Advertisement

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

আইনস্টাইন ক্রস বুঝতে হলে মহাকর্ষ বক্রতা সম্পর্কে জানা চাই। ভারী বস্তু এর আশেপাশের স্থানকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে বস্তুটা আচরণ করে লেন্সের মতো। বস্তুর পেছন থাকা জিনিসের আলোও বাঁক খেয়ে পর্যবেক্ষকের চোখে আসতে পারে৷ 


হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চোখে আইনস্টাইন ক্রস


মহাকর্ষ কীভাবে আলো বাঁকায়?


অনেকসময় তো একই বস্তুর ছবি ভারী বস্তুর চারদিক দিয়েই বেঁকে চারটি আলাদা বিম্ব (ছবি) তৈরি করতে পারে। এমন এক বিখ্যাত ছবির নামই আইনস্টান ক্রস। জিনিসটা আসলে একটি কোয়াসারের ছবি। পৃথিবী থেকে দেখতে হুকরা'স লেন্স ছায়াপথের পেছনে এর অবস্থান। ভারী ছায়াপথটা কোয়াসারটার আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে চারপাশে এর চারটা ছবি পাওয়া যায়। কেন্দ্রেও ঝাপসা একটি ছবি আছে৷ দেখে মনে হবে, চারটা আলাদা বস্তুর ছবি। অথচ আসলে একটাই জিনিস৷ 

১৯৮৫ সালে জন হুকরা এটা আবিষ্কার করেন। অবশ্য সেসময় চারটি ছবির অস্তিত্ব বোঝা যায়নি। শুধু ছায়াপথের পেছনের কোয়াসার থাকার কথা জানা গিয়েছিল৷ কোয়াসারটার নাম খটমটে৷ কিউ২২৩৭+০৩০।আইনস্টাইন ক্রস বলতে সাধারণত এই বস্তুটাকেই বোঝানো হয়।  তবে একই রকমের আরও ছবিও পরে আবিষ্কৃত হয়েছে৷ অনেকসময় আবার ক্রসের বদলে তৈরি হয় বলয়। এর নাম আইনস্টাইন বলয়। 


কোয়াসারটা পৃথিবী থেকে ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত৷ লেন্সিং ছায়াপথের দূরত্ব ৪০ কোটি আলোকবর্ষপেগাসাস তারামণ্ডলে এর অবস্থান৷ 

Category: articles

সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩

পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অনুসন্ধানে দেখা হয় পানির অস্তিত্ব। পাশাপাশি জটিল জৈব অণু। প্রাণের বিকাশের জন্য যা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে এক দল গবেষক পৃথিবী থেকে ১২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথে খুঁজে পেয়েছেন এমন অণু৷ এত দূরে এর আগে এ উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়নি৷


এসপিটি০৪১৮-৪৭ ছায়াপথে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ খুঁজে পেয়েছে জৈব অণু। 

এ সঙ্কেতের একটি অংশ হলো ছায়াপথের ধূলিকণা৷ তবে ভূমিকা আছে হাইড্রোকার্বন অণুরও৷ এমনিতে ধূলিকণার কারণে দূরের সঙ্কেত পৃথিবী থেকে দেখতে অসুবিধা হয়। তবে কক্ষপথের ওয়েব টেলিস্কোপ সুবিধা পেয়েছে মহাকর্ষ বক্রতা থেকে। এ প্রক্রিয়ায় সামনে থাকা কোনো ছায়াপথ বা অন্য বস্তু পেছনের বস্তুর জন্য লেন্স হিসেবে কাজ করে। ঢাকা থাকার বদলে বেঁকে এসে ধরা দেয় চোখে।

মহাকর্ষ বক্রতার গল্প

ছায়াপথের নামটা খুব খটমটে৷ এসপিটি০৪১৮-৪৭৷ ২০১৩ সালে প্রথম একে দেখা গিয়েছিল। ১২০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের এ ছায়াপথ দেখা মানে খুব অল্প বয়সের মহাবিশ্বকে দেখা৷ যখন বয়স ছিল মাত্র ১৫০কোটি বছর।




Category: articles

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩

ধরুন, সামনে তাকিয়ে একটা বিল্ডিং বা পাহাড় দেখলাম। যখন দেখলাম তখনও সেটা সে অবস্থায়ই আছে। এমন না যে আমরা দেখতে দেখতে বিল্ডিংয়ের কোনো পরিবর্তন ঘটে গেছে। তবে পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের দূরের বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়।




চাঁদের কথাই ধরুন। চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে আছে। আলোর বেগ অনেক বেশি। সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। তাও এত দূর থেকে আলো আসতে ১.৩ সেকেন্ড সময় তো লাগেই। মানে এই মূহুর্তে আমরা চাঁদের যে আলো দেখছি তা ১.৩ সেকেন্ড আগের প্রতিফলিত আলো

চাঁদ কত দূরে আছে?


 চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 

সূর্য তো আরও দূরে। আছে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। আলো আসতে সময় লাগে গড়ে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। তারমানে সূর্যকে আমরা ৮ মিনিট আগের অবস্থায় দেখি। এখন সূর্য গায়েব হয়ে গেলে আরও ৮ মিনিট পরে তা আমরা জানতে পারব।

সূর্য কত দূরে আছে?

সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় চার আলোকবর্ষ। তার মানে নক্ষত্রটার চার বছর আগের দৃশ্য দেখি আমরা। আমাদের অন্যতম কাছের ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা। দূরত্ব ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। একবার ভাবুন। উত্তর আকাশে যে অ্যান্ড্রোমিডাকে আমরা দেখি তা আসলে ২৫ লাখ বছর আগের অ্যান্ড্রোমিডা!

এক আলোকবর্ষ কত বড়?

অ্যানড্রোমিডা কীভাবে দেখব?

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেন ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের কথা। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের আবিষ্কৃত নক্ষত্র। স্বাভাবিকভাবেই যত দূরে আমরা কোনো নক্ষত্র দেখব, সেটা হবে ততই প্রাচীন বা পুরনো। ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের অবস্থান পৃথিবী থেকে ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ। ভাবুন! নক্ষত্রের ২৮০ কোটি বছরেরপুরনো দৃশ্যও মানুষ দেখেছে।

২০২২ সাল পর্যন্ত পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের দেখা ছায়াপথের নাম এইচডি১। দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ। মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। তাহলে তার চেয়ে আগে ছায়াপথ কোথা থেকে আসল? আসলে দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ হলেও ছায়াপথটি আমরা ৩৩২৯ বছর আগে অবস্থায় দেখছি না। মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে বস্তুদের লোহিত সরণ ঘটে। এর ফলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ১৩৮০ কোটির বদলে প্রায় ৪৬৫০ কোটি।

মহাবিশ্ব কত বড়?

তার মানে, আমরা পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের যত দূরে তাকাব, তত প্রাচীন দৃশ্য দেখব। 

আর আকাশযান শনাক্ত ও ব্যবস্থাপনার জন্য যে রেডার ব্যবহার করা হয় সেটাও কিন্তু এই বুদ্ধি দিয়েই কাজ করে। রেডার থেকে বিমান বা জাহাজে সঙ্কেত পাঠানো হয়। সেটা যানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। যাওয়া-আসার সময়টুকু হিসাব করেই বের করা দূরত্ব।


পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরের বস্তুগুলোর একটি তালিকা দেখতে পারবেন উইকিপিডিয়ায়। 
Category: articles

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

গত শতকে আমরা জানতে পারি, মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট অতীত আছে। তার আগে স্থির অবস্থা তত্ত্ব জনপ্রিয় ছিল। ধারণা করা হত, মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে উপস্থিত আছে। বয়স অনন্ত হলে ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন আসে না। কিন্তু কবির কথা, “জন্মিলে মরিতে হবে।“ তাই ভবিষ্যতে কী হবে সেটা বড় এক প্রশ্ন। 


১৯২০ সাল থেকে ১৯৫০। এই বিশ বছর ধরে বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা গেল, ছায়াপথরা একে অপর থেকে দূরে সরছে। এ থেকেই তৈরি হয় বিগ ব্যাং তত্ত্ব। ১৯২৭ সালে জর্জ লেমেইত্র বলেন, প্রসারণশীল মহাবিশ্ব থেকে বলা যায়, অতীতে মহাবিশ্ব ছিল নিবিড় এক বিন্দুর মতো। এর আগে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের সমাধান করে আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যানও একই কথা বলেছিলেন। আইনস্টাইনের সমীকরণের একটি সমাধান অনুসারে দেখা যায়, একটি প্রাথমিক সিংগুলারিটি থেকে জন্ম মহাবিশ্বের। ১৯৬৪ সালে আবিষ্কৃত হয় মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ। বিগ ব্যাংয়ের পক্ষে একটি বড় প্রমাণ এটি। 

১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, মহাবিশ্বের প্রসারণের গতি ক্রমেই বাড়ছে। এর জন্য দায়ী শক্তিকে নাম দেওয়া হয় ডার্ক এনার্জি। আইনস্টাইনের সমীকরণ বলছিল, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু আইনস্টাইন নিজেই সেটা বিশ্বাস করতেন না। সমীকরণ অসম্পূর্ণ মনে করে তিনি তাই বাড়তি একটি ধ্রুবক যোগ করেছিলেন। পরে স্বীকার করেন, এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কিন্তু এখন আবার মনে হচ্ছে এই ধ্রুবক দরকার আছে। এই ধ্রুবক আসলে ডার্ক এনার্জির বিপরীতে কাজ করে। 

ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের ভাগ্যে মোটা দাগে বললে তিনটি ঘটনা ঘটতে পারে। হয় এটি চিরকাল প্রসারিত হতে থাকবে। মহাকর্ষ প্রসারণের গতি কমানোর চেষ্টা করবে। তবে ডার্ক এনার্জির কারণে প্রসারণের গতি ক্রমেই বাড়বে। আরেকটি হতে পারে, মহাবিশ্বের প্রসারণ এক সময় থেমে যাবে। শুরু হবে সঙ্কোচন। আরেকটি সম্ভাবনা হলো, প্রসারণ চলতে থাকবে। তবে প্রসারণের গতি ক্রমশ কমতে থাকবে। কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে না। 

ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের ভাগ্যে কী ঘটবে তার বড় একটি প্রভাবক হলো মহাবিশ্বের ঘনত্ব পরামিতি (density parameter)। একে গ্রিক বর্ণ ওমেগা (Ω) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এর মান পেতে মহাবিশ্বের বস্তুর গড় ঘনত্বকে ঘনত্বের একটি ক্রান্তি মান দ্বারা ভাগ করা হয়। ঘনত্বের যে মান খুব অল্পের জন্য মহাবিশ্বের প্রসারণকে থামাতে বন্ধ হবে তার নাম ক্রান্তি (critical) ঘনত্ব। 

মহাবিশ্বের ভবিষ্যতের সাথে এর আকৃতিরও সম্পর্ক আছে। ওমেগার মান ১-এর বেশি হলে মহাবিশ্বের আকৃতি হবে আবদ্ধ গোলকের পৃষ্ঠের মতো। কারণ এক্ষেত্রে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রান্তি ঘনত্বের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর পৃষ্ঠের মতো এমন মহাবিশ্বের ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রির বেশি হবে। তবে বড় মাপকাঠিতে মহাবিশ্বের আকৃতি হবে উপবৃত্তের মতো। মহাকর্ষের প্রভাবে এক সময় প্রসারণ থেমে যাবে। শেষ পর্যন্ত ঘটবে বিগ ক্রাঞ্চ (Big Crunch) বা মহাসঙ্কোচন। বিন্দু থেকে আসা মহাবিশ্ব বিন্দুতে গিয়েই আবার মিশে যাবে। 

