Advertisement

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০২৩

পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। আমরা এমনটাই বলি। বলি বৃহস্পতি, শনিদের ক্ষেত্রেও। তবে আসলে কথাটায় খানিক ঘাপলা আছে। কী সেই ঘাপলা? চলুন, জেনে নেই। 


কাছাকাছির ভরের দুই বস্তুর প্রদক্ষিণ। দুটি বস্তুই + চিহ্নিত জায়গাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে।


পৃথিবী হলো গ্রহ। আর সূর্য নক্ষত্র। গ্রহ ঘোরে নক্ষত্রের চারপাশে। সেজন্যেই তো আমরা বলি পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। আসলে দুজনেই প্রদক্ষিণ করে তাদের যৌথ ভরকেন্দ্রকে। জায়গাটার গালভরা নাম ব্যারিসেন্টার। মজার ব্যাপার হলো, ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের বাইরের গ্রহ খোঁজার ব্যাপারেও দারুণ কাজে লাগে! 


তো, এই ব্যারিকেন্দ্র বা ভরকেন্দ্র আসলে কী? প্রত্যেক বস্তুর ভরের একটা কেন্দ্র আছে। এটা হলো বস্তুটার উপাদান পদার্থের একদম নিখুঁত কেন্দ্র। ভরকেন্দ্র বিন্দুতে বস্তুটাকে সঠিকভাবে ব্যালেন্স করে (ভারসাম্যে) রাখা যায়। অনেকসময় ভরকেন্দ্র থাকে বস্তুর ঠিক কেন্দ্রে। যেমন ধরুন একটা রুলার। এর মাঝ বরাবর এখানে-ওখানে কয়েকবার আঙ্গুল রেখে ধরে রাখার চেষ্টা করুন। পেয়ে যাবেন সে জায়গা, যেখানে আঙ্গুল রাখলে রুলার পড়ে যাবে না। এটাই রুলারের ভরকেন্দ্র। অপর নাম অভিকর্ষ কেন্দ্র। 


অনেকসময় ভরকেন্দ্র আর বস্তুর কেন্দ্র একই জায়গায় হয় না। কেন? ধরুন ২ ও ৪ দুটি সংখ্যা। এদের গড় ৩। যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে বা কেন্দ্রে আছে। কিন্তু ২, ৪, ৪ সংখ্যা তিনটির গড়? ৩.৩৩, যা ২ ও ৪ এর ঠিক মাঝে নয়। সংখ্যার অসম বিন্যাসে পাল্টে গেছে কেন্দ্র। ৪ এর সংখ্যা ২ এর চেয়ে বেশি হওয়ায় গড় ৪ এর দিকে সরে এসেছে। ভরের ক্ষেত্রেও এটাই ঘটে। ভর একেকদিকে একেক রকম হলে সরে যায় কেন্দ্র। যেমন ধরুন হাতুড়ি। এর প্রায় সবটুকু ভর এক প্রান্তে আছে। ফলে ভরকেন্দ্রও ভারী প্রান্তটির কাছাকাছি। বস্তুর সবচেয়ে বেশি ভর যেদিকটায় থাকে, ভরকেন্দ্রও তার কাছাকাছি থাকে। 


এক নজরে সূর্য


সূর্য ও পৃথিবীরও একটি ভরকেন্দ্র বা ব্যারিসেন্টার আছে। তবে সূর্যের ভর পৃথিবীর তুলনায় অনেক অনেক বেশি। সৌরজগতের ৯৯.৮৬ ভাগ। সূর্য তাই হাতুড়ির ভারী মাথার মতো বা তার চেয়ে প্রভাবশালী। এর ফলে সূর্য ও পৃথিবীর ব্যারিসেন্টার সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি। তাও ভেতরেই। বৃহস্পতি পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড়। ভর ৩১৮ গুন। ফলে সূর্য ও বৃহস্পতির ব্যারিকেন্দ্র সূর্যের ভেতরে নয়। কিছুটা বাইরে। ফলে শুধু এই দুটি বস্তুকে আলাদা করে দেখলে ব্যাপারটাকে বাইনারি স্টার বা জোড়াতারার মতো মনে হবে। মানে বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না। দুজনেই দুজনকে কেন্দ্র করে ঘুরছে! 


বৃহস্পতি সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে না!


পুরো সৌরজগতেরও একটি ব্যারিকেন্দ্র আছে। সূর্য, পৃথিবী ও সৌরজগতের গ্রহ ও অন্যসব বস্তু সেই ব্যারিকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। এই ব্যারিকেন্দ্র সৌরজগতের সবগুলো বস্তুর সমন্বিত ভর ধারণ করে আছে৷ তবে এই ভরকেন্দ্র হাতুড়ির মতো নয়। নয় স্থির কোনো জায়গায়। ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ সব বস্তু এখানে গতিশীল। ব্যারিকেন্দ্র হতে পারে সূর্যের কেন্দ্রের খুব কাছে। আবার হতে পারে সৌরপৃষ্ঠেরও বাইরে৷ 


