Advertisement

শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৬

বুধ সৌরজগতের নিকটতম এবং সবচেয়ে ছোট গ্রহ। সূর্যের কাছাকাছি থাকার কারণে একে পৃথিবী থেকে দেখা একটু কঠিন, ব্যতিক্রম শুধু গোধূলির কিছু সময়। সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে আসতে এটি নিজের অক্ষের উপর তিনি বার পাক খায়। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মনে করা হত যে বুধের শুধু এক পাশই সব সময় সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে। প্রতি শতাব্দীতে একে পৃথিবীর আকাশে প্রায় ১৩ বার সূর্যের উপর দিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। এই ঘটনার নাম ট্রানজিট বা অতিক্রমণ (Transit)। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ মে তারিখে এর অতিক্রমণ ঘটে।
পৃথিবীর তুলনায় বুধ
এক নজরেঃ
ভরঃ পৃথিবীর ০.০৬ গুণ
ব্যাসঃ ৪, ৮৭৯ কিমি.
উপগ্রহঃ নেই
কক্ষপথের গড় দূরত্বঃ ০.৩৯ এইউ (১ এইউ = পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব)
এক বছরের দৈর্ঘ্যঃ ৮৮ দিন (পৃথিবীর হিসাবে)
পৃষ্ট তাপমাত্রাঃ -১৭৩ থেকে ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস

আরো পড়ুনঃ 
☛ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

বুধ গ্রহের তথ্য ঝুড়িঃ

১. সব গ্রহের মধ্যে বুধের কক্ষপথ সবচেয়ে চাপা। অর্থ্যাৎ, বৃত্তাকার আকৃতি থেকে এর কক্ষপথের বিচ্যুতি সবচেয়ে বেশি। সূর্য থেকে এর দূরত্ব বিভিন্ন সময় ৪৬ থেকে ৭০ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লাখ) কিমি. পর্যন্ত হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ 

২. গ্রহদের মধ্যে বুধ সবচেয়ে ছোট। খালি চোখে দৃশ্যমান পাঁচ গ্রহের অন্যতম এই গ্রহটির বিষুব রেখা বরাবর ব্যাস ৪, ৮৭৯ কিমি., যেখানে পৃথিবীর ব্যাস ১২, ৭৪২ কিমি.। 

৩. গ্রহদের মধ্যে ঘনত্বের দিক দিয়ে বুধের অবস্থান দ্বিতীয়। আকারে ছোট্ট হলেও এর ঘনত্ব অনেক বেশি। এর প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ৫.৪ গ্রাম করে পদার্থ আছে। এর চেয়ে বেশি ঘনত্ব রয়েছে শুধু পৃথিবীর। এর এই বড়ো ঘনত্বের কারণ হল, গ্রহটি মূলত ভারী ধাতু ও পাথর দ্বারা গঠিত। 

৪. বুধের পৃষ্ট এবড়োথেবড়ো। কোথাও কোথাও এর পৃষ্ঠের ভাঁজ একশো মাইল পর্যন্ত উঁচু ও কয়েকশো মাইল লম্বা হয়ে থাকে। 

৫. এর কেন্দ্রভাগ গলিত হতে পারে। সম্প্রতি নাসার বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে এর কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অবস্থা গলিত হতে পারে। সাধারণত ছোট গ্রহদের কেন্দ্র খুব দ্রুত শীতল হয়ে যায়। কিন্তু এর কেন্দ্রে কঠিন বস্তুর উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া সম্ভব হয়নি। হিসাব করে দেখা গেছে এর মোট আয়তনের ৪২ ভাগই কেন্দ্রভাগ নিয়ে গঠিত, যেখানে পৃথিবীর ক্ষেত্রে এই মানটি মাত্র ১১ ভাগ। 

৬. তাপমাত্রার দিকে দিয়ে বুধের অবস্থান গ্রহদের মধ্যে দ্বিতীয়। এর চেয়ে দূরে থেকেও শুক্র গ্রহের তাপমাত্রা আরো বেশি। এর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও রাতের বেলায় তা আবার নেমে আসে মাইনাস ১৭৩ ডিগ্রিতেও। গ্রহটির কোনো বায়ুমণ্ডল নেই বলে এ রকমটি ঘটে। 
আরো পড়ুনঃ

