পালসার হল এক ধরনের নিউট্রন নক্ষত্র। পালসার শব্দটি আসলে পালসেটিং স্টার (pulsating star) কথার সংক্ষেপ। Pulsate শব্দের অর্থ হল স্পন্দিত হওয়া। এরা নিয়মিত বিরতিতে স্পন্দিত হয় বলেই এই নাম। এরা আবার খুব দ্রুত আবর্তিত হয়। নির্গত করে তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ। নির্গত বেতার সঙ্কেত কাজে লাগিয়েই খুঁজে বের করা হয় এদেরকে।পালসারকে মহাবিশ্বের লাইটহাউজ বা আলোকবর্তিকাও বলা হয়।
আরো পড়ুনঃ
নিউট্রন নক্ষত্র কাকে বলে?
সৃষ্টিঃ
এরা যেহেতু এক ধরনের নিউট্রন স্টার, তাই সৃষ্টিও ওদের মতোই। ধরুন, একটি নক্ষত্রের ভর সূর্যের ৪ থেকে ৮ গুণ। জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি মৃত্যুমুখে পতিত হবার সময় পরিণত হয় নিউট্রন নক্ষত্রে। ঘটে একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ। নক্ষত্রের বাইরের অংশ ছিটকে যায় মহাশূন্যে। ভেতরের অংশ গুটিয়ে ছোট্ট হয়ে যায়। এ সময় এর মহাকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে এর মধ্যে থাকা প্রোটন ও ইলেকট্রন মিলিত হয়ে নিউট্রন হয়ে যায়। এদের ভর আরো বেশি হলে হয় ব্ল্যাক হোল। আর কম হলে শ্বেত বামন (white dwarf)।
নক্ষত্রের ভর ১ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ২ এর মধ্যে থাকলেও এরা সুপারনোভার মতো বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। তবে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবার জন্যে এ পরিমাণ ভর যথেষ্ট নয়। এরা বরং নিউট্রন নক্ষত্রে পরিণত হয়। এদেরই কেউ কেউ পরিণত হয় পালসারে। কেউ বা আবার হয় ম্যাগনেটার।
সাইজে ছোট্ট হয়ে গেলেও এরা কৌণিক ভরবেগ অক্ষুণ্ণ রাখে। কিন্তু সাইজ ছোট্ট হয়ে যাবার কারণে এ সময় আবর্তন বেগ প্রচণ্ড বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এরা প্রতি সেকেন্ডে বহুবার ঘুরে। এই ক্ষুদ্র ও খুব ঘন এই বস্তুরা এদের চৌম্বক ক্ষেত্র রেখা বরাবর নির্গত করে খুব শক্তিশালী বিকিরণ। বিকিরণ যে সব সময় ঘূর্ণন অক্ষের বরাবরেই থাকবে, এমন কোনো কথা নেই।
ইতিহাসঃ
১৯৬৭ সালে জোকেলিন বেল বার্নেল ও অ্যান্টনি হিউইশ প্রথম পালসার আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী মহল বিস্ময়ে হতবাক। কারণ, একেবারে নিয়মিত বিরতিতে পাওয়া যাচ্ছে বেতার সঙ্কেত। আকাশের একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে পাওয়া যাচ্ছিল সঙ্কেত। ঠিক ১ দশমিক ৩৩ সেকেন্ড পর পর সঙ্কেত খুব তীব্র হচ্ছিল। এত নিয়মিত বিরতিতে সঙ্কেত আসছে দেখে কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ তো ভেবেই বসেন, এটা হয়ত অন্য কোনো মহাজাগতিক সভ্যতার কাজ!
বার্নেল ও হিউইশ নিশ্চিত ছিলেন, এটা নিতান্তই প্রাকৃতিক ঘটনা। কোনো সভ্যতার কাজ নয়। তবু তাঁরা এর নাম দিলেন এলজিএম-১ (LGM-1)। এলজিএম মানে হল লিটল গ্রিন ম্যান বা ক্ষুদ্র সবুজ মানব। প্রথম আবিষ্কৃত পালসারটির নাম ছিল পিএসআর বি১৯১৯+২১ ( PSR B1919+21)। এর পরে আরও পালসার আবিষ্কৃত হতে থাকলে এদের প্রকৃত রহস্য আস্তে আস্তে উন্মোচিত হতে থাকে।
কিছু দিন পর কাঁকড়া নেবুলায় আরেকটি পালসার পাওয়া যায়। এর পর্যায়কাল মাত্র ৩৩ মিলিসেকেন্ড। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬০০ পালসার পাওয়া গেছে। এদের একটি তো মাত্র এক সেকেন্ডে ৭১৬ টি সঙ্কেত প্রেরণ করে। পরে পালসারদেরকে পাওয়া গেল বাইনারি জগতেও। এর ফলে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের আরেকটি স্বীকৃতি অর্জন হয়েছিল। ১৯৮২ সালে পাওয়া গেল আরেকটি বিস্ময়কর পালসার। এর আবর্তনকাল মাত্র ১ দশমিক ৬ মাইক্রো সেকেন্ড।
সৌরজগতের বাইরে প্রথম কোনো গ্রহের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছিল একটি পালসারের পাশে।
মজার তথ্যঃ
প্রথমে যখন একটি পালসারের জন্ম হয়, তখন এর শক্তি ও আবর্তনের গতি থাকে খুব উচ্চ। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত করতে করতে এটি শক্তি হারিয়ে ফেলে। কমে যায় ঘুর্ণনের গতিও। ১ থেকে ১০ কোটি বছরের মধ্যে এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সক্রিয় থাকার সময় এরা দারুণভাবে সময় মেনে চলে। এমনকি সময়ের হিসাব রাখতে জ্যোতির্বিদরাও এদের ওপর ভরসা রাখেন। কিছু কিছু পালসারের সূক্ষ্মতা হার মানায় আণবিক ঘড়িকেও।
সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/25376/pulsars/
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Pulsar
আরো পড়ুনঃ
নিউট্রন নক্ষত্র কাকে বলে?
