Advertisement

বুধবার, ৩১ মে, ২০২৩

জ্যোতির্বিদ্যায় মিটার-কিলোমিটার দিয়ে কাজ চলে না। দরকার হয় অনেক বড় বড় একক। এই যেমন এক এইউ হলো পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব। ১৫ কোটি কিলোমিটার। আরও বড় দূরত্বে ব্যবহার করা হয় আলোকবর্ষ। যা আলোর এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব।



জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

এক আলোকবর্ষ কত বড়?

আরেকটু বড় একটি একক হলো পারসেক। এর মান আলোকবর্ষের প্রায় তিনগুণ। সঠিক করে বললে ৩.২৬ গুণ। মানে, এক পারসেক = ৩.২৬ আলোকবর্ষ৷

পারসেক কথাটা এসেছে প্যারালাক্স অব ওয়ান সেকেন্ড বা এক সেকেন্ডের প্যারালাক্স থেকে। তাহলে প্যারালাক্স কী জিনিস বুঝে নেই চলুন।

হাতটা লম্বা করে চোখের সামনে এনে একটি আঙুল খাড়া করুন। এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখে আঙ্গুলটি দেখুন। এবার খোলা চোখ বন্ধ করে অন্য চোখে দেখুন। দেখবেন আঙ্গুলের অবস্থান দুই চোখ দুই জায়গায় দেখছে। দুই অবস্থানের এ কৌণিক পরিবর্তনের নামই প্যারালাক্স।

প্যারালাক্সের পরিবর্তন


চোখ থেকে বস্তু যত দূরে হবে, এ কোণ তত ছোট হবে। যতটা দূরে গেলে কোণের পরিমাণ এক আর্কসেকেন্ড হবে তারই নাম এক পারসেক। এখন এক আর্কসেকেন্ড জিনিসটা বুঝলেই কেল্লাফতে!

এক ডিগ্রি কতটুকু তা আমরা সহজেই বুঝি। চোখ মেললেই সর্বত্র ৯০ ডিগ্রি বা সমকোণ দেখা যায়। চৌরাস্তায় আছে চারটা সমকোণ। বিল্ডিংয়ের দেয়াল ও ছাদের মিলনস্থলে আছে সমকোণ। আর এর ৯০ ভাগের এক ভাগই এক ডিগ্রি। এক ডিগ্রির ৬০ ভাগের এক ভাগকে বলে আর্কমিনিট। তাকে আবার ৬০ ভাগ করলেই হয় আর্কসেকেন্ড।




মানে এক আর্কসেকেন্ড হলো আর্কমিনিটের ৬০ ভাগের এক ভাগ। আর আর্কমিনিট হলো ডিগ্রির ৬০ ভাগের এক ভাগ। তাহলে এক আর্কসেকেন্ড হল এক ডিগ্রির ৩৬০০ ভাগের এক ভাগ।

রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল তারা স্বাতী। এটি পৃথিবী থেকে ১১.২৬ পারসেক দূরে আছে। দূরত্বটা পাওয়া গেছে এর প্যারালাক্স মেপেই। তারাটির প্যারালাক্স হলো ৮৮.৮৩ মিলিআর্কসেকেন্ড।

Category: articles

সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩

 আজ ২৯ মে। ১৯১৯ সালের এই দিনে প্রমাণিত হয় মহাকর্ষ বক্রতা। যা আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে বলে গিয়েছিলেন।





১৯১১ সালেই আইনস্টাইন বলেছিলেন মহাকর্ষ বক্রতার কথা। তবে সে সময় তত্ত্বে খানিক ভুল ছিল। ১৯১৫ সালে সংশোধন করেন। কাজে লাগান জার্মান বিজ্ঞানী সোয়ার্জশল্ডের সমীকরণ।

লেন্স যেভাবে এর ভেতর দিয়ে যাওয়া আলোকে বাঁকিয়ে দেয়, তেমনি ভারী কোনো বস্তু এর কাছ দিয়ে যাওয়া আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। এরই নাম মহাকর্ষ বক্রতা। নিচের চিত্রে দেখুন: ভারী বস্তুটির কারণে দূরের আলোক উৎস থেকে আসা আলো বেঁকে যাবে। পৌঁছবে পর্যবেক্ষকের চোখে। ভারী বস্তুটি না থাকলে আলো চোখে আসতে সোজা পথে। বেঁকে যাওয়ায় ঘটবে মজার ঘটনা। পর্যবেক্ষক আলোর মূল উৎসটি বুঝতে পারবেন না। তাছাড়া আলো ভরের কারণে দুই দিয়েই বেঁকে চোখে পৌঁছবে। পর্যবেক্ষক ভাববেন, তিনি দুটো আলাদা বস্তু দেখছেন!


মহাকর্ষ বক্রতা ও এর ফলাফল

ব্যাপারটা বাস্তব পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম ক্যাম্পবেল। নানা কারণে ব্যর্থ হন। ১৯১৮ সালের একটি প্রচেষ্টাও মেঘের কারণে ব্যর্থ হয়। ১৯১৯ সালে আবার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করার জন্য তাঁরা বেছে নেন ২৯ মে তারিখের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণকে। সূর্যের পেছন থাকা তারার আলো সূর্যের আলোর আভায় হারিয়ে যায়। ফলে বক্রতা হয় কি না তা দেখা যায় না। তবে গ্রহণের সময় আভা না থাকায় বক্রতা হয়ে থাকলে তার প্রভাব ভেসে ওঠার কথা চোখে।
 
এ সূর্যগ্রহণটির সময় সূর্যের পেছনে ছিল হায়াডিজ নক্ষত্রপুঞ্জ। সূর্যের উজ্জ্বলতার কারণে দিনের বেলায় এদেরকে দেখা যায় না। কিন্তু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দেয়। ফলে তখন ভালভাবে দেখা যায়। রাতে তো আর সূর্য না। কয়েক মাসে আগের আকাশে এরা সূর্যের পেছনে ছিল না। রাতের আকাশেই দৃশ্যমান ছিল।

এখানে বলে রাখি, রাতের আকাশে প্রতিদিন তারারা একটু একটু করে পশ্চিমে সরে। এটা একই রাতের কথা বলছি না। এক রাতে যে তারাকে আমরা যেখানেই দেখি, পরের রাতে চার মিনিট আগেই সেখানে দেখি। পশ্চিমে সরতে সরতে এভাবে এক বছর পরে একই সময়ে একই জায়গায় দেখব আবার।

☛ সূর্যগ্রহণ কীভাবে হয়? (লেখা আসছে...)

