Advertisement

শনিবার, ২০ জুন, ২০১৫

পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। তবে এই দূরত্ব সব সময় একই থাকে না। থাকত যদি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে বৃত্তাকার পথে। কিন্তু সব গ্রহই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে উপবৃত্তাকার পথে। কেপলারের গ্রহের প্রথম সূত্র অনুসারে।



সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের অবস্থানকে বলে অনুসূর। আর সবচেয়ে দূরের অবস্থানের নাম অপসূর। পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে জানুয়ারি মাসে। আর সবচেয়ে দূরে থাকে জুলাই মাসে। মজার ব্যাপার হলো, আমরা অনেকেই মনে করি, শীত কালে সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে। অথচ জানুয়ারির তীব্র শীতের সময়ই কিন্তু আমরা সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকি। এই ধারণা ভুল হওয়ার আরও সহজ প্রমাণ হলো, ঐ জানুয়ারি মাসেই কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে তীব্র গরম। আসল কথা হলো শীত বা গরম পৃথিবী-সূর্যের দূরত্বের কারণে হয় না। হয় পৃথিবীর কক্ষ তল হেলে থাকার কারণে।

আরও পড়ুন
☛ অনুসূর বনাম অপসূর

অনুসূর অবস্থানে পৃথিবী সূর্য থেকে ১৪.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকে। আর জুলাই মাসে অপসূর অবস্থানে এলে এই দূরত্ব বেড়ে হয় ১৫.২ কোটি কিলোমিটার।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব 

জ্যোতির্বিদ্যায় পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের দূরত্বের হিসাব করতে কাজে লাগে এ দূরত্বটি। এই দূরত্বের গড়কে বলা হয়
এক অ্যাস্ট্রোনমিকেল ইউনিট (এইউ) । মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্বের পরিমাপে আলোকবর্ষের মতো এই এককটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই দূরত্ব বলা ও বোঝা দুই ক্ষেত্রেই এইউ একক্টি সুবিধাজনক।

আরও পড়ুন
☛ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

প্লুটো আমাদের থেকে ৫৮৭ কোটি কিলোমিটার দূরে আছে। এটাকে এভাবে বললে আরও সহজ হয়: ৩৯ এইউ। একইভাবে সূর্য থেকে বৃহস্পতি গ্রহের দূরত্ব হয় ৫ দশমিক ২। নেপচুনের দূরত্ব প্রায় ৩০ এইউ। ধূমকেতুর উৎসস্থল বলে অনুমিত সৌরজগতের একেবারে প্রান্তের দিকে অবস্থিত উর্ট মেঘের দূরত্ব সূর্য থেকে ১ লক্ষ এইউ।

অন্য দিকে, সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টৌরির (Proxima centauri) দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় আড়াই লাখ এইউ। কিন্তু এই দূরত্বটি এতই বেশি যে একে আলোকবর্ষ এককে মাপাই বেশি সুবিধাজনক। সেই হিসেবে এর দূরত্ব ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ।

কে মেপেছেন এই দূরত্ব?
খৃষ্টের জন্মের ২৫০ বছর আগেই অ্যারিসটারকাস দূরত্বটি মাপেন। সাম্প্রতিক সময় ১৬৫৩ সালে ক্রিষ্টিয়ান হাইগেনও মাপেন এই দূরত্ব। ১৬৭২ সালে আবার মাপেন গিওভানি ক্যাসিনি। তার পদ্ধতি ছিল লম্বন পদ্ধতি।

সূত্র
১। ইউনিভার্স টুডে: হাউ ফার ইজ আর্থ ফ্রম দ্য সান
২। উইকিপিডিয়া: পেরিহেলিয়ন ও অ্যাপহেলিয়ন
Category: articles

মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫

 রাতের আকাশে যখন পৃথিবী থেকে দেখতে চাঁদের পুরোটাকে আলোকিত মনে হয় তাকেই আমরা বলি পূর্ণিমা, পূর্ণ চন্দ্র বা ফুল মুন (full moon)। কিন্তু কিভাবে ঘটে পূর্ণিমা?

পৃথিবীর আবর্তনের জন্যে চন্দ্র, সূর্য ও রাতের নক্ষত্রদের পূর্ব থেকে পশ্চিমে যেতে দেখা যায়। চাঁদের ক্ষেত্রে আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে এটি আবার পৃথিবীকে কেন্দ্র করেও ঘুরছে। ফলে অন্য গ্রহ নক্ষত্রদের চেয়ে প্রতি দিনের রাতের এর অবস্থান পরিবর্তন হয় তুলনামূলক অনেক বেশি। 
পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে করতে একটা সময় চন্দ্র, পৃথিবী ও সূর্যের সাথে একই রেখায় আসে। আর এই কল্পিত রেখার মাঝখানে যখন পৃথিবী থাকে, তখনই পশ্চিম দিক থেকে আসা সূর্যের আলো সোজাভাবে পূর্ব দিকে থাকা চাঁদের উপর গিয়ে পড়ে। ফলে, পৃথিবী থেকে দেখতে চাঁদের পুরোভাগ আলোকিত হয়ে থালার মতো দেখা যায়।
এ সময় চাঁদ দিগন্তের খানিকটা মাত্র উপরে থাকে। সূর্য যখন দিগন্ত থেকে আরো বেশি নিচে নেমে যায়, তখন পূর্ব দিকে চাঁদও দিগন্তের আরো  উপরে উঠে আসে। এভাবে সারা রাত চলে ভোরের যখন সূর্যোদয় ঘটে চাঁদ তখন পশ্চিম দিগন্ত দিয়ে অস্ত যায়।

সহজ ভাষায় এটাই হলো পূর্ণিমা হবার কারণ। কিন্তু প্রশ্ন করা যায়, সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের সময়ওতো চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই রেখায় থাকে। তাহলে প্রতিটা পূর্ণিমাতেই কেন চন্দ্রগ্রহণ হয় না?
এটা ঠিক যে, চন্দ্রগ্রহণ একমাত্র পূর্ণিমার সময়েই ঘটতে পারে। আবার সূর্যগ্রহণও হতে পারে যখন এই তিন বস্তু একই রেখায় থাকে। তখন অবশ্য তিনজনের মধ্যে মাঝখানে থাকতে হবে চাঁদকে।

প্রতি  পূর্ণিমাতেই চন্দ্রগ্রহণ না হবার কারণ হচ্ছে, পৃথিবী থেকে দেখতে দিগন্তের উপরে-নিচে হিসেব করলে আমরা চাঁদ ও সূর্যকে পৃথিবীর সাথে একই রেখায় দেখবো। কিন্তু চাঁদ ঐ সময়টিতে তথা পূর্ণিমার সময় একটু উত্তরে বা দক্ষিণে থাকতে পারে। এটাই ঘটে অধিকাংশ সময়।
কিন্তু যখনই উত্তর-দক্ষিণে না থেকে বরাবরে অবস্থান করে তখনই পূর্ণিমা পরিণত হয় চন্দ্রগ্রহণে।

অনেক সময় একই মাসে দুটি পূর্ণিমা ঘটে যেতে পারে। বিস্তারিত জানতে দেখুন এই পোস্ট।
Category: articles

বুধবার, ৩ জুন, ২০১৫

উল্লেখ্য, সৌরজগতের আটটি গ্রহের মাত্র ৫ টি খালি চোখেই ভালো দেখা যায়। বাকি ২টি দেখা যায় না। আরেকটি? আরে, আরেকটিতো পৃথিবীই। এর মধ্যে শুক্র, বৃহস্পতি ও শনিকে বেশ সহজেই দেখা যায়।
আচ্ছা, একে একেই দেখি।
শুক্রঃ শুক্রকে প্রতি সন্ধ্যায়ই চোখে পড়ে পশ্চিমাকাশে। তবে বছরের এ সময় সন্ধ্যার পর প্রায় ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত দিগন্তের উপরে থাকে। সূর্য ও চন্দ্রের পরেই কিন্তু আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু শুক্র। এটা অবশ্য বলা হচ্ছে পৃথিবীর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রকৃত উজ্জ্বলতা অবশ্যই ভিন্ন।
জুনের ৬ তারিখে এই গ্রহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটবে। ঐ দিন পশ্চিমাকাশে পৃথিবী, শুক্র ও সূর্যের অন্তর্গত কোণ তথা দ্রাঘণ  (elongation) হবে সর্বোচ্চ। পুরো জুন জুড়েই সন্ধ্যার পরে সন্ধ্যাতারাটি লাইটহাউসের মতো সূর্যের আলো প্রতিফলন করতে থাকবে। জুনের ১৮ ও ১৯ তারিখের আগে ও পরে কয়েকদিন রমজানের নতুন চাঁদকে দেখা যাবে শুক্র গ্রহের আশেপাশেই।

বৃহস্পতিঃ
সন্ধ্যার পর ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত রাতের আকাশের উজ্জ্বলতায় শুক্রের একক রাজত্বের পতনের পর উত্তরাধিকার লাভ করবে বৃহস্পতি। গ্রহরাজ এতখানিই উজ্জ্বল যে একে ভুলক্রমে শুক্র ছাড়া অন্য কিছু মনে করে ফেলার কোন কারণই নেই।
বছরের শুরুতে বৃহস্পতি আকাশে শুক্রের বিপরীত প্রান্তে থাকলেও জুনে এসে এটি সন্ধ্যার পরে অবস্থান করে শুক্রের মতোই পশ্চিমাকাশে, শুক্রের একটু উপরে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, জুনের শেষ দিক থেকে শুরু করে ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এই দুই উজ্জ্বল গ্রহ থাকবে নিকটতম দূরত্বে।
পৃথিবীর আকাশে বৃহস্পতির উজ্জ্বলতা যে কোনো নক্ষত্রের চেয়েও বেশি। তবে রাতের আকাশের উজ্জ্বলতার রাজত্বের সময়কাল কমে গেছে গ্রহটির। কিছু দিন আগে রাতের অনেকাংশ ধরে সূর্যালোক প্রতিফলিত করলেও এই মাসের শুরুর দিকে এটি দিগন্তের উপরে থাকবে শুক্র ডুবে যাবার পর ১ থেকে ২ ঘণ্টা। জুনের শেষ দিকে দুই গ্রহ এতই কাছাকাছি থাকবে যে অস্ত যাবে প্রায় একই সময়ে।
মধ্যে-উত্তর গোলার্ধে মাসের প্রথম দিকে গ্রহটি আকাশে থাকবে সাড়ে ৩ ঘণ্টা আর মাসের শেষের দিকে থাকবে আড়াই ঘণ্টা।
খালি চোখে বৃহস্পতির কোন উপগ্রহ চোখে পড়বে না। তবে দুরবিনের সহায়তায় চারটি উপগ্রহ- আয়ো, ইউরোপা, গ্যানিমিড ও ক্যালিস্টোকে চোখে পড়বে। এই চারটি গ্রহকে আবিষ্কারের বদৌলতে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর নাম অনুসারে গ্যালিলিয়ান উপগ্রহ বলা হয়।
জুনের বিশ তারিখে চাঁদ বৃহস্পতিকে অতিক্রম করে আরো পূবে চলে আসবে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটি ঠিক তার পরদিনই পেরিয়ে আসবে সিংহরাশির (Leo Constellation) উজ্জ্বলতম নক্ষত্র রেগুলাসকে।
শনিঃ
রাত নামার পরই সোনালী গ্রহ শনির রাজত্ব শুরু হবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে। থাকে প্রায় ভোর পর্যন্ত। সারা রাত পশ্চিমে ঘোড়া দৌড়িয়ে ভোরের দিকে হাজির হয় দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে। জুনের ১ ও ২ তারিখে গ্রহটি পূর্ণ চাঁদ ও জ্যেষ্ঠা (Antares) তারকার খুবই কাছাকাছি ছিল।
শনির কোন উপগ্রহই বাইনুকুলার দিয়েও চোখে পড়ে না, প্রয়োজন হবে ছোট্ট একখান টেলিস্কোপের। কারণ! শনিতো বৃহস্পতির চেয়ে দূরে থাকে।