৭. বুধের পৃষ্ঠ প্রচুর খানাখন্দে ভরপুর। গ্রহাণু ও ধূমকেতুর সংঘর্ষে এর পৃষ্ঠে এসব খাদ তৈরি হয়েছে। অন্য গ্রহদের মতো এটি ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় এসব খাদ থেকে নিষ্কৃতি পেতে পারেনি। ২৫০ কিমি. এর চেয়ে বেশি ব্যাসের খাদকে বলা হয় বেসিন। 

৮. এ পর্যন্ত দুটি মহাকাশযান বুধ সফরে গেছে। সূর্যের খুব কাছে হবার কারণে বুধ গ্রহে যাওয়া কঠিন। ১৯৭৪ থেকে '৭৫ এর মধ্যে মেরিনার ১০ এর কাছ দিয়ে তিনবার উড়ে গেছে। এ সময়ের মধ্যে এর পৃষ্ঠের অর্ধেকটার মতো ছবি তোলা গেছে। এরপর ২০০৪ সালে পাঠানো হয় মেসেনজার প্রোব। 

৯. বুধের সঠিক আবিষ্কার কাল জানা যায় না। খৃষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে সুমেরীয়রা একে দেখেছে বলে জানা যায়।   

১০. বুধেরও আছে বায়ুমণ্ডল! বুধের অভিকর্ষ পৃথিবীর ৩৮ শতাংশ মাত্র। সৌরবায়ুর খপ্পরে পড়ে এত অল্প অভিকর্ষ দিয়ে বায়ুমণ্ডল টিকিয়ে রাখা কঠিন। তবে এই সৌরবায়ু ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের কারণেই এর বায়ুমণ্ডল কিছুটা অস্তিত্ব ফিরে পায় সময় সময়। 
 
সূত্রঃ
১। http://solarsystem.nasa.gov/planets/mercury
২। http://nineplanets.org/mercury.html
৩। http://space-facts.com/mercury/
Category: articles

শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬

শুক্র গ্রহের সাথে আমাদের পৃথিবীর অনেক মিল রয়েছে সত্য। এর ভর, অভিকর্ষ, সাইজ- সবই পৃথিবীর কাছাকাছি। কিন্তু এতে বাস করার চিন্তা করা আদৌ ঠিক হবে না।
ছবিতে শুক্র গ্রহ 

এর প্রধান কারণ ৩টিঃ
১। এর পৃষ্ঠে তাপমাত্রা প্রায় ৪৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৮৫৪ ফারেনহাইট। এ তাপমাত্রায় টিন ও সিসার মতো বস্তুও গলে যায়।
২। এর পৃষ্ঠচাপ পৃথিবীর সমুদ্র লেভেলের চাপের ৯০ গুণ।
এই তীব্র তাপমাত্রায় একদিকে গলে যেতে হবে, আবার অন্য দিকে চাপের প্রভাবে হতে হবে ভর্তা। মহাকাশযান থেকে একবার নামলেই হল, আবার যানে ফিরতে ফিরতে চ্যাপ্টা না হয়ে উপায় নেই।
৩। এর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড আছে ৯৬ পারসেন্ট।
শুক্রের বায়ুমণ্ডল 

সায়েন্স ফিকশনপ্রেমীসহ কেউ কেউ কল্পনা করেন চেষ্টা করলে শুক্রকে বাসযোগ্য গ্রহে রূপান্তর করা সম্ভব। ধাপে ধাপে অনেকগুলো কৌশল অবলম্বন করে বসবাসের জন্য অযোগ্য কোন গ্রহকে বাসযোগ্য করে তোলার পদ্ধতিকে ইদানিং টেরাফর্মিং বলা হয়। কারো কারো মতে, শুক্র গহের বায়ুমণ্ডলে ব্যাকটেরিয়া ফেলে এর কার্বন ডাই অক্সাইড ও সালফিউরিক এসিডকে অক্সিজেন ও অন্যান্য উপকারী উপজাতে পরিণত করা যেতে পারে। কিন্তু এই চিন্তাটা খুব বেশি যৌক্তিক নয়।
তবে শুক্র গ্রহে বসবাস করতে না পারলেও পৃথিবীতে বসে রাতের আকাশে শুক্র গ্রহের সৌন্দর্য উপভোগ করতে কোনো মানা নেই। চাঁদের পরে রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু কিন্তু শুক্রই।

