Advertisement

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৩

আমরা জানি, শনি গ্রহের বলয় আছে। তা ঠিক আছে। তবে বলয় আছে অন্য গ্রহেরও। সব মিলিয়ে সৌরজগতের চারটি গ্রহের বলয় আছে। এরা হলো চার বিশাল গ্রহ বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। বলয় শুধু একটাই নয়। আছে অনেকগুলো৷

শনির বলয় থাকার কথা বহু আগে থেকেই জানা। বলয় সবচেয়ে বিশালও এই গ্রহটির। তবে অন্য গ্রহদের বলয় খুঁজে পাওয়া যেতে থাকে ১৯৭০ এর দশক থেকে। বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুনের বলয় অনেক হালকা, অন্ধকার ও ছোট।


বৃহস্পতি গ্রহের বলয়। ছবিসূত্র: স্পেস ডট কম 

বৃহস্পতির বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৭৯ সালে। ভয়েজার ১ মহাকাশযান এর কাছ দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় ব্যাপারটা জানা যায়। নব্বইয়ের দশকে গ্যালিলিও অরবিটার আরও বিস্তারিত অনুসন্ধান চালায়। বলয়ের প্রধান উপাদান ধূলিকণা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ও পৃথিবীর শক্তিশালী টেলিস্কোপে এ বলয় দেখা যায়।

শনির বলয় ১৬১০ সালেই গ্যালিলিও দেখতে পান। তবে শক্তিশালী টেলিস্কোপের অভাবে বলয় সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেননি। ১৬৬৫ সালে ডাচ বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স প্রথম জানান, জিনিসটা আসলে চাকতির মতো বলয়। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে জানা যায়, বলয় আসলে ছোট ছোট অনেক অংশ নিয়ে গঠিত। সব মিলিয়ে বলয় আছে ১২টি।

ইউরেনাসের বলয় একটু নতুন। গ্রহটির আগের চাঁদদের সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয়েছে বলয়গুলো। ১৯৭৭ সালে আবিষ্কৃত নয়টি বলয়। পরবর্তীতে ভয়েজার ২ মহাকাশযান ২টি বলয় আবিষ্কার করে। আরও ২টি খুঁজে পায় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে সব মিলিয়ে বলয় আছে অন্তত ১৩টি। উইলিয়াম হার্শেল ১৭৮৯ সালে এ বলয় দেখার কথা বলেছিলেন। তবে আসলেই দেখতে পেরেছিলেন সেটা নিয়ে মতভেদ আছে। কারণ বলয়গুলো খুব হালকা।


নেপচুনের বলয় আবিষ্কৃত হয় ১৯৮৯ সালে। ভয়েজার ২ যান কাছ দিয়ে উড়ে যাবার সময়। বলয় পাওয়া গেছে ৬টি। সবগুলোই হালকা। নেপচুনের চারটি চাঁদই বলয়ের ভেতর দিয়ে প্রদক্ষিণ করে।

☛ ভয়েজার মহাকাশযানের দুর্দান্ত অভিযাত্রা (লেখা আসছে...)
☛ সব্বচেয়ে দূরের মহাকাশযান (লেখা আসছে...)

শুধু গ্রহের নয়, বলয় আছে উপগ্রহেরও। ২০০৮ সালের এক রিপোর্টে শনির চাঁদ রিয়ায় বলয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। আর কোনো উপগ্রহের বলয় থাকার কথা জানা যায়নি। বামন গ্রহ প্লুটোর বলয়ের কথা একবার প্রস্তাব করা হলেও নিউ হরাইজনস অভিযানের চিত্র সে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৭ সালে দেখা যায়, বামন গ্রহ হাউমেয়াও বলয়ের মালিক৷

বহির্গ্রহেদের অনেকের ক্ষেত্রেই বলয় থাকার কথা প্রস্তাব করা হয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই সে প্রস্তাব বাতিল হয়েছে বিভিন্ন কারণে। তবে একটি বহির্গ্রহ এ রেকর্ড ধরে রেখেছে। নাম এইচআইপি ৭১৩৭৮ এফ।


সূত্র: ক্যালটেক, ইউনিভার্স টুডে

Category: articles
গত শতকে আমরা জানতে পারি, মহাবিশ্বের একটি নির্দিষ্ট অতীত আছে। তার আগে স্থির অবস্থা তত্ত্ব জনপ্রিয় ছিল। ধারণা করা হত, মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে উপস্থিত আছে। বয়স অনন্ত হলে ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে প্রশ্ন আসে না। কিন্তু কবির কথা, “জন্মিলে মরিতে হবে।“ তাই ভবিষ্যতে কী হবে সেটা বড় এক প্রশ্ন। 


১৯২০ সাল থেকে ১৯৫০। এই বিশ বছর ধরে বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা গেল, ছায়াপথরা একে অপর থেকে দূরে সরছে। এ থেকেই তৈরি হয় বিগ ব্যাং তত্ত্ব। ১৯২৭ সালে জর্জ লেমেইত্র বলেন, প্রসারণশীল মহাবিশ্ব থেকে বলা যায়, অতীতে মহাবিশ্ব ছিল নিবিড় এক বিন্দুর মতো। এর আগে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের সমাধান করে আলেকজান্ডার ফ্রিডম্যানও একই কথা বলেছিলেন। আইনস্টাইনের সমীকরণের একটি সমাধান অনুসারে দেখা যায়, একটি প্রাথমিক সিংগুলারিটি থেকে জন্ম মহাবিশ্বের। ১৯৬৪ সালে আবিষ্কৃত হয় মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণ। বিগ ব্যাংয়ের পক্ষে একটি বড় প্রমাণ এটি। 

১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা যায়, মহাবিশ্বের প্রসারণের গতি ক্রমেই বাড়ছে। এর জন্য দায়ী শক্তিকে নাম দেওয়া হয় ডার্ক এনার্জি। আইনস্টাইনের সমীকরণ বলছিল, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু আইনস্টাইন নিজেই সেটা বিশ্বাস করতেন না। সমীকরণ অসম্পূর্ণ মনে করে তিনি তাই বাড়তি একটি ধ্রুবক যোগ করেছিলেন। পরে স্বীকার করেন, এটা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। কিন্তু এখন আবার মনে হচ্ছে এই ধ্রুবক দরকার আছে। এই ধ্রুবক আসলে ডার্ক এনার্জির বিপরীতে কাজ করে। 

ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের ভাগ্যে মোটা দাগে বললে তিনটি ঘটনা ঘটতে পারে। হয় এটি চিরকাল প্রসারিত হতে থাকবে। মহাকর্ষ প্রসারণের গতি কমানোর চেষ্টা করবে। তবে ডার্ক এনার্জির কারণে প্রসারণের গতি ক্রমেই বাড়বে। আরেকটি হতে পারে, মহাবিশ্বের প্রসারণ এক সময় থেমে যাবে। শুরু হবে সঙ্কোচন। আরেকটি সম্ভাবনা হলো, প্রসারণ চলতে থাকবে। তবে প্রসারণের গতি ক্রমশ কমতে থাকবে। কিন্তু একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে না। 

ভবিষ্যতে মহাবিশ্বের ভাগ্যে কী ঘটবে তার বড় একটি প্রভাবক হলো মহাবিশ্বের ঘনত্ব পরামিতি (density parameter)। একে গ্রিক বর্ণ ওমেগা (Ω) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এর মান পেতে মহাবিশ্বের বস্তুর গড় ঘনত্বকে ঘনত্বের একটি ক্রান্তি মান দ্বারা ভাগ করা হয়। ঘনত্বের যে মান খুব অল্পের জন্য মহাবিশ্বের প্রসারণকে থামাতে বন্ধ হবে তার নাম ক্রান্তি (critical) ঘনত্ব। 

মহাবিশ্বের ভবিষ্যতের সাথে এর আকৃতিরও সম্পর্ক আছে। ওমেগার মান ১-এর বেশি হলে মহাবিশ্বের আকৃতি হবে আবদ্ধ গোলকের পৃষ্ঠের মতো। কারণ এক্ষেত্রে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রান্তি ঘনত্বের চেয়ে বেশি। পৃথিবীর পৃষ্ঠের মতো এমন মহাবিশ্বের ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রির বেশি হবে। তবে বড় মাপকাঠিতে মহাবিশ্বের আকৃতি হবে উপবৃত্তের মতো। মহাকর্ষের প্রভাবে এক সময় প্রসারণ থেমে যাবে। শেষ পর্যন্ত ঘটবে বিগ ক্রাঞ্চ (Big Crunch) বা মহাসঙ্কোচন। বিন্দু থেকে আসা মহাবিশ্ব বিন্দুতে গিয়েই আবার মিশে যাবে। 

তবে কিছু কিছু আধুনিক তত্ত্ব বলছে, ওমেগার মান ১-এর বেশি হলেও ডার্ক এনার্জির প্রভাবে মহাবিশ্ব প্রসারিত হতেই থাকবে। এ কারণে মহাসঙ্কোচন ঘটার সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত অর্জিত জ্ঞান অনুসারে কম। তবে ঘটবেই না সেটা বলার জো নেই। 

ওমেগার মান ১-এর কম হলে মহাবিশ্ব হবে উন্মুক্ত। ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রির কম হবে। মহাকর্ষ প্রসারণকে কিছুটা কমাবে। কিন্তু ডার্ক এনার্জির প্রভাবে সে বাধা উপেক্ষা করে প্রসারণের গতি বরং আরও বেড়ে যেতে থাকবে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মহাকর্ষ, তড়িচ্চুমকত্ব ও সবল নিউক্লীয় বলের বাঁধন ছিঁড়ে যাবে। এ অবস্থাকে বলা হয় বিগ রিপ (Big Rip) বা মহাভাঙন। 

মহাবিশ্বের সম্ভাব্য আকৃতি

একই রকম পরিস্থিতিতে আরেকটি সম্ভাব্য পরিণতির নাম বিগ ফ্রিজ (Big Freeze) বা মহাহিমায়ন। এ অবস্থায় সর্বত্র বিরাজ করবে হিমশীতল অবস্থা। হবে না কোনোরকম তাপ বিনিময়। থেমে যাব বস্তুকণার চলাচল। এ কারণে এর অপর নাম তাপীর মৃত্যু। এটা ঘটে গেলে বস্তুর মধ্যে আর কোনো প্রকার তাপ বিনিময় সম্ভব হবে না। সব যন্ত্র অচল হয়ে যাবে। এনট্রপি (শক্তি রূপান্তরের অক্ষমতা) হবে সর্বোচ্চ। 

তবে মহাবিশ্বের ঘনত্ব ক্রান্তি ঘনত্বের সমানও হয়ে যেতে পারে। সত্যি বলতে, বর্তমান পর্যবেক্ষণ এর পক্ষেই কথা বলছে। এমন মহাবিশ্বেই ত্রিভুজের তিন কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রি হয়। এক্ষেত্রে মহাবিশ্ব হবে সমতল। পর্যবেক্ষণ বলছে, মহাবিশ্ব এমনই। এই ফলাফলের ত্রুটির মাত্রা মাত্র ০.৪%। এই মহাবিশ্বও চিরকাল প্রসারিত হবে, তবে প্রসারণের হার ক্রমশ কমবে। তবে কখনোই একেবারে থেমে যাবে না। কিন্তু ডার্ক এনার্জি ভূমিকা রাখলে প্রসারণ শুরুতে থামলেও আবার বেড়ে যাবে। পরিণতি হবে সেই উন্মুক্ত মহাবিশ্বের মতোই। 

