Advertisement

সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

বিটলজুস নিক্ষত্র এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যেকোনো সময় এটি সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। ঠিক কখন সেটা আমরা জানি না। আমরা নক্ষত্রটা থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে আছি৷ তাই বিস্ফোরণে ক্ষতি হবে না। দেখব শুধু সুপারনোভার অসাধারণ রূপ!


বিটলজুস



সম্প্রতি লোহিত অতিদানব নক্ষত্রটার উজ্জ্বলতা ৫০% গুণ বেড়েছে। ফলে আবারও শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা৷

বিটলজুস একইসাথে একটি লোহিত অতিদানব ও অর্ধনিয়মিত বিষম ও স্পন্দনশীল তারা। মানে এর উজ্জ্বলতার পরিবর্তন কিছু নিয়ম মেনে চলে। উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের আছে বেশ কিছু চক্র৷ মূল চক্রটি ৪০০ দিনের। তবে ১২৫ ও ২৩০ দিনের দুটি ছোট চক্রও আছে। আছে আবার ২২০০ দিনের একটি বড় চক্র৷ এসব কারণে বিটলজুসের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন জ্যোতির্বিদদের কাছে এক মহাধাঁধা৷

কয়েক বছর আগে এর উজ্জ্বলতা কমে আসে। সবাই এর কারণ নিয়ে ভাবতে থাকল। পরে দেখা গেল, উজ্জ্বলতা আসলে কমেনি। নক্ষত্রটার পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষিপ্ত পদার্থ ঠাণ্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হয়৷ আর তাতে বাধাগ্রস্ত হয় আলো৷

এখন আবার উজ্জ্বল হচ্ছে বিটলজুস৷ এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা সম্ভবত প্রত্যাশার চেয়ে আগেই সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হবে৷ মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে মিল্কিওয়ের পরবর্তী সুপারনোভা হবে বিটলজুসই৷

বিটলজুস বর্তমানে লোহিত অতিদানব তারা। পেছনে ফেলে এসেছে প্রধান ক্রম দশা। যে সময় এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাত৷ ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বছর ধরে কাজটি করে এসেছে নক্ষত্রটা৷ ভর হারিয়ে তারারা ফিউশন বিক্রিয়ার বহির্মুখী চাপকে আর ধরে রাখতে পারে না। নক্ষত্রের বাইরের দিক ফুলে ফেঁপে ওঠে৷ ভর কমলেও আকার যায় বেড়ে৷

তবে ফিউশন তখনও চলে। শুরু হয় কার্বন পোড়া। তৈরি হয় আরও কিছু ভারী মৌল। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিটলজুস এ ধাপের শেষের দিকে আছে। কার্বন পোড়ার ধাপ আছে কয়েকটি৷ বিটলজুস স্পন্দিত হয়, পদার্থ ছুঁড়ে মারে, আবর্তন করে। আবার ছুটে চলে মহাশূন্য ধরে। কার্বন পোড়ারনোর কোন ধাপে নক্ষত্রটা আছে তা না জানা গেলে সঠিক করে বলা যাবে না কবে নক্ষত্র সুপারনোভা হবে৷ জ্যোতির্বিদরা দেখেন নক্ষত্রের বাইরে অংশ৷ ভেতরের খবর সঠিক করে বলা সম্ভব হয় না।

তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণা বলছে বিস্ফোরণটা হতে পারে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে৷ ২০০ পারসেক দূরের এ বিস্ফোরিত পৃথিবীর আকাশে অন্যতম সুন্দর এক দৃশ্যের অবতারণাই করবে। ছুঁড়ে দেওয়া ক্ষতিকর এক্সরে বা গামা রশ্মি থেকে আমরা নিরাপদ।



বিটলজুস রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা। আদমসুরত বা কালপুরুষ মণ্ডলে এর অবস্থান। শীতের আকাশে সহজেই উজ্জ্বল এ তারার দেখা পাবেন। মে মাসের দিকে পশ্চিম দিগন্তে হারিয়ে যাবে। আগস্টের শেষের দিকে আবার দেখা যায় ভোরের পূবাকাশে। নিচের লিঙ্কে বিটলজুস ও অন্যান্য উজ্জ্বল তারা কীভাবে খুঁজে পাবেন দেখানো আছে। 

আদমসুরত তারামণ্ডল। উপরে বামপাশের তারাটাই বিটলজুস। 

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩

রাশি শব্দটা দেখে জ্যোতিষশাস্রের কথা ভাববেন না। রাশি মানে আসলে তারামণ্ডল। তুলারাশি মানে আসলে আকাশের তুলামণ্ডল। ইংরেজিতে লিব্রা (Libra)। পৃথিবীর আকাশে ৮৮টি তারামণ্ডল আছে। বছরের একেক মাসে একেকটাকে ভাল দেখা যায়। এর মধ্যে জুন মাসের অন্যতম তারামণ্ডল তুলারাশি।



তারামণ্ডলের পরিচয়


জুনের রাত নয়টার দিকে দেখা যায় এ মণ্ডলটাকে। খুব বেশি উজ্জ্বল নয়। তবে অন্ধকার মেঘমুক্ত আকাশে খালি চোখে সহজেই দেখা যায়। জুবেনেলজিনুবি ও জুবেনেশামেলি এ মণ্ডলের উজ্জ্বল দুই তারা। জুবেনেলজিনুবির বাংলা নাম বিশাখা। জুবেনেশামেলির নাম সৌম্যকীলক। খুঁজে পেতে কাজে আসবে পাশের তারামণ্ডল বৃশ্চিক।




বৃশ্চিকের হৃদয়ের তারাটির নাম অ্যান্টারেস। বাংলায় জ্যেষ্ঠা। মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাও এটাই। আর রাতের আকাশের ১৬তম উজ্জ্বল তারা। পরিষ্কার আকাশে অ্যান্টারেস ও কাঁকড়াবিছা আকৃতির পুরো বৃশ্চিক সহজেই দেখা যায়। এই মণ্ডলের উপর দিয়েই আবার চলে গেছে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের সুন্দর দৃশ্যমান বাহুটা।

উজ্জ্বল তারাদের গল্প

অ্যান্টারেসের সামনেই আছে তুলামণ্ডল। অ্যান্টারেসের সামনে বৃশ্চিকেরই আরও তিনটি মোটামুটি উজ্জ্বল তারা আছে। অ্যান্টারেস থেকে এ তিনটির মাঝের তারাটির সাথে রেখা টেনে প্রায় তিনগুণ গেলেই পাওয়া যাবে তুলার দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারা জুবেনেলজিনুবি। এটাই এ মণ্ডলের আলফা তারা। তারাটির অবস্থান প্রায় বরাবর সূর্যপথের ওপর। এ কারণেই সম্ভবত একে আলফা তারা নাম দেওয়া হয়েছে।


তুলামণ্ডল খুঁজে পেতে কাজে আসবে বৃশ্চিক



মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটি হলো জুবেনেশামেলি। আনুষ্ঠানিক নাম বেটা লিব্রি। যাকে পাওয়া যাবে জুবেনেলজেনুবির বাঁয়ে। অ্যান্টারেসের প্রায় অর্ধেক দূরত্বে। জুবেনেলজিনুবির চেয়ে একটু বেশিই উজ্জ্বল।

বাংলায় মণ্ডলটাকে আমরা তুলা বা দাঁড়িপাল্লা বলি। ব্যাবিলনীয়রাও একে স্কেল বা পাল্লা বলত। গ্রিকরাসহ কেউ আবার কাঁকড়াবিছার দাঁড়াও বলত। এটি রাশিচক্রের ১৩ মণ্ডলের অন্যতম রাশি। মানে পৃথিবী থেকে সূর্যের আপাত অবস্থান আকাশে যে যে অঞ্চলে মনে হয়, তুলাও সেরকম একটি অঞ্চলে আছে।

