মহাবিশ্বের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব ও কোয়ান্টাম মেকানিক্স দুইটি আলাদা ধারণা তুলে ধরে। অনেক পদার্থবিদেরই বিশ্বাস, এমন কোন তত্ত্ব নিশ্চয়ই আছে যা এই দুই মতবাদকে একই সুতোয় গাঁথবে। এমন মতবাদেরই একজন দাবিদার হল সুপারস্ট্রিং থিওরি বা সংক্ষেপে স্ট্রিং থিওরি (String Theory)। স্ট্রিং শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল দড়ি, সুতা, আঁশ, তন্তু বা মালা।
কোন কণা নয়, একটি সুতা মাত্রঃ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রনসহ মৌলিক কিছু অতিপারমাণবিক কণিকা (Subatomic Particles) সম্পর্কে জানতে পারে। আমাদের জানা মতে, বস্তুর গঠনের পেছনে দায়ী এরাই। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কীভাবে এই কণিকাগুলো চলাচল করে ও একে অপরের সাথে আচরণ করে। কিন্তু এই আচরণ বের করতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে একাধিক প্রশ্নের।
স্ট্রিং থিওরির মতে, এইসব অতিপারমাণবিক কণিকার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। এই তত্ত্ব তাদের বদলে হাজির করছে স্পন্দনশীল (Vibrating) সুতা যা অতি ছোট হওয়ায় বর্তমান যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রত্যেকটি স্ট্রিং বা সুতা একটি লুপ বা ফাঁসে আবদ্ধ থাকতে পারে, আবার মুক্তও থাকতে পারে। স্ট্রিং এর কম্পনকেই আমরা বিভিন্ন কণিকা মনে করি এবং এই কম্পন থেকেই আমরা নানা কণিকার আকার ও ভর ধারণা করি।
বিন্দু-সদৃশ কণিকাকে স্ট্রিং কী করে প্রতিস্থাপন করতে পারে? অতিপারমাণবিক জগতে কোন কিছুর স্পন্দনের কম্পাঙ্ক (frequency) ও তার শক্তির (Energy) মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। অন্য দিকে, আবার আইন্সটাইনের বিখ্যাত E=mc2 সূত্র আমাদের বলে যে, ভর (Mass) ও শক্তিও পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তা বজায় রাখে। তাহলে, কোন বস্তুর কম্পনের হার তথা কম্পাঙ্ক ও ভরেরও একটি সম্পর্ক থাকবে। বন্ধুর বন্ধু যেভাবে বন্ধু হয় অনেকটা সেই রকম আর কি!
স্ট্রিং থিওরির মূলে আছে ঠিক এই সম্পর্কটাই।
মহাবিশ্বের মাত্রা কয়টিঃআইন্সটাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মহাবিশ্বের জন্য অনেকগুলো মাত্রার দরজা খুলে দিল। আপেক্ষিকতা চার মাত্রায় যেমন খাটে তেমনি খাটতে পারে চল্লিশ মাত্রায়ও। কিন্তু স্ট্রিং থিওরি কাজ করে শুধু দশ বা এগার মাত্রায় (Dimension)। স্ট্রিং তত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলে, মহাবিশ্বে মাত্রার সংখ্যা সীমিত হয়ে যাবে।
আমরা শুধু চারটি মাত্রার সাথেই পরিচিত। স্ট্রিং থিওরির বাকি মাত্রাগুলো কোথায়? বিজ্ঞানীদের ধারণা, এগুলো একটি সংকীর্ণ স্থানে বেঁকে আছে। স্থান ক্ষুদ্র হলে, স্ট্রিং এর মাপকাঠিতে (10-33 সে.মি.) আমরা তা দেখতে পাব না। অথবা, অন্য মাত্রাগুলো এত বড়ও হতে পারে যে তা পরিমাপ করা আমদের সাধ্যাতীত।
প্রমাণের সন্ধানেঃ১৯৯৬ সালে, সান্তা বারবারার তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এন্ড্রু স্ট্রমিঙ্গার এবং হার্ভাডের কামরান ভাফা একটি ব্ল্যাক হোলের সিমুলেশন করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিজর্ডার বা এনট্রপি ছিল মাত্রাতিরিক্ত। বিজ্ঞানী জ্যাকব বেকেন্সটাইন ও স্টিফেন হকিং ও দুই দশক আগে এমন একটি সিমুলেশন করেছিলেন। তখন কেউ বুঝতে পারেনি, একটা ব্ল্যাক হোলে কী করে এত এনট্রপি থাকতে পারে।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রাপ্ত ব্ল্যাক হোলদের মত করে প্রচলিত পদ্ধতিতে স্ট্রমিঙ্গার ও ভাফা ব্ল্যাক হোল তৈরি করেননি। তাঁরা এটা বানান (সিমুলেশন করেন) স্ট্রিং থিওরি দিয়ে। ফলে অভিকর্ষের মৌলিক বল যা ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির জন্য দায়ী ও জটিল তত্ত্বের মধ্যে লিঙ্ক তৈরি হয়। প্রথাগত কণার ধারণার বদলে স্ট্রিং তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তাঁরা সম্ভাব্য একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের (সব মৌলিক বল একই উৎস থেকে আসা) বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পেরেছেন।
