Advertisement

রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

আকাশের এলাকায় দুই ধরনের নকশা খুব দর্শনীয়। এক হলো তারামণ্ডল৷ যা পুরো আকাশকে ৮৮টি অঞ্চলে ভাগ করেছে। সব তারা, ছায়াপথ বা দূর আকাশে জিনিস কোনো না কোনো মণ্ডলে থাকবে।


দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড তারানকশা 



আরেকটি মজার জিনিস হলো তারানকশা। বিভিন্ন তারার সংমিশ্রণে তৈরি তারার সুন্দর নকশা। এমনই একটি নকশার নাম দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড। ডায়ামন্ড বা হীরার মতোই এর চারটি কোণা। বলাই বাহুল্য, চার কোণায় আছে চারটি উজ্জ্বল তারা৷

তারামণ্ডলের পরিচয়


তারানকশা কী?


এই নকশাটা মে-জুন মাস ও এর আগে পরে ভাল দেখা যায়। ডায়ামণ্ডের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা স্বাতী। রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের এক নম্বর উজ্জ্বল। জুনের শুরুতে রাত নয়টার দিকে ঠিক মাথার উপর থাকে। আরেকটি তারা চিত্রা (spica)। উজ্জ্বলতায় ক্রম ১৫। কন্যারাশির সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা৷

অপর দুই তারার একটি ডেনেবোলা। সিংহরাশির দ্বিতীয় নম্বর উজ্জ্বল তারা। অবস্থান কল্পিত সিংহের লেজে। আর চতুর্থ তারার নাম কর ক্যারোলি। সারমেয়যুগল মণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা।

খুঁজে পাওয়া একদম সোজা। স্বাতী ও চিত্রাকে পাওয়া যাবে সপ্তর্ষীকে কাজে লাগিয়ে। 



গ্রেট ডায়ামন্ড আকারে সপ্তর্ষির চেয়ে বড়। এর দক্ষিণের তিন তারা আবার আলাদা আরেকটি নকশা তৈরি করেছে। নাম বসন্ত ত্রিভুজ। মানে স্বাতী, চিত্রা ও ডেনেবোলা। ডেনেবোলার জায়গায় অনেকসময় সিংহমণ্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা রেগুলাসকে বসানো হয়।
Category: articles

মঙ্গলবার, ৬ জুন, ২০২৩

রাতের আকাশে কত শত-সহস্র তারকা দেখা যায়। হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরের তারা তো খালি চোখে প্রচুর দেখা যায়ই। এমনকি মিল্কিওয়ে থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ দূরের ত্রিকোণ ছায়াপথও দেখা যায় খালি চোখে। কিন্তু দেখা যায় না সূর্যের সবচেয়ে কাছের তারাটাকে।


আলফা সেন্টোরি এ ও বি নক্ষত্র। লাল বৃত্তের জায়গায় প্রক্সিমা সেন্টোরি। 

খালি চোখে কত তারা দেখা যায়?

হ্যাঁ, বলছি প্রক্সিমা সেন্টোরির কথা। তারাটার দূরত্ব পৃথিবী থেকে মাত্র ৪.২৫ আলোকবর্ষ। তাও খালি চোখে একে আপনি কখনোই দেখবেন না। কারণ আর কিছুই নয়, তারাটির অভ্যন্তরীণ উজ্জ্বলতা বা দীপ্তি (luminosity) অনেক কম৷ সূর্যের এক ভাগও না। মাত্র ০.১৬ ভাগ। পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় তিন হাজার কেলভিন৷ সূর্যের প্রায় অর্ধেক।

আবিষ্কৃত হয় ১৯১৫ সালে। এটি একটি লোহিত বামন তারা। সূর্যের মতো প্রধান ক্রমের তারাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও কম উষ্ণ হলো লোহিত বামন। তবে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে এরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। কম দীপ্তির কারণে এদের কাউকেই পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যায় না। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ৬০ তারার মধ্যে ৫০টাই লোহিত বামন।

সূর্য কীভাবে জ্বলে?

তারাটির ভর সূর্যের মাত্র ১২.৫ ভাগ। ঘনত্ব ৩৩ ভাগ। চওড়া সূর্যের ১৪ ভাগ। তবে তারাটার চৌম্বক সক্রিয়তার কারণে মাঝেমধ্যে উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়৷ চৌম্বক অঞ্চল তৈরি হয় পরিচলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে৷ ভর কমের কারণে এতে জ্বালানি পোড়ে খুব ধীরে। আবার পরিচলনের মাধ্যমে জ্বালানি পুরো নক্ষত্রে ছড়িয়ে যাওয়ায় এর আয়ু অনেক লম্বা। নক্ষত্রটা আরও ৪ ট্রিলিয়ন (৪ লক্ষ কোটি) বছর হাইড্রোজেন পুড়িয়ে যেতে থাকবে। যেখানে সূর্য এ কাজটা করবে আর মাত্র পাঁচশো কোটি বছর।

সূর্যের তুলনায় প্রক্সিমার সেন্টোরির আকার। 

জানা গ্রহ আছে দুটি। প্রক্সিমা সেন্টোরি বি ও ডি। সি নামে আরেকটা প্রস্তাবিত গ্রহ আছে। বি গ্রহটার অবস্থান নক্ষত্রের বাসযোগ্য অঞ্চলে। ভর পৃথিবীর ১.০৭ গুণ। ১১ দিনে নক্ষত্রকে ঘুরে আসে। ডি গ্রহটা কাজটা করে ৫ দিনেই।

১৯১ সালে স্কটিশ জ্যোতির্বিদ রবার ইনেস তারাটি আবিষ্কার করেন। তিনিই প্রক্সিমা সেন্টোরি নামটা প্রস্তাব করেন৷

পাশেই কত উজ্জ্বল এক তারা। আলফা সেন্টোরি। রাতের আকাশের তৃতীয় উজ্জ্বল। আলফা সেন্টোরি এ ও বি প্রক্সিমা সেন্টোরিসহ একটি ত্রিতারা জগতের অংশ। তিনজনই তাদের মিলিত ভরকেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে৷



তারাটা খালি চোখে দেখা গেলেও বাংলাদেশ থেকে দেখা কঠিন হত। কারণ বিষুব লম্ব (-৬২)। সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি উত্তর উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত একে দেখা সম্ভব।
Category: articles

সোমবার, ৫ জুন, ২০২৩

বিটলজুস নিক্ষত্র এখন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। যেকোনো সময় এটি সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হতে পারে। ঠিক কখন সেটা আমরা জানি না। আমরা নক্ষত্রটা থেকে যথেষ্ট নিরাপদ দূরত্বে আছি৷ তাই বিস্ফোরণে ক্ষতি হবে না। দেখব শুধু সুপারনোভার অসাধারণ রূপ!