রাশিচক্রের পরিচয়

প্রাচীন মিশরে লিব্রার তিন উজ্জ্বল তারাকে একত্রে নৌকা বলা হত। আলফা, বেটা ও সিগমা তারার এই নৌকার পেটের দিকটা আছে বৃশ্চিকের দিকে। টলেমির ৪৮টি তারানকশার মধ্যে তুলাও ছিল। প্রাচীন রোমে প্রথম একে তারামণ্ডল নাম দেওয়া হয়।

স্বাভাবিকভাবেই তুলার আশেপাশে রাশিচক্রের আরও মণ্ডল আছে। সামনে আছে ভার্গো বা কন্যারাশি। বৃশ্চিকের কথা আগেই বলেছি। যা আছে পেছনে। এছাড়াও আছে সর্পধারীমণ্ডলজুবেনেশামেলির পাশে। আরেকটি মণ্ডল হাইড্রা আছে সিগমা তারার পাশে। হাইড্রা রাশিচক্রের বাইরের মণ্ডল।

অক্টোবরের ৩১ থেকে নভেম্বরের ২২ পর্যন্ত সূর্য এ মণ্ডলে থাকে। ফলে এ সময় একে দেখা যাবে না। কারণ উদয়-অস্ত হবে সূর্যের সাথে।

সূত্র: আর্থস্কাই, ইংরেজি উইকিপিডিয়া 
Category: articles

বুধবার, ১০ মে, ২০২৩

বিজ্ঞানের কাজ হলো পৃথিবী ও মহাবিশ্বের বিভিন্ন ঘটনার পর্যবেক্ষণ। অতঃপর তার ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্ভাব্য পুর্বাভাস প্রদান। এভাবেই গড়ে ওঠে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে আগমন ঘটে প্রযুক্তির। কোয়ান্টাম মেকানিকস একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এর প্রয়োগ ঘটেছে বর্তমানে ইলেকট্রনিকসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমাদের হাতে থাকা মোবাইলের চিপের প্রযুক্তির গভীরে আছে কোয়ান্টাম মেকানিকসের কারিশমা। স্মার্টফোনে আছে কয়েক শ কোটি ট্রাঞ্জিস্টর। কোয়ান্টাম মেকানিকসের ধারণা কাজে না লাগানো গেলে সিলিকন-ভিত্তিক এই প্রযুক্তি কাজ করত না। ফোনের ক্যামেরার সিসিডি সেন্সর কাজ করত না আলোকবিদ্যুত তত্ত্বের ধারণা প্রয়োগ ঘটানো না গেলে। 




আবার প্রযুক্তিও অকৃতজ্ঞ নয়। বিজ্ঞান তো প্রযুক্তির পথ খুলে দেয়। প্রযুক্তিও আবার বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে সহজ করে দেয়।  ছোট্ট এক প্রযুক্তি লেন্স। লেভেনহুকের হাত ধরে সেটাই সূচনা করে দেয় অণুজীববিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞানের শাখা। সেই ধারা এখনো আছে। বিজ্ঞানের সব শাখা উপকৃত হচ্ছে প্রযুক্তি থেকে। বিজ্ঞান গবেষণার অবিচ্ছেদ্য অংশ পরিসংখ্যানিক উপাত্ত বিশ্লেষণ। কম্পিউটার প্রযুক্তির বদৌলতে সহস্র ঘণ্টার বিশ্লেষণ ও মডেলিং করা যাচ্ছে কয়েক সেকেন্ডে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা, মেশিন লার্নিং ও বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স বিজ্ঞানের তত্ত্ব তৈরি সহজ করে দিচ্ছে। 


জ্যোতির্বিজ্ঞানকে বলা হয় প্রাচীনতম বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের সে শাখায়ও অবদান রাখছে প্রযুক্তি। খালি চোখে আকাশের কতটুকুই দেখা যায়! কত শত দূরের আলোকবর্ষের তারকারাজিকে টেলিস্কোপ হাজির করেছে আমাদের চোখের সামনে। সেসব পর্যবেক্ষণ থেকেই তো আমরা জানলাম, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। হাবল ও জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ আজো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। মহাশূন্যে পাঠানো অনুসন্ধানী যান দূর মহাকাশের খবর পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের কাছে। বিলিয়ন বিলিয়ন বাইটের ডেটা থেকে সুপারকম্পিউটার প্যাটার্ন বের করে দিচ্ছি। সহজেই আমরা খোঁজ পেয়ে যাচ্ছি ট্যাবির নক্ষত্রের মতো ব্যতিক্রমী জিনিসের। 


মুদ্রার উল্টো পিঠের কথাও এবার বলি। না, পারমাণবিক বোমার কথা বলছি না। প্রযুক্তি আরও বহু উপায়েই ক্ষতিকর হতে পারে। আজ শুধু মহাকাশে একটু চোখ বুলাবো। স্পেসএসক্সের মতো কোম্পানিগুলো প্রতিতিয়ত মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাচ্ছে। পাঠাচ্ছে সরকারি বেসরকারি আরও নানান সংস্থাই। কৃত্রিম উপগ্রহের আছে নানান ব্যবহার। এর মধ্যে আছে যোগাযোগ,  আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস, জিপিএস দিকনির্দেশনা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদি। ইউসিএস স্যাটেলাইট ডেটাবেজের হিসাব অনুসারে বর্তমানে ৫৪৬৫টি উপগ্রহ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। 


এতে জ্যোতির্বিদদের আপত্তি থাকার কথা নয়। বরং স্যাটেলাইট তো জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজেও লাগে। স্পেস টেলিস্কোপগুলো আকাশ পর্যবেক্ষণকে অনেকভাবে সুবিধাজনক করে দিচ্ছে। আলোকদূষণ, পর্যবেক্ষণে বিকৃতি নানান সমস্যার সমাধান স্পেস টেলিস্কোপ। কিন্তু সমস্যারও জন্ম দিচ্ছে স্যাটেলাইট। 


পৃথিবীর কক্ষপথের কৃত্রিম উপগ্রহরা বাধাগ্রস্থ করছে পৃথিবীভিত্তিক আকাশ পর্যবেক্ষণকে। সম্প্রতি নিম্ন-ভূ কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা বাড়ছে। এমনিতেও বেশিরভাগ কৃত্রিম উপগ্রহের অবস্থান এ কক্ষপথে। ভূপৃষ্ঠের মোটামুটি ১৬০ কিলোমিটার থেকে ১,০০০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথকে নিম্ন-ভূ কক্ষপথ বলা হয়। এ কক্ষপথের উপগ্রহদের বাধা সবচেয়ে বেশি টের পায় অপটিক্যাল ও নিকট-অবলোহিত (অবলোহিত আলোর কাছাকাছি পাল্লার আলো দেখার মতো) টেলিস্কোপগুলো। 


উপগ্রহের উপস্থিতিতে বড় অঞ্চল জুড়ে বা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও সকাল ও সন্ধ্যার গোধূলির সময়টায় উপগ্রহ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে আরেকটি বিঘ্ন তৈরি করে। ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরি  (ইএসও) ২০২১ সালের এক গবেষণায় এ সমস্যাগুলো তুলে ধরে। দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে তিনভাগ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ নষ্ট হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় আকাশের বড় এলাকার পর্যবেক্ষণ (wide-field surveys)। গোধূলির সময়ের ৩০-৫০ ভাগ পর্যবেক্ষণ এভাবে ক্ষতগ্রস্থ হয়। 


২০২০ ও ২০২১ সালের অন্য গবেষণায় দেখা হয় অপটিক্যাল ও নিকট-অবলোহিত টেলিস্কোপগুলোর ওপর প্রভাব। দেখা যায়, ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (ভিএলটি) মধ্যম মানের ক্ষতির মুখে পড়ছে। একই আকারে ক্ষতির স্বীকার হবে ভবিষ্যতের ইএলটি (এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ)। তবে চিলিতে নির্মাণাধীন রুবিন পর্যবেক্ষণকেন্দ্র আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ টেলিস্কোপগুলো অল্প সময়ে আকাশের বিশাল এলাকা স্ক্যান করে। এ কারণে সুপারনোভা ও ক্ষতিকর গ্রহাণু শনাক্ত করতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 


জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি। মহাকাশ থেকে আসা বেতার তরঙ্গ শনাক্ত ও বড় করে দেখার কাজ হয় এখানে। এ তরঙ্গকে সঙ্কেতে রূপান্তর করার মাধ্যমে মহাবিশ্বের অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে। রেডিও টেলিস্কোপগুলো দৃশ্যমান আলোর খোঁজ করে না। ফলে দেখার সমস্যা এখানে হয় না। সমস্যা হয় উপগ্রহদের পৃথিবীর দিকে পাঠানো সঙ্কেতের কারণে। রেডিও টেলিস্কোপ শুধু রাতের মৃদু আলোরই খোঁজ করে না, কাজ করে ২৪ ঘণ্টা জুড়েই। ফলে শুধু গোধূলির সময় নয়, সারা দিনই এরা উপগ্রহের বাধায় পড়ে।  


এছাড়াও কথা আছে। উপগ্রহের পাঠানো শক্তিশালী সঙ্কেতের তুলনায় দূর মহাকাশ থেকে বেতার তরঙ্গ খুব মৃদু। ক্ষতি করার জন্য উপগ্রহকে দূরের বস্তুর সামনে না থাকলেও হচ্ছে। টেলিস্কোপের দৃষ্টির আওতায় কোনো এক জায়গায় থাকাই যথেষ্ট। সমস্যাটির সমাধান একটি আছে অবশ্য। ব্যাপারটাকে বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন বর্ণালী ব্যবস্থাপনা। এ কাজের অংশ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন কিছু নীতিমালা করেছে। উপগ্রহের জন্যে নির্দিষ্ট ব্যান্ডের কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য সংরক্ষিত রাখা হয়। 


তবে যোগাযোগের নতুন এক ঝাঁক স্যাটেলাইট নতুন সমস্যাও করছে। আগামী বছরগুলোতে নিম্ন-ভূ কক্ষপথে হাজার হাজার উপগ্রহের উপস্থিতিতে অবস্থা বদলে যাবে। আকাশে ঘুরে বেড়াবে বহুসংখ্যক দ্রুত গতির বেতার তরঙ্গের উৎস। ফলে আকাশের স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ ব্যাহত হবে। 


কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্যে উপাত্ত থেকে উপগ্রহের চিহ্ন দ্রুত মুছে ফেলা সম্ভব হলে খুব দারুণ হত। কিন্তু কাজটা মোটেও সহজ নয়। দূর আকাশের ছবির উপরে উপগ্রহের চলাচলের দাগ পড়ে যায়। পরবর্তীতে ছবিকে শতভাগ ঠিক করা সম্ভব হয় না। আবার ছবি ঠিক করতে গিয়ে দূরের মৃদু ছায়াপথের আলো বিকৃত হয়ে যায়। 


এসব সমস্যা সমাধানের জন্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উপগ্রহের চলার পথ এড়িয়ে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেন। বা উপগ্রহ ক্যামেরা সামনে চলে এলে শাটার বন্ধ করে দিতে পারেন। এটা করতে গেলে হাজার হাজার উপগ্রহের সঞ্চার পথের খোঁজ রাখতে হবে। বাস্তবে যা অসম্ভবের নামান্তর। 


তবে চাইলে উপগ্রহের অপারেটররাও সমাধানে কাজে লাগতে পারেন। দৃশ্যমান আলোর টেলিস্কোপের জন্য সমাধান হতে পারে উপগ্রহকে অন্ধকার করে রাখা, চলার পথকে টেলিস্কোপের দৃষ্টির আওতার বাইরে রাখা, নিষ্ক্রিয় উপগ্রহকে কক্ষপথ থেকে বের করে দেওয়া ইত্যাদি। অনেকক্ষেত্রেই বাস্তবে এমন সহায়তা করেছেনও তারা। 


আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতিও ব্যাপারটা সমধানের প্রয়াস চালাচ্ছে। সাথে যুক্ত হয়েছে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন। তৈরি হয়েছে সিপিএস নামে একটি কেন্দ্র। যার সংক্ষিপ্ত নাম সেন্টার ফর প্রোটেকশন অব ডার্ক অ্যান্ড কোয়াইট স্কাই। বর্তমানে সক্রিয় ও আসন্ন উপগ্রহের ক্ষতিগুলো কেন্দ্রটি তুলে ধরছে। দেখা যাচ্ছে, এখনই আকাশে ২,৯৯৪টি উপগ্রহপুঞ্জ* (স্যাটেলাইট কন্সটেলেশন) আছে।  আরও ৪ লক্ষ ৩১ হাজার যুক্ত হবার অপেক্ষায় আছে! চার বছর আগে স্পেসএক্স ৬০টি স্টারলিংক উপগ্রহ নিক্ষেপের পর খুব দ্রুত বাড়ছে উপগ্রহের সংখ্যা।  


 ইএসওর বিজ্ঞানীরাও এয়ার অ্যান্ড স্পেস ল' জার্নালের এক নিবন্ধে তাদের উদ্বেগগুলো তুলে ধরেছেন। ইএসওর হিসাব বলছে, ভবিষ্যতে খালি চোখেই ১০০টি পর্যন্ত উপগ্রহ খালি চোখে দেখা যাবে। ভাবুন তাহলে রাতের আকাশ কতটা বদলে যাবে। আর যাদের পেশাই উপগ্রহের অপর পাশের বস্তু দেখা, তাদের যে কী বেহাল দশা হতে যাচ্ছে!


তারাও চেষ্টা করছেন যাতে উপগ্রহ ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা একে অপরকে বাধাগ্রস্থ না করেই এগিয়ে যেতে পারে। কারণ দিন শেষে একে অপরকে কাজে লাগবেই। 


* উপগ্রহপুঞ্জ: একই উদ্দেশ্যে কাজ করা প্রায় একই রকম দেখতে এক গুচ্ছ উপগ্রহ 

লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত

তথ্যসূত্র: কিউটি ডট ইউ, হার্ভার্ড ডট এজু, ইউসিএস স্যাটেলাইট ডেটাবেজ, ইএসএ ডট ইন্ট, আর্থস্কাই ডট অর্গ 

  1.     https://qt.eu/discover-quantum/applications-of-qt/how-your-smartphone-uses-quantum-mechanics/
  2.     https://www.hup.harvard.edu/index-maint.html?isbn=9780674975910
  3.     https://www.ucsusa.org/resources/satellite-database
  4.     https://www.esa.int/ESA_Multimedia/Images/2020/03/Low_Earth_orbit
  5.     https://earthsky.org/space/how-satellites-harm-astronomy-whats-being-done

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২

পৃথিবী থেকে এত দূরের একটা জিনিস খালি চোখেই দেখা যায়! কী অসাধারণ ও অকল্পনীয় ব্যাপার। ভাবতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শিহরণ নেমে যায়। তাই তো অ্যানড্রোমিডা হয়ে ওঠেছে গল্প-কবিতার উপদান।


বলা হয়ে থাকে, খালি চোখে দেখা সম্ভব সবচেয়ে দূরের বস্তু এই অ্যানড্রোমিডা। যদিও আকাশ ও দৃষ্টি ভাল থাকলে ট্রায়াংগুলাম গ্যালাক্সিও দেখা যায়। অ্যানড্রোমিডার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। আর ট্রায়াংগুলামের ২৭ লাখ।

