Advertisement

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

আলডেবারান রাতের আকাশের ১৪তম উজ্জ্বল নক্ষত্র।
একে চেনার ভালো একটি মাস জানুয়ারি। সন্ধ্যা নামলেই পূর্ব দিগন্তের বেশ ওপরে দেখা যাবে একে। তাকাতে হবে প্রায় সোজা পূর্ব দিকে। পরের মাসগুলোতে আস্তে আস্তে ওঠে আসবে মাথার ওপরের দিকে। এপ্রিল মাসের দিকে সন্ধ্যার  পশ্চিম আকাশে চলে আসবে। পরের কয়েক মাস দেখা কঠিন হবে।

আলডেবারানকে নিশ্চিত করে চেনার জন্যে কাজে লাগবে আদম সুরতের (কালপুরুষ) এর তিন তারা। আদম সুরতের মাঝখানের কোমরের তিনটি তারাকে যোগ করে ডান দিকে বাড়িয়ে দিলেই পেয়ে যাবেন নক্ষত্রটি।

আর তিন তারা থেকে যদি বাম দিকে যান, তাহলে পাবেন লুব্ধক। রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র।

আদম সুরত থেকে আলডেবারান
আরও পড়ুনঃ
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬

আপনারা আকাশে কখনও কি আলোর নৃত্য দেখেছেন? অনেকেই হয়তো ভাবছেন আতোশবাজি বা অন্যান্য জিনিসের কথা। কিন্তু প্রকৃতি যে নিজেই আলোর নৃত্য দেখায়। এরই নাম অরোরা (Aurora)। আলোর এই নাচন চোখে পড়ে সাধারণত পৃথিবীর দুটি মেরু অঞ্চলে। সুমেরু (Arctic) ও কুমেরুর (Antarctic) আকাশে। 

মেরু অঞ্চলে সৃষ্ট অরোরা 

অরোরা শব্দতি এসেছে ল্যাটিন থেকে। অর্থ Sunrise বা সূর্যোদয়। এই মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা (Polar aurora) পৃথিবীর দুই মেরুর  আকাশে ঘটে যাওয়া এক নৈসাদৃশ্য ঘটনা। উত্তরে মেরুতে ঘটলে নাম হয় সুমেরু প্রভা (Northern Lights বা Auorora Borealis),আর দক্ষিণ মেরুতে এরই নাম কুমেরু প্রভা (Southern Lights বা Aurora Australis)। 

এই অরোরা দেখতে আপ্রাকিতিক দৃশ্য বলে একে এক রহস্যময় শক্তি বলে বিবেচনা করা হত। অধিকাংশ মানুষই একে স্বর্গীয় আলো মনে করত। অনেকে আবার একে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ হতে ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা মনে করত। সবুজ রঙের প্রভাকে তারা ভাবতো তাদের ভবিষ্যতের সুখের আভাস। আর এর রঙ লাল হলেই তাদের মনে হত ভবিষ্যৎ হবে দুর্যোগময়। লোহিত মেরুপ্রভাকে যুদ্ধের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখা হত।

অরোরা দেখতে অনেকটা অনেকগুলো সমান্তরাল আলোক রশ্মির মতো, যা একটির পর একটি করে ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে তৈরি করে আলোক পর্দার মতো। প্রতি মুহূর্তে হতে থাকে স্থানান্তরিত। রাতের বেলা মনে হয় অনেকগুলো সমান্তরাল আলোক রশ্মি পৃথিবীর বুকে নেমে আসছে। মূলত এই আলোক পর্দাই প্রতিনিয়ত স্তানন্তরিত হতে থাকে। আর এটা মনে হয় যেন পৃথিবীর বুকে সমুদ্রের ঢেউ খেলছে। এই অরোরা বিভিন্ন রঙের হতে পারে।


অরোরা তৈরির কারণঃ

সূর্য প্রতিনিয়তই পৃথিবীর চারদিকে বিভিন্ন চার্জিত কণা নিক্ষেপ করছে, যা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। সূর্যের এই চার্জিত কণার প্রবাহকেই বলে সৌরবায়ু (solar wind)। কিন্তু সৌভাগ্যের ব্যাপার হল, আমাদের পৃথিবীতে রয়েছে শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র (Magnetic field) । এটি দক্ষিণ মেরু থেকে উত্তর মেরুতে প্রবেশ করছে। সূর্য থেকে যখন এসব আয়নিত কণা পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে, তখন এরা পৃথিবীর আয়োনিত চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই তা ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু মেরু অঞ্চল যেখানে চৌম্বক ক্ষেত্র একদম কম সেখানে এই আয়নিত কণাগুল প্রবেশের সুযোগ পায় এবং এ অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনকে আঘাত করে। তখন এদের পরমাণু উত্তেজিত হয় এবং কিছুক্ষণ পরেই শক্তি বিকিরন করে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। আর এই বিকিরণই আমরা দৃশ্যমান আলোতে দেখতে পাই। আর এটাই হল অরোরা। 

অরোরায় আলোর নাচন 

বায়ুমণ্ডল আছে এমন কোনো গ্রহে যদি দ্রুতগতির চার্জিত কণা প্রবেশ করে তবেই মেরুপ্রভা সৃষ্টি হবে। সৌরবায়ু যেহেতু সকল গ্রহেই পৌঁছে, তাই সব গ্রহেই অরোরা বা মেরুপ্রভা সৃষ্টি হয়। তবে গ্রহভেদে এদের রুপ ভিন্ন। শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র বিশিষ্ট শনি ও বৃহস্পতি গ্রহে পৃথিবীর ন্যায়
মেরু অঞ্চলে অরোরা উৎপন্ন হয়। শুক্রের মতো গ্রহের ক্ষেত্রে যেখানে উল্লেখযোগ্য চৌম্বকক্ষেত্র নেই, সেখানে অনিয়মিত প্রভা উৎপন্ন হয়। যে সকল গ্রহের চৌম্বক অক্ষ এবং ঘূর্ণন অক্ষ এক নয়
(যেমন ইউরেনাস ও নেপচুন), সেখানে বিকৃত (Distorted) মেরুপ্রভ অঞ্চল সৃষ্টি হয়। 

আজকের ছবিঃ বৃহস্পতির অরোরা
বৃহস্পতি গ্রহে সৃষ্ট অরোরা 
Category: articles

মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬

[লেখাটি ইতোপূর্বে ব্যাপন ম্যাগাজিনের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।]

অ্যানড্রোমিডার বিস্ময়কর কিছু কথা জানব। তবে, আগে সংক্ষিপ্ত পরিচয়।

আপনারা কি আকাশে কখনো  ছায়াপথ (Galaxy) দেখেছেন? হয়ত বা দেখে থাকলেও থাকতে পারেন! রাতের আকাশে যে শুধু তারকাই দেখা যায় না, তার আরেক উদাহরণ হল অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি। আমাদের মিলিওয়েতে গ্যালাক্সি যেমন সূর্যসহ অসংখ্য নক্ষত্রের বাস, তেমনি বহু নক্ষত্রে গড়া (নেবুলাসহ আরো বিভিন্ন পদার্থের পাশাপাশি) আরেকটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ হল অ্যানড্রোমিডা। 

অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি

অ্যানড্রোমিডা একটি সর্পিলাকার ছায়াপথ (spiral galaxy)। অবস্থান অ্যানড্রোমিডা তারামণ্ডলে। অপর নাম মেসিয়ার ৩১ বা এম৩১ (M31), জ্যোতির্বিদ চার্লে মেসিয়ে এর নাম অনুসারে। একে আবার অনেক সময় গ্রেট নেবুলাও বলা হত। বড় ছায়াপথদের মধ্যে অ্যানড্রোমিডা হল আমাদের ছায়াপথের সবচেয়ে নিকটবর্তী ছায়াপথ। নাম রাখা হয়েছিল পৌরাণিক রাজকুমারী অ্যানড্রোমিডার নাম অনুসারে। লোকাল গ্রুপ নামের প্রায় ৫৪টি গ্যালাক্সির একটি গুচ্ছের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। আমাদের মিল্কিওয়ে হল লোকাল গ্রুপের দ্বিতীয় বৃহত্তম সদস্য। 

প্রায় ১ ট্রিলিয়ন (১ লক্ষ কোটি) নক্ষত্রের সমন্বয়ে গঠিত অ্যানড্রোমিডা গ্যালাক্সি। এই ছায়াপথটি আমাদের থেকে ২.৫ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। ব্যাস প্রায় ২২০,০০০আলোকবর্ষ, যেখানে আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ের ব্যাস ১০০,০০০ আলোকবর্ষ। অর্থাৎ এর সাইজ আমাদের মিল্কিওয়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। সেদিক থেকে বিচার করলে আমাদের মিল্কিওয়ের ভর অনেক বেশি।

আরও পড়ুনঃ

সাতটি সর্পিল বাহু বিশিষ্ট এই ছায়াপথটির নিউক্লিয়াসের সাথে সংযুক্ত আছে দুটি বাহু । বাকী পাঁচটি সর্পিল বাহু অধিকার করে আছে অসংখ্য সৌরমন্ডলকে। এর নিউক্লিয়াস তৈরী হয়েছে এক কোটি গোল নক্ষত্রগুচ্ছের (Globular Cluster) সমন্বয়ে। ছায়াপথটির ভেতরের অংশের পূর্ণ ঘূর্ণন সমাপ্ত হতে সময় লাগে ১১ মিলিয়ন বছর আর বাইরের অংশটুকু সমাপ্ত করে ৯০ থেকে ২০০ মিলিয়ন বছরে (১ মিলিয়ন সমান ১০ লাখ)।

কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আমাদের মহাবিশ্বে ছায়াপথের আসল সংখ্যা কত সেটা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না। কারণ, জ্যোতির্বিদরা যতই মহাবিশ্বের দিকে তাকাচ্ছেন, ততই বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন ছায়াপথ। মহাবিশ্বের এখনও অনেক জায়গা আছে, যেটা বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। কিছু কিছু জায়গা আছে, যা টেলিস্কোপ দিয়েও দেখা যায় না। তবু জ্যোতির্বিদদের হিসাব অনুসারে মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা আনুমানিক ১০০ থেকে ২০০ বিলিয়ন (১ বিলিয়নে ১০০ কোটি)। 


অ্যানড্রোমিডা সম্পর্কে কিছু বিস্ময়কথা জেনে নেওয়া যাকঃ 

১। মিল্কিওয়ে বনাম অ্যানড্রোমিডাঃ

লোকাল গ্রুপের গ্যালাক্সিদের মধ্যে সম্ভবত মিল্কিওয়ের ভর-ই সবচেয়ে বেশি। তবুও আনড্রোমিডা ছায়াপথেই নক্ষত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। স্পিটজার স্পেস টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণ থেকে জানা গেছে, এতে নক্ষত্রের সংখ্যা মিল্কিওয়ের প্রায় দ্বিগুণ। সাইজেও এটিই বড়।


২। এক সময় আনড্রোমিডাকে নীহারিকা ভাবা হতঃ

যখন মহাবিশ্বের প্রকৃত পরিধি কেউ জানত না, তখন ধারণা করা হত, আমাদের মিল্কিওয়ে গালাক্সি-ই মহাবিশ্বের সব কিছু। অ্যানড্রোমিডা গালাক্সিকে এর ভেতরেই অবস্থিত বলে মনে করা হত, যাকে শুধুমাত্র একটা অস্পষ্ট দাগের মতো দেখা যেত। কিন্তু বিংশ শতকে অত্যন্ত শক্তিশালী টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে জানা গেল, এটি নিজেই আরেকটি গ্যালাক্সি। তার আগের টেলিস্কোপগুলোর পর্যবেক্ষণ অনুসারে এটি ছিল মহাজগতিক ধূলোর মেঘ এবং শুধুমাত্র নক্ষত্র গঠনের উপাদানসমূহ এতে বিদ্যামান। এর মাধ্যমে তখন ধরে নেওয়া হয়েছিল, বিশাল অ্যানড্রোমিডা একটা নীহারিকা মাত্র। নতুন তারকা তৈরির অঞ্চলকে বলা হয় নীহারিকা। 

৩। অ্যানড্রোমিডায় ব্ল্যাক হোল!

সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হল, অ্যানড্রোমিডার শুধু কেন্দ্রেই ২৬ টির মতো ব্ল্যাক হোল আছে। এছাড়াও চন্দ্র এ-ক্সরে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সাহায্যে আরো অনেকগুলো ব্ল্যাক হোল খুঁজে পাওয়া গেছে। আমাদের ছায়াপথের মতোই অ্যানড্রোমিডার কেন্দ্রে একটি বিশাল ব্লাকহোল আছে। আরও দুটি যুগল ব্ল্যাক হোল একে অপরকে ঘিরে পাক খাচ্ছে। এদের ভর সূর্যের প্রায় ১৪ কোটি গুণ।

আরো পড়ুনঃ
ব্ল্যাক হোলের পরিচয়

৪। ইতিহাসঃ

এই গ্যালাক্সিটি আবিস্কার করেছিলেন পারস্যের এক মুসলমান জ্যোতির্বিদ আব্দুর রহমান আস-সুফি। ৯৬৪ সালে তিনি গ্যালাক্সিটি পর্যবেক্ষণ করেন। কিন্তু সেই সময়ে গ্যালাক্সি সম্পর্কে মানুষের ধারণা না থাকায় তিনি `তার "Book of Fixed Stars" গ্রন্থে এর নাম দেন 'Small Cloud' বা 'ক্ষুদ্র মেঘ'। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকেও বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল যে, মিল্কিওয়ে-ই হল মহাবিশ্বের একমাত্র ছায়াপথ। অ্যানড্রোমিডাকে গ্যালাক্সিকে তখন মনে করা হত নীহারিকা। কিন্তু এডউইন হাবলের সম্প্রসারণ তত্ত্ব
পাওয়ার পর জানা গেল, মিল্কিওয়ে আসলে মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটা অংশ মাত্র। অ্যানড্রোমিডাকে মেসিয়ার -৩১ নামকরণ করেন বিজ্ঞানী চার্লস মেসিয়ে, ১৭৬৪ সালে। তবে তিনি এর আবিস্কারের কৃতিত্ব দিতে চেয়েছিল জার্মান জ্যোতির্বিদ সাইমন মারিয়াসকে। বর্তমানে অবশ্য আব্দুর রহমান আস-সুফিকে এর আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। 

৫। মিল্কিওয়ের সাথে সংঘর্ষঃ

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, কয়েকশ কোটি বছরের মধ্যেই এটি আমাদের গ্যালাক্সির উপর এসে পড়বে। দুটো মিলে বড় একটি উপবৃত্তাকার গ্যালাক্সিতে পরিণত হবে। যদিও মহাবিশ্ব সামগ্রিকভাবে প্রসারিত হচ্ছে, তবুও কাছাকাছি অবস্থিত এই দুটি গ্যালাক্সি মহাকর্ষের আকর্ষণ এড়াতে পারছে না। এরা প্রতি সেকেন্ডে ৭৫ মাইল বেগে একে অপরের দিকে ধেয়ে আসছে।
ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।  তত দিন আমরা থাকব না। আর আসলে ঐ সংঘর্ষে নক্ষত্রদের মতো ছোট জায়গায়ও বড় কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।

আনড্রোমিডা সম্পর্কে  একটি প্রচলিত ভুল ধারণা হল, এটি আমাদের সবচেয়ে কাছের গ্যালাক্সি। এটি হল, বামন ক্যানিস ম্যাজর
আরো পড়ুনঃ
☛ আমাদের নিকটতম গ্যালাক্সি কোনটি? 