বিটলজুস



সম্প্রতি লোহিত অতিদানব নক্ষত্রটার উজ্জ্বলতা ৫০% গুণ বেড়েছে। ফলে আবারও শুরু হয়েছে জল্পনাকল্পনা৷

বিটলজুস একইসাথে একটি লোহিত অতিদানব ও অর্ধনিয়মিত বিষম ও স্পন্দনশীল তারা। মানে এর উজ্জ্বলতার পরিবর্তন কিছু নিয়ম মেনে চলে। উজ্জ্বলতার পরিবর্তনের আছে বেশ কিছু চক্র৷ মূল চক্রটি ৪০০ দিনের। তবে ১২৫ ও ২৩০ দিনের দুটি ছোট চক্রও আছে। আছে আবার ২২০০ দিনের একটি বড় চক্র৷ এসব কারণে বিটলজুসের উজ্জ্বলতার পরিবর্তন জ্যোতির্বিদদের কাছে এক মহাধাঁধা৷

কয়েক বছর আগে এর উজ্জ্বলতা কমে আসে। সবাই এর কারণ নিয়ে ভাবতে থাকল। পরে দেখা গেল, উজ্জ্বলতা আসলে কমেনি। নক্ষত্রটার পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষিপ্ত পদার্থ ঠাণ্ডা হয়ে মেঘে পরিণত হয়৷ আর তাতে বাধাগ্রস্ত হয় আলো৷

এখন আবার উজ্জ্বল হচ্ছে বিটলজুস৷ এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা সম্ভবত প্রত্যাশার চেয়ে আগেই সুপারনোভা হিসেবে বিস্ফোরিত হবে৷ মান্থলি নোটিসেস অব দ্য রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটি জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে মিল্কিওয়ের পরবর্তী সুপারনোভা হবে বিটলজুসই৷

বিটলজুস বর্তমানে লোহিত অতিদানব তারা। পেছনে ফেলে এসেছে প্রধান ক্রম দশা। যে সময় এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানাত৷ ৮০ থেকে ৮৫ লাখ বছর ধরে কাজটি করে এসেছে নক্ষত্রটা৷ ভর হারিয়ে তারারা ফিউশন বিক্রিয়ার বহির্মুখী চাপকে আর ধরে রাখতে পারে না। নক্ষত্রের বাইরের দিক ফুলে ফেঁপে ওঠে৷ ভর কমলেও আকার যায় বেড়ে৷

তবে ফিউশন তখনও চলে। শুরু হয় কার্বন পোড়া। তৈরি হয় আরও কিছু ভারী মৌল। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, বিটলজুস এ ধাপের শেষের দিকে আছে। কার্বন পোড়ার ধাপ আছে কয়েকটি৷ বিটলজুস স্পন্দিত হয়, পদার্থ ছুঁড়ে মারে, আবর্তন করে। আবার ছুটে চলে মহাশূন্য ধরে। কার্বন পোড়ারনোর কোন ধাপে নক্ষত্রটা আছে তা না জানা গেলে সঠিক করে বলা যাবে না কবে নক্ষত্র সুপারনোভা হবে৷ জ্যোতির্বিদরা দেখেন নক্ষত্রের বাইরে অংশ৷ ভেতরের খবর সঠিক করে বলা সম্ভব হয় না।

তবে সাম্প্রতিক এ গবেষণা বলছে বিস্ফোরণটা হতে পারে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে৷ ২০০ পারসেক দূরের এ বিস্ফোরিত পৃথিবীর আকাশে অন্যতম সুন্দর এক দৃশ্যের অবতারণাই করবে। ছুঁড়ে দেওয়া ক্ষতিকর এক্সরে বা গামা রশ্মি থেকে আমরা নিরাপদ।



বিটলজুস রাতের আকাশের নবম উজ্জ্বল তারা। আদমসুরত বা কালপুরুষ মণ্ডলে এর অবস্থান। শীতের আকাশে সহজেই উজ্জ্বল এ তারার দেখা পাবেন। মে মাসের দিকে পশ্চিম দিগন্তে হারিয়ে যাবে। আগস্টের শেষের দিকে আবার দেখা যায় ভোরের পূবাকাশে। নিচের লিঙ্কে বিটলজুস ও অন্যান্য উজ্জ্বল তারা কীভাবে খুঁজে পাবেন দেখানো আছে। 

আদমসুরত তারামণ্ডল। উপরে বামপাশের তারাটাই বিটলজুস। 

Category: articles

শনিবার, ৩ জুন, ২০২৩

রাতের আকাশের চতুর্থ উজ্জ্বল তারা। উত্তর গোলার্ধের আকাশে অবশ্য সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা এটাই৷ লুব্ধক, সুহাইল ও আলফা সেন্টোরিরা সবাই দক্ষিণ গোলার্ধে। যদিও উত্তরের অনেকাংশ থেকে এদেরকেও দেখা যায়। বলছি স্বাতী নক্ষত্রের কথা৷ ইংরেজি নাম আর্কটিউরাস (arcturus)।



উত্তর গোলার্ধের আকাশে স্বাতীকে সহজেই দেখবেন। মেঘমুক্ত আকাশে সঠিক ঋতুতে তাকালেই দেখতে পাবেন। সেই সঠিক ঋতুর মধ্যে সেরা সময়টা জুন মাস। বিশেষ করে জুনের ১০ তারিখ বাংলাদেশ ও আশেপাশের অক্ষাংশের এলাকায় রাত নয়টায় তারাটা ঠিক মাথার উপর থাকে।

