Advertisement

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বামন গ্রহদের পরিচয়। বড় করে দেখতে ক্লিক করুন। 


টেক্সট 

বামন গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ভরের কারণে আকৃতি গ্রহদের মতোই প্রায় গোলাকার। তবে আকারে গ্রহদের চেয়ে ছোট। সূর্য ছাড়া অন্য কোনো বস্তুর চারপাশে ঘোরে  না। তবে নিজের কক্ষপথে অন্য বস্তু চলে আসতে পারে। সৌরজগতে শত শত বামন গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে অবশ্য পাঁচটি বহুল পরিচিত। 


সেরেস

আকার: ৫৮৪ মাইল চওড়া 

অবস্থান: গ্রহাণুবেষ্টনী 

আবিষ্কার: ১৮০১ সাল 

বিশেষ তথ্য: গ্রহাণুবেষ্টনীর সবচেয়ে বড় গ্রহাণু 


প্লুটো

আকার: ১৪৭৩ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্টের কাছে 

আবিষ্কার: ১৯৩০ 

চাঁদ/উপগ্রহ: শ্যারন, নিক্স, হাইড্রা, স্টিক্স, কারবারোস 

বিশেষ তথ্য: একদিন সমান পৃথিবীর ৬.৪ দিন


মাকিমাকি

আকার: ৮৯০ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্ট 

আবিষ্কার: ২০০৫ 

চাঁদ: এমকে২ 

বিশেষ তথ্য: কাইপার বেল্টের দ্বিতীয় উজ্জ্বল বস্তু 


হাউমেয়া 

আকার: ১১৯৫ x ৬১৫ মাইল (ডিম্বাকার) 

অবস্থান: কাইপার বেল্ট

আবিষ্কার: ২০০৪ 

চাঁদ: হিয়াকা, হামাকা 

বিশেষ তথ্য: নেপচুনের বাইরের বস্তুর মধ্যে এখন পর্যন্ত এরই কেবল বলয় আছে বলে জানা গেছে।  


এরিস

আকার: ১৪৪৫ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্টের বাইরের অংশ

আবিষ্কার: ২০০৩ 

বিশেষ তথ্য: আবিষ্কারের মাধ্যমে প্লুটোর গ্রহত্ব নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় 


সূত্র: স্পেস ডট কম
Category: articles

বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৩

আজ ২৩ আগস্ট। ১৯৬৬ সালের এই দিন চাঁদের কক্ষপথ থেকে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর ছবি তোলা হয়। যা একইসাথে অন্য মহাজাগতিক বস্তু থেকেও প্রথম তোলা ছবি। ছবিটি তোলে নাসার মহাকাশযান লুনার অরবিটার ১।


চাঁদ থেকে পৃথিবীর প্রথম ছবি। 


যানটা ছিল নাসার লুনার অরবিটার প্রোগ্রামের প্রথম অভিযান৷ যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো যানের মধ্যে এটাই প্রথম চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে৷ প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের মসৃণ পৃষ্ঠের ছবি তোলা৷ যাতে পরবর্তী সার্ভেয়ার ও অ্যাপোলো অভিযানের যানগুলো নিরাপদে অবতরণ করতে পারে৷ চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় ঐ বছরই আগস্টের ১০ তারিখে। নাম থেকে বোঝা যাচ্ছে যানটা অরবিটার। মানে কক্ষপথে ঘুরবে৷ আগস্টের ২৫ তারিখে এটা কক্ষপথের নিকটবিন্দুতে পৌঁছে৷ তার আগেই তোলে বিখ্যাত ছবিটা৷

অক্টোবর মাসের ২৯ তারিখ। যানটা এর ৫৭৭তম প্রদক্ষিণের সময় চাঁদের উল্টো পাশে আছড়ে পড়ে৷ কাজটা পরিকল্পিতই ছিল। কারণে ততদিনে লুনার অরবিটার ২ যান পাঠানোর পরিকল্পনা হয়ে গেছে৷ এর সাথে যোগাযোগ নির্বিঘ্ন করতেই পূর্বসূরিকে অকেজো করা হয়৷

সূত্র: উইকিপিডিয়া: লুনার অরবিটার
Category: articles

মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট, ২০২৩

রাতের আকাশের দ্বাদশ উজ্জ্বল তারা। আগস্ট মাস দেখার সেরা সময়৷ রাত নয়টার দিকে প্রায় মাথার উপর জ্বলজ্বল করে তারাটা৷ পাশেই আছে আরও দুটি উজ্জ্বল তারা অভিজিৎপুচ্ছ। তিনটি তারা মিলে একত্রে নাম সামার ট্রায়াঙ্গল৷ শ্রবণার অবস্থান ঈগলমণ্ডলে৷ রূপকথার কাল্পনিক ঈগলের বুকে এর অবস্থান৷


সমার ট্রায়াংগেল ও শ্রবণা তারা। 





পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৬.৮ আলোকবর্ষ৷ মানে পৃথিবীর অন্যতম নিকট প্রতিবেশী এক তারা। বর্তমানে প্রধান ক্রম দশায় আছে৷ সূর্যের মতো হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাচ্ছে৷ আলটেয়ার বা শ্রবণার দুটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে।


সূর্য কীভাবে জ্বলে?