তো হায়াডিজ পুঞ্জের তারাদের দুইরকম অবস্থান পাওয়া গেলে। একটি হলো সাধারণ রাতের আকাশে। যখন সামনে সূর্য ছিল না। ছিল না সম্ভাব্য মহাকর্ষ বক্রতা। অন্তত সূর্যের কারণে নয়। আবার নির্বিঘ্নে দেখাও গেল। আরেকটি পরিমাপ পাওয়া গেল সূর্যগ্রহণের সময়। দুই পরিমাপ মিলে গেলে মহাকর্ষ বক্রতা বলতে কিছু থাকবে না। পরিবর্তন পাওয়া গেলেই প্রমাণ হবে এ ব্যাপারটা।

দুটি দল গ্রহণের ছবি তুলতে ছুটে যান দুই আলাদা জায়গায়। এক দল যান পশ্চিম আফ্রিকার দ্বীপ প্রিন্সিপায়। এ দলে ছিলেন এডিংটন ও এডউইন টার্নার কোটিংহাম। আরেক দল যান ব্রাজিলের সব্রাল শহরে। এ দলে গ্রিনিচ মানমন্দিরের অ্যান্ড্রু ক্রোমলিন ও চার্লস ডেভিডসন। মূল পরীক্ষাটি পরিচালিত হয় রয়েল সোসাইটি ও রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে। সেসময় ফ্র‍্যাংক ডাইসন ছিলেন অ্যাস্ট্রোনমার রয়েল। মূলত এডিংটনের পরামর্শে তিনি কাজটা নিয়ে পরিকল্পনা এগিয়ে নেন।

প্রাপ্ত ফলাফলে প্রমাণ জয় আইনস্টাইনের অনুমান। বাস্তবে দেখা গেল মহাকর্ষী বক্রতা। পরীক্ষার পরিকল্পনার পাশাপাশি তথ্য বিশ্লেষণেও ফ্র‍্যাংক ডাইসন কাজ করেন। এ পরীক্ষার ফল সারা বিশ্বের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। আইনস্টাইন ও তাঁর তত্ত্ব রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যায়।

আইনস্টাইন ক্রস 

মহাকর্ষ বক্রতার একটি দারুণ ফল হলো আইনস্টাইন ক্রস ও বলয়। 

Category: articles

রবিবার, ২১ মে, ২০২৩

 


ওমুয়ামুয়া। সৌরজগতে প্রবেশ করা প্রথম আন্তনাক্ষত্রিক বস্তু৷ ২০১৭ দালের ১৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইর হালিয়াকালা মানমন্দির থেকে বস্তুটা আবিষ্কার করেন কানাডিয়ান জ্যোতির্বিদ ডেভিড ওয়ার্ক৷ সেসময় সূর্য থেকে দূরে সরতে শুরু করে দিয়েছিল বস্তুটা।
দেখতে ধূমকেতুর মতো হলেও আসলে এটা তা নয়। গ্রহাণুর সাথে মিল আছে। তবে ঠিক তাও নয়। কেউ কেউ তো আবার একে এলিয়েনদের সৃষ্টি বলেও মনে করেছিলেন। যদিও তার সপক্ষে প্রমাণ নেই।
Category: articles

শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

 আজ ২০ মে। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহাশূন্যে পাঠানো হয় পাইওনিয়ার ভিনাস প্রোগ্রামের মহাকাশযান। ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল থেকে শুক্র গ্রহের কক্ষপথের দিকে ছুটে যায় এ প্রকল্পের দুটি মহাশূন্যযান।


পাওনিয়ার ভিনাস অরবিটার

পাওনিয়ার ভিনাস প্রোগ্রামের যান দুটির একটি হলো পাওনিয়ার ভিনাস অরবিটার। শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর কাজ ছিল শুক্রের অরবিট মানে কক্ষপথে। অ্যাটলাস-সেন্টোর রকেটে করে একে পাঠানো হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ঐ বছরই ডিসেম্বরের ৪ তারিখে যানটি শুক্রের কক্ষপথে স্থান করে নেয়। কক্ষপথটি হয় উপবৃত্তাকার। ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত যানটি শুক্র গ্রহ থেকে উপাত্ত পাঠাতে থাকে। সক্রিয় থাকে ১৪ বছর ৪ মাস।


১৯৮৬ সালে অরবিটারটি হ্যালির ধূমকেতকে পর্যবেক্ষণ করে। যানের বিভিন্ন যন্ত্র শুক্রের বায়ুমণ্ডল ও পৃষ্ঠ নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। ১৯৯১ সালে ম্যাজেলান যানের সাথে যৌথভাবে গ্রহটির দক্ষিণ ভাগে অনুসন্ধান চালায়। ১৯৯২ সালের অক্টোবরে এটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। আলাদা হয়ে যায় এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। শুক্রকে কেন্দ্র করে ঘোরার সময় এর দূরত্ব শুক্র থেকে ১৮২ কিলোমিটার থেকে ৬৬ হাজার কিলোমিটারের বেশিও ছিল।

অপভূ বনাম অনুভূ
হ্যালির ধূমকেতু এখন কোথায় ? 

পাইওনিয়ার প্রোগ্রামের অপর অংশে ছিল ভিনাস মাল্টিপ্রোব। এতে আবার ছিল একটি ছোট ও তিনটি ছোট অনুসন্ধানী যান। ডিসেম্বর মাসে এরা গ্রহটির ঘন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। কাজ করে ৪ মাস ১ দিন। শুক্রের বায়ুমণ্ডলের জন্ম, বিকাশ ও চলমান কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করে একটি যন্ত্র। বাগুমণ্ডলের উপরিভাগের স্তরগুলো জানার চেষ্টা করে। স্তরগুলো ওপর সৌর বিকিরণ ও আন্তঃগ্রহ স্থানের প্রভাব বের করার চেষ্টা করে।


ভিনাস মাল্টিপ্রোব


আরেকটি যন্ত্র শুক্রের সাথে সৌর বায়ুর মিথষ্ক্রিয়া জানার চেষ্টা করে। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে শুক্রের বায়ুমণ্ডলের তাপ বিন্যাস নিয়ে জানার চেষ্টা করে। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রোবের সাথে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। যন্ত্রাংশগুলো আলাদা হওয়ার আগে ১১০ কিলোমিটার উপরে থেকে কাজ করছিল।
Category: articles

রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩

আজ ১৪ মে। ১৯৭৩ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে প্রথম কোনো স্টেশন প্রেরণ করে। নাম স্কাইল্যাব। এর আগে ১৯৭১ সালে রাশিয়া পাঠিয়েছিল মহাকাশে প্রথম স্টেশন সালিউট ১। স্কাইল্যাব কক্ষপথে সময় কাটায় ২৪ সপ্তাহ। ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।


স্কাইল্যাব স্টেশন 
স্টেশনটিকে অনেকগুলো কাজ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে আছে সৌর মানমন্দির, পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও বহু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।

প্রথম মহাশূন্য স্টেশন

২০২৩ সালে এসেও স্কাইল্যাবই যুক্তরাষ্ট্রের এককভাবে পরিচালিত একমাত্র স্টেশন। যদিও ১৯৮৮ সালে আরেকটি স্থায়ী স্টেশনের পরিকল্পনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের পরিকল্পনা হচ্ছিল বলে মনোযোগ সেদিকে সরে যায়।

কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্যাটার্ন ভি রকেটে চেপে এটি ছুটে যায় মহাশূন্যে। ভর ছিল ৭৬.৫ কেজি। দৈর্ঘ্য ৮২ ফুট। কক্ষপথের দূরত্ব ছিল পৃথিবী থেকে ৪৩৪ ও ৪৪২ কিলোমিটার (অনুভূ ও অপভূ)। দিনে প্রায় ১৫ বার চক্কর খেত পৃথিবীকে। ৩টি অভিযানে মোট ৯ জন মানুষ স্টেশনটিতে সময় কাটিয়েছিলেন।

১৭১ দিনে স্টেশনটি মোট ২৪৭৬ বার পৃথিবীকে পাক খায়। নভোচারীরা এটি থেকে দশবার স্পেসওয়াক করেছিলেন। এতে ২০০০ ঘণ্টা ব্যাপী বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও মেডিকেল পরীক্ষা চালানো হয়। ৮টি সৌর শিখার ছবি ধারণ করা হয়, যা মনুষ্যবিহীন যানের মাধ্যমে সম্ভব হত না। এরই মাধ্যমে সৌর মুকুটের অস্তিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। অনেকগুলো পরীক্ষায় দেখা হয় মাইক্রোগ্র‍্যাভিটিতে দীর্ঘ সময় থাকলে কীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
Category: articles

বুধবার, ১০ মে, ২০২৩

বিজ্ঞানের কাজ হলো পৃথিবী ও মহাবিশ্বের বিভিন্ন ঘটনার পর্যবেক্ষণ। অতঃপর তার ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সম্ভাব্য পুর্বাভাস প্রদান। এভাবেই গড়ে ওঠে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে আগমন ঘটে প্রযুক্তির। কোয়ান্টাম মেকানিকস একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এর প্রয়োগ ঘটেছে বর্তমানে ইলেকট্রনিকসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমাদের হাতে থাকা মোবাইলের চিপের প্রযুক্তির গভীরে আছে কোয়ান্টাম মেকানিকসের কারিশমা। স্মার্টফোনে আছে কয়েক শ কোটি ট্রাঞ্জিস্টর। কোয়ান্টাম মেকানিকসের ধারণা কাজে না লাগানো গেলে সিলিকন-ভিত্তিক এই প্রযুক্তি কাজ করত না। ফোনের ক্যামেরার সিসিডি সেন্সর কাজ করত না আলোকবিদ্যুত তত্ত্বের ধারণা প্রয়োগ ঘটানো না গেলে। 




আবার প্রযুক্তিও অকৃতজ্ঞ নয়। বিজ্ঞান তো প্রযুক্তির পথ খুলে দেয়। প্রযুক্তিও আবার বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রাকে সহজ করে দেয়।  ছোট্ট এক প্রযুক্তি লেন্স। লেভেনহুকের হাত ধরে সেটাই সূচনা করে দেয় অণুজীববিজ্ঞানের মতো বিজ্ঞানের শাখা। সেই ধারা এখনো আছে। বিজ্ঞানের সব শাখা উপকৃত হচ্ছে প্রযুক্তি থেকে। বিজ্ঞান গবেষণার অবিচ্ছেদ্য অংশ পরিসংখ্যানিক উপাত্ত বিশ্লেষণ। কম্পিউটার প্রযুক্তির বদৌলতে সহস্র ঘণ্টার বিশ্লেষণ ও মডেলিং করা যাচ্ছে কয়েক সেকেন্ডে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত্বা, মেশিন লার্নিং ও বিগ ডেটা অ্যানালিটিক্স বিজ্ঞানের তত্ত্ব তৈরি সহজ করে দিচ্ছে। 


জ্যোতির্বিজ্ঞানকে বলা হয় প্রাচীনতম বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের সে শাখায়ও অবদান রাখছে প্রযুক্তি। খালি চোখে আকাশের কতটুকুই দেখা যায়! কত শত দূরের আলোকবর্ষের তারকারাজিকে টেলিস্কোপ হাজির করেছে আমাদের চোখের সামনে। সেসব পর্যবেক্ষণ থেকেই তো আমরা জানলাম, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। হাবল ও জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ আজো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। মহাশূন্যে পাঠানো অনুসন্ধানী যান দূর মহাকাশের খবর পৌঁছে দিচ্ছে আমাদের কাছে। বিলিয়ন বিলিয়ন বাইটের ডেটা থেকে সুপারকম্পিউটার প্যাটার্ন বের করে দিচ্ছি। সহজেই আমরা খোঁজ পেয়ে যাচ্ছি ট্যাবির নক্ষত্রের মতো ব্যতিক্রমী জিনিসের। 


মুদ্রার উল্টো পিঠের কথাও এবার বলি। না, পারমাণবিক বোমার কথা বলছি না। প্রযুক্তি আরও বহু উপায়েই ক্ষতিকর হতে পারে। আজ শুধু মহাকাশে একটু চোখ বুলাবো। স্পেসএসক্সের মতো কোম্পানিগুলো প্রতিতিয়ত মহাশূন্যে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাচ্ছে। পাঠাচ্ছে সরকারি বেসরকারি আরও নানান সংস্থাই। কৃত্রিম উপগ্রহের আছে নানান ব্যবহার। এর মধ্যে আছে যোগাযোগ,  আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ও পূর্বাভাস, জিপিএস দিকনির্দেশনা, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইত্যাদি। ইউসিএস স্যাটেলাইট ডেটাবেজের হিসাব অনুসারে বর্তমানে ৫৪৬৫টি উপগ্রহ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে। 


এতে জ্যোতির্বিদদের আপত্তি থাকার কথা নয়। বরং স্যাটেলাইট তো জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজেও লাগে। স্পেস টেলিস্কোপগুলো আকাশ পর্যবেক্ষণকে অনেকভাবে সুবিধাজনক করে দিচ্ছে। আলোকদূষণ, পর্যবেক্ষণে বিকৃতি নানান সমস্যার সমাধান স্পেস টেলিস্কোপ। কিন্তু সমস্যারও জন্ম দিচ্ছে স্যাটেলাইট। 


পৃথিবীর কক্ষপথের কৃত্রিম উপগ্রহরা বাধাগ্রস্থ করছে পৃথিবীভিত্তিক আকাশ পর্যবেক্ষণকে। সম্প্রতি নিম্ন-ভূ কক্ষপথে স্যাটেলাইটের সংখ্যা বাড়ছে। এমনিতেও বেশিরভাগ কৃত্রিম উপগ্রহের অবস্থান এ কক্ষপথে। ভূপৃষ্ঠের মোটামুটি ১৬০ কিলোমিটার থেকে ১,০০০ কিলোমিটার উচ্চতার কক্ষপথকে নিম্ন-ভূ কক্ষপথ বলা হয়। এ কক্ষপথের উপগ্রহদের বাধা সবচেয়ে বেশি টের পায় অপটিক্যাল ও নিকট-অবলোহিত (অবলোহিত আলোর কাছাকাছি পাল্লার আলো দেখার মতো) টেলিস্কোপগুলো। 