প্রতিবেশী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা

চলুন দেখে নেই, রাতের আকাশে কখন কীভাবে খুঁজে পাব অ্যানড্রোমিডাকে

দেখার জন্যে প্রথমেই লাগবে একটি অন্ধকার আকাশ। কৃত্রিম আলোর ঝলক যেখানে থাকবে না। দেখার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। এ সময় উত্তর গোলার্ধের সন্ধ্যার পূর্ব আকাশেই দেখা দেয় ছায়াপথটা। মধ্যরাতের দিকে প্রায় মাথার উপরের দিকে চলে আসে।
 
ছায়াপথটা খুঁজে পাওয়ার দুটি পথ আছে। একটি হলো ক্যাসিওপিয়ার মাধ্যমে। আরেকটি পেগাসাস বা পঙখীরাজ তারানকশার মাধ্যমে।

অক্টোবর মাসের দিকে উত্তর আকাশে ইংরেজি এম বা ডাব্লিউ (W) আকৃতির ক্যাসিওপিয়া খুব সহজেই দেখা যায়। এটা একটা তারামণ্ডল। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার নাম শেডার। এই তারাটিই আপনাকে অ্যানড্রোমিডার দিকে নিয়ে যাবে। ছায়াপথটা আছে একই নামের তারামণ্ডলের মধ্যেই।

পেতে অসুবিধা হলে শেডার নক্ষত্রের সাথে পাশের দুটি নক্ষত্র নিয়ে একটা ত্রিভুজ বানান। এবার শেডার ত্রিভুজের যে শীর্ষে আছে সেদিকে ত্রিভুজের দৈর্ঘ্যের তিনগুণ যান।


ক্যাসিওপিয়া থেকে অ্যানড্রোমিডা
তারা পরিচিতি: শেডার

অ্যানড্রোমিডাকে আরেকভাবেও খুঁজে নেওয়া যায়। এজন্য আপনাকে বের করতে পেগাসাস ঘোড়ার বিশাল বর্গচিত্রটি। এর আলফেরাজ তারাটি পেগাসাসের সাথে অ্যানড্রোমিডাকে যুক্ত করেছে। এবার খুঁজে নিন মাইরাক ও মিউ অ্যানড্রোমিডা তারা দুটি। মাইরাক থেকে মিউর দিকে দাগ টেনে এদের দূরত্বের সমান গেলেই পেয়ে যাবেন অ্যানড্রোমিডা


পেগাসাস থেকে অ্যানড্রোমিডা

Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০

দেখলে মনে হবে অনিন্দ্য সুন্দর বাহারি এক প্রজাপতি বুঝি ডানা মেলে আছে। নীল, রক্তিম ও লালে গড়া তার দেহখানা। দেখে মনে হবে, ডানা দোলাতে দোলাতে তারার জগতকে পেরিয়ে যাচ্ছে বুঝি। 


মহাজাগতিক প্রজাপতি


এই দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতিটি আছে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আর আসল পরিচয়? একটি গ্রহ নেবুলা। লোহিত দানব নক্ষত্রদের জীবনের অন্তিম দশায় এদের থেকে নির্গত আয়নিত, জ্বলজ্বল করা ও প্রসারণশীল গ্যাসকে বলে গ্রহ নেবুলা (planetary nebula)। ছবিটি তুলেছে ইউরোপিয়ান স্পেস অবজারভেটরি (ESO)। ব্যবহার করা হয়েছে চিলিতে অবস্থিত  ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ। 


আরও পড়ুন

☛ এক আলোকবর্ষ কত বড়?

☛ গ্রহ নেবুলা কীভাবে তৈরি হয়? 


প্রজাপতিটির ভারিক্কি নাম এনজিসি ২৮৯৯। অবস্থিত দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে। পৃথিবী থেকে ৩,০০০ থেকে ৬,৫০০ আলোকবর্ষ দূরে। 


বয়স বেশিদিন হয়নি। নক্ষত্রের চারপাশে যে গ্যাসের যে খোলস আছে সেটা অতিবেগুনি আলোয় জ্বলে ওঠে। এভাবেই গ্যাসগুলো হয়ে ওঠে উজ্জ্বল। তবে কাজটি খুব বেশিদিন ধরে ঘতে না। মাত্র কয়েক হাজার বছর। তীব্র বিকিরণের ধাক্কায় এরপরেই ভেঙে যায় গ্যাসের কণাগুলো। 


সূত্র: সিএনএন 

Category: articles

সোমবার, ৪ মে, ২০২০

রানিং চিকেন নেবুলা। সূত্র: নাসা অ্যাপড

হ্যাঁ, ছবিটা দেখলে অনেকের কাছেই মনে হবে একটি চিকেন দৌড়াচ্ছে বুঝি! তবে অনেকের কাছেই এটি আবার একটি নেবুলা। বাংলায় যাকে বলে নীহারিকা। যেখানে তৈরি হয় নতুন নতুন নক্ষত্ররা। নেবুলাটি আইসি ২৯৪৪ নামে নথিবদ্ধ আছে। এর বিস্তৃতি প্রায় ১০০ আলোকবর্ষ। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ৬ হাজার আলোবর্ষ। আকাশের Centaurus বা মহিষাসুর তারামণ্ডলের দিকে তাকালে পাওয়া যাবে একে। 
Category: articles

বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯


নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, চেহারা মাছের মাথার মতো বলেই এই নাম হয়েছে এর। তবে সবার কাছে তেমন মনে নাও হতে পারে। নেবুলা মানেই নতুন নক্ষত্র তৈরির কারখানা। আর এই নেবুলাটার অবস্থান উত্তর আকাশে। ক্যাসিওপিয়া তারামণ্ডলীতে। পাশেই আছে তারা তৈরির আরেকটি উর্বর কারখানা। হার্ট নেবুলা। এছাড়াও আছে বিখ্যাত ডাবল স্টার ক্লাস্টার। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে তারা তৈরির এক উর্বর অঞ্চল। নেবুলাটির দূরত্ব মাত্র ৬ হাজার আলোকবর্ষ।

সূত্র: অ্যাস্ট্রোনমি পিকচার অব দ্য ডে (নাসা)
Category: articles

শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮

রাতের আকাশে খালি চোখে পাঁচটি গ্রহ দেখা যায়। বুধ, শুক্র (শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা হিসেবে), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। তবে একই সাথে সবগুলো গ্রহকে সাধারণত দেখা যায় না। চারটি দেখাও বেশ ভাগ্যের ব্যাপার বটে!


এমন ব্যাপারই ঘটছে এ মাসেও। গত মাসটাও প্রায় এমন ছিল। এক সাথে চারটি উজ্জ্বল গ্রহ। শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সন্ধ্যার পরই আকাশের পশ্চিম, ও দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশকে রাঙিয়ে রাখে চারটি গ্রহের মিলনরেখা।

শুক্র
চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। এছাড়া এ মাসে গ্রহটি একটু বেশিই উজ্জ্বল। মাসের শুরুতে সন্ধ্যার দেড় ঘণ্টা পরেও থাকছে দিগন্তের উপরে। তবে মাসের শেষের দিকে থাকবে মাত্র এক ঘণ্টা। মাসের ২১ তারিখে শুক্র সবচেয়ে উজ্জ্বল হবে।

আরও পড়ুন
☛ শুকতারার পরিচয়

আগস্ট মাসের ২৮ তারিখের সন্ধ্যার আকাশ।
সূত্র: Stellarium
বৃহস্পতি
গ্রহরাজও এ মাসে দারুণ উজ্জ্বল। এমনিতেই এটি যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও উজ্জ্বল। শুধু শুক্রর কাছেই এর হার। তবে এ বছর মঙ্গলে কারণে এটি একটি পিছিয়ে পড়ল। পৃথিবীর খুব কাছে এসে পড়ায় এ মাসের ৭ জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর— এই দুই মাস মঙ্গল উজ্জ্বলতায় বৃহস্পতির চেয়ে এগিয়ে ছিল।

আরও পড়ুন
☛ গ্রহ-নক্ষত্রদের কে কত উজ্জ্বল কীভাবে বুঝবেন?
এক নজরে বৃহস্পতি

মাসের শুরুতে সন্ধ্যার প্রায় তিন ঘণ্টা আর মাসের শেষের দিকে প্রায় দুই ঘণ্টা পরে অস্ত যাবে বৃহস্পতি।

মঙ্গল
বর্তমান সময়ে লাল গ্রহটিকে সন্ধ্যার আকাশে খুব সহজে দেখা যায়। এক দিকে লাল বলে এমনিতেই নজরে পড়ে সহজে। তাও আবার এখন উজ্জ্বলতায় বৃহস্পতির সাথে দিচ্ছে টেক্কা। তবে দ্রুতই অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ছে বেচারা। মাসের শুরুতে এটি শনির দশগুণ উজ্জ্বল হলেও মাসের শেষে থাকছে মাত্র ৫ গুণ উজ্জ্বল।

আরও পড়ুন
মঙ্গল গ্রহ লাল কেন?

