মহাবিশ্বের সম্ভাব্য আকৃতি |
শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩
বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩
সৌরজগতের পাঁচ বামন গ্রহের একটি মাকিমাকি। প্লুটো, এরিস, হাউমেয়ার মতো এর অবস্থানও কাইপার বেল্ট অঞ্চলে। এলাকাটা নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে। বরফ দিয়ে গড়া।
বামন গ্রহ মাকিমাকি। ছবিসূত্র: ইউনিভার্স টুডে |
☛ উজ্জ্বলতার পরিমাপ
☛ একদিন কত বড়? (লেখা আসছে...)
জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাসে মাকিমাকি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। একই রকম গুরুত্ব আছে আরেক বামন গ্রহ এরিসের। এই দুই বস্তু আবিষ্কারের ফলেই আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি গ্রহের সংজ্ঞা পাল্টানোর ব্যাপারে ভাবতে থাকে। তৈরি হয় বামন গ্রহ নামে নতুন এক ধারণা।
☛ প্লুটো যেভাবে গ্রহত্ব হারাল
মাকিমাকি প্রথম জ্যোতির্বিদদের চোখে ধরা পড়ে ২০০৫ সালে। পালোমার মানমন্দিরের তিন বিজ্ঞানী মাইকেল ব্রাউন, চ্যাড ট্রুজিলো ও ডেভিড র্যাবিনোউইটয একে দেখেন। ২০১৬ সালে নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ বামন গ্রহটির একটি চাঁদ খুঁজে পায়। এখনও অবশ্য স্বীকৃতি পায়নি চাঁদটি।
মাকিমাকির ব্যাসার্ধ ৭১৫ কিলোমিটার। পৃথিবীর নয় ভাগের এক ভাগ। সূর্য থেকে দূরত্ব ৪৫.৭ এইউ। সূর্য থেকে আলো পৌঁছতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা ২০ মিনিট। সূর্য থেকে অনেক দূরত্বের কারণে বস্তুটির পৃষ্ঠ অনেক শীতল। ফলে এতে জীবনের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়।
☛ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?
☛ পৃথিবীতে সূর্যের আলো পৌঁছতে কত সময় লাগে? (লেখা আসছে...)
এর গঠন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নেই। নেই শনি, ইউরেনাসদের মতো বলয়। কাইপার বেল্টে এর আশেপাশে প্রচুর বরফের বস্তু আছে। এরা তৈরি হয়েছিল সৌরজগতের একেবারে শুরুর যুগে। আজ থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে। এদেকে কাইপার বেল্ট্ব্র বস্তু, ট্রান্সনেপচুনিয়ান বা প্লুটোয়েড বলে ডাকা হয়।
বস্তুটার পৃষ্ঠ ঠিক কেমন তা এতদূর থেকে বোঝা যায় না। তবে যতটুকু বোঝা যায় তাতে প্লুটোর লাল-বাদামী মনে হয়। পৃষ্ঠে মিথেন ও ইথেনের অস্তিত্ব মিলেছে। খুব হালকা বায়ুমন্ডল আছে। এতে মূলত আছে নাইট্রোজেন।
সূত্র: নাস সোলার সিস্টেম পোর্টাল
বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩
আজ ১৯ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহাকাশে প্রেরণ করা হয় সালিউট ১। এটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রেরিত প্রথম মহাকাশ স্টেশন। রাশিয়ার সালিউট প্রোগ্রামের শেষ মডিউলটিই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের রুশ অংশের প্রধান অঙ্গ হয়।
সালিউট ১ স্পেস স্টেশন। সূত্র: নাসা |
☛ মহাশূন্যে প্রথম অ্যামেরিকান স্টেশন
স্টেশনে মানুষ পাঠানোর অংশ হিসেবে সয়ুজ ১০ যানে ৩ জন নভোচারী পাঠানো হয়। তবে সে যাত্রা সফল হয়নি। পরবর্তীতে সয়ুজ ১১ যানে অন্য ৩ জন নভোচারী সালিউটে পৌঁছেন। ২৩ দিন অবস্থান করে চালান নানান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।
তবে ৩ নভোচারী পৃথিবীতে ফেরার পথে শ্বাসকষ্টে মারা যান। পৃথিবীর কারমান রেখা উপরে এটাই মৃত্যুর একমাত্র ঘটনা। কারমান রেখা পৃথিবীর ১০০ কিলোমিটার উপরে। এটাকে পৃথিবী ও মহাশূন্যের একটি সীমানা হিসেবে ধরা হয়।
☛ পৃথিবী ও মহাশূন্যের একটি সীমানা কোথায়?
১৯৭১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে স্টেশনটিকে আরও উপরের কক্ষপথে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যেন কক্ষপথ থেকে নেমে গিয়ে ধ্বংস না হয়। অন্যদিকে চলছিল সয়ুজ পুননির্মাণ। তবে তা হতে হতে সালিউটের জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। ১১ অক্টোবর তারিখে এ অভিযান শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৭৫ দিন মহাকাশে থেকে সালিউট ১ প্রশান মহাসাগরের উপরে জ্বলে যায়।
অরায়ন ১ মহাকাশ মানমন্দির স্থাপন করা ছিল এ স্টেশনে। এখান থেকে সংগ্রহ করা হয় নক্ষত্রের অতিবেগুনী বর্ণালী। ভিক্টর পাতসায়েব ছিলেন টেলিস্কোপটির অপারেটির। এএ মধ্য দিয়ে তিনি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে টেলিস্কোপ চালানো প্রথম মানুষ হবার গৌরব অর্জন করেন৷
মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩
সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩
মহাকর্ষের পাল্লা অসীম। মানে আপনি একটি ভারী বস্তু থেকে যত দূরেই যান, এর আকর্ষণ আপনাকে টানবেই। তবে দূরত্বের সাথে সাথে আকর্ষণ কমে আসবে। দূরত্ব দ্বিগুণ হলে আকর্ষণ হবে চার ভাগের এক ভাগ। তিন গুণ হলে হবে নয় ভাগের এক ভাগ।
আকর্ষণ কমতে কমতে তাই একটা জায়গায় হয়ে পড়ে দুর্বল ও নগণ্য। পৃথিবী থেকেও উপরে যেতে থাকলে ঘটবে এমনটা। এমনি এক কাল্পনিক রেখার নাম কারমান লাইন। অবস্থান সমুদ্র স্তর থেকে ১০০ কিলোমিটার। সাধারণ বিমানের সাহায্যে এ রেখার ধারেকাছেও যাওয়া অসম্ভব।
কারমান রেখা অতিক্রমের সময় কিন্তু কোনো শারীরিক বা ভৌত পরিবর্তন অনুভূত হয় না। রেখাটার অস্তিত্ব প্রয়োজন নানান আইনী কারণে। আকাশযানের নীতিমালা এ রেখায় গিয়ে বদলে যায়।