উজ্জ্বল তারাদের গল্প

স্বাতী চেনার উপায়
আকাশের অন্যতম সহজলব্ধ একটি তারানকশা সপ্তর্ষী। এর সাতটি তারায় গঠিত তারানকশা সপ্তর্ষী দেখতে চামচের মত। চামচের হাতলের দিকের তারাগুলোকে বৃত্তচাপের মত করে বাইরের দিকে প্রসারিত করে দিলেই পাওয়া যায় উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বাতী। চাপকে আরেকটু প্রসারিত করলে পাওয়া যাবে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র চিত্রা ডিসেম্বর-জানুয়ারির সময় স্বাতীকে দেখা যাবে না।

সপ্তর্ষীমণ্ডলীর তারানকশা সপ্তর্ষীর হাতল স্বাতীকে চিনিয়ে দেয়




সূর্য থেকে স্বাতীর দূরত্ব ৩৬.৭ আলোকবর্ষ৷ বয়স প্রায় ৭০১ কোটি বছর৷ সূর্যের চেয়ে ২০০ কোটির বেশি। বর্তমানে তারাটা লোহিত দানব দশায় আছে। মানে এর কোরের হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ। ভর সূর্যের প্রায় সমান। তবে আকার বেড়ে সূর্যের ২৫ গুণ হয়েছে। উজ্জ্বল সূর্যের ১৭০ গুণ। স্বাতী সূর্যের ২৫ গুণ চওড়া। শুনে হয়ত বোঝা যাবে না কত বড়। ছবিটা একবার দেখে নিন৷


সূর্য ও বিভিন্ন নক্ষত্রের তুলনামূলক আকার

বেশ কয়েকটি তারানকশার অংশ স্বাতী। চিত্রা ও ডেনেবোলার (বা রেগুলাস) সাথে মিলে তৈরি করেছে বসন্ত ত্রিভুজ। আবার কর ক্যারোলিসহ চারটি তারা মিলে চার কোণাকার দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড৷ স্বাতী ভূতেশমণ্ডলের তারা। এই পুরো মণ্ডলটা আবার দেখতে কোন আইসক্রিমের মতো। যার একদম নিচে আছে স্বাতী।

তারামণ্ডলী বনাম তারানকশা


বসন্ত ত্রিভুজ তারানকশা

দ্য গ্রেট ডায়ামন্ড তারানকশা
Category: articles

মঙ্গলবার, ২ মে, ২০২৩

ধরুন, সামনে তাকিয়ে একটা বিল্ডিং বা পাহাড় দেখলাম। যখন দেখলাম তখনও সেটা সে অবস্থায়ই আছে। এমন না যে আমরা দেখতে দেখতে বিল্ডিংয়ের কোনো পরিবর্তন ঘটে গেছে। তবে পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের দূরের বস্তুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়।




চাঁদের কথাই ধরুন। চাঁদ পৃথিবী থেকে ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার দূরে আছে। আলোর বেগ অনেক বেশি। সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার। তাও এত দূর থেকে আলো আসতে ১.৩ সেকেন্ড সময় তো লাগেই। মানে এই মূহুর্তে আমরা চাঁদের যে আলো দেখছি তা ১.৩ সেকেন্ড আগের প্রতিফলিত আলো

চাঁদ কত দূরে আছে?


 চাঁদ কীভাবে আলো দেয়? 

সূর্য তো আরও দূরে। আছে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে। আলো আসতে সময় লাগে গড়ে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। তারমানে সূর্যকে আমরা ৮ মিনিট আগের অবস্থায় দেখি। এখন সূর্য গায়েব হয়ে গেলে আরও ৮ মিনিট পরে তা আমরা জানতে পারব।

সূর্য কত দূরে আছে?

সূর্যের নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টোরি। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় চার আলোকবর্ষ। তার মানে নক্ষত্রটার চার বছর আগের দৃশ্য দেখি আমরা। আমাদের অন্যতম কাছের ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা। দূরত্ব ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। একবার ভাবুন। উত্তর আকাশে যে অ্যান্ড্রোমিডাকে আমরা দেখি তা আসলে ২৫ লাখ বছর আগের অ্যান্ড্রোমিডা!

এক আলোকবর্ষ কত বড়?

অ্যানড্রোমিডা কীভাবে দেখব?

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করেন ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের কথা। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের আবিষ্কৃত নক্ষত্র। স্বাভাবিকভাবেই যত দূরে আমরা কোনো নক্ষত্র দেখব, সেটা হবে ততই প্রাচীন বা পুরনো। ইয়ারেন্ডেল নক্ষত্রের অবস্থান পৃথিবী থেকে ২৮০ কোটি আলোকবর্ষ। ভাবুন! নক্ষত্রের ২৮০ কোটি বছরেরপুরনো দৃশ্যও মানুষ দেখেছে।

২০২২ সাল পর্যন্ত পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের দেখা ছায়াপথের নাম এইচডি১। দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ। মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর। তাহলে তার চেয়ে আগে ছায়াপথ কোথা থেকে আসল? আসলে দূরত্ব ৩৩২৯ কোটি আলোকবর্ষ হলেও ছায়াপথটি আমরা ৩৩২৯ বছর আগে অবস্থায় দেখছি না। মহাবিশ্বের প্রসারণের কারণে বস্তুদের লোহিত সরণ ঘটে। এর ফলে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ব্যাসার্ধ ১৩৮০ কোটির বদলে প্রায় ৪৬৫০ কোটি।

মহাবিশ্ব কত বড়?