তবে কিছু কিছু আধুনিক তত্ত্ব বলছে, ওমেগার মান ১-এর বেশি হলেও ডার্ক এনার্জির প্রভাবে মহাবিশ্ব প্রসারিত হতেই থাকবে। এ কারণে মহাসঙ্কোচন ঘটার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত অর্জিত জ্ঞান অনুসারে কম। তবে ঘটবেই না সেটা বলার জো নেই। 

ওমেগার মান ১-এর কম হলে মহাবিশ্ব হবে উন্মুক্ত। ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রির কম হবে। মহাকর্ষ প্রসারণকে কিছুটা কমাবে। কিন্তু ডার্ক এনার্জির প্রভাবে সে বাধা উপেক্ষা করে প্রসারণের গতি বরং আরও বেড়ে যেতে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মহাকর্ষ, তড়িচ্চুমকত্ব ও সবল নিউক্লীয় বলের বাঁধন ছিঁড়ে যাবে। এ অবস্থাকে বলা হয় বিগ রিপ (Big Rip) বা মহাভাঙন। 

মহাবিশ্বের সম্ভাব্য আকৃতি

একই রকম পরিস্থিতিতে আরেকটি সম্ভাব্য পরিণতির নাম বিগ ফ্রিজ (Big Freeze) বা মহাহিমায়ন। এ অবস্থায় সর্বত্র বিরাজ করবে হিমশীতল অবস্থা। হবে না কোনোরকম তাপ বিনিময়। থেমে যাব বস্তুকণার চলাচল। এ কারণে এর অপর নাম তাপীর মৃত্যু। এটা ঘটে গেলে বস্তুর মধ্যে আর কোনো প্রকার তাপ বিনিময় সম্ভব হবে না। সব যন্ত্র অচল হয়ে যাবে। এনট্রপি (শক্তি রূপান্তরের অক্ষমতা) হবে সর্বোচ্চ। 

তবে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রান্তি ঘনত্বের সমানও হয়ে যেতে পারে। সত্যি বলতে, বর্তমান পর্যবেক্ষণ এর পক্ষেই কথা বলছে। এমন মহাবিশ্বেই ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রি হয়। এক্ষেত্রে মহাবিশ্ব হবে সমতল। পর্যবেক্ষণ বলছে, মহাবিশ্ব এমনই। এই ফলাফলের ত্রুটির মাত্রা মাত্র ০.৪%। এই মহাবিশ্বও চিরকাল প্রসারিত হবে, তবে প্রসারণের হার ক্রমশ কমবে। তবে কখনোই একেবারে থেমে যাবে না। কিন্তু ডার্ক এনার্জি ভূমিকা রাখলে প্রসারণ শুরুতে থামলেও আবার বেড়ে যাবে। পরিণতি হবে সেই উন্মুক্ত মহাবিশ্বের মতোই। 

আরও কিছু কমসম্ভাব্য ঘটনা ঘটতে পারে মহজাবিশ্বের ভাগ্যে। এর একটি হলো বিগ বাউন্স। এটা আসলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে চক্রাকার মডেলের একটি অংশ। এটি অনুসারে, মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল সঙ্কুচিত অবস্থা থেকে। আর সেই সঙ্কুচিত অবস্থাটা এসেছিল তার পূর্ববর্তী একটি প্রসারণ থেমে গিয়ে গুটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। এভাবেই মহাবিশ্ব একের পর সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হচ্ছে। একের পর ঘটছে বিগ ব্যাং ও বিগ ক্রাঞ্চ। এ জন্যেই এই মডেলের নাম চক্রাকার মডেল। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন আরও একটি সম্ভাবনার কথা। এর নাম বিগ স্লার্প (Big Slurp)। স্লার্প অর্থ গ্রাস করা বা গ্রাস করার সময় সৃষ্ট শব্দ। এ তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব এখন নকল ভ্যাকুয়াম অবস্থায় আছে। যেকোনো সময় চলে যেতে পারে প্রকৃত ভ্যাকুয়ামে। 

প্রকৃতির যেকোনো ভৌত প্রক্রিয়া সবসময় সর্বিনিম্নের শক্তির অবস্থানে থাকতে চায়। আর মহাবিশ্ব সর্বনিম্ন শক্তির অবস্থায় থাকলেই কেবল প্রকৃত ভ্যাকুয়ামে থাকবে। এখন সেটা নাও হতে পারে। হয়ত মহাবিশ্ব এখন উচ্চতর শক্তির অবস্থানে আছে। তার মানে আছে নকল ভ্যাকুয়াম অবস্থায়। সেক্ষেত্রে যেকোনো সময় এটি আসল ভ্যাকুয়ামে চলে যাবে। তার সাথে সাথে আমূল পাল্টে যাবে আমাদের চিরচেনা মহাবিশ্ব। 

ভৌত ধ্রুবকদের মান বদলে যেতে পারে। পাল্টে যেতে পারে আলোর বেগের মান কিংবা অ্যাভোগেড্রো ধ্রুবক। ফলে স্থান, কাল, বস্তু ও শক্তির ধারণা একদম বদলে যেতে পারে। হয়ত আগাম কোনো সঙ্কেত না দিয়েই ধ্বংস হয়ে যাবে মহাবিশ্ব। 

লেখাটি লেখকের অনূদিত দ্য লাস্ট থ্রি মিনিটস বইয়ের পরিশিষ্ট অংশে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এগারশ ও তৃতীয় অধ্যায়ে। 
Category: articles

বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯

মহাবিশ্বের বয়স নির্ণয়ের একটি উপায়ই হলো সবচেয়ে পুরাতন নক্ষত্রের বয়স দেখা। মহাবিশ্বের জন্মের অল্প কিছুকাল পরেই নক্ষত্রের জন্ম হয়ে গিয়েছিল। মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স ধরা হয় ১৩৮০ কোটি বছর। আর মনে করা হয়, সবচেয়ে প্রাচীন ভ্রুণতারার (protostar) জন্ম হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের ৩০ কোটি বছর পর।

মহাবিশ্বের জন্মের আগেই কি নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল? 

বিগ ব্যাং থেকে নক্ষত্রের জন্মের সময়টা নিয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক।

আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিসহ সব গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গ্যাসীয় মেঘ ও ধুলিকণা। প্রাথমিক অবস্থায় এদেরকে বলা হয় নীহারিকা বা নেবুলা (Nebula)। সাধারণত এক একটি নেবুলা আড়াআড়িভাবে বহু আলোকবর্ষ পরিমাণ জুড়ে বিস্তৃত থাকে। একটি নেবুলাতে যে পরিমাণ গ্যাস থাকে তা দিয়েই আমাদের সূর্যের মতো কয়েক হাজার নক্ষত্রের জন্ম হতে পারে। নেবুলার অধিকাংশ উপাদানই হচ্ছে বিভিন্ন হালকা গ্যাস- বিশেষ করে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের অণু। এই গ্যাস ও ধুলিকণা ঘনীভূত হয়ে যথেষ্ট পরিমাণ অভিকর্ষ উৎপন্ন করলে নিজস্ব অভিকর্ষের চাপেই সঙ্কুচিত হতে থাকে। কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ আবার মনে করেন, এই অন্তর্মুখী সঙ্কোচনের জন্য শুধু অভিকর্ষই নয়, গ্যাস ও ধুলিকণায় সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রও দায়ী।

গ্যাসগুলো জড় হতে হতে বিভব শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং বাড়িয়ে ফেলে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে সঙ্কোচনশীল গ্যাস বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে এক একটি আলাদা নক্ষত্র তৈরি হয়। এই তারকার অন্তর্বস্তুর সঙ্কোচনের হার হয় অনেক বেশি। এর গ্যাসীয় মেঘ অনেক দ্রুত আবর্তন করে করে এর কৌণিক ভরবেগ বজায় রাখে। এক সময় এই নক্ষত্রের তাপমাত্রা প্রায় ২ হাজার কেলভিনে পৌঁছায়। এই অবস্থায় হাইড্রোজেন অণু ভেঙ্গে গিয়ে মৌলটির পরমাণুতে পরিণত হয়। এর তাপমাত্রা এক সময় উঠে যায় ১০ হাজার কেলভিনে। সঙ্কুচিত হয়ে সূর্যের প্রায় ৩০ গুণ আয়তন লাভ করলে এই নব-সৃষ্ট তারকাকে বলে প্রোটোস্টার বা ভ্রুণতারা (protostar)। এবার এতে হাইড্রোজেন পরমাণু জোড়া লেগে লেগে হিলিয়ামে পরিণত হতে থাকে। এই নিউক্লিয় বিক্রিয়াটিকে বলে ফিউশন বা সংযোজন (fusion) বিক্রিয়া।

আরও পড়ুন
 নক্ষত্র থেকে ব্ল্যাকহোল

ফিউশন বিক্রিয়া চলার সময় নক্ষত্রের নাম হয় প্রধান ক্রমের তারা (main sequence star)। আমাদের সূর্য এখন এই দশায় আছে। 

মূল কথায় ফিরে আসা যাক। মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর হলে এর ভেতরের সব নক্ষত্রের বয়স অবশ্যই এর চেয়ে কম হওয়া উচিত। কিন্তু ২০১৩ সালে পাওয়া গেল বিপরীত এক পর্যবেক্ষণ।  হাবল স্পেস টেলিস্কোপ খুঁজে পেল ব্যতিক্রমী এক তারা। নাম মেথুসেলাহ। হিসেব করে এর বয়স পাওয়া যাচ্ছে ১৪৫০ কোটি বছর। যা সর্বোচ্চ ৮০ কোটি এদিক-ওদিক হতে পারে। কিন্তু মহাবিশ্বের বয়সের চেয়ে পুরাতন নক্ষত্র কীভাবে এল? 

