Advertisement

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

সত্যিই কি ভিনগ্রহে প্রাণ আছে? আর তারাই পাঠিয়েছিল ১৯৭৭ সালের বেতার সঙ্কেত? সেটা নিশ্চিত করে বলার কোনো জো নেই৷ তবু ব্যাপারটা যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক৷


ওয়াও সিগনালের তীব্রতার মান 6EQUJ5


১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইহো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগ ইয়ার টেলিস্কোপে ধরা পড়ল বিস্ময়কর এক বেতার সঙ্কেত৷ সঙ্কেত প্রাপ্তির কয়েকদিন পোর জ্যোতির্বিদ জেরি এহম্যান সঙ্কেতটার ব্যতিক্রমী আচরণ খেয়াল করেন। লিপিবদ্ধ সঙ্কেতের পাশে লেখেন WOW! এ থেকেই নাম ওয়াও সিগনাল।

এটি 6EQUJ5 সঙ্কেত হিসেবে পরিচিত। অনেকে এটাকেই একটা বার্তা বা কথামাল মনে করেন। বাস্তবে এটা নিছক সময়ের সাথে সঙ্কেতের তীব্রতার পরিবর্তনের মান। তবুও ব্যতিক্রমী এ সঙ্কেতকে অনেকেই ভিনগ্রহের বার্তা ভাবতে পছন্দ করেন। রহস্যময় এ সঙ্কেত আসে স্যাজিটেরিয়াস বা ধনুমণ্ডল থেকে। যেদিকে আছে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্র৷

ওয়াও সিগনালের উৎস স্যাজিটেরিয়াস বা ধনুমণ্ডল



২০১৭ সালে একদল গবেষক বলেন, রহস্যময় এ সঙ্কেত তৈরি হয়েছে সম্ভবত ধূমকেতুর কারণে৷ এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণার নেতৃত্ব দেন সেন্ট পিটার্সবাগ কলেজের অধ্যাপক অ্যান্টোনিও প্যারিস৷ তিনি ও তাঁর দল দেখেন, ১৯৭৭ সালের ঐ সময়টিতে আকাশের নির্দিষ্ট দিক দিয়ে অতিক্রম করছিল দুটি ধূমকেতু৷ খটমটে নামগুলো ২৬৬পি/ক্রিস্টেনসন ও পি/২০০৮ ওয়াইটু৷ গবেষকদের ধারণা ধূমকেতুদের কোনোটির হাইড্রোজেন মেঘ থেকে এসেছে বেতার তরঙ্গ৷ ওয়াও সিগনাল। পরে আর এমন সিগনাল না পাওয়ার ব্যাখ্যাও এ তত্ত্ব থেকে মেলে৷ ধূমকেতু ঐ অঞ্চল ছেড়ে অন্য দিকে চলে গেছে৷

গবেষক দল এখানেই থেমে থাকেননি৷ ধূমকেতু ২৬৬পি/ক্রিস্টেনসন এই জায়গায় আবার যাওয়ার সময় আবারও সঙ্কেত পাওয়ার আশায় বসে থাকেন তাঁরা৷ তাঁদের হিসাবে দেখা গেল, ধূমকেতুটা স্যাজিটেরিয়াসের কাছে আসার পরে আবারও ওয়াও সিগনালের মতো সঙ্কেত পাওয়া গেছে৷ তবে ১৯৭৭ সালের সিগনালটার তীব্রতা বেশি ছিল৷ প্যারিসদের ব্যাখ্যা আছে তার পেছনেও৷ তাদের ১০ মিটারের রেডিও টেলিস্কোপটা বিগ ইয়ারের (৫২.৫ মিটার) চেয়ে বেজায় ছোট। আবার নিকট সৌরজগতে এলে ধূমকেতু ভর হারায়। ফলে ৪০ বছর আগের (১৯৭৭-২০১৭) ধূমকেতুর ভরও বেশি ছিল৷ তবে প্যারিসরা নিশ্চিত করে দাবি করেননি যে ওয়াও সিগনালের জন্য ধূমকেতুই দায়ী৷

পরবর্তীতে জ্যোতির্বিদরা ধূমকেতুর দায়ী হবার বিষয়টি উড়িয়ে দেন। ধূমকেতুর পক্ষে এমন সঙ্কেত তৈরি আসলে সম্ভব নয়। আসলে এর গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা আজও মেলেনি। তারাদের মিটিমিটি জ্বলাকেও কেউ দায়ী করেছিলেন। তবে এরও পক্ষে প্রমাণ মেলেনি। একই ধরনের সঙ্কেত আবার পাওয়ার চেষ্টা এহম্যান করেছিলেন বহুদিন ধরে। কিন্তু বৃথাই চেষ্টা। ২০১২ সালে অ্যারেসিবো মানমন্দির থেকে ওয়াও সিগনালের একটি জবাব পাঠানো হয়। এতে ছিল দশ হাজারটি টুইটার মেসেজ। 

সূত্র 
Category: articles

শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

আজ ১৬ জুন। ১৯৬৩ সালের এই দিনে রুশ নভোচারী ভ্যালেনটিনা তেরেশকোভা মহাশূন্যে যান। কাজটি করেন ইতিহাসের প্রথম নারী হিসেবে। একইসাথে সবচেয়ে কমবয়সী মহাকাশচারীও তিনি। 




ভোস্টোক অভিযানের যানে চড়ে একা-ই মহাশূন্যে পাড়ি জমান তেরেশকোভা। পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেন ৪৮ বার। মহাশূন্যে থাকেন প্রায় তিন দিন। তাঁর পরে আর কোনো নারী একা মহাকাশে যাননি। 


সোভিয়েত মহাকাশ প্রোগ্রামে যুক্ত হবার তেরেশকোভা ছিলেন টেক্সটাইল কারখানার কর্মী। শখের বশে স্কাইডাইভিং করতেন। পরে কসমোনট কর্পসের অংশ হিসেবে বিমানবাহিনীতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে অফিসার হিসেবে নিয়োগ পান। 


জন্ম ১৯৩৭ সালে। ভলগা নদীর তীরের এক গাঁয়ে। রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে ২৭০ কিলোমিটার দূরের এক গ্রাম। তাঁর বাবা-মায়ের আদিনিবাস বেলারুস। তেরেশকোভার দুই বছর বয়সেই বাবা মারা যান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। তেরেশকোভারারা ছিলেন তিন ভাইবোন। ১৭ বছর বয়সে স্কুল পাশ করে টায়ার কারখানায় চাকরি নেন তেরেশকোভারা। পরে যোগ দেন টেক্সটাইল মিলে। তবে পড়াশোনা চালিয়ে যান। ওদিকে শুরু করেন স্কাইডাইভিং প্রশিক্ষণ। ২২ বছর বয়সে প্রথম জাম্প করেন। এর মধ্যে শুরু করেন প্যারাশুট চড়ার প্রতিযোগিতা। 


১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মহাকাশে গেলেন। নিকোলাই কামানিন তখন নভোচারী প্রশিক্ষণের পরিচালক। তিনি আমেরিকান সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখলেন, নারী নভোচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তা দেখে তিনি বললনে,"মহাকাশে প্রথম নারী যুক্তরাষ্ট্রের কেউ হবে তা হতে দেওয়া যায় না। সোভিয়েত নারীদের দেশপ্রেমবোধের প্রতি এটা হবে অপমানের শামিল" 


অনেক যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৯৬২ সালে ১৬ ফেব্রুয়ারি তেরেশকোভা নির্বাচিত হন। আরও অনেকগুলো প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তেরেশকোভার জন্য ভোস্টক ৬ যান চূড়ান্ত করা হয়। এর দুইদিন আগে মহাকাশের উদ্দেশ্যে ছুটে যায় যুক্ত অভিযানের অপর যান ভোস্টক ৫। এতে একমাত্র যাত্রী ছিলেন ভ্যালেরি বিকোভস্কি। এটি সফলভাবে যাত্রা করার পর ১৬ জুন সকালে তেরেশকোভা ও তার বিকল্প সোলোভিয়োভা প্রস্তুত হন। 


দুই ভোস্টক একসঙ্গে মহাশূন্যে ঘুরে বেড়ায় প্রায় তিন দিন। সব মিলিয়ে দুই দিন আগে যাওয়া ভোস্টক ৫ থাকে পাঁচ দিন। আর তেরেশকোভা থাকেন ২ দিন ২২ ঘণ্টা। দুই যান একে অপরের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত কাছে আসে। নামার সময় ভূপৃষ্ঠের চার মাইল উপরে ক্যাপসুল থেকে বের হন। প্যারাসুটে করে অবতরণ করেন কাজাখস্তানে (সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ)। বিকোভস্কি নামেন তিন ঘণ্টা পরে। 


আজ পর্যন্ত মহাশূন্যে একাকী যাওয়া একমাত্র নারী তেরেশকোভা। আবার সবচেয় কমবয়সীও তিনি। 


প্রথম মহাকাশ স্টেশন


মহাশূন্যে প্রথম আমেরিকান স্টেশন


মহাকাশে প্রথম মানুষ

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

আজ জুন মাসের ১ তারিখ। ১৬৩৩ সালের এই দিনে জন্ম নেন ইতালীয় জ্যোতির্বিদ জেমিনিয়ানো মনতানারি৷


জেমিনিয়ানো মনতানারি

তিনি বিজ্ঞানের পরীক্ষামূলক পদ্ধতির অন্যতম প্রস্তাবক। তিনি সবচেয়ে পরিচিত অ্যালগল নক্ষত্রের পর্যবেক্ষণের জন্য। তিনি দেখেন নক্ষত্রটির উজ্জ্বলতা পরিবর্তন ঘটছে। পারসিয়াস বা পরশু মণ্ডলের দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারা অ্যালগল৷ অন্যরাও ব্যাপারটা খেয়াল করে থাকতে পারেন। তবে মনতানারিই সর্বপ্রথম এ তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। নক্ষত্রটি নামের অর্থ পিশাচ, যা থেকে বোঝা যায় এর উজ্জ্বলতার অস্বাভাবিক হ্রাস-বৃদ্ধি আগে থেকেই মানুষ জানত।


