Advertisement

বৃহস্পতিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

প্লুটো গ্রহের আবিষ্কারক কে? বামন গ্রহটির আবিষ্কারক আমেরিকান জ্যোতির্বিদ ক্লাইড টমবাউ। আজকের দিনটি তাঁর জন্মের ১১০ জন্মবার্ষিকী।
১৯২৮ সালে পারিবারিক খামারে বাসায় নির্মিত টেলিস্কোপের পাশে দাঁড়িয়ে প্লুটোর আবিষ্কারক ক্লাইড টমবাউ। 

টমবাউ বড় হন ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যের একটি কৃষক পরিবারে। তিনিও কাজ করতেন খামারেই। শিলাঝড়ের (Hailstorm) কবলে পড়ে তাঁর পরিবারের ফসল নষ্ট হয়ে গেলে আর্থিক অভাবে পড়ে যান তাঁরা। পড়াশোনার আশা ছেড়ে দিতে হয়ে তাঁকে। কিন্তু জ্যোতির্বিদ হবার আশা কখনো মাটিতে পড়তে দেননি তিনি। জ্যোতির্বিদ্যার জন্যে প্রয়োজনীয় গাণিতিক দক্ষতা নিজে নিজেই হাসিল করলেন। শিখলেন জ্যামিতি এবং ত্রিকোণমিতি। তিনি বলেছেন, 
আপনি কি ভাবতে পারেন, বর্তমান সময়ে একটি কিশোর শুধু মজা পাবার জন্যে ত্রিকোণমিতি শিখতে পারে? আমি তাই করেছি।
বাসায় বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ দেখতেন তিনি। কিছু পরামর্শের আশায় অ্যারিজোনার লয়েল অবজারভেটরিতে নিজের আঁকা মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের ড্রয়িং পাঠালে পরামর্শের বদলে পেয়ে যান চাকরির প্রস্তাব। ১৯২৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সেখানে তিনি পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করেন।
এখানে তাঁর প্রধান দায়িত্ব ছিল প্ল্যানেট এক্স খুঁজে বের করা। অবজারভেটরির প্রতিষ্ঠতা পারসিভাল লয়েলও গ্রহটিকে খুঁজছিলেন। এর আগে তিনি (লয়েল সাহেব) মঙ্গল গ্রহের খাল আবিষ্কার করে খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯১৬ সালে লয়েল মারা গেলেও গ্রহটির অনুসন্ধানকার্য চলতে থাকে।
টমবাউ এর দায়িত্বই ছিল লয়েলের কাজটিকে চালু রাখা। এক বছর পর, ১৯৩০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে উদ্দেশ্য সফল হল। ক্লাইড টমবাউ পেয়ে গেলেন প্লুটোকে। কৃতিত্বের জন্যে টমাবাউ স্কলারশিপ পেলেন। পাশাপাশি পেলেন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৯ সালে তিনি ফরমাল শিক্ষা সমাপ্ত করেন।
কিন্তু জ্যোতির্বিদগণ প্ল্যানেট এক্সকে খুঁজছিলেন কেন? উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে জ্যোতির্বিদরা বিশ্বাস করতেন, কিছু একটা সপ্তম গ্রহ ইউরেনাসের কক্ষপথে নাক গলাচ্ছে। সেই সময় ইউরেনাসই ছিল সবচেয়ে বহিঃস্থ জানা গ্রহ।বোঝা গেল, ইউরেনাসের বাইরেও কেউ আছে। এর অবস্থানও নির্ণয় করা হল এবং অবশেষে ১৮৪৬ সালে পাওয়া গেল নেপচুন গ্রহ।
আরো পড়ুনঃ নেপচুন আবিষ্কারের কাহিনী

কিন্তু দেখা গেল নেপচুনের কক্ষপথও রহস্যময় আচরণ করছে। ফলে, জ্যোতির্বিদরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলেন, নেপচুনের বাইরেও আরেকটি অজানা গ্রহ আছে। এরই নাম দেওয়া হয় প্ল্যানেট এক্স। একে খুঁজতে গিয়েি বের হয়ে পড়ল প্লুটো। কিন্তু একে পাবার পরে দেখা গেল, নেপচুনের কক্ষপথের রহস্যময়তা ব্যখ্যা করার সাধ্য প্লুটোর নেই। এর ভর তুলনামূলকভাবে অতি সামান্য। পরে এর অন্য ব্যখ্যা পাওয়া গিয়েছিল।
নানা কারণে ২০০৬ সালে প্লুটো গ্রহের খাতা থেকে বাদ পড়ে গেল। পরিচিতি পেল বামন গ্রহ হিসেবে। বর্তমানে আমাদের সৌরজগতে আরো অনেক বস্তুই এই পরিচয় বহন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হোমিয়া, মাকিমাকি, সেরেস ইত্যাদি।
কিন্তু প্ল্যানেট এক্সের কী হল? মজার ব্যাপার হল, ২০১৬ সালের শুরুতে ক্যালটেকের জ্যোতির্বিদরা ঘোষণা দিয়েছেন, প্লুটোর কক্ষপথের বাইরে আরেকটি বড় গ্রহ আছে যার ভর পৃথিবীর ১০ গুণ। ধারণা করা হচ্ছে, নেপচুন থেকে ২০ গুণ দূরে এর কক্ষপথ অবস্থিত এবং সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করতে এর সময় লাগে ২০ হাজার বছর।

সূত্রঃ
১। Earth Sky
Category: articles

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

শুক্র গ্রহের একটি অন্যতম ডাক নাম শুকতারা। অন্য দিকে একে সন্ধ্যাতারাও বলা হয়। অথচ বেচারা মোটেই তারা বা নক্ষত্র নয়, সৌরজগতের একটি গ্রহ মাত্র। ইংরেজিতেও একে ভুল করে star বলা হয়- যথাক্রমে Morning star ও Evening star। কিন্তু নক্ষত্র বা তারা না হওয়া সত্ত্বেও একে কেন তারা বলা হয়? এর তো নিজস্ব আলো নেই। এটিও চাঁদের মতই সূর্যের আলোই প্রতিফলিত করে।
ভোরের আকাশে শুকতারার ছবি 

শুক্র গ্রহ পৃথিবীর চেয়ে সূর্যের নিকটে থাকায় এর কক্ষপথ পৃথিবীর চেয়েও ভেতরের দিকে। এ কারণে, বুধের মতই এটিও সব সময় সূর্যের কাছাকাছি অবস্থান করে। পৃথিবীর আকাশে এটি যখন সূর্যের পেছনে থাকে (সূর্যের পরে উদয়-অস্ত ঘটার কারণে), তখন সূর্যাস্তের পরেই পশ্চিমাকাশে এটি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল থাকার সময়গুলোতে এটি সূর্য ডোবার কয়েক মিনিট পরেই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এ সময় একে আমরা সন্ধ্যাতারা বলি (Evening star)।
অন্য দিকে, এটি পৃথিবীর আকাশে সূর্যের চেয়ে এগিয়ে থাকলে এটি সূর্যের আগেই অস্ত যায়। এ সময় একে সন্ধ্যার আকাশে দেখা যায় না। কিন্তু সূর্যের আগে অস্ত গিয়েছে এ কারণেই যে এটি আসলে ভোরে উদিতও হয়েছিল সূর্যের আগে। ফলে, এই সময়গুলোতে একে ভোরের আগে পূবাকশে দেখা যায়। সূর্য উদিত হয়ে এর আলোতে মিলিয়ে যায় এর আলো। এ অবস্থায় একে আমরা বলি সন্ধ্যাতারা।

প্রাচীন গ্রিকরা শুকতারা ও সন্ধ্যাতারাকে দুটি আলাদা বস্তু মনে করত। তারা এদেরকে যথাক্রমে ফসফোরস (Phosphoros) ও হেসপেরোস (Hesperos) নাম দিয়েছিল। প্রথমটির অর্থ আলো আনয়নকারী ও সন্ধ্যার তারা। কয়েকশো বছর পরে তারা বুঝতে পারে যে, এরা দুজন আসলে একই বস্তু।
সূত্রঃ
১। ইউনিভার্স টুডে
Category: articles
আমরা জানি, গ্রহদের অন্তত দুটি গতি আছে- আবর্তন গতি ও সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ গতি। অবশ্য এরা সূর্যের সাথে সাথে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করেও ঘুরছে। সেটা আলাদা কথা। এখানে আমরা গ্রহদের আবর্তন নিয়ে কথা বলছি।

পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, শুক্র এবং ইউরেনাস ছাড়া সৌরজগতের সবগুলো গ্রহ ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে ঘোরে। অন্য কথায়, গতিটি হচ্ছে পশ্চিম থেকে পূবে। এটা একই সাথে সূর্যের চারপাশে গ্রহদের প্রদক্ষিণেরও দিক। ধারণা করা হয়, একটি বড়সড় গ্রহাণুর আঘাতে ইউরেনাসের আবর্তন গতি খেই হারিয়ে ফেলে। ফলে, এর আবর্তনের দিক এর প্রদক্ষিণ দিকের সাথে প্রায় সমকোণে তথা ৯০ ডিগ্রি কোণে হেলে পড়ে। অন্য দিকে, অন্য গ্রহের তুলনায় শুকতারা নামে পরিচিত শুক্র গ্রহের গতি একেবারেই উল্টো দিকে। অর্থ্যাৎ, এর আবর্তন হয় পূর্ব থেকে পশ্চিমে। এ কারণে, এই গ্রহে সূর্যোদয় ঘটে পশ্চিমে!
ধারনা করা হয়, এরও উল্টো গতির পেছনে দায়ী কোন গ্রহাণু।