মঙ্গলঃ
অনেক দিন ধরেই মঙ্গল গ্রহটি নিজেকে গোধূলির আলোয় লুকিয়ে রাখছে। ফলে, প্রতি মাসে দুই এক দিন ছাড়া একে দেখা সম্ভব ছিল না। জুনের ১৪ তারিখে এটি হাজির হবে ভোরের আকাশে। এ মাসেও লাল গ্রহটি দৃষ্টির আড়ালে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বুধঃ
সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহটি উত্তর-গোলার্ধ থেকে ভালো চোখে পড়বে না। তবে, দক্ষিণ গোলার্ধের লোকেরা জুনের ১০ তারিখের দিকে একে ভোরের আকাশে দেখবেন। মধ্য-উত্তর গোলার্ধ থেকে গ্রহটিকে জুনের ২২ বা ২৩ তারিখে দেখা যাবে। যাদের বাইনোকুলার আছে, পূবাকশে একটু উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতে পারেন।
জুলাইর ২৩ তারিখ নাগাদ বুধ ভোরের আকাশেই থাকবে। এর পরে এটি হাজির হবে সন্ধ্যার আকাশে।

উল্লেখ্য, রাতের আকাশে যাই দেখি তাদেরকেই আমরা 'তারা' বললেও এই পাঁচখান কিন্তু গ্রহ। এদের নিজস্ব আলো নেই। এরা চাঁদের মতোই সূর্যের আলোকেই আমাদের দিকে ফিরিয়ে দেয়।
 সূত্রঃ
১। earthsky
Category: articles

মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

রাতের আকাশে তারা দেখে পথ নির্ণয় করতে পারার মধ্যে এক ধরণের আনন্দ আছে। এই আনন্দের ভাগীদার হতে চাইলে আপনাকে চিনতে সপ্তর্ষীমণ্ডলী। আপনি হয়তো মনে করছেন, সন্ধ্যাতারা তথা শুক্রগ্রহকেতো চিনিই। ওটা যেহেতু পশ্চিম দিকে থাকে তাই আর কিছু জানার কী দরকার?
কিন্তু ভাই! সন্ধ্যাতারা সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টার পরই আপনাকে হতাশ করে দিয়ে দিগন্তের ওপারে হারিয়ে যাবে। তখন? এমন কাউকে দরকার যে তখনও আকাশে থাকবে। তাহলে, আপনার আশা পূরণ করতে পারে সপ্তর্ষীমণ্ডল। কারণ এর মাধ্যমে আপনি সহজেই খুঁজে পাবেন সব সময় উত্তর দিকে মুখ করে রাখা ধ্রুব তারা।  এটি হচ্ছে একটি তারামণ্ডলী (Constellation)। তারামণ্ডলী হচ্ছে আকাশের একেকটি এলাকা যেখানে অনেকগুলো তারকা মিলে বিভিন্ন প্রাণী ও বস্তুর আকৃতি তৈরি করেছে। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে একেকটি তারামণ্ডলীর বিভিন্ন অবস্থান পৃথিবী থেকে ভিন্ন ভিন্ন দূরত্বে।
যাই হোক, আর্সা ম্যাজর বা সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারকাগুলোর মিলিত চিত্র দেখতে একটি ভালুকের মত। এতে মোট তারকা আছে অন্তত ৭২০টি। এদের মধ্যে গ্রহ আছে ২১টি তারকার। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকার নাম এলিওথ (Alioth) বা এপসাইলন আরসি ম্যাজোরিস। ভয় নেই, আমাদের এতগুলো তারকা কাজে লাগবে না।
কাজে লাগবে সাতটি তারকা। এগুলো বেশ উজ্জ্বল। আকৃতি হচ্ছে পেয়ালার মত। এজন্যেই এদেরকে আমেরিকায় বলা হয় বিগ ডিপার (Big Dipper) বা বড় পেয়ালা। দেখতে আবার অনেকটা লাঙলের মতোও হওয়ায় ইউরোপে একে বলা হয় লাঙল (Plough)। আর, সাতটি তারকা নিয়ে গঠিত হওয়ায় এবং এর মূল তারামণ্ডলীতে এগুলো অপেক্ষাকৃত সহজে দৃশ্যমান ও উজ্জ্বল হবার কারণে বাংলায় মণ্ডলীটির নামই হয়েছে এই সাতটি তারকার নামে-সপ্তর্ষীমণ্ডলী। শুনে মনে হয় এই তারামণ্ডলীতে যেন তারকাই আছে ৭টি। নিচে দেখুন সম্পূর্ণ তারামণ্ডলী।
ভালুকের লেজসহ পেছন দিকে ৭টি তারকার উপর ফোকাস করুন। এরাই হলো বিগ ডিপার।

এই সাতটি তারকা খুঁজে পেলেই আপনি পেয়ে যাবেন ধ্রুবতারাকে। বিগ ডিপার ও এর মাধ্যমে ধ্রুব তারাকে খুঁজে পাবার প্রাথমিক উপায় বলেছিলাম আগের পোস্টে।  কিন্তু সমস্যা দাঁড়ায় এক জায়গায়। ওখানে বিগ ডিপারের ছবি যেমন দেওয়া আছে, এটা সব সময় এরকম থাকে না। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে তারকাগুলো অবস্থান পরিবর্তন করে।
চার ভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন জায়গায়। গ্রীষ্মকাল (Summer) তথা উন, জুলাই ও আগস্ট মাসে এটি থাকে উত্তর-পশ্চিম দিগন্তে। পরের ঋতু তথা শরৎকালের (Autumn বা Fall) তিনটি মাস তথা সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে এটি নেমে আসে উত্তর দিগন্তের নিম্নাংশে। শীতকালের পরের তিন মাসের জন্যে এটি অবস্থান করে উত্তর-পূর্ব দিগন্তে। বসন্তকালের তিন মাস তথা মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে এর অবস্থান উত্তর দিগন্তের উচ্চাংশে। শরৎকালে যেখানে ছিল তার বিপরীতে উপরের দিকে। নিচে বিভিন্ন ঋতুতে এর অবস্থান দেখানো হল।
জুন, জুলাই, আগস্ট (গ্রীষ্মাকালে) সপ্তর্ষীমণ্ডলী 
সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে সপ্তর্ষীমণ্ডলী  
ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সপ্তর্ষীমণ্ডল
মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে 

বলাই বাহুল্য, প্রত্যেক ঋতুর শেষ দিকে এর আকৃতি চিত্রের চেয়ে একটি ভিন্ন হবে। কিন্তু আকৃতি যেমনই থাকুক, এর চামচ বা পেয়ালার একেবারে সাম্নের দুটি তারকাকে যোগ করে বর্ধিত করে ৬গুণ সামনে গেলেই পাওয়া যাবে ধ্রুবতারা। তারামণ্ডলীটির অবস্থান সংক্ষেপে এভাবে দেখানো যায় -
আকাশের তারাদের বর্তমানে আমরা যে আকৃতি দেখি, সময়ের সাথে সাথে বদলে যাবে সেই চিত্র। যেমন দেখুন ১ লাখ বছর আগে বিগ ডিপারের চিত্র কেমন ছিল এবনহ ১ লাখ বছর পরে কেমন হবে।

সূত্রঃ
[১] আর্সা ম্যাজর- উইকিপিডিয়া
[২] আর্থ স্কাই 
Category: articles
প্রথমে দেখি সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারবে কিনা।
না, সূর্য কখোনই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। তারকাদের জীবনের পরিণতি ঘটতে পারে মূলত দুইভাবে। সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারকাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে সরল ও শান্তভাবে। এসব তারকার অন্তর্ভাগের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার পর এরা লোহিত দানব ধাপে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে এই লোহিত দানব নক্ষত্রই (Red Giant Star) তার বহির্ভাগ মহাকাশে নিক্ষেপ করে গ্রহ নীহারিকায় (Planetary Nebula) পরিণত করে। আর অন্তর্ভাগ সংকুচিত হয়ে শ্বেত বামন (White Dwarf) গঠন করে।
অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভারী তারকারা জ্বালানী ফুরিয়ে পরিণত হয় লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকায়। এরাও পরে বহির্ভাগ ছুড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনাকে বলে সুপার নোভা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে থেকে যাওয়া অংশ হয় নিউট্রন তারকা নয়তো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকলে হবে নিউট্রন স্টার। নিউট্রন নক্ষত্রের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে।
আরো বেশি ভর হলে হবে ব্ল্যাক হোল। প্রকৃতপক্ষে, যেসব তারকার ভর পাঁচ সৌর ভরের চেয়ে বেশি হয় তাদের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পরও মূলবস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে, ঐ বস্তু থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা কোন বস্তু দেখি যখন ঐ বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এটা প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইশাম। যেহেতু ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই একে দেখাও যায় না। খেতাবটাও পেল সেজন্যেই। নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থিবিদ জন হুইলার।
প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, আলো তো কোন কণা নয়, তাহলে এটা অভিকর্ষের কাছে ধরা খায় কী করে? অভিকর্ষ তো শুধু ভরের সাথে জড়িত। আলোক কণিকা ফোটনের তো ভরই নেই? ক্যামনে কী?
আসলে অভিকর্ষ ভরের সাথে সম্পৃক্ত- এটা হল নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু অভিকর্ষের আধুনিক মতবাদ তথা আইনস্টাইনীয় মত অনুযায়ী অভিকর্ষ কোন বল নয়। অভিকর্ষ হচ্ছে স্থান কালের বক্রতা। আর, ব্ল্যাক হোল তার চারপাশের স্থান কালকে এত বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে দেয় যে আলোক কণা ঐ বক্রতা থেকে সরলরেখার মতো বেরিয়ে আসতে পারে না।
ফলে, ভর কম হবার কারণে সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারছে না। কিন্তু ধরা যাক, কোন কারণে আমাদের সৌরজগতের সূর্য ব্ল্যাক হোল বনে গেল। সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
পৃথিবীর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে পৃথিবীর প্রাণিদের নিয়ে। রেহাই পাবো না আমরাও। কেন? কারণ, সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায় তাহলে আমরা বঞ্চিত হব এর আলো থেকে। সারা দুনিয়া ঢেকে যাবে অন্ধকার পর্দার আড়ালে।
তাহলে কি বলা যায় সূর্য ব্ল্যাক হোল না হওয়াতে আমরা বেঁচে গেছি? মোটেই না। আরো ৪৫০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। এই সময় সূর্য বড় হয়ে গিয়ে পৃথিবীর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি যে পৃথিবী সূর্যের পেটে চলে যাবে নাকি বাইরেই থাকবে। তবে যদি পেটে নাও যায়, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কোনভাবে অব্যাহত থাকবে না। কারণ সৌরপৃষ্ঠ কাছাকাছি হবার দরুণ যে প্রচণ্ড উত্তাপ উৎপন্ন হবে তা সহ্য করা বনী আদমের জন্যে সম্ভব হবে না। মানুষ আসলেই দুর্বল প্রাণী। মানুষ যদি টিকে যাবার উপাউ বেরও করে ফেলতে পারে বেঁচে থাকার জন্য তাও যথেষ্ট হবে না। কেননা, প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে। অন্য কারণে মানুষ যদি তত দিনে ধ্বংস নাও হয়ে যায়, তাহলে তাকে পানি ছাড়া, অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ ছাড়া এবং দূষিত বায়ুমণ্ডলসহ আরো নানাবিধ বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
অবশ্য আমাদের আপাতত সেই চিন্তা নেই। আমাদের ৪৫০ কোটি বছরের প্রজন্মের ঘাড়ে পড়বে সেই কাজ! 
সূত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়াঃ গ্রহ নীহারিকা 
[২] তারকার জীবনচক্র- বিবিসি 
[৩] কিউরিয়াস অ্যাস্ট্রো 
Category: articles

শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫

এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলেই আমরা অনেক সময় দিক হারিয়ে ফেলি। যে দিককে পশ্চিম মনে হচ্ছিল, একটু পরই দেখা যায় তার উল্টো দিকে কোন মসজিদের মুখ। কিন্তু যদি আশেপাশে যদি মসজিদ না থাকে? নেই কম্পাসও! কম্পাস থাকলেও কম্পাসের উপর চোখ বুঁজে ভরসা করা যায় না। কম্পাস দ্বারা একেবারে নিখুঁত উত্তর জানতে হলে কম্পাসের কাঁটা দেখে আরো কিছু হিসাব নিকাশ করতে হয়।
তাহলে দিক নির্ণয় করবেন কীভাবে? আকাশে তারকা আছে না? প্রাচীন কালের মানুষ দূরের পথ কিংবা সাগর যাত্রায় অনায়াসে দিক নির্ণয় করতেন তারকা দেখে।
সন্ধ্যার পরপরই আকাশে দেখা যায় তারাদের আধিপত্য। এদের সবাই অবশ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় 'তারকা' তথা নক্ষত্র (Star) নয়। রাতের আকাশের প্রধান দুটি উজ্জ্বল তারা- যথাক্রমে শুক্র ও বৃহস্পতি তো আমাদের সৌরজগতেরই গ্রহ। যাই হোক, সন্ধ্যায় উদিত হবার পর, প্রায় সব তারাই পশ্চিম দিকে চলতে থাকে। এরা যদিও মূলত পৃথিবীকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে না, তবু পৃথিবীর আবর্তনের (rotation) কারণে এ রকম মনে হয়।
খেয়াল করুন, বলেছি 'প্রায় সব তারকাই পশ্চিমে যেতে থাকে'। কিন্তু একটি তারকা আছে যে সর্বদা উত্তর মেরুর উপর বসে থাকে, নড়ে চড়ে না। বরং দেখে মনে হয়, আকাশের সব তারকাই যেন ওকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে। এই তারকার নাম ধ্রুবতারা। ইংরেজিতে বলে পোলারিস (Polaris) বা মেরু তারা (Pole Star)। উত্তরে থাকে বলে একে আবার নর্থ স্টার (North Star) ও বলে।

সময় বাঁচাতে চাইলে শর্টকাটে পড়ে নিনঃ
» তারার সন্ধানেঃ ধ্রুবতারা 

এই তারকা যেহেতু ঠিক উত্তর দিকে থাকে, তাই একে বের করে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে! এর দিকে তাকিয়ে থাকা মানে আপনার ডানে পূর্ব, বাঁয়ে পশ্চিম আর পেছনে দক্ষিণ। যদি মনে হয়ে থাকে, ধ্রুবতারা চিনে নেওয়া অনেক ঝামেলার কাজ, তবে ভুল ধারণায় আছেন। চলুন, দেখে নেই।
ধাপ-১: সপ্তর্ষিমণ্ডলী খুঁজে বের করুন 
সপ্তর্ষীমণ্ডলী (Ursa Major) মূলত একটি তারামণ্ডলী (Constellation)। এর মধ্যে প্রধান সাতটি তারকা একটি চামচের মত আকৃতি তৈরি করেছে। এই সাতটি তারকাকে উত্তর আমেরিকায় বলে বিগ ডিপার (The Big Dipper) আর ইউরোপে বলে লাঙল (Plough)। এই সাতটি তারকা খুঁজে পাওয়া মোটামুটি বেশ সহজ। সাতটি তারকার ৩টি মিলে চামচের বাঁট আর বাকি চারটি তৈরি করেছে মাথা। ছবিতে দেখুন।। প্রথম ছবিতে খুঁজে নেবার চেষ্টা করে ২য় ছবি থেকে মিলিয়ে নিন।

আরো পড়ুনঃ
» সপ্তর্ষীমণ্ডলী খুজে পাবার উপায়



ধাপ-২: ধ্রুবতারার দিকে একটি রেখা টানুন
বিগ ডিপারের একেবারে সামনের দুটি তারকাকে মনে মনে যোগ করে বর্ধিত করুন। রেখাটিকে টেনে লম্বা করে নাক বরাবর সোজা প্রথম যে উজ্জ্বল তারকা পাবেন- সেটিই হলো আমাদের কাঙ্ক্ষিত ধ্রুবতারা। বিগ ডিপারের সামনের দুই  তারকা মিলে যে দৈর্ঘ্য হয় (লাল দাগ টেনে দেখানো হল), ধ্রুব তারার দূরত্ব তার ছয় গুণ।


আরো দেখুনঃ দিক নির্ণয়ে হাত ঘড়ি

ধাপ-৩: মিলিয়ে নিন
সন্দেহ লাগছে? আকাশে এত তারার মাঝে সন্দেহ দানা বাঁধতেই পারে- আসলেই এটা ধ্রুবতারা কিনা। আসলে ধ্রুবতারাকে আমরা বড় চামচ বিগ ডিপার দিয়ে চিনলেও এটা কিন্তু বিগ ডিপারের অংশ নয়। চামচ আছে আরেকটি। তার নাম ছোটি চামচ বা আসল নাম লিটল ডিপার (Little Dipper)। এটি অবস্থিত অন্য আরেকটি তারামণ্ডলী লঘুসপ্তর্ষী তে। বড় চামচের মত ছোত চামচও সাতটি তারায় গঠিত। অবস্থান বড় ভাইয়ের মাথার উপরে। এর বাঁটের একেবারে প্রান্তভাগের তারকাটিই হচ্ছে ধ্রুবতারা।

সূত্রঃ
[১] জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা- উইকিপিডিয়া
[২] How to find 'Polaris' - the North Star
[৩] ভিডিও 
 [৪] ভিডিও
Category: articles

শুক্রবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

ইতোপূর্বে আমরা বিভিন্ন ধরণের তারকার পরিচয় জেনেছিলাম। এতে অন্যতম শ্রেণী ছিল বাদামী বামন (Brown Dwarf)। এদেরকে বলা হয় ব্যর্থ তারকাকেন এরা ব্যর্থ? বাদামী বামনদের সাথে বড় বড় গ্রহের পার্থক্য কী? এদেরকে গ্রহ বলা হয় না কেন? এসব প্রশ্নের জবাব নিয়ে আজকের পোস্ট।
গ্যাস ও ধূলিকণার বিশাল পুঞ্জ সংকুচিত হয়ে জন্ম হয় একেকটি তারকার। তারকার প্রধান লক্ষণই হচ্ছে এর কেন্দ্রের নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে আলো, তাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু বাদামী বামন তারকাদের ভর (Mass) এত বেশি নয় যে অভিকর্ষীয় চাপ নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া সংঘটিত করতে পারবে। আর এই ব্যর্থতাই তাদের কপালে ব্যর্থ তারকার তিলক পরিয়ে দিয়েছে।
অন্যান্য প্রধান ক্রমের তারকাদের মতই জীবন শুরু হয় বাদামী এই তারাদের। প্রধান ক্রমের তথা Main Sequence নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে অভিকর্ষীয় চাপে বস্তুপিণ্ডটি ভেতরের দিকে সংকুচিত হতে থাকে যতক্ষণ না এটি হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরির কারখানায় পরিণত হয়। কিন্তু বাদামী বামনের কখোনই সেই ধাপে পৌঁছতে পারে না। হাইড্রোজেন ফিউশন শুরু হবার আগেই সে পৌঁছে যায় স্থিতিশীল অবস্থায়।

বিভিন্ন ভর ও তাপমাত্রার বাদামী বামনদের দেখা মেলে। এদের ভর বৃহস্পতির ১৩ থেকে ৯০ গুণ বা সূর্যের প্রায় এক দশমাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আমরা জানি তারকাদেরকে তাদের বর্ণালীর ভিত্তিতে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়। M জাতের তারকারা হল সফল তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে শীতল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ। বেশিরভাগ এম তারকারাই লোহিত বামন হলেও কিছু আছে বাদামী বামন।
পরিচিত বামনদের মধ্যে Y dwarfs হচ্ছে সবচেয়ে শীতল। এদের কোনটার তাপমাত্রা বাসার উনুনের সমান, কোনটা আবার মানবদেহের সমান উষ্ণ। ফলে, এরা সামান্য আলো ও শক্তি বিকিরণ করে। ফলে, এদেরকে শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণেই ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত এদের আলোচনা শুধু বই পুস্তকেই সীমিত ছিল, দেখা যায়নি চাক্ষুষ। সম্ভবত, এ কারণেই এদেরকে আগে কালো বামন (Black Dwarfs) বলে ডাকা হত। কিন্তু, এখন এই নামে ডাকা হয় শ্বেত বামনদের চূড়ান্ত দশাকে যখন তারা সবটুকু তাপ বিকিরিত করে ফেলে।

এতই যখন সমালোচনা, তখন বেচারারদের কেন গ্রহ বলা হয় না?
এদের এত অল্প ভরের কারণের এদের পরিচয়কে গ্রহের সাথে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সুযোগ আছে। উপরন্তু, দিন দিন গ্যাসীয় দৈত্য জাতের গ্রহদের সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে এই তারকাগুলোতে ফিউশনের অভাবের ফলে, অনেকে তাদেরকে গ্রহ বলার সাহস দেখাতে পারেন।
গ্রহদের সাথে অন্যতম পার্থক্যটি হচ্ছে নিজস্ব আলো থাকা। গ্রহদের কিন্তু নিজের আলো নেই। তাহলে, সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা বা ভোরে শুকতারাসহ কত গ্রহই তো আলো দেয়? আরে ভাই! ওগুলোতো চাঁদের মতই সূর্যের আলোই প্রতিফলিত করে। বাদামী বামনের অতিরিক্ত শীতল হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত লাল এবং অবলোহিত আলো (Infrared ) বিকিরণ করে। শীতল হয়ে গেলে দেয় এক্সরে এবং অবলোহিত আলো।
এরপরেও, গ্রহ এবং বাদামী বামনদের মাঝখানের সীমানা রেখা খুবই চিকন। কিছু বাদামী বামন ঠাণ্ডা হয়ে গ্যাস দানব গ্রহদের মত বায়ুমণ্ডল তৈরি করেছে। বাদামী বামনদের চারদিকে প্রদক্ষিণরত গ্রহ থাকতে পারে, আর গ্রহদের থাকে উপগ্রহ। এখন পর্যন্ত জানা বৃহত্তম গ্রহ ওয়াসপ-১৭বি (WASP-17b) হচ্ছে। এর আকার বৃহস্পিতির দ্বিগুণ হলেও ভর প্রায় অর্ধেক। অন্য দিকে, সবচেয়ে ভারী গ্রহ হচ্ছে ডেনিস পি (DENIS-P )। এর ভর বৃহস্পতির ২৮ গুণেরও বেশি। ফলে, এই গ্রহ হয়ে পড়েছে বিতর্কিত। অনেকে একে দাবী করছেন বাদামী বামন বলে।  তাহলে, গ্রহ এবং বাদামী বামন নক্ষত্রদের উপযুক্ত সীমারেখা কী?


মহাকাশের বস্তুপিণ্ডদের সংজ্ঞা দেবার দায়িত্ব হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতির (International Astronomical Union)। তাদের মতে যে বস্তুপিণ্ড ডিউটেরিয়াম (হাইড্রোজেনের ২ ভর বিশিষ্ট আইসোটপ) জ্বালাতে পারে, তাকে তারকা বলা যাবে। আর বৃহস্পতি গ্রহের ১৩ গুণ পর্যন্ত ভর বিশিষ্ট বস্তুকে বলা হবে গ্রহ (এটা গ্রহের সংজ্ঞা নয়, সীমানা)।
সূত্রঃ
[১] space.com
[২] উইকিপিডিয়া 
Category: articles

সোমবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫


মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কত? ৮ হাজার ৮ শো ৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। একে কি কেউ টেক্কা দিতে পারে?
হ্যাঁ, পারে। তবে, উঁকি দিতে হবে পৃথিবী থেকে প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলের দিকে। তাহলেই পাওয়া যাবে একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির খোঁজ। নাম অলিম্পাস মনস (Olympus Mons)। এর উচ্চতা প্রায় ২২ কিলোমিটার বা ১৪ মাইল। হ্যাঁ, অদ্ভুত লাগলেও শুনছেন ঠিকই। এটাই সৌরজগতের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি।
অর্থ্যাৎ সমুদ্র সীমা থেকে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা যত, এই দানবীয় পর্বত তার প্রায় তিন গুণ বড়।
অবশ্য, এটি মঙ্গল গ্রহের নবীনতম আগ্নেয়গিরি। এর উদ্ভব ঘটেছে মঙ্গলের আমাজনিয়ান যুগে। ঊনবিংশ শতক থেকেই জ্যোতির্বিদদের সাথে এর পরিচয় ছিল। শুরুর দিকে একে ডাকা হতো Nix Olympica নামে, ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ অলিম্পিক তুষার। আর, ল্যাটিন ভাষায় মনস অর্থ হলো 'পর্বত'।
আগ্নেয়গিরিটি মঙ্গলের পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত।এর ব্যাস ৬২৪ কিলোমিটার বা ৩৭৪ মাইল যা আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের প্রায় সমান। অন্য দিকে, আগে পৃথিবীর বৃহত্তম অগ্নিগিরি (Volcano) ছিল মাউনা লোয়া। অবশ্য, ২০১৩ সালে সাগরতলে আবিষ্কৃত আরেকটি বিশাল আগ্নেয়গিরি টামু ম্যাসিফ। এই আগ্নেয়গিরিটির আয়তন প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ১ লাখ ১৯ হাজার বর্গমাইল।  টামু ম্যাসিফ সাগর সমতল থেকে ২ কিলোমিটার পানির নিচে অবস্থিত। জাপান থেকে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে পানির নিচে অবস্থিত শাটস্কি রাইজ নামে পরিচিত একটি ভৌগোলিক প্লেট বা মালভূমিতে অবস্থিত।