উপগ্রহের উপস্থিতিতে বড় অঞ্চল জুড়ে বা দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণ কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও সকাল ও সন্ধ্যার গোধূলির সময়টায় উপগ্রহ সূর্যের আলো প্রতিফলিত করে আরেকটি বিঘ্ন তৈরি করে। ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরি  (ইএসও) ২০২১ সালের এক গবেষণায় এ সমস্যাগুলো তুলে ধরে। দেখা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে তিনভাগ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ নষ্ট হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় আকাশের বড় এলাকার পর্যবেক্ষণ (wide-field surveys)। গোধূলির সময়ের ৩০-৫০ ভাগ পর্যবেক্ষণ এভাবে ক্ষতগ্রস্থ হয়। 


২০২০ ও ২০২১ সালের অন্য গবেষণায় দেখা হয় অপটিক্যাল ও নিকট-অবলোহিত টেলিস্কোপগুলোর ওপর প্রভাব। দেখা যায়, ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ (ভিএলটি) মধ্যম মানের ক্ষতির মুখে পড়ছে। একই আকারে ক্ষতির স্বীকার হবে ভবিষ্যতের ইএলটি (এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপ)। তবে চিলিতে নির্মাণাধীন রুবিন পর্যবেক্ষণকেন্দ্র আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ টেলিস্কোপগুলো অল্প সময়ে আকাশের বিশাল এলাকা স্ক্যান করে। এ কারণে সুপারনোভা ও ক্ষতিকর গ্রহাণু শনাক্ত করতে এরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। 


জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্যতম শাখা রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি। মহাকাশ থেকে আসা বেতার তরঙ্গ শনাক্ত ও বড় করে দেখার কাজ হয় এখানে। এ তরঙ্গকে সঙ্কেতে রূপান্তর করার মাধ্যমে মহাবিশ্বের অনেক তথ্য জানা যাচ্ছে। রেডিও টেলিস্কোপগুলো দৃশ্যমান আলোর খোঁজ করে না। ফলে দেখার সমস্যা এখানে হয় না। সমস্যা হয় উপগ্রহদের পৃথিবীর দিকে পাঠানো সঙ্কেতের কারণে। রেডিও টেলিস্কোপ শুধু রাতের মৃদু আলোরই খোঁজ করে না, কাজ করে ২৪ ঘণ্টা জুড়েই। ফলে শুধু গোধূলির সময় নয়, সারা দিনই এরা উপগ্রহের বাধায় পড়ে।  


এছাড়াও কথা আছে। উপগ্রহের পাঠানো শক্তিশালী সঙ্কেতের তুলনায় দূর মহাকাশ থেকে বেতার তরঙ্গ খুব মৃদু। ক্ষতি করার জন্য উপগ্রহকে দূরের বস্তুর সামনে না থাকলেও হচ্ছে। টেলিস্কোপের দৃষ্টির আওতায় কোনো এক জায়গায় থাকাই যথেষ্ট। সমস্যাটির সমাধান একটি আছে অবশ্য। ব্যাপারটাকে বেতার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন বর্ণালী ব্যবস্থাপনা। এ কাজের অংশ হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন কিছু নীতিমালা করেছে। উপগ্রহের জন্যে নির্দিষ্ট ব্যান্ডের কম্পাঙ্ক ও তরঙ্গদৈর্ঘ্য সংরক্ষিত রাখা হয়। 


তবে যোগাযোগের নতুন এক ঝাঁক স্যাটেলাইট নতুন সমস্যাও করছে। আগামী বছরগুলোতে নিম্ন-ভূ কক্ষপথে হাজার হাজার উপগ্রহের উপস্থিতিতে অবস্থা বদলে যাবে। আকাশে ঘুরে বেড়াবে বহুসংখ্যক দ্রুত গতির বেতার তরঙ্গের উৎস। ফলে আকাশের স্বাভাবিক পর্যবেক্ষণ ব্যাহত হবে। 


কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সাহায্যে উপাত্ত থেকে উপগ্রহের চিহ্ন দ্রুত মুছে ফেলা সম্ভব হলে খুব দারুণ হত। কিন্তু কাজটা মোটেও সহজ নয়। দূর আকাশের ছবির উপরে উপগ্রহের চলাচলের দাগ পড়ে যায়। পরবর্তীতে ছবিকে শতভাগ ঠিক করা সম্ভব হয় না। আবার ছবি ঠিক করতে গিয়ে দূরের মৃদু ছায়াপথের আলো বিকৃত হয়ে যায়। 


এসব সমস্যা সমাধানের জন্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা উপগ্রহের চলার পথ এড়িয়ে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যেতে পারেন। বা উপগ্রহ ক্যামেরা সামনে চলে এলে শাটার বন্ধ করে দিতে পারেন। এটা করতে গেলে হাজার হাজার উপগ্রহের সঞ্চার পথের খোঁজ রাখতে হবে। বাস্তবে যা অসম্ভবের নামান্তর। 


তবে চাইলে উপগ্রহের অপারেটররাও সমাধানে কাজে লাগতে পারেন। দৃশ্যমান আলোর টেলিস্কোপের জন্য সমাধান হতে পারে উপগ্রহকে অন্ধকার করে রাখা, চলার পথকে টেলিস্কোপের দৃষ্টির আওতার বাইরে রাখা, নিষ্ক্রিয় উপগ্রহকে কক্ষপথ থেকে বের করে দেওয়া ইত্যাদি। অনেকক্ষেত্রেই বাস্তবে এমন সহায়তা করেছেনও তারা। 


আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতিও ব্যাপারটা সমধানের প্রয়াস চালাচ্ছে। সাথে যুক্ত হয়েছে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন। তৈরি হয়েছে সিপিএস নামে একটি কেন্দ্র। যার সংক্ষিপ্ত নাম সেন্টার ফর প্রোটেকশন অব ডার্ক অ্যান্ড কোয়াইট স্কাই। বর্তমানে সক্রিয় ও আসন্ন উপগ্রহের ক্ষতিগুলো কেন্দ্রটি তুলে ধরছে। দেখা যাচ্ছে, এখনই আকাশে ২,৯৯৪টি উপগ্রহপুঞ্জ* (স্যাটেলাইট কন্সটেলেশন) আছে।  আরও ৪ লক্ষ ৩১ হাজার যুক্ত হবার অপেক্ষায় আছে! চার বছর আগে স্পেসএক্স ৬০টি স্টারলিংক উপগ্রহ নিক্ষেপের পর খুব দ্রুত বাড়ছে উপগ্রহের সংখ্যা।  


 ইএসওর বিজ্ঞানীরাও এয়ার অ্যান্ড স্পেস ল' জার্নালের এক নিবন্ধে তাদের উদ্বেগগুলো তুলে ধরেছেন। ইএসওর হিসাব বলছে, ভবিষ্যতে খালি চোখেই ১০০টি পর্যন্ত উপগ্রহ খালি চোখে দেখা যাবে। ভাবুন তাহলে রাতের আকাশ কতটা বদলে যাবে। আর যাদের পেশাই উপগ্রহের অপর পাশের বস্তু দেখা, তাদের যে কী বেহাল দশা হতে যাচ্ছে!