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ। একদল বিজ্ঞানী তাই ভাবছেন, নিশ্চয় মহাবিশ্বের বয়স বের করতেই ভুল হয়েছে। 

আরও পড়ুন

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আশা করা হয়েছিল, এখানে একটি সমাধান মিলবে। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের মৌলিক জ্ঞানই সম্ভবত ত্রুটিপূর্ণ।

বড় কাঠামোয় মহাবিশ্ব নিয়ে কথা বলতে গেলেই চলে আসে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিকতা (general relativity)। নিউটনের মহাকর্ষীয় তত্ত্বের আধুনিক রূপ এটি। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন প্রথম প্রকাশ করেন তত্ত্বটি। অনেকের মতেই, এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল তত্ত্ব। ব্ল্যাক হোল থেকে শুরু কাল দীর্ঘায়ন– সব কিছুই সঠিক ব্যাখ্যা করছে তত্ত্বটি। অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্ব কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাফল্যও কম নয়।

সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব সফল হলেও অনেক সময় এর কিছু ফলাফল দেখে অবাক হতে হয়। প্রথম অবাক হবার পালা আইনস্টাইনের নিজেরই। তিনি দেখলেন, তত্ত্ব বলছে, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। তিনি তখনও স্থির মহাবিশ্বে বিশ্বাসী। যেমনটা ছিলেন নিউটন। আইনস্টাইন ভাবলেন, তত্ত্বে কোনো ভুল আছে। তাই তত্ত্বের সমীকরণে একটি বাড়তি ধ্রুবক লাগিয়ে সেই ভুল দূর করার চেষ্টা করলেন।

পরে ১৯২০ এর দশকে হাবল আবিষ্কার করলেন, সেটা কোনো ভুল ছিল না। আইনস্টাইন পরে স্বীকার করেন, এটা ছিল তাঁর জীবনের সেরা ভুল।

অবশেষে জানা গেল, মহাবিশ্বের একটি সূচনা আছে। অনন্তকাল ধরে মহাবিশ্ব ছিল না। তাই মহাবিশ্বের বয়স বের করার প্রচেষ্টা শুরু হলো। কিন্তু বয়স দেখে তো বিজ্ঞানীরা হতবাক। এ যে মাত্র ২০০ কোটি বছর। যেখানে পৃথিবীরই বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর।

ফ্রেড হয়েল প্রস্তাব করলেন, মহাবিশ্বের আসলে সূচনা-টূচনা বলে কিছু নেই। সব বাজে কথা। মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে টিকে আছে একইভাবে। নিজের মত প্রমাণ করতে তিনি আইনস্টাইনের সমীকরণও ব্যবহার করলেন। তবে তাঁর সমাধান সমস্যা কমানোর চেয়ে বাড়াতেই বেশি অবদান রাখল। নতুন পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেল, মহাবিশ্বের বয়স ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন বছর হয়। মানে এক হাজার থেকে দুই হাজার কোটি বছর। গ্রহণযোগ্য এই মতের চাপে হয়েলের মত বাতিল হয়ে গেল।

কিন্তু সমাধান কি আদৌ হয়েছে? বয়সের সমস্যা হাজির হয়েছে আবারও। গত মাসের সম্মেলনে বয়স নিয়ে বেশ কজন বিজ্ঞানী নতুন করে হিসেব দিয়েছেন। কিছু দিন আগে হলেও এসব নতুন হিসেবকে কেউ পাত্তা দিতেন না। বিগ ব্যাংয়ের পরবর্তী সময়ে নির্গত হয় মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ (cosmic microwave background)। যার রেশ আছে আজকের পৃথিবী ও মহাবিশ্বেও। এই বিকিরণের তথ্য কাজে লাগিয়ে মহাবিশ্বের বয়সের নির্ভরযোগ্য হিসেব পাওয়া যায়।

পটভূমি বিকিরণ দিয়ে পাওয়া হিসেবের সাথে মিলে যায় সরাসরি বের করা হিসেবও। দূরের ছায়াপথের নক্ষত্রের প্রসারণ দেখে মহাবিশ্বের প্রসারণ বেগ বের করা যায়। সেখান থেকে জানা যায়, মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় আসতে কত সময় নিয়েছিল। এই দুটি হিসেব দারুণভাবে মিলে যায়। একই সাথে হিসেবটি ছিল দারুণ সূক্ষ্ম।। আবার সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্রের বয়সের চেয়ে এই বয়স বেশিও ছিল। ফলে সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মহাবিশ্বের দুটো বয়স আলাদা। পার্শ্ববর্তী ছায়াপথদের কাজে লাগিয়ে পাওয়া বয়সের সাথে বিকিরণ থেকে হিসেব করা বয়সের পার্থক্য কয়েক হাজার কোটি বছর। যাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। তাও আবার দেখা যাচ্ছে মহাবিশ্বের চেয়ে পুরাতন নক্ষত্রেরও অস্তিত্ব আছে।

এত কিছু যে নক্ষত্র নিয়ে তার নাম এইচডি ১৪০২৮৩। অন্য তারার মতোই খটমটে এক নাম। তবে ডাক নামও আছে একখান। মেথুসেলাহ। ১৯১২ সাল থেকেই নক্ষত্রটি বিজ্ঞানীদের চেনা। দূরত্বও পৃথিবী থেকে বেশি নয়— মাত্র ১৯০ আলোকবর্ষ। 

বিজ্ঞানীরা এখন জানেন, নক্ষত্রটিতে লোহার পরিমাণ খুব সামান্য। তার মানে এর জন্ম হয়েছিল এমন সময় যখন মহাবিশ্বে লোহা খুব কম ছিল। আর তার মানে এর বয়স অন্তত মহাবিশ্বের বয়সের কাছাকাছি।

তাহলে কি মহাবিশ্বের বয়স বের করতেই ভুল হয়েছে? প্রসারণ থেকে মহাবিশ্বের বয়স বের করতে হলে অনেক কিছুই সঠিকভাবে জানা দরকার। এই যেমন ছায়াপথরা একে অপর থেকে কত বেগে সরে যাচ্ছে, কত দূরে থাকলে কত দ্রুত সরছে ইত্যাদি। আর দূরের ছায়াপথের ক্ষেত্রে এই মানগুলো বিজ্ঞানীরা বের করেন অনেক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে।

এটা যাচাই করার জন্য অন্য উপায়ে প্রসারণ বের করতে হয়। বিকল্প এসব উপায়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো মহাকর্ষ তরঙ্গ। ভারী নক্ষত্রদের মিলনে সৃষ্ট স্থান-কালের ঢেউ।

গত মাসের সম্মেলনের বেশ কয়েক দিন আগে এ বিষয়ে নেচার অ্যাস্ট্রোনোমি জার্নালে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানে মহাকর্ষ তরঙ্গ দিয়ে মহাবিশ্বের প্রসারণ হার দেখানো হয়। ব্যবহার করা হয় ২০১৭ সালের একটি মহাকর্ষ তরঙ্গ।

আরও পড়ুন
 মহাকর্ষ তরঙ্গ

কিন্তু এই হার দিয়েও মেথুসেলাহ নক্ষত্রের রহস্যের সমাধান হচ্ছে না। সমাধান হচ্ছে না মহাজগতের বয়স সমস্যারও। কেউ কেউ তাই আবার পদার্থবিদ্যার আমূল পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।

সূত্র
১। দ্য ন্যাশনাল
২। উইকিপিডিয়া
Category: articles

রবিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৮

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের এই মহাবিশ্ব মূলত তিন ধরণের উপাদান নিয়ে গঠিত। একটি হচ্ছে সাধারণ পদার্থ, যা দিয়ে আমরা তৈরি। টেলিস্কোপের সাহায্যে নির্ণয় করা মহাবিশ্বের সকল দৃশ্যমান বস্তু বিভিন্ন মহাজাগতিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। এছাড়াও রয়েছে ডার্ক ম্যাটার। মহাবিশ্বের মোট মহাকর্ষ বলের  প্রায় ৮৫ শতাংশের উৎস হল এই ডার্ক ম্যাটার। তবে এটার উৎপত্তি সম্পর্কে আমরা তেমন কিছুই জানি না। আরেকটি উপাদানের নাম ডার্ক এনার্জি। ধারণা করা হয়, ডার্ক এনার্জির কারণেই মহাবিশ্ব মহাকর্ষ বলকে উপেক্ষা করে ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে।
মহাবিশ্বের মোট ভরের বণ্টন

উপরে বর্ণিত প্রতিটি উপাদানই মহাশুন্যের স্থানকালকে বাঁকিয়ে দেয়। ঠিক যেমন আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বে বর্ণিত ছিল। এই তিনটি উপাদানের ফলে মহাশুন্যে সৃষ্ট স্থানকালের বক্রতাকে যোগ করলে দেখা যায়, মহাবিশ্ব প্রায় সমতল আকৃতির (Flat Curvature)।

মহাবিশ্বের মোট ভরস-শক্তির বণ্টন

তবে গবেষকদের মতানুসারে সমতল ছাড়াও মহাবিশ্বের আরও অনেক আকৃতি থাকতে পারত। মহাবিশ্বের ঋণাত্মক বক্রতা (Negative Curvature) থাকতে পারত। সেক্ষেত্রে ঋণাত্মক বক্রতাবিশিষ্ট মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ হত ধনাত্মক। আবার মহাবিশ্ব গোলক আকৃতির বা ধনাত্মক বক্রতাসম্পন্ন (positive curvature) হলে এর নীট শক্তির পরিমাণ দাঁড়াত ঋণাত্মক।
মহাবিশ্বের সম্ভাব্য তিন আকৃতি

বিষয়টি আরও ভালভাবে বোঝার জন্য আমরা মহাবিশ্বের কোন ঘূর্ণায়মান বস্তুর কক্ষপথের শক্তির কথা চিন্তা করতে পারি। কক্ষপথে ঘূর্ণনরত কোন মহাজাগতিক বস্তু যে বস্তুকে ঘিরে আবর্তন করে তার সাথে মহাকর্ষ বল দ্বারা আবদ্ধ থাকে। এই আবদ্ধ কক্ষপথের মহাকর্ষ বল ঋণাত্মক। তখন ঘূর্ণায়মান বস্তুটির কক্ষপথ অনেকটাই বৃত্তাকার থাকে। যদি আমরা  ঘূর্ণনরত বস্তুটিকে শক্তি প্রদান করি, তবে এর বেগ বেড়ে যাবে। ফলে এর উপর মহাকর্ষ বলের প্রভাব কিছুটা কমবে। যার কারণে এর কক্ষপথের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে এবং এর আকৃতি বৃত্তাকার থেকে ধীরে ধীরে উপবৃত্তাকার হতে থাকবে।

যত বেশি শক্তি প্রদান করা হবে, উপবৃত্তাকার কক্ষপথের দৈর্ঘ্য ততই বাড়তে থাকে। এভাবে শক্তি বাড়াতে থাকলে দেখা যাবে, একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি প্রদানের ফলে ঘূর্ণায়মান বস্তুটি এত বেশি বেগ অর্জন করে ফেলে যার কারণে সেটি আর মহাকর্ষের টানে কক্ষপথে ফিরে আসে না। প্রকৃতপক্ষে বস্তুটি অসীম মহাবিশ্বে মুক্ত হয়ে যাবে। কক্ষপথ থেকে মুক্ত হবার মুহূর্তে ঘূর্ণায়মান বস্তু এবং যে বস্তুটিকে কেন্দ্র করে সেটি ঘুরছিল তাদের মোট মহাকর্ষীয় শক্তির পরিমাণ হবে শুন্য। তখন ঘূর্ণনরত বস্তুটির চলার পথের আকৃতি হবে প্যারাবলা বা পরাবৃত্ত (parabola)।

বিভিন্ন আকৃতির কক্ষপথ

ঘূর্ণনরত বস্তুটিকে আরও শক্তি প্রদান করলে সেটি মহাকাশে অসীম বিস্তৃতিতে চলতে থাকবে। তখন এর মহাকর্ষীয় শক্তি হবে ধনাত্মক। সে সময়ে বস্তুটির আবক্র পথের আকৃতি হবে হাইপারবোলা বা পরাবৃত্ত।

আমরা এই আকারগুলো বাড়িতে হরহামেশাই দেখতে পাই।  একটি টর্চলাইট বা ফ্ল্যাশলাইটের কথা আলোচনা করা যাক। এটি থেকে নিঃসরিত আলোকরশ্মি যখন কোন দেয়াল বা বস্তুর উপর পড়ে তখন আলোকরশ্মিগুলো কণিকের বিভিন্ন আকৃতি গঠন করে। যদি টর্চলাইটকে একেবারে সোজাসুজিভাবে রেখে দেয়ালে আলো ফেলা হয়,তখন আলোকরশ্মি দেয়ালে বৃত্ত তৈরি করবে।
বৃত্তাকার আলো  
টর্চলাইট থেকে দেয়ালে কিছুটা তির্যকভাবে আলো ফেললে আলো যে গঠন দেখাবে,সেটা হবে উপবৃত্ত।
(নীচের ছবি)
উপবৃত্তাকার আলো 
টর্চলাইটকে দেয়ালের সাথে সমান্তরালে রাখলে দেয়ালে যে আলোকরেখার অবয়ব দেখা যায়, সেটা হবে পরাবৃত্ত। (নীচের ছবি)
পরাবৃত্তাকার আলো 