সৃষ্টিঃ
এরা যেহেতু এক ধরনের নিউট্রন স্টার, তাই সৃষ্টিও ওদের মতোই। ধরুন, একটি নক্ষত্রের ভর সূর্যের ৪ থেকে ৮ গুণ। জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি মৃত্যুমুখে পতিত হবার সময় পরিণত হয় নিউট্রন নক্ষত্রে। ঘটে একটি সুপারনোভা বিস্ফোরণ। নক্ষত্রের বাইরের অংশ ছিটকে যায় মহাশূন্যে। ভেতরের অংশ গুটিয়ে ছোট্ট হয়ে যায়। এ সময় এর মহাকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে এর মধ্যে থাকা প্রোটন ও ইলেকট্রন মিলিত হয়ে নিউট্রন হয়ে যায়। এদের ভর আরো বেশি হলে হয় ব্ল্যাক হোল। আর কম হলে শ্বেত বামন (white dwarf)।
পালসার ও একটি সঙ্গী তারা |
সাইজে ছোট্ট হয়ে গেলেও এরা কৌণিক ভরবেগ অক্ষুণ্ণ রাখে। কিন্তু সাইজ ছোট্ট হয়ে যাবার কারণে এ সময় আবর্তন বেগ প্রচণ্ড বেড়ে যায়। এ অবস্থায় এরা প্রতি সেকেন্ডে বহুবার ঘুরে। এই ক্ষুদ্র ও খুব ঘন এই বস্তুরা এদের চৌম্বক ক্ষেত্র রেখা বরাবর নির্গত করে খুব শক্তিশালী বিকিরণ। বিকিরণ যে সব সময় ঘূর্ণন অক্ষের বরাবরেই থাকবে, এমন কোনো কথা নেই।
ইতিহাসঃ
১৯৬৭ সালে জোকেলিন বেল বার্নেল ও অ্যান্টনি হিউইশ প্রথম পালসার আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী মহল বিস্ময়ে হতবাক। কারণ, একেবারে নিয়মিত বিরতিতে পাওয়া যাচ্ছে বেতার সঙ্কেত। আকাশের একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে পাওয়া যাচ্ছিল সঙ্কেত। ঠিক ১ দশমিক ৩৩ সেকেন্ড পর পর সঙ্কেত খুব তীব্র হচ্ছিল। এত নিয়মিত বিরতিতে সঙ্কেত আসছে দেখে কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ তো ভেবেই বসেন, এটা হয়ত অন্য কোনো মহাজাগতিক সভ্যতার কাজ!
বার্নেল ও হিউইশ নিশ্চিত ছিলেন, এটা নিতান্তই প্রাকৃতিক ঘটনা। কোনো সভ্যতার কাজ নয়। তবু তাঁরা এর নাম দিলেন এলজিএম-১ (LGM-1)। এলজিএম মানে হল লিটল গ্রিন ম্যান বা ক্ষুদ্র সবুজ মানব। প্রথম আবিষ্কৃত পালসারটির নাম ছিল পিএসআর বি১৯১৯+২১ ( PSR B1919+21)। এর পরে আরও পালসার আবিষ্কৃত হতে থাকলে এদের প্রকৃত রহস্য আস্তে আস্তে উন্মোচিত হতে থাকে।
কিছু দিন পর কাঁকড়া নেবুলায় আরেকটি পালসার পাওয়া যায়। এর পর্যায়কাল মাত্র ৩৩ মিলিসেকেন্ড। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬০০ পালসার পাওয়া গেছে। এদের একটি তো মাত্র এক সেকেন্ডে ৭১৬ টি সঙ্কেত প্রেরণ করে। পরে পালসারদেরকে পাওয়া গেল বাইনারি জগতেও। এর ফলে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের আরেকটি স্বীকৃতি অর্জন হয়েছিল। ১৯৮২ সালে পাওয়া গেল আরেকটি বিস্ময়কর পালসার। এর আবর্তনকাল মাত্র ১ দশমিক ৬ মাইক্রো সেকেন্ড।
সৌরজগতের বাইরে প্রথম কোনো গ্রহের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছিল একটি পালসারের পাশে।
মজার তথ্যঃ
প্রথমে যখন একটি পালসারের জন্ম হয়, তখন এর শক্তি ও আবর্তনের গতি থাকে খুব উচ্চ। তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণ নির্গত করতে করতে এটি শক্তি হারিয়ে ফেলে। কমে যায় ঘুর্ণনের গতিও। ১ থেকে ১০ কোটি বছরের মধ্যে এটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। সক্রিয় থাকার সময় এরা দারুণভাবে সময় মেনে চলে। এমনকি সময়ের হিসাব রাখতে জ্যোতির্বিদরাও এদের ওপর ভরসা রাখেন। কিছু কিছু পালসারের সূক্ষ্মতা হার মানায় আণবিক ঘড়িকেও।
সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/25376/pulsars/
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Pulsar