আরও কিছু কমসম্ভাব্য ঘটনা ঘটতে পারে মহজাবিশ্বের ভাগ্যে। এর একটি হলো বিগ বাউন্স। এটা আসলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে চক্রাকার মডেলের একটি অংশ। এটি অনুসারে, মহাবিশ্ব শুরু হয়েছিল সঙ্কুচিত অবস্থা থেকে। আর সেই সঙ্কুচিত অবস্থাটা এসেছিল তার পূর্ববর্তী একটি প্রসারণ থেমে গিয়ে গুটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। এভাবেই মহাবিশ্ব একের পর সঙ্কুচিত ও প্রসারিত হচ্ছে। একের পর ঘটছে বিগ ব্যাং ও বিগ ক্রাঞ্চ। এ জন্যেই এই মডেলের নাম চক্রাকার মডেল। 

বিজ্ঞানীরা বলছেন আরও একটি সম্ভাবনার কথা। এর নাম বিগ স্লার্প (Big Slurp)। স্লার্প অর্থ গ্রাস করা বা গ্রাস করার সময় সৃষ্ট শব্দ। এ তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব এখন নকল ভ্যাকুয়াম অবস্থায় আছে। যেকোনো সময় চলে যেতে পারে প্রকৃত ভ্যাকুয়ামে। 

প্রকৃতির যেকোনো ভৌত প্রক্রিয়া সবসময় সর্বিনিম্নের শক্তির অবস্থানে থাকতে চায়। আর মহাবিশ্ব সর্বনিম্ন শক্তির অবস্থায় থাকলেই কেবল প্রকৃত ভ্যাকুয়ামে থাকবে। এখন সেটা নাও হতে পারে। হয়ত মহাবিশ্ব এখন উচ্চতর শক্তির অবস্থানে আছে। তার মানে আছে নকল ভ্যাকুয়াম অবস্থায়। সেক্ষেত্রে যেকোনো সময় এটি আসল ভ্যাকুয়ামে চলে যাবে। তার সাথে সাথে আমূল পাল্টে যাবে আমাদের চিরচেনা মহাবিশ্ব। 

ভৌত ধ্রুবকদের মান বদলে যেতে পারে। পাল্টে যেতে পারে আলোর বেগের মান কিংবা অ্যাভোগেড্রো ধ্রুবক। ফলে স্থান, কাল, বস্তু ও শক্তির ধারণা একদম বদলে যেতে পারে। হয়ত আগাম কোনো সঙ্কেত না দিয়েই ধ্বংস হয়ে যাবে মহাবিশ্ব। 

লেখাটি লেখকের অনূদিত দ্য লাস্ট থ্রি মিনিটস বইয়ের পরিশিষ্ট অংশে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এগারশ ও তৃতীয় অধ্যায়ে। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৩

সৌরজগতের পাঁচ বামন গ্রহের একটি মাকিমাকি। প্লুটো, এরিস, হাউমেয়ার মতো এর অবস্থানও কাইপার বেল্ট অঞ্চলে। এলাকাটা নেপচুনের কক্ষপথের বাইরে। বরফ দিয়ে গড়া।


বামন গ্রহ মাকিমাকি। ছবিসূত্র: ইউনিভার্স টুডে 

মাকিমাকি সূর্যকে পুরো একবার ঘুরে আসতে ৩০৫ দিন সময় লাগে। আকারে প্লুটোর চেয়ে ছোট। পৃথিবী থেকে দেখতে কাইপার বেল্টের দ্বিতীয় উজ্জ্বল বস্তু মাকিমাকি। সবচেয়ে উজ্জ্বল কে জানেন? প্লুটো ছাড়া আর কেউ না। আকারের দিক থেকেও এটি কাইপার বেল্টের দ্বিতীয় বৃহত্তম।

উজ্জ্বলতার পরিমাপ
☛ একদিন কত বড়? (লেখা আসছে...)

জ্যোতির্বিদ্যার ইতিহাসে মাকিমাকি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। একই রকম গুরুত্ব আছে আরেক বামন গ্রহ এরিসের। এই দুই বস্তু আবিষ্কারের ফলেই আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতি গ্রহের সংজ্ঞা পাল্টানোর ব্যাপারে ভাবতে থাকে। তৈরি হয় বামন গ্রহ নামে নতুন এক ধারণা।

প্লুটো যেভাবে গ্রহত্ব হারাল

মাকিমাকি প্রথম জ্যোতির্বিদদের চোখে ধরা পড়ে ২০০৫ সালে। পালোমার মানমন্দিরের তিন বিজ্ঞানী মাইকেল ব্রাউন, চ্যাড ট্রুজিলো ও ডেভিড র‍্যাবিনোউইটয একে দেখেন। ২০১৬ সালে নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপ বামন গ্রহটির একটি চাঁদ খুঁজে পায়। এখনও অবশ্য স্বীকৃতি পায়নি চাঁদটি।

মাকিমাকির ব্যাসার্ধ ৭১৫ কিলোমিটার। পৃথিবীর নয় ভাগের এক ভাগ। সূর্য থেকে দূরত্ব ৪৫.৭ এইউ। সূর্য থেকে আলো পৌঁছতে সময় লাগে ৬ ঘণ্টা ২০ মিনিট। সূর্য থেকে অনেক দূরত্বের কারণে বস্তুটির পৃষ্ঠ অনেক শীতল। ফলে এতে জীবনের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়।

পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব কত?
পৃথিবীতে সূর্যের আলো পৌঁছতে কত সময় লাগে? (লেখা আসছে...)

এর গঠন সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নেই। নেই শনি, ইউরেনাসদের মতো বলয়। কাইপার বেল্টে এর আশেপাশে প্রচুর বরফের বস্তু আছে। এরা তৈরি হয়েছিল সৌরজগতের একেবারে শুরুর যুগে। আজ থেকে প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে। এদেকে কাইপার বেল্ট্ব্র বস্তু, ট্রান্সনেপচুনিয়ান বা প্লুটোয়েড বলে ডাকা হয়।


বস্তুটার পৃষ্ঠ ঠিক কেমন তা এতদূর থেকে বোঝা যায় না। তবে যতটুকু বোঝা যায় তাতে প্লুটোর লাল-বাদামী মনে হয়। পৃষ্ঠে মিথেন ও ইথেনের অস্তিত্ব মিলেছে। খুব হালকা বায়ুমন্ডল আছে। এতে মূলত আছে নাইট্রোজেন।

সূত্র: নাস সোলার সিস্টেম পোর্টাল 
Category: articles

বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩

আজ ১৯ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে মহাকাশে প্রেরণ করা হয় সালিউট ১। এটি পৃথিবীর কক্ষপথে প্রেরিত প্রথম মহাকাশ স্টেশন। রাশিয়ার সালিউট প্রোগ্রামের শেষ মডিউলটিই আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের রুশ অংশের প্রধান অঙ্গ হয়। 

সালিউট ১ স্পেস স্টেশন। সূত্র: নাসা 

মহাশূন্যে প্রথম অ্যামেরিকান স্টেশন

স্টেশনে মানুষ পাঠানোর অংশ হিসেবে সয়ুজ ১০ যানে ৩ জন নভোচারী পাঠানো হয়। তবে সে যাত্রা সফল হয়নি। পরবর্তীতে সয়ুজ ১১ যানে অন্য ৩ জন নভোচারী সালিউটে পৌঁছেন। ২৩ দিন অবস্থান করে চালান নানান বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা।


তবে ৩ নভোচারী পৃথিবীতে ফেরার পথে শ্বাসকষ্টে মারা যান। পৃথিবীর কারমান রেখা উপরে এটাই মৃত্যুর একমাত্র ঘটনা। কারমান রেখা পৃথিবীর ১০০ কিলোমিটার উপরে। এটাকে পৃথিবী ও মহাশূন্যের একটি সীমানা হিসেবে ধরা হয়। 


☛ পৃথিবী ও মহাশূন্যের একটি সীমানা কোথায়?


১৯৭১ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে স্টেশনটিকে আরও উপরের কক্ষপথে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই যেন কক্ষপথ থেকে নেমে গিয়ে ধ্বংস না হয়। অন্যদিকে চলছিল সয়ুজ পুননির্মাণ। তবে তা হতে হতে সালিউটের জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। ১১ অক্টোবর তারিখে এ অভিযান শেষ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৭৫ দিন মহাকাশে থেকে সালিউট ১ প্রশান মহাসাগরের উপরে জ্বলে যায়। 


অরায়ন ১ মহাকাশ মানমন্দির স্থাপন করা ছিল এ স্টেশনে। এখান থেকে সংগ্রহ করা হয় নক্ষত্রের অতিবেগুনী বর্ণালী। ভিক্টর পাতসায়েব ছিলেন টেলিস্কোপটির অপারেটির। এএ মধ্য দিয়ে তিনি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে টেলিস্কোপ চালানো প্রথম মানুষ হবার গৌরব অর্জন করেন৷

Category: articles

মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩

আজ ১১ এপ্রিল। ১৮৬২ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন অ্যামেরিকান জ্যোতির্বিদ উইলিয়াম ওয়ালেচ ক্যাম্পবেল। 

১৯০১ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত তিনি লিক অবজারভেটরির পরিচালক ছিলেন। জ্যোতির্বিদ্যায় বর্ণালীবীক্ষণে অসামন্য অবদানের জন্য স্মরণ করা হয় তাঁকে। 




জন্ম ওহাইও অঙ্গরাজ্যে। ১৮৮৬ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায়ই জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন৷ এতে মূলত অবদান সাইমন নিউকমের বই পপুলার অ্যাস্ট্রোনমি। 

পড়াশোনা শেষ করে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপনা শুরু করেন। তবে কিছুদিন বাদেই ফিরে আসেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়ানো শুরু করেন জ্যোতির্বিদ্যা। 

১৮৯১ সাল। তাঁকে ক্যালিফোর্নিয়ায় আমন্ত্রণ জানানো হয় লিক অবজারভেটরিতে। বর্ণালীবীক্ষণ নিয়ে কাজের জন্য। এখানে এসেই তিনি স্মরণীয় হয়ে ওঠার মতো কাজ শুরু করেন। 


নক্ষত্রের রেডিয়াল বা অরীয় (radial) বেগ বের করা শুরু করেন। অরীয় বেগ মূলত বহির্গ্রহ খুঁজে পাওয়ার একটি পদ্ধতি। পাশাপাশি তুলতে থাকেন সূর্যগ্রহণের ছবি। ১৮৯৩ সালে আবিষ্কার করেন এইচডি ১৮৪৭৩৮ নক্ষত্র। অপর নাম ক্যাম্পবেলের হাইড্রোজেন এনভেলপ স্টার। এটি একটি উলফ রায়েট ধরনের তারা। 

১৯১৪ সালে ক্যাম্পবেল ও জার্মান জ্যোতির্বিদ ফ্রেন্ডলিখ রাশিয়া যান সূর্যগ্রহণের ছবি তুলতে। ফ্রেন্ডলিখ ছিলেন বার্লিন অবজারভেটরির পর্যবেক্ষক। দুজনের উদ্দেশ্য ছিল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব পরীক্ষা করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তাঁদের যন্ত্রপাতি রুশ সেনারা কব্জা করে। সেসময় যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ দেশ হওয়ায় ক্যাম্পবেল কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি পান। তবে আকাশে মেঘ থাকায় ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।

১৯১৮ সালে আবার চেষ্টা চালান। তবে চার বছর আগে রাশিয়ায় ভাল যন্ত্রপাতি রেখে আসতে হয়েছিল। লিক অবজারভেটরিতে থাকা যন্ত্রপাতি দিয়েই কাজ চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে আইনস্টাইনের পূর্বাভাস অনুসারে আলোর বাঁকের পরিমাপ এখানকার ক্যামেরা দিয়ে মাপ সম্ভব ছিল না। 

এই কাজটাই আর্থার এডিংটন করেন পরের বছর। ১৯১৯ সালে। তবে কিছু কারণে তত্ত্বের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি তখনো মেলেনি। চূড়ান্ত ও অকাট্য স্বীকৃতি মেলে ক্যাম্পবেলের ১৯২২ সালের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে। লিক অবজারভেটরির পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সূর্যগ্রহণের ছবি থেকে পাওয়া যায় এ নিশ্চয়তা। 