কারমান রেখার সংজ্ঞায়ন করেছে ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশন (এফএআই)। সুইশ প্রতিষ্ঠানটি এয়ার স্পোর্টস ও মামুষের উড্ডয়ন বিষয়ক ব্যাপারগুলো সংজ্ঞায়ন করে৷ মহাশূন্যের সীমানা নিয়ে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছে। তবে এফএআইএর সংজ্ঞাই বহুল স্বীকৃত। মেনে নিয়েছে জাতিসংঘও। অবশ্য নাসা ও অ্যামেরিকান মিলিটারি ৫০ মাইলকে (৮০ কিলোমিটার) মহাশূন্যের শুরু হিসবে ধরে নেয়।
সূত্র
১। https://www.space.com/karman-line-where-does-space-begin
শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩
অবজারভেটরি ইংরেজি শব্দ। বাংলা করা হয় মানমন্দির। তবে এ থেকে এর সঠিক অর্থ বোঝা কঠিন। আরেকটি বাংলা হলো পর্যবেক্ষণকেন্দ্র। এটা শুনেই আইডিয়া পাওয়া যাচ্ছে। আসলেই তাই। অবজারভেটরি মানে হলো এমন জায়গা যেখান থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
প্যারানাল মানমন্দির, চিলি। সূত্র: উইকিপিডিয়া |
অবজারভেটরি মূলত জ্যোতির্বিদ্যায় কাজে লাগে। তবে সমুদ্র, আগ্নেয়গিরি ও আবহাওবিদ্যায়ও আছে ব্যবহার।
অবস্থানের ভিত্তিতে জ্যোতির্বিদ্যায় অবজারভেটরি আছে চার ধরনের। এগুলো থাকে মহাকাশে, বায়ুমন্ডলে, ভূমিতে বা ভূগর্ভে। ভূমির ভাল অবজারভেটরিগুলো সাধারণত পাহাড়ের উপর স্থাপন করা হয়। এতে করে পরিষ্কার আকাশ ও বায়ু পাওয়া যায়। এছাড়াও অবস্থান হতে হয় শহর থেকে দূরে। যাতে আলোকদুষণ ক্ষতি করতে না পারে।
ইংল্যান্ডের রয়েল গ্রিনউইচ অবজারভেটরি আধুনিক সময়ের অন্যতম প্রথম মানমন্দির। এখানেই পৃথিবীর দ্রাঘিমা শূন্য ধরা হয়। এ দ্রাঘিমা শূন্য হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮ ডিগ্রি থেকে ৯২ ডিগ্রি। আতাকামা লার্জ মিলিমিটার অ্যারে একটি বিশাল টেলিস্কোপ। মহাবিশ্বের শীতল জিনিসগুলো এখান থেকে দেখা হয়। পুয়ের্তো রিকোয় আছে অ্যারেসিবো মানমন্দির। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধানের জন্য এটি বিখ্যাত। এখানে আছ এক হাজার ফুটের রেডিও টেলিস্কোপ।
অ্যামেরিকার মাউনা কেয়া আরেক বিখ্যাত মানমন্দির। সমুদ্র স্তর থেকে ১৪ হাজার ফুট উপরে এর অবস্থান। তবে পৃথিবীর উচ্চতম মানমন্দির এটি নয়। সে রেকর্ড দখল করে রেখেছে ইউনিভার্সিটি অব টোকিও আতাকামা অবজারভেটরি (TAO)। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ১৮,৫০০ ফুট বা ৫,৬৪০ মিটার। চিলির আরেক বিখ্যাত মানমন্দির প্যারানাল। এটি পরিচালনা করে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি।
সূত্র
১। https://thetraveltester.com/famous-observatories
২। https://wowtravel.me/the-12-best-astronomical-observatories-around-the-world/
বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২
পৃথিবী থেকে এত দূরের একটা জিনিস খালি চোখেই দেখা যায়! কী অসাধারণ ও অকল্পনীয় ব্যাপার। ভাবতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শিহরণ নেমে যায়। তাই তো অ্যানড্রোমিডা হয়ে ওঠেছে গল্প-কবিতার উপদান।
বলা হয়ে থাকে, খালি চোখে দেখা সম্ভব সবচেয়ে দূরের বস্তু এই অ্যানড্রোমিডা। যদিও আকাশ ও দৃষ্টি ভাল থাকলে ট্রায়াংগুলাম গ্যালাক্সিও দেখা যায়। অ্যানড্রোমিডার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। আর ট্রায়াংগুলামের ২৭ লাখ।
☛ প্রতিবেশী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা
চলুন দেখে নেই, রাতের আকাশে কখন কীভাবে খুঁজে পাব অ্যানড্রোমিডাকে।
দেখার জন্যে প্রথমেই লাগবে একটি অন্ধকার আকাশ। কৃত্রিম আলোর ঝলক যেখানে থাকবে না। দেখার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। এ সময় উত্তর গোলার্ধের সন্ধ্যার পূর্ব আকাশেই দেখা দেয় ছায়াপথটা। মধ্যরাতের দিকে প্রায় মাথার উপরের দিকে চলে আসে।
অক্টোবর মাসের দিকে উত্তর আকাশে ইংরেজি এম বা ডাব্লিউ (W) আকৃতির ক্যাসিওপিয়া খুব সহজেই দেখা যায়। এটা একটা তারামণ্ডল। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার নাম শেডার। এই তারাটিই আপনাকে অ্যানড্রোমিডার দিকে নিয়ে যাবে। ছায়াপথটা আছে একই নামের তারামণ্ডলের মধ্যেই।
পেতে অসুবিধা হলে শেডার নক্ষত্রের সাথে পাশের দুটি নক্ষত্র নিয়ে একটা ত্রিভুজ বানান। এবার শেডার ত্রিভুজের যে শীর্ষে আছে সেদিকে ত্রিভুজের দৈর্ঘ্যের তিনগুণ যান।
ক্যাসিওপিয়া থেকে অ্যানড্রোমিডা |
অ্যানড্রোমিডাকে আরেকভাবেও খুঁজে নেওয়া যায়। এজন্য আপনাকে বের করতে পেগাসাস ঘোড়ার বিশাল বর্গচিত্রটি। এর আলফেরাজ তারাটি পেগাসাসের সাথে অ্যানড্রোমিডাকে যুক্ত করেছে। এবার খুঁজে নিন মাইরাক ও মিউ অ্যানড্রোমিডা তারা দুটি। মাইরাক থেকে মিউর দিকে দাগ টেনে এদের দূরত্বের সমান গেলেই পেয়ে যাবেন অ্যানড্রোমিডা।
মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০
দেখলে মনে হবে অনিন্দ্য সুন্দর বাহারি এক প্রজাপতি বুঝি ডানা মেলে আছে। নীল, রক্তিম ও লালে গড়া তার দেহখানা। দেখে মনে হবে, ডানা দোলাতে দোলাতে তারার জগতকে পেরিয়ে যাচ্ছে বুঝি।
মহাজাগতিক প্রজাপতি |
এই দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতিটি আছে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আর আসল পরিচয়? একটি গ্রহ নেবুলা। লোহিত দানব নক্ষত্রদের জীবনের অন্তিম দশায় এদের থেকে নির্গত আয়নিত, জ্বলজ্বল করা ও প্রসারণশীল গ্যাসকে বলে গ্রহ নেবুলা (planetary nebula)। ছবিটি তুলেছে ইউরোপিয়ান স্পেস অবজারভেটরি (ESO)। ব্যবহার করা হয়েছে চিলিতে অবস্থিত ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ।
আরও পড়ুন
☛ গ্রহ নেবুলা কীভাবে তৈরি হয়?