সূত্রঃ
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Andromeda_Galaxy
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Milky_Way
Category: articles

বুধবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৬

দুইটি গ্রহের উজ্জ্বলতা এ মাসে চোখে পড়ার মতো। শুক্র বৃহস্পতি। দুই জন আকাশের দুই প্রান্তে আলো ছড়াচ্ছে। শুক্র পশ্চিম আকাশে, আর বৃহস্পতি পুবাকাশে। শুক্র আছে সন্ধ্যার আকাশে, আর বৃহস্পতি ভোরে। নভেম্বরের শুরুতে আরও দুই গ্রহ- মঙ্গল ও শনি ক্রমেই চলে আসছে শুক্রের দিকে। বিস্তারিত জেনে নিই।

ফটোঃ Predrag Agatonovic

শুক্রঃ 
শুক্রকেই আমরা সন্ধ্যাতার বলি। ভোরের আকাশে থাকার সময় একেই আমরা বলি শুকতারা। তবে আপাতত এটি আছে শুধু সন্ধ্যার আকাশেই। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তু এটি। উজ্জ্বল যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও।

আরও পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প

এ মাসে শুক্র ক্রমেই দিগন্তের উপরে উঠতে থাকবে। অর্থ্যাৎ, সন্ধ্যার একই সময়ে তাকালে একে তুলনামূলকভাবে দিগন্তের উপরে দেখা যাবে। মাসের শুরুতে সন্ধ্যার প্রায় দুই ঘণ্টা পরেই অস্ত গেলেও মাসের শেষে অস্ত যাবে প্রায় তিন ঘণ্টা পর।

সন্ধ্যার আকাশে শুক্র ও অন্যান্য গ্রহ 
মঙ্গলঃ
মে, জুন মাসে মঙ্গল ছিল গ্রহদের মধ্যে সেরা। কিন্তু এখন এক দিকে নিজেই তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হয়ে পড়েছে। আবার শুক্রও ফিরে এসেছে সদর্পে। দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে তাকালে শুক্র থেকে কিছুটা ওপরে চোখে পড়বে লাল এই গ্রহটিকে। পুরো মাসই রাতের প্রায় ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এটি থাকবে পশ্চিমের আকাশে। আগামী বছর জুলাই মাসে মঙ্গল সন্ধ্যার আকাশ থেকে চলে আসবে ভোরের পুবাকাশে।

শনিঃ
আমরা খালি চোখে দেখতে পারি এমন বস্তুদের মধ্যে শনি সবচেয়ে দূরের জিনিস। গ্রহটি এ মাসে ক্রমেই দিগন্তের দিকে হারিয়ে যাচ্ছে। মাসের শেষ দিকে এটি সূর্যাস্তের প্রায় এক ঘণ্টার মধ্যেই ডুবে যাবে।

বৃহস্পতিঃ
কিছু দিন সূর্যের আভায় চাপা পড়ে গত মাসে বৃহস্পতি ভোরের আকাশে হাজির হয়েছিল। ভোরের দিকে পুবাকাশে তাকালেই দেখা যাবে। ঐ দিকের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তুটিই এটি। ভুল হওয়া তাই এক প্রকার অসম্ভব। মাসের শুরুতে সূর্যোদয়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগে উদিত হলেও মাসের শেষ দিকে উদিত হবে চার ঘণ্টা আগে।

বুধকে নিয়ে খুব বেশি কিছু বলার নেই। এটি আমাদের সাথে সব সময় লুকোচরি খেলতে থাকে। অক্টোবরের ২৭ তারিখে এটি সন্ধ্যার আকাশে ফিরে এসেছিল। কিন্তু এ মাসের পুরোটাই সূর্যের আলো একে আচ্ছন্ন করে রাখবে। এটি সব সময় সূর্যের কাছাকাছি সময়ে উদয় অস্ত ঘটায় বলেই এ অবস্থা।


সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/astronomy-essentials/visible-planets-tonight-mars-jupiter-venus-saturn-mercury
Category: articles

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

গ্রহদের সম্পর্কে মৌলিক কিছু কথা জেনে নিই এ মাসে।  আমাদের সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আট হলেও আমরা খালি চোখে দেখতে পাই পাঁচটিকে। এরা হল বুধ, শুক্র (একেই আমরা আদর করে শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা বলে ডাকি অনেক সময়), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সব সময় এদের পাঁচজনকে একত্রে দেখা যায় না। গত সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ এদের সবাইকে এক সাথে (একই রাতে) দেখা গিয়েছিল।

Photo Credit:  Predrag Agatonovic


শুক্র গ্রহঃ

এ মাসে গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে শুক্র (সন্ধ্যাতারা), মঙ্গল ও শনিকে। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু শুক্র। সূর্য ডুবতে না ডুবতেই এটি হাজির হয়ে যাবে পশ্চিম আকাশে, সোজা পশ্চিম থেকে সামান্য দক্ষিণে। দৃষ্টিশক্তি খুব ভালো হলে একে সূর্য পুরোপুরি ডোবার আগেই দেখবে। মাসের শুরুতে এটি সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টা দিগন্তের উপরে থাকবে। সুখবর হল, দিন গড়াতে গড়াতে এ সময়ের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তার মানে তখন একে দেখতে পাবেন বেশি সময় ধরে।

আজকের আকাশঃ চাঁদ ও শুক্র গ্রহ
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তোলা ছবি। ক্রেডিটঃ আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ।
 
 
মঙ্গল ও শনি গ্রহঃ

শুক্র থেকে সামান্য বাঁয়ে ঘুরুন। দক্ষিণ- পশ্চিম আকাশে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে আরো দুটি উজ্জ্বল গ্রহ। এরা হল মঙ্গল ও শনি। মাসের ছয় তারিখে চাঁদ থাকবে শনির একটু উপরে। পরের দিন চাঁদ চলে আসবে শনি ও মঙ্গলের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থানে। মাসের শুরুতে শনি অস্ত যাবে সূর্যের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে। মাস পেরোতে পেরোতে এ সময় দ্রুত কমতে থাকবে। মাসের শেষে এটি সন্ধ্যার পরে দিগন্তের উপরে থাকবে এক ঘণ্টারও কম সময়।
তবে মঙ্গলকে দেখতে পাবেন আরো বেশি সময় ধরে। এটি প্রায় পুরো মাস জুড়েই সন্ধ্যার পরে চার ঘণ্টার মতো সময় পর্যন্ত আকাশে থাকবে। আগেই বলেছি, দূরবর্তী তারাদের সাপেক্ষে গ্রহরা কখনও পশ্চিমে আবার কখনোবা পূর্ব দিকে চলে। কয়েক রাত ধরে মঙ্গলের উপর চোখ রাখলেই বিষয়টি ধরে ফেলতে পারবেন। এই মঙ্গলের ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটি সবচেয়ে সহজে চোখে পড়ে। এমনকি মূলত মঙ্গলের চলাচল লক্ষ্য করেই জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্রাহে যে উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলেন তার ভিত্তিতেই জোহানেস কেপলার গ্রহদের গতি সূত্র বানিয়েছিলেন।


D:\articles\biggan chinta\sky-this-month\Oct 16\planets-oct-16-2.PNG
অক্টোবর মাসের চার গ্রহ এক সাথে


বুধ ও বৃহস্পতিঃ
অপর দুই গ্রহ বুধ ও বৃহস্পতির জন্যে এ মাসে তেমন কোনো সুখবর নেই। বুধকে মাসের শুরুতে ভোরের পূর্ব আকাশে কিছুক্ষণের জন্যে দেখা গেলেও দ্রুত সেটি সূর্যের আভার কাছে হারিয়ে যাবে। শেষ দিকে আর দেখাই যাবে না। বৃহস্পতিকে মাসের শুরুতে দেখাই যাবে না। তবে মাসের শেষের দিকে এটি সূর্যের এক ঘণ্টারও বেশি আগেই পূর্ব দিগন্তে হাজির হবে। ক্রমশ এ সময় বাড়তেই থাকবে। শুক্রের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু হল বৃহস্পতি। উজ্জ্বল গ্রহদের মধ্যে একেই একটানা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেখা যায়। আগামী মাসগুলোতে এটি ক্রমশ দ্রুত উদিত হতে থাকবে। নভেম্বরের শুরুতেই এটি সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা আগে উঠবে। ফলে আপাতত অনুজ্জ্বল হলেও বৃহস্পতির ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।

Category: articles

বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

এ মাসে শুক্র, মঙ্গল ও শনি আছে সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে। মাসের শেষের দিকে ভোরের পূর্ব আকাশে বুধ উপস্থিত হবে। একে উত্তর গোলার্ধের আকাশপ্রেমীরা বেশি সহজে দেখবেন।

☛ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের শুরুতে দৃশ্যমান সবগুলো গ্রহই সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে ছিল। এদের মধ্যে দুটোকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এরা হল বুধ ও বৃহস্পতি।

☛ বুধ ও বৃহস্পতি মাসের শেষের দিকে চলে যাবে ভোরের পূর্ব আকাশে। কারণ, এরা দিন দিন সূর্যের আগেই উদিত হচ্ছে এবং অস্ত যাচ্ছে। এ কারণেই সন্ধ্যার আকাশ থেকে ভোরের আকাশে চলে যাচ্ছে।

☛ বাকি তিনটি গ্রহ- মঙ্গল, শুক্র এবং শনি পুরো মাসজুড়েই থাকছে সন্ধ্যার আকাশে।

☛ অনেক দিন পর শুক্র গত মাস থেকে পশ্চিম আকাশে হাজির হয়েছে। তবে এখনো দিগন্তের খুব কাছে। ফলে সন্ধ্যার কিছু পরেই ডুবে যাচ্ছে পশ্চিম দিগন্ত থেকে।

সন্ধ্যার পশ্চিম আকাশে শুক্র 

☛ তবে আগামী অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে একে আর বেশ সময় ধরে পশ্চিম আকাশে দেখা যাবে।

☛ বৃহস্পতি মাসের শুরুতে পশ্চিম আকাশ থেকে হারিয়ে যাবার পর ভোরের পূর্ব আকাশে হাজির হবে অক্টোবরের কোনো এক সময়।

☛ মঙ্গল এখনো যথেষ্ট উজ্জ্বল, যদিও মে মাসের তুলনায় উজ্জ্বলতা কমেছে অনেকখানি।

☛ এর কাছাকাছিই আছে আরেক গ্রহ শনি। দুজনেই আছে উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্যেষ্ঠার কাছাকাছি।

বহু মাস ধরে মঙ্গল, শনি ও জ্যেষ্ঠ্যা খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে, অবস্থানের নড়চড় ঘটছে যদিও।  

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/astronomy-essentials/visible-planets-tonight-mars-jupiter-venus-saturn-mercury
Category: articles

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১৬

রাতের আকাশ পর্বের আগের অংশে আমরা আলোচনা করেছিলাম পৃথিবীর আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের নিয়ে। এবারে উঁকি দিচ্ছি পৃথিবীর বাইরে। পৃথিবীর আকাশ কেমন হবে তার উপর এর বায়ুমণ্ডলের প্রভাব আছে। অন্য গ্রহ-উপগ্রহদের ক্ষেত্রে তাই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য চোখে পড়ে।

- আচ্ছা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ কেমন হত?
- পৃথিবীতে আসা সূর্যের আলো আসলে ৭টি রঙে গঠিত। এই আলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে বায়ুকণার সাথে ধাক্কা লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে নীল রঙ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে  আমাদের পৃথিবীর আকাশ নীল দেখায়। কিন্তু বায়ুমণ্ডল না থাকলে আকাশ হত কালো। একদিকে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে থাকত। এর আলো পুরো আকাশ দখলে রাখত না। দিনেও তারা দেখা যেত।
- তাহলে কি চাঁদের আকাশ দেখতে কালো? ওখানেতো বায়ুমন্ডল নেই। অন্য গ্রহ বা উপগ্রহের আকাশ দেখতে কেমন? চাঁদ বা অন্য গ্রহের রাতের আকাশ কি পৃথিবীর আকাশের মত এত সুন্দর? অন্যান্য গ্রহকে যেমন পৃথিবী থেকে দেখা যায়, তেমনি পৃথিবীকে কি সেই গ্রহগুলো থেকে দেখা যায়?
এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে আজকের আয়োজন।