টামু ম্যাসিফের আকার অলিম্পাস মন্সের সাথে তুলনীয় হলেও মঙ্গোলের অগ্নিগিরিটি আয়তনে মাউনা লোয়ার চেয়ে  ১০০ গুণ বড়। শুধু অলিম্পাস মন্সই নয়, মঙ্গল গ্রহে মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে উঁচু আরো অনেকগুলো পাহাড় রয়েছে যেমন Ascraeus Mons, ইলিসিয়াম মনস, আরসিয়াম মনস ইত্যাদি । এগুলোর প্রতিটিই উচ্চতায় ১২ কিলোমিটারের উপরে। সত্যি বলতে, মঙ্গোলে এমন প্রায় ডজনখানেক আগ্নেয়গিরি আছে যারা পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলোর দশ থেকে ১০০ গুণ বড়।

কিন্তু মঙ্গোলের পাহাড় ও অগ্নিগিরিগুলো এত উঁচু বা বিশাল কেন?
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রহটিতে সক্রিয় প্লেট টেকটোনিকস নেই। ফলে, এর ক্রাস্ট তথা উপরিভাগ অবস্থান পরিবর্তন করে না যেমনটা হয় পৃথিবীতে। এর ফলে, আগেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে নিক্ষিপ্ত ম্যাগমা একই স্থানে স্তূপীকৃত হয়ে গড়ে ওঠে বিশাল আগ্নেয়গিরি। বিজ্ঞানীদের মতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মঙ্গোলের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অভিকর্ষ। অভিকর্ষ তথা কোন বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণের ক্ষমতা কম বলেই উচ্চতা বেশি পেরেছে।
বর্তমানে মঙ্গোলের অন্তর্ভাগ বা কোর শীতল হয়ে যাবার কারণে অলিম্পাস মনসসহ অন্যান্য আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে না।

তথ্যসূত্রঃ
[১] নাসা 
[২] যুগান্তর
[৩] উইকিপিডিয়া 
[৪] বিবিসি 
[৫] স্পেইস ডট কম
টামু ম্যাসিফ সাগর সমতল থেকে ২ কিলোমিটার পানির নিচে অবস্থিত। জাপান থেকে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে পানির নিচে অবস্থিত শাটস্কি রাইজ নামে পরিচিত একটি ভৌগোলিক প্লেট বা মালভূমিতে অবস্থিত। - See more at: http://www.jugantor.com/ten-horizon/2013/09/18/28999#sthash.scyXrldG.dpuf
Category: articles

শনিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৫

তারকাদের শ্রেণীবিভাগ জানার আগে জেনে নিই, তারকা কারা? 
সহজ ভাষায় যেসব মহাজাগতিক বস্তুপিণ্ড এর কেন্দ্রস্থলে (সাধারণত) তাপ নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিপুল পরিমাণ আলো, তাপ ও বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে তাকে মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় তারকা বা নক্ষত্র (Star) বলে। গ্রহদের (Planet) এর পার্থক্য হল, গ্রহদের নিজস্ব আলো থাকে না। বড় বড় গ্রহদের আকার তো প্রায় বামন তারকাদের কাছাকাছি। সেক্ষেত্রে বাউন্ডারিটা এখানেই। নচেৎ, গ্রহদের উপগ্রহদেরকে গ্রহ বানিয়ে গ্রহকে কেন্দ্র করে একটি গ্রহমণ্ডল বা আরেকটি সৌরজগত গড়ে উঠত।
কিন্তু নিজস্ব আলো না থাকায় গ্রহরা সেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিতে ব্যর্থ হয়। যেমন আমাদের সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির কথাই ধরা যাক। অল্পের জন্যে বেচারা তারকা হতে পারেনি। কাছাকাছি কিন্তু গিয়েছে। সে কিন্তু এখনও একটি গ্যাস দানব। আর সব তারকাই কিন্তু গ্যাসীয় প্লাজমায় গঠিত। অন্তত জীবনের প্রথম দিকে একটি উল্লেখযোগ্য সময় জুড়ে তাই থাকে।
কি বলতে বলতে কোথায় চলে এলাম!
এখানে আমরা ভর বিবেচনায় রেখে উল্লেখযোগ্য কিছু তারকার পরিচয় জানবো।
তারকাদের শ্রেণির কথা আসলে প্রথমেই আসবে প্রধান ক্রম বা মেইন সিকুয়েন্স (Main Sequence Star) দের কথা।
এরা হল, একেবারে যুবক তারকা। আমরা সাধারণত জানি যে, তারকারা অবিরাম হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি করে আলো, তাপ ও অন্যান্য বিকিরণ নির্গত করে। আসলে কথাটি প্রযোজ্য এই মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রদের জন্য। বর্তমানে মহাবিশ্বে এই যুবকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারকাদের ৯০ ভাগ। এদেরকে যুবক বললাম কারণ, এটাই তারকাদের বয়সের যুবক কাল। এর পর আস্তে আস্তে এরা জীবনের সম্পাতির দিকে পৌঁছে যাবে। অর্থ্যাৎ, মারা যাবে। মারা গেলে কী হবে? এই প্রশ্ন থাকুক আপাতত হিমাগারে।
সূর্য হলো একটি প্রধান ক্রমের নক্ষত্র

এই তারকারা যত বেশি উষ্ণ হয়, তত বেশি উজ্জ্বল হয়ে থাকে। এই লেখা পড়তে পড়তে মনে হতেই পারে, আমাদের সূর্য মামা কোন ধরণের তারকা। হ্যাঁ, সেই এই দলে। তার মানে আমরা মহাবিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবারের সদস্য। অবশ্য আকারের দিক থেকে সূর্য মাঝারি মানের তারকা।
মেইন সিকুয়েন্স তারকারা সাধারণত বামনাকৃতির হয়।[১] এদের ভর সূর্যের ২০ গুণ পর্যন্ত হতে পারে এবং উজ্জ্বলতা হতে পারে ২০ হাজার গুণ পর্যন্ত।
এই বামনেরা আবার কয়েক প্রকার হতে পারে।
প্রথম বলা যাক হলুদ বামনদের (Yellow Dwarf) কথা। এরা আকারে ছোট। আমাদের সূর্য পড়ে এই দলেই। এদের ভর সূর্যের খুবই কাছাকাছি (০.৮ গুণ থেকে ১.২ গুণ এর মধ্যে) থাকে। আর তাপমাত্রা থাকে ৫৩০০ থেকে ৬ হাজার কেলভিন এর মধ্যে। এদের অপর নাম জি-টাইপ মেইন সিকুয়েন্স স্টার বা সংক্ষেপে G dwarf star। এই নামের উৎস এদের বর্ণালী।
আরেক ধরণের প্রধান ক্রমের তারকারা হল লোহিত বামন (Red Dwarf)। এরা আরো ক্ষুদ্র, সত্যি বলতে ক্ষুদ্রতম। এদের ভর টেনেটুনে সূর্যের প্রায় অর্ধেক পর্যন্ত হতে পারে। পাশাপাশি এরা আবার দুর্বল ও ঠাণ্ডা নক্ষত্রও বটে, এদের পৃষ্ঠতাপমাত্রা থাকে ৪ হাজার কেলভিন এর নিচে। অন্য দিকে সূর্যের পৃষ্ঠতাপমাত্রা কিন্তু ৬ হাজার কেলভিনের কাছাকাছি, ৫৭৭৮ কেলভিন। তবে, এই তারকাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয়। প্রায় ৭৭ ভাগ তারকার পরিচয়পত্রেই লোহিত দানব লেখা।  এমনকি, সূর্যের নিকটতম তারকা প্রক্সিমা সেন্টৌরিও একটি লোহিত বামন।
প্রধান ক্রমের তারকাদের মধ্যে এছাড়াও কমলা, সাদা ও নীল তারকাদের দেখা মেলে। এদের মধ্যে কমলাদের সংখ্যা মোটামুটি ভালো থাকলেও সাদা ও নীলের সংখ্যা যথাক্রমে স্বল্পতর।
তারকাদের ৯০ ভাগ সম্পর্কে এখন আমরা জানি। বাহ!
এরা তো সবাই ছিল বামন তারকা। এবার আসা যাক দানবদের (Giant Star) জগতে। এদের ব্যাসার্ধ সূর্যের কয়েকশো গুণ পর্যন্ত হতে পারে।  মূলত, মেইন সিকুয়েন্স নক্ষত্রদের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে গেলে তখন এদের মূলবস্তু সংকুচিত হতে থাকে, কিন্তু বহিঃস্থ অংশ তখনও প্রসারিত হতে থাকে। এতে করেই এর ব্যাসার্ধ বেড়ে যায়। জীবনের এই সময়েই এদের নাম হয় দানব তারা। এখন থেকে ৫ বিলিয়ন বছর পরে সূর্য এই রকম দানব হয়ে যাবে। তখন, সূর্য বুধ, শুক্র এবং (সম্ভবত) পৃথিবীর কক্ষপথকেও গিলে খাবে। আমার মনে হয়, বলাটা অপ্রাসংগিক হবে না, যে সম্ভবত তখনই কিয়ামত হবে। কারণ, কুর;আন বলছে, এক সময় চন্দ্র ও সূর্য মিশে যাবে। এছাড়াও, হাশরের দিন সূর্য মাথার খুবই নিকটে থাকবে। যাই হোক, আমি ধর্মে অতটা বিশেষজ্ঞ নই।
দানব (Giant Star) নক্ষত্রদের মধ্যে সবচেয়ে পরিচত হল লোহিত বামন তারকা (Red Giant)। এরা হয় অপেক্ষাকৃত শীতল। ভর হতে পারে সূর্যের আট গুণ পর্যন্ত।। এদের বয়সও কিছুটা বেশি।  পৃথিবী থেকে ৮৮ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত গামা ক্রুসিস (Gamma Crucis) হচ্ছে আমাদের নিকটতম লোহিত দানব।

দানব নক্ষরদের মধ্যে এছাড়াও সাবজায়ান্ট, হলুদ দানব ও নীল দানব নক্ষত্রদের দেখা মেলে। নীল দানবেরা প্রধান ক্রম শেষ করে হিলিয়াম পোড়াতে থাকে।  দানব নক্ষত্ররা খুব দ্রুত এই ধাপ পেরিয়ে যায়।
এবার আসি আরো ভারী তারকা সুপারজায়ান্টদের (Supergiant) জগতে। এদের ভর হতে পারে সূর্যের ৮ থেকে ১২ গুণ। আর, ব্যাসার্ধ হয় সূর্যের ৩০ থেকে ১০০০ গুণ অবধি। এরাই তারকাদের জগতে সবচেয়ে ভারী ও বড়। বড় ভাই আর কি। এদের কেউ কেউ এত বড় যে সে একাই আমাদের সমগ্র সৌর জগতের সমান। পৃথিবী থেকে ৬০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বিটলজুস (Betelgeuse) নক্ষত্রটি একটি সুপারজায়ান্ট। এর নামটি এসেছে يد الجوزاء আরবী কথা থেকে যার অর্থ কালপুরুষের হাত (The hand of Orion)। ভুলক্রমে, আরবি অক্ষর ইয়াকে ইংরেজি B এর প্রতিনিধি মনে করায় এর নাম এমন হয়ে গেছে। 
বিটলজুস নক্ষত্রের অবলোহিত ছবি
 এছাড়াও অ্যান্টারিস, রিজেল নক্ষত্ররা হল সুপারজায়ান্ট তারকার উদাহরণ। এদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হল, এই তারকাদেরই পরবর্তী দশা হল, আমাদের সকলের প্রিয় টপিক ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। কেউ কেউ অবশ্য সুপারনোভা দশায়ও থেকে যেতে পারে। সুপারজায়ান্টরা লাল, নীল বা হলুদ হতে পারে।  যেসব সুপারজায়ান্টরা অত্যাধিক হারে ভর হারাতে থাকে, তাদেরকে আবার ডাকা হয় হাইপারজায়ান্ট বলে।

