Advertisement

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

প্রশ্নঃ পৃথিবী যদি সেকেণ্ডে ৩০ কিলোমিটার বেগে নিজ অক্ষের উপর ঘুরতে থাকে তাহলে মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে স্থির দেখায় কেন?
অত জোরে নিজ অক্ষের উপর ঘুরলে তো মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফিরে আসার সময় বাংলাদেশে অবতরণ করতে গেলে তো আমেরিকায় চলে যাওয়ার কথা! আর মহাকাশ থেকে তো পৃথিবীকে পাগলের মত ঘুরতে দেখা যায় না, তাহলে এর ব্যাখ্যা কি?
[রাকিব হাসান]

উত্তরঃ
প্রথমত, পৃথিবী নিজ অক্ষের উপর সেকেন্ডে ৩০ কিমি. বেগে ঘুরছে না। বিষুব অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ হল ঘণ্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। আপনি যেটি উল্লেখ করেছেন সেটি হল সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ বেগ। কিন্তু তাতে আপনার প্রশ্ন বাতিল হচ্ছে না।
আরও পড়ুনঃ 
 ☛ পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত?
 ☛ আবর্তন ও প্রদক্ষিণের পার্থক্য কী?

পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরছে। দুই মেরুর ঠিক মাঝখানে বিষুব অঞ্চল অবস্থিত।
তাছাড়া আবর্তন বেগ পৃথিবীর সব জায়গায় সমান নয়। বিষুব রেখা থেকে উত্তরে বা দক্ষিণে আবর্তন বেগ কমে যায়। আমাদের বাংলাদেশে পৃথিবীর আবর্তন হচ্ছে সেকেন্ডে ৪২৪ মিটার করে।
কিন্তু তবু প্রতি সেকেন্ডে ৪৬৪ বা ৪২৪ মিটার বেগও খুব একটা ছোট নয়। এই গতিতে যেতে থাকলে কোনো বাস তিনি সেকেন্ড পার হবার আগেই এক কিমি. পথ পার হয়ে যাবে। তাহলে পৃথিবীর এই ঘূর্ণন মহাকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে না কেন?

একটা গল্প শুনি। একবার রাশিয়ায় একজন লোক দাবি করলেন তিনি খুব সহজে ভ্রমণ করার একটি কৌশল বের করেছেন। দরকার হবে শুধু একটি বেলুন। ধরুন কেউ বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ যেতে চাইছেন। তাহলে বাংলাদেশ থেকে একটি বেলুনে চেপে উপরে উঠে যেতে হবে। ইতোমধ্যে পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে বেলুনের নিচে ইউরোপ এসে যাবে। এখন নেমে পড়লেই হল। খুব সহজ ভ্রমণ। বিমান আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই এভাবে মিটে যেত।
এই কৌশল বাস্তবে কাজ করে না। এর কারণ হল, আমরা যখন বেলুনে চেপে উপরে উঠব, তখনো আমরা পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের মধ্যেই থাকব। ঘুরতে থাকব পৃথিবীর সাথেই। এটা যদি না হত তাহলে আমাদের কষ্ট করে বেলুনে চড়ার দরকার ছিল না। মাটি থেকে এক লাফ দিয়ে উপরে উঠে ৩ সেকেন্ড পরে নামলেই দেখা যেত এক কিলোমিটারের বেশি পশ্চিমে চলে গেছি। বাস্তবে আমরা যখন আকাশ পথে ভ্রমণ করি, তখনো পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরতেই থাকি।
বিমান নিজেও পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরতে থাকে 
এ জন্যেই বিমান থেকে তাকালেও আমরা পৃথিবীকে স্থিরই দেখব।
মূল কারণ পৃথিবীর অভিকর্ষ এতটা শক্তিশালী যে আমরা এর থেকে অনেক উপরে উঠলেও এর অভিকর্ষীয় টানের সীমানার মধ্যেই থেকে যাই। আর এই টানের কারণেই কিন্তু পৃথিবীতে বায়ুমণ্ডল আছে। আমাদের মাথার উপরে যে বায়ুমণ্ডল সেটিও পৃথিবীর সাথে সাথে ঘুরছে। আরেকটি মজার ব্যাপার হল, একটু আগে বলেছি কেউ লাফ দিলে তিন সেকেন্ডে এক কিলোমিটারেরর বেশি পথ যেতে পারবেন। আসলে যাবেন ঠিকই। কিন্তু পৃথিবী যদি তাকে নিজের অভিকর্ষ দ্বারা ধরে না রাখত তবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরার কারণে কিছুক্ষণ পরই তিনি পৃথিবী থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। পৃথিবী ছুটে চলে যেত কক্ষপথ ধরে। এছাড়াও পৃথবীর অভিকর্ষ যদি যথেষ্ট শক্তিশালী না হত, তবে আমরা কেন্দ্রবিমুখী বলের কারণে এর পৃষ্ঠ থেকে আলাদা হয়ে যেতাম।
আরও পড়ুনঃ
পৃথিবীর আবর্তনের কারণে আমরা পড়ে যাই না কেন?