শনি
শনিকে দেখা যাচ্ছে মঙ্গল ও বৃহস্পতির প্রায় মাঝে। ডুববে প্রায় মধ্য রাতে।

গত মাসের ছবি
শুক্র, চাঁদ ও চাঁদের প্রতিফলনের ছবি। ছবিটা তোলা পর্তুগালে। তুলেছিলেন হেনরিক ফেলিচিয়ানো সিলভা। সূত্র: Earthsky.org। 
আরও পড়ুন
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প

সুত্র:
১। Earthsky.org
২। Stellarium
Category: articles

শুক্রবার, ১১ মে, ২০১৮

সপ্তর্ষিমণ্ডলীর ৭টি প্রধান তারাকে আমরা বলছি সপ্তর্ষি। এদের সবগুলো উজ্জ্বলতায় প্রায় সমান।
 সেটা জানার আগে নামগুলো জেনে নেওয়া যাক।

সপ্তর্ষির তারাগুলো। ইংরেজি নামসহ জানতে এখানে ক্লিক করুন। 
মনে রাখতে হবে, সপ্তর্ষি কিন্তু সব সময় এ অবস্থায় থাকে না। এটি উত্তর আকাশের তারাভুজ। উত্তর পূর্ব আকাশে থাকলে ক্রতু ও পুলহ তারা থাকবে উপরের দিকে। আবার উত্তর পশ্চিম আকাশে এই দুটি তারা থাকবে নীচের দিকে।

ওপরের ছবিতে যেমন দেখানো আছে, এর আকার এমন দেখা যায় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের সন্ধ্যার আকাশে। প্রায় বরাবর উত্তর আকাশে। তার আগের তিন মাস থাকে উত্তর-পশ্চিম আকাশে।

আরও পড়ুন
☛ সপ্তর্ষিমণ্ডলীর খোঁজে

তারাগুলো বিভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত হলেও এদের আপাত উজ্জ্বলতা প্রায় সমান। কারণ, অপেক্ষাকৃত দূরের তারাগুলো এক্ষেত্রে আসলে বেশি দীপ্তিময়। মানে অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি বেশি।

আপাত উজ্জ্বলতা 
আর দূরত্ব কেমন দেখা যাক,
দূরত্ব (আলোকবর্ষে
আরও পড়ুন
☛ দিক নির্ণয়ে ধ্রুব তারা 
Category: articles

রবিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৮

জ্যোতির্বিদ্যায় জ্যামতিক কোণের পরিমাপ বিভিন্ন কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধ্রুবতারা দেখে কোনো স্থানের অক্ষাংশ জানা যায়। ধ্রুবতারা সব সময় উত্তর আকাশে থাকে। এটি উত্তর দিগন্ত থেকে যত ডিগ্রি ওপরে থাকবে, ঐ জায়গার অক্ষাংশ হবে ঠিক তত। হ্যাঁ, বিষুব রেখার দক্ষিণের এলাকায় এই কৌশল কাজে আসবে না। কারণ ধ্রুবতারা থাকবে দিগন্তেরও নীচে!

উত্তর আকাশে ধ্রুবতারা থাকে অক্ষাংশের সমান কৌণিক উচ্চতায় 

এখন, ধ্রুবতারা দেখে অক্ষাংশ নির্ণয়ের জন্যে কোণ ও কোণের পরিমাপ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। আরও নানা কারণে কোণের পরিমাপ বুঝতে হয়। যেমন এক তারা দিয়ে আরেক তারা খুঁজে পেতে তারাদের কৌণিক দূরত্ব বুঝতে হয়।

আরও পড়ুন
☛ খালি হাতে আকাশ মাপুন
☛ দিক নির্ণয়ে ধ্রুবতারা

দুটো সরলরেখার মিলনেই তৈরি হয় কোণ। যেমন নীচের OA এবং OB রেখাদ্বয় ৫৫ ডিগ্রি কোণ তৈরি করেছে। আবার OA এবং OC রেখা তৈরি করেছে ৯০ ডিগ্রি কোণ। ৯০ ডিগ্রি কোণের অপর নাম সমকোণ। সমকোণের দেখা আমরা পাই হরদম। ভূমি থেকে একটি গাছ খাড়া ওপরে উঠলে গাছ ও ভূমি তৈরি করে সমকোণ। ঘরের পূর্ব ও উত্তর দিকের দেয়ালের মিলন তৈরি করে সমকোণ। আপনি যদি পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকেন, তবে ৯০ ডিগ্রি ডানে ঘুরলে পাবেন দক্ষিণ। পশ্চিম থেকে ৯০ ডিগ্রি ডানে ঘুরলে পাবেন উত্তর।
দুই রেখার মিলনে হয় কোণ 
আরও পড়ুন
সূর্য দেখে দিক নির্ণয়

একটিমাত্র রেখার যেকোনো এক বিন্দুতে কোণ মাপ পরিমাপ করলে হবে দুই সমকোণ বা ১৮০ ডিগ্রি। পূর্ব ও পশ্চিম দিক বরাবর একটি রেখা কল্পনা করলে পাওয়া যাবে ১৮০ ডিগ্রি। বৃত্তাকার পথে ১৮০ ডিগ্রি পথ ঘুরলে একটি অর্ধবৃত্ত তৈরি হবে। যেমনটা হয়েছে নীচের ছবিতে। দুইজন মানুষ উল্টো দিকে হাঁটতে থাকলে বলা যায়, তারা ১৮০ ডিগ্রি কোণে হাঁটছে। কেউ আগের কথা থেকে সরে এসে বিপরীত কথা বললে আমরা বলি, "১৮০ ডিগ্রি উল্টো বলছেন এখন?"  

১৮০ ডিগ্রি বা দুই সমকোণ 
তার মানে পুরো বৃত্ত ঘুরে এলে হবে ৩৬০ ডিগ্রি বা চার সমকোণ।
বিভিন্ন রকম কোণ।
ছবির সূত্রঃ ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান্তা বারবারা  

কোণের পরিমাপ
কোণের আন্তার্জাতিক এককের নাম রেডিয়ান। তবে সাধারণ মানুষের কাছে এই হিসাব জনপ্রিয় নয়। আমরা চিনি ডিগ্রি। এক রেডিয়ান হলো ৫৭ দশমিক ৩ ডিগ্রির সমান। জ্যোতির্বিদ্যায় নানা সময় ডিগ্রিকে আরও ছোট করে পরিমাপের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এটা দুইভাবে করা যায়। একটি হলো দশমিক পদ্ধতি। যেমন ৩০.৫ ডিগ্রি মানে ৩০ ডিগ্রি ও আরও এক কোণের অর্ধেক। তবে আরেকটি সুবিধাজনক উপায়ও আছে।