মহান এ বিজ্ঞানীর জীবনাবসান হয় করুণভাবে। তিনি চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। বয়স হয়েছিল ৭৬। অন্ধত্ব ও বাকশক্তি লোপ পাওয়ার হতাশা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। 

জীবনে অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছিলেন। এর মধ্যে আছে ফ্রেঞ্চ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের লাঁলা পদক। পেয়েছেন রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিকেল সোসাইটির স্বর্ণ পদক। চাঁদ ও মঙ্গলের দুটি খাতের নামের সাথে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। গ্রহাণু ২৭৫১ ক্যাম্পবেল তাঁর নাম ধারণ করে আছে।
Category: articles

সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩

মহাকর্ষের পাল্লা অসীম। মানে আপনি একটি ভারী বস্তু থেকে যত দূরেই যান, এর আকর্ষণ আপনাকে টানবেই। তবে দূরত্বের সাথে সাথে আকর্ষণ কমে আসবে। দূরত্ব দ্বিগুণ হলে আকর্ষণ হবে চার ভাগের এক ভাগ। তিন গুণ হলে হবে নয় ভাগের এক ভাগ। 





আকর্ষণ কমতে কমতে তাই একটা জায়গায় হয়ে পড়ে দুর্বল ও নগণ্য। পৃথিবী থেকেও উপরে যেতে থাকলে ঘটবে এমনটা। এমনি এক কাল্পনিক রেখার নাম কারমান লাইন। অবস্থান সমুদ্র স্তর থেকে ১০০ কিলোমিটার। সাধারণ বিমানের সাহায্যে এ রেখার ধারেকাছেও যাওয়া অসম্ভব। 


কারমান রেখা অতিক্রমের সময় কিন্তু কোনো শারীরিক বা ভৌত পরিবর্তন অনুভূত হয় না। রেখাটার অস্তিত্ব প্রয়োজন নানান আইনী কারণে। আকাশযানের নীতিমালা এ রেখায় গিয়ে বদলে যায়।


কারমান রেখার সংজ্ঞায়ন করেছে ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশন (এফএআই)। সুইশ প্রতিষ্ঠানটি এয়ার স্পোর্টস ও মামুষের উড্ডয়ন বিষয়ক ব্যাপারগুলো সংজ্ঞায়ন করে৷ মহাশূন্যের সীমানা নিয়ে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছে। তবে এফএআইএর সংজ্ঞাই বহুল স্বীকৃত। মেনে নিয়েছে জাতিসংঘও। অবশ্য নাসা ও অ্যামেরিকান মিলিটারি ৫০ মাইলকে (৮০ কিলোমিটার) মহাশূন্যের শুরু হিসবে ধরে নেয়। 


সূত্র 

১। https://www.space.com/karman-line-where-does-space-begin

Category: articles

শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩

অবজারভেটরি ইংরেজি শব্দ। বাংলা করা হয় মানমন্দির। তবে এ থেকে এর সঠিক অর্থ বোঝা কঠিন। আরেকটি বাংলা হলো পর্যবেক্ষণকেন্দ্র। এটা শুনেই আইডিয়া পাওয়া যাচ্ছে। আসলেই তাই। অবজারভেটরি মানে হলো এমন জায়গা যেখান থেকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। 


প্যারানাল মানমন্দির, চিলি। সূত্র: উইকিপিডিয়া 

অবজারভেটরি মূলত জ্যোতির্বিদ্যায় কাজে লাগে। তবে সমুদ্র, আগ্নেয়গিরি ও আবহাওবিদ্যায়ও আছে ব্যবহার। 

অবস্থানের ভিত্তিতে জ্যোতির্বিদ্যায় অবজারভেটরি আছে চার ধরনের। এগুলো থাকে মহাকাশে, বায়ুমন্ডলে, ভূমিতে বা ভূগর্ভে। ভূমির ভাল অবজারভেটরিগুলো সাধারণত পাহাড়ের উপর স্থাপন করা হয়। এতে করে পরিষ্কার আকাশ ও বায়ু পাওয়া যায়। এছাড়াও অবস্থান হতে হয় শহর থেকে দূরে। যাতে আলোকদুষণ ক্ষতি করতে না পারে।


ইংল্যান্ডের রয়েল গ্রিনউইচ অবজারভেটরি আধুনিক সময়ের অন্যতম প্রথম মানমন্দির। এখানেই পৃথিবীর দ্রাঘিমা শূন্য ধরা হয়। এ দ্রাঘিমা শূন্য হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮ ডিগ্রি থেকে ৯২ ডিগ্রি। আতাকামা লার্জ মিলিমিটার অ্যারে একটি বিশাল টেলিস্কোপ। মহাবিশ্বের শীতল জিনিসগুলো এখান থেকে দেখা হয়। পুয়ের্তো রিকোয় আছে অ্যারেসিবো মানমন্দির। পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধানের জন্য এটি বিখ্যাত। এখানে আছ এক হাজার ফুটের রেডিও টেলিস্কোপ।  


অ্যামেরিকার মাউনা কেয়া আরেক বিখ্যাত মানমন্দির। সমুদ্র স্তর থেকে ১৪ হাজার ফুট উপরে এর অবস্থান। তবে পৃথিবীর উচ্চতম মানমন্দির এটি নয়। সে রেকর্ড দখল করে রেখেছে ইউনিভার্সিটি অব টোকিও আতাকামা অবজারভেটরি (TAO)।  সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে এর উচ্চতা ১৮,৫০০ ফুট বা ৫,৬৪০ মিটার। চিলির আরেক বিখ্যাত মানমন্দির প্যারানাল। এটি পরিচালনা করে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরি। 

সূত্র

১। https://thetraveltester.com/famous-observatories

২। https://wowtravel.me/the-12-best-astronomical-observatories-around-the-world/

Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২

পৃথিবী থেকে এত দূরের একটা জিনিস খালি চোখেই দেখা যায়! কী অসাধারণ ও অকল্পনীয় ব্যাপার। ভাবতেই শিরদাঁড়া বেয়ে শিহরণ নেমে যায়। তাই তো অ্যানড্রোমিডা হয়ে ওঠেছে গল্প-কবিতার উপদান।


বলা হয়ে থাকে, খালি চোখে দেখা সম্ভব সবচেয়ে দূরের বস্তু এই অ্যানড্রোমিডা। যদিও আকাশ ও দৃষ্টি ভাল থাকলে ট্রায়াংগুলাম গ্যালাক্সিও দেখা যায়। অ্যানড্রোমিডার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ২৫ লাখ আলোকবর্ষ। আর ট্রায়াংগুলামের ২৭ লাখ।

প্রতিবেশী ছায়াপথ অ্যান্ড্রোমিডা

চলুন দেখে নেই, রাতের আকাশে কখন কীভাবে খুঁজে পাব অ্যানড্রোমিডাকে

দেখার জন্যে প্রথমেই লাগবে একটি অন্ধকার আকাশ। কৃত্রিম আলোর ঝলক যেখানে থাকবে না। দেখার সবচেয়ে ভালো সময় হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস। এ সময় উত্তর গোলার্ধের সন্ধ্যার পূর্ব আকাশেই দেখা দেয় ছায়াপথটা। মধ্যরাতের দিকে প্রায় মাথার উপরের দিকে চলে আসে।
 
ছায়াপথটা খুঁজে পাওয়ার দুটি পথ আছে। একটি হলো ক্যাসিওপিয়ার মাধ্যমে। আরেকটি পেগাসাস বা পঙখীরাজ তারানকশার মাধ্যমে।

অক্টোবর মাসের দিকে উত্তর আকাশে ইংরেজি এম বা ডাব্লিউ (W) আকৃতির ক্যাসিওপিয়া খুব সহজেই দেখা যায়। এটা একটা তারামণ্ডল। সবচেয়ে উজ্জ্বল তারার নাম শেডার। এই তারাটিই আপনাকে অ্যানড্রোমিডার দিকে নিয়ে যাবে। ছায়াপথটা আছে একই নামের তারামণ্ডলের মধ্যেই।

পেতে অসুবিধা হলে শেডার নক্ষত্রের সাথে পাশের দুটি নক্ষত্র নিয়ে একটা ত্রিভুজ বানান। এবার শেডার ত্রিভুজের যে শীর্ষে আছে সেদিকে ত্রিভুজের দৈর্ঘ্যের তিনগুণ যান।


ক্যাসিওপিয়া থেকে অ্যানড্রোমিডা
তারা পরিচিতি: শেডার

অ্যানড্রোমিডাকে আরেকভাবেও খুঁজে নেওয়া যায়। এজন্য আপনাকে বের করতে পেগাসাস ঘোড়ার বিশাল বর্গচিত্রটি। এর আলফেরাজ তারাটি পেগাসাসের সাথে অ্যানড্রোমিডাকে যুক্ত করেছে। এবার খুঁজে নিন মাইরাক ও মিউ অ্যানড্রোমিডা তারা দুটি। মাইরাক থেকে মিউর দিকে দাগ টেনে এদের দূরত্বের সমান গেলেই পেয়ে যাবেন অ্যানড্রোমিডা


পেগাসাস থেকে অ্যানড্রোমিডা

Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০২০

দেখলে মনে হবে অনিন্দ্য সুন্দর বাহারি এক প্রজাপতি বুঝি ডানা মেলে আছে। নীল, রক্তিম ও লালে গড়া তার দেহখানা। দেখে মনে হবে, ডানা দোলাতে দোলাতে তারার জগতকে পেরিয়ে যাচ্ছে বুঝি। 


মহাজাগতিক প্রজাপতি


এই দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতিটি আছে হাজার হাজার আলোকবর্ষ দূরে। আর আসল পরিচয়? একটি গ্রহ নেবুলা। লোহিত দানব নক্ষত্রদের জীবনের অন্তিম দশায় এদের থেকে নির্গত আয়নিত, জ্বলজ্বল করা ও প্রসারণশীল গ্যাসকে বলে গ্রহ নেবুলা (planetary nebula)। ছবিটি তুলেছে ইউরোপিয়ান স্পেস অবজারভেটরি (ESO)। ব্যবহার করা হয়েছে চিলিতে অবস্থিত  ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ। 


আরও পড়ুন

☛ এক আলোকবর্ষ কত বড়?

☛ গ্রহ নেবুলা কীভাবে তৈরি হয়? 