আবার বেলুনের ঘটনায় ফিরে আসি। বেলুনকে কি এমন কোনো উচ্চতায় পাঠানো সম্ভব না, যেখানে এটি পৃথিবীর সাথে ঘুরবে না? নিচে এসে আমরা দেখব পায়ের তলার পৃথিবী ঠিকই ঘুরে গেছে?
হ্যাঁ, সম্ভব। সেক্ষেত্রে বেলুনকে অনেক বেশি বেগ দিয়ে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের বাইরে নিয়ে যেতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে এটা বেলুন দিয়ে সম্ভব না। এই কাজ করা হয় রকেটের মাধ্যমে। এর জন্যে রকেটের প্রাথমিক বেগ হতে সেকন্ডে অন্তত ১১ দশমিক ২ কিলোমিটার। এই বেগকে বলা হয় মুক্তি বেগ।
আরও পড়ুনঃ 
মুক্তি বেগের পরিচয়

এখন কথা হল, পৃথিবীর উপরের সব জায়গা থেকেই কি পৃথিবীকে স্থির দেখায়? অবশ্যই না। শুধু পৃথিবীর মহাকর্ষ ক্ষেত্রের অভ্যন্তর থেকেই এমনটা দেখাবে। আমরা টেল্কিস্কোপ দিয়ে সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহদের আবর্তন দেখি, কারণ আমরা এদের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের এতটা ভেতরে নই যে এরা আমাদেরকেসহ ঘুরবে। একইভাবে আমরা যদি যথেষ্ট দূরে গিয়ে পৃথিবীর দিকে তাকাই তাহলে একেও ঘুরতে দেখব। আবর্তন ও প্রদক্ষিণ দুটোই দেখা যাবে।
দেখুন নিচের ভিডিও অনেক দূর থেকে সৌরজগৎসহ বিভিন্ন নক্ষত্রদের ঘূর্ণন দেখা যাচ্ছে। কারণ এই ছবি তোলা হয়েছে এদের অনেক দূর থেকে, এদের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ভেতর থেকে নয়।

এখন বাকি প্রশ্ন হল, মহকাশযান ফিরে আসার সময় এক জায়গায় অবতরণ করতে গিয়ে আরেক জায়গায় চলে যায় না কেন? এটাও এতক্ষণে মোটামুটি স্পষ্ট হবার কথা। মহাকাশযান ফিরে আসার বিভিন্ন কৌশলে প্রথমে পৃথিবীর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে স্বাভাবিকভাবে অবতরণ করে।
মহাকাশযানের ভেতরে আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা থাকে এটি কখন, কীভাবে কোথায় অবতরণ করবে। ফলে পৃথিবীর আবর্তনের কারণেতো দূরের কথা, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরলেও কোনো সমস্যা হয় না। 
Category: articles

শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৪৭৩। আজকের এই তারিখটি হচ্ছে নিকোলাস কোপার্নিকাসের জন্মদিন। তিনি একইসাথে গণিতজ্ঞ হলেও নজর কেড়েছেন কসমোলজিতে বিশেষ অবদান রেখে।
এমন এক সময়ে তাঁর জন্ম যখন মানুষ ভাবত মহাবিশ্বের কেন্দ্রে পৃথিবীর অবস্থান। সূর্যসহ অন্যান্য গ্রহ এবং নক্ষত্ররা ঘুরছে এর চারদিকে।
পৃথিবী-কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের চিত্র

এই মহা ভুল ধারণা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করল তাঁর বই De revolutionibus orbium coelestium (On the Revolutions of the Celestial Spheres) বা খ-গোলকের ঘূর্ণন যাতে প্রস্তাবনা আসল সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের। ১৫৪৩ সালে  প্রকাশিত বইখানা আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার অন্যতম ভিত্তি।
কয়েক বছর আগে Copernicus’ birthday লিখে গুগলে সার্চ দিলে সৌরকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের একটি ডুডল দেখা যেত। ছুটির দিন বা কারো জন্ম দিন ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে গুগল ডুডল বানিয়ে থাকে।
নিকোলাস কোপার্নিকাস

