/human-world/today-in-science-discovery-of-neptune
Category: articles

সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬

শনি সৌরজগতের ৬ষ্ঠ গ্রহ। এটিই পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ যেটি খালি চোখে দেখা যায়। তবে শনি গ্রহ সবচেয়ে বিখ্যাত এর আকর্ষণীয় বলয়ের জন্য। এই বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৬১০ সালে, গ্যালিলিওর হাত ধরে। বৃহস্পতির মতোই শনিও একটি গ্যাস জায়ান্ট। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন প্রভৃতি গ্যাস এর প্রধান উপাদান।
বলয়ধারী শনি গ্রহ

এক নজরেঃ
গড় ব্যাসার্ধঃ ৫৮, ২৩২কিমি.
ভরঃ পৃথিবীর ৯৫ গুণ।
উপগ্রহের সংখ্যাঃ ৬২
উল্লেখযোগ্য উপগ্রহঃ টাইটান, এনসেলাডাস, রিয়া ইত্যাদি
বলয়ের সংখ্যাঃ ৩০ এর বেশি (৭টি গ্রুপ নিয়ে গঠিত)
কক্ষপথের দূরত্বঃ ১,৪২৬, ৬৬৬,৪২২ কিমি. (৯.৫৪ এইউ)
পর্যায়কালঃ ১০, ৭৫৬ দিন (২৯.৫ বছর)
কার্যকর তাপমাত্রাঃ মাইনাস ১৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
অপসূরঃ ১০.১ এইউ
অনুসূরঃ ৯.০২৪ এইউ
আপাত উজ্জ্বলতাঃ (+১.৪৭) থেকে (-.২৪)
প্রথম দর্শনঃ খৃষ্টপূর্ব ৮ম শতক

পৃথিবীর তুলনায় শনি গ্রহের আকার
শনি গ্রহের তথ্য জানালাঃ
১। শনিকে খালি চোখে দেখা যায়। এটি সৌরজগতের পঞ্চম উজ্জ্বল বস্তু (পৃথিবীর আকাশে)। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-০.২৪) থেকে (+১.৪৭) এর মধ্যে উঠা-নামা করে। রাতের আকাশে একটানা বহু দিন ধরেই একে দেখা যায়। এটি যখন সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের খুব কাছাকাছি সময়ে উদয় বা অস্ত যায়, শুধু তখনই দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
গ্রহদের খোঁজখবর
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে? 

২। অতীতকালেও শনির সাথে মানুষের পরিচয় ছিল। ব্যাবিলনীয় এবং দূর প্রাচ্যের মানুষও একে চিনত। রোমান দেবতা স্যাটারনাস থেকে এর (ইংরেজি Saturn) নাম এসেছে। গ্রিকরা একে চিনত ক্রোনাস নামে।

৩। শনি সবচেয়ে চ্যাপ্টা গ্রহ। বিষুব অঞ্চলের তুলনায় এর মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ১০ ভাগের এক ভাগ কম। এর অর্থ হল, মের অঞ্চলের দিকে গ্রহটি বেশ চাপা। এর কারণ হচ্ছে, এর ঘনত্ব খুব কম, কিন্তু আবর্তন বেগ খুব তীব্র। প্রতি দশ ঘণ্টা ৩৪ মিনিটে এটি একবার এর অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরে আসে। ফলে সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে দিনের দৈর্ঘ্যের স্বল্পতার দিক দিয়ে এর অবস্থান দুই-এ।
আরো পড়ুনঃ 
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

৪। শনি সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে ২৯ বছরের বেশি সময় লাগে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্টারদের তুলনায় এর গতি খুব ধীর হবার কারণে একে প্রাচীন আসিরীয়রা Lubadsagush নামে ডাকত। এর অর্থ হচ্ছে পুরাতনদের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন।

৫। শনির বায়ুমণ্ডল অনেকগুলো মেঘপুঞ্জে বিভক্ত। সবচেয়ে উপরের স্তর মূলত অ্যামোনিয়ার বরফ দিয়ে গঠিত। এর নিচে রয়েছে তুষার। এর নিচে হাইড্রোজেন ও সালফারের বরফের উপস্থিতি লক্ষণীয়।