প্রজাপতিটির ভারিক্কি নাম এনজিসি ২৮৯৯। অবস্থিত দক্ষিণ গোলার্ধের আকাশে। পৃথিবী থেকে ৩,০০০ থেকে ৬,৫০০ আলোকবর্ষ দূরে। 


বয়স বেশিদিন হয়নি। নক্ষত্রের চারপাশে যে গ্যাসের যে খোলস আছে সেটা অতিবেগুনি আলোয় জ্বলে ওঠে। এভাবেই গ্যাসগুলো হয়ে ওঠে উজ্জ্বল। তবে কাজটি খুব বেশিদিন ধরে ঘতে না। মাত্র কয়েক হাজার বছর। তীব্র বিকিরণের ধাক্কায় এরপরেই ভেঙে যায় গ্যাসের কণাগুলো। 


সূত্র: সিএনএন 

Category: articles

বুধবার, ১৭ জুন, ২০২০


তারিখ: ২১ আগস্ট, ২১২৬। মহাপ্রলয়

স্থান: পৃথিবী
পৃথিবীর নানা প্রান্তে হতাশায় আচ্ছন্ন অনেকগুলো মানুষ লুকানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। কোটি কোটি মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ পালিয়েছে ভূমির গভীরে। আশ্রয় নিয়েছে গুহা বা খনির দেয়ালে। কেউ আবার সাবমেরিনে চেপে সাগরে ডুব দিয়েছে। কেউ কেউ বেপরোভাবে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে। তবে অধিকাংশ মানুষই হতবুদ্ধি ও বিষণ্ণ হয়ে বসে আছে। অপেক্ষা করছে শেষ পরণতির জন্যে। 



আকাশের অনেক উঁচুতে আলোর একটি বড় রেখা দেখা যাচ্ছে। শুরুতে শুধু দেখা গিয়েছিল হালকা ধোঁয়ার মুদু বিকিরণ। একদিন সেটাই মহাশূন্যের বুকে গড়ে তুলল ফুটন্ত গ্যাসের প্রচণ্ড ঘুর্ণি। গ্যাসের ওপরের দিকে একটি কালো, কুৎসিত ও ভয়ানক জিনিস দেখা যাচ্ছে। ধূমকেতুটির ক্ষুদ্র মাথা দেখে এর ভয়ানক ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা আঁঁচ করা কঠিন। সেকেন্ডে প্রায় চল্লিশ হাজার মাইল বেগে এটি ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে। প্রতি সেকেন্ডে দশ মাইল। লক্ষ কোটি টন বরফ ও পাথর শব্দের সত্তর গুণ বেগে পৃথিবীতে আঘাত হানার জন্যে প্রস্তুত।  

দেখা ও অপেক্ষা করা ছাড়া মানুষের করার কিছুই নেই। অনিবার্য পরিণতির মুখে পড়ে বিজ্ঞানীরা বহু আগেই টেলিস্কোপ থেকে মুখ সরিয়ে নিয়েছেন। নিরবে বন্ধ করে দিয়েছেন কম্পিউটার। দূর্যোগের সঠিক আচরণ এখনও সঠিকভাবে বোঝা যাচ্ছে না। যেটুকু জানা গেছে, সেটাই এত ভয়াবহ যে তা সাধারণ মানুষকে জানানো ঠিক হবে না। কোনো কোনো বিজ্ঞানী টিকে থাকার কিছু পূর্ণাঙ্গ কৌশল তৈরি করেছেন। নিজেদের টেকনিক্যাল জ্ঞান কাজে লাগিয়ে অন্যদের তুলনায় সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার ইচ্ছে তাদের। কেউ কেউ দূর্যোগটিকে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণের চেষ্টারত। শেষ দিনটি পর্যন্তও তাঁরা তাঁদের সত্যিকার বিজ্ঞানীসুলভ আচরণ বজায় রাখতে চাচ্ছেন। পৃথিবীর গভীরে রাখা টাইম ক্যাপসুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন সে উপাত্ত। উদ্দেশ্য, ভবিষ্যৎ বংশধররা যাতে সেটা কাজে লাগাতে পারেন।  

সংঘর্ষের মুহূর্ত আরও ঘনিয়ে এল। সারা পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ ভয়ে ভয়ে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। শেষ তিনটি মিনিট। 
গ্রাইন্ড জিরোর ঠিক ওপরে আকাশ বিদীর্ণ হয়ে গেল। এক হাজার ঘন মাইল পরিমাণ বায়ু ছুটে গেল একদিকে। একটি শহরের আকারের চেয়েও বেশি পরিমাণ ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে ভূমির দিকে এগিয়ে আসছে। পনের সেকেন্ড পরেই আঘাত হানল ভূপৃষ্ঠে। দশ হাজার ভূমিকম্পের সমান আঘাতে কেঁপে ওঠল পৃথিবী। স্থানান্তরিত বাতাসের শক ওয়েভ উড়ে যাচ্ছে পৃথিবী পৃষ্ঠের ওপর দিয়ে। ভেঙে পড়ল স্থাপনাগুলো। যেটাই সামনে পড়ল, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। সংঘর্ষের স্থানের চারপাশে সমতল ভূমিতে একটি বৃত্তাকার তরল পাহাড় তৈরি হলো। উচ্চতা কয়েক মাইল। একশো মিটার চওড়া গর্ত দিয়ে পৃথিবীর ভেতরের বস্তু বেরিয়ে আসছে। গলিত পাথরের দেয়াল ঢেউ তুলে ছড়িয়ে পড়ছে ধীরে ধীরে। এ তীব্র আঘাতের সামনে ভূপৃষ্ঠ যেন সামান্য একটি কম্বল। 

গর্তের ভেতরের লক্ষ কোটি টন পাথর বাষ্পীভূত হয়ে গেছে। তার চেয়ে অনেক বেশি ছিটকে ওপরে উঠে যাচ্ছে। কিছু কিছু চলে যাচ্ছে মহাকাশের দিকেও। এর চেয়ে বেশি পরিমাণে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অর্ধ-মহাদেশ এলাকা জুড়ে। এরপর পতিত হচ্ছে শত শত, এমনকি হাজার হাজার মাইল দূরের এলাকায়। যেখানেই তা পড়ছে, ঘটাচ্ছে মারাত্মক ধ্বংসযজ্ঞ। কিছু কিছু নিক্ষিপ্ত পদার্থ গিয়ে পড়ছে সাগরে। সেট থেকে শুরু হচ্ছে সুনামি। ফলে দূর্যোগের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেল। ধুলোময় ধ্বংসাবশেষের একটি বড় অংশ বায়ুমণ্ডলে উঠে গেল। সূর্য পুরোপুরি ঢাকা পড়ে গেল। সূর্যের আলোর মুখ দেখা যাচ্ছে না পৃথিবীর কোথাও থেকেই। তার বদলে দেখা যাচ্ছে শত কোটি উল্কার পৈশাচিক ঝলকানি। তীব্র উত্তাপ পাঠিয়ে এরা ঝলসে দিচ্ছে মাটির পৃথিবী। কারণ বিচ্ছিন্ন খণ্ডগুলো মহাশূন্য থেকে ফের ফিরে আসছে বায়ুমণ্ডলে। 

উপরের দৃশ্যপটটি একটি অনুমান। সু্ইফট টাটল (Swift-Tuttle) নামের একটি ধূমকেতু ২১২৬ সালের ২১ আগস্ট তারিখে পৃথিবীতে আঘাত হানবে। যদি সেটাই ঘটে, বৈশ্বিক দূযোর্গ অবধারিত। ইতি ঘটবে মানুষেরও। ১৯৯৩ সালে একে দেখার পরে হিসাব-নিকাশ করে দেখা গেল ২১২৬ সালে আসলেও একটি সংঘর্ষ হতে যাচ্ছে। পরে সংশোধিত হিসাবে দেখা যায়, এটি এক সপ্তাহের জন্যে পৃথিবীকে মিস করবে। অল্পের জন্য বাঁচা। আমরা এর দিক থেকে নিশ্চিন্তেই থাকতে পারি। তবে বিপদ যে একেবারেই নেই তা কিন্তু নয়। আজ হোক, কাল হোক, সুইফট টাটল বা এরই মতো কেউ পৃথিবীতে আঘাত হানবেই। হিসেব করে দেখা গেছে, অর্ধ-কিলোমিটার বা তারও বেশি চওড়া দশ হাজার বস্তুর কক্ষপথ পৃথিবীর কক্ষপথের ওপর দিয়ে গেছে। বিশাল বিশাল এই উপদ্রপগুলোর জন্ম সৌরজগতের বহিঃস্থ শীতল এলাকায়। কিছু কিছু হলো ধূমকেতুর ধ্বংসাবশেষ। আটকা পড়ে আছে গ্রহদের মহাকর্ষীয় বাঁধনে। অন্যদের উৎপত্তি গ্রহাণু বেষ্টনীতে (asteroid belt)। জায়গাটা মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে। কক্ষপথের ভারসাম্যহীনতার কারণে এরা নিয়মিত সৌরজগতে আসা-যাওয়া করছে। আকারে ছোট হলেও এদের প্রতিক্রিয়া ভয়ঙ্কর। পৃথিবী ও অন্য গ্রহদের স্থায়ী বিপদের কারণ।
এ বস্তুগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই পৃথিবীর সবগুলো নিউক্লিয়ার অস্ত্রের চেয়েও বেশি ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম। যে-কোনো সময় কোনো একটি আঘাত হানতে পারে। সেটা মানুষের জন্যে একটি খারাপ খবরই হবে। সেটা হবে মানব ইতিহাসের একটি আকস্মিক ও নজিরবিহীন প্রতিবন্ধক। কিন্তু পৃথিবীর ক্ষেত্রে এ রকম ঘটনা মোটামুটি নিয়ম মেনে চলে। ধূমকেতু বা গ্রহাণুর এ মাত্রার সংঘর্ষ গড়ে কয়েক মিলিয়ন১ বছরে একবার ঘটে। অনেকের বিশ্বাস, এ ধরনের এক বা একাধিক ঘটনার ফলেই সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ডাইনোসররা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। পরের বার হয়ত আমাদের পালা।

অনেক ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষেরা আরমাগেডনে২ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। বাইবেলের বুক অব রিভিলেশন পুস্তকে এ যুদ্ধে সংঘটিত হতাহত এবং ক্ষয়ক্ষতির ভালো একটি বিবরণ দেওয়া আছে। সেটা এ রকম:
এরপর এল বিদ্যুত চমক, বজ্রধ্বনি ও গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। সাথে একটি তীব্র ভূমিকম্প। মানুষ পৃথিবীতে পা ফেলার পরে এত বড় ভূমিকম্প আর কখনও আর ঘটেনি। এটা এতই তীব্র ছিল। বিভিন্ন দেশের শহরগুলো ভেঙে পড়ল। দ্বীপগুলো হারিয়ে গেল। দেখা যাচ্ছে না পাহাড়গুলোও। আকাশ থেকে এক একটি একশো পাউন্ড৩ ওজোনোর শিলাবৃষ্টি পড়ল মানুষের মাথা ওপর। শিলাবৃষ্টির প্রকোপে মানুষ ঈশ্বরকে গালাগাল করতে লাগল। প্রকোপটা আসলেই ভয়াবহ ছিল। 

অবশ্যই পৃথিবী আরও নানা রকম প্রতিকূল ঘটনার শিকার হতে পারে। বিপুল পরিমাণ বলের বাঁধনে পরিব্যপ্ত মহাবিশ্বে পুঁচকে একটি বস্তু এই পৃথিবী। এত কিছুর পরেও অন্তত সাড়ে তিন শ কোটি বছর ধরে আমাদের গ্রহটি প্রাণ ধারণের উপযোগী হিসেবেই আছে। তবে গ্রহটিতে আমাদের সাফল্যের পেছনে রহস্য কিন্তু মহাকাশই। সেটা অনেকভাবেই। বিশাল শূন্যতার মহাসাগরে আমাদের সৌরজগত ক্ষুদ্র একটি সক্রিয় অঞ্চল। আমাদের নিকটতম নক্ষত্রের (সূর্যের পরে) অবস্থান চার আলোকবর্ষ৪ দূরে। এই দূরত্ব কত বেশি সেটা বুঝতে হলে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সূর্য থেকে মাত্র সাড়ে আট মিনিটের মধ্যে আলো নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল পথ পেরিয়ে আসে।  চার বছরে তো অতিক্রম করে ২০ ট্রিলিয়ন (২০ লক্ষ কোটি) মাইলেরও বেশি পথ।