আরো পড়ুনঃ
শুকতারার পরিচয়
দিক নির্ণয়ে শুক্র গ্রহ
অদ্ভুত এক গ্রহ 

সূত্রঃ
১। http://www.astronomycafe.net/qadir/q1002.html
২। http://www.space.com/28357-how-to-live-on-venus.html
Category: articles

সোমবার, ২৩ মে, ২০১৬

গত ১০ বছরের মধ্যে মঙ্গল গ্রহ এখন সেরা উজ্জ্বল। এটি এখন সন্ধ্যা নামলেই হাজির হয় পূবাকাশে। বৃহস্পতি তখন থাকে প্রায় মাথার উপরে। দুজনের উজ্জ্বলতায় টক্করও লেগেছে বেশ। অবশ্য বৃহস্পতি একটু এগিয়ে। লুব্ধক এখন সন্ধ্যার পরেই পশ্চিমে ডুবে যায়। তাই বৃহস্পতি সেদিক থেকে একজন প্রতিযোগী হারালেও মঙ্গল ময়দানের লড়াই চালিয়ে রেখেছে।
রাতের আকাশে মঙ্গল গ্রহ

মঙ্গলের সাথেই আছে আরেকটু গ্রহ শনি। শনি অবশ্য উজ্জ্বলতায় বেশ পিছিয়ে। তবে শনি সব সময় প্রায় একই রকম উজ্জ্বল থাকবে। মঙ্গল এখান সেরা উজ্জ্বল হলেও মাস্খানেক পর আবার অনুজ্জ্বল হতে থাকবে। 
Category: articles

বুধবার, ১৮ মে, ২০১৬

দূরত্বের দিক দিয়ে বৃহস্পতি সূর্যের পঞ্চম গ্রহ। এর ভর সৌরজগতের অন্য সব গ্রহের সম্মিলিত ভরের আড়াই গুণ। এর প্রধান উপাদান গ্যাস। তাই এর নাম গ্যাস জায়ান্ট।
টেলিস্কোপে দেখা বৃহস্পতি গ্রহ 
গ্রহটির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যঃ

⏩ বৃহস্পতি সৌরজগতের চতুর্থ উজ্জ্বল বস্তু
এটি রাতের আকাশের ৩য় উজ্জ্বল বস্তু। কারণ, রাতেতো আর সূর্য থাকে না। শুধু সূর্য, চাঁদ এবং শুক্র গ্রহই এর চেয়ে বেশি উজ্জ্বল। অন্য গ্রহদের চেয়ে একেই সবচেয়ে বেশি ভালোভাবে চোখে পড়ে। গ্রহদের মধ্যে শুক্র সবচেয়ে উজ্জ্বল হলেও একে কোন সময় সন্ধ্যার পরে আবার কখনো ভোরের আকাশে দেখা যায়। বেশ কিছু সময় এটি সূর্যের এত কাছে থাকে যে একে খালি চোখে দেখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, বিশেষ করে শহর থেকে।

⏩ প্রাচীন ব্যাবীলনীয়রা প্রথম বৃহস্পতির পর্যবেক্ষণের রেকর্ড রাখে
এটা খৃষ্টপূর্ব ৭ম বা ৮ম শতকের কথা। রোমদের দেবতার রাজা ছিল জুপিটার। গ্রিকদের কাছে এটি ছিল বজ্র দেবতা জিউস।

⏩ বৃহস্পতির দিনের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে ছোট
বৃহস্পতি নিজের অক্ষের উপর একবার পাক খেতে মাত্র ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট সময় নেয়। ফলে এতে দিনের দৈর্ঘ্য ৯ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট হয়। এই দৈর্ঘ্য গ্রহদের মধ্যে স্বল্পতম। এর অর্থ হচ্ছে গ্রহটির আবর্তন বেগ খুব তীব্র। সত্যি বলতে এই বেগ হচ্ছে সেকেন্ডে ১২.৬ কিমি.। এই তীব্র বেগের কারণে গ্রহটির মেরু অঞ্চল বেশ অনেকটা চেপে গিয়ে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে। পৃথিবীও একই কারণে মেরু অঞ্চলে একটু চ্যাপ্টা, অবশ্য তা পরিমাণে বৃহস্পতির চেয়ে কম।