তারাটা প্রচণ্ড জোরে ঘোরে। নিজের অক্ষের ওপর ঘুরে আসতে এর মাত্র দশ ঘণ্টা লাগে৷ যেখানে সূর্যের লাগে প্রায় ২৭ দিন। আর পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা৷ মানে পৃথিবী একবার ঘুরতে ঘুরতে তারাটা ঘোরে দুইবারের বেশি৷ দ্রুত ঘূর্ণনের কারণে শ্রবণার মেরু অঞ্চল চেপে গেছে৷ বিষুব অঞ্চলে ফুলে উঠেছে৷ এ ধরনের আকৃতিকে বলে অবলেট স্ফেরয়েড (oblate spheroid)৷ এসব আকৃতিতে মেরু অঞ্চল চেপে থাকে। বিষুব এলাকার ব্যাসার্ধ মেরু এলাকার চেয়ে বেশি হয়। শ্রবণার ক্ষেত্রে তা বিশ ভাগেরও বেশি৷ অন্যদিকে মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ হলে নাম হয় প্রোলেট স্ফেরয়েড (prolate spheroid)।


আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো তারাটার বিষমতা। বিষম তারার অভাব নেই আকাশে। এসব তারার উজ্জ্বলতা কিছুদিন পরপর কমে-বাড়ে৷ তবে শ্রবণা এখানেও একটু ব্যতিক্রম৷ অন্যদের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন ঘটে মোটামুটি নিয়মিত৷ সেখানে শ্রবণার উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের হার আছে নয় নয়টা৷ খালি চোখে অবশ্য সে তারতম্য বোঝা যাবে না৷ এ বিষমতার সাথে সম্ভবত এর ঘূর্ণনের সম্পর্ক আছে৷ শ্রবণা একটি ডেল্টা স্কুটি ধরনের বিষম তারা৷

শ্রবণার আভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি সূর্যের দশ গুণ। সূর্যের জায়গায় এ তারাটা থাকলে পৃথিবী বাসের অযোগ্য হত৷ ভর সূর্যের ১.৮ গুণ। চওড়াও প্রায় দ্বিগুণ৷ পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৬৬২৬ থেকে ৮৮২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ বয়স দশ কোটি বছর। যেখানে সূর্যের বয়স পাঁচশ কোটি বছর৷ টেলিস্কোপে এর তিনটি অনুজ্জ্বল সঙ্গী তারা দেখা যায়৷ অল্প কিছু তারারই করা ছবি তোলা সম্ভব হয়েছে। শ্রবণা তার অন্যতম। এদের মধ্যে আরও আছে জ্যেষ্ঠা, রেগুলাস, মাইরা ইত্যাদি৷

ঈগলমণ্ডল ও শ্রবণা তারা। মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এটা।

আগস্টের রাতের আকাশ শ্রবণা দেখার সেরা সময়৷ আপাত উজ্জ্বলতা +০.৭৬। ফলে মেঘমুক্ত রাতের আকাশে খালি চোখে সহজেই দেখা যাবে৷ সামার ট্রায়াঙ্গলের তিন তারার মধ্যে শ্রবণা সবার পরে উদিত হয়। এই ত্রিভুজের উপর দিয়েই চলে গেছে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গার দৃশ্যমান বাহুটা৷ দেখতে আসলেও নদীর মতো। নদীর দুই তীরে আছে অভিজিৎ ও শ্রবণা৷ পেটের মধ্যে আছে ত্রিভুজের অপর তারা পুচ্ছ৷ শ্রবণার দুই পাশে আছে দুটি অনুজ্জ্বল তারা৷ অভিজিতের বিষুবলম্ব +৩৮, আর শ্রবণার +৮। মানে অভিজিতের চেয়ে শ্রবণা আছে দক্ষিণে। বাংলাদেশ থেকে দেখতে দুটো তারাই সোজা উপর থেকে ১৫ ডিগ্রি করে দূর দিয়ে চলে। অভিজিত উত্তরে আর শ্রবণা দক্ষিণে৷ কারণ বাংলাদেশের সোজা উপরের আকাশের বিষুবলম্ব +২৩৷ মিলিয়ে নিন। কী দারুণ!


