Advertisement

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৬

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটা এক ধরনের নক্ষত্র। তবে সাধারণ নক্ষত্রদের চেয়ে আলাদা। এদের ব্যাস মাত্র ২০ কিলোমিটারের মতো। আর ভর সূর্যের প্রায় ১ দশমিক ৪ গুণ। তার মানে অতি সামান্য জায়গায় অনেক বেশি ভর। আপনি যদি নিউট্রন নক্ষত্রের মাত্র এক চা-চামচ পরিমাণ নিয়ে পৃথিবীতে ওজোন করেন, দেখা যাবে ওটাই হয়ে যাচ্ছে একশ কোটি টন!

নিউট্রন স্টার 

বেশি ঘনত্ব ও ছোট্ট সাইজের কারণে এদের মহাকর্ষ হয় অত্যন্ত শক্তিশালী। পৃষ্ঠে মহাকর্ষের তীব্রতা থাকে পৃথিবীর 2 x 1011  গুণ (২ এর পরে ১১টি শূন্য দিলে যে সংখ্যা হবে)। এদের থাকে অতি শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্রও। তাও পৃথিবীর চেয়েও ১০ লক্ষ গুণ!

নক্ষত্রদের জীবনের একটি অন্তিম পরিণতি হল এই নিউট্রন স্টার। যেসব ভারী নক্ষত্রের ভর শুরুতে সূর্যের ৪ থেকে ৮ গুণ থাকে, তারাই পরবর্তীতে পরিণত হয় নিউট্রন স্টার-এ। নিউক্লিয়ার জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এদের মধ্যে সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে। এই বিস্ফোরণের সময় এদের বাইরের স্তর আলাদা হয়ে যায়। নক্ষত্রের কেন্দ্রীয় অঞ্চল মহাকর্ষের প্রভাবে গুটিয়ে যায়। এটা এত বেশি সঙ্কুচিত হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন মিলিত হয়ে নিউট্রনে পরিণত হয়। ফলে এরা গঠিত হয় শুধুই নিউট্রন দিয়ে! আর নামটি নিউট্রন স্টার হয়েছে সে জন্যেই।

আরো পড়ুনঃ 
 নক্ষত্রের জীবন চক্র 

সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে এরা একাকীও থাকতে পারে, আবার অন্য কোনো তারকার সাথে মিলে বাইনারি স্টার হিসেবে আচরণ করতে পারে (বাইনারি স্টাররা (দুটি নক্ষত্র) একটি নির্দিষ্ট যৌথ ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে)। এখন পর্যন্ত জানা গেছে, এমন চারটি নিউট্রন নক্ষত্র পাওয়া গেছে যাদের চারপাশে গ্রহ আছে।


পৃথিবীর তুলনায় নিউট্রন নক্ষত্রের সাইজ

নিউট্রন নক্ষত্ররা বাইনারি জগতের সদস্য হলে ভর মাপা সহজ হয়ে যায়। রেডিও ও এক্স-রে  টেলিস্কোপের সাহায্যে অনেকগুলো নিউট্রন স্টারকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এ পর্যবেক্ষণ  থেকেই জানা গেছে, এদের ভর সূর্যের প্রায় ১ দশমিক ৪ গুণ হয়। বাইনারি জগতের দুটো সদ্যসের একটি সম্পর্কে কিছু জানা না থাকলেও অপরটির তথ্য কাজে লাগিয়ে বের করে ফেলা যায়, সেটি আসলে আরেকটি নিউট্রন নক্ষত্র, নাকি ব্ল্যাক হোল

আবর্তনশীল নিউট্রন স্টারদেরকে বলা হয় পালসার

আরো পড়ুন নিয়মিত ধারাবাহিকঃ
 ব্ল্যাক হোলের গভীরে
↠ পালসার কাকে বলে?

সূত্রঃ
১। http://imagine.gsfc.nasa.gov/science/objects/pulsars1.html
Category: articles

বুধবার, ২৯ জুন, ২০১৬

নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে নিশ্চয় দুটি তারা জড়িত আছে ব্যাপারটায়। আসলেই তাই। তবে একটু সতর্ক হতে হবে। দুটি তারকা নিয়ে আরেক ধরনের সিস্টেম গঠিত হতে পারে, যার নাম বাইনারি স্টার।
সাধারণত পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে কাছাকাছি অবস্থানে থাকা দুটি তারকাকে ডাবল স্টার বলে। বাংলায় একে অনেক সময় যুগলতারা বলা হয়।
অন্তত দুটি কারণে একাধিক তারকা ডাবল স্টার নাম পেতে পারে। এক, হতে পারে এরা বাইনারি স্টার। বাইনারি স্টার হচ্ছে দুটি তারকার এমন একটি ব্যবস্থা যাতে এরা একে অপরকে উভয়ের যৌথ মহাকর্ষ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে। এদেরকে বাংলায় সাধারণত জোড়াতারা নামে ডাকা হয়।
বাস্তবে অনেক দূরে অবস্থিত দুটি তারা আকাশের একই দিকে অবস্থিত হলেও ডাবল স্টার দেখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে এদের মধ্যে কোনো মহাকর্ষীয় আকর্ষণ থাকে না। নিছক ঘটনাক্রমে এদেরকে কাছাকাছি দেখা যায়।
বকমণ্ডলীর ডাবল স্টার আলবিয়েরো
১৭৮০ সালের দিক থেকে জ্যোতির্বিদরা ডাবল স্টারদের দূরত্ব ও এদের নিজেদের কৌণিক দূরত্ব বের করা শুরু করেন। যদি এদের আপেক্ষিক গতি কক্ষপথের চাপের মতো দেখা যায়, অথবা এদের প্রকৃত গতির তুলনায় আপেক্ষিক গতি যদি ক্ষুদ্র হয়, তাহলে ধরে নেওয়া হয় এরা বাইনারি স্টার। অন্য ক্ষেত্রে এরা দেখতেই ডাবল, বাস্তবে একে অপরের সাথে সম্পর্কহীন।
সপ্তর্ষীমণ্ডলীর নক্ষত্র মিজার একটি যুগলতারা। ১৬৮৫ সালে দেখা যায় রাতের আকাশের ১৩তম উজ্জ্বল নক্ষত্র অ্যাক্রাক্সও একটি যুগলতারা। এরপর থেকেই ডাবল স্টারের খোঁজার হিড়িক পড়ে যায়।
দেখা যায় যে উত্তর গোলার্ধের আকাশে আপাত উজ্জ্বলতা +৯ এর বেশি এমন প্রায় ১৮টি তারকার মধ্যে ১ টি করে তারকা যুগলতারা গঠন করে, যদি ৩৬ ইঞ্চি টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলে।
বকমণ্ডলীর নক্ষত্র আলবিয়েরো একটি ডাবল স্টার।
আরো পড়ুনঃ 
এ সপ্তাহের তারাঃ মিজার ও অ্যালকর 
সপ্তর্ষীমণ্ডলীর ডাবল স্টার মিজার ও অ্যালকর 
সূত্রঃ
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Mizar_and_Alcor
২। http://astrobob.areavoices.com/2013/07/26/check-out-albireo-summers-most-spectacular-double-star/
Category: articles

রবিবার, ১৫ মে, ২০১৬

রাতের আকাশের তারাসহ বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের জন্যে বিষুবলম্বের সাথে পরিচয় থাকা দরকার। আপনারা নিশ্চয়ই পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা সম্পর্কে জানেন। পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝ বরাবর পূর্ব পশ্চিমে কল্পিত রেখার নাম নিরক্ষ রেখা বা বিষুব রেখা (Equator)। বিষুব রেখার সমান্তরালে উত্তরে বা দক্ষিণে যে রেখাগুলো কল্পনা করা হয় সেগুলোই হল অক্ষাংশ রেখা। এই রেখার উপরের কোনো বিন্দুর নাম অক্ষাংশ (Latitude)। দ্রাঘিমা বলা হয় উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে যাওয়া রেখাগুলোর উপরের অবস্থানকে। বিষুবলম্ব বুঝতে হলে অন্তত অক্ষাংশ বোঝা প্রয়োজন।