আগে সংক্ষেপে পৃথিবীর আকাশ সম্পর্কে একটু বলে নিই। পৃথিবীর রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু  চাঁদ। তবে এরপরের অবস্থানে কিন্তু লুব্ধক নয়। লুব্ধক সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিন্তু গ্রহদের চেয়ে পিছিয়ে। খালি চোখে সৌরজগতের মোট পাঁচটি গ্রহ আমরা দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি সবাই লুব্ধকের চেয়েও উজ্জ্বল। তবে সবচেয়ে বেশি ধারাবাহিকভাবে দেখা যায় শনি ও বৃহস্পতিকে। বুধ ও শুক্র সব ঋতুতে থাকে না, থাকলেও কয়েক ঘণ্টার বেশির জন্যে নয়।
আচ্ছা, এবার তাহলে পৃথিবির বাইরে উঁকি দেই।
পৃথিবীর বাইরে একমাত্র চাঁদের আকাশকেই সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা ও ছবি তোলা গেছে। অন্য কোথাও মানুষের পা পড়েনি বলে আকাশ দেখতে কেমন হবে তা জানার জন্যে নির্ভর করতে হয় পরোক্ষ উপায়ের উপর। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপায় হচ্ছে বিভিন্ন মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য। যেমন মঙ্গল গ্রহ, শুক্র এবং শনির উপগ্রহ টাইটানের আকাশের তথ্য এভাবে পাওয়া গেছে। আকাশের চিত্র কেমন হবে তা অনেকগুলো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। বায়ুমণ্ডল আছে কি নেই, থাকলে তার উপাদান কী, মেঘ আছে কি না ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে আকাশের রঙ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যে আকাশগুলো সরাসরি দেখা যায়নি এসব তথ্যের মাধ্যমে তাদের আকাশ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।

বুধ গ্রহের আকাশঃ
বুধ গ্রহের কোন বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে সূর্যের আলোকে বিক্ষিপ্ত করার মতও কেউ নেই। দিনের বেলায়ও তাই কালো মহাকাশ চোখে পড়বে। সাথে থাকবে কিছু বিন্দু বিন্দু তারার আলো। তবে সূর্যের উপস্থিতির কারণে একটি বিন্দু হবে বেশ বড়। পৃথিবী থেকে দেখার তুলনায় সূর্যের আকার হয় গড়ে আড়াই গুণ এবং উজ্জ্বলতা হয় ৬ গুণ পর্যন্ত।
পৃথিবীর রাতের আকাশের মত বুধের রাতের আকাশকে কোন চাঁদ জ্যোৎস্নাপ্লাবিত করতে পারে না। কারণ বুধের কোন উপগ্রহই নেই। এখানে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু শুক্র। পৃথিবীর চেয়ে বুধের আকাশে শুক্রকে বেশি উজ্জ্বল দেখায়। বুধ গ্রহে এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭.৭ বা মাইনাস ৭.৭) যেখানে পৃথিবীতে এই মান (-৪.৬)। আমরা জানি, আপাত উজ্জ্বলতার মান যত কম হয়, বস্তু তত উজ্জ্বল হয়। যেমন চাঁদের আপাত উজ্জ্বলতা (-১২.৭) এবং সূর্যের (-২৭)।
বুধ থেকে আমাদের পৃথিবী এবং চাঁদও ভালো মত চোখে পড়ে। আপাত উজ্জ্বলতা যথাক্রমে (-৫) ও (-১.২)। পৃথিবীতে যেমন দেখা যায়, তেমনি বুধ থেকে বাকি গ্রহদেরও দেখায় যায়, তবে অনেকটা অনুজ্জ্বল।

আরো পড়ুনঃ
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

পৃথিবীর উত্তর মেরু বরাবর যেমন ধ্রুবতারার অবস্থান তেমনি বুধ গ্রহের দক্ষিণ মেরুতে একটি ধ্রুব তারা আছে। এর নাম আলফা পিকটোরিস। কখনও কখনও বুধ গ্রহে একই দিনে দুইবার সূর্যোদয় দেখা যায়। কেন তা আমরা অন্য কোন সময় ব্যাখ্যা করব।

শুক্র গ্রহের আকাশঃ 
পৃথিবীর আকাশে শুক্র (শুকতারা) খুবই জনপ্রিয় বস্তু। কিন্তু এর নিজের আকাশ খুবই নিষ্প্রভ। দিনের বেলায়ও সূর্য দেখা যায় না। রাতেও তারারা মিটিমিটি করে না। এর কারণ গ্রহটির বায়ুমণ্ডলে অস্বচ্ছ সালফিউরিক এসিডের উপস্থিতি। সোভিয়েত মহাকাশযান ভেনেরার মতে শুক্র গ্রহের আকাশ দেখতে কমলা রঙের। এটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে আবর্তন করে বলে এতে সূর্য ওঠে পশ্চিমে, অস্ত যায় পূবে। এটিই আবার সেই অদ্ভুত গ্রহ যাতে বছরের চেয়ে দিন বড়।
আরো পড়ুনঃ 
অদ্ভুত এক গ্রহ

গ্রহটির বায়ুমণ্ডল পেরিয়ে উপরে উঠলে চাঁদ, পৃথিবী এবং বুধ গ্রহকে বেশ ভালো উজ্জ্বল দেখা যায়।

চাঁদের আকাশঃ
চিত্রঃ ১৯৬৮ সালে চাঁদের কক্ষপথ থেকে তোলা পৃথিবীর ঐতিহাসিক ছবি

চাঁদেরও কোন বায়ুমণ্ডল নেই। তাই এর আকাশ দেখতে কালো। তবে দিনের বেলায় সূর্য খুব উজ্জ্বল থাকার কারণে তারাদেরকে দেখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে সূর্যের আলোর দিককে কোনভাবে ঢেকে রাখলে তারা দেখা সম্ভব। এর কারণ নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো। আমরা জানি, আলোর উৎসের আশাপাশের বস্তু আমাদের চোখে ধরা পড়ে না। তবে আলোকে হাত দিয়ে আড়াল করে রাখলে আলোক উৎসের পাশের বস্তু সহজেই দেখা যায়। কিন্তু পৃথিবীতে সূর্যের দিককে হাত দিয়ে ঢেকে রাখলেও তারা দেখা যাবে না। কারণ বায়ুমণ্ডলের কারসাজিতে আলো সব দিকে ছড়িয়ে গিয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে সূর্যকে দেখতে যেমন লাগে, চাঁদ থেকেও তেমনই লাগে। কিছুটা বেশি উজ্জ্বল এবং সাদা রঙের- যেহেতু বায়ুমণ্ডল অনুপস্থিত।

চাঁদ থেকে পৃথিবীকে দেখতে কেমন লাগে? খুশির খবর হচ্ছে, চাঁদের আকাশের সবচেয়ে দর্শনীয় বস্তু কিন্তু পৃথিবীই। পৃথিবী থেকে চাঁদকে যত বড় লাগে, চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তার চার গুণ মনে হয়। পৃথিবীর আকাশে যেমন চাঁদ বড় ছোট হয়, তেমনি চাঁদ থেকে দেখতে পৃথিবীও বড় ছোট হয়। কারণ দুজনেই সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে। তবে পৃথিবীতে যখন চাঁদের পূর্ণিমা, চাঁদে তখন পৃথিবীর অমাবশ্যা। একইভাবে চাঁদের অমাবশ্যার সময় পৃথিবী চাঁদকে দেয় জ্যোৎস্না শোভিত রাত। তার মানে জ্যোৎস্না চাঁদের একক সম্পত্তি নয়। সুযোগ দিলেও পৃথিবীও তার দান ফিরিয়ে দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 
পূর্ণিমা হয় কখন, কীভাবে?
চিত্রঃ চাঁদে পৃথিবির উদয় ঘটছে। একে আমরা নাম দিতে পারি ‘ভূদোয়’। ইংরেজিতে বলে আর্থরাইজ

আমরা জানি, চাঁদ নিজের অক্ষের চারদিকে এক বার ঘুরতে যে সময় নেয় তাতে পৃথিবীকে এক বার ঘুরে আসে। ফলে আমরা পৃথিবী থেকে সব সময় চাঁদের একটি পৃষ্ঠই দেখতে পাই। সর্বোচ্চ অবশ্য ৫৮% পর্যন্ত দেখা যায়। এর অনিবার্য কারণ হিসেবে চাঁদেরও শুধু পৃথিবীর নিকট পৃষ্ঠ থেকেই পৃথিবীকে দেখা যায়। অন্য পাশ থেকে দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ
চাঁদকি আবর্তন করে?

পৃথিবীতে বসে আমরা চন্দ্রগ্রহণ দেখি, যখন সূর্যের আলোতে তৈরি পৃথিবীর ছায়া চাঁদের গায়ে গিয়ে পড়ে। এই সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে। এই সময় চাঁদে ঠিক কী ঘটে? একটু ভাবলেই বোঝা যায়, এই সময় চাঁদ থেকে কেউ পৃথিবীর কারণে সূর্যকে দেখতে পাবে না। তার মানে চাঁদে তখন হবে সূর্যগ্রহণ। মজার ব্যাপার, তাই না! চাঁদ থেকে পৃথিবীকে তুলনামূলক অনেক বড় দেখায় বলে সূর্যগ্রহণের সময়ের দৈর্ঘ্যও হবে লম্বা।

চিত্রঃ পৃথিবীতে চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবী থাকে চাঁদ ও সূর্যের মাঝে।

পৃথিবীতে যখন সূর্যগ্রহণ হবে তখন তাহলে চাঁদে কেমন দেখাবে? এটা তেমন দারুণ কিছু হবে না। কারণ পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ থাকে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে। ফলে এ সময় চাঁদ সূর্যের আলোকে বাধা দিয়ে পৃথিবীর উপর ছায়া ফেলতে চেষ্টা করবে। এ কারণে পৃথিবীতে সূর্যগ্রহণ হবে ঠিকই। কিন্তু চাঁদের আকাশ থেকে দেখলে পৃথিবী যেহেতু চার গুণ বড় তাই চাঁদের আকাশের পৃথিবী খুব একটা ঢাকা পড়বে না। একটি গলফ বল ১৫ ফুট দূরে সূর্যের আলোর যেমন ছায়া ফেলবে, তেমন প্রতিক্রিয়াই শুধু চাঁদ তৈরি করতে পারবে। তবু এক কথায় বলা চলে, যখনি পৃথিবীতে কোন ধরনের গ্রহণ (Eclipse) ঘটে, তখন চাঁদেও একটি গ্রহণ হয়ে থাকে।
চিত্রঃ নাসার অ্যাপলো ১৭ মিশন কমান্ডার ইউজিন সারনান চাঁদকে পেছনে রেখে পোজ দিচ্ছেন। চাঁদে যাওয়া মোট ১২ ব্যক্তির মধ্যে তিনি সবার শেষে ফিরেছেন। 


মঙ্গল গ্রহের আকাশঃ
মঙ্গল গ্রহের একটি পাতলা বায়ুমণ্ডল আছে, তবে তা প্রচুর ধূলিকণায় পরিপূর্ণ। এতে করে আলো অনেক বেশি বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। দিনের বেলায় আকাশ খুব উজ্জ্বল থাকে। কোন তারা দেখায় যায় না। মঙ্গলের আকাশের সঠিক রঙ জানা একটু কষ্টকর। তবে আগে যতটা মনে হত, মঙ্গলের আকাশ ততটা গোলাপী নয়। এর রঙ কমলা থেকে লালের কাছাকাছি। মঙ্গলের আকাশে সূর্যকে পৃথিবীর আকাশের তুলনায় ছোট দেখা যায়। এটাইতো হওয়া উচিত, তাই না? কারণ মঙ্গলতো পৃথিবী থেকেও সূর্যের দূরে।
মঙ্গলের দুটো ছোট্ট চাঁদ (উপগ্রহ) আছে- ফোবোস ও ডিমোস। ফোবোসকে সূর্যের অর্ধেকের চেয়ে ছোট দেখায়। আর ডিমোসকে লাগে একেবারে প্রায় বিন্দুর মত। সত্যিকারের সূর্যগ্রহণ বলতে যা বোঝায় তা এই চাঁদরা মঙ্গলের আকাশে তৈরি করতে পারে না। বরং সূর্য ও মঙ্গলের সাথে একই রেখায় এলে এদেরকে সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনাকে গ্রহণ না বলে বলা হয় ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)।
মঙ্গল থেকে পৃথিবীকে দেখতে ডাবল স্টারের মত লাগে। এর কারণ পৃথিবীর সাথে চাঁদের উপস্থিতি। পৃথিবী ও চাঁদের সর্বোচ্চ আপাত উজ্জ্বলতা হয় যথাক্রমে (-২.৫) ও (+০.৯)। তবে শুক্র গ্রহকে আরেকটু উজ্জ্বল দেখায়। এর আপাত উজ্জ্বলতা হয় (-৩.২) পর্যন্ত। মনে আছে নিশ্চয়ই, আপাত উজ্জ্বলতার মান কম হলে বস্তু হয় অপেক্ষাকৃত বেশি উজ্জ্বল। আর আগে মাইনাস চিহ্ন দিয়ে দিলে বড় সংখ্যার মান হয়ে যায় ছোট। তবে মঙ্গলের চাঁদগুলো থেকে মঙ্গলকে বিশাল বড় দেখায়। পূর্ণিমার চাঁদের সময় চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি ফোবোস ও ডিমোস থেকে মঙ্গলকে যথাক্রমে তার ৬৪০০ ও ১০০০ গুণ বড় দেখায়!

