Advertisement

সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪

প্রতি দিন রাতের আকাশের দিকে নজর রাখলে একটি বিশেষ জিনিস চোখে পড়বে। প্রত্যেক রাতের একই সময়ে আকাশের তারাগুলো আগের রাতের চেয়ে একটু পশ্চিমে চলে আসে। এটা হয় সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে। পৃথিবী প্রতিনিয়ত কক্ষপথে অবস্থান বদল করার কারণে একেক সময় সূর্যকে আকাশের একেক দিকে অবস্থিত মনে হয়। সূর্যের এ আপাত অবস্থান যখন যে দিকে থাকে, সেদিকের তারাগুলো সে সময় সূর্যের প্রায় সাথে সাথে ডুবে যায়। তাই এ সময় তাদেরকে দেখ যায় না। কিছু দিন পর এ জায়গায় চলে আসে অন্য তারা। এভাবে এক বছর পর আবার একই সময়ে একই তারাদের দেখা মেলে রাতের আকাশে।


 গ্রহদের উল্টো গতি

সাধারণত তারকাদের এই চলাচলের কোনো ব্যতিক্রম নেই। কিন্তু গ্রহরা এই নিয়ম মানে না। দূরবর্তী আপাত স্থির নক্ষত্রেদের তুলনায় রাতের আকাশে এদের গতি সাধারণত পূর্ব দিকে। চাঁদও কিন্তু গ্রহদের মতো প্রতি রাতে আগের রাতের তুলনায় পূর্ব দিকে চলে আসে। কিন্তু মাঝে মাঝে দেখা যায়, গ্রহরা স্বাভাবিক পূর্ব দিকের বদলে নক্ষত্রদের সাথে সাথে পশ্চিম দিকে চলছে। এই ঘটনা সবচেয়ে সহজে চোখে পড়ে বুধ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহের ক্ষেত্রে। বৃহস্পতি বা শনি তুলনামূলক দূরে হওয়াতে এই উল্টো গতি (retrograde motion) দেখতে অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়। 


প্রাচীন কালের মানুষ এই উল্টে গতির ব্যাখ্যা জানত না। তখন মহাবিশ্ব সম্পর্কে অ্যারিস্টটলের ধারণা প্রচলিত। পৃথিবীকে মানে করা হত মহাবিশ্বের কেন্দ্র। এই মতবাদের ওপর ভিত্তি করেই টলেমি মহাবিশ্বের একটি মডেল দাঁড় করান। সেই মডেলে পৃথিবীর চারদিকে আটটি গোলক কল্পনা করা হলো। চাঁদ ও সূর্যের জন্যে ছিল একটি করে কক্ষপথ। সেই সময়ে জানা পাচঁটি গ্রহের জন্যে (বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি) ছিল আরও পাঁচটি কক্ষপথ। আরেকটি কক্ষপথ ছিল দূরবর্তী নক্ষত্রদের জন্যে। সময় সময় গ্রহদের উল্টো গতির ব্যাখ্যা দেবার জন্যে বলা হলো, পৃথিবীর চারদিকের কক্ষপথে ঘোরার পাশাপাশি এরা কক্ষপথের মধ্যেই আরেকটি বৃত্তপথে চলাচল করে। এই বৃত্ত পথের নাম ছিল মন্দবৃত্ত (epicycle)। এই চিত্রের মাধ্যমে গ্রহদের এলোমেলো চলনের ব্যাখ্যা পাওয়া গেলেও ত্রুটি ছিল এতে। এই নমুনা সঠিক হলে চাঁদ মাঝে মাঝে পৃথিবীর অর্ধেক দূরত্বে চলে আসার কথা, যা বাস্তবে ঘটে না।


টলেমির মহাবিশ্ব

এখন আমরা জানি, টলেমির মডেল ভুল ছিল। গ্রহদের চলাচলের সঠিক ব্যাখ্যা দেন জার্মান গণিত ও জ্যোতির্বিদ জোহানেস কেপলার। ব্যবহার করেন ড্যানিশ জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্রাহের সংগ্রহ করা তথ্য-উপাত্ত। কেপলারের গ্রহের সূত্র অনুসারে, পৃথিবীসহ অন্য গ্রহরা উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। উপবৃত্তের কোনো একটি উপকেন্দ্রকে ঘিরে এর প্রদক্ষিণ চলতে থাকে। মজার ব্যাপার হল, কেপলারের সূত্র থেকে গ্রহদের উল্টো গতির ব্যাখ্যা খুব সহজেই পাওয়া যায়।