৬। শনির মূল উপাদান হাইড্রোজেন। ভেতরের দিকে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ক্রমশ বেশি। আরো ভেতরের দিকে হাইড্রোজেন হয়ে পড়ে ধাতব। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রমণ্ডল খুব উষ্ণ।

৭। সব গ্রহের মধ্যে শনির বলয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরা মূলত বরফ ও কার্বোনেসাস ধূলি দিয়ে তৈরি। গ্রহটিতে বলয়গুলো ১২০, ৭২০ কিমি. পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু সে তুলনায় এরা খুব সরু, পুরুত্ব মাত্র ২০ মিটারের মতো।

৮। ছোট-বড়ো মিলিয়ে শনির উপগ্রহের সংখ্যা দেড়শোর বেশি। উপগ্রহের সংখ্যা ৬২। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপগ্রহের সংখ্যা আসলে কয়েকশো। এদের সবাই হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে। টাইটান ও রিয়া এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো। এনসেলাডাসের হিমায়িত পৃষ্ঠের নিচে সাগর আছে বলে মনে হয়।

৯। শনির উপগ্রহ টাইটানের বায়ুমণ্ডল নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ (অনেকটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মতোই)। উপগ্রহটি মূলত বরফ ও পাথর দিয়ে গঠিত। এর পৃষ্ঠে রয়েছে তরল মিথেনের লেক। পৃথিবীর সাথে এর উল্লেখযোগ্য মিল থাকার কারণে এতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হয়।
আরো পড়ুনঃ 
শনির উপগ্রহে মিথেন সাগর

১০। এ পর্যন্ত ৪টি মহাকাশযান শনি গ্রহ সফর করেছে। এরা হল পাইওনিয়ার ১১, ভয়েজার ১ ও ২ এবং ক্যাসিনি- হাইগেনস মিশন। এরা সবাই শনিকে নিয়ে গবেষণা করেছে। এর মধ্যে ক্যাসিনি এখনো শনির কক্ষপথে আছে। এটি এখনো গ্রহটি ও এর বলয় এবং উপগ্রহসমূহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠাচ্ছে।

সূত্রঃ
[১] http://space-facts.com/saturn/
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Saturn
Category: articles

শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬

শুক্র সৌরজগতের ২য় গ্রহ। ২২৫ দিনে এটি সূর্যকে একবার ঘুরে আসে। অর্থ্যাৎ, কেউ যদি গ্রহটিতে বাস করতে পারত, তবে তাদের ২২৫ দিনে এক বছর হত। কিন্তু গ্রহটিতে দিনের দৈর্ঘ্য বছরের চেয়ে বেশি। এতে এক দিন হতে হতে পৃথিবীর প্রায় ২৪৫ দিন পেরিয়ে যায়। কেন? এর কারণ হচ্ছে এর আবর্তন গতি খুব ধীর। তাঁর মানে, গ্রহটিতে বছরের চেয়ে দিন বড়!
আরো পড়ুনঃ 
 অদ্ভুত এক গ্রহ

গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন, শুক্র গ্রহও বড় ছোট হয় (রাতের আকাশে পৃথিবী থেকে দেখতে, চাঁদের মত) 

এই গ্রহটি নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে অন্য গ্রহদের উলটো দিকে। ফলে এতে সূর্য ওঠে পশ্চিমে, অস্ত যায় পূর্ব দিকে। রাতের আকাশের বস্তুদের মধ্যে উজ্জ্বলতায় এর অবস্থান দ্বিতীয়, অর্থ্যাৎ চাঁদকে বাদ দিলে এটিই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। এর আপাত উজ্জ্বলতা সর্বোচ্চ হয় -৪.৬ (মাইনাস ৪.৬)। আমরা জানি, আপাত উজ্জ্বলতা যত কম হয়, বস্তুটি হয় তত বেশি উজ্জ্বল। শুক্র (শুকতারা) গ্রহের এত বেশি উজ্জ্বলতার কারণে এটি ছায়া ফেলতেও সক্ষম হয়।
আরো পড়ুনঃ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