উজ্জ্বল তারাদের গল্প

মনতানারির জন্ম ইতালির মাদিনা শহরে। দশ বছর বয়সে বাবাকে হারান। বিশ বছর বয়সে মধ্য-ইতালির শহর ফ্লোরেন্সে যান আইন পড়তে। এ শহরে ছিলেন বছর তিনেক। যার মন পড়ে আছে জ্যোতির্বিদ্যায়, আইন কি তাকে ফিরিয়ে রাখতে পারে! শুরু করেন শনি গ্রহের পর্যবেক্ষণ। শনির বিভিন্ন দশা পর্যবেক্ষণে অংশ নেন।

১৬৫৬ সালে ফ্লোরেন্স ছেড়ে অস্ট্রিয়ার সালজবুর্গ আসেন। আইন ডিগ্রিটা এখানে এসেই সম্পন্ন করেন। তবে সবচেয়ে সুবিধাটা হয় পাওলো দেল বুয়োনোর সাথে দেখা হয়ে। এই লোক ছিলেন গ্যালিলিওর সর্বশেষ প্রত্যক্ষ শিষ্য। তাঁর অধীনে নতুন করে শুরু করেন গণিতের পাঠ।

১৬৬১ সালে ফিরে আসেন মাদিনায়। হন দরবারি দার্শনিক ও গণিতবিদ। ইতোমধ্যে পরিচয় হয় কর্নেলিয়ো মালভাসিয়ার সাথে। তিনি ছিলেন বিজ্ঞানের বড় ও প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষক। মাদিনার কাছেই নিজের গাঁয়ের বাড়িতে ভদ্রলোক বানিয়েছিলেন মানমন্দির। দুজনে একসঙ্গে কিছু কাজ করেছিলেন।

১৬৬৪ সালে যোগ দেন বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। এ শহরে থাকতেই চাঁদের একটি প্রায় নিঁখুত মানচিত্র আঁকেন। এতে ব্যবহার করেন নিজের বানানো আইপিস মাইক্রোমিটার। পদার্থবিদ্যায় সান্দ্রতা নিয়েও কিছু কাজ করেন৷

আকাশ দেখতেন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। ১৬৭৬ সালের ২১ মার্চ একটি উল্কা মধ্য-ইতালির আকাশ অতিক্রম করে। পর্যবেক্ষণ করেন ১৬৮২ সালের ধূমকেতুও। যা এডমন্ড হ্যালিও দেখেন। নিউটনের প্রিন্সিপিয়ার তৃতীয় খণ্ডে তাঁর ১৬৮০ সালের ধূমকেতুর পর্যবেক্ষণের কথা দুইবার উল্লেখ আছে।

তারা দেখে ভবিষ্যৎ বলার বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে সংগ্রাম করেন। তিনি প্রমাণ করেন, তারা দেখে ভবিষ্যদ্বাণী আর মনগড়া ভবিষ্যদ্বাণী মিলে যাওয়ার সম্ভাবনা সমান। চাঁদের বুকের একটি গর্ত তাঁর নাম ধারণ করে আছে। ১৬৮৭ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সূত্র: ব্রিটানিকা ডট কম
Category: articles

সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩

 আজ ২৯ মে। ১৯১৯ সালের এই দিনে প্রমাণিত হয় মহাকর্ষ বক্রতা। যা আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে বলে গিয়েছিলেন।





১৯১১ সালেই আইনস্টাইন বলেছিলেন মহাকর্ষ বক্রতার কথা। তবে সে সময় তত্ত্বে খানিক ভুল ছিল। ১৯১৫ সালে সংশোধন করেন। কাজে লাগান জার্মান বিজ্ঞানী সোয়ার্জশল্ডের সমীকরণ।

লেন্স যেভাবে এর ভেতর দিয়ে যাওয়া আলোকে বাঁকিয়ে দেয়, তেমনি ভারী কোনো বস্তু এর কাছ দিয়ে যাওয়া আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। এরই নাম মহাকর্ষ বক্রতা। নিচের চিত্রে দেখুন: ভারী বস্তুটির কারণে দূরের আলোক উৎস থেকে আসা আলো বেঁকে যাবে। পৌঁছবে পর্যবেক্ষকের চোখে। ভারী বস্তুটি না থাকলে আলো চোখে আসতে সোজা পথে। বেঁকে যাওয়ায় ঘটবে মজার ঘটনা। পর্যবেক্ষক আলোর মূল উৎসটি বুঝতে পারবেন না। তাছাড়া আলো ভরের কারণে দুই দিয়েই বেঁকে চোখে পৌঁছবে। পর্যবেক্ষক ভাববেন, তিনি দুটো আলাদা বস্তু দেখছেন!


মহাকর্ষ বক্রতা ও এর ফলাফল

ব্যাপারটা বাস্তব পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম ক্যাম্পবেল। নানা কারণে ব্যর্থ হন। ১৯১৮ সালের একটি প্রচেষ্টাও মেঘের কারণে ব্যর্থ হয়। ১৯১৯ সালে আবার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য তাঁরা বেছে নেন ২৯ মে তারিখের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণকে। সূর্যের পেছন থাকা তারার আলো সূর্যের আলোর আভায় হারিয়ে যায়। ফলে বক্রতা হয় কি না তা দেখা যায় না। তবে গ্রহণের সময় আভা না থাকায় বক্রতা হয়ে থাকলে তার প্রভাব ভেসে ওঠার কথা চোখে।
 
এ সূর্যগ্রহণটির সময় সূর্যের পেছনে ছিল হায়াডিজ নক্ষত্রপুঞ্জ। সূর্যের উজ্জ্বলতার কারণে দিনের বেলায় এদেরকে দেখা যায় না। কিন্তু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়। ফলে তখন ভালভাবে দেখা যায়। রাতে তো আর সূর্য না। কয়েক মাসে আগের আকাশে এরা সূর্যের পেছনে ছিল না। রাতের আকাশেই দৃশ্যমান ছিল।

এখানে বলে রাখি, রাতের আকাশে প্রতিদিন তারারা একটু একটু করে পশ্চিমে সরে। এটা একই রাতের কথা বলছি না। এক রাতে যে তারাকে আমরা যেখানেই দেখি, পরের রাতে চার মিনিট আগেই সেখানে দেখি। পশ্চিমে সরতে সরতে এভাবে এক বছর পরে একই সময়ে একই জায়গায় দেখব আবার।

☛ সূর্যগ্রহণ কীভাবে হয়? (লেখা আসছে...)

তো হায়াডিজ পুঞ্জের তারাদের দুইরকম অবস্থান পাওয়া গেলে। একটি হলো সাধারণ রাতের আকাশে। যখন সামনে সূর্য ছিল না। ছিল না সম্ভাব্য মহাকর্ষ বক্রতা। অন্তত সূর্যের কারণে নয়। আবার নির্বিঘ্নে দেখাও গেল। আরেকটি পরিমাপ পাওয়া গেল সূর্যগ্রহণের সময়। দুই পরিমাপ মিলে গেলে মহাকর্ষ বক্রতা বলতে কিছু থাকবে না। পরিবর্তন পাওয়া গেলেই প্রমাণ হবে এ ব্যাপারটা।

দুটি দল গ্রহণের ছবি তুলতে ছুটে যান দুই আলাদা জায়গায়। এক দল যান পশ্চিম আফ্রিকার দ্বীপ প্রিন্সিপায়। এ দলে ছিলেন এডিংটন ও এডউইন টার্নার কোটিংহাম। আরেক দল যান ব্রাজিলের সব্রাল শহরে। এ দলে গ্রিনিচ মানমন্দিরের অ্যান্ড্রু ক্রোমলিন ও চার্লস ডেভিডসন। মূল পরীক্ষাটি পরিচালিত হয় রয়েল সোসাইটি ও রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে। সেসময় ফ্র‍্যাংক ডাইসন ছিলেন অ্যাস্ট্রোনমার রয়েল। মূলত এডিংটনের পরামর্শে তিনি কাজটা নিয়ে পরিকল্পনা এগিয়ে নেন।

প্রাপ্ত ফলাফলে প্রমাণ জয় আইনস্টাইনের অনুমান। বাস্তবে দেখা গেল মহাকর্ষী বক্রতা। পরীক্ষার পরিকল্পনার পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণেও ফ্র‍্যাংক ডাইসন কাজ করেন। এ পরীক্ষার ফল সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। আইনস্টাইন ও তাঁর তত্ত্ব রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়।

আইনস্টাইন ক্রস 

মহাকর্ষ বক্রতার একটি দারুণ ফল হলো আইনস্টাইন ক্রস ও বলয়। 

Category: articles

শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

 আজ ২০ মে। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহাশূন্যে পাঠানো হয় পাইওনিয়ার ভিনাস প্রোগ্রামের মহাকাশযান। ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল থেকে শুক্র গ্রহের কক্ষপথের দিকে ছুটে যায় এ প্রকল্পের দুটি মহাশূন্যযান।


পাওনিয়ার ভিনাস অরবিটার

পাওনিয়ার ভিনাস প্রোগ্রামের যান দুটির একটি হলো পাওনিয়ার ভিনাস অরবিটার। শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর কাজ ছিল শুক্রের অরবিট মানে কক্ষপথে। অ্যাটলাস-সেন্টোর রকেটে করে একে পাঠানো হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ঐ বছরই ডিসেম্বরের ৪ তারিখে যানটি শুক্রের কক্ষপথে স্থান করে নেয়। কক্ষপথটি হয় উপবৃত্তাকার। ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত যানটি শুক্র গ্রহ থেকে উপাত্ত পাঠাতে থাকে। সক্রিয় থাকে ১৪ বছর ৪ মাস।


১৯৮৬ সালে অরবিটারটি হ্যালির ধূমকেতকে পর্যবেক্ষণ করে। যানের বিভিন্ন যন্ত্র শুক্রের বায়ুমণ্ডল ও পৃষ্ঠ নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। ১৯৯১ সালে ম্যাজেলান যানের সাথে যৌথভাবে গ্রহটির দক্ষিণ ভাগে অনুসন্ধান চালায়। ১৯৯২ সালের অক্টোবরে এটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। আলাদা হয়ে যায় এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। শুক্রকে কেন্দ্র করে ঘোরার সময় এর দূরত্ব শুক্র থেকে ১৮২ কিলোমিটার থেকে ৬৬ হাজার কিলোমিটারের বেশিও ছিল।

অপভূ বনাম অনুভূ
হ্যালির ধূমকেতু এখন কোথায় ? 