পৃথিবীর অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা

বাংলাদেশের অক্ষাংশ
বাংলাদেশ বা এর পাশ্ববর্তী অঞ্চল থেকে তারা চিনতে বিষুবলম্ব সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান জানা প্রয়োজন। বাংলাদেশ বিষুব রেখা থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তরে অবস্থিত। ফলে এর অক্ষাংশ হল ২৩ ডিগ্রি উত্তর। ঠিক এই জায়গা দিয়েই দুটি ক্রান্তীয় রেখার একটি কর্কটক্রান্তি (Tropic of cancer) রেখা চলে গেছে পূর্ব- পশ্চিমে।
পৃথিবীতে বাংলাদেশের অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে

এবার মূল আলোচনায় আসি।

আমাদের আকাশকে মাথার উপরে একটি গম্বুজের মত কল্পনা করুন। যদিও আসলে তারাগুলো পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত তবু রাতের আকাশে এদেরকে এরকম কোন কল্পিত গম্বুজে ছাঁটানো লাইটের মতই মনে হয়। এটা ধরে নিলে তারাদেরকে অবস্থান নির্ধারণ করাও সহজ হয়ে যায়। তাহলে আকাশকে গম্বুজ কল্পনা করলেন। আমরা বোঝার জন্যে যাকে গম্বুজ কল্পনা করলাম তার সঠিক নাম খ-গোলক (Celestial Spehere)। এবার বিষুব রেখার ঠিক বরাবর উপরে খ-গোলকের মধ্যে একটি রেখা কল্পনা করুন। একে বলা হয় খ-বিষুব।

আকাশের নামকরণ 

খ-বিষুব থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে অবস্থিত তারাদের অবস্থান পৃথিবীর অক্ষাংশের মতোই বের করা হয়। তবে পৃথিবীর ক্ষেত্রে আমরা উত্তর ও দক্ষিণের জন্যে মানের আগে যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণ কথাটা যোগ করি। যেমন বাংলাদেশে অবস্থান ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। কিন্তু খ-গোলকের ক্ষেত্রে উত্তরে হলে এর আগে + চিহ্ন এবং দক্ষিণে মাইনাস চিহ্ন (-) বসানো হয়। এই অবস্থানগুলোর নামই হল বিষুবলম্ব (Declination)।

কোনো তারার বিষুবলম্ব (+২৩) ডিগ্রি হলে এটি বাংলাদেশে আমাদের ঠিক মাথার উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে যাবে। যেমন, রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতীর বিষুবলম্ব (+১৯) ডিগ্রি। তাই এটি পূর্ব দিকে উঠার পরে এক সময় আমাদের মাথার উপরে চলে আসে। পরে আবার চলে যায় পশ্চিম দিকে।

আবার রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র লুব্ধকের বিষুবলম্ব হল (-১৬) ডিগ্রি। ফলে কখনো আমাদের মাথার উপর আসে না, দক্ষিণ দিক দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে চলে যায়। আবার ধ্রুবতারা বিষুবলম্ব প্রায় (+৯০) ডিগ্রি। তাই উত্তর মেরুতে গেলে এটি ঠিক মাথার উপর থাকবে।

আরো পড়ুন
উজ্জ্বল তারাদের গল্প
তারামণ্ডলীর পরিচয়
☛ তারা পরিচিতিঃ এ সপ্তাহের তারা 
Category: articles

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

সহজ কথায় বললে, সূর্যের চারদিকে কোন গ্রহের কক্ষপথের নিকটতম বিন্দুকে অনুসূর (Perihelion) এবং দূরতম বিন্দুকে অপসূর (Aphelion) বলে। অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেবার সময় গ্রহরা জোরে এবং উল্টোভাবে অপসূর দিয়ে যাবার সময় ধীরে চলে।

আমাদের সৌরজগতের গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। কিছু গ্রহের কক্ষপথ প্রায় বৃত্তাকার। অধিকাংশেরই কক্ষপথ ছড়ানো, অনেকটা ডিম্বাকৃতির। আরো সঠিক করে বললে উপবৃত্তাকার। আর এই উপবৃত্তাকার হবার কারণেই সূর্য থেকে গ্রহদের দূরত্ব নির্দিষ্ট থাকে না।

উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্য থেকে বুধ গ্রহের দূরত্বের পরিবর্তন

সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আসার সময় পৃথিবী প্রতি বছর এক বার করে অপসূর ও অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেয়। অন্য গ্রহরাও সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে একবার করে বিন্দু দুটিকে অতিক্রম করে। সাধারণত জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে নিকটে ও জুলাই মাসে সবচেয়ে দূরে থাকে। একে সহজাত বুদ্ধির বিপরীত মনে হয়। কারণ আমরা জানি, জানুয়ারি মাসে শীতকাল থাকে (বাংলাদেশসহ অনেকগুলো দেশে)।তাহলে শীতকালে সূর্য আমাদের সবচেয়ে কাছে থাকে- এটাকি বিশ্বাসযোগ্য? বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এটাই বাস্তবতা।

আসলে শীত বা গরম পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের উপর নির্ভর করে না বললেই চলে। এটা নির্ভর করে পৃথিবীর কক্ষীয় নতীর উপর। পৃথিবী এর কক্ষীয় তলের সাথে সাড়ে তেইশ ডিগ্রি পরিমাণ হেলে আছে। ফলে, যে অঞ্চল যখন সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন তাতে গরম অনুভূত হয় এবং উল্টো পাশে বজায় থাকে শীত। এ জন্যেই জানুয়ারি মাসে উত্তর গোলার্ধে শীত থাকলেও দক্ষিণ গোলার্ধে কিন্তু ঠিকই গরম থাকে।

২০১০ সালে পৃথিবীর অপসূর ও অনুসূর 

সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকার সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব থাকে ৯ কোটি ১০ লক্ষ মাইল বা ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি.। অন্য দিকে অপসূর অবস্থানে এই দূরত্ব হচ্ছে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি.। একেই আমরা গড় করে সাধারণত বলি ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি কিমি.। পৃথিবী থেকে সূর্যের এই গড় দূরত্বকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট।

আরো পড়ুনঃ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

অনুসূর ও অপসূর কথাগুলো গ্রহদের পাশাপাশি ধূমকেতু ও গ্রহাণুদের জন্যেও প্রযোজ্য। ইংরেজি perihelion শব্দটি peri এবং helios গ্রিক শব্দদ্বয় থেকে আগত। peri শব্দের অর্থ নিকটে এবং helios অর্থ সূর্য। ফলে perihelion এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে সূর্যের নিকট বিন্দু। একইভাবে গ্রিক apo শব্দের অর্থ দূরে। ফলে aphelion এর দাঁড়াচ্ছে সূর্যের দূরতম বিন্দু। বাংলায় ভেঙ্গে অর্থ করলেও প্রায় একই রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। কারণ সূর কথাটা এসেছে সূর্য থেকেই।

অন্য দিকে, চাঁদও পৃথিবীর চারদিকে উপবৃত্তাকার পথে চলে। ফলে চাঁদের ক্ষেত্রেও পৃথিবীর নিকটতম ও দুরতম দুটি বিন্দু আছে। এদের  জন্যে আছে আলাদা নাম। নিকটতম বিন্দুর নাম অনুভূ এবং দূরতম বিন্দুর নাম অপভূ। বুঝতেই পারছেন, ভূ মানে পৃথিবী। আর অনুভূ মানে পৃথিবীর নিকটে।

সূত্র: উইন্ডোজ টু ইউনিভার্স
Category: articles

রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৬

শুধু এই সাতটি তারাকেই আমরা সাধারণত সপ্তর্ষীমণ্ডলী বললেও এরা আসলে পুরো মণ্ডলীর একাংশ মাত্র। এটি প্রকৃতপক্ষে তারানকশা। 

