Advertisement

রবিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৩

মহাকাশের বস্তুদের দূরত্ব নির্ণয় জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম বড় একটি সমস্যা। আকাশের দিকে খালি চোখে তাকিয়েই তো আর তারাদের দূরত্ব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। এ কারণেই প্রাচীন জ্যোতির্বিদরা ভাবতেন, আকাশের সবগুলো তারা পৃথিবী থেকে একই পরিমাণ দূরত্বে একটি গোলকীয় পৃষ্ঠে বসানো আছে। 

নক্ষত্রের দূরত্বের মাপার ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে টেলিস্কোপ- তাও নিকটবর্তী নক্ষত্রদের দূরত্ব নির্ণয়ের ক্ষেত্রে। পদ্ধতিটির নাম প্যারালাক্স বা লম্বন (Parallax)। নক্ষত্রের দূরত্বের একক পারসেক এসেছে এ শব্দটা থেকেই। এক পারসেক = ৩.২৬ আলোকবর্ষ। 


প্যারালাক্স বুঝতে হলে হাতের সামনে একটি আঙ্গুল ধরুন। এক চোখ বন্ধ করে এর দিকে তাকান। এবার আরেক চোখ খুলে এই চোখ বন্ধ করে আঙ্গুলের দিকে তাকান। কী ঘটছে? ব্যাকগ্রাউন্ডের সাপেক্ষে আঙ্গুলের অবস্থান বদলে যাচ্ছে। অবস্থানের এই বিচ্যুতির কৌণিক হিসাবকেই প্যারালাক্স বলে। আঙ্গুলের বদলে আরো দূরের কোন বস্তুর ক্ষেত্রে একই পরীক্ষা চালালে দেখা যাবে যে দুই চোখের দেখা অবস্থানের পার্থক্য তথা প্যারালাক্সের মান কমে যাচ্ছে।

প্যারালাক্স। পর্যবেক্ষণের স্থান পাল্টালে পাল্টে যায় বস্তুর অবস্থান। 

এখন, নক্ষত্রদের দূরত্ব নির্ণয়ের জন্যে আমরা এই প্যারালাক্স পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারি। কিন্তু উপরে যেমন বললাম, বস্তুর দূরত্ব বেশি হলে কৌণিক বিচ্যুতিও কম হবে। নক্ষত্রের দূরত্ব বের করার জন্যে পৃথিবীর দুইটি আলাদা জায়গা থেকে একে দেখে নিয়ে ত্রিকোণমিতি কাজে লাগিয়ে দূরত্ব বের করা সম্ভব। এক্ষেত্রে পৃথিবীর আলাদা জায়গা দুটি দুই চোখের মত কাজ করবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, নক্ষত্ররা পৃথিবী থেকে এত বেশি দূরে যে এদের প্যারালাক্সের মান হয় খুবই সামান্য। ফলে খুব ভাল মান পাওয়া যায় না।
 
এ সমস্যার সমাধানের জন্যেও পথ বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী বছরে এক বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ফলে সূর্যের চারদিকের উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবী ৬ মাস পর পর বিপরীত বিন্দুতে পৌঁছায়। এই দুই বিপরীত অবস্থান থেকে অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী নক্ষত্রের প্যারালাক্সের ভালো মান পাওয়া যায়।
যেমন চিত্রে দেখা যাচ্ছে জুন ও ডিসেম্বর মাসে পৃথিবী কক্ষপথের ঠিক বিপরীত প্রান্তদ্বয়ে থাকে। এই দুই বিন্দুতে কোন নক্ষত্র যে কোণ তৈরি করবে তার অর্ধেকই হল প্যারালাক্স (চিত্রে কোন p)।



এই পদ্ধতিটিও শুধু কাজ করবে পৃথিবী থেকে অপেক্ষাকৃত নিকটবর্তী তারকাদের ক্ষেত্রে। আরো দূরের তারকা বা অন্য কোন বস্তুদের ক্ষেত্রে প্যারালাক্সের মান অনেক কমে যাবে বিধায় ভাল হিসাব পাওয়া যাবে না। 

পারালাক্স পদ্ধতি দিয়ে পৃথিবী থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ আলোকবর্ষ দূরের তারার দূরত্ব মাপা যায়। আরও দূরের তারার দূরত্ব মাপার সরাসরি কোনো উপায় নেই। তবে নক্ষত্রের রঙ ও উজ্জ্বলতার সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে দূরত্ব জানা যায়। রং থেকে জানা যায় প্রকৃত উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি। নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে আসতে আসতে সে উজ্জ্বলতা নিয়ম মেনে কমে। সে নিয়মটা হলো বিপরীত বর্গীয় সূত্র। আর এটা থেকেই জানা যায় নক্ষত্রের দূরত্ব। ছায়াপথের দূরত্ব মাপতেও প্রায় একই ধরনের ধারণা ব্যবহার করা হয়। সৌরজগতের গ্রহ বা সূর্য তো আরও অনেক কাছে। ফলে প্যারালাক্স দিয়েই এদের দূরত্ব বেশ ভালোভাবেই পাওয়া যায়। 
 
১। http://www.astronomy.ohio-state.edu/~pogge/Ast162/Unit1/Images/parallax.png
২। http://curious.astro.cornell.edu/the-universe/79-stars-and-star-clusters/distances/359-how-can-i-measure-the-distance-of-a-star-beginner
৩। https://science.howstuffworks.com/question224.htm
৪। https://www.sciencefocus.com/space/how-do-we-calculate-distances-to-other-galaxies
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩

সূর্য সৌরজগতের সবচেয়ে বড় বস্তু। যেমন ভারী, তেমনি তার বিশাল অবয়ব৷ সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯.৮৬ ভাগ ভরই সূর্যের একার৷ আর আকার? ১০৯টা পৃথিবীকে পাশাপাশি বসালে সূর্যের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত যাওয়া যাবে৷ মানে ব্যাস পৃথিবীর ১০৯ গুণ। 


১০৯টা পৃথিবীকে একটার পর একটা বসিয়ে দিলে সূর্যের সমান চওড়া হবে। 

তবে ফুটবলের মতো প্রায় গোলাকার সূর্যের পেটের ভেতরে বসিয়ে দেওয়া যাবে ১৩ লক্ষ সূর্য৷ এটাই প্রচলিত কথা। সংখ্যাটায় একটু গোলমাল আছে অবশ্য। এ সংখ্যা পাওয়া গেছে সূর্যের আয়তনকে পৃথিবীর আয়তন দিয়ে ভাগ করে। সেটাকেই স্বাভাবিক মনে হয়। তবে এটা সঠিক হত যদি পৃথিবীকে গলিয়ে সূর্যের পেটে ভরে রাখা যেতে। কিন্তু পৃথিবী শক্ত ও কঠিন পদার্থে তৈরি। পৃথিবীকে সূর্যের ভেতরে বসাতে গেলে এখানে-সেখানে ফাঁকা জায়গায় থেকে যাবে। পুরো আয়তন ভর্তি করা যাবে না। ফলে, সবমিলিয়ে সূর্যের ভেতরে জায়গা পাবে নয় ৯ লাখ ৩২ হাজার পৃথিবী। 


সৌরজগত কত বড়?


গোলাকার সূর্যের পেটের ভেতর রাখা যাবে প্রায় ৯ লাখের বেশি পৃথিবী 

সূর্যের আকার প্রায় পুরোপুরি গোলাকার৷ মেরু ও বিষুব অঞ্চলের ব্যবধান মাত্র ১০ কিলোমিটার বা ৬.২ মাইল৷ গড় ব্যাসার্ধ ৪,৩২,৪৫০ মাইল (৬,৯৬,০০০ কিলোমিটার)৷ ব্যাস ৮,৬৪,৯৩৮ মাইল বা ১৩,৯২,০০০ কিলোমিটার৷ তবে সূর্য আকারে চাঁদ ও পৃথিবীর তুলনায় বিশাল হলেও পৃথিবীর আকাশে চাঁদ ও সূর্যকে সমান দেখায়। এর কারণ, সূর্য চাঁদের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুণ বড়। আবার, পৃথিবী থেকে দূরত্বও ৪০০ গুণ। ফলে পৃথিবীর আকাশে এ দুই বস্তুকে সাধারণত সমান দেখা যায়। তবে সবসময় নয়।  


চাঁদ-সূর্য সমান কেন? 