পাইওনিয়ার প্রোগ্রামের অপর অংশে ছিল ভিনাস মাল্টিপ্রোব। এতে আবার ছিল একটি ছোট ও তিনটি ছোট অনুসন্ধানী যান। ডিসেম্বর মাসে এরা গ্রহটির ঘন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। কাজ করে ৪ মাস ১ দিন। শুক্রের বায়ুমণ্ডলের জন্ম, বিকাশ ও চলমান কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করে একটি যন্ত্র। বাগুমণ্ডলের উপরিভাগের স্তরগুলো জানার চেষ্টা করে। স্তরগুলো ওপর সৌর বিকিরণ ও আন্তঃগ্রহ স্থানের প্রভাব বের করার চেষ্টা করে।


ভিনাস মাল্টিপ্রোব


আরেকটি যন্ত্র শুক্রের সাথে সৌর বায়ুর মিথষ্ক্রিয়া জানার চেষ্টা করে। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে শুক্রের বায়ুমণ্ডলের তাপ বিন্যাস নিয়ে জানার চেষ্টা করে। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রোবের সাথে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। যন্ত্রাংশগুলো আলাদা হওয়ার আগে ১১০ কিলোমিটার উপরে থেকে কাজ করছিল।
Category: articles

রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩

আজ ১৪ মে। ১৯৭৩ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে প্রথম কোনো স্টেশন প্রেরণ করে। নাম স্কাইল্যাব। এর আগে ১৯৭১ সালে রাশিয়া পাঠিয়েছিল মহাকাশে প্রথম স্টেশন সালিউট ১। স্কাইল্যাব কক্ষপথে সময় কাটায় ২৪ সপ্তাহ। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।


স্কাইল্যাব স্টেশন 
স্টেশনটিকে অনেকগুলো কাজ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে আছে সৌর মানমন্দির, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও বহু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।

প্রথম মহাশূন্য স্টেশন

২০২৩ সালে এসেও স্কাইল্যাবই যুক্তরাষ্ট্রের এককভাবে পরিচালিত একমাত্র স্টেশন। যদিও ১৯৮৮ সালে আরেকটি স্থায়ী স্টেশনের পরিকল্পনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরিকল্পনা হচ্ছিল বলে মনোযোগ সেদিকে সরে যায়।

কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটার্ন ভি রকেটে চেপে এটি ছুটে যায় মহাশূন্যে। ভর ছিল ৭৬.৫ কেজি। দৈর্ঘ্য ৮২ ফুট। কক্ষপথের দূরত্ব ছিল পৃথিবী থেকে ৪৩৪ ও ৪৪২ কিলোমিটার (অনুভূ ও অপভূ)। দিনে প্রায় ১৫ বার চক্কর খেত পৃথিবীকে। ৩টি অভিযানে মোট ৯ জন মানুষ স্টেশনটিতে সময় কাটিয়েছিলেন।

১৭১ দিনে স্টেশনটি মোট ২৪৭৬ বার পৃথিবীকে পাক খায়। নভোচারীরা এটি থেকে দশবার স্পেসওয়াক করেছিলেন। এতে ২০০০ ঘণ্টা ব্যাপী বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও মেডিকেল পরীক্ষা চালানো হয়। ৮টি সৌর শিখার ছবি ধারণ করা হয়, যা মনুষ্যবিহীন যানের মাধ্যমে সম্ভব হত না। এরই মাধ্যমে সৌর মুকুটের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। অনেকগুলো পরীক্ষায় দেখা হয় মাইক্রোগ্র‍্যাভিটিতে দীর্ঘ সময় থাকলে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
Category: articles

বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩

আজ ১৯ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহাকাশে প্রেরণ করা হয় সালিউট ১। এটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রেরিত প্রথম মহাকাশ স্টেশন। রাশিয়ার সালিউট প্রোগ্রামের শেষ মডিউলটিই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের রুশ অংশের প্রধান অঙ্গ হয়। 

সালিউট ১ স্পেস স্টেশন। সূত্র: নাসা 

মহাশূন্যে প্রথম অ্যামেরিকান স্টেশন

স্টেশনে মানুষ পাঠানোর অংশ হিসেবে সয়ুজ ১০ যানে ৩ জন নভোচারী পাঠানো হয়। তবে সে যাত্রা সফল হয়নি। পরবর্তীতে সয়ুজ ১১ যানে অন্য ৩ জন নভোচারী সালিউটে পৌঁছেন। ২৩ দিন অবস্থান করে চালান নানান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।


তবে ৩ নভোচারী পৃথিবীতে ফেরার পথে শ্বাসকষ্টে মারা যান। পৃথিবীর কারমান রেখা উপরে এটাই মৃত্যুর একমাত্র ঘটনা। কারমান রেখা পৃথিবীর ১০০ কিলোমিটার উপরে। এটাকে পৃথিবী ও মহাশূন্যের একটি সীমানা হিসেবে ধরা হয়। 


☛ পৃথিবী ও মহাশূন্যের একটি সীমানা কোথায়?


১৯৭১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে স্টেশনটিকে আরও উপরের কক্ষপথে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যেন কক্ষপথ থেকে নেমে গিয়ে ধ্বংস না হয়। অন্যদিকে চলছিল সয়ুজ পুননির্মাণ। তবে তা হতে হতে সালিউটের জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। ১১ অক্টোবর তারিখে এ অভিযান শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৭৫ দিন মহাকাশে থেকে সালিউট ১ প্রশান মহাসাগরের উপরে জ্বলে যায়। 


অরায়ন ১ মহাকাশ মানমন্দির স্থাপন করা ছিল এ স্টেশনে। এখান থেকে সংগ্রহ করা হয় নক্ষত্রের অতিবেগুনী বর্ণালী। ভিক্টর পাতসায়েব ছিলেন টেলিস্কোপটির অপারেটির। এএ মধ্য দিয়ে তিনি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে টেলিস্কোপ চালানো প্রথম মানুষ হবার গৌরব অর্জন করেন৷

Category: articles

মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩

আজ ১১ এপ্রিল। ১৮৬২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন অ্যামেরিকান জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম ওয়ালেচ ক্যাম্পবেল। 

১৯০১ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিনি লিক অবজারভেটরির পরিচালক ছিলেন। জ্যোতির্বিদ্যায় বর্ণালীবীক্ষণে অসামন্য অবদানের জন্য স্মরণ করা হয় তাঁকে। 




জন্ম ওহাইও অঙ্গরাজ্যে। ১৮৮৬ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়ই জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ এতে মূলত অবদান সাইমন নিউকমের বই পপুলার অ্যাস্ট্রোনমি। 

পড়াশোনা শেষ করে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপনা শুরু করেন। তবে কিছুদিন বাদেই ফিরে আসেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ানো শুরু করেন জ্যোতির্বিদ্যা। 

১৮৯১ সাল। তাঁকে ক্যালিফোর্নিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয় লিক অবজারভেটরিতে। বর্ণালীবীক্ষণ নিয়ে কাজের জন্য। এখানে এসেই তিনি স্মরণীয় হয়ে ওঠার মতো কাজ শুরু করেন। 


নক্ষত্রের রেডিয়াল বা অরীয় (radial) বেগ বের করা শুরু করেন। অরীয় বেগ মূলত বহির্গ্রহ খুঁজে পাওয়ার একটি পদ্ধতি। পাশাপাশি তুলতে থাকেন সূর্যগ্রহণের ছবি। ১৮৯৩ সালে আবিষ্কার করেন এইচডি ১৮৪৭৩৮ নক্ষত্র। অপর নাম ক্যাম্পবেলের হাইড্রোজেন এনভেলপ স্টার। এটি একটি উলফ রায়েট ধরনের তারা। 

১৯১৪ সালে ক্যাম্পবেল ও জার্মান জ্যোতির্বিদ ফ্রেন্ডলিখ রাশিয়া যান সূর্যগ্রহণের ছবি তুলতে। ফ্রেন্ডলিখ ছিলেন বার্লিন অবজারভেটরির পর্যবেক্ষক। দুজনের উদ্দেশ্য ছিল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব পরীক্ষা করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তাঁদের যন্ত্রপাতি রুশ সেনারা কব্জা করে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ দেশ হওয়ায় ক্যাম্পবেল কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পান। তবে আকাশে মেঘ থাকায় ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।

১৯১৮ সালে আবার চেষ্টা চালান। তবে চার বছর আগে রাশিয়ায় ভাল যন্ত্রপাতি রেখে আসতে হয়েছিল। লিক অবজারভেটরিতে থাকা যন্ত্রপাতি দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে আইনস্টাইনের পূর্বাভাস অনুসারে আলোর বাঁকের পরিমাপ এখানকার ক্যামেরা দিয়ে মাপ সম্ভব ছিল না। 

এই কাজটাই আর্থার এডিংটন করেন পরের বছর। ১৯১৯ সালে। তবে কিছু কারণে তত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি তখনো মেলেনি। চূড়ান্ত ও অকাট্য স্বীকৃতি মেলে ক্যাম্পবেলের ১৯২২ সালের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। লিক অবজারভেটরির পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সূর্যগ্রহণের ছবি থেকে পাওয়া যায় এ নিশ্চয়তা। 

মহান এ বিজ্ঞানীর জীবনাবসান হয় করুণভাবে। তিনি চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। বয়স হয়েছিল ৭৬। অন্ধত্ব ও বাকশক্তি লোপ পাওয়ার হতাশা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। 

জীবনে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছিলেন। এর মধ্যে আছে ফ্রেঞ্চ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের লাঁলা পদক। পেয়েছেন রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটির স্বর্ণ পদক। চাঁদ ও মঙ্গলের দুটি খাতের নামের সাথে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। গ্রহাণু ২৭৫১ ক্যাম্পবেল তাঁর নাম ধারণ করে আছে।
Category: articles

সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ২৪ অক্টোবর। 
 ১৯৪৬ সালের এই দিনে প্রথম বারের মতো মহাকাশ থেকে তোলা হয় পৃথিবীর ছবি। সেটি ৭০ বছর আগের কথা। ভি- ২ রকেটে চেপে একটি মুভি ক্যামেরা এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পাদন করে।


৭০ বছর আগের চিত্রটি এক বার কল্পনা করুনতো। কেউ জানে না, বহিস্থ মহাকাশ থেকে কেমন দেখায় পৃথিবীকে। এ অবস্থায় যদি চোখের সামনে এমন একটি ছবি ভেসে আসে, কেমন অনুভূতিটাই না হবে!

মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম ছবি

এ অনুভূতি তৈরির কাজটিই করলেনযুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর এক দল সৈন্য ও বিজ্ঞানী। নিউ মেক্সিকোর মরুভূমি থেকে তাঁরা মহাকাশে নিক্ষেপ করলেন ভি- ২ রকেট। সাথে দিয়ে দিলেন একটি ৩৭ মিলিমিটারের মোশন পিকচার ক্যামেরা।

রকেটটি ৬৫ মাইল (১০৫ কিলোমিটার) উঁচুতে সাব অরবিটাল উচ্চতা পর্যন্ত ওঠে।

ছবি তোলার পর পৃথিবীতে এসে ধাক্কা খেয়ে নষ্ট হয়ে যায় ক্যামেরাটি। কিন্তু বেঁচে যায় ফিল্ম, আর সেই সাথে বহু আরাধ্য ছবিটিও।

এয়ার আ্যন্ড স্পেস ম্যাগাজিনের মতে,



প্রতি দেড় সেকেন্ডে একটি করে ছবি তুলতে তুলতে ক্যামেরাটি রকেটের সাথে সাথে ওপরে উঠতে থাকে। কয়েক মিনিট পরেই এটি আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে। এ সময় এর বেগ ছিল সেকেন্ডে ৫০০ ফুট। ক্যামেরাটি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে স্টিল ক্যাসেটের মধ্যে রক্ষিত ফিল্মটি ঠিকই বেঁচে যায়।





ফ্রেড রালির বয়স তখন ঊনিশ। ফিল্ম উদ্ধারকারী দলের সদস্য ছিলেন তিনিও। ক্যাসেটটিকে অক্ষত অবস্থায় দেখে বিজ্ঞানীদের কী অনুভূতি হয়েছিল তার বর্ণ্না দেন তিনি এভাবে,
ওরা ছিলেন আনন্দে উচ্ছসিত। বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছিলেন তাঁরা। 

১৯৪৬ সালের আগে সর্বোচ্চ ১৩.৭ মাইল উপর ঠেকে পৃথিবীর ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল। সেটি ১৯৩৫ সালের ঘটনা। কাজটি করা হয়েছিল এক্স্প্লোরার ২ বেলুনের মাধ্যমে। পৃথিবীর পৃষ্ঠের বক্রতা বুঝতে পারার জন্যে এই উচ্চতা থেকে তোলাই ছবিই ছিল যথেষ্ট। ভি- ২ ক্যামেরা পৌঁছে এর পাঁচ গুণেরও বেশি উচ্চতায়।


ক্যামেরাটির নির্মাতা ক্লাইড হলিডে বলেন,
ভি- ২ এর ছবিগুলো থেকে আম্রা প্রথম বারের জানতে পারলাম, অন্য গ্রহ থেকে আসা দর্শকরা পৃথিবীকে কেমন দেখবে। 
একটি বিষয় কিন্তু গুলিয়ে ফেলবেন না। এই রকেট কিন্তু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরেনি। এটি সোজা ওপরের ওঠে আবার নিচে নেমে এসেছে। প্রথম বারের মতো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারার কৃতিত্ব হল স্পুটনিক ১ এর।

আরও পড়ুনঃ

ইতিহাসে এই দিনঃ মহাশূন্যে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ

১৯৪৬ সালের পরে আরও বশি উচ্চতা থেকে ছবী তোলাটা একটা ট্রেন্ড হয়ে যায়। ছয় মাস পরেই তোলা হয় আরেকটি ছবি। ১৯৪৭ সালের মার্চে তোলা ছবিটি নেওয়া হয়েছিল ১০১ মাইল উপর থেকে।


১৯৪৭ সালে মার্চে তোলা ছবি, ১০১ মাইল উপর থেকে। 

সূত্রঃ 
১। আর্থ স্কাই ডট অর্গ
Category: articles

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ৭ অক্টোবর। ১৮৮৫ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ নিলস বোর। ড্যানিশ এই পদার্থবিজ্ঞানীর কল্যাণেই পরমাণুর মৌলিক গঠন উদঘাটিত হয় এবং ভিত্তি স্থাপিত হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের

নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী নিলস বোর

বিশেষ করে তিনি পরমাণুর জন্যে বোর মডেল প্রস্তুত করেন। পরে আবার তৈরি করেন লিকুইড ড্রপ মডেল। কোপেনহেগেন থাকার সময় অসংখ্য পদার্থবিদ তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পেতেন। একত্রে কাজও করেছেন অনেকের সাথে। এখানে থাকা অবস্থায়ই হাইজেনবার্গের সাথে মিলে তিনি কোয়ান্টাম তত্ত্বের কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা (Copenhagen interpretation) তৈরি করেন। বিংশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী এই বিজ্ঞানী ১৯২২ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, পরমাণুর গঠন ও তা থেকে নির্গত বিকিরণ নিয়ে গবেষণার জন্যে।

নিলস বোর ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ১৮৮৫ সালের ৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বোরের বাবা একজন অধ্যাপক ছিলেন এবং কোপেনহেগেনের সম্ভান্ত্র পরিবারগুলোর মাঝে বোরের পরিবার ছিল অন্যতম। বোরের পরিবারের সবাই ছিলেন বিদ্যানুরাগী। তাঁর ছোট ভাই হ্যারাল্ড বোরও পরবর্তীতে একজন দক্ষ গণিতবিদ হয়েছিলেন। বোরের বাবার কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীর করাতে বাল্যকালে বোর কিছুটা সুবিধা পেয়েছিলেন। ১৯০৩ সালে তিনি বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও দর্শনে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯০৫ সালে বোর তরলের পৃষ্ঠটানের উপর একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেন, যা সবার মনোযোগ কাড়ে। তিনি পুরস্কৃতও হন এর জন্যে। এর পরেই বোর গণিত ও দর্শন ছেড়ে ঢুকে পড়েন পদার্থবিদ্যার জগতে। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯১১ সালে বোর তাঁর ডক্টরেট থিসিস সম্পন্ন করেন। পরবর্তী গবেষণার জন্য ডেনমার্ক ছেড়ে বোর ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডে যান এবং সেখান থেকেই তাঁর চমক দেখানোর শুরু।

চাপা স্বভাবের বোর ছোটবেলায় ভাষা শিখতে অনেক দেরী করে ফেলেছিল বলে ড্যানিশ ভাষা পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারেননি। আবার পড়ালেখার জন্য ইংরেজী শিখলেও ইংরেজী ভাষার শব্দ জ্ঞান তাঁর ছিল খুব সীমিত। ইংল্যান্ডে আসার পর ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে স্যার জে.জে. থমসনের অধীনে গবেষণা শুরু করলেও তা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। থমসনের উদাসীনতা বোরকে ভীষণভাবে হতাশ করলেও ম্যানচেস্টারে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের সঙ্গ বোরকে অনেক উৎসাহ- অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। পরবর্তীতে মহান শিক্ষক রাদারফোর্ডের অধীনে ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে বোর গবেষণা শুরু করেন।

ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে থাকাকালীন আইসোটোপ, তেজস্ক্রিয়তার ভাঙন সুত্র এবং পর্যায় সারণী নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেন। ১৯১১ সালে আলফা- কণা বিক্ষেপণের ফলাফলের উপর নির্ভর করে রাদারফোর্ড তার পরমাণু মডেল প্রকাশ করলে এতে অনেক সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। বোর সেগুলোর কয়েকটি সমাধান করতে পেরেছিলেন। কিন্তু, তিনি রাদারফোর্ডকে তা বোঝাতে অক্ষম হন। ১৯১২ সালে বোর কোপেনহেগেনে ফিরে আসেন এবং জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি মার্গ্রেথকে বিয়ে করেন। বোর- মার্গ্রেথ দম্পতির পরবর্তীতে ৬টি সন্তান- সন্তুতি হয়েছিল, যাদের মাঝে ২ জন নাবালক অবস্থায় মারা গেলেও বাকি ৪ জন পিতার মতোই বিভিন্ন শাখায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন। তন্মধ্যে, বোরের সন্তান অউ নিলস বোর ১৯৭৫ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারও লাভ করেন।

১৯১২ সালের গ্রীষ্মকালে ছুটি কাটানোর সময় বোর রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে চিরায়ত বলবিদ্যাকে বিদেয় করে তাতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রয়োগ করেন। তার স্ত্রী মার্গেথ এই সময় বোরকে তার গবেষণাপত্র (scientific paper) তৈরিতে খুব সহায়তা করেন। বোরের গবেষণাপত্রগুলো মূলত তার স্ত্রী মার্গেথেরই লেখা। মার্গেথ তার স্বামীর কথা বোঝার চেষ্টা করতেন এবং তা লিখে রাখতেন। ১৯১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বোর পরমাণু সম্পর্কে এমন ৩টি অনুমান করেন, যা দ্বারা রাদারফোর্ডের অস্থায়ী পরমাণু, পরমাণুর ভৌতিক(?) বর্ণালীসহ নানা সমস্যা সমাধান করা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে বোরের সেই অমর কর্ম- ‘পরমাণুতে ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে যেকোনো ব্যাসার্ধে ঘুরতে পারে না, শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট অনুমোদিত(কোয়ান্টায়িত) কক্ষপথেই ঘুরে’ এই সময়েই প্রকাশ পায়। বোরের দেওয়া পরমাণুর এই চিত্র বোরের কোয়ান্টাম পরমাণু মডেল নামে পরিচিত।

