Advertisement

Friday, February 6, 2015

বাদামী বামনঃ ব্যর্থ তারকাদের গল্প

ইতোপূর্বে আমরা বিভিন্ন ধরণের তারকার পরিচয় জেনেছিলাম। এতে অন্যতম শ্রেণী ছিল বাদামী বামন (Brown Dwarf)। এদেরকে বলা হয় ব্যর্থ তারকাকেন এরা ব্যর্থ? বাদামী বামনদের সাথে বড় বড় গ্রহের পার্থক্য কী? এদেরকে গ্রহ বলা হয় না কেন? এসব প্রশ্নের জবাব নিয়ে আজকের পোস্ট।
গ্যাস ও ধূলিকণার বিশাল পুঞ্জ সংকুচিত হয়ে জন্ম হয় একেকটি তারকার। তারকার প্রধান লক্ষণই হচ্ছে এর কেন্দ্রের নিউক্লিয় ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে আলো, তাপ সৃষ্টি করা। কিন্তু বাদামী বামন তারকাদের ভর (Mass) এত বেশি নয় যে অভিকর্ষীয় চাপ নিউক্লিয় সংযোজন বিক্রিয়া সংঘটিত করতে পারবে। আর এই ব্যর্থতাই তাদের কপালে ব্যর্থ তারকার তিলক পরিয়ে দিয়েছে।
অন্যান্য প্রধান ক্রমের তারকাদের মতই জীবন শুরু হয় বাদামী এই তারাদের। প্রধান ক্রমের তথা Main Sequence নক্ষত্রদের ক্ষেত্রে অভিকর্ষীয় চাপে বস্তুপিণ্ডটি ভেতরের দিকে সংকুচিত হতে থাকে যতক্ষণ না এটি হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরির কারখানায় পরিণত হয়। কিন্তু বাদামী বামনের কখোনই সেই ধাপে পৌঁছতে পারে না। হাইড্রোজেন ফিউশন শুরু হবার আগেই সে পৌঁছে যায় স্থিতিশীল অবস্থায়।

বিভিন্ন ভর ও তাপমাত্রার বাদামী বামনদের দেখা মেলে। এদের ভর বৃহস্পতির ১৩ থেকে ৯০ গুণ বা সূর্যের প্রায় এক দশমাংশ পর্যন্ত হতে পারে। আমরা জানি তারকাদেরকে তাদের বর্ণালীর ভিত্তিতে শ্রেণিবিভক্ত করা হয়। M জাতের তারকারা হল সফল তারকাদের মধ্যে সবচেয়ে শীতল এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ। বেশিরভাগ এম তারকারাই লোহিত বামন হলেও কিছু আছে বাদামী বামন।
পরিচিত বামনদের মধ্যে Y dwarfs হচ্ছে সবচেয়ে শীতল। এদের কোনটার তাপমাত্রা বাসার উনুনের সমান, কোনটা আবার মানবদেহের সমান উষ্ণ। ফলে, এরা সামান্য আলো ও শক্তি বিকিরণ করে। ফলে, এদেরকে শনাক্ত করাই কঠিন হয়ে পড়ে। এ কারণেই ১৯৮০ সালের আগ পর্যন্ত এদের আলোচনা শুধু বই পুস্তকেই সীমিত ছিল, দেখা যায়নি চাক্ষুষ। সম্ভবত, এ কারণেই এদেরকে আগে কালো বামন (Black Dwarfs) বলে ডাকা হত। কিন্তু, এখন এই নামে ডাকা হয় শ্বেত বামনদের চূড়ান্ত দশাকে যখন তারা সবটুকু তাপ বিকিরিত করে ফেলে।

এতই যখন সমালোচনা, তখন বেচারারদের কেন গ্রহ বলা হয় না?
এদের এত অল্প ভরের কারণের এদের পরিচয়কে গ্রহের সাথে তালগোল পাকিয়ে ফেলার সুযোগ আছে। উপরন্তু, দিন দিন গ্যাসীয় দৈত্য জাতের গ্রহদের সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে এই তারকাগুলোতে ফিউশনের অভাবের ফলে, অনেকে তাদেরকে গ্রহ বলার সাহস দেখাতে পারেন।
গ্রহদের সাথে অন্যতম পার্থক্যটি হচ্ছে নিজস্ব আলো থাকা। গ্রহদের কিন্তু নিজের আলো নেই। তাহলে, সন্ধ্যার আকাশে সন্ধ্যাতারা বা ভোরে শুকতারাসহ কত গ্রহই তো আলো দেয়? আরে ভাই! ওগুলোতো চাঁদের মতই সূর্যের আলোই প্রতিফলিত করে। বাদামী বামনের অতিরিক্ত শীতল হয়ে যাবার আগ পর্যন্ত লাল এবং অবলোহিত আলো (Infrared ) বিকিরণ করে। শীতল হয়ে গেলে দেয় এক্সরে এবং অবলোহিত আলো।
এরপরেও, গ্রহ এবং বাদামী বামনদের মাঝখানের সীমানা রেখা খুবই চিকন। কিছু বাদামী বামন ঠাণ্ডা হয়ে গ্যাস দানব গ্রহদের মত বায়ুমণ্ডল তৈরি করেছে। বাদামী বামনদের চারদিকে প্রদক্ষিণরত গ্রহ থাকতে পারে, আর গ্রহদের থাকে উপগ্রহ। এখন পর্যন্ত জানা বৃহত্তম গ্রহ ওয়াসপ-১৭বি (WASP-17b) হচ্ছে। এর আকার বৃহস্পিতির দ্বিগুণ হলেও ভর প্রায় অর্ধেক। অন্য দিকে, সবচেয়ে ভারী গ্রহ হচ্ছে ডেনিস পি (DENIS-P )। এর ভর বৃহস্পতির ২৮ গুণেরও বেশি। ফলে, এই গ্রহ হয়ে পড়েছে বিতর্কিত। অনেকে একে দাবী করছেন বাদামী বামন বলে।  তাহলে, গ্রহ এবং বাদামী বামন নক্ষত্রদের উপযুক্ত সীমারেখা কী?


মহাকাশের বস্তুপিণ্ডদের সংজ্ঞা দেবার দায়িত্ব হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতির (International Astronomical Union)। তাদের মতে যে বস্তুপিণ্ড ডিউটেরিয়াম (হাইড্রোজেনের ২ ভর বিশিষ্ট আইসোটপ) জ্বালাতে পারে, তাকে তারকা বলা যাবে। আর বৃহস্পতি গ্রহের ১৩ গুণ পর্যন্ত ভর বিশিষ্ট বস্তুকে বলা হবে গ্রহ (এটা গ্রহের সংজ্ঞা নয়, সীমানা)।
সূত্রঃ
[১] space.com
[২] উইকিপিডিয়া 


Advertisement 02

Abdullah Al Mahmud

লেখকের পরিচয়

আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ। প্রভাষক, পরিসংখ্যান বিভাগ, পাবনা ক্যাডেট কলেজ। এর আগে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন EAL-এ। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে। সম্পাদনা করছেন Stat Mania বিশ্ব ডট কম। পাশাপাশি লিখছেন বিজ্ঞানচিন্তা, ব্যাপন পাই জিরো টু ইনফিনিটিসহ বিভিন্ন ম্যাগাজিনে। অসীম সমীকরণ মহাবিশ্বের সীমানা নামে দুটি বই লেখার পাশাপাশি অনুবাদ করেছেন অ্যা ব্রিফার হিস্ট্রি অব টাইম । লেখকের এই সাইটের সব লেখা এখানে ফেসবুক | পারসোনাল ওয়েবসাইট