প্রজাপতিটির ভারিক্কি নাম এনজিসি ২৮৯৯। অবস্থিত দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে। পৃথিবী থেকে ৩,০০০ থেকে ৬,৫০০ আলোকবর্ষ দূরে।
বয়স বেশিদিন হয়নি। নক্ষত্রের চারপাশে যে গ্যাসের যে খোলস আছে সেটা অতিবেগুনি আলোয় জ্বলে ওঠে। এভাবেই গ্যাসগুলো হয়ে ওঠে উজ্জ্বল। তবে কাজটি খুব বেশিদিন ধরে ঘতে না। মাত্র কয়েক হাজার বছর। তীব্র বিকিরণের ধাক্কায় এরপরেই ভেঙে যায় গ্যাসের কণাগুলো।
সূত্র: সিএনএন
বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০
তারিখ: ২১ আগস্ট, ২১২৬। মহাপ্রলয়
স্থান: পৃথিবী
পৃথিবীর নানা প্রান্তে হতাশায় আচ্ছন্ন অনেকগুলো মানুষ লুকানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। কোটি কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ পালিয়েছে ভূমির গভীরে। আশ্রয় নিয়েছে গুহা বা খনির দেয়ালে। কেউ আবার সাবমেরিনে চেপে সাগরে ডুব দিয়েছে। কেউ কেউ বেপরোভাবে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে। তবে অধিকাংশ মানুষই হতবুদ্ধি ও বিষণ্ণ হয়ে বসে আছে। অপেক্ষা করছে শেষ পরণতির জন্যে।
আকাশের অনেক উঁচুতে আলোর একটি বড় রেখা দেখা যাচ্ছে। শুরুতে শুধু দেখা গিয়েছিল হালকা ধোঁয়ার মুদু বিকিরণ। একদিন সেটাই মহাশূন্যের বুকে গড়ে তুলল ফুটন্ত গ্যাসের প্রচণ্ড ঘুর্ণি। গ্যাসের ওপরের দিকে একটি কালো, কুৎসিত ও ভয়ানক জিনিস দেখা যাচ্ছে। ধূমকেতুটির ক্ষুদ্র মাথা দেখে এর ভয়ানক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা আঁঁচ করা কঠিন। সেকেন্ডে প্রায় চল্লিশ হাজার মাইল বেগে এটি ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। প্রতি সেকেন্ডে দশ মাইল। লক্ষ কোটি টন বরফ ও পাথর শব্দের সত্তর গুণ বেগে পৃথিবীতে আঘাত হানার জন্যে প্রস্তুত।
দেখা ও অপেক্ষা করা ছাড়া মানুষের করার কিছুই নেই। অনিবার্য পরিণতির মুখে পড়ে বিজ্ঞানীরা বহু আগেই টেলিস্কোপ থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছেন। নিরবে বন্ধ করে দিয়েছেন কম্পিউটার। দূর্যোগের সঠিক আচরণ এখনও সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না। যেটুকু জানা গেছে, সেটাই এত ভয়াবহ যে তা সাধারণ মানুষকে জানানো ঠিক হবে না। কোনো কোনো বিজ্ঞানী টিকে থাকার কিছু পূর্ণাঙ্গ কৌশল তৈরি করেছেন। নিজেদের টেকনিক্যাল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অন্যদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার ইচ্ছে তাদের। কেউ কেউ দূর্যোগটিকে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণের চেষ্টারত। শেষ দিনটি পর্যন্তও তাঁরা তাঁদের সত্যিকার বিজ্ঞানীসুলভ আচরণ বজায় রাখতে চাচ্ছেন। পৃথিবীর গভীরে রাখা টাইম ক্যাপসুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সে উপাত্ত। উদ্দেশ্য, ভবিষ্যৎ বংশধররা যাতে সেটা কাজে লাগাতে পারেন।
সংঘর্ষের মুহূর্ত আরও ঘনিয়ে এল। সারা পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ ভয়ে ভয়ে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। শেষ তিনটি মিনিট।
গ্রাইন্ড জিরোর ঠিক ওপরে আকাশ বিদীর্ণ হয়ে গেল। এক হাজার ঘন মাইল পরিমাণ বায়ু ছুটে গেল একদিকে। একটি শহরের আকারের চেয়েও বেশি পরিমাণ ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে ভূমির দিকে এগিয়ে আসছে। পনের সেকেন্ড পরেই আঘাত হানল ভূপৃষ্ঠে। দশ হাজার ভূমিকম্পের সমান আঘাতে কেঁপে ওঠল পৃথিবী। স্থানান্তরিত বাতাসের শক ওয়েভ উড়ে যাচ্ছে পৃথিবী পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে। ভেঙে পড়ল স্থাপনাগুলো। যেটাই সামনে পড়ল, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। সংঘর্ষের স্থানের চারপাশে সমতল ভূমিতে একটি বৃত্তাকার তরল পাহাড় তৈরি হলো। উচ্চতা কয়েক মাইল। একশো মিটার চওড়া গর্ত দিয়ে পৃথিবীর ভেতরের বস্তু বেরিয়ে আসছে। গলিত পাথরের দেয়াল ঢেউ তুলে ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। এ তীব্র আঘাতের সামনে ভূপৃষ্ঠ যেন সামান্য একটি কম্বল।
গর্তের ভেতরের লক্ষ কোটি টন পাথর বাষ্পীভূত হয়ে গেছে। তার চেয়ে অনেক বেশি ছিটকে ওপরে উঠে যাচ্ছে। কিছু কিছু চলে যাচ্ছে মহাকাশের দিকেও। এর চেয়ে বেশি পরিমাণে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অর্ধ-মহাদেশ এলাকা জুড়ে। এরপর পতিত হচ্ছে শত শত, এমনকি হাজার হাজার মাইল দূরের এলাকায়। যেখানেই তা পড়ছে, ঘটাচ্ছে মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ। কিছু কিছু নিক্ষিপ্ত পদার্থ গিয়ে পড়ছে সাগরে। সেট থেকে শুরু হচ্ছে সুনামি। ফলে দূর্যোগের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেল। ধুলোময় ধ্বংসাবশেষের একটি বড় অংশ বায়ুমণ্ডলে উঠে গেল। সূর্য পুরোপুরি ঢাকা পড়ে গেল। সূর্যের আলোর মুখ দেখা যাচ্ছে না পৃথিবীর কোথাও থেকেই। তার বদলে দেখা যাচ্ছে শত কোটি উল্কার পৈশাচিক ঝলকানি। তীব্র উত্তাপ পাঠিয়ে এরা ঝলসে দিচ্ছে মাটির পৃথিবী। কারণ বিচ্ছিন্ন খণ্ডগুলো মহাশূন্য থেকে ফের ফিরে আসছে বায়ুমণ্ডলে।
উপরের দৃশ্যপটটি একটি অনুমান। সু্ইফট টাটল (Swift-Tuttle) নামের একটি ধূমকেতু ২১২৬ সালের ২১ আগস্ট তারিখে পৃথিবীতে আঘাত হানবে। যদি সেটাই ঘটে, বৈশ্বিক দূযোর্গ অবধারিত। ইতি ঘটবে মানুষেরও। ১৯৯৩ সালে একে দেখার পরে হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেল ২১২৬ সালে আসলেও একটি সংঘর্ষ হতে যাচ্ছে। পরে সংশোধিত হিসাবে দেখা যায়, এটি এক সপ্তাহের জন্যে পৃথিবীকে মিস করবে। অল্পের জন্য বাঁচা। আমরা এর দিক থেকে নিশ্চিন্তেই থাকতে পারি। তবে বিপদ যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। আজ হোক, কাল হোক, সুইফট টাটল বা এরই মতো কেউ পৃথিবীতে আঘাত হানবেই। হিসেব করে দেখা গেছে, অর্ধ-কিলোমিটার বা তারও বেশি চওড়া দশ হাজার বস্তুর কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের ওপর দিয়ে গেছে। বিশাল বিশাল এই উপদ্রপগুলোর জন্ম সৌরজগতের বহিঃস্থ শীতল এলাকায়। কিছু কিছু হলো ধূমকেতুর ধ্বংসাবশেষ। আটকা পড়ে আছে গ্রহদের মহাকর্ষীয় বাঁধনে। অন্যদের উৎপত্তি গ্রহাণু বেষ্টনীতে (asteroid belt)। জায়গাটা মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে। কক্ষপথের ভারসাম্যহীনতার কারণে এরা নিয়মিত সৌরজগতে আসা-যাওয়া করছে। আকারে ছোট হলেও এদের প্রতিক্রিয়া ভয়ঙ্কর। পৃথিবী ও অন্য গ্রহদের স্থায়ী বিপদের কারণ।