তবে সৌরকেন্দ্রিক মডেল প্রথম প্রস্তাবক অবস্য কোপার্নিকাস নন। গ্রিক দার্শনিকদের অনেকেই ভাবতেন এই রকম চিন্তা। ইসলামিক জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রগতির সাথে সাথেও ধীরে ধীরে পৃথিবীর বেগ নিয়ে ধারণার বিকাশ ঘটে এবং পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্র থেকে সরানো হয়। তবে গ্রিকদের ক্ষেত্রে অন্য অনেক কিছুর মতই বাগড়া দিয়ে বসেছিলেন এরিস্টটল। তিনি বললেন, ৫৫টি এককেন্দ্রিক এবং স্বচ্ছ গোলক নিয়ে আকাশ গঠিত যেখানে আকাশের বস্তুদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ঐ গোলকের কেন্দ্রে আছে পৃথিবী। পৃথিবী এতে স্থির এবং আবদ্ধ। পৃথিবীকে এই বন্দী দশা থেকে মুক্ত করলেন কোপার্নিকাস।
এখন আমরা জানি সূর্যও কিন্তু মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয়। তাহলে কে আছে কেন্দ্রে? নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে। পড়ুনঃ মহাবিশ্বের কেন্দ্র কোথায়?
সূত্রঃ
[১] Earth Sky
[২] উইকিপিডিয়াঃ জিওসেন্ট্রিক মডেল
Category: articles

শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৬

২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি। এ বছর এই তারিখে সূর্যের নিকটতম স্থানে পৃথিবীর অবস্থান। এটা অবশ্য আন্তর্জাতিক সময়ের হিসাবে। গ্রিনিচ মান সময় অনুযায়ী ঘটনাটি ঘটবে ঐ দিনের রাত ১০টা ৪৯ মিনিটে যা আমাদের বাংলাদেশ সময় অনুসারে ৩ তারিখ ভোর ৪ টা।

সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার হওয়ায় কিছু সময় আমরা সূর্যের খুবই কাছে থাকি, আবার অন্য সময় থাকি দূরে। উপরোক্ত তারিখে সূর্যের সাপেক্ষে পৃথিবীর অবস্থানকে অনুসূর (Perihelion) বলা হয়। প্রত্যেকে বছরই জানুয়ারি মাসে পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে। অন্য দিকে, জুলাই মাসে অবস্থান হয় সবচেয়ে দূরে। এই অবস্থানটিকে বলা হয় অপসূর (Aphelion)।


জুলাই ও জানুয়ারি মাসে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্বের পার্থক্য হয় ৫০ লক্ষ কিলোমিটার। তবু, এই দূরত্ব খুব বেশি নয়। কারণ, এই দূরত্বটুকুও পৃথিবী ঋতু পরিবর্তনের হাতিয়ার নয়। এ কারণেই, জানুয়ারি মাসে আমরা সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকি, তবু এ সময় উত্তর গোলার্ধে শীতকাল থাকে। অন্য দিকে জুলাই মাসে সূর্য দূরে সত্ত্বেও থাকে গরম। আসলে শীত বা গরমের নিয়ামক সূর্য-পৃথিবীর দূরত্ব নয়, বরং পৃথিবীর কক্ষীয় নতি। আমরা জানি পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ এর কক্ষীয় তলের সাথে ২৩.৫ ডিগ্রি হেলে আছে। এ জন্যেই উত্তর গোলার্ধে যখন শীত, দক্ষিণ গোলার্ধে তখন গরম। সূর্যের অবস্থানের জন্যে যদি শীত বা গরম হত, তবে একই সাথে পুরো পৃথিবীতে শীত বা গরম অনুভূত হত।

এ বছরের জানুয়ারির ২ তারিখে সূর্য পৃথিবী থেকে ১৪৭, ১০০, ১৭৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। অন্য দিকে অপসূর অবস্থানে এই দূরত্ব দাঁড়াবে ১৫২, ১০৩, ৭৭৬ কিলোমিটার। আমরা সাধারণত বলি, সূর্য পৃথিবী থেকে ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেটা আসলে এই দুই মানের গড় দূরত্ব।

তবে প্রত্যেক বছর একই তারিখে পৃথিবী অনুসূরে থাকে না। ২০২৪ সালে পৃথিবী অনুসূরে আসে জানুয়ারির ৩ তারিখে (ঢাকার সময় অনুসারে)। ২০২৫ সালে আবার তা হবে ৪ তারিখে। পরের দুই বছর ৩ তারিখে হয়ে ২০২৮ সালে আবার হবে ৫ই জানুয়ারি তারিখে। 


সূত্র
১। আর্থ স্কাই: http://earthsky.org/tonight/earth-comes-closest-to-sun-every-year-in-early-january
২। অ্যাস্ট্রোফিক্সেল: http://www.astropixels.com/ephemeris/perap2001.html
৩। টাইম অ্যান্ড ডেট ডট কম: https://www.timeanddate.com/astronomy/perihelion-aphelion-solstice.html
Category: articles

শনিবার, ২০ জুন, ২০১৫

পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার। তবে এই দূরত্ব সব সময় একই থাকে না। থাকত যদি পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরতে বৃত্তাকার পথে। কিন্তু সব গ্রহই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে উপবৃত্তাকার পথে। কেপলারের গ্রহের প্রথম সূত্র অনুসারে।



সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের সবচেয়ে কাছের অবস্থানকে বলে অনুসূর। আর সবচেয়ে দূরের অবস্থানের নাম অপসূর। পৃথিবী সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে জানুয়ারি মাসে। আর সবচেয়ে দূরে থাকে জুলাই মাসে। মজার ব্যাপার হলো, আমরা অনেকেই মনে করি, শীত কালে সূর্য পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে থাকে। অথচ জানুয়ারির তীব্র শীতের সময়ই কিন্তু আমরা সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকি। এই ধারণা ভুল হওয়ার আরও সহজ প্রমাণ হলো, ঐ জানুয়ারি মাসেই কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে থাকে তীব্র গরম। আসল কথা হলো শীত বা গরম পৃথিবী-সূর্যের দূরত্বের কারণে হয় না। হয় পৃথিবীর কক্ষ তল হেলে থাকার কারণে।

আরও পড়ুন
☛ অনুসূর বনাম অপসূর

অনুসূর অবস্থানে পৃথিবী সূর্য থেকে ১৪.৭ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকে। আর জুলাই মাসে অপসূর অবস্থানে এলে এই দূরত্ব বেড়ে হয় ১৫.২ কোটি কিলোমিটার।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব 

জ্যোতির্বিদ্যায় পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে। সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের দূরত্বের হিসাব করতে কাজে লাগে এ দূরত্বটি। এই দূরত্বের গড়কে বলা হয়
এক অ্যাস্ট্রোনমিকেল ইউনিট (এইউ) । মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্বের পরিমাপে আলোকবর্ষের মতো এই এককটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই দূরত্ব বলা ও বোঝা দুই ক্ষেত্রেই এইউ একক্টি সুবিধাজনক।

আরও পড়ুন
☛ জ্যোতির্বিদ্যায় দূরত্বের এককেরা

প্লুটো আমাদের থেকে ৫৮৭ কোটি কিলোমিটার দূরে আছে। এটাকে এভাবে বললে আরও সহজ হয়: ৩৯ এইউ। একইভাবে সূর্য থেকে বৃহস্পতি গ্রহের দূরত্ব হয় ৫ দশমিক ২। নেপচুনের দূরত্ব প্রায় ৩০ এইউ। ধূমকেতুর উৎসস্থল বলে অনুমিত সৌরজগতের একেবারে প্রান্তের দিকে অবস্থিত উর্ট মেঘের দূরত্ব সূর্য থেকে ১ লক্ষ এইউ।

অন্য দিকে, সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র প্রক্সিমা সেন্টৌরির (Proxima centauri) দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় আড়াই লাখ এইউ। কিন্তু এই দূরত্বটি এতই বেশি যে একে আলোকবর্ষ এককে মাপাই বেশি সুবিধাজনক। সেই হিসেবে এর দূরত্ব ৪ দশমিক ২ আলোকবর্ষ।

কে মেপেছেন এই দূরত্ব?
খৃষ্টের জন্মের ২৫০ বছর আগেই অ্যারিসটারকাস দূরত্বটি মাপেন। সাম্প্রতিক সময় ১৬৫৩ সালে ক্রিষ্টিয়ান হাইগেনও মাপেন এই দূরত্ব। ১৬৭২ সালে আবার মাপেন গিওভানি ক্যাসিনি। তার পদ্ধতি ছিল লম্বন পদ্ধতি।

সূত্র
১। ইউনিভার্স টুডে: হাউ ফার ইজ আর্থ ফ্রম দ্য সান
২। উইকিপিডিয়া: পেরিহেলিয়ন ও অ্যাপহেলিয়ন
Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৪