এর কক্ষপথ পৃথিবী থেকে ভেতরের দিকে হওয়ায় একে কখোনই সারা রাত ধরে দেখা যায় না। এটি দিগন্তের উপরে সর্বোচ্চ ৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠে। এটিও পৃথিবীর মতই পাথুরে গ্রহ। এর ভর, আকার ও কক্ষপথ পৃথিবীর কাছাকাছি হওয়ায় অনেক সময় একে পৃথিবীর যমজ বলা হয়। কিন্তু পৃথিবীর সাথে এর অমিলও কম নয়। চারটি পাথুরে গ্রহের (বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল) মধ্যে এর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি, যা ৯৬% কার্বন ডাই অক্সাইডে ভরা। এর পৃষ্ঠে বায়ুর চাপ পৃথিবীর ৯২ গুণ।

বুধ গ্রহ সূর্যের সবচেয়ে নিকটের গ্রহ হলেও তাপমাত্রায় এক নম্বরে শুক্র। এর অন্যতম কারণ, এর বায়ুতে উপস্থিত কার্বন ডাই  অক্সাইড, যা পৃথিবীতেও গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্যে দায়ী। এর পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ৭৩৫ কেলভিন বা ৪৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অস্বচ্ছ সালফিউরিক এসিডে ঢাকা থাকায় একে খালি চোখে মহাশুন্য শুন্য থেকে একে দৃশ্যমান আলোতে দেখা যায় না। ধারণা করা হয়, পূর্বে এতে পানির অস্তিত্ব ছিল।
আরো পড়ুনঃ
শুক্র গ্রহে বসবাস!

পৃথিবী ও শুক্রের তুলনামূলক আকার

সূর্য থেকে এর গড় দূরত্ব ০.৭২ এইউ। এক এইউ হচ্ছে পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব। বুধ গ্রহের মতই এর কোন উপগ্রহ নেই। এর আয়তন পৃথিবীর চেয়ে একটু কম, পৃথিবীর প্রায় ৮৭ ভাগ। ভর পৃথিবীর প্রায় ৮২ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষজ ত্বরণ পৃথিবীর চেয়ে ১০% কম। ফলে, এই গ্রহে গেলে কারো ওজোন ১০% কমে যাবে। এর মুক্তিবেগ সেকেন্ডে ১০.৩৬ কিমি.। অর্থ্যাৎ, কোন বস্তুকে এই বেগে শুক্র গ্রহ থেকে নিক্ষেপ করলে এটি শুক্র গ্রহ থেকে চিরদিনের জন্যে হারিয়ে যাবে।

পৃথিবীর বাইরের গ্রহদের মধ্যে এতেই সর্বপ্রথম কোন মহাকাশযান অভিযানে যায়। ১৯৬২ সালে মেরিনার ২ নামক যানটি এই রেকর্ড করে। ১৯৭০ সালে ভেনেরা ৭ সর্বপ্রথম এতে অবতরণ করে। ১৯৯১ সালে ম্যাজেলান অরবিটার এর বিস্তারিত চিত্র ধারণ করতে সক্ষম হয়।
Category: articles

শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬

শনি গ্রহের ঘনত্ব এত কম যে একে পানিতে রাখা গেলে ভাসতে থাকবে
১. মহাবিশ্বের মাত্র ৫% বস্তু আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকিটুকু ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি।

২. নিউট্রন স্টাররা প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ বার পর্যন্ত ঘুরতে পারে।

৩. সূর্যের কেন্দ্র থেকে প্রতি সেকেন্ডে দশ হাজার নিউক্লিয়ার বোমার সমপরিমাণ শক্তি নির্গত হয়, যা আলো ও তাপ আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

৪. টেলিস্কোপ গ্যালিলিও আবিষ্কার করেননি, করেছিলেন ডাচ উদ্ভাবক জোহানেস লিপারশে। গ্যালিলিও সম্ভবত সবার আগে একে আকাশ দেখতে কাজে লাগিয়েছিলেন।