টর্চলাইটটিকে সমান্তরালে রেখে কিছুটা তির্যকভাবে দেয়ালে আলোকরশ্মি ফেললে দেয়ালে যে আলোকচিত্র দেখা যাবে, সেটাকেই বলে হাইপারবোলা বা অধিবৃত্ত (বাসায় চেষ্টা করে দেখতে পারেন)।

অধিবৃত্তাকার আলো 
সুতরাং কণিকের এই বিভিন্ন অংশ কক্ষপথ এবং কক্ষপথ সম্পর্কিত বস্তুদ্বয়ের শক্তির সাথে জড়িত। যদি কক্ষপথের  প্যারাবোলা আকৃতির মত মহাশুন্য সমতল  হয়, তাহলে পুরো মহাবিশ্বের সর্বমোট নীট শক্তির পরিমাণ হবে শুন্য।

মহাবিশ্বের আকৃতি যদি সমতল না হয়ে অন্য কিছু (ধনাত্মক বক্রতা বা ঋণাত্মক বক্রতা বিশিষ্ট) হত, তবে এর সর্বমোট শক্তির পরিমাণ হয় ধনাত্মক অথবা ঋণাত্মক হত। কিন্তু মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমাণ বাস্তবিকঅর্থে শুন্য।

এখন মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে,মহাবিশ্বের আকৃতি সমতল হওয়া আমাদের জন্য ভালো নাকি খারাপ? আসলে সমতল মহাবিশ্বের ধারণার মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান মিলেছে। সমতল মহাবিশ্বের তত্ত্ব থেকে বোঝা যায়, শুন্য থেকেই এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। কারণ শুন্যের মোট শক্তি শুন্য। ধনাত্মক বা ঋণাত্মক কোন শক্তির কারণে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলে তা অনেক বিভ্রান্তিমূলক প্রশ্নের জন্ম দিত। যেমন, সেই শক্তির উৎস কী? যদি কিছু পরিমাণ নীট শক্তি মহাবিশ্বে অবশিষ্ট থাকত, তবে সেটি কতটুকু? কেন অতটুকু শক্তি থাকবে? কেন তার বেশি বা কম নয় ?
কিন্তু মহাবিশ্বের আকৃতি সমতল হওয়ার কারণে বিজ্ঞানীদের কখনোই এই প্রশ্নগুলোর সম্মুখীন হতে হয়নি।

সূত্রঃ
১। https://www.youtube.com/watch?v=i4UpvpHNGpM
২। https://www.youtube.com/watch?v=veU6hK3jMH4
৩। http://curious.astro.cornell.edu/about-us/103-the-universe/cosmology-and-the-big-bang/geometry-of-space-time/600-why-is-the-universe-flat-and-not-spherical-advanced
৪। https://blogs.scientificamerican.com/degrees-of-freedom/httpblogsscientificamericancomdegrees-of-freedom20110725what-do-you-mean-the-universe-is-flat-part-i/
৫। https://en.wikipedia.org/wiki/Shape_of_the_universe
Category: articles

সোমবার, ৪ জুলাই, ২০১৬

মহাজাগতিক সভ্যতার প্রকারভেদ 

আমরাতো বর্তমানে যুগে নিজেদেরকে অনেক উন্নত মনে করি। কিন্তু মহাজাগতিক স্কেলে আসলে আমরা কতটুকু উন্নত? মহাজাগতিক স্কেলে কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীর সম্প্রদায়ের সভ্যতাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এটা হল টাইপ ১, টাইপ ২ এবং টাইপ ৩ সভ্যতা।
টাইপ ১ সভ্যতাকে গ্রহ সভ্যতাও (Planetary civilization) বলা হয়। এই সভ্যতায় প্রাণীরা তাদের নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে গ্রহে আসা সম্পূর্ণ শক্তি ধরে রাখতে ও ব্যবহার করতে পারে।
টাইপ ২ সভ্যতার প্রাণী সম্পূর্ণ নক্ষত্রের শক্তি ব্যবহারে সক্ষম। কল্পনা করা হয় যে এরা নক্ষত্রের চারপাশে একটি ডাইসন স্ফিয়ার তৈরি করে। পুরো নক্ষত্রকে বেষ্টনকারী এই গোলক নক্ষত্রের সব শক্তি শোষণ করে, যা প্রাণীরা কাজে লাগায়।
অন্য দিকে টাইপ ৩ সভ্যতার প্রাণীরা পুরো গ্যালাক্সিকে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম।
এই তিনটিই হল মূল শ্রেণিবিভাগ। আরো কিছু বাড়তি প্রকারভেদও আছে। তবে সেটা 'আজকের ছবি' বিভাগে প্রকাশের যোগ্য নয়।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Kardashev_scale
Category: articles

সোমবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৬

আকাশের ১৫তম উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা। এর ইংরেজি নাম স্পাইকা (Spica)। চিত্রাকে দেখতে একটিই তারকা মনে হয়। কিন্তু বাস্তবে এটি অন্তত দুটি তারকার সমন্বিত চিত্র যার উভয়টি সূর্যের চেয়ে বড় এবং উষ্ণ। এরা এক লক্ষ আশি হাজার কিমি. দূরত্বে থেকে একে অপরকে প্রদক্ষিণ করছে। এই দূরত্ব কিন্তু পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের চেয়ে ঢের ছোট। পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিমি.।

কন্যামণ্ডলীতে চিত্রার অবস্থান 

চিত্রা নক্ষত্র খুঁজে পাবার উপায়
চিত্রা কন্যারাশির উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। অন্য অনেক নক্ষত্রের মতই চিত্রাকে খুঁজে পেতেও সহায়তা করবে সপ্তর্ষীমণ্ডলী। সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারাভুজ সপ্তর্ষীর চামচের হাতলের শেষ তিনটি নক্ষত্রকে একটি বৃত্তচাপের অংশ মনে করে সামনে বাড়িয়ে দিলে একটি উজ্জ্বল তারা পাওয়া যায়। এটি হচ্ছে রাতের আকাশের ৪র্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতী (Arcturus)। এই বৃত্তচাপকে আরেকটু বাড়িয়ে দিলেই পাওয়া যাবে চিত্রা।

সপ্তর্ষী → স্বাতী → চিত্রা 

এপ্রিল মাসে একে সন্ধ্যার কিছু পরেই পূর্ব দিগন্তে উঁঁকি দিতে দেখা যায়। এ সময় একে রাতের অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়। দুই মাস পরে এটি সন্ধ্যার পরে আকাশের চূড়ায় পৌঁছে যায়। আগস্টের শেষের দিকে একে সন্ধ্যার পরে সামান্য সময়ের জন্যে পশ্চিমাকাশে দেখা যায়। এর পরেই এটি ডুবে যায় পশ্চিমে।

বৈশিষ্ট্য


স্পাইকা ২৬২ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। এটি ভার্গো মণ্ডলীর (কন্যারাশি) উজ্জ্বলতম তারকা হিসেবে নাম পেয়েছে আলফা ভার্জিনিস। স্পাইকার বাইনারি জগতের দুটি নক্ষত্রকে টেলিস্কোপেও আলাদা করে চেনা যায় না। একটির বদলে দুটি তারার উপস্থিতি শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল স্পেক্ট্রোস্কোপ বা বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে। বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র আলোর বিভিন্ন রঙকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। এই বাইনারি সিস্টেমের দুটি তারকাই সূর্যের চেয়ে বড় এবং উষ্ণ। এর মধ্যে বড়টি সম্ভবত নীল দানব বা উপদানব (সাব জায়ান্ট) জাতের নক্ষত্র।

এর মধ্যে বড়টির পৃষ্ঠ তাপমাত্রা ২২, ৪০০ কেলভিন এবং ছোটটির ১৮, ৫০০ কেলভিন। অথচ সূর্যের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা মাত্র ৫৮০০ কেলভিন। এরা একে অপর থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার কিমি. দূরে অবস্থিত এবং যৌথ অভিকর্ষ কেন্দ্রকে মাত্র চার দিনে এক বার ঘুরে আসে।

এদের সমন্বিতভাবে নিঃসৃত আলো সূর্যের আলোর চেয়ে ২২০০ গুণ উজ্জ্বল। অন্য দিকে ব্যাস যথাক্রমে সূর্যের ৭.৮ ও ৪ গুণ। অন্যতম উজ্জ্বল এই নক্ষত্রটি সময় সময় চাঁদের পেছনে ঢাকা পড়ে। জ্যোতির্বিদরা সন্দেহ করছেন, এটি শুধুই বাইনারি স্টার নয়, সম্ভবত আরো তিনটি তারা নিয়ে আসলে এখানে একটি কুইন্টিপল জগত (পাঁচ তারার সমন্বয়) গড়ে উঠেছে।
দেখা যাক, এই অনুমান সত্য হয় কিনা! 
Category: articles

শনিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আমরা জানি, বাসযোগ্য (Habitable) হতে হলে একটি গ্রহকে সংশ্লিষ্ট নক্ষত্র (যেমন আমাদের ক্ষেত্রে সূর্য) থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থিত হতে হয়। নক্ষত্র থেকে দূরের এই অঞ্চলটিকে হতে হয় একদম পারফেক্ট- খুব উষ্ণও নয় আবার খুব শীতলও নয়।  প্রশ্ন হতে পারে খোদ গ্যালাক্সির ক্ষেত্রেও কি এমন কোন শর্ত আছে?