এই ঘটনার সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত যে আমরা চলন্ত কোন বস্তুর উপর বসে থাকলে সেটা যদি কোন দিকে মোড় নেয়, আমরা তার উলটো দিকে পড়ে যেতে থাকি, যদি না জিনিসটাকে শক্ত করে ধরে রাখি। কখনও বাসের ছাদে বসেছেন? বসলে টের পেতেন। বাস যখন কোন দিকে মোড় নেয়, আপনাকে শক্ত করে বাসকে ধরে রাখতে হবে, নইলে উলটো দিকে পড়ে আপনার যাত্রা সাঙ্গ হবে। [আমি একবার চড়েছিলাম, কেমন লাগে বোঝার জন্য প্লাস গাড়ি না পেয়ে]
নিচের অ্যানিমেশনে পৃথিবীর আবর্তন দেখুনঃ
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে ঘুরছে। এ জন্যেই ক্রমান্বয়ে রাত- দিন হচ্ছে
আমরা জানি, পশ্চিম থেকে পূবে পৃথিবীর আবর্তন বেগ ঘণ্টায় ১৬৭০ কি.মি (বিষুব অঞ্চলে)।  ঢাকায় এই বেগ ঘণ্টায় ১৫২৯ কি.মি। যাই হোক, এই বিপুল বেগের কারণে আমরা ধরাপৃষ্ঠ থেকে ছিটকে পড়ে যাবার কথা। পৃথিবী আমাদেরকে ফেলে দিয়ে সূর্যকে চক্কর দেবার জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১ লাখ আট হাজার কি.মি বেগে ছুটে চলে যেত। এই বেগটা হল সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ বেগ।
কিন্তু, পৃথিবী খুব ভাল! আমাদেরকে ফেলে চলে যায় না। কিন্তু কেন?
কোন বস্তু কোন ঘুর্ণায়মান বস্তুর উপর টিকে থাকবে, নাকি পড়ে যাবে তা নির্ধারণ করে দুটি বিপরীতধর্মী বলের যুদ্ধ। এরা হল বস্তুটির অভিকর্ষ ও কেন্দ্রবিমুখী বল। অনেকে হয়ত মনে করে থাকতে পারেন বলদ্বয় হবে আসলে যথাক্রমে কেন্দ্রমুখী (Centripetal) বল (Force) ও কেন্দ্রবিমুখী বল (Centrifugal Force)। এই বলদ্বয় কিন্তু আসলে একে অপরের সমান ও বিপরীতমুখী, নিউটনের ৩য় সূত্রানুসারে। আর, আমাদের আলোচ্য বলের (Force) যুদ্ধ হবে কিন্তু বড় বস্তুর ক্ষেত্রে যার মহাকর্ষ উল্লেখযোগ্য যেমন, গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি।
এখন তাহলে দেখা যাক পৃথিবীতে কোন বলের আধিপত্য কেমন?
পৃথিবীপৃষ্ঠে অবস্থিত কোন বস্তুকে পৃথিবী F বা W = mg বলে টানে। এখানে F হল আকর্ষণ বল, W হল এই আকর্ষণ তথা অভিকর্ষজনিত বল, টান বা ওজন। m বস্তুর ভর, g হল অভিকর্ষজ ত্বরণ , যার কারণে প্রতি সেকেন্ডে যে বেগ বৃদ্ধি পায়। g এর মান হল প্রতি বর্গ সেকেন্ডে মোটামুটি ৯.৮ মিটার।
যাই হোক, এই সূত্র আপাতত আমাদের খুব বেশি দরকার নেই। আমাদের এতটুকু জানলেই চলবে যে পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) প্রতি বর্গ সেকেন্ডে মোটামুটি ৯.৮ মিটার। ।
এখন, আমাদের জানা দরকার আবর্তনের জন্য আমাদের বেগ কী পরিমান হ্রাস পায়।
আমরা জানি,  ঘূর্ণায়মান বা আবর্তনশীল কোন বস্তুর ত্বরণ (Acceleration) বের করার  সূত্র হল,
ঘূর্ণনশীল বস্তুর ত্বরণ বের করার সূত্র

পৃথিবীর ঘূর্ণন বা আবর্তন বেগ হল,  v =  ৪৬৪ মি/সেকেন্ড, ব্যাসার্ধ,  r = ৬৩৭১ কিমি.
বা ৬, ৩৭১, ০০০ মিটার।
হিসেব করে পাই, ত্বরণ a = প্রায় ০.০৩৮৮ মিটার (প্রতি বর্গ সেকেন্ডে)।
অর্থ্যাৎ পৃথিবীর আবর্তনের কারণে আমরা প্রতি বর্গ সেকেন্ডে মাত্র ০.০৩৩৮ মিটার হারে পড়ে যেতে থাকি, যেখানে অভিকর্ষ আমাদেরকে তার প্রায় ২৯০ গুণ ত্বরণে (৯.৮১ মিটার/বর্গ সেকেন্ড) টেনে ধরে রাখে।
তাহলে কিভাবে আমরা কোন দিকে পড়ে যাব?
অর্থ্যাৎ পৃথিবীর ঘূর্ণনের কারণে আমরা যে বলে পড়ে যাবার উপক্রম হই, তার চেয়ে অনেক বেশি বলে পৃথিবী আমাদেরকে টেনে ধরে রাখে। এ জন্যেই আমরা পড়ে যাই না।
উপরন্তু, উপরের এই হিসাব শুধু বিষুব অঞ্চলের জন্য। আমাদের বাংলাদেশে কেন্দ্রবিমুখী বলের প্রভাব হবে আরও কম। এটি নির্ভর করবে কোনো অঞ্চল বিষুব রেখা থেকে কত দূরে আছে তার উপর। আবর্তন বেগ জেনে নিয়ে আপনিও বের করতে পারেন কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের জন্যে এই প্রভাব কতটুকু। 
Category: articles
এক কথায় বললে বলতে হয়, পৃথিবীর আবর্তন বেগ ঘণ্টায় ১৬৭০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। তবে এই মান সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিস্তারিত জেনে নিই, চলুন।
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে নিজ অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরছে
পৃথিবী প্রতিনিয়ত পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করে চলছে। এই আবর্তনের কারণেই ক্রমান্বয়ে রাত দিন হয়, সুর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ঘটে। পশ্চিম থেকে পূবে এই আবর্তনের জন্যেই উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে দুটি মেরুর উদ্ভব ঘটেছে।
আরও পড়ুনঃ  পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণে মেরু থাকলেও পূবে পশ্চিমে মেরু নেই কেন

