Advertisement

রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

মহাবিশ্বের বৃহত্তম গঠনঃ কোয়াসার গুচ্ছ

২০১৩ সালের শুরুর দিকে মহাকশবিজ্ঞানীরা এক গুচ্ছ সক্রিয় ছায়াপথীয় অন্তর্বস্তু আবিষ্কার করেন যার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ৪ শ' কোটি আলোক বর্ষব্যাপী বিস্তৃত। এখানে, সক্রিয় বলতে সেই সব কৃষ্ণগহবরদের বোঝানো হচ্ছে যারা তাদের সীমানায় অবস্থিত অঞ্চলকে গ্রাস করে চলেছে।
ছবিঃ নাসা

এই কাঠামোটি হচ্ছে বিশাল কোয়াসার গুচ্ছ বা এলকিউজি ( large quasar group ) বা LQG। এর আকৃতি নিতান্তই বিশাল। আমাদের আবাস গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের আড়াআড়ি দূরত্ব ১ লক্ষ আলোকবর্ষ। আমাদের পাশ্ববর্তী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা (Andromeda)  আমাদের থেকে ২৫ কোটি আলোকবর্ষ দূরে আর ওর আকার মিল্কিওয়ের প্রায় আড়াই গুণ (২ লাখ ৬০ হাজার আলোকবর্ষ তার ব্যাস)। তার অর্থ এই এলকিউজি খুব সহজেই অ্যান্ড্রোমিডা, মিল্কিওয়ে ও এদের মাঝখানে যা আছে সবকিছুকে হজম করে ফেলতে পারে।
আরেকভাবে তুলনা করা যাক! পৃথিবীর বয়স ৪ শ" কোটি বছরের কিছুটা বেশি। তাহলে এলকিউজিটির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আলো যতক্ষণে পৌঁছবে, ততক্ষণে পৃথিবী তৈরি হয়েছে, শীতল হয়েছে, এতে জীবনের উদ্ভব ঘটেছে, ডাইনোসররা আবির্ভূত হয়ে বিলুপ্তও হয়ে গেছে, মানুষ পৃথিবীতে এসেছে, সভ্যতা গড়ে তুলেছে, আমি এই লেখাটি লিখেছি, আপনি পড়েছেন। সোজা কথায়, পৃথিবীর সমগ্র ইতিহাসের সমান সময়ে কিছু আলোক কণা এই দানবীয় কাঠামোর এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে পৌঁছায়।
বেতার তরঙ্গের উৎস ও অতি উজ্জ্বল বস্তু কোয়াসারদের সর্বোচ্চ গুচ্ছ ৬০ কোটি আলোক বর্ষ বিস্তৃত। নতুন আবিষ্কৃত LQG ৭৩ টি কোয়াসার নিয়ে গঠিত। ৪০০ কোটি আলোক বর্ষের সমান প্রশস্ততা নিয়ে এটি অন্য কোয়াসার গুচ্ছদের লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।
এই LQG টি এত বিশাল যে এ আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বকে ইউটার্ন করিয়ে দিতে পারে। সাধারণ আপেক্ষিকতাকে বড় মাপের বস্তুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে অনেকগুলো সৃষ্টিতত্ত্ব বিষয়ক (Cosmological) তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটে। এদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ন ও মৌলিক হচ্ছে কসমোলোজিক্যাল নীতি। এই নীতির অবিচ্ছেদ্য বক্তব্য হচ্ছে, যথেষ্ট বড় দূরত্বের বস্তু পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে মহাবিশ্বে পছন্দনীয় কোন দিক বা অবস্থান নেই।
সোজা কথায়, মহাবিশ্বকে যে দিক থেকেই পর্যবেক্ষণ করা হোক না কেন, দেখতে একই রকম লাগবে। অর্থাৎ এটা একটা মৌলিক সমজাতীয়তা (Homogeneity)।
 সূত্রঃ
১. http://en.wikipedia.org/wiki/Large_quasar_group
২.  http://www.fromquarkstoquasars.com


Advertisement 02

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, সিলেট ক্যাডেট কলেজ। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রকাশিত বই পাঁচটি | সব লেখা | ফেসবুক | পারসোনাল ওয়েবসাইট

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...