গ্রহ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বাসযোগ্যতার যে শর্ত তা প্রযোজ্য হতে পারে গ্যালাক্সির ক্ষেত্রেও। অর্থ্যাৎ, গ্যালক্সিদের ক্ষেত্রেও এমন একটি অঞ্চল থাকবে যেখান গ্রহরা বেড়ে উঠতে পারবে। কেপলার স্পেইস টেলিস্কোপসহ কিছু মিশন সৌরজগতের বাইরে হাজার হাজার গ্রহের সন্ধান পাচ্ছে। এই বহির্গ্রহদের সংখ্যা এবং অবস্থান চোখে পড়ার মত।
তবে গ্যালাক্সিদের ক্ষেত্রে বাসযোগ্য গ্রহের অঞ্চল থাকার বিষয়টি এখনো বিতর্কের উর্ধ্বে উঠতে পারেনি। জ্যোতির্পদার্থবিদ গুইলিয়েরমো গনজালেজ এর মতে, একটি গ্রহকে ছায়াপথ কেন্দ্র (Galactic center) থেকে এত দূরে থাকতে হবে যাতে এটি ক্ষতিকারক বিকিরণ এড়াতে পারে। আবার এর অবস্থান এত বেশি দূরেও হওয়া চলবে না যাতে এতে যথেষ্ট পরিমাণ ভারী মৌল তৈরি হতে সমস্যা হয়। ফলে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে ২৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে ৬ হাজার আলোকবর্ষব্যাপী একটি অঞ্চল বাসযোগ্যতার আওতায় পড়ে। এর অবস্থান হয় কেন্দ্র ও প্রান্তের প্রায় মাঝামাঝিতে।
তবে, গ্যালাক্সিতে বাসযোগ্য গ্রহের অবস্থানের নিখুঁৎ সীমানা চিহ্নিত করার মত যথেষ্ট গ্রহ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। অবশ্য, দিন দিন এ সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও তথ্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে।

সূত্রঃ
[১] স্পেইস আনসার
[২] গুলিয়েরমো গনজালেজ
Category: articles
অধিকাংশ অন্যান্য গ্যালাক্সির মতই এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে বাস করছে একটি বিশাল ভরযুক্ত ব্ল্যাক হোল। জ্যোতির্বিদদের ধারনা, এটি নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে এখন বিশ্রাম নিচ্ছে।
শত শত গ্যালাক্সির ভীড়ে এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির ছবি। এরই কেন্দ্রে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে আছে একটি ব্ল্যাক হোল। 
উপরের ছবির সবচেয়ে উজ্জ্বল এবং বড় গ্যালাক্সিটিই এনজিসি ৪৮৮৯। ৩০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে কোমা গ্যলাক্সি ক্লাস্টারে এর অবস্থান। এর কেন্দ্রে থাকা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলটি আগের অনেক রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। এর ভর সূর্যের ২১ বিলিয়ন (বা ২ হাজার ১০০ কোটি) গুণ।
অন্য দিকে এর ঘটনা দিগন্তের ব্যাস ১৩ হাজার কোটি কিলোমিটার। এই পাল্লাটি সূর্য থেকে নেপচুনের কক্ষপথের দূরত্বের ১৫ গুণ।  ঘটনা দিগন্ত হচ্ছে একটি ব্ল্যাক হোলের বাইরে সেই অঞ্চল যেখান থেকে আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। ফলে এর ভেতরের কিছু দেখা সম্ভব হয় না। অন্য দিকে, আমাদের নিজেদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের কেন্দ্রে থাকা সম্ভাব্য ব্ল্যাক হোলখানির ভর সূর্যের ৪০ লাখ গুণ। এর ঘটনা দিগন্তের পাল্লা বুধের কক্ষপথের এক পঞ্চমাংশ মাত্র।
কিন্তু আলোচ্য গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা ব্ল্যাক হোলের রাক্ষুসে আচরণের সমাপ্তি ঘটেছে। এনজিসি ৪৮৮৯ এর খাবার কক্ষে এটি এখন বিশ্রামরত। বর্তমানে এর আশেপাশে নতুন জন্মানো তারকারা শান্তিতে বেড়ে উঠছে এবং একে প্রদক্ষিণও করছে। 
অন্য ব্ল্যাক হোলের মতই এটি বিভিন্ন গ্যালাকটিক বস্তু যেমন গ্যাস, ধূলিকণা ও অন্যান্য ধ্বংশাবশেষ সাবাড় করে করে একটি আক্রেশন ডিস্ক (Accretion disk) গঠন করে। গ্যাস-ধূলিকণার ঘুর্ণায়মান এই চাকতিকে ব্ল্যাক হোলটি তীব্র অভিকর্ষীয় ত্বরণে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। পরিণামে চাকতির তাপমাত্রা উঠে যায় লক্ষ ডিগ্রি পর্যন্ত। এই উত্তপ্ত বস্তু কতৃক নির্গত হয় দানবীয় এবং শক্তিশালী জেট বা ফোয়ারা । 
সক্রিয় থাকায় সময় জ্যোতির্বিদরা ব্ল্যাক হোলটিকে কোয়াসার শ্রেণিতে নাম তালিকাবদ্ধ করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিস্ক মিল্কিওয়ের চেয়ে হাজার গুণ বেশি শক্তি নির্গত করত। ডিস্কটি ব্ল্যাক হোলের খাবারের যোগান দিয়ে দিতে দিতে এক পর্যায়ে আশেপাশের সব গ্যালাকটিক বস্তু নিঃশেষ করে ফেলে। ফলে, এটি এখন সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। তবু, রহস্যময় কোয়াসাররা মহাবিশ্বের শৈশবকালে কিভাবে গঠিত হয়েছিল তা জানতে ব্ল্যাক হোলটি জ্যোতির্বিদদের গবেষণার কাজে আসবে। 
আলো বেরিয়ে আসতে পারে না বলে ব্ল্যাক হোলকে সরাসরি দেখা না গেলেও পরোক্ষ উপায়ে এর ভর বের করা যায়। এনজিসি ৪৮৮৯ গ্যালাক্সির চারদিকে প্রদক্ষিণরত নক্ষত্রদের বেগ পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে। এই বেগ থেকেই জানা গেছে ব্ল্যাক হোলটির বিশাল ভরের তথ্য।  


Category: articles

শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫

অবলোহিত হচ্ছে এক ধরনের অদৃশ্য তড়িচ্চৌম্বক বিকিরণ। আমরা জানি, দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত। আর, লাল আলোই দৃশ্যমান আলোর সবচেয়ে উচ্চ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অধিকারী। লালের পর থেকেই শুরু হয় অবলোহিতের (Infrared) যাত্রা। ফলে এর পাল্লা শুরু ৭০০ ন্যানোমিটারে। বিস্তৃত ১ মিলিমিটার পর্যন্ত।
তারকার জন্ম 
তারকার মৃত্যু 
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি 

প্রতিক্রিয়ারত গ্যালাক্সি 

সর্পিল গ্যালাক্সি 
সূত্রঃ
১। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি (ক্যালটেক)
২। উইকিপিডিয়াঃ দৃশ্যমান বর্ণালী, অবলোহিত আলো  
Category: articles

মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

প্রথমে দেখি সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারবে কিনা।
না, সূর্য কখোনই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। তারকাদের জীবনের পরিণতি ঘটতে পারে মূলত দুইভাবে। সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারকাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে সরল ও শান্তভাবে। এসব তারকার অন্তর্ভাগের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার পর এরা লোহিত দানব ধাপে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে এই লোহিত দানব নক্ষত্রই (Red Giant Star) তার বহির্ভাগ মহাকাশে নিক্ষেপ করে গ্রহ নীহারিকায় (Planetary Nebula) পরিণত করে। আর অন্তর্ভাগ সংকুচিত হয়ে শ্বেত বামন (White Dwarf) গঠন করে।
অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভারী তারকারা জ্বালানী ফুরিয়ে পরিণত হয় লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকায়। এরাও পরে বহির্ভাগ ছুড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনাকে বলে সুপার নোভা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে থেকে যাওয়া অংশ হয় নিউট্রন তারকা নয়তো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকলে হবে নিউট্রন স্টার। নিউট্রন নক্ষত্রের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে।
আরো বেশি ভর হলে হবে ব্ল্যাক হোল। প্রকৃতপক্ষে, যেসব তারকার ভর পাঁচ সৌর ভরের চেয়ে বেশি হয় তাদের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পরও মূলবস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে, ঐ বস্তু থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা কোন বস্তু দেখি যখন ঐ বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এটা প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইশাম। যেহেতু ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই একে দেখাও যায় না। খেতাবটাও পেল সেজন্যেই। নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থিবিদ জন হুইলার।
প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, আলো তো কোন কণা নয়, তাহলে এটা অভিকর্ষের কাছে ধরা খায় কী করে? অভিকর্ষ তো শুধু ভরের সাথে জড়িত। আলোক কণিকা ফোটনের তো ভরই নেই? ক্যামনে কী?
আসলে অভিকর্ষ ভরের সাথে সম্পৃক্ত- এটা হল নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু অভিকর্ষের আধুনিক মতবাদ তথা আইনস্টাইনীয় মত অনুযায়ী অভিকর্ষ কোন বল নয়। অভিকর্ষ হচ্ছে স্থান কালের বক্রতা। আর, ব্ল্যাক হোল তার চারপাশের স্থান কালকে এত বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে দেয় যে আলোক কণা ঐ বক্রতা থেকে সরলরেখার মতো বেরিয়ে আসতে পারে না।
ফলে, ভর কম হবার কারণে সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারছে না। কিন্তু ধরা যাক, কোন কারণে আমাদের সৌরজগতের সূর্য ব্ল্যাক হোল বনে গেল। সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
পৃথিবীর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে পৃথিবীর প্রাণিদের নিয়ে। রেহাই পাবো না আমরাও। কেন? কারণ, সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায় তাহলে আমরা বঞ্চিত হব এর আলো থেকে। সারা দুনিয়া ঢেকে যাবে অন্ধকার পর্দার আড়ালে।
তাহলে কি বলা যায় সূর্য ব্ল্যাক হোল না হওয়াতে আমরা বেঁচে গেছি? মোটেই না। আরো ৪৫০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। এই সময় সূর্য বড় হয়ে গিয়ে পৃথিবীর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি যে পৃথিবী সূর্যের পেটে চলে যাবে নাকি বাইরেই থাকবে। তবে যদি পেটে নাও যায়, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কোনভাবে অব্যাহত থাকবে না। কারণ সৌরপৃষ্ঠ কাছাকাছি হবার দরুণ যে প্রচণ্ড উত্তাপ উৎপন্ন হবে তা সহ্য করা বনী আদমের জন্যে সম্ভব হবে না। মানুষ আসলেই দুর্বল প্রাণী। মানুষ যদি টিকে যাবার উপাউ বেরও করে ফেলতে পারে বেঁচে থাকার জন্য তাও যথেষ্ট হবে না। কেননা, প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে। অন্য কারণে মানুষ যদি তত দিনে ধ্বংস নাও হয়ে যায়, তাহলে তাকে পানি ছাড়া, অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ ছাড়া এবং দূষিত বায়ুমণ্ডলসহ আরো নানাবিধ বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
অবশ্য আমাদের আপাতত সেই চিন্তা নেই। আমাদের ৪৫০ কোটি বছরের প্রজন্মের ঘাড়ে পড়বে সেই কাজ! 
সূত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়াঃ গ্রহ নীহারিকা 
[২] তারকার জীবনচক্র- বিবিসি 
[৩] কিউরিয়াস অ্যাস্ট্রো 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪

যাঁকে আধুনিক কসমোলজির জনক বলে প্রায়শই অভিহিত করা হয়, সেই বিজ্ঞানী এডুইন হাবল এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধ্যানধারণা আমূল পাল্টে দেয়।
বিজ্ঞানী এডুইন হাবল
জন্ম ১৮৮৯ সালে। পেশাগত জীবন শুরু আইনজীবী হিসেবে। কিন্তু যার মন পড়ে রয়েছে মহাকাশের দূর সীমানায়, তার কি আর আইনের ধারায় মন বসে?  কয়েক বছর পরেই নিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় ডক্টরেট । গ্র্যাজুয়েশনের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে (Observatory) কাজ করার দাওয়াত পেলেন। কিন্তু তিনি আবার ১ম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকও যে! তাই কাজে যোগ দিতে কিছু দিন দেরি হয়ে গেল। তবে, ফিরে এসেই লেগে গেলেন। এখানেই তিনি বিশ্বের বৃহত্তম দুটি আকাশবীক্ষণ যন্ত্র (Telescope) নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলেন। এগুলো হল যথাক্রমে ৬০ ও ১০০ ইঞ্চির হুকার টেলিস্কোপ।