তারামণ্ডলী ও তারানকশা দুটোই আকাশের বিভিন্ন তারায় তৈরি নকশা। রাতের তারাখচিত আকাশের দিকে তাকালেই মনে হবে কিছু তারার সমন্বয়ে অর্থবোধক কোন আকৃতি তৈরি হয়েছে। মানুষের মনে চিত্রিত এই আকৃতিগুলো থেকেই রূপ পেয়েছে তারামণ্ডলী ও তারানকশা। ইংরেজিতে এদের নাম যথাক্রমে Constellation ও Asterism। এতে যেমন মানুষের প্রতিকৃতি আছে, তেমনি আছে রূপকথার প্রাণী, বিভিন্ন বস্তু। তবে তারামণ্ডলী বা তারানকশার তারারা একে অপরের সাথে সাধারণত সম্পর্কিত নয়। পৃথিবী থেকে দেখতে এদেরকে পাশাপাশি মনে হলেও বাস্তবে এরা পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে অবস্থিত।

উল্লেখযোগ্য কিছু তারামণ্ডলী হল কালপুরুষ বা আদম সুরত, বৃশ্চিক মণ্ডলী, বকমণ্ডলী ইত্যাদি।

আদম সুরত। অনেকের মতেই এটাই সেই মণ্ডলী যা সবচেয়ে সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। 


কাঁকড়াবিছার মত দেখতে মণ্ডলীটির নাম বৃশ্চিক মণ্ডলী 

তারামণ্ডলীর সংখ্যা ৮৮ এবং এদের সবাইকে নিয়ে পুরো দৃশ্যমান আকাশ গঠিত। আকাশে কোন তারা বা অন্য কোন বস্তুর (দূরবর্তী গ্যালাক্সি, তারাস্তবক ইত্যাদি) অবস্থান নির্ণয় করতে তারামণ্ডলী কাজে আসে। দৃশ্যমান আকাশের যে কোন বস্তু কোন না কোন তারামণ্ডলীতে অবস্থিত থাকবেই।


তারামণ্ডলীর মতই তারানকশাও তারায় তৈরি নকশা। তবে তারামণ্ডলীর মত এরা জ্যোতির্বিজ্ঞানে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভিন্ন তারামণ্ডলীর তারা নিয়ে এরা গঠিত হতে পারে, আবার একই তারামণ্ডলীর কয়েকটি তারা নিয়েও হতে পারে। বিখ্যাত তারানকশার মধ্যে অন্যতম সপ্তর্ষীমণ্ডলীর সাতটি তারা নিয়ে গঠিত চামচ যা থেকে ধ্রুব তারা চেনা যায়।

সামার ট্রায়াঙ্গেল। এটি তিনটি আলাদা মণ্ডলীর ভিন্ন তিনটি তারার সমাবেশ। 
Category: articles

সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০১৬

রাতের আকাশের অন্যতম তিন উজ্জ্বল বস্তু- চাঁদ, শুক্র ও মঙ্গল গ্রহ 
একটি বস্তুকে পৃথিবী থেকে দেখতে যতটা উজ্জ্বল লাগে সেটাই হচ্ছে তার আপাত উজ্জ্বলতার (Apparent magnitude) পরিমাপ। এটা বস্তুর প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি থেকে আলাদা জিনিস। কারণ, বাস্তবে বেশি দীপ্তিমান হলেও দূরত্বসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবী কোন তারকা বা বা অন্য কোন বস্তুকে অন্য তারকার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল মনে হতেই পারে। 

এই যেমন রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র লুব্ধক কিন্তু সবেচেয়ে বেশি দীপ্তিমান ৫০টি তারকার মধ্যেও নেই।আবার উজ্জ্বলতায় স্বাতী চতুর্থ আর বিটলজুস নবম। স্বাতী পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৬ আলোকবর্ষ দূরে৷ অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি সূর্যের ১৭০ গুণ৷ ওদিকে লোহিত অতিদানব তারা বিটলজুসের দীপ্তি সূর্যের প্রায় এক লক্ষ গুণ (বিভিন্ন হিসাবে কম-বেশি আছে)। তবুও পৃথিবীর আকাশে বিটলজুস কম উজ্জ্বল। এর দূরত্ব যে ৫৪৮ আলোকবর্ষ!

তারকার উজ্জ্বলতা পরিমাপ করা হয় লগারিদম স্কেলে। উজ্জ্বলতার মান যত বেশি হয় তার আপাত উজ্জ্বলতা হয় তত কম। এটা অনেকটা এসিডের PH এর মানের মত। এসিডের পিএইচ যত বেশি হয় সেটি তত কম শক্তিশালী এসিড। পৃথিবীর আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু সূর্যের আপাত উজ্জ্বলতা -২৭ (মাইনাস ২৭)। চাঁদসহ সৌরজগতের খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচটি গ্রহের প্রত্যেকের আপাত উজ্জ্বলতার মান নেগেটিভ (০ এর নিচে) যা এদের উজ্জ্বলতার বড়ত্বের প্রমাণ বহন করে। চাঁদের ক্ষেত্রে এই মান -১২.৭, শুক্রের -৪.৮৯, বৃহস্পতির -২.৯৪, মঙ্গলের -২.৯১, বুধের -২.৪৫ এবং শনির ক্ষেত্রে এই মান -.৪৯। অন্য দিকে শুধু প্রথম চারটি উজ্জ্বল তারকারই আপাত উজ্জ্বলতা শূন্যের নিচে।

আপাত উজ্জ্বলতার বিচারে সবচেয়ে উজ্জ্বল পাঁচটি নক্ষত্র
১। লুব্ধক (-১.৪৪)
২। সুহাইল (০.৬২)
৩। আলফা সেন্টোরি (-.২৮)
৪। স্বাতী (-০.০৫)
৫। অভিজিৎ (+০.০৩)

সর্বচ্চ +৬.৫ উজ্জ্বলতার তারা খালি চোখে দেখা যায়। 

Category: articles

রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

আমরা কোন বস্তুকে উপরে ছুঁড়ে মারলে এটি একটু পর ভূমিতে ফিরে আসে। আরো জোরে ছুঁড়লে আরেকটু পরে ফিরে আসবে। আরো জোরে মারলে? আরেকটু পরে। এভাবেইকি চলতে থাকবে? না, সব কিছুর একটি শেষ আছে। এমন একটি বেগ আছে যে বেগে কোন কিছুকে খাড়া উপরের দিকে নিক্ষেপ করলে এটি আর পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। পৃথিবীর অভিকর্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মহাশূন্যে হারিয়ে যাবে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই বেগটির নাম মুক্তি বেগ।

তাহলে কোন বড় ভরের বস্তু (যেমন গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি) থেকে যে বেগে কোন বস্তুকে নিক্ষেপ করলে সেটি নিচে ফিরে আসে না তাকে মুক্তি বেগ (Escape Velocity) বলে। পৃথিবীর ক্ষেত্রে মুক্তি বেগের মান হচ্ছে সেকেন্ডে ১১.২ কিলোমিটার। এর চেয়ে কম বেগ দিয়ে কোন রকেট বা নভোযানকে মহাশূন্যে পাঠানো সম্ভব হবে না।

বিভিন্ন বস্তুর মুক্তি বেগঃ 
[এখানে বেগের একক কিলোমিটার পার সেকেন্ড (km/s) ধরা হয়েছে।]
সূর্যঃ ৬১৭.৫
বুধঃ ৪.৩
শুক্রঃ ১০.৩
পৃথিবীঃ ১১.২
চাঁদঃ ২.৪
মঙ্গলঃ
বৃহস্পতিঃ ৫৯.৬
গ্যানিমিডঃ ২.৭ (বৃহস্পতির বৃহত্তম এই উপগ্রহটি সৌরজগতেরও উপগ্রহদের বড় ভাই)
শনিঃ ৩৫.৬
ইউরেনাসঃ ২১.৩
নেপচুনঃ ২৩.৮
প্লুটোঃ ১.৮
ঘটনা দিগন্তঃ আলোর বেগ