সূর্য একটি আদর্শ বামন নক্ষত্র। অবস্থান আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের (Milky Way galaxy) একটি আদর্শ অঞ্চলে। এ ছায়াপথে নক্ষত্রের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার কোটি। কারও ভর সূর্যের কয়েক শতাংশ। কারও কারও ভর আবার সূর্যের এক শ গুণ। এরা ধীরে ধীরে ছায়াপথের কেন্দ্রের চারপাশে ঘুরছে। ঘুরছে ছায়াপথে থাকা প্রচুর পরিমাণ গ্যাসীয় মেঘ ও ধুলো, অজানা সংখ্যক ধূমকেতু ও গ্রহাণু, গ্রহ এবং কৃষ্ণগহ্বরও। এই বিপুল পরিমাণ বস্তুর উপস্থিতির কথা শুনে মনে হতে পারে, ছায়াপথটি বুঝি বিভিন্ন বস্তু দিয়ে কানায় কানায় ভর্তি। এ ধারণা ভুল। আসলে, ছায়াপথটির দৃশ্যমান অংশ প্রায় এক লাখ আলোকবর্ষ পরিমাণ চওড়া। আকৃতি হলো থালার মতো। কেন্দ্রীয় অংশটা একটু স্ফীত। একে ঘিরে ছড়িয়ে আছে কয়েকটি সর্পিল বাহু। বাহুগলো গড়া নক্ষত্র ও গ্যাসীয় পদার্থ দ্বারা। এমনই একটি সর্পিল বাহুতে রয়েছে আমাদের সূর্য। কেন্দ্র থেকে এটি আছে প্রায় ত্রিশ হাজার আলোকবর্ষ দূরে।

আমরা যতদূর জানি, আকাশগঙ্গা ছায়াপথে খুব ব্যতিক্রমধর্মী কিছুই নেই। একই রকম আরেকটি ছায়াপথ হলো অ্যান্ড্রোমিডা। এটি আছে আমাদের থেকে বিশ লাখ আলোকবর্ষ দূরে। আকাশের অ্যান্ড্রোমিডা তারামণ্ডলের দিকে এর অবস্থান৫। খালি চোখে একে ঝাপসা ছোপ ছোপ আলোর মতো মনে হয়। বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র সাজিয়ে রেখেছে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব। কোনোটি সর্পিল, কোনোটি উপবৃত্তাকার, কোনোটি আবার নির্দিষ্ট আকারহীন। দূরত্বের মাপাকাঠি এখানে বিশাল। শক্তিশালী টেলিস্কোপের সাহায্যে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ছায়াপথও আলাদাভাবে দেখা সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তো এদের আলো আমাদের কাছে পৌঁছতেই পৃথিবীর বয়সের (সাড়ে চারশো কোটি বছর) চেয়ে বেশি সময় লেগে গেছে।

এই বিশাল ফাঁকা স্থানের উপস্থিতির অর্থ হলো মহাকাশে সংঘর্ষের ঘটনা খুব বেশি ঘটে না। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিপদ লুকিয়ে আছে এর আশেপাশেই। গ্রহাণুদের কক্ষপথ সাধারণত পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে না। এদের বড় অংশই মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানের গ্রহাণু বেষ্টনীতেই থাকে সব সময়। তবে বৃহস্পতির বিপুল ভর গ্রহাণুদেরকে কক্ষপথ থেকে ছিটকে দিতে পারে। ফলে এদের কোনো কোনোটি সূর্যের দিকে চলে আসে। ডেকে আনে পৃথিবীর বিপদ।

আরেকটি বিপদ হলো ধূমকেতু। মনে করা হয়, দর্শনীয় এ বস্তুগলোর উৎপত্তি সূর্য থেকে প্রায় এক আলোকবর্ষ দূরের একটি মেঘপুঞ্জে। এখানে দোষ বৃহস্পতির নয়। দায়ী বরং নিকটস্থ নক্ষত্ররা। ছায়াপথ স্থির বসে নেই। শুধু নক্ষত্রগুলোই ছায়াপথ কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে না, ছায়াপথ নিজেও ধীরে ধীরে আবর্তন করছে। সূর্য তার সঙ্গী গ্রহদেরকে নিয়ে প্রায় ২০ কোটি বছরে ছায়াপথকে পুরো একবার ঘুরে আসে। এ যাত্রাপথে মুখোমুখি হতে হয় নানা রকম অভিজ্ঞতার। নিকটবর্তী নক্ষত্ররা ধূমকেতুর মেঘকে নাড়িয়ে দিতে পারে। কিছু কিছু ধূমকেতু তখন ছিটকে আসবে সূর্যের দিকে। ধূমকেতুরা সৌরজগতের ভেতরের দিকে চলে এলে সূর্যের উত্তাপে এদের উদ্বায়ী পদার্থ বাষ্পীভূত হয়ে যায়। সৌর বায়ুর ধাক্কায় একটি লম্বা প্রবাহ তৈরি হয়। এটাই ধূমকেতুর বিখ্যাত লেজ। সৌরজগতের ভেতরের দিকে চলে এলেও ধূমকেতুর সাথে পৃথিবীর সংঘর্ষ হবার সম্ভাবনা খুব কম। ক্ষতি ধূমকেতুও করে। তবে তার দোষ কিন্তু পড়ে পথে দেখা হওয়া নক্ষত্রের ওপর। তবে আমাদের ভাগ্য ভাল যে নক্ষত্রের মাঝের দূরত্ব অনেক বেশি হওয়ায় এমন ঘটনা খুব বেশি ঘটে না।

ছায়াপথের চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে আরও কিছু বস্তু আমাদের দিকে চলে আসতে পারে। যেমন ছায়াপথে ভেসে চলা গ্যাসের বড় বড় মেঘপুঞ্জ। এরা অনেক চিকন হলেও সৌরবায়ুকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। প্রভাবিত করতে পারে সূর্য থেকে আসা তাপের প্রবাহকে। অন্ধকার মহাশূন্যে আরও নানান ভয়নাক জিনিস লুকিয়ে থাকতে পারে। যেমন, বিচ্ছিন্ন গ্রহ, নিউট্রন নক্ষত্র, বাদামী বামন, কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি৬। এরাসহ আরও অনেকেই আমাদের অজান্তেই আমাদের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। সৌরজগতে ঘটে যেতে পারে টালমাটাল অবস্থা।

বিপদ আরও ভয়াবহও হতে পারে। কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ মনে করেন, সূর্য হয়ত একটি দ্বি-তারা৭ জগতের অংশ। আমাদের ছায়াপথের আরও বহু নক্ষত্রের অবস্থাই এমন। প্রস্তাবিত সূর্যের এই সঙ্গী তারাটির নাম নেমেসিস। তবে অস্তিত্ব থাকলেও এটা হবে অনেক বেশি অনুজ্জ্বল। দূরত্ব হবে অনেক বেশি। এজন্যই এখনও একে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সূর্যের চারপাশের কক্ষপথে এর গতি ধীর হলেও মহাকর্ষের মাধ্যমে এটি উপস্থিতির জানান দিতে পারে। মাঝে মাঝে দূরের ধূমকেতুদের গতিপথ পাল্টে পাঠিয়ে দিতে পারে পৃথিবীর দিকে। পরিণতিতে ঘটবে একের পর এক সাংঘাতিক সংঘর্ষ। ভূতাত্ত্বিকেরা দেখেছেন যে নিয়মিত বিরতিতে বড় আকারের বাস্তুগত (ecological) বিপর্যর ঘটে। এটা ঘটে প্রতি ৩০ লাখ বছর পরে একবার।

আরও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে জ্যোতির্বিদরা জানলেন, সম্পূর্ণ ছায়াপথরাই সংঘর্ষ বাঁধাতে পারে। আকাশগঙ্গার সাথে আরেকটি ছায়াপথের ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা কেমন? এমন কিছু প্রমাণ অবশ্য আছেই। নক্ষত্রদের দ্রুত চলাচল দেখে বোঝা যায়, ইতোমধ্যে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ নিকটস্থ ছায়াপথদের সাথে সংঘর্ষ করে নড়েচড়ে বসেছে। তবে নিকটস্থ দুটো ছায়াপথের সংঘর্ষ বাঁধলেই যে ছায়াপথ পরিবারের নক্ষত্রদেরও বিপর্যয় ঘটবে এমন কোনো কথা নেই। ছায়াপথদের ঘনত্ব এত কম যে নক্ষত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ না ঘটিয়েও এরা একে অন্যের সাথে মিশে যেতে পারে।

মহাপ্রলয়ের আলোচনা অধিকাংশ মানুষকে মুগ্ধ করে। তাঁদের কাছে মহাপ্রলয় মানে আকস্মিক ও দৃষ্টিকাড়া উপায়ে পৃথিবীর মৃত্যু। তবে ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাওয়ার চেয়ে হঠাৎ মৃত্যুর মধ্যেই বিপদ কম। অনেকগুলো উপায়ে পৃথিবী ধীরে ধীরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে। যেমন, বাস্তুসংস্থানের ক্রমানবনতি, জলবায়ু পরিবর্তন বা সূর্য থেকে আসা তাপের পরিমাণের একটুখানি তারতম্য। ভঙ্গুর পৃথিবীতে এগুলো আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে না ফেললেও আরাম-আয়েশের জীবনে ইতি অবশ্যই ঘটাবে। তবে এ ধরনের পরিবর্তন ঘটতে হাজার হাজার বা এমনকি লক্ষ লক্ষ বছরও লেগে যায়। আধুনিক প্রযক্তির সাহায্যে মানুষ হয়ত এগুলোকে প্রতিরোধও করতে পারবে। যেমন, নতুন করে ধীরে ধীরে বরফ যুগের সূচনা হতে থাকলেও আমাদের সম্পূর্ণ বিপর্যয় ঘটবে না। সেটা ঘটার আগে সবকিছু নতুন করে ঢেলে সাজাবার জন্যে যথেষ্ট সময় হাতে থাকবে আমাদের। ধরে নেওয়া যায় যে একবিংশ শতাব্দীতেও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটতে থাকবে। ফলে এটা বিশ্বাসযোগ্য যে মানুষ বা তার বংশধররা ক্রমেই জগতের বড় কাঠামোর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে। ঠেকাতে পারবে বড় বড় সব দূর্যোগও।

তাত্ত্বিকভাবে কি মানুষ চিরকাল বেঁচে থাকতে পারে? হয়ত পারে। কিন্তু আমরা দেখব, অমরত্ব অর্জন করা সোজা কথা নয়। হয়ত সেটা অসম্ভবই। মহাবিশ্ব নিজেই ভৌত সূত্রের অধীন। সূত্রগুলোই এর জীবনচক্র বেঁধে দিয়েছে: জন্ম, বিবর্তন এবং হয়ত মৃত্যু। নক্ষত্রের নিয়তির সাথে আমাদের নিয়তি অনিবার্যভাবে জড়িয়ে আছে।

অনুবাদকের নোট:
    ১। এক মিলিয়ন সমান দশ লক্ষ
   ২। বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট অংশ অনুসারে পৃথিবীর শেষের দিকে একটি বড় যুদ্ধ হবে। এ যুদ্ধের ময়দানের সত্যিকার বা প্রতীকি নাম হলো আরমাগেডন।
   ৩। এক পাউন্ড সমান ০.৪৫৩৬ কেজি। মানে, ১০০ পাউন্ড সমান প্রায় ৪৫ কেজি।
   ৪। এক আলোকবর্ষ হলো আলোর এক বছরে অতিক্রান্ত দূরত্ব।
   ৫। অ্যান্ড্রোমিডা একই সাথে একটি ছায়াপথ এবং একটি তারামণ্ডলের নাম। মহাকাশের বিভিন্ন বস্তুর অবস্থান নির্দিষ্ট করার জন্যে পুরো আকাশের দৃশ্যমান গোলককে ৮৮টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এর প্রতিটিকে এক একটি তারামণ্ডল (constellation) বলে।
    ৬। এদের পরিচয় ও পার্থক্য দেখুন পরিশিষ্ট অংশে।
   ৭। বর্তমানে দ্বি-তারা বা ডাবল স্টার বলা হয় এমন দুটো তারাকে যাদেরকে পৃথিবী থেকে দেখতে খুব কাছাকাছি মনে হয়। বাস্তবে এরা নিজেদের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেও পৃথিবীর আকাশে কাছাকাছি অবস্থানে থাকতে পারে। আবার হতে পারে এরা একে অপর কেন্দ্র করে ঘুরছে। এই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এদেরকে বাইনারি স্টার বা জোড়া তারা বলে। আলোচ্য অংশে দ্বি-তারা বলতে আসলে জোড়াতারাকে বোঝানো হয়েছে।