এ বস্তুগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পৃথিবীর সবগুলো নিউক্লিয়ার অস্ত্রের চেয়েও বেশি ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম। যে-কোনো সময় কোনো একটি আঘাত হানতে পারে। সেটা মানুষের জন্যে একটি খারাপ খবরই হবে। সেটা হবে মানব ইতিহাসের একটি আকস্মিক ও নজিরবিহীন প্রতিবন্ধক। কিন্তু পৃথিবীর ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনা মোটামুটি নিয়ম মেনে চলে। ধূমকেতু বা গ্রহাণুর এ মাত্রার সংঘর্ষ গড়ে কয়েক মিলিয়ন১ বছরে একবার ঘটে। অনেকের বিশ্বাস, এ ধরনের এক বা একাধিক ঘটনার ফলেই সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। পরের বার হয়ত আমাদের পালা।
অনেক ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষেরা আরমাগেডনে২ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। বাইবেলের বুক অব রিভিলেশন পুস্তকে এ যুদ্ধে সংঘটিত হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির ভালো একটি বিবরণ দেওয়া আছে। সেটা এ রকম:
এরপর এল বিদ্যুত চমক, বজ্রধ্বনি ও গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। সাথে একটি তীব্র ভূমিকম্প। মানুষ পৃথিবীতে পা ফেলার পরে এত বড় ভূমিকম্প আর কখনও আর ঘটেনি। এটা এতই তীব্র ছিল। বিভিন্ন দেশের শহরগুলো ভেঙে পড়ল। দ্বীপগুলো হারিয়ে গেল। দেখা যাচ্ছে না পাহাড়গুলোও। আকাশ থেকে এক একটি একশো পাউন্ড৩ ওজোনোর শিলাবৃষ্টি পড়ল মানুষের মাথা ওপর। শিলাবৃষ্টির প্রকোপে মানুষ ঈশ্বরকে গালাগাল করতে লাগল। প্রকোপটা আসলেই ভয়াবহ ছিল।
অবশ্যই পৃথিবী আরও নানা রকম প্রতিকূল ঘটনার শিকার হতে পারে। বিপুল পরিমাণ বলের বাঁধনে পরিব্যপ্ত মহাবিশ্বে পুঁচকে একটি বস্তু এই পৃথিবী। এত কিছুর পরেও অন্তত সাড়ে তিন শ কোটি বছর ধরে আমাদের গ্রহটি প্রাণ ধারণের উপযোগী হিসেবেই আছে। তবে গ্রহটিতে আমাদের সাফল্যের পেছনে রহস্য কিন্তু মহাকাশই। সেটা অনেকভাবেই। বিশাল শূন্যতার মহাসাগরে আমাদের সৌরজগত ক্ষুদ্র একটি সক্রিয় অঞ্চল। আমাদের নিকটতম নক্ষত্রের (সূর্যের পরে) অবস্থান চার আলোকবর্ষ৪ দূরে। এই দূরত্ব কত বেশি সেটা বুঝতে হলে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সূর্য থেকে মাত্র সাড়ে আট মিনিটের মধ্যে আলো নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল পথ পেরিয়ে আসে। চার বছরে তো অতিক্রম করে ২০ ট্রিলিয়ন (২০ লক্ষ কোটি) মাইলেরও বেশি পথ।
সূর্য একটি আদর্শ বামন নক্ষত্র। অবস্থান আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের (Milky Way galaxy) একটি আদর্শ অঞ্চলে। এ ছায়াপথে নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার কোটি। কারও ভর সূর্যের কয়েক শতাংশ। কারও কারও ভর আবার সূর্যের এক শ গুণ। এরা ধীরে ধীরে ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরছে। ঘুরছে ছায়াপথে থাকা প্রচুর পরিমাণ গ্যাসীয় মেঘ ও ধুলো, অজানা সংখ্যক ধূমকেতু ও গ্রহাণু, গ্রহ এবং কৃষ্ণগহ্বরও। এই বিপুল পরিমাণ বস্তুর উপস্থিতির কথা শুনে মনে হতে পারে, ছায়াপথটি বুঝি বিভিন্ন বস্তু দিয়ে কানায় কানায় ভর্তি। এ ধারণা ভুল। আসলে, ছায়াপথটির দৃশ্যমান অংশ প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ পরিমাণ চওড়া। আকৃতি হলো থালার মতো। কেন্দ্রীয় অংশটা একটু স্ফীত। একে ঘিরে ছড়িয়ে আছে কয়েকটি সর্পিল বাহু। বাহুগলো গড়া নক্ষত্র ও গ্যাসীয় পদার্থ দ্বারা। এমনই একটি সর্পিল বাহুতে রয়েছে আমাদের সূর্য। কেন্দ্র থেকে এটি আছে প্রায় ত্রিশ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।
আমরা যতদূর জানি, আকাশগঙ্গা ছায়াপথে খুব ব্যতিক্রমধর্মী কিছুই নেই। একই রকম আরেকটি ছায়াপথ হলো অ্যান্ড্রোমিডা। এটি আছে আমাদের থেকে বিশ লাখ আলোকবর্ষ দূরে। আকাশের অ্যান্ড্রোমিডা তারামণ্ডলের দিকে এর অবস্থান৫। খালি চোখে একে ঝাপসা ছোপ ছোপ আলোর মতো মনে হয়। বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র সাজিয়ে রেখেছে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব। কোনোটি সর্পিল, কোনোটি উপবৃত্তাকার, কোনোটি আবার নির্দিষ্ট আকারহীন। দূরত্বের মাপাকাঠি এখানে বিশাল। শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথও আলাদাভাবে দেখা সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো এদের আলো আমাদের কাছে পৌঁছতেই পৃথিবীর বয়সের (সাড়ে চারশো কোটি বছর) চেয়ে বেশি সময় লেগে গেছে।
এই বিশাল ফাঁকা স্থানের উপস্থিতির অর্থ হলো মহাকাশে সংঘর্ষের ঘটনা খুব বেশি ঘটে না। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিপদ লুকিয়ে আছে এর আশেপাশেই। গ্রহাণুদের কক্ষপথ সাধারণত পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে না। এদের বড় অংশই মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানের গ্রহাণু বেষ্টনীতেই থাকে সব সময়। তবে বৃহস্পতির বিপুল ভর গ্রহাণুদেরকে কক্ষপথ থেকে ছিটকে দিতে পারে। ফলে এদের কোনো কোনোটি সূর্যের দিকে চলে আসে। ডেকে আনে পৃথিবীর বিপদ।