তার মানে, আমরা পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের যত দূরে তাকাব, তত প্রাচীন দৃশ্য দেখব। 

আর আকাশযান শনাক্ত ও ব্যবস্থাপনার জন্য যে রেডার ব্যবহার করা হয় সেটাও কিন্তু এই বুদ্ধি দিয়েই কাজ করে। রেডার থেকে বিমান বা জাহাজে সঙ্কেত পাঠানো হয়। সেটা যানে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসে। যাওয়া-আসার সময়টুকু হিসাব করেই বের করা দূরত্ব।


পৃথিবী থেকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে দূরের বস্তুগুলোর একটি তালিকা দেখতে পারবেন উইকিপিডিয়ায়। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯

রাতের আকাশে ঝিকিমিকি তারকারাজির দিকে তাকালে কত বিচিত্র রূপই না চোখে পড়ে! প্রতিটি তারকা ভিন্ন। কিছু বড়, কিছু ছোট, কিছু গরম, কিছু ঠাণ্ডা। নীল বা হলুদ বা লাল। মানুষ তারকারাজি নিয়ে গবেষণা করছে বহুকাল ধরে। তারকারাজিকে ভালো করে চিনতে আবিষ্কার করেছে তারকার শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি। পৃথিবী পরিমণ্ডলের রাসায়নিক মৌলসমূহের সহজ পাঠের জন্য আছে পর্যায় সারণি, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাসের জন্য আছে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী বা পদ্ধতি। তেমনি তারকারাজির শ্রেণিবিন্যাসের জন্য আছে কতগুলো পদ্ধতি। তারকারাজির এই শ্রেণিবিন্যাস সহজেই একটি তারকার বৈশিষ্ট্য বুঝতে সাহায্য করে। আমরা আজকে জানব সে সম্পর্কে। এখানে পাঁচটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

তারার নিজেই আলো বানাতে পারে। প্লাজমা পদার্থে গড়া এই বস্তুদের আকৃতি মহাকর্ষের কল্যাণে উপগোলকের (spheroid) মতো। আমাদের সবচেয়ে কাছের তারকা সূর্য। তারপরে সবচেয়ে কাছে প্রক্সিমা সেন্টোরি

পদ্ধতি-০১: তাপমাত্রা
চিত্র-১: তারার রং দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস 

১। শুধুমাত্র রং দেখেই তারকার শ্রেণিবিন্যাস করা সম্ভব। তাপমাত্রা নির্ধারণে তারকার রং নির্দেশক  হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে দশ রঙের তারকা আমাদের চোখে পড়ে। প্রতিটি রঙের সাথে যুক্ত থাকে তাপমাত্রার পরিসীমা। O শ্রেণির তারকার বর্ণ নীল বা অতিবেগুনী। B শ্রেণির তারকার বর্ণ নীল সাদা, A শ্রেণির তারকার বর্ণ সাদা, F শ্রেণির তারকার বর্ণ হলুদ সাদা, G শ্রেণির তারকার বর্ণ হলুদ, K শ্রেণির তারকার বর্ণ কমলা এবং M শ্রেণির তারকার বর্ণ লাল। অন্যান্য তিনটি শ্রেণি অবলোহিত। L শ্রেণির তারকার বর্ণ দৃশ্যমান আলোতে খুব গাঢ় লাল দেখায়। এসব তারকা ক্ষার ধাতু এবং ধাতুর  হাইড্রাইডের বর্ণালি দেখায়। T শ্রেণির তারকা L শ্রেণির তুলনায় শীতল। Y শ্রেণির তারকা সবচেয়ে শীতল। এরা বাদামি বামন তারকা এবং L, T থেকে আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, রাতের আকাশে তাকালেই সহজে চোখে পড়ে অরায়ন তারামণ্ডলীর বিটলজুস তারকাটি। এটি M শ্রেণির তারকা। কারণ বর্ণ লাল।

চিত্র-২: বর্ণ ও সংখ্যা দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস 

২ নং চিত্রে একদিকে O থেকে Y পর্যন্ত তারকার রঙ অন্যদিকে ০-৯ পর্যন্ত প্রতিটি রঙের মধ্যে ১০ টি তাপমাত্রার ব্যান্ড দেখানো হয়েছে। O থেকে Y পর্যন্ত এবং ০-৯ পর্যন্ত তাপমাত্রা পর্যায়ক্রমে কমে যায়। নির্দিষ্ট বর্ণের পরে নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা রেখে সহজে তাপমাত্রা হিসেব করা যায়। 0 হচ্ছে সবচেয়ে গরম এবং ৯ সবচেয়ে শীতল। উদাহরণস্বরূপ,  A0, A5 এর চেয়ে বেশি গরম, যা A9 এর চেয়ে গরম, যা F0 এর তুলনায় গরম। উপরে আলোচিত বিটলজুস M1 শ্রেণীর একটি তারকা।

পদ্ধতি-০২: আকার
চিত্র ৩: তারকার আকার থেকে শ্রেণিবিন্যাস 


তারকার আকার নির্দেশক একটি রোমান সংখ্যা তাপমাত্রার পরে যোগ করা শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। 0 বা Ia+ একটি হাইপারজায়ান্ট (hypergiant) তারকা নির্দেশক। Ia, Iab এবং Ib সুপারজায়ান্ট তারকার (যথাক্রমে উজ্জ্বল, মাঝারি, অনুজ্জ্বল) প্রতিনিধিত্ব করে। II উজ্জ্বল দৈত্য, III দৈত্য, IV উপ-দৈত্য, V প্রধান ক্রমের নক্ষত্র (এটি একটি তারকার জীবনের অংশ যেখানে তারকাটির সর্বাধিক সময় ব্যয় হয়) এবং VI উপ-বামন। D একটি একটি সাদা বামন তারকা নির্দেশক। উদাহরণ: DA7 (সাদা বামন), F5Ia + (হলুদ হাইপারজায়ান্ট), G2V (প্রধান পরম্পরার হলুদ তারকা)। আমাদের সূর্য G2V এবং বিটলজুস M1la বা উজ্জ্বল সুপারজায়ান্ট।


পদ্ধতি-০৩: তারকার বর্ণালি 


চিত্র ৪: বর্ণালি দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস 

১. তারকার আলোকে প্রিজম ব্যবহার করে আলাদা করা যায়। প্রিজমের ভেতর দিয়ে টর্চ লাইট অতিক্রম করালে কতগুলো বর্ণের একটি পরিসীমা পাওয়া যাবে, যা বর্ণালি নামে পরিচিত। তারকার আলো এমন বর্ণালি তৈরি করে। প্রত্যেকটি তারকার বর্ণালি ভিন্ন ভিন্ন। প্রতিটি তারকার বর্ণালির মধ্যে অন্ধকার লাইন থাকে, যা শোষণ লাইন নামে পরিচিত। এই শোষণ লাইন থেকে তারকার রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে ধারণা করা যায়। 