পৃথিবীর আবর্তন বেগ কিন্তু সর্বত্র সমান নয়। বিষুব অঞ্চল তথা দুই মেরুর ঠিক মাঝখানে এই বেগ সর্বোচ্চ। অন্য দিকে,  বিষুব অঞ্চল থেকে মেরুর দিকে নিকটবর্তী হতে থাকলে বেগ কমতে থাকে। ঠিক মেরুবিন্দুতে বেগ শুন্য। এটা বোঝার জন্যে উপর্যুক্ত লিঙ্কে একটি উদাহরণ দিয়েছিলাম। এখন ভিন্ন একটি দিচ্ছি।
মনে করুন, আপনি একটি সুতার প্রান্তবিন্দুতে একটি বল বেঁধে সুতাসহ বলটিকে চারপাশে ঘোরাচ্ছেন। তাহলে দেখবেন, সুতার একেবারে প্রান্তবিন্দুতে বেগ সর্বোচ্চ। সুতার কোন বিন্দু আপনার হাতের যত নিকটে হবে তত বেগ হবে কম। ঐ ঘূর্ণন পথের কেন্দ্রবিন্দুতে বেগ হবে জিরো। কারণ সেটি ঘুরছেই না।
কল্পনায় পৃথিবীকে একবার পশ্চিম থেকে পূবে চক্কর দেওয়ান। অথবা একটি টেনিস বল বা কমলা হাতে নিয়ে একইভাবে ঘোরান। দেখবেন প্রান্তবিন্দুর দিকে ক্রমান্বয়ে বেগ কম এবং একেবারে মেরুতে জিরো।
অবশ্য, এখানে আমরা রৈখিক বেগের কথা বলেছি। ঘূর্ণায়মান বস্তুর জন্যে আরেকটি বেগ হল কৌণিক বেগ। সেটি কিন্তু প্রতিটি বিন্দুতে একই হবে। কারণ, প্রতিটি বিন্দুই সমান সময়ে সমান পথ তথা ৩৬০ ডিগ্রি অতিক্রম করবে।

এখন, আসুন নিজেরাই বের করে ফেলি পৃথিবীর আবর্তন বেগ কত।
আমরা জানি সমবেগের জন্য সূত্র হল S = vt।
এখানে, S = অতিক্রান্ত দূরত্ব,
           v= বেগ এবং
           t= সময়
তাহলে পাই, বেগের সূত্র হবে,
বেগ বের করতে হলে আমাদের অতিক্রান্ত দূরত্ব (S) ও এই দূরত্ব পাড়ি দিতে অতিবাহিত সময় (t) জানতে হবে।
আমরা জানি, পৃথিবী প্রায় ২৪ ঘন্টায় একবার আবর্তন সম্পন্ন করে। আর বিষুব রেখা বরাবর এর পরিধি হল ৪০, ০৭৫ কিমি.। এই পথই আমরা (আসলে আমরা না, যারা বিষুব অঞ্চলে বাস করে) পৃথিবীর বুকে বসে পাড়ি দেই ২৪ ঘণ্টায়।
তাহলে, বিষুব অঞ্চলে আবর্তন বেগ = (৪০০৭৫ ÷২৪) কিমি./ঘণ্টা। 
অর্থ্যাৎ ঘন্টায় প্রায় ১৬৭০ কি.মি। মাইলের হিসাবে এই বেগ হল ঘণ্টায় ১০৭০। এসআই এককে হিসেব করলে হবে সেকেন্ডে প্রায় ৪৬৪ মিটার। 

এই বেগ কিন্তু বিষুব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য। বিষুব অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকলে পৃথিবীর আবর্তন অক্ষের দূরত্ব কাছে চলে আসবে। ফলে, ঐ বিন্দুর সাপেক্ষে পরিধি তথা ২৪ ঘণ্টায় অতিক্রান্ত পথ আরো কম হবে। [উপরের চিত্রটি দেখুন]
বিষুব অঞ্চল ছাড়া অন্য অঞ্চলে বেগ বের করার জন্য আমাদেরকে মূল বেগের সাথে ঐ স্থানের অক্ষাংশের cos এর মান গুণ করতে হবে। 
তাহলে, ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে পৃথিবীর আবর্তন বেগ হবে 
v = 1670 × cos 45 km/h 
= 1670 × 0.707 
= 1180 km/h। 
অর্থ্যাৎ ঘণ্টায় ১১৮০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে প্রায় ৩২৮ মিটার। 