এবার আবার একটু বামনদের জগতে ফিরে যাই। প্রথমে আসি শ্বেত বামনদের (White Dwarf) কথায়। এদের আকার অনেক ক্ষুদ্র, এমনকি প্রায় পৃথিবীর সমান! ভাবা যায়! একটি তারকা একটি গ্রহের সমান। তবে না, ওকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ ওর ঘনত্ব অত্যাধিক বলে ভর কিন্তু অনেক বেশি। প্রধানত কার্বন দ্বারা গঠিত এই তারকাদের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। 

যেসব দানব নক্ষত্রের ভর দুই সৌর ভরের কম থাকে তারা  ধাপের শেষের দিকে যখন বহিঃস্থ আবরণ ছুড়ে দেয় তখনই পরিণত হয় শ্বেত বামনে। ভর আরো বেশি হলে এরা সুপারনোভা বা নিউট্রন স্টার হতে পারতো। ধীরে ধীরে এরা তাপমাত্রা হারিয়ে কালো বামনে পরিণত হয়। আমাদের সূর্যের এক দিন এই দশা হবে। রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম তারকা লুব্ধক ( Sirius ) ইতোমধ্যেই শ্বেত বামন হয়ে বসে আছে। 

এবার বলবো এক ব্যর্থ তারকার কথা। ব্যর্থ হলে তাকে আবার তারকা বলা হয় কেন? 
ব্যর্থ বলার কারণ হচ্ছে, বেচারাদের ভর এত কম যে নিজস্ব অভিকর্ষের প্রভাবে ধসে গিয়ে যে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া শুরু করবে, সেই ক্ষমতা পায়নি। এদের ভর হয় বৃহত্তম গ্রহদের ভর থেকে সবচেয়ে কম ভরের প্রধান ক্রমের তারকাদের মধ্যে। তবে, নিজস্ব উজ্জ্বলতা কিছুটা আছে বৈকি। তাই, আবার গ্রহের খাতায়ও নাম লেখাতে পারেনি। এদের নাম হচ্ছে বাদামী বামন (Brown Dwarf)। সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির ১৩ গুণ ভরযুক্ত বাদামী বামনরা ডিউটেরিয়াম জ্বালিয়ে এবং ৬৫ গুণ ভরবিশিষ্ট বাদামী বামনরা লিথিয়াম জ্বালিয়ে কিছু আলো উৎপাদন করে। এ কারণেই গ্রহদের শ্রেণিশিক্ষক খাতায় এদের নাম তোলেনি। 
বাদামী বামনের তুলনা


এবার বলবো নিউট্রন স্টারদের কথা। এদেরকে এই নামে ডাকার কারণ, সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর এদের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত অত্যাধিক হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে। যেসব দানব নক্ষত্রের ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকে, তারাই এই পরিণতি লাভ করে। এদের ঘনত্ব হয় অনেক বেশি।  মজার কথা হলো, এদের ব্যাস হয় মাত্র ৫ থেকে ১৬ কিলোমিটার, কিন্তু ঘনত্ব প্রতি ঘন সেন্টি মিটারে প্রায় ১ টেরা কেজি (১ টেরা কেজি = ১০০০,০০০,০০০,০০০ কেজি)। চমকে গেলেন? স্বাভাবিক। আমিও নিজেও তাই।  এদের হাইড্রোজেন নির্মিত একটি হালকা বায়ুমণ্ডলও থাকে।

এবার যাই পালসারের কাছে। না, আর বলতে না পেরে মোটর সাইকেলে চেপে রণে ভঙ্গ দিচ্ছি না। নিউট্রন নক্ষত্রের সাথে জড়িত থাকে অতি উচ্চ চৌম্বকক্ষেত্র। তাই, একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর এটি বেতার স্পন্দন (Radio Pulse) নির্গমণ করে। আর, তখন একে বলে পালসার। 

যাবার আগে আরেক ধরণের তারার কথা বলে যাই। এরা হল, ডাবল স্টার। অনেক সময় দুটো তারকা পৃথিবী থেকে প্রায় একই রেখা বরাবর অবস্থিত হলে এ রকম মনে হয়। আবার অনেক সময় এরা প্রকৃতই একে অপরের সাথে আবদ্ধ। এদেরকে বলা হয় দ্বিমিক তারকা (Binary Star)। এরা উভয়ের ভরকন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে। মনে করা হয়, মহাবিশ্বের অর্ধেক তারকাই এমন আচরণ করে থাকে। বর্তমানে ধ্রুব তারা (North Star) একটি বাইনারি স্টার জগতের অংশ। 
বাইনারি স্টার জগত

অনুমতি নিয়ে আরেক ধরণের তারকার কথা বললে, তালিকাটা কিছুটা পূর্ণতা লাভ করতো। তাই জোর করে অনুমতি নিলাম। বলবো, চলক তারকার (Variable Star) কথা। এরা দুই ধরণের। Cepheid variable হচ্ছে সেই সব অস্থিতিশীল তারকা যারা ঘন ঘন নিয়মত ভিত্তিতে আকার ও উজ্জ্বলতা পরিবর্তন করে। আকার বাড়লে উজ্জ্বলতা কমে।
অন্য দিকে, Mira variable হলো, সেই সব তারকা যাদের আকার ও দীপ্তী পাল্টাতে অনেক মাস লেগে যায়। ১৫৯৬ সালে প্রথম আবিষ্কৃত এই ধরণের নক্ষত্র মিরার নামে এদের নামকরণ। 
 

[১] উইকিপিডিয়া 
[২]  EnchantedLearning
Category: articles

শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রশ্নঃ গ্রহ, উপগ্রহের তো লেজ থাকে না। তাহলে,  ধূমকেতু লেজ পায় কোথায়?
উত্তরঃ  ধূমকেতুর লেজের উৎপত্তি এর গাঠনিক কারণে। ধূমকেতু হচ্ছে হিমায়িত বরফ, গ্যাস ও ধূলিকণা নিয়ে গঠিত। একটি ধূমকেতু যখন সূর্যের কাছাকাছি আসে, তখন এটি উত্তপ্ত হতে থাকে। এতে অবস্থিত বরফ তখন বাষ্পে পরিণত হয়ে যায়। ফলে, আগে বরফের ফাঁকে ফাঁকে যে ধূলিকণা আটকে ছিল, সেগুলোও মুক্তহয়ে যায়।
বাষ্পীভূত এই পদার্থসমূহকে সূর্যালোক ও সৌর ঝড়ের চার্জিত কণিকার ধারা ধূমকেতুর পেছন দিকে ঠেলে দেয়। এতেই তৈরি হয় এর লেজ। ধূমকেতু কী কী পদার্থে গঠিত তার উপর নির্ভর করে তার লেজের আকৃতি।
ধূমকেতুর লেজ হয় দুই ধরণের- ধূলিকণা ও গ্যাস আয়ন। ধূলিকণার লেজে থাকে সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রাপ্ত আকারের সমান ছোট্ট ও কঠিন কণিকা।
ধূমকেতুর লেজ

অন্য দিকে, গ্যাস পরমাণু থেকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ইলেক্ট্রনকে আলাদা করে দিয়ে আয়নিত করে ফেললে গ্যাস আয়ন লেজ গঠিত হয়। সৌর বায়ুর কারণেই এই লেজের অবস্থান হয় সূর্যের উলটো দিকে। দুই ধরণের লেজই দৈর্ঘ্যে লক্ষাধিক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ধূমকেতু (Comet) সূর্য থেকে দূরে চলে গেলে এর লেজ ও কোমা (বায়ুমন্ডল) বিলুপ্ত হয়। তখন, এর কেন্দ্রে অবস্থিত পদার্থসমূহ ঘনীভূত হয়ে শক্ত পাথুরে পদার্থে পরিণত হয়।
সূত্রঃ হাবলসাইট
Category: articles

শুক্রবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৫

মহাবিশ্বের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স দুইটি আলাদা ধারণা তুলে ধরে। অনেক পদার্থবিদেরই বিশ্বাস, এমন কোন তত্ত্ব নিশ্চয়ই আছে যা এই দুই মতবাদকে একই সুতোয় গাঁথবে। এমন মতবাদেরই একজন দাবিদার হল সুপারস্ট্রিং থিওরি বা সংক্ষেপে স্ট্রিং থিওরি (String Theory)। স্ট্রিং শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল দড়ি, সুতা, আঁশ, তন্তু বা মালা।
স্ট্রিং থিওরি অনুসারে কণিকারা আসলে স্ট্রিং এর স্পন্দন



কোন কণা নয়, একটি সুতা মাত্রঃ মাধ্যমিক স্তরের  শিক্ষার্থীরা ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রনসহ মৌলিক কিছু অতিপারমাণবিক কণিকা (Subatomic Particles) সম্পর্কে জানতে পারে। আমাদের জানা মতে, বস্তুর গঠনের পেছনে দায়ী এরাই। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কীভাবে এই কণিকাগুলো চলাচল করে ও একে অপরের সাথে আচরণ করে। কিন্তু এই আচরণ বের করতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে একাধিক প্রশ্নের।
স্ট্রিং এর অবস্থান 

স্ট্রিং থিওরির মতে, এইসব অতিপারমাণবিক কণিকার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। এই তত্ত্ব তাদের বদলে হাজির করছে স্পন্দনশীল (Vibrating) সুতা যা অতি ছোট হওয়ায় বর্তমান যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রত্যেকটি স্ট্রিং বা সুতা একটি লুপ বা ফাঁসে আবদ্ধ থাকতে পারে, আবার মুক্তও থাকতে পারে। স্ট্রিং এর কম্পনকেই আমরা বিভিন্ন কণিকা মনে করি এবং এই কম্পন থেকেই আমরা নানা কণিকার আকার ও ভর ধারণা করি।
বিন্দু-সদৃশ কণিকাকে স্ট্রিং কী করে প্রতিস্থাপন করতে পারে? অতিপারমাণবিক জগতে কোন কিছুর স্পন্দনের কম্পাঙ্ক (frequency) ও তার শক্তির (Energy) মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। অন্য দিকে, আবার আইন্সটাইনের বিখ্যাত E=mc2 সূত্র আমাদের বলে যে, ভর (Mass) ও শক্তিও পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তা বজায় রাখে। তাহলে, কোন বস্তুর কম্পনের হার তথা কম্পাঙ্ক ও ভরেরও একটি সম্পর্ক থাকবে। বন্ধুর বন্ধু যেভাবে বন্ধু হয় অনেকটা সেই রকম আর কি!
স্ট্রিং থিওরির মূলে আছে ঠিক এই সম্পর্কটাই।

মহাবিশ্বের মাত্রা কয়টিঃআইন্সটাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মহাবিশ্বের জন্য অনেকগুলো মাত্রার দরজা খুলে দিল। আপেক্ষিকতা চার মাত্রায় যেমন খাটে তেমনি খাটতে পারে চল্লিশ মাত্রায়ও। কিন্তু স্ট্রিং থিওরি কাজ করে শুধু দশ বা এগার মাত্রায় (Dimension)। স্ট্রিং তত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলে, মহাবিশ্বে মাত্রার সংখ্যা সীমিত হয়ে যাবে।
আমরা শুধু চারটি মাত্রার সাথেই পরিচিত। স্ট্রিং থিওরির বাকি মাত্রাগুলো কোথায়? বিজ্ঞানীদের ধারণা, এগুলো একটি সংকীর্ণ স্থানে বেঁকে আছে। স্থান ক্ষুদ্র হলে, স্ট্রিং এর মাপকাঠিতে (10-33 সে.মি.) আমরা তা দেখতে পাব না।  অথবা, অন্য মাত্রাগুলো এত বড়ও হতে পারে যে তা পরিমাপ করা আমদের সাধ্যাতীত।