তারা চিনতে বিষুবলম্ব


নক্ষত্রটার বৈজ্ঞানিক নাম আলফা অ্যাকুইলি৷ আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির দেওয়া নাম আলটেয়ার (Altair)৷ শব্দটা এসেছে আরবি নাম আল নিসর আল তাইর থেকে। অর্থ উড়ন্ত ঈগল।

Category: articles

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৩

সত্যিই কি ভিনগ্রহে প্রাণ আছে? আর তারাই পাঠিয়েছিল ১৯৭৭ সালের বেতার সঙ্কেত? সেটা নিশ্চিত করে বলার কোনো জো নেই৷ তবু ব্যাপারটা যথেষ্ট কৌতূহলোদ্দীপক৷


ওয়াও সিগনালের তীব্রতার মান 6EQUJ5


১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট। যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইহো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগ ইয়ার টেলিস্কোপে ধরা পড়ল বিস্ময়কর এক বেতার সঙ্কেত৷ সঙ্কেত প্রাপ্তির কয়েকদিন পোর জ্যোতির্বিদ জেরি এহম্যান সঙ্কেতটার ব্যতিক্রমী আচরণ খেয়াল করেন। লিপিবদ্ধ সঙ্কেতের পাশে লেখেন WOW! এ থেকেই নাম ওয়াও সিগনাল।

এটি 6EQUJ5 সঙ্কেত হিসেবে পরিচিত। অনেকে এটাকেই একটা বার্তা বা কথামাল মনে করেন। বাস্তবে এটা নিছক সময়ের সাথে সঙ্কেতের তীব্রতার পরিবর্তনের মান। তবুও ব্যতিক্রমী এ সঙ্কেতকে অনেকেই ভিনগ্রহের বার্তা ভাবতে পছন্দ করেন। রহস্যময় এ সঙ্কেত আসে স্যাজিটেরিয়াস বা ধনুমণ্ডল থেকে। যেদিকে আছে মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্র৷

ওয়াও সিগনালের উৎস স্যাজিটেরিয়াস বা ধনুমণ্ডল



২০১৭ সালে একদল গবেষক বলেন, রহস্যময় এ সঙ্কেত তৈরি হয়েছে সম্ভবত ধূমকেতুর কারণে৷ এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণার নেতৃত্ব দেন সেন্ট পিটার্সবাগ কলেজের অধ্যাপক অ্যান্টোনিও প্যারিস৷ তিনি ও তাঁর দল দেখেন, ১৯৭৭ সালের ঐ সময়টিতে আকাশের নির্দিষ্ট দিক দিয়ে অতিক্রম করছিল দুটি ধূমকেতু৷ খটমটে নামগুলো ২৬৬পি/ক্রিস্টেনসন ও পি/২০০৮ ওয়াইটু৷ গবেষকদের ধারণা ধূমকেতুদের কোনোটির হাইড্রোজেন মেঘ থেকে এসেছে বেতার তরঙ্গ৷ ওয়াও সিগনাল। পরে আর এমন সিগনাল না পাওয়ার ব্যাখ্যাও এ তত্ত্ব থেকে মেলে৷ ধূমকেতু ঐ অঞ্চল ছেড়ে অন্য দিকে চলে গেছে৷

গবেষক দল এখানেই থেমে থাকেননি৷ ধূমকেতু ২৬৬পি/ক্রিস্টেনসন এই জায়গায় আবার যাওয়ার সময় আবারও সঙ্কেত পাওয়ার আশায় বসে থাকেন তাঁরা৷ তাঁদের হিসাবে দেখা গেল, ধূমকেতুটা স্যাজিটেরিয়াসের কাছে আসার পরে আবারও ওয়াও সিগনালের মতো সঙ্কেত পাওয়া গেছে৷ তবে ১৯৭৭ সালের সিগনালটার তীব্রতা বেশি ছিল৷ প্যারিসদের ব্যাখ্যা আছে তার পেছনেও৷ তাদের ১০ মিটারের রেডিও টেলিস্কোপটা বিগ ইয়ারের (৫২.৫ মিটার) চেয়ে বেজায় ছোট। আবার নিকট সৌরজগতে এলে ধূমকেতু ভর হারায়। ফলে ৪০ বছর আগের (১৯৭৭-২০১৭) ধূমকেতুর ভরও বেশি ছিল৷ তবে প্যারিসরা নিশ্চিত করে দাবি করেননি যে ওয়াও সিগনালের জন্য ধূমকেতুই দায়ী৷

পরবর্তীতে জ্যোতির্বিদরা ধূমকেতুর দায়ী হবার বিষয়টি উড়িয়ে দেন। ধূমকেতুর পক্ষে এমন সঙ্কেত তৈরি আসলে সম্ভব নয়। আসলে এর গ্রহণযোগ্য কোনো ব্যাখ্যা আজও মেলেনি। তারাদের মিটিমিটি জ্বলাকেও কেউ দায়ী করেছিলেন। তবে এরও পক্ষে প্রমাণ মেলেনি। একই ধরনের সঙ্কেত আবার পাওয়ার চেষ্টা এহম্যান করেছিলেন বহুদিন ধরে। কিন্তু বৃথাই চেষ্টা। ২০১২ সালে অ্যারেসিবো মানমন্দির থেকে ওয়াও সিগনালের একটি জবাব পাঠানো হয়। এতে ছিল দশ হাজারটি টুইটার মেসেজ। 

