Advertisement

সোমবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ২৪ অক্টোবর। 
 ১৯৪৬ সালের এই দিনে প্রথম বারের মতো মহাকাশ থেকে তোলা হয় পৃথিবীর ছবি। সেটি ৭০ বছর আগের কথা। ভি- ২ রকেটে চেপে একটি মুভি ক্যামেরা এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পাদন করে।


৭০ বছর আগের চিত্রটি এক বার কল্পনা করুনতো। কেউ জানে না, বহিস্থ মহাকাশ থেকে কেমন দেখায় পৃথিবীকে। এ অবস্থায় যদি চোখের সামনে এমন একটি ছবি ভেসে আসে, কেমন অনুভূতিটাই না হবে!

মহাকাশ থেকে তোলা পৃথিবীর প্রথম ছবি

এ অনুভূতি তৈরির কাজটিই করলেনযুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর এক দল সৈন্য ও বিজ্ঞানী। নিউ মেক্সিকোর মরুভূমি থেকে তাঁরা মহাকাশে নিক্ষেপ করলেন ভি- ২ রকেট। সাথে দিয়ে দিলেন একটি ৩৭ মিলিমিটারের মোশন পিকচার ক্যামেরা।

রকেটটি ৬৫ মাইল (১০৫ কিলোমিটার) উঁচুতে সাব অরবিটাল উচ্চতা পর্যন্ত ওঠে।

ছবি তোলার পর পৃথিবীতে এসে ধাক্কা খেয়ে নষ্ট হয়ে যায় ক্যামেরাটি। কিন্তু বেঁচে যায় ফিল্ম, আর সেই সাথে বহু আরাধ্য ছবিটিও।

এয়ার আ্যন্ড স্পেস ম্যাগাজিনের মতে,



প্রতি দেড় সেকেন্ডে একটি করে ছবি তুলতে তুলতে ক্যামেরাটি রকেটের সাথে সাথে ওপরে উঠতে থাকে। কয়েক মিনিট পরেই এটি আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে। এ সময় এর বেগ ছিল সেকেন্ডে ৫০০ ফুট। ক্যামেরাটি ধ্বংস হয়ে যায়। তবে স্টিল ক্যাসেটের মধ্যে রক্ষিত ফিল্মটি ঠিকই বেঁচে যায়।





ফ্রেড রালির বয়স তখন ঊনিশ। ফিল্ম উদ্ধারকারী দলের সদস্য ছিলেন তিনিও। ক্যাসেটটিকে অক্ষত অবস্থায় দেখে বিজ্ঞানীদের কী অনুভূতি হয়েছিল তার বর্ণ্না দেন তিনি এভাবে,
ওরা ছিলেন আনন্দে উচ্ছসিত। বাচ্চাদের মতো লাফাচ্ছিলেন তাঁরা। 

১৯৪৬ সালের আগে সর্বোচ্চ ১৩.৭ মাইল উপর ঠেকে পৃথিবীর ছবি তোলা সম্ভব হয়েছিল। সেটি ১৯৩৫ সালের ঘটনা। কাজটি করা হয়েছিল এক্স্প্লোরার ২ বেলুনের মাধ্যমে। পৃথিবীর পৃষ্ঠের বক্রতা বুঝতে পারার জন্যে এই উচ্চতা থেকে তোলাই ছবিই ছিল যথেষ্ট। ভি- ২ ক্যামেরা পৌঁছে এর পাঁচ গুণেরও বেশি উচ্চতায়।


ক্যামেরাটির নির্মাতা ক্লাইড হলিডে বলেন,
ভি- ২ এর ছবিগুলো থেকে আম্রা প্রথম বারের জানতে পারলাম, অন্য গ্রহ থেকে আসা দর্শকরা পৃথিবীকে কেমন দেখবে। 
একটি বিষয় কিন্তু গুলিয়ে ফেলবেন না। এই রকেট কিন্তু পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘোরেনি। এটি সোজা ওপরের ওঠে আবার নিচে নেমে এসেছে। প্রথম বারের মতো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে পারার কৃতিত্ব হল স্পুটনিক ১ এর।

আরও পড়ুনঃ

ইতিহাসে এই দিনঃ মহাশূন্যে প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ

১৯৪৬ সালের পরে আরও বশি উচ্চতা থেকে ছবী তোলাটা একটা ট্রেন্ড হয়ে যায়। ছয় মাস পরেই তোলা হয় আরেকটি ছবি। ১৯৪৭ সালের মার্চে তোলা ছবিটি নেওয়া হয়েছিল ১০১ মাইল উপর থেকে।


১৯৪৭ সালে মার্চে তোলা ছবি, ১০১ মাইল উপর থেকে। 

সূত্রঃ 
১। আর্থ স্কাই ডট অর্গ
Category: articles

শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৬

লিখেছেনঃ রাকিব হাসান। শিক্ষার্থী, রংপুর মেডিকেল কলেজ। 

অামি ফোটন। এই মহাবিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতর কণিকাগুলোর একটি। অামরা বোসন শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অাকারে ক্ষুদ্রতর হলেও গতিতে অামরাই সেরা। জন্মলগ্ন থেকেই অামরা ছুটে চলেছি এক অবিশ্বাস্য গতিতে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার। অামাদের কোনো ভর নেই, তাই অামাদের জীবনকালও অনন্ত। অামরাই এই অন্ধকার মহাবিশ্বকে অালোকিত করেছি, পৃথিবীকে করেছি জীবন্ত।

মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে অামরা প্রতিনিয়ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বহন করে চলেছি। অামাদের যাত্রাকালের কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। অামরা কোটি কোটি বছর মহাশূন্যে ভ্রমণ করতে পারি, পাড়ি দিতে পারি কোটি কোটি অালোকবর্ষ দূরত্ব। মহাবিশ্বের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে অামাদের বিচরণ। অামাদের জন্মও হয়েছে বিভিন্ন সময়ে মহাবিশ্বের বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

ফোটন কণার আকৃতি। সূত্রঃ ফিজিক্সসেন্ট্রাল

উদাহরণস্বরূপ, অামার জন্ম হয়েছিল সূর্যের কেন্দ্রে, এক জটিল ফিউশন বিক্রিয়ার ফলে। সূর্যের কেন্দ্রে প্রচন্ড তাপমাত্রা ও চাপে হাইড্রোজের পরমাণু থেকে ইলেকট্রন ছিটকে বেরিয়ে যায়, শুধু প্রোটন অবশিষ্ট থাকে। প্রোটনগুলোর সমধর্মী চার্জ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রের প্রচন্ড চাপে দুটি প্রোটন পরস্পরের সন্নিকটে অাসে। এসময় একটি প্রোটন পরিবর্তিত হয়ে নিউট্রনে পরিণত হয় এবং প্রোটন-নিউট্রন মিলে ডিউটেরিয়াম পরমাণু গঠন করে। এই ডিউটেরিয়াম পরমাণুর সাথে অাবারও প্রোটনের ফিউশন বিক্রিয়ায় প্রথমে হিলিয়াম-৩ এবং পরবর্তীতে হিলিয়াম-৪ পরমাণু গঠিত হয়। এই বিক্রিয়াকে প্রোটন-প্রোটন চেইন বিক্রিয়া বলা হয়, যা অত্যন্ত ধীর গতির একটি বিক্রিয়া এবং ফোটনের অন্যতম প্রধান উৎস। অামার জন্মও হয়েছিল এই বিক্রিয়া থেকেই।

জন্মের পর সূর্যের কেন্দ্র থেকে বিকিরণ ও পরিচলন অঞ্চল এবং ফটোস্ফিয়ার (Photosphere) পেরিয়ে এর পৃষ্টভাগে পৌছতে অামার সময় লেগেছে প্রায় এক লক্ষ বছর। এই দীর্ঘ সময় সূর্যের মাঝেই অাটকে ছিলাম। সূর্যের কেন্দ্রে প্রতি সেকেন্ড শত কোটি বার বিভিন্ন পরমাণুর সাথে সংঘর্ষ হত। অামাদের প্রত্যেককেই এভাবে সূর্যের কেন্দ্র থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজে নিতে হয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর অবশেষে অামি সফল হয়েছি।

অাজ অামি মুক্ত, স্বাধীন। বিশাল মহাবিশ্বে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছি। এই যাত্রার কোনো শেষ নেই। এভাবেই ছুটে বেড়াবো মহাবিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। শত শত কোটি বছর যাত্রা করে হয়ত একদিন পৌছে যাবো দূরের কোনো এক গ্রহে, যেখানে মানুষের মতোই কেউ একজন অপেক্ষায় থাকবে অামার কাছ থেকে সূর্যের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের অাশায়। ততদিনে হয়ত সৌরজগতের চিত্র পুরোপুরি বদলে যাবে। বদলে যাবে মহাবিশ্বের বর্তমান রূপ। অার এই বদলে যাওয়া মহাবিশ্বের তথ্য নিয়েই অামার মত অগণিত ফোটন মহাবিশ্বে ছুটে বেড়াবে। মহাবিশ্বের বর্তমান রূপ অামাদের মাঝে অতীত হিসেবে বিদ্যমান থাকবে, কারণ অামরাই মহাবিশ্বের অাত্মজীবনী।
Category: articles

বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ১৯ অক্টোবর।
১৯১০ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন উপমহাদেশীয়- মার্কিন জ্যোতির্পদার্থবিদ সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখর।