৫. ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ এত তীব্র যে এর ভেতর থেকে আলোও বের হতে পারে না, তবে হকিং রেডিয়েশনের মাধ্যমে কিছু কণা বের হতে পারে।
আরো দেখুনঃ 
☛ ব্ল্যাক হোলের গভীরে

৬. বিশাল ভারী ব্ল্যাক হোলদের সংঘর্ষে তৈরি হতে পারে মহাকর্ষ তরঙ্গ। ২০১৫ সালে এটি প্রথম সরাসরি শনাক্ত করা সম্ভব হয়

৭. কেউ ব্ল্যাক হোলের খুব কাছাকাছি চলে গেলে এর মহাকর্ষের তীব্রতা মাথা ও পায়ের দিকে এত বেশি আলাদা হবে যে মাথা ও পায়ের মাঝখানের অংশ লম্বা হয়ে সেমাইয়ের মটো হয়ে যাবে।

৮. দূরের নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি থেকে আলো আসতে এত বেশি সময় লাগে আমরা এদের দিকে তাকিয়ে এদের অতীতকে দেখতে পাই। যেমন আমরা সূর্যকে দেখি এর এর ৮.৫ মিনিট আগের অবস্থায়, সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরিকে দেখি ৪.২ বছর আগের অবস্থায় ইত্যাদি।

৯. ১০৫৪ সালে একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে কাঁকড়া নেবুলার (Crab nebula) জন্ম। তৎকালীন চীনা ও আরব জ্যোতির্বিদদের দেওয়া তথ্যমতে এটি সেই সময় এত বেশি উজ্জ্বল ছিল যে একে দিনের বেলায়ও দেখা যেত।

১০. শনি গ্রহের ঘনত্ব এত কম যে একে পানিতে রাখা গেলে ভাসতে থাকবে!

আরো দেখুনঃ
আপনি জানেন কি? (পর্ব-১)
Category: articles

রবিবার, ২৬ জুন, ২০১৬

ফরাসী জ্যোতির্বিদ চার্লে মেসিয়ে ছিলেন মূলত ধূমকেতু শিকারী। অনেকগুলো বস্তুকে তিনি এক সময় ধূমকেতু মনে করে তালিকাভূক্ত করলেও পরে জানা যায় এরা ধূমকেতু নয়। তিনি হতাশ হলেন। পরে এদের পেছনে সময় নষ্ট করা থেকে বাঁচতে এদের একটি তালিকা করলেন। তাঁর হতাশা থেকে উৎপন্ন সেই তালিকার জন্যেই বর্তমানে তিনি বিখ্যাত। বর্তমানে এই তালিকায় ১১০ টি বস্তু আছে। তাঁর নামানুসারেই বস্তুগুলোকে বলা হয় মেসিয়ার অবজেক্ট। যেমন অ্যান্ড্রোমিডা গ্যলাক্সিকে বলা হয় মেসিয়ার ৩১ বা সংক্ষেপে এম ৩১।
চার্লে মেসিয়ে 
১৭৩০ সালের এই দিনে (২৬ জুন) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা-মায়ের ১২ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দশম। অল্প বয়সেই তাঁর ৬ জন ভাই-বোন মারা যায়। ১৭৪১ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে হারান বাবাকে। অর্থনৈতিক কারণে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেলেও বাসায় বড় ভাই নিজেই তাকে পড়াতে থাকেন। ১৭৪৪ সালের ছয় লেজ বিশিষ্ট ধূমকেতু এবং ১৭৪৮ সালে তাঁর নিজ শহরে দৃশ্যমান সূর্যগ্রহণ তাঁকে জ্যোতির্বিদ্যার দিকে আগ্রহী করে তোলে। শুরু করে আকাশ দেখা। ২১ বছর বয়সে তিনি ফরাসী নৌবাহিনীর মহাকাশ বিভাগে যুক্ত হন।  ১৭৫১ সালে ফরাসী নৌবাহিনীর জ্যোতির্বিদ নিকোলা দেলিসলে তাঁকে তাঁর পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখার পরামর্শ দেন। তাঁর কথা মত, মেসিয়ে সর্বপ্রথম ১৭৫৩ সালে সূর্যের সামনে বুধ গ্রহের উপস্থিতির রেকর্ড রাখেন।
১৭৫৯ সালে তিনি মেরিন অবজারভেটরির প্রধান জ্যোতির্বিদ হন এবং ১৭৭১ সালে নিজেই নৌবাহিনীর অ্যাস্ট্রোনোমার নিযুক্ত হন।