সূত্র 
Category: articles

সোমবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৩

আকাশের উজ্জ্বল তারারা তৈরি করে দারুণ দারুণ নকশা৷ ৮৮টি তারামণ্ডলের একটি ধনুমণ্ডল। এটা রাশিচক্রের অন্যতম মণ্ডল। পরিচিত ধনুরাশি হিসেবে। মণ্ডলের উজ্জ্বল তারাগুলোকে দেখতে চায়ের পট বা টিপটের মতো লাগে৷ রাশিচক্রের এ মণ্ডলে সূর্য অবস্থান করে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি৷


ধনুমণ্ডলের টিপট তারানকশা


তারামণ্ডল বনাম তারানকশা


আগস্ট মাস একে দেখার সেরা সময়। এ সময় রাত নয়টার দিকে ধনুমণ্ডল দক্ষিণ আকাশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে থাকে। বিষুবলম্ব -২৫ ডিগ্রি। ফলে মূলত দক্ষিণ আকাশে হলেও উত্তর গোলার্ধের অধিকাংশ এলাকা থেকেও দেখা যাবে। সর্বোচ্চ ৫৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ থেকে দেখতে পাবেন একে৷

আমাদের হোম গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের কেন্দ্র এ মণ্ডলের পশ্চিম অংশের দিকে আছে৷ এ কারণেই আকাশের এ দিকটায় প্রচুর নক্ষত্রপুঞ্জ ও নীহারিকা আছে৷ টিপটের কয়েক ডিগ্রি উত্তর দিক দিয়ে চলে গেছে সূর্যপথ৷ যে কাল্পনিক পথে পৃথিবীর আকাশে সূর্য চলাচল করে৷ ধনুর ইংরেজি স্যাজিটেরিয়াস শব্দটা এসেছে ল্যাটিন থেকে। অর্থ তীরন্দাজ৷

সূর্য কখন কোথায় থাকে?

পুরো মণ্ডলকে বিভিন্ন কালচারে সেভাবেই চিত্রায়িত করা হয়েছে৷ ছবি। গ্রিক রূপকথায় স্যাজিটেরিয়াসকে অর্ধমানব, অর্ধঘোড়া হিসেবে কল্পনা করা হয়৷ কল্পিত এ জন্তুর অন্য নাম সেন্টোর। কল্পিত চিত্রে তীরন্দাজ তীর ধনু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ মণ্ডলের তীরটা চলে গেছে পাশের বৃশ্চিকমণ্ডলের বিছার বুক বরাবর৷ সেন্টোর থেকে নাম পেয়েছে আকাশের আরও একটি তারামণ্ডল। সেন্টোরাস নামের মণ্ডলটার অবস্থান আরও অনেকটা দক্ষিণে।

ধনুমণ্ডলের কল্পিত সেন্টোর। অর্ধ-মানব ও অর্ধ-ঘোড়া। 


সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এপসাইলন স্যাজিটেরাই৷ ডাকনাম কোস অস্ট্রালিস। যার অর্থ ধনুর দক্ষিণাংশ৷ দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারার নাম নানকি৷ বেয়ার পদবী সিগমা স্যাজিটেরাই৷ এ মণ্ডলেই আছে দূর আকাশে বিখ্যাত অনেক বস্তু৷ লেগুন নেবুলা, ওমেগা নেবুলা, রেড স্পাইডার ও ট্রিফিড নেবুলা - বিখ্যাত এই নীহারিকাদের পাওয়া যাবে এখানেই৷

ধনুমণ্ডলের তারাচিত্র

মহাকাশযান নিউ হরাইজনস এর গতিপথ বর্তমানে এই মণ্ডলের সামনে৷ বিখ্যাত বেতার সঙ্কেত ওয়াও! সিগনাল এসেছে এ মণ্ডল থেকেই৷ রহস্যময় যে সঙ্কেতকে অনেকে ভিনগ্রহের বাসিন্দার বার্তা মনে করতে পছন্দ করেন৷
Category: articles

রবিবার, ৬ আগস্ট, ২০২৩

রাতের আকাশের পঞ্চম উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের আকাশে দ্বিতীয় উজ্জ্বল। স্বাতীর পরেই সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷ লাইরা বা বীণামণ্ডলে এর অবস্থান। স্বাভাবিকভাবেই মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাও এটিই৷ সূর্য থেকে দূরত্ব মাত্র ২৫ আলোকবর্ষ। 

রাতের আকাশে অভিজিৎ নক্ষত্র। আগস্ট মাসে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। রাত নয়টার দিকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় মাথার ওপর। 

জ্যোতির্বিদরা অভিজিৎ নক্ষত্র নিয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন৷ এ কারণে সূর্যের পর একে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারাও বলেন অনেকে৷ সূর্যের পরে বর্ণালীর ছবি তোলা তারাও অভিজিৎ৷ প্যারালাক্স বা লম্বন পদ্ধতিতে দূরত্ব মাপা অন্যতম প্রথম তারাও এটি৷ খৃষ্টপূর্ব ১২,০০০ সালে তারাটি ছিল মেরু বা ধ্রুবতারা৷ আবারও হবে ১৩,৭২৭ বছর পরে৷ কারণ আর কিছুই নয়। পৃথিবীর মেরুরু আবর্তন৷ ঘুরন্ত লাটিমের মতো পৃথিবীও ঘুরতে ঘুরতে অক্ষ পাল্টায়৷ 