তিনি নক্ষত্রের বিবর্তন ও তাত্ত্বিক কাঠামো নিয়ে গবেষণার জন্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। ভারী নক্ষত্রদের জীবনের শেষের দিকের অবস্থা নিয়ে তিনি বিশেষভাবে কাজ করেছেন. হিসাব করে বের করেছেন চন্দ্রশেখর সীমা (Chandrasekhar limit)। এই সীমা হচ্ছে শ্বেত বামন নক্ষত্রদের সর্বোচ্চ ভরের পরিমাপ। ১৯৮৩ সালে বিজ্ঞানী উইলিয়াম ফাউলারের সাথে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন তিনি। বহু তাত্ত্বিক বিষয়ে অবদান রাখলেও তাঁর নোবেল পেতে ভূমিকা রেখেছে তাঁর প্রাথমিক জীবনের কাজগুলোই।
চন্দ্রশেখর 
পুরো নাম পদ্ম বিভূষণ সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখর। ১৯১০ সালের ১৯ অক্টোবর তারিখে লাহোরের (বর্তমান পাকিস্তান) একটি তামিল হিন্দু পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন ইন্ডিয়ান রেলওয়ের হিসাবরক্ষক। পাশাপাশি ছিলেন ভায়োলিন ও মিউজিকোলজিস্ট। মাও ছিলেন শিক্ষিতা মহিলা। বলা হয় তাঁর মা-ই প্রথম জীবনে তাঁর মধ্যে জ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করেন। অন্য দিকে তাঁর চাচা চন্দ্রশেখর ভেংকট রমনও ছিলেন বিখ্যাত পদার্থবিদ, যিনি আলোর বিক্ষেপণ ও রমন ক্রিয়া আবিষ্কারের জন্যে ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন।

প্রাথমিক জীবনে চন্দ্রশেখর বাসায় বসেই পড়াশোনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে মাদ্রাজের কাছে হিন্দু হাই স্কুলে ভর্তি হন। এখানে ১৯২২ থেকে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত কাটিয়ে দেন। গুণধর চাচার পথ অনুসরন করে এরপরে চলে আসেন মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সি কলেজে। এখানে কাটান ১৯২৫ থেকে ১৯৩০ সালা নাগাদ। ১৯৩০ সালে অর্জন করেন বিএসসি ডিগ্রি। একাডেমিক সাফল্যের কল্যাণে ভারতীয় সরকারের বৃত্তি নিয়ে চলে যান ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভর্তি হন ট্রিনিটি কলেজে। এখানে র‍্যালফ ফাউলারের রিসার্স সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন। আরেক ক্যামব্রিজ প্রফেসর পল ডিরাকের পরামর্শে এক বছর কাটিয়ে আসেন কোপেনহেগেনে। এখানে তিনি ইনস্টিটিউট অব থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স প্রতিষ্ঠানে নিলস বোরের সাথে কাজ করার সুযোগ পান।

১৯৩৩ সালেই ক্যামব্রিজ থেকে পিএইচডি পেয়ে যান। ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত ট্রিনিটি কলেজে প্রাইজ ফেলোশিপ পদে নির্বাচিত থাকেন। এ সময়েই তাঁর সাথে পরিচয় হয় জ্যোতির্পদার্থবিদ স্যার আর্থার এডিংটন ও আর্থার মিলনের সাথে। ১৯৩৬ সালে বিয়ে করেন ললিতা দোরাইস্বামীকে। মৃত্যু পর্যন্ত তাঁরা এক সঙ্গেই কাটিয়ে দেন।

সবচেয়ে বড়ো সাফল্যটি সম্ভবত চন্দ্রশেখর তাঁর প্রথম জীবনেই পেয়ে যান। তখন তিনি ট্রিনিটি কলেজের তরুণ ফেলো। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৫ সালের মধ্যে তিনি 'চন্দ্রশেখর লিমিট' সম্পর্কে অনেকগুলো পেপার প্রকাশ করেন। কাজ শুরু করেন তাঁর গুরু র‍্যালফ ফাউলারের করা কাজ থেকে। ইলেকট্রন ডিজেনারেসি প্রেসারের কারণে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ ভরের অঘূর্ণনশীল বস্তু মহাকর্ষের কারণে গুটিয়ে যাওয়া থেকে নিস্তার পেতে পারে তা তিনি হিসাব করেন। এই সীমাই হচ্ছে শ্বেত বামন নক্ষত্রের সর্বোচ্চ ভর। অন্য কথায়, এটিই হচ্ছে সর্বোচ্চ ভর, যা অতিক্রম করে গেলে একটি নক্ষত্র শ্বেত বামন না হয়ে সুপারনোভা বিস্ফোরণের পরে নিউট্রন স্টার বা ব্ল্যাক হোল হয়ে যাবে। তিনি হিসাব করে এই ভর পেলেন ১.৪৪ সৌর ভরের সমান (সূর্যের ভরের ১.৪৪ গুণ)।

তিনি প্রথম তাঁর চন্দ্রশেখর সীমা প্রকাশ করলে আর্থার এডিংটন এর তীব্র বিরোধীতা করেন। আইনস্টাইনও মানতে অস্বীকার করলেন যে চন্দ্রশেখরের প্রাপ্ত ফলাফলের কারণে কোনো নক্ষত্র গুটিয়ে একটি বিন্দুর সমান (ব্ল্যাক হোল) হয়ে যেতে পারে। ইউরোপের কোনো প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীই চন্দ্রশেখরের কথা আমলে নিলেন না। এর প্রধান কারণ, এডিংটনের মতো বিজ্ঞানী যে মতের বিরোধীতা করেছেন তা মেনে নেওয়া ঠিক হবে না। তিনি কিঞ্চিত হতাশ হলেন। এও বুঝলেন, কোনো ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী পোস্ট পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ।

তাই ১৯৩৭ সালে যখন আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহকারী অধ্যাপক পদের প্রস্তাব পেলেন, আর অপেক্ষা করলেন না। ক্যামব্রিজ ত্যাগ করে পাড়ি জমালেন আমেরিকায়। পুরো ক্যারিয়ার কাটিয়ে দেন এখানেই- পুরো ৫৮ বছর। ১৯৪২ সালে হন সহযোগী অধ্যাপক, ১৯৪৪ সালে পূর্ণ অধ্যাপক। ১৯৪৭ সালে তাঁকে থিওরিটিক্যাল অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের ডিস্টিংগুইশড সার্ভিস প্রফেসর বানানো হয়। ১৯৮৫ সালে হন এমেরিটাস প্রফেসর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়েরকিস পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে তিনি কিছু কাজ করেন। নাসার অ্যাস্ট্রোফিজিক্স অ্যান্ড স্পেইস ল্যাবেও করেন কিছু কাজ। এই ল্যাবটি ১৯৬৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মেরিল্যান্ডের ব্যালিস্টিক রিসার্চ ল্যাবে কাজ করেন। ১৯৫৩ সালে আমেরিকার নিয়মিত নাগরিক হন।

চন্দ্রশেখরের জীবনকে কিছু সুনির্দিষ্ট পর্বে ভাগ করা যায়। এর প্রতিটি পর্বে তিনি একটি বই বা মনোগ্রাফ লিখেছেন। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত গবেষণা করেন নক্ষত্রের গঠন নিয়ে। বিষেশভাবে কাজ করেন শ্বেত বামন (White dwarf) নক্ষত্রদের নিয়ে। এই গবেষণাকে কেন্দ্র করেই ১৯৩৯ সালে লিখেন অ্যান ইনট্রোডাকশন টু দি স্টাডি অব স্টেলার স্ট্রাকচার বইটি।
১৯৩৯ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত মেতেছিলেন নক্ষত্রের ডাইন্যামিক্স বা গতিবিদ্যা (Stellar dynamics) নিয়ে। ১৯৪২ সালে প্রকাশিত হয় বই প্রিনসিপালস অব স্টেলার ডাইন্যামিক্স। এরপর নজর দেন বিকিরণগত স্থানান্তরের দিকে (Radiative transfer)। ১৯৪৩ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত কাজ করেন হাইড্রোজেনের ঋণাত্মক আয়নের কোয়ান্টাম তত্ত্ব নিয়ে। ১৯৫০ সালে লিখেন আরেকটি বই, রেডিয়েটিভ ট্রান্সফার
১৯৫০ থেকে ১৯৬১ সাল নাগাদ কাজ করেন হাইড্রোডাইন্যামিক ও হাইড্রোম্যাগনেটিক স্টেবিলিটি নিয়ে। এ শিরোনামেই ১৯৬১ সালে বইও প্রকাশ করেন। ১৯৬০ এর দশকে কাজ করেন ইলিপসয়ডাল ফিগারের সাম্যবস্থা নিয়ে। উপবৃত্তের (Ellipse) ত্রিমাত্রিক অবস্থাকে ইলিপসয়েড বলে। এ নিয়ে প্রকাশিত তাঁর বইটি হল ইলিপসয়ডাল ফিগারস অব ইকুলিব্রিয়াম। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে।তিনি সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়েও কাজ করেছেন।
১৯৭১ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন ব্ল্যাক হোলের গাণিতিক তত্ত্ব নিয়ে। ১৯৮৩ সালে এ নিয়েও বই লিখেন। আগের মতোই গবেষণার বিষয়বস্তুর সাথে বইয়ের নামের দারুণ মিল, দি ম্যাথমেটিক্যাল থিওরি অব ব্ল্যাক হোলস। আশির দশকের শেষের দিকে কাজ করেন মহাকর্ষ তরঙ্গের উপরিপাতন নিয়ে।
আরো পড়ুনঃ
☛ ব্ল্যাক হোলের গভীরে
☛ মহাকর্ষ তরঙ্গঃ কী, কীভাবে?