ভরও দারুণ বিশাল। তিন লাখ ত্রিশ হাজার পৃথিবী একত্র করলে সূর্যের সমান ভর পাওয়া যাবে৷ তবে ভর কিন্তু কমে যাচ্ছে ক্রমশ৷ পরিমাণে সেটা বিশাল হলেও মূল ভরের তুলনায় নগণ্য৷ সৌরবায়ুর সময় সূর্য সেকেন্ডে ১৫ লাখ টন ভর হারায়৷ অভ্যন্তরে চলা ফিউশন বিক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত ভর থেকে আলো ও তাপশক্তি তৈরি হচ্ছে৷ এভাবে প্রতি সেকেন্ডে খরচ হচ্ছে ৪০ লাখ টন পদার্থ৷ সব মিলিয়ে সূর্য তার ৪৫০ কোটি বছরের জীবনে ভর হারিয়েছে পৃথিবীর ভরের ১০০ গুণ পদার্থ৷ দেখতে বিশাল লাগলেও এটা সূর্যের ভরের মাত্র ০.০৫ ভাগ। অন্য কথায় দশ হাজার ভাগের ৫ ভাগ৷ সারা জীবনে সূর্য  এক হাজার ভাগের মাত্র ৭ ভাগ ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করবে৷ 


তবে সূর্যের বাহাদুরি শুধু সৌরজগতেই। পৃথিবী বা সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর তুলনায় প্রকাণ্ড হলেও সূর্য আসলে সাদামাটা এক তারা৷ রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা বিটলজুস৷ কালপুরুষ তারামণ্ডলের দ্বিতীয় উজ্জ্বল এ তারা সূর্যের প্রায় ৭০০ গুণ বড় ও ১৪,০০০ গুণ উজ্জ্বল৷ বিটলজুসকে জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে ভাল দেখা যায়৷ তবে এমন তারাও আছে যার তুলনায় বিটলজুসও নস্যি! 


লুব্ধক, কালপুরুষ ও বিটলজুস


সূর্যের তুলনায় বিটলজুস কত বিশাল দেখুন। এ তো সবে শুরু। আছে আরও বিশাল বিশাল তারাও।

বিটলজুস তো সূর্যের ৭০০ গুণ বড়। মিউ সিফিয়াই তারা প্রায় এক হাজার গুণ বড় (৯৭২)। সূর্যের চেয়ে এক হাজার গুণ বা আরও বড় প্রায় ১০০ তারা আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ভিওয়াই ক্যানিস মেজোরিস তো ১৪২৯ গুণ বড়। ইউওয়াই স্কুটি ১৭০৮ গুণ। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় আকারের তারার নাম স্টিফেনসন ২-১৮। অন্য নাম স্টিফেনসন ২ ডিএফকে ১। সূর্যের তুলনায় ২১৫০ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৯ হাজার আলোকবর্ষ। 


বড় বড় নক্ষত্রের গল্প


সূর্যের চেয়ে বড় বড় তারকারা

তবে আবার সূর্যের চেয়ে ছোট তারাও আছে। এমন তারাও আছে, যাদের ভর সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ। তবে সূর্যের চেয়ে বেশি ভারী তারা আবার জীবনের শেষ ভাগে অনেক ছোট হয়ে যায়। এই যেমন ব্ল্যাকহোল ও নিউট্রন তারা। জীবনের শেষভাগে ব্ল্যাকহোল তো বিন্দু বা রেখার মতো হয়ে যায়। আর নিউট্রন তারা হয় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। জ্বালানি ফুরিয়ে গুটিয়ে যাবার সময় তৈরি নিউট্রন আরও ছোট হতে বাধা দেয়। ফলে তারাটা ব্ল্যাকহোল হতে পারে না। চওড়ায় হয় মাত্র ১২ মাইলের মতো। ঘন এ তারা থেকে একটি চিনির দানার সমান পদার্থ নিলে তার ভরই হবে একশো কোটি টন। 


ব্ল্যাকহোলের জন্ম হয় কীভাবে?


এখন সূর্যের আকার প্রায় ধ্রুব থাকলে আরও প্রায় ৫০০ কোটি সূর্য বড় হয়ে যাবে৷ ততদিনে হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হওয়ায় বন্ধ হবে হিলিয়াম তৈরির প্রক্রিয়া৷ ফলে ভেতরের অংশ গুটিয়ে একটা সময় লোহিত দানব ও পরে শ্বেত বামন তারায় পরিণত হবে৷ ওদিকে বাইরের অংশে তখনও চলমান ফিউশনের বহির্মুখী চাপে প্রসারিত হয়ে অনেকদূর বিস্তৃত হবে৷ বর্তমান আকার থেকে ২০০ গুণ বড়৷ বুধ ও শুক্রের কক্ষপথ চলে যাবে সূর্যের পেটের ভেতর। এবং সম্ভবত পৃথিবীও। 


সূর্য কীভাবে জ্বলে?


লোহিত দানব তারার গল্প


সূত্র: স্পেস ডট কম, স্লুহ ডট কম, নাসা, আর্থস্কাই, আইএফএল সায়েন্স, ওউক্ল্যাশন

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

টকটকে লাল লোহিত দানব তারা৷ তবে জন্ম নিয়েই সাথে সাথে লোহিত দানব হয়ে যায় না৷ জন্মের সময় বিশাল ভরের তারা নিজের ভরে চুপসে যেতে চায়৷ শক্তিশালী মহাকর্ষ তারার হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের গ্যাসীয় মেঘকে গুটিয়ে ফেলতে থাকে৷ এ থেকেই জোড়া লাগতে শুরু করে হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস। শুরু হয় ফিউশনের মাধ্যমে হিলিয়াম তৈরির প্রক্রিয়া৷ এভাবেই তৈরি হয় আলো ও তাপ৷ এ বিক্রিয়া তৈরি করে বহির্মুখী চাপ৷ আর তাতেই মহাকর্ষ ও ফিউশন ভাপের টানাটানিতে একটি তারা ভারসাম্যে থাকে৷ তারার এ দশাকে বলে প্রধান ক্রম। 


রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব তারা

সূর্য কীভাবে জ্বলে?


নক্ষত্রের জন্ম


তবে এটা তো আর চিরদিন চলা সম্ভব নয়। প্রায় ৭৫ ভাগ হাইড্রোজেন নিয়ে তারার জন্ম। একটা সময় কোর বা কেন্দ্রভাগের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যায়৷ তারা যত ভারী, তত দ্রুত ফুরোয় তার জ্বালানি৷ কারণ মহাকর্ষ শক্তিশালী হওয়ায় ফিউশন চলে দ্রুত গতিতে। ফলে ভর বেশি হলেও ভারী তারার জ্বালানি আগে শেষ হয়। সবচেয়ে ভারী তারারা তো সুপারনোভা হওয়ার আগে মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছর জ্বলে। যেখানে সূর্যের মতো গড়পড়তা তারাদের ফিউশন চলে প্রায় এক হাজার কোটি বছর ধরে। জ্বালানি শেষ হলেই তারার ভারসাম্যও শেষ৷ কোর বা কেন্দ্রভাগ আবার গুটোতে থাকে৷ তবে কোরের চারপাশের খোলসে থাকা প্লাজমা পদার্থ উত্তপ্ত হয়ে হয়ে নিজেই ফিউশন শুরু করে৷ 