অভিজিৎ নক্ষত্রের বয়স সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ মজার ব্যাপার হলো এর জীবনকাল বাকিও আছে সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ৷ এর কারণ অভিজিৎ সূর্যের ২.১ গুণ ভারী৷ ভারী নক্ষত্রদের জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। এ কারণেই সূর্যের চেয়ে আগে প্রধান ক্রম দশা পার করবে অভিজিৎ৷ সবমিলিয়ে প্রধান ক্রম দশা প্রায় একশ কোটি বছর৷  তারাটা সেকেন্ডে ২৩৬ কিলোমিটার বেগে নিজের অক্ষের সাপেক্ষে ঘোরে। ১২.৫ ঘণ্টায় একবার পুরোটা সম্পূর্ণ ঘোরা হয়ে যায়৷ এ কারণে  স্বাভাবিকভাবেই বিষুব অঞ্চল অনেকটা ফোলা। অভিজিৎ বিষম তারা। মানে উজ্জ্বলতা সবসময় এক থাকে না। 

সামার ট্রায়াঙ্গল তারানকশার অন্যতম তারা অভিজিৎ


বৈজ্ঞানিক নাম আলফা লাইরি৷ সাধারণত মণ্ডলের উজ্জ্বলতম তারার নাম হয় আলফা। সে হিসেবেই এই নাম৷ ইংরেজি নাম ভেগা (Vega)। শব্দটা এসেছে আরবি শব্দ ওয়াকি থেকে৷ যার অর্থ পড়ন্ত বা অবতরণকারী (ঈগল)৷ ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি তারাটার নাম ভেগা রাখে৷ বাংলা নামটি এসেছে ভগবত পুরাণ থেকে। কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, নক্ষত্রদের মধ্যে তিনি হলেন অভিজিৎ৷ 


উত্তর গোলার্ধের আকাশে সহজেই দেখা যায়। দেখার সবচেয়ে ভাল সময় জুলাই-আগস্ট। আগস্টে রাত নয়টার দিকে প্রায় ঠিক মাথার ওপর থাকে তারাটা৷ সুপরিচিত তারানকশা সামার ট্রায়াঙ্গলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা অভিজিৎ৷ তিন তারা মিলে তৈরি করেছে একটি সমকোণ৷ আর সমকোণের শীর্ষেই আছে অভিজিৎ৷ পশ্চিম-উত্তর দিকে একটু গেলেই পাওয়া যাবে সপ্তর্ষি৷ একটু চেষ্টাতেই তাই অভিজিৎকে চিনে নেওয়া যাবে৷ আবার সপ্তর্ষি দিয়েও সহজেই একে খুঁজে পাওয়া যাবে৷ অভিজিতের বিষুব লম্ব +৩৮.৭৮। ফলে বাংলাদেশ থেকে দেখলে মাথার সোজা উপর থেকে প্রায় ১৫ ডিগ্রি উত্তর দিয়ে তারাটা রাতের আকাশে পশ্চিমে যেতে থাকে। দক্ষিণে সর্বোচ্চ ৫১ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত দেখা সম্ভব। তার দক্ষিণে গেলে আর দেখা যাবে না একে। অ্যান্টার্কটিকা বা এমনকি চিলি থেকেও তারাটা দেখা যাবে না। 



সপ্তর্ষি ও ধ্রুবতারা দিয়ে অভিজিৎ খুঁজে নিতে পারেন

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৩

আইনস্টাইন ক্রস বুঝতে হলে মহাকর্ষ বক্রতা সম্পর্কে জানা চাই। ভারী বস্তু এর আশেপাশের স্থানকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে বস্তুটা আচরণ করে লেন্সের মতো। বস্তুর পেছন থাকা জিনিসের আলোও বাঁক খেয়ে পর্যবেক্ষকের চোখে আসতে পারে৷ 


হাবল স্পেস টেলিস্কোপের চোখে আইনস্টাইন ক্রস


মহাকর্ষ কীভাবে আলো বাঁকায়?


অনেকসময় তো একই বস্তুর ছবি ভারী বস্তুর চারদিক দিয়েই বেঁকে চারটি আলাদা বিম্ব (ছবি) তৈরি করতে পারে। এমন এক বিখ্যাত ছবির নামই আইনস্টান ক্রস। জিনিসটা আসলে একটি কোয়াসারের ছবি। পৃথিবী থেকে দেখতে হুকরা'স লেন্স ছায়াপথের পেছনে এর অবস্থান। ভারী ছায়াপথটা কোয়াসারটার আলোকে বাঁকিয়ে দেয়। ফলে চারপাশে এর চারটা ছবি পাওয়া যায়। কেন্দ্রেও ঝাপসা একটি ছবি আছে৷ দেখে মনে হবে, চারটা আলাদা বস্তুর ছবি। অথচ আসলে একটাই জিনিস৷ 