উল্টো গতির কারণ কক্ষপথের গ্রহদের আপেক্ষিক অবস্থা 

এটা বোঝার জন্যে ওপরের চিত্রটি দেখুন। মাথায় রাখতে হবে, যে গ্রহরা সূযের অপেক্ষাকৃত কাছে, তাদের বেগ দূরের গ্রহের তুলনায় বেশি। কক্ষপথের পরিধিও ছোট। ফলে কাছের গ্রহরা অপেক্ষাকৃত কম সময়েই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে ফেলে। কোনো নির্দিষ্ট সময়ে মঙ্গল বা বাইরের দিকের কোনো গ্রহ পৃথিবী ও সূর্যের সাথে একই রেখায় অবস্থান করলেও একটু পরেই পৃথিবী চলে যায় সামনে। পৃথিবী থেকে ভেতরের দিকের গ্রহরা আবার এগিয়ে যায় পৃথিবীর চেয়ে। আপাতত পৃথিবীর সাপেক্ষে মঙ্গলের আপেক্ষিক অবস্থানের দিকে লক্ষ করুন। ১ থেকে ৩ নং অবস্থান পর্যন্ত স্বাভাবিক গতি দেখা যাচ্ছে। তবে ৪ নং অবস্থানে গিয়ে পৃথিবী থেকে দেখতে মঙ্গলের অবস্থান পেছনে (পশ্চিমে) সরে এসেছে। ৫নং-এও তাই। তবে তারপর আবার স্বাভাবিক পূর্ব দিকে চলছে।


বোঝাই যাচ্ছে, এরকম গতির পেছনে মূল কারণ হল, পৃথিবীর তুলনায় অন্য গ্রহদের কক্ষপথের পরিধি ও বেগের কম-বেশি।

Category: articles

শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৯২ সালের এই দিন গ্যালিলিও মহাকাশযান দ্বিতীয়বারের মতো পৃথিবীর পাশ দিয়ে উড়ে যায়। 


বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ আয়োর পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে গ্যালিলিও যান

কোনো মহাকাশযান  উড়তে উড়তে কোনো বস্তুর পাশ দয়ে উড়ে যাওয়ার নাম ফ্লাইবাই। ফ্লাইবাই অন্তত দুটি কারণে হতে পারে। এক, বস্তুটিকে কাছ থেকে দেখা। দুই, শক্তি অর্জন করে গতি বৃদ্ধি ও দিক পরিবর্তন। মহাকাশযানদের ক্ষেত্রে এই দ্বিতীয় কাজটি খুব কমন ব্যাপার। উড়তে উড়তে মহাকাশযান সাময়িক সময়ের জন্য কোনো বস্তুর (সাধারণত গ্রহ) মহাকর্ষক্ষেত্রে প্রবেশ করে। বস্তুটি থেকে কিছু শক্তি সংগ্রহ করে বাড়িয়ে নেয় নিজের গতি। প্রয়োজন অনুসারে পাল্টে নেয় দিক। এগুলো আগেই প্রোগ্রাম করা থাকে। 


গ্যালিলিও যানটি নাসার পাঠানো। উদ্দেশ্য ছিল বৃহস্পতি ও এর উপগ্রহদের এবং গ্রহাণু গ্যাসপ্রা ও আইডা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা। ১৯৮৯ সালের ১৮ অক্টোবর এটি মহাকাশের উদ্দেশ্যে ছুটে যায়। বৃহস্পতিতে পৌঁছে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। এর আগেই এটি শুক্র ও পৃথিবীর পাশ দিয়ে উড়ে যায়। প্রথম মহাকাশযান হিসেবে এটি পৃথিবীর বাইরের দিকে কোনো গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। এছাড়াও প্রথম যান হিসেবে গ্রহাণুকে প্রদক্ষিণ করে ও ছবি তোলে। 





২০০৩ সালে যানটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হয়। বৃহস্পতির মহাকর্ষ ভেদ করে বেরিয়ে আসার মতো জ্বালানি অবশিষ্ট ছিল না বলেই এমন সিদ্ধান্ত। 


সূত্র

https://solarsystem.nasa.gov/missions/galileo/overview 

https://en.wikipedia.org/wiki/Flyby_(spaceflight)

https://en.wikipedia.org/wiki/Galileo_(spacecraft)


Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৩

সূর্য সৌরজগতের সবচেয়ে বড় বস্তু। যেমন ভারী, তেমনি তার বিশাল অবয়ব৷ সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯.৮৬ ভাগ ভরই সূর্যের একার৷ আর আকার? ১০৯টা পৃথিবীকে পাশাপাশি বসালে সূর্যের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত যাওয়া যাবে৷ মানে ব্যাস পৃথিবীর ১০৯ গুণ। 


১০৯টা পৃথিবীকে একটার পর একটা বসিয়ে দিলে সূর্যের সমান চওড়া হবে। 

তবে ফুটবলের মতো প্রায় গোলাকার সূর্যের পেটের ভেতরে বসিয়ে দেওয়া যাবে ১৩ লক্ষ সূর্য৷ এটাই প্রচলিত কথা। সংখ্যাটায় একটু গোলমাল আছে অবশ্য। এ সংখ্যা পাওয়া গেছে সূর্যের আয়তনকে পৃথিবীর আয়তন দিয়ে ভাগ করে। সেটাকেই স্বাভাবিক মনে হয়। তবে এটা সঠিক হত যদি পৃথিবীকে গলিয়ে সূর্যের পেটে ভরে রাখা যেতে। কিন্তু পৃথিবী শক্ত ও কঠিন পদার্থে তৈরি। পৃথিবীকে সূর্যের ভেতরে বসাতে গেলে এখানে-সেখানে ফাঁকা জায়গায় থেকে যাবে। পুরো আয়তন ভর্তি করা যাবে না। ফলে, সবমিলিয়ে সূর্যের ভেতরে জায়গা পাবে নয় ৯ লাখ ৩২ হাজার পৃথিবী। 


সৌরজগত কত বড়?