⏩ বৃহস্পতি সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে ১১.৮ বছর লাগে
পৃথিবী থেকে দেখতে আকাশে বৃহস্পতির বেগ খুব ধীর। ফলে এটি এক তারামণ্ডলী থেকে আরেকটিতে যেতে অনেক সময় লাগে। এখানে বেগ বলতে আমরা পৃথিবীর আবর্তনের জন্যে আকাশের বস্তুদের পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী বেগকে বোঝাচ্ছি। বলছি রাতের আকাশের তারকাদের তুলনায় আপেক্ষিক বেগের কথা। তারকাদের তুলনায় বেগের গতির তারতম্যের কারণেই গ্রহদেরকে তারকাদের থেকে আলাদা করে চেনা যায়।

⏩ বৃহস্পতির ঝড়ের চিহ্ন
টেলিস্কোপে বৃহস্পতির গায়ে একটি বড় লাল দাগ দেখা যায়। এর নাম গ্রেট রেড স্পট। ৩৫০ বছর ধরে এর প্রকোপ খুব তীব্র। এই লাল দাগটি এত বড় যে এর মধ্যে ৩টা পৃথিবীকে বসিয়ে দেওয়া যাবে। 

⏩ বৃহস্পতির অভ্যন্তরভাগে পাথর, ধাতু ও হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত
বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডল প্রধানত হাইড্রোজেন দিয়ে গঠিত হলেও বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে ভেতরে গেলে পাওয়া যাবে সঙ্কুচিত হাইড্রোজেন গ্যাস এবং তরল ধাতব হাইড্রোজেন। আর এর কোর বরফ, পাথর ও ধাতুতে তৈরি।

সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহের মালিক বৃহস্পতি
সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ গ্যানিমিড। এর পরেই অবস্থান ক্যালিস্টোর। এর চারটি উপগ্রহ প্রথম গ্যালিলিও আবিষ্কার করেন। এই চারটি হল আয়ো, গ্যানিমিড, ইউরোপা ও ক্যালিস্টো।
সূত্রঃ

[১] http://space-facts.com/jupiter/
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Jupiter
Category: articles

শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬

বলছি শনির উপগ্রহ টাইটানের কথা। এতে আছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ তরল পদার্থ। চমকে গেলেন নিশ্চয়ই? পানি নাকি!
নাহ! পানি নয়। সমুদ্র ঠিকই আছে বটে, তবে সেটা পানির নয়, হাইড্রোকার্বন দিয়ে গড়া। হাইড্রোজেন ও কার্বন সমৃদ্ধ জৈব যৌগকে হাইড্রোকার্বন বলে। টাইটানে মিথেন ও ইথেন (অ্যালকেন পরিবারের) দুটোই থাকলেও বিশুদ্ধ ইথেন এর উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে আছে। সব মিলিয়ে টাইটানের পৃষ্ঠে তরলের পরিমাণ ২ পারসেন্ট। 
প্রায় অবলোহিত আলোতে তোলা টাইটানের পৃষ্ঠে সূর্যের আলোর ঝলক। ছবি নাসার ক্যাসিনি যানের তোলা। 

২০০৭ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ক্যাসিনি মহাকাশযানের পাঠানো ছবি যাচাই করে সম্প্রতি মিথেন সম্পর্কে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়েছে। 
শনির বৃহত্তম এই উপগ্রহটিতে মোট তিনটি সমুদ্র আছে। এর সবগুলোই উত্তর মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে অবস্থিত। পাশাপাশি, এতে আছে অনেকগুলো ছোট ছোট লেক বা হ্রদ। 
শনির উপগ্র টাইটানে তরলের স্রোত 
সূত্রঃ
আর্থ স্কাই
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৫ মে, ২০১৬