১৯৪৪ সালে তিনি রয়েল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স এর সম্মানসূচক সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।
সারা জীবনে অনেকগুলো প্রাইজ ও পদক পেয়েছেন তিনি। ১৯৫২ সালে পান ব্রুস মেডাল। ১৯৫৩ সালে পান রয়েল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোয়াসিটির গোল্ড মেডাল। ১৯৬৭ সালে তাঁকে সম্মানীত করা হয় ন্যাশনাল মেডাল অব সায়েন্স দিয়ে। ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ, ১৯৭১ সালে হেনরি ড্রেপার এবং ১৯৮৪ সালে কোপলে মেডাল অব রয়েল সোসাইটি পদক লাভ করেন।
১৯৮৩ সালে পান ফিজিক্সে নোবেল প্রাইজ। তিনি নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করলেও একটু মন খারাপ করেন। এর কারণ হল, অবদান হিসেবে শুধু তাঁর প্রথম জীবনের কিছু কাজকেই বিবেচনা করা হয়েছে। নক্ষত্রের বিবর্তন ও গঠন প্রক্রিয়ার ভৌত প্রসেস নিয়ে তাত্ত্বিক গবেষণাকে তাঁর অবদান হিসেবে দেখানো হয়েছিল। তাঁর কাছে মনে হয়েছিল, এতে করে তাঁর বাকি সব গবেষণাকে খাটো করা হয়েছে। আসলেও তাই মনে হবার কথা।
১৯৯৫ সালের ২১ আগস্ট তারিখে তিনি হৃদযন্ত্রের সমস্যার কাছে হার মেনে পরলোকে পাড়ি জমান। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৪ বছর। তখনো তাঁর স্ত্রী বেঁচে ছিলেন, যিনি ১০২ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকেন।
-০-
পরিভাষাঃ
মনোগ্রাফঃ একটি বিশেষায়িত বিষয় বা তার একটি অংশ নিয়ে গবেষণার বিস্তারিত লিখিত রূপ।

সূত্রঃ
১। http://www.physicsoftheuniverse.com/scientists_chandrasekhar.html
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Subrahmanyan_Chandrasekhar
Category: articles

রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬

কাঁকড়া নেবুলা 

১০৫৪ সালে পৃথিবী থেকে পাঁচ হাজার আলোকবর্ষ দূরে একটি সুপারনোভার বিস্ফোরণ ঘটে। চীন দেশে একে দেখার কথা লেখা আছে। এত দূরের থাকার পরেও বহু মাস ধরে একে খালি চোখে দেখা গিয়েছিল। এটি এত বেশি উজ্জ্বল ছিল যে একে দিনের বেলায়ও দেখা যেত। রাতের বেলায় এর আলোতে বই পড়া যেত। এটি যদি এর দশ ভাগের এক ভাগ অর্থ্যাৎ, পাঁচশ আলোকবর্ষ দূরে থাকত তবে এটি একশ গুণ উজ্জ্বল হত। সেক্ষেত্রে রাত আর দিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকত না। এই বিস্ফোরণের তীব্রতা পৃথিবীতে আলো প্রদানের ক্ষেত্রে সূর্যের সাথে পাল্লা দিতে পারত, যদিও সূর্য এর চেয়ে কোটি কোটি গুণ কাছে।

এ সুপারনোভার অবশিষ্টাংশকেই আমরা এখন কাঁকড়া নীহারিকা (Crab nebula) নামে চিনি।

সূত্রঃ
আ ব্রিফার হিস্টরি অব টাইম
অনুবাদঃ আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ 
Category: articles

রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬

একটি নক্ষত্র মৃত্যুমুখে পতিত হবার পরের একটি দশা হল রেড জায়ান্ট বা লোহিত দানব (Red giant) অবস্থা। আরও কয়েকশো কোটি বছর পর আমাদের সূর্যও এই দশায় পৌঁছবে। এ সময় এটি প্রসারিত হয়ে কয়েকটি গ্রহকে গিলে ফেলবে। পৃথিবী এর সেই থাবা থেকে বাঁচবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে না বাঁচলেও সেটা যেহেতু কয়েকশো কোটি বছর পরের ঘটনা, তাই আপাতত দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।

প্রসারণশীল লোহিত দানব তারকারা নিকটে অবস্থিত বেশি কিছু গ্রহকে (যদি থাকে) গিলে খেতে পারে। সূর্যও গিলে ফেলবে বুধ ও শুক্র গ্রহকে। পৃথিবীর পরিণতি অনিশ্চিত। 
আরো পড়ুন
☛ নক্ষত্রের পরিচয়

লোহিত দানব তৈরিঃ

বর্তমানে মহাবিশ্বের অধিকাংশ নক্ষত্র প্রধান ধারা (main sequence stars) দশায় আছে। এরা নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি করছে। এদের ভর হতে পারে সূর্যের তিন ভাগের এক ভাগ থেকে আট গুন পর্যন্ত। এই দশায় থাকা অবস্থায় এতে দুটো বিপরীতধর্মী চাপ কাজ করে। একটি হল মহাকর্ষের চাপ, যেটা কাজ করে ভেতরের দিকে ও নক্ষত্রকে গুটিয়ে ফেলতে চায়। আরেকটি হল ফিউশন বিক্রিয়ার ফলে বাইরের দিকে ক্রিয়াশীল চাপ। প্রধান তারার নক্ষত্রে এই দুই চাপ একে অপরকে ঠেকিয়ে রাখে। কিন্তু হাইড্রোজেন ফুরিয়ে গেলে ফিউশন যায় শেষ হয়ে। এ সময় নক্ষত্রটি গুটিয়ে ঠিকই ছোট হয়ে যেতে থাকে।

গুটিয়ে সঙ্কুচিত হবার ফলে এর তাপমাত্রাও বাড়তে থাকে। এক সময় হিলিয়ামের ফিউশন ঘটে তৈরি হয় কার্বন। হিলিয়ামের ফিউশন ক্রমানুসারেও ঘটতে পারে, আবার সেটা ঘটতে পারে হঠাৎ একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমেও। এই ফিউশনের সময় প্রস্তুত শক্তির প্রভাবে নক্ষত্রটি এর প্রাথমিক আকার থেকে বহু গুন পর্যন্ত প্রসারিত হয়ে যায়।

লোহিত দানব তারাদের ব্যাস (এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তের দূরত্ব) দশ থেকে একশো কোটি পর্যন্ত হতে পারে (মাইলের হিসাবে এই পরিমাণ হল ৬.২ কোটি থেকে প্রায় ৬২ কোটি)। এ সময় এরা সূর্যের বর্তমান আকারের একশো থেকে এক হাজার গুন পর্যন্ত বড় হতে পারে। এর শক্তি অনেক বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে থাকে বলে পৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে যায়। নেমে আসে ২, ২০০ থেকে ৩, ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। বর্তমানে সূর্যের পৃষ্ঠ তাপমাত্রা এর দ্বিগুণের চেয়ে খানিকটা বেশি। তাপমাত্রার এই পরিবর্তনের ফলে নক্ষত্রটির আলোর বিকিরণ বর্ণালীর লাল অংশে চলে আসে। এর ফলেই এদের নাম হয়েছে লোহিত দানব। আকার বড় হয়ে যায় বলেই দানব বিশেষণ পাওয়া। অবশ্য নামে লোহিত হলেও অনেক সময় এদের মধ্যে কিছুটা কমলা রঙের ছটা থাকে।

অপূর্ব সুন্দর এই নেবুলার অবস্থান বিটলজুস নক্ষত্রের  চারপাশে। 


আরো পড়ুন
☛ সূর্যের তাপমাত্রা কত? 

রেড জায়ান্ট অবস্থায় তারকারা টিকে থাকে কয়েক হাজার থেকে একশো কোটি বছর পর্যন্ত। এক সময় এর কেন্দ্রের হিলিয়াম যায় ফুরিয়ে। ফলে ফিউশনও যায় থেমে। এটি আবারও সঙ্কুচিত হতে থাকে। হিলিয়ামের নতুন খোলস কেন্দ্রে পৌঁছা পর্যন্ত এই সঙ্কোচন চলতে থাকে। হিলিয়াম জ্বলে উঠলে নক্ষত্রের বাইরের স্তর বিস্ফোরিত হয়ে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও ধূলির মেঘ তৈরি হয়।

কেন্দ্র আরও বেশি গুটিয়ে যেতে থাকে। সূর্যের মতো ছোট নক্ষত্রদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে শ্বেত বামন (white dwarf) হিসেবে। আরো বেশি ভরের নক্ষত্রদের সঙ্কোচন চলতেই থাকে। এক সময় এরা সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাইরের অংশ ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

সূত্র
১।http://www.space.com/22471-red-giant-stars.html
Category: articles

শুক্রবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৬

গ্রহদের সম্পর্কে মৌলিক কিছু কথা জেনে নিই এ মাসে।  আমাদের সৌরজগতে গ্রহের সংখ্যা আট হলেও আমরা খালি চোখে দেখতে পাই পাঁচটিকে। এরা হল বুধ, শুক্র (একেই আমরা আদর করে শুকতারা বা সন্ধ্যাতারা বলে ডাকি অনেক সময়), মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি। সব সময় এদের পাঁচজনকে একত্রে দেখা যায় না। গত সেপ্টেম্বর মাসে সর্বশেষ এদের সবাইকে এক সাথে (একই রাতে) দেখা গিয়েছিল।