স্ট্রিং থিওরিই 'থিওরি অভ এবরিথিং' কিনা এটা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু, মহাবিশ্বের অভ্যন্তরীণ জগত ব্যখ্যার অন্যতম দাবিদার এই তত্ত্ব।
আরো পড়ুন নিয়মিত বিভাগঃ ব্ল্যাক হোলের গভীরে
সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ String theory
স্ট্রিং থিওরি অনুসারে কণিকারা আসলে স্ট্রিং এর স্পন্দন |
কোন কণা নয়, একটি সুতা মাত্রঃ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রনসহ মৌলিক কিছু অতিপারমাণবিক কণিকা (Subatomic Particles) সম্পর্কে জানতে পারে। আমাদের জানা মতে, বস্তুর গঠনের পেছনে দায়ী এরাই। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কীভাবে এই কণিকাগুলো চলাচল করে ও একে অপরের সাথে আচরণ করে। কিন্তু এই আচরণ বের করতে গিয়ে মুখোমুখি হতে হয়েছে একাধিক প্রশ্নের।
স্ট্রিং এর অবস্থান |
স্ট্রিং থিওরির মতে, এইসব অতিপারমাণবিক কণিকার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। এই তত্ত্ব তাদের বদলে হাজির করছে স্পন্দনশীল (Vibrating) সুতা যা অতি ছোট হওয়ায় বর্তমান যন্ত্রপাতি দিয়ে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রত্যেকটি স্ট্রিং বা সুতা একটি লুপ বা ফাঁসে আবদ্ধ থাকতে পারে, আবার মুক্তও থাকতে পারে। স্ট্রিং এর কম্পনকেই আমরা বিভিন্ন কণিকা মনে করি এবং এই কম্পন থেকেই আমরা নানা কণিকার আকার ও ভর ধারণা করি।
বিন্দু-সদৃশ কণিকাকে স্ট্রিং কী করে প্রতিস্থাপন করতে পারে? অতিপারমাণবিক জগতে কোন কিছুর স্পন্দনের কম্পাঙ্ক (frequency) ও তার শক্তির (Energy) মধ্যে একটি সম্পর্ক আছে। অন্য দিকে, আবার আইন্সটাইনের বিখ্যাত E=mc2 সূত্র আমাদের বলে যে, ভর (Mass) ও শক্তিও পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তা বজায় রাখে। তাহলে, কোন বস্তুর কম্পনের হার তথা কম্পাঙ্ক ও ভরেরও একটি সম্পর্ক থাকবে। বন্ধুর বন্ধু যেভাবে বন্ধু হয় অনেকটা সেই রকম আর কি!
স্ট্রিং থিওরির মূলে আছে ঠিক এই সম্পর্কটাই।
মহাবিশ্বের মাত্রা কয়টিঃআইন্সটাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব মহাবিশ্বের জন্য অনেকগুলো মাত্রার দরজা খুলে দিল। আপেক্ষিকতা চার মাত্রায় যেমন খাটে তেমনি খাটতে পারে চল্লিশ মাত্রায়ও। কিন্তু স্ট্রিং থিওরি কাজ করে শুধু দশ বা এগার মাত্রায় (Dimension)। স্ট্রিং তত্ত্বের প্রমাণ পাওয়া গেলে, মহাবিশ্বে মাত্রার সংখ্যা সীমিত হয়ে যাবে।
আমরা শুধু চারটি মাত্রার সাথেই পরিচিত। স্ট্রিং থিওরির বাকি মাত্রাগুলো কোথায়? বিজ্ঞানীদের ধারণা, এগুলো একটি সংকীর্ণ স্থানে বেঁকে আছে। স্থান ক্ষুদ্র হলে, স্ট্রিং এর মাপকাঠিতে (10-33 সে.মি.) আমরা তা দেখতে পাব না। অথবা, অন্য মাত্রাগুলো এত বড়ও হতে পারে যে তা পরিমাপ করা আমদের সাধ্যাতীত।
প্রমাণের সন্ধানেঃ১৯৯৬ সালে, সান্তা বারবারার তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এন্ড্রু স্ট্রমিঙ্গার এবং হার্ভাডের কামরান ভাফা একটি ব্ল্যাক হোলের সিমুলেশন করেন। ব্ল্যাক হোলটির ডিজর্ডার বা এনট্রপি ছিল মাত্রাতিরিক্ত। বিজ্ঞানী জ্যাকব বেকেন্সটাইন ও স্টিফেন হকিং ও দুই দশক আগে এমন একটি সিমুলেশন করেছিলেন। তখন কেউ বুঝতে পারেনি, একটা ব্ল্যাক হোলে কী করে এত এনট্রপি থাকতে পারে।
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রাপ্ত ব্ল্যাক হোলদের মত করে প্রচলিত পদ্ধতিতে স্ট্রমিঙ্গার ও ভাফা ব্ল্যাক হোল তৈরি করেননি। তাঁরা এটা বানান (সিমুলেশন করেন) স্ট্রিং থিওরি দিয়ে। ফলে অভিকর্ষের মৌলিক বল যা ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির জন্য দায়ী ও জটিল তত্ত্বের মধ্যে লিঙ্ক তৈরি হয়। প্রথাগত কণার ধারণার বদলে স্ট্রিং তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে তাঁরা সম্ভাব্য একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের (সব মৌলিক বল একই উৎস থেকে আসা) বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পেরেছেন।
স্ট্রিং থিওরিই 'থিওরি অভ এবরিথিং' কিনা এটা এখনও স্পষ্ট নয়। কিন্তু, মহাবিশ্বের অভ্যন্তরীণ জগত ব্যখ্যার অন্যতম দাবিদার এই তত্ত্ব।
আরো পড়ুন নিয়মিত বিভাগঃ ব্ল্যাক হোলের গভীরে
সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ String theory