আমাদের ঢাকায় পৃথিবীর আবর্তব বেগ কত হবে?
ঢাকার অক্ষাংশ হল 23.7 ডিগ্রি উত্তর। 
তাহলে, বেগ, v = 1670 ×  (cos 23.7) = 1529 km/h  
অর্থ্যাৎ, ঘণ্টায় ১৫২৯ কিমি. বা প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪২৪ মিটার। 
এত বিশাল বেগে ঘুরছি আমরা! তাহলে পৃথিবী থেকে পড়ে যাচ্ছি না কেন
জানতে হলে এই নিবন্ধটি পড়ুন। 

সূত্রঃ
১. উইকিপিডিয়াঃ Earth
২. নাসা

Category: articles

শনিবার, ২৮ জুন, ২০১৪

পৃথিবী প্রতি ঘন্টায় ১৬৭০ কি.মি. বেগে ( সেকেন্ডে ৪৬৫ মি. বা ১০৭০ মাইল /ঘণ্টা) নিজের অক্ষের চারদিকে ঘুরছে। এই ঘুর্নণের দিক হচ্ছে পশ্চিম থেকে পূবে।  আর এই ঘূর্নণের দিকই নির্ধারণ করেছে কোন দিক মেরু হবে। এই যে ঘুর্ণন বেগ -এটি কার্যকর শুধুমাত্র বিষুব অঞ্চলের জন্য, যা দুই মেরুর ঠিক মাঝে অবস্থিত। বিষুব অঞ্চল থেকে যতই মেরুর দিকে যাওয়া হবে ততই এই বেগ হ্রাস পেতে থাকবে।

আরও পড়ুন
☛ মেরু ও বিষুব অঞ্চলের পরিচয়

বিষুব রেখা থেকে মেরুর দিকে গেলে ঘূর্নণের হ্রাসপ্রাপ্ত মান বের করতে হলে স্বাভাবিক মানের সাথে অক্ষাংশের cos এর মান গুণ করতে হবে।

পৃথিবীর দুই মেরুর ঠিক মাঝে অবস্থিত বিষুব অঞ্চল 

যেমন, ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশে এই বেগ হবে 1670 *Cos 45 Km/h= 1670*.707 = 1180 Km/h।
এই মান কমতে কমতে মেরুতে গিয়ে হয় জিরো। কারণ মেরুতে অক্ষাংশ হল ৯০ ডিগ্রি।  Cos 90 = 0 বলে গুনফল হয় জিরো।

এটাতো গাণিতিক মত। তবে গণিত কখোনই অসত্য কথা বলে না। মেরুতে বেগ কেন জিরো এটা একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি। হ্যাঁ, আমরা টপিকের মধ্যেই আছি। একটু পর বোঝা যাবে।

গ্রামে আগেকার দিকে মাঠের মাঝখানে একটি খুঁটি গেঁড়ে খুঁটির সাথে গরুকে বেঁধে খুঁটির চারপাশে চক্রাকারে ঘোরানো হত। এতে করে ধান গাছে অল্প যে কিছু ধান থেকে যেত তা গরুর পায়ের চাপে ঝরে পড়ে নিচে জমা হত। আমরা যদি একটু চিন্তা করি,  রশির একেবার প্রান্ত বিন্দুতে ঘূর্নণ বেগ সর্বোচ্চ। খুঁটির দিকে কাছাকাছি হলে ক্রমেই বেগ কমতে থাকবে। কারণ, যে সময়ে বাইরের প্রান্ত বিন্দু এক চক্কর দেবে সেই সময়েই ভেতরের যে কোন বিন্দুও এক চক্কর দিয়ে দেবে। কিন্তু ভেতরের যে কোন বিন্দু চক্কর দিতে অনেক কম পথ যেতে হবে। সময় একই লাগায় ভেতরের বিন্দুর বেগ কম হতে হবে।

কল্পনায় এবার পৃথিবীকে একবার পশ্চিম থেকে পূবে চক্কর দেওয়ান। অথবা একটি আপেল/ কমলা হাতে নিয়ে একইভাবে ঘোরান। দেখবেন প্রান্তবিন্দুর দিকে ক্রমান্বয়ে বেগ কম এবং একেবারে মেরুতে জিরো।

এবার মূল আলচনায় ফিরে আসি। আসলে এই ঘূর্ণনের সাথেই মেরুর ব্যাপার জড়িত।
পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূবে আবর্তন করায় এর দুই আবর্তন অক্ষ উত্তরে ও দক্ষিণে অবস্থিত। আসলে এই অক্ষটি হচ্ছে কেন্দ্র দিয়ে দুই মেরুর সংযোজক সরলরেখা। দুই মেরু বিন্দু পৃথিবীর আবর্তন অক্ষের দুই প্রান্ত বিন্দু। ফলে এই বিন্দু দুইটি আসলে বিশেষ দুটি বিন্দু, যেমন বিশেষ বিন্দু আর কোথাও নেই।

