Advertisement

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বড় বড় নক্ষত্রের গল্প

পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্য। পৃথিবীর তুলনায় সূর্য অনেক বিশাল। ১০৯টা পৃথিবীকে পাশাপাশি রেখে দিলে সূর্যের ব্যাসের সমান হবে। আর সূর্যের আয়তনের সমান স্থান পূরণ করতে হলে পৃথিবীর মত প্রায় ৯ লাখ গ্রহ লাগবে! সূর্যের একার ভর সৌরজগতের ৯৯.৮৬ শতাংশ ভরের জন্য দায়ী! 


 
কিন্তু নক্ষত্রের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিলে আমাদের সূর্য হয়ে যায় সাদামাটা এক তারা। হ্যাঁ, অনেক তারকার চেয়ে সূর্য বড়, কিন্তু বহু তারকার চেয়েই আবার ছোট।

সূর্যের তুলনায় বিটলজুস কত বিশাল দেখুন। এ তো সবে শুরু। আছে আরও বিশাল বিশাল তারাও।

হাইপারজায়ান্ট তারাদের অনেকেই এত বিশাল যে এরা আমাদের সমগ্র সৌরজগতকে গিলে ফেলতে পারে। যেমন ধরা যাক ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের (VY Canis Majoris) কথা। একে সূর্যের স্থানে বসিয়ে দিলে পরিধি শনি গ্রহকেও ছাড়িয়ে যেত। 

ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিস সূর্যের স্থানে থাকলে পৃথিবী ও মঙ্গল দুটোই এর উত্তপ্ত প্লাজমায় ঝলসে যেত। গ্রহদ্বয়ের অবস্থান তো থাকতো সৌর পৃষ্ঠের অনেক ভেতরে। বুধ, শুক্র, বৃহস্পতি, শনি গ্রহ ও তাদের উপগ্রহদেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হত। তাই এই দুষ্ট দূরে আছে বলে আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে পারি! ও হ্যাঁ,  দূরত্ব আমাদের থেকে ৩ হাজার ৮৪০ আলোকবর্ষ দূরে। 

সূর্যের চেয়ে বড় বড় তারকারা

আমাদের সূর্যের পরিধি ২৭ লাখ মাইল বা ৪৩ লাখ কি. মি। মানে, সূর্যের চারপাশে চক্রাকারে ঘুরে আসতে এতটুকু পথ পাড়ি দিতে হবে। আর এই দানব ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের পরিধি ১৯০ কোটি মাইল বা ৩০০ কোটি কিলোমিটার। ব্যাসার্ধ গড়ে সূর্যের প্রায় ১,৪২০ গুণ। 

মনে করুন কোনো ভাবে এতে এই দানবের পরিধি বরাবর আমরা ঘুরে আসব। এ পর্যন্ত মানুষের বানানো সবচেয়ে দ্রুতগামী যান পার্কার সোলার প্রোব। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৫,৮৬,৮০০ কিলোমিটার। এমন যানে চড়ে ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে ২১১ দিন লাগবে। যেখানে সূর্যকে ঘুরে আসতে লাগবে মাত্র ৭ ঘণ্টা। 
 
তবু ভিওয়াই ক্যানিস ম্যাজোরিসও তারকাদের রাজা নয়। এনএমএল সিগনি (NML Cygni) তার চেয়ে বড় দানব। এর ব্যাসার্ধ সূর্যের ১,৬৪০ গুণ, আর ভর ২৫-৪০ সৌর ভরের সমান। তবু এখানেই শেষ নয়। আরেকটি বড় তারার নাম ইউওয়াই স্কুটি ( UY Scuti)। এর ব্যাসার্ধ ১,৭০৮ সৌর ব্যাসার্ধের সমান। এটাকে সূর্যের স্থানে বসিয়ে দিলে বৃহস্পতির গ্রহ পর্যন্ত এর আলোকমণ্ডলের (Photosphere) পেটে চলে যাবে। এটা আছে আমাদের থেকে ৭,৮০০ আলোক বর্ষ দূরে।

সবচেয়ে বড় দুই তারার তুলনামূলক আকার 

এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় আকারের তারার নাম স্টিফেনসন ২-১৮। অন্য নাম  স্টিফেনসন ২ ডিএফকে ১। সূর্যের তুলনায় ২১৫০ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৯ হাজার আলোকবর্ষ। 

এ তো গেল সাইজ বা আকারের হিসাবে বড় তারার গল্প। সূর্যের চেয়ে বহুগুণ ভারী নক্ষত্রের কথাও জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা। এই যেমন আর১৩৯ এ তারাটা। ভর সূর্যের ৯৫ গুণ বেশি। দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১,৬৩,০০০ আলোকবর্ষ। তবে এর চেয়ে ভারী তারা আছে ভূরুভূরি। এইচডি ১৫৫৫৮ তারা তো সূর্যের ১৫২ গুণ ভারী। আর এখন পর্যন্ত জানা মতে সবচেয়ে ভারী নক্ষত্রের নাম বিএটি ৯৯-৯৮। ভর সূর্যের ২২৬ গুণ। দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১,৬৫,০০০ আলোকবর্ষ। 

সূর্যের চেয়ে বেশি ভারী তারা আবার জীবনের শেষ ভাগে অনেক ছোট হয়ে যায়। এই যেমন ব্ল্যাকহোল ও নিউট্রন তারা। জীবনের শেষভাগে ব্ল্যাকহোল তো বিন্দু বা রেখার মতো হয়ে যায়। আর নিউট্রন তারা হয় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। জ্বালানি ফুরিয়ে গুটিয়ে যাবার সময় তৈরি নিউট্রন আরও ছোট হতে বাধা দেয়। ফলে তারাটা ব্ল্যাকহোল হতে পারে না। চওড়ায় হয় মাত্র ১২ মাইলের মতো। ঘন এ তারা থেকে একটি চিনির দানার সমান পদার্থ নিলে তার ভরই হবে একশো কোটি টন। 

 
সূত্র
১. http://en.wikipedia.org/wiki/VY_Canis_Majoris
২. http://en.wikipedia.org/wiki/NML_Cygni
৩. http://en.wikipedia.org/wiki/Quadrillion
৪. http://www.fromquarkstoquasars.com
৫. http://en.wikipedia.org/wiki/UY_Scuti


Advertisement 02

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, সিলেট ক্যাডেট কলেজ। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত বই পাঁচটি | সব লেখা | ফেসবুক | পারসোনাল ওয়েবসাইট

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...