আরেকটি বিপদ হলো ধূমকেতু। মনে করা হয়, দর্শনীয় এ বস্তুগলোর উৎপত্তি সূর্য থেকে প্রায় এক আলোকবর্ষ দূরের একটি মেঘপুঞ্জে। এখানে দোষ বৃহস্পতির নয়। দায়ী বরং নিকটস্থ নক্ষত্ররা। ছায়াপথ স্থির বসে নেই। শুধু নক্ষত্রগুলোই ছায়াপথ কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে না, ছায়াপথ নিজেও ধীরে ধীরে আবর্তন করছে। সূর্য তার সঙ্গী গ্রহদেরকে নিয়ে প্রায় ২০ কোটি বছরে ছায়াপথকে পুরো একবার ঘুরে আসে। এ যাত্রাপথে মুখোমুখি হতে হয় নানা রকম অভিজ্ঞতার। নিকটবর্তী নক্ষত্ররা ধূমকেতুর মেঘকে নাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু কিছু ধূমকেতু তখন ছিটকে আসবে সূর্যের দিকে। ধূমকেতুরা সৌরজগতের ভেতরের দিকে চলে এলে সূর্যের উত্তাপে এদের উদ্বায়ী পদার্থ বাষ্পীভূত হয়ে যায়। সৌর বায়ুর ধাক্কায় একটি লম্বা প্রবাহ তৈরি হয়। এটাই ধূমকেতুর বিখ্যাত লেজ। সৌরজগতের ভেতরের দিকে চলে এলেও ধূমকেতুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ হবার সম্ভাবনা খুব কম। ক্ষতি ধূমকেতুও করে। তবে তার দোষ কিন্তু পড়ে পথে দেখা হওয়া নক্ষত্রের ওপর। তবে আমাদের ভাগ্য ভাল যে নক্ষত্রের মাঝের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটে না।
ছায়াপথের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে আরও কিছু বস্তু আমাদের দিকে চলে আসতে পারে। যেমন ছায়াপথে ভেসে চলা গ্যাসের বড় বড় মেঘপুঞ্জ। এরা অনেক চিকন হলেও সৌরবায়ুকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। প্রভাবিত করতে পারে সূর্য থেকে আসা তাপের প্রবাহকে। অন্ধকার মহাশূন্যে আরও নানান ভয়নাক জিনিস লুকিয়ে থাকতে পারে। যেমন, বিচ্ছিন্ন গ্রহ, নিউট্রন নক্ষত্র, বাদামী বামন, কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি৬। এরাসহ আরও অনেকেই আমাদের অজান্তেই আমাদের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। সৌরজগতে ঘটে যেতে পারে টালমাটাল অবস্থা।
বিপদ আরও ভয়াবহও হতে পারে। কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ মনে করেন, সূর্য হয়ত একটি দ্বি-তারা৭ জগতের অংশ। আমাদের ছায়াপথের আরও বহু নক্ষত্রের অবস্থাই এমন। প্রস্তাবিত সূর্যের এই সঙ্গী তারাটির নাম নেমেসিস। তবে অস্তিত্ব থাকলেও এটা হবে অনেক বেশি অনুজ্জ্বল। দূরত্ব হবে অনেক বেশি। এজন্যই এখনও একে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে এর গতি ধীর হলেও মহাকর্ষের মাধ্যমে এটি উপস্থিতির জানান দিতে পারে। মাঝে মাঝে দূরের ধূমকেতুদের গতিপথ পাল্টে পাঠিয়ে দিতে পারে পৃথিবীর দিকে। পরিণতিতে ঘটবে একের পর এক সাংঘাতিক সংঘর্ষ। ভূতাত্ত্বিকেরা দেখেছেন যে নিয়মিত বিরতিতে বড় আকারের বাস্তুগত (ecological) বিপর্যর ঘটে। এটা ঘটে প্রতি ৩০ লাখ বছর পরে একবার।
আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে জ্যোতির্বিদরা জানলেন, সম্পূর্ণ ছায়াপথরাই সংঘর্ষ বাঁধাতে পারে। আকাশগঙ্গার সাথে আরেকটি ছায়াপথের ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা কেমন? এমন কিছু প্রমাণ অবশ্য আছেই। নক্ষত্রদের দ্রুত চলাচল দেখে বোঝা যায়, ইতোমধ্যে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ নিকটস্থ ছায়াপথদের সাথে সংঘর্ষ করে নড়েচড়ে বসেছে। তবে নিকটস্থ দুটো ছায়াপথের সংঘর্ষ বাঁধলেই যে ছায়াপথ পরিবারের নক্ষত্রদেরও বিপর্যয় ঘটবে এমন কোনো কথা নেই। ছায়াপথদের ঘনত্ব এত কম যে নক্ষত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ না ঘটিয়েও এরা একে অন্যের সাথে মিশে যেতে পারে।
মহাপ্রলয়ের আলোচনা অধিকাংশ মানুষকে মুগ্ধ করে। তাঁদের কাছে মহাপ্রলয় মানে আকস্মিক ও দৃষ্টিকাড়া উপায়ে পৃথিবীর মৃত্যু। তবে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ার চেয়ে হঠাৎ মৃত্যুর মধ্যেই বিপদ কম। অনেকগুলো উপায়ে পৃথিবী ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে। যেমন, বাস্তুসংস্থানের ক্রমানবনতি, জলবায়ু পরিবর্তন বা সূর্য থেকে আসা তাপের পরিমাণের একটুখানি তারতম্য। ভঙ্গুর পৃথিবীতে এগুলো আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে না ফেললেও আরাম-আয়েশের জীবনে ইতি অবশ্যই ঘটাবে। তবে এ ধরনের পরিবর্তন ঘটতে হাজার হাজার বা এমনকি লক্ষ লক্ষ বছরও লেগে যায়। আধুনিক প্রযক্তির সাহায্যে মানুষ হয়ত এগুলোকে প্রতিরোধও করতে পারবে। যেমন, নতুন করে ধীরে ধীরে বরফ যুগের সূচনা হতে থাকলেও আমাদের সম্পূর্ণ বিপর্যয় ঘটবে না। সেটা ঘটার আগে সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজাবার জন্যে যথেষ্ট সময় হাতে থাকবে আমাদের। ধরে নেওয়া যায় যে একবিংশ শতাব্দীতেও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটতে থাকবে। ফলে এটা বিশ্বাসযোগ্য যে মানুষ বা তার বংশধররা ক্রমেই জগতের বড় কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে। ঠেকাতে পারবে বড় বড় সব দূর্যোগও।
তাত্ত্বিকভাবে কি মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে? হয়ত পারে। কিন্তু আমরা দেখব, অমরত্ব অর্জন করা সোজা কথা নয়। হয়ত সেটা অসম্ভবই। মহাবিশ্ব নিজেই ভৌত সূত্রের অধীন। সূত্রগুলোই এর জীবনচক্র বেঁধে দিয়েছে: জন্ম, বিবর্তন এবং হয়ত মৃত্যু। নক্ষত্রের নিয়তির সাথে আমাদের নিয়তি অনিবার্যভাবে জড়িয়ে আছে।
অনুবাদকের নোট:
১। এক মিলিয়ন সমান দশ লক্ষ
২। বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট অংশ অনুসারে পৃথিবীর শেষের দিকে একটি বড় যুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধের ময়দানের সত্যিকার বা প্রতীকি নাম হলো আরমাগেডন।
৩। এক পাউন্ড সমান ০.৪৫৩৬ কেজি। মানে, ১০০ পাউন্ড সমান প্রায় ৪৫ কেজি।
৪। এক আলোকবর্ষ হলো আলোর এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব।
৫। অ্যান্ড্রোমিডা একই সাথে একটি ছায়াপথ এবং একটি তারামণ্ডলের নাম। মহাকাশের বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান নির্দিষ্ট করার জন্যে পুরো আকাশের দৃশ্যমান গোলককে ৮৮টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রতিটিকে এক একটি তারামণ্ডল (constellation) বলে।
৬। এদের পরিচয় ও পার্থক্য দেখুন পরিশিষ্ট অংশে।