১৭৬৪ সালে তিনি রয়েল সোয়াইটির ফেলো মনোনীত হন, ১৯৬৯ সালে হন রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স এর বিদেশি সদস্য। ১৭৭০ সালে যুক্ত হন ফ্রেঞ্চ একাডেমি অব সায়েন্স এর সাথে।
খুঁজতে গিয়েছিলেন ধূমকেতু, পেয়ে গেলেন আরো বহু কিছু। সময় বাঁচাতে গিয়ে তাঁর বন্ধু ও সহকারী পিয়েরে মেকেইকে সাথে নিয়ে এগুলোর তালিকা করে ফেললেন। বর্তমানে এই তালিকায় ৩৯টি গ্যালাক্সি, ৭ টি নেবুলা বা নীহারিকা, ৫টি গ্রহ নীহারিকা এবং ৫৫টি তারা স্তবক (Star Cluster) আছে।
১৭৭৪ সালে  প্রথম প্রকাশিত এই তালিকায় ৪৫ টি বস্তুর নাম ছিল। এতে যে শুধু তাঁর আবিষ্কৃত বস্তুই ছিল তা নয়, তার আগের জ্যোতির্বিদদের পর্যবেক্ষণকৃত বস্তুও এতে ছিল। প্রকৃতপক্ষে প্রথম প্রকাশিত ৪৫ টি বস্তুর মধ্যে তাঁর নিজের আবিষ্কৃত ছিল মাত্র ১৭টি। ১৭৮০ সাল নাগাদ তালিকাতে বস্তুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০। তালিকার চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৭৮১ সালে। এতে ১০৩ টি বস্তুর তালিকা ছিল। ১৯২১ থেকে ১৯৬৬ সালে এই তালিকায় আরো ৭টি বস্তুকে যুক্ত করলেন। এই বস্তুগুলো মেসিয়ে বা মেকেই চূড়ান্ত সংস্করণ প্রকাশ করার পরে পর্যবেক্ষণ করেন বলে নিজেরা যুক্ত করে যেতে পারেননি।
বর্তমানে পেশাদার ও শখের জ্যোতির্বিদরা সমানে এই বস্তুগুলোর নাম ব্যবহার করেন। এই বস্তুগুলোর তুলনামূলক উজ্জ্বলতার কারণে এরা শখের জ্যোতির্বিদদের কাছেও খুব জনপ্রিয় বস্তু।
সবগুলো মেসিয়ার বস্তুর ছবি 

অন্য দিকে ধূমকেতুকেও তিনি ভোলেননি। তিনি ৪০টি নেবুলা ছাড়াও ১৩টি ধূমকেতুও আবিষ্কার করেন।
১৮১৭ সালে, ৮৬ বছর বয়সে তিনি পরপারে পাড়ি জমান। তাঁর সম্মানে চাঁদের একটি গর্তের নাম মেসিয়ার এবং একটি গ্রহাণুর নাম ৭৩৫৯ মেসিয়ার রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, তাঁর নামের সঠিক উচ্চারণ চার্লে মেসিয়ে যদিও চার্লস মেসিয়ার (ফরাসীঃ Charles Messier) বানানটি অধিক প্রচলিত।

[১] স্পেইস ডট কম
[২] উইকিপিডিয়া
Category: articles

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ ঢাকার আকাশে এত কম তারা দেখা যায় কেন? গ্রামেতো অনেক অনেক তারা দেখা যায়।
[উত্তম কুমার]

উত্তরঃ
রাতের আকাশে খালি চোখে আমরা একবারে দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই। খালি চোখে দৃশ্যমান সব তারার সংখ্যা যোগ করলে হয় ৯০৯৬ টি তারা। হিসাব দুটো কেন? কারণ হচ্ছে রাতের আকাশের অর্ধেক অংশ সব সময় পৃথিবীর উল্টো পাশে থাকে যা আমরা দেখতে পাই না। সময় যেতে যেতে তা পূব আকাশে দৃশ্যমান হতে থাকে। আবার একই সাথে দক্ষিণ ও উত্তর গোলার্ধের সব তারা দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
☛ খালি চোখে আমরা কত তারা দেখি?

