আলডেরামিন নক্ষত্রটি সিফিয়াস তারামণ্ডলীতে অবস্থিত। এই তারামণ্ডলীটি খুব বেশি উজ্জ্বল নয়। তারামণ্ডলীটির অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল একমাত্র নক্ষত্র হল আলডেরামিন। এর অপর নাম হল আলফা সিফিয়াই। নক্ষত্রটি অনেক দ্রুত বেগে আবর্তন করে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhKSJztUBxBzwqvPcOHbpTgDVhmk_slQEQE-FLPXpaEX4E_naU_jQSIqXfVSr1hseYDUcAjiSFD2irynVW0AZenvC_qA0ZSlWEKFovjkC3oh0RYt0ppRa0inTHxQVC0kQpt_qKZ8v1O_ts/s640/alpha-cephei-Alderamin.jpg) |
জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিদরা অপটিক্যাল ইনটারফেরোমিটার ব্যবহার করে নক্ষত্রটির নতি, মেরু ও বিষুব ব্যাসার্ধ এবং তাপমাত্রা বের করেন। |
সিফিয়াস তারামণ্ডলির দেখতে ঘরের মতো, আমরা ছোটবেলায় দোচালা ঘরের যেরকম চিত্র আঁকতাম ঠিক তেমন। আকাশের এক কোণে এর অনেকগুলো ম্লান তারকার মধ্যে আলডেরামিন একমাত্র ব্যতিক্রম। ফলে এই তারাটিকে চিনে নেওয়া খুব সহজ কাজ। এর তীব্র আবর্তন বেগের কারণেও এটি খুব পরিচিত।
আরো পড়ুনঃ
☛
নক্ষত্র কাকে বলে?
☛
তারামণ্ডলীর পরিচয়
☛
আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য
আলডেরামিনকে খুঁজে পাবার উপায়ঃ
তারাটির অবস্থান উত্তর আকাশে। একে খুঁজে পেতে কাজে আসবে ইংরেজি W বা M অক্ষরের মতো (অবস্থানের উপর ভিত্তি করে দুই রকমের যে কোনো রকম হতে পারে) দেখতে আরেকটি তারামণ্ডলী ক্যাসিওপিয়া।
ঋতুভেদে ক্যাসিওপিয়াকে কখনো উত্তর-পূর্ব দিকে, কখনো বা উত্তর- পশ্চিম দিকে, আবার কখনো মাথার উপর থেকে একটু উত্তরের অবস্থানে সোজা উত্তর দিকে থাকবে। নভেম্বর মাসের রাত নয়টার দিকে ক্যাসিওপিয়াকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। এ সময় এটি থাকে উত্তর দিগন্ত থেকে সোজা উপরের দিকে। তারামণ্ডলীটির প্রধান অংশ (ডাব্লিউ বা এম আকৃতি) (+৬৫) থেকে (+৫৫) ডিগ্রি
বিষুব লম্ব জুড়ে অবস্থিত। সব মিলিয়ে বছরের শেষ অর্ধেকের দিনগুলো একে খুঁজে পেতে বেশি সহায়ক। আগস্ট- সেপ্টেম্বর মাসেও সন্ধ্যা নামার পরেই এটি উত্তর- পূর্ব দিগন্ত দিয়ে উঁকি দিতে শুরু করে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhhOoRu8Hv3Qrwd_OYTeMnaGTnGiE1rhXDolc3UmEawhWfJ8y7tp-He92GFOymegcobpoqqM-U8X7-cCwPyRy24dhpyJ9zqNBNzNPs3lg3kYKPj3N4o28S4NmeoV0GXukRQKIYgHaOo3Vg/s400/Cepheus_Jun_09_wide.jpg) |
ইংরেজি এম বা ডাব্লিউ আকৃতির ক্যাসিওপিয়া ও সিফিয়াস মণ্ডলী । সহজে বোঝার জন্যে ছবিটিকে রোটেট করা হয়েছে। |
ক্যাসিওপিয়াকে আমরা সহজেই পেয়ে যাব। এবার কাজ হল একে কাজে লাগিয়ে সিফিয়াস ও আলডেরামিনকে বের করা। দেখুন, ক্যাসিওপিয়ার সবচেয়ে উজ্জ্বল উপরের তিনটি তারাকে দেখতে ইংরেজি ভি (V) অক্ষরের মত মনে হয়। এদের মধ্যে উপরের দুটি কাফ ও শেডার। শেডারকে কাফের সাথে যোগ করে সামনে চলে গেলেই পাওয়া যাবে আলডেরামিন। ছবি দেখেই বোঝা যাচ্ছে, পুরো সিফিয়াসকেও খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া যাবে।
আলডেরামিনের বৈশিষ্ট্যঃ
এটি একটি সাদা নক্ষত্র। একে এ শ্রেণীর (Class A) তারা মনে করা হয়। বর্তমানে এটি প্রধান ধারা থেকে সাবজায়ান্ট ধাপে রূপ নিচ্ছে। প্রধান ধারার (main sequence) নক্ষত্ররা হাইড্রোজেনের ফিউসান ঘটিয়ে হিলিয়াম উৎপন্ন করতে থাকে। আমাদের সূর্য একটি প্রধান ধারার নক্ষত্র। মনে করা হচ্ছে, আলডেরামিনের হাইড্রোজেন জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে এটি রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানবে পরিণত হবে।