১৯৮৫ সালে জন হুকরা এটা আবিষ্কার করেন। অবশ্য সেসময় চারটি ছবির অস্তিত্ব বোঝা যায়নি। শুধু ছায়াপথের পেছনের কোয়াসার থাকার কথা জানা গিয়েছিল৷ কোয়াসারটার নাম খটমটে৷ কিউ২২৩৭+০৩০।আইনস্টাইন ক্রস বলতে সাধারণত এই বস্তুটাকেই বোঝানো হয়।  তবে একই রকমের আরও ছবিও পরে আবিষ্কৃত হয়েছে৷ অনেকসময় আবার ক্রসের বদলে তৈরি হয় বলয়। এর নাম আইনস্টাইন বলয়। 


কোয়াসারটা পৃথিবী থেকে ৮০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত৷ লেন্সিং ছায়াপথের দূরত্ব ৪০ কোটি আলোকবর্ষপেগাসাস তারামণ্ডলে এর অবস্থান৷ 

Category: articles

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। আমরা এমনটাই বলি। বলি বৃহস্পতি, শনিদের ক্ষেত্রেও। তবে আসলে কথাটায় খানিক ঘাপলা আছে। কী সেই ঘাপলা? চলুন, জেনে নেই। 


কাছাকাছির ভরের দুই বস্তুর প্রদক্ষিণ। দুটি বস্তুই + চিহ্নিত জায়গাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।


পৃথিবী হলো গ্রহ। আর সূর্য নক্ষত্র। গ্রহ ঘোরে নক্ষত্রের চারপাশে। সেজন্যেই তো আমরা বলি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। আসলে দুজনেই প্রদক্ষিণ করে তাদের যৌথ ভরকেন্দ্রকে। জায়গাটার গালভরা নাম ব্যারিসেন্টার। মজার ব্যাপার হলো, ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের বাইরের গ্রহ খোঁজার ব্যাপারেও দারুণ কাজে লাগে! 


তো, এই ব্যারিকেন্দ্র বা ভরকেন্দ্র আসলে কী? প্রত্যেক বস্তুর ভরের একটা কেন্দ্র আছে। এটা হলো বস্তুটার উপাদান পদার্থের একদম নিখুঁত কেন্দ্র। ভরকেন্দ্র বিন্দুতে বস্তুটাকে সঠিকভাবে ব্যালেন্স করে (ভারসাম্যে) রাখা যায়। অনেকসময় ভরকেন্দ্র থাকে বস্তুর ঠিক কেন্দ্রে। যেমন ধরুন একটা রুলার। এর মাঝ বরাবর এখানে-ওখানে কয়েকবার আঙ্গুল রেখে ধরে রাখার চেষ্টা করুন। পেয়ে যাবেন সে জায়গা, যেখানে আঙ্গুল রাখলে রুলার পড়ে যাবে না। এটাই রুলারের ভরকেন্দ্র। অপর নাম অভিকর্ষ কেন্দ্র। 


অনেকসময় ভরকেন্দ্র আর বস্তুর কেন্দ্র একই জায়গায় হয় না। কেন? ধরুন ২ ও ৪ দুটি সংখ্যা। এদের গড় ৩। যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে বা কেন্দ্রে আছে। কিন্তু ২, ৪, ৪ সংখ্যা তিনটির গড়? ৩.৩৩, যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে নয়। সংখ্যার অসম বিন্যাসে পাল্টে গেছে কেন্দ্র। ৪ এর সংখ্যা ২ এর চেয়ে বেশি হওয়ায় গড় ৪ এর দিকে সরে এসেছে। ভরের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে। ভর একেকদিকে একেক রকম হলে সরে যায় কেন্দ্র। যেমন ধরুন হাতুড়ি। এর প্রায় সবটুকু ভর এক প্রান্তে আছে। ফলে ভরকেন্দ্রও ভারী প্রান্তটির কাছাকাছি। বস্তুর সবচেয়ে বেশি ভর যেদিকটায় থাকে, ভরকেন্দ্রও তার কাছাকাছি থাকে। 


এক নজরে সূর্য


সূর্য ও পৃথিবীরও একটি ভরকেন্দ্র বা ব্যারিসেন্টার আছে। তবে সূর্যের ভর পৃথিবীর তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সৌরজগতের ৯৯.৮৬ ভাগ। সূর্য তাই হাতুড়ির ভারী মাথার মতো বা তার চেয়ে প্রভাবশালী। এর ফলে সূর্য ও পৃথিবীর ব্যারিসেন্টার সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি। তাও ভেতরেই। বৃহস্পতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড়। ভর ৩১৮ গুন। ফলে সূর্য ও বৃহস্পতির ব্যারিকেন্দ্র সূর্যের ভেতরে নয়। কিছুটা বাইরে। ফলে শুধু এই দুটি বস্তুকে আলাদা করে দেখলে ব্যাপারটাকে বাইনারি স্টার বা জোড়াতারার মতো মনে হবে। মানে বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না। দুজনেই দুজনকে কেন্দ্র করে ঘুরছে! 


বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে না!