পৃথিবী যদি উত্তর থেকে দক্ষিণে বা দক্ষিণ থেকে উত্তরে আবর্তন করত তবে পূবে ও পশ্চিমে এই রকম বিশেষ দুটি সৃষ্টি হত।

আবার, উত্তর ও দক্ষিণ মেরু যথাক্রমে পৃথিবীর সর্ব উত্তর ও সর্ব দক্ষিণের বিন্দু। বিন্দুগুলো প্রকৃত/আক্ষরিক অর্থেই প্রান্তিক। কিন্তু একটু চিন্তা করুন পূর্ব বা পশ্চিমে কি এমন কোন প্রান্তিক অবস্থান আছে যাকে আমরা সবচেয়ে পূর্ব/ পশ্চিম বলবো?


ম্যাপে আমরা যেটাকে পূর্ব / পশ্চিম বলি সেটা শুধুই আপেক্ষিক। বেশিরভাগ ম্যাপেই আমেরিকাকে পশ্চিমে ও ওশোনিয়াকে পূর্বে দেখানো হয়। তাই বলে বলা যাবে না যে আমেরিকাই সবচেয়ে পূর্বের জায়গা।

পৃথিবীর ম্যাপকে একটু ভিন্নভাবে দেখানো হল। তাহলে আমেরিকা আসলে আমাদের থেকে পূর্ব দিকে নাকি পশ্চিম দিকে? 
ইলাস্ট্রেটেড অক্সফোর্ড ডিকশনারির পেছনে একটি ওয়ার্ল্ড ম্যাপ আছে। তাতে আমেরিকাকে দেখানো হয়েছে রাশিয়ার ডানে - মানে পূবে- একেবারে পৃষ্টার ডান পাশে। দেখানো যেতেই পারে।  তার মানে এই নয় যে আমেরিকাই এখন পূবে চলে গেছে। ঐ ম্যাপে আফ্রিকা ও ইউরোপ একেবারে বাঁয়ে- মানে পশ্চিমে। কিন্তু কোনটাই পরম পশ্চিম বা পরম পূর্ব নয়।

ধরুন, আপনি পূর্ব-পশ্চিমের কোন অবস্থান থেকে (মানে কোন একটি দ্রাঘিমাংশ বিন্দু থেকে) (ধরুন) পূবে যাচ্ছেন। যতই পূবে যান না কেন পশ্চিম সব সময় আপনার পেছনেই থাকবে।

যেমন আপনি বাংলাদেশ থেকে পূবে যেতে থাকলে ক্রমে মায়ানমার, চীন, তাইওয়ান, জাপান, প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে আমেরিকায় পৌঁছে যাবেন। আরো যেতে থাকলে মেক্সিকো, কিউবা, মরক্কো,  আলজেরিয়া, মধ্য প্রাচ্য, পাকিস্তান, ভারত হয়ে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে আসবেন। নাক বরাবর যদি হাঁটতে থাকেন, সব সময়ই কিন্তু আপনার পেছনে পশ্চিম থাকবে।

কিন্তু এবার আপনি যদি বলেন, না, পূর্ব-পশ্চিমে পরিধি পাড়ি না দিয়ে আমি উত্তর-দক্ষিণ বরাবর পাড়ি দেব। এই অভিযানে স্বাগতম। এবারে আপনি উত্তর দিকে যাত্রা করলেন। তাহলে ভারত, ভুটান, চীন, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়া পাড়ি দিয়ে আপনি চলে যাবেন সুমেরুতে, মানে উত্তর মেরুতে।
ধরুন ঠিক এই মুহূর্তে আপনি সুমেরু (উত্তর মেরু) থেকে আরেক পা বাড়ালেন (এত পথ আপনাকে হাঁটিয়েই নিচ্ছি)। একটু আগে আপনার পেছনে ছিলো দক্ষিণ। এবার? পেছনে উত্তর আর সামনে দক্ষিণ।

হায়! হায়! আপনিতো ঘোরেননি, কিন্তু দিক যে পাল্টে গেলো!
যাক, কিছু মনে না করে আপনি যখন আরো এগিয়ে আমেরিকা মহাদেশের উপর দিয়ে চলে বাংলাদেশের প্রতিপাদ স্থান চিলি পার হয়ে দক্ষিণ মেরু ক্রস করলেন, আরেকটি ধাক্কা! সামনে এতক্ষণ দক্ষিণ ছিল, তা আবার ঘুরে উত্তর হয়ে গেলো।

এটাই হলো উত্তর ও দক্ষিণ বিন্দুর বিশেষত্ব। কিন্তু পূর্ব বা পশ্চিমের কোন বিন্দুর এমন কোন বিশেষত্ব নেই, কোন প্রান্তিক বিন্দু নেই, তাই মেরুও নেই।

সূত্রঃ
১। image.gsfc.nasa.gov/poetry/ask/a10840.html
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...