সৈনিক জীবন বুঝি বড্ড ভালো লেগেছিল!  ২য় বিশ্বযুদ্ধের দামামা শুরু হয়ে গেলে ১৯৪২ সালে আবারো মানমন্দির ছেড়ে গেলেন।  পেলেন বীরত্বের প্রতিকও।

মিল্কিওয়ের বাইরে উঁকিঃ
১৯২০ এর দশকেও আকাশে ছড়ানো ছিটানো ছোপ ছোপ আলোকে মনে করা হত নীহারিকা (Nebula)। মনে করা হত এগুলোর অবস্থানও মিল্কিওয়েতেই। আলাদা আলাদা করে NGC 6822, M33 ও এনড্রোমিডা গ্যালাক্সির ছবি নিরীক্ষা করার সময় হাবল এগুলোর প্রতিটির ভেতরে একটি সেফেইড ভেরিয়েবল নামক স্পন্দনশীল (Pulsating) নক্ষত্র (Star) দেখতে পেলেন। হাবল সাহেব হিসেব কষে বের করলেন নক্ষত্রগুলো কত দূরত্বে আছে। এতে করে বের হল নীহারিকাদের  দূরত্বও। দেখা গেল, মিল্কিওয়ে থেকে তাদের দূরত্ব অনেক বেশি দূরে।

মহাকাশবিদরাও বুঝলেন, এই নীহারিকাগুলোও আসলে মিল্কিওয়ের মতই ছায়াপথ (Galaxy)। প্রতিটি ছায়াপথে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন তারকা। আগে যেখানে মিল্কিওয়েকেই 'মহাবিশ্বের সব' মনে করা হত, সেখানে এবার মহাকাশবিজ্ঞানীদের চোখ আরো অনেক দূর প্রসারিত হয়ে গেল। 
প্রায় একই সময়ে হাবল গ্যলাক্সিদের শ্রেণিবিভক্ত করার একটি স্টান্ডার্ড উপায়ও বার করলেন। তিনিই প্রথম পরিষ্কার করে গ্যালাক্সিগুলোকে ৪টি শ্রেণিতে ফেললেন। এগুলো হল, ডিম্বাকৃতির (Elliptical), প্যাঁচানো তথা সর্পিলাকার (Spiral) , Barred Spiral ও অনিয়াতাকার (Irregular) গ্যালাক্সি। হাবল শুরুতে ধারণা করেছিলেন সর্পিল গ্যালাক্সিরা  ডিম্বাকৃতিরগুলো থেকে বিকশিত হয়। এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা জানেন সব গ্যলাক্সিদের আকৃতিই এদের জীবনের শুরুতেই নির্ধারিত হয়।

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বঃ
গ্যালাক্সিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হাবল দেখলেন, ওগুলো স্থির হয়ে বসে নেই। উপরন্তু এরা প্রায় সবাই পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অবশ্য এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের সাথে পারস্পরিক মহাকর্ষীয় টানে কাছে আসছে এবং আরো ৫০০ কোটি বছর পরে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে।

ফলে জানা গেল, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার বের করা হয় তাকে বলে হাবলের নীতি (Huble's Law)। অবশ্য জর্জ লেমিটরও এর আগে ১৯২৭ সালে এই নীতি প্রস্তাব করেছিলেন। হিসেব করে পাওয়া গেল, মহাবিশ্ব একটি নির্দিষ্ট হারে প্রসারিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীর সম্মানে এই হারটিকে বলা হয় হাবল ধ্রুবক (Huble Constant)।

হাবলের এক দশক আগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনও সাধারণ আপেক্ষিকতার নীতির মাধ্যমে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ সময়ে তার কোন প্রমাণ না পাওয়া যাওয়াতে তিনি সেই প্রস্তাবের সমীকরণগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু হাবল সেই ধারণা প্রমাণিত করবার পরে আইনস্টাইন মাউন্ট উইলসনে গিয়ে বলেন, ঐ সমীকরণগুলো প্রত্যাহার ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল

অন্যান্য অবদানঃ
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যার জগতেই হাবলের রয়েছে আরো অবদান। পেয়েছেন অসংখ্যা পুরস্কার। কিন্তু মহাবিশ্বের পরিচয় উন্মোচিত করার পরেও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি। তাঁর জীবদ্দশায় নোবেল প্রাইজের জন্য  মহাকাশবিদ্যাকে পদার্থবিদ্যার একটি ফিল্ড মনে করা হত। তিনি আজীবন চেষ্টা করে গেছেন যাতে এই ধারণা চেঞ্জ হয়ে জ্যোতির্বিদরাও নোবেলের সুযোগ পান। সুযোগটি তৈরি হল ১৯৫৩ সালে। কিন্তু একই বছর মারা গেলেন তিনিও । যেহেতু নোবেলের ক্ষেত্রে মরণোত্তর (Posthumous) পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা নেই, তাই নোবেলের তালিকায় হাবল আর স্থান পেলেন না।

১৯৫৩ সালে, ৬৩ বছর  বয়সে মারা যান মহাবিশ্বের নব দিগন্ত উন্মোচনকারী এই জ্যোতির্বিদ। মৃত্যুর আগে তিনি পালোমার পর্বতে ২০০ ইঞ্চির হ্যালি টেলিস্কোপের নির্মাণ দেখে গিয়েছিলেনীর১৯৭৬ সালে রুশ BTA-6 টেলিস্কোপ তৈরি আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বৃহত্তম টেলিস্কোপ।

হাবলের জন্মের ১০১ বছর পর ১৯০০ সালে নাসা পৃথিবীর কক্ষপথে হাবল স্পেইস টেলিস্কোপ বসাল। এই আকাশবীক্ষণ যন্ত্র মহাবিশ্বের হাজার হাজার ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। পৃথিবীর নিখুঁত বয়স নির্ণয়, গ্যালাক্সিদের ক্রমবিকাশ ও মহাবিশ্বকে প্রসারণের জন্য দায়ী ডার্ক এনার্জির আবিষ্কারের ক্ষেত্র প্রভূত  অবদান রয়েছে এই টেলিস্কোপ্টির।

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Edwin Hubble

Category: articles

শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪

মহাবিশ্বের বয়স কত- এই প্রশ্নটি অবশ্যই কৌতূহলোদ্দীপক। আসলে মহাবিশ্বের বয়স গণনা শুরু হয়েছে বিগ ব্যাঙের পর থেকে- যখন সময় গণনা শুরু। তার আগে সময়েরই অস্তিত্ব ছিল না, অন্তত আমাদের কাছে পরিমাপ করার কোন হাতিয়ার নেই।
মহাবিশ্বের বয়সের নকশা
মহাবিশ্বের বয়সের ব্যাপারে সবচেয়ে সুসঙ্গত তথ্য হচ্ছে ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর বা প্রায় ১৪ বিলিয়ন তথা ১৪০০ কোটি বছর। তো কিভাবে মাপা হল মহাবিশ্বের বয়স? এর উপায় আছে দুটি। দুটোরই কৃতিত্ব হাবলের।
প্রথম উপায় হচ্ছে ছায়াপথসমূহের (Galaxy) বেগ ও দূরত্ব পরিমাপের মাধ্যমে। যেহেতু ছায়াপাথসমূহ একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে (কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম ছাড়া), তাহলে আমরা বলতেই পারি, অতীতের কোন এক সময় এরা সবাই যুক্ত ছিল।
বর্তমানে গ্যালাক্সিদের বেগ, পারস্পরিক দূরত্ব ও এর সাথে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার কাজে লাগিয়ে আমরা বের করতে পারি, এই অবস্থানে আসতে তাদের কত সময় লেগেছে। আর এই সময়টাই তো মহাবিশ্বের বয়স! আর এভাবে উত্তরটা পাওয়া গেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর।
মহাবিশ্বের বয়স বের করার আরেকটি উপায় হল, সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর (star clusters) বয়স বের করা। কারণ, মহাবিশ্ব এতে অবস্থিত কোন জ্যোতিষ্কের চেয়ে কম বয়সী হতে পারে না। পারে কি?
আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়েকে প্রদক্ষিণরত বটিকাকার (Globular) নক্ষত্রপুঞ্জগুলো এখন পর্যন্ত আমাদের খুঁজে পাওয়া প্রাচীনতম বস্তু। এসব নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত তারকাগুলোর (Star) ব্যাপক বিশ্লেষণে তাদের বয়স পাওয়া গেছে প্রায়  ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর।
এই দুই মেথডের মিল আমাদেরকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী  করেছে যে আমরা তাহলে মনে হয় মহাবিশ্বের সঠিক বয়স জেনে ফেলেছি!

সূত্রঃ
১. হাবল সাইট
২. স্পেইস ডট কম
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

আমাদের সৌরজগতের আকার নিয়ে দেওয়া পোস্টে বলেছিলাম  সৌরজগতের সর্বশেষ চৌহদ্দি প্রায় ২ আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত। এত বিস্তৃত আয়তন কিন্তু সমগ্র মহাবিশ্বের (Universe) সামান্যই অংশ।
বিশাল মহাবিশ্ব

এখন, মহাবিশ্বের আকার সম্পর্কে অপ্রিয় সত্য কথা হল, আমরা এর সঠিক আকার বা সাইজ জানি না। এটা অসীমও হতে পারে। সমগ্র মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটি অংশই শুধু আমরা দেখতে পাই।
তবে, আমরা জানি মহাবিশ্বের বয়স ১৪ বিলিয়ন  (বা ১৪০০ কোটি) বছর। তাহলে, মহাবিশ্বের ভেতর দিয়ে আলো মাত্র ১৪ বিলিয়ন বছর চলাচলের সুযোগ পেয়েছে। অতএব, আমরা পৃথিবীতে বসে এখন পর্যন্ত মহাবিশ্বের  সর্বোচ্চ যে দূরত্ব পর্যন্ত  দেখতে পাই তা হল ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। এটা হচ্ছে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সীমানা, সমগ্র মহাবিশ্বের নয়।

খোলা সাগরের একটি জাহাজের মত পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাঁদের টেলিস্কোপকে যে কোন দিকে ঘুরিয়ে ১৪ বিলিয়ন বছর আগের অবস্থা দেখে নিতে পারেন। তাহলে, ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষের ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি দৃশ্যমান গোলকের ঠিক মাঝখানে পৃথিবী। সাবধান! এখান থেকে ধারণা করা যাবে না যে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। মূলত মহাবিশ্বের কেন্দ্রই নেই (কেন?)
খোলা সমদ্রের জাহাজের মতই আমরা বলতে পারি না, মহাবিশ্বের কোথায় আমরা আছি। আমরা উপকূল দেখি না বলেই যেমনি বলা যাবে না যে আমরাই সমুদ্রের কেন্দ্রে আছি, তেমনি মহাবিশ্বের প্রান্ত সীমা দেখি না বলেই দাবী করতে পারি না, আমরাই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছি।
এ থেকে দেখা যাচ্ছে, দৃশ্যমান মহাবিশ্ব যে গোলক তৈরি করে, তার ব্যাস ২৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। আসলে এই দৃশ্যমান গোলকের আকারও আরও বেশি। কারণ, ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের বিগ ব্যাঙ সময়ের কোন কণাকে দেখার পরও তো মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে থেকেছে। ফলে, সেই কণা এখন ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। ফলে, দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাস দাঁড়াচ্ছে ৯২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ

সূত্রঃ
১. হাবলসাইট
২. স্পেইস ডট কম
Category: articles

বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪

ট্রেস -৪
এখন পর্যন্ত জানা মতে, সৌরজগতের বাইরে সবচেয়ে বড় গ্রহটি এক বিস্ময়। তাত্ত্বিকভাবে এর অস্তিত্বই থাকা অসম্ভব। এর নাম দেওয়া হয়েছে ট্রেস -৪ (TrES-4)। এই গ্রহটি বৃহস্পতি গ্রহের ১.৭ গুণ বড়। এর ঘনত্ব অতিমাত্রায় স্বল্প, তাই একে ধোঁয়াটে গ্রহদের (Puffy Planets) কাতারে রাখা হয়েছে। এর ঘনত্ব হল প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে মাত্র দশমিক ২ গ্রাম যা প্রায় তর্নিকাঠের (Balsa wood) ঘনত্বের সমান।উল্লেখ্য, পৃথিবীর ঘনত্ব প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে সাড়ে ৫ গ্রামের ওপরে।
তর্নিকাঠ

তথ্যটি দিলেন অ্যারিজোনার লয়েল মানমন্দিরের (Observatory) গবেষণা প্রদান জর্জি মান্দুশেভ। তিনি আরও বলেন, " গ্রহটির বহিঃস্থ বায়ুমণ্ডলের উপর অভিকর্ষীয় টান নগণ্য হওয়ায় সম্ভবত বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশ ধূমকেতুর লেজের আকার ধারণ করেছে।"
গ্রহটির ভর অনেক, কিন্তু সেই তুলনায় ঘনত্ব খুবই কম। ফলে এক্সোপ্ল্যানেটদের (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) জগতে  এটি এক ব্যতিক্রম গ্রহ। ব্যতিক্রমের মাত্রা এতই বেশি যে বর্তমান থিওরি দিয়ে এর অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না।
স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে এটি বেশি বড়।  মান্দুসেভ স্পেস ডট কমকে বলেন, গ্রহটির যা ভর, তাতে এর আকার বৃহস্পতির সমান হওয়া উচিত। অথচ এটি তার দ্বিগুণ। এডওয়ার্ড ডানহাম বলেন, "ট্রেস -৪ একটি তাত্ত্বিক সমস্যা বাঁধিয়েছে। অবশ্য, সমস্যা তৈরি হওয়া ভাল। কারণ, তা সমাধান হলে আমরা নতুন জিনিস জানতে পারি।"
গ্রহটি পৃথিবী থেকে ১৪০০ আলোকবর্ষ দূরে, হারকিউলিস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত।  এর আরেকটি অবাক করা ব্যাপার হল, এই গ্রহ মাত্র সাড়ে তিন দিনে এর তারকাকে (GSC 02620-00648) প্রদক্ষিণ করে ফেলে। অর্থ্যাৎ, এতে সাড়ে তিন দিনে এক বছর হয়ে যায়।
ট্রেস-৪ গ্রহের মাতৃ তারকাও আরেক বিস্ময়। এর বয়স প্রায় সূর্যের সমান হলেও কাজেকর্মে এগিয়ে গেছে অনেক বেশি, হয়েছে বেশি পোক্ত। ভর বেশি হওয়ায় এর বিবর্তন ঘটেছে দ্রুত। মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় এটি সাবজায়ান্টে পরিণত হয়েছে। সাবজায়ান্ট বলা হয় সেই সব তারকা/নক্ষত্রকে যারা হাইড্রোজেন জ্বালানী শেষ করে লোহিত দানবে (Red Giant) পরিণত হবার অপেক্ষায় আছে। অন্য দিকে, আরো ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন বছর পরে আমাদের সূর্য লোহিত দানব হতে পারবে। সেই সময় সূর্য বিস্তৃত হয়ে পৃথিবী সহ নিকটবর্তী গ্রহসমূহকে গ্রাস করে ফেলবে।
ট্রেস-৪ যেহেতু এর মাতৃ তারকার খুব কাছে থেকে ঘুরছে, তাই বেচারার কপাল খারাপ, ভবিষ্যতে মাতৃ তারকার জঠরে চলে যেতে হবে। মান্দুশেভ বলেন, এটা ঘটবে, যখন নক্ষত্রটি আরো প্রায় ১০০ বছর পরে লোহিত দানবে রূপান্তরিত হবে।
ট্রেস-৪ এর মাতৃ তারকা GSC 02620-00648 সূর্যের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ উজ্জ্বল এবং প্রতি সেকেন্ডে ৩-৪ গুণ বেশি শক্তি নির্গত করে। নিয়মানুযায়ী অপেক্ষাকৃত বড় ও উজ্জ্বলতর নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত গ্যাসীয় গ্রহরা হালকা হয়। কিন্তু এই গ্রহটির আকার এত বিশাল কেন, তা ব্যাখ্যাতীত।

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Earth
Category: articles

বুধবার, ১ অক্টোবর, ২০১৪

১৪ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাঙ (Big Bang) বা মহা বিস্ফোরণ নামক ঘটানার মাধ্যমে মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু। আজকের এই অবস্থায় আসতে তাকে অতিক্রম করতে হয়েছে অনেকগুলো ধাপ।
চলুন, সংক্ষেপে দেখি, কখন কী ঘটেছে?
মহাবিশ্বের ক্রমবিকাশের সংক্ষিপ্তসার

 [ছবিতে দেখতে ছবির উপর বা এখানে ক্লিক করুন]
শুরুর মুহূর্তঃ বিগ ব্যাঙের পরই সময় গণনা শুরু। তাহলে সময় যখন শূন্য, তখনই মহাবিশ্বের আবির্ভাব।
০.০০১ ন্যানোসেকেন্ডঃ উইম্প (Weekly Interacting Massive Particles) বা দুর্বলভাবে ক্রিয়াশীল ভারী কণার গঠন।
০.০১ মিলিসেকেন্ডঃ কোয়ার্ক স্যুপ থেকে নিট্রন ও প্রোটনের গঠন
১০০ সেকেন্ডঃ পরমাণুর নিউক্লিয়াস তৈরি
৩ লক্ষ বছরঃ রিকম্বিনেশন, পরমাণুর (Atom) গঠন
৩০ লক্ষ বছরঃ তারকাদের গঠন, এদের আলোর মাধ্যমে পরমাণু থেকে কিছু ইলেক্ট্রনের বিচ্যুতি
১ বিলিয়ন বা ১০০ বছরঃ গ্যালাক্সি (Galaxy) বা ছায়াপথ গঠন
৩ বিলিয়ন বছরঃ আন্তঃছায়াপথীয় গ্যাসের নবতাপায়ন ( Reheating of Intergalactic gas)
১৪ বিলিয়ন বছরঃ গ্যলাক্সিগুচ্ছ তৈরি

Category: articles

সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

সূর্যের চেয়ে বহু গুণ ভারী একটি বিশাল নক্ষত্র বা তারকা যখন নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে গুটিয়ে গিয়ে সিঙ্গুলারিটি গঠন করে, ফলে আলোও ঐ বস্তু থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না, তখন তাকে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহবর বলে।
অন্তত, এটা আমরা এত দিন তাই মনে করতাম।
এখন, একজন বিজ্ঞানী দাবী করলেন, গণিতের হিসাব অনুযায়ী ব্ল্যক হোলদের বাস্তবে অস্তিত্ত্ব থাকা অসম্ভব। তাঁর মতে, তারকাদের পক্ষে গুটিয়ে গিয়ে সিঙ্গুলারিটি গঠন করা সম্ভব নয়। এই মত, অধ্যাপিকা লরা মারসিনি হাউটনের।
এই মত সত্যি হলে, মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগের তত্ত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
চ্যাপেল হিলের আর্টস অ্যান্ড সায়েন্টিস্টস কলেজে ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলিনার এই অধ্যাপক গবেষণাটি পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, একটি তারকা মারা যাবার সময় (জীবনের সমাপ্তিতে পৌঁছায়) হকিং বিকিরণ নিঃসরণ করে যার পূর্বানুমান করেন ড. স্টিফেন হকিং। ড. মারসিনির মতে, এই সময় তারকাটি বিশাল পরিমাণ ভরও হারায়, আর তার পরিমাণ এতই বেশি যে এর পক্ষে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়া অসম্ভব। জীবনের শেষের দিকে তারকাটি ফুলে উঠে ও বিস্ফোরিত হয়।ফলে, কখোনই সিঙ্গুলারিটি তৈরি হওয়া সম্ভব নয়, আর না ঘটনা দিগন্ত (Event Horizon) যেখান থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বাইরে আসতে পারে না বলে মনে করা হয়।
তিনি বলেন, "আমি এখনও হতভম্ব হয়ে আছি। গত ৫০ বছর ধরে আমরা সমস্যাটি পর্যালোচনা করছি। আমার মনে হয় এই সমাধান আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করার খোরাক যোগাবে।"
ব্ল্যাক হোল আছে কি নেই- এ ব্যাপারে পরীক্ষামূলক প্রমাণ হয়তো এক সময় বাস্তব প্রমাণ পেশ করবে। কিন্তু আপাতত গণিতে কোন ভুল নেই, মত এই অধ্যাপিকার।
আরও বড় ব্যাপার হল, এই গবেষণা বিগ ব্যাং তত্ত্বকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা, প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে একটি অতি নিবিড়, অতি উষ্ণ ক্ষুদ্র কণিকা থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি যা উৎপত্তির পর থেকে সম্প্রসারিত হয়ে আসছে।
মহাবিশ্বের দুটি অন্যতম মৌলিক নীতিকে একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় ব্ল্যাক হোলদেরকে খুবই অদ্ভুত মনে করা হয়।
হকিং বিকিরণ

উদাহরণস্বরূপ, আইন্সটাইনের অভিকর্ষ তত্ত্ব ব্ল্যাক হোলের ভবিষ্যদ্বাণী করে, অন্য দিকে কোয়ান্টাম তত্ত্বের কথা হচ্ছে কখোনই মহাবিশ্ব থেকে তথ্য হারিয়ে যেতে পারে না। অথচ ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন বা ঘটনা দিগন্ত সে কাজটিই করে।
এই দুই তত্ত্বের মীমাংসা এখনও হয়নি। ফলে এটা একটি প্যারাডক্সে রূপ নিয়েছে যাকে নাম দেওয়া হয়েছে ব্ল্যাক হোল ইনফরমেশন প্যারাডক্স অর্থাৎ কিভাবে কোন তথ্য বা বস্তু ব্ল্যাক হোলে হারিয়ে যেতে পারে?
অধ্যাপক মারসিনির এই সমাধান হয়তো দুই মৌলিক তত্ত্বকে সন্ধি করিয়ে দেবে।
বছরের শুরুর দিকে প্রফেসর স্টিফেন হকিংও বলেছিলেন, "ব্ল্যাক হোল বলতে কিছু নেই, আছে গ্রে হোল বা ধূসর গহবর"।
সূত্রঃ ডেইলিমেইল
Category: articles

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমাদের নিজেদের এমনকি পৃথিবীর আকারের তুলনায় সূর্য অনেক বিশাল। ১০৯টা পৃথিবীকে পাশাপাশি রেখে দিলে সূর্যের ব্যাসের সমান হবে। আর সূর্যের আয়তনের সমান স্থান পূরণ করতে হলে পৃথিবীর মত ১৪ লাখ গ্রহ লাগবে! আরেকটি ধারণা নিন। সূর্য সৌরজগতের ৯৯.৮৬ শতাংশ ভরের জন্য দায়ী! আরও ধারণা পেতে সৌরজগতের  আলোচনায় আকার বিষয়ক পোস্টখানা পড়ুন
 কিন্তু নক্ষত্রের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিলে আমাদের সূর্য ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় জিতবে না। হ্যাঁ, অনেক তারকার চেয়ে সূর্য বড়, কিন্তু তারও বেশিসংখ্যক তারকার চেয়ে  ছোট।