নক্ষত্র বিশেষজ্ঞ জিম কেলারের মতে আলডেরামিনের দীপ্তি সূর্যের ১৮ গুণ। অন্য দিকে এটি আবার খুব জোরে ঘুরছে। এটি ১২ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে একবার নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘূর্ণন সম্পন্ন করে ফেলে, যেখানে কাজটি করতে আমাদের সূর্যের সময় লাগে প্রায় এক মাস।
আরো পড়ুনঃ
☛
আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য
জিম কেলার বলেন,
নক্ষত্রটির কাজের সাথে এই ঘূর্ণনের সম্পর্ক থাকতে পারে। আমাদের সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র খুব সক্রিয়। তবে 'এ শ্রেণী'র নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে চৌম্বকক্ষেত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু আলডেরামিন সূর্যের প্রায় সমপরিমাণ এক্সরে বিকিরণ নির্গত করছে। এর অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থেকেও বোঝা যাচ্ছে এতে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র উপস্থিত। এর কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
তবে সিফিয়াসের আরো দুটি দানব নক্ষত্রের তুলনায় আলডেরামিন কিছুই নয়। এরা হল মিউ সিফিয়াই এবং ভিভি সিফিয়াই। এরা দুজনেই সুপারজায়ান্ট- মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বৃহত্তম এবং উজ্জ্বলতম গ্যালাক্সিদের দলের সদস্য। হাজার হাজার সূর্যকে মিলিত করলেও এদের উজ্জ্বলতার কাছে তা ম্লান হয়ে যাবে। অবশ্যই এখানে আমরা নক্ষত্রের প্রকৃত উজ্জ্বলতা দা দীপ্তির কথা বলছি। দূরে অবস্থিত বলেই এরা পৃথিবীর আকাশে সূর্যের কাছে হেরে যাচ্ছে।
এদের কোনো একটিকে যদি সূর্যের জায়গায় বসানো হয়, তবে এরা বৃহস্পতির কক্ষপথ পর্যন্ত জায়গা দখল করে ফেলবে। এরা এত দীপ্তিমান হয়েও রাতের আকাশে তুলনামূলক অনুজ্জ্বল হবার কারণ হচ্ছে এরা পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার
আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে তুলনামূলকভাবে আলডেরামিন খুব কাছে অবস্থিত- মাত্র ৪৯ আলোকবর্ষ।
আরো পড়ুনঃ
☛
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে?
ইতিহাসে আলডেরামিনঃ
অতীতে এক সময় এটি ধ্রুব তারা ছিল। অর্থ্যাৎ, তখন এর অবস্থান ছিল আমাদের বর্তমান ধ্রুবতারা পোলারিসের জায়গায়, প্রায় উত্তর দিক বরাবর। সর্বশেষ এ অবস্থা ছিল ১৮, ০০০ খৃষ্টপূর্ব সালে। আরো ৫,৫০০ বছর পরে এটি আবার ধ্রুবতারার স্থান দখল করবে। ৭৫০০ সালের দিকে এটি প্রকৃত উত্তর দিক থেকে
তিন ডিগ্রি দূরে থাকবে। এর অর্থ, আমাদের পোলারিস এর চেয়ে ভালো ধ্রুবতারা। পোলারিস প্রায় বরাবর উত্তর দিকেই থাকে। এর বিষুব লম্ব (+৮৯) ডিগ্রির বেশি দেখেই সেটা অনুমান করা যায়। ২১০০ সালে পোলারিস প্রকৃত উত্তর থেকে
মাত্র ০.৪৫ ডিগ্রি দূরে থাকবে।
নামকরণঃ
আলডেরামিন শব্দটি এসেছে আরবি আযযিরা আল ইয়ামিন (الذ راع اليمين) থেকে। এর অর্থ হল 'ডান বাহু'। সিফিয়াস মণ্ডলীর নাম রূপকথার একজন রাজার নামে দেওয়া। ডান বাহু বলতে সেই রাজার ডান বাহু বোঝানো হচ্ছে।
সংক্ষিপ্ত প্রোফাইলঃ
আপাত উজ্জ্বলতাঃ + ২.৫
দূরত্বঃ ৪৯ আলোকবর্ষ
বিষুব লম্বঃ +৬২.৫ ডিগ্রি
নামঃ আলফা সিফিয়াই
সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/brightest-stars/alderamin-the-kings-brightest-star
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Alpha_Cephei