মূল: দ্য লাস্ট থ্রি মিনিটস, পল ডেভিস
অনুবাদ: আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ 
Category: articles

সোমবার, ৪ মে, ২০২০

রানিং চিকেন নেবুলা। সূত্র: নাসা অ্যাপড

হ্যাঁ, ছবিটা দেখলে অনেকের কাছেই মনে হবে একটি চিকেন দৌড়াচ্ছে বুঝি! তবে অনেকের কাছেই এটি আবার একটি নেবুলা। বাংলায় যাকে বলে নীহারিকা। যেখানে তৈরি হয় নতুন নতুন নক্ষত্ররা। নেবুলাটি আইসি ২৯৪৪ নামে নথিবদ্ধ আছে। এর বিস্তৃতি প্রায় ১০০ আলোকবর্ষ। পৃথিবী থেকে দূরত্ব ৬ হাজার আলোবর্ষ। আকাশের Centaurus বা মহিষাসুর তারামণ্ডলের দিকে তাকালে পাওয়া যাবে একে। 
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ৮ আগস্ট, ২০১৯

রাতের আকাশে ঝিকিমিকি তারকারাজির দিকে তাকালে কত বিচিত্র রূপই না চোখে পড়ে! প্রতিটি তারকা ভিন্ন। কিছু বড়, কিছু ছোট, কিছু গরম, কিছু ঠাণ্ডা। নীল বা হলুদ বা লাল। মানুষ তারকারাজি নিয়ে গবেষণা করছে বহুকাল ধরে। তারকারাজিকে ভালো করে চিনতে আবিষ্কার করেছে তারকার শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি। পৃথিবী পরিমণ্ডলের রাসায়নিক মৌলসমূহের সহজ পাঠের জন্য আছে পর্যায় সারণি, উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাসের জন্য আছে নির্দিষ্ট নিয়মাবলী বা পদ্ধতি। তেমনি তারকারাজির শ্রেণিবিন্যাসের জন্য আছে কতগুলো পদ্ধতি। তারকারাজির এই শ্রেণিবিন্যাস সহজেই একটি তারকার বৈশিষ্ট্য বুঝতে সাহায্য করে। আমরা আজকে জানব সে সম্পর্কে। এখানে পাঁচটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। 

তারার নিজেই আলো বানাতে পারে। প্লাজমা পদার্থে গড়া এই বস্তুদের আকৃতি মহাকর্ষের কল্যাণে উপগোলকের (spheroid) মতো। আমাদের সবচেয়ে কাছের তারকা সূর্য। তারপরে সবচেয়ে কাছে প্রক্সিমা সেন্টোরি

পদ্ধতি-০১: তাপমাত্রা
চিত্র-১: তারার রং দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস 

১। শুধুমাত্র রং দেখেই তারকার শ্রেণিবিন্যাস করা সম্ভব। তাপমাত্রা নির্ধারণে তারকার রং নির্দেশক  হিসেবে কাজ করে। বর্তমানে দশ রঙের তারকা আমাদের চোখে পড়ে। প্রতিটি রঙের সাথে যুক্ত থাকে তাপমাত্রার পরিসীমা। O শ্রেণির তারকার বর্ণ নীল বা অতিবেগুনী। B শ্রেণির তারকার বর্ণ নীল সাদা, A শ্রেণির তারকার বর্ণ সাদা, F শ্রেণির তারকার বর্ণ হলুদ সাদা, G শ্রেণির তারকার বর্ণ হলুদ, K শ্রেণির তারকার বর্ণ কমলা এবং M শ্রেণির তারকার বর্ণ লাল। অন্যান্য তিনটি শ্রেণি অবলোহিত। L শ্রেণির তারকার বর্ণ দৃশ্যমান আলোতে খুব গাঢ় লাল দেখায়। এসব তারকা ক্ষার ধাতু এবং ধাতুর  হাইড্রাইডের বর্ণালি দেখায়। T শ্রেণির তারকা L শ্রেণির তুলনায় শীতল। Y শ্রেণির তারকা সবচেয়ে শীতল। এরা বাদামি বামন তারকা এবং L, T থেকে আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, রাতের আকাশে তাকালেই সহজে চোখে পড়ে অরায়ন তারামণ্ডলীর বিটলজুস তারকাটি। এটি M শ্রেণির তারকা। কারণ বর্ণ লাল।

চিত্র-২: বর্ণ ও সংখ্যা দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস 

২ নং চিত্রে একদিকে O থেকে Y পর্যন্ত তারকার রঙ অন্যদিকে ০-৯ পর্যন্ত প্রতিটি রঙের মধ্যে ১০ টি তাপমাত্রার ব্যান্ড দেখানো হয়েছে। O থেকে Y পর্যন্ত এবং ০-৯ পর্যন্ত তাপমাত্রা পর্যায়ক্রমে কমে যায়। নির্দিষ্ট বর্ণের পরে নির্দিষ্ট একটি সংখ্যা রেখে সহজে তাপমাত্রা হিসেব করা যায়। 0 হচ্ছে সবচেয়ে গরম এবং ৯ সবচেয়ে শীতল। উদাহরণস্বরূপ,  A0, A5 এর চেয়ে বেশি গরম, যা A9 এর চেয়ে গরম, যা F0 এর তুলনায় গরম। উপরে আলোচিত বিটলজুস M1 শ্রেণীর একটি তারকা।

পদ্ধতি-০২: আকার
চিত্র ৩: তারকার আকার থেকে শ্রেণিবিন্যাস 


তারকার আকার নির্দেশক একটি রোমান সংখ্যা তাপমাত্রার পরে যোগ করা শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। 0 বা Ia+ একটি হাইপারজায়ান্ট (hypergiant) তারকা নির্দেশক। Ia, Iab এবং Ib সুপারজায়ান্ট তারকার (যথাক্রমে উজ্জ্বল, মাঝারি, অনুজ্জ্বল) প্রতিনিধিত্ব করে। II উজ্জ্বল দৈত্য, III দৈত্য, IV উপ-দৈত্য, V প্রধান ক্রমের নক্ষত্র (এটি একটি তারকার জীবনের অংশ যেখানে তারকাটির সর্বাধিক সময় ব্যয় হয়) এবং VI উপ-বামন। D একটি একটি সাদা বামন তারকা নির্দেশক। উদাহরণ: DA7 (সাদা বামন), F5Ia + (হলুদ হাইপারজায়ান্ট), G2V (প্রধান পরম্পরার হলুদ তারকা)। আমাদের সূর্য G2V এবং বিটলজুস M1la বা উজ্জ্বল সুপারজায়ান্ট।


পদ্ধতি-০৩: তারকার বর্ণালি 


চিত্র ৪: বর্ণালি দিয়ে শ্রেণিবিন্যাস 

১. তারকার আলোকে প্রিজম ব্যবহার করে আলাদা করা যায়। প্রিজমের ভেতর দিয়ে টর্চ লাইট অতিক্রম করালে কতগুলো বর্ণের একটি পরিসীমা পাওয়া যাবে, যা বর্ণালি নামে পরিচিত। তারকার আলো এমন বর্ণালি তৈরি করে। প্রত্যেকটি তারকার বর্ণালি ভিন্ন ভিন্ন। প্রতিটি তারকার বর্ণালির মধ্যে অন্ধকার লাইন থাকে, যা শোষণ লাইন নামে পরিচিত। এই শোষণ লাইন থেকে তারকার রাসায়নিক গঠন সম্পর্কে ধারণা করা যায়। 


২. তারকার বর্ণালিটি একটি ডেটাবেজের সাথে তুলনা করা হয়। একটি ভাল জ্যোতির্বিজ্ঞান ডেটাবেজ প্রতিটি তারকার টাইপের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সাধারণ বর্ণালি দেবে। সেই বর্ণালি ডেটাবেজ দেখে সহজেই তারকার শ্রেণিবিভাগ করা যায়।

পদ্ধতি-০৪: ধাতুর উপস্থিতি নির্ণয় 


চিত্র ৫: ধাতুর উপস্থিতির সাহায্যে শ্রেণিবিন্যাস 

১. তারকায় ধাতুর (হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছাড়া অন্য উপাদান) অনুপাত নির্ধারণ

কোনো তারকার মধ্যে ১% এরও বেশি ধাতু থাকলে তাকে ধাতু সমৃদ্ধ তারকা বলা হয়। এসব তারকাকে পপুলেশন-১ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। কোনো তারকার মধ্যে ১% ধাতু থাকলে তাকে ধাতু-দরিদ্র তারকা বলা হয়। এসব তারকাকে পপুলেশন-২ এর তারকা হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়। মহাবিশ্বের আদিকালে পপুলেশন-২ জাতের তারকারাজি গঠিত হয়েছিলো, কারণ তখন ধাতুর পরিমাণ কম ছিলো।

২. কিছু তারকা তাত্ত্বিকভাবে ধাতুহীন, কিন্তু এদের খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন। এদেরকে পপুলেশন-৩ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই তারকারাজি বিগ ব্যাংয়ের পরেই সৃষ্টি হয় বলে মনে করা হয়। যখন একমাত্র উপাদান হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম ছিল। অন্য কোনো ধাতুর উপস্থিতি ছিল না।

পদ্ধতি-০৫:  উজ্জ্বলতার পরিবর্তন



১. তারকার উজ্জ্বলতা পরিবর্তনশীল কি না নির্ধারণ করা। সব না হলেও কিছু কিছু তারকা এই ধর্ম প্রদর্শন করে। এই উজ্জ্বলতার পরিবর্তন নানা কারণে হতে পারে। সেটা ভিন্ন আলোচনা। 



২. কোনো তারকা বাইনারি তারকা কি না তা নির্ধারণ করা। দুটি তারকা একে অপরকে কেন্দ্র করে ঘুরলে তারা বাইনারি বা জোড়া তারা। রাতের আকাশে সর্বাধিক উজ্জ্বল তারকা সিরিয়াস বা লুব্ধক। সিরিয়াস ও সিগনাস X-1 এই তারকা দুটি বাইনারি তারকা। আমরা খালি চোখে সিগনাস X-1 দেখতে পাই না। কারণ এই তারকাটি ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়ে গেছে।

সূত্র
উইকিহাউ ও উইকিপিডিয়া।
Category: articles

বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৯

মহাবিশ্বের বয়স নির্ণয়ের একটি উপায়ই হলো সবচেয়ে পুরাতন নক্ষত্রের বয়স দেখা। মহাবিশ্বের জন্মের অল্প কিছুকাল পরেই নক্ষত্রের জন্ম হয়ে গিয়েছিল। মহাবিশ্বের বর্তমান বয়স ধরা হয় ১৩৮০ কোটি বছর। আর মনে করা হয়, সবচেয়ে প্রাচীন ভ্রুণতারার (protostar) জন্ম হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের ৩০ কোটি বছর পর।

মহাবিশ্বের জন্মের আগেই কি নক্ষত্রের জন্ম হয়েছিল? 