১৯২১ সালে বোর কোপেনহেগেন তত্ত্বীয় পদার্থবিদ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। জীবনের বাকি সময় তিনি এর পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৬- ২৭ সালে এই সমিতিতেই হাইজেনবার্গ বোরের অধীনে কাজ করেন এবং প্রদান করেন তাঁর বিখ্যাত অনিশ্চয়তা নীতি। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সূতিকাগার ছিল মূলত তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই সমিতিটিই। আলোর দ্বৈত ধর্ম, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে বোরের এই সমিতির অবদান অনস্বীকার্য।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মানি ডেনমার্ক আক্রমণ করলে বোর এর প্রতিবাদ করেন এবং নাৎসিবিরোধি মনোভাবের কারণে জার্মানদের রোষানলে পড়েন। ১৯৪৩ সালে বোর দেশত্যাগে বাধ্য হয় এবং সুইডেন হয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। এইসময় বোর নিউক্লিয়ার ফিশান এবং ইউরেনিয়াম- ২৩৫ নিয়ে কাজ করেন। তিনি সারাজীবনই পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ছিলেন। তবে আমেরিকায় ম্যানহাটন প্রজেক্টে ধীরে ধীরে তিনি জড়িয়ে পড়েন এবং আণবিক বোমা তৈরির এই প্রকল্পে একজন সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে পদোন্নতি পান। এইসময় বোর ছদ্মনাম হিসেবে নিকোলাস বেকার নাম গ্রহণ করেন। তবে বোর আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও সোভিয়েতের সাথে প্রকাশ্যে আলাপ চালাতে শুরু করেন পারমাণবিক শক্তির অপব্যবহার রোধের জন্য। এই কারণে বোরকে নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করে আমেরিকা থেকেও বের করে দেয়া হয়।

বোর ১৯৪৭ সালে বীরের বেশে দেশে ফিরে আসেন। তাকে ডেনমার্কের সর্বোচ্চ পদক অর্ডার অব দি এলিফ্যান্ট প্রদান করা হয়। জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি রয়্যাল ড্যানিশ একাডেমির সভাপতি ছিলেন। শেষ বছরগুলোতে বোর তার গবেষণা বন্ধ করে দিলেও নিউক্লিয়ার শক্তির অপব্যবহার রোধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। ১৯৫০ সালে জাতিসংঘে শান্তির পক্ষে তার খোলা চিঠিটি তার শান্তি আন্দোলনে স্মরণীয় একটি পদক্ষেপ।

বোর কোপেনহেগেনেই ১৯৬২ সালের ১৮ নভেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। নিলস বোরের স্ত্রী মার্গ্রেথ আরো প্রায় ২০ বছর জীবিত ছিলেন।

নিলস বোরের পরমাণু ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর কাজ বিজ্ঞানের সকল শাখায় যে কত বড় অবদান রেখেছে তা কল্পনাতীত। আইনস্টাইনের একটা উক্তির অংশবিশেষ দিয়েই শেষ করছি।
'বোর  না থাকলে পরমাণু সম্পর্কে যে আমরা কতটুকু জানতে পারতাম তা কেউই জানে না।' 
তাঁর ছাত্র থাকাকালীন সময়ের একটি মজার কাহিনী পড়ুন এখানে।

সূত্রঃ
১। http://www.famousscientists.org/niels-bohr/
২। http://www.physicsoftheuniverse.com/scientists_bohr.html
Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ৪ অক্টোবর
১৯৫৯ সালের এই দিনে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মহাশূন্যে পাঠায় স্পুটনিক ১ নামের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। অনেক মহাকাশ ইতিহাসবিদের মতে প্রকৃতপক্ষে এই দিনেই সূচনা ঘটে মহাশূন্য যুগের।

 
জাদুঘরে রক্ষিত স্পুটনিক ১ এর একটি নকল

এটি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল ঘণ্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার (১৮ হাজার মাইল) বেগে। অর্থ্যাৎ, পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগত প্রায় ৯৬ মিনিট। এটি ২১ দিন পর্যন্ত সঙ্কেত পাঠানো অব্যাহত রাখে। শেষ পর্যন্ত ২৬ অক্টোবর তারিখে এর ব্যাটারির শক্তি ফুরিয়ে গেলে শেষ হয় সঙ্কেত পাঠানোর কাজ। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটি কক্ষপথ থেকে ছিটকে গিয়ে প্রবেশ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। কক্ষপথে তিন মাস থাকার সময় এটি ৭ কোটি কিলোমিটার পথ চলাচল করেছিল।

ধাতুর প্রলেপ দেওয়া গোলকীয় যানটির ব্যাস ছিল ২৩ ইঞ্চি বা ৫৮ সেন্টিমিটার। ভর ছিল ৮৩.৬ কেজি। বেতার সঙ্কেত পাঠানোর জন্যে এতে ছিল চারটি রেডিও অ্যান্টেনা। এই সঙ্কেত পৃথিবী থেকে ধরা যেত। খালি চোখে একে দেখা যেতে পুরো পৃথিবী থেকে। একে প্রেরণের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমেরিকার শুরু হয় স্পেস রেস বা মহাশূ্ন্য প্রতিযোগিতা। দুই দেশের ঠাণ্ডা যুদ্ধের অন্যতম অংশ জুড়ে ছিল এই রেসও।

তবে উপগ্রহটি যে শুধু ইতিহাসই সৃষ্টি করেছে তা কিন্তু নয়, এটি বিজ্ঞানীদেরকে অনেক গুরুত্বপুর্ণ তথ্যও সরবরাহ করে।  কক্ষপথে এর চলাচলের পথের প্রকৃতি থেকে উর্ধ্বস্থ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব জানা সম্ভব হয়। পাওয়া যায় আয়নোস্ফিয়ার সম্পর্কেও তথ্য।

স্পুটনিকের জবাবে মার্কিনিরা পৃথিবীকে কিছু করে দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সাফল্য পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। পরের বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিন তারাও এক্সপ্লোরার ১ নামক তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নিক্ষেপ করে মহাশূন্যে।

তবে রুশরা তার আগেই- স্পুটনিক ১ এর ৩২ দিন পরেই স্পুটনিক ২ কেও পাঠিয়ে দেয় মহাশূন্যে। এবং এতে একটি ছিল প্রাণীও! এটিই ছিল লাইকা নামের সেই কুকুরটি।

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/space/this-date-in-science-launch-of-sputnik-october-4-1957
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_2
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_1
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Explorer_1
৫। http://history.nasa.gov/sputnik/
Category: articles

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২৩ সেপ্টেম্বর। ১৮৪৬ সালের এই দিনে আবিষ্কৃত হয় সৌরজগতের অষ্টম ও সর্বশেষ গ্রহ নেপচুন। এই গ্রহটিকে আবিষ্কার করা হয় গাণিতিক হিসাবের ভিত্তিতে। অন্য গ্রহদের তুলনায় এর আবিষ্কার হয়েছে দেরিতে। এর কারণ কী জানেন?

রাতের আকাশের ৫টি গ্রহ সহজেই খালি চোখে ধরা দেয়। এগুলোর সাথে মানুষের প্রাচীন কাল থেকেই পরিচয় ছিল। সপ্তম গ্রহ ইউরেনাসও খালি চোখে দেখা সম্ভব যদি আপনি জানেন আকাশের কোন অংশে তাকাতে হবে, আর আকাশ যদি হয় পরিষ্কার এবং জায়গাটা (যেখানে দাঁড়িয়ে দেখবেন) হয় আলোক দূষণ থেকে মুক্ত এবং বেশ অন্ধকার। কিন্তু নেপচুনকে শুধু টেলিস্কোপ দিয়েই দেখা সম্ভব। আর টেলিস্কোপ যেহেতু মাত্র কয়েকশো বছর আগে জন্ম নিয়েছে তাই নেপচুনের আবিষ্কারও হয়েছে তুলনামূলক দেরিতে। 
নেপচুন গ্রহের ছবি
ফরাসী গণিতবিদ অ্যালেক্সি বুভার (Alexis Bouvard) ইউরেনাসের কক্ষপথ সম্পর্কে অনেকগুলো বিস্তারিত নথি প্রকাশ করেন। এক সময় সবাই বুঝতে পারল, আমাদের সৌরজগতের আরো গভীরে কোনো একটি গ্রহ থাকা উচিত যা ইউরেনাসের কক্ষপথে নাক গলাচ্ছে। শুরু হলো হিসাব নিকাশ। কোথায় থাকতে পারে গ্রহটি?

দুজন জ্যোতির্বিদ স্বতন্ত্রভাবে প্রস্তাবিত ৮ম গ্রহটির গাণিতিক অবস্থান নির্ণয় করলেন। একজন ব্রিটেনের জন কাউচ অ্যাডামস। অপরজন ফরাসী জ্যোতির্বিদ উরবেই লা ভেরিয়ে। দুজনকেই সহকর্মীরা হতাশ করলেন। তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হল যে গাণিতিক হিসাব থেকে সত্যিই গ্রহ খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।

নেপচুন আবিষ্কারে ভূমিকা রাখা বিজ্ঞানীরা 

জার্মান জ্যোতির্বিদ জোহান গ্যালের কাছে লা ভেরিয়ের হিসাব খুব মনঃপুত হল। তিনি খুঁজে বের করে ফেললেন সৌরজগতের অষ্টম গ্রহ। নেপচুনকে পাওয়া গেল লা ভেরিয়ের প্রস্তাবিত অবস্থানের ১ ডিগ্রির মধ্যে। জন অ্যাডামসের প্রস্তাবিত অবস্থান থেকে গ্রহটির বিচ্যুতি ছিল ১২ ডিগ্রি। এবার দুজনেই দাবী করলেন, তিনিই প্রথম একে আবিষ্কার করেছেন। এটা নিয়ে সমগ্র বিজ্ঞান বিশ্বে তুমুল বিতর্ক হয়ে গিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবেই বিতর্কের প্রধান দুই পক্ষ ছিল ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স। কাকে দেওয়া উচিত নেপচুন আবিষ্কারকের খেতাব- অ্যাডামস নাকি ভেরিয়ে? আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান মহল দুজনকেই খেতাব দেয়ার পক্ষ দিলেন। ফলে, এখন তাই করা হয়। নেপচুনের আবিষ্কারক তাই দুজন- জন অ্যাডামস ও লা ভেরিয়ে। আবিষ্কারের সাল ১৮৪৬।

এখন পর্যন্ত নেপচুন গ্রহের কাছে পৌঁছতে পারা একমাত্র মহাকাশযান ভয়েজার ২, যা ১৯৮৯ সালে এর পাশ দিয়ে চলে যায়।  
বিভিন্ন গ্রহের তুলনামূলক সাইজ