২. তারকার বর্ণালিটি একটি ডেটাবেজের সাথে তুলনা করা হয়। একটি ভাল জ্যোতির্বিজ্ঞান ডেটাবেজ প্রতিটি তারকার টাইপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সাধারণ বর্ণালি দেবে। সেই বর্ণালি ডেটাবেজ দেখে সহজেই তারকার শ্রেণিবিভাগ করা যায়।

পদ্ধতি-০৪: ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয় 


চিত্র ৫: ধাতুর উপস্থিতির সাহায্যে শ্রেণিবিন্যাস 

১. তারকায় ধাতুর (হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছাড়া অন্য উপাদান) অনুপাত নির্ধারণ

কোনো তারকার মধ্যে ১% এরও বেশি ধাতু থাকলে তাকে ধাতু সমৃদ্ধ তারকা বলা হয়। এসব তারকাকে পপুলেশন-১ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। কোনো তারকার মধ্যে ১% ধাতু থাকলে তাকে ধাতু-দরিদ্র তারকা বলা হয়। এসব তারকাকে পপুলেশন-২ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। মহাবিশ্বের আদিকালে পপুলেশন-২ জাতের তারকারাজি গঠিত হয়েছিলো, কারণ তখন ধাতুর পরিমাণ কম ছিলো।

২. কিছু তারকা তাত্ত্বিকভাবে ধাতুহীন, কিন্তু এদের খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এদেরকে পপুলেশন-৩ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই তারকারাজি বিগ ব্যাংয়ের পরেই সৃষ্টি হয় বলে মনে করা হয়। যখন একমাত্র উপাদান হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছিল। অন্য কোনো ধাতুর উপস্থিতি ছিল না।

পদ্ধতি-০৫:  উজ্জ্বলতার পরিবর্তন



১. তারকার উজ্জ্বলতা পরিবর্তনশীল কি না নির্ধারণ করা। সব না হলেও কিছু কিছু তারকা এই ধর্ম প্রদর্শন করে। এই উজ্জ্বলতার পরিবর্তন নানা কারণে হতে পারে। সেটা ভিন্ন আলোচনা। 



২. কোনো তারকা বাইনারি তারকা কি না তা নির্ধারণ করা। দুটি তারকা একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরলে তারা বাইনারি বা জোড়া তারা। রাতের আকাশে সর্বাধিক উজ্জ্বল তারকা সিরিয়াস বা লুব্ধক। সিরিয়াস ও সিগনাস X-1 এই তারকা দুটি বাইনারি তারকা। আমরা খালি চোখে সিগনাস X-1 দেখতে পাই না। কারণ এই তারকাটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়ে গেছে।

সূত্র
উইকিহাউ ও উইকিপিডিয়া।
Category: articles

বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯

মহাবিশ্বের বয়স নির্ণয়ের একটি উপায়ই হলো সবচেয়ে পুরাতন নক্ষত্রের বয়স দেখা। মহাবিশ্বের জন্মের অল্প কিছুকাল পরেই নক্ষত্রের জন্ম হয়ে গিয়েছিল। মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স ধরা হয় ১৩৮০ কোটি বছর। আর মনে করা হয়, সবচেয়ে প্রাচীন ভ্রুণতারার (protostar) জন্ম হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের ৩০ কোটি বছর পর।

মহাবিশ্বের জন্মের আগেই কি নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল? 

বিগ ব্যাং থেকে নক্ষত্রের জন্মের সময়টা নিয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক।

আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিসহ সব গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গ্যাসীয় মেঘ ও ধুলিকণা। প্রাথমিক অবস্থায় এদেরকে বলা হয় নীহারিকা বা নেবুলা (Nebula)। সাধারণত এক একটি নেবুলা আড়াআড়িভাবে বহু আলোকবর্ষ পরিমাণ জুড়ে বিস্তৃত থাকে। একটি নেবুলাতে যে পরিমাণ গ্যাস থাকে তা দিয়েই আমাদের সূর্যের মতো কয়েক হাজার নক্ষত্রের জন্ম হতে পারে। নেবুলার অধিকাংশ উপাদানই হচ্ছে বিভিন্ন হালকা গ্যাস- বিশেষ করে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের অণু। এই গ্যাস ও ধুলিকণা ঘনীভূত হয়ে যথেষ্ট পরিমাণ অভিকর্ষ উৎপন্ন করলে নিজস্ব অভিকর্ষের চাপেই সঙ্কুচিত হতে থাকে। কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ আবার মনে করেন, এই অন্তর্মুখী সঙ্কোচনের জন্য শুধু অভিকর্ষই নয়, গ্যাস ও ধুলিকণায় সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রও দায়ী।

গ্যাসগুলো জড় হতে হতে বিভব শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং বাড়িয়ে ফেলে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে সঙ্কোচনশীল গ্যাস বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে এক একটি আলাদা নক্ষত্র তৈরি হয়। এই তারকার অন্তর্বস্তুর সঙ্কোচনের হার হয় অনেক বেশি। এর গ্যাসীয় মেঘ অনেক দ্রুত আবর্তন করে করে এর কৌণিক ভরবেগ বজায় রাখে। এক সময় এই নক্ষত্রের তাপমাত্রা প্রায় ২ হাজার কেলভিনে পৌঁছায়। এই অবস্থায় হাইড্রোজেন অণু ভেঙ্গে গিয়ে মৌলটির পরমাণুতে পরিণত হয়। এর তাপমাত্রা এক সময় উঠে যায় ১০ হাজার কেলভিনে। সঙ্কুচিত হয়ে সূর্যের প্রায় ৩০ গুণ আয়তন লাভ করলে এই নব-সৃষ্ট তারকাকে বলে প্রোটোস্টার বা ভ্রুণতারা (protostar)। এবার এতে হাইড্রোজেন পরমাণু জোড়া লেগে লেগে হিলিয়ামে পরিণত হতে থাকে। এই নিউক্লিয় বিক্রিয়াটিকে বলে ফিউশন বা সংযোজন (fusion) বিক্রিয়া।