ব্যারিকেন্দ্র কীভাবে গ্রহ খুঁজে পেতে কাজে আসে তা এখন বোঝা যাচ্ছে। নক্ষত্রের কোনো গ্রহ থাকলে এর ব্যারিকেন্দ্র দোল খেতে থাকে এদিক-সেদিক। মাতাল মানুষ যেমন এদিক-সেদিক ঢুলতে থাকে। সৌরজগতের বাইরের গ্রহদেরকে দেখে শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। নক্ষত্রের আলোর ঝলকে এদের মৃদু প্রতিফলিত আলো হারিয়ে যায়। তবে নক্ষত্রের দোল খাওয়া দেখে এদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। আর এভাবে প্রচুর বহির্গ্রহ আবিষ্কার করাও হয়েছে। সংখ্যাটাও কম নয়, সব মিলিয়ে ১০৩৬। আবিষ্কৃত গ্রহের সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় সফল কৌশল এটি। সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরা গ্রহের ট্রানজিট বা অতিক্রমন।

অতিক্রমন দেখে পাওয়া গেছে প্রায় চার হাজার গ্রহ। সে গল্প বিস্তারিত আরেকদিন শোনাব ইনশাআল্লাহ। 


সূত্র: নাসা স্পেসপ্লেস 


* লেখাটি ইতোপূর্বে কিশোরআলো ম্যাগাজিনে প্রকাশিত। 


Category: articles

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

আমরা জানি, শনি গ্রহের বলয় আছে। তা ঠিক আছে। তবে বলয় আছে অন্য গ্রহেরও। সব মিলিয়ে সৌরজগতের চারটি গ্রহের বলয় আছে। এরা হলো চার বিশাল গ্রহ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। বলয় শুধু একটাই নয়। আছে অনেকগুলো৷

শনির বলয় থাকার কথা বহু আগে থেকেই জানা। বলয় সবচেয়ে বিশালও এই গ্রহটির। তবে অন্য গ্রহদের বলয় খুঁজে পাওয়া যেতে থাকে ১৯৭০ এর দশক থেকে। বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের বলয় অনেক হালকা, অন্ধকার ও ছোট।


বৃহস্পতি গ্রহের বলয়। ছবিসূত্র: স্পেস ডট কম 

বৃহস্পতির বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৯ সালে। ভয়েজার ১ মহাকাশযান এর কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ব্যাপারটা জানা যায়। নব্বইয়ের দশকে গ্যালিলিও অরবিটার আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালায়। বলয়ের প্রধান উপাদান ধূলিকণা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও পৃথিবীর শক্তিশালী টেলিস্কোপে এ বলয় দেখা যায়।

শনির বলয় ১৬১০ সালেই গ্যালিলিও দেখতে পান। তবে শক্তিশালী টেলিস্কোপের অভাবে বলয় সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেননি। ১৬৬৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স প্রথম জানান, জিনিসটা আসলে চাকতির মতো বলয়। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে জানা যায়, বলয় আসলে ছোট ছোট অনেক অংশ নিয়ে গঠিত। সব মিলিয়ে বলয় আছে ১২টি।

ইউরেনাসের বলয় একটু নতুন। গ্রহটির আগের চাঁদদের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে বলয়গুলো। ১৯৭৭ সালে আবিষ্কৃত নয়টি বলয়। পরবর্তীতে ভয়েজার ২ মহাকাশযান ২টি বলয় আবিষ্কার করে। আরও ২টি খুঁজে পায় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে সব মিলিয়ে বলয় আছে অন্তত ১৩টি। উইলিয়াম হার্শেল ১৭৮৯ সালে এ বলয় দেখার কথা বলেছিলেন। তবে আসলেই দেখতে পেরেছিলেন সেটা নিয়ে মতভেদ আছে। কারণ বলয়গুলো খুব হালকা।


নেপচুনের বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৯ সালে। ভয়েজার ২ যান কাছ দিয়ে উড়ে যাবার সময়। বলয় পাওয়া গেছে ৬টি। সবগুলোই হালকা। নেপচুনের চারটি চাঁদই বলয়ের ভেতর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।

☛ ভয়েজার মহাকাশযানের দুর্দান্ত অভিযাত্রা (লেখা আসছে...)
☛ সব্বচেয়ে দূরের মহাকাশযান (লেখা আসছে...)

শুধু গ্রহের নয়, বলয় আছে উপগ্রহেরও। ২০০৮ সালের এক রিপোর্টে শনির চাঁদ রিয়ায় বলয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। আর কোনো উপগ্রহের বলয় থাকার কথা জানা যায়নি। বামন গ্রহ প্লুটোর বলয়ের কথা একবার প্রস্তাব করা হলেও নিউ হরাইজনস অভিযানের চিত্র সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৭ সালে দেখা যায়, বামন গ্রহ হাউমেয়াও বলয়ের মালিক৷

বহির্গ্রহেদের অনেকের ক্ষেত্রেই বলয় থাকার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই সে প্রস্তাব বাতিল হয়েছে বিভিন্ন কারণে। তবে একটি বহির্গ্রহ এ রেকর্ড ধরে রেখেছে। নাম এইচআইপি ৭১৩৭৮ এফ।


সূত্র: ক্যালটেক, ইউনিভার্স টুডে

Category: articles

শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮

রাতের আকাশে খালি চোখে পাঁচটি গ্রহ দেখা যায়। বুধ, শুক্র (শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা হিসেবে), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। তবে একই সাথে সবগুলো গ্রহকে সাধারণত দেখা যায় না। চারটি দেখাও বেশ ভাগ্যের ব্যাপার বটে!