৭৬ বছর পরপর হ্যালির ধূমকেতু পৃথিবীর আকাশে দেখা দেয়। এ সময় একে খালি চোখেই দেখা যায়। এটা খুব সম্ভব একমাত্র ধূমকেতু যাকে কেউ কেউ জীবনে একবারের বেশি দেখতে পারেন। এটি সর্বশেষ পৃথিবীর আকাশে দেখা যায় ১৯৮৬ সালে। আবার দেখা যাবে ২০৬১ সালে।
সৌরজগতের অন্য গ্রহদের তুলনায় হ্যালির ধূমকেতুর অবস্থান, মে ২০১৬ 
একে সর্বশেষ দেখার পর ৩০ বছর পেরিয়েছে। সময়টি এর পুনরাবির্ভাবের অর্ধেকের চেয়ে একটু কম। ফলে, এটি এখনও দূরে সরছে কিন্তু সর্বাধিক দূরত্বের কাছাকাছি অবস্থানে পৌঁছেছে।
প্রতি বছর দুই বার পৃথিবীতে উল্কাপাতের পেছনে হ্যালির ধূমকেতু ভূমিকা রাখে। এর জন্যে একে পৃথিবীর কাছে আসতে হয় না। এর জন্যে দুজনের কক্ষপথ ছেদ করাই যথেষ্ট। ছবিতে দেখুন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার  ঘুরে আসতে এর কক্ষপথকে দুবার ছেদ করে।
ধূমকেতুটির কক্ষপথের নতি গ্রহদের তুলনায় অনেকটা বেশি 

ধূমকেতুটির অপসূর অবস্থান অনুসূরের চেয়ে ৬০ গুণ দূরে। বর্তমানে (মে, ২০১৬) এটি নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে আছে। এর অপসূরের দূরত্ব ৩৫.৩ এইউ। অর্থ্যাৎ, এটি পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্বের ৩৫.৩ গুণ দূর পর্যন্ত সফর করে।
১৯১০ সালের মে মাসে তোলা হ্যালির ধূমকেতুর ছবি 
Category: articles

সোমবার, ২ মে, ২০১৬

গ্রহ দেখার আরেকটি দারুণ মাস ২০১৬ সালের মে। এ মাসে সবচেয়ে দারুণ দেখাবে বৃহস্পতি, মঙ্গল ও শনিকে। দেখা যাক, কে কখন, কোথায় থাকবে।
বৃহস্পতিঃ
সন্ধ্যার পরপরই এটি পূর্ব আকাশ থেকে হাজির মাথার উপর। মাসের যে সময়টুকু চাঁদ থাকবে না তাতে বৃহস্পতিই রাতের আকাশের সেরা উজ্জ্বল বস্তু। আগামী মাসগুলোতেও এটি এর পারফরম্যান্স ধরে রাখবে। গত মাসের মতই লুব্ধকের সাথে এর উজ্জ্বলতার প্রতিযোগিতা হবে। অনেকে ভুল করে একে লুব্ধকও মনে করতে পারেন। তবে লুব্ধক এর চেয়েও বেশি পশ্চিমে (এবং মূলত কিছুটা দক্ষিণ-পশ্চিমে) থাকায় বিভ্রান্তি কাটানো সহজ। লুব্ধক আকাশের সেরা উজ্জ্বল নক্ষত্র হলেও সময় সময় গ্রহদের কাছে একে হার মানতে হয়।
মাস গড়াতে গড়াতে আরেকটি গ্রহ মঙ্গলও বৃহস্পতির সাথে টক্কর লাগাবে। তবে এর লাল রঙ এর কারণে একে চিনতে অসুবিধা হবে না।

মঙ্গলঃ
এ মাসের ২য় সেরা উজ্জ্বল গ্রহ এটি। মাসের শুরুতে উজ্জ্বলতার দৌড়ে বৃহস্পতির চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও দিন গড়াবার সাথে সাথে এর উজ্জ্বলতা বেড়ে বৃহস্পতির খুব কাছাকাছি হয়ে যাবে। গত ২ বছরের মধ্যে এটি আমাদের জন্যে মঙ্গল গ্রহ দেখার সেরা সময়। মাসের শেষের দিকে এটি এপ্রিল মাসের তুলনায় ৪ গুণ উজ্জ্বল হবে। বুধ ছাড়া অন্য যে কোন গ্রহের চেয়ে মঙ্গল সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বলতার পরিবর্তন ঘটায়। এটি এর উজ্জ্বলতম অবস্থায় অনুজ্জ্বল অবস্থা থেকে ৮০ গুণ পর্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে!
রাতের আকাশে মঙ্গল গ্রহ 