মঙ্গলের পরে সৌরজগতে আছে গ্রহাণুপুঞ্জ। আপাতত এদের নিয়ে বলার মত বিশেষ কিছু নেই। তাই আমরা চলে যাচ্ছি বৃহস্পতি গ্রহে। তবে এতক্ষণ যাদের কথা বললাম- চাঁদ অথবা মঙ্গল বা অন্য গ্রহরা; এদের উপর আমরা অবতরণ করতে পারব (শুক্রের ভয়াবহ বায়ুমণ্ডলীয় চাপে মারা পড়ব যদিও)। কিন্তু বাকি গ্রহরা হল গ্যাস দানব (Gas giant) অথবা তুষার দানব (ice giant)। সাধারণত এদের কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না যেখানে আমরা কখনও অবতরণের চিন্তা করতে পারি।

বৃহস্পতির আকাশঃ
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের ভেতর থেকে কখনও কোনভাবে ছবি তোলা হয়নি। তবে মনে করা হয় এর আকাশও পৃথিবীর আকাশের মতই নীল, তবে বেশ অনুজ্জ্বল। এতে সূর্যের আলোর উজ্জ্বলতা ২৭ গুণ কম। আমরা এখন জানি, শনি ছাড়া আরও বেশ কয়েকটি গ্রহের বলয় আছে, তা খুবই সরু অবশ্য। বৃহস্পতির এই বলয় এর বিষুব অঞ্চল থেকে দেখা সম্ভব। বায়ুমণ্ডলের আরও নিচের দিকের এলাকা বিভিন্ন মেঘ ও রঙের কুয়াশায় পরিপূর্ণ। ফলে এদিকে সূর্যের আলো আসতে বাধা পায়। পৃথিবীর তুলনায় এখানে সূর্যকে চারভাগের এক ভাগের চেয়েও ছোট দেখায়।
সূর্যের পরে বৃহস্পতির আকাশে উজ্জ্বল বস্তুরা হল এর প্রধান চারটি চাঁদ। এরা হল আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টো। গ্যালিলিও আবিষ্কার করেছিলেন বলে এদের নাম গ্যালিলীয় চাঁদ। এর মধ্যে আয়ো আমাদের চাঁদের চেয়ে বড় দেখায়। তবে কিছুটা কম উজ্জ্বল। কিন্তু আবার কোন মাতৃ গ্রহ থেকে দেখা এর চাঁদদের মধ্যে আয়োকেই সবচেয়ে বড় দেখায়। সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হল গ্যানিমিড। এটি আয়ো ও ইউরোপার কাছাকাছি মানের উজ্জ্বল। তবে দেখতে আয়োর চেয়ে ছোট- অর্ধেক। তবে ইউরোপার চেয়ে অবশ্য দ্বিগুণ দেখায়। ক্যালিস্টো এদের মধ্যে সবচেয়ে দূরে। ফলে এটি দেখতে আয়োর চারভাগের এক ভাগের মত। আমাদের চাঁদের মত এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বৈশিষ্ট্য (যেমন এবড়োথেবড়ো পৃষ্ঠ) চোখে পড়ে না।
চিত্রঃ বৃহস্পতির আকাশে আয়ো এবং ইউরোপা

এরা আমাদের চাঁদের মতই সূর্যগ্রহণ ঘটাতে সক্ষম। বরং আমাদের চাঁদের চেয়ে এরা এই কাজটি বেশিই করে। এর কারণ হচ্ছে বৃহস্পতির কক্ষীয় নতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক অল্প।
অ্যামালথিয়া ছাড়া এর ভেতরের দিকের বাকি উপগ্রহদেরকে দেখতে তারার মত দেখায়। অ্যামালথিয়া মাঝে মাঝে বড় হয়ে প্রায় ক্যালিস্টোর সমান হয়ে যায়। তবে বৃহস্পতির আকাশে এরা সবাই যে কোনো তারার চেয়েও উজ্জ্বল থাকে। আরও দূরের উপগ্রহদের মধ্যে হিমালিয়া ছাড়া কাউকে দেখা যায় না।
এবার আসি বৃহস্পতির উপগ্রহদের আকাশে। এদের সংখ্যা আপাতত ৬৭। কারোই বলার মত বায়ুমণ্ডল নেই। ফলে আকাশ হয় কালো। এদের আকাশে বৃহস্পতিকে অসাধারণ দেখায়। অভ্যন্তরীণ উপগ্রহদের এর সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ আয়োতে বৃহস্পতিকে আমরা চাঁদকে যেমন দেখি তার ৩৮ গুণ বড় দেখায়!  সবচেয়ে কাছের উপগ্রহ মেটিস। এখানে বৃহস্পতিকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের ১৩০ গুণ! মেটিসে বৃহস্পতি সূর্যের আলোর ৪% পর্যন্ত উজ্জ্বলতা প্রতিফলিত করতে পারে। বলে রাখা ভাল, আমাদের চাঁদ পৃথিবীর আকাশে সূর্যের চেয়ে ৪০০ গুণ অনুজ্জ্বল।

শনি গ্রহের আকাশঃ 
আগেই বলেছি শনি গ্রহেরও কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই। এর বায়ুমণ্ডলের উপুরের দিকে থেকে আকাশ সম্ভবত নীল দেখাবে। তবে আরও নিচের দিকে আকাশের রঙ দেখাবে হলুদাভ। শুধুমাত্র অনুসূর (সূর্যের নিকটতম) অবস্থানে থাকার সময় এর উত্তর গোলার্ধ সূর্যকে দেখার সুযোগ পায়। এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগ থেকে এর বলয় দেখা যায় ভালোভাবেই।
অনুসূর বনাম অপসূর

শনির উপগ্রহরা রাতের আকাশকে খুব বেশি সুন্দর করে তুলতে পারে না, যদিও এখন পর্যন্ত এর ৬২ টি উপগ্রহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর সবচেয়ে বড় উপগ্রহ টাইটান। এটি শনির আকাশে আমাদের চাঁদের অর্ধেকের মত লাগে। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-৭)। তবে দূরত্ব বেশি হবার কারণে টাইটান শনির সবচেয়ে অনুজ্জ্বল চাঁদ। এর চেয়েও উজ্জ্বল দেখায় মাইমাস, এনচেলাডাস, টেথিস, ডায়োনে ও রিয়া। বাইরের দিকের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র ফোবেকে দেখা যায়।
আমাদের চাঁদের মতই শনির ভেতরের দিকের চাঁদেরাও শনিকে একবার ঘুরে আসতে যে সময় নেয় ততক্ষণে শনি নিজের অক্ষের উপর আবর্তন শেষ করে। ফলে এদের এক পৃষ্ঠ থেকেই শুধু শনিকে দেখা সম্ভব। তবে ভেতরের দিকের চাঁদ্গুলোতে শনি একটি দেখার মত জিনিস বটে! শনির উপগ্রহ প্যানে শনিকে আমাদের চাঁদে চেয়ে ১০৪ গুণ বড় দেখায়। তবে শনির উপগ্রহগুলো থেকে এর বলয় খুব ভালোভাবে দেখা যায় না। এর কারণ এরা শনির বলয়ের সাথে একই সমতলে অবস্থান করছে। অন্য দিকে বলয়ের পুরুত্বও কিন্তু খুব বেশি না।
সৌরজগতের উপগ্রহদের মধ্যে একমাত্র শনির উপগ্রহ টাইটানেরই পুরু বায়ুমণ্ডল আছে। এর পৃষ্ঠ থেকে আকাশকে দেখতে বাদামী বা গাঢ় কমলা রঙের দেখায়। টাইটান সূর্যের আলো পায় পৃথিবীর ৩০০০ ভাগের এক অংশ। ফলে দিনের বেলায় এর আকাশ দেখায় পৃথিবীর গোধূলির মত। পৃথিবী ছাড়া পুরো মহাবিশ্বে এখন পর্যন্ত জানা মতে শুধু টাইটানেই রংধনু তৈরি হতে পারে। শনিকে দেখা যায় শুধু বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগের দিকেই।
অন্য দিকে এনসেলাডাস উপগ্রহে শনিকে তুলনামূলক অনেক অনেক ভালো দেখা যায়। আমাদের চাঁদকে আমরা যত বড় দেখি তার তুলনায় এখান থেকে শনিকে ৬০ গুণ বড় দেখা যায়। তবে আমাদের চাঁদের মতই এর মাত্র এক পৃষ্ঠ থেকেই শনিকে দেখা সম্ভব। এর আকাশে শনিকে বড়- ছোট হতেও দেখা যায়। এখান থেকে শনির আরও কিছু উপগ্রহকেও দেখা যায়। এর মধ্যে মাইমাসকে দেখা যায় আমাদের চাঁদের সমান।
চিত্রঃ শিল্পির হাতের তুলিতে শনির উপগ্রহ এনসেলাডাসের আকাশ

শনির দক্ষিণ মেরু বরাবর আকাশে আমাদের ধ্রুবতারার মত একটি তারা আছে। এর নাম ডেল্টা অক্টানটিস।

ইউরেনাস গ্রহের আকাশঃ
এই গ্রহটির আকাশ খুব সম্ভব হালকা নীল। এর হালকা বলয় পৃষ্ঠ থেকে দেখা যাওয়ার কথা নয়। ইউরেনাসের দক্ষিণ ও উত্তর দুই মেরুতেই একটি করে মেরু তারা (Pole star) বা ধ্রুবতারা আছে। এরা হল যথাক্রমে ১৫ ওরাইওনিস ও সাবিক। দুটোই আমাদের উত্তর মেরুর ধ্রুবতারার চেয়ে অনুজ্জ্বল।
এর পৃষ্ঠ থেকে কোন উপগ্রহকেই আমাদের চাঁদের মত বড় দেখা যায় না, যদিও এখন পর্যন্ত এরা সংখ্যায় ২৭। তবে এরা সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় দারুণ একটি দৃশ্য ঠিকই তৈরি হয়।

নেপচুনের আকাশঃ
নেপচুন সৌরজগতের সর্বশেষ গ্রহ। অনেকটা ইউরেনাসের মত এর আকাশ। তবে এটি হালকার বদলে উজ্জ্বল নীল। এরও বলয় আছে। তবে তা খুবই সরু হওয়াতে গ্রহের পৃষ্ঠ থেকে দেখা যায় না। সূর্যের পরে এর আকাশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু উপগ্রহ ট্রাইটন। একে আমাদের চাঁদের চেয়ে সামান্য ছোট দেখায়। আরেকটি চাঁদ প্রোটিয়াস দেখতে আমাদের চাঁদের অর্ধেক। নেপচুনের সবচেয়ে বড় চাঁদ হল ট্রাইটন। এর হালকা বায়ুমণ্ডল আছে। তবু আকাশ কালোই দেখায়। এর আকাশে নেপচুনকে এক জায়গায় স্থির দেখায়। কেন অনুমান করেনতো? এতক্ষণের আলোচনা থেকেই বুঝে ফেলার কথা।

প্লুটোর আকাশঃ
চিত্রঃ প্লুটোর আকাশে সূর্য (উপরে ডানে) ও উপগ্রহ শ্যারন

প্লুটো এখন আর গ্রহ নয় বরং বামন গ্রহ (Dwarf planet)। প্লুটো সূর্য থেকে পৃথিবীর তুলনায় ১৩০ গুণ দূরে। তবু এখানে সূর্য মোটামুটি ভালোই উজ্জ্বল। এখানে আমাদের চাঁদের চেয়ে সূর্যের উজ্জ্বলতা ১৫০ থেকে ৪৫০ গুণ। এর বায়ুমণ্ডলে আছে নাইট্রোজেন, মিথেন ও কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস। প্লুটো এর বৃহত্তম উপগ্রহ শ্যারনের সাথে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আটক। এ কারণে এরা সব সময়ে একে অপরের দিকে মুখ করে থাকে।

সৌরজগতের বাইরের আকাশঃ 
বহির্গ্রহ মানে সৌরজগতের বাইরের গ্রহ। ৬৫ থেকে ৮০ আলোকবর্ষ দূরত্ব পর্যন্ত সূর্যকে খালি চোখে দেখা যাবে। মাত্র ২৭ আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থিত একটি নক্ষত্রে নাম বিটা কোমি বেরানেসিজ। আমাদের আকাশে এটি খুব অনুজ্জ্বল। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র জগৎ আলফা সেন্টোরি (প্রক্সিমা সেন্টোরি নক্ষত্রও একই বাইনারি জগতের অংশ)। এই অঞ্চল থেকে সূর্যকে দেখা যাবে ক্যাসিওপিয়া তারামণ্ডলীতে। উজ্জ্বলতা হয় আমাদের রাতের আকাশের ৬ষ্ঠ উজ্জ্বল নক্ষত্র ক্যাপেলার মত।

সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Extraterrestrial_skies#Mercury
২। https://www.quora.com/The-sky-is-blue-on-earth-What-color-is-the-sky-on-other-planets-in-our-solar-system
৩। http://www.answers.com/Q/What_color_is_the_sky_on_the_planet_Mercury
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_nearest_stars_and_brown_dwarfs
Category: articles

মঙ্গলবার, ২ আগস্ট, ২০১৬

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচটি গ্রহই রাতের আকাশে একত্রে দেখা যাচ্ছে।
আগস্ট মাসের আকাশে গ্রহদের অবস্থান 

☛ আগস্টের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে চাঁদ থাকবে মঙ্গল ও শনি গ্রহের খুব কাছে।
☛ বুধ ও শুক্রকে সন্ধ্যা নামার পরপরই পশ্চিম দিগন্তের খুব কাছে দেখা যাবে।
☛ বৃহস্পতিকে এখনো খুব সহজেই পশ্চিম দিগন্ত থেকে কিছু উপরে দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতি হল শুক্রের পরে রাতের আকাশের ২য় উজ্জ্বল গ্রহ।
☛ আগস্টের ২৭ তারিখে বৃহস্পতি ও শুক্র খুব কাছে থাকবে।
☛ মঙ্গল বিগত মাসগুলোর চেয়ে অনুজ্জ্বল হলেও এখনো যথেষ্ট উজ্জ্বল।
☛ শনি ও জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের সাথে মঙ্গল ত্রিভুজ আকৃতি তৈরি করেছে রেখেছে এখনো।
☛ প্রায় মধ্য রাত পর্যন্ত মঙ্গল ও শনিকে দেখা যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামলেই এরা এখন মাথার উপর থেকে একটু দক্ষিণে থাকে।  
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

কয়েক দিন ধরে এমনিতেই এ বিষয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল। ইচ্ছেটা ত্বরান্বিত হল একজন পাঠকের কমেন্ট পেয়ে। তিনি উজ্জ্বল তারাদের গল্প পড়ে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।
প্রশ্নঃ
এখানে তারাদের বিষুবলম্ব দেওয়া আছে। আমাদের মাথার উপরকার বিষুবলম্ব +২৩ ডিগ্রি ।।এটা হতে কীভাবে তারাদের নির্ণয় করব? ১ ডিগ্রি পার্থক্যের জন্য কতটুকু উত্তর বা দক্ষিণে যাব?
(Avi Dewan)

উত্তরঃ
প্রথমে দেখি বিষুব লম্ব কাকে বলে? পৃথিবীর বিষুব রেখা থেকে ঠিক উপরে আকাশের কল্পিত রেখার নাম খ-বিষুব। খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণের অবস্থানকে বিষুব লম্ব দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উত্তরে গেলে '+' চিহ্ন ও দক্ষিণে গেলে মাইনাস (-) চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। যেমন রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীর বিষুব লম্ব (+১৯) ডিগ্রি। তাই আমাদের অক্ষাংশ ২৩ ডিগ্রি উত্তর বলে এটি বাংলাদেশের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়।
আরো পড়ুনঃ 
☛  বিষুব লম্ব কাকে বলে?