প্রমাণের সন্ধানেঃ
১৯৯৬ সালে, সান্তা বারবারার তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এন্ড্রু স্ট্রমিঙ্গার এবং হার্ভাডের কামরান ভাফা একটি ব্ল্যাক হোলের সিমুলেশন করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিজর্ডার বা এনট্রপি ছিল মাত্রাতিরিক্ত। বিজ্ঞানী জ্যাকব বেকেন্সটাইন ও স্টিফেন হকিং ও দুই দশক আগে এমন একটি সিমুলেশন করেছিলেন। তখন কেউ বুঝতে পারেনি, একটা ব্ল্যাক হোলে কী করে এত এনট্রপি থাকতে পারে।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রাপ্ত ব্ল্যাক হোলদের মত করে প্রচলিত পদ্ধতিতে স্ট্রমিঙ্গার ও ভাফা ব্ল্যাক হোল তৈরি করেননি। তাঁরা এটা বানান (সিমুলেশন করেন) স্ট্রিং থিওরি দিয়ে।  ফলে অভিকর্ষের মৌলিক বল যা ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির জন্য দায়ী ও জটিল তত্ত্বের মধ্যে লিঙ্ক তৈরি হয়। প্রথাগত কণার ধারণার বদলে স্ট্রিং তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তাঁরা সম্ভাব্য একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের (সব মৌলিক বল একই উৎস থেকে আসা) বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পেরেছেন।
স্ট্রিং থিওরিই 'থিওরি অভ এবরিথিং' কিনা এটা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু, মহাবিশ্বের অভ্যন্তরীণ জগত ব্যখ্যার অন্যতম দাবিদার এই তত্ত্ব।

আরো পড়ুন নিয়মিত বিভাগঃ ব্ল্যাক হোলের গভীরে

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ String theory
Category: articles

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

সূর্য হল আমাদের সৌরজগতের শক্তি সরবরাহ কেন্দ্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এটি হল একটি সাধারণ নক্ষত্র। কিন্তু সাধারণ এই নক্ষত্রই প্রতি সেকেন্ডে উৎপন্ন করে বিপুল পরিমাণ শক্তি, প্রধানত আলো ও তাপ বিকিরণের মাধ্যমে।  প্রতি সেকেন্ডে সূর্যে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ হল 5 x 1023  অশ্বশক্তির সমপরিমাণ। ধারণা পেতে চান এই পরিমাণ শক্তি কতটা বেশি? মনে করুন, পৃথিবী থেকে সূর্য  অবধি একটা বরফের সেতু নির্মাণ করা হল, যা ১ মাইল পুরু ও দুই মাইল চওড়া। এই সেটুটাকে এক সেকেন্ডে উড়িয়ে দিতে সমান পরিমাণ শক্তি লাগবে!
চলুন, জেনেই নিই সূর্যের বয়স কত।

সূর্যের বয়স জানার সরাসরি কোন উপায় নেই। পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন প্রস্তরখণ্ড ও উল্কাপিণ্ডের বয়স হচ্ছে ৪৬০ কোটি বছর। যদি ধরে নেওয়া হয়, পুরো সৌরজগত একই সাথে সৃষ্টি হয়েছিল, তবে সূর্যের বয়সও হয় এটাই। অবশ্য, এই অনুমান ভুল হবার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই। অর্থ্যাৎ সূর্যের বয়স প্রায় ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি বছর।
সবচেয়ে প্রাচীন পাথরের তেজস্ক্রিয় ভাঙ্গন সূত্র কাজে লাগিয়ে এর বয়স বের করা হয়।
সূত্রঃ
নাসা হেলিওস
Category: articles

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীর বাইরে প্রাণ তথা এলিয়েনের প্রসঙ্গ আসলেই ঘুরে ফিরে আসে মঙ্গল গ্রহের কথা। এর আগেও বহুবার খবরের শিরোনাম হয়েছে এই লাল গ্রহটি। এবার এতে পাওয়া গেল মিথেন গ্যাস। তাতে কী? প্রাণের অস্তিত্ত্বের সাথে তো সম্পর্ক পানির। মিথেনের তাতে কাজ কি? হ্যাঁ, সম্পর্ক আছে। আর সেজন্যই তো আবারো শিরোনাম হল পৃথিবীর ২য় নিকটতম প্রতিবেশী।
নাসার মঙ্গল যান কিওরিওসিটি রোভার

এবার নাসার মহাকাশযান কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পেরেছে। এ থেকে ধারণা করা যায় বর্তমানে বা অন্তত অতীতে হলেও মঙ্গলে প্রাণ ছিল। গ্রহটিতে মিথেনের উপস্থিতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য। কারণ, পৃথিবীর মিথেনের ৯৫ শতাংশই আসে অণুজীবদের থেকে। এ থেকেই গবেষকরা আশা করছেন, মঙ্গলে প্রাণ থাকতেও পারে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবের গবেষক ড. ক্রিস ওয়েবস্টার বলেন, "হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৫ হাজার টন মিথেন আছে। একে যদি আপনি পৃথিবীর সাথে তুলনা করেন, তবে পৃথিবীতে আছে ৫০ কোটি টন। পৃথিবীতে এই গ্যাসের ঘনত্ব হচ্ছে ১৮০০ পিপিবিভি (Parts per billion by volume) যেখানে মঙ্গলে ০.৭ পিপিবিভি।"  
কিউরিওসিটির দল গ্রহটিতে মিথেনের উৎসের সন্ধান না পেলেও মনে করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ স্টোরই এর উৎসস্থল। এই গ্যাসের উৎস কোন জীব নাকি নিছকই ভৌগলিক ব্যাপার তা জানতে সহায়তা করতে পারে গ্যসে উপস্থিত কার্বনের আইসোটোপের প্রকৃতি। পৃথিবীতে ১২ ভরের কার্বন (C-12) জীবনের ক্ষেত্রে কার্বন-১৩ এর চেয়ে বেশি সহায়ক।
C-13 এর তুলনায় C-12 এর অধিক উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ অন্তত ৪ বিলিয়ন বছর আগেও ছিল বলে অনুমান করছেন। তবে, মঙ্গলের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি ভালো মত পরীক্ষা করবার যথেষ্ট গ্যাস নেই বলেই আপাতত সমস্যা।
এখানে উল্লেখ্য, মিথেন হল একটি জৈব (Organic) যৌগ। আর জৈব যৌগের প্রধান উপাদান হল কার্বন।
নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি যানটি ২০১২ সালের আগস্টে মঙ্গলে অবতরণ করে এর এর বায়ু ও উপাদান নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। 
সূত্রঃ
বিবিসি নিউজ, উইকিপিডিয়া
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৪

যাঁকে আধুনিক কসমোলজির জনক বলে প্রায়শই অভিহিত করা হয়, সেই বিজ্ঞানী এডুইন হাবল এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন যা মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের ধ্যানধারণা আমূল পাল্টে দেয়।
বিজ্ঞানী এডুইন হাবল
জন্ম ১৮৮৯ সালে। পেশাগত জীবন শুরু আইনজীবী হিসেবে। কিন্তু যার মন পড়ে রয়েছে মহাকাশের দূর সীমানায়, তার কি আর আইনের ধারায় মন বসে?  কয়েক বছর পরেই নিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় ডক্টরেট । গ্র্যাজুয়েশনের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্ট উইলসন মানমন্দিরে (Observatory) কাজ করার দাওয়াত পেলেন। কিন্তু তিনি আবার ১ম বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকও যে! তাই কাজে যোগ দিতে কিছু দিন দেরি হয়ে গেল। তবে, ফিরে এসেই লেগে গেলেন। এখানেই তিনি বিশ্বের বৃহত্তম দুটি আকাশবীক্ষণ যন্ত্র (Telescope) নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলেন। এগুলো হল যথাক্রমে ৬০ ও ১০০ ইঞ্চির হুকার টেলিস্কোপ।

সৈনিক জীবন বুঝি বড্ড ভালো লেগেছিল!  ২য় বিশ্বযুদ্ধের দামামা শুরু হয়ে গেলে ১৯৪২ সালে আবারো মানমন্দির ছেড়ে গেলেন।  পেলেন বীরত্বের প্রতিকও।

মিল্কিওয়ের বাইরে উঁকিঃ
১৯২০ এর দশকেও আকাশে ছড়ানো ছিটানো ছোপ ছোপ আলোকে মনে করা হত নীহারিকা (Nebula)। মনে করা হত এগুলোর অবস্থানও মিল্কিওয়েতেই। আলাদা আলাদা করে NGC 6822, M33 ও এনড্রোমিডা গ্যালাক্সির ছবি নিরীক্ষা করার সময় হাবল এগুলোর প্রতিটির ভেতরে একটি সেফেইড ভেরিয়েবল নামক স্পন্দনশীল (Pulsating) নক্ষত্র (Star) দেখতে পেলেন। হাবল সাহেব হিসেব কষে বের করলেন নক্ষত্রগুলো কত দূরত্বে আছে। এতে করে বের হল নীহারিকাদের  দূরত্বও। দেখা গেল, মিল্কিওয়ে থেকে তাদের দূরত্ব অনেক বেশি দূরে।

মহাকাশবিদরাও বুঝলেন, এই নীহারিকাগুলোও আসলে মিল্কিওয়ের মতই ছায়াপথ (Galaxy)। প্রতিটি ছায়াপথে আছে বিলিয়ন বিলিয়ন তারকা। আগে যেখানে মিল্কিওয়েকেই 'মহাবিশ্বের সব' মনে করা হত, সেখানে এবার মহাকাশবিজ্ঞানীদের চোখ আরো অনেক দূর প্রসারিত হয়ে গেল। 
প্রায় একই সময়ে হাবল গ্যলাক্সিদের শ্রেণিবিভক্ত করার একটি স্টান্ডার্ড উপায়ও বার করলেন। তিনিই প্রথম পরিষ্কার করে গ্যালাক্সিগুলোকে ৪টি শ্রেণিতে ফেললেন। এগুলো হল, ডিম্বাকৃতির (Elliptical), প্যাঁচানো তথা সর্পিলাকার (Spiral) , Barred Spiral ও অনিয়াতাকার (Irregular) গ্যালাক্সি। হাবল শুরুতে ধারণা করেছিলেন সর্পিল গ্যালাক্সিরা  ডিম্বাকৃতিরগুলো থেকে বিকশিত হয়। এখন অবশ্য বিজ্ঞানীরা জানেন সব গ্যলাক্সিদের আকৃতিই এদের জীবনের শুরুতেই নির্ধারিত হয়।

সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বঃ
গ্যালাক্সিদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে হাবল দেখলেন, ওগুলো স্থির হয়ে বসে নেই। উপরন্তু এরা প্রায় সবাই পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। অবশ্য এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের সাথে পারস্পরিক মহাকর্ষীয় টানে কাছে আসছে এবং আরো ৫০০ কোটি বছর পরে একে অপরের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে।

ফলে জানা গেল, মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার বের করা হয় তাকে বলে হাবলের নীতি (Huble's Law)। অবশ্য জর্জ লেমিটরও এর আগে ১৯২৭ সালে এই নীতি প্রস্তাব করেছিলেন। হিসেব করে পাওয়া গেল, মহাবিশ্ব একটি নির্দিষ্ট হারে প্রসারিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীর সম্মানে এই হারটিকে বলা হয় হাবল ধ্রুবক (Huble Constant)।

হাবলের এক দশক আগে বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনও সাধারণ আপেক্ষিকতার নীতির মাধ্যমে সম্প্রসারণশীল মহাবিশ্বের ধারণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ সময়ে তার কোন প্রমাণ না পাওয়া যাওয়াতে তিনি সেই প্রস্তাবের সমীকরণগুলো প্রত্যাহার করেন। কিন্তু হাবল সেই ধারণা প্রমাণিত করবার পরে আইনস্টাইন মাউন্ট উইলসনে গিয়ে বলেন, ঐ সমীকরণগুলো প্রত্যাহার ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল

অন্যান্য অবদানঃ
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যার জগতেই হাবলের রয়েছে আরো অবদান। পেয়েছেন অসংখ্যা পুরস্কার। কিন্তু মহাবিশ্বের পরিচয় উন্মোচিত করার পরেও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি। তাঁর জীবদ্দশায় নোবেল প্রাইজের জন্য  মহাকাশবিদ্যাকে পদার্থবিদ্যার একটি ফিল্ড মনে করা হত। তিনি আজীবন চেষ্টা করে গেছেন যাতে এই ধারণা চেঞ্জ হয়ে জ্যোতির্বিদরাও নোবেলের সুযোগ পান। সুযোগটি তৈরি হল ১৯৫৩ সালে। কিন্তু একই বছর মারা গেলেন তিনিও । যেহেতু নোবেলের ক্ষেত্রে মরণোত্তর (Posthumous) পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা নেই, তাই নোবেলের তালিকায় হাবল আর স্থান পেলেন না।