এমন ব্যাপারই ঘটছে এ মাসেও। গত মাসটাও প্রায় এমন ছিল। এক সাথে চারটি উজ্জ্বল গ্রহ। শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সন্ধ্যার পরই আকাশের পশ্চিম, ও দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশকে রাঙিয়ে রাখে চারটি গ্রহের মিলনরেখা।

শুক্র
চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। এছাড়া এ মাসে গ্রহটি একটু বেশিই উজ্জ্বল। মাসের শুরুতে সন্ধ্যার দেড় ঘণ্টা পরেও থাকছে দিগন্তের উপরে। তবে মাসের শেষের দিকে থাকবে মাত্র এক ঘণ্টা। মাসের ২১ তারিখে শুক্র সবচেয়ে উজ্জ্বল হবে।

আরও পড়ুন
☛ শুকতারার পরিচয়

আগস্ট মাসের ২৮ তারিখের সন্ধ্যার আকাশ।
সূত্র: Stellarium
বৃহস্পতি
গ্রহরাজও এ মাসে দারুণ উজ্জ্বল। এমনিতেই এটি যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও উজ্জ্বল। শুধু শুক্রর কাছেই এর হার। তবে এ বছর মঙ্গলে কারণে এটি একটি পিছিয়ে পড়ল। পৃথিবীর খুব কাছে এসে পড়ায় এ মাসের ৭ জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর— এই দুই মাস মঙ্গল উজ্জ্বলতায় বৃহস্পতির চেয়ে এগিয়ে ছিল।

আরও পড়ুন
☛ গ্রহ-নক্ষত্রদের কে কত উজ্জ্বল কীভাবে বুঝবেন?
এক নজরে বৃহস্পতি

মাসের শুরুতে সন্ধ্যার প্রায় তিন ঘণ্টা আর মাসের শেষের দিকে প্রায় দুই ঘণ্টা পরে অস্ত যাবে বৃহস্পতি।

মঙ্গল
বর্তমান সময়ে লাল গ্রহটিকে সন্ধ্যার আকাশে খুব সহজে দেখা যায়। এক দিকে লাল বলে এমনিতেই নজরে পড়ে সহজে। তাও আবার এখন উজ্জ্বলতায় বৃহস্পতির সাথে দিচ্ছে টেক্কা। তবে দ্রুতই অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ছে বেচারা। মাসের শুরুতে এটি শনির দশগুণ উজ্জ্বল হলেও মাসের শেষে থাকছে মাত্র ৫ গুণ উজ্জ্বল।

আরও পড়ুন
মঙ্গল গ্রহ লাল কেন?

শনি
শনিকে দেখা যাচ্ছে মঙ্গল ও বৃহস্পতির প্রায় মাঝে। ডুববে প্রায় মধ্য রাতে।

গত মাসের ছবি
শুক্র, চাঁদ ও চাঁদের প্রতিফলনের ছবি। ছবিটা তোলা পর্তুগালে। তুলেছিলেন হেনরিক ফেলিচিয়ানো সিলভা। সূত্র: Earthsky.org। 
আরও পড়ুন
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প

সুত্র:
১। Earthsky.org
২। Stellarium
Category: articles

রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮

মহাকাশ নিয়ে আমাদের আকর্ষনের কোন কমতি নেই সেই প্রাচীনকাল থেকেই। কখনো খালি চোখে, কখনো দুরবিন, কখনও বা টেলিস্কোপ দিয়ে নানান তথ্য উদঘাটনে মহাকাশকে তন্নতন্ন খুঁজে ফিরেছে নামজাদা বিজ্ঞানীসহ অনেক সাধারণ মানুষও। এখন এতো এতো গবেষণার তথ্য উপাত্তের ভীড়ে আমাদের মনে হুট করে প্রশ্ন জাগতে পারে, পৃথিবী তো ৭১ শতাংশ পানিতে নিমজ্জিত, তাহলে কি মহাকাশে কোন পানি নেই? থাকলেই বা তা কতটুকু? কোথায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি পানি? এই প্রশ্নগুলো গুছিয়ে দিতে এসো আজ দেখে নেয়া যাক- মহাকাশে পানির পরিমাণ কতটুকু এবং কোথায় বা সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে?


আমরা সকলেই জানি যে, প্রাচুর্যতায় ভরপুর আমাদের এই পৃথিবী ছাড়া বিশ্বজগতের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব এখন অবধি প্রমাণিত হয়নি। কোথায় প্রাণের বিকাশের পূর্বশর্ত হিসেবে সেখানে পানির উপস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয়। যার স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমাদের এই পৃথিবীতে রয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন,পৃথিবীর চেয়েও বহুগুণ পানি রয়েছে আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ এবং উপগ্রহে! এখন মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উদয় হতে পারে, পানি যেহেতু আছে, প্রাণ থাকবে না কেন? কিম্ভুতকিমাকার চেহারার সায়েন্স ফিকশনের সবুজ ঘড়িওয়ালা এলিয়েন থাকবে না কেন?