খালি চোখে আমরা একসাথে যতগুলো তারা দেখি তার সংখ্যা কয়েক হাজার। এখন ধরুন দুটি উজ্জ্বল তারকা কিছুটা দূরে অবস্থান করছে। আমরা এ দুটির নাম জানলাম। এদের বিষুব লম্বও জানলাম। ধরলাম, জানা আছে যে একটি তারা অপরটি থেকে ৫ ডিগ্রি দূরে আছে। এই বিষুব লম্ব কাজে লাগিয়ে বাস্তব রাতের আকাশে এদেরকে খুঁজে পাব কীভাবে? উল্লেখ্য যে বিষুব রেখাকে উদ্দেশ্য করে নিবন্ধটি লিখলেও আকাশের এই পরিমাপ অন্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে। যেমন, বিষুব লম্বতো শুধু উত্তর- দক্ষিণে কাজ করে। আমাদের এই পরিমাপ কাজ করবে পূর্ব- পশ্চিম ও কোনাকুনি যে কোনো দিকেই।
আরো পড়ুনঃ
আমরা খালি চোখে কত তারা দেখি?

প্রথমে আমাদেরকে মনে রাখতে হবে পুরো আকাশ সব মিলিয়ে একটি গোলকের মতো ৩৬০ ডিগ্রি। এর মধ্যে আমরা একসাথে এর অর্ধেক মানে ১৮০ ডিগ্রি দেখতে পাই, কারণ বাকিটা থাকে আমাদের উল্টো পাশে। পূর্ব থেকে পশ্চিম বা উত্তর থেকে দক্ষিণ দিগন্ত পর্যন্ত কৌণিক দূরত্ব ১৮০ ডিগ্রি। কোনাকুনিভাবে দুটি বিপরীত বিন্দু যোগ করলেও ১৮০ ডিগ্রিই পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে যে কোনো সরল রেখা মানেই কিন্তু ১৮০ ডিগ্রি। আর, দিগন্ত থেকে মাথার উপর পর্যন্ত কৌণিক দূরত্ব হচ্ছে ৯০ ডিগ্রি।
বিভিন্ন ডিগ্রির পরিমাপ 
এবার মূল কাজ শুরু করি। আমরা খালি হাতেই আকাশ মাপবো। এ জন্যে আপনাকে ডান বা বাম হাতটি লম্বা করে প্রসারিত করে সামনে মেলে ধরতে হবে। এবার আকাশের যে দিকের পরিমাপ নিতে চান হাতটি সেদিকে ধরুন। হাতকে টান টান করে রাখতে হবে, বাঁকিয়ে রাখা যাবে না। এবার বিভিন্ন ডিগ্রির জন্যে বিভিন্ন কৌশল খাটাতে হবে। কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ বা মোটা, চিকন- সবার ক্ষেত্রেই এই কৌশল কাজ করবে। তাই উদ্বিগ্ন হবার প্রয়োজন নেই।
☛ আপনার হাতের তর্জনিটির প্রস্থ হবে আকাশের ১ ডিগ্রির সমান। তাহলে দুই ডিগ্রি মাপতে হলে দুই হাতের দুটি তর্জনি ধরুন।
☛ ৩, ৪ বা ৬ ডিগ্রি মাপার নিয়ম ছবি থেকে দেখে নিন। বুঝতেই পারছেন, একটু বুদ্ধি খাটিয়েই এখান থেকে ৫ ডিগ্রিও মাপা যাবে। অবশ্য পাঁচ ডিগ্রি মাপার আরেকটি উপায় আছে, যা একটু পরেই বলছি।
☛ ১০ ডিগ্রি মাপতে হলে হাতকে মুঠো বানিয়ে মুঠোর ব্যাস (এক পাশ থেকে অপর পাশ) দেখতে হবে।
☛ ২৫ ডিগ্রি মাপতে হলে মুঠো থেকে বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাকে যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দিতে হবে।
আকাশের ডিগ্রি পরিমাপে আঙ্গুল ও মুষ্ঠি
সপ্তর্ষীমণ্ডলী থেকে ধ্রুব তারার কৌণিক দূরত্ব প্রায় ২৫ ডিগ্রি

☛ ৫ ডিগ্রি মাপার আরেকটি কৌশল হল হাতের মাঝের তিনটি আঙ্গুলকে মেলে ধরা।
৫ ডিগ্রি মাপার উপায় 

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর দুটি নক্ষত্র দুবে ও মেরাক ৫ ডিগ্রি দূরে। এই দুটিকে যোগ করে ছয় গুণ সামনে গেলেই পাওয়া যায় ধ্রুবতারা। 
☛  ১৫ ডিগ্রি মাপতে হলে তর্জনি ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলির একটিক অন্যটির উল্টো দিকে টান টান করে ছড়িয়ে রাখতে হবে।
১৫ ডিগ্রি মাপার উপায় 

ধ্রুবতারা থেকে কোচাবের কৌণিক দূরত্ব ১৫ ডিগ্রি
☛ ৫০ ডিগ্রি মাপার জন্যে কী করা যায়? দুই হাতকে মিলিয়ে একত্রে ২৫ ডিগ্রি করে মাপলেইতো হয়ে গেল। এইভাবে-
সপ্তর্ষীমণ্ডলী থেকে সিংহমণ্ডলীর উজ্জ্বলতম ও আকাশের ২১ তম উজ্জ্বল নক্ষত্র রেগুলাসের কৌণিক দূরত্ব ৫০ ডিগ্রি 

চাইলে ভিডিওটি দেখে নিতে পারেন। এতে বিষয়গুলো খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। 

আরো পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
তারামণ্ডলীর পরিচয়
Category: articles

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ
আজকে রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে এর চারপাশে বলয়ের মতো দেখা গেল। এটা কেন ও কীভাবে হয়েছে? দৃশ্যটা ছিল এ রকমঃ
চাঁদের চারদিকে বলয়
(প্রশ্ন করেছেন, ইমরান হোসাইন) 

উত্তরঃ
ঐ রাতে চাঁদের চারপাশে যে দৃশ্য দেখা গেছে একে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন হ্যালো। এটা চাঁদ ও সূর্য দুটোর ক্ষেত্রেই ঘটে। বাংলায় একে কিরীট বা জ্যোতির্বলয় বলা হয়।
কিন্তু, এই হ্যালো কীভাবে তৈরি হয়?
একটি আদর্শ মুন হ্যালো

এই বলয় তৈরির মূল কারণ উঁচু আকাশের পালকের মতো হালকা নরম মেঘ। এর নাম অলক মেঘ (cirrus cloud)। অনেক সময় আকাশে মেঘের অস্তিত্ব দেখা না গেলেও হ্যালো চোখে পড়ে। এর কারণ, এই মেঘ খুব সহজে চোখে পড়ে না, যদিও উপরের প্রথম ছবিটিতে মেঘের ঘনত্ব বেশি বলে এদেরকে দেখা যাচ্ছে। এই মেঘগুলো আমাদের মাথার প্রায় বিশ হাজার ফুট বা তারও ওপরে চলাচল করে। একটি হিসাব মতে এদের উচ্চতা ভূমি থেকে ৬ থেকে ৯ কিলোমিটার উপর পর্যন্ত। অথচ ভূমি থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যেও অনেক সময় বিভিন্ন মেঘ থাকে।

কিন্তু এই মেঘের সাথে হ্যালোর সম্পর্ক কী? এই অলক মেঘদের মধ্যে থাকে বরফের লক্ষ লক্ষ স্ফটিক। বরফের এই স্ফটিকেরা চাঁদের আলোকে (আলোর মূল উৎস অবশ্যই সূর্য) একই সাথে প্রতিসরিত ও প্রতিফলিত করে। ফলে হ্যালোও অনেকটা রংধনুর গোল হয়। অবশ্য রংধনুর সম্পূর্ণ বলয় আমরা সাধারণত দেখি না, কারণ অধকাংশ ক্ষেত্রেই নিচের অংশ থাকে পৃথিবীর আড়ালে (উল্টো পাশে)। রংধনুর মতোই চাঁদ বা সূর্যের হ্যালোও একেক জায়গা থেকে একেক রকম দেখায়।
বরফের স্ফটিকে আলোর প্রতিসরণ 
বরফের স্ফটিকদের আকার নির্দিষ্ট বলে হ্যালোও সব সময় প্রায় একই সাইজের হয়। এই বলয়ের ব্যাস প্রায় সব সময় ২২ ডিগ্রি হয়। ভাগ্য ভালো হলে অনেক সময় মূল বলয়ের বাইরে ৪৪ ডিগ্রি ব্যাসের আরেকটি বলয় দেখা যায়। আকাশের ডিগ্রির হিসাব সাধারণ কোণের হিসাবের মত নয়। পুরো আকাশ যেহেতু মোট ৩৬০ ডিগ্রি, তাই যে কোনো সময় আমাদের মাথার উপর শুধু ১৮০ ডিগ্রি থাকে, বাকিটা থাকে পৃথিবীর উল্টো পাশে। আর এখানে ডিগ্রির হিসাব হল এই ১৮০ ডিগ্রির মধ্যে কোন বস্তু কতটুকু জায়গা দখল করেছে তা। এটা পূর্ব-পশ্চিমেও হিসাব করা যায়, আবার উত্তর- দক্ষিণ বা অন্য কোনো দিকের ভিত্তিতেও হিসাব করা যায়। আমাদের হাতকে লম্বা করে সামনে বাড়িয়ে দিয়ে মুষ্ঠিবদ্ধ করে আকাশের দিকে ধরলে এক মুষ্ঠির পরিমাণ হয় ১০ ডিগ্রি।
হাত দিয়ে আকাশ মাপার কৌশল 

চাঁদ ও সূর্যের আলোর বিভিন্ন কারসাজিতে আরো নানা ধরনের আলোকীয় দৃশ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সান করোনা, মুন করোনা, সান বা মুন ডগ ইত্যাদি।


আরো পড়ুনঃ
চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?

সূত্রঃ
১। http://nenes.eas.gatech.edu/Cloud/Clouds.pdf
২। http://home.hiwaay.net/~krcool/Astro/moon/moonring/
৩। http://earthsky.org/space/what-makes-a-halo-around-the-moon
Category: articles

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ ঢাকার আকাশে এত কম তারা দেখা যায় কেন? গ্রামেতো অনেক অনেক তারা দেখা যায়।
[উত্তম কুমার]

উত্তরঃ
রাতের আকাশে খালি চোখে আমরা একবারে দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই। খালি চোখে দৃশ্যমান সব তারার সংখ্যা যোগ করলে হয় ৯০৯৬ টি তারা। হিসাব দুটো কেন? কারণ হচ্ছে রাতের আকাশের অর্ধেক অংশ সব সময় পৃথিবীর উল্টো পাশে থাকে যা আমরা দেখতে পাই না। সময় যেতে যেতে তা পূব আকাশে দৃশ্যমান হতে থাকে। আবার একই সাথে দক্ষিণ ও উত্তর গোলার্ধের সব তারা দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
☛ খালি চোখে আমরা কত তারা দেখি?

কিন্তু উপরে বলা এত এত তারা দেখা যাবে চাঁদহীন, অন্ধকার এবং নির্বিঘ্ন আকাশে। এ জন্যে গ্রামে গেলে দেখা যায় রাতের আকাশ তারায় তারায় ভরপুর। কিন্তু শহরে এলেই তারারা উধাও, হাতে গোণা অল্প কিছু তারা দেখা যায়। এই সংখ্যা এক হাজারেও পৌঁছায় না। অধিকাংশ সময়ই থাকে কয়েকশোর কাছাকাছি। কিন্তু কেন? ঢাকা বা অন্যান্য শহরের আকাশে এত কম তারা কেন?
এর প্রধান কারণ হল শহরের আলোক দূষণ। কৃত্রিম আলোর কারণে প্রাকৃতিক আলো বা দৃশ্য ঝাপসা হয়ে পড়াকে বলা হয় আলোক দূষণ বা লাইট পোলিউশান (light pollution)।
তারার আলোরা শহরের কৃত্রিম আলোর কাছে হেরে যায়

ঢাকার আকাশে কম তারা থাকার আরেকটি কারণ হতে পারে এর বায়ু দুষণ। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকার আকাশে প্রতি দিন ৫০ টন সিসা নির্গত হয়।
আরেকটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকা শহরের বায়ুতে প্রতি বছর ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম১০) মিশছে ৫৮ হাজার ৫২৪ টন। এর মধ্যে রয়েছে রাস্তার ধুলো-ময়লা, কারখানার নির্গত ধোঁয়া ও ক্ষতিকর পদার্থ। পাশাপাশি ২০ হাজার ৮১৯ টন অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) তথা লোহা, সিসা, জিংক ইত্যাদির বিষাক্ত জৈব মিশছে বাতাসে। এছাড়া প্রতি বছর ৬০ হাজার ২১৬ টন সালফার ডাই-অক্সাইড, ১৪ হাজার ৮৬২ টন নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড ও ৫৩ হাজার ৪৫ টন কার্বন মিশছে ঢাকার বায়ুতে।
বিস্তারিত দেখুন তিন নং সূত্রে।

রাতের আকাশের তারার সংখ্যা কেমন হবে তা দিনের আকাশের রং দেখেও আন্দাজ করা যায়। যদি আকাশ খুব নীল হয়, তাহলে অনেক অনেক তারা দেখা যাবে। কিন্তু দিনের আকাশ যদি হয় হালকা নীল, ধূসর, সাদা, বাদামী বা কমলা রঙের, তাহলেই সমস্যা। এ কথা প্রযোজ্য বায়ু দুষণের ক্ষেত্রে। বায়ু দুষণ না থাকলেও আলোক দুষণ রাতের আকাশে বারোটা বাজিয়ে দিতে পারেই। তবে বৃষ্টি হলে তার পরপর যখন আকাশ মেঘমুক্ত হয়, সেই সময় আকাশ শহরেও অনেক সুন্দর হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন রকম কারণে ঢাকায় রাতের আকাশের দিকে তাকালে কোণায় কোণায় কিছু উজ্জ্বল তারা, তারামণ্ডলী যেমন আদম সুরত, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, কিছু তারাভুজ যেমন সামার ট্রায়াঙ্গেল ইত্যাদি দেখা যায়। আরো অনুজ্জ্বল বস্তুরা থাকে চোখের আড়ালে।
আরো পড়ুনঃ 
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প