আরও পড়ুন
 নক্ষত্র থেকে ব্ল্যাকহোল

ফিউশন বিক্রিয়া চলার সময় নক্ষত্রের নাম হয় প্রধান ক্রমের তারা (main sequence star)। আমাদের সূর্য এখন এই দশায় আছে। 

মূল কথায় ফিরে আসা যাক। মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর হলে এর ভেতরের সব নক্ষত্রের বয়স অবশ্যই এর চেয়ে কম হওয়া উচিত। কিন্তু ২০১৩ সালে পাওয়া গেল বিপরীত এক পর্যবেক্ষণ।  হাবল স্পেস টেলিস্কোপ খুঁজে পেল ব্যতিক্রমী এক তারা। নাম মেথুসেলাহ। হিসেব করে এর বয়স পাওয়া যাচ্ছে ১৪৫০ কোটি বছর। যা সর্বোচ্চ ৮০ কোটি এদিক-ওদিক হতে পারে। কিন্তু মহাবিশ্বের বয়সের চেয়ে পুরাতন নক্ষত্র কীভাবে এল? 

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ। একদল বিজ্ঞানী তাই ভাবছেন, নিশ্চয় মহাবিশ্বের বয়স বের করতেই ভুল হয়েছে। 

আরও পড়ুন

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আশা করা হয়েছিল, এখানে একটি সমাধান মিলবে। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের মৌলিক জ্ঞানই সম্ভবত ত্রুটিপূর্ণ।

বড় কাঠামোয় মহাবিশ্ব নিয়ে কথা বলতে গেলেই চলে আসে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিকতা (general relativity)। নিউটনের মহাকর্ষীয় তত্ত্বের আধুনিক রূপ এটি। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন প্রথম প্রকাশ করেন তত্ত্বটি। অনেকের মতেই, এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল তত্ত্ব। ব্ল্যাক হোল থেকে শুরু কাল দীর্ঘায়ন– সব কিছুই সঠিক ব্যাখ্যা করছে তত্ত্বটি। অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্ব কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাফল্যও কম নয়।

সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব সফল হলেও অনেক সময় এর কিছু ফলাফল দেখে অবাক হতে হয়। প্রথম অবাক হবার পালা আইনস্টাইনের নিজেরই। তিনি দেখলেন, তত্ত্ব বলছে, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। তিনি তখনও স্থির মহাবিশ্বে বিশ্বাসী। যেমনটা ছিলেন নিউটন। আইনস্টাইন ভাবলেন, তত্ত্বে কোনো ভুল আছে। তাই তত্ত্বের সমীকরণে একটি বাড়তি ধ্রুবক লাগিয়ে সেই ভুল দূর করার চেষ্টা করলেন।

পরে ১৯২০ এর দশকে হাবল আবিষ্কার করলেন, সেটা কোনো ভুল ছিল না। আইনস্টাইন পরে স্বীকার করেন, এটা ছিল তাঁর জীবনের সেরা ভুল।

অবশেষে জানা গেল, মহাবিশ্বের একটি সূচনা আছে। অনন্তকাল ধরে মহাবিশ্ব ছিল না। তাই মহাবিশ্বের বয়স বের করার প্রচেষ্টা শুরু হলো। কিন্তু বয়স দেখে তো বিজ্ঞানীরা হতবাক। এ যে মাত্র ২০০ কোটি বছর। যেখানে পৃথিবীরই বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর।

ফ্রেড হয়েল প্রস্তাব করলেন, মহাবিশ্বের আসলে সূচনা-টূচনা বলে কিছু নেই। সব বাজে কথা। মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে টিকে আছে একইভাবে। নিজের মত প্রমাণ করতে তিনি আইনস্টাইনের সমীকরণও ব্যবহার করলেন। তবে তাঁর সমাধান সমস্যা কমানোর চেয়ে বাড়াতেই বেশি অবদান রাখল। নতুন পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেল, মহাবিশ্বের বয়স ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন বছর হয়। মানে এক হাজার থেকে দুই হাজার কোটি বছর। গ্রহণযোগ্য এই মতের চাপে হয়েলের মত বাতিল হয়ে গেল।

কিন্তু সমাধান কি আদৌ হয়েছে? বয়সের সমস্যা হাজির হয়েছে আবারও। গত মাসের সম্মেলনে বয়স নিয়ে বেশ কজন বিজ্ঞানী নতুন করে হিসেব দিয়েছেন। কিছু দিন আগে হলেও এসব নতুন হিসেবকে কেউ পাত্তা দিতেন না। বিগ ব্যাংয়ের পরবর্তী সময়ে নির্গত হয় মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ (cosmic microwave background)। যার রেশ আছে আজকের পৃথিবী ও মহাবিশ্বেও। এই বিকিরণের তথ্য কাজে লাগিয়ে মহাবিশ্বের বয়সের নির্ভরযোগ্য হিসেব পাওয়া যায়।

পটভূমি বিকিরণ দিয়ে পাওয়া হিসেবের সাথে মিলে যায় সরাসরি বের করা হিসেবও। দূরের ছায়াপথের নক্ষত্রের প্রসারণ দেখে মহাবিশ্বের প্রসারণ বেগ বের করা যায়। সেখান থেকে জানা যায়, মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় আসতে কত সময় নিয়েছিল। এই দুটি হিসেব দারুণভাবে মিলে যায়। একই সাথে হিসেবটি ছিল দারুণ সূক্ষ্ম।। আবার সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্রের বয়সের চেয়ে এই বয়স বেশিও ছিল। ফলে সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মহাবিশ্বের দুটো বয়স আলাদা। পার্শ্ববর্তী ছায়াপথদের কাজে লাগিয়ে পাওয়া বয়সের সাথে বিকিরণ থেকে হিসেব করা বয়সের পার্থক্য কয়েক হাজার কোটি বছর। যাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। তাও আবার দেখা যাচ্ছে মহাবিশ্বের চেয়ে পুরাতন নক্ষত্রেরও অস্তিত্ব আছে।

এত কিছু যে নক্ষত্র নিয়ে তার নাম এইচডি ১৪০২৮৩। অন্য তারার মতোই খটমটে এক নাম। তবে ডাক নামও আছে একখান। মেথুসেলাহ। ১৯১২ সাল থেকেই নক্ষত্রটি বিজ্ঞানীদের চেনা। দূরত্বও পৃথিবী থেকে বেশি নয়— মাত্র ১৯০ আলোকবর্ষ। 