সূত্রঃ 
১। কর্নেল ইউনিভার্সিটি
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৬

মঙ্গল গ্রহ যে লাল দেখায় সেটা রাতের আকাশে খালি চোখে পৃথিবী থেকেও দেখা যায়।  কিভাবে গ্রহটি তার বিখ্যাত লাল রঙটি পেল?
মঙ্গলের লাল পৃষ্ঠের ছবি
মঙ্গল গ্রহের ছবিতে দেখা লাল রঙটি এর পৃষ্ঠের লোহার মরিচা ধরার ফলাফল। মঙ্গলের পৃষ্ঠে উপস্থিত মাটি ও পাথরের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আয়রন (লোহা)। পাশাপাশি সামান্য পরিমাণ ক্লোরিন ও সালফারও রয়েছে। বায়ুস্রোতের প্রভাবে মাটি ও পাথর ক্ষয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। অন্য দিকে, প্রাচীন আগ্নেয়গিরি পৃষ্ঠজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিল ধূলিকণাদের।
ধুলিকণার মধ্যে থাকা আয়রন অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে পৃষ্ঠকে লাল বানিয়ে তোলে। অন্য দিকে, মঙ্গলের আকাশও কিন্তু লাল। এর কারণ, ঝড়ের সময় ধূলিকণা পৌঁছে গিয়েছিল এর বায়ুমণ্ডলেও। মঙ্গল গ্রহের ধূলিময় পৃষ্ঠ কয়েক মিলিমিটার থেকে সর্বোচ্চ ২ মিটার পর্যন্ত পুরু। এর নিচেই রয়েছে প্রধান্ত ব্যাসাল্টের ঘনীভূত লাভা। এই ব্যাসাল্টে লোহার ঘনত্ব পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি। ফলাফল- মঙ্গলের লাল বেশ।
মঙ্গল গ্রহ দেখতে লাল- নিজের চোখে দেখতে চান? আপনার জন্যেই আমাদের নিয়মিত আয়োজনঃ রাতের আকাশ। এই সেকশন থেকে গ্রহদের খোঁজখবর পড়ুন। মঙ্গল গ্রহ কখ কোথায় দেখা যায় জানা যাবে।

সূত্রঃ
১। স্পেইস আনসার
Category: articles

মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৫

সূর্য পৃথিবীর নকটতম নক্ষত্র। পৃথিবী থেকে এর গড় দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার বা ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। এই দূরত্বকে বলা হয় অ্যাস্ট্রোনোমিক্যাল একক যা সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর দূরত্বের একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সূর্যের প্রধান উপাদান আয়নিত গ্যাস। এর মধ্যে তিন চতুর্থাংশ হাইড্রোজেন। বাকি অংশে প্রধানত হিলিয়াম ছাড়াও সামান্য পরিমাণ ভারী মৌল যেমন অক্সিজেন, কার্বন, নিয়ন এবং আয়রন রয়েছে।

সূর্য: সৌরজগতের ৯৯ ভাগের উপরে ভর যার দখলে 

 পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?

এই সূর্যের মাধ্যমেই পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশকে সম্ভব হয়েছে। সূর্যের কারণেই পৃথিবীতে ঋতু, আবহাওয়া, জলবায়ু এবং সামুদ্রিক স্রোতের পরিবর্তন ঘটে।  নিউক্লিও বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন ক্রমাগত হিলিয়ামে পরিণত হয়ে সূর্যে আলো ও তাপ আকারে শক্তি উৎপন্ন করে।

প্রায় ১০ লাখ পৃথিবীকে সূর্যের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া যাবে। অন্য দিকে ব্যাস বরাবর বসালে জায়গা হবে ১০৯টি পৃথিবীর। সৌরজগতের ৯৯.৮৬ ভাগ ভর সূর্য একাই ধারণ করে। সূর্যের মধ্যে ছয়টি অঞ্চল আছে- কেন্দ্রীয় অন্তর্বস্তু, বিকিরণ অঞ্চল, পরিচলন অঞ্চল, দৃশ্যমান পৃষ্ঠ বা ফটোস্ফিয়ার, ক্রোমোস্ফিয়ার এবং সর্ববহিস্থ স্তর করোনা (মুকুট)। পৃথিবীর মত সূর্যে কোন কঠিন পৃষ্ঠ নেই, নক্ষত্রদের কারোই থাকে না।

কেন্দ্রে এর তাপমাত্রা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। কেন্দ্রে উৎপন্ন শক্তিই সূর্যের চালিকাশক্তি যা থেকে সূর্য পৃথিবীতেও তাপ ও আলো বিতরণ করে। পরিচলন অঞ্চলে তাপমাত্রা নেমে যায় ২০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
সূর্যের পৃষ্ঠ তথা ফটোস্ফিয়ারের পুরুত্ব ৫০০ কিলোমিটার (৩০০ মাইল)। এখান থেকেই সৌর বিকিরণ মুক্ত হয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ে এবং ৮ মিনিট পর চলে আসে পৃথিবীতে। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা সাড়ে পাঁচ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বাইরের  অনুজ্জ্বল করোনা চোখে পড়ে শুধু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময়, যখন চাঁদের আড়ালে ফটোস্ফিয়ার ঢাকা পড়ে যায়। ফটোস্ফিয়ারের পরে তাপমাত্রা আবার বেড়ে গিয়ে ২০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়। এর সঠিক ও পূর্ণাংগ কারণ এখনও অজানা।

প্রায় সাড়ে ৪ শো কোটি বছর আগে সূর্যের জন্ম। বেঁচে থাকবে আরো প্রায় সমপরিমাণ সময়। কেন্দ্রে হাইড্রোজেন ফিউশান বন্ধ হলে আরো বেশ কিছু পরিবর্তনের পরে এটি লোহিত দানবে (Red Giant) পরিণত হবে। তখন এর ব্যাসার্ধ বেড়ে গিয়ে শুক্র গ্রহ পর্যন্ত পৌঁছবে, এবং সম্ভবত পৃথিবীকেও স্পর্শ করবে।
নোট-১ঃ প্রকৃত গড় দূরত্ব ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার বা ৯.২৯৬ কোটি মাইল।

সূর্য সম্পর্কিত সকল নিবন্ধ পাবেন এখানে। অন্যান্য সকল পরিভাষার তালিকা এখানে

সূত্র
১। নাসাঃ সৌরজগৎ
২। উইকিপিডিয়াঃ সূর্য 
Category: articles

রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৫

আজকের ছবিঃ মঙ্গলের বালির পাহাড়
বিবরণঃ দেখতে হয়ত গাছের মত লাগছে, কিন্তু আসলে তা নয়। মঙ্গল গ্রহের উত্তর মেরু থেকে ২০০৮ সালের এপ্রিলে এই ছবিটি তুলেছে মার্স রিকনয়সেন্স অরবিটার (MRO)। উল্লেখিত তারিখে মঙ্গলের বসন্তের সূর্য কার্বন ডাই অক্সাইডের বরফ গলিয়ে বালির পাহাড়কে অবমুক্ত করে দিয়েছে।

সূত্রঃ
১। নাসা এ্যাপড
Category: articles

শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫

মঙ্গল গ্রহ এর উপগ্রহ ফোবসকে হারিয়ে ফেলতে পারে। তবে এতে ওর লাভই হবে।
উপগ্রহটি এর চারদিকে বলয়ের (ring) রূপ নিবে, অনেকটা শনির বলয়ের মত। অবশ্য এটা ঘটতে সময় লাগবে প্রায় কোটি বছর। এ সময় ফোবসের উপাদান মঙ্গলের ছিটকে পড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়ে তৈরি হবে বলয়।
এর ফলে দেরিতে হলেও মঙ্গল যোগ দিবে শনি, বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের দলে। উল্লেখ্য, আমরা সাধারণত জানি, বলয় শুধু শনি গ্রহের আছে। কিন্তু বাস্তবে উপরোক্ত গ্রহদেরও বলয় আছে। সেটা অবশ্যই শনির তুলনায় কম লক্ষ্যণীয়।

সূত্রঃ
১। Earth Sky
২। Universe Today 
Category: articles

শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৫

শুকতারা আসলে সৌরজগতের ২য় এবং পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ শুক্র। আমরা একে 'তারা' বলে ডাকলেও আসলে এটি 'তারা' নয়, গ্রহ। যাই হোক, বছরের কিছু সময় এটা থাকে সন্ধ্যার আকাশে, কিছু সময় আবার ভোরের আকাশে। এই দুই সময় একে যথাক্রমে সন্ধ্যাতারা ও শুকতারা বলা হয়। সন্ধ্যাতারা থাকে সব সময় পশ্চিম দিকে, আর শুকতারা সব সময় পূর্ব দিকে। গত কয়েক মাস এবং আগামী কিছু দিন (আগস্ট-প্রায় ডিসেম্বর, ২০১৫) এটি ভোরের আকাশে আছে।

