Advertisement

সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মহাবিশ্বের বৃহত্তম সর্পিল ছায়াপথঃ এনজিসি ৬৮৭২

এনজিসি ৬৮৭২ (NGC 6872) গ্যালাক্সি পৃথিবী থেকে ২১২ মিলিয়ন (বা ২১.২ কোটি) আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। একে IC 4970 গ্যালাক্সির সাথে প্যাভো (Pavo) নক্ষত্রপুঞ্জে দেখা যায়। এর আকৃতি অনেকটা সেকশন চিহ্নের (§) মত।
১৯৯৯ সালে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন মানমন্দির (ESO) একে খুঁজে পায়। এর অপর নাম কনডর ছায়াপথ (Condor Galaxy)।

প্রথম দর্শনে, একে অন্য সর্পিল ছায়াপথের মতই মনে হবে। আসলেও তাই-কিন্তু আকার বাদ দিয়ে। এনজিসি ৬৮৭২ এর আকার বিস্ময়কর রকম বিশাল। এই পোস্ট লেখা পর্যন্ত এই গ্যালাক্সিটিই বৃহত্তম সর্পিল গ্যালাক্সি। সার্বিকভাবে সবচেয়ে বড় গ্যালাক্সি অবশ্য আইসি ১১০১।
এই মহাজাগতিক দৈত্যের প্রশস্ততা ৫ লাখ ২২ হাজার আলোক বর্ষ যা আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপাথের পাঁচ গুণ। এটি মিল্কিওয়ে অ্যান্ড্রোমিডা (আমাদের নিকটত গ্যালাক্সি) কে হজম করার পরও পেট ভরবে না।
এটা এত বিশাল হল কেন? সায়েন্স ফিকশনে যেমন দেখা যায় বাতিকগ্রস্থ বিজ্ঞানীর আকার বড় করার ওষুধ খেয়ে  মাকড়সা, মাছ ইত্যাদি মানুষের চেয়ে বিশাল হয়ে যায়- তেমন কোন ঘটনা নাকি!
হিসেব করে দেখা গেছে, কোটি কোটি বছর আগে নিকটবর্তী গ্যালাক্সি আইসি ৪৯৭০ (IC_4970) এই এনজিসি ৬৮৭২ এর কাছাকাছি আসে। ঐ সময় এরা সংঘর্ষ এড়াবার মত যথেষ্ট দূরত্বে ছিল, কিন্তু দু'জন দু'জনার অভিকর্ষীয় টানে আটকা পড়ে। ফলে, দু'জন সন্ধি করে বিশাল এই দানবীয় রূপ পরিগ্রহ করে। উইকিপিডিয়ার আর্টিকেলে তাই গ্যালাক্সিদ্বয় একই পৃষ্ঠায় ঠাঁই পেয়েছে।
কিন্তু যেই অভিকর্ষীয় বল ছায়াপথ দুটোকে একত্র করেছে, তাই হবে এদের মৃত্যুর কারণ। হ্যাঁ, গ্যালাক্সিদের প্রাণ নেই, মরতে পারে না, কিন্তু এপোড় - ওপোড় তো হয়ে যেতে পারে।  এনজিসি ৬৮৭২ এর ভাগ্যে তাই ঘটতে যাচ্ছে। আইসি ৪৯৭০ এর টানে এর অন্যতম ভারী একটি বাহু আলাদা হয়ে গিয়ে একে বামন ছায়াপথে রূপ দিতে যাচ্ছে।
অতএব, বেশি দিন সম্ভবত এনজিসি ৬৮৭২ এর পক্ষে বৃহত্তম সর্পিল গ্যালাক্সি (Spiral Galaxy) হবার রেকর্ড ধরে রাখা সম্ভব হবে না।
প্রায় ৪ বিলিয়ন বছর পরে একই রকম কিছু একটা আমাদের গ্যালাক্সিতেও ঘটে যাচ্ছে। হাবল পরিমাপের একটি বিশ্লেষণীতে দেখা গেছে মিল্কিওয়ে অ্যান্ড্রোমিডার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। তাহলে, ভবিষ্যতে এমনও হতে পারে আমরাই হয়ে যেতে পারি বৃহত্তম স্পাইরাল গ্যালাক্সির অংশ।
কিন্তু হায়, যদি কিয়ামত হবার আগে তা ঘটার সুযোগ হয়ও, আমরা সেই আনন্দ উদযাপন করার সুযোগ পাব না! (আপনি কি ৪ শ' কোটি বছর বেঁচে থাকবেন?)
সূত্রঃ
১. http://www.jpl.nasa.gov/news/news.php?release=2013-016
২. http://en.wikipedia.org/wiki/NGC_6872_and_IC_4970


Advertisement 02

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, সিলেট ক্যাডেট কলেজ। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত বই পাঁচটি | সব লেখা | ফেসবুক | পারসোনাল ওয়েবসাইট

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...