পানি মানেই কিন্তু যে স্বচ্ছ শীতল নির্মল পানি হতে হবে এমন নয়। অন্যান্য গ্রহের নানান প্রকার গ্যাস, গলিত পদার্থ, চাক চাক বরফকে আমরা সাধারণভাবে পানি বললেও- তা আসলে বহু যৌগ পদার্থের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হওয়া রাসায়নিক তরল। যেমন, বিজ্ঞানীদের ধারণা ইউরেনাসের হাইড্রোজেন-মিথেন এর পিছনে রয়েছে উত্তপ্ত এক সমুদ্র। এই সমুদ্রে পানির সাথে দ্রবীভূত আছে অ্যামোনিয়া।

মূল কথায় আসা যাক। এখন প্রথমত প্রশ্ন আসতে পারে- সৌরজগতের কোথায় সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে এবং তার পরিমাণ কতটুকু? মহাকাশ সংস্থা নাসার দেয়া পরিসংখ্যান দেখে নেয়ে যাক। নড়েচড়ে বসুন কিন্তু। কারণ বিজ্ঞানের তথ্যগুলো সাদা দৃষ্টিতে নয়, অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হয় ধীরেসুস্থে।

পৃথিবীতে তরল পানির পরিমাণ হলো ১.৩৩৫ জেটালিটার (Zettalitres ZL)। এক জেটালিটার মানে, একশ কোটি ঘন কিলোলিটার! সংখ্যায় লিখলে যা হবে, 1000000000000000000000 ঘন কিলোলিটার! কি, মাথায় চক্কর কাটছে?

আমাদের প্রিয়তম পৃথিবীর আয়তন হলো ১০৮৩.২১ জেটালিটার (পৃথিবী কঠিন পদার্থ হলেও তুলনার সুবিধার্থে আয়তনকে লিটারে প্রকাশ করা হয়েছে)। অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় পৃথিবীতে পানির পরিমাণ হলো মাত্র 0.12 শতাংশ! যা মূলত পৃথিবীর উপরিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সমুদ্রতলের সবচেয়ে গভীরতম খাদ ম্যারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা প্রায় ১১ কিলোমিটার। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠস্থ সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্টের চেয়েও ৩ কিলোমিটারের মতো গভীর! স্বাভাবিকভাবে মাটি খুঁড়তে থাকলে তিন কিলোমিটারের পরে আর পানি পাওয়া যাবে না। তারপর থেকে পৃথিবী আস্ত এক গমগমে আগুনের গোল্লা। যাকে ভিতরে রেখে আমাদের বসবাসের জন্যে পৃথিবীপৃষ্ঠ অনেকটা শীতলপাটির মতো বিছিয়ে আছে।

পৃথিবীর গঠন। প্রায় তিন কিলোমিটার গভীরে গেলেই কিন্তু পানির দেখা পাওয়া যাবে না। 

অন্যদিকে সৌরজগতের অন্যতম অধিবাসী ট্রিটনে তরল পানির আয়তন হলো, 0.03 জেটালিটার। আর তার আয়তন হলো 10.35 জেটালিটার। ট্রিটনের আয়তন অনুযায়ী তার মধ্যে পানি আছে ৬৫ শতাংশ! যেখানে পৃথিবীর আয়তন অনুযায়ী তাতে পানির পরিমাণ মাত্র ০.১২ শতাংশ।

সুতরাং, সহজেই বুঝে নেয়া যায় যে, আয়তনের পাল্লায় ট্রিটনের পানির পরিমাণ বহুগুণ বেশি! এটাই শেষ নয়, উদাহরণ এখনো বাকি আছে যে। বরং একগ্লাস পানি খেয়ে নিন। আর ভাবতে থাকুন, এই একগ্লাস পানি, ভূপৃষ্ঠের ০.১২ শতাংশ পানির কত শত জেটালিটার ক্ষুদ্র অংশ?

তারপর, চমৎকার সুন্দর গ্যাসীয় বলয় থাকা বামন গ্রহ প্লুটোর আয়তন হলো ৭.০১ জেটালিটার। আর প্লুটোতে পানির পরিমাণ হলো ১ জেটালিটার। যা তার আয়তনের ৬২ শতাংশ। বৃহস্পতিগ্রহের অন্যতম উপগ্রহ ইউরোপার আয়তন ১৬.০৬ জেটালিটার। আর তার অভ্যন্তরস্থ পানির পরিমাণ, ২.৬ জেটালিটার। যা আয়তনের ১৮ শতাংশ। শনির উপগ্রহ এনসেলেডাসের ৬৮% ই পানি দিয়ে পরিপূর্ণ।

শনির উপগ্রহ এনসেলেডাস

১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর আবিষ্কার করা বৃহস্পতিগ্রহের ৬৭টি উপগ্রহের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সৌরজগত পরিবারের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ ক্যালিস্টর আয়তন হলো ৫৮.৬৩ জেটালিটার। যার অভ্যন্তরে তরল পানির পরিমাণ, ৫.৩ জেটালিটার। অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি।