একে চেনার উপায়ঃ 
চাঁদের পরে রাতের আকাশে এটি সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু। এমনকি, রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র 'লুব্ধক'ও এর চেয়ে অনুজ্জ্বল। গ্রহটি এতই উজ্জ্বল ও বড় দেখায় যে মাঝে মাঝে একে দূরের কোন টাওয়ারের আলো বলে মনে হয়। দেখতেও প্রায় টেনিস বলের মত বড়। তাই এমন অস্বাভাবিক বড় কোন বস্তু দেখলেই একে শুক্র গ্রহ ধরে নিলে খুব একটা ভুল হবে না। আর যেহেতু এটা পশ্চিম বা পূবাকাশেই থাকে তাই সন্ধ্যায় এটা যেদিকে থাকবে সেটাই পশ্চিম, আর ভোরে যেদিকে থাকবে সেটাই পূর্ব দিক।
আরো পড়ুন,
১। ধ্রুবতারা দেখে দিক নির্ণয়
২। সূর্য দিয়ে দিক নির্ণয় 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫

বামন গ্রহ প্লুটো ক্ষুদ্রতম বহিঃস্থ চারটি উপগ্রহের আবর্তন বেগ এতটাই বেশি যা বিজ্ঞানীদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত। জুলাইয়ের ১৪ তারিখে নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন এর কাছ দিয়ে উড়ে যাবার সময় এমনই অদ্ভুত ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। নভেম্বরের ৯ তারিখে বিজ্ঞানীরা আমেরিকান এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির (AAS) এর একটি মিটিং-এ বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেছেন।

নিউ হরাইজন মিশনের কো-ইনভেসটিগেটর মার্ক শোয়ালটার বলেন,
হাইড্রা (Hydra), নিক্স (Nix), কেরবারোস (Kerberos) এবং স্টাইক্স (Styx) উপগ্রহুগুলো ঘুরন্ত লাটিমের ন্যায় আচরণ করছে। সৌরজগতে এরাই সবচেয়ে বিস্ময়কর উপগ্রহ।
তিনি আরো বলেন,
এদের এই অবস্থাকে আমি বিশৃঙ্খল বলেই ক্ষান্ত হব না, এ যে বিশাল গণ্ডগোল। সত্যি বলতে, এমন কিছু আমরা আগে কখোনই দেখিনি, এরা কী বার্তা দিচ্ছে তাও মাথায় আসছে না। 
নাসার নিউ হরাইজনের বরাতে পাওয়া প্লুটোর উপগ্রহদের ছবি
এই চার উপগ্রহ প্লুটোকে প্রদক্ষিণ করার পাশিপাশি প্লুটোর বৃহত্তম উপগ্রহ শ্যারনকে প্রদক্ষিণ করছে। এদের কোন কোনটার আবর্তন গতি অনেক বেশি। নিক্সের গতি এর কক্ষপথ থেকে পেছন দিকে। কিছু আবার আবার প্লুটোর দিকেই সব সময় পাশ ফিরে থাকে যা সৌরজগতের অন্য উপগ্রহগুলোর বৈশিষ্ট্যের সাথেও মিলে যায়।
তবে ঘুর্ণন বেগে সবচেয়ে এগিয়ে আছে সর্ববহিঃস্থ উপগ্রহ হাইড্রা। এটি বামন গ্রহ প্লুটোকে একবার ঘুরে আসতে আসতে নিজের অক্ষের উপর ৮৯ বার চক্কর খায়। শোলালটার বলেন,
 হাইড্রা আরেকটু জোরে ঘুরলেই এর পৃষ্ঠবস্তু কেন্দ্রবিমুখী বলের কারণে হারিয়ে যেত। 
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্লুটোর বৃহত্তম উপগ্রহ শ্যারনের উচ্চ কৌণিক বল (টর্ক) সবগুলো উপগ্রহের যুগপৎ আবর্তনে বাধা দিয়ে থাকতে পারে।

সূত্রঃ
১। আর্থ স্কাই
২। নাসা 
Category: articles

সোমবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৫

আমরা আগেই জেনেছি, সৌরজগতের খালি চোখে দৃশ্যমান ৫টি গ্রহের মধ্যে শনিই সবচেয়ে অস্পষ্ট। কিন্তু কিছু দিন ধরেই রাতের আকাশে চলছে এই নিয়মের ব্যতিক্রম। এই ব্যত্যয় চলবে এ মাসেও। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই মাসেও উত্তর গো্লার্ধের আকাশে বুধ (Mercury) সন্ধ্যার গোধূলীর আভায় লুকিয়ে থাকবে। অন্য তিনটি দৃশ্যমান গ্রহও তথা শুক্র (Venus), বৃহস্পতি (Jupiter) ও মঙ্গল (Mars) সূর্যাস্তের আগে দেখা দেবে পূর্ব দিগন্তে। বিস্তারিত জানা যাক একে একে।
বুধঃ
আমরা জানি, বুধ সৌরজগতের সবচেয়ে ভেতরের (Innermost) গ্রহ এবং তাই এর অবস্থান থাকে সব সময় সূর্যের কাছাকছি। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে গ্রহটি ভোরের আকাশ থেকে সন্ধ্যার আকাশে পাড়ি দিয়েছিল। সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত এটি সন্ধ্যার আকাশেই থাকবে। তবে, গত কয়েক মাসের মতোই উত্তর গোলার্ধের আকাশপ্রেমীদের এই গ্রহটি দেখার ব্যাপারে কিছুটা হতাশ হতে হবে। উল্টো দিকে দক্ষিণ গোলার্ধে কিন্তু বছরের সবেচেয়ে ভালো সাজে দেখা যাবে গ্রহটিকে।
দক্ষিণ ও ক্রান্তীয় উত্তর অঞ্চলে (কর্কটক্রান্তি রেখা) গ্রহটি সূর্যের ২ ঘণ্টা পর পর্যন্ত দিগন্তের উপরে থাকবে। মধ্য-উত্তর গোলার্ধে সূর্যাস্তের  ১ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যেই বুধও অস্ত যাবে। আরো উত্তরে দুরবিন দিয়েও একে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। মাস শেষে গ্রহটি সন্ধ্যার আকাশ থেকে লাফ দিয়ে চলে যাবে ভোরের আকাশে। অক্টোবরে অবশ্য উত্তর গোলার্ধে একে ভালোই চোখে পড়বে।

শনিঃ
পুরো সেপ্টেম্বর মাসেই মেঘমুক্ত আকাশে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শনি গ্রহ দৃষ্টির সামনে চলে আসবে। উত্তর অক্ষাংশ অঞ্চলে সন্ধ্যার কয়েক ঘণ্টা পর পর্যন্ত শনি দিগন্তের উপরে হাজির থাকবে। তবে, দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে গ্রহটি আরো বেশি সময় এমনকি মধ্য রাত পর্যন্ত জ্বলজ্বল করবে।
কিভাবে চেনে যাবে গ্রহটিকে? অনেক দিন ধরেই এটি দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশের কাঁকড়াবিছার মতো আকৃতির তারামণ্ডলী বৃশ্চিকের সামনে অবস্থান করছে। দেখতে সোনালী রঙ এর গ্রহটি স্থির আলো প্রতিফলিত করে। অর্থ্যাৎ, এটি নক্ষত্রের মত মিটমিট করে জ্বলে না। এ মাসে একে চাঁদের পাশে দেখা যাবে। তারিখটি হচ্ছে ১৮ সেপ্টেম্বর। দুরবিন ছাড়া কখোনই এর উপগ্রহগুলো চোখে পড়ে না।

শুক্রঃ
সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ জুড়ে শুকতারা শুক্র এই মাসে নিজের সবচেয়ে উজ্জ্বল আলো প্রতিফলিত করবে। দৃশ্যমান অবস্থায় একে চিনতে কখোনোই ভুল হয় না। কারণ, এটি পৃথিবীর আকাশের ৩য় উজ্জ্বলতম বস্তু যেখানে ১ম ও ২য় বস্তুদ্বয় এর সাথে তুলনীয়ই নয়। কারণ, এরা হলো যথাক্রমে সূর্য ও চন্দ্র।
তবে গ্রহটিকে দেখে মুগ্ধ হবার জন্যে ২১ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করার কোন মানে নেই। কারণ, পুরো মাসেই পূবাকাশে ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগেই গ্রহটি উজ্জ্বলভাবে চোখে ধরা দেবে। পাশাপাশি অনুজ্জ্বল গ্রহ মঙ্গলকে খুঁজে পেতেও কাজে আসবে গ্রহটি। সেপ্টেম্বরের ৯, ১০ ও ১১ তারিখে অপসৃয়মান ক্রিসেন্ট মুনের (অর্ধ-চন্দ্র) সাহায্যে  শুক্র (Venus), বৃহস্পতি (Jupiter), ও মঙ্গলকে খুঁজে পাওয়া যাবে।