পুরো সৌরজগতেরও একটি ব্যারিকেন্দ্র আছে। সূর্য, পৃথিবী ও সৌরজগতের গ্রহ ও অন্যসব বস্তু সেই ব্যারিকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। এই ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের সবগুলো বস্তুর সমন্বিত ভর ধারণ করে আছে৷ তবে এই ভরকেন্দ্র হাতুড়ির মতো নয়। নয় স্থির কোনো জায়গায়। ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ সব বস্তু এখানে গতিশীল। ব্যারিকেন্দ্র হতে পারে সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছে। আবার হতে পারে সৌরপৃষ্ঠেরও বাইরে৷ 


ব্যারিকেন্দ্র কীভাবে গ্রহ খুঁজে পেতে কাজে আসে তা এখন বোঝা যাচ্ছে। নক্ষত্রের কোনো গ্রহ থাকলে এর ব্যারিকেন্দ্র দোল খেতে থাকে এদিক-সেদিক। মাতাল মানুষ যেমন এদিক-সেদিক ঢুলতে থাকে। সৌরজগতের বাইরের গ্রহদেরকে দেখে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। নক্ষত্রের আলোর ঝলকে এদের মৃদু প্রতিফলিত আলো হারিয়ে যায়। তবে নক্ষত্রের দোল খাওয়া দেখে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আর এভাবে প্রচুর বহির্গ্রহ আবিষ্কার করাও হয়েছে। সংখ্যাটাও কম নয়, সব মিলিয়ে ১০৩৬। আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সফল কৌশল এটি। সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরা গ্রহের ট্রানজিট বা অতিক্রমন।

অতিক্রমন দেখে পাওয়া গেছে প্রায় চার হাজার গ্রহ। সে গল্প বিস্তারিত আরেকদিন শোনাব ইনশাআল্লাহ। 


সূত্র: নাসা স্পেসপ্লেস 


* লেখাটি ইতোপূর্বে কিশোরআলো ম্যাগাজিনে প্রকাশিত। 


Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৩

নোভা। ল্যাটিন এই কথাটার অর্থ নতুন তারা। শুনলে মনে হবে নতুন জন্ম নেওয়া নক্ষত্রের নাম নোভা। অথচ আসলে তা নয়। ভুল নাম থেকে যে জ্যোতির্বিজ্ঞানও মুক্ত নয়, তার আরেক উদাহরণ এই নোভা। ব্ল্যাকহোলের কথাই ধরুন। জিনিসটা না ব্ল্যাক না হোল। কালোও না। নেই কোনো গর্তও। তাও নাম ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর৷


নোভা নক্ষত্রের ছবি


এ তো গেল অর্থ। সংজ্ঞায়ও আছে গড়বড়৷ বলা হয় নোভা এমন নক্ষত্র যার উজ্জ্বলতা হঠাৎ বেড়ে গিয়ে আবার স্বাভাবিক হয়৷ তার মানে নোভা নক্ষত্র খুব অল্প সময়ের জন্য হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে৷ বাস্তবে নোভার গল্পটা আরেকটু জটিল৷ অনেকগুলো ব্যাপার ঠিকঠাক কাজ করলে তবেই পাওয়া যায় নোভা৷

আধুনিক যন্ত্রপাতি আসার আগে দূর আকাশে কথা জানা ছিল জ্যোতির্বিদদের৷ তখন থেকেই নতুন তারাকে তাঁরা নোভা বলেন৷ মানে নতুন বা নবতারা৷ নামটা খানিক ভুল। এই তারাগুলো মোটেও নতুন নয়। ছিল সেখানে আগে থেকেই৷ হ্যাঁ, দেখার মতো যথেষ্ট উজ্জ্বল ছিল না এই যা।

নোভা পাওয়ার জন্য একটা তারা হলে হবে না। লাগবে দুটি তারা। হতে হবে সূর্যের মতো। সূর্যের মতো থাকবে প্রধান ক্রম দশায়। মানে হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাবে৷ এ দুই তারা হবে বাইনারি বা জোড়াতারা। একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরবে। বলা ভাল মিলিত ভরকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঘুরবে।

কয়েকশো কোটি বছর পরের কথা৷ একটি নক্ষত্রের কোর বা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের হাইড্রোজেন শেষ হয়ে যাবে৷ বাইরের অংশ বড় হয়ে নক্ষত্রটা হবে লোহিত দানব৷ পরে ভেতরের অংশ মহাকর্ষের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে ছোট হয়ে হবে শ্বেত বামন। কিছু সময় পরে আরেকটা নক্ষত্রও লোহিত দানব হবে৷

এবার আমাদের দুটি তারার একটি লোহিত দানব। আরেকটি শ্বেত বামন৷ ঘুরছে একে অপরকে ঘিরে৷ শ্বেত বামন তারাটা দেখবে আয়তনে বড় পাশের তারাটার বাইরের দিকে এখনও হাইড্রোজেন আছে৷ এটি মহাকর্ষ দিয়ে ছোঁ মেরে লোহিত দানব থেকে জ্বালানি ও পদার্থ ছিনতাই করবে৷ বিশেষ করে হাইড্রোজেন৷ লোহিত দানবের হাইড্রোজেন এবার জমা হতে থাকবে শ্বেত বামনের চারপাশে৷ আমদানিকৃত পদার্থে ঢেকে যাবে বামন নক্ষত্রটা৷