১৬৫৫ সালের ২৫ মার্চ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস- এর আবিষ্কার করা শনিগ্রহের বৃহত্তম এবং ঘন বায়ুমণ্ডল বিশিষ্ট একমাত্র উপগ্রহ টাইটানের আয়তন ৭১.৬০ জেটালিটার। আর তার মধ্যে তরল পানির অস্ত্বিত্ব রয়েছে ১৮.৬ জেটালিটার। টাইটানের মোট আয়তনের ৪৪ শতাংশ।

বৃহস্পতির সর্ববৃহৎ উপগ্রহ গ্যানিমিড সৌরজগতেরও সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। আকারে যা বুধগ্রহের চেয়েও বড়। গ্যানিমিড ৬ লাখ ২১ হাজার মাইল দূর দিয়ে বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করে। আয়তন হলো, ৭৬.২৯ জেটালিটার। আর তরল পানির আয়তন ৩৫.৪ জেটালিটার। যার প্রেক্ষিতে আয়তনের তুলনায় পানি হলো, ৬৯ শতাংশ।

বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে পানির পরিসংখ্যান।
বড় করে দেখতে এখানে ক্লিক করুন।  

সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে বৃহত্তম উপগ্রহ গ্যানিমিডে। যাতে তরল পানির উপস্থিতি রয়েছে ৩৫.৪ জেটালিটার। যা তার আয়তনের ৬৯ শতাংশ। খেয়াল করেছেন কি পানির উপস্থিতিতে শীর্ষের দিকে থাকা ইউরোপা, ক্যালিস্টো, গ্যানিমিডের অবস্থান পৃথিবীর তুলনায় দশগুণ বিশাল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিতে। এখন তাহলে কি আমরা বলতে পারি না গ্রহের অন্তর্ভূক্ত পরিবার হিসেবে বৃহস্পতিগ্রহে সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে। বোধহয় পারি!

গ্যানিমিডসহ বৃহস্পতির প্রধান ৪টি উপগ্রহ।
Category: articles

শনিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৮

সৌরজগতে সূর্য থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুন। ভরের দিক দিয়ে অবস্থান তিন-এ। আকার বড় হলেও দূরত্ব বেশি হবার কারণেই একে খুঁজে পেতে দেরি হয়েছিল। খালি চোখে দেখা যায় না বললেই চলে। সেজন্যেই এটিই সবার শেষে আবিষ্কৃত গ্রহ। ১৮৪৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর একে খুঁজে পাওয়া যায়। আবিষ্কার নিয়ে ইংরেজ ও ফরাসিদের মধ্যে ঘটে যায় কিছু বিতর্ক। সে আরেক কাহিনি।

আরও পড়ুনঃ 
☛ নেপচুন আবিষ্কারের গল্প 

যাই হোক, গ্রহ নক্ষত্ররা কত বড়- তার হিসাব হয় অন্তত দুইভাবে। এক, এরা আয়তনে কত বড়। ব্যাস বা ব্যাসার্ধ বলা আর আয়তন বলার মধ্যে আসলে কোনো পার্থক্য নেই। যার ব্যাস বা ব্যাসার্ধ বেশি হবে, আয়তন তো তারই বেশি হবে। আরেকটি তুলনীয় বিষয় হলো কার ভর কতটা বেশি।

ব্যাসের দিক দিয়ে নেপচুনের অবস্থান গ্রহদের মধ্যে চার নম্বরে। অর্থ্যাৎ, সৌর জগতের চারটি গ্যাস জায়ান্টের মধ্যে এটি সবচেয়ে ছোট। অপর তিনটি গ্যাস জায়ান্ট হলো বৃহস্পতি, শনি ও ইউরেনাস। তবে ইউরেনাস সামান্যই বড়। গ্যাস দানবদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলেও অন্য চার গ্রহের তুলনায় একে দানব বলাই ভাল। আয়তন পৃথিবীর প্রায় ৫৮ গুণ। তার মানে, নেপচুনের ভেতরটা ফাঁপা করা হলে এর ভেতরে ৫৮টা পৃথিবী রেখে দেওয়া যাবে।

নেপচুন ও পৃথিবীর তুলনামূলক আকার 

গড় ব্যাসার্ধ হলো ১৫, ২৯৯ মাইল (২৪, ৬২২ কিমি.)। পৃথিবীর প্রায় চার গুণ। মানে চারটি পৃথিবীকে পাশাপাশি রাখলে নেপচুনের এক পাশ থেকে অপর পাশের প্রায় সমান হবে।

অন্যান্য বস্তুর মতোই আবর্তনের কারণে বিষুব অঞ্চলে এটি কিছুটা স্ফীত হয়ে আছে। এ আকৃতিকে বলা হয় অবলেট স্ফেরয়েড বা চাপা উপগোলক।

বিভিন্ন গ্রহের তুলনামূলক সাইজ
 বিষুব রেখা বরাবর পুরোটা ঘুরে আসতে হলে পাড়ি দিতে হবে ৯৬ হাজার ১২৯ মাইল পথ। তবে পায়ে হেঁটে কাজটি করা সম্ভব নয়। অন্য গ্যাস দানবদের মতোই এর কোনো কঠিন পৃষ্ঠদেশ নেই। ঢাকা বরফ দিয়ে।