সূত্রঃ
১। http://www.bangladeshenvironment.com/index.php/polution-s/air-polution/291-air-pollution-in-dhaka-city
২। https://www.quora.com/Why-do-we-see-less-stars-in-the-skies-these-days
৩। বণিক বার্তা
Category: articles

বুধবার, ২২ জুন, ২০১৬

ছোট বেলায় বইয়ে পড়তাম, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়। শুনে ভাবতাম চাঁদের মধ্যে একটি স্টোর রুম আছে যেখানে চাঁদ দিনের বেলায় সূর্যের আলো জমা করে রাখে। আর রাতে সেই আলো দিয়ে চাঁদ পৃথিবীকে আলোকিত করে।
ছোট্ট বেলার সেই অবুঝ জ্ঞানের প্রথম অংশ ঠিক ছিল, কিন্তু নিজের ভাবনা ছিল ভুল। তবে বইয়ের ভাষাকেও একটু দোষারোপ করতেই হয়। চাঁদ সূর্য থেকে আলো পায়- এভাবে বলার দরকার কী? এটা শুনলেই একটু একটু মনে হয়, হ্যাঁ, আলো জমা করে রাখা হয়।
সূর্যের আলোর মাধ্যমে পৃথিবী ও চাঁদ দুজনেই একে অপরকে আলোকিত করে

মূল কথায় আসি। বইয়ে আসলে বলা উচিৎ ছিল, চাঁদের নিজের কোনো আলো নেই, চাঁদ সূর্যের আলো প্রতিফিলত করে পৃথিবীকে আলোকিত করে।  অর্থ্যাৎ, চাঁদ আসলে বিশাল বড় এক দর্পণ। অবশ্যই সাইজেই বড়ো, দর্পণ হিসেবে চাঁদের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এর পৃষ্ঠ খুব এবড়োথেবড়ো এবং ধূসর কালো।
চাঁদের পৃষ্ঠের এবড়োথেবড়ো ছবি

চাঁদ সূর্যের মাত্র ১২ ভাগ আলো প্রতিফলিত করতে পারে। তাছাড়া চাঁদ যেটুকু আলো প্রতিফলিত করে তার সবটুকু আমরা পাই না। এটা নির্ভর করে চাঁদ এর কক্ষপথের কোন জায়গায় আছে তার উপর।
পৃথিবী ঘুরছে সুর্যের চারদিকে, আর চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে
চাঁদের প্রথম ও শেষ চতুর্থকের সময় এর অর্ধেক অংশ আলোকিত হয়, কিন্তু এ সময়ের চাঁদ উজ্জ্বলতায় পূর্ণিমার চাঁদের মাত্র ৮ ভাগ। দুই চতুর্থকের সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের দৃশ্যমান অংশের অর্ধেক দেখা যায়। এ সময় চাঁদ যথাক্রমে মধ্য রাতে উদিত হয় বা অস্ত যায়।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য
প্রতি মাসের বিভিন্ন সময় চাঁদকে বিভিন্ন নক্ষত্রের আশেপাশে দেখা যায়। যেমন চিত্রা, আলডেবারান ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
চাঁদ নিয়ে লেখা সব নিবন্ধঃ এখানে
সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/75891/why-does-the-moon-shine/
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০১৬

টেলিস্কোপের মাধ্যমে রাতের আকাশের সৌন্দর্য চলে আসে হাতের নাগালে। কিন্তু টেলিস্কোপ কেনার আগে একটু বুদ্ধি খাটানো দরকার। না হলে দেখা যাবে, টেলিস্কোপ রাতের আকাশের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অনেকেই আবার এত উচ্চ কনফিগারেশনের টেলিস্কোপ কিনে ফেলেন যার কোন প্রয়োজনই নেই, অথবা যা বিগিনারদের জন্যে উপযুক্ত নয়। তাহলে কী করলে ভালো হয়? চলুন দেখা যাক।
টেলিস্কোপে চাঁদের দৃশ্য 

আমরা জ্যোতির্বিদ্যার বইয়ে বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে রাতের আকাশের দারুণ দারুণ ছবি দেখি। মনে রাখতে হবে এই ছবিগুলো সাধারণ টেলিস্কোপে তোলা নয়। এসব ছবি তোলা হয় উচ্চ ক্ষমতার টেলিস্কোপ, ক্যামেরার দীর্ঘ সময়ের এক্সপোজার বা স্পেইস টেলিস্কোপ দিয়ে। এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে আকাশের বস্তুদের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য চলে আসে চোখের খুব কাছে। অনেক সময় কোনো কোনো ছবি একাধিক ডিভাইসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়।
তাই বলে হতাশ হবার কোনো প্রয়োজন নেই। ছোট্ট একখান টেলিস্কোপ আপনার চাহিদার অনেকাংশই পূরণ করতে সক্ষম। আপনার টেলিস্কোপের প্রথম লক্ষ্যই হবে চাঁদ। এটিতো রাতের আকাশের সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল বস্তু। এমনকি ৩০ পাওয়ারের (৩০ পাওয়ারের অর্থ বস্তুটাকে ৩০ গুণ কাছে থেকে দেখলে যেমন দেখা যেত তেমন দেখা) একটি টেলিস্কোপ আপনাকে চাঁদের কালো অঞ্চল, উঁচু- নিচু অঞ্চল এবং এর শত শত খাদও দেখিয়ে দেবে। আরও বেশি শক্তির টেলিস্কোপ হলে চাঁদের পুরোটাই টেলিস্কোপের আইপিসে (যেখানে চোখ রাখা হয়) এঁটে যাবে। দেখা যাবে এটি ক্রমশ দৃষ্টি থেকে সরে যাচ্ছে। এটা হচ্ছে পৃথিবীর আবর্তনের কারণে এটি পশ্চিমে সরে যাচ্ছে বলে। এর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আপনার মনে হবে, আপনি আর এ জগতে নেই। মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন একজন নভোচারী  হিসেবে!
২০ থেকে ৩০ পাওয়ারের টেলিস্কোপ আপনার সামনে গ্রহদেরকেও দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলবে। কিন্তু পাওয়ার যদি হয় ৪০, আপনি চাঁদের মতো বুধশুক্র গ্রহেরও দশা (বড়ো- ছোট হওয়া) দেখতে পাবেন। দেখবেন মঙ্গলের লাল রঙের ছড়াছড়ি, বৃহস্পতির প্রধান চারটি উপগ্রহ যা গ্যালিলিও সবার আগে দেখেছিলেন, শনির বলয় ও উপগ্রহ টাইটান, তারার মতো দেখতে ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ। আরও দেখবেন (অন্ধকার আকাশ হলে ভালো হয়) ডাবল স্টার, নক্ষত্র গুচ্ছ, নেবুলা, প্রায় আড়াই লাখ দূরের অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি ইত্যাদি।
এখন বাস্তবতা হল, এই জিনিসগুলো দেখার জন্যে আপনি যদি মুখিয়ে থাকেন, তাহলে টেলিস্কোপ কেনার আগে অন্তত একটিবার একটি বাইনোকুলার বা দুরবিন কেনার কথা ভাবুন। শুনতে হাস্যকর লাগলেও পেশাদার ও অপেশাদার দুই ধরনের জ্যোতির্বিদদেরই পরামর্শ এটাই। আপনি যদি একজন পোড়-খাওয়া আকাশ পর্যবেক্ষককে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, তাহলে উত্তর পাবেন এ রকম,
প্রথমে কিছু দিন খালি চোখে আকাশ দেখুন, এরপর একটি বাইনোকুলার কিনুন।
বাইনোকুলার কিনতেঃ
অনেকেই বাইনোকুলারকে একেবারেই অবহেলা করেন। কিন্তু সত্যি বলতে, অনেকগুলো কাজের জন্যে বাইনোকুলারই হচ্ছে সেরা ডিভাইস। একটি ৭ পাওয়ারের বাইনোকুলার দামেও স্বস্তা, বহন করতেও ঝামেলা কম। আরেকটু পাওয়ার বাড়িয়ে নিলেই এটি আপনাকে সাধারণ টেলিস্কোপের চেয়ে ভালো সেবা দিবে। আমার নিজের ২০ পাওয়ারের দুরবিন দিয়ে চাঁদের স্পষ্ট দৃশ্যসহ খালি চোখের চেয়ে কয়েকশো গুণ বেশি তারা দেখি। অন্যদের মতোই বাইনোকুলারে চোখ রেখে রাতের আকাশ দেখে আমি অবাক ও মুগ্ধ না হয়ে পারিনি।
অনেকেই ৭ x ৫০ দুরবিন বেশি ব্যবহার করেন। এখানে ৭ হচ্ছে এর পাওয়ার। বস্তুটিকে ৭ গুণ কাছ থেকে দেখলে যেমন দেখা যেতে এটা দিয়ে তাই বোঝায়। আর ৫০ হচ্ছে এর অভিলক্ষ্যের ব্যাস।
ছবিতে দেখুনঃ-
দুরবিনের হিসাব বুঝতে হলে এর আইপিস ও অভিলক্ষ্য চিনতে হবে
টেলিস্কোপে ও বাইনোকুলার নিয়ে আরও নিবন্ধ পড়তে চোখ রাখুন এইএই লিঙ্কে। 
Category: articles

সোমবার, ১৩ জুন, ২০১৬

রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্য-পিপাসুরা মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। কিন্তু খালি চোখে আমরা ঠিক কতগুলো তারা দেখতে পাই? প্রশ্নটির উত্তর এক বাক্যে দেওয়া সম্ভব নয়। এটা নির্ভর করে আপনার বয়স, চোখের ক্ষমতা, এলাকা, ঋতু, আবহাওয়া, চাঁদ থাকা না থাকা ইত্যাদিসহ অনেকগুলো বিষয়ের উপর। কিন্তু তবুও একটা উত্তর যদি শুনতেই হই তবে সংখ্যাটা হবে কয়েক হাজার। গল্প- উপন্যাসের বইতে যে লাখ লাখ তারার কথা থাকে তা নিছকই বাড়াবাড়ি।
আমেরিকার টেক্সাসের ম্যাকডোনাল্ড পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের কাছে আকাশের দৃশ্য
আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।
চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি।

মহাবিশ্বে মোট কত তারা আছে জানেন? তা কেউ জানে না। কারণ সত্যিকারের মহাবিশ্ব কত বড়ো তাই আমরা জানি না। তবে আমরা দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কথা বলতে পারি, অর্থ্যাৎ মহাবিশ্বের প্রায় চৌদ্দশো কোটি বছরের প্রসারণে এর যত দূর পর্যন্ত আমরা দেখতে পাচ্ছি সেটা। আধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে আমরা অন্তত ১০ হাজার কোটি গ্যালাক্সি দেখতে পাই। প্রতি গ্যালাক্সিতেই গড়ে আবার ১০ হাজার কোটি তারকা থাকে। তাহলে শুধু আমাদের দৃষ্টি সীমার মধ্যেই কত কত তারা ভাবুনতো একবার! ১ এর পরে অন্তত ২২টা শূন্য দিলে যা হয় ততগুলো!
এর মধ্যে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই আছে প্রায় চারশো বিলিয়ন বা চল্লিশ হাজার কোটি তারা। আমরা খালি চোখে যাদেরকে দেখি তারা সব এখানকারই তারকা।
যেসব তারার আপাত উজ্জ্বলতা (+৬) অথবা (+৬.৫) এর নিচে আমরা শুধু তাদেরকেই খালি চোখে দেখি। আপাত উজ্জ্বলতার মান বেশি হওয়া তারার কম উজ্জ্বলতা বোঝায়।
সর্বোচ্চ (+৬.৫) মাত্রার তারা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই
আরও পড়ুনঃ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

মনে রাখতে হবে পৃথিবীতে আমরা সবাই হয় উত্তর নয়ত দক্ষিণ গোলার্ধে বাস করি। বাংলাদেশে থাকায় আমরা আছি উত্তর গোলার্ধে। এখন উভয় গোলার্ধ থেকে দেখা তারার সংখ্যা কিন্তু সমান হবে না। এমনকি একই গোলার্ধেও অক্ষাংশের পরিবর্তনের সাথে সাথে বদলে যাবে আকাশের তারার সংখ্যা। অন্য দিকে, আপনি যখন রাতে আকাশের দিকে তাকালেন তখনওতো প্রায় অর্ধেক তারা রয়ে গেছে পৃথিবীর উল্টো পাশের আকাশে। আর সূর্য সব সময় কিছু না কিছু তারাকে ঢেকে রাখে। এরাই হল রাশিচক্রের তারা। এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে এদেরকে দেখা যায় না। তাই তারা গুনতে হলে কয়েক মাস এ জন্যেও অপেক্ষা করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ রাশিচক্র কাকে বলে?

তাহলে আসলে কত তারা দেখা যায়। ঠিক আছে, আপনি যদি মাসের পর মাস সময় নিয়ে দুই গোলার্ধ ঘুরে এসে চাঁদহীন আকাশের তারাগুলো গুনতে পারেন, তবে সব মিলিয়ে প্রায় নয় হাজার তারা খালি চোখে দেখবেন। আগেই বলেছি, আমরা খালি চোখে সর্বোচ্চ ৬.৫ মাত্রার নক্ষত্র দেখতে পাই। ইয়েল ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদ ডরিট হফলেইট এই সীমা পর্যন্ত তারগুলো গুনে ফেলেছেন। সংখ্যাটি হয়েছে ৯০৯৬।
এটা হচ্ছে সর্বমোট সংখ্যা। এবার দুই গোলার্ধ ভাগ করে দিলে ভাগে পড়বে গড়ে ৪৫৪৮টি তারা। সব সময় আবার আকাশের এক অংশ আমাদের উল্টো পাশে থাকে। তাই আবার দুই দিয়ে ভাগ দিলে পাব ২২৭৪ টি তারা। এ জন্যেই আমরা বলি খালি চোখে আমরা একবারে সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই হাজার তারা দেখতে পাই।
আরও পড়ুনঃ উজ্জ্বল তারাদের গল্প
এখানে প্রধান ২০টি তারকা খুঁজে বের করার উপায় ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি বলা আছে।

কিন্তু সাথে একখানা দুরবিন রাখুন। এই সংখ্যা লাফ দিয়ে উঠে যাবে ২ লাখে! আপনি দেখবেন ৯ মাত্রার তারাগুলোও। ১৩ মাত্রার তারা দেখাতে সক্ষম এমন টেলিস্কোপ হাতে পেলে আপনি দেড় কোটি পর্যন্ত তারা দেখতে পাবেন। দারুণ, তাই না!