মুক্তি বেগের সূত্রঃ
এখানে ve = মুক্তিবেগ, G = মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, M = ভর, r = ব্যাসার্ধ 
সূত্র থেকে বোঝা যাচ্ছে মুক্তি বেগের মান বস্তুর ভরের বর্গমূলের সমানুপাতিক এবং ব্যাসার্ধের বর্গমূলের ব্যস্তানুপাতিক। ফলে, বস্তুর ভর যত বেশি হবে মুক্তি বেগ তার বর্গমূলের হারে বাড়তে থাকবে এবং ব্যাসার্ধ যত বেশি হবে মুক্তি বেগ তত কম হয়ে যাবে। এবার উপরে দেখুন, প্লুটোর মুক্তি বেগ চাঁদের চেয়েও কম। প্লুটো গ্রহের খাতা থেকে বাদ পড়ার এটাও একটা কারণ।
মুক্তি বেগের সূত্রকে এভাবেও লেখা যায়-
ve = √(2gr) যেখানে = অভিকর্ষীয় ত্বরণ।
ব্ল্যাক হোলের ধারণা প্রথমে মুক্তি বেগ থেকেই এসেছে। কোন বস্তুর মুক্তি বেগ যদি আলোর বেগের চেয়েও বেশি হয়, তাহলে সেটি থেকে আলোও আসতে পারবে না। তাহলে সেটি আমরা দেখতেও পারবো না। এ জন্যেই তার নাম দেওয়া হয়েছে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর।
ব্ল্যাক হোল আলোকে কিভাবে আটকে রাখে যখন আলোর ভরই নেই? জানুন এখানে

সূত্রঃ
[১] Wikipedia: Escape Velocity
Category: articles

সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

[নোটঃ পরভাষাগুলো সাজানোর ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির বর্ণানুক্রম মেনে চলার চেষ্টা করা হয়েছে]

অনিশ্চয়তা নীতি (Uncertainty principle): হাইজেনবার্গের প্রদান করা এই নীতি যে, কোনো কণিকার অবস্থান ও বেগ একইসাথে নিশ্চিত করে জানা সম্ভব নয়। এর একটি যত বেশি নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা হবে, অপরটি সম্পর্কে পাওয়া তথ্য ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আইন্সটাইন- রোজেন সেতু (Einstein-Rosen bridge): স্থান- কালের একটি সরু টিউব, যা দুটি ব্ল্যাক হোলকে যুক্ত করে। আরো দেখুন, ওয়ার্মহোল

আলোকবর্ষ (light-year): আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে। (* মনে রাখতে এটি, আলোক-সেকেন্ড এবং এই জাতীয় এককগুলো সময়ের নয়, দূরত্বের একক)

আলোক-সেকেন্ড (Light-second): আলো এক সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে।

অ্যানথ্রোপিক নীতি (Anthropic principle): আমরা মহাবিশ্বকে এখন যেমন দেখছি এর এমন হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, এটি যদি এমন না হত তাহলে একে পর্যবেক্ষণ করার মতো এখানে থাকতামই না।

ইলেকট্রন (Electron): নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুর্ণনরত নেগেটিভ বা ঋণাত্মক চার্জধারী কণিকা।

ইলেকট্রিক চার্জ বা তড়িৎ আধান (Electric charge): কণিকার এমন ধর্ম যার মাধ্যমে এটি বিপরীত চার্জধারী অন্য কণিকাকে আকর্ষণ করে এবং একই রকম চার্জধারী কণিকাকে বিকর্ষণ করে।

ইলেকট্রোউইক ইউনিফিকেশান এনার্জি (Electroweak unification energy): শক্তির যে পরিমাণকে (১০০ গিগা ইলেকট্রোভোল্ট) ছাড়িয়ে গেলে তড়িচ্চুম্বকীয় বল এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।

ওজোন (Weight): মহাকর্ষীয় (বা অভিকর্ষীয়) ক্ষেত্র দ্বারা কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল। এটি ভরের সমানুপাতিক কিন্তু সমান নয়। (* আমরা সাধারণত যাকে ওজোন বলি, সেটি আসলে ভর। ভরের সাথে অভিকর্ষীয় ত্বরণ গুণ করলে ওজোন পাওয়া যায়)। আরো দেখুন, অভিকর্ষীয় ত্বরণ।

ওয়ার্মহোল (Wormhole): মহাবিশ্বের দূরবর্তী দুটি অঞ্চলের সংযোগ প্রদানকারী একটি পাতলা টিউব বা সুড়ঙ্গ। ওয়ার্মহোলের অপর প্রান্তে সমান্তরাল বা শিশু মহাবিশ্ব থাকতে পারে, যার মাধ্যমে সময় ভ্রমণ সম্ভব হতে পারে।
মহাবিশ্বের দূরবর্তী দুটি অঞ্চলের সংযোগ প্রদানকারী একটি পাতলা টিউব বা সুড়ঙ্গকে ওয়ার্মহোল বলা হয়
কণা ত্বরকযন্ত্র (Particle accelerator): যে মেশিনের সাহায্যে ইলেকট্রোম্যাগনেট বা তড়িচ্চুম্বক ব্যবহার করে বেশি শক্তি দিয়ে দিয়ে গতিশীল চার্জধারী কণিকাদের বেগ বৃদ্ধি করা যায়।

কণা- তরঙ্গ দ্বৈততা (Wave/particle duality): কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই নীতি যে, কণিকা ও তরঙ্গের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো সময় কণিকা আচরণ করে তরঙ্গের মতো, আবার কখনো তরঙ্গ কণিকার মতো আচরণ করে।

কসমোলজি বা মহাবিশ্বতত্ত্ব (Cosmology): সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়ে যে শাস্রে।

কোয়ান্টাম (Quantum): কোনো পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বস্তুর সর্বনিম্ন পরিমাণ।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স (Quantum mechanics): প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম নীতি ও হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি থেকে প্রস্তুত করা থিওরি।

কোয়ার্ক (Quark): একটি চার্জধারী মৌলিক কণিকা, যা সবল নিউক্লিয়ার বল অনুভব করে। প্রোটন ও নিউট্রন দুটি কণিকাই তিনটি করে কোয়ার্ক দ্বারা গঠিত।

কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকুয়েন্সি (Frequency): কোনো তরঙ্গ প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো চক্র বা কম্পন সম্পন্ন করে।

ক্ষেত্র (Field): এমন কিছু যা স্থান- কালের উল্লেখযোগ্য অংশে বিস্তৃত । এটি কণিকার বিপরীত, যা নির্দিষ্ট কোনো সময়ে শুধু একটি বিন্দুতেই অবস্থান করে।

গামা রশ্মি (Gamma rays): খুব ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িচ্চুম্বকীয় রশ্মি। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বা মৌলিক কণিকাদের সংঘর্ষের ফলে এটি উৎপন্ন হয়। আরো দেখুন, তেজস্ক্রিয়তা।

গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরি বা মহা-সমন্বয় তত্ত্ব (Grand unified theory বা GUT): যে থিওরি তড়িচ্চুম্বকীয় এবং সবল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বলকে একীভূত করে।

ঘটনা (Event): নির্দিষ্ট স্থান ও সময়বিশিষ্ট স্থান- কালের উপরস্থ কোনো বিন্দু।

ঘটনা দিগন্ত (Event horizo): ব্ল্যাক হোলের সীমানা (*ব্ল্যাক হোলের চারপাশের যে অঞ্চলের বাইরে আলো আসতে পারে না)।

চৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড (Magnetic field): চৌম্বক বলের জন্যে দায়ী ক্ষেত্র। তড়িৎ ক্ষেত্রের (electric field) সাথে সমন্বিত হয়ে এটি এখন তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের অংশ।

ডার্ক ম্যাটার (Dark matter): গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সিপুঞ্জ ও এদের মাঝে অবস্থিত সেসব বস্তু যাদেরকে এখনো সরাসরি দেখা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। মহাবিশ্বের অন্তত ৯০ ভাগ ভরই ডার্ক ম্যাটার।