তারাও চেষ্টা করছেন যাতে উপগ্রহ ও পর্যবেক্ষণভিত্তিক জ্যোতির্বিদ্যার চর্চা একে অপরকে বাধাগ্রস্থ না করেই এগিয়ে যেতে পারে। কারণ দিন শেষে একে অপরকে কাজে লাগবেই। 


* উপগ্রহপুঞ্জ: একই উদ্দেশ্যে কাজ করা প্রায় একই রকম দেখতে এক গুচ্ছ উপগ্রহ 

লেখাটি বিজ্ঞানচিন্তার এপ্রিল ২০২৩ সংখ্যায় প্রকাশিত

তথ্যসূত্র: কিউটি ডট ইউ, হার্ভার্ড ডট এজু, ইউসিএস স্যাটেলাইট ডেটাবেজ, ইএসএ ডট ইন্ট, আর্থস্কাই ডট অর্গ 

  1.     https://qt.eu/discover-quantum/applications-of-qt/how-your-smartphone-uses-quantum-mechanics/
  2.     https://www.hup.harvard.edu/index-maint.html?isbn=9780674975910
  3.     https://www.ucsusa.org/resources/satellite-database
  4.     https://www.esa.int/ESA_Multimedia/Images/2020/03/Low_Earth_orbit
  5.     https://earthsky.org/space/how-satellites-harm-astronomy-whats-being-done

Category: articles

সোমবার, ৮ মে, ২০২৩

পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। এ কারণে দূরত্ব সবসময় এক থাকে না। কমে-বাড়ে। চাঁদের কক্ষপথের নিকটতম অবস্থানকে বলে অনুভূ। পৃথিবীর আকাশে চাঁদ বড়-ছোট হয়। সেটাও নির্ভর করে কক্ষপথের অবস্থানের ওপর। নতুন চাঁদ উদিত হওয়ার প্রায় ১৪ দিন পর চাঁদ পুরো গোল হয়। থালার মতো গোল ও সুন্দর ও চাঁদের এ দশার নাম পূর্ণিমা।


সুপারমুন। ছবি: টাইম অ্যান্ড ডেইট


☞ অনুভূ ও অপভূ (লেখা আসছে...)
পূর্ণিমা কীভাবে হয়?

অনুভূ অবস্থানে থাকার সময় পূর্ণিমা হলে তাকেই বলে সুপারমুন। চাঁদকে এ সময় ১৪% বড় ও ৩০% বেশি উজ্জ্বল দেখায়। গড়ে প্রতি ৪১৪ দিনে একবার সুপারমুন দেখা যায়। কিন্তু প্রত্যেক পূর্ণিমায় সুপারমুন হয় না কেন?

চাঁদ পৃথিবীকে একবার পুরো ঘুরে আসে ২৭ দিনে। আর পূর্ণিমা আসে প্রতি ২৯.৫ দিনে একবার। মনে রাখতে হবে, শুধু চাঁদই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে না। পৃথিবীও করে সূর্যকে। ফলে চাঁদ ২৭ দিনে একবার পৃথিবীকে ঘুরে আসলেও একই দশায় আসতে আরও প্রায় ২ দিন লাগে। এ কারণে সবসময় একই দশা কক্ষপথের একই জায়গায় হয় না।

কখনও তো পূর্ণিমার সময় চাঁদ থাকে অপভূ অবস্থানে। মানে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের একটি অবস্থানে। একে বলে মাইক্রোমুন।

২১০০ সাল পর্যন্ত সুপারমুনের তালিকা দেখুন এখানে। সুপারমুনের নিয়মিত খোঁজখবর এখানেও পাবেন

সূত্র: নাসা
Category: articles

রবিবার, ৭ মে, ২০২৩

রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু চাঁদ। চাঁদের দূরত্বের ওপর নির্ভর করে পৃথিবীর জোয়ার-ভাটা হাল্কা বা তীব্র হয়। সূর্যগ্রহণের জন্যও দায়ী চাঁদ।





কিন্তু পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত? উত্তর হলো, গড়ে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। মাইলের হিসাবে ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮৫৫। গড় দূরত্ব বলার কারণ সূর্যের মতোই পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বও নির্দিষ্ট নয়। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারদিকে ঘোরে, চাঁদ তেমনি ঘোরে পৃথিবীর চারপাশে। আর চলার কক্ষপথটা বৃত্তাকার নয়। বরং উপবৃত্তাকার। বৃত্তাকার হলে সবসময় দূরত্ব একই থাকত।

☛ কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হয় কেন? (লেখা আসছে...)
সূর্যের দূরত্ব কত?

পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। সবচেয়ে কাছের বিন্দুর নাম অনুভূ। আর দূরের বিন্দুর নাম অপভূ। পৃথিবীর চারপাশে ঘোরা বস্তুর ক্ষেত্রে বিন্দুদুটির নাম অনুসূর ও অপসূর৷

অনুসূর বনাম অপসূর
☛ অনুভূ বনাম অপভূ (লেখা আসছে...)

চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এলে দূরত্ব হয় ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটার বা ২ লক্ষ ২৬ হাজার মাইল। চাঁদ অনুভূ অবস্থানের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় পূর্ণিমা হলে তাকে শখের জ্যোতির্বিদরা বলেন সুপারমুন। সুপারমুন মৃদু উজ্জ্বল চাঁদের চেয়ে প্রায় ১৭% বড় ও ৩০% বেশি উজ্জ্বল হয়। এ সময় অবশ্য জোয়ারের তীব্রতাও বেশি হয়।

সুপারমুন কী?

পৃথিবী থেকে চাঁদ সবচেয়ে দূরে যায় সর্বোচ্চ প্রায় ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। চাঁদ অপভূ অবস্থানে থাকার সময় সূর্যগ্রহণ হলে দারুণ দৃশ্য দেখা যায়। এমনিতে পৃথিবীর আকাশে দৃশ্যমান চাঁদ ও সূর্যের আকার সমান। তবে চাঁদ অপভূতে থাকলে একটু ছোট দেখায়। ফলে সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারে না। চাঁদের চারপাশ দিয়ে দেখা যায় সূর্যের আলো। গোল একটি বলয় দেখা যায় তখন।

ছবি: নাসা 

☛ সূর্য চাঁদ থেকে কত বড়? (লেখা আসছে...)
চাঁদ কত বড়?

সূর্যের ব্যাস চাঁদের প্রায় ৪০০ গুণ। আবার আবার চাঁদ সূর্যের চেয়ে পৃথিবীর ৪০০ গুণ কাছে। এই দুই কারণে পৃথিবীর আকাশে চাঁদ ও সূর্য সমান।

এক সময় চাঁদ পৃথিবীর আরও কাছে ছিল। একটি তত্ত্ব অনুসারে, পৃথিবীর গঠনের প্রাথমিক অবস্থায় মঙ্গল গ্রহের আকারের একটি বস্তুর সাথে ধাক্কা লাগে। এই ধাক্কার ফলে আলাদা হয়ে যাওয়া অংশই পরে চাঁদ হিসেবে গড়ে ওঠে।

গ্রহ-নক্ষত্র গোল কেন?