বিগ ব্যাং থেকে নক্ষত্রের জন্মের সময়টা নিয়ে একটু জেনে নেওয়া যাক।

আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিসহ সব গ্যালাক্সিতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণ গ্যাসীয় মেঘ ও ধুলিকণা। প্রাথমিক অবস্থায় এদেরকে বলা হয় নীহারিকা বা নেবুলা (Nebula)। সাধারণত এক একটি নেবুলা আড়াআড়িভাবে বহু আলোকবর্ষ পরিমাণ জুড়ে বিস্তৃত থাকে। একটি নেবুলাতে যে পরিমাণ গ্যাস থাকে তা দিয়েই আমাদের সূর্যের মতো কয়েক হাজার নক্ষত্রের জন্ম হতে পারে। নেবুলার অধিকাংশ উপাদানই হচ্ছে বিভিন্ন হালকা গ্যাস- বিশেষ করে হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের অণু। এই গ্যাস ও ধুলিকণা ঘনীভূত হয়ে যথেষ্ট পরিমাণ অভিকর্ষ উৎপন্ন করলে নিজস্ব অভিকর্ষের চাপেই সঙ্কুচিত হতে থাকে। কোনো কোনো জ্যোতির্বিদ আবার মনে করেন, এই অন্তর্মুখী সঙ্কোচনের জন্য শুধু অভিকর্ষই নয়, গ্যাস ও ধুলিকণায় সৃষ্ট চৌম্বকক্ষেত্রও দায়ী।

গ্যাসগুলো জড় হতে হতে বিভব শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং বাড়িয়ে ফেলে তাপমাত্রা। তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে সঙ্কোচনশীল গ্যাস বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে এক একটি আলাদা নক্ষত্র তৈরি হয়। এই তারকার অন্তর্বস্তুর সঙ্কোচনের হার হয় অনেক বেশি। এর গ্যাসীয় মেঘ অনেক দ্রুত আবর্তন করে করে এর কৌণিক ভরবেগ বজায় রাখে। এক সময় এই নক্ষত্রের তাপমাত্রা প্রায় ২ হাজার কেলভিনে পৌঁছায়। এই অবস্থায় হাইড্রোজেন অণু ভেঙ্গে গিয়ে মৌলটির পরমাণুতে পরিণত হয়। এর তাপমাত্রা এক সময় উঠে যায় ১০ হাজার কেলভিনে। সঙ্কুচিত হয়ে সূর্যের প্রায় ৩০ গুণ আয়তন লাভ করলে এই নব-সৃষ্ট তারকাকে বলে প্রোটোস্টার বা ভ্রুণতারা (protostar)। এবার এতে হাইড্রোজেন পরমাণু জোড়া লেগে লেগে হিলিয়ামে পরিণত হতে থাকে। এই নিউক্লিয় বিক্রিয়াটিকে বলে ফিউশন বা সংযোজন (fusion) বিক্রিয়া।

আরও পড়ুন
 নক্ষত্র থেকে ব্ল্যাকহোল

ফিউশন বিক্রিয়া চলার সময় নক্ষত্রের নাম হয় প্রধান ক্রমের তারা (main sequence star)। আমাদের সূর্য এখন এই দশায় আছে। 

মূল কথায় ফিরে আসা যাক। মহাবিশ্বের বয়স ১৩৮০ কোটি বছর হলে এর ভেতরের সব নক্ষত্রের বয়স অবশ্যই এর চেয়ে কম হওয়া উচিত। কিন্তু ২০১৩ সালে পাওয়া গেল বিপরীত এক পর্যবেক্ষণ।  হাবল স্পেস টেলিস্কোপ খুঁজে পেল ব্যতিক্রমী এক তারা। নাম মেথুসেলাহ। হিসেব করে এর বয়স পাওয়া যাচ্ছে ১৪৫০ কোটি বছর। যা সর্বোচ্চ ৮০ কোটি এদিক-ওদিক হতে পারে। কিন্তু মহাবিশ্বের বয়সের চেয়ে পুরাতন নক্ষত্র কীভাবে এল? 

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ। একদল বিজ্ঞানী তাই ভাবছেন, নিশ্চয় মহাবিশ্বের বয়স বের করতেই ভুল হয়েছে। 

আরও পড়ুন

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি বৈজ্ঞানিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আশা করা হয়েছিল, এখানে একটি সমাধান মিলবে। কিন্তু সর্বশেষ তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের মৌলিক জ্ঞানই সম্ভবত ত্রুটিপূর্ণ।

বড় কাঠামোয় মহাবিশ্ব নিয়ে কথা বলতে গেলেই চলে আসে আইনস্টাইনের সার্বিক আপেক্ষিকতা (general relativity)। নিউটনের মহাকর্ষীয় তত্ত্বের আধুনিক রূপ এটি। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন প্রথম প্রকাশ করেন তত্ত্বটি। অনেকের মতেই, এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল তত্ত্ব। ব্ল্যাক হোল থেকে শুরু কাল দীর্ঘায়ন– সব কিছুই সঠিক ব্যাখ্যা করছে তত্ত্বটি। অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী তত্ত্ব কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাফল্যও কম নয়।

সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব সফল হলেও অনেক সময় এর কিছু ফলাফল দেখে অবাক হতে হয়। প্রথম অবাক হবার পালা আইনস্টাইনের নিজেরই। তিনি দেখলেন, তত্ত্ব বলছে, মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। তিনি তখনও স্থির মহাবিশ্বে বিশ্বাসী। যেমনটা ছিলেন নিউটন। আইনস্টাইন ভাবলেন, তত্ত্বে কোনো ভুল আছে। তাই তত্ত্বের সমীকরণে একটি বাড়তি ধ্রুবক লাগিয়ে সেই ভুল দূর করার চেষ্টা করলেন।

পরে ১৯২০ এর দশকে হাবল আবিষ্কার করলেন, সেটা কোনো ভুল ছিল না। আইনস্টাইন পরে স্বীকার করেন, এটা ছিল তাঁর জীবনের সেরা ভুল।

অবশেষে জানা গেল, মহাবিশ্বের একটি সূচনা আছে। অনন্তকাল ধরে মহাবিশ্ব ছিল না। তাই মহাবিশ্বের বয়স বের করার প্রচেষ্টা শুরু হলো। কিন্তু বয়স দেখে তো বিজ্ঞানীরা হতবাক। এ যে মাত্র ২০০ কোটি বছর। যেখানে পৃথিবীরই বয়স প্রায় ৪৫০ কোটি বছর।

ফ্রেড হয়েল প্রস্তাব করলেন, মহাবিশ্বের আসলে সূচনা-টূচনা বলে কিছু নেই। সব বাজে কথা। মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে টিকে আছে একইভাবে। নিজের মত প্রমাণ করতে তিনি আইনস্টাইনের সমীকরণও ব্যবহার করলেন। তবে তাঁর সমাধান সমস্যা কমানোর চেয়ে বাড়াতেই বেশি অবদান রাখল। নতুন পর্যবেক্ষণ থেকে দেখা গেল, মহাবিশ্বের বয়স ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন বছর হয়। মানে এক হাজার থেকে দুই হাজার কোটি বছর। গ্রহণযোগ্য এই মতের চাপে হয়েলের মত বাতিল হয়ে গেল।

কিন্তু সমাধান কি আদৌ হয়েছে? বয়সের সমস্যা হাজির হয়েছে আবারও। গত মাসের সম্মেলনে বয়স নিয়ে বেশ কজন বিজ্ঞানী নতুন করে হিসেব দিয়েছেন। কিছু দিন আগে হলেও এসব নতুন হিসেবকে কেউ পাত্তা দিতেন না। বিগ ব্যাংয়ের পরবর্তী সময়ে নির্গত হয় মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ পটভূমি বিকিরণ (cosmic microwave background)। যার রেশ আছে আজকের পৃথিবী ও মহাবিশ্বেও। এই বিকিরণের তথ্য কাজে লাগিয়ে মহাবিশ্বের বয়সের নির্ভরযোগ্য হিসেব পাওয়া যায়।

পটভূমি বিকিরণ দিয়ে পাওয়া হিসেবের সাথে মিলে যায় সরাসরি বের করা হিসেবও। দূরের ছায়াপথের নক্ষত্রের প্রসারণ দেখে মহাবিশ্বের প্রসারণ বেগ বের করা যায়। সেখান থেকে জানা যায়, মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়ে বর্তমান অবস্থায় আসতে কত সময় নিয়েছিল। এই দুটি হিসেব দারুণভাবে মিলে যায়। একই সাথে হিসেবটি ছিল দারুণ সূক্ষ্ম।। আবার সবচেয়ে প্রাচীন নক্ষত্রের বয়সের চেয়ে এই বয়স বেশিও ছিল। ফলে সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল।

কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, মহাবিশ্বের দুটো বয়স আলাদা। পার্শ্ববর্তী ছায়াপথদের কাজে লাগিয়ে পাওয়া বয়সের সাথে বিকিরণ থেকে হিসেব করা বয়সের পার্থক্য কয়েক হাজার কোটি বছর। যাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া অসম্ভব। তাও আবার দেখা যাচ্ছে মহাবিশ্বের চেয়ে পুরাতন নক্ষত্রেরও অস্তিত্ব আছে।

এত কিছু যে নক্ষত্র নিয়ে তার নাম এইচডি ১৪০২৮৩। অন্য তারার মতোই খটমটে এক নাম। তবে ডাক নামও আছে একখান। মেথুসেলাহ। ১৯১২ সাল থেকেই নক্ষত্রটি বিজ্ঞানীদের চেনা। দূরত্বও পৃথিবী থেকে বেশি নয়— মাত্র ১৯০ আলোকবর্ষ। 

বিজ্ঞানীরা এখন জানেন, নক্ষত্রটিতে লোহার পরিমাণ খুব সামান্য। তার মানে এর জন্ম হয়েছিল এমন সময় যখন মহাবিশ্বে লোহা খুব কম ছিল। আর তার মানে এর বয়স অন্তত মহাবিশ্বের বয়সের কাছাকাছি।

তাহলে কি মহাবিশ্বের বয়স বের করতেই ভুল হয়েছে? প্রসারণ থেকে মহাবিশ্বের বয়স বের করতে হলে অনেক কিছুই সঠিকভাবে জানা দরকার। এই যেমন ছায়াপথরা একে অপর থেকে কত বেগে সরে যাচ্ছে, কত দূরে থাকলে কত দ্রুত সরছে ইত্যাদি। আর দূরের ছায়াপথের ক্ষেত্রে এই মানগুলো বিজ্ঞানীরা বের করেন অনেক অনুমানের ওপর ভিত্তি করে।

এটা যাচাই করার জন্য অন্য উপায়ে প্রসারণ বের করতে হয়। বিকল্প এসব উপায়ের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো মহাকর্ষ তরঙ্গ। ভারী নক্ষত্রদের মিলনে সৃষ্ট স্থান-কালের ঢেউ।

গত মাসের সম্মেলনের বেশ কয়েক দিন আগে এ বিষয়ে নেচার অ্যাস্ট্রোনোমি জার্নালে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানে মহাকর্ষ তরঙ্গ দিয়ে মহাবিশ্বের প্রসারণ হার দেখানো হয়। ব্যবহার করা হয় ২০১৭ সালের একটি মহাকর্ষ তরঙ্গ।

আরও পড়ুন
 মহাকর্ষ তরঙ্গ

কিন্তু এই হার দিয়েও মেথুসেলাহ নক্ষত্রের রহস্যের সমাধান হচ্ছে না। সমাধান হচ্ছে না মহাজগতের বয়স সমস্যারও। কেউ কেউ তাই আবার পদার্থবিদ্যার আমূল পরিবর্তনের কথা ভাবছেন।

সূত্র
১। দ্য ন্যাশনাল
২। উইকিপিডিয়া
Category: articles

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, চেহারা মাছের মাথার মতো বলেই এই নাম হয়েছে এর। তবে সবার কাছে তেমন মনে নাও হতে পারে। নেবুলা মানেই নতুন নক্ষত্র তৈরির কারখানা। আর এই নেবুলাটার অবস্থান উত্তর আকাশে। ক্যাসিওপিয়া তারামণ্ডলীতে। পাশেই আছে তারা তৈরির আরেকটি উর্বর কারখানা। হার্ট নেবুলা। এছাড়াও আছে বিখ্যাত ডাবল স্টার ক্লাস্টার। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে তারা তৈরির এক উর্বর অঞ্চল। নেবুলাটির দূরত্ব মাত্র ৬ হাজার আলোকবর্ষ।