৭। বর্তমানে দ্বি-তারা বা ডাবল স্টার বলা হয় এমন দুটো তারাকে যাদেরকে পৃথিবী থেকে দেখতে খুব কাছাকাছি মনে হয়। বাস্তবে এরা নিজেদের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেও পৃথিবীর আকাশে কাছাকাছি অবস্থানে থাকতে পারে। আবার হতে পারে এরা একে অপর কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এদেরকে বাইনারি স্টার বা জোড়া তারা বলে। আলোচ্য অংশে দ্বি-তারা বলতে আসলে জোড়াতারাকে বোঝানো হয়েছে।
মূল: দ্য লাস্ট থ্রি মিনিটস, পল ডেভিস
অনুবাদ: আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ
সোমবার, ৪ মে, ২০২০
রানিং চিকেন নেবুলা। সূত্র: নাসা অ্যাপড |
হ্যাঁ, ছবিটা দেখলে অনেকের কাছেই মনে হবে একটি চিকেন দৌড়াচ্ছে বুঝি! তবে অনেকের কাছেই এটি আবার একটি নেবুলা। বাংলায় যাকে বলে নীহারিকা। যেখানে তৈরি হয় নতুন নতুন নক্ষত্ররা। নেবুলাটি আইসি ২৯৪৪ নামে নথিবদ্ধ আছে। এর বিস্তৃতি প্রায় ১০০ আলোকবর্ষ। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ৬ হাজার আলোবর্ষ। আকাশের Centaurus বা মহিষাসুর তারামণ্ডলের দিকে তাকালে পাওয়া যাবে একে।
বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯
চিত্র-১: তারার রং দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস |
চিত্র-২: বর্ণ ও সংখ্যা দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস |
২ নং চিত্রে একদিকে O থেকে Y পর্যন্ত তারকার রঙ অন্যদিকে ০-৯ পর্যন্ত প্রতিটি রঙের মধ্যে ১০ টি তাপমাত্রার ব্যান্ড দেখানো হয়েছে। O থেকে Y পর্যন্ত এবং ০-৯ পর্যন্ত তাপমাত্রা পর্যায়ক্রমে কমে যায়। নির্দিষ্ট বর্ণের পরে নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা রেখে সহজে তাপমাত্রা হিসেব করা যায়। 0 হচ্ছে সবচেয়ে গরম এবং ৯ সবচেয়ে শীতল। উদাহরণস্বরূপ, A0, A5 এর চেয়ে বেশি গরম, যা A9 এর চেয়ে গরম, যা F0 এর তুলনায় গরম। উপরে আলোচিত বিটলজুস M1 শ্রেণীর একটি তারকা।
পদ্ধতি-০২: আকার
চিত্র ৩: তারকার আকার থেকে শ্রেণিবিন্যাস |
পদ্ধতি-০৩: তারকার বর্ণালি
চিত্র ৪: বর্ণালি দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস |
পদ্ধতি-০৪: ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয়
চিত্র ৫: ধাতুর উপস্থিতির সাহায্যে শ্রেণিবিন্যাস |
কোনো তারকার মধ্যে ১% এরও বেশি ধাতু থাকলে তাকে ধাতু সমৃদ্ধ তারকা বলা হয়। এসব তারকাকে পপুলেশন-১ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। কোনো তারকার মধ্যে ১% ধাতু থাকলে তাকে ধাতু-দরিদ্র তারকা বলা হয়। এসব তারকাকে পপুলেশন-২ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। মহাবিশ্বের আদিকালে পপুলেশন-২ জাতের তারকারাজি গঠিত হয়েছিলো, কারণ তখন ধাতুর পরিমাণ কম ছিলো।
পদ্ধতি-০৫: উজ্জ্বলতার পরিবর্তন
সূত্র
উইকিহাউ ও উইকিপিডিয়া।
বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯
মহাবিশ্বের জন্মের আগেই কি নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল? |
আরও পড়ুন
☛ নক্ষত্র থেকে ব্ল্যাকহোল
কিন্তু সমাধান কি আদৌ হয়েছে? বয়সের সমস্যা হাজির হয়েছে আবারও। গত মাসের সম্মেলনে বয়স নিয়ে বেশ কজন বিজ্ঞানী নতুন করে হিসেব দিয়েছেন। কিছু দিন আগে হলেও এসব নতুন হিসেবকে কেউ পাত্তা দিতেন না। বিগ ব্যাংয়ের পরবর্তী সময়ে নির্গত হয় মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ (cosmic microwave background)। যার রেশ আছে আজকের পৃথিবী ও মহাবিশ্বেও। এই বিকিরণের তথ্য কাজে লাগিয়ে মহাবিশ্বের বয়সের নির্ভরযোগ্য হিসেব পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন
☛ মহাকর্ষ তরঙ্গ
সূত্র
১। দ্য ন্যাশনাল
২। উইকিপিডিয়া
সূত্র: অ্যাস্ট্রোনমি পিকচার অব দ্য ডে (নাসা)
সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯
একইভাবে কাজে লাগে রৈখিক বেগ (linear velocity)। বেগ মানে হলো অবস্থান পরিবর্তনের হার। যেমন ধরুন, একটি বস্তু ১ সেকেন্ডে ১০ মিটার পথ গেল। তাহলে তার বেগ হলো সেকেন্ডে ১০ মিটার। বা কেতাবি ভাষায় $10 ms^{-1}$ । একইভাবে আরেকটি বস্তু যদি ৫ সেকেন্ডে ২০ মিটার যায়, তাহলে তার বেগ হবে $\frac {20}{5}$ বা $4 ms^{-1}$। সহজ কথায় বলা যায়, এক সেকেন্ডে (বা এক মিনিটে, যদি আপনি ভিন্ন মাপকাঠিতে মাপতে চান) নির্দিষ্ট দিকে অতিক্রান্ত দূরত্বই হলো বেগের মান।
কোনো বস্তু একটি নির্দিষ্ট বেগে যেতে থাকলে এই বেগকে বলা হয় সমবেগ (uniform velocity)। এক্ষেত্রে বেগ বের করার সূত্র খুব সোজা। বেগকে v, দুরত্বকে s এবং সময়কে t দিয়ে প্রকাশ করা হলে বেগ হবে,
$$v = \frac{s}{t}$$
এই সূত্রটিরই ব্যবহার একটু আগে আমরা করেছি। তবে বেগ যদি সুষম না হয়, তাহলে আর এই সূত্র কাজ করবে না। অবস্থান পরিবর্তনের হারকে যেমন বেগ বলে, তেমনি বেগ পরিবর্তনের হারকে বলে ত্বরণ (acceleration)। অসমবেগের ক্ষেত্রে ত্বরণের মান কাজে লাগে।
এতক্ষণ আমরা যা বললাম তার সবই কিন্তু রৈখিক কথাবার্তা। কৌণিক দূরত্ব কখন কাজে আসে তার একটি উদাহরণ চিন্তা করা যাক। আমরা জানি, রাতের আকাশে ধ্রুব তারা সবসময় উত্তর আকাশে থাকে। বরাবর উত্তর দিকের দিগন্তের উপরে। সময় গড়াবার সাথে সাথে অন্যান্য তারা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লেও ধ্রুব তারা থাকে প্রায় একই জায়গায়।
আরও পড়ুন
☛ দিক নির্ণয়ে ধ্রুব তারা
ধ্রুব তারা দিয়ে অক্ষাংশ বের করার দারুণ একটি উপায় আছে। কোনো জায়গা থেকে ধ্রুব তারা দিগন্ত থেকে যত ডিগ্রি উপরে থাকবে, ঐ জায়গার অক্ষাংশ হবে তত ডিগ্রি। যেমন বাংলাদেশের অক্ষাংশ প্রায় ২৩ ডিগ্রি। ফলে ধ্রুবতারাকেও উত্তর দিগন্ত থেকে ২৩ ডিগ্রি উপরে চোখে পড়ে। এই যে ভূমি থেকে ২৩ ডিগ্রি উপরের এই দূরত্ব, এটা কিন্তু রৈখিক দূরত্ব নয়। বরং কৌণিক দূরত্ব।
খালি হাতে রাতের আকাশের কৌণিক দূরত্ব মাপার বিস্তারিত উপায় লেখা আছে এখানে।