Photo Credit:  Predrag Agatonovic


শুক্র গ্রহঃ

এ মাসে গ্রহদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে শুক্র (সন্ধ্যাতারা), মঙ্গল ও শনিকে। চাঁদের পরেই রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল বস্তু শুক্র। সূর্য ডুবতে না ডুবতেই এটি হাজির হয়ে যাবে পশ্চিম আকাশে, সোজা পশ্চিম থেকে সামান্য দক্ষিণে। দৃষ্টিশক্তি খুব ভালো হলে একে সূর্য পুরোপুরি ডোবার আগেই দেখবে। মাসের শুরুতে এটি সন্ধ্যার পর এক ঘণ্টা দিগন্তের উপরে থাকবে। সুখবর হল, দিন গড়াতে গড়াতে এ সময়ের পরিমাণ ক্রমশ বাড়তে থাকবে। তার মানে তখন একে দেখতে পাবেন বেশি সময় ধরে।

আজকের আকাশঃ চাঁদ ও শুক্র গ্রহ
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তোলা ছবি। ক্রেডিটঃ আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ।
 
 
মঙ্গল ও শনি গ্রহঃ

শুক্র থেকে সামান্য বাঁয়ে ঘুরুন। দক্ষিণ- পশ্চিম আকাশে আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে আরো দুটি উজ্জ্বল গ্রহ। এরা হল মঙ্গল ও শনি। মাসের ছয় তারিখে চাঁদ থাকবে শনির একটু উপরে। পরের দিন চাঁদ চলে আসবে শনি ও মঙ্গলের প্রায় মাঝামাঝি অবস্থানে। মাসের শুরুতে শনি অস্ত যাবে সূর্যের প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে। মাস পেরোতে পেরোতে এ সময় দ্রুত কমতে থাকবে। মাসের শেষে এটি সন্ধ্যার পরে দিগন্তের উপরে থাকবে এক ঘণ্টারও কম সময়।
তবে মঙ্গলকে দেখতে পাবেন আরো বেশি সময় ধরে। এটি প্রায় পুরো মাস জুড়েই সন্ধ্যার পরে চার ঘণ্টার মতো সময় পর্যন্ত আকাশে থাকবে। আগেই বলেছি, দূরবর্তী তারাদের সাপেক্ষে গ্রহরা কখনও পশ্চিমে আবার কখনোবা পূর্ব দিকে চলে। কয়েক রাত ধরে মঙ্গলের উপর চোখ রাখলেই বিষয়টি ধরে ফেলতে পারবেন। এই মঙ্গলের ক্ষেত্রেই এই ব্যাপারটি সবচেয়ে সহজে চোখে পড়ে। এমনকি মূলত মঙ্গলের চলাচল লক্ষ্য করেই জ্যোতির্বিদ টাইকো ব্রাহে যে উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলেন তার ভিত্তিতেই জোহানেস কেপলার গ্রহদের গতি সূত্র বানিয়েছিলেন।


D:\articles\biggan chinta\sky-this-month\Oct 16\planets-oct-16-2.PNG
অক্টোবর মাসের চার গ্রহ এক সাথে


বুধ ও বৃহস্পতিঃ
অপর দুই গ্রহ বুধ ও বৃহস্পতির জন্যে এ মাসে তেমন কোনো সুখবর নেই। বুধকে মাসের শুরুতে ভোরের পূর্ব আকাশে কিছুক্ষণের জন্যে দেখা গেলেও দ্রুত সেটি সূর্যের আভার কাছে হারিয়ে যাবে। শেষ দিকে আর দেখাই যাবে না। বৃহস্পতিকে মাসের শুরুতে দেখাই যাবে না। তবে মাসের শেষের দিকে এটি সূর্যের এক ঘণ্টারও বেশি আগেই পূর্ব দিগন্তে হাজির হবে। ক্রমশ এ সময় বাড়তেই থাকবে। শুক্রের পরেই রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম বস্তু হল বৃহস্পতি। উজ্জ্বল গ্রহদের মধ্যে একেই একটানা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে দেখা যায়। আগামী মাসগুলোতে এটি ক্রমশ দ্রুত উদিত হতে থাকবে। নভেম্বরের শুরুতেই এটি সূর্যোদয়ের দুই ঘণ্টা আগে উঠবে। ফলে আপাতত অনুজ্জ্বল হলেও বৃহস্পতির ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল।

Category: articles
আজ ৭ অক্টোবর। ১৮৮৫ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ নিলস বোর। ড্যানিশ এই পদার্থবিজ্ঞানীর কল্যাণেই পরমাণুর মৌলিক গঠন উদঘাটিত হয় এবং ভিত্তি স্থাপিত হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের

নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী নিলস বোর

বিশেষ করে তিনি পরমাণুর জন্যে বোর মডেল প্রস্তুত করেন। পরে আবার তৈরি করেন লিকুইড ড্রপ মডেল। কোপেনহেগেন থাকার সময় অসংখ্য পদার্থবিদ তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পেতেন। একত্রে কাজও করেছেন অনেকের সাথে। এখানে থাকা অবস্থায়ই হাইজেনবার্গের সাথে মিলে তিনি কোয়ান্টাম তত্ত্বের কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা (Copenhagen interpretation) তৈরি করেন। বিংশ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী এই বিজ্ঞানী ১৯২২ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, পরমাণুর গঠন ও তা থেকে নির্গত বিকিরণ নিয়ে গবেষণার জন্যে।

নিলস বোর ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ১৮৮৫ সালের ৭ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বোরের বাবা একজন অধ্যাপক ছিলেন এবং কোপেনহেগেনের সম্ভান্ত্র পরিবারগুলোর মাঝে বোরের পরিবার ছিল অন্যতম। বোরের পরিবারের সবাই ছিলেন বিদ্যানুরাগী। তাঁর ছোট ভাই হ্যারাল্ড বোরও পরবর্তীতে একজন দক্ষ গণিতবিদ হয়েছিলেন। বোরের বাবার কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরীর করাতে বাল্যকালে বোর কিছুটা সুবিধা পেয়েছিলেন। ১৯০৩ সালে তিনি বাবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও দর্শনে ভর্তি হন। কিন্তু ১৯০৫ সালে বোর তরলের পৃষ্ঠটানের উপর একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেন, যা সবার মনোযোগ কাড়ে। তিনি পুরস্কৃতও হন এর জন্যে। এর পরেই বোর গণিত ও দর্শন ছেড়ে ঢুকে পড়েন পদার্থবিদ্যার জগতে। কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই ১৯১১ সালে বোর তাঁর ডক্টরেট থিসিস সম্পন্ন করেন। পরবর্তী গবেষণার জন্য ডেনমার্ক ছেড়ে বোর ১৯১১ সালে ইংল্যান্ডে যান এবং সেখান থেকেই তাঁর চমক দেখানোর শুরু।

চাপা স্বভাবের বোর ছোটবেলায় ভাষা শিখতে অনেক দেরী করে ফেলেছিল বলে ড্যানিশ ভাষা পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে পারেননি। আবার পড়ালেখার জন্য ইংরেজী শিখলেও ইংরেজী ভাষার শব্দ জ্ঞান তাঁর ছিল খুব সীমিত। ইংল্যান্ডে আসার পর ক্যামব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে স্যার জে.জে. থমসনের অধীনে গবেষণা শুরু করলেও তা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। থমসনের উদাসীনতা বোরকে ভীষণভাবে হতাশ করলেও ম্যানচেস্টারে বিজ্ঞানী রাদারফোর্ডের সঙ্গ বোরকে অনেক উৎসাহ- অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। পরবর্তীতে মহান শিক্ষক রাদারফোর্ডের অধীনে ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে বোর গবেষণা শুরু করেন।

ক্যাভেন্ডিস ল্যাবরেটরিতে থাকাকালীন আইসোটোপ, তেজস্ক্রিয়তার ভাঙন সুত্র এবং পর্যায় সারণী নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেন। ১৯১১ সালে আলফা- কণা বিক্ষেপণের ফলাফলের উপর নির্ভর করে রাদারফোর্ড তার পরমাণু মডেল প্রকাশ করলে এতে অনেক সীমাবদ্ধতা দেখা যায়। বোর সেগুলোর কয়েকটি সমাধান করতে পেরেছিলেন। কিন্তু, তিনি রাদারফোর্ডকে তা বোঝাতে অক্ষম হন। ১৯১২ সালে বোর কোপেনহেগেনে ফিরে আসেন এবং জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি মার্গ্রেথকে বিয়ে করেন। বোর- মার্গ্রেথ দম্পতির পরবর্তীতে ৬টি সন্তান- সন্তুতি হয়েছিল, যাদের মাঝে ২ জন নাবালক অবস্থায় মারা গেলেও বাকি ৪ জন পিতার মতোই বিভিন্ন শাখায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন। তন্মধ্যে, বোরের সন্তান অউ নিলস বোর ১৯৭৫ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কারও লাভ করেন।

১৯১২ সালের গ্রীষ্মকালে ছুটি কাটানোর সময় বোর রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল থেকে চিরায়ত বলবিদ্যাকে বিদেয় করে তাতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রয়োগ করেন। তার স্ত্রী মার্গেথ এই সময় বোরকে তার গবেষণাপত্র (scientific paper) তৈরিতে খুব সহায়তা করেন। বোরের গবেষণাপত্রগুলো মূলত তার স্ত্রী মার্গেথেরই লেখা। মার্গেথ তার স্বামীর কথা বোঝার চেষ্টা করতেন এবং তা লিখে রাখতেন। ১৯১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে বোর পরমাণু সম্পর্কে এমন ৩টি অনুমান করেন, যা দ্বারা রাদারফোর্ডের অস্থায়ী পরমাণু, পরমাণুর ভৌতিক(?) বর্ণালীসহ নানা সমস্যা সমাধান করা যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে বোরের সেই অমর কর্ম- ‘পরমাণুতে ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে যেকোনো ব্যাসার্ধে ঘুরতে পারে না, শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট অনুমোদিত(কোয়ান্টায়িত) কক্ষপথেই ঘুরে’ এই সময়েই প্রকাশ পায়। বোরের দেওয়া পরমাণুর এই চিত্র বোরের কোয়ান্টাম পরমাণু মডেল নামে পরিচিত।