ডিগ্রির অপেক্ষাকৃত ছোট এককগুলোর নাম হলো মিনিট ও সেকেন্ড। না, এখানে সময়ের কথা বলছি না। এক ডিগ্রিকে ৬০ ভাগ করলে তার প্রতি অংশের নাম এক মিনিট। আবার এক মিনিটকে ৬০ ভাগ করলে প্রতি ভাগের নাম হয় এক সেকেন্ড। হ্যাঁ, সময়ের সাথে এখানটা মিলে গেছে! ভাগগুলোকে যথাক্রমে আর্কমিনিট (ডিগ্রির ৬০ ভাগের এক ভাগ) ও আর্কসেকেন্ডও (মিনিটের ৬০ ভাগের এক ভাগ) বলে।

যেমন ৪০.১৮৭৫ ডিগ্রি কোণকে এভাবেও লেখা যায়: ৪০ ডিগ্রি ১১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড। একে এভাবেও লেখা হয়: ৪০° ১১′ ১৫″।
Category: articles

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

আলডেবারান রাতের আকাশের ১৪তম উজ্জ্বল নক্ষত্র।
একে চেনার ভালো একটি মাস জানুয়ারি। সন্ধ্যা নামলেই পূর্ব দিগন্তের বেশ ওপরে দেখা যাবে একে। তাকাতে হবে প্রায় সোজা পূর্ব দিকে। পরের মাসগুলোতে আস্তে আস্তে ওঠে আসবে মাথার ওপরের দিকে। এপ্রিল মাসের দিকে সন্ধ্যার  পশ্চিম আকাশে চলে আসবে। পরের কয়েক মাস দেখা কঠিন হবে।

আলডেবারানকে নিশ্চিত করে চেনার জন্যে কাজে লাগবে আদম সুরতের (কালপুরুষ) এর তিন তারা। আদম সুরতের মাঝখানের কোমরের তিনটি তারাকে যোগ করে ডান দিকে বাড়িয়ে দিলেই পেয়ে যাবেন নক্ষত্রটি।

আর তিন তারা থেকে যদি বাম দিকে যান, তাহলে পাবেন লুব্ধক। রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র।

আদম সুরত থেকে আলডেবারান
আরও পড়ুনঃ
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

আপনারা আকাশে কখনও কি আলোর নৃত্য দেখেছেন? অনেকেই হয়তো ভাবছেন আতোশবাজি বা অন্যান্য জিনিসের কথা। কিন্তু প্রকৃতি যে নিজেই আলোর নৃত্য দেখায়। এরই নাম অরোরা (Aurora)। আলোর এই নাচন চোখে পড়ে সাধারণত পৃথিবীর দুটি মেরু অঞ্চলে। সুমেরু (Arctic) ও কুমেরুর (Antarctic) আকাশে। 

মেরু অঞ্চলে সৃষ্ট অরোরা 

অরোরা শব্দতি এসেছে ল্যাটিন থেকে। অর্থ Sunrise বা সূর্যোদয়। এই মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা (Polar aurora) পৃথিবীর দুই মেরুর  আকাশে ঘটে যাওয়া এক নৈসাদৃশ্য ঘটনা। উত্তরে মেরুতে ঘটলে নাম হয় সুমেরু প্রভা (Northern Lights বা Auorora Borealis),আর দক্ষিণ মেরুতে এরই নাম কুমেরু প্রভা (Southern Lights বা Aurora Australis)। 

এই অরোরা দেখতে আপ্রাকিতিক দৃশ্য বলে একে এক রহস্যময় শক্তি বলে বিবেচনা করা হত। অধিকাংশ মানুষই একে স্বর্গীয় আলো মনে করত। অনেকে আবার একে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা মনে করত। সবুজ রঙের প্রভাকে তারা ভাবতো তাদের ভবিষ্যতের সুখের আভাস। আর এর রঙ লাল হলেই তাদের মনে হত ভবিষ্যৎ হবে দুর্যোগময়। লোহিত মেরুপ্রভাকে যুদ্ধের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখা হত।

অরোরা দেখতে অনেকটা অনেকগুলো সমান্তরাল আলোক রশ্মির মতো, যা একটির পর একটি করে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে তৈরি করে আলোক পর্দার মতো। প্রতি মুহূর্তে হতে থাকে স্থানান্তরিত। রাতের বেলা মনে হয় অনেকগুলো সমান্তরাল আলোক রশ্মি পৃথিবীর বুকে নেমে আসছে। মূলত এই আলোক পর্দাই প্রতিনিয়ত স্তানন্তরিত হতে থাকে। আর এটা মনে হয় যেন পৃথিবীর বুকে সমুদ্রের ঢেউ খেলছে। এই অরোরা বিভিন্ন রঙের হতে পারে।


অরোরা তৈরির কারণঃ

সূর্য প্রতিনিয়তই পৃথিবীর চারদিকে বিভিন্ন চার্জিত কণা নিক্ষেপ করছে, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। সূর্যের এই চার্জিত কণার প্রবাহকেই বলে সৌরবায়ু (solar wind)। কিন্তু সৌভাগ্যের ব্যাপার হল, আমাদের পৃথিবীতে রয়েছে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র (Magnetic field) । এটি দক্ষিণ মেরু থেকে উত্তর মেরুতে প্রবেশ করছে। সূর্য থেকে যখন এসব আয়নিত কণা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তখন এরা পৃথিবীর আয়োনিত চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই তা ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু মেরু অঞ্চল যেখানে চৌম্বক ক্ষেত্র একদম কম সেখানে এই আয়নিত কণাগুল প্রবেশের সুযোগ পায় এবং এ অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনকে আঘাত করে। তখন এদের পরমাণু উত্তেজিত হয় এবং কিছুক্ষণ পরেই শক্তি বিকিরন করে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। আর এই বিকিরণই আমরা দৃশ্যমান আলোতে দেখতে পাই। আর এটাই হল অরোরা। 

অরোরায় আলোর নাচন 

বায়ুমণ্ডল আছে এমন কোনো গ্রহে যদি দ্রুতগতির চার্জিত কণা প্রবেশ করে তবেই মেরুপ্রভা সৃষ্টি হবে। সৌরবায়ু যেহেতু সকল গ্রহেই পৌঁছে, তাই সব গ্রহেই অরোরা বা মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয়। তবে গ্রহভেদে এদের রুপ ভিন্ন। শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র বিশিষ্ট শনি ও বৃহস্পতি গ্রহে পৃথিবীর ন্যায়
মেরু অঞ্চলে অরোরা উৎপন্ন হয়। শুক্রের মতো গ্রহের ক্ষেত্রে যেখানে উল্লেখযোগ্য চৌম্বকক্ষেত্র নেই, সেখানে অনিয়মিত প্রভা উৎপন্ন হয়। যে সকল গ্রহের চৌম্বক অক্ষ এবং ঘূর্ণন অক্ষ এক নয়
(যেমন ইউরেনাস ও নেপচুন), সেখানে বিকৃত (Distorted) মেরুপ্রভ অঞ্চল সৃষ্টি হয়। 

আজকের ছবিঃ বৃহস্পতির অরোরা
বৃহস্পতি গ্রহে সৃষ্ট অরোরা 
Category: articles

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি ইতোপূর্বে ব্যাপন ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।]

অ্যানড্রোমিডার বিস্ময়কর কিছু কথা জানব। তবে, আগে সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

আপনারা কি আকাশে কখনো  ছায়াপথ (Galaxy) দেখেছেন? হয়ত বা দেখে থাকলেও থাকতে পারেন! রাতের আকাশে যে শুধু তারকাই দেখা যায় না, তার আরেক উদাহরণ হল অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি। আমাদের মিলিওয়েতে গ্যালাক্সি যেমন সূর্যসহ অসংখ্য নক্ষত্রের বাস, তেমনি বহু নক্ষত্রে গড়া (নেবুলাসহ আরো বিভিন্ন পদার্থের পাশাপাশি) আরেকটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ হল অ্যানড্রোমিডা। 

অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি

অ্যানড্রোমিডা একটি সর্পিলাকার ছায়াপথ (spiral galaxy)। অবস্থান অ্যানড্রোমিডা তারামণ্ডলে। অপর নাম মেসিয়ার ৩১ বা এম৩১ (M31), জ্যোতির্বিদ চার্লে মেসিয়ে এর নাম অনুসারে। একে আবার অনেক সময় গ্রেট নেবুলাও বলা হত। বড় ছায়াপথদের মধ্যে অ্যানড্রোমিডা হল আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে নিকটবর্তী ছায়াপথ। নাম রাখা হয়েছিল পৌরাণিক রাজকুমারী অ্যানড্রোমিডার নাম অনুসারে। লোকাল গ্রুপ নামের প্রায় ৫৪টি গ্যালাক্সির একটি গুচ্ছের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। আমাদের মিল্কিওয়ে হল লোকাল গ্রুপের দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য। 

প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ কোটি) নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি। এই ছায়াপথটি আমাদের থেকে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ব্যাস প্রায় ২২০,০০০আলোকবর্ষ, যেখানে আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ের ব্যাস ১০০,০০০ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ এর সাইজ আমাদের মিল্কিওয়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সেদিক থেকে বিচার করলে আমাদের মিল্কিওয়ের ভর অনেক বেশি।

আরও পড়ুনঃ

সাতটি সর্পিল বাহু বিশিষ্ট এই ছায়াপথটির নিউক্লিয়াসের সাথে সংযুক্ত আছে দুটি বাহু । বাকী পাঁচটি সর্পিল বাহু অধিকার করে আছে অসংখ্য সৌরমন্ডলকে। এর নিউক্লিয়াস তৈরী হয়েছে এক কোটি গোল নক্ষত্রগুচ্ছের (Globular Cluster) সমন্বয়ে। ছায়াপথটির ভেতরের অংশের পূর্ণ ঘূর্ণন সমাপ্ত হতে সময় লাগে ১১ মিলিয়ন বছর আর বাইরের অংশটুকু সমাপ্ত করে ৯০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছরে (১ মিলিয়ন সমান ১০ লাখ)।

কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আমাদের মহাবিশ্বে ছায়াপথের আসল সংখ্যা কত সেটা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না। কারণ, জ্যোতির্বিদরা যতই মহাবিশ্বের দিকে তাকাচ্ছেন, ততই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন ছায়াপথ। মহাবিশ্বের এখনও অনেক জায়গা আছে, যেটা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। কিছু কিছু জায়গা আছে, যা টেলিস্কোপ দিয়েও দেখা যায় না। তবু জ্যোতির্বিদদের হিসাব অনুসারে মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আনুমানিক ১০০ থেকে ২০০ বিলিয়ন (১ বিলিয়নে ১০০ কোটি)। 


অ্যানড্রোমিডা সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কথা জেনে নেওয়া যাকঃ 

১। মিল্কিওয়ে বনাম অ্যানড্রোমিডাঃ

লোকাল গ্রুপের গ্যালাক্সিদের মধ্যে সম্ভবত মিল্কিওয়ের ভর-ই সবচেয়ে বেশি। তবুও আনড্রোমিডা ছায়াপথেই নক্ষত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে, এতে নক্ষত্রের সংখ্যা মিল্কিওয়ের প্রায় দ্বিগুণ। সাইজেও এটিই বড়।


২। এক সময় আনড্রোমিডাকে নীহারিকা ভাবা হতঃ

যখন মহাবিশ্বের প্রকৃত পরিধি কেউ জানত না, তখন ধারণা করা হত, আমাদের মিল্কিওয়ে গালাক্সি-ই মহাবিশ্বের সব কিছু। অ্যানড্রোমিডা গালাক্সিকে এর ভেতরেই অবস্থিত বলে মনে করা হত, যাকে শুধুমাত্র একটা অস্পষ্ট দাগের মতো দেখা যেত। কিন্তু বিংশ শতকে অত্যন্ত শক্তিশালী টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে জানা গেল, এটি নিজেই আরেকটি গ্যালাক্সি। তার আগের টেলিস্কোপগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুসারে এটি ছিল মহাজগতিক ধূলোর মেঘ এবং শুধুমাত্র নক্ষত্র গঠনের উপাদানসমূহ এতে বিদ্যামান। এর মাধ্যমে তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল, বিশাল অ্যানড্রোমিডা একটা নীহারিকা মাত্র। নতুন তারকা তৈরির অঞ্চলকে বলা হয় নীহারিকা। 

৩। অ্যানড্রোমিডায় ব্ল্যাক হোল!

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, অ্যানড্রোমিডার শুধু কেন্দ্রেই ২৬ টির মতো ব্ল্যাক হোল আছে। এছাড়াও চন্দ্র এ-ক্সরে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সাহায্যে আরো অনেকগুলো ব্ল্যাক হোল খুঁজে পাওয়া গেছে। আমাদের ছায়াপথের মতোই অ্যানড্রোমিডার কেন্দ্রে একটি বিশাল ব্লাকহোল আছে। আরও দুটি যুগল ব্ল্যাক হোল একে অপরকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। এদের ভর সূর্যের প্রায় ১৪ কোটি গুণ।

আরো পড়ুনঃ
ব্ল্যাক হোলের পরিচয়

৪। ইতিহাসঃ

এই গ্যালাক্সিটি আবিস্কার করেছিলেন পারস্যের এক মুসলমান জ্যোতির্বিদ আব্দুর রহমান আস-সুফি। ৯৬৪ সালে তিনি গ্যালাক্সিটি পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু সেই সময়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে মানুষের ধারণা না থাকায় তিনি `তার "Book of Fixed Stars" গ্রন্থে এর নাম দেন 'Small Cloud' বা 'ক্ষুদ্র মেঘ'। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে, মিল্কিওয়ে-ই হল মহাবিশ্বের একমাত্র ছায়াপথ। অ্যানড্রোমিডাকে গ্যালাক্সিকে তখন মনে করা হত নীহারিকা। কিন্তু এডউইন হাবলের সম্প্রসারণ তত্ত্ব
পাওয়ার পর জানা গেল, মিল্কিওয়ে আসলে মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র। অ্যানড্রোমিডাকে মেসিয়ার -৩১ নামকরণ করেন বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ে, ১৭৬৪ সালে। তবে তিনি এর আবিস্কারের কৃতিত্ব দিতে চেয়েছিল জার্মান জ্যোতির্বিদ সাইমন মারিয়াসকে। বর্তমানে অবশ্য আব্দুর রহমান আস-সুফিকে এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। 

৫। মিল্কিওয়ের সাথে সংঘর্ষঃ

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, কয়েকশ কোটি বছরের মধ্যেই এটি আমাদের গ্যালাক্সির উপর এসে পড়বে। দুটো মিলে বড় একটি উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সিতে পরিণত হবে। যদিও মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবে প্রসারিত হচ্ছে, তবুও কাছাকাছি অবস্থিত এই দুটি গ্যালাক্সি মহাকর্ষের আকর্ষণ এড়াতে পারছে না। এরা প্রতি সেকেন্ডে ৭৫ মাইল বেগে একে অপরের দিকে ধেয়ে আসছে।
ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।  তত দিন আমরা থাকব না। আর আসলে ঐ সংঘর্ষে নক্ষত্রদের মতো ছোট জায়গায়ও বড় কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।

আনড্রোমিডা সম্পর্কে  একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল, এটি আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি। এটি হল, বামন ক্যানিস ম্যাজর
আরো পড়ুনঃ
☛ আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সি কোনটি? 