কিন্তু উপরে বলা এত এত তারা দেখা যাবে চাঁদহীন, অন্ধকার এবং নির্বিঘ্ন আকাশে। এ জন্যে গ্রামে গেলে দেখা যায় রাতের আকাশ তারায় তারায় ভরপুর। কিন্তু শহরে এলেই তারারা উধাও, হাতে গোণা অল্প কিছু তারা দেখা যায়। এই সংখ্যা এক হাজারেও পৌঁছায় না। অধিকাংশ সময়ই থাকে কয়েকশোর কাছাকাছি। কিন্তু কেন? ঢাকা বা অন্যান্য শহরের আকাশে এত কম তারা কেন?
এর প্রধান কারণ হল শহরের আলোক দূষণ। কৃত্রিম আলোর কারণে প্রাকৃতিক আলো বা দৃশ্য ঝাপসা হয়ে পড়াকে বলা হয় আলোক দূষণ বা লাইট পোলিউশান (light pollution)।
তারার আলোরা শহরের কৃত্রিম আলোর কাছে হেরে যায়

ঢাকার আকাশে কম তারা থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে এর বায়ু দুষণ। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার আকাশে প্রতি দিন ৫০ টন সিসা নির্গত হয়।
আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা শহরের বায়ুতে প্রতি বছর ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম১০) মিশছে ৫৮ হাজার ৫২৪ টন। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তার ধুলো-ময়লা, কারখানার নির্গত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর পদার্থ। পাশাপাশি ২০ হাজার ৮১৯ টন অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) তথা লোহা, সিসা, জিংক ইত্যাদির বিষাক্ত জৈব মিশছে বাতাসে। এছাড়া প্রতি বছর ৬০ হাজার ২১৬ টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ১৪ হাজার ৮৬২ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও ৫৩ হাজার ৪৫ টন কার্বন মিশছে ঢাকার বায়ুতে।
বিস্তারিত দেখুন তিন নং সূত্রে।

রাতের আকাশের তারার সংখ্যা কেমন হবে তা দিনের আকাশের রং দেখেও আন্দাজ করা যায়। যদি আকাশ খুব নীল হয়, তাহলে অনেক অনেক তারা দেখা যাবে। কিন্তু দিনের আকাশ যদি হয় হালকা নীল, ধূসর, সাদা, বাদামী বা কমলা রঙের, তাহলেই সমস্যা। এ কথা প্রযোজ্য বায়ু দুষণের ক্ষেত্রে। বায়ু দুষণ না থাকলেও আলোক দুষণ রাতের আকাশে বারোটা বাজিয়ে দিতে পারেই। তবে বৃষ্টি হলে তার পরপর যখন আকাশ মেঘমুক্ত হয়, সেই সময় আকাশ শহরেও অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন রকম কারণে ঢাকায় রাতের আকাশের দিকে তাকালে কোণায় কোণায় কিছু উজ্জ্বল তারা, তারামণ্ডলী যেমন আদম সুরত, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, কিছু তারাভুজ যেমন সামার ট্রায়াঙ্গেল ইত্যাদি দেখা যায়। আরো অনুজ্জ্বল বস্তুরা থাকে চোখের আড়ালে।
আরো পড়ুনঃ 
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প

সূত্রঃ
১। http://www.bangladeshenvironment.com/index.php/polution-s/air-polution/291-air-pollution-in-dhaka-city
২। https://www.quora.com/Why-do-we-see-less-stars-in-the-skies-these-days
৩। বণিক বার্তা
Category: articles