১৯৫৩ সালে, ৬৩ বছর  বয়সে মারা যান মহাবিশ্বের নব দিগন্ত উন্মোচনকারী এই জ্যোতির্বিদ। মৃত্যুর আগে তিনি পালোমার পর্বতে ২০০ ইঞ্চির হ্যালি টেলিস্কোপের নির্মাণ দেখে গিয়েছিলেনীর১৯৭৬ সালে রুশ BTA-6 টেলিস্কোপ তৈরি আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বৃহত্তম টেলিস্কোপ।

হাবলের জন্মের ১০১ বছর পর ১৯০০ সালে নাসা পৃথিবীর কক্ষপথে হাবল স্পেইস টেলিস্কোপ বসাল। এই আকাশবীক্ষণ যন্ত্র মহাবিশ্বের হাজার হাজার ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। পৃথিবীর নিখুঁত বয়স নির্ণয়, গ্যালাক্সিদের ক্রমবিকাশ ও মহাবিশ্বকে প্রসারণের জন্য দায়ী ডার্ক এনার্জির আবিষ্কারের ক্ষেত্র প্রভূত  অবদান রয়েছে এই টেলিস্কোপ্টির।

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Edwin Hubble

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

মহাকাশে ১৫০০ দিনের মত ঘোরাঘুরি করে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির আকাশযান প্ল্যাঙ্কের পাঠানো ছায়াপথের আলোর গতিপথের চিত্র থেকে আমাদের সৌরজগতের আবাস মিল্কিওয়ে ছায়াপথের চৌম্বক ছবি বানানো হয়েছে।  সংস্থাটির দাবী, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চৌম্বক ক্ষেত্র প্রদর্শনের ক্ষেত্রে এই ছবিগুলোই অগ্রগামী। বিগ ব্যাঙ তথা মহাবিশ্বের জন্মের পর একে দেখতে ঠিক কেমন লেগেছিল - তা এই নকশা থেকে জানা যেতেও পারে।
প্ল্যাঙ্ক মহাকাশযানের পাঠানো আলোর সমাবর্তন (Polarisation) তথ্য ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে চিত্রগুলো। আলোকরশ্মি তার গতিপথে কী কী প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েছিল, সমাবর্তন থেকে তার অনেকগুলো তথ্য পাওয়া যায়।
সমাবর্তনের পরিমাণ থেকে মহাকাশবিদরা আঁচ করতে পারেন, চুম্বকত্বসহ কোন ভৌত কারণে সমাবর্তন ঘটেছে।
প্ল্যাঙ্ক মহাকাশযানটিকে ১৪ মে, ২০০৯ সালে প্রেরণ করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল বিগ ব্যাঙ পরবর্তী কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (CMB) নিয়ে তথ্য আহরণ করা।
সূত্রঃ
ডেইলিমেইল
Category: articles

শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৪

কেন্দ্রস্থলে সূর্য, অন্যান্য গ্রহ, কিছু বামন গ্রহ, ধূমকেতু ইত্যাদি নিয়ে আমাদের সৌর পরিবারের বাস মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে ।। মহাবিশ্বে গ্যলাক্সি বা ছায়াপথের সংখ্যা বহু। এর সঠিক সংখ্যা আমরা জানি না। কারণ, সেই চাহিদা মেটাবার মত  আমাদের এখনও নির্ভরযোগ্য কোন যন্ত্র (টেলিস্কোপ) নেই। তবে, অনুমিত ধারণা মতে এ সংখ্যা ১০০ বিলিয়ন থেকে ২০০ বিলিয়নের মধ্যে । সেই হিসেবে, আমাদের মিল্কিওয়ের রয়েছে অনেক অনেক প্রতিবেশি।
কিন্তু মিল্কিওয়ের সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্যালাক্সি কোনটি?
সবচেয়ে নিকটবর্তী গ্যালাক্সি

অনেকেই উত্তরে বলবেন, অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি অথবা, ম্যাজেলানিক ক্লাউড (Magellanic Clouds)। কিন্তু, সত্যি কথা হল, মিল্কিওয়ের নিকটতম গ্যালাকটিক প্রতিবেশির বাস মিল্কিওয়ের ভেতরেই!
চমকে যাবেন না প্লিজ, ব্যাখ্যা করছি।
ক্যানিস ম্যাজর বামন (Canis Major Dwarf) গ্যলাক্সির দূরত্ব মিল্কিওয়ের কেন্দ্র থেকে ৪২ হাজার আলোকবর্ষ। অন্য দিকে, আমাদের থেকে, মানে সৌর পরিবার থেকে এর অবস্থান আরো কাছে, মাত্র ২৫ হাজার আলোকবর্ষ। ফলে ব্যাপারটা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারুণ! এই গ্যালাক্সিটি আমাদের মিল্কিওয়ের চেয়েও কাছের। কারণ, আমাদের থেকে মিল্কিওয়ের কেন্দ্রের দূরত্ব ৩০ হাজার আলোকবর্ষ।
ক্যানিস ম্যাজর বামন গ্যলাক্সির আবিষ্কার ২০০৩ সালে। মহাকাশবিদরা একে পেয়েছেন অবলোহিত (Infrared) ছবি বিশ্লেষণ করে। অবলোহিত ছবির কারিশমা হল, এটা গ্যাস ও ধূলিকণা ভেদ করে পর্যবেক্ষকের চোখে এসে ধরা দেয়।
ক্যানিস ম্যাজর বামন গ্যালাক্সিতে অনেকগুলো এম-শ্রেণীর বামন তারকার বাস। তারকাগুলো শীতল, লোহিত। এরা অবলোহিত বর্ণালীতে উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়ে অবলোহিত চিত্র তৈরি করে।
মিল্কিওয়ের আজকের এই বপু হয়েছে এই ক্যানিস ম্যাজরের কিয়দাংশ ভক্ষণ করে। মিল্কিওয়ে এখনও তাকে গ্রাস করে চলেছে। বামন ক্যানিস ম্যাজরের অনেকগুলো তারকা ইতোমধ্যেই মিল্কিওয়ের অংশ হয়ে গেছে। এর ফলে হয়েছে কি, মিল্কিওয়ের নিকটতম তারকার অবস্থান হয়েছে এর অভ্যন্তরেই!
বামন ক্যানিস ম্যাজরের আকার অতটা বড় নয়। এর তারকার সংখ্যা মাত্র ১ বিলিয়নের কাছকাছি। অন্য দিকে আমাদের মিল্কিওয়েতে তারকার সংখ্যা ২০০ থেকে ৪০০ বিলিয়ন।
নিকটতম গ্যালাক্সি হবার রেকর্ডটি আগে ছিল বামন স্যাগিটেরিয়াস নামক ডিম্বাকৃতির (Elliptical) গ্যালাক্সিটির। এটি আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। এর দূরত্ব ছিল ৭৫ হাজার আলোকবর্ষ
সাধারণভাবে প্রচলিত যে,  অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের নিকটতম। আসলে এটা হচ্ছে সর্পিল (Spiral) গ্যালাক্সিদের মধ্যে নিকটতম। এটা অবশ্য মিল্কিওয়ের সাথে মহাকর্ষীয় বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু দূরত্বের দিক দিয়ে আমাদের গ্যলাক্সি থেকে এর অবস্থান ২০ নম্বরে। পৃথিবী থেকে অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির দূরত্ব ২৫ লাখ আলোকবর্ষ
লার্জ ও স্মল ম্যাজেলানিক ক্লাউড (Large and Small Magellanic Clouds) এর দূরত্ব আমাদের থেকে যথাক্রমে ১ লক্ষ আশি হাজার ও দুই লক্ষ দশ হাজার আলোকবর্ষ। মনে করা হয়,  এরা মিল্কিওয়েকে প্রদক্ষিণ করছে, তবে তা নাও হতে পারে।
এই সবগুলো গ্যালাক্সিই লোকাল গ্রুপ নামক ত্রিশের অধিক গ্যলাক্সিদলের সদস্য। এদের বিস্তৃতি মিল্কিওয়ে থেকে ৪০ লাখ আলোকবর্ষ পর্যন্ত।
সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়াঃ নিকটতম গ্যালাক্সিদের তালিকা
২. ইউনিভার্স টুডে
৩. স্পেইস ডট কম
Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৪

এই ঘটনার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত যে আমরা চলন্ত কোন বস্তুর উপর বসে থাকলে সেটা যদি কোন দিকে মোড় নেয়, আমরা তার উলটো দিকে পড়ে যেতে থাকি, যদি না জিনিসটাকে শক্ত করে ধরে রাখি। কখনও বাসের ছাদে বসেছেন? বসলে টের পেতেন। বাস যখন কোন দিকে মোড় নেয়, আপনাকে শক্ত করে বাসকে ধরে রাখতে হবে, নইলে উলটো দিকে পড়ে আপনার যাত্রা সাঙ্গ হবে। [আমি একবার চড়েছিলাম, কেমন লাগে বোঝার জন্য প্লাস গাড়ি না পেয়ে]
নিচের অ্যানিমেশনে পৃথিবীর আবর্তন দেখুনঃ
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে ঘুরছে। এ জন্যেই ক্রমান্বয়ে রাত- দিন হচ্ছে
আমরা জানি, পশ্চিম থেকে পূবে পৃথিবীর আবর্তন বেগ ঘণ্টায় ১৬৭০ কি.মি (বিষুব অঞ্চলে)।  ঢাকায় এই বেগ ঘণ্টায় ১৫২৯ কি.মি। যাই হোক, এই বিপুল বেগের কারণে আমরা ধরাপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ে যাবার কথা। পৃথিবী আমাদেরকে ফেলে দিয়ে সূর্যকে চক্কর দেবার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ আট হাজার কি.মি বেগে ছুটে চলে যেত। এই বেগটা হল সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ বেগ।
কিন্তু, পৃথিবী খুব ভাল! আমাদেরকে ফেলে চলে যায় না। কিন্তু কেন?
কোন বস্তু কোন ঘুর্ণায়মান বস্তুর উপর টিকে থাকবে, নাকি পড়ে যাবে তা নির্ধারণ করে দুটি বিপরীতধর্মী বলের যুদ্ধ। এরা হল বস্তুটির অভিকর্ষ ও কেন্দ্রবিমুখী বল। অনেকে হয়ত মনে করে থাকতে পারেন বলদ্বয় হবে আসলে যথাক্রমে কেন্দ্রমুখী (Centripetal) বল (Force) ও কেন্দ্রবিমুখী বল (Centrifugal Force)। এই বলদ্বয় কিন্তু আসলে একে অপরের সমান ও বিপরীতমুখী, নিউটনের ৩য় সূত্রানুসারে। আর, আমাদের আলোচ্য বলের (Force) যুদ্ধ হবে কিন্তু বড় বস্তুর ক্ষেত্রে যার মহাকর্ষ উল্লেখযোগ্য যেমন, গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি।
এখন তাহলে দেখা যাক পৃথিবীতে কোন বলের আধিপত্য কেমন?
পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থিত কোন বস্তুকে পৃথিবী F বা W = mg বলে টানে। এখানে F হল আকর্ষণ বল, W হল এই আকর্ষণ তথা অভিকর্ষজনিত বল, টান বা ওজন। m বস্তুর ভর, g হল অভিকর্ষজ ত্বরণ , যার কারণে প্রতি সেকেন্ডে যে বেগ বৃদ্ধি পায়। g এর মান হল প্রতি বর্গ সেকেন্ডে মোটামুটি ৯.৮ মিটার।
যাই হোক, এই সূত্র আপাতত আমাদের খুব বেশি দরকার নেই। আমাদের এতটুকু জানলেই চলবে যে পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) প্রতি বর্গ সেকেন্ডে মোটামুটি ৯.৮ মিটার। ।
এখন, আমাদের জানা দরকার আবর্তনের জন্য আমাদের বেগ কী পরিমান হ্রাস পায়।
আমরা জানি,  ঘূর্ণায়মান বা আবর্তনশীল কোন বস্তুর ত্বরণ (Acceleration) বের করার  সূত্র হল,
ঘূর্ণনশীল বস্তুর ত্বরণ বের করার সূত্র