বিজ্ঞানীরা এখন জানেন, নক্ষত্রটিতে লোহার পরিমাণ খুব সামান্য। তার মানে এর জন্ম হয়েছিল এমন সময় যখন মহাবিশ্বে লোহা খুব কম ছিল। আর তার মানে এর বয়স অন্তত মহাবিশ্বের বয়সের কাছাকাছি।

তাহলে কি মহাবিশ্বের বয়স বের করতেই ভুল হয়েছে? প্রসারণ থেকে মহাবিশ্বের বয়স বের করতে হলে অনেক কিছুই সঠিকভাবে জানা দরকার। এই যেমন ছায়াপথরা একে অপর থেকে কত বেগে সরে যাচ্ছে, কত দূরে থাকলে কত দ্রুত সরছে ইত্যাদি। আর দূরের ছায়াপথের ক্ষেত্রে এই মানগুলো বিজ্ঞানীরা বের করেন অনেক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে।

এটা যাচাই করার জন্য অন্য উপায়ে প্রসারণ বের করতে হয়। বিকল্প এসব উপায়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো মহাকর্ষ তরঙ্গ। ভারী নক্ষত্রদের মিলনে সৃষ্ট স্থান-কালের ঢেউ।

গত মাসের সম্মেলনের বেশ কয়েক দিন আগে এ বিষয়ে নেচার অ্যাস্ট্রোনোমি জার্নালে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানে মহাকর্ষ তরঙ্গ দিয়ে মহাবিশ্বের প্রসারণ হার দেখানো হয়। ব্যবহার করা হয় ২০১৭ সালের একটি মহাকর্ষ তরঙ্গ।

আরও পড়ুন
 মহাকর্ষ তরঙ্গ

কিন্তু এই হার দিয়েও মেথুসেলাহ নক্ষত্রের রহস্যের সমাধান হচ্ছে না। সমাধান হচ্ছে না মহাজগতের বয়স সমস্যারও। কেউ কেউ তাই আবার পদার্থবিদ্যার আমূল পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।

সূত্র
১। দ্য ন্যাশনাল
২। উইকিপিডিয়া
Category: articles

রবিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৮


ছোটবেলায় কে না পড়েছেন?
Twinkle, twinkle, little star,
How I wonder what you are!
Up above the world so high,
Like a diamond in the sky.
কিন্তু বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে কবিতাটা ভুল। তারা মিটমিট করে জ্বলে ঠিকই, কিন্তু আমরা একে দেখে হতবাক হই না এটি কী দিয়ে তৈরি সেটা ভেবে। হ্যাঁ, বিমোহিত হই। কিন্তু সেটা না জানার কারণে নয়। জানি বলেই।

তাই একে আমি সংস্কার করে বাংলায় বলি এভাবেঃ
"মিটমিট করে তারা
আমি জানি কারা ওরা
কারণ আমার আছে জ্ঞান
ওরা হল হাইড্রোজেন"

আমার 'কবিতা'টি আসলে আইয়ান ডি বুশ লিখিতে কবিতার সরল ভাবানুবাদ।

মূল কবিতাটি লেখেন জেন টেইলর, ১৮০৬ সালে। তখন আমরা তারা দেখে আসলেই হতভম্ব হতাম। এদের মধ্যে কী আছে তা কল্পনাও করতে পারতাম না।

এক সময় নক্ষত্রের বর্ণালী দেখে জানা গেল একটি সাধারণ নক্ষত্রে প্রায় ৭১ শতাংশ হাইড্রোজেন ও ২৭ % এর মতো হিলিয়াম থাকে।

নক্ষত্রের উপাদান 

আরও পড়ুন:
☛ নক্ষত্র কাকে বলে
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প 

ডি বুশ তাই লিখেছিলেন এভাবে:
Twinkle Twinkle little star,
I don't wonder what you are;
For by spectroscopic ken,
I know that you're hydrogen;
Category: articles

মঙ্গলবার, ৩ জুলাই, ২০১৮

[লিখেছেন: ওয়েস আল কারণী]

চলছে ফুটবল বিশ্বকাপের উন্মাদনা! আর ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা তর্ক ! ভাবছেন মহাকাশের পোর্টালে আবার খেলার কথা! কারণ আছে বৈকি । আপনারা হয়ত ব্রাজিলের পতাকায় অনেকগুলো তারা দেখে থাকবেন! এগুলো নিছকই এলোমেলো কিছু তারা না! ব্রাজিলের পতাকায় প্রতিটি তারাই আকাশের তারা ও তারামন্ডলের অনুকরণে রাখা হয়েছে।

ব্রাজিলের পতাকায় নক্ষত্রের মেলা
চিত্র অনুসারে ১ নং তারাটি হল প্রভাস (Procyon), যা পৃথিবী থেকে ১১.৪৬ আলোকবর্ষ দূরে শূণীমণ্ডলে(constellation canis minor) অবস্থিত একটি যুগল তারা (binary star)। প্রভাস ব্রাজিলের অ্যামাজন অঙ্গরাজ্যের প্রতীক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়।

তারাগুলো এলোমেলো বা ইচ্ছে খামখেয়ালের বশে বসিয়ে দেওয়া নয় 


২ নং গোলকের মাঝে অবস্থিত তারাগুলো আসলে মৃগব্যাধ বা Canis Major তারামন্ডল! অন্ধকার রাতে পৃথিবী থেকে দূর-আকাশের দিকে তাকালে যে সকল নক্ষত্র দেখা যায়, তাদের কিছু কিছু নক্ষত্রের সাথে কাল্পনিক রেখা যুক্ত করে, বিভিন্ন বিষয়বস্তু কল্পনা করা হয়। প্রাচীনকালের জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সকল বিষয়বস্তুর নামকরণ করেছিলেন পৌরাণিক চরিত্র বা পার্থিব কোন বস্তুর সাথে মিল রেখে। এই নক্ষত্রসমূহ নিয়ে তৈরি এই কাল্পনিক চিত্রগুলোকে নক্ষত্রমণ্ডল বলা হয়।