১৯২১ সালে বোর কোপেনহেগেন তত্ত্বীয় পদার্থবিদ সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। জীবনের বাকি সময় তিনি এর পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২৬- ২৭ সালে এই সমিতিতেই হাইজেনবার্গ বোরের অধীনে কাজ করেন এবং প্রদান করেন তাঁর বিখ্যাত অনিশ্চয়তা নীতি। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সূতিকাগার ছিল মূলত তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই সমিতিটিই। আলোর দ্বৈত ধর্ম, কোয়ান্টাম বলবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে বোরের এই সমিতির অবদান অনস্বীকার্য।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জার্মানি ডেনমার্ক আক্রমণ করলে বোর এর প্রতিবাদ করেন এবং নাৎসিবিরোধি মনোভাবের কারণে জার্মানদের রোষানলে পড়েন। ১৯৪৩ সালে বোর দেশত্যাগে বাধ্য হয় এবং সুইডেন হয়ে ইংল্যান্ড গমন করেন। এইসময় বোর নিউক্লিয়ার ফিশান এবং ইউরেনিয়াম- ২৩৫ নিয়ে কাজ করেন। তিনি সারাজীবনই পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ছিলেন। তবে আমেরিকায় ম্যানহাটন প্রজেক্টে ধীরে ধীরে তিনি জড়িয়ে পড়েন এবং আণবিক বোমা তৈরির এই প্রকল্পে একজন সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবে পদোন্নতি পান। এইসময় বোর ছদ্মনাম হিসেবে নিকোলাস বেকার নাম গ্রহণ করেন। তবে বোর আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও সোভিয়েতের সাথে প্রকাশ্যে আলাপ চালাতে শুরু করেন পারমাণবিক শক্তির অপব্যবহার রোধের জন্য। এই কারণে বোরকে নিরাপত্তার ঝুঁকি মনে করে আমেরিকা থেকেও বের করে দেয়া হয়।

বোর ১৯৪৭ সালে বীরের বেশে দেশে ফিরে আসেন। তাকে ডেনমার্কের সর্বোচ্চ পদক অর্ডার অব দি এলিফ্যান্ট প্রদান করা হয়। জীবনের শেষ দিকে এসে তিনি রয়্যাল ড্যানিশ একাডেমির সভাপতি ছিলেন। শেষ বছরগুলোতে বোর তার গবেষণা বন্ধ করে দিলেও নিউক্লিয়ার শক্তির অপব্যবহার রোধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। ১৯৫০ সালে জাতিসংঘে শান্তির পক্ষে তার খোলা চিঠিটি তার শান্তি আন্দোলনে স্মরণীয় একটি পদক্ষেপ।

বোর কোপেনহেগেনেই ১৯৬২ সালের ১৮ নভেম্বর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তখন তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। নিলস বোরের স্ত্রী মার্গ্রেথ আরো প্রায় ২০ বছর জীবিত ছিলেন।

নিলস বোরের পরমাণু ও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর কাজ বিজ্ঞানের সকল শাখায় যে কত বড় অবদান রেখেছে তা কল্পনাতীত। আইনস্টাইনের একটা উক্তির অংশবিশেষ দিয়েই শেষ করছি।
'বোর  না থাকলে পরমাণু সম্পর্কে যে আমরা কতটুকু জানতে পারতাম তা কেউই জানে না।' 
তাঁর ছাত্র থাকাকালীন সময়ের একটি মজার কাহিনী পড়ুন এখানে।

সূত্রঃ
১। http://www.famousscientists.org/niels-bohr/
২। http://www.physicsoftheuniverse.com/scientists_bohr.html
Category: articles

বুধবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৬

ঢাকার আকাশে শুক্র গ্রহ 

ইদানিং পশ্চিম দিগন্তে সন্ধ্যাতারাকে (শুক্র গ্রহ) খুব সহজেই চোখে পড়ে। 
আজ পাশেই আছে চাঁদও। একটি ভুল ধারণা হল সন্ধ্যাতারা সব সময় চাঁদের সাথে থাকে। 
কোনো কোনো সময় সন্ধ্যাতারা পশ্চিম আকাশে থাকে, আবার কখনো থাকে ভোরের পূবাকাশে, যে সময় এরই নাম হয় শুকতারা। দুই ক্ষেত্রেই এটি দিগন্তের আশেপাশেই থাকে। 
আর চাঁদতো আর তা করে না, ঘুরে বেড়ায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিগন্তের মাঝের পুরো আকাশটাই।

ছবিটি তুলেছেনঃ আব্দুল্যাহ আদিল মাহমুদ

শুক্র গ্রহ নিয়ে আরো পড়ুনঃ

অদ্ভুত এক গ্রহ 
শুক্র গ্রহের পরিচয় 
শুকতারার পরিচয়
শুক্র গ্রহে বসবাস! 
Category: articles

মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬

আজ ৪ অক্টোবর
১৯৫৯ সালের এই দিনে রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) মহাশূন্যে পাঠায় স্পুটনিক ১ নামের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। অনেক মহাকাশ ইতিহাসবিদের মতে প্রকৃতপক্ষে এই দিনেই সূচনা ঘটে মহাশূন্য যুগের।

 
জাদুঘরে রক্ষিত স্পুটনিক ১ এর একটি নকল

এটি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছিল ঘণ্টায় ২৯ হাজার কিলোমিটার (১৮ হাজার মাইল) বেগে। অর্থ্যাৎ, পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসতে সময় লাগত প্রায় ৯৬ মিনিট। এটি ২১ দিন পর্যন্ত সঙ্কেত পাঠানো অব্যাহত রাখে। শেষ পর্যন্ত ২৬ অক্টোবর তারিখে এর ব্যাটারির শক্তি ফুরিয়ে গেলে শেষ হয় সঙ্কেত পাঠানোর কাজ। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এটি কক্ষপথ থেকে ছিটকে গিয়ে প্রবেশ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। কক্ষপথে তিন মাস থাকার সময় এটি ৭ কোটি কিলোমিটার পথ চলাচল করেছিল।

ধাতুর প্রলেপ দেওয়া গোলকীয় যানটির ব্যাস ছিল ২৩ ইঞ্চি বা ৫৮ সেন্টিমিটার। ভর ছিল ৮৩.৬ কেজি। বেতার সঙ্কেত পাঠানোর জন্যে এতে ছিল চারটি রেডিও অ্যান্টেনা। এই সঙ্কেত পৃথিবী থেকে ধরা যেত। খালি চোখে একে দেখা যেতে পুরো পৃথিবী থেকে। একে প্রেরণের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমেরিকার শুরু হয় স্পেস রেস বা মহাশূ্ন্য প্রতিযোগিতা। দুই দেশের ঠাণ্ডা যুদ্ধের অন্যতম অংশ জুড়ে ছিল এই রেসও।

তবে উপগ্রহটি যে শুধু ইতিহাসই সৃষ্টি করেছে তা কিন্তু নয়, এটি বিজ্ঞানীদেরকে অনেক গুরুত্বপুর্ণ তথ্যও সরবরাহ করে।  কক্ষপথে এর চলাচলের পথের প্রকৃতি থেকে উর্ধ্বস্থ বায়ুমণ্ডলের ঘনত্ব জানা সম্ভব হয়। পাওয়া যায় আয়নোস্ফিয়ার সম্পর্কেও তথ্য।

স্পুটনিকের জবাবে মার্কিনিরা পৃথিবীকে কিছু করে দেখাতে মরিয়া হয়ে ওঠে। সাফল্য পেতে খুব বেশি দেরি হয়নি। পরের বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিন তারাও এক্সপ্লোরার ১ নামক তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নিক্ষেপ করে মহাশূন্যে।

তবে রুশরা তার আগেই- স্পুটনিক ১ এর ৩২ দিন পরেই স্পুটনিক ২ কেও পাঠিয়ে দেয় মহাশূন্যে। এবং এতে একটি ছিল প্রাণীও! এটিই ছিল লাইকা নামের সেই কুকুরটি।

সূত্রঃ
১। http://earthsky.org/space/this-date-in-science-launch-of-sputnik-october-4-1957
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_2
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Sputnik_1
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Explorer_1
৫। http://history.nasa.gov/sputnik/
Category: articles
আচ্ছা বলুনতো, গাড়ি কোন পথে চলতে পারে? নিশ্চয়ই সমতল, ঢালু, আকাবাঁকা সব ধরনের পথেই গাড়ি চলবে। উত্তর সঠিক। এবার তাহলে বলুন, গাড়ির ইন্জিন বন্ধ করে দিলে এটি কোথায় কোথায় চলবে? এবার নিশ্চয়ই বলবেন, শুধু ঢালু পথ ধরে উপর থেকে নিচে সেটা হতে পারে। আমি যদি বলি, ঢালু পথে ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখা গাড়িও নিচ থেকে উপরেও উঠতে পারে- এমনকি তা হতে পারে ঘন্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে, তবে কি বিশ্বাস করবেন?