ধীরে চাঁদের সাথে দূরত্ব বেড়েছে পৃথিবীর। এখনও বাড়ছে। প্রতি বছর চাঁদ সরে যাচ্ছে দেড় ইঞ্চি দূরে। যে হারে আমাদের নখ বড় হয়!


Category: articles

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩

ধরুন, সামনে তাকিয়ে একটা বিল্ডিং বা পাহাড় দেখলাম। যখন দেখলাম তখনও সেটা সে অবস্থায়ই আছে। এমন না যে আমরা দেখতে দেখতে বিল্ডিংয়ের কোনো পরিবর্তন ঘটে গেছে। তবে পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের দূরের বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়।




চাঁদের কথাই ধরুন। চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে আছে। আলোর বেগ অনেক বেশি। সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। তাও এত দূর থেকে আলো আসতে ১.৩ সেকেন্ড সময় তো লাগেই। মানে এই মূহুর্তে আমরা চাঁদের যে আলো দেখছি তা ১.৩ সেকেন্ড আগের প্রতিফলিত আলো

চাঁদ কত দূরে আছে?


 চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 

সূর্য তো আরও দূরে। আছে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। আলো আসতে সময় লাগে গড়ে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। তারমানে সূর্যকে আমরা ৮ মিনিট আগের অবস্থায় দেখি। এখন সূর্য গায়েব হয়ে গেলে আরও ৮ মিনিট পরে তা আমরা জানতে পারব।

সূর্য কত দূরে আছে?

সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় চার আলোকবর্ষ। তার মানে নক্ষত্রটার চার বছর আগের দৃশ্য দেখি আমরা। আমাদের অন্যতম কাছের ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা। দূরত্ব ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। একবার ভাবুন। উত্তর আকাশে যে অ্যান্ড্রোমিডাকে আমরা দেখি তা আসলে ২৫ লাখ বছর আগের অ্যান্ড্রোমিডা!

এক আলোকবর্ষ কত বড়?

অ্যানড্রোমিডা কীভাবে দেখব?

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেন ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের কথা। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের আবিষ্কৃত নক্ষত্র। স্বাভাবিকভাবেই যত দূরে আমরা কোনো নক্ষত্র দেখব, সেটা হবে ততই প্রাচীন বা পুরনো। ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের অবস্থান পৃথিবী থেকে ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ। ভাবুন! নক্ষত্রের ২৮০ কোটি বছরেরপুরনো দৃশ্যও মানুষ দেখেছে।

২০২২ সাল পর্যন্ত পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের দেখা ছায়াপথের নাম এইচডি১। দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ। মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। তাহলে তার চেয়ে আগে ছায়াপথ কোথা থেকে আসল? আসলে দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ হলেও ছায়াপথটি আমরা ৩৩২৯ বছর আগে অবস্থায় দেখছি না। মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে বস্তুদের লোহিত সরণ ঘটে। এর ফলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ১৩৮০ কোটির বদলে প্রায় ৪৬৫০ কোটি।

মহাবিশ্ব কত বড়?

তার মানে, আমরা পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের যত দূরে তাকাব, তত প্রাচীন দৃশ্য দেখব। 

আর আকাশযান শনাক্ত ও ব্যবস্থাপনার জন্য যে রেডার ব্যবহার করা হয় সেটাও কিন্তু এই বুদ্ধি দিয়েই কাজ করে। রেডার থেকে বিমান বা জাহাজে সঙ্কেত পাঠানো হয়। সেটা যানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। যাওয়া-আসার সময়টুকু হিসাব করেই বের করা দূরত্ব।


পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরের বস্তুগুলোর একটি তালিকা দেখতে পারবেন উইকিপিডিয়ায়। 
Category: articles

রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩

আমাদের চোখে কোনো কিছুর আলো এসে পড়লে তবেই আমরা জিনিসটা দেখতে পাই। সূর্যও তাই। সূর্যের আলো আমাদের চোখে এসে লাগলে আমরা দেখি সূর্যকে। ধরুন কোনো অজানা কারণে সূর্য হারিয়ে গেল। বা গায়েব হয়ে গেল। কতক্ষণ পরে ব্যাপারটা আমরা বুঝতে পারব? উত্তর হলো, সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে যে সময় লাগে।



আলো সূর্যের হোক আর যারই হোক, তা তো চলবে আলোর বেগেই। আর আলোর বেগ সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। এবার হিসাবটা আমরা নিজেরাই করে ফেলি। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব আমাদের জানা। ১৫ কোটি কিলোমিটার বা ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। দূরত্বটার একটা নামও আছে। অ্যাস্ট্রোনমিকেল ইউনিট বা এইউ। জ্যোতির্বিদ্যায় বড় বড় দূরত্বের এককের মধ্যে সুবিধাজনক এক একক এটি।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?
জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

দূরত্বকে আলোর বেগ দিয়ে ভাগ করলেই আমরা সময়টা পেয়ে যাব। ৫০০ সেকেন্ড বা ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড।

এখানে একটি ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে। এই দূরত্বটা হলো গড় পরিমাপ। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে চলে। ফলে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ১৪.৭ কোটি থেকে ১৫.২ কোটি কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। পৃথিবী সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকলে আলো আসতে ৪৯০ সেকেন্ড বা ৮ মিনিট ১০ সেকেন্ড সময় লাগে। আবার দূরতম অবস্থানে সময় লাগবে ৮ মিনিট ২৭ সেকেন্ড বা ৫০৭ সেকেন্ড।

অপসূর বনাম অনুসূর
কক্ষপথ কেন উপবৃত্তাকার? (লেখা আসছে...)

আসল কথা শেষ। সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে গড়ে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড লাগে।

তবে কথা আরও আছে। সূর্যের আলো তো সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে আসে না। সূর্যের অভ্যন্তরে ঘটা ফিউশনের ফলে সৃষ্ট আলো ও তাপ প্রায় ৭ লক্ষ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাইরে আসে।

সূর্যের আলো কেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করে গামা বিকিরণ হিসেবে। এরপর যাত্রাপথে সূর্যের বিকিরণ অঞ্চলে বহুবার নির্গত ও শোষিত হয়। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এরপর বেরিয়ে আসে বাইরে।

সূর্য কত বড় (লেখা আসছে...)
সূর্য জ্বলে কীভাবে?
এক নজরে সূর্য

বাস্তবতা হলো আমরা এখন সূর্যের আলো দেখি তা তৈরি হয়েছিল বহু হাজার বছর আগে। পৃষ্ঠে চলে আসার পর আমাদের কাছে আসতে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড লাগে তা ঠিক আছে। মহাবিশ্বের অন্য ব্যাপারের মতো এখানেও তাই যত দূরে তাকাব, মহাবিশ্বের তত অতীত দেখব। আমরা তাই সূর্যকে দেখি ৮ মিনিট আগের অবস্থায়। সূর্যের নিকটতম তারা প্রক্সিমা সেন্টোরিকে দেখি প্রায় চার বছর আভে এটি যেমন ছিল তেমন।

যত দূর তত অতীত
 সূর্যের নিকটতম তারা 

ধরুন দূরের কোনো ছায়াপথে এলিয়েন আছে। টেলিস্কোপে চোখ রেখে তারা হয়ত ডাইনোসরদেরও দেখতে পারে!