গোলাকার সূর্যের পেটের ভেতর রাখা যাবে প্রায় ৯ লাখের বেশি পৃথিবী 

সূর্যের আকার প্রায় পুরোপুরি গোলাকার৷ মেরু ও বিষুব অঞ্চলের ব্যবধান মাত্র ১০ কিলোমিটার বা ৬.২ মাইল৷ গড় ব্যাসার্ধ ৪,৩২,৪৫০ মাইল (৬,৯৬,০০০ কিলোমিটার)৷ ব্যাস ৮,৬৪,৯৩৮ মাইল বা ১৩,৯২,০০০ কিলোমিটার৷ তবে সূর্য আকারে চাঁদ ও পৃথিবীর তুলনায় বিশাল হলেও পৃথিবীর আকাশে চাঁদ ও সূর্যকে সমান দেখায়। এর কারণ, সূর্য চাঁদের তুলনায় প্রায় ৪০০ গুণ বড়। আবার, পৃথিবী থেকে দূরত্বও ৪০০ গুণ। ফলে পৃথিবীর আকাশে এ দুই বস্তুকে সাধারণত সমান দেখা যায়। তবে সবসময় নয়।  


চাঁদ-সূর্য সমান কেন? 


ভরও দারুণ বিশাল। তিন লাখ ত্রিশ হাজার পৃথিবী একত্র করলে সূর্যের সমান ভর পাওয়া যাবে৷ তবে ভর কিন্তু কমে যাচ্ছে ক্রমশ৷ পরিমাণে সেটা বিশাল হলেও মূল ভরের তুলনায় নগণ্য৷ সৌরবায়ুর সময় সূর্য সেকেন্ডে ১৫ লাখ টন ভর হারায়৷ অভ্যন্তরে চলা ফিউশন বিক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত ভর থেকে আলো ও তাপশক্তি তৈরি হচ্ছে৷ এভাবে প্রতি সেকেন্ডে খরচ হচ্ছে ৪০ লাখ টন পদার্থ৷ সব মিলিয়ে সূর্য তার ৪৫০ কোটি বছরের জীবনে ভর হারিয়েছে পৃথিবীর ভরের ১০০ গুণ পদার্থ৷ দেখতে বিশাল লাগলেও এটা সূর্যের ভরের মাত্র ০.০৫ ভাগ। অন্য কথায় দশ হাজার ভাগের ৫ ভাগ৷ সারা জীবনে সূর্য  এক হাজার ভাগের মাত্র ৭ ভাগ ভরকে শক্তিতে রূপান্তর করবে৷ 


তবে সূর্যের বাহাদুরি শুধু সৌরজগতেই। পৃথিবী বা সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর তুলনায় প্রকাণ্ড হলেও সূর্য আসলে সাদামাটা এক তারা৷ রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা বিটলজুস৷ কালপুরুষ তারামণ্ডলের দ্বিতীয় উজ্জ্বল এ তারা সূর্যের প্রায় ৭০০ গুণ বড় ও ১৪,০০০ গুণ উজ্জ্বল৷ বিটলজুসকে জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে ভাল দেখা যায়৷ তবে এমন তারাও আছে যার তুলনায় বিটলজুসও নস্যি! 


লুব্ধক, কালপুরুষ ও বিটলজুস


সূর্যের তুলনায় বিটলজুস কত বিশাল দেখুন। এ তো সবে শুরু। আছে আরও বিশাল বিশাল তারাও।

বিটলজুস তো সূর্যের ৭০০ গুণ বড়। মিউ সিফিয়াই তারা প্রায় এক হাজার গুণ বড় (৯৭২)। সূর্যের চেয়ে এক হাজার গুণ বা আরও বড় প্রায় ১০০ তারা আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ভিওয়াই ক্যানিস মেজোরিস তো ১৪২৯ গুণ বড়। ইউওয়াই স্কুটি ১৭০৮ গুণ। এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় আকারের তারার নাম স্টিফেনসন ২-১৮। অন্য নাম স্টিফেনসন ২ ডিএফকে ১। সূর্যের তুলনায় ২১৫০ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ১৯ হাজার আলোকবর্ষ। 


বড় বড় নক্ষত্রের গল্প


সূর্যের চেয়ে বড় বড় তারকারা

তবে আবার সূর্যের চেয়ে ছোট তারাও আছে। এমন তারাও আছে, যাদের ভর সূর্যের দশ ভাগের এক ভাগ। তবে সূর্যের চেয়ে বেশি ভারী তারা আবার জীবনের শেষ ভাগে অনেক ছোট হয়ে যায়। এই যেমন ব্ল্যাকহোল ও নিউট্রন তারা। জীবনের শেষভাগে ব্ল্যাকহোল তো বিন্দু বা রেখার মতো হয়ে যায়। আর নিউট্রন তারা হয় পৃথিবীর চেয়ে ছোট। জ্বালানি ফুরিয়ে গুটিয়ে যাবার সময় তৈরি নিউট্রন আরও ছোট হতে বাধা দেয়। ফলে তারাটা ব্ল্যাকহোল হতে পারে না। চওড়ায় হয় মাত্র ১২ মাইলের মতো। ঘন এ তারা থেকে একটি চিনির দানার সমান পদার্থ নিলে তার ভরই হবে একশো কোটি টন। 


ব্ল্যাকহোলের জন্ম হয় কীভাবে?