ইদানিং মঙ্গল উজ্জ্বল হচ্ছে কেন?
মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথ পৃথিবীর ঠিক বাইরে। সূর্যের চারদিকে পৃথিবী তাই মঙ্গলের চেয়ে দ্রুত ঘোরে। গত দুই বছর ধরে আমরা মঙ্গলের আগে আগে সূর্যের চারদিকে ছুটছি। এ মাসের শেষ দিকে আমরা চলে যাচ্ছি মঙ্গল ও সূর্যের মাঝে। এই ঘটনাকে বলা হয় প্রতিযোগ (Opposition)। এ সময় সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাবার পরেই পূব আকাশে দেখা মিলবে মঙ্গলের। মাসের শুরুতে অবশ্য মঙ্গল উদিত হবে রাত ৯টার দিকে।

রাতের আকাশে গ্রহদের এলোমেলো ছোটাছুটি এদেরকে নক্ষত্রদের থেকে আলাদা করে চিনতে ভূমিকা রেখেছে। নক্ষত্রদের সাপেক্ষে এরা কখনো পূর্ব দিকে, আবার কখনো পশ্চিমে ছোটে। 


 ভিডিওঃ ২০১৬ সালের বিভিন্ন মাসে মঙ্গলের ছোটাছুটি 

লাল গ্রহটি নিজে একাই রাতের আকাশকে উজ্জ্বল করছে না। এর পাশেই আছে আরেকটি সুন্দর গ্রহ শনি। আপাতত দুজনের দূরত্ব অবশ্য বাড়ছে, কিন্তু আছে বৃশ্চিক মণ্ডলীতেই।

শনিঃ
মঙ্গল ও শনি দুই গ্রহই আরেকটি উজ্জ্বল বস্তুর কাছে আছে। এটি হচ্ছে আকাশের আকাশের ১৬শ উজ্জ্বল নক্ষত্র জ্যেষ্ঠা (Antares)। এত উজ্জ্বল হয়েও বেচারা দুই গ্রহের কাছে ফেল! আপাতত রাত ৯ থেকে ১০টার মধ্যে এটি শনি উদিত হলেও মঙ্গলের মতই আস্তে আস্তে এই সময় কাছে আসছে। জুনের ৩ তারিখে এটিও প্রতিযোগ অবস্থানে আসবে। এই সময় এও সূর্যাস্তের পরে পূর্ব আকাশে হাজিরা দেবে। আগস্টের ২৪ তারিখে মঙ্গল ও শনি খুবই কাছাকাছি থাকবে।

বুধঃ
মে মাসের ৯ তারিখে বুধ সন্ধ্যার আকাশ থেকে ভোরের আকাশে চলে যাচ্ছে। ফলে, এই সময় এটি সূর্যের খুব নিকটে থাকে বলে একে দেখা প্রায় অসম্ভব। বুধ অন্তঃগ্রহ এবং সূর্যের নিকটতম গ্রহ হওয়ায় খুব দ্রুত ভোরের আকাশ ও সন্ধ্যার আকাশে আসতে যেতে থাকে।

শুক্রঃ
রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম গ্রহটি এ মাসেও নিস্তেজ। ফলে রাতের আকাশের রাজত্ব বৃহস্পতির হাতে। এটি এ মাসে (পৃথিবীর আকাশে) সূর্যের নিকটতর হতে হতে সূর্যের আভায় হারিয়ে যাবে। জুনের ৬ তারিখে এটি সূর্যের ঠিক পেছনে চলে যাবে। কারণ, এ সময় কক্ষপথে এটি অবস্থান নেবে পৃথিবীর উল্টো পাশে। এ সময় এটি ধীরে ধীরে ভোরের পূবাকাশ থেকে সন্ধ্যার পশ্চিমাকাশের দিকে আসবে।
শুক্র গ্রহের সূর্যকে অতিক্রমের মুহূর্ত 

Category: articles

মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৬

সহজ কথায় বললে, সূর্যের চারদিকে কোন গ্রহের কক্ষপথের নিকটতম বিন্দুকে অনুসূর (Perihelion) এবং দূরতম বিন্দুকে অপসূর (Aphelion) বলে। অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেবার সময় গ্রহরা জোরে এবং উল্টোভাবে অপসূর দিয়ে যাবার সময় ধীরে চলে।