সূত্রঃ
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Andromeda_Galaxy
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Milky_Way
Category: articles

বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬

দুইটি গ্রহের উজ্জ্বলতা এ মাসে চোখে পড়ার মতো। শুক্র বৃহস্পতি। দুই জন আকাশের দুই প্রান্তে আলো ছড়াচ্ছে। শুক্র পশ্চিম আকাশে, আর বৃহস্পতি পুবাকাশে। শুক্র আছে সন্ধ্যার আকাশে, আর বৃহস্পতি ভোরে। নভেম্বরের শুরুতে আরও দুই গ্রহ- মঙ্গল ও শনি ক্রমেই চলে আসছে শুক্রের দিকে। বিস্তারিত জেনে নিই।

ফটোঃ Predrag Agatonovic

শুক্রঃ 
শুক্রকেই আমরা সন্ধ্যাতার বলি। ভোরের আকাশে থাকার সময় একেই আমরা বলি শুকতারা। তবে আপাতত এটি আছে শুধু সন্ধ্যার আকাশেই। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তু এটি। উজ্জ্বল যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও।

আরও পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প

এ মাসে শুক্র ক্রমেই দিগন্তের উপরে উঠতে থাকবে। অর্থ্যাৎ, সন্ধ্যার একই সময়ে তাকালে একে তুলনামূলকভাবে দিগন্তের উপরে দেখা যাবে। মাসের শুরুতে সন্ধ্যার প্রায় দুই ঘণ্টা পরেই অস্ত গেলেও মাসের শেষে অস্ত যাবে প্রায় তিন ঘণ্টা পর।

সন্ধ্যার আকাশে শুক্র ও অন্যান্য গ্রহ 
মঙ্গলঃ
মে, জুন মাসে মঙ্গল ছিল গ্রহদের মধ্যে সেরা। কিন্তু এখন এক দিকে নিজেই তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে। আবার শুক্রও ফিরে এসেছে সদর্পে। দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে তাকালে শুক্র থেকে কিছুটা ওপরে চোখে পড়বে লাল এই গ্রহটিকে। পুরো মাসই রাতের প্রায় ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এটি থাকবে পশ্চিমের আকাশে। আগামী বছর জুলাই মাসে মঙ্গল সন্ধ্যার আকাশ থেকে চলে আসবে ভোরের পুবাকাশে।

শনিঃ
আমরা খালি চোখে দেখতে পারি এমন বস্তুদের মধ্যে শনি সবচেয়ে দূরের জিনিস। গ্রহটি এ মাসে ক্রমেই দিগন্তের দিকে হারিয়ে যাচ্ছে। মাসের শেষ দিকে এটি সূর্যাস্তের প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই ডুবে যাবে।

বৃহস্পতিঃ
কিছু দিন সূর্যের আভায় চাপা পড়ে গত মাসে বৃহস্পতি ভোরের আকাশে হাজির হয়েছিল। ভোরের দিকে পুবাকাশে তাকালেই দেখা যাবে। ঐ দিকের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তুটিই এটি। ভুল হওয়া তাই এক প্রকার অসম্ভব। মাসের শুরুতে সূর্যোদয়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে উদিত হলেও মাসের শেষ দিকে উদিত হবে চার ঘণ্টা আগে।

বুধকে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। এটি আমাদের সাথে সব সময় লুকোচরি খেলতে থাকে। অক্টোবরের ২৭ তারিখে এটি সন্ধ্যার আকাশে ফিরে এসেছিল। কিন্তু এ মাসের পুরোটাই সূর্যের আলো একে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এটি সব সময় সূর্যের কাছাকাছি সময়ে উদয় অস্ত ঘটায় বলেই এ অবস্থা।


সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/astronomy-essentials/visible-planets-tonight-mars-jupiter-venus-saturn-mercury
Category: articles

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

গ্রহদের সম্পর্কে মৌলিক কিছু কথা জেনে নিই এ মাসে।  আমাদের সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আট হলেও আমরা খালি চোখে দেখতে পাই পাঁচটিকে। এরা হল বুধ, শুক্র (একেই আমরা আদর করে শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা বলে ডাকি অনেক সময়), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সব সময় এদের পাঁচজনকে একত্রে দেখা যায় না। গত সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ এদের সবাইকে এক সাথে (একই রাতে) দেখা গিয়েছিল।

Photo Credit:  Predrag Agatonovic


শুক্র গ্রহঃ

এ মাসে গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে শুক্র (সন্ধ্যাতারা), মঙ্গল ও শনিকে। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু শুক্র। সূর্য ডুবতে না ডুবতেই এটি হাজির হয়ে যাবে পশ্চিম আকাশে, সোজা পশ্চিম থেকে সামান্য দক্ষিণে। দৃষ্টিশক্তি খুব ভালো হলে একে সূর্য পুরোপুরি ডোবার আগেই দেখবে। মাসের শুরুতে এটি সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টা দিগন্তের উপরে থাকবে। সুখবর হল, দিন গড়াতে গড়াতে এ সময়ের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তার মানে তখন একে দেখতে পাবেন বেশি সময় ধরে।

আজকের আকাশঃ চাঁদ ও শুক্র গ্রহ
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তোলা ছবি। ক্রেডিটঃ আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ।
 
 
মঙ্গল ও শনি গ্রহঃ

শুক্র থেকে সামান্য বাঁয়ে ঘুরুন। দক্ষিণ- পশ্চিম আকাশে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে আরো দুটি উজ্জ্বল গ্রহ। এরা হল মঙ্গল ও শনি। মাসের ছয় তারিখে চাঁদ থাকবে শনির একটু উপরে। পরের দিন চাঁদ চলে আসবে শনি ও মঙ্গলের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থানে। মাসের শুরুতে শনি অস্ত যাবে সূর্যের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে। মাস পেরোতে পেরোতে এ সময় দ্রুত কমতে থাকবে। মাসের শেষে এটি সন্ধ্যার পরে দিগন্তের উপরে থাকবে এক ঘণ্টারও কম সময়।
তবে মঙ্গলকে দেখতে পাবেন আরো বেশি সময় ধরে। এটি প্রায় পুরো মাস জুড়েই সন্ধ্যার পরে চার ঘণ্টার মতো সময় পর্যন্ত আকাশে থাকবে। আগেই বলেছি, দূরবর্তী তারাদের সাপেক্ষে গ্রহরা কখনও পশ্চিমে আবার কখনোবা পূর্ব দিকে চলে। কয়েক রাত ধরে মঙ্গলের উপর চোখ রাখলেই বিষয়টি ধরে ফেলতে পারবেন। এই মঙ্গলের ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটি সবচেয়ে সহজে চোখে পড়ে। এমনকি মূলত মঙ্গলের চলাচল লক্ষ্য করেই জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্রাহে যে উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলেন তার ভিত্তিতেই জোহানেস কেপলার গ্রহদের গতি সূত্র বানিয়েছিলেন।


D:\articles\biggan chinta\sky-this-month\Oct 16\planets-oct-16-2.PNG
অক্টোবর মাসের চার গ্রহ এক সাথে


বুধ ও বৃহস্পতিঃ
অপর দুই গ্রহ বুধ ও বৃহস্পতির জন্যে এ মাসে তেমন কোনো সুখবর নেই। বুধকে মাসের শুরুতে ভোরের পূর্ব আকাশে কিছুক্ষণের জন্যে দেখা গেলেও দ্রুত সেটি সূর্যের আভার কাছে হারিয়ে যাবে। শেষ দিকে আর দেখাই যাবে না। বৃহস্পতিকে মাসের শুরুতে দেখাই যাবে না। তবে মাসের শেষের দিকে এটি সূর্যের এক ঘণ্টারও বেশি আগেই পূর্ব দিগন্তে হাজির হবে। ক্রমশ এ সময় বাড়তেই থাকবে। শুক্রের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু হল বৃহস্পতি। উজ্জ্বল গ্রহদের মধ্যে একেই একটানা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেখা যায়। আগামী মাসগুলোতে এটি ক্রমশ দ্রুত উদিত হতে থাকবে। নভেম্বরের শুরুতেই এটি সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা আগে উঠবে। ফলে আপাতত অনুজ্জ্বল হলেও বৃহস্পতির ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।

Category: articles