সূত্রঃ
১। http://www.universetoday.com/102630/how-many-stars-are-there-in-the-universe/
২। http://www.skyandtelescope.com/astronomy-resources/how-many-stars-night-sky-09172014/
Category: articles

সোমবার, ৩০ মে, ২০১৬

রাতের আকাশে চোখ নিক্ষেপ করলেই হাজার হাজার তারার আলো আমাদের চোখে ধরা দেয়। হাজার হাজার বলা অবশ্য ভুল। মেঘহীন পরিষ্কার রাতের আকাশে বড়জোর ২ থেকে আড়াই হাজার তারা দেখা যায়। আবার রাতের আকাশের উজ্জ্বল বস্তুদের মধ্যে কিন্তু শুধু তারারাই আছে এমনটিও নয়।

চাঁদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আমরা যাকে শুকতারা বলি সেটিওতো আসলে তারা তথা নক্ষত্র নয় বরং শুক্র গ্রহ। এই শুক্র গ্রহই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু (চাঁদকে বাদ দিয়ে)। অপরদিকে ২য় উজ্জ্বল বস্তুও কিন্তু কোন নক্ষত্র নয়, এটি হচ্ছে অপর গ্রহ বৃহস্পতি। যাই হোক, আমরা দেখতে চাই নক্ষত্রদের মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল।


আমরা নিশ্চয়ই জানি, রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র হল লুব্ধক। এরপরের অবস্থানে আছে যথাক্রমে সুহাইল, আলফা সেন্টোরি, স্বাতী, ভেগা ইত্যাদি। এদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে প্রাথমিক কিছু বিষয় জেনে রাখলে সুবিধা হবে।

তারা ও গ্রহের পার্থক্য কী?
সাধারণত রাতের আকাশে আমরা যা দেখি চাঁদ ছাড়া তাদের বাকী সবাইকে আমরা তারা বলি। কিন্তু এসব বস্তুদের মধ্যে ‘তারা’ যেমন আছে, তার পাশাপাশি আছে গ্রহ, বিভিন্ন সময় থাকতে পারে ধূমকেতু বা উল্কা। আবার থাকতে পারে কৃত্রিম জিনিসও। বিমানের কথা না হয় বাদই দিলাম। রাতের আকাশে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকেই কিছু দিন পরপর আন্তার্জাতিক মহাকাশ স্টেশন দেখা যায়।

তাহলে তারা কারা? তারার পরিচয় সঠিকভাবে দিতে হলে বলতে হবে তারকা বা নক্ষত্র। পৃথিবী বা অন্য গ্রহদের মত তারকাদের কিন্তু কোন কঠিন পৃষ্ঠ থাকে না। এদের জীবনের প্রাথমিক ভাগে অভ্যন্তরভাগে তাপ নিউক্লিয় সংযোজন (ফিউশন) বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিরামভাবে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি হতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে আমাদের সূর্যসহ অন্যান্য তারকারা আলো ও তাপ উৎপন্ন করে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতেই রয়েছে ১০০ বিলিয়ন থেকে ৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র। এদের সবার আবার  আমাদের সূর্যের মত গ্রহব্যাবস্থা নেই অবশ্য। মহাবিশ্বের প্রায় ৫০% নক্ষত্রই বাইনারি স্টার সিস্টেমের সদস্য। এক্ষেত্রে দুটি নক্ষত্র একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তাহলে বলা যায় এরা একে অপরের গ্রহ?

না। অন্য কারো চারদিকে ঘুরলেই গ্রহ হয়ে যায় না। গ্রহদের নিজস্ব আলো তৈরি করার ক্ষমতা নেই। এরা কোন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে। আমরা রাতের আকাশে খালি চোখে পাঁচটি গ্রহ দেখতে পাই। এরা হল বুধ, শুক্র (শুকতারা), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। শনি ছাড়া এদের বাকি এরা সবাই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধকের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল।

আমাদেরকে আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে- সেটা হচ্ছে রাতের আকাশের বস্তুদের আপাত উজ্জ্বলতা বা অ্যাপারেন্ট ম্যাগনিটিউড (Apparent magnitude)। একটি বস্তুকে পৃথিবী থেকে দেখতে কতটা উজ্জ্বল লাগে সেটাই হচ্ছে তার আপাত উজ্জ্বলতার পরিমাপ। এটা বস্তুর প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি থেকে আলাদা জিনিস। কারণ, বাস্তবে বেশি দীপ্তিমান হলে দূরত্বসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবী কোন তারকাকে অন্য তারকার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল মনে হতেই পারে। যেমন রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক কিন্তু সবেচেয়ে বেশি দীপ্তিমান ৫০টি তারকার মধ্যেও নেই। তারকার উজ্জ্বলতা পরিমাপ করা হয় লগারিদম স্কেলে। উজ্জ্বলতার মান যত বেশি হয় তার উজ্জ্বলতা হয় তত কম।

আরও পড়ুন
» আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?

আরেকটি বিষয় জেনে রাখি। আকাশের বুকে তারকাদের ঠিকানা। আপনারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা সম্পর্কে জানেন। পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে কল্পিত রেখার নাম নিরক্ষ বা বিষুব রেখা (Equator)। এখন আকাশকে মাথার উপরে একটি গম্বুজের মত কল্পনা করুন। যদিও আসলে তারাগুলো পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত তবু রাতের আকাশে এদেরকে এরকম কোন কল্পিত গবম্বুজে ছাঁটানো লাইটের মতই মনে হয়। এটা ধরে নিলে তারাদেরকে অবস্থান নির্ঢারণ করাও সহজ হয়ে যায়। তাহলে আকাশকে গম্বুজ কল্পনা করলেন। আমরা বোঝার জন্যে যাকে গম্বুজ কল্পনা করলাম তার সঠিক নাম খ-গোলক (Celestial Spehere)। এবার বিষুব রেখার উপরে খ-গোলকের মধ্যে একটি রেখা কল্পনা করুন। একে বলা হয় খ-বিষুব।

খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তারাদের অবস্থান অনেকটা পৃথিবীর অক্ষাংশের মতই বের করা হয়। তবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমরা উত্তর ও দক্ষিণের জন্যে মানের আগে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ কথাটা যোগ করি। যেমন বাংলাদেশে অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। কিন্তু খ-গোলকের ক্ষেত্রে উত্তরে হলে এর আগে + চিহ্ন এবং দক্ষিণে মাইনাস চিহ্ন (-) বসানো হয়। আর এর আনুষ্ঠানিক নাম ডেক্লাইনেশন (Declination) বা বাংলায় বিষুব লম্ব।

অন্য দিকে পূর্ব পশ্চিমের অবস্থান নির্ণয়ের জন্যে দ্রাঘিমার মত একটি বিষয় আছে। এর নাম বিষবাংশ (Right ascension)। তবে এতে একটু ঝামেলা আছে এবং বোঝা একটু কষ্টকর। এর কারণ পৃথিবী নিজের অক্ষের সাপেক্ষে আবর্তন করার কারণে আমাদের সাপেক্ষে দ্রাঘিমা অপরিবর্তিত থাকলে খ-গোলক কিন্তু এই আবর্তনের জন্যেই আমাদের সাপেক্ষে ঘুরতে থাকে। তাই এই বিষয়টি আপাতত আলোচনা করলাম না। তাতে আমাদের আপাতত খুব বেশি অসুবিধাও হবে না, যদি আমরা আর একটি কনসেপ্ট বুঝে নেই।

আরো পড়ুন
» বিষুব লম্ব কাকে বলে?

এটি হল তারামণ্ডলী। প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ আকাশের কাছাকাছি অবস্থানের কিছু তারকাদের একত্রে কোন প্রাণী বা কাল্পনিক চরিত্রের কথা কল্পনা করত। ১৯৩০ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি এই চিহ্নিত অঞ্চলগুলোকে কিছুটা পরিমার্জন ও পরিববর্ধন করে পুরো খ-গোলককে মোট ৮৮টি অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। প্রত্যেকটি তারাই এই ৮৮টির কোনটিতে পড়েছে। বিখ্যাত কিছু তারামণ্ডলী (Constellation) হল আদম সুরত বা কালপুরুষ, সপ্তর্ষীমণ্ডলী, বকমণ্ডলী ইত্যাদি।

তারামণ্ডলী অ তারাভুজের মধ্যে একটু পার্থক্য আছে। তারামণ্ডলী ছারাও অনেক সময় কিছু তারাকে একত্র করে কিছু প্রাণী বা জ্যামিতি চিত্র কল্পনা করা হয়। এরা হল তারাভুজ। যথাস্থানে আমরা এর প্রয়োগ দেখবো।
কোন তারা কোন তারামণ্ডলীতে অবস্থিত এর অবস্থান বের করা আর কঠিন হয় না এবং পাশাপাশি এর বিষুব লম্ব জানলে আরো নিখুঁততভাবে এর অবস্থান জানা যায়। পুরোটা নিখুঁৎ হতে হলে বিষবাংশ না জানলেও হয়। জানলে সুবিধা হয় অবশ্যই।

বিরক্তি এসে যাচ্ছে, না! , তারাদের গল্প শোনানোর লোভ দেখিয়ে এসব কী প্যাঁচাল পাতানো হচ্ছে। ঠিক আছে, এবার আমরা এক এক করে দেখছি-

থুক্কু! আরো দুয়েকটি লাইন না বললেই নয়। বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। ফলে, আমাদের মাথার উপরে খ-গোলকের +২৩ বিষুব লম্ব অবস্থিত। তাহলে আমরা যেসব তারাকে ঠিক মাথার উপরে দেখবো বুঝতে হবে এরা খ-বিষুব থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে অবস্থিত। আর খ-বিষুব পুরো খ-গোলককে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ- এই দুই অংশ বিভক্ত করেছে।

পুরো আকাশ গোলক ৩৬০ ডিগ্রি। আমরা একসাথে আকাশের অর্ধেক তথা ১৮০ ডিগ্রি দেখতে পারি। ফলে দুই খ-মেরুর মাঝখানে কৌণিক দূরত্ব ১৮০ দূরত্ব। আমরা উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত হলেও বিষুব রেখার ২৩ ডিগ্রি উত্তরে থাকায় আমরা উত্তর মেরুর দক্ষিণেও ২৩ ডিগ্রি দক্ষিণের তারাও দেখবো। আর দক্ষিণে দেখবো ৯০-২৩ বা প্রায় ৬৭ ডিগ্রির মত। তবে দিগন্তের কাছাকাছি অবস্থানের তারারা নানা কারণে আমাদের চোখে আসতে বাধা পায়। এর মূল কারণ ঘর-বাড়ি বা দূরবর্তী শহরের আলো। অর্থ্যাৎ বলতে চাইছি, আমরা উত্তর গোলার্ধে আছি বলে আমাদের দেখা সব তারকা উত্তর গোলার্ধেই অবস্থিত- এমনটি ভাবা ঠিক হবে না।
এবার সত্যি বলছি,  উজ্জ্বল তারাদের আলো আর পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখবো না।

১। লুব্ধক (Sirius):
নীল এই নক্ষত্রটিই রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল। এটি মূলত দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে থাকলেও সহজেই বাংলাদেশের দক্ষিণ আকাশে দেখা যায়। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস একে দেখার সেরা সময়। বিখ্যাত তারামণ্ডলী কালপুরুষ বা আদম সুরতের সাথে থাকে বলে একে খুঁজে বের করাও দারুণ সহজ। একে খুঁজে পেতে হলে আদম সুরতের (Orion) কোমরের দিকে অবস্থিত তিনটি তারকায় গঠিত ওরিনয়ন’স বেল্ট থেকে বরাবর পেছেনে যেতে হবে। সামনে পড়া উজ্জ্বল তারাটিই নির্ঘাত লুব্ধক। এর অবস্থান ক্যানিস ম্যাজর (Canis Major) তারামণ্ডলীতে।
আদম সুরত ও লুব্ধক

আপাত উজ্জ্বলতাঃ  -১.৪৬
বিষুব লম্বঃ – ১৭ ডিগ্রি (এই পরিমাপের ক্ষেত্রে ডিগ্রির ভগ্নাংশকে বাদ দিয়েছি)
দূরত্বঃ ৮.৬৯ আলোকবর্ষ (আলোর এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব। নিচের সব ক্ষেত্রেই দূরত্বের এই এককটি ব্যবহার করবো আমরা)

২। সুহাইল (Canopus):
এর অপর নাম অগস্ত্য বা ক্যানোপাস। তারাটির অবস্থান খুব বেশি দক্ষিণে (বিষুব লম্ব মাইনাস ৫২) হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে একে দেখা সহজ। শহর থেকে অবশ্য একটু কঠিন। তবে গ্রামের পরিষ্কার আকাশে একে খুঁজে পেতে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। একে খুঁজে পাবার উপায় হল আদম সুরতে রাইজেল ও লুব্ধক তারা দুটিকে যোগ করে লুব্ধক থেকে নিচের দিকে একটি লম্ব আঁকতে হবে। লুব্ধক থেকে রিগেলের প্রায় দ্বিগুণ দূরত্ব পাওয়া যাবে ক্যানোপাসকে।
২য় উজ্জ্বল নক্ষত্র সুহাইল

আপাত উজ্জ্বলতাঃ -.৬২
বিষুব লম্বঃ -৫২ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩০৯ আলোকবর্ষ