পদার্থ জমা হতে হতে ও বেড়ে সঙ্কুচিত হয়ে তাপমাত্রা বাড়বে৷ তাপমাত্রা প্রায় ২০ হাজার কেলভিন হলে এখানেও শুরু হবে ফিউশন। প্রধান ক্রম অবস্থায় নক্ষত্রের কোরে যেমন হত। হাইড্রোজেনরা মিলিত হয়ে হিলিয়াম হবে৷ বাইরের দিকের এ পদার্থ জ্বলে জ্বলে নিজেকেই বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয়৷ এ সময়ই তৈরি হয় উজ্জ্বল আলো৷এরই নাম নোভা। এ ঘটনা ঘটতে মাত্র কয়েক মাস সময় লাগে৷


সঙ্গী তারা থেকে জ্বালানি নিচ্ছে নোভা তারা



আগে যে তারাকে দেখতে টেলিস্কোপ লাগত, এখন তাকে দেখা যায় খালি চোখেই৷ কিছু কিছু তারাটা কাজটা করে নিয়মিত৷ একশো বছরের মধ্যে কয়েকবার উজ্জ্বল ও মলিন হয়৷ অন্যদের আরও বেশি সময় লাগে। তবে আধুনিক যন্ত্র আসার পরে একবারের বেশি দেখা এখনও সম্ভব হয়নি৷ জ্যোতির্বিদদের অনুমান বলছে, আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথে বছরে প্রায় ৪০ নোভা হয়৷ দেখা যায় অন্য ছায়াপথেও৷

১৫৭২ সালে টাইকো ব্রাহে নোভা শব্দটা প্রথম ব্যবহার করেন৷ঐ বছর তিনি আসলে টেলিস্কোপে দেখেছিলেন একটা সুপারনোভা৷ এখন যার নাম এসএন ১৫৭২৷ এসএন মানে সুপারনোভা৷ এটা দেখা গিয়েছিল উত্তর আকাশের ক্যাসিওপিয়া মণ্ডলে৷ সূর্যের প্রায় দশ গুণ ভরের তারকারা জীবনের শেষ ভাগে সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। জ্বালানি ফুরিয়ে গিয়ে নক্ষত্র ঠাণ্ডা হয়। নক্ষত্রের বহির্মুখী চাপ কমে। এতদিন যে চাপ মহাকর্ষকে ধরে রেখেছিল। চাপ নেই বলে এবার মহাকর্ষ জয়ী হয়। নক্ষত্র যায় গুটিয়ে। পৃথিবীর চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় ভারী জিনিসের আকার হয়ে যায় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। কাজটা হতে সময় লাগে মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মতো। এই দ্রুত ঘটনাই একটি শক ওয়েভ তৈরি করে। বিস্ফোরিত হয় নক্ষত্রের বাইরের অঞ্চল। এ ধরনের বিস্ফোরণের নাম টাইপ টু সুপারনোভা।

টাইকো ব্রাহে ১৫৭২ সালে এমন বিস্ফোরণ দেখে ভাবলেন এ মনে হয় এক নতুন তারা। নাম দিলেন নোভা স্টেলা। বাংলায় যার অর্থ নবতারা। নামটা জ্যোতির্বিদদের মনে ধরে। আকাশে উজ্জ্বল কিছু দেখা গেলেই অনেকে নাম দিচ্ছিলেন নোভা।

নোভা বিস্ফোরণের শ্বেত বামনে জড় হওয়া মাত্র পাঁচ ভাগ পদার্থ ফিউশনে খরচ হয়। কিছু নিক্ষিপ্ত হয় মহাশূন্যে। ফিউশনের উপজাত হিসেবে কিছু আবার জমা হয় পৃষ্ঠে। কয়েক লক্ষ বছরে শ্বেত বামন প্রচুর পদার্থ জমা করে ফেলে। শুরু হয় কার্বন ফিউশন। শ্বেত বামনটার ভর সূর্যের ১.৪৪ গুণ হলে নক্ষত্রটা ঢেকে যায় ফিউশনের চাদরে। জমা হয় প্রচুর শক্তি। সেকেন্ডের ব্যবধানে ঘটে যায় বিস্ফোরণ। একে তখন আর নোভা বলে না। বলে সুপারনোভা। বিশেষ নাম টাইপ ওয়ান-এ সুপারনোভা।

তাহলে নোভা হলো মৃত তারার সঙ্গী তারা থেকে চুরি করা পদার্থ নিয়ে ফিউশন ঘটানোর ফলে সৃষ্ট বিস্ফোরণ। আর প্রচুর ভর জমা হয়ে শেষের বড় বিস্ফোরণটার নাম টাইপ ওয়ান-এ সুপারনোভা।
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...