আকারে পিছিয়ে থাকলে নেপচুন ইউরেনাসকে ভরের দিক দিয়ে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ভরের দিক থেকে তাই নেপচুনের অবস্থান তিন নম্বরে। পৃথিবীর ১৭ গুণেরও বেশি ভর এর।  ওপরে আছে শুধু বৃহস্পতিশনি

পৃথিবীর তুলনায় বিভিন্ন গ্রহের ভর 

ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টিমিটারে ১.৬৩৬ গ্রাম। ইউরেনাসের মতোই এতেও শনি ও বৃহস্পতির চেয়ে বেশি পরিমাণ বরফ আছে। এ কারণেই এ দুটো গ্রহকে আইসি জায়ান্ট বা বরফ দানবও বলা হয়।

আরও পড়ুন
☛ কোন গ্রহের ভর কত
☛ অদ্ভুদ এক গ্রহ

সূত্রঃ 
১। স্পেস ডট কমঃ হাউ বিগ ইজ নেপটুন
২। ইউনিভার্স টুডেঃ সাইজ অব নেপটুন
Category: articles

বুধবার, ৮ মার্চ, ২০১৭

পৃথিবীর মহাকর্ষের কারণে আমরা এর বুক আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারছি। কিন্তু পৃথিবী ছেড়ে মহাশূন্যে যাবার পথে এই মহাকর্ষই আবার বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

মহাকর্ষের আকর্ষণ এড়িয়ে পৃথিবীকে অব্যাহতভাবে  প্রদক্ষিণ করার জন্যে কৃত্রিম উপগ্রহগুলোর তীব্র বেগের প্রয়োজন হয়। যেমন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন ঘণ্টায় ১৭,৫০০ মাইল (২৮,২০০ কিমি.) বেগে ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে। কিন্তু পৃথিবী থেকে বাইরে যেতে হলে আরও বেশি বেগ লাগবে। সেই বেগের নাম মুক্তি বেগ (Escape velocity)।

আরও পড়ুনঃ
মুক্তি বেগের পরিচয়

এ বেগ অর্জনের জন্যে বিপুল জ্বালানি প্রয়োজন। এ কারণেই অ্যাপোলোর মতো আগের রকেটগুলো উৎক্ষেপেণে ব্যবহৃত স্যাটার্ন ভি রকেট খুব ভারী হতো। চাঁদে পৌঁছানোর মতো যথেষ্ট জ্বালানি দিতে হত এতে। ইলোন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সের আধুনিক রকেট সে তুলনায় ছোট। কিন্তু এদেরকে যেতে হবে আরও অনেক দূর পথ। সুদূর মঙ্গল।

মাস্ক খুশি হতে পারেন যে তাঁকে অন্তত বৃহস্পতি গ্রিহ থেকে রকেট নিক্ষেপ করতে হচ্ছে না। সৌরজগতের প্রতিটি গ্রহে মুক্তি বেগের মান আলাদা। তবে বৃহস্পতির ক্ষেত্রে সেটা তুলনামূলক অনেক বেশি। রকেট নিক্ষেপ করতে হলে মুক্তি বেগ লাগবে ঘণ্টায় ১ লক্ষ ৩৫ হাজার মাইল (২ লক্ষ ১৭ হাজার কিমি.)। কারণ, গ্রহটির একারই ভর অন্য সব গ্রহের মিলিত ভরের দ্বিগুণ।

নিচের দারূণ অ্যানিমেশনটি থেকে বিভিন্ন গ্রহের মুক্তি বেগের ধারণা পাওয়া যাবে। 

যথাক্রমে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহ থেকে রকেট নিক্ষেপে জন্যে প্রয়োজনীয় বেগ। 

খেয়াল করলে দেখবেন, বৃহস্পতির মুক্তিবেগ অন্য গ্রহদের চেয়ে অনেক বেশি। আগেই বলেছি, কেন এটা হচ্ছে। এর ভর বেশি হবার কারণে। 
Category: articles

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৭

পৃথিবীর বুক থেকে থেকে ওপরের দিকে লাফ দিয়ে আমরা গড়ে দেড় ফুটের কিছু বেশি উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে পারি। বাতাসে ভেসে থাকতে পারি প্রায় এক সেকেন্ড। কিন্তু সৌরজগতের অন্য গ্রহ বা উপগ্রহে গেলে কেমন লাফাতে পারব আমরা?