খোলসের এ ফিউশনের ফলে তৈরি বাড়তি তাপ তারার বাইরের অংশকে নাটকীয়ভাবে প্রসারিত করে দেয়৷ তারার পৃষ্ঠ আগের চেয়ে কয়েকশো গুণ বড় হয়ে যায়৷ সূর্যও এসময় প্রায় ২০০ গুণ বড় হয়ে যাবে৷ তারার শক্তি এ সময় বড় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত হয়ে পড়ে৷ ফলে তাপমাত্রা কমে আসে৷ তাতে তার রং বদলে সাদা বা হলুদ থেকে লাল হয়৷ তৈরি হয় রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব৷ তাপমাত্রা নেমে আসে ৫ হাজার কেলভিনে৷ আগে যেখানে ছিল ৬ থেকে ৩০ হাজার কেলভিন৷ তবে সত্যি বলতে, রেড জায়ান্টরা আসলে দেখতে কমলা। লাল হতে হলে তাপমাত্রা হতে হবে আরও কম। চার হাজার কেলভিনের নিচে। 


নক্ষত্রের বিবর্তন

ব্যাপারটা রাতারাতি ঘটে যায় না। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সময় লাগে কোটি কোটি বছর৷ প্রধান ক্রম দশা শেষে সব তারা কিন্তু লোহিত দানব হবে না৷ জন্মের সময় ভর সূর্যের ৮০ ভাগ থেকে ৮ গুণ পর্যন্ত হলেই কেবল তারা লোহিত দানব হতে পারে৷ আরও বড় হলে তারা জ্বালানি ফুরিয়ে হয় রেড সুপারজায়ান্ট বা অতিদানব৷ পরে ঘটায় সুপারনোভা বিস্ফোরণ৷ রেড জায়ান্টরা সাধারণত বিস্ফোরণ ঘটায় না। তবে পাশে কোনো শ্বেত বামন তারা থাকলে সেটা লোহিত দানবের জ্বালানি চুরি করে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে৷ এর নাম নোভা বিস্ফোরণ৷ 


নোভার গল্প 


তারা রেড জায়ান্ট দশায় থাকে প্রায় একশ বছর৷ সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারাদের কোর হবে শ্বেত বামন৷ আর কেন্দ্রের তাপ ও চাপে বাইরের অংশ নিক্ষিপ্ত হয় মহাশূন্যে। এই নিক্ষিপ্ত অংশের নাম গ্রহ নীহারিকা (planetary nebula)। যদিও গ্রহের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই৷ হাইড্রোজেন পরবর্তী হিলিয়াম ও আরও ভারী পদার্থের ফিউশনে তৈরি কার্বন ও অন্যান্য পদার্থ থাকে এ নীহারিকায়৷ এ নীহারিকা আশেপাশের পদার্থের সাথে একীভূত হতে পারে৷ হতে পারে নতুন নক্ষত্র ও গ্রহ তৈরির উপাদান। তবে বেশিদিন এরা টিকে থাকে না। কয়েক হাজার বছর থেকে শুরু করে এক লাখ বছরের কাছাকাছি পর্যন্ত চলতে পারে জীবন। তারপর মিলিয়ে যায় আন্তঃনাক্ষত্রিক জগতে। 


আরও প্রায় পাঁচশো কোটি বছর সূর্য লোহিত দানব হবে। বর্তমান রাতের আকাশের পরিচিত অনেক তারাই বর্তমানে এ দশায় আছে৷ স্বাতী, ক্যাপেলা, অ্যালডেবারান, জ্যেষ্ঠা (antares) এদের মধ্যে অন্যতম।  স্বাতী তো উত্তর গোলার্ধের রাতের আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷ সমগ্র রাতের আকাশে চতুর্থ উজ্জ্বল৷ ক্যাপেলা উজ্জ্বলতায় ষষ্ঠ৷ আর অ্যালডেবারান চতুর্দশ৷ আর অ্যান্টারিজ পনেরতম। এরা লোহিত দানব হয়েও রেড সুপাজায়ান্ট লোহিত অতিদানবদের চেয়েও পৃথিবীর আকাশে বেশি উজ্জ্বল। কারণ একটাই–দূরত্ব। 


যেমন উজ্জ্বলতায় স্বাতী চতুর্থ আর বিটলজুস নবম। স্বাতী পৃথিবী থেকে মাত্র ৩৬ আলোকবর্ষ দূরে৷ অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি সূর্যের ১৭০ গুণ৷ ওদিকে লোহিত অতিদানব তারা বিটলজুসের দীপ্তি সূর্যের প্রায় এক লক্ষ গুণ (বিভিন্ন হিসাবে কম-বেশি আছে)। তবুও পৃথিবীর আকাশে বিটলজুস কম উজ্জ্বল। এর দূরত্ব যে ৫৪৮ আলোকবর্ষ!


সূত্র: এসা ওয়ার্ডব্যাংক: রেড জায়ান্ট, প্ল্যানেটারি নেবুলা, সক্রেটিক ডট অর্গ, আর্থস্কাই, ইউটা ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি

Category: articles

মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩

রাতের আকাশের দ্বাদশ উজ্জ্বল তারা। আগস্ট মাস দেখার সেরা সময়৷ রাত নয়টার দিকে প্রায় মাথার উপর জ্বলজ্বল করে তারাটা৷ পাশেই আছে আরও দুটি উজ্জ্বল তারা অভিজিৎপুচ্ছ। তিনটি তারা মিলে একত্রে নাম সামার ট্রায়াঙ্গল৷ শ্রবণার অবস্থান ঈগলমণ্ডলে৷ রূপকথার কাল্পনিক ঈগলের বুকে এর অবস্থান৷


সমার ট্রায়াংগেল ও শ্রবণা তারা। 





পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৬.৮ আলোকবর্ষ৷ মানে পৃথিবীর অন্যতম নিকট প্রতিবেশী এক তারা। বর্তমানে প্রধান ক্রম দশায় আছে৷ সূর্যের মতো হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাচ্ছে৷ আলটেয়ার বা শ্রবণার দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে।


সূর্য কীভাবে জ্বলে?

তারাটা প্রচণ্ড জোরে ঘোরে। নিজের অক্ষের ওপর ঘুরে আসতে এর মাত্র দশ ঘণ্টা লাগে৷ যেখানে সূর্যের লাগে প্রায় ২৭ দিন। আর পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা৷ মানে পৃথিবী একবার ঘুরতে ঘুরতে তারাটা ঘোরে দুইবারের বেশি৷ দ্রুত ঘূর্ণনের কারণে শ্রবণার মেরু অঞ্চল চেপে গেছে৷ বিষুব অঞ্চলে ফুলে উঠেছে৷ এ ধরনের আকৃতিকে বলে অবলেট স্ফেরয়েড (oblate spheroid)৷ এসব আকৃতিতে মেরু অঞ্চল চেপে থাকে। বিষুব এলাকার ব্যাসার্ধ মেরু এলাকার চেয়ে বেশি হয়। শ্রবণার ক্ষেত্রে তা বিশ ভাগেরও বেশি৷ অন্যদিকে মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ হলে নাম হয় প্রোলেট স্ফেরয়েড (prolate spheroid)।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তারাটার বিষমতা। বিষম তারার অভাব নেই আকাশে। এসব তারার উজ্জ্বলতা কিছুদিন পরপর কমে-বাড়ে৷ তবে শ্রবণা এখানেও একটু ব্যতিক্রম৷ অন্যদের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন ঘটে মোটামুটি নিয়মিত৷ সেখানে শ্রবণার উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের হার আছে নয় নয়টা৷ খালি চোখে অবশ্য সে তারতম্য বোঝা যাবে না৷ এ বিষমতার সাথে সম্ভবত এর ঘূর্ণনের সম্পর্ক আছে৷ শ্রবণা একটি ডেল্টা স্কুটি ধরনের বিষম তারা৷