এখন সূর্যের আকার প্রায় ধ্রুব থাকলে আরও প্রায় ৫০০ কোটি সূর্য বড় হয়ে যাবে৷ ততদিনে হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হওয়ায় বন্ধ হবে হিলিয়াম তৈরির প্রক্রিয়া৷ ফলে ভেতরের অংশ গুটিয়ে একটা সময় লোহিত দানব ও পরে শ্বেত বামন তারায় পরিণত হবে৷ ওদিকে বাইরের অংশে তখনও চলমান ফিউশনের বহির্মুখী চাপে প্রসারিত হয়ে অনেকদূর বিস্তৃত হবে৷ বর্তমান আকার থেকে ২০০ গুণ বড়৷ বুধ ও শুক্রের কক্ষপথ চলে যাবে সূর্যের পেটের ভেতর। এবং সম্ভবত পৃথিবীও। 


সূর্য কীভাবে জ্বলে?


লোহিত দানব তারার গল্প


সূত্র: স্পেস ডট কম, স্লুহ ডট কম, নাসা, আর্থস্কাই, আইএফএল সায়েন্স, ওউক্ল্যাশন

Category: articles

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

বামন গ্রহদের পরিচয়। বড় করে দেখতে ক্লিক করুন। 


টেক্সট 

বামন গ্রহরা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। ভরের কারণে আকৃতি গ্রহদের মতোই প্রায় গোলাকার। তবে আকারে গ্রহদের চেয়ে ছোট। সূর্য ছাড়া অন্য কোনো বস্তুর চারপাশে ঘোরে  না। তবে নিজের কক্ষপথে অন্য বস্তু চলে আসতে পারে। সৌরজগতে শত শত বামন গ্রহ থাকার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে অবশ্য পাঁচটি বহুল পরিচিত। 


সেরেস

আকার: ৫৮৪ মাইল চওড়া 

অবস্থান: গ্রহাণুবেষ্টনী 

আবিষ্কার: ১৮০১ সাল 

বিশেষ তথ্য: গ্রহাণুবেষ্টনীর সবচেয়ে বড় গ্রহাণু 


প্লুটো

আকার: ১৪৭৩ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্টের কাছে 

আবিষ্কার: ১৯৩০ 

চাঁদ/উপগ্রহ: শ্যারন, নিক্স, হাইড্রা, স্টিক্স, কারবারোস 

বিশেষ তথ্য: একদিন সমান পৃথিবীর ৬.৪ দিন


মাকিমাকি

আকার: ৮৯০ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্ট 

আবিষ্কার: ২০০৫ 

চাঁদ: এমকে২ 

বিশেষ তথ্য: কাইপার বেল্টের দ্বিতীয় উজ্জ্বল বস্তু 


হাউমেয়া 

আকার: ১১৯৫ x ৬১৫ মাইল (ডিম্বাকার) 

অবস্থান: কাইপার বেল্ট

আবিষ্কার: ২০০৪ 

চাঁদ: হিয়াকা, হামাকা 

বিশেষ তথ্য: নেপচুনের বাইরের বস্তুর মধ্যে এখন পর্যন্ত এরই কেবল বলয় আছে বলে জানা গেছে।  


এরিস

আকার: ১৪৪৫ মাইল চওড়া 

অবস্থান: কাইপার বেল্টের বাইরের অংশ

আবিষ্কার: ২০০৩ 

বিশেষ তথ্য: আবিষ্কারের মাধ্যমে প্লুটোর গ্রহত্ব নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় 


সূত্র: স্পেস ডট কম
Category: articles

শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

চাঁদ ও সূর্য। পৃথিবীর আকাশকে সুন্দর করে তোলার পেছনে যাদের জুড়ি মেলা ভার। আকারে দুই বস্তুতে ব্যাপক পার্থক্য। সূর্য চাঁদের তুলনায় বিশাল। তাও পৃথিবীর আকাশে দুটো বস্তুকে সমান দেখায়। কিন্তু কেন? 


পৃথিবী থেকে দূরত্ব ও আকার - এই দুই মানের ভারসাম্যে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর আকাশে সমান। 

সূর্য বিশাল এক বস্তু। ১৩ লক্ষ ৯০ হাজার কিলোমিটার চওড়া৷ মাইলের হিসাবে ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার৷ দূরত্বও আবার বিশাল। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল৷ 


অপরদিকে চাঁদের ব্যাস ২১৫৯ মাইল বা ৩৪৭৫ কিলোমিটার৷ মানে চাঁদ সূর্যের চারশ ভাগের একভাগ মাত্র চওড়া৷ আর পৃথিবীর থেকে চাঁদের দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার বা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০০ মাইল। 


সূর্য পৃথিবী থেকে কত দূরে?