তড়িচ্চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force): ইলেকট্রিক চার্জধারী কণিকাদের মধ্যে যে বল কাজ করে। চার প্রকার মৌলিক বলের মধ্যে শক্তিতে দ্বিতীয়।

তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength): কোনো তরঙ্গের পাশাপাশি অবস্থিত দুটি চূড়া বা খাঁজের মধ্যে দূরত্ব। [চিত্র দেখুন]

তেজস্ক্রিয়তা (Radioactivity): কিছু কিছু পরমাণু নিজেই নিজেই অন্য পরমাণুতে পরিণত হবার যে প্রক্রিয়া।

দশা (Phase): নির্দিষ্ট সময়ে কোনো তরঙ্গের অবস্থান। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে তরঙ্গের অবস্থান কি খাঁজে, চূড়ায় নাকি এই দুইয়ের মাঝে অন্য কোথাও আছে।

দুর্বল নিউক্লিয়ার বল (Weak force): চার প্রকার মৌলিক বলের মধ্যে দ্বিতীয় দুর্বল বল। এটি মহাকর্ষের চেয়ে শক্তিশালী। এরও পাল্লা খুব ছোট। এটি যে কোনো বস্তু কণাকে আকর্ষণ করে, তবে বলবাহী কণিকাকে আকর্ষণ করে না। (*একে সংক্ষেপে বলা হয় দুর্বল বল।)

নিউক্লিয়ার ফিউসান (Nuclear fusion): যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস সংঘর্ষের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একটিমাত্র ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে।

নিউক্লিয়াস (Nucleus): পরমাণুর কেন্দ্রীয় অংশ। এতে সবল বলের মাধ্যমে প্রোটন ও নিউট্রন যুক্ত থাকে।

নিউট্রন (Neutron): অনেকটা প্রোটনের মতোই একটি কণিকা, তবে এতে কোনো চার্জ নেই। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের অর্ধেক কণিকা এই নিউট্রন দিয়ে পূরণ হয়।

নিউট্রন নক্ষত্র (Neutron star): সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে অনেক সময় যে শীতল অংশ বাকি থেকে যায়। এটি ঘটে যখন কোনো নক্ষত্রের কেন্দ্রভাগের বস্তু গুটিয়ে নিউট্রনের ঘন ভরের বস্তুতে পরিণত হয়। (*এর মহাকর্ষ এতটা শক্তিশালী যে ইলেকট্রন ও প্রোটন এক হয়ে গিয়ে পুরোটা চার্জহীন নিউট্রনে পরিণত হয়।) আরো দেখুন, নিউট্রন।

নিউট্রিনো (Neutrino): একটি অসম্ভব হালকা কণিকা, যা শুধু মহাকর্ষ এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বল দ্বারা প্রভাবিত হয়।

জিওডেসিক (Geodesic): দুটি বিন্দুর মধ্যে সর্বনিম্ন (বা সর্বোচ্চ) পথ। (*গোলকের মতো ধনাত্নক বক্রতার ক্ষেত্রে এটি হবে সর্বনিম্ন পথ। আর ঘোড়ার জিনের মত আকৃতির বস্তুর ঋণাত্মক বক্রতার ক্ষেত্রে এটি হবে সর্বোচ্চ দূরত্ব)

ত্বরণ (Acceleration): যে হারে (সময়ের পরিবর্তনের সাথে) কোনো বস্তুর বেগ পরিবর্তন হয়।

দ্বৈততা (duality):  আপাত দৃষ্টিতে আলাদা হলেও একই ফলাফল প্রদান করা দুটো থিওরির মধ্যে সম্পর্ক।  আরো দেখুন, কণা/ তরঙ্গ দ্বৈততা।

পজিট্রন (Positron): ইলেকট্রনের ধনাত্মক চার্জধারী প্রতিকণিকা। আরো দেখুনঃ প্রতিকণিকা।

পরম শূন্য তাপমাত্রা (Absolute zero temperature): সর্বনিম্ন সম্ভাব্য সেই তাপমাত্রা, যাতে বস্তুর কোনো তাপ শক্তি থাকে না।

পরমাণু (Atom): সাধারণ বস্তুর মৌলিক একক। এতে একটি ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াসের (প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে তৈরি) চারপাশে ইলেকট্রনরা কক্ষপথে ঘুরতে থাকে।

প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম নীতি (Planck’s quantum principle): এই ধারণা যে, আলো (বা অন্য যে কোনো প্রচলিত তরঙ্গ) শুধু বিচ্ছিন্ন কোয়ান্টা আকারে নির্গত হয়, যার শক্তি এর কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যস্তানুপাতিক। আরো দেখুনঃ সমানুপাতিক ও ব্যস্তানুপাতিক।

প্রতিকণিকা (Antiparticle): বস্তুর প্রতেকটি কণিকার বিপরীতে একটি প্রতিকণিকা আছে (*যার চার্জ ছাড়া আর সব ধর্ম কণিকার মতোই। যেমন ইলেকট্রনের প্রতিকণিকা পজিট্রন, যার চার্জ +১।)। কণিকা ও প্রতিকণিকার মধ্যে সংঘর্ষ হলে দুটিই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, বিনিময়ে পাওয়া যায় শক্তি।

প্রান্থীনতার শর্ত (No-boundary condition): এই ধারণা যে, মহাবিশ্বের সাইজ সসীম কিন্তু এর কোনো সীমানা বা প্রান্ত নেই।

প্রোটন (Proton): প্রায় নিউট্রনের মতোই একটি কণিকা। কিন্তু এর রয়েছে ধনাত্মক চার্জ। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের কণিকাদের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক এরা।

ফোটন (Photon): আলোর একটি কোয়ান্টাম। আরো দেখুনঃ কোয়ান্টাম।

বর্ণালী (Spectrum): একটি তরঙ্গের উপাদান কম্পাঙ্কগুলো। সৌরবর্ণালীর দৃশ্যমান অংশ রংধনুতে দেখা যায়।

বিগ ব্যাঙ (Big bang): মহাবিশ্বের শুরুতে যে সিঙ্গুলারিটি ছিল। আরো দেখুন, সিঙ্গুলারিটি।

বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (Special relativity): মহাকর্ষের অনুপস্থিতিতে যে কোনো বেগে গতিশীল সকল পর্যেবেক্ষকের কাছে বিজ্ঞানের সূত্রগুলো একই থাকবে- এই নীতির ভিত্তিতে তৈরি আইনস্টাইনের থিওরি। (*কাল দীর্ঘায়ন, দৈর্ঘ সঙ্কোচন, ভর-শক্তি সমতুল্যতা ইত্যাদি এই থিওরির ফসল।)। আরো দেখুন, সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব।

ব্যস্তানুপাতিক (inversely proportional): X, Y এর ব্যস্তানুপাতিক হলে এর অর্থ হচ্ছে Y কে কোনো সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে X কে সেই সংখ্যা দ্বারা ভাগ দেওয়া হচ্ছে। (*অর্থ্যাৎ, Y যত গুণ বাড়বে, X তত গুণ কমে যাবে। যেমন Y দ্বিগুণ হলে X হয়ে যাবে অর্ধেক। Y তিন গুণ হলে X হবে তিন ভাগের এক ভাগ। তবে যদি বলা হয় X, Y এর বর্গের ব্যস্তানুপাতিক, তাহলে Y দ্বিগুণ হলে X হবে চার ভাগের এক ভাগ।) আরো দেখুন, সমানুপাতিক।

ব্ল্যাক হোল (Black hole): স্থান- কালের এমন অঞ্চল যেখানে মহাকর্ষ এত শক্তিশালী যে এখান থেকে কোনো কিছুই বের হয়ে আসতে পারে না, এমনকি আলোও না। (*বাংলা নাম কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণবিবর)

ভর (Mass): কোনো বস্তুতে উপস্থিত পদার্থের পরিমাণ; বস্তুর জড়তা বা ত্বরণের প্রতি বাধা।

ভার্চুয়াল কণিকা (Virtual particle): যে কণবিকাদেরকে সরাসরি দেখা যায় না, কিন্তু পরিমাপযোগ্য প্রতিক্রিয়া থাকে।