শ্রবণার আভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি সূর্যের দশ গুণ। সূর্যের জায়গায় এ তারাটা থাকলে পৃথিবী বাসের অযোগ্য হত৷ ভর সূর্যের ১.৮ গুণ। চওড়াও প্রায় দ্বিগুণ৷ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬৬২৬ থেকে ৮৮২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ বয়স দশ কোটি বছর। যেখানে সূর্যের বয়স পাঁচশ কোটি বছর৷ টেলিস্কোপে এর তিনটি অনুজ্জ্বল সঙ্গী তারা দেখা যায়৷ অল্প কিছু তারারই করা ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। শ্রবণা তার অন্যতম। এদের মধ্যে আরও আছে জ্যেষ্ঠা, রেগুলাস, মাইরা ইত্যাদি৷

ঈগলমণ্ডল ও শ্রবণা তারা। মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এটা।

আগস্টের রাতের আকাশ শ্রবণা দেখার সেরা সময়৷ আপাত উজ্জ্বলতা +০.৭৬। ফলে মেঘমুক্ত রাতের আকাশে খালি চোখে সহজেই দেখা যাবে৷ সামার ট্রায়াঙ্গলের তিন তারার মধ্যে শ্রবণা সবার পরে উদিত হয়। এই ত্রিভুজের উপর দিয়েই চলে গেছে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গার দৃশ্যমান বাহুটা৷ দেখতে আসলেও নদীর মতো। নদীর দুই তীরে আছে অভিজিৎ ও শ্রবণা৷ পেটের মধ্যে আছে ত্রিভুজের অপর তারা পুচ্ছ৷ শ্রবণার দুই পাশে আছে দুটি অনুজ্জ্বল তারা৷ অভিজিতের বিষুবলম্ব +৩৮, আর শ্রবণার +৮। মানে অভিজিতের চেয়ে শ্রবণা আছে দক্ষিণে। বাংলাদেশ থেকে দেখতে দুটো তারাই সোজা উপর থেকে ১৫ ডিগ্রি করে দূর দিয়ে চলে। অভিজিত উত্তরে আর শ্রবণা দক্ষিণে৷ কারণ বাংলাদেশের সোজা উপরের আকাশের বিষুবলম্ব +২৩৷ মিলিয়ে নিন। কী দারুণ!


তারা চিনতে বিষুবলম্ব


নক্ষত্রটার বৈজ্ঞানিক নাম আলফা অ্যাকুইলি৷ আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির দেওয়া নাম আলটেয়ার (Altair)৷ শব্দটা এসেছে আরবি নাম আল নিসর আল তাইর থেকে। অর্থ উড়ন্ত ঈগল।

Category: articles

সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩

আকাশের উজ্জ্বল তারারা তৈরি করে দারুণ দারুণ নকশা৷ ৮৮টি তারামণ্ডলের একটি ধনুমণ্ডল। এটা রাশিচক্রের অন্যতম মণ্ডল। পরিচিত ধনুরাশি হিসেবে। মণ্ডলের উজ্জ্বল তারাগুলোকে দেখতে চায়ের পট বা টিপটের মতো লাগে৷ রাশিচক্রের এ মণ্ডলে সূর্য অবস্থান করে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি৷


ধনুমণ্ডলের টিপট তারানকশা


তারামণ্ডল বনাম তারানকশা


আগস্ট মাস একে দেখার সেরা সময়। এ সময় রাত নয়টার দিকে ধনুমণ্ডল দক্ষিণ আকাশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে থাকে। বিষুবলম্ব -২৫ ডিগ্রি। ফলে মূলত দক্ষিণ আকাশে হলেও উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ এলাকা থেকেও দেখা যাবে। সর্বোচ্চ ৫৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে দেখতে পাবেন একে৷

আমাদের হোম গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের কেন্দ্র এ মণ্ডলের পশ্চিম অংশের দিকে আছে৷ এ কারণেই আকাশের এ দিকটায় প্রচুর নক্ষত্রপুঞ্জ ও নীহারিকা আছে৷ টিপটের কয়েক ডিগ্রি উত্তর দিক দিয়ে চলে গেছে সূর্যপথ৷ যে কাল্পনিক পথে পৃথিবীর আকাশে সূর্য চলাচল করে৷ ধনুর ইংরেজি স্যাজিটেরিয়াস শব্দটা এসেছে ল্যাটিন থেকে। অর্থ তীরন্দাজ৷

সূর্য কখন কোথায় থাকে?

পুরো মণ্ডলকে বিভিন্ন কালচারে সেভাবেই চিত্রায়িত করা হয়েছে৷ ছবি। গ্রিক রূপকথায় স্যাজিটেরিয়াসকে অর্ধমানব, অর্ধঘোড়া হিসেবে কল্পনা করা হয়৷ কল্পিত এ জন্তুর অন্য নাম সেন্টোর। কল্পিত চিত্রে তীরন্দাজ তীর ধনু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ মণ্ডলের তীরটা চলে গেছে পাশের বৃশ্চিকমণ্ডলের বিছার বুক বরাবর৷ সেন্টোর থেকে নাম পেয়েছে আকাশের আরও একটি তারামণ্ডল। সেন্টোরাস নামের মণ্ডলটার অবস্থান আরও অনেকটা দক্ষিণে।

ধনুমণ্ডলের কল্পিত সেন্টোর। অর্ধ-মানব ও অর্ধ-ঘোড়া। 


সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এপসাইলন স্যাজিটেরাই৷ ডাকনাম কোস অস্ট্রালিস। যার অর্থ ধনুর দক্ষিণাংশ৷ দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারার নাম নানকি৷ বেয়ার পদবী সিগমা স্যাজিটেরাই৷ এ মণ্ডলেই আছে দূর আকাশে বিখ্যাত অনেক বস্তু৷ লেগুন নেবুলা, ওমেগা নেবুলা, রেড স্পাইডার ও ট্রিফিড নেবুলা - বিখ্যাত এই নীহারিকাদের পাওয়া যাবে এখানেই৷

ধনুমণ্ডলের তারাচিত্র

মহাকাশযান নিউ হরাইজনস এর গতিপথ বর্তমানে এই মণ্ডলের সামনে৷ বিখ্যাত বেতার সঙ্কেত ওয়াও! সিগনাল এসেছে এ মণ্ডল থেকেই৷ রহস্যময় যে সঙ্কেতকে অনেকে ভিনগ্রহের বাসিন্দার বার্তা মনে করতে পছন্দ করেন৷
Category: articles

রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

রাতের আকাশের পঞ্চম উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের আকাশে দ্বিতীয় উজ্জ্বল। স্বাতীর পরেই সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷ লাইরা বা বীণামণ্ডলে এর অবস্থান। স্বাভাবিকভাবেই মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাও এটিই৷ সূর্য থেকে দূরত্ব মাত্র ২৫ আলোকবর্ষ। 

রাতের আকাশে অভিজিৎ নক্ষত্র। আগস্ট মাসে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। রাত নয়টার দিকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় মাথার ওপর। 

জ্যোতির্বিদরা অভিজিৎ নক্ষত্র নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন৷ এ কারণে সূর্যের পর একে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারাও বলেন অনেকে৷ সূর্যের পরে বর্ণালীর ছবি তোলা তারাও অভিজিৎ৷ প্যারালাক্স বা লম্বন পদ্ধতিতে দূরত্ব মাপা অন্যতম প্রথম তারাও এটি৷ খৃষ্টপূর্ব ১২,০০০ সালে তারাটি ছিল মেরু বা ধ্রুবতারা৷ আবারও হবে ১৩,৭২৭ বছর পরে৷ কারণ আর কিছুই নয়। পৃথিবীর মেরুরু আবর্তন৷ ঘুরন্ত লাটিমের মতো পৃথিবীও ঘুরতে ঘুরতে অক্ষ পাল্টায়৷ 