৩। আলফা সেন্টোরিঃ
এটিও দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থিত। আলফা সেন্টোরি সিস্টেমের নক্ষত্রটি এর সঙ্গী প্রক্সিমা সেন্টোরির চেয়ে উজ্জ্বল। অথচ প্রক্সিমা সেন্টোরি সূর্যের (এবং সেই কারণে পৃথিবীরও) নিকটতম নক্ষত্র হওয়া সত্ত্বেও খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। এই নক্ষত্রকে শহর থেকে (বাংলাদেশের) দেখা প্রায় অসম্ভব। গ্রামে গেলে দেখা সম্ভব যদি নির্বিঘ্ন দিগন্ত থাকে, যেহেতু বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ দিকে সর্বোচ্চ মাইনাস ৬৭ বিষুব লম্বের তারা দেখা সম্ভব (থিওরিটিক্যালি) এবং এর বিষুব লম্ব মাইনাস ৬০ ডিগ্রি। কিন্তু দেখা যাবে খুবই সামান্য সময়ের জন্যে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ -.২৮
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪.৩২

৪। স্বাতী (Arcturus):
উজ্জ্বল তারাদের মধ্যেই এটিই প্রথম যার অবস্থান আকাশের উত্তর গোলার্ধে। লাল দেখতে তারাটি খালী চোখে দৃশ্যমান লোহিত দানবদের মধ্যে অন্যতম । একে খুব সহজেই পাওয়া যায় সপ্তর্ষীমন্ডলীর সাহায্যে। সপ্তর্ষীর চামচ বা পেয়ালার আকৃতির অংশের লেজকে পেছন দিকে বাড়িয়ে এগোতে থাকলে প্রাপ্ত লাল বস্তুটিই স্বাতী। আরো সামনে গেলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা (Spica) যার রোল নং হচ্ছে ১৫।
সপ্তর্ষীমোণ্ডলীর মাধ্যমে স্বাতী ও চিত্রা নক্ষত্র খুঁজে পাবার উপায়

আপাত উজ্জ্বলতাঃ মাইনাস ০.০৫
বিষুব লম্বঃ +১৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৬.৭২

৫। অভিজিৎ (Vega):
৫ম উজ্জ্বল নক্ষত্রটিরও অবস্থান উত্তর গোলার্ধে। ফলে বাংলাদেশ থেকে একেও দেখা খুবই সহজ। অন্য দিকে এটি আবার বিখ্যাত তারাভুজ (Asterism) সামার ট্রায়াঙ্গেল এরও উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। এই তারাভুজের অপর দুটি নক্ষত্র হচ্ছে শ্রবণা (Altair) ও পুচ্ছ (Deneb)। গ্রীষ্মকাল শুরু হলেই এই তারাগুলো রাতের আকাশে হাজিরা দেওয়া শুরু করে। এমনকি শীতের শুরুতেও এদেরকে দেখা যায়। তবে এ সময় এরা থাকে পশ্চিমাকাশে- ডুবু ডুবু।



এর আপাত উজ্জজ্বলতা ০.৩।
দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫.০৪ আলোকবর্ষ। অবস্থান খ-গোলকের +৩৮ ডিগ্রিতে।

৬। ক্যাপেলা (Capella):
রাতের আকাশের সবচেয়ে বিখ্যাত তারাভুজ উইন্টার সার্কেল বা উইন্টার হেক্সগনের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হওয়ায় একে খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় না। উইন্টার সার্কেল হচ্ছে আকাশের ৬টি খুব উজ্জ্বল তারাদের নিয়ে তৈরি একটি তারাভুজ। এর তারাগুলো হল যথাক্রমে লুব্ধক, প্রভাস, ক্যাপেলা, পোলাক্স, আলডেবারান ও রাইজেল। উজ্জ্বলতায় এদের ক্রম যথাক্রমে ১, ৮, ৬, ১৭, ১৪ ও ৭।

উইন্টার সার্কেল বা হেক্সাগনে ক্যাপেলাসহ অন্যান্য নক্ষত্ররা 

আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.০৮
বিষুব লম্বঃ +৪৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪২.৮

৭। রাইজেল (Rigel):
আদম সুরতের বাম পায়ে এর অবস্থান। চিনে নিতে অসুবিধা হবার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। অন্য দিকে ইতোমধ্যেই আমরা দেখেছি, এটি উইন্টার সার্কেলেরও অন্যতম নক্ষত্র। আদম সুরত বা কালপুরুষের (Orion) উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এটি। উপরের ছবিতে খেয়াল করুন, ওরিয়ন’স বেল্টের এক পাশে রাইজেল এবং আরেক পাশে বিটলজুস অবস্থিত। তবে এটি খ-বিষুবের দক্ষিণে অবস্থিত। কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ থেকে দেখতে বিন্দুমাত্রও অসুবিধা নেই।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.১৮
বিষুব লম্বঃ -৮ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৮৬৩

৮। প্রভাস (Procyon)
এর অপর নাম সরমা। এটিও উইন্টার সার্কেলের অন্যতম নক্ষত্র। শখের জ্যোতির্বিদদের আরেকটি সহজ শিকার। লুব্ধক ও রাইজেলকে উইন্টার সার্কেলের বৃত্তচাপের অংশ মনে করে লুব্ধক থেকে রাইজেল যে দিকে তার উল্টো দিকে গেলেই দেখা মিলবে প্রভাসের। [উপরের চিত্র দেখুন]
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪০
বিষুব লম্বঃ +৫ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১১.৪৬

৯। আর্দ্রা (Betelgeuse):
আদম সুরতের মধ্যে থাকা একটি লাল নক্ষত্র।  রাতের আকাশে চোখে পড় অন্যতম লোহিত দানব (Red giant)। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের খুব প্রিয় তারকা। কারণ, এটি যে কোন মুহূর্তে আতশবাজির মত ফেটে উঠবে। কারণ রেড জায়ান্ট দশায় থাকা তারকারা সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে সমগ্র গ্যালাক্সিকে উজ্জ্বল করে তোলে। চিনে নিতে উপরের ছবি দেখুন। আগেই বলেছি ওরিয়নের বেল্ট থেকে রাইজেল যে দিকে তার উল্টো দিকে থাকে বিটলজুস। তবে এটি একটি বিষম তারা। এর মানে হল, এটি সময় সময় উজ্জ্বলতার পরিবর্তন করে। তাই অনেক সময় এর রোল নং ৯ এর বদলে ১০ হয়ে যায়।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪৫
বিষুব লম্বঃ +৭ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৪৯৮

১০। আখেরনার (Acherner):
এটি খুব বেশি দক্ষিণে অবস্থিত। তবু বাংলাদেশ থেকে দেখা অসম্ভব নয়। কিন্তু শহর থেকে দেখা একটু কঠিন। আদম সুরতের ডান পাশ থেকে নদীর মত দেখতে ইরিডেনাস বা যামীমন্ডলীর যাত্রা শুরু। এর একেবারে প্রান্তে আখেরনারের অবস্থান।
 



আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৪৫
বিষুব লম্বঃ -৫৭ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৩৯

১১। হেডার (Hadar):
আমাদের উত্তর গোলার্ধের জন্যে এটি দেখা সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। এটি সেন্টোরাস তারামণ্ডলীতে অবস্থিত। আর এই তারামণ্ডলীটি সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা যায়। আমরা ২৩ ডিগ্রিতে থাকায় বুঝতেই পারছেন একে দেখার জন্যে কেমন বেকায়দায় আছি আমরা। একে দেখার মত নির্বিঘ্ন দিগন্ত পাওয়া হবে সোনার হরিণ পাবার মত।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৬১
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৯২

১২। শ্রবণা (Altair):
আগেই বলেছি  সামার ট্রায়াঙ্গেলের অন্যতম নক্ষত্র এটি। ফলে শীত কাল আসতে থাকলে এটি আস্তে আস্তে পশ্চিমে যেতে থাকে। এক সময় আর রাতের আকাশে একে দেখা যায় না। আবার দেখায় যায় গ্রীষ্মের শুরুতে। তবে যাদের ভোরে ওঠার অভ্যাস আছে তারা এপ্রিলেই ভোরের পূব আকাশে একে দেখতে পারেন। একে খুঁজে নিন পূর্বের অভিজিতের মত সামার ট্রায়াঙ্গেলে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৭৬
বিষুব লম্বঃ +৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৬.৭৩

১৩। অ্যাক্রাক্স (Acrux):
বাংলাদেশ থেকে একে দেখার আশা করা অনুচিত। এটি ক্রাক্স তারামণ্ডলীতে অবস্থিত যেটি ২০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশের উত্তরে দেখা যায় না। তাই একে নিয়ে আপাতর বেশি মাথা ঘামাতে চাই না।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৭৭
বিষুব লম্বঃ -৬৩ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩২২

১৪। আলডেবারান (Aldebaran):
আরেকটি বিখ্যাত লোহিত দানব। আদম সুরতের মাধ্যমে একেও খুব সহজেই খুঁকে নেওয়া যায়। আদমের বেল্ট থেকে প্রায় সোজা ডানে গেলেই একে পাওয়া যাবে। আর বাঁইয়ে গেলে? লুব্ধক। আগেই দেখেছি আমরা। এটিও উইন্টার সার্কেলের সদস্য। এটি বৃষমণ্ডলীর উজ্জ্বলতম তারা।
আদম সুরতের মাধ্যমে আলডেবারান নক্ষত্র খুঁজে পাওয়া যায়
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৮৭
বিষুব লম্বঃ +১৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৬৬.৬৪

১৫। চিত্রা (Spica):
সপ্তর্ষীর চামচ থেকে লেজ বরাবর বৃত্তচাপ এঁকে প্রথমে স্বাতী (রোল নং ৪) এবং আরো সামনে গিয়ে পাওয়া যাবে চিত্রাকে। এটি আবার রাশিচক্রের সদস্য কন্যামণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে কক্ষপথে ঘোরার সময় ১২ মাসের বিভিন্ন সময় আকাশে বিভিন্ন তারা দেখা যায়। আর পৃথিবীর এই গতির কারণে খ-গোলকে সূর্যের একটি কাল্পনিক চলন পথ তৈরি হয় যাকে ইক্লিপ্টিক বা সূর্যপথ বলে। এই অঞ্চলে থাকা তারামণ্ডলীগুলোকে রাশিচক্র বলে। তাই বলে কিন্তু আমরা জ্যোতির্বিদ্যা ছেড়ে জ্যোতিষবিদ্যায় চলে যাইনি। ওদের করা রাশিচক্রে হিসাব সম্পূর্ণ ভুল ও অবৈজ্ঞানিক। তাদের মতে রাশিচক্রের তারামণ্ডলী ১২ টি, কিন্তু এর আসল সংখ্যা হবে ১৩।

আপাত উজ্জ্বলতাঃ ০.৯৮
বিষুব লম্বঃ -১১ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৫০

১৬। জ্যোষ্ঠা (Antares):
কাঁকড়াবিছার মত দেখতে তারামণ্ডলী বৃশ্চিকের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র এটি। এই তারামণ্ডলীটি সব সময় আদম সুরতের উল্টো দিকে থাকে। আদম সুরত ডুবলে এর উদয় ঘটে। বৃশ্চিকের বুক বরাবর তারাটির অবস্থান। এটি কিছুটা দক্ষিণে হলেও সহজেই বাংলাদেশ থেকে দৃশ্যমান।
বৃশ্চিক মণ্ডলী 
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.০৫
বিষুব লম্বঃ -২৬ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৫৫৪

১৭। পুনর্বসু (Pollux):
মিথুন মণ্ডলীর উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। উইন্টার সার্কেল বা হেক্সাগনের (শীতের ষড়ভুজ) একটি শীর্ষে এটি বসে আছে বলে একে চেনাও দারুণ সহজ কাজ। তবে এর সাথেই এর জমজ তারা ক্যাস্টরও বসে আছে। আগের উইন্টার সার্কীলের ছবিটি দেখুন। যে তারাটির অবস্থান প্রভাসের দিকে সেটি হচ্ছে পোলাক্স, আর যেটি ক্যাপেলার দিকে আছে  সেটি হচ্ছে ক্যাস্টর। ‘ক্যা-ক্যা’ দিয়ে মনে রাখা যেতে পারে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.১৬
বিষুব লম্বঃ +২৮ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ৩৩.৭৮

১৮। মৎস্যমুখ (Fomalhaut):
একে বলা হয় নিঃসঙ্গ তারা। এর কারণ এর আশেপাশে কোন উজ্জ্বল তারা নেই। বছরের শেষের মাসগুলোতে দক্ষিণ আকাশে একে দেখা যায়।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.১৬
বিষুব লম্বঃ -২৯ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৫.১৩

১৯। পুচ্ছ (Deneb):
এর আগেও এর কথা বলেছি। অভিজিৎ ও শ্রবণার সাথে মিলে এটি গড়ে তুলেছে সামার ট্রায়াঙ্গেল। এটি আবার বিখ্যাত তারামণ্ডলী বকমণ্ডলীতে অবস্থিত। প্রথম আবিষ্কৃত ব্ল্যাক হোল সিগ্নাস এক্স-১ এই বকমণ্ডলীর দিকে অবস্থিত।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.২৫
বিষুব লম্বঃ +৪৫ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ১৪১২

২০। মিমোসা (Mimosa):
এটিও দক্ষিণে অবস্থিত। ফলে বাংলাদেশের জন্য এটি সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। এটি আবার বিষম তারা। এর গড় উজ্জ্বলতা ১.২৫ হলেও এটি ১.২৩ থেকে ১.৩১ এর মধ্যে উঠা-নামা করে।
আপাত উজ্জ্বলতাঃ ১.২৫
বিষুব লম্বঃ -৬০ ডিগ্রি
দূরত্বঃ ২৭৯
রাতের আকাশের অসংখ্যা উজ্জ্বল নক্ষত্রের মধ্যে মাত্র ২০টি নিয়ে আমরা আলাপ করলাম। অন্য কোম সময় বাকি তারাদের গল্প করার সুযোগের আশা রেখে আজকে বিদায় নিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ।

সূত্রঃ
[১] https://en.wikipedia.org/wiki/Apparent_magnitude
[২] http://www.ianridpath.com/brightest.htm
[৩] এই লিঙ্কে ৩০০টি সেরা উজ্জ্বল নক্ষত্রের তালিকা পাওয়া যাবে 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...