মঙ্গলঃ 
জুনের মাঝামাঝিতে মঙ্গল ভোরের আকাশে পাড়ি দিয়েছিল। সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ও মঙ্গলের কক্ষীয় গতি প্রায় সমান। পৃথিবীর ক্ষেত্রে বেগটি যেখানে সেকেন্ডে ১৮ মাইল, মঙ্গলের ক্ষেত্রে তা ১৫। ফলে সূর্যোদয়ের আভা থেকে গ্রহটি রেহাই পেতে সময় লেগে যায়। তবে একবার রেহাই পেলে তা কিছু দিন বলবৎ থাকে। এটিই ঘটছে দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে গত কয়েক মাস ধরে।
এই মাসে শুক্রের ভোরের আকাশে উপস্থিতি মঙ্গলকে খুঁজে পেতে সুবিধা করে দিয়েছে। তারিখ যতোই এগোতে থাকবে, গ্রহটি সূর্যোদয়ের ততোই আগে দেখা যেতে থাকবে এবং দেখাও যাবে ক্রমান্বয়ে দিগন্ত থেকে বেশি উপরের দিকে। পুরো মাস জুড়ে মঙ্গলের কাছাকাছি অবস্থান করে শুক্র গ্রহটিকে খুঁজে পাবার ক্ষেত্রে লাইটহাউসের ভূমিকা পালন করবে।

বৃহস্পতিঃ
পৃথিবীর আকাশে অন্য যে কোন নক্ষত্রের চেয়েও সৌরজগতের বৃহত্তম গ্রহটি বেশি উজ্জ্বল দেখায়। শুক্রের পরেই উজ্জ্বলতায় এর অবস্থান। এ বছরের আগস্টে শুক্রের সাথে সাথে এটিও চলে আসে ভোরের আকাশে। তবে, এ মাসে মঙ্গল বা শুক্রের চেয়ে এর অবস্থান সূর্যের আভার বেশি কাছে। তবে তারিখ গড়াবার সাথে সাথে গ্রহখানা উল্লেখিত গ্রহ দুটির দিকে এগোতে থাকবে। অক্টোবরের ১৭ তারিখে এটি মঙ্গলকে ধরে ফেলবে এবং ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিকটতম অবস্থানের রেকর্ড ধরে রাখবে।

অক্টোবরের ২৬ তারিখে এটি ধরে ফেলবে শুক্রকে এবং বছরের তৃতীয় ও শেষ মিলন ঘটাবে। একই তারিখে মঙ্গলকে সাথে নিয়ে এই তিন গ্রহ একটি চমৎকার প্রদর্শনী দেখাবে যার আবার দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২১ সাল পর্যন্ত।


তথ্যসূত্রঃ Earthsky
Category: articles

শনিবার, ২০ জুন, ২০১৫

পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। তবে এই দূরত্ব সব সময় একই থাকে না। থাকত যদি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে বৃত্তাকার পথে। কিন্তু সব গ্রহই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে উপবৃত্তাকার পথে। কেপলারের গ্রহের প্রথম সূত্র অনুসারে।



সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের অবস্থানকে বলে অনুসূর। আর সবচেয়ে দূরের অবস্থানের নাম অপসূর। পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে জানুয়ারি মাসে। আর সবচেয়ে দূরে থাকে জুলাই মাসে। মজার ব্যাপার হলো, আমরা অনেকেই মনে করি, শীত কালে সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে। অথচ জানুয়ারির তীব্র শীতের সময়ই কিন্তু আমরা সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকি। এই ধারণা ভুল হওয়ার আরও সহজ প্রমাণ হলো, ঐ জানুয়ারি মাসেই কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে তীব্র গরম। আসল কথা হলো শীত বা গরম পৃথিবী-সূর্যের দূরত্বের কারণে হয় না। হয় পৃথিবীর কক্ষ তল হেলে থাকার কারণে।

আরও পড়ুন
☛ অনুসূর বনাম অপসূর

অনুসূর অবস্থানে পৃথিবী সূর্য থেকে ১৪.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকে। আর জুলাই মাসে অপসূর অবস্থানে এলে এই দূরত্ব বেড়ে হয় ১৫.২ কোটি কিলোমিটার।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব 

জ্যোতির্বিদ্যায় পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের দূরত্বের হিসাব করতে কাজে লাগে এ দূরত্বটি। এই দূরত্বের গড়কে বলা হয়
এক অ্যাস্ট্রোনমিকেল ইউনিট (এইউ) । মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্বের পরিমাপে আলোকবর্ষের মতো এই এককটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই দূরত্ব বলা ও বোঝা দুই ক্ষেত্রেই এইউ একক্টি সুবিধাজনক।

আরও পড়ুন
☛ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

প্লুটো আমাদের থেকে ৫৮৭ কোটি কিলোমিটার দূরে আছে। এটাকে এভাবে বললে আরও সহজ হয়: ৩৯ এইউ। একইভাবে সূর্য থেকে বৃহস্পতি গ্রহের দূরত্ব হয় ৫ দশমিক ২। নেপচুনের দূরত্ব প্রায় ৩০ এইউ। ধূমকেতুর উৎসস্থল বলে অনুমিত সৌরজগতের একেবারে প্রান্তের দিকে অবস্থিত উর্ট মেঘের দূরত্ব সূর্য থেকে ১ লক্ষ এইউ।

অন্য দিকে, সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টৌরির (Proxima centauri) দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় আড়াই লাখ এইউ। কিন্তু এই দূরত্বটি এতই বেশি যে একে আলোকবর্ষ এককে মাপাই বেশি সুবিধাজনক। সেই হিসেবে এর দূরত্ব ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ।

কে মেপেছেন এই দূরত্ব?
খৃষ্টের জন্মের ২৫০ বছর আগেই অ্যারিসটারকাস দূরত্বটি মাপেন। সাম্প্রতিক সময় ১৬৫৩ সালে ক্রিষ্টিয়ান হাইগেনও মাপেন এই দূরত্ব। ১৬৭২ সালে আবার মাপেন গিওভানি ক্যাসিনি। তার পদ্ধতি ছিল লম্বন পদ্ধতি।

সূত্র
১। ইউনিভার্স টুডে: হাউ ফার ইজ আর্থ ফ্রম দ্য সান
২। উইকিপিডিয়া: পেরিহেলিয়ন ও অ্যাপহেলিয়ন
Category: articles

মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৫

প্রথমে দেখি সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারবে কিনা।
না, সূর্য কখোনই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে না। তারকাদের জীবনের পরিণতি ঘটতে পারে মূলত দুইভাবে। সূর্যের কাছাকাছি ভরের তারকাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে সরল ও শান্তভাবে। এসব তারকার অন্তর্ভাগের হাইড্রোজেন জ্বালানী ফুরিয়ে যাবার পর এরা লোহিত দানব ধাপে পদার্পণ করে। পরবর্তীতে এই লোহিত দানব নক্ষত্রই (Red Giant Star) তার বহির্ভাগ মহাকাশে নিক্ষেপ করে গ্রহ নীহারিকায় (Planetary Nebula) পরিণত করে। আর অন্তর্ভাগ সংকুচিত হয়ে শ্বেত বামন (White Dwarf) গঠন করে।
অন্য দিকে, সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বেশি ভারী তারকারা জ্বালানী ফুরিয়ে পরিণত হয় লোহিত সুপারজায়ান্ট তারকায়। এরাও পরে বহির্ভাগ ছুড়ে ফেলে দেয়। এই ঘটনাকে বলে সুপার নোভা বিস্ফোরণ। বিস্ফোরণের পরে থেকে যাওয়া অংশ হয় নিউট্রন তারকা নয়তো ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়। তারকার ভর দুই থেকে পাঁচ সৌর ভরের মধ্যে থাকলে হবে নিউট্রন স্টার। নিউট্রন নক্ষত্রের কোর বা মূলবস্তুর চাপ এত বেশি হয় যে, প্রোটন ও ইলেকট্রন একত্রিত হয়ে নিউট্রন গঠন করে।
আরো বেশি ভর হলে হবে ব্ল্যাক হোল। প্রকৃতপক্ষে, যেসব তারকার ভর পাঁচ সৌর ভরের চেয়ে বেশি হয় তাদের সুপার নোভা বিস্ফোরণের পরও মূলবস্তুর নিজস্ব অভিকর্ষ এত শক্তিশালী হয় যে, ঐ বস্তু থেকে কোন কিছুই, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আমরা কোন বস্তু দেখি যখন ঐ বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়ে। এটা প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানী হাসান ইবনে হাইশাম। যেহেতু ব্ল্যাক হোল থেকে আলো বেরিয়ে আসতে পারে না, তাই একে দেখাও যায় না। খেতাবটাও পেল সেজন্যেই। নামটি দিয়েছিলেন আমেরিকান পদার্থিবিদ জন হুইলার।
প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, আলো তো কোন কণা নয়, তাহলে এটা অভিকর্ষের কাছে ধরা খায় কী করে? অভিকর্ষ তো শুধু ভরের সাথে জড়িত। আলোক কণিকা ফোটনের তো ভরই নেই? ক্যামনে কী?
আসলে অভিকর্ষ ভরের সাথে সম্পৃক্ত- এটা হল নিউটনের বক্তব্য। কিন্তু অভিকর্ষের আধুনিক মতবাদ তথা আইনস্টাইনীয় মত অনুযায়ী অভিকর্ষ কোন বল নয়। অভিকর্ষ হচ্ছে স্থান কালের বক্রতা। আর, ব্ল্যাক হোল তার চারপাশের স্থান কালকে এত বেশি পরিমাণ বাঁকিয়ে দেয় যে আলোক কণা ঐ বক্রতা থেকে সরলরেখার মতো বেরিয়ে আসতে পারে না।
ফলে, ভর কম হবার কারণে সূর্য ব্ল্যাক হোল হতে পারছে না। কিন্তু ধরা যাক, কোন কারণে আমাদের সৌরজগতের সূর্য ব্ল্যাক হোল বনে গেল। সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায়, তাহলে কী ঘটবে?
পৃথিবীর কিছুই ঘটবে না। কিন্তু বিপত্তি ঘটবে পৃথিবীর প্রাণিদের নিয়ে। রেহাই পাবো না আমরাও। কেন? কারণ, সূর্য যদি ব্ল্যাক হোল হয়ে যায় তাহলে আমরা বঞ্চিত হব এর আলো থেকে। সারা দুনিয়া ঢেকে যাবে অন্ধকার পর্দার আড়ালে।
তাহলে কি বলা যায় সূর্য ব্ল্যাক হোল না হওয়াতে আমরা বেঁচে গেছি? মোটেই না। আরো ৪৫০ কোটি বছর পর সূর্য পরিণত হবে লোহিত দানব নক্ষত্রে। এই সময় সূর্য বড় হয়ে গিয়ে পৃথিবীর কাছাকাছি পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। বিজ্ঞানীরা একমত হতে পারেননি যে পৃথিবী সূর্যের পেটে চলে যাবে নাকি বাইরেই থাকবে। তবে যদি পেটে নাও যায়, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব কোনভাবে অব্যাহত থাকবে না। কারণ সৌরপৃষ্ঠ কাছাকাছি হবার দরুণ যে প্রচণ্ড উত্তাপ উৎপন্ন হবে তা সহ্য করা বনী আদমের জন্যে সম্ভব হবে না। মানুষ আসলেই দুর্বল প্রাণী। মানুষ যদি টিকে যাবার উপাউ বেরও করে ফেলতে পারে বেঁচে থাকার জন্য তাও যথেষ্ট হবে না। কেননা, প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের পানি শুকিয়ে যাবে। অন্য কারণে মানুষ যদি তত দিনে ধ্বংস নাও হয়ে যায়, তাহলে তাকে পানি ছাড়া, অক্সিজেনের সঠিক পরিমাণ ছাড়া এবং দূষিত বায়ুমণ্ডলসহ আরো নানাবিধ বিরূপ পরিবেশে বেঁচে থাকার উপায় বের করতে হবে।
অবশ্য আমাদের আপাতত সেই চিন্তা নেই। আমাদের ৪৫০ কোটি বছরের প্রজন্মের ঘাড়ে পড়বে সেই কাজ! 
সূত্রঃ
[১] উইকিপিডিয়াঃ গ্রহ নীহারিকা 
[২] তারকার জীবনচক্র- বিবিসি 
[৩] কিউরিয়াস অ্যাস্ট্রো 
Category: articles

সোমবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫


মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা কত? ৮ হাজার ৮ শো ৪৮ মিটার বা ২৯ হাজার ২৯ ফুট। একে কি কেউ টেক্কা দিতে পারে?
হ্যাঁ, পারে। তবে, উঁকি দিতে হবে পৃথিবী থেকে প্রতিবেশী গ্রহ মঙ্গলের দিকে। তাহলেই পাওয়া যাবে একটি বিশাল আগ্নেয়গিরির খোঁজ। নাম অলিম্পাস মনস (Olympus Mons)। এর উচ্চতা প্রায় ২২ কিলোমিটার বা ১৪ মাইল। হ্যাঁ, অদ্ভুত লাগলেও শুনছেন ঠিকই। এটাই সৌরজগতের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি।
অর্থ্যাৎ সমুদ্র সীমা থেকে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা যত, এই দানবীয় পর্বত তার প্রায় তিন গুণ বড়।
অবশ্য, এটি মঙ্গল গ্রহের নবীনতম আগ্নেয়গিরি। এর উদ্ভব ঘটেছে মঙ্গলের আমাজনিয়ান যুগে। ঊনবিংশ শতক থেকেই জ্যোতির্বিদদের সাথে এর পরিচয় ছিল। শুরুর দিকে একে ডাকা হতো Nix Olympica নামে, ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ অলিম্পিক তুষার। আর, ল্যাটিন ভাষায় মনস অর্থ হলো 'পর্বত'।
আগ্নেয়গিরিটি মঙ্গলের পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত।এর ব্যাস ৬২৪ কিলোমিটার বা ৩৭৪ মাইল যা আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের প্রায় সমান। অন্য দিকে, আগে পৃথিবীর বৃহত্তম অগ্নিগিরি (Volcano) ছিল মাউনা লোয়া। অবশ্য, ২০১৩ সালে সাগরতলে আবিষ্কৃত আরেকটি বিশাল আগ্নেয়গিরি টামু ম্যাসিফ। এই আগ্নেয়গিরিটির আয়তন প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ১ লাখ ১৯ হাজার বর্গমাইল।  টামু ম্যাসিফ সাগর সমতল থেকে ২ কিলোমিটার পানির নিচে অবস্থিত। জাপান থেকে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে পানির নিচে অবস্থিত শাটস্কি রাইজ নামে পরিচিত একটি ভৌগোলিক প্লেট বা মালভূমিতে অবস্থিত।

টামু ম্যাসিফের আকার অলিম্পাস মন্সের সাথে তুলনীয় হলেও মঙ্গোলের অগ্নিগিরিটি আয়তনে মাউনা লোয়ার চেয়ে  ১০০ গুণ বড়। শুধু অলিম্পাস মন্সই নয়, মঙ্গল গ্রহে মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে উঁচু আরো অনেকগুলো পাহাড় রয়েছে যেমন Ascraeus Mons, ইলিসিয়াম মনস, আরসিয়াম মনস ইত্যাদি । এগুলোর প্রতিটিই উচ্চতায় ১২ কিলোমিটারের উপরে। সত্যি বলতে, মঙ্গোলে এমন প্রায় ডজনখানেক আগ্নেয়গিরি আছে যারা পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলোর দশ থেকে ১০০ গুণ বড়।

কিন্তু মঙ্গোলের পাহাড় ও অগ্নিগিরিগুলো এত উঁচু বা বিশাল কেন?
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে গ্রহটিতে সক্রিয় প্লেট টেকটোনিকস নেই। ফলে, এর ক্রাস্ট তথা উপরিভাগ অবস্থান পরিবর্তন করে না যেমনটা হয় পৃথিবীতে। এর ফলে, আগেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতে নিক্ষিপ্ত ম্যাগমা একই স্থানে স্তূপীকৃত হয়ে গড়ে ওঠে বিশাল আগ্নেয়গিরি। বিজ্ঞানীদের মতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মঙ্গোলের অপেক্ষাকৃত দুর্বল অভিকর্ষ। অভিকর্ষ তথা কোন বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণের ক্ষমতা কম বলেই উচ্চতা বেশি পেরেছে।
বর্তমানে মঙ্গোলের অন্তর্ভাগ বা কোর শীতল হয়ে যাবার কারণে অলিম্পাস মনসসহ অন্যান্য আগ্নেয়গিরিতে অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে না।

তথ্যসূত্রঃ
[১] নাসা 
[২] যুগান্তর
[৩] উইকিপিডিয়া 
[৪] বিবিসি 
[৫] স্পেইস ডট কম
টামু ম্যাসিফ সাগর সমতল থেকে ২ কিলোমিটার পানির নিচে অবস্থিত। জাপান থেকে ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে পানির নিচে অবস্থিত শাটস্কি রাইজ নামে পরিচিত একটি ভৌগোলিক প্লেট বা মালভূমিতে অবস্থিত। - See more at: http://www.jugantor.com/ten-horizon/2013/09/18/28999#sthash.scyXrldG.dpuf
Category: articles

শনিবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫

প্রশ্নঃ গ্রহ, উপগ্রহের তো লেজ থাকে না। তাহলে,  ধূমকেতু লেজ পায় কোথায়?
উত্তরঃ  ধূমকেতুর লেজের উৎপত্তি এর গাঠনিক কারণে। ধূমকেতু হচ্ছে হিমায়িত বরফ, গ্যাস ও ধূলিকণা নিয়ে গঠিত। একটি ধূমকেতু যখন সূর্যের কাছাকাছি আসে, তখন এটি উত্তপ্ত হতে থাকে। এতে অবস্থিত বরফ তখন বাষ্পে পরিণত হয়ে যায়। ফলে, আগে বরফের ফাঁকে ফাঁকে যে ধূলিকণা আটকে ছিল, সেগুলোও মুক্তহয়ে যায়।
বাষ্পীভূত এই পদার্থসমূহকে সূর্যালোক ও সৌর ঝড়ের চার্জিত কণিকার ধারা ধূমকেতুর পেছন দিকে ঠেলে দেয়। এতেই তৈরি হয় এর লেজ। ধূমকেতু কী কী পদার্থে গঠিত তার উপর নির্ভর করে তার লেজের আকৃতি।
ধূমকেতুর লেজ হয় দুই ধরণের- ধূলিকণা ও গ্যাস আয়ন। ধূলিকণার লেজে থাকে সিগারেটের ধোঁয়ায় প্রাপ্ত আকারের সমান ছোট্ট ও কঠিন কণিকা।
ধূমকেতুর লেজ