সাধারণত একটি বস্তু নিজে নিজেই ঢালু পথে উপর হতে নিচে নামে। কারণ পৃথিবী অভিকর্ষ বল দ্বারা প্রতিটি বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে টানে। কিন্তু এমনটা অস্বাভাবিক মনে হয় যখন কোনো বস্তু পাহাড়ের ঢালু পথে নিচ থেকে উপরে ওঠে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়াই। আশ্চর্যজনক হলেও আপাত দৃষ্টিতে এমনটি সত্য। এই বিশেষ ধরনের পাহাড়ের নাম গ্র্যাভিটি হিল। এর আরেক নাম ম্যাগনেটিক হিল।



আপাত দৃষ্টিতে দেখে মনে হচ্ছে কোনো শক্তি খরচ না করেই নিচ থেকে উপরে উঠা যাচ্ছে। আসলে কিন্তু এ সাইকেলের আরোহী উপর থেকেই নিচে নামছেন। কিন্তু দৃশ্যপট এমন হয়ে আছে যে উল্টোটাই মনে হচ্ছে। 

অনেকেই একে  রহস্যময় পর্বত বা রহস্যময় স্থান হিসেবে অভিহিত করে থাকেন, এমন কিছু স্থান যেখানে পরিপার্শ্বিক দৃশ্যপট এমন একটি দৃষ্টি বিভ্রম সৃষ্টি করে, যাতে একজন দর্শকের কাছে ঐ স্থানের একটি নিম্মমুখী ঢাল বিশিষ্ট রাস্তাকে উর্ধ্বমুখী ঢালু মনে হতে থাকে। এ সকল স্থানে কোনো গাড়ির গিয়ার বন্ধ করে রাখলেও তা আপনা আপনি চলতে থাকে। এতে করে চালক বা দর্শকের কাছে গাড়িটি উঁচু রাস্তা বেয়ে উঠে যাচ্ছে বলে মনে হয়। অথবা রাস্তায় পানি ঢালা হলে তা গড়িয়ে উঁচু রাস্তায় উঠছে বলে মনে হয়। এই পৃথিবীতে এরকম প্রায় একশ পাহাড় আছে । যেমন কানাডার কুইবেকের চারটিয়ারভিল, সৌদি আরবের মদিনার ওয়াদি ই জ্বিন, অস্ট্রেলিয়ার ওরোরা, ভারতের লাদাখে ইত্যাদি।

এসব পাহাড় পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অনেকে মনে করেন, অতপ্রাকৃতিক শক্তি (supernatural force) বা চুম্বকীয় বলের এর কারণে এমনটি হয়ে থাকে, যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার বিপরীত। তবে বিজ্ঞানীরা গ্রাভিটি হিলের রহস্য বের করেছেন।

সৌদিআরবের মদিনার ওয়াদি ই জ্বিন

বিজ্ঞানীরা জিপিএস ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, এটা মরীচিকার মতই একটি দৃষ্টি ভ্রম, যা আলোক বিভ্রমের (optical illusion)  জন্য হয়ে থাকে। আশেপাশের গাছপালা, ঢালু এলাকা, আকাবাঁকা দিগন্তরেখা বা বাধাগ্রস্থ দৃষ্টিসীমার কারণে মানব চোখ ঐ এলাকার ঢাল নির্ণয়ের জন্য কোনো প্রসঙ্গ কাঠামো খুঁজে পায় না বলে মস্তিষ্কে এমন অনুভূতি সৃষ্টি হয় যাতে ঐ এলাকাটিকে
ঊর্ধমুখী ঢাল বলে মনে হয়।

গ্র্যাভিটি হিলের আরেকটি উদাহরণ 
Category: articles

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

স্ট্যান্ডার্ড মডেল হল বিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল তত্ত্বগুলোর মাঝে একটি। অনেকে স্ট্যান্ডার্ড মডেলকে মৌলিক কণাদের বা বলবাহক কণাদের তালিকা মনে করলেও এটি আসলে এটি নিছকই তালিকা নয়, বরং একটি গাণিতিক সূত্র বা তত্ত্ব। চলুন জেনে নিই, অতি-পারমাণবিক কণাদের আচরণ ও মৌলিক বলগুলোর একীভূত কোয়ান্টাম তত্ত্ব গঠনে সফল এই তত্ত্বের জন্ম কীভাবে হল।

বর্তমান বিজ্ঞানীদের নিকট অন্যতম বড় একটা চ্যালেঞ্জ হল প্রকৃতির মৌলিক ৪ টি বলকে একীভূত করা। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই মৌলিক বলগুলোকে একীভূত করা গেলে কসমোলজি বা সৃষ্টিতত্ত্ব, কণা-পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদির হাজারো সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সেই আদিকাল থেকেই সকল বলকে একই বলের বিভিন্ন রূপ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু, তখনও সকল মৌলিক বল আবিষ্কৃত না হওয়ায় বিজ্ঞানীরা মৌলিক বলগুলোকে একীভূত করতে পারেননি। পরবর্তীতে যখন সবল ও দুর্বল নিউক্লীয় বল আবিস্কৃত হয় তখন মৌলিক বলগুলোর একীভবনের জন্য অনেকগুলো তত্ত্ব গঠিত হয়। সুপারস্ট্রিং তত্ত্ব, লুপ কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি, ইয়াং-মিলস ফিল্ড এই তত্ত্বগুলোর মাঝে অন্যতম।

কোনো একটি বলকে ব্যাখ্যা করতে গেলে দরকার হয় ফিল্ড থিওরি বা ক্ষেত্র তত্ত্বের। যেমন মহাকর্ষ বলের জন্য যেমন মহাকর্ষ ক্ষেত্র রয়েছে। আইনস্টাইনের সফলতা ও নিউটনের ব্যর্থতার মূল কারণ হল আইনস্টাইন একটি মহাকর্ষ ক্ষেত্র তত্ত্ব গঠন করতে পেরেছিলেন, যা নিউটন পারেননি। দুর্বল ও সবল নিউক্লীয় বলের জন্য কোনো ক্ষেত্র তত্ত্ব যখন আবিষ্কৃত হয়নি, তখন ১৯৫৪ সালে এন. সি. ইয়াং ও তার ছাত্র আর. এল. মিলস একটি নতুন ক্ষেত্র তত্ত্ব দেন। এটি দুর্বল ও সবল নিউক্লীয় বলকে কোয়ান্টা বিনিময়ের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়। ইয়াং-মিলস ক্ষেত্রতত্ত্বের আলোকে সবল ও দুর্বল নিউক্লিয় বল এবং তাড়িচ্চুম্বকীয় বলকে একীভূত করার যে প্রচেষ্টা শুরু হয়, তাই অবশেষে স্ট্যান্ডার্ড মডেল অব পার্টিকেল রূপে পরিচিতি পায়। স্ট্যান্ডার্ড মডেল ব্যাখ্যা করে যে পদার্থের মৌলিকতম কণাগুলো কীভাবে নিজেদের মাঝে মিথষ্ক্রিয়া বা পারস্পরিক প্রতিক্রিয়া করছে এবং বলবাহক কণাগুলোর সাথে মিথষ্ক্রিয়া করে মৌলিক ৩টি বলের ক্ষেত্র কীভাবে সৃষ্টি করছে।

এই মডেল অনুসারে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত সকল বলের জন্যই এক বা একাধিক কোয়ান্টা রয়েছে। বল তৈরি হয় এই কোয়ান্টাদের পারস্পারিক আদান- প্রদানের মাধ্যমে। দৃশ্যমান সকল পদার্থের গঠনগত মৌলিক কণাদের আচরণ এই তত্ত্বের আলোকে ব্যাখ্যা করা যায়। আমি এখানে দৃশ্যমান বলেছি, কেননা ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি এবং অ্যান্টিম্যাটারের সৃষ্টিকে এই তত্ত্ব দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না। বেরিয়নসূচক পদ্ধতি, হায়ারার্কি সমস্যা, নিউট্রিনো স্পন্দন, সবল সিপি প্রতিসাম্য সমস্যাসহ আরো অনেক কিছুই আছে, যেখানে স্ট্যান্ডার্ড মডেল ব্যর্থ হয়ে পড়ে।


তত্ত্বের সীমাবদ্ধতার কথা পরে বলব, আগে তত্ত্বটির ভালো দিকগুলির কথায় জানা যাক! প্রকৃতিতে প্রাপ্ত মৌলিক বল ৪টি। বিজ্ঞানীরা নতুন আরেকটি মৌলিক বলের দাবি করলেও সেটা এখনও চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়নি। ৪টি মৌলিক বলের মাঝে ৩টি মৌলিক বলেরই কোয়ান্টাম তত্ত্ব গঠন করতে পারে এই স্ট্যান্ডার্ড মডেল। মহাকর্ষ বল বাদে অন্য সব বলগুলোকে একীভূত করার কৃতিত্বও তাই এই মডেলের।