অভিজিৎ নক্ষত্রের বয়স সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ মজার ব্যাপার হলো এর জীবনকাল বাকিও আছে সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ এর কারণ অভিজিৎ সূর্যের ২.১ গুণ ভারী৷ ভারী নক্ষত্রদের জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এ কারণেই সূর্যের চেয়ে আগে প্রধান ক্রম দশা পার করবে অভিজিৎ৷ সবমিলিয়ে প্রধান ক্রম দশা প্রায় একশ কোটি বছর৷  তারাটা সেকেন্ডে ২৩৬ কিলোমিটার বেগে নিজের অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। ১২.৫ ঘণ্টায় একবার পুরোটা সম্পূর্ণ ঘোরা হয়ে যায়৷ এ কারণে  স্বাভাবিকভাবেই বিষুব অঞ্চল অনেকটা ফোলা। অভিজিৎ বিষম তারা। মানে উজ্জ্বলতা সবসময় এক থাকে না। 

সামার ট্রায়াঙ্গল তারানকশার অন্যতম তারা অভিজিৎ


বৈজ্ঞানিক নাম আলফা লাইরি৷ সাধারণত মণ্ডলের উজ্জ্বলতম তারার নাম হয় আলফা। সে হিসেবেই এই নাম৷ ইংরেজি নাম ভেগা (Vega)। শব্দটা এসেছে আরবি শব্দ ওয়াকি থেকে৷ যার অর্থ পড়ন্ত বা অবতরণকারী (ঈগল)৷ ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি তারাটার নাম ভেগা রাখে৷ বাংলা নামটি এসেছে ভগবত পুরাণ থেকে। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, নক্ষত্রদের মধ্যে তিনি হলেন অভিজিৎ৷ 


উত্তর গোলার্ধের আকাশে সহজেই দেখা যায়। দেখার সবচেয়ে ভাল সময় জুলাই-আগস্ট। আগস্টে রাত নয়টার দিকে প্রায় ঠিক মাথার ওপর থাকে তারাটা৷ সুপরিচিত তারানকশা সামার ট্রায়াঙ্গলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা অভিজিৎ৷ তিন তারা মিলে তৈরি করেছে একটি সমকোণ৷ আর সমকোণের শীর্ষেই আছে অভিজিৎ৷ পশ্চিম-উত্তর দিকে একটু গেলেই পাওয়া যাবে সপ্তর্ষি৷ একটু চেষ্টাতেই তাই অভিজিৎকে চিনে নেওয়া যাবে৷ আবার সপ্তর্ষি দিয়েও সহজেই একে খুঁজে পাওয়া যাবে৷ অভিজিতের বিষুব লম্ব +৩৮.৭৮। ফলে বাংলাদেশ থেকে দেখলে মাথার সোজা উপর থেকে প্রায় ১৫ ডিগ্রি উত্তর দিয়ে তারাটা রাতের আকাশে পশ্চিমে যেতে থাকে। দক্ষিণে সর্বোচ্চ ৫১ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা সম্ভব। তার দক্ষিণে গেলে আর দেখা যাবে না একে। অ্যান্টার্কটিকা বা এমনকি চিলি থেকেও তারাটা দেখা যাবে না। 



সপ্তর্ষি ও ধ্রুবতারা দিয়ে অভিজিৎ খুঁজে নিতে পারেন

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

আইনস্টাইন ক্রস বুঝতে হলে মহাকর্ষ বক্রতা সম্পর্কে জানা চাই। ভারী বস্তু এর আশেপাশের স্থানকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে বস্তুটা আচরণ করে লেন্সের মতো। বস্তুর পেছন থাকা জিনিসের আলোও বাঁক খেয়ে পর্যবেক্ষকের চোখে আসতে পারে৷ 


হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চোখে আইনস্টাইন ক্রস


মহাকর্ষ কীভাবে আলো বাঁকায়?


অনেকসময় তো একই বস্তুর ছবি ভারী বস্তুর চারদিক দিয়েই বেঁকে চারটি আলাদা বিম্ব (ছবি) তৈরি করতে পারে। এমন এক বিখ্যাত ছবির নামই আইনস্টান ক্রস। জিনিসটা আসলে একটি কোয়াসারের ছবি। পৃথিবী থেকে দেখতে হুকরা'স লেন্স ছায়াপথের পেছনে এর অবস্থান। ভারী ছায়াপথটা কোয়াসারটার আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে চারপাশে এর চারটা ছবি পাওয়া যায়। কেন্দ্রেও ঝাপসা একটি ছবি আছে৷ দেখে মনে হবে, চারটা আলাদা বস্তুর ছবি। অথচ আসলে একটাই জিনিস৷ 

১৯৮৫ সালে জন হুকরা এটা আবিষ্কার করেন। অবশ্য সেসময় চারটি ছবির অস্তিত্ব বোঝা যায়নি। শুধু ছায়াপথের পেছনের কোয়াসার থাকার কথা জানা গিয়েছিল৷ কোয়াসারটার নাম খটমটে৷ কিউ২২৩৭+০৩০।আইনস্টাইন ক্রস বলতে সাধারণত এই বস্তুটাকেই বোঝানো হয়।  তবে একই রকমের আরও ছবিও পরে আবিষ্কৃত হয়েছে৷ অনেকসময় আবার ক্রসের বদলে তৈরি হয় বলয়। এর নাম আইনস্টাইন বলয়। 


কোয়াসারটা পৃথিবী থেকে ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত৷ লেন্সিং ছায়াপথের দূরত্ব ৪০ কোটি আলোকবর্ষপেগাসাস তারামণ্ডলে এর অবস্থান৷ 

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩

নোভা। ল্যাটিন এই কথাটার অর্থ নতুন তারা। শুনলে মনে হবে নতুন জন্ম নেওয়া নক্ষত্রের নাম নোভা। অথচ আসলে তা নয়। ভুল নাম থেকে যে জ্যোতির্বিজ্ঞানও মুক্ত নয়, তার আরেক উদাহরণ এই নোভা। ব্ল্যাকহোলের কথাই ধরুন। জিনিসটা না ব্ল্যাক না হোল। কালোও না। নেই কোনো গর্তও। তাও নাম ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর৷


নোভা নক্ষত্রের ছবি


এ তো গেল অর্থ। সংজ্ঞায়ও আছে গড়বড়৷ বলা হয় নোভা এমন নক্ষত্র যার উজ্জ্বলতা হঠাৎ বেড়ে গিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়৷ তার মানে নোভা নক্ষত্র খুব অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷ বাস্তবে নোভার গল্পটা আরেকটু জটিল৷ অনেকগুলো ব্যাপার ঠিকঠাক কাজ করলে তবেই পাওয়া যায় নোভা৷

আধুনিক যন্ত্রপাতি আসার আগে দূর আকাশে কথা জানা ছিল জ্যোতির্বিদদের৷ তখন থেকেই নতুন তারাকে তাঁরা নোভা বলেন৷ মানে নতুন বা নবতারা৷ নামটা খানিক ভুল। এই তারাগুলো মোটেও নতুন নয়। ছিল সেখানে আগে থেকেই৷ হ্যাঁ, দেখার মতো যথেষ্ট উজ্জ্বল ছিল না এই যা।

নোভা পাওয়ার জন্য একটা তারা হলে হবে না। লাগবে দুটি তারা। হতে হবে সূর্যের মতো। সূর্যের মতো থাকবে প্রধান ক্রম দশায়। মানে হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাবে৷ এ দুই তারা হবে বাইনারি বা জোড়াতারা। একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরবে। বলা ভাল মিলিত ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরবে।

কয়েকশো কোটি বছর পরের কথা৷ একটি নক্ষত্রের কোর বা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে৷ বাইরের অংশ বড় হয়ে নক্ষত্রটা হবে লোহিত দানব৷ পরে ভেতরের অংশ মহাকর্ষের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ছোট হয়ে হবে শ্বেত বামন। কিছু সময় পরে আরেকটা নক্ষত্রও লোহিত দানব হবে৷