আমাদের সৌরজগতের গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। কিছু গ্রহের কক্ষপথ প্রায় বৃত্তাকার। অধিকাংশেরই কক্ষপথ ছড়ানো, অনেকটা ডিম্বাকৃতির। আরো সঠিক করে বললে উপবৃত্তাকার। আর এই উপবৃত্তাকার হবার কারণেই সূর্য থেকে গ্রহদের দূরত্ব নির্দিষ্ট থাকে না।

উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্য থেকে বুধ গ্রহের দূরত্বের পরিবর্তন

সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে আসার সময় পৃথিবী প্রতি বছর এক বার করে অপসূর ও অনুসূর অবস্থান পাড়ি দেয়। অন্য গ্রহরাও সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে একবার করে বিন্দু দুটিকে অতিক্রম করে। সাধারণত জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে নিকটে ও জুলাই মাসে সবচেয়ে দূরে থাকে। একে সহজাত বুদ্ধির বিপরীত মনে হয়। কারণ আমরা জানি, জানুয়ারি মাসে শীতকাল থাকে (বাংলাদেশসহ অনেকগুলো দেশে)।তাহলে শীতকালে সূর্য আমাদের সবচেয়ে কাছে থাকে- এটাকি বিশ্বাসযোগ্য? বিশ্বাসযোগ্য না হলেও এটাই বাস্তবতা।

আসলে শীত বা গরম পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের উপর নির্ভর করে না বললেই চলে। এটা নির্ভর করে পৃথিবীর কক্ষীয় নতীর উপর। পৃথিবী এর কক্ষীয় তলের সাথে সাড়ে তেইশ ডিগ্রি পরিমাণ হেলে আছে। ফলে, যে অঞ্চল যখন সূর্যের দিকে হেলে থাকে তখন তাতে গরম অনুভূত হয় এবং উল্টো পাশে বজায় থাকে শীত। এ জন্যেই জানুয়ারি মাসে উত্তর গোলার্ধে শীত থাকলেও দক্ষিণ গোলার্ধে কিন্তু ঠিকই গরম থাকে।

২০১০ সালে পৃথিবীর অপসূর ও অনুসূর 

সূর্যের নিকটতম অবস্থানে থাকার সময় পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব থাকে ৯ কোটি ১০ লক্ষ মাইল বা ১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কিমি.। অন্য দিকে অপসূর অবস্থানে এই দূরত্ব হচ্ছে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি ২০ লক্ষ কিমি.। একেই আমরা গড় করে সাধারণত বলি ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল বা ১৫ কোটি কিমি.। পৃথিবী থেকে সূর্যের এই গড় দূরত্বকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিট।

আরো পড়ুনঃ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

অনুসূর ও অপসূর কথাগুলো গ্রহদের পাশাপাশি ধূমকেতু ও গ্রহাণুদের জন্যেও প্রযোজ্য। ইংরেজি perihelion শব্দটি peri এবং helios গ্রিক শব্দদ্বয় থেকে আগত। peri শব্দের অর্থ নিকটে এবং helios অর্থ সূর্য। ফলে perihelion এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে সূর্যের নিকট বিন্দু। একইভাবে গ্রিক apo শব্দের অর্থ দূরে। ফলে aphelion এর দাঁড়াচ্ছে সূর্যের দূরতম বিন্দু। বাংলায় ভেঙ্গে অর্থ করলেও প্রায় একই রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে। কারণ সূর কথাটা এসেছে সূর্য থেকেই।

অন্য দিকে, চাঁদও পৃথিবীর চারদিকে উপবৃত্তাকার পথে চলে। ফলে চাঁদের ক্ষেত্রেও পৃথিবীর নিকটতম ও দুরতম দুটি বিন্দু আছে। এদের  জন্যে আছে আলাদা নাম। নিকটতম বিন্দুর নাম অনুভূ এবং দূরতম বিন্দুর নাম অপভূ। বুঝতেই পারছেন, ভূ মানে পৃথিবী। আর অনুভূ মানে পৃথিবীর নিকটে।

সূত্র: উইন্ডোজ টু ইউনিভার্স
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...