মহাজাগতিক ধ্রুবক (Cosmological constant): স্থান- কালের সহজাত ধর্মই হচ্ছে প্রসারিত হওয়া- এমন ব্যাখ্যা দেবার জন্যে আইনস্টাইনের উদ্ভাবিত গাণিতিক ধ্রুবক। (*পরে দেখা গিয়েছিল এই ধ্রুবক আনা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখন আবার এর প্রয়োজন আছে বলে মনে হচ্ছে)।

মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ (Microwave background radiation): আদি উত্তপ্ত মহাবিশ্ব থেকে নির্গত বিকিরণ। বর্তমানে এর এত বেশি লাল সরণ হয়েছে যে একে আর আলো হিসেবে দেখা যায় না, পাওয়া যায় মাইক্রোওয়েভ হিসেবে। মাইক্রোওয়েভ হল কয়েক সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ। আরো দেখুন, লাল সরণ।

মৌলিক কণিকা (Elementary particle): এমন কণিকা যাকে আর ভাঙা যায় না বলে বিশ্বাস করা হয়।

রেডার (Radar): বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের যন্ত্র। যন্ত্র থেকে প্রেরিত সঙ্কেত বস্তুতে পৌঁছে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসতে যে সময় লাগে তা কাজে লাগিয়ে দূরত্ব বের করা হয়।

লাল বা লোহিত সরণ (Red shift): ডপলার ক্রিয়ার কারণে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া নক্ষত্রের আলোকে লাল দেখা।

সবল নিউক্লিয়ার বল (Strong force): চার প্রকারের মৌলিক বলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বল। তবে এর পাল্লা সবচেয়ে ছোট (* বেশি দূর পর্যন্ত এর প্রভাব কাজ করে না)। এটি কোয়ার্কদেরকে যুক্ত করে প্রোটন ও নিউট্রন এবং প্রোটন ও নিউট্রনকে যুক্ত করে পরমাণু গঠন করে।  একে সংক্ষেপে সবল বলও বলা হয়।

সমানুপাতিক (Proportional): X, Y এর সমানুপাতিক হলে এর অর্থ হচ্ছে Y কে কোনো সংখ্যা দ্বারা গুণ করা হলে X কেও সেই সংখ্যা দ্বারা গুণ করা হবে (* এর অর্থ হবে Y যে হারে বাড়বে Xও সেই হারে বাড়বে। তবে যদি বলা হয় X, Y এর বর্গের সমানুপাতিক, তবে Y দ্বিগুণ হলে X চার গুণ হবে; Y তিন গুণ হলে X নয় গুণ হবে ইত্যাদি।) আরো দেখুন, ব্যস্তানুপাতিক।

সাধারণ বা সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব (General relativity): যে কোনো গতিতে চলা পর্যবেক্ষকের কাছে বিজ্ঞানের সূত্রগুলো একই হবে- এই ধারণার ভিত্তিতে তৈরি আইনস্টাইনের থিওরি। এই থিওরি মহাকর্ষকে চতুর্মাত্রিক স্থান- কালের সাহায্যে প্রকাশ করে।

সিঙ্গুলারিটি (Singularity): স্থান- কালের এমন বিন্দু যেখানে স্থান- কালের বক্রতা (অথবা অন্য কোনো বস্তুগত রাশি) অসীম হয়। (*বাংলায় একে অনন্যতাও বলা হয়।)

স্ট্রিং থিওরি (String theory): পদার্থবিদ্যার সেই থিওরি যাতে বিভিন্ন কণিকাকে স্ট্রিং (* সুতা, দড়ি ইত্যাদি) এর কম্পন মনে করা হয়। স্ট্রিং এর শুধু দৈর্ঘ্য আছে, অন্য কোনো মাত্রা (উচ্চতা বা প্রস্থ) নেই।

স্থানাংক (Coordinates): স্থান ও কালের মধ্যে কোনো বিন্দুর অবস্থান প্রকাশ করতে যে সংখ্যাগুলো প্রয়োজন।

স্থান- কাল (Space-time): চতুর্মাত্রিক স্থান, যার বিন্দুগুলোকে ঘটনা বলা হয়।

স্থানিক মাত্রা (Spatial dimension): সময় ছাড়া অন্য তিন মাত্রার যে কোনোটি। 
Category: articles
[নোটঃ পরভাষাগুলো সাজানোর ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির বর্ণানুক্রম মেনে চলার চেষ্টা করা হয়েছে]

অনিশ্চয়তা নীতি (Uncertainty principle): হাইজেনবার্গের প্রদান করা এই নীতি যে, কোনো কণিকার অবস্থান ও বেগ একইসাথে নিশ্চিত করে জানা সম্ভব নয়। এর একটি যত বেশি নির্ভুলভাবে পরিমাপ করা হবে, অপরটি সম্পর্কে পাওয়া তথ্য ততই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আইন্সটাইন- রোজেন সেতু (Einstein-Rosen bridge): স্থান- কালের একটি সরু টিউব, যা দুটি ব্ল্যাক হোলকে যুক্ত করে। আরো দেখুন, ওয়ার্মহোল

আলোকবর্ষ (light-year): আলো এক বছরে যে দূরত্ব অতিক্রম করে। (* মনে রাখতে এটি, আলোক-সেকেন্ড এবং এই জাতীয় এককগুলো সময়ের নয়, দূরত্বের একক)

আলোক-সেকেন্ড (Light-second): আলো এক সেকেন্ডে যে দূরত্ব অতিক্রম করে।

অ্যানথ্রোপিক নীতি (Anthropic principle): আমরা মহাবিশ্বকে এখন যেমন দেখছি এর এমন হওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে, এটি যদি এমন না হত তাহলে একে পর্যবেক্ষণ করার মতো এখানে থাকতামই না।

ইলেকট্রন (Electron): নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘুর্ণনরত নেগেটিভ বা ঋণাত্মক চার্জধারী কণিকা।

ইলেকট্রিক চার্জ বা তড়িৎ আধান (Electric charge): কণিকার এমন ধর্ম যার মাধ্যমে এটি বিপরীত চার্জধারী অন্য কণিকাকে আকর্ষণ করে এবং একই রকম চার্জধারী কণিকাকে বিকর্ষণ করে।

ইলেকট্রোউইক ইউনিফিকেশান এনার্জি (Electroweak unification energy): শক্তির যে পরিমাণকে (১০০ গিগা ইলেকট্রোভোল্ট) ছাড়িয়ে গেলে তড়িচ্চুম্বকীয় বল এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না।

ওজোন (Weight): মহাকর্ষীয় (বা অভিকর্ষীয়) ক্ষেত্র দ্বারা কোনো বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল। এটি ভরের সমানুপাতিক কিন্তু সমান নয়। (* আমরা সাধারণত যাকে ওজোন বলি, সেটি আসলে ভর। ভরের সাথে অভিকর্ষীয় ত্বরণ গুণ করলে ওজোন পাওয়া যায়)। আরো দেখুন, অভিকর্ষীয় ত্বরণ।

ওয়ার্মহোল (Wormhole): মহাবিশ্বের দূরবর্তী দুটি অঞ্চলের সংযোগ প্রদানকারী একটি পাতলা টিউব বা সুড়ঙ্গ। ওয়ার্মহোলের অপর প্রান্তে সমান্তরাল বা শিশু মহাবিশ্ব থাকতে পারে, যার মাধ্যমে সময় ভ্রমণ সম্ভব হতে পারে।
মহাবিশ্বের দূরবর্তী দুটি অঞ্চলের সংযোগ প্রদানকারী একটি পাতলা টিউব বা সুড়ঙ্গকে ওয়ার্মহোল বলা হয়
কণা ত্বরকযন্ত্র (Particle accelerator): যে মেশিনের সাহায্যে ইলেকট্রোম্যাগনেট বা তড়িচ্চুম্বক ব্যবহার করে বেশি শক্তি দিয়ে দিয়ে গতিশীল চার্জধারী কণিকাদের বেগ বৃদ্ধি করা যায়।