এবার আমাদের দুটি তারার একটি লোহিত দানব। আরেকটি শ্বেত বামন৷ ঘুরছে একে অপরকে ঘিরে৷ শ্বেত বামন তারাটা দেখবে আয়তনে বড় পাশের তারাটার বাইরের দিকে এখনও হাইড্রোজেন আছে৷ এটি মহাকর্ষ দিয়ে ছোঁ মেরে লোহিত দানব থেকে জ্বালানি ও পদার্থ ছিনতাই করবে৷ বিশেষ করে হাইড্রোজেন৷ লোহিত দানবের হাইড্রোজেন এবার জমা হতে থাকবে শ্বেত বামনের চারপাশে৷ আমদানিকৃত পদার্থে ঢেকে যাবে বামন নক্ষত্রটা৷

পদার্থ জমা হতে হতে ও বেড়ে সঙ্কুচিত হয়ে তাপমাত্রা বাড়বে৷ তাপমাত্রা প্রায় ২০ হাজার কেলভিন হলে এখানেও শুরু হবে ফিউশন। প্রধান ক্রম অবস্থায় নক্ষত্রের কোরে যেমন হত। হাইড্রোজেনরা মিলিত হয়ে হিলিয়াম হবে৷ বাইরের দিকের এ পদার্থ জ্বলে জ্বলে নিজেকেই বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়৷ এ সময়ই তৈরি হয় উজ্জ্বল আলো৷এরই নাম নোভা। এ ঘটনা ঘটতে মাত্র কয়েক মাস সময় লাগে৷


সঙ্গী তারা থেকে জ্বালানি নিচ্ছে নোভা তারা



আগে যে তারাকে দেখতে টেলিস্কোপ লাগত, এখন তাকে দেখা যায় খালি চোখেই৷ কিছু কিছু তারাটা কাজটা করে নিয়মিত৷ একশো বছরের মধ্যে কয়েকবার উজ্জ্বল ও মলিন হয়৷ অন্যদের আরও বেশি সময় লাগে। তবে আধুনিক যন্ত্র আসার পরে একবারের বেশি দেখা এখনও সম্ভব হয়নি৷ জ্যোতির্বিদদের অনুমান বলছে, আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথে বছরে প্রায় ৪০ নোভা হয়৷ দেখা যায় অন্য ছায়াপথেও৷

১৫৭২ সালে টাইকো ব্রাহে নোভা শব্দটা প্রথম ব্যবহার করেন৷ঐ বছর তিনি আসলে টেলিস্কোপে দেখেছিলেন একটা সুপারনোভা৷ এখন যার নাম এসএন ১৫৭২৷ এসএন মানে সুপারনোভা৷ এটা দেখা গিয়েছিল উত্তর আকাশের ক্যাসিওপিয়া মণ্ডলে৷ সূর্যের প্রায় দশ গুণ ভরের তারকারা জীবনের শেষ ভাগে সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়ে নক্ষত্র ঠাণ্ডা হয়। নক্ষত্রের বহির্মুখী চাপ কমে। এতদিন যে চাপ মহাকর্ষকে ধরে রেখেছিল। চাপ নেই বলে এবার মহাকর্ষ জয়ী হয়। নক্ষত্র যায় গুটিয়ে। পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় ভারী জিনিসের আকার হয়ে যায় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। কাজটা হতে সময় লাগে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মতো। এই দ্রুত ঘটনাই একটি শক ওয়েভ তৈরি করে। বিস্ফোরিত হয় নক্ষত্রের বাইরের অঞ্চল। এ ধরনের বিস্ফোরণের নাম টাইপ টু সুপারনোভা।

টাইকো ব্রাহে ১৫৭২ সালে এমন বিস্ফোরণ দেখে ভাবলেন এ মনে হয় এক নতুন তারা। নাম দিলেন নোভা স্টেলা। বাংলায় যার অর্থ নবতারা। নামটা জ্যোতির্বিদদের মনে ধরে। আকাশে উজ্জ্বল কিছু দেখা গেলেই অনেকে নাম দিচ্ছিলেন নোভা।

নোভা বিস্ফোরণের শ্বেত বামনে জড় হওয়া মাত্র পাঁচ ভাগ পদার্থ ফিউশনে খরচ হয়। কিছু নিক্ষিপ্ত হয় মহাশূন্যে। ফিউশনের উপজাত হিসেবে কিছু আবার জমা হয় পৃষ্ঠে। কয়েক লক্ষ বছরে শ্বেত বামন প্রচুর পদার্থ জমা করে ফেলে। শুরু হয় কার্বন ফিউশন। শ্বেত বামনটার ভর সূর্যের ১.৪৪ গুণ হলে নক্ষত্রটা ঢেকে যায় ফিউশনের চাদরে। জমা হয় প্রচুর শক্তি। সেকেন্ডের ব্যবধানে ঘটে যায় বিস্ফোরণ। একে তখন আর নোভা বলে না। বলে সুপারনোভা। বিশেষ নাম টাইপ ওয়ান-এ সুপারনোভা।

তাহলে নোভা হলো মৃত তারার সঙ্গী তারা থেকে চুরি করা পদার্থ নিয়ে ফিউশন ঘটানোর ফলে সৃষ্ট বিস্ফোরণ। আর প্রচুর ভর জমা হয়ে শেষের বড় বিস্ফোরণটার নাম টাইপ ওয়ান-এ সুপারনোভা।
Category: articles

সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াই অঙ্গরাজ্যে আছে মাউনা কেয়া মানমন্দির। এ পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে দারুণ এক সুপারনোভা বা অতিনবতারা৷ 


সুপারনোভাটা প্রথম দেখেন জাপানি জ্যোতির্বিদ কইচি ইতাগাকি৷ তিনি এক জাঁদরেল সুপারনোভা শিকারী। ইয়ামাগাতা শহরের বাইরের নিজস্ব মানমন্দির থেকে এ পর্যন্ত খুঁজে পেয়েছেন ৮০টির বেশি বিস্ফোরণ। নতুন সুপারনোভাটা তিনি প্রথম দেখেন গত মে মাসের ১৯ তারিখে। 


সুপারনোভা এসএন ২০২৩আইএক্সএফ


মানমন্দিরের কাজ কী? 


নতুন আবিষ্কৃত সুপারনোভাটা আছে পিনহুইল গ্যালাক্সির এক সর্পিল বাহুতে৷ নাম এসএন ২০২৩আইএক্সএফ। গত পাঁচ বছরে দেখা সবচেয়ে কাছের সুপারনোভা এটা। পিনহুইল ছায়াপথটার অবস্থান সপ্তর্ষীমণ্ডলের দিকে। পৃথিবী থেকে প্রায় ২.১ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। ছায়াপথটার বাহুতে আছে প্রচুর পরিমাণ নীহারিকা। যেখানে তৈরি হয় নতুন নক্ষত্র। 


সুপারনোভা কীভাবে হয়? 


সূত্র: সিএনএন

Category: articles

রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

আকাশের এলাকায় দুই ধরনের নকশা খুব দর্শনীয়। এক হলো তারামণ্ডল৷ যা পুরো আকাশকে ৮৮টি অঞ্চলে ভাগ করেছে। সব তারা, ছায়াপথ বা দূর আকাশে জিনিস কোনো না কোনো মণ্ডলে থাকবে।


দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড তারানকশা 



আরেকটি মজার জিনিস হলো তারানকশা। বিভিন্ন তারার সংমিশ্রণে তৈরি তারার সুন্দর নকশা। এমনই একটি নকশার নাম দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড। ডায়ামন্ড বা হীরার মতোই এর চারটি কোণা। বলাই বাহুল্য, চার কোণায় আছে চারটি উজ্জ্বল তারা৷

তারামণ্ডলের পরিচয়


তারানকশা কী?