সূত্র: অ্যাস্ট্রোনমি পিকচার অব দ্য ডে (নাসা)
Category: articles

সোমবার, ১১ মার্চ, ২০১৯


দুই বা তার বেশি বস্তুর মধ্যে দূরত্ব মাপতে আমরা সাধারণত যে রাশি ব্যবহার করি সেটা আসলে মাপে রৈখিক দূরত্ব। যেমন ধরা যাক ছবিতে A ও B এর দূরত্ব ২০ মিটার। এই ২০ মিটার কিন্তু এদের রৈখিক দূরত্ব। আবার ধরা যাক, A ও C এর দূরত্ব ৩০ মিটার। এটাও রৈখিক দূরত্ব।


তবে জ্যোতির্বিজ্ঞান বা ভূগোলে সমবসময় রৈখিক দূরত্ব (linear distance) দিয়ে কাজ চলে না। দরকার হয় কৌণিক (angular) দূরত্বের। রৈখিক দূরত্বের ব্যবহার একেবারেই নেই এমনটা ভাবলেও আবার বড্ড ভুল হয়ে যাবে।  আমরা জানি, আলো প্রতি সেকেন্ডে  ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে। এটা কিন্তু রৈখিক দূরত্বই। আবার পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব তিন লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। এটাও রৈখিক দূরত্ব। এভাবে রৈখিক দূরত্বও কিন্তু খুব কাজে লাগে। 


একইভাবে কাজে লাগে রৈখিক বেগ (linear velocity)। বেগ মানে হলো অবস্থান পরিবর্তনের হার। যেমন ধরুন, একটি বস্তু ১ সেকেন্ডে ১০ মিটার পথ গেল। তাহলে তার বেগ হলো সেকেন্ডে ১০ মিটার। বা কেতাবি ভাষায় $10 ms^{-1}$ । একইভাবে আরেকটি বস্তু যদি ৫ সেকেন্ডে ২০ মিটার যায়, তাহলে তার বেগ হবে $\frac {20}{5}$ বা $4 ms^{-1}$। সহজ কথায় বলা যায়, এক সেকেন্ডে (বা এক মিনিটে, যদি আপনি ভিন্ন মাপকাঠিতে মাপতে চান) নির্দিষ্ট দিকে অতিক্রান্ত দূরত্বই হলো বেগের মান।

কোনো বস্তু একটি নির্দিষ্ট বেগে যেতে থাকলে এই বেগকে বলা হয় সমবেগ (uniform velocity)। এক্ষেত্রে বেগ বের করার সূত্র খুব সোজা। বেগকে v, দুরত্বকে s এবং সময়কে t দিয়ে প্রকাশ করা হলে বেগ হবে,
$$v = \frac{s}{t}$$

এই সূত্রটিরই ব্যবহার একটু আগে আমরা করেছি। তবে বেগ যদি সুষম না হয়, তাহলে আর এই সূত্র কাজ করবে না। অবস্থান পরিবর্তনের হারকে যেমন বেগ বলে, তেমনি বেগ পরিবর্তনের হারকে বলে ত্বরণ (acceleration)। অসমবেগের ক্ষেত্রে ত্বরণের মান কাজে লাগে।

এতক্ষণ আমরা যা বললাম তার সবই কিন্তু রৈখিক কথাবার্তা। কৌণিক দূরত্ব কখন কাজে আসে তার একটি উদাহরণ চিন্তা করা যাক। আমরা জানি, রাতের আকাশে ধ্রুব তারা সবসময় উত্তর আকাশে থাকে। বরাবর উত্তর দিকের দিগন্তের উপরে। সময় গড়াবার সাথে সাথে অন্যান্য তারা পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লেও ধ্রুব তারা থাকে প্রায় একই জায়গায়।

আরও পড়ুন
☛ দিক নির্ণয়ে ধ্রুব তারা

ধ্রুব তারা দিয়ে অক্ষাংশ বের করার দারুণ একটি উপায় আছে। কোনো জায়গা থেকে ধ্রুব তারা দিগন্ত থেকে যত ডিগ্রি উপরে থাকবে, ঐ জায়গার অক্ষাংশ হবে তত ডিগ্রি। যেমন বাংলাদেশের অক্ষাংশ প্রায় ২৩ ডিগ্রি। ফলে ধ্রুবতারাকেও উত্তর দিগন্ত থেকে ২৩ ডিগ্রি উপরে চোখে পড়ে। এই যে ভূমি থেকে ২৩ ডিগ্রি উপরের এই দূরত্ব, এটা কিন্তু রৈখিক দূরত্ব নয়। বরং কৌণিক দূরত্ব।

খালি হাতে রাতের আকাশের কৌণিক দূরত্ব মাপার বিস্তারিত উপায় লেখা আছে এখানে

এ তো গেল কৌণিক দূরত্বের কথা। অতএব, আগের মতোই, কৌণিক অবস্থান পরিবর্তনের হারই হলো কৌণিক বেগ। জ্যোতির্বিজ্ঞানে অসংখ্য জায়গায় এর ব্যবহার আছে। যেমন ধরা যাক সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর কক্ষপথের কথা। পৃথিবী মোটামুটি এক বছরে সূর্যকে পুরোটা ঘুরে আসে। একইভাবে চাঁদসহ কৃত্রিম উপগ্রহরা ঘোরে পৃথিবীর চারপাশে। এসব হিসাব-নিকাশে দরকার হয় কৌণিক বেগ।

কৌণিক বেগ মাপা হয় বস্তুর সাবেক ও বর্তমান অবস্থানের কৌণিক অবস্থান দিয়ে। অন্য কথায় দুই অবস্থানে উৎপন্ন কোণ দিয়ে।

উপরের চিত্র দেখুন। মনে করুন, একটু বস্তু ০ ডিগ্রি অবস্থানে আছে। এটি ঘড়ির কাঁটার উল্টো দিকে যাত্রা শুরু করল। ধরুন ৩০ ডিগ্রি ঘুরল। আরও ধরুন এটা অতিক্রম করতে বস্তুটির ২ সেকেন্ড লাগল। তাহলে বস্তুটির কৌণিক বেগ হলো সেকেন্ডে ১৫ ডিগ্রি। আমরা ধরে নিচ্ছি, বেগ সুষম। মানে, বেগ বাড়ছে-কমছে না।

কোনো বস্তু ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরলে পুরো এক ঘূর্ণন সম্পন্ন হয়। যেমন পৃথিবী সূর্যের চারদিকে পুরোটা একবার ঘুরে এলে ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরা হয়। ঘূর্ণন বৃত্তাকার না হলেও (যেমন কক্ষপথ কিন্তু উপবৃত্তাকার) পুরো ঘূর্ণনে ৩৬০ ডিগ্রি-ই হয়।

উপরে আমরা কৌণিক বেগকে ডিগ্রি আর সেকেন্ড দিয়ে প্রকাশ করেছি। তবে কোণের আন্তর্জাতিক একক হলো রেডিয়ান। সেই হিসেবে কৌণিক বেগের একক হলো প্রতি সেকেন্ডে অতিক্রান্ত রেডিয়ান। আমরা জানি, ১৮০ ডিগ্রিকে রেডিয়ান এককে বলা হয় π রেডিয়ান। তাহলে কোনো বস্তু অর্ধবৃত্ত ঘুরলে (উপরের ০ ডিগ্রি থেকে ১৮০ ডিগ্রি অবস্থানে এলে) π রেডিয়ান কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করা হবে। একইভাবে পুরো বৃত্ত ঘুরে অতিক্রম করা হবে 2π রেডিয়ান দূরত্ব। কৌণিক দূরত্বকে সাধারণত θ বা α দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

কৌণিক বেগ বের করার সূত্র হলো,

$$\omega = \frac{\theta}{t}$$

যেখানে $\omega$ (ওমেগা) হলো কৌণিক বেগ।

কৌণিক বেগের জন্যে যে অন্য কারও চারদিকে ঘুরে আসতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যেমন পৃথিবী নিজ অক্ষের চারপাশেও ঘুরে। এ কারণেই দিন-রাত হয়। এখানে পুরো এক ঘূর্ণন, মানে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে আসতে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টা। মানে এক দিন।

রাতের আকাশের তারা খুঁজে পেতে কৌণিক বেগের কারিশমা দেখতে পড়ুন:
☛ উজ্জ্বল তারাদের গল্প 

কৌণিক দূরত্ব থেকে আমরা সহজেই রৈখিক দূরত্ব বের করতে পারি।

উপরে চিত্রে বৃত্তটির ব্যসার্ধ r। তাহলে এর পরিধি হলো 2πr। মনে করুন, একটি সুতা দিয়ে একটি বৃত্ত বানানো হলো। বানানোর পরে এর ব্যাসার্ধ r হলে সুতার দৈর্ঘ্য ছিল 2πr। পরিধি মানে এটাই। আরেকভাবে চিন্তা করা যায়। বৃত্তটিকে একটি চাকা হিসেবে কল্পনা করুন। তাহলে এই চাকা পুরো একবার ঘুরলে 2πr দূরত্ব অতিক্রম করবে। পুরো একবার ঘূর্ণন! কথাটা চেনা চেনা লাগছে না? হ্যাঁ, পুরো একবার ঘূর্ণনের মানে হলো ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরে আসা। রেডিয়ান এককে 2π কোণ। তবে π এর ব্যবহার দুই জায়গায় আলাদা। 2πr এর π-এর মান হলো ৩.১৪১৫... যা একটি অমূলদ ধ্রুবক। বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের ভাগফল। আর 2π কোণ যখন বলা হবে, তখন π মানে হলো ১৮০ ডিগ্রি কোণ। এখানে π এর একক আছে (রেডিয়ান, বা ডিগ্রিতে বললে ১৮০ ডিগ্রি)। কিন্তু 2πr এর π-এর কোনো একক নেই। একটি বিশুদ্ধ সংখ্যা।

উপরের তথ্য কাজে লাগিয়ে আমরা সহজেই কৌণিক আর রৈখিক বেগের সম্পর্ক বুঝতে পারি।

মনে করি, একটি বস্তু ১ মিনিটে পুরো বৃত্ত ঘুরে এল। ধরি, বৃত্তের ব্যসার্ধ (r) ১০ মিটার। বিশাল এক বৃত্ত! তাহলে এর রৈখিক বেগ কত?

উত্তর হবে,
$$v = \frac{2 \pi r}{60} = \frac{2 \pi × 5}{60} = 1.05 ms^{-1}$$

একইভাবে ১ মিনিটে ১৮০ ডিগ্রি (π রেডিয়ান) বা অর্ধবৃত্ত ঘুরে এলে রৈখিক বেগ হবে $\frac{\pi r}{60} ms^{-1}$।

তার মানে, রৈখিক বেগের সাথে কৌণের সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে।

বোঝাই যাচ্ছে, কোণের সাথে ব্যাসার্ধ গুণ করে সময় দিয়ে ভাগ দিলেই রৈখিক বেগ পাওয়া যাচ্ছে।
তার মানে, $v=\omega r$

উপরের সম্পর্ক থেকে বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্র থেকে যত দূরে যাওয়া হবে, রৈখিক দূরত্ব তত বেশি হতে হবে। মানে বৃত্তের কেন্দ্র থেকে বেশি দূরে থাকলে সমান কৌণিক দূরত্ব অতিক্রম করতে বেশি রৈখিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। বাস্তবে এর অনেক উদাহরণ আছে। যেমন দুটি গাড়ি মোড় ঘুরছে। দুটি গাড়িই কিন্তু সমান কোণ নিয়ে ঘুরবে। কিন্তু যেটি দূরে দিয়ে ঘুরবে সেটিকে বেশি রৈখিক পথ অতিক্রম করতে হবে।


একটু চিন্তা করুন। রাতের আকাশে ধ্রুবতারা একই জায়গায় থাকার সাথে এই ধারণার মিল আছে। 

আরও পড়ুন

আসলে কৌণিক বেগ নিয়ে লিখতে থাকলে কখনও কথা ফুরোবে না। তাই আপাতত ক্ষান্ত দিলাম। 
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...