হাইপারজায়ান্টঃ
হাইপারজায়ান্টদের  ভর এবং দীপ্তি অসাধারণ। এদের অনেকেই এত বিশাল যে তারা আমাদের সমগ্র সৌরজগতকে গিলে ফেলতে পারে। যেমন ধরা যাক ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের (VY Canis Majoris) কথা। এর অবস্থান আমাদের থেকে ২৮.৮ কোয়াড্রিলিয়ন মাইল বা ৩ হাজার ৮৪০ আলোক বর্ষ দূরে, Canis Major নক্ষত্রপুঞ্জে (constellation) । ১ কোয়াড্রিলিয়ন = ১ এর পরে ১৫ টি শুন্য। আমাদেত্র দূর্ভাগ্য এই তারকা অনুসন্ধানে মহাকাশযান প্রেরণ করলে পৌঁছাতে মিলিয়ন বছর লেগে যাবে।
অবশ্য ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিস যদি হত আমাদের সৌর পরিবারের কর্তা অর্থ্যাৎ একে সূর্যের স্থানে বসিয়ে দেওয়া  গেলে এর পরিধি শনি গ্রহকে ছাড়িয়ে যেত। তখন অনুসন্ধানের জন্য আর ভ্রমণ করা লাগত না।
বর্তমানে, মঙ্গলে পৌঁছতেই আমাদের ৮ মাস লাগে।  ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিস সূর্যের স্থানে থাকলে পৃথিবী ও মঙ্গল দুটোই এর উষ্ণ প্লাজমায় ঝলসে যেত, গ্রহদ্বয়ের অবস্থান তো থাকতো সৌর পৃষ্ঠের অনেক নিচেই। বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, শনি গ্রহ ও তাদের উপগ্রহদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হত।
তাই এই দুষ্ট দূরে আছে বলে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারি!

দার্শনিক আলাপ বাদ দিয়ে গাণিতিক হিসাব দেখি, চলুন। আমাদের সূর্যের পরিধি হচ্ছে ২৭ লাখ মাইল বা ৪৩ লাখ কি. মি। আর এই দানব ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের পরিধি  ১৯০ কোটি মাইল বা ৩০০ কোটি কিলোমিটার।  এর ব্যাসার্ধ  গড়ে সূর্যের প্রায় ১৪২০ গুণ। এই বিশালত্বের অনুভূতি কিভাবে পাই?
মনে করুন, কোনভাবে এতে এই দানবের পরিধি বরাবর আমরা ঘুরে আসব। কোন যাত্রীবাহী বিমান যদি ঘণ্টায় ৯০০ কিলোমিটার বেগে উড়ে, তবে সেটি ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসকে একবার ঘুরে আসতে ১১০০ বছর লাগিয়ে দেবে। তার অর্থ, রোমান সাম্রাজ্য যখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল (৯৬২ শতক) তখনও যদি এই ভ্রমণ শুরু হত, আজ অব্দি শেষ হতো না। একই কাজ সূর্যকে ঘিরে করতে গেলে লাগতো মাত্র ৭ মাস।
তবে, ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসই তারকাদের রাজা নয়। এনএমএল সিগনি (NML Cygni) হচ্ছে তার চেয়ে বড় দানব। এর ব্যাসার্ধ সূর্যের ১৬৫০ গুণ, আর ভর ২৫-৪০ সৌর ভরের সমান। তবে, এও রাজা নয়।
এখন পর্যন্ত (২০১৪) জানা নক্ষত্রদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইউওয়াই স্কুটি ( UY Scuti)। এর ব্যাসার্ধ ১৭০৮ সৌর ব্যাসার্ধের সমান। এটাকে সূর্যের স্থানে বসিয়ে দিলে বৃহস্পতির গ্রহ পর্যন্ত এর আলোক্মণ্ডলের (Photosphere) পেটে চলে যেত। এটা আছে আমাদের থেকে ৭৮০০ আলোক বর্ষ দূরে।
সূত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/VY_Canis_Majoris
২. http://en.wikipedia.org/wiki/NML_Cygni
৩. http://en.wikipedia.org/wiki/Quadrillion
৪. http://www.fromquarkstoquasars.com
৫. http://en.wikipedia.org/wiki/UY_Scuti

Category: articles

মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মহাবিশ্বের কোন কেন্দ্র নেই!
কসমোলজির আদর্শ থিওরি অনুযায়ী  ১৪ শত কোটি বছর আগে একটি বৃহৎ বিস্ফোরণের মাধ্যমে মহাবিশ্বের যাত্রা শুরু। তার পর থেকেই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু তবু প্রসারণের নেই কোন কেন্দ্র। সব দিকে একই রকম দেখতে। বিগ ব্যাঙকে সাধারণ কোন বিস্ফোরণ মনে করা ঠিক হবে না। মহাবিশ্ব কোন কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়ছে না। বরং, সমগ্র মহাবিশ্বই প্রসারিত হচ্ছে। আমরা এখন পর্যন্ত যা জানি, মহাবিশ্ব সব দিকেই সমানভাবে প্রসারিত হচ্ছে।


১৯২৯ সালে এডুইন হাবল বলেন, তিনি আমাদের থেকে বিভিন্ন দূরত্বের গ্যালাক্সিদের বেগ মেপেছেন, আর তারা যতই দূরে যাছে ততই তাদের বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে মনে হতে পারে, আমরা তাহলে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মহাবিশ্ব যদি হাবলের সূত্রানুযায়ী সুষমভাবে সম্প্রসারিত হয়, তাহলে যে কোন জায়গাকেই এই রকম কেন্দ্র মনে হবে।
আমরা যদি একটি গ্যালাক্সিকে (নাম দিলাম খ) প্রতি সেকেন্ডে ১০, ০০০ কি.মি. বেগে দূরে সরে যেতে দেখি তাহলে গ্যালাক্সি খ এর একজন এলিয়েন আমাদের গ্যালাক্সি 'ক' কে একই বেগে বিপরীত দিকে যেতে দেখবে। যদি 'খ' গ্যালাক্সির দিকেই আরেকটি গ্যালাক্সি 'গ' থাকে, তাকে আমরা সেকেন্ডে ২০, ০০০ কি.মি. বেগে সরে যেতে দেখবো। 'খ' গ্যালাক্সির এলিয়েন 'গ' কে ১০, ০০০ কি.মি/সে. বেগে সরতে দেখবে।
কোন গ্যালাক্সি থেকে অন্য গ্যালাক্সির বেগ কেমন দেখাবে তার সারণী দেখুন। 
              ক           খ           গ
ক থেকে         0 km/s    10,000 km/s   20,000 km/s
খ থেকে   -10,000 km/s         0 km/s   10,000 km/s
 
তাহলে, 'খ' গ্যালাক্সিতে থাকা এলিয়েনও নিজেকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র মনে করবে।
বেলুনের উদাহরণঃ
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ বোঝার জন্য স্থানকে একটি সম্প্রসারণশীল বেলুনের সাথে তুলনা করা হয়। আর্থার এডিংটন ১৯৩৩ সালে তাঁর বই দি এক্সপানডিং ইউনিভার্স (The Expanding Universe) বইয়ে এই উপমা দেন। ফ্রেড হয়েল তাঁর জনপ্রিয় বই দি নেচার অব দি ইউনিভার্স (The Nature of the Universe) বইয়ের ১৯৬০ এর সংস্করণেও একই উপমা প্রয়োগ করেন। হয়েল লেখেন, "আমার গণিতশাস্রের বাইরের বন্ধুরা আমাকে প্রায়ই বলে, মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারণ তারা বুঝতে পারছে না। গণিতের অত শত হিসেব বাদ দিয়ে আমি বেলুনের উপমা দেই যার পৃষ্ঠে আছে অনেকগুলো বিন্দু। বেলুনটা যদি ফেটে যায়, তবে এই বিন্দুগুলো  পরস্পর থেকে দূরে সরতে থাকবে। ঠিক এভাবেই গ্যালাক্সিরাও দূরে সরে।
বেলুনের উপমাটা আসলেই দারুণ, কিন্তু একে সঠিকভাবে বুঝতে হবে। নইলে এটা আরো বিভ্রান্তির জন্ম দেবে। হয়েল বলেন, "অনেকভাবে এই উপমা ভুল দিকে নিয়ে যেতে পারে"। মনে রাখতে হবে, ত্রিমাত্রিক (Three Dimensional) স্থানকে (Space) বেলুনের দ্বি-মাত্রিক পৃষ্ঠের সাথে তুলনা করতে হবে। এখানে পৃষ্ট সুষম (Homogenous)  এবং কোন বিন্দুকে কেন্দ্র বিবেচনা করা যাবে না। বেলুনের নিজের কেন্দ্রের অবস্থান পৃষ্ঠে নয়, তাই একে মহাবিশ্বের কেন্দ্রও মনে করা যাবে না। এবার আপনি বেলুনের রেডিয়াল ডিরেকশনকে সময় মনে করতে পারেন।
হয়েলের প্রস্তাবনা ছিল এ রকম। কিন্তু এটাও কিছুটা বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
পৃষ্ঠের বিন্দুগুলোকে মহাবিশ্বের অংশ মনে না করলেই আরো ভালো হয়। ঊনবিংশ শতকের শুরুতে গাউস আবিষ্কার করেন, স্থানের বৈশিষ্ট্য যেমন বক্রতাকে স্বকীয় রাশিমালা দ্বারাই প্রকাশ করা যায় যে রাশিগুলো কোথায় বক্রতা ঘটছে তা বিবেচনা ছাড়াই পরিমাপ করা যায়। তাহলে, 'স্থান' এর বাইরে অন্য কোন মাত্রার (Dimension) উপস্থিতি না থাকলেও স্থান বাঁকতে পারে। তিনটা পাহাড়ের মাথার মধ্যবর্তী বিশাল ত্রিভুজের কোণ (Angle) মাপার মাধ্যমে গাউস 'স্থান' (Space) এর বক্রতাও মাপার চেষ্টা করেছিলেন।
বেলুনের উপমা ভাববার সময় মাথায় রাখতে হবে-
* বেলুনের দ্বি-মাত্রিক পৃষ্ঠ ত্রিমাত্রিক স্থানের অনুরূপ।
* যে ত্রিমাত্রিক স্থানে বেলুন আবদ্ধ আছে তা অন্য কোন উচ্চ-মাত্রিক ফিজিকেল (Physical) স্থানের অনুরূপ নয়।
* 'বেলুনের কেন্দ্র' ফিজিকেল কোন অর্থ বহন করবে না।
* মহাবিশ্বের আকার সসীম হতে পারে যা বেলুনের পৃষ্ঠের মতই প্রসারিত হচ্ছে, আবার অসীমও হতে পারে।
* প্রসারণশীল বেলুনের মতই গ্যালাক্সিরা প্রসারিত হচ্ছে, কিন্তু গ্যালাক্সি নিজে প্রসারিত হচ্ছে না। কারণ তার নিজস্ব অভিকর্ষ।
(চলবে)
আরও পড়ুনঃ গ্যালাক্সিরা প্রসারণের সময় কিভাবে আলোর বেগকে পরাজিত করে? 
সূত্রঃ
http://math.ucr.edu/home

Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...