Category: articles

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

আমরা জানি, শনি গ্রহের বলয় আছে। তা ঠিক আছে। তবে বলয় আছে অন্য গ্রহেরও। সব মিলিয়ে সৌরজগতের চারটি গ্রহের বলয় আছে। এরা হলো চার বিশাল গ্রহ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। বলয় শুধু একটাই নয়। আছে অনেকগুলো৷

শনির বলয় থাকার কথা বহু আগে থেকেই জানা। বলয় সবচেয়ে বিশালও এই গ্রহটির। তবে অন্য গ্রহদের বলয় খুঁজে পাওয়া যেতে থাকে ১৯৭০ এর দশক থেকে। বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের বলয় অনেক হালকা, অন্ধকার ও ছোট।


বৃহস্পতি গ্রহের বলয়। ছবিসূত্র: স্পেস ডট কম 

বৃহস্পতির বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৯ সালে। ভয়েজার ১ মহাকাশযান এর কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ব্যাপারটা জানা যায়। নব্বইয়ের দশকে গ্যালিলিও অরবিটার আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালায়। বলয়ের প্রধান উপাদান ধূলিকণা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও পৃথিবীর শক্তিশালী টেলিস্কোপে এ বলয় দেখা যায়।

শনির বলয় ১৬১০ সালেই গ্যালিলিও দেখতে পান। তবে শক্তিশালী টেলিস্কোপের অভাবে বলয় সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেননি। ১৬৬৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স প্রথম জানান, জিনিসটা আসলে চাকতির মতো বলয়। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে জানা যায়, বলয় আসলে ছোট ছোট অনেক অংশ নিয়ে গঠিত। সব মিলিয়ে বলয় আছে ১২টি।

ইউরেনাসের বলয় একটু নতুন। গ্রহটির আগের চাঁদদের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে বলয়গুলো। ১৯৭৭ সালে আবিষ্কৃত নয়টি বলয়। পরবর্তীতে ভয়েজার ২ মহাকাশযান ২টি বলয় আবিষ্কার করে। আরও ২টি খুঁজে পায় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে সব মিলিয়ে বলয় আছে অন্তত ১৩টি। উইলিয়াম হার্শেল ১৭৮৯ সালে এ বলয় দেখার কথা বলেছিলেন। তবে আসলেই দেখতে পেরেছিলেন সেটা নিয়ে মতভেদ আছে। কারণ বলয়গুলো খুব হালকা।


নেপচুনের বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৯ সালে। ভয়েজার ২ যান কাছ দিয়ে উড়ে যাবার সময়। বলয় পাওয়া গেছে ৬টি। সবগুলোই হালকা। নেপচুনের চারটি চাঁদই বলয়ের ভেতর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।

☛ ভয়েজার মহাকাশযানের দুর্দান্ত অভিযাত্রা (লেখা আসছে...)
☛ সব্বচেয়ে দূরের মহাকাশযান (লেখা আসছে...)

শুধু গ্রহের নয়, বলয় আছে উপগ্রহেরও। ২০০৮ সালের এক রিপোর্টে শনির চাঁদ রিয়ায় বলয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। আর কোনো উপগ্রহের বলয় থাকার কথা জানা যায়নি। বামন গ্রহ প্লুটোর বলয়ের কথা একবার প্রস্তাব করা হলেও নিউ হরাইজনস অভিযানের চিত্র সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৭ সালে দেখা যায়, বামন গ্রহ হাউমেয়াও বলয়ের মালিক৷

বহির্গ্রহেদের অনেকের ক্ষেত্রেই বলয় থাকার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই সে প্রস্তাব বাতিল হয়েছে বিভিন্ন কারণে। তবে একটি বহির্গ্রহ এ রেকর্ড ধরে রেখেছে। নাম এইচআইপি ৭১৩৭৮ এফ।


সূত্র: ক্যালটেক, ইউনিভার্স টুডে

Category: articles
গত শতকে আমরা জানতে পারি, মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট অতীত আছে। তার আগে স্থির অবস্থা তত্ত্ব জনপ্রিয় ছিল। ধারণা করা হত, মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে উপস্থিত আছে। বয়স অনন্ত হলে ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন আসে না। কিন্তু কবির কথা, “জন্মিলে মরিতে হবে।“ তাই ভবিষ্যতে কী হবে সেটা বড় এক প্রশ্ন। 


১৯২০ সাল থেকে ১৯৫০। এই বিশ বছর ধরে বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা গেল, ছায়াপথরা একে অপর থেকে দূরে সরছে। এ থেকেই তৈরি হয় বিগ ব্যাং তত্ত্ব। ১৯২৭ সালে জর্জ লেমেইত্র বলেন, প্রসারণশীল মহাবিশ্ব থেকে বলা যায়, অতীতে মহাবিশ্ব ছিল নিবিড় এক বিন্দুর মতো। এর আগে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের সমাধান করে আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যানও একই কথা বলেছিলেন। আইনস্টাইনের সমীকরণের একটি সমাধান অনুসারে দেখা যায়, একটি প্রাথমিক সিংগুলারিটি থেকে জন্ম মহাবিশ্বের। ১৯৬৪ সালে আবিষ্কৃত হয় মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ। বিগ ব্যাংয়ের পক্ষে একটি বড় প্রমাণ এটি। 

১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, মহাবিশ্বের প্রসারণের গতি ক্রমেই বাড়ছে। এর জন্য দায়ী শক্তিকে নাম দেওয়া হয় ডার্ক এনার্জি। আইনস্টাইনের সমীকরণ বলছিল, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু আইনস্টাইন নিজেই সেটা বিশ্বাস করতেন না। সমীকরণ অসম্পূর্ণ মনে করে তিনি তাই বাড়তি একটি ধ্রুবক যোগ করেছিলেন। পরে স্বীকার করেন, এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কিন্তু এখন আবার মনে হচ্ছে এই ধ্রুবক দরকার আছে। এই ধ্রুবক আসলে ডার্ক এনার্জির বিপরীতে কাজ করে। 

ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের ভাগ্যে মোটা দাগে বললে তিনটি ঘটনা ঘটতে পারে। হয় এটি চিরকাল প্রসারিত হতে থাকবে। মহাকর্ষ প্রসারণের গতি কমানোর চেষ্টা করবে। তবে ডার্ক এনার্জির কারণে প্রসারণের গতি ক্রমেই বাড়বে। আরেকটি হতে পারে, মহাবিশ্বের প্রসারণ এক সময় থেমে যাবে। শুরু হবে সঙ্কোচন। আরেকটি সম্ভাবনা হলো, প্রসারণ চলতে থাকবে। তবে প্রসারণের গতি ক্রমশ কমতে থাকবে। কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে না। 

ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের ভাগ্যে কী ঘটবে তার বড় একটি প্রভাবক হলো মহাবিশ্বের ঘনত্ব পরামিতি (density parameter)। একে গ্রিক বর্ণ ওমেগা (Ω) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এর মান পেতে মহাবিশ্বের বস্তুর গড় ঘনত্বকে ঘনত্বের একটি ক্রান্তি মান দ্বারা ভাগ করা হয়। ঘনত্বের যে মান খুব অল্পের জন্য মহাবিশ্বের প্রসারণকে থামাতে বন্ধ হবে তার নাম ক্রান্তি (critical) ঘনত্ব। 

মহাবিশ্বের ভবিষ্যতের সাথে এর আকৃতিরও সম্পর্ক আছে। ওমেগার মান ১-এর বেশি হলে মহাবিশ্বের আকৃতি হবে আবদ্ধ গোলকের পৃষ্ঠের মতো। কারণ এক্ষেত্রে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রান্তি ঘনত্বের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর পৃষ্ঠের মতো এমন মহাবিশ্বের ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রির বেশি হবে। তবে বড় মাপকাঠিতে মহাবিশ্বের আকৃতি হবে উপবৃত্তের মতো। মহাকর্ষের প্রভাবে এক সময় প্রসারণ থেমে যাবে। শেষ পর্যন্ত ঘটবে বিগ ক্রাঞ্চ (Big Crunch) বা মহাসঙ্কোচন। বিন্দু থেকে আসা মহাবিশ্ব বিন্দুতে গিয়েই আবার মিশে যাবে। 

তবে কিছু কিছু আধুনিক তত্ত্ব বলছে, ওমেগার মান ১-এর বেশি হলেও ডার্ক এনার্জির প্রভাবে মহাবিশ্ব প্রসারিত হতেই থাকবে। এ কারণে মহাসঙ্কোচন ঘটার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত অর্জিত জ্ঞান অনুসারে কম। তবে ঘটবেই না সেটা বলার জো নেই। 

ওমেগার মান ১-এর কম হলে মহাবিশ্ব হবে উন্মুক্ত। ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রির কম হবে। মহাকর্ষ প্রসারণকে কিছুটা কমাবে। কিন্তু ডার্ক এনার্জির প্রভাবে সে বাধা উপেক্ষা করে প্রসারণের গতি বরং আরও বেড়ে যেতে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মহাকর্ষ, তড়িচ্চুমকত্ব ও সবল নিউক্লীয় বলের বাঁধন ছিঁড়ে যাবে। এ অবস্থাকে বলা হয় বিগ রিপ (Big Rip) বা মহাভাঙন। 

মহাবিশ্বের সম্ভাব্য আকৃতি

একই রকম পরিস্থিতিতে আরেকটি সম্ভাব্য পরিণতির নাম বিগ ফ্রিজ (Big Freeze) বা মহাহিমায়ন। এ অবস্থায় সর্বত্র বিরাজ করবে হিমশীতল অবস্থা। হবে না কোনোরকম তাপ বিনিময়। থেমে যাব বস্তুকণার চলাচল। এ কারণে এর অপর নাম তাপীর মৃত্যু। এটা ঘটে গেলে বস্তুর মধ্যে আর কোনো প্রকার তাপ বিনিময় সম্ভব হবে না। সব যন্ত্র অচল হয়ে যাবে। এনট্রপি (শক্তি রূপান্তরের অক্ষমতা) হবে সর্বোচ্চ। 

তবে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রান্তি ঘনত্বের সমানও হয়ে যেতে পারে। সত্যি বলতে, বর্তমান পর্যবেক্ষণ এর পক্ষেই কথা বলছে। এমন মহাবিশ্বেই ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রি হয়। এক্ষেত্রে মহাবিশ্ব হবে সমতল। পর্যবেক্ষণ বলছে, মহাবিশ্ব এমনই। এই ফলাফলের ত্রুটির মাত্রা মাত্র ০.৪%। এই মহাবিশ্বও চিরকাল প্রসারিত হবে, তবে প্রসারণের হার ক্রমশ কমবে। তবে কখনোই একেবারে থেমে যাবে না। কিন্তু ডার্ক এনার্জি ভূমিকা রাখলে প্রসারণ শুরুতে থামলেও আবার বেড়ে যাবে। পরিণতি হবে সেই উন্মুক্ত মহাবিশ্বের মতোই। 

আরও কিছু কমসম্ভাব্য ঘটনা ঘটতে পারে মহজাবিশ্বের ভাগ্যে। এর একটি হলো বিগ বাউন্স। এটা আসলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে চক্রাকার মডেলের একটি অংশ। এটি অনুসারে, মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল সঙ্কুচিত অবস্থা থেকে। আর সেই সঙ্কুচিত অবস্থাটা এসেছিল তার পূর্ববর্তী একটি প্রসারণ থেমে গিয়ে গুটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। এভাবেই মহাবিশ্ব একের পর সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হচ্ছে। একের পর ঘটছে বিগ ব্যাং ও বিগ ক্রাঞ্চ। এ জন্যেই এই মডেলের নাম চক্রাকার মডেল। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন আরও একটি সম্ভাবনার কথা। এর নাম বিগ স্লার্প (Big Slurp)। স্লার্প অর্থ গ্রাস করা বা গ্রাস করার সময় সৃষ্ট শব্দ। এ তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব এখন নকল ভ্যাকুয়াম অবস্থায় আছে। যেকোনো সময় চলে যেতে পারে প্রকৃত ভ্যাকুয়ামে। 

প্রকৃতির যেকোনো ভৌত প্রক্রিয়া সবসময় সর্বিনিম্নের শক্তির অবস্থানে থাকতে চায়। আর মহাবিশ্ব সর্বনিম্ন শক্তির অবস্থায় থাকলেই কেবল প্রকৃত ভ্যাকুয়ামে থাকবে। এখন সেটা নাও হতে পারে। হয়ত মহাবিশ্ব এখন উচ্চতর শক্তির অবস্থানে আছে। তার মানে আছে নকল ভ্যাকুয়াম অবস্থায়। সেক্ষেত্রে যেকোনো সময় এটি আসল ভ্যাকুয়ামে চলে যাবে। তার সাথে সাথে আমূল পাল্টে যাবে আমাদের চিরচেনা মহাবিশ্ব। 

ভৌত ধ্রুবকদের মান বদলে যেতে পারে। পাল্টে যেতে পারে আলোর বেগের মান কিংবা অ্যাভোগেড্রো ধ্রুবক। ফলে স্থান, কাল, বস্তু ও শক্তির ধারণা একদম বদলে যেতে পারে। হয়ত আগাম কোনো সঙ্কেত না দিয়েই ধ্বংস হয়ে যাবে মহাবিশ্ব। 

লেখাটি লেখকের অনূদিত দ্য লাস্ট থ্রি মিনিটস বইয়ের পরিশিষ্ট অংশে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এগারশ ও তৃতীয় অধ্যায়ে। 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...