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

জ্বলন্ত গ্যাসের বিশাল এক অগ্নিগোলক আমাদের সূর্য। এর আলো এবং তাপ পেয়েই পৃথিবী হয়েছে সবুজ শ্যামল। তবে সূর্যের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট নয়। এর কোর, মানে কেন্দ্রভাগে তীব্র মহাকর্ষের কারণে অত্যাধিক চাপ ও তাপমাত্রা তৈরি হয়। এই তাপমাত্রা হয় ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৭ মিলিয়ন ফারেনহাইট) পর্যন্ত।
২০০৭ সালে মহাকাশযান হিনোদে এই ছবি তোলে

কেন্দ্রে নিউক্লকিয়ার ফিউসান বিক্রিয়ার মাধ্যমে প্রচুর শক্তি (তাপ, আলো ইত্যাদি) উৎপন্ন হয়। এই শক্তি ছড়িয়ে পড়ে আরও বাইরের দিকে, পৃষ্ঠে এবং বায়ুমণ্ডলে। শুরুতে শক্তি পৌঁছে বিকিরণ অঞ্চলে (radiative zone)। এখানে এই শক্তি সর্বোচ্চ ১০ লাখ বছর পর্যন্ত এদিক- ওদিক ছোটাছুটি করে। এর পর এটি চলে আসে পরিচলন অঞ্চলে (convective zone)। এখানে তাপমাত্রা ২০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩৫ লাখ ফারেনহাইট) নিচে নেমে আসে। এখানে তৈরি হয় উত্তপ্ত আয়নিত গ্যাসের (প্লাজমা) বড়ো বড়ো বুদ্বুদ। এরা এখান থেকে পরবর্তী স্তর ফোটোস্ফিয়ার বা আলোকমণ্ডলের দিকে উঠতে থাকে।
আরো দেখুনঃ
☛  এক নজরে সূর্য

আলোকমণ্ডলের তাপমাত্রা ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা দশ হাজার ফারেনহাইট। সূর্যের এখানকার
বিকিরণই আলো হিসেবে ধরা পড়ে। এই আলোকমণ্ডলে অবস্থিত সৌর দাগ বা সৌরকলঙ্ক (sunspot) আশেপাশের দাগের চেয়ে কম উত্তপ্ত এবং কালো। বড়ো দাগগুলোর কেন্দ্রে তাপমাত্রা চার হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নামতে পারে।
বায়ুমণ্ডলে পরের স্তরটি হল বর্ণমণ্ডল বা ক্রোমোস্ফিয়ার (Chromosphere)। এর তাপমাত্রা আলোকমণ্ডলের চেয়ে কম। মাত্র ৪৩২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উজ্জ্বল আলোকমণ্ডলের তীব্রতার কারণে এই স্তরের আলো দৃশ্যমান হয় না। কিন্তু চন্দ্রগ্রহণের সময় আলোকমণ্ডল চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়লে একে বলয়ের মতো দেখা যায়।
তাপমাত্রা হঠাৎ করে আবার বেড়ে যায় এর করোনা বা বহিস্থ বায়ুমণ্ডলে। এই অঞ্চলের অপর নাম কিরীট বা ছটামণ্ডল। এটা শুধু সূর্যগ্রহণের সময়ই দেখা যায়। এই সময় এর প্লাজমা মুকুটের বিন্দুর মতো বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২০ লাখ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
সূর্য সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো ও বেশি ভরের বস্তু। এর দূরত্ব পৃথিবী থেকে গড়ে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার বা নয় কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। এখান থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে ৮ মিনিট ১৯ বা ২০ সেকেন্ড সময় লাগে। এটাকেও দূরত্বের একটি একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অর্থ্যাৎ, সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ৮ আলোকমিনিট দূরে অবস্থিত।
আরও পড়ুনঃ
পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?
আলোকবর্ষ কাকে বলে?
জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

সূত্রঃ
১। http://solarscience.msfc.nasa.gov/corona.shtml
২। http://www.space.com/17137-how-hot-is-the-sun.html
Category: articles

বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬

দূরত্বের দিক দিয়ে বৃহস্পতি সূর্যের পঞ্চম গ্রহ। এর ভর সৌরজগতের অন্য সব গ্রহের সম্মিলিত ভরের আড়াই গুণ। এর প্রধান উপাদান গ্যাস। তাই এর নাম গ্যাস জায়ান্ট।
টেলিস্কোপে দেখা বৃহস্পতি গ্রহ 
গ্রহটির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যঃ