অন্য দিকে, গ্যাস পরমাণু থেকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ইলেক্ট্রনকে আলাদা করে দিয়ে আয়নিত করে ফেললে গ্যাস আয়ন লেজ গঠিত হয়। সৌর বায়ুর কারণেই এই লেজের অবস্থান হয় সূর্যের উলটো দিকে। দুই ধরণের লেজই দৈর্ঘ্যে লক্ষাধিক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ধূমকেতু (Comet) সূর্য থেকে দূরে চলে গেলে এর লেজ ও কোমা (বায়ুমন্ডল) বিলুপ্ত হয়। তখন, এর কেন্দ্রে অবস্থিত পদার্থসমূহ ঘনীভূত হয়ে শক্ত পাথুরে পদার্থে পরিণত হয়।
সূত্রঃ হাবলসাইট
Category: articles

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪

সূর্য হল আমাদের সৌরজগতের শক্তি সরবরাহ কেন্দ্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় এটি হল একটি সাধারণ নক্ষত্র। কিন্তু সাধারণ এই নক্ষত্রই প্রতি সেকেন্ডে উৎপন্ন করে বিপুল পরিমাণ শক্তি, প্রধানত আলো ও তাপ বিকিরণের মাধ্যমে।  প্রতি সেকেন্ডে সূর্যে উৎপন্ন শক্তির পরিমাণ হল 5 x 1023  অশ্বশক্তির সমপরিমাণ। ধারণা পেতে চান এই পরিমাণ শক্তি কতটা বেশি? মনে করুন, পৃথিবী থেকে সূর্য  অবধি একটা বরফের সেতু নির্মাণ করা হল, যা ১ মাইল পুরু ও দুই মাইল চওড়া। এই সেটুটাকে এক সেকেন্ডে উড়িয়ে দিতে সমান পরিমাণ শক্তি লাগবে!
চলুন, জেনেই নিই সূর্যের বয়স কত।

সূর্যের বয়স জানার সরাসরি কোন উপায় নেই। পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন প্রস্তরখণ্ড ও উল্কাপিণ্ডের বয়স হচ্ছে ৪৬০ কোটি বছর। যদি ধরে নেওয়া হয়, পুরো সৌরজগত একই সাথে সৃষ্টি হয়েছিল, তবে সূর্যের বয়সও হয় এটাই। অবশ্য, এই অনুমান ভুল হবার সম্ভাবনা তেমন একটা নেই। অর্থ্যাৎ সূর্যের বয়স প্রায় ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি বছর।
সবচেয়ে প্রাচীন পাথরের তেজস্ক্রিয় ভাঙ্গন সূত্র কাজে লাগিয়ে এর বয়স বের করা হয়।
সূত্রঃ
নাসা হেলিওস
Category: articles

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীর বাইরে প্রাণ তথা এলিয়েনের প্রসঙ্গ আসলেই ঘুরে ফিরে আসে মঙ্গল গ্রহের কথা। এর আগেও বহুবার খবরের শিরোনাম হয়েছে এই লাল গ্রহটি। এবার এতে পাওয়া গেল মিথেন গ্যাস। তাতে কী? প্রাণের অস্তিত্ত্বের সাথে তো সম্পর্ক পানির। মিথেনের তাতে কাজ কি? হ্যাঁ, সম্পর্ক আছে। আর সেজন্যই তো আবারো শিরোনাম হল পৃথিবীর ২য় নিকটতম প্রতিবেশী।
নাসার মঙ্গল যান কিওরিওসিটি রোভার

এবার নাসার মহাকাশযান কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে মিথেন গ্যাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে পেরেছে। এ থেকে ধারণা করা যায় বর্তমানে বা অন্তত অতীতে হলেও মঙ্গলে প্রাণ ছিল। গ্রহটিতে মিথেনের উপস্থিতি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য। কারণ, পৃথিবীর মিথেনের ৯৫ শতাংশই আসে অণুজীবদের থেকে। এ থেকেই গবেষকরা আশা করছেন, মঙ্গলে প্রাণ থাকতেও পারে।
গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবের গবেষক ড. ক্রিস ওয়েবস্টার বলেন, "হিসেবে দেখা যাচ্ছে, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৫ হাজার টন মিথেন আছে। একে যদি আপনি পৃথিবীর সাথে তুলনা করেন, তবে পৃথিবীতে আছে ৫০ কোটি টন। পৃথিবীতে এই গ্যাসের ঘনত্ব হচ্ছে ১৮০০ পিপিবিভি (Parts per billion by volume) যেখানে মঙ্গলে ০.৭ পিপিবিভি।"  
কিউরিওসিটির দল গ্রহটিতে মিথেনের উৎসের সন্ধান না পেলেও মনে করা হচ্ছে ভূগর্ভস্থ স্টোরই এর উৎসস্থল। এই গ্যাসের উৎস কোন জীব নাকি নিছকই ভৌগলিক ব্যাপার তা জানতে সহায়তা করতে পারে গ্যসে উপস্থিত কার্বনের আইসোটোপের প্রকৃতি। পৃথিবীতে ১২ ভরের কার্বন (C-12) জীবনের ক্ষেত্রে কার্বন-১৩ এর চেয়ে বেশি সহায়ক।
C-13 এর তুলনায় C-12 এর অধিক উপস্থিতির প্রমাণ পেয়েই বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ অন্তত ৪ বিলিয়ন বছর আগেও ছিল বলে অনুমান করছেন। তবে, মঙ্গলের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি ভালো মত পরীক্ষা করবার যথেষ্ট গ্যাস নেই বলেই আপাতত সমস্যা।
এখানে উল্লেখ্য, মিথেন হল একটি জৈব (Organic) যৌগ। আর জৈব যৌগের প্রধান উপাদান হল কার্বন।
নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি যানটি ২০১২ সালের আগস্টে মঙ্গলে অবতরণ করে এর এর বায়ু ও উপাদান নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। 
সূত্রঃ
বিবিসি নিউজ, উইকিপিডিয়া
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

কিছুটা ভিন্নমত থাকলেও হ্যালির ধূমকেতুকেই (comet) সবচেয়ে বিখ্যাত ধূমকেতু মনে করা হয়। ৭৫ বছর পর পর এটি পৃথিবীর খুবই কাছে চলে আসে। সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে এটি পৃথিবী ঘুরে গেছে। আবার পৃথিবীর আকাশে আসবে ২০৬১ সালে। অর্থ্যাৎ, এটি একটি পর্যাবৃত্ত (Periodic) ধূমকেতু, যা নির্দিষ্ট সময় পর পর ফিরে আসে।

হ্যালির ধূমকেতু 
ইংরেজ জ্যোতির্বিদ এডমান্ড হ্যালির (Edmond Halley) নামানুসারে ধূমকেতুটির এমন নামকরণ। তিনি ১৫৩১, ১৬০৭ ও ১৬৮১ সালে  পৃথিবীর নিকট এলাকায় বিভিন্ন ধূমকেতু আসার প্রতিবেদন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেন।  এরপর ১৭০৫ সালে তিনি সিদ্ধান্ত টানেন যে ঐ তিন ধূমকেতু আসলে একই ধূমকেতু। তিনি বলে যান যে ১৭৫৮ সালে একে আবার দেখা যাবে। তাঁর ধারণা সঠিক প্রমাণ করে ধূমকেতুটি আবারও পৃথিবীর আকাশে হাজিরা দেয়। কিন্তু তত দিনে তিনি পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর আয়ুষ্কাল ছিল ১৬৫৬-১৭৪২ সাল পর্যন্ত। কিন্তু নিজ চোখে দেখে না গেলেও তাঁর অনুমান সত্য হওয়ায় বস্তুটার নাম দেওয়া হয়ে গেল তাঁর নামে। 

এটাই একমাত্র ধূমকেতু, যার ফিরে আসার ব্যাপারে পূর্বাভাস হয়েছিল।  এর পর্যাবৃত্ত (Preiodic) প্রত্যাবর্তন থেকে জানা গেল এটি সূর্যকে প্রদক্ষিণও করছে। আরও জানা গেল সৌর পরিবারে বেশ কিছু ধূমকেতুও আছে।

সর্বশেষ দর্শনঃ

মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রগতির যুগে প্রথম বস্তুটাকে দেখা যায় ১৯৮৬ সালে- মানে শেষবার। কয়েকটি মহাকাশযান এর কাছাকাছি গিয়ে নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা চালায়। পৃথিবীকে অতিক্রম করে যাবার সময় উচ্চ-ক্ষমতা সম্পন্ন টেলিস্কোপ দ্বারা একে পর্যবেক্ষণ করা যায়।

ইতিহাসে হ্যালির ধূমকেতুঃ
ইউরোপিয়ান স্পেইস এজেন্সির (ESA) মতে সর্বপ্রথম একে দেখা যায় খৃষ্টপূর্ব ২৩৯ সালে।  চীনের মহাকাশ গবেষকরা একে নথিভুক্ত করে। পরে এটি যথাক্রমে ১৬৪ ও ৮৭ খৃষ্টপূর্ব অব্দে আবার ফিরে আসে। ঐ সময় ব্যাবিলনীয়রা এর নথি রাখে।

হ্যালির ধুমকেতুর কক্ষপথ
উইলিয়াম দি কনকারার ১০৬৬ সালে ইংল্যান্ড আক্রমণ করার ঠিক কিছুক্ষণ আগে একে আবার দেখা যায়। এটাই এর সবচেয়ে বিখ্যাত হাজিরা। বলা হয়ে থাকে, উইলিয়াম মনে করেছিলেন ধূমকেতুটি তার বিজয়বার্তা নিয়ে এসেছে। আগে মনে করা হত ধূমকেতুটি কোনো সু বা দুঃসংবাদ নিয়ে এলো বুঝি! কিন্তু এখন আর কেউ তা মনে করে না।