কণিকার স্ট্যান্ডার্ড মডেল 


সবল নিউক্লীয় বলঃ

আমরা জানি সবল নিউক্লীয় বলের কারণেই নিউক্লিয়াসের স্থায়ীত্ব রয়েছে। নিউক্লিয়াসের মাঝে প্রোটন ও নিউট্রনের একত্রে থাকার মূল রহস্য সবল নিউক্লীয় আকর্ষণ বল। স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে সবল নিউক্লীয় বলের জন্য দায়ী কণা হল গ্লুওন নামক একটি বলবাহক কণা। এই গ্লুওন মূলত গ্লুওন ক্ষেত্র নামক একটি ক্ষেত্র তৈরি করে, যে ক্ষেত্রে কোয়ার্ক নামক একপ্রকার কণা গ্লুওন কণাকে বিনিময়ের মাধ্যমে একত্রে থেকে প্রোটন ও নিউট্রনের সৃষ্টি করে। এই প্রোটন ও নিউট্রন আবার বিভিন্ন মেসন কণা দ্বারা আবদ্ধ থাকে। গ্লুওনের কাজ হল মেসনসহ সকল নিউক্লিওনকে বেঁধে রাখা। স্ট্যান্ডার্ড মডেলে মোট ১৮ রকমের কোয়ার্ক ও ৮ রকমের গ্লুওন কণা আছে, যাদের কালার নামক একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের যে অংশে সবল নিউক্লীয় বলকে ব্যাখ্যা করা হয় তাকে কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইন্যামিক্স বলে। এই "ক্রোমো" শব্দটি "Color" শব্দ থেকে এসেছে। এটি সংক্ষেপে QCD (Quantum ChromoDynamics) নামেও পরিচিত।


দুর্বল নিউক্লীয় বলঃ

স্ট্যান্ডার্ড মডেল অনুসারে লেপটন নামক বিশেষ এক শ্রেণির কণা রয়েছে। এই লেপটনদের স্পিন কোয়ান্টাম সংখ্যা সবসময় ভগ্নাংশ হয়, আর এরা পাউলির বর্জন নীতি মেনে চলে। দুর্বল নিউক্লীয় বল এই লেপটন কণাদের আচরণ থেকেই বের হয়ে আসে। তবে দুর্বল নিউক্লীয় বলের জন্য দায়ী কণা বা বলবাহক কণা হল W এবং Z কণা। ২ প্রকারের W কণা (W+ ও W-) ও ১ প্রকারের Z কণা রয়েছে। গ্লুওনের মত এরাও বোসন শ্রেণির কণা। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের এই অংশকে বলা হয় কোয়ান্টাম ফ্লেভারোডাইন্যামিক্স, যা সংক্ষেপে QFD (Quantum FlavourDynamics) নামেও পরিচিত।


তড়িচ্চুম্বকীয় বলঃ 

ম্যাক্সওয়েল সাহেবের তড়িচ্চুম্বকীয় বলকেও এই স্ট্যান্ডার্ড মডেল অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই বলের জন্য দায়ী কোয়ান্টা হল ফোটন নামক এক প্রকার কণা। এটিও বলবাহক কণা। এই তত্ত্ব সবচেয়ে বেশিবার পরীক্ষিত তত্ত্ব ও সবচেয়ে সফল তত্ত্ব। চিরায়ত বলবিদ্যার (classical mechanics) এই তত্ত্বকে কোয়ান্টায়িত করার কৃতিত্ত্ব স্ট্যান্ডার্ড মডেলরই। এই অংশকে বলা হয় কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইন্যামিক্স বা QED (Quantum ElectroDynamics)

এভাবেই তিনটি বলকে একীভূত করেছে স্ট্যান্ডার্ড মডেল। এই মডেল যদিও মহাকর্ষ বলকে একীভূত করতে পারেনি, তবুও গ্র্যাভিটন নামক একটি কল্পিত কণা ধরে নিয়ে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের মাধ্যমেই মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চলছে। গ্র্যাভিটন কণাকে এই মডেলের আওতায় নিয়ে আসা যায়, যা এখনও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। অন্যান্য প্রায় সকল কণা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে গ্র্যাভিটনের মতো স্ট্যান্ডার্ড মডেল কর্তৃক কল্পিত কণার সংখ্যাও কম নয়। তারপরেও এই মডেলকে এতটা সফল বলা যায় কারণ,  ১৯৬০ থেকে '৭০ এর দশকে বিজ্ঞানীরা এই মডেল নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করতেন তাই মিলে যেত। শক্তিশালী কোলাইডার বা এ্যাটম স্ম্যাশারগুলো এবং ক্লাউড চেম্বারে কণার গতিপথ থেকে এই মডেলের সত্যতা প্রমাণ করা যায়।

মূল কথা হল, এই মডেল প্রায় সকল প্রকার পদার্থেরই গঠন ও বলগত মিথষ্ক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। ম্যাক্সওয়েল ও ইয়াং মিলস ফিল্ডের সাহায্যে এই মডেল কাজ করে থাকে। তবে বিজ্ঞানী ক্লেইন ও কালুজা তাদের তত্ত্বে উচ্চ মাত্রা ব্যবহার করে ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্ব ও মহাকর্ষকে একীভূত করার একটি উপায় দিয়েছিলেন। যেহেতু স্ট্যান্ডার্ড মডেল ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বকে ব্যাখ্যা করতে পারে, তাই আমরা আশা রাখতেই পারি যে স্ট্যান্ডার্ড মডেল অদূর ভবিষ্যতে মহাকর্ষ বলকেও ব্যাখ্যা করতে পারবে।

শুধু এটুকু পড়ে তৃপ্তি না পেলে ঢুঁ মেরে আসুনঃ
☛ স্ট্যান্ডার্ড মডেলের একটু গভীরে

সূত্র:
১. সার্ন
২। উইকিপিডিয়া 
Category: articles

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বৃহস্পতিকে আরেকটু হলেই গ্রহ না বলে নক্ষত্র বলা যেত। কেননা একটি নক্ষত্রের জীবন চক্রের অধিকাংশ সময় ধরেই মূল উপাদান হিসেবে থাকে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। আমাদের সূর্যের  কথাই ধরুন। এতে হাইড্রোজেনের পরিমাণ ৭৫ ভাগ এবং হিলিয়াম আছে প্রায় ২৪ ভাগ। আর এদিকে সৌরজগতের সবচেয়ে বড়ো গ্রহ, গ্রহ রাজ বৃহস্পতিরও প্রধান উপাদান কিন্তু এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামই।

এর ফলে একে কেউ ছোটখাটো নক্ষত্র বলে ভেবে ভুল করে বসলে মাফ করে দেওয়াই উচিত। তবে গ্রহদের মধ্যে এর ভর সবচেয়ে বেশি হলেও সেটা নক্ষত্রের মতো আচরণ করার মতো যথেষ্ট নয়। ফলে, এটি হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম বানিয়ে নিজস্ব আলো তৈরি করতে পারছে না।

আর পড়ুনঃ 
☛ নক্ষত্রের পরিচয়
☛ গ্রহ কাকে বলে? 


বৃহস্পতির পৃষ্ঠঃ
বৃহস্পতি (Jupiter) হল সৌরজগতের গ্রহদের মধ্যে অন্যতম গ্যাস জায়ান্ট। এটা বলে এতটুকু ভুলও করা হয় না আসলে। আপনি যদি প্যারাশ্যুটে ভর করে বৃহস্পতির পৃষ্ঠে অবতরণ করার ধান্দায় থাকেন, তবে সে আশা কোনো দিনই আলোর মুখ দেখবে না। গ্রহটিতে কোনো শক্ত পৃষ্ট নেই। বৃহস্পতির বায়ুমণ্ডলের মধ্যে ৯০ ভাগ হল হাইড্রোজেন। বাকি দশ ভাগের প্রায় পুরোটাই হিলিয়াম দিয়ে ভর্তি। পাশাপাশি অন্য কিছু গ্যাসও আছে এতে।

এই গ্যাসগুলো ক্রমানুসারে একটির উপর একটি স্তর স্তরে সজ্জিত আছে। গ্রহটিতে শক্ত পৃষ্ঠ নেই বলে এর যেখানে বায়ুমণ্ডলীয় চাপ পৃথিবীর চাপের সমান সেই অঞ্চলকে পৃষ্ঠ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এই বিন্দুতে গ্রহটির অভিকর্ষ পৃথিবীর প্রায় আড়াই গুণ।

এই পৃষ্ঠে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করা একেবারেই অবাস্তব। কেননা এই অঞ্চলও আসলে গ্যাসেরই আরেকটি স্তর। কোনো যান বা নভোচারী এতে অবতরণের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে গ্যাসের মেঘ পাড়ি দিয়ে শেষ পরিণতি হবে গ্রহটির একেবারে কেন্দ্রমণ্ডলে।

বৃহস্পতির কেন্দ্রেঃ
বৃহস্পতির কেন্দ্র সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া এখনো একটি চ্যালেঞ্জ। বিজ্ঞানীদের ধারণা ঘন কেন্দ্রমণ্ডলের চারপাশে হয়তবা ধাতব হাইড্রোজেন থাকতে পারে। এর উপরের থাকতে পারে আণবিক হাইড্রোজেনের আরেকটি স্তর। গ্রহটির কেন্দ্রমণ্ডল কতটা শক্ত সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। কেন্দ্রভাগের আনুমানিক তাপমাত্রা ৩৫ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস।

১৯৯০ এর দশকের আগে বৃহস্পতির কেন্দ্রমণ্ডল নিয়ে আলোচনাই শুরু হয়নি। সেই সময় মহাকর্ষীয় চলাচল থেকে দেখা যায় গ্রহটির কেন্দ্রের ভর পৃথিবীর ভরের ১২ থেকে ৪৫ গুণ হতে পারে। তবে আবার অতীতে এর শক্ত কেন্দ্রমণ্ডল ছিল- এ কথা থেকে কিন্তু প্রমাণ হয় না যে এখনো তা টিকে আছে। সম্প্রতি প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে এর কেন্দ্রমণ্ডল খুব সম্ভব গলে যাচ্ছে।