সূত্রঃ
২। ইংরেজি উইকিপিডিয়াঃ ফরাসী উচ্চারণ
৩। http://earthsky.org/human-world/today-in-science-discovery-of-neptune
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২২ সেপ্টেম্বর। ১৭৯১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইংরেজ পদার্থবিদ মাইকেল ফ্যারাডে।

বিজ্ঞানের ইতিহাসে একটা সময় ছিল যখন বিজ্ঞান শিক্ষা বা বিজ্ঞান চর্চা শুধু অভিজাত পরিবারের সন্তানদের জন্যই বরাদ্দ থাকত। নিম্নবিত্ত- দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা বিজ্ঞানচর্চায় অংশ নিতে পারত না। মাইকেল ফ্যারাডে সেই সময়ের একজন বিজ্ঞানী। তিনিও উঠে এসেছিলেন খুব দরিদ্র একটি পরিবার থেকে। তবুও তিনি সকল প্রতিকূলতা জয় করে হয়েছিলেন একাধারে জগদ্বিখ্যাত ব্যবহারিক পদার্থবিদ, রসায়নবিদ এবং প্রকৃতি বিষয়ক দার্শনিক। তাঁর নামানুসারেই বৈদ্যুতিক ধারকত্বের এককের নাম রাখা হয়েছে ফ্যারাডে, যা F প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়।


১৯৭১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মাইকেল ফ্যারাডে বর্তমান যুক্তরাজ্যর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জেমস- মার্গারেট দম্পতির তৃতীয় সন্তান ছিলেন। তার বাবা ছিলেন একজন দরিদ্র কামার এবং মা ছিলেন গৃহকর্মী। মোটকথা, মাইকেল ফ্যারাডের পরিবার নিম্নবিত্ত দরিদ্র জীবন-যাপন করত।

মাইকেল ফ্যারাডে তার গ্রামেরই একটি স্কুলে ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এই স্কুল থেকেই তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্যের কারণে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে একটি বইয়ের দোকানে বই পৌঁছে দেবার কাজ শুরু করেন। এই কাজে ফ্যারাডের কঠোর পরিশ্রম আর মনোযোগ দেখে বই এর দোকানের মালিক ফ্যারাডের উপর অনেক খুশি হন। এর ফলে তিনি ডেলিভারি বয় এর কাজ থেকে বাদ দিয়ে ফ্যারাডেকে বই বাঁধাই এর কাজ শেখার সুযোগ দেন। ফ্যারাডের বাল্যকাল শিক্ষানবীশ বই বাঁধাইকারী হিসেবেই শেষ হয়।


বিজ্ঞানের ছোঁয়াঃ

মাইকেল ফ্যারাডে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দিলেও পৃথিবী ও প্রকৃতি সম্পর্কে কৌতুহল ঝেড়ে ফেলতে পারেননি। দিনের পুরোটা সময় শুধু বই বাঁধাই করেই কাটাতেন না তিনি, সাথে সাথে যে বইগুলো বাঁধাই করতেন তা পড়েও ফেলতেন। ফ্যারাডে ধীরে ধীরে বুঝতে পারলেন যে, অন্য বইগুলোর চাইতে বিজ্ঞান সম্পর্কিত বইগুলো পড়তে বেশি ভালো লাগছে। কথিত আছে, ফ্যারাডের বই এর দোকানে এমন দু'টি বই আসে যা ফ্যারাডের অনেক ভালো লেগেছিল। বই দু'টি হল-

১। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বিশ্বকোষ (The Encyclopedia Britannica)- ফ্যারাডের তড়িৎ সম্পর্কিত প্রাথমিক জ্ঞান এই বই থেকেই আসে।
২। Conversations on Chemistry (রসায়নের সহজ পাঠ)- সবার বোধগম্য করে জেন মাসেঁ কর্তৃক লিখিত রসায়নের একটি বই।

মাইকেল ফ্যারাডে এসব বই পড়ে দারুণ মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে বই এর দোকানে কাজ করে যা সামান্য মাইনে পেতেন, তার অধিকাংশই তিনি বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ও যন্ত্রপাতির পেছনে খরচ করে ফেলতেন। এসব দ্রব্য ও যন্ত্রপাতি কিনে মাইকেল ফ্যারাডে তার অবসর সময়ে পরীক্ষা করে দেখতেন যে, তিনি বই পড়ে যা শিখছেন তা কি আসলেই কাজ করে না কি না। এইজন্য মুখস্থ শিক্ষার বিরুদ্ধে প্রায়োগিক শিক্ষার আন্দোলনে মাইকেল ফ্যারাডে একটা ভাল উদাহরণের নাম হতে পারে।

তিনি একদিন জানতে পারলেন যে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী জন ট্যাটাম প্রাকৃতিক দর্শনের (মূলত পদার্থবিজ্ঞানের) উপর জনসম্মুখে কয়েকটি ধারাবাহিক বক্তব্য প্রদান করবেন। এই বক্তব্য শুনতে হলে প্রবেশ ফি দিতে হবে ১ শিলিং, যা দরিদ্র ফ্যারাডের জন্য অনেক বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফ্যারাডের বড় ভাই, যিনিও বাবার মত একজন কামার ছিলেন, তিনি ফ্যারাডের বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে ঐ ১ শিলিং মুদ্রা দিয়েছিলেন। এর ফলে ফ্যারাডে ট্যাটামের সেই বক্তব্য শোনার সুযোগ পেয়েছিলেন। মাইকেল ফ্যারাডে এভাবেই ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ করে ফেললেন।

স্যার হামফ্রে ডেভির সাথে পরিচয়: ফ্যারাডের নতুন জীবনঃ

উইলিয়াম ড্যান্স নামে ফ্যারাডের দোকানের এক খদ্দের ফ্যারাডের বিজ্ঞানভক্তির কথা জানতেন। তিনি একদিন ফ্যারাডেকে রয়েল ইন্সটিটিউশানে অনুষ্ঠিতব্য স্যার হামফ্রে ডেভির বক্তব্যর একটা টিকেট অফার করেন। স্যার হামফ্রে ডেভি ছিলেন তৎকালীন সময়ের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীদের একজন। ফ্যারাডে তাই এই অফার লুফে নিয়েছিলেন। স্যার হামফ্রে ডেভির সাথে পরিচয়ের পর ফ্যারাডের বিজ্ঞানচর্চা আরো একধাপ উপরে উঠেছিল।

ফ্যারাডে এই সুযোগে হামফ্রে ডেভির ৪ টি সেমিনারে অংশ নেন। এগুলোর বিষয় ছিল রসায়নবিদ্যার একটা নতুন সমস্যা। সমস্যাটি হল এসিডের সংজ্ঞায়ন নিয়ে। ফ্যারাডে পরীক্ষণ ভিত্তিক বিজ্ঞানের উপর প্রচন্ড দূর্বল ছিলেন। এ কারণেই পরবর্তীতে তাঁর নাম অন্যতম একজন সফল ব্যবহারিক বিজ্ঞানীদের নামের তালিকায় উঠে এসেছিল। মাইকেল ফ্যারাডে সেমিনারে যে নোটটি করেছিলেন তার সাথে অনেক তথ্য যোগ করে তিনি তার হাতে লেখা নোটটি বাঁধাই করেন। তিনি দেখেছিলেন যে ডেভি সেমিনারের মাঝে বিভিন্ন পরীক্ষণ সম্পন্ন করছিলেন। এই জন্য তিনি সেমিনারের শেষে উৎসাহিত হয়ে প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার বাঁধাই করা নোটটি বই এর মতো করে হামফ্রে ডেভিকে উপহারস্বরুপ পাঠিয়ে দেন।

ফ্যারাডে এই সময়ে পেশাদার পরীক্ষণগুলোও সম্পন্ন করতে শুরু করে দেন। তার দোকানের পেছনেই একটি স্থানে তিনি একটি ব্যাটারি তৈরি করেছিলেন, যাতে দস্তার পাত ও তামার মুদ্রা পরস্পর হতে আদ্র লবণাক্ত কাগজ দ্বারা পৃথক করা ছিল। ম্যাগনেসিয়াম সালফেটের তড়িৎ বিশ্লেষণে তিনি তার এই ব্যাটারি ব্যবহার করতেন। ১৮১২ সাল পর্যন্ত ফ্যারাডে শিক্ষানবীশ হিসেবে সেই দোকানে কাজ করেন। তারপরেই ফ্যারাডের জীবনে আকস্মিক কিছু ঘটনা ও দুর্ঘটনা তাকে তাঁর নতুন জীবনে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।

স্যার হামফ্রে ডেভি ফ্যারাডের পাঠানো সেই বাঁধাই করা বইটা দেখে খুশি হয়েছিলেন। তিনি তখন থেকেই ফ্যারাডেকে চিনতেন। একদিন ডেভির ল্যাবরেটরিতে একটি পরীক্ষণ চলার সময় দুর্ভাগ্যবশত (ফ্যারাডের জন্য সৌভাগ্যবশত) একটি বিস্ফোরণ ঘটে, যাতে ডেভি গুরুতর আঘাত পান। এর ফলে তিনি সাময়িকভাবে লেখালেখি করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। তাই তিনি ফ্যারাডেকে তার নোট করার জন্য কিছুদিনের জন্য ল্যাবরেটরিতে কাজ দেন। এই কাজের ফলে ডেভি ফ্যারাডের মেধা সম্পর্কে আরো ঘনিষ্টভাবে জানার সুযোগ পান। কিন্তু ডেভি সুস্থ হয়ে উঠলে ফ্যারাডেকে এই কাজ থেকে অব্যহতি দিয়ে দেয়া হয়।

কাজ শেষ করে ফ্যারাডে ডেভির ল্যাবরেটরিতে সহযোগী হিসেবে কাজ করার আবেদন করেছি্লেন। এই ঘটনার কিছু আগে বা পরে ডেভির ল্যাবরেটরির একজন সহযোগীকে অসদাচারণের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তাই ডেভি ফ্যারাডেকে জানিয়েছিল যে ফ্যারাডে চাইলে তিনি ডেভির ল্যাবরেটরিতে কেমিক্যাল সহযোগী হিসেবে কাজ করতে পারেন।

ফ্যারাডেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, তিনি কাজটা নিতে চান কি না। রয়েল ইন্সটিটিউশানে পৃথিবীবিখ্যাত একজন বিজ্ঞানীর সাথে কি তিনি কাজ করতে চান? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর 'হ্যাঁ' ছাড়া আর কিইবা হতে পারে! এই 'হ্যাঁ' এর মাধ্যমেই শুরু হল মাইকেল ফ্যারাডের নতুন জীবন।