এডমান্ড হ্যালি ধূমকেতুটিকে চিহ্নিত করার ১০৫ বছর আগে শেক্সপিয়ার তাঁর জুলিয়াস সিজার নাটকে লেখেন,
ভিক্ষুকদের মৃত্যুতে ধূমকেতু আসে না, আকাশ ঝলকে উঠে রাজপুত্রের মৃত্যুতে ।
১৯১০ সালে একে সবচেয়ে স্পষ্ট করে দেখা গেল। ঐ বছর এটি পৃথিবীর মাত্র সোয়া দুই কোটি কিলোমিটার দূরত্ব দিয়ে অতিক্রম করে। এই দূরত্ব পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের ১৫ ভাগের মাত্র ১ ভাগ।

মার্কিন সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের জন্ম ১৮৩৫ সালে। ঐ বছরও হ্যালির ধূমকেতু পৃথিবীর আকাশে দেখা যায়। রসিক এই লেখক ১৯০৯ সালে বলেন,
আমি এসেছিলাম ধূমকেতুর সাথে। আগামী বছর আবার ধূমকেতুটি পৃথিবী ঘুরে যাবে, সাথে আমিও হয়ত চলে যাব।
টোয়েন ১৯১০ সালের ২১ এপ্রিল মারা গেলেন, যার এক দিন আগেই দেখে নিলেন তাঁর জীবনকালে ধূমকেতুটির ২য় ভ্রমণ।

হ্যালির ধুমকেতুর কক্ষপথঃ 


সূত্রঃ
১. স্পেস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Edmond Halley
৩. এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকা
Category: articles

বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪

২০ জানুয়ারি, ১৯৯৯। একটি খবর সবাইকে চমকে দিল। প্লুটো এখন আর গ্রহ নয়, একটি বিশাল বরফখণ্ড মাত্র। বিবিসিসহ বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হয় এই খবর। কিন্তু প্লুটো আসলে তক্ষুনি তার গ্রহত্ব হারায়নি।
প্লুটো গ্রহ কিনা- এই মান নির্ধারণের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতির (IAU বা  International Astronomical Union) বিভাগ-৩ এর কাঁধে পড়ে।

১৯৩০ সালে ক্লাইড টমবাউ প্লুটো গ্রহটিকে আবিষ্কারের পর এটি সৌরজগতের নবম গ্রহের মর্যাদা লাভ করে। কিন্তু, বহু দিন ধরেই এটা স্পষ্ট যে প্লুটো অন্যান্য গ্রহের বৈশিষ্ট্যের সাথে সাদৃশ্য বজায় রাখতে অক্ষম। এর কক্ষপথ পাশ্ববর্তী গ্রহ নেপচুনকে ছেদ করে গেছে।  বিংশ শতাব্দীর একেবারে শেষের দিকে প্লুটোর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে বহিঃস্থ সৌরজগতের নতুন আবিষ্কৃত অনেকগুলো বস্তুর মিল খুঁজে পাওয়া যায়। মাইনর প্ল্যানেট গবেষকদের কাছে ব্যাপারটি ছিল ব্যাপক আলোচিত।

পরে নেপচুন গ্রহের বাইরের এলাকার কিছু বস্তুর কক্ষপথ বেশ ভালোভাবে চিহ্নিত করতে পারার পর প্লুটো বিতর্ক আরও চাঙ্গা হল। ওই বস্তু গুলোকে নাম দেওয়া হয় ট্রান্স নেপচুনিয়ান অবজেক্টস বা TNO

IAU এর বিভাগ-৩ TNO এর তালিকায় প্লুটোকে এক নম্বরে রাখার ব্যাপারে চিন্তা করল। তখনও প্লুটোর গ্রহত্ব বজায় থাকল। তবে পরিচয় হল দুটো- গ্রহ এবং টিএনও একইসাথে। তখনও গ্রহের কোন সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা ছিল না। আশা ছিল যদি গ্রহের সংজ্ঞার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছা যায়, তবে সৌরজগতের অনেকগুলো বস্তুকে নতুন করে তালিকাভুক্ত করা যাবে। অন্যথায় বিতর্কিত বা ঐতিহাসিক পদবী রেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

এই অনৈক্যের সুবাদে প্লুটো আরো কয়েক বছর গ্রহত্বের সাধ নিল। কিন্তু ২০০৩ সালে আবিষ্কৃত হল ইরিস। এর আকার প্লুটোর চেয়ে বড়। প্লুটো আবারও বিতর্কে পড়ে গেল। কফিনে শেষ পেরেকগুলো ঠুকে দিতে ২০০৪ সালে আবিষ্কৃত হল হোমিয়া (Haumea), ২০০৫ সালে মাকিমাকি(Makemake) যারা ভর ও আয়তনে প্লুটোর কাছকাছি । অন্য দিকে ১৮০১ সালে তথা নেপচুন আবিষ্কারের ৪৫ বছর আগে আবিষ্কৃত হয় সেরেস (Ceres)। একে অর্ধ-শতক ধরে গ্রহ বলে মনে করা হত। পরে ফেলা হয় গ্রহাণুদের তালিকায়। এরও ভর ও আয়তন প্লুটোর কাছাকাছি। তাছাড়া, প্লুটোর ভর চাঁদের মাত্র ১৮ শতাংশ! 
এখন তাহলে, প্লুটো যদি গ্রহ হয়, তাহলে এই ইরিস (যে প্লুটোর চেয়েও বড়), হোমিয়া, মাকিমাকি, সেরেস বেচারারা কী দোষ করল? অন্য দিকে, শুধু এরাই নয়, ২০০২ থেকে ২০০৭ এর মধ্যে অরকাস, স্যালাসিয়া, কৌয়ার, সেডনা ইত্যাদি ৬-৭ টি উল্লেখ্যযোগ্য বস্তু আবিষ্কৃত হল।
প্লুটোর সাথে অন্যান্য বামন গ্রহ ও চাঁদের তুলনা
আন্তর্জাতিক মহাকাশবিজ্ঞান সমিতি এবার গ্রহের সংজ্ঞা নির্ধারণ করল। আরেকটি তালিকা তৈরি করল বামন গ্রহদের নিয়ে। ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে  ইরিস, হোমিয়া, মাকিমাকি ও সেরেসের সাথে প্লুটোর নাম লেখা হল বামন গ্রহদের (Dwarf Planet) খাতায়।
সংজ্ঞায়  বলা হল, গ্রহ হচ্ছে সেই সব বস্তু যারা
 ক. যথেষ্ট ভারী হওয়ায় নিজস্ব অভিকর্ষের চাপে গোলাকৃতি পেয়েছে।
 খ. তাপ নিউক্লিয়ার ফিউসন বিক্রিয়া ঘটানোর মত বেশি ভরবিশিষ্ট নয়।
 গ. আশেপাশের অঞ্চল থেকে প্ল্যানেটেসিমালদের সরাতে পেরেছে। ফলে কক্ষপথের সীমানায় আর কেউ নেউ। 
এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
আর বামন গ্রহের সংজ্ঞা হলঃ
সেই সব বস্তু যাদের ভর গ্রহের সমান কিন্তু গ্রহও নয়, উপগ্রহও নয়; সূর্যকে সরাসরি প্রদক্ষিণ করে; নিজস্ব আকৃতি পাবার মত অভিকর্ষের মালিক কিন্তু কক্ষপথকে অন্যান্য বস্তু থেকে আলাদা বা স্বতন্ত্র করতে পারেনি।

প্লুটো যে বামন গ্রহই থাকবে- এই সিধান্ত চূড়ান্ত হলেও কতটা স্থায়ী হতে পারে তা সময়ই বলে দেবে, কারণ এই সিধান্তে সবাই খুশি নয়। কারণটা মূলত ঐতিহাসিক।
সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়াঃ Planet; Dwarf_planet;
২. নাসা
Category: articles
ট্রেস -৪
এখন পর্যন্ত জানা মতে, সৌরজগতের বাইরে সবচেয়ে বড় গ্রহটি এক বিস্ময়। তাত্ত্বিকভাবে এর অস্তিত্বই থাকা অসম্ভব। এর নাম দেওয়া হয়েছে ট্রেস -৪ (TrES-4)। এই গ্রহটি বৃহস্পতি গ্রহের ১.৭ গুণ বড়। এর ঘনত্ব অতিমাত্রায় স্বল্প, তাই একে ধোঁয়াটে গ্রহদের (Puffy Planets) কাতারে রাখা হয়েছে। এর ঘনত্ব হল প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে মাত্র দশমিক ২ গ্রাম যা প্রায় তর্নিকাঠের (Balsa wood) ঘনত্বের সমান।উল্লেখ্য, পৃথিবীর ঘনত্ব প্রতি কিউবিক সেন্টিমিটারে সাড়ে ৫ গ্রামের ওপরে।
তর্নিকাঠ