চাঁদ পৃথিবী থেকে কত দূরে? 


এ হিসাবগুলোতে দারুণ মজার একটা ব্যাপার আছে৷ পৃথিবী থেকে চাঁদের তুলনায় সূর্যের দূরত্ব ৪০০ গুণ৷ আবার সূর্যের আকার চাঁদের ৪০০ গুণ। ফলে চাঁদের তুলনায় সূর্যের বিশালতা আমাদের চোখে হারিয়ে যায় দূরত্বের কারণে৷ ঠিক এভাবেই দূরের উজ্জ্বল নক্ষত্র কাছের অনুজ্জ্বল নক্ষত্রের আলোর কাছে হেরে যায়৷


নক্ষত্রের উজ্জ্বলতা


চাঁদ ও সূর্য দুটোরই আকার পৃথিবীর আকাশে ০.৫ ডিগ্রি৷ তবে সবসময় আকার সমান থাকে না। পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। চাঁদের পৃথিবীর চারপাশের কক্ষপথের নিকটতম অবস্থানের নাম অনুভূ। আর সবচেয়ে দূরের অবস্থানের নাম অপভূ৷  একইভাবে সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর কক্ষপথও উপবৃত্তাকার৷ কাছের ও দূরের অবস্থানের নামগুলো অনুসূর ও অপসূর৷ জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে। 


খালি হাতে আকাশ মাপুন


জ্যোতির্বিদ্যায় কোণের পরিমাপ


এসব কারণে সময় সময় চাঁদ ও সূর্যকে পৃথিবীর আকাশে বড় ও ছোট দেখায়৷ তবে চাঁদ পৃথিবীর বেশি কাছে বলেই আকারের তারতম্য বেশি ফুটে ওঠে৷ আমরা দেখি মাইক্রোমুন ও সুপারমুন৷ 


তবে চাঁদ ক্রমেই পৃথিবী থেকে দূরে সরছে। ২৫০ কোটি বছর ধরেই চলছে এ কাজ। প্রতি বছর সরছে প্রায় ৩.৮ সেন্টিমিটার করে৷ দূর অতীতে তাই  সূর্য ও চাঁদ পৃথিবীর আকাশে সমান ছিল না। চাঁদ ছিল বড়৷ বর্তমানে আমরা ভাগ্যবান। এই সময়টায় দুটোই সমান। ধীরে ধীরে চাঁদ আরও ছোট হবে৷ 


আবার এই চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর আকাশে সমান বলেই আমরা নানানসময় দেখি সূর্যচন্দ্রগ্রহণ৷ সেটা হতে হলে তিন বস্তুকে অবশ্য একই রেখায় আসতে হয়। সাইজ মিলে গেলে দেখি পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ৷ সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদ দূরে থাকলে (অপভূ) দেখা যায় বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ৷ চাঁদের চারপাশ ঘিরে এ সময় দেখা যায় সূর্যের বৃত্তাকার আলোকরেখা৷ 


সূর্যগ্রহণ কেমন হবে তা নির্ভর করে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের ওপর। 


অন্য গ্রহেও কি এমন? আকাশে কি চাঁদ (গ্রহের উপগ্রহ) ও সূর্যের সাইজ সমান? এই যেমন মঙ্গল গ্রহ। এর দুই চাঁদ ডিমোস ও ফোবোস দুটোই সূর্যের চেয়ে অনেক ছোট৷ পৃথিবীর চেয়েও মঙ্গল থেকে সূর্য বেশি দূরে৷ মঙ্গলের আকাশে তাই এর চাঁদদের ছোট হওয়ার কারণ তাই চাঁদদেরই ছোট সাইজ৷ 

সূত্র: স্পেস ডট কম, সায়েন্স নোটস

Category: articles

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। আমরা এমনটাই বলি। বলি বৃহস্পতি, শনিদের ক্ষেত্রেও। তবে আসলে কথাটায় খানিক ঘাপলা আছে। কী সেই ঘাপলা? চলুন, জেনে নেই। 


কাছাকাছির ভরের দুই বস্তুর প্রদক্ষিণ। দুটি বস্তুই + চিহ্নিত জায়গাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।


পৃথিবী হলো গ্রহ। আর সূর্য নক্ষত্র। গ্রহ ঘোরে নক্ষত্রের চারপাশে। সেজন্যেই তো আমরা বলি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। আসলে দুজনেই প্রদক্ষিণ করে তাদের যৌথ ভরকেন্দ্রকে। জায়গাটার গালভরা নাম ব্যারিসেন্টার। মজার ব্যাপার হলো, ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের বাইরের গ্রহ খোঁজার ব্যাপারেও দারুণ কাজে লাগে! 