কণা- তরঙ্গ দ্বৈততা (Wave/particle duality): কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এই নীতি যে, কণিকা ও তরঙ্গের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কোনো সময় কণিকা আচরণ করে তরঙ্গের মতো, আবার কখনো তরঙ্গ কণিকার মতো আচরণ করে।

কসমোলজি বা মহাবিশ্বতত্ত্ব (Cosmology): সামগ্রিকভাবে মহাবিশ্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়ে যে শাস্রে।

কোয়ান্টাম (Quantum): কোনো পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ায় অংশ নেওয়া বস্তুর সর্বনিম্ন পরিমাণ।

কোয়ান্টাম মেকানিক্স (Quantum mechanics): প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম নীতি ও হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি থেকে প্রস্তুত করা থিওরি।

কোয়ার্ক (Quark): একটি চার্জধারী মৌলিক কণিকা, যা সবল নিউক্লিয়ার বল অনুভব করে। প্রোটন ও নিউট্রন দুটি কণিকাই তিনটি করে কোয়ার্ক দ্বারা গঠিত।

কম্পাঙ্ক বা ফ্রিকুয়েন্সি (Frequency): কোনো তরঙ্গ প্রতি সেকেন্ডে যতগুলো চক্র বা কম্পন সম্পন্ন করে।

ক্ষেত্র (Field): এমন কিছু যা স্থান- কালের উল্লেখযোগ্য অংশে বিস্তৃত । এটি কণিকার বিপরীত, যা নির্দিষ্ট কোনো সময়ে শুধু একটি বিন্দুতেই অবস্থান করে।

গামা রশ্মি (Gamma rays): খুব ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের তড়িচ্চুম্বকীয় রশ্মি। তেজস্ক্রিয় বিকিরণ বা মৌলিক কণিকাদের সংঘর্ষের ফলে এটি উৎপন্ন হয়। আরো দেখুন, তেজস্ক্রিয়তা।

গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরি বা মহা-সমন্বয় তত্ত্ব (Grand unified theory বা GUT): যে থিওরি তড়িচ্চুম্বকীয় এবং সবল ও দুর্বল নিউক্লিয়ার বলকে একীভূত করে।

ঘটনা (Event): নির্দিষ্ট স্থান ও সময়বিশিষ্ট স্থান- কালের উপরস্থ কোনো বিন্দু।

ঘটনা দিগন্ত (Event horizo): ব্ল্যাক হোলের সীমানা (*ব্ল্যাক হোলের চারপাশের যে অঞ্চলের বাইরে আলো আসতে পারে না)।

চৌম্বক ক্ষেত্র বা ম্যাগনেটিক ফিল্ড (Magnetic field): চৌম্বক বলের জন্যে দায়ী ক্ষেত্র। তড়িৎ ক্ষেত্রের (electric field) সাথে সমন্বিত হয়ে এটি এখন তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্রের অংশ।

ডার্ক ম্যাটার (Dark matter): গ্যালাক্সি, গ্যালাক্সিপুঞ্জ ও এদের মাঝে অবস্থিত সেসব বস্তু যাদেরকে এখনো সরাসরি দেখা সম্ভব হয়নি। কিন্তু মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। মহাবিশ্বের অন্তত ৯০ ভাগ ভরই ডার্ক ম্যাটার।

তড়িচ্চুম্বকীয় বল (Electromagnetic force): ইলেকট্রিক চার্জধারী কণিকাদের মধ্যে যে বল কাজ করে। চার প্রকার মৌলিক বলের মধ্যে শক্তিতে দ্বিতীয়।

তরঙ্গদৈর্ঘ্য (Wavelength): কোনো তরঙ্গের পাশাপাশি অবস্থিত দুটি চূড়া বা খাঁজের মধ্যে দূরত্ব। [চিত্র দেখুন]

তেজস্ক্রিয়তা (Radioactivity): কিছু কিছু পরমাণু নিজেই নিজেই অন্য পরমাণুতে পরিণত হবার যে প্রক্রিয়া।

দশা (Phase): নির্দিষ্ট সময়ে কোনো তরঙ্গের অবস্থান। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে তরঙ্গের অবস্থান কি খাঁজে, চূড়ায় নাকি এই দুইয়ের মাঝে অন্য কোথাও আছে।

দুর্বল নিউক্লিয়ার বল (Weak force): চার প্রকার মৌলিক বলের মধ্যে দ্বিতীয় দুর্বল বল। এটি মহাকর্ষের চেয়ে শক্তিশালী। এরও পাল্লা খুব ছোট। এটি যে কোনো বস্তু কণাকে আকর্ষণ করে, তবে বলবাহী কণিকাকে আকর্ষণ করে না। (*একে সংক্ষেপে বলা হয় দুর্বল বল।)

নিউক্লিয়ার ফিউসান (Nuclear fusion): যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস সংঘর্ষের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে একটিমাত্র ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে।

নিউক্লিয়াস (Nucleus): পরমাণুর কেন্দ্রীয় অংশ। এতে সবল বলের মাধ্যমে প্রোটন ও নিউট্রন যুক্ত থাকে।

নিউট্রন (Neutron): অনেকটা প্রোটনের মতোই একটি কণিকা, তবে এতে কোনো চার্জ নেই। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের অর্ধেক কণিকা এই নিউট্রন দিয়ে পূরণ হয়।

নিউট্রন নক্ষত্র (Neutron star): সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে অনেক সময় যে শীতল অংশ বাকি থেকে যায়। এটি ঘটে যখন কোনো নক্ষত্রের কেন্দ্রভাগের বস্তু গুটিয়ে নিউট্রনের ঘন ভরের বস্তুতে পরিণত হয়। (*এর মহাকর্ষ এতটা শক্তিশালী যে ইলেকট্রন ও প্রোটন এক হয়ে গিয়ে পুরোটা চার্জহীন নিউট্রনে পরিণত হয়।) আরো দেখুন, নিউট্রন।

নিউট্রিনো (Neutrino): একটি অসম্ভব হালকা কণিকা, যা শুধু মহাকর্ষ এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বল দ্বারা প্রভাবিত হয়।

জিওডেসিক (Geodesic): দুটি বিন্দুর মধ্যে সর্বনিম্ন (বা সর্বোচ্চ) পথ। (*গোলকের মতো ধনাত্নক বক্রতার ক্ষেত্রে এটি হবে সর্বনিম্ন পথ। আর ঘোড়ার জিনের মত আকৃতির বস্তুর ঋণাত্মক বক্রতার ক্ষেত্রে এটি হবে সর্বোচ্চ দূরত্ব)

ত্বরণ (Acceleration): যে হারে (সময়ের পরিবর্তনের সাথে) কোনো বস্তুর বেগ পরিবর্তন হয়।

দ্বৈততা (duality):  আপাত দৃষ্টিতে আলাদা হলেও একই ফলাফল প্রদান করা দুটো থিওরির মধ্যে সম্পর্ক।  আরো দেখুন, কণা/ তরঙ্গ দ্বৈততা।

পজিট্রন (Positron): ইলেকট্রনের ধনাত্মক চার্জধারী প্রতিকণিকা। আরো দেখুনঃ প্রতিকণিকা।

পরম শূন্য তাপমাত্রা (Absolute zero temperature): সর্বনিম্ন সম্ভাব্য সেই তাপমাত্রা, যাতে বস্তুর কোনো তাপ শক্তি থাকে না।

পরমাণু (Atom): সাধারণ বস্তুর মৌলিক একক। এতে একটি ক্ষুদ্র নিউক্লিয়াসের (প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে তৈরি) চারপাশে ইলেকট্রনরা কক্ষপথে ঘুরতে থাকে।

প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম নীতি (Planck’s quantum principle): এই ধারণা যে, আলো (বা অন্য যে কোনো প্রচলিত তরঙ্গ) শুধু বিচ্ছিন্ন কোয়ান্টা আকারে নির্গত হয়, যার শক্তি এর কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক এবং তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ব্যস্তানুপাতিক। আরো দেখুনঃ সমানুপাতিক ও ব্যস্তানুপাতিক।