পৃথিবীর ঘূর্ণন বা আবর্তন বেগ হল,  v =  ৪৬৪ মি/সেকেন্ড, ব্যাসার্ধ,  r = ৬৩৭১ কিমি.
বা ৬, ৩৭১, ০০০ মিটার।
হিসেব করে পাই, ত্বরণ a = প্রায় ০.০৩৮৮ মিটার (প্রতি বর্গ সেকেন্ডে)।
অর্থ্যাৎ পৃথিবীর আবর্তনের কারণে আমরা প্রতি বর্গ সেকেন্ডে মাত্র ০.০৩৩৮ মিটার হারে পড়ে যেতে থাকি, যেখানে অভিকর্ষ আমাদেরকে তার প্রায় ২৯০ গুণ ত্বরণে (৯.৮১ মিটার/বর্গ সেকেন্ড) টেনে ধরে রাখে।
তাহলে কিভাবে আমরা কোন দিকে পড়ে যাব?
অর্থ্যাৎ পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে আমরা যে বলে পড়ে যাবার উপক্রম হই, তার চেয়ে অনেক বেশি বলে পৃথিবী আমাদেরকে টেনে ধরে রাখে। এ জন্যেই আমরা পড়ে যাই না।
উপরন্তু, উপরের এই হিসাব শুধু বিষুব অঞ্চলের জন্য। আমাদের বাংলাদেশে কেন্দ্রবিমুখী বলের প্রভাব হবে আরও কম। এটি নির্ভর করবে কোনো অঞ্চল বিষুব রেখা থেকে কত দূরে আছে তার উপর। আবর্তন বেগ জেনে নিয়ে আপনিও বের করতে পারেন কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্যে এই প্রভাব কতটুকু। 
Category: articles
এক কথায় বললে বলতে হয়, পৃথিবীর আবর্তন বেগ ঘণ্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। তবে এই মান সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিস্তারিত জেনে নিই, চলুন।
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরছে
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করে চলছে। এই আবর্তনের কারণেই ক্রমান্বয়ে রাত দিন হয়, সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ঘটে। পশ্চিম থেকে পূবে এই আবর্তনের জন্যেই উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে দুটি মেরুর উদ্ভব ঘটেছে।
আরও পড়ুনঃ  পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে মেরু থাকলেও পূবে পশ্চিমে মেরু নেই কেন

পৃথিবীর আবর্তন বেগ কিন্তু সর্বত্র সমান নয়। বিষুব অঞ্চল তথা দুই মেরুর ঠিক মাঝখানে এই বেগ সর্বোচ্চ। অন্য দিকে,  বিষুব অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে নিকটবর্তী হতে থাকলে বেগ কমতে থাকে। ঠিক মেরুবিন্দুতে বেগ শুন্য। এটা বোঝার জন্যে উপর্যুক্ত লিঙ্কে একটি উদাহরণ দিয়েছিলাম। এখন ভিন্ন একটি দিচ্ছি।
মনে করুন, আপনি একটি সুতার প্রান্তবিন্দুতে একটি বল বেঁধে সুতাসহ বলটিকে চারপাশে ঘোরাচ্ছেন। তাহলে দেখবেন, সুতার একেবারে প্রান্তবিন্দুতে বেগ সর্বোচ্চ। সুতার কোন বিন্দু আপনার হাতের যত নিকটে হবে তত বেগ হবে কম। ঐ ঘূর্ণন পথের কেন্দ্রবিন্দুতে বেগ হবে জিরো। কারণ সেটি ঘুরছেই না।
কল্পনায় পৃথিবীকে একবার পশ্চিম থেকে পূবে চক্কর দেওয়ান। অথবা একটি টেনিস বল বা কমলা হাতে নিয়ে একইভাবে ঘোরান। দেখবেন প্রান্তবিন্দুর দিকে ক্রমান্বয়ে বেগ কম এবং একেবারে মেরুতে জিরো।
অবশ্য, এখানে আমরা রৈখিক বেগের কথা বলেছি। ঘূর্ণায়মান বস্তুর জন্যে আরেকটি বেগ হল কৌণিক বেগ। সেটি কিন্তু প্রতিটি বিন্দুতে একই হবে। কারণ, প্রতিটি বিন্দুই সমান সময়ে সমান পথ তথা ৩৬০ ডিগ্রি অতিক্রম করবে।

এখন, আসুন নিজেরাই বের করে ফেলি পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত।
আমরা জানি সমবেগের জন্য সূত্র হল S = vt।
এখানে, S = অতিক্রান্ত দূরত্ব,
           v= বেগ এবং
           t= সময়
তাহলে পাই, বেগের সূত্র হবে,
বেগ বের করতে হলে আমাদের অতিক্রান্ত দূরত্ব (S) ও এই দূরত্ব পাড়ি দিতে অতিবাহিত সময় (t) জানতে হবে।
আমরা জানি, পৃথিবী প্রায় ২৪ ঘন্টায় একবার আবর্তন সম্পন্ন করে। আর বিষুব রেখা বরাবর এর পরিধি হল ৪০, ০৭৫ কিমি.। এই পথই আমরা (আসলে আমরা না, যারা বিষুব অঞ্চলে বাস করে) পৃথিবীর বুকে বসে পাড়ি দেই ২৪ ঘণ্টায়।
তাহলে, বিষুব অঞ্চলে আবর্তন বেগ = (৪০০৭৫ ÷২৪) কিমি./ঘণ্টা। 
অর্থ্যাৎ ঘন্টায় প্রায় ১৬৭০ কি.মি। মাইলের হিসাবে এই বেগ হল ঘণ্টায় ১০৭০। এসআই এককে হিসেব করলে হবে সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। 

এই বেগ কিন্তু বিষুব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকলে পৃথিবীর আবর্তন অক্ষের দূরত্ব কাছে চলে আসবে। ফলে, ঐ বিন্দুর সাপেক্ষে পরিধি তথা ২৪ ঘণ্টায় অতিক্রান্ত পথ আরো কম হবে। [উপরের চিত্রটি দেখুন]
বিষুব অঞ্চল ছাড়া অন্য অঞ্চলে বেগ বের করার জন্য আমাদেরকে মূল বেগের সাথে ঐ স্থানের অক্ষাংশের cos এর মান গুণ করতে হবে। 
তাহলে, ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে পৃথিবীর আবর্তন বেগ হবে 
v = 1670 × cos 45 km/h 
= 1670 × 0.707 
= 1180 km/h। 
অর্থ্যাৎ ঘণ্টায় ১১৮০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৩২৮ মিটার। 

আমাদের ঢাকায় পৃথিবীর আবর্তব বেগ কত হবে?
ঢাকার অক্ষাংশ হল 23.7 ডিগ্রি উত্তর। 
তাহলে, বেগ, v = 1670 ×  (cos 23.7) = 1529 km/h  
অর্থ্যাৎ, ঘণ্টায় ১৫২৯ কিমি. বা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪২৪ মিটার। 
এত বিশাল বেগে ঘুরছি আমরা! তাহলে পৃথিবী থেকে পড়ে যাচ্ছি না কেন
জানতে হলে এই নিবন্ধটি পড়ুন। 

সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়াঃ Earth
২. নাসা

Category: articles

শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪

মহাবিশ্বের বয়স কত- এই প্রশ্নটি অবশ্যই কৌতূহলোদ্দীপক। আসলে মহাবিশ্বের বয়স গণনা শুরু হয়েছে বিগ ব্যাঙের পর থেকে- যখন সময় গণনা শুরু। তার আগে সময়েরই অস্তিত্ব ছিল না, অন্তত আমাদের কাছে পরিমাপ করার কোন হাতিয়ার নেই।
মহাবিশ্বের বয়সের নকশা
মহাবিশ্বের বয়সের ব্যাপারে সবচেয়ে সুসঙ্গত তথ্য হচ্ছে ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর বা প্রায় ১৪ বিলিয়ন তথা ১৪০০ কোটি বছর। তো কিভাবে মাপা হল মহাবিশ্বের বয়স? এর উপায় আছে দুটি। দুটোরই কৃতিত্ব হাবলের।
প্রথম উপায় হচ্ছে ছায়াপথসমূহের (Galaxy) বেগ ও দূরত্ব পরিমাপের মাধ্যমে। যেহেতু ছায়াপাথসমূহ একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে (কিঞ্চিৎ ব্যতিক্রম ছাড়া), তাহলে আমরা বলতেই পারি, অতীতের কোন এক সময় এরা সবাই যুক্ত ছিল।
বর্তমানে গ্যালাক্সিদের বেগ, পারস্পরিক দূরত্ব ও এর সাথে মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের হার কাজে লাগিয়ে আমরা বের করতে পারি, এই অবস্থানে আসতে তাদের কত সময় লেগেছে। আর এই সময়টাই তো মহাবিশ্বের বয়স! আর এভাবে উত্তরটা পাওয়া গেছে প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর।
মহাবিশ্বের বয়স বের করার আরেকটি উপায় হল, সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্রপুঞ্জগুলোর (star clusters) বয়স বের করা। কারণ, মহাবিশ্ব এতে অবস্থিত কোন জ্যোতিষ্কের চেয়ে কম বয়সী হতে পারে না। পারে কি?
আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়েকে প্রদক্ষিণরত বটিকাকার (Globular) নক্ষত্রপুঞ্জগুলো এখন পর্যন্ত আমাদের খুঁজে পাওয়া প্রাচীনতম বস্তু। এসব নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত তারকাগুলোর (Star) ব্যাপক বিশ্লেষণে তাদের বয়স পাওয়া গেছে প্রায়  ১৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন বছর।
এই দুই মেথডের মিল আমাদেরকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী  করেছে যে আমরা তাহলে মনে হয় মহাবিশ্বের সঠিক বয়স জেনে ফেলেছি!

সূত্রঃ
১. হাবল সাইট
২. স্পেইস ডট কম
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

আমাদের সৌরজগতের আকার নিয়ে দেওয়া পোস্টে বলেছিলাম  সৌরজগতের সর্বশেষ চৌহদ্দি প্রায় ২ আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত। এত বিস্তৃত আয়তন কিন্তু সমগ্র মহাবিশ্বের (Universe) সামান্যই অংশ।
বিশাল মহাবিশ্ব

এখন, মহাবিশ্বের আকার সম্পর্কে অপ্রিয় সত্য কথা হল, আমরা এর সঠিক আকার বা সাইজ জানি না। এটা অসীমও হতে পারে। সমগ্র মহাবিশ্বের ক্ষুদ্র একটি অংশই শুধু আমরা দেখতে পাই।
তবে, আমরা জানি মহাবিশ্বের বয়স ১৪ বিলিয়ন  (বা ১৪০০ কোটি) বছর। তাহলে, মহাবিশ্বের ভেতর দিয়ে আলো মাত্র ১৪ বিলিয়ন বছর চলাচলের সুযোগ পেয়েছে। অতএব, আমরা পৃথিবীতে বসে এখন পর্যন্ত মহাবিশ্বের  সর্বোচ্চ যে দূরত্ব পর্যন্ত  দেখতে পাই তা হল ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। এটা হচ্ছে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের সীমানা, সমগ্র মহাবিশ্বের নয়।

খোলা সাগরের একটি জাহাজের মত পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাঁদের টেলিস্কোপকে যে কোন দিকে ঘুরিয়ে ১৪ বিলিয়ন বছর আগের অবস্থা দেখে নিতে পারেন। তাহলে, ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষের ব্যাসার্ধবিশিষ্ট একটি দৃশ্যমান গোলকের ঠিক মাঝখানে পৃথিবী। সাবধান! এখান থেকে ধারণা করা যাবে না যে পৃথিবী মহাবিশ্বের কেন্দ্র। মূলত মহাবিশ্বের কেন্দ্রই নেই (কেন?)
খোলা সমদ্রের জাহাজের মতই আমরা বলতে পারি না, মহাবিশ্বের কোথায় আমরা আছি। আমরা উপকূল দেখি না বলেই যেমনি বলা যাবে না যে আমরাই সমুদ্রের কেন্দ্রে আছি, তেমনি মহাবিশ্বের প্রান্ত সীমা দেখি না বলেই দাবী করতে পারি না, আমরাই মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছি।
এ থেকে দেখা যাচ্ছে, দৃশ্যমান মহাবিশ্ব যে গোলক তৈরি করে, তার ব্যাস ২৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ। আসলে এই দৃশ্যমান গোলকের আকারও আরও বেশি। কারণ, ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের বিগ ব্যাঙ সময়ের কোন কণাকে দেখার পরও তো মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হতে থেকেছে। ফলে, সেই কণা এখন ৪৬ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। ফলে, দৃশ্যমান মহাবিশ্বের ব্যাস দাঁড়াচ্ছে ৯২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ

সূত্রঃ
১. হাবলসাইট
২. স্পেইস ডট কম
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...