তো, এই ব্যারিকেন্দ্র বা ভরকেন্দ্র আসলে কী? প্রত্যেক বস্তুর ভরের একটা কেন্দ্র আছে। এটা হলো বস্তুটার উপাদান পদার্থের একদম নিখুঁত কেন্দ্র। ভরকেন্দ্র বিন্দুতে বস্তুটাকে সঠিকভাবে ব্যালেন্স করে (ভারসাম্যে) রাখা যায়। অনেকসময় ভরকেন্দ্র থাকে বস্তুর ঠিক কেন্দ্রে। যেমন ধরুন একটা রুলার। এর মাঝ বরাবর এখানে-ওখানে কয়েকবার আঙ্গুল রেখে ধরে রাখার চেষ্টা করুন। পেয়ে যাবেন সে জায়গা, যেখানে আঙ্গুল রাখলে রুলার পড়ে যাবে না। এটাই রুলারের ভরকেন্দ্র। অপর নাম অভিকর্ষ কেন্দ্র। 


অনেকসময় ভরকেন্দ্র আর বস্তুর কেন্দ্র একই জায়গায় হয় না। কেন? ধরুন ২ ও ৪ দুটি সংখ্যা। এদের গড় ৩। যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে বা কেন্দ্রে আছে। কিন্তু ২, ৪, ৪ সংখ্যা তিনটির গড়? ৩.৩৩, যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে নয়। সংখ্যার অসম বিন্যাসে পাল্টে গেছে কেন্দ্র। ৪ এর সংখ্যা ২ এর চেয়ে বেশি হওয়ায় গড় ৪ এর দিকে সরে এসেছে। ভরের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে। ভর একেকদিকে একেক রকম হলে সরে যায় কেন্দ্র। যেমন ধরুন হাতুড়ি। এর প্রায় সবটুকু ভর এক প্রান্তে আছে। ফলে ভরকেন্দ্রও ভারী প্রান্তটির কাছাকাছি। বস্তুর সবচেয়ে বেশি ভর যেদিকটায় থাকে, ভরকেন্দ্রও তার কাছাকাছি থাকে। 


এক নজরে সূর্য


সূর্য ও পৃথিবীরও একটি ভরকেন্দ্র বা ব্যারিসেন্টার আছে। তবে সূর্যের ভর পৃথিবীর তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সৌরজগতের ৯৯.৮৬ ভাগ। সূর্য তাই হাতুড়ির ভারী মাথার মতো বা তার চেয়ে প্রভাবশালী। এর ফলে সূর্য ও পৃথিবীর ব্যারিসেন্টার সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি। তাও ভেতরেই। বৃহস্পতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড়। ভর ৩১৮ গুন। ফলে সূর্য ও বৃহস্পতির ব্যারিকেন্দ্র সূর্যের ভেতরে নয়। কিছুটা বাইরে। ফলে শুধু এই দুটি বস্তুকে আলাদা করে দেখলে ব্যাপারটাকে বাইনারি স্টার বা জোড়াতারার মতো মনে হবে। মানে বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না। দুজনেই দুজনকে কেন্দ্র করে ঘুরছে! 


বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে না!


পুরো সৌরজগতেরও একটি ব্যারিকেন্দ্র আছে। সূর্য, পৃথিবী ও সৌরজগতের গ্রহ ও অন্যসব বস্তু সেই ব্যারিকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। এই ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের সবগুলো বস্তুর সমন্বিত ভর ধারণ করে আছে৷ তবে এই ভরকেন্দ্র হাতুড়ির মতো নয়। নয় স্থির কোনো জায়গায়। ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ সব বস্তু এখানে গতিশীল। ব্যারিকেন্দ্র হতে পারে সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছে। আবার হতে পারে সৌরপৃষ্ঠেরও বাইরে৷ 


ব্যারিকেন্দ্র কীভাবে গ্রহ খুঁজে পেতে কাজে আসে তা এখন বোঝা যাচ্ছে। নক্ষত্রের কোনো গ্রহ থাকলে এর ব্যারিকেন্দ্র দোল খেতে থাকে এদিক-সেদিক। মাতাল মানুষ যেমন এদিক-সেদিক ঢুলতে থাকে। সৌরজগতের বাইরের গ্রহদেরকে দেখে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। নক্ষত্রের আলোর ঝলকে এদের মৃদু প্রতিফলিত আলো হারিয়ে যায়। তবে নক্ষত্রের দোল খাওয়া দেখে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আর এভাবে প্রচুর বহির্গ্রহ আবিষ্কার করাও হয়েছে। সংখ্যাটাও কম নয়, সব মিলিয়ে ১০৩৬। আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সফল কৌশল এটি। সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরা গ্রহের ট্রানজিট বা অতিক্রমন।

অতিক্রমন দেখে পাওয়া গেছে প্রায় চার হাজার গ্রহ। সে গল্প বিস্তারিত আরেকদিন শোনাব ইনশাআল্লাহ। 