এ তো গেল কৌণিক দূরত্বের কথা। অতএব, আগের মতোই, কৌণিক অবস্থান পরিবর্তনের হারই হলো কৌণিক বেগ। জ্যোতির্বিজ্ঞানে অসংখ্য জায়গায় এর ব্যবহার আছে। যেমন ধরা যাক সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের কথা। পৃথিবী মোটামুটি এক বছরে সূর্যকে পুরোটা ঘুরে আসে। একইভাবে চাঁদসহ কৃত্রিম উপগ্রহরা ঘোরে পৃথিবীর চারপাশে। এসব হিসাব-নিকাশে দরকার হয় কৌণিক বেগ।
কৌণিক বেগ মাপা হয় বস্তুর সাবেক ও বর্তমান অবস্থানের কৌণিক অবস্থান দিয়ে। অন্য কথায় দুই অবস্থানে উৎপন্ন কোণ দিয়ে।
কোনো বস্তু ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরলে পুরো এক ঘূর্ণন সম্পন্ন হয়। যেমন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পুরোটা একবার ঘুরে এলে ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরা হয়। ঘূর্ণন বৃত্তাকার না হলেও (যেমন কক্ষপথ কিন্তু উপবৃত্তাকার) পুরো ঘূর্ণনে ৩৬০ ডিগ্রি-ই হয়।
উপরে আমরা কৌণিক বেগকে ডিগ্রি আর সেকেন্ড দিয়ে প্রকাশ করেছি। তবে কোণের আন্তর্জাতিক একক হলো রেডিয়ান। সেই হিসেবে কৌণিক বেগের একক হলো প্রতি সেকেন্ডে অতিক্রান্ত রেডিয়ান। আমরা জানি, ১৮০ ডিগ্রিকে রেডিয়ান এককে বলা হয় π রেডিয়ান। তাহলে কোনো বস্তু অর্ধবৃত্ত ঘুরলে (উপরের ০ ডিগ্রি থেকে ১৮০ ডিগ্রি অবস্থানে এলে) π রেডিয়ান কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করা হবে। একইভাবে পুরো বৃত্ত ঘুরে অতিক্রম করা হবে 2π রেডিয়ান দূরত্ব। কৌণিক দূরত্বকে সাধারণত θ বা α দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
কৌণিক বেগ বের করার সূত্র হলো,
$$\omega = \frac{\theta}{t}$$
যেখানে $\omega$ (ওমেগা) হলো কৌণিক বেগ।
কৌণিক বেগের জন্যে যে অন্য কারও চারদিকে ঘুরে আসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যেমন পৃথিবী নিজ অক্ষের চারপাশেও ঘুরে। এ কারণেই দিন-রাত হয়। এখানে পুরো এক ঘূর্ণন, মানে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। মানে এক দিন।
রাতের আকাশের তারা খুঁজে পেতে কৌণিক বেগের কারিশমা দেখতে পড়ুন:
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প
কৌণিক দূরত্ব থেকে আমরা সহজেই রৈখিক দূরত্ব বের করতে পারি।
উপরে চিত্রে বৃত্তটির ব্যসার্ধ r। তাহলে এর পরিধি হলো 2πr। মনে করুন, একটি সুতা দিয়ে একটি বৃত্ত বানানো হলো। বানানোর পরে এর ব্যাসার্ধ r হলে সুতার দৈর্ঘ্য ছিল 2πr। পরিধি মানে এটাই। আরেকভাবে চিন্তা করা যায়। বৃত্তটিকে একটি চাকা হিসেবে কল্পনা করুন। তাহলে এই চাকা পুরো একবার ঘুরলে 2πr দূরত্ব অতিক্রম করবে। পুরো একবার ঘূর্ণন! কথাটা চেনা চেনা লাগছে না? হ্যাঁ, পুরো একবার ঘূর্ণনের মানে হলো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে আসা। রেডিয়ান এককে 2π কোণ। তবে π এর ব্যবহার দুই জায়গায় আলাদা। 2πr এর π-এর মান হলো ৩.১৪১৫... যা একটি অমূলদ ধ্রুবক। বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের ভাগফল। আর 2π কোণ যখন বলা হবে, তখন π মানে হলো ১৮০ ডিগ্রি কোণ। এখানে π এর একক আছে (রেডিয়ান, বা ডিগ্রিতে বললে ১৮০ ডিগ্রি)। কিন্তু 2πr এর π-এর কোনো একক নেই। একটি বিশুদ্ধ সংখ্যা।
উপরের তথ্য কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই কৌণিক আর রৈখিক বেগের সম্পর্ক বুঝতে পারি।
মনে করি, একটি বস্তু ১ মিনিটে পুরো বৃত্ত ঘুরে এল। ধরি, বৃত্তের ব্যসার্ধ (r) ১০ মিটার। বিশাল এক বৃত্ত! তাহলে এর রৈখিক বেগ কত?
উত্তর হবে,
$$v = \frac{2 \pi r}{60} = \frac{2 \pi × 5}{60} = 1.05 ms^{-1}$$
একইভাবে ১ মিনিটে ১৮০ ডিগ্রি (π রেডিয়ান) বা অর্ধবৃত্ত ঘুরে এলে রৈখিক বেগ হবে $\frac{\pi r}{60} ms^{-1}$।
তার মানে, রৈখিক বেগের সাথে কৌণের সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে।
বোঝাই যাচ্ছে, কোণের সাথে ব্যাসার্ধ গুণ করে সময় দিয়ে ভাগ দিলেই রৈখিক বেগ পাওয়া যাচ্ছে।
তার মানে, $v=\omega r$
উপরের সম্পর্ক থেকে বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্র থেকে যত দূরে যাওয়া হবে, রৈখিক দূরত্ব তত বেশি হতে হবে। মানে বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বেশি দূরে থাকলে সমান কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করতে বেশি রৈখিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। বাস্তবে এর অনেক উদাহরণ আছে। যেমন দুটি গাড়ি মোড় ঘুরছে। দুটি গাড়িই কিন্তু সমান কোণ নিয়ে ঘুরবে। কিন্তু যেটি দূরে দিয়ে ঘুরবে সেটিকে বেশি রৈখিক পথ অতিক্রম করতে হবে।
শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮
এমন ব্যাপারই ঘটছে এ মাসেও। গত মাসটাও প্রায় এমন ছিল। এক সাথে চারটি উজ্জ্বল গ্রহ। শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সন্ধ্যার পরই আকাশের পশ্চিম, ও দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশকে রাঙিয়ে রাখে চারটি গ্রহের মিলনরেখা।
শুক্র
চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। এছাড়া এ মাসে গ্রহটি একটু বেশিই উজ্জ্বল। মাসের শুরুতে সন্ধ্যার দেড় ঘণ্টা পরেও থাকছে দিগন্তের উপরে। তবে মাসের শেষের দিকে থাকবে মাত্র এক ঘণ্টা। মাসের ২১ তারিখে শুক্র সবচেয়ে উজ্জ্বল হবে।
আরও পড়ুন
☛ শুকতারার পরিচয়
আগস্ট মাসের ২৮ তারিখের সন্ধ্যার আকাশ। সূত্র: Stellarium |
আরও পড়ুন
☛ গ্রহ-নক্ষত্রদের কে কত উজ্জ্বল কীভাবে বুঝবেন?
☛ এক নজরে বৃহস্পতি
মাসের শুরুতে সন্ধ্যার প্রায় তিন ঘণ্টা আর মাসের শেষের দিকে প্রায় দুই ঘণ্টা পরে অস্ত যাবে বৃহস্পতি।
মঙ্গল
বর্তমান সময়ে লাল গ্রহটিকে সন্ধ্যার আকাশে খুব সহজে দেখা যায়। এক দিকে লাল বলে এমনিতেই নজরে পড়ে সহজে। তাও আবার এখন উজ্জ্বলতায় বৃহস্পতির সাথে দিচ্ছে টেক্কা। তবে দ্রুতই অনুজ্জ্বল হয়ে পড়ছে বেচারা। মাসের শুরুতে এটি শনির দশগুণ উজ্জ্বল হলেও মাসের শেষে থাকছে মাত্র ৫ গুণ উজ্জ্বল।
আরও পড়ুন
মঙ্গল গ্রহ লাল কেন?