রয়েল ইন্সটিটিউশানে ক্যারিয়ারঃ 

মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৮১৩ সালের ১ মার্চ ফ্যারাডে রয়্যাল ইন্সটিটিউশানে কাজ শুরু করেন। এখানে ফ্যরাডে পূর্বাপেক্ষা ভালোই বেতন পেতেন। রয়েল ইন্সটিটিউশান সংলগ্ন একটা চিলেকোঠায় তার থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফ্যারাডেকে নেয়া হয়েছিল ৫৪ বছরের চুক্তিতে। চুক্তি অনুসারে মেয়াদ শেষে ফ্যারাডে রসায়নের একজন অধ্যাপক হিসেবে বের হবার কথা।

যাই হোক, কেমিক্যাল সহযোগী হিসেবে ফ্যারাডে সেখানে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যাদি তৈরি করতেন, যা রয়েল ইন্সটিটিউশানের বিভিন্ন প্রকার সেমিনার এবং পরীক্ষণে কাজে লাগত। সেখানে কাজ করার মাত্র ৭ মাসের মাথায় ডেভি ফ্যারাডেকে তার সেক্রেটারি হিসেবে দেড় বছরের লম্বা ভ্রমণে ইউরোপ নিয়ে যান। এই ভ্রমণে ফ্যারাডের সাথে পরিচয় ঘটে আন্দ্রে ম্যারি অ্যাম্পিয়ার এবং আলসান্দ্রো ভোল্টার সাথে। এদের নিকট হতে ফ্যারাডে তড়িৎ বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছিলেন।

এত কিছুর পরেও মাইকেল ফ্যারাডে ব্যক্তিগতভাবে সুখী ছিলেন না। স্যার হামফ্রে ডেভির স্ত্রী তাঁর সাথে ব্যক্তিগত চাকরের মত ব্যবহার করতেন এবং ফ্যারাডেকে ডেভির সমতুল্য ভাবতে অস্বীকার করতেন। এর কারণ হল, ফ্যারাডের নিম্নবর্গের এবং নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন। ইউরোপের ভ্রমণ শেষে লন্ডনে ফিরে এলে রয়েল ইন্সটিটিউশান কর্তৃপক্ষ মাইকেল ফ্যারাডের বেতন বৃদ্ধি করে দেয় এবং চুক্তি নবায়ন করে। স্যার হামফ্রে ডেভিও ফ্যারাডের মেধা ও যোগ্যতার সম্মান করতেন এবং তার অনেক রিসার্চ পেপারেই তিনি মাইকেল ফ্যারাডের ঋণ ও কৃতজ্ঞতা অকপটে স্বীকার গেছেন।


উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহঃ 

১৮১৬ সালে ২৪ বছর বয়সে মাইকেল ফ্যারাডে তাঁর প্রথম বক্তব্য প্রদান করেন। বক্তব্যর বিষয় ছিল পদার্থের বৈশিষ্ট্যমূলক ধর্ম। এই বছরেই তিনি ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড নিয়ে তার একটি গবেষণাপত্র বের করেন, যা সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।

১৮২১ সালে যখন মাইকেল ফ্যারাডের বয়স মাত্র ২৯ বছর, সেই সময়েই তিনি রয়েল ইন্সটিটিউশানের আবাসিক ও ল্যাবরেটরির তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত হন। এই সময়ে তিনি সারাহ বার্নাড নাম্নী এক মহিলাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ফ্যারাডে আর রয়্যাল ইন্সটিটিউশানের সেই চিলেকোঠায় ছিলেন না, তিনি পার্শ্বস্থ একটি পাকা দালানবাড়িতে জীবনের বাকি সময়ের অধিকাংশই কাটিয়ে দেন।

১৮২৪ সালে ৩২ বছর বয়সে রয়্যাল সোসাইটির জন্য তিনি সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এই সময়ই তিনি বিজ্ঞানীদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেন। পরের বছরই তিনি রয়্যাল ইন্সটিটিউশান ল্যাবরেটরির পরিচালক পদে নিয়োগ পান। ১৮৩৩ সালে তিনি ব্রিটেন রয়্যাল ইন্সটিটিউশানের রসায়ন অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। যদিও '৪৮ ও '৫৮ সালে দুইবার তাঁকে রয়্যাল সোসাইটির সভাপতির দায়িত্ব অফার করা হয়, তিনি সেই দায়িত্ব প্রত্যাখান করে রসায়নের অধ্যাপকের পদেই ফিরে যান। তাই মাইকেল ফ্যারাডে আমৃত্যু রয়েল ইন্সটিটিউশানের রসায়ন অধ্যাপকের পদে আসীন ছিলেন।


আবিস্কার ও উদ্ভাবনসমূহঃ 
১৮২১ সাল- তাড়িতচৌম্বকের যান্ত্রিক ক্রিয়া (মোটর)
১৮২৩ সাল- গ্যাস শীতলীকারক ও তরলীকারকের ধারণা দেন যার মূলনীতি ছিল মূলত ১৭৫৬ সালে উইলিয়াম কুলেনের দেয়া। ১৮৬২ সালে ফার্দিন্যান্ড ক্যাঁ ফ্যরাডের এই শীতলীকারক প্রদর্শন করেন।
১৮২৫ সাল- গ্যাসের তৈলাক্ত অবশেষ থেকে বেনজিন আবিস্কার
১৮৩১ সাল- তাড়িতচৌম্বকীয় আবেশ উদ্ভাবন (জেনারেটর)
১৮৩৪ সাল- তড়িৎ বিশ্লেষণ সম্পর্কিত ফ্যারাডের সুত্র।
১৮৪৫ সাল- ফ্যারাডে ইফেক্ট আবিস্কার (আলোক-চৌম্বক ক্রিয়া)
১৮৪৫ সাল- সকল পদার্থেরই মৌলিক ধর্ম হিসেবে ডায়াচৌম্বকত্ব আবিস্কার।

জীবনাবসানঃ
৭৫ বছর বয়সে ১৮৬৭ সালের ২৫ আগস্ট মাইকেল ফ্যারাডে মৃত্যুবরণ করেন। ফ্যারাডে- সারাহ দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। মাইকেল ফ্যারাডে জীবদ্দশায় একজন ধর্মপ্রাণ স্যান্ডাম্যানিয়ান খ্রিষ্টান ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বেই মাইকেল ফ্যারাডেকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল ওয়েস্ট মিনিস্টার অ্যাবেতে তাকে সমাহিত করার। ব্রিটেনের রাজা- রাণী, আইজ্যাক নিউটন বা রাদারফোর্ডের মতো বিজ্ঞানীদের পাশে সমাহিত হবার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ফ্যারাডে তার স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত হবাত্র ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইংল্যান্ড গেলে লন্ডনের হাইগেট সিমেট্রির নিকটে মাইকেল ফ্যারাডে ও সারাহ বার্ণাডের কবর দেখতে পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্রঃ
১। শ্রেষ্ঠ আবিস্কার ও আবিস্কারকের গল্প by ইব্রাহীম খলিল।
২। http://famousscientists.org/michael-faraday
৩। http://en.wikipedia.org/wiki/Michael_Faraday
Category: articles

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ৫ সেপ্টেম্বর। ১৯৭৭ সালের এই দিনে ভয়েজার ১ মহাকাশ যানকে সৌরজগতের বহিঃস্থ অঞ্চলের খোঁজখবর জানার জন্যে প্রেরণ করা হয়। এর যমজ যান ভয়েজার ২ এর ১৬ দিন পর ছাড়া হয় একে।

শিল্পীর তুলিতে ভয়েজার-১

১৯৬০ এর দশকে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ‘মেরিনার প্রকল্প’ হাতে নেয়। এর উদ্দেশ্য ছিল বুধ, শুক্র এবং মঙ্গল গ্রহ পর্যবেক্ষণ করা। সেই উদ্দেশ্যে ১৯৬২ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত ১০টি অভিযান (মেরিনার ১ থেকে মেরিনার ১০) পরিচালনা করে নাসা। শুরুতে ভয়েজার ১ ছিল 'মেরিনার ১১' নামে মেরিনার প্রকল্পের অধীনে। কিছুদিন পর বাজেট ঘাটতির কারণে এই প্রকল্পটির কার্যক্রম শুধুমাত্র "বৃহস্পতি-শনির ফ্লাইবাই" এ নামিয়ে আনা হয় এবং নতুন প্রকল্পের নাম দেয়া হয় "মেরিনার জুপিটার-স্যাটার্ন প্রোব"।

এ প্রকল্পের কাজ এগোতে থাকলে ইতোমধ্যে "পাইওনিয়ার ১০" থেকে পাওয়া তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতির প্রতিকূল আবহাওয়া সম্পর্কে অবহিত হন এবং এই প্রকল্পের নাম ও কাজের ধারা আবারও পরিবর্তন করেন। এবার প্রকল্পটির নতুন নাম দেয়া হয় "ভয়েজার ১"। এই নতুন ভয়েজার ১ এর প্রকল্পের ডিজাইন ও কলাকৌশল পূর্ববর্তী অন্য যেকোনো মেরিনার প্রক্লপের চেয়ে আরও বেশি উন্নত করে করা হয়।

১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখে টাইটান থ্রিই (Titan IIIE) নামক রকেট ইঞ্জিন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে উৎক্ষিপ্ত হয় ভয়েজার-১। ১৯৭৭ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখে এটি মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝে অবস্থিত গ্রহাণু বেষ্টনিতে (asteroid belt) প্রবেশ করে। ১৯৭৭ সালের ১৯ ডিসেম্বরে এটি ওই অঞ্চলে থাকা দুই সপ্তাহ আগে উৎক্ষিপ্ত তার যমজ ভাই ভয়েজার ২ কে অতিক্রম করে।

১৯৭৯ সালের ৫ মার্চ এটি বৃহস্পতির এলাকায় পৌঁছে। এ সময় এটি বৃহস্পতির উপগ্রহ আয়োর বুকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির খোঁজ পায়। এবং এবারই প্রথম পৃথিবীর মানুষ প্রথমবারের মতো পৃথিবী ছাড়াও সৌরজগতের অন্য কোথাও সক্রিয় আগ্নেয়গিরির খোঁজ পেল।

