রাতের আকাশের পঞ্চম উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের আকাশে দ্বিতীয় উজ্জ্বল। স্বাতীর পরেই সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷ লাইরা বা বীণামণ্ডলে এর অবস্থান। স্বাভাবিকভাবেই মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাও এটিই৷ সূর্য থেকে দূরত্ব মাত্র ২৫ আলোকবর্ষ।
রাতের আকাশে অভিজিৎ নক্ষত্র। আগস্ট মাসে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। রাত নয়টার দিকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় মাথার ওপর। |
জ্যোতির্বিদরা অভিজিৎ নক্ষত্র নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন৷ এ কারণে সূর্যের পর একে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারাও বলেন অনেকে৷ সূর্যের পরে বর্ণালীর ছবি তোলা তারাও অভিজিৎ৷ প্যারালাক্স বা লম্বন পদ্ধতিতে দূরত্ব মাপা অন্যতম প্রথম তারাও এটি৷ খৃষ্টপূর্ব ১২,০০০ সালে তারাটি ছিল মেরু বা ধ্রুবতারা৷ আবারও হবে ১৩,৭২৭ বছর পরে৷ কারণ আর কিছুই নয়। পৃথিবীর মেরুরু আবর্তন৷ ঘুরন্ত লাটিমের মতো পৃথিবীও ঘুরতে ঘুরতে অক্ষ পাল্টায়৷
অভিজিৎ নক্ষত্রের বয়স সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ মজার ব্যাপার হলো এর জীবনকাল বাকিও আছে সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ এর কারণ অভিজিৎ সূর্যের ২.১ গুণ ভারী৷ ভারী নক্ষত্রদের জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এ কারণেই সূর্যের চেয়ে আগে প্রধান ক্রম দশা পার করবে অভিজিৎ৷ সবমিলিয়ে প্রধান ক্রম দশা প্রায় একশ কোটি বছর৷ তারাটা সেকেন্ডে ২৩৬ কিলোমিটার বেগে নিজের অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। ১২.৫ ঘণ্টায় একবার পুরোটা সম্পূর্ণ ঘোরা হয়ে যায়৷ এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই বিষুব অঞ্চল অনেকটা ফোলা। অভিজিৎ বিষম তারা। মানে উজ্জ্বলতা সবসময় এক থাকে না।
সামার ট্রায়াঙ্গল তারানকশার অন্যতম তারা অভিজিৎ |
বৈজ্ঞানিক নাম আলফা লাইরি৷ সাধারণত মণ্ডলের উজ্জ্বলতম তারার নাম হয় আলফা। সে হিসেবেই এই নাম৷ ইংরেজি নাম ভেগা (Vega)। শব্দটা এসেছে আরবি শব্দ ওয়াকি থেকে৷ যার অর্থ পড়ন্ত বা অবতরণকারী (ঈগল)৷ ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি তারাটার নাম ভেগা রাখে৷ বাংলা নামটি এসেছে ভগবত পুরাণ থেকে। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, নক্ষত্রদের মধ্যে তিনি হলেন অভিজিৎ৷
উত্তর গোলার্ধের আকাশে সহজেই দেখা যায়। দেখার সবচেয়ে ভাল সময় জুলাই-আগস্ট। আগস্টে রাত নয়টার দিকে প্রায় ঠিক মাথার ওপর থাকে তারাটা৷ সুপরিচিত তারানকশা সামার ট্রায়াঙ্গলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা অভিজিৎ৷ তিন তারা মিলে তৈরি করেছে একটি সমকোণ৷ আর সমকোণের শীর্ষেই আছে অভিজিৎ৷ পশ্চিম-উত্তর দিকে একটু গেলেই পাওয়া যাবে সপ্তর্ষি৷ একটু চেষ্টাতেই তাই অভিজিৎকে চিনে নেওয়া যাবে৷ আবার সপ্তর্ষি দিয়েও সহজেই একে খুঁজে পাওয়া যাবে৷ অভিজিতের বিষুব লম্ব +৩৮.৭৮। ফলে বাংলাদেশ থেকে দেখলে মাথার সোজা উপর থেকে প্রায় ১৫ ডিগ্রি উত্তর দিয়ে তারাটা রাতের আকাশে পশ্চিমে যেতে থাকে। দক্ষিণে সর্বোচ্চ ৫১ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা সম্ভব। তার দক্ষিণে গেলে আর দেখা যাবে না একে। অ্যান্টার্কটিকা বা এমনকি চিলি থেকেও তারাটা দেখা যাবে না।
সপ্তর্ষি ও ধ্রুবতারা দিয়ে অভিজিৎ খুঁজে নিতে পারেন |