প্রতিকণিকা (Antiparticle): বস্তুর প্রতেকটি কণিকার বিপরীতে একটি প্রতিকণিকা আছে (*যার চার্জ ছাড়া আর সব ধর্ম কণিকার মতোই। যেমন ইলেকট্রনের প্রতিকণিকা পজিট্রন, যার চার্জ +১।)। কণিকা ও প্রতিকণিকার মধ্যে সংঘর্ষ হলে দুটিই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, বিনিময়ে পাওয়া যায় শক্তি।

প্রান্থীনতার শর্ত (No-boundary condition): এই ধারণা যে, মহাবিশ্বের সাইজ সসীম কিন্তু এর কোনো সীমানা বা প্রান্ত নেই।

প্রোটন (Proton): প্রায় নিউট্রনের মতোই একটি কণিকা। কিন্তু এর রয়েছে ধনাত্মক চার্জ। পরমাণুর নিউক্লিয়াসের কণিকাদের প্রায় অর্ধেকসংখ্যক এরা।

ফোটন (Photon): আলোর একটি কোয়ান্টাম। আরো দেখুনঃ কোয়ান্টাম।

বর্ণালী (Spectrum): একটি তরঙ্গের উপাদান কম্পাঙ্কগুলো। সৌরবর্ণালীর দৃশ্যমান অংশ রংধনুতে দেখা যায়।

বিগ ব্যাঙ (Big bang): মহাবিশ্বের শুরুতে যে সিঙ্গুলারিটি ছিল। আরো দেখুন, সিঙ্গুলারিটি।

বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্ব (Special relativity): মহাকর্ষের অনুপস্থিতিতে যে কোনো বেগে গতিশীল সকল পর্যেবেক্ষকের কাছে বিজ্ঞানের সূত্রগুলো একই থাকবে- এই নীতির ভিত্তিতে তৈরি আইনস্টাইনের থিওরি। (*কাল দীর্ঘায়ন, দৈর্ঘ সঙ্কোচন, ভর-শক্তি সমতুল্যতা ইত্যাদি এই থিওরির ফসল।)। আরো দেখুন, সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব।

ব্যস্তানুপাতিক (inversely proportional): X, Y এর ব্যস্তানুপাতিক হলে এর অর্থ হচ্ছে Y কে কোনো সংখ্যা দ্বারা গুণ করলে X কে সেই সংখ্যা দ্বারা ভাগ দেওয়া হচ্ছে। (*অর্থ্যাৎ, Y যত গুণ বাড়বে, X তত গুণ কমে যাবে। যেমন Y দ্বিগুণ হলে X হয়ে যাবে অর্ধেক। Y তিন গুণ হলে X হবে তিন ভাগের এক ভাগ। তবে যদি বলা হয় X, Y এর বর্গের ব্যস্তানুপাতিক, তাহলে Y দ্বিগুণ হলে X হবে চার ভাগের এক ভাগ।) আরো দেখুন, সমানুপাতিক।

ব্ল্যাক হোল (Black hole): স্থান- কালের এমন অঞ্চল যেখানে মহাকর্ষ এত শক্তিশালী যে এখান থেকে কোনো কিছুই বের হয়ে আসতে পারে না, এমনকি আলোও না। (*বাংলা নাম কৃষ্ণগহ্বর বা কৃষ্ণবিবর)

ভর (Mass): কোনো বস্তুতে উপস্থিত পদার্থের পরিমাণ; বস্তুর জড়তা বা ত্বরণের প্রতি বাধা।

ভার্চুয়াল কণিকা (Virtual particle): যে কণবিকাদেরকে সরাসরি দেখা যায় না, কিন্তু পরিমাপযোগ্য প্রতিক্রিয়া থাকে।

মহাজাগতিক ধ্রুবক (Cosmological constant): স্থান- কালের সহজাত ধর্মই হচ্ছে প্রসারিত হওয়া- এমন ব্যাখ্যা দেবার জন্যে আইনস্টাইনের উদ্ভাবিত গাণিতিক ধ্রুবক। (*পরে দেখা গিয়েছিল এই ধ্রুবক আনা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখন আবার এর প্রয়োজন আছে বলে মনে হচ্ছে)।

মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ (Microwave background radiation): আদি উত্তপ্ত মহাবিশ্ব থেকে নির্গত বিকিরণ। বর্তমানে এর এত বেশি লাল সরণ হয়েছে যে একে আর আলো হিসেবে দেখা যায় না, পাওয়া যায় মাইক্রোওয়েভ হিসেবে। মাইক্রোওয়েভ হল কয়েক সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ। আরো দেখুন, লাল সরণ।

মৌলিক কণিকা (Elementary particle): এমন কণিকা যাকে আর ভাঙা যায় না বলে বিশ্বাস করা হয়।

রেডার (Radar): বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে বস্তুর অবস্থান নির্ণয়ের যন্ত্র। যন্ত্র থেকে প্রেরিত সঙ্কেত বস্তুতে পৌঁছে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসতে যে সময় লাগে তা কাজে লাগিয়ে দূরত্ব বের করা হয়।

লাল বা লোহিত সরণ (Red shift): ডপলার ক্রিয়ার কারণে আমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া নক্ষত্রের আলোকে লাল দেখা।

সবল নিউক্লিয়ার বল (Strong force): চার প্রকারের মৌলিক বলের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বল। তবে এর পাল্লা সবচেয়ে ছোট (* বেশি দূর পর্যন্ত এর প্রভাব কাজ করে না)। এটি কোয়ার্কদেরকে যুক্ত করে প্রোটন ও নিউট্রন এবং প্রোটন ও নিউট্রনকে যুক্ত করে পরমাণু গঠন করে।  একে সংক্ষেপে সবল বলও বলা হয়।

সমানুপাতিক (Proportional): X, Y এর সমানুপাতিক হলে এর অর্থ হচ্ছে Y কে কোনো সংখ্যা দ্বারা গুণ করা হলে X কেও সেই সংখ্যা দ্বারা গুণ করা হবে (* এর অর্থ হবে Y যে হারে বাড়বে Xও সেই হারে বাড়বে। তবে যদি বলা হয় X, Y এর বর্গের সমানুপাতিক, তবে Y দ্বিগুণ হলে X চার গুণ হবে; Y তিন গুণ হলে X নয় গুণ হবে ইত্যাদি।) আরো দেখুন, ব্যস্তানুপাতিক।

সাধারণ বা সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব (General relativity): যে কোনো গতিতে চলা পর্যবেক্ষকের কাছে বিজ্ঞানের সূত্রগুলো একই হবে- এই ধারণার ভিত্তিতে তৈরি আইনস্টাইনের থিওরি। এই থিওরি মহাকর্ষকে চতুর্মাত্রিক স্থান- কালের সাহায্যে প্রকাশ করে।

সিঙ্গুলারিটি (Singularity): স্থান- কালের এমন বিন্দু যেখানে স্থান- কালের বক্রতা (অথবা অন্য কোনো বস্তুগত রাশি) অসীম হয়। (*বাংলায় একে অনন্যতাও বলা হয়।)

স্ট্রিং থিওরি (String theory): পদার্থবিদ্যার সেই থিওরি যাতে বিভিন্ন কণিকাকে স্ট্রিং (* সুতা, দড়ি ইত্যাদি) এর কম্পন মনে করা হয়। স্ট্রিং এর শুধু দৈর্ঘ্য আছে, অন্য কোনো মাত্রা (উচ্চতা বা প্রস্থ) নেই।

স্থানাংক (Coordinates): স্থান ও কালের মধ্যে কোনো বিন্দুর অবস্থান প্রকাশ করতে যে সংখ্যাগুলো প্রয়োজন।

স্থান- কাল (Space-time): চতুর্মাত্রিক স্থান, যার বিন্দুগুলোকে ঘটনা বলা হয়।

স্থানিক মাত্রা (Spatial dimension): সময় ছাড়া অন্য তিন মাত্রার যে কোনোটি। 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...