বৃহস্পতির উপগ্রহ আয়োর বুকে সক্রিয় আগ্নেয়গিরির

১৯৭৯ সালের এপ্রিলে ভয়েজার-১ বৃহস্পতির এলাকা ছেড়ে শনির দিকে রওয়ানা দেয় এবং ১৯৮০ সালের ১২ নভেম্বর শনির সবচেয়ে কাছাকাছি যায়। এরপর ১৯৮০ সালের ডিসেম্বরেই ভয়েজার-১ শনির এলাকা ছেড়ে দূর আকাশের দিকে পা বাড়ায়।

১৯৯৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী ভয়েজার-১ সূর্য থেকে ৬৯ এইউ দূরে থাকা "পাইওনিয়ার-১০" কে অতিক্রম করে মানুষের প্রেরিত সবচেয়ে দূরবর্তী বস্তুতে পরিণত হয়। এ সময় এর বেগ ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১৭ কিলোমিটার!!!
* এক এইউ হল পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব।
আরো পড়ুনঃ 
» পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত? 
» জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা 

২০০৪ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারী এটি টারমিনেশন শক এলাকা অতিক্রম করে এবং ২০১২ সালের জুনে হেলিওপজ এলাকায় প্রবেশ করে। ২০১২ সালের আগস্টে ভয়েজার-১ হেলিওপজ এলাকা পার হয়ে যায়। এ সময় এটি সূর্য থেকে প্রায় ১২১ এইউ দূরে ছিল এবং তখন এতে সূর্যের আলো পৌঁছতে সময় লাগত ১৬.৮৯ ঘন্টা!!!

২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নাসার বিজ্ঞানীরা ঘোষণা দেন যে ভয়েজার-১ আমাদের সৌরজগত ত্যাগ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এটি আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানে প্রবেশ করেছে। ধারণা করা হয়, ২০২৫ থেকে '৩০ সালের মধ্যে এটি আমাদের কাছ থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

অনন্ত শূন্যতায় হারিয়ে গেলেও যদি কখনও এটি অন্য কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীদের হাতে পড়ে সে আশায় এতে উৎক্ষেপণের সময়ই সংযুক্ত করা হয়েছিল "গোল্ডেন রেকর্ড" বা "সোনালী স্মৃতি" নামক একটি গ্রামোফোন রেকর্ড। এতে পৃথিবীর কিছু ছবি, প্রাকৃতিক কিছু শব্দ এবং প্রায় ৫৫ রকম ভাষায় "সম্বোধন" রেকর্ড করা আছে, যার মধ্যে রক্তে অর্জিত আমাদের বাংলা ভাষাও একটি। ভয়েজার-১ এর কল্যাণে আমাদের মাতৃভাষা এখন আমাদের থেকে ২০.৩ বিলিয়ল কিলোমিটার দূরে ছড়িয়ে এবং যাচ্ছে আরও অনন্তের পথে।

গোল্ডেন রেকর্ড নামক গ্রামোফোন রেকর্ড
ভয়েজার ১ এর বর্তমান অবস্থা।
ছবিটি বড়ো করে দেখতে ছবির উপর বা  এখানে ক্লিক করুন। 

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Voyager_1
২। http://voyager.jpl.nasa.gov/
৩। ভয়েজার যান দুটির দূরত্বের আপডেট জানতে এই লিঙ্কে চোখ রাখুন।  
Category: articles

বুধবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

আজকের তারিখ ২৪ আগস্ট। ১০ বছর আগের এই দিনে গ্রহের খাতা থেকে বাদ পড়ে যায় তৎকালীন নবম গ্রহ প্লুটো। তোলপাড় ওঠে পুরো পৃথিবীতে। অনেকেই বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি, এমনকি অনেক জ্যোতির্বিদও।

গ্রহের খাতা থেকে বাদ দেবার সময় বোঝা যায়, মানুষের কাছে প্লুটো বেশ জনপ্রিয় বস্তু। প্রথমবারের মতো নিউ হরাইজনস যান যখন তাই প্লুটো অভিযানে গিয়ে এতে হার্টের আকৃতি আবিষ্কার করে, ব্যাপারটি তখন পরিহাস হয়ে দাঁড়ায়। ছবিটি গ্রহের ৪৫০,০০ ০০০ কিমি. দূর থেকে তোলা।   

২০০৬ সালের এই দিনে নেপচুন হয়ে গেল সৌরজগতের সর্বেশেষ গ্রহ। আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির (IAU) দেওয়া গ্রহের নতুন সংজ্ঞা অনুসারে এল এ সিদ্ধান্ত। ২০০৬ সালের আগে কোনো বস্তুকে ভর বা আকারের ভিত্তিতে সংজ্ঞায়িত করবার কোনো প্রয়োজন দেখা দেয়নি। কিন্তু সৌরজগতের বাইরের অঞ্চলের দিকে হাউমেয়া ও মাকিমাকির মতো বস্তুরা আবিষ্কৃত হতে শুরু করলে এর প্রয়োজন অনুভব হওয়া শুরু হয়। ২০০৫ সালে আবিষ্কৃত এরিসের ভর আবার প্লুটোর চেয়ে বেশি। অতএব, প্লুটো গ্রহ হলে এরিস কেন হবে না?

এই প্রশ্নটিই আইএইউর মাথায় এল। এই প্রশ্নের সমধান করতে গিয়েই প্ল্যানেট ডেফিনিশান কমিটি বানানো হয়, যার ফলাফল- প্লুটোর অবনতি।

এই কমিটির সিদ্ধান্তেই বাদ পড়ে প্লুটো। সিদ্ধান্তটা অবশ্যই পরিস্থিতির দাবিই ছিল। 

কমিটির সামনে কয়েকটি রাস্তা ছিল। একটি রাস্তা ছিল ভর বা সাইজের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া। এক্ষেত্রে প্লুটোকে গ্রহ হিসেবে মেনে নিলে এরিস এবং সেরেসও (গ্রহাণু বেষ্টনির সবচেয়ে বড়ো বস্তু) তাহলে গ্রহ হয়। কিছু সময়ের জন্যে মনে হয়েছিল যে এই সিদ্ধান্তই হয়ত হবে।

আরেকটি উপায় ছিল যে নির্দিষ্ট কোন যুক্তি দিয়ে গ্রহের সংজ্ঞা দেওয়া হবে না। পৃথিবী একটি গ্রহ, প্লুটোও আরেকটি গ্রহ। এরিস গ্রহ নয়, কারণ আমাদের ইচ্ছা হয়নি তাই।

২০০৬ এর ২৪ আগস্ট তারিখে আইএইউ ফলাফল জানিয়ে দিল। ঠিক হল, গ্রহের জন্যে নতুন একটি সংজ্ঞা থাকবে। তিনটি শর্ত নিয়ে এই সংজ্ঞা তৈরি:
১। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে হবে
২। অভিকর্ষীয় বলের মাধ্যমে গোলাকার আকৃতি পাবার জন্যে যথেষ্ট ভর থাকবে
৩। কক্ষপথ থেকে অন্য বস্তুদের সরিয়ে দেবে।

আরো দেখুনঃ
গ্রহের পরিচয়
প্রদক্ষিণ বনাম আবর্তন

তিন নম্বর শর্তটিই প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে উৎখাত করেছে। কোনো বস্তুকে গ্রহ হতে হলে একে এর নিজস্ব কক্ষপথের আধিপত্য ধরে রাখতে হবে। অন্য বস্তুদেরকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে, নয়ত নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলতে হবে।

প্লুটো এর কক্ষপথ অঞ্চলের মোট ভরের মাত্র ০.০৭ ভাগ নিজের করে রাখতে পেরেছে। অথচ পৃথিবীর কাছে রয়েছে নিজের কক্ষপথ অঞ্চলের অন্যান্য বস্তুর ভরের ১৭ লক্ষ গুণ ভর।

২০১৫ সালের ১৪ জুলাইয়ে প্লুটোর নিকটতম অবস্থানে পৌঁছার মাত্র ১৫ মিনিট পরে ছবিটি তোলে নিউ হরাইজনস। ১৮, ০০০ কিমি. দূর থেকে তোলা ছবিতে ধরা পড়েছে ১২৫০ কিমি. এলাকা। 

ঐ একই দিনে প্লুটোকে বামন গ্রহ পদবীতে ভূষিত করা হল। বামন গ্রহের জন্যেও একটি সংজ্ঞা ঠিক করা হল:
১। সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরবে
২। অভিকর্ষীয় বলের মাধ্যমে গোলাকার আকৃতি পাবার জন্যে যথেষ্ট ভর থাকবে
৩। কক্ষপথের একচ্ছত্র মালিক হবে না
৪। কোনো উপগ্রহ হবে না

আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমতির মতে এখন পর্যন্ত বামন গ্রহ আছে পাঁচটি। এরা হল, প্লুটো, সেরেস, এরিস, হোমিয়া ও মাকিমাকি। তবে ষষ্ঠ বামন গ্রহ হিসেবে 2007 OR10 ছাড়াও আরো অনেক অনেক দাবিদার রয়েছে।

বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, বহিঃস্থ সৌরজগতের কাইপার বেল্ট অঞ্চলে শত শত অনাবিষ্কৃত বামন গ্রহ রয়েছে।

প্লুটোকে খোঁজা শুরু হয়েছিল কেন সেও এক মজার কাহিনী। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দেখছিলেন, কিছু একটা নেপচুনের কক্ষপথে বিকৃতি ঘটাচ্ছে। ১৯৩০ সালে আবিষ্কৃত না হয়ে যদি আরো এক দশক পরে এটি আবিষ্কৃত হত তাহলে কাইপার বেল্ট থাকার কারণে প্লুটো আর গ্রহ খ্যাতিই পেত না।

প্লুটোপ্রেমীরা হতাশ হলেও তাদের জন্যেও একটি সান্ত্বনা পুরস্কার রয়েছে। প্লুটো এ জন্যে বিখ্যাত যে একে কেন্দ্র করেই সৌরজগতের বস্তুরা একটি সংজ্ঞা পেয়েছে।

আরো পড়ুনঃ
প্লুটোর গ্রহত্ব হারানোর কাহিনী
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...