শনি
শনিকে দেখা যাচ্ছে মঙ্গল ও বৃহস্পতির প্রায় মাঝে। ডুববে প্রায় মধ্য রাতে।
গত মাসের ছবি
শুক্র, চাঁদ ও চাঁদের প্রতিফলনের ছবি। ছবিটা তোলা পর্তুগালে। তুলেছিলেন হেনরিক ফেলিচিয়ানো সিলভা। সূত্র: Earthsky.org। |
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প
সুত্র:
১। Earthsky.org
২। Stellarium
রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮
আমরা সকলেই জানি যে, প্রাচুর্যতায় ভরপুর আমাদের এই পৃথিবী ছাড়া বিশ্বজগতের অন্য কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব এখন অবধি প্রমাণিত হয়নি। কোথায় প্রাণের বিকাশের পূর্বশর্ত হিসেবে সেখানে পানির উপস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয়। যার স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমাদের এই পৃথিবীতে রয়েছে। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন,পৃথিবীর চেয়েও বহুগুণ পানি রয়েছে আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ এবং উপগ্রহে! এখন মনে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্নের উদয় হতে পারে, পানি যেহেতু আছে, প্রাণ থাকবে না কেন? কিম্ভুতকিমাকার চেহারার সায়েন্স ফিকশনের সবুজ ঘড়িওয়ালা এলিয়েন থাকবে না কেন?
পানি মানেই কিন্তু যে স্বচ্ছ শীতল নির্মল পানি হতে হবে এমন নয়। অন্যান্য গ্রহের নানান প্রকার গ্যাস, গলিত পদার্থ, চাক চাক বরফকে আমরা সাধারণভাবে পানি বললেও- তা আসলে বহু যৌগ পদার্থের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হওয়া রাসায়নিক তরল। যেমন, বিজ্ঞানীদের ধারণা ইউরেনাসের হাইড্রোজেন-মিথেন এর পিছনে রয়েছে উত্তপ্ত এক সমুদ্র। এই সমুদ্রে পানির সাথে দ্রবীভূত আছে অ্যামোনিয়া।
মূল কথায় আসা যাক। এখন প্রথমত প্রশ্ন আসতে পারে- সৌরজগতের কোথায় সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে এবং তার পরিমাণ কতটুকু? মহাকাশ সংস্থা নাসার দেয়া পরিসংখ্যান দেখে নেয়ে যাক। নড়েচড়ে বসুন কিন্তু। কারণ বিজ্ঞানের তথ্যগুলো সাদা দৃষ্টিতে নয়, অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে দেখতে হয় ধীরেসুস্থে।
পৃথিবীতে তরল পানির পরিমাণ হলো ১.৩৩৫ জেটালিটার (Zettalitres ZL)। এক জেটালিটার মানে, একশ কোটি ঘন কিলোলিটার! সংখ্যায় লিখলে যা হবে, 1000000000000000000000 ঘন কিলোলিটার! কি, মাথায় চক্কর কাটছে?
আমাদের প্রিয়তম পৃথিবীর আয়তন হলো ১০৮৩.২১ জেটালিটার (পৃথিবী কঠিন পদার্থ হলেও তুলনার সুবিধার্থে আয়তনকে লিটারে প্রকাশ করা হয়েছে)। অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় পৃথিবীতে পানির পরিমাণ হলো মাত্র 0.12 শতাংশ! যা মূলত পৃথিবীর উপরিভাগে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সমুদ্রতলের সবচেয়ে গভীরতম খাদ ম্যারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতা প্রায় ১১ কিলোমিটার। অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠস্থ সর্বোচ্চ চূড়া এভারেস্টের চেয়েও ৩ কিলোমিটারের মতো গভীর! স্বাভাবিকভাবে মাটি খুঁড়তে থাকলে তিন কিলোমিটারের পরে আর পানি পাওয়া যাবে না। তারপর থেকে পৃথিবী আস্ত এক গমগমে আগুনের গোল্লা। যাকে ভিতরে রেখে আমাদের বসবাসের জন্যে পৃথিবীপৃষ্ঠ অনেকটা শীতলপাটির মতো বিছিয়ে আছে।
পৃথিবীর গঠন। প্রায় তিন কিলোমিটার গভীরে গেলেই কিন্তু পানির দেখা পাওয়া যাবে না। |
অন্যদিকে সৌরজগতের অন্যতম অধিবাসী ট্রিটনে তরল পানির আয়তন হলো, 0.03 জেটালিটার। আর তার আয়তন হলো 10.35 জেটালিটার। ট্রিটনের আয়তন অনুযায়ী তার মধ্যে পানি আছে ৬৫ শতাংশ! যেখানে পৃথিবীর আয়তন অনুযায়ী তাতে পানির পরিমাণ মাত্র ০.১২ শতাংশ।
সুতরাং, সহজেই বুঝে নেয়া যায় যে, আয়তনের পাল্লায় ট্রিটনের পানির পরিমাণ বহুগুণ বেশি! এটাই শেষ নয়, উদাহরণ এখনো বাকি আছে যে। বরং একগ্লাস পানি খেয়ে নিন। আর ভাবতে থাকুন, এই একগ্লাস পানি, ভূপৃষ্ঠের ০.১২ শতাংশ পানির কত শত জেটালিটার ক্ষুদ্র অংশ?
তারপর, চমৎকার সুন্দর গ্যাসীয় বলয় থাকা বামন গ্রহ প্লুটোর আয়তন হলো ৭.০১ জেটালিটার। আর প্লুটোতে পানির পরিমাণ হলো ১ জেটালিটার। যা তার আয়তনের ৬২ শতাংশ। বৃহস্পতিগ্রহের অন্যতম উপগ্রহ ইউরোপার আয়তন ১৬.০৬ জেটালিটার। আর তার অভ্যন্তরস্থ পানির পরিমাণ, ২.৬ জেটালিটার। যা আয়তনের ১৮ শতাংশ। শনির উপগ্রহ এনসেলেডাসের ৬৮% ই পানি দিয়ে পরিপূর্ণ।
শনির উপগ্রহ এনসেলেডাস |
১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর আবিষ্কার করা বৃহস্পতিগ্রহের ৬৭টি উপগ্রহের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সৌরজগত পরিবারের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ ক্যালিস্টর আয়তন হলো ৫৮.৬৩ জেটালিটার। যার অভ্যন্তরে তরল পানির পরিমাণ, ৫.৩ জেটালিটার। অর্থাৎ আয়তনের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বা এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি।
১৬৫৫ সালের ২৫ মার্চ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস- এর আবিষ্কার করা শনিগ্রহের বৃহত্তম এবং ঘন বায়ুমণ্ডল বিশিষ্ট একমাত্র উপগ্রহ টাইটানের আয়তন ৭১.৬০ জেটালিটার। আর তার মধ্যে তরল পানির অস্ত্বিত্ব রয়েছে ১৮.৬ জেটালিটার। টাইটানের মোট আয়তনের ৪৪ শতাংশ।
বৃহস্পতির সর্ববৃহৎ উপগ্রহ গ্যানিমিড সৌরজগতেরও সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। আকারে যা বুধগ্রহের চেয়েও বড়। গ্যানিমিড ৬ লাখ ২১ হাজার মাইল দূর দিয়ে বৃহস্পতিকে প্রদক্ষিণ করে। আয়তন হলো, ৭৬.২৯ জেটালিটার। আর তরল পানির আয়তন ৩৫.৪ জেটালিটার। যার প্রেক্ষিতে আয়তনের তুলনায় পানি হলো, ৬৯ শতাংশ।
বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে পানির পরিসংখ্যান। বড় করে দেখতে এখানে ক্লিক করুন। |
সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে বৃহত্তম উপগ্রহ গ্যানিমিডে। যাতে তরল পানির উপস্থিতি রয়েছে ৩৫.৪ জেটালিটার। যা তার আয়তনের ৬৯ শতাংশ। খেয়াল করেছেন কি পানির উপস্থিতিতে শীর্ষের দিকে থাকা ইউরোপা, ক্যালিস্টো, গ্যানিমিডের অবস্থান পৃথিবীর তুলনায় দশগুণ বিশাল সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতিতে। এখন তাহলে কি আমরা বলতে পারি না গ্রহের অন্তর্ভূক্ত পরিবার হিসেবে বৃহস্পতিগ্রহে সবচেয়ে বেশি পানি রয়েছে। বোধহয় পারি!
গ্যানিমিডসহ বৃহস্পতির প্রধান ৪টি উপগ্রহ। |
জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে
এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...