সূত্র: নাসা স্পেসপ্লেস 


* লেখাটি ইতোপূর্বে কিশোরআলো ম্যাগাজিনে প্রকাশিত। 


Category: articles

শুক্রবার, ৯ জুন, ২০২৩

উদয় বা অস্তের কাছাকাছি সময়ে চাঁদকে বড় দেখায়। তখন কি চাঁদ তাহলে পৃথিবীর কাছে চলে আসে? চাঁদ পৃথিবীকে ঘুরে আসতে প্রায় ২৯ দিন লাগে। পৃথিবীর চারপাশে চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। গোলাকার নয়। ফলে পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব বাড়ে-কমে। ২৯ দিনে চাঁদ মাত্র একবার করে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসে ও দূরে যায়। কিন্তু অথচ উদয়-অস্ত তো প্রায় প্রতি ২৪ ঘন্টায় একবার হয়। তার মানে দিগন্তের চাঁদ বড় হওয়ার জন্যে দূরত্ব দায়ী নয়।  




পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব কত?


চাঁদ কত বড়?


একাধিক উপায়ে প্রমাণ করা যায়, দিগন্তের উপরের চাঁদ আর মাথার উপরের চাঁদ আসলে একই সমান। ব্যাপারটা খুব সহজেই প্রমাণ করা যায়। পূর্ণিমার সময় হাতকে লম্বা করে প্রসারিত করে তর্জনীকে চাঁদ বরাবর রাখুন। দেখবেন আঙ্গুলের মাথা চাঁদকে পুরোপুরি ঢেকে দিচ্ছে। কাজটা করুন দুইবার। একবার চাঁদ দিগন্তের কাছে থাকতে। আবার মাথার উপর৷ দেখবেন চাঁদের আকার একই আছে। দুইবারই আঙ্গুলের মাথা চাঁদকে ঢেকে দিচ্ছে। আবার ছবি তুলেও ব্যাপারটা বোঝা যায়। ক্যামেরার জুম একই রেখে দুই অবস্থানের চাঁদে ছবি তুললেই ব্যাপারটা দেখা যায়। তাহলে দিগন্তে বড় দেখানোর ব্যাখ্যা কী?


পূর্ণিমা কীভাবে হয়?


আসলে সঠিক ব্যাখ্যা আজো জানি না আমরা। যদিও প্রচলিত কিছু ব্যাখ্যা আছে। তবে কোনোটাই অকাট্য নয়।

আমাদের ব্রেন কি ব্যাপারটা বুঝতে ভুল করে? আরও অনেক ব্যাপারেই ব্রেন এমন ভুল করে। তা ঠিক আছে। আমাদের ব্রেন দূরের ও কাছের জিনিসকে আলাদাভাবে দেখে। দিগন্তের কাছের বস্তু আসলে কত দূরে থাকা উচিত সেটা ব্রেন নিজের মতো করে ভেবে নেয়। সম্ভবত, আমাদের ব্রেন জানে না, দিগন্তের কাছে থাকলে চাঁদের দূরত্ব কমে যায় না।


আমাদের ব্রেনের ভুল করার কিছু জীববৈজ্ঞানিক কারণও আছে। বহু লক্ষ বছর ধরে মানবমস্তিষ্ক ক্রমেই উন্নত হয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষরা দলবদ্ধ হয়ে থাকত ও শিকার করত। এ করতে গিয়ে মাথায় জমা হয়েছে কিছু সহজাত ধারণা। মাঝেমধ্যে আমাদের ব্রেইন খুব বেশি না ভেবেই দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে চলে আসে। এভাবে ব্রেন হঠাৎ আসা বিপদ থেকে আমাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। আমরা গল্প করতে ভালবাসি। ভালবাসী নাটকীয় কাহিনি। সে যুগে এগুলোই ছিল ফলপ্রসূ তথ্য ও খবরের একমাত্র মাধ্যম। চিনি ও ফ্যাট বা চর্বি আমাদের মজা লাগে। এগুলো ছিল খাদ্যস্বল্পতার সময়ে জীবনরক্ষকারী শক্তির উৎস। আমাদের এমন কিছু সহজাত বৈশিষ্ট্য আছে যা হাজার হাজার বছর আগে খুব দরকারী ছিল। কিন্তু এখন আমরা বাস করি ভিন্ন যুগে। ব্রেন কিন্তু আগের ধারণা ও বৈশিষ্ট্যগুলো স্মৃতিতে রেখে দিয়েছে। 


চাঁদ দিগন্তের কাছে থাকলে চাঁদের সামনে পাহাড়, বিল্ডিং বা গাছপালা দেখা যায়। এ থেকে ব্রেন হয়তোবা চাঁদকে আসল আকারের চেয়ে বড় বা কাছে মনে করে। এমন একটি বিভ্রম প্রায় একশ বছর আগে আবিষ্কৃত হয়। নাম পনজো ইল্যুশন। 