⏩ বৃহস্পতি সৌরজগতের চতুর্থ উজ্জ্বল বস্তু
এটি রাতের আকাশের ৩য় উজ্জ্বল বস্তু। কারণ, রাতেতো আর সূর্য থাকে না। শুধু সূর্য, চাঁদ এবং শুক্র গ্রহই এর চেয়ে বেশি উজ্জ্বল। অন্য গ্রহদের চেয়ে একেই সবচেয়ে বেশি ভালোভাবে চোখে পড়ে। গ্রহদের মধ্যে শুক্র সবচেয়ে উজ্জ্বল হলেও একে কোন সময় সন্ধ্যার পরে আবার কখনো ভোরের আকাশে দেখা যায়। বেশ কিছু সময় এটি সূর্যের এত কাছে থাকে যে একে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, বিশেষ করে শহর থেকে।

⏩ প্রাচীন ব্যাবীলনীয়রা প্রথম বৃহস্পতির পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখে
এটা খৃষ্টপূর্ব ৭ম বা ৮ম শতকের কথা। রোমদের দেবতার রাজা ছিল জুপিটার। গ্রিকদের কাছে এটি ছিল বজ্র দেবতা জিউস।

⏩ বৃহস্পতির দিনের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোট
বৃহস্পতি নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খেতে মাত্র ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নেয়। ফলে এতে দিনের দৈর্ঘ্য ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট হয়। এই দৈর্ঘ্য গ্রহদের মধ্যে স্বল্পতম। এর অর্থ হচ্ছে গ্রহটির আবর্তন বেগ খুব তীব্র। সত্যি বলতে এই বেগ হচ্ছে সেকেন্ডে ১২.৬ কিমি.। এই তীব্র বেগের কারণে গ্রহটির মেরু অঞ্চল বেশ অনেকটা চেপে গিয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। পৃথিবীও একই কারণে মেরু অঞ্চলে একটু চ্যাপ্টা, অবশ্য তা পরিমাণে বৃহস্পতির চেয়ে কম।

⏩ বৃহস্পতি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ১১.৮ বছর লাগে
পৃথিবী থেকে দেখতে আকাশে বৃহস্পতির বেগ খুব ধীর। ফলে এটি এক তারামণ্ডলী থেকে আরেকটিতে যেতে অনেক সময় লাগে। এখানে বেগ বলতে আমরা পৃথিবীর আবর্তনের জন্যে আকাশের বস্তুদের পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী বেগকে বোঝাচ্ছি। বলছি রাতের আকাশের তারকাদের তুলনায় আপেক্ষিক বেগের কথা। তারকাদের তুলনায় বেগের গতির তারতম্যের কারণেই গ্রহদেরকে তারকাদের থেকে আলাদা করে চেনা যায়।

⏩ বৃহস্পতির ঝড়ের চিহ্ন
টেলিস্কোপে বৃহস্পতির গায়ে একটি বড় লাল দাগ দেখা যায়। এর নাম গ্রেট রেড স্পট। ৩৫০ বছর ধরে এর প্রকোপ খুব তীব্র। এই লাল দাগটি এত বড় যে এর মধ্যে ৩টা পৃথিবীকে বসিয়ে দেওয়া যাবে। 

⏩ বৃহস্পতির অভ্যন্তরভাগে পাথর, ধাতু ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল প্রধানত হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত হলেও বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে ভেতরে গেলে পাওয়া যাবে সঙ্কুচিত হাইড্রোজেন গ্যাস এবং তরল ধাতব হাইড্রোজেন। আর এর কোর বরফ, পাথর ও ধাতুতে তৈরি।

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহের মালিক বৃহস্পতি
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ গ্যানিমিড। এর পরেই অবস্থান ক্যালিস্টোর। এর চারটি উপগ্রহ প্রথম গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন। এই চারটি হল আয়ো, গ্যানিমিড, ইউরোপা ও ক্যালিস্টো।
সূত্রঃ

[১] http://space-facts.com/jupiter/
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Jupiter
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...