বৃহস্পতির উপাদান 

নক্ষত্রের মতো হলেও ঠিক নক্ষত্র নয়ঃ
সূর্যের মতোই বৃহস্পতিরও প্রধান উপাদান হল হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। কিন্তু এতে এই উপাদানগুলোর ঘাটতি থাকায় সূর্যের মতো ফিউশান বিক্রিয়া শুরু হতে পারেনি। তা হতে হলে একে বর্তমানের তুলনায় আরো ৭৫ থেকে ৮০ গুণ বেশি ভারী হতে হত। সৌরজগতের বাকি সবগুলোর ভরও যদি একে দিয়ে দেওয়া হয়, তবু এর ঘাটতি পূরণ হবে না। কিন্তু তবু বাকি সবগুলো গ্রহের ভর যোগ করলেও বৃহস্পতির একার ভর হবে তার আড়াই গুণ।

আরো পড়ুনঃ
এক নজরে সূর্য 
এক নজরে বৃহস্পতি

সূত্রঃ
১। http://www.space.com/18388-what-is-jupiter-made-of.html
২। https://en.wikipedia.org/wiki/Sun#Composition
Category: articles

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আজ ২৯ সেপ্টেম্বর। ১৯০১ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন ইতালীয় পদার্থবিদ এনরিকো ফার্মি।

তিনি তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণভিত্তিক পদার্থবিদ্যা- এই দুটোতেই সমানে অবদান রেখে গেছেন। বর্তমান যুগে যেখানে একের অধিক ক্ষেত্রে অবদান রাখা কঠিন, তাতে তাঁর এই অবদান তাঁকে একটু বিশেষভাবে নজরে আনার জন্যে যথেষ্ট। নিউক্লীয় চুল্লির (nuclear reactor) উন্নতি সাধনের জন্যে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এছাড়াও তিনি মাথা কাজে খাটিয়েছেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব, কণা পদার্থবিদ্যা ও পরিসংখ্যান বলবিদ্যায়ও। ১৯৩৮ সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।

বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি 

১৯০১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি ইতালির রোম শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আলবার্তো ফার্মি ছিলেন দেশের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রধান পরিদর্শক। ছোট বেলায় যোগ দেন স্থানীয় গ্রামার স্কুলে। অল্প বয়স থেকেই গণিতের প্রতি অনুভব করতেন তীব্র ভালোবাসা। এতে ঘি ঢেলে দেন তাঁর পিতার এক সহকর্মী। ১৯১৮ সালেই ইতালির বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান এসএনএস থেকে ফেলোশিপ লাভ করেন। এটি বর্তমানেও ইতালির এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২২ সালে এখান থেকে পদার্থবিদ্যায় ডিগ্রি নিয়ে বের হন।

এর অল্প কয় দিন পরেই, ১৯২৩ সালে ইতালীয় সরকারের পক্ষ থেকে বৃত্তি অর্জন করেন। কয়েক মাস সময় কাটান আরেক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ম্যাক্স বর্ন এর সাথে। ১৯২৪ সালে রকফেলার ফেলোশিপ নিয়ে চলে আসে লেইডেন (হল্যান্ড)। কাজ করেন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ পল এহরেনফেস্ট এর সঙ্গে। সে বছরই আবার ফিরে আসেন ইতালিতে, যোগ দেন ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক পদার্থবিদ্যা ও বলবিদ্যার প্রভাষক হিসেবে।

১৯২৬ সালে তিনি পরিসংখ্যানের একটি সূত্র আবিষ্কার করেন, যা বর্তমানে 'ফার্মি পরিসংখ্যান' নামে পরিচিত। যেসব কণিকা পাউলির বর্জন নীতি (Pauli's exclusion principle) মেনে চলে তাদের জন্যে প্রযোজ্য তাঁর এই সূত্র। তাঁর নাম থেকেই বর্তমানে এই কণিকাদের নাম হয়েছে ফার্মিয়ন। এরা হল বোসন কণিকাদের বিপরীত, যারা মেনে চলে বোস- আইনস্টাইন পরিসংখ্যান।

পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯২৭ সালে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক মনোনীত হন। ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত এই পদটি ধরে রাখেন তিনি। সে বছরই নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হন, আর ইতালির একনায়ক মুসোলিনির হাত থেকে বাঁচতে রোম ছেড়ে চলে আসেন আমেরিকা।

রোমে থাকার সময় তড়িৎগতিবিদ্যার বিভিন্ন সমস্যা ও বর্ণালী বিষয়ক তাত্ত্বিক গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। বহিঃস্থ ইলেকট্রনদের ছেড়ে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে নজর দিয়েই পেয়ে গেলেন বিশেষ কিছু। ১৯৩৪ সালে বিটা ক্ষয় তত্ত্বের উন্নতি সাধন করলেন। এর মাধ্যমে পূর্বের বিকিরণ তত্ত্বের সাথে পাউলির নিউট্রিনোর ধারণার সেতুবন্ধন ঘটল। ১৯৩৪ সালে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের পর তিনি দেখান যে নিউট্রন দ্বারা আঘাত করে যে কোনো নিউক্লিয়াসকে অন্য নিউক্লিয়াসে রূপান্তরিত করা যায়। এই ধারণার উপর ভর করেই একই বছর আবিষ্কৃত হয় ধীর নিউট্রন, যার ফলে পরে আবিষ্কৃত হয় নিউক্লিয়ার ফিসান বা ভাঙন (যেখানে একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভেঙে দুই বা তার অধিক নিউক্লিয়াস তৈরি হয়)। সে সময় পর্যন্ত পর্যায় সারণিতে যে মৌলগুলো ছিল তার বাইরেও মৌল তৈরি সম্ভব হয় এর ফলেই।

১৯৩৮ সালের দিকে তিনিই ছিলেন নিউট্রন সম্পর্কে সবচেয়ে বড় বিশেষজ্ঞ। আমেরিকা ফিরে এসেও তিনি এই বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখেন। এখানে এসে যোগ দেন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হিসেবে।

১৯৩৯ সালে হান ও স্ট্রাসম্যান ফিসান প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। এটা থেকে তাঁর মাথায় আসে কীভাবে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে চেইন বা শৃঙ্খল বিক্রিয়া পরিচালনা করা যায়। পরমাণু বোমা তৈরির সময় বিভিন্ন সমস্যা সমধানেও তিনি কাজ করেন। তিনি ছিলেন ম্যানহাটন প্রোজেক্টের এক দল পদার্থবিদের অন্যতম নেতা, যেখানে নিউক্লীয় শক্তি ও পরমাণু বোমা নিয়ে কাজ হচ্ছিল। এসব অবদানের জন্যে তাঁকে নিউক্লীয় যুগ ও পরমাণু বোমার স্থপতি বলা হয়।

১৯৪৪ সালে তিনি আমেরিকার নাগরকিত্ব লাভ করেন। যুদ্ধের পর (১৯৪৬ সালে) শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন। ১৯৫৪ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এখানেই থাকেন। এখানে তাঁর গবেষণার মূল বিষয় ছিল উচ্চ- শক্তির পদার্থবিদ্যা। এছাড়াও তিনি পাইওন- নিউক্লিয়ন গবেষণায়ও নেতৃত্ব প্রদান করেন।

জীবনের শেষের দিনগুলো ব্যয় করেন মহাজাগতিক রশ্মির রহস্যময় উৎস নিয়ে। প্রস্তুত করেন একটি তত্ত্ব।

সব মিলিয়ে তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণভিত্তিক পদার্থবিদ্যার উপর অনেকগুলো গবেষণাপত্র লেখেন তিনি। প্রভাষক হিসেবে তাঁর চাহিদা সব সময়ই ছিল বেশি। মিশিগান, স্ট্যানফোর্ডসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি বিভিন্ন কোর্স নিতেন।

১৯২৮ সালে তিনি লরাকে বিয়ে করেন। তাঁদের গিওলিও নামে একটি ছেলে ও নেলা নাম্নী একটি মেয়ে ছিল। হাঁটাহাঁটি, পাহাড়ে চড়া ও শীতকালের বিভিন খেলাধুলা ছিল তাঁর অবসরের প্রিয় কাজের মধ্যে অন্যতম।
১৯৫৪ সালের ২৮ নভেম্বর তারিখে তিনি এ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যান পরপারের উদ্দেশ্যে।

তথ্য সূত্রঃ
১। http://www.nobelprize.org/nobel_prizes/physics/laureates/1938/fermi-bio.html
২। http://www.famousscientists.org/enrico-fermi/

Category: articles

বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সূর্যোদয়  

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন প্রতি ৯২ মিনিটে পৃথিবীকে একবার ঘুরে আসে। এর ফলে এটি দিনে ১৬ বার করে 'সূর্যোদয়' ও 'সূর্যাস্ত' দেখে। নিচের পৃথিবীকে অন্ধকার দেখা যাচ্ছে, কারণ মহাকাশ স্টেশন উপরে থাকায় আগেই সূর্যোদয় দেখে ফেলেছে। 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন হল পৃথিবীর কক্ষপথে থাকা সবচেয়ে বড় কৃত্রিম উপগ্রহ। পৃথিবী থেকে এর উচ্চতা ৩৩০ থেকে ৪৩৫ কিলোমিটারের (২০৫ থেকে ২৭০ মাইল) মধ্যে থাকে। একে কক্ষপথে পাঠানো হয় ১৯৯৮ সালে। 

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন
Category: articles

জ্যোতির্বিজ্ঞান পরিভাষা: জেনে নিন কোন শব্দের কী মানে

এখানে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাসহ জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় পরিভাষাগুলোর তালিকা দেওয়া হলো। সাজানো হয়েছে অক্ষরের ক্রমানুসারে। এই তালিকা নিয়মিত আপডেট...