আরও পড়ুন 
☛ নক্ষত্রমণ্ডলের পরিচয়

৩ নং তারাটি রাতের আকাশের দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারা Canopus বা অগস্ত্য (সুহাইল নক্ষত্র)! ৪র্থ তারাটি হল কন্যারাশির সবচেয়ে উজ্জ্বল তারা ও রাতের আকাশের ১৫ তম উজ্জ্বল তারা চিত্রা (Spica)। ৫ নং আয়তের মাঝে অবস্থিত তারা দুইটি হল  হ্রদসর্পমণ্ডলের (Hydra) উজ্জ্বলতম দুই তারা। বড় তারাটি হল বাসুকি (Alphard)।

৬ষ্ঠ বৃত্তের মাঝের তারা গুলো হল হারিয়ে যাওয়া তারামণ্ডল ক্রাক্স অস্ট্রালিস বা দক্ষিণা ত্রিশঙ্কু । ৭ম তারাটি হলো সিগমা অক্ট্যানটিস Sigma Octantis যা দক্ষিণ মেরু নির্নায়ক তারা । উত্তর মেরুর তারা বলতে আমরা যেমন ধ্রূবতারাকে বুঝি, দক্ষিণ মেরুর এমন ধ্রুবতারা হল Sigma Octantis! ৮ম বৃত্তের মাঝে অবস্থিত তারাগুলো হলো দক্ষিণা ত্রিকোণ মণ্ডলের (Triangulum Australe) প্রধান তিন তারা! ৯ম উপবৃত্তের মাঝের ৮টি তারা হলো বৃশ্চিকরাশির (Scorpius) প্রধান ৮ তারা।

ব্রাজিলের পতাকার সব গুলো তারা নিয়ে আমরা ধীরে ধীরে জানব । আজ জানব প্রভাস নিয়ে । প্রভাস হল বাইনারি তারা! বাইনারি তারা হল এমন দুইটি তারা যারা একে অপরের মিলিত ভারকেন্দ্রকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে। তবে পৃথিবী থেকে এদের দেখতে একটি একক তারাই মনে হয়। অন্য নামে আলফা ক্যানিস মাইনোরিস নামের এই তারাটি পৃথিবীর আকাশের অষ্টম ও নিজ নক্ষত্রমণ্ডলের উজ্জ্বলতম তারা। এর আপাত উজ্জ্বলতা +0.৩৪, অর্থাৎ রাতের আকাশের অন্যতম উজ্জ্বল তারা যা সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়।

আরও পড়ুন
☛ আপাত উজ্জ্বলতা কাকে বলে? 

প্রভাসের ইংরেজি নাম Procyon এসেছে গ্রিক পুরাণের Προκύων (Prokyon) শব্দ থেকে । যার অর্থ কুকুরের পূর্বে। প্রাচীন গ্রিসে আকাশের উজ্জ্বলতম তারকা লুব্ধককে (Sirius) কুক্কুর তারা (Dog star) বলা হত। রাতের আকাশে লুব্ধকের পূর্বে প্রভাস উদিত হয় বিধায় এমন নামকরণ করা। প্রভাস ব্রাজিলের অ্যামাজন অঙ্গরাজ্যের প্রতীক হিসেবে ব্যাবহৃত হয় । আরবে একে الغميصاء বা ক্রন্দনরত মেয়ে বলা হয়।

শীতের শেষের দিকে (মার্চ) মাঝরাতে এটি মাথার উপরে অবস্থান করলেও বছরের এই সময়ে একে খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন । আকাশ পরিষ্কার থাকায় এর উজ্জ্বল নীলচে আভা সহজেই চোখে পড়ে। আমরা প্রায় সবাই অরায়ন বা কালপুরুষ নক্ষত্রমণ্ডল চিনি। রাতের আকাশে পাশাপাশি একই সরলরেখায় অবস্থিত তিনটি তারকা (অরায়ন বেল্ট) দেখেই যা সনাক্ত করা যায় । অরায়নকে সন্ধ্যাবেলায় পশ্চিম দিগন্তের নিকট দেখা যায় ! এর দক্ষিন দিকে উজ্জ্বলতম তারা লুব্ধক (sirius) অবস্থান করে। আর অরায়ন বেল্টের অপর পাশে লাল নক্ষত্র আর্দ্রার (Betelgeuse) অবস্থান। লুব্ধকের উত্তরে ও আর্দ্রার পূর্বে অবস্থিত উজ্জ্বল তারকাটিই হল প্রভাস। শীতকালে আর্দ্রা, লুব্ধক ও প্রভাসকে নিয়ে শীতকালীন ত্রিভুজ বা উইন্টার ট্রায়াঙ্গেল কল্পনা করা হয়।

চিনে নিন কয়েকটি তারা 

প্রভাসের দুইটি নক্ষত্রের প্রধানটি হল একটি এফ-টাইফ প্রধান ক্রমের তারা এবং অপরটি একটি শ্বেত বামন তারা। ১.৫ সৌরভরের প্রধান তারাটির ব্যাসার্ধ সূর্যের ২ গুণ এবং দীপ্তি সূর্যের ৭ গুন। এই তারকাটি বর্তমানে এর কোরের হাইড্রোজেন শেষ করে হিলিয়াম ফিউজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অর্থাৎ এটি আর কিছুদিনের মধ্যে লোহিত দানব বা রেড জায়ান্ট দশায় উপনীত হবে। এই সময়ে এর ব্যাস বর্তমান ব্যাসের ৮০-১৫০ গুণ হবে। আজ থেকে ১০-৮০ মিলিয়ন বছর পরে তারকাটির লোহিত দানব দশা শুরু হবে। এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬৫৫০ কেলভিন। দ্বিতীয় শ্বেত বামন তারাটির ভর মাত্র ০.৬৮ সৌরভর এবং ব্যাসার্ধ মাত্র ৬৮০০ কিলোমিটার! শেষে এসে বলতেই হয়!

ব্রাজিল ফুটবলে যেমন শৈল্পিক তেমন তাদের পতাকাও মহাজাগতিক !

সূত্র: ইংরেজি উইকিপিডিয়া (ফ্ল্যাগ অব ব্রাজিল)
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...