এ হিসাব মুহূর্তের মধ্যে করে ফেলতে স্টুয়ার্ট লোয়ে ও ক্রসি নর্থ নামের দুজন জ্যোতির্বিদ দারুণ একটি অনলাইন অ্যাপ বানিয়েছেন। এর নাম দিয়েছেন হাই জাম্প। এখান থেকে বের করা যাবে, এক লাফে কত উচ্চতায় ওঠা যাবে, আর কতক্ষণই বা ভেসে থাকা যাবে। চলুন ঘুরে আসি কিছুক্ষণ।

প্রথমেই পৃথিবী। আহেই বলেছি, সোজা ওপরের দিকে লাফ দিয়ে আমরা গড়ে দেড় ফুট উঠতে পারি। আমি অবশ্য দুই ফুটের কাছাকাছি পারি, চিকন হবার সুবাদে।

পৃথিবীর এক লাফ 
চাঁদে যাওয়া যাক। পৃথিবীর বাইরে একমাত্র চাঁদেই এ পর্যন্ত মানুষ লাফানোর সুযোগ পেয়েছে। চাঁদের মহাকর্ষ পৃথিবীর মাত্র প্রায় সতের শতাংশ বা ছয় ভাগের এক ভাগ। ফলে এক লাফে আপনি আরও বেশি উঠতে পারবেন। দশ ফুট! হ্যাঁ, সত্যিই নিজেকে কিছুটা অতিমানব মনে হবে। আর শুন্যে ভেসে থাকতে পারবেন চার সেকেন্ড। বাহ!

মঙ্গলে যাই চলুন। চাঁদের চেয়ে বড় হলেও পৃথিবীর চেয়ে কিন্তু ছোট। মহাকর্ষ পৃথিবীর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। উঠতে পারবেন তিন ফুট, আর ভেসে থাকবেন দুই সেকেন্ড। খুব বেশি না, তাই না? চলুন তাহলে একটু শিহরিত হই।

চলে আসুন বামন গ্রহ প্লুটোয়। এর পৃষ্ঠের অভিকর্ষের মান পৃথিবীর এক শ ভাগের ছয় ভাগ। এক লাফে এক্কেবারে ২৫ ফুট। শুন্যে থাকবেন ঝাড়া ৯ থেকে ১০ সেকেন্ড! চাঁদের চেয়েও বেশি। মনে রাখতে হবে, প্লুটো কিন্তু চাঁদের চেয়েও ছোট। এটাও এর গ্রহ থেকে বামন গ্রহ হয়ে যাবার একটা কারণ।

ভাবছেন হয়ত, বৃহস্পতি বা শনি থেকে লাফালে কেমন হয়? আফসোস! সেটা পারবেনই না। এদের কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই, যেখান থেকে আপনি লাফ দেবেন। আর দিতে পারলেও পৃথিবীর চেয়ে অনেক কম উঠতে পারতেন। তার চেয়ে চলুন, সত্যি সত্যি সুপারম্যান হয়ে যাই।

আসুন শনির উপগ্রহ এনসেলাডাস-এ। এক লাফে শুন্যে ভেসে থাকবেন ঝাড়া এক মিনিট। পৌঁছবেন ১৪০ ফুট (প্রায় ৪৩ মিটার) ওপরে। বাহ!

এনসেলাডাস উপগ্রহে জাম্প 

একটি ধূমকেতু সফর করে এলে কেমন হয়। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। বেছে নিলাম ধূমকেতু ৬৭পি। এর অভিকর্ষ এতই তুচ্ছ যে, নাসার পাঠানো ফিলি ল্যান্ডার এর বুক আঁকড়ে থাকার জন্যে হারপুনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এখান থেকে লাফ দিলে আপনি আর এর বুকে ফিরেই আসবেন না। ছিটকে চলে যাবেন মহাশূন্যে! তার মানে নিছক একটি লাফের বেগ এর বুকের মুক্তিবেগের চেয়েও বেশি।

আরও পড়ুনঃ 
মুক্তি বেগ কাকে বলে? 

আরও জানতে চাইলে নিজেই ঘুরে আসুন এই লিঙ্ক থেকে

সূত্রঃ বিজনেস ইনসাইডার, কসমস বুক 
Category: articles

সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬

শনি সৌরজগতের ৬ষ্ঠ গ্রহ। এটিই পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের গ্রহ যেটি খালি চোখে দেখা যায়। তবে শনি গ্রহ সবচেয়ে বিখ্যাত এর আকর্ষণীয় বলয়ের জন্য। এই বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৬১০ সালে, গ্যালিলিওর হাত ধরে। বৃহস্পতির মতোই শনিও একটি গ্যাস জায়ান্ট। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, মিথেন প্রভৃতি গ্যাস এর প্রধান উপাদান।
বলয়ধারী শনি গ্রহ

এক নজরেঃ
গড় ব্যাসার্ধঃ ৫৮, ২৩২কিমি.
ভরঃ পৃথিবীর ৯৫ গুণ।
উপগ্রহের সংখ্যাঃ ৬২
উল্লেখযোগ্য উপগ্রহঃ টাইটান, এনসেলাডাস, রিয়া ইত্যাদি
বলয়ের সংখ্যাঃ ৩০ এর বেশি (৭টি গ্রুপ নিয়ে গঠিত)
কক্ষপথের দূরত্বঃ ১,৪২৬, ৬৬৬,৪২২ কিমি. (৯.৫৪ এইউ)
পর্যায়কালঃ ১০, ৭৫৬ দিন (২৯.৫ বছর)
কার্যকর তাপমাত্রাঃ মাইনাস ১৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
অপসূরঃ ১০.১ এইউ
অনুসূরঃ ৯.০২৪ এইউ
আপাত উজ্জ্বলতাঃ (+১.৪৭) থেকে (-.২৪)
প্রথম দর্শনঃ খৃষ্টপূর্ব ৮ম শতক