এই নকশাটা মে-জুন মাস ও এর আগে পরে ভাল দেখা যায়। ডায়ামণ্ডের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা স্বাতী। রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের এক নম্বর উজ্জ্বল। জুনের শুরুতে রাত নয়টার দিকে ঠিক মাথার উপর থাকে। আরেকটি তারা চিত্রা (spica)। উজ্জ্বলতায় ক্রম ১৫। কন্যারাশির সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷

অপর দুই তারার একটি ডেনেবোলা। সিংহরাশির দ্বিতীয় নম্বর উজ্জ্বল তারা। অবস্থান কল্পিত সিংহের লেজে। আর চতুর্থ তারার নাম কর ক্যারোলি। সারমেয়যুগল মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা।

খুঁজে পাওয়া একদম সোজা। স্বাতী ও চিত্রাকে পাওয়া যাবে সপ্তর্ষীকে কাজে লাগিয়ে। 



গ্রেট ডায়ামন্ড আকারে সপ্তর্ষির চেয়ে বড়। এর দক্ষিণের তিন তারা আবার আলাদা আরেকটি নকশা তৈরি করেছে। নাম বসন্ত ত্রিভুজ। মানে স্বাতী, চিত্রা ও ডেনেবোলা। ডেনেবোলার জায়গায় অনেকসময় সিংহমণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা রেগুলাসকে বসানো হয়।
Category: articles

মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

রাতের আকাশে কত শত-সহস্র তারকা দেখা যায়। হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরের তারা তো খালি চোখে প্রচুর দেখা যায়ই। এমনকি মিল্কিওয়ে থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরের ত্রিকোণ ছায়াপথও দেখা যায় খালি চোখে। কিন্তু দেখা যায় না সূর্যের সবচেয়ে কাছের তারাটাকে।


আলফা সেন্টোরি এ ও বি নক্ষত্র। লাল বৃত্তের জায়গায় প্রক্সিমা সেন্টোরি। 

খালি চোখে কত তারা দেখা যায়?

হ্যাঁ, বলছি প্রক্সিমা সেন্টোরির কথা। তারাটার দূরত্ব পৃথিবী থেকে মাত্র ৪.২৫ আলোকবর্ষ। তাও খালি চোখে একে আপনি কখনোই দেখবেন না। কারণ আর কিছুই নয়, তারাটির অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি (luminosity) অনেক কম৷ সূর্যের এক ভাগও না। মাত্র ০.১৬ ভাগ। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় তিন হাজার কেলভিন৷ সূর্যের প্রায় অর্ধেক।

আবিষ্কৃত হয় ১৯১৫ সালে। এটি একটি লোহিত বামন তারা। সূর্যের মতো প্রধান ক্রমের তারাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও কম উষ্ণ হলো লোহিত বামন। তবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। কম দীপ্তির কারণে এদের কাউকেই পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ৬০ তারার মধ্যে ৫০টাই লোহিত বামন।

সূর্য কীভাবে জ্বলে?

তারাটির ভর সূর্যের মাত্র ১২.৫ ভাগ। ঘনত্ব ৩৩ ভাগ। চওড়া সূর্যের ১৪ ভাগ। তবে তারাটার চৌম্বক সক্রিয়তার কারণে মাঝেমধ্যে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়৷ চৌম্বক অঞ্চল তৈরি হয় পরিচলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে৷ ভর কমের কারণে এতে জ্বালানি পোড়ে খুব ধীরে। আবার পরিচলনের মাধ্যমে জ্বালানি পুরো নক্ষত্রে ছড়িয়ে যাওয়ায় এর আয়ু অনেক লম্বা। নক্ষত্রটা আরও ৪ ট্রিলিয়ন (৪ লক্ষ কোটি) বছর হাইড্রোজেন পুড়িয়ে যেতে থাকবে। যেখানে সূর্য এ কাজটা করবে আর মাত্র পাঁচশো কোটি বছর।

সূর্যের তুলনায় প্রক্সিমার সেন্টোরির আকার। 

জানা গ্রহ আছে দুটি। প্রক্সিমা সেন্টোরি বি ও ডি। সি নামে আরেকটা প্রস্তাবিত গ্রহ আছে। বি গ্রহটার অবস্থান নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলে। ভর পৃথিবীর ১.০৭ গুণ। ১১ দিনে নক্ষত্রকে ঘুরে আসে। ডি গ্রহটা কাজটা করে ৫ দিনেই।

১৯১ সালে স্কটিশ জ্যোতির্বিদ রবার ইনেস তারাটি আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রক্সিমা সেন্টোরি নামটা প্রস্তাব করেন৷

পাশেই কত উজ্জ্বল এক তারা। আলফা সেন্টোরি। রাতের আকাশের তৃতীয় উজ্জ্বল। আলফা সেন্টোরি এ ও বি প্রক্সিমা সেন্টোরিসহ একটি ত্রিতারা জগতের অংশ। তিনজনই তাদের মিলিত ভরকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে৷



তারাটা খালি চোখে দেখা গেলেও বাংলাদেশ থেকে দেখা কঠিন হত। কারণ বিষুব লম্ব (-৬২)। সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি উত্তর উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত একে দেখা সম্ভব।
Category: articles

সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

বিটলজুস নিক্ষত্র এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যেকোনো সময় এটি সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। ঠিক কখন সেটা আমরা জানি না। আমরা নক্ষত্রটা থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে আছি৷ তাই বিস্ফোরণে ক্ষতি হবে না। দেখব শুধু সুপারনোভার অসাধারণ রূপ!


বিটলজুস



সম্প্রতি লোহিত অতিদানব নক্ষত্রটার উজ্জ্বলতা ৫০% গুণ বেড়েছে। ফলে আবারও শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা৷

বিটলজুস একইসাথে একটি লোহিত অতিদানব ও অর্ধনিয়মিত বিষম ও স্পন্দনশীল তারা। মানে এর উজ্জ্বলতার পরিবর্তন কিছু নিয়ম মেনে চলে। উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের আছে বেশ কিছু চক্র৷ মূল চক্রটি ৪০০ দিনের। তবে ১২৫ ও ২৩০ দিনের দুটি ছোট চক্রও আছে। আছে আবার ২২০০ দিনের একটি বড় চক্র৷ এসব কারণে বিটলজুসের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন জ্যোতির্বিদদের কাছে এক মহাধাঁধা৷

কয়েক বছর আগে এর উজ্জ্বলতা কমে আসে। সবাই এর কারণ নিয়ে ভাবতে থাকল। পরে দেখা গেল, উজ্জ্বলতা আসলে কমেনি। নক্ষত্রটার পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষিপ্ত পদার্থ ঠাণ্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হয়৷ আর তাতে বাধাগ্রস্ত হয় আলো৷

এখন আবার উজ্জ্বল হচ্ছে বিটলজুস৷ এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা সম্ভবত প্রত্যাশার চেয়ে আগেই সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হবে৷ মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে মিল্কিওয়ের পরবর্তী সুপারনোভা হবে বিটলজুসই৷

বিটলজুস বর্তমানে লোহিত অতিদানব তারা। পেছনে ফেলে এসেছে প্রধান ক্রম দশা। যে সময় এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাত৷ ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বছর ধরে কাজটি করে এসেছে নক্ষত্রটা৷ ভর হারিয়ে তারারা ফিউশন বিক্রিয়ার বহির্মুখী চাপকে আর ধরে রাখতে পারে না। নক্ষত্রের বাইরের দিক ফুলে ফেঁপে ওঠে৷ ভর কমলেও আকার যায় বেড়ে৷

তবে ফিউশন তখনও চলে। শুরু হয় কার্বন পোড়া। তৈরি হয় আরও কিছু ভারী মৌল। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিটলজুস এ ধাপের শেষের দিকে আছে। কার্বন পোড়ার ধাপ আছে কয়েকটি৷ বিটলজুস স্পন্দিত হয়, পদার্থ ছুঁড়ে মারে, আবর্তন করে। আবার ছুটে চলে মহাশূন্য ধরে। কার্বন পোড়ারনোর কোন ধাপে নক্ষত্রটা আছে তা না জানা গেলে সঠিক করে বলা যাবে না কবে নক্ষত্র সুপারনোভা হবে৷ জ্যোতির্বিদরা দেখেন নক্ষত্রের বাইরে অংশ৷ ভেতরের খবর সঠিক করে বলা সম্ভব হয় না।

তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণা বলছে বিস্ফোরণটা হতে পারে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে৷ ২০০ পারসেক দূরের এ বিস্ফোরিত পৃথিবীর আকাশে অন্যতম সুন্দর এক দৃশ্যের অবতারণাই করবে। ছুঁড়ে দেওয়া ক্ষতিকর এক্সরে বা গামা রশ্মি থেকে আমরা নিরাপদ।



বিটলজুস রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা। আদমসুরত বা কালপুরুষ মণ্ডলে এর অবস্থান। শীতের আকাশে সহজেই উজ্জ্বল এ তারার দেখা পাবেন। মে মাসের দিকে পশ্চিম দিগন্তে হারিয়ে যাবে। আগস্টের শেষের দিকে আবার দেখা যায় ভোরের পূবাকাশে। নিচের লিঙ্কে বিটলজুস ও অন্যান্য উজ্জ্বল তারা কীভাবে খুঁজে পাবেন দেখানো আছে। 

আদমসুরত তারামণ্ডল। উপরে বামপাশের তারাটাই বিটলজুস। 

Category: articles

শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩

রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের আকাশে অবশ্য সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এটাই৷ লুব্ধক, সুহাইল ও আলফা সেন্টোরিরা সবাই দক্ষিণ গোলার্ধে। যদিও উত্তরের অনেকাংশ থেকে এদেরকেও দেখা যায়। বলছি স্বাতী নক্ষত্রের কথা৷ ইংরেজি নাম আর্কটিউরাস (arcturus)।



উত্তর গোলার্ধের আকাশে স্বাতীকে সহজেই দেখবেন। মেঘমুক্ত আকাশে সঠিক ঋতুতে তাকালেই দেখতে পাবেন। সেই সঠিক ঋতুর মধ্যে সেরা সময়টা জুন মাস। বিশেষ করে জুনের ১০ তারিখ বাংলাদেশ ও আশেপাশের অক্ষাংশের এলাকায় রাত নয়টায় তারাটা ঠিক মাথার উপর থাকে।

উজ্জ্বল তারাদের গল্প

স্বাতী চেনার উপায়
আকাশের অন্যতম সহজলব্ধ একটি তারানকশা সপ্তর্ষী। এর সাতটি তারায় গঠিত তারানকশা সপ্তর্ষী দেখতে চামচের মত। চামচের হাতলের দিকের তারাগুলোকে বৃত্তচাপের মত করে বাইরের দিকে প্রসারিত করে দিলেই পাওয়া যায় উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতী। চাপকে আরেকটু প্রসারিত করলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা ডিসেম্বর-জানুয়ারির সময় স্বাতীকে দেখা যাবে না।

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারানকশা সপ্তর্ষীর হাতল স্বাতীকে চিনিয়ে দেয়




সূর্য থেকে স্বাতীর দূরত্ব ৩৬.৭ আলোকবর্ষ৷ বয়স প্রায় ৭০১ কোটি বছর৷ সূর্যের চেয়ে ২০০ কোটির বেশি। বর্তমানে তারাটা লোহিত দানব দশায় আছে। মানে এর কোরের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ। ভর সূর্যের প্রায় সমান। তবে আকার বেড়ে সূর্যের ২৫ গুণ হয়েছে। উজ্জ্বল সূর্যের ১৭০ গুণ। স্বাতী সূর্যের ২৫ গুণ চওড়া। শুনে হয়ত বোঝা যাবে না কত বড়। ছবিটা একবার দেখে নিন৷


সূর্য ও বিভিন্ন নক্ষত্রের তুলনামূলক আকার

বেশ কয়েকটি তারানকশার অংশ স্বাতী। চিত্রা ও ডেনেবোলার (বা রেগুলাস) সাথে মিলে তৈরি করেছে বসন্ত ত্রিভুজ। আবার কর ক্যারোলিসহ চারটি তারা মিলে চার কোণাকার দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড৷ স্বাতী ভূতেশমণ্ডলের তারা। এই পুরো মণ্ডলটা আবার দেখতে কোন আইসক্রিমের মতো। যার একদম নিচে আছে স্বাতী।

তারামণ্ডলী বনাম তারানকশা


বসন্ত ত্রিভুজ তারানকশা

দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড তারানকশা
Category: articles

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩

ধরুন, সামনে তাকিয়ে একটা বিল্ডিং বা পাহাড় দেখলাম। যখন দেখলাম তখনও সেটা সে অবস্থায়ই আছে। এমন না যে আমরা দেখতে দেখতে বিল্ডিংয়ের কোনো পরিবর্তন ঘটে গেছে। তবে পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের দূরের বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়।




চাঁদের কথাই ধরুন। চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে আছে। আলোর বেগ অনেক বেশি। সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। তাও এত দূর থেকে আলো আসতে ১.৩ সেকেন্ড সময় তো লাগেই। মানে এই মূহুর্তে আমরা চাঁদের যে আলো দেখছি তা ১.৩ সেকেন্ড আগের প্রতিফলিত আলো

চাঁদ কত দূরে আছে?


 চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 

সূর্য তো আরও দূরে। আছে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। আলো আসতে সময় লাগে গড়ে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। তারমানে সূর্যকে আমরা ৮ মিনিট আগের অবস্থায় দেখি। এখন সূর্য গায়েব হয়ে গেলে আরও ৮ মিনিট পরে তা আমরা জানতে পারব।

সূর্য কত দূরে আছে?

সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় চার আলোকবর্ষ। তার মানে নক্ষত্রটার চার বছর আগের দৃশ্য দেখি আমরা। আমাদের অন্যতম কাছের ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা। দূরত্ব ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। একবার ভাবুন। উত্তর আকাশে যে অ্যান্ড্রোমিডাকে আমরা দেখি তা আসলে ২৫ লাখ বছর আগের অ্যান্ড্রোমিডা!

এক আলোকবর্ষ কত বড়?

অ্যানড্রোমিডা কীভাবে দেখব?

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেন ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের কথা। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের আবিষ্কৃত নক্ষত্র। স্বাভাবিকভাবেই যত দূরে আমরা কোনো নক্ষত্র দেখব, সেটা হবে ততই প্রাচীন বা পুরনো। ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের অবস্থান পৃথিবী থেকে ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ। ভাবুন! নক্ষত্রের ২৮০ কোটি বছরেরপুরনো দৃশ্যও মানুষ দেখেছে।

২০২২ সাল পর্যন্ত পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের দেখা ছায়াপথের নাম এইচডি১। দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ। মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। তাহলে তার চেয়ে আগে ছায়াপথ কোথা থেকে আসল? আসলে দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ হলেও ছায়াপথটি আমরা ৩৩২৯ বছর আগে অবস্থায় দেখছি না। মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে বস্তুদের লোহিত সরণ ঘটে। এর ফলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ১৩৮০ কোটির বদলে প্রায় ৪৬৫০ কোটি।

মহাবিশ্ব কত বড়?

তার মানে, আমরা পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের যত দূরে তাকাব, তত প্রাচীন দৃশ্য দেখব। 

আর আকাশযান শনাক্ত ও ব্যবস্থাপনার জন্য যে রেডার ব্যবহার করা হয় সেটাও কিন্তু এই বুদ্ধি দিয়েই কাজ করে। রেডার থেকে বিমান বা জাহাজে সঙ্কেত পাঠানো হয়। সেটা যানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। যাওয়া-আসার সময়টুকু হিসাব করেই বের করা দূরত্ব।


পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরের বস্তুগুলোর একটি তালিকা দেখতে পারবেন উইকিপিডিয়ায়। 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...