তথ্যটি দিলেন অ্যারিজোনার লয়েল মানমন্দিরের (Observatory) গবেষণা প্রদান জর্জি মান্দুশেভ। তিনি আরও বলেন, " গ্রহটির বহিঃস্থ বায়ুমণ্ডলের উপর অভিকর্ষীয় টান নগণ্য হওয়ায় সম্ভবত বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশ ধূমকেতুর লেজের আকার ধারণ করেছে।"
গ্রহটির ভর অনেক, কিন্তু সেই তুলনায় ঘনত্ব খুবই কম। ফলে এক্সোপ্ল্যানেটদের (সৌরজগতের বাইরের গ্রহ) জগতে  এটি এক ব্যতিক্রম গ্রহ। ব্যতিক্রমের মাত্রা এতই বেশি যে বর্তমান থিওরি দিয়ে এর অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না।
স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে এটি বেশি বড়।  মান্দুসেভ স্পেস ডট কমকে বলেন, গ্রহটির যা ভর, তাতে এর আকার বৃহস্পতির সমান হওয়া উচিত। অথচ এটি তার দ্বিগুণ। এডওয়ার্ড ডানহাম বলেন, "ট্রেস -৪ একটি তাত্ত্বিক সমস্যা বাঁধিয়েছে। অবশ্য, সমস্যা তৈরি হওয়া ভাল। কারণ, তা সমাধান হলে আমরা নতুন জিনিস জানতে পারি।"
গ্রহটি পৃথিবী থেকে ১৪০০ আলোকবর্ষ দূরে, হারকিউলিস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত।  এর আরেকটি অবাক করা ব্যাপার হল, এই গ্রহ মাত্র সাড়ে তিন দিনে এর তারকাকে (GSC 02620-00648) প্রদক্ষিণ করে ফেলে। অর্থ্যাৎ, এতে সাড়ে তিন দিনে এক বছর হয়ে যায়।
ট্রেস-৪ গ্রহের মাতৃ তারকাও আরেক বিস্ময়। এর বয়স প্রায় সূর্যের সমান হলেও কাজেকর্মে এগিয়ে গেছে অনেক বেশি, হয়েছে বেশি পোক্ত। ভর বেশি হওয়ায় এর বিবর্তন ঘটেছে দ্রুত। মহাকাশবিজ্ঞানের ভাষায় এটি সাবজায়ান্টে পরিণত হয়েছে। সাবজায়ান্ট বলা হয় সেই সব তারকা/নক্ষত্রকে যারা হাইড্রোজেন জ্বালানী শেষ করে লোহিত দানবে (Red Giant) পরিণত হবার অপেক্ষায় আছে। অন্য দিকে, আরো ৫ থেকে ৭ বিলিয়ন বছর পরে আমাদের সূর্য লোহিত দানব হতে পারবে। সেই সময় সূর্য বিস্তৃত হয়ে পৃথিবী সহ নিকটবর্তী গ্রহসমূহকে গ্রাস করে ফেলবে।
ট্রেস-৪ যেহেতু এর মাতৃ তারকার খুব কাছে থেকে ঘুরছে, তাই বেচারার কপাল খারাপ, ভবিষ্যতে মাতৃ তারকার জঠরে চলে যেতে হবে। মান্দুশেভ বলেন, এটা ঘটবে, যখন নক্ষত্রটি আরো প্রায় ১০০ বছর পরে লোহিত দানবে রূপান্তরিত হবে।
ট্রেস-৪ এর মাতৃ তারকা GSC 02620-00648 সূর্যের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ উজ্জ্বল এবং প্রতি সেকেন্ডে ৩-৪ গুণ বেশি শক্তি নির্গত করে। নিয়মানুযায়ী অপেক্ষাকৃত বড় ও উজ্জ্বলতর নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত গ্যাসীয় গ্রহরা হালকা হয়। কিন্তু এই গ্রহটির আকার এত বিশাল কেন, তা ব্যাখ্যাতীত।

সূত্রঃ
১. স্পেইস ডট কম
২. উইকিপিডিয়াঃ Earth
Category: articles

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীতে বসে থেকে আমরা সৌরজগতের কিয়দাংশই দেখতে পাই। আমরা কী কীইবা আর দেখি? দিনে সূর্যের প্রখর তেজ, রাতের আকাশের কোমল চাঁদ ও আরো কিছু গ্রহ। কিন্তু আমাদের সৌরজগতের চৌহদ্দি অত অল্প নয়। তাহলে, প্রশ্ন দাঁড়ায়, আমাদের সৌরজগত ঠিক কত বড়?

হিসাব দেবার আগে হিসাবের এককটা দেখে নেই। মহাকাশের দূরত্বগুলো এত বিশাল যে আমাদের এসআই একক (SI Unit) মিটার তো দূরের কথা, কিলোমিটারও পাত্তা পায় না। মহাকাশবিদগণ তাই অ্যাস্ট্রোনোমিকেল ইউনিট (astronomical unit বা AU) নামে একটি একক ব্যবহার করেন। এই এককটার মান হচ্ছে পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব বা ১৫ কোটি কিলোমিটারের সমান।

বুধ গ্রহ (Mercury ) সূর্য থেকে মাত্র .৩৯ এইউ (AU) দূরে। আর জুপিটার সূর্যের ৫.৫ এইউ দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। দূরতম গ্রহ নেপচুনের দূরত্ব সূর্য থেকে ৩০.২ এইউ, যা ৪৫০৩ মিলিয়ন কিলোমিটারের সমান। প্লুটোর দূরত্ব ৩৯.২ এইউ। প্লুটো এখন বামন গ্রহ হলেও সৌর পরিবার থেকে তো আর নির্মূল হয়নি!

দ্রুতবেগে ছোটা হাইওয়েগামী গাড়ি (ধরলাম বেগ ঘণ্টায় প্রায় ১১৫ কিলোমিটার) নিয়ে সূর্য থেকে নেপচুনে যেতে প্রায় ৪৬ হাজার বছর লেগে যাবে।
কিন্তু আমাদের সৌরজগতের দৌড় এখানেই শেষ নয়। গ্রহদের চৌহদ্দি যেখানে শেষ, সৌরজগতের পরিধি তার চেয়েও বহু দূর অবধি বিস্তৃত।

সৌরজগতের সবচেয়ে দূরবর্তী বামন গ্রহ ( dwarf planet) হল এরিস (Eris)। এও কিন্তু সৌরজগতের একটি ক্ষুদ্র গণ্ডির মধ্যেই পড়ে আছে। আবার, সৌরজগতের ৩০ এইউ থেকে ৫০ এইউ পর্যন্ত অর্থ্যাৎ সাড়ে ৭ বিলিয়ন অঞ্চল জুড়ে কুইপার বেল্ট (Kuiper belt) বিস্তৃত। এই বেল্টের মধ্যে আছে প্লুটো, ইরিস, মাকিমাকি ও হাউমেয়া বামন গ্রহরা। 
কাইপার বেল্ট

সবে তো শুরু!

আরও দূরে, প্রায় ৫০-২০০ এইউ দূরত্বে দেখা মিলবে প্রান্ত সীমার। এটা হচ্ছে সেই সীমানা, যেখান পর্যন্ত সেকেন্ডে ৪০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে যায় সৌর বায়ু (Solar Wind) এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয় আন্তঃতারকা পদার্থের সাথে। এই পদার্থগুলো আবার একীভূত হয়ে ধূমকেতুর মত লেজ তৈরি করে যার বিস্তৃতি হয় সূর্য থেকে ২৩০ এইউ পর্যন্ত।

কিন্তু, সৌরজগতের সত্যিকার বিশালতা বোঝা যাবে এর অভিকর্ষের পাল্লা থেকে অর্থাৎ যে দূরত্ব পর্যন্ত কোন বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে পারে।

সৌর পরিবার ও উর্ট ক্লাউড 
সৌরজগতের দূরবর্তী পরিসর হচ্ছে ওর্ট ক্লাউড পর্যন্ত। ওর্ট ক্লাউড হচ্ছে এক গুচ্ছ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হিমেল (Icy) গ্রহের সমষ্টি। এরা ১ লক্ষ এইউ দূরত্বে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এই দূরত্ব ১.৮৭ আলোক বর্ষের সমান। যদিও আমরা ওর্ট ক্লাউডকে সরাসরি দেখি না, মনে করা হয় যেসব লং পিরিয়ড ধূমকেতু (Comet) সৌরজগতের নিকটবর্তী অংশে চলে আসে, তাদের উৎপত্তি এখানে।

সূর্যের অভিকর্ষ নিজের বাড়ি পেরিয়ে ২ আলোক বর্ষব্যাপী বিস্তৃত। এই পাল্লা সূর্য থেকে এর নিকটতম তারকা প্রক্সিমা সেন্টোরির দূরত্বের প্রায় অর্ধেক। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, এই অঞ্চলের মধ্যবর্তী যে কোন বস্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ (Revolution) করবে।

আগের সেই গাড়িটার কথা মনে আছে? ঐ গাড়িটার এই দূরত্ব পাড়ি দিতে প্রায় ২ কোটি বছর লাগবে! পৃথিবী থেকে  নিক্ষিপ্ত সর্বাধিক বেগের নাসার মহাকাশযান নিউ হরাইজন ( New Horizons)  একই কাজ করতে ৩৭ হাজার বছর সময় নেবে। এর গতি সেকেন্ডে ১৬.২৬ কি.মি বা ঘণ্টায় ৫৮৫৩৬ কি.মি। 

সূত্রঃ
১. www.universetoday.com/104486/how-big-is-our-solar-system/
২. উইকিপিডিয়াঃ Neptune, Eris, Kuiper belt; Oort cloud; New Horizons
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...