ইল্যুশনটি এরকম: রেল লাইন দূরে যেতে যেতে যেন দুই পাশ একে অপরের কাছে চলে এসেছে। (চিত্র ২) এখন রেল লাইনে আমাদের কাছে আর দূরে দুটি লাইন টানা হলো। দূরের লাইনকে বড় মনে হবে। যদিও দুটোই সমান। আলাদা মনে হবার কারণ, ব্রেন মনে করে দূরের দাগটা তো দূরে আছে। তাই বাস্তবে ওটা আসলে বড় হবে। 


চিত্র ২: পনজো ইল্যুশন 

তবে এগুলোর কোনোটাই অকাট্য ব্যাখ্যা নয়। নাসার নভোচারীরা মহাশূন্যেও দিগন্তের চাঁদকে বড় দেখেন। যেখানে চাঁদের সামনে পাহাড় বা গাছপালা নেই। তার মানে, দিগন্তের চাঁদ বড় দেখানোর সঠিক কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। 


দিগন্তের চাঁদ আসলে বড় না হলেও কিছুটা হলুদ বা কমলা আসলেই হয়। এর কারণ দিগন্তের কাছে থাকলে চাঁদের আলো বায়ুমন্ডল দিয়ে বেশি পথ পাড়ি দেয়। দীর্ঘ পথে আসার সময় ছোট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের নীল আলো বিক্ষিপ্ত হয়ে হারিয়ে যায়। বড় দৈর্ঘ্যের লালাভ আলো থেকে যায়। বায়ুদূষণ বা বায়ুতে ধুলিকণার উপস্থিতি লাল রঙকে আরও ঘন করে। একই কারণে সূর্যও অস্ত বা উদয়ের সময় লাল হয়। 


সুপারমুনের গল্প


চাঁদ কীভাবে আলো দেয়?


সূত্র: নাসা, টাইম অ্যান্ড ডেইট ডট কম

লেখাটি ইতোপূর্বে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় প্রকাশিত। 

Category: articles

শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

 আজ ২০ মে। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহাশূন্যে পাঠানো হয় পাইওনিয়ার ভিনাস প্রোগ্রামের মহাকাশযান। ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল থেকে শুক্র গ্রহের কক্ষপথের দিকে ছুটে যায় এ প্রকল্পের দুটি মহাশূন্যযান।


পাওনিয়ার ভিনাস অরবিটার

পাওনিয়ার ভিনাস প্রোগ্রামের যান দুটির একটি হলো পাওনিয়ার ভিনাস অরবিটার। শুনেই বোঝা যাচ্ছে এর কাজ ছিল শুক্রের অরবিট মানে কক্ষপথে। অ্যাটলাস-সেন্টোর রকেটে করে একে পাঠানো হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। ঐ বছরই ডিসেম্বরের ৪ তারিখে যানটি শুক্রের কক্ষপথে স্থান করে নেয়। কক্ষপথটি হয় উপবৃত্তাকার। ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত যানটি শুক্র গ্রহ থেকে উপাত্ত পাঠাতে থাকে। সক্রিয় থাকে ১৪ বছর ৪ মাস।


১৯৮৬ সালে অরবিটারটি হ্যালির ধূমকেতকে পর্যবেক্ষণ করে। যানের বিভিন্ন যন্ত্র শুক্রের বায়ুমণ্ডল ও পৃষ্ঠ নিয়ে অনুসন্ধান চালায়। ১৯৯১ সালে ম্যাজেলান যানের সাথে যৌথভাবে গ্রহটির দক্ষিণ ভাগে অনুসন্ধান চালায়। ১৯৯২ সালের অক্টোবরে এটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। আলাদা হয়ে যায় এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। শুক্রকে কেন্দ্র করে ঘোরার সময় এর দূরত্ব শুক্র থেকে ১৮২ কিলোমিটার থেকে ৬৬ হাজার কিলোমিটারের বেশিও ছিল।

অপভূ বনাম অনুভূ
হ্যালির ধূমকেতু এখন কোথায় ? 

পাইওনিয়ার প্রোগ্রামের অপর অংশে ছিল ভিনাস মাল্টিপ্রোব। এতে আবার ছিল একটি ছোট ও তিনটি ছোট অনুসন্ধানী যান। ডিসেম্বর মাসে এরা গ্রহটির ঘন বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। কাজ করে ৪ মাস ১ দিন। শুক্রের বায়ুমণ্ডলের জন্ম, বিকাশ ও চলমান কর্মকাণ্ড নিয়ে কাজ করে একটি যন্ত্র। বাগুমণ্ডলের উপরিভাগের স্তরগুলো জানার চেষ্টা করে। স্তরগুলো ওপর সৌর বিকিরণ ও আন্তঃগ্রহ স্থানের প্রভাব বের করার চেষ্টা করে।


ভিনাস মাল্টিপ্রোব


আরেকটি যন্ত্র শুক্রের সাথে সৌর বায়ুর মিথষ্ক্রিয়া জানার চেষ্টা করে। এছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে শুক্রের বায়ুমণ্ডলের তাপ বিন্যাস নিয়ে জানার চেষ্টা করে। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রোবের সাথে নাসার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। যন্ত্রাংশগুলো আলাদা হওয়ার আগে ১১০ কিলোমিটার উপরে থেকে কাজ করছিল।
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...