পৃথিবীর তুলনায় শনি গ্রহের আকার
শনি গ্রহের তথ্য জানালাঃ
১। শনিকে খালি চোখে দেখা যায়। এটি সৌরজগতের পঞ্চম উজ্জ্বল বস্তু (পৃথিবীর আকাশে)। এর আপাত উজ্জ্বলতা (-০.২৪) থেকে (+১.৪৭) এর মধ্যে উঠা-নামা করে। রাতের আকাশে একটানা বহু দিন ধরেই একে দেখা যায়। এটি যখন সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের খুব কাছাকাছি সময়ে উদয় বা অস্ত যায়, শুধু তখনই দেখা যায় না।
আরো পড়ুনঃ 
গ্রহদের খোঁজখবর
আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে? 

২। অতীতকালেও শনির সাথে মানুষের পরিচয় ছিল। ব্যাবিলনীয় এবং দূর প্রাচ্যের মানুষও একে চিনত। রোমান দেবতা স্যাটারনাস থেকে এর (ইংরেজি Saturn) নাম এসেছে। গ্রিকরা একে চিনত ক্রোনাস নামে।

৩। শনি সবচেয়ে চ্যাপ্টা গ্রহ। বিষুব অঞ্চলের তুলনায় এর মেরু অঞ্চলের ব্যাসার্ধ ১০ ভাগের এক ভাগ কম। এর অর্থ হল, মের অঞ্চলের দিকে গ্রহটি বেশ চাপা। এর কারণ হচ্ছে, এর ঘনত্ব খুব কম, কিন্তু আবর্তন বেগ খুব তীব্র। প্রতি দশ ঘণ্টা ৩৪ মিনিটে এটি একবার এর অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরে আসে। ফলে সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে দিনের দৈর্ঘ্যের স্বল্পতার দিক দিয়ে এর অবস্থান দুই-এ।
আরো পড়ুনঃ 
☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য

৪। শনি সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে ২৯ বছরের বেশি সময় লাগে। ব্যাকগ্রাউন্ড স্টারদের তুলনায় এর গতি খুব ধীর হবার কারণে একে প্রাচীন আসিরীয়রা Lubadsagush নামে ডাকত। এর অর্থ হচ্ছে পুরাতনদের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন।

৫। শনির বায়ুমণ্ডল অনেকগুলো মেঘপুঞ্জে বিভক্ত। সবচেয়ে উপরের স্তর মূলত অ্যামোনিয়ার বরফ দিয়ে গঠিত। এর নিচে রয়েছে তুষার। এর নিচে হাইড্রোজেন ও সালফারের বরফের উপস্থিতি লক্ষণীয়।


৬। শনির মূল উপাদান হাইড্রোজেন। ভেতরের দিকে হাইড্রোজেনের ঘনত্ব ক্রমশ বেশি। আরো ভেতরের দিকে হাইড্রোজেন হয়ে পড়ে ধাতব। স্বাভাবিকভাবেই কেন্দ্রমণ্ডল খুব উষ্ণ।

৭। সব গ্রহের মধ্যে শনির বলয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরা মূলত বরফ ও কার্বোনেসাস ধূলি দিয়ে তৈরি। গ্রহটিতে বলয়গুলো ১২০, ৭২০ কিমি. পর্যন্ত বিস্তৃত। কিন্তু সে তুলনায় এরা খুব সরু, পুরুত্ব মাত্র ২০ মিটারের মতো।

৮। ছোট-বড়ো মিলিয়ে শনির উপগ্রহের সংখ্যা দেড়শোর বেশি। উপগ্রহের সংখ্যা ৬২। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপগ্রহের সংখ্যা আসলে কয়েকশো। এদের সবাই হিমায়িত অবস্থায় রয়েছে। টাইটান ও রিয়া এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়ো। এনসেলাডাসের হিমায়িত পৃষ্ঠের নিচে সাগর আছে বলে মনে হয়।

৯। শনির উপগ্রহ টাইটানের বায়ুমণ্ডল নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ (অনেকটা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মতোই)। উপগ্রহটি মূলত বরফ ও পাথর দিয়ে গঠিত। এর পৃষ্ঠে রয়েছে তরল মিথেনের লেক। পৃথিবীর সাথে এর উল্লেখযোগ্য মিল থাকার কারণে এতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করা হয়।
আরো পড়ুনঃ 
শনির উপগ্রহে মিথেন সাগর

১০। এ পর্যন্ত ৪টি মহাকাশযান শনি গ্রহ সফর করেছে। এরা হল পাইওনিয়ার ১১, ভয়েজার ১ ও ২ এবং ক্যাসিনি- হাইগেনস মিশন। এরা সবাই শনিকে নিয়ে গবেষণা করেছে। এর মধ্যে ক্যাসিনি এখনো শনির কক্ষপথে আছে। এটি এখনো গ্রহটি ও এর বলয় এবং উপগ্রহসমূহ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাঠাচ্ছে।

সূত্রঃ